স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১৯

অধ্যায় ১৯

মেগুরো পুলিশ স্টেশনে বসে একটা রিপোর্ট লিখছিল উসুমি, এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করল কিশিতানি আর কুসানাগি। দু’জনের চেহারাই বরাবরের মতন গম্ভীর।

“চিফ বাসায় চলে গেছে না কি?” ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“না, ইনভেস্টিগেশন রুমে আছেন।”

আর কিছু না বলে কিশিতানিকে রেখে কেটে পড়লো কুসানাগি। “মেজাজ ভালো নেই মনে হচ্ছে,” উতসুমি মন্তব্য করল।

জবাবে কাঁধ ঝাঁকালো কিশিতানি। “ইয়োশিতাকা মাশিবার এক প্রাক্তন প্রেমিকার খোঁজ পাওয়া গেছে অবশেষে।“

“তাই না কি? এটা কি কেসের জন্যে ভালো হলো না খারাপ?”

“খুব বেশিদূর এগোতে পারিনি,” হতাশ কণ্ঠে বলল কিশিতানি। একটা ফোল্ডিং চেয়ারে বসে মি. মাশিবা অফিসে যাওয়ার পর থেকে কি কি হয়েছে সব জানালো উতসুমিকে। “প্রকাশনীর অফিসে গিয়েছিলাম,” বলল সে।

সেখান থেকে মহিলার একটা ছবি নিয়ে ঐ চায়ের দোকানের ওয়েট্রেসকেও দেখিয়েছি। তাকে ইয়োশিতাকার প্রাক্তন প্রেমিকা হিসেবে সনাক্ত করতে পেরেছে মেয়েটা। কিন্তু মহিলা মারা যাওয়ায় কুসানাগির প্রাক্তন প্রেমিকা সম্বন্ধীয় ধারণাটা মুখ থুবড়ে পেরেছে।”

“এই জন্যেই মেজাজ খারাপ।”

“আমি নিজেও একটু হতাশ আসলে,” কিশিতানি বলল। “সারাদিন ছোটাছুটি করে শেষ পর্যন্ত এই ফলাফল। ক্লান্তির কথা বাদই দিলাম,” শব্দ করে হাই তুললো সে।

একটু পরেই বেজে উঠল উতসুমির ফোন। ইউকাওয়া কল দিয়েছে।

“হ্যালো,” কানে রিসিভার চাপিয়ে বলল জুনিয়র ডিটেক্টিভ। “আপনার সাথে তো আজ সকালেই কথা হলো।”

“আপনি এখন কোথায়?” জিজ্ঞেস করল ইউকাওয়া।

“মেগুরো স্টেশনে, কেন?”

“কিছু ব্যাপার মাথায় ঘুরছিল। আপনাকে প্রয়োজন একটু। দেখা করতে পারবেন?”

“আবার? নিশ্চয়ই, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু হয়েছে কি এটা তো বলবেন?”

“দেখা হলে বলবো। আপনি জায়গা ঠিক করুন,” ইউকাওয়ার কন্ঠস্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছে বেশ উচ্ছসিত সে। তার স্বভাবের সাথে ব্যাপারটা একদমই যায় না।

“আচ্ছা। আমি তাহলে ইউনিভার্সিটিতেই আসি….”

“না, ওখান থেকে বের হয়ে পড়েছি। আপনাদের অফিসের দিকে রওনাও হয়ে গেছি আসলে। মাঝামাঝি একটা জায়গা পছন্দ করুন।”

কাছাকাছি একটা রেস্তোরাঁর নাম বলল উতসুমি। ফোন কেটে দিল প্রফেসর। অর্ধেক লেখা রিপোর্টটা ব্যাগে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো জুনিয়র ডিটেক্টিভ।

“গ্যালিলিও না কি?” কিশিতানি জিজ্ঞেস করল।

“হ্যাঁ, কিসের ব্যাপারে যেন কথা বলবেন বললেন।”

“আশা করি বিষ কিভাবে কফিতে মিশলো এটা তাড়াতাড়ি বের করতে পারবেন তিনি। জরুরি মনে হলে নোটবুকে টুকে নেবে তার কথা। একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলা ওনার অভ্যাস।”

“জানি আমি,” বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল উতসুমি।

চায়ে প্রথম চুমুক দিয়েছে সে এমন সময় রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করল ইউকাওয়া। উল্টোদিকের চেয়ার বসে হট চকোলেট অর্ডার দিল।

“কফি খাবেন না?”

“নাহ, সকালের দুই কাপই যথেষ্ট,” কপাল ঘুচো করে বলল ইউকাওয়া। “সরি, আপনাকে এভাবে হঠাৎ অফিস থেকে বের করে আনলাম।”

“সমস্যা নেই। কী যেন বলতে চাচ্ছিলেন?”

“হুম…” মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো প্রফেসর। এরপর সরাসরি উতসুমির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি কি মিসেস মাশিবাকে এখনও সন্দেহ করেন?”

“ইয়ে…মানে…করি।”

“হুম…” আবারও বলল ইউকাওয়া। পকেট থেকে ভাঁজ করা একটা কাগজ বের করে টেবিলের ওপর রাখলো। “পড়বেন এটা।”

কাগজটা তুলে নিয়ে ভাঁজ খুলল উতসুমি। “কী পড়বো?”

“আমি চাই আপনি ব্যাপারটা ভালো মতো বুঝুন।”

“এতে কি রহস্যটার সমাধান হবে?”

লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো ইউকাওয়া। “মনে হয় না। তবে অন্তত এটা প্রমাণ হবে যে রহস্যটা আসলে সমাধান করাই সম্ভব না।”

“মানে কি?”

“আপনি ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ ভেবেছি আমি। আমরা যদি ধরে নেই যে মিসেস মাশিবাই কফিতে বিষ মিশিয়েছে, তাহলে প্রথমে যে প্রশ্নটা আসবে আমাদের মনে সেটা হলো- কিভাবে সেটা করলেন তিনি? উত্তরটা হচ্ছে-জানি না। আমি এই উপসংহারে উপনীত হয়েছি যে রহস্যটার কোন সমাধান নেই-একটা বাদে।”

“একটা বাদে? মানে সমাধান আছে তাহলে?”

“কিন্তু সেটা একটা কাল্পনিক সমাধান?”

“আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“কাল্পনিক সমাধান বলতে এমন একটা সমাধানের কথা বোঝাচ্ছি যেটা কাগজে কলমে সম্ভব, কিন্তু বাস্ততে অসম্ভব। কেবলমাত্র একটা উপায়েই হোক্কাইদোতