অধ্যায় ৮
আয়ানে মাশিবার পৈতৃক নিবাস খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হলো না। একটা ছিমছাম আবাসিক এলাকায় তিনতলা বাড়ি। নিচতলাটা গ্যারেজ এবং স্টোররুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটা সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলার প্রবেশ ফটক অবধি।
“এখানকার বেশিরভাগ বাড়িই এরকম,” আয়ানের বাবা, কাজুহিরো মিতা বলল। মেহমানের জন্যে চালের পিঠা তৈরি করা হয়েছে। “ঠাণ্ডার সময় প্রচুর বরফ পড়ে আমাদের এখানে। তাই মূল প্রবেশ ফটক ইচ্ছে করেই উঁচুতে বানানো হয়েছে।”
মাথা নাড়লো কুসানাগি। টোকিও শহর থেকে একদম ভিন্ন জায়গাটা, যেন অন্য একটা জগত। আয়ানের মা, তোকিকো চা নিয়ে প্রবেশ করলে ধোঁয়া ওঠা কাপটা তুলে নিল কুসানাগি। খালি ট্রে নিয়ে স্বামীর পাশে বসে পড়লো তোকিকো।
“ইয়োশিতাকার খবরটা শুনে আমরা প্রচণ্ড অবাক হয়েছি। যখন আমাদের জানানো হলো, ওর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, পুলিশি তদন্ত হচ্ছে, তখন বিস্ময়ের পরিমাণ আরো বেড়েছে,” কাজুহিরো বলল। তার সফেদ ভ্রু জোড়া কিছুটা কুঁচকে আছে এখন।
“খুন কি না সেটা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি,” কুসানাগি বলল।
“ওর শত্রুর সংখ্যা কম নয়। সব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেই অবশ্য এই কথাটা খাটে। তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, গতানুগতিক অন্য সবার চেয়ে সে একটু বেশিই….”
পাঁচ বছর আগে একটা স্থানীয় ক্রেডিট ইউনিয়ন থেকে অবসর গ্রহণ করে কাজুহিরো মিতা। ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে ভালোই জানাশোনা তার।
“আমি ভাবছিলাম,” পাশ থেকে তোকিকো বলল এই সময়। “আয়ানের কি অবস্থা? ফোনে গলা শুনে তো মনে হলো, ঠিকই আছে। কিন্তু ও নিশ্চয়ই চায় না যে আমরা দুশ্চিন্তা করি।”
“ভালোই আছেন। ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন অবশ্যই,” কুসানাগি বলল। “কিন্তু আমাদের যথাসম্ভব সাহায্য করেছেন।”
“যাক, একটু স্বস্তি পেলাম,” চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ভাবটা কিছুটা হলেও কমলো মিসেস মিতার।
“আয়ানে বলছিলেন যে শনিবারে স্যাপ্পোরোতে এসেছিলেন তিনি। আপনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল তার,” কাজুহিরোর দিকে তাকিয়ে বলল কুসানাগি। বয়স্ক ভদ্রলোক কিছুটা রোগা, কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে না, কোন অসুখে ভুগছে।
“হ্যাঁ, আসলে…” বলে এক মুহূর্তের জন্যে থামলো কাজুহিরো। “অগ্নাশয়ে সংক্রমণ হয়েছিল আমার তিন বছর আগে। তখন থেকেই শারীরিক অবস্থা ভালো না। মাঝে মাঝে জ্বর আসে। পেটে এত ব্যথা হয় যে নড়াচড়াই করতে পারি না। কিন্তু মানিয়ে নিয়েছি আমি। এই বয়সে এটাই করতে হয় সবাইকে। মানিয়ে নেয়া শিখতে হয়।”
“আয়ানের সাথে কি বিশেষ কোন দরকার ছিল এবার আপনার?”
“না, ওরকম কিছু না,” একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল কাজুহিরো। মাথা ঝাঁকালো তোকিকো। “শুক্রবার রাতে ফোন দিয়ে বলে, পরদিন আসবে। বাবাকে নিয়ে না কি দুশ্চিন্তা হচ্ছিল ওর, তাছাড়া বিয়ের পরে একবারও আসেনি।”
“এখানে আসার অন্য কোন কারণ কি ছিল?”
“ওরকম কিছু বলেনি আমাদের।”
“কতদিন থাকতে চেয়েছিলেন।”
“সে ব্যাপারেও স্পষ্ট কিছু বলেনি। আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম বলেছিল যে তখনো ঠিক করেনি।”
হঠাৎ স্যাপ্পোরোতে ফেরার কোন কারণ ছিল না, মনে মনে ভাবলো কুসানাগি। তাহলে বাবা-মার সাথে এভাবে দেখা করতে এলো কেন সে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একমাত্র স্বামীর সাথে সমস্যা হলেই বিয়ের পরে বাড়ি ফেরে মেয়েরা।
“ইয়ে মানে, মি. কুসানাগি…” খানিকটা দ্বিধান্বিত স্বরে বলল কাজুহিরো। “আয়ানে এখানে কেন এসেছিল সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে আপনাকে। কারণটা আমাদের বলা যাবে?”
হাসলো কুসানাগি। বয়স্ক ব্যংকার সাহেবের চিন্তা ভাবনা এখনও পরিস্কার। “মি. মাশিবা যদি আসলেও খুন হয়ে থাকেন, তাহলে খুনি বুঝে শুনেই এই সময়টা বেছে নিয়েছিল। আয়ানে মাশিবা বাড়ির বাইরে থাকলে তার সুবিধেই হবার কথা,” ধীরে কিন্তু স্পষ্টস্বরে বলল ডিটেক্টিভ। “আর
সেটাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের জানতে হবে যে মিসেস মাশিবার এখানে আসার কথা কিভাবে জানলো খুনি। সেজন্যেই এই প্রশ্নগুলোর জবাব জানাটা জরুরি। আশা করি বুঝতে পারছেন।”
“বেশ,” বলে মাথা নাড়লো কাজুহিরো। কুসানাগির কথা বিশ্বাস করেছে কি না সেটা অবশ্য তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না।
“এখানে এসে কি করছিলেন তিনি?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল বয়স্ক দম্পতির দিকে তাকিয়ে।
“শনিবার সারাদিন বাসাতেই ছিল। রাতে স্থানীয় একটা সুশি রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম সবাই মিলে। জায়গাটা ওর পছন্দের,” তোকিকো বলল।
“রেস্তোরাঁটার নাম কি?”
চোখে সন্দেহ নিয়ে পাশে বসে থাকা স্বামীর দিকে তাকালো একবার তোকিকো।
“দুঃখিত,” কুসানাগি আবারো হেসে বলল। “ছোটখাটো সব তথ্যই কাজের। তাই খুঁটিনাটি জানতে হবে আমাকে। তাছাড়া টোকিও থেকে আবারো এখানে আসার ইচ্ছে নেই আমাদের।”
তোকিকোকে দেখে মনে হলো না কুসানাগির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট সে কিন্তু রেস্তোরাঁটার নাম বলল সে। “লাকি সুশি।”
“আর রবিবারে তো এক বন্ধুর সাথে হট স্প্রিং রিসোর্টে গিয়েছিলেন তিনি?”
“হ্যাঁ, সাকির সাথে। মিডল স্কুল থেকে বন্ধুত্ব ওদের। এখান থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ওর বাবা-মা’র বাসা। বিয়ের পর শহরের দক্ষিণ প্রান্তে চলে গিয়েছে সাকি, কিন্তু শনিবার তাকে ফোন দেয় আয়ানে। খুব সম্ভবত জোযানকেইতে গিয়েছিল।”
মাথা নেড়ে নোটপ্যাডের দিকে তাকালো কুসানাগি। মামিয়া আগেই আয়ানের বন্ধুর নাম জেনে নিয়েছিল-সাকিকো মোতুকা। উতসুমি তার সাথে দেখা করবে রিসোর্ট থেকে ফেরার পথে।
“আপনি বললেন, বিয়ের পরে এই প্রথম স্যাপ্পোরোতে ফিরেছিলেন আয়ানে। তিনি কি মি. মাশিবা ব্যাপারে কিছু বলেছেন?”
“শুধু বলেছে যে কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত ইয়োশিতাকা,” ঘাড় কাত করে বলল তোকিকো। “কিন্তু গলফ খেলার সময় ঠিকই পায়। এই ধরণের কথাবার্তা আর কি …“
“ওখানে সব ঠিকঠাক আছে কি না, এ ব্যাপারে কিছু বলেছিলেন?
“নাহ, একটা শব্দও না। বরং আমাকেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছে। ওর বাবা কেমন আছে, ভাই কেমন আছে, কি করছে-ওহ, ওর কিন্তু একটা ভাই আছে। আমেরিকায় থাকে।”
“তিনি যেহেতু বিয়ের পরে এখানে আসেননি,” কুসানাগি বলল, “আপনাদের সাথে তাহলে মি. মাশিবার খুব কমই দেখা হয়েছে?”
“হ্যাঁ, এটা সত্যি। ওদের বিয়ের আগ দিয়ে একবার গিয়েছিলাম। তখনই ভালোমতো কথা হয়েছিল। আমাদের অবশ্য অনেকবার বলেছে যেতে, কিন্তু কাজুহিরোর শরীরের যে অবস্থা…সুযোগ হয়ে ওঠেনি।”
“সর্বসাকুল্যে চারবার তার সাথে দেখা হয়েছে আমাদের,” কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল কাজুহিরো।
“বিয়ের ব্যাপারে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তারা?”
“অনেকটা সেরকমই। আয়ানের বয়স ত্রিশ হয়ে গিয়েছিল। আমরা তো ভাবছিলাম যে আদৌ কখনো বিয়ে করবে কি না সে। এমন সময় একদিন ফোন দিয়ে বলে যে গাঁটছড়া বাঁধবে খুব শিঘ্রই,” তোকিকো বলল অভিমানী মায়ের কণ্ঠে
আয়ানের বাবা-মা’র কথা অনুযায়ী আট বছর আগে টোকিওতে পাড়ি জমায় সে। এর আগে দুই বছর জুনিয়র কলেজে পড়ে এবং এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে কিছু দিন থাকে। সেলাই নিয়ে হাইস্কুল থেকেই আগ্রহ ছিল; গ্র্যাজুয়েশনের আগেই দক্ষ সেলাইশিল্পী হিসেবে বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়ে তার। কিছু প্রতিযোগীতায় বিজয়ীও হয়। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর সেলাইকর্ম নিয়ে একটা বই প্রকাশ করে আয়ানে। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।
“কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতো যে আমরা বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলতো, কারো বউ হবার সময় নেই ওর,” তোকিকো বলল, “আমি এতটাই ব্যস্ত যে আমার নিজেরই একটা বউ দরকার” এটাই বলেছিল।”
হেসে উঠল কুসানাগি। “তার বাসা কিন্তু ভীষণ সাজানো গোছানো।” মাথা ঝাঁকালো কাজুহিরো। “হাতের কাজ ভালো পারা মানেই এটা নয় যে ঘরের কাজও ভালো পারবে। এখানে যতদিন ছিল, একটা কাজও কখনো করেনি। আমার তো সন্দেহ টোকিওতে একা একা থাকার সময় নিজের জন্যেও কখনো রান্না করেছে কি না।”
“তাই?”
“হ্যাঁ,” তোকিকোও তাল মেলালো স্বামীর সাথে। “কয়েকবার গিয়েছিলাম আমরা। ওরকম পরিস্কার চুলা আর কোথাও দেখিনি। কেনা খাবার খেতো ও।”
“কিন্তু তাদের বন্ধুদের মতে প্রায় সময়ই বাসায় দাওয়াতের আয়োজন করতো মিস্টার এবং মিসেস মাশিবা। আপনার মেয়েই সবকিছু রান্না করতো।”
“আমরাও শুনেছি সেটা। আয়ানেই বলেছিল। বিয়ের পরে নিশ্চয়ই রান্নার স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। আমরা তো বলতাম ‘ওর স্বামীর কপাল খারাপ, নিজেকেই রান্না করে খেতে হবে।”
“একদম হঠাৎই মারা গেল ছেলেটা,” মাথা নিচু করে বলল কাজুহিরো।
“আমরা যদি ওর সাথে দেখা করি, তাহলে কি কোন সমস্যা হবে?” তোকিকো জিজ্ঞেস করল। “শেষকৃত্যের কাজে ওকে সাহায্য করতে চাই।“
“না, সমস্যা কিসের,” কুসানাগি বলল। “তবে আমি নিশ্চিত নই, মি. মাশিবার দেহ কবে হস্তান্তর করা হবে।“
“ওহ,” দমে গেল তোকিকো।
“আয়ানের সাথে যোগাযোগ করে সব ব্যবস্থা করবো আমরা,” স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল কাজুহিরো।
ধন্যবাদ জানিয়ে বের হবার জন্যে উঠে দাঁড়ালো কুসানাগি। জুতা পায়ে দেয়ার সময় দরজার পাশে হুকের সাথে একটা সেলাইয়ের কাজ করা জ্যাকেট চোখে পড়লো। গায়ে দিলে প্রায় হাঁটু অবধি নেমে আসবে ওটা।
“আমাদের জন্যে কয়েক বছর আগে জ্যাকেটটা তৈরি করেছিল ও,” তোকিকো বলল পেছন থেকে। “শীতের সময় কাজুহিরোকে পেপার আর টুকটাক জিনিসপত্র আনার জন্যে প্রায়ই দোকানে যেতে হয়।”
“একটু বেশিই রঙচঙে,” কাজুহিরো বলল। কিন্তু জ্যাকেটটা যে তার ভীষণ পছন্দের, তা চেহারাতেই স্পষ্ট।
“একবার আয়ানের দাদী শীতের মধ্যে বাইরে গিয়ে পা পিছলে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে ফেলেছিল। সেই কথা মনে রেখেছে আয়ানে। তাই জ্যাকেটের পেছন দিকে মোটা করে কাপড়ও দিয়ে দিয়েছে, “ লম্বা জ্যাকেটটার ভেতরের দিকটা দেখিয়ে বলল তোকিকো।
সবসময়ই অন্যের কথা চিন্তা করা তার অভ্যাস, কুসানাগি ভাবলো।
মিতাদের বাসা থেকে বের হয়ে লাকি সুশির উদ্দেশ্যে রওনা দিল কুসানাগি। ‘বন্ধ’ সাইন ঝোলানো থাকলেও ভেতরে প্রধান কুক ছিল তখনো। সবকিছু গুছিয়ে রাখছিল সে। বয়স পঞ্চাশের আশপাশে। আয়ানেদের কথা মনে আছে তার।
“বেশ লম্বা সময় পর এখানে এসেছিল ওরা, তাই চেষ্টা করেছিলাম ওদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্ট করার। প্রায় রাত দশটা অবধি ছিল। কিছু হয়েছে?” এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল কুক।
জনে জনে মি. মাশিবা মারা যাবার ব্যাপারটা বলে বেড়ানোর কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল না কুসানাগি। প্রশ্নটা পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এলো। রাতের খাবারের সময় হোটেলের লাউঞ্জে উতসুমির সাথে দেখা করার কথা তার। ওখানেই পেল তাকে, নোটপ্যাডে কিছু একটা লিখছিল জুনিয়র ডিটেক্টিভ।
“কিছু জানতে পেরেছো?” উতসুমির উল্টোদিকে বসে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।
“আয়ানে তো আমাদের বলেছিলেনই যে জোযানকেইতে একটা হট স্প্রিং রিসোর্টে ছিলেন তিনি। ওখানকার একজন কেয়ারটেকারের সাথে কথা হয়েছে আমার। বান্ধবীর সাথে ভালোই সময় কাটিয়েছেন।”
“আর মিস সাকিকো মোতুকা?”
“তার সাথেও দেখা হয়েছে।”
“মিসেস মাশিবার কথার সাথে মেলেনি এমন কিছু জানতে পেরেছো?” মেঝের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা ঝাঁকালো উতসুমি। “নাহ। যা যা বলছেন সব মিলে গেছে।”
“এদিকেও একই ঘটনা। টোকিওতে গিয়ে আবার এখানে ফিরে আসার মত সময় ছিল না তার।
“মিস মোতুকা বলেন, রবিবার ভোরে মিসেস মাশিবার সাথে দেখা করেন তিনি। এটাও সত্যি যে রাতের আগে মেসেজগুলো চোখে পড়েনি তার।”
“অ্যালিবাইতে কোন রকমের ছেদ তো চোখে পড়ছে না,” হেলান দিয়ে বসে বলল কুসানাগি। “আয়ানে খুনি নন। আমি জানি, তুমি এখনও হয়তো বিশ্বাস করছো না কথাটা। কিন্তু বাস্তবতা সেটাই ইঙ্গিত করছে।”
এক মুহূর্তের জন্যে অন্যদিকে তাকিয়ে আবারো কুসানাগির চোখে চোখ রাখলো উতসুমি। “তবে মিস মোতুকার কথা শুনে কিছু ব্যাপারে খটকা লেগেছে আমার।“
“যেমন?”
“দীর্ঘ সময় তাদের মধ্যে কোন দেখা সাক্ষাৎ ছিল না। মিসেস মাশিবার বিয়ের আগেও লম্বা সময় যোগাযোগ বন্ধ ছিল।”
“তার বাবা-মা’ও এটাই বলেছে।”
“মিস মোতুকার কাছে মনে হয়েছে, তার বান্ধবী অনেকটাই বদলে গেছে। আগের মত উচ্ছাস না কি চোখে পড়েনি। বরং একটু বেশিই ধীরস্থির মনে হয়েছে।”
“তো?” কুসানাগি বলল। “এমনটাও হতে পারে যে স্বামীর পরকীয়ার ব্যাপারে জানতেন আয়ানে। সেসব ব্যাপারে চিন্তা করার জন্যেই এখানে এসেছিলেন হয়তো। এগুলো নিয়ে চিন্তা করার কি আছে? চিফ তো বলেই দিয়েছেন। এখানে কেবল মিসেস মাশিবার অ্যালিবাই খতিয়ে দেখার জন্যে এসেছি আমরা। আর কিছু বলবে?”
“আরেকটা ব্যাপার,” উতসুমি বলল একই সুরে। “মিস মোতুকা কয়েকবার ফোন চালু করতে দেখেছেন আয়ানেকে। মেসেজ এসেছে কি না দেখে আবার বন্ধ করে রেখেছেন।”
“চার্জ বাঁচানোর জন্যে। আমিও করি এটা।”
“আসলেও?”
“কেন, তোমার কি ধারণা?”
“হয়তো কোন কলের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি, কিন্তু সেটা ধরার ইচ্ছে ছিল না। বরং মেসেজ পেয়ে কলব্যাক করতে চেয়েছিলেন।
মাথা ঝাঁকালো কুসানাগি। উতসুমির চিন্তাভাবনা একজন জুনিয়র ডিটেক্টিভ হিসেবে যথেষ্ট পরিস্কার। কিন্তু কিছুটা গোঁয়ার ধরণের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। “চলো, না-হলে প্লেন ছুটে যাবে।”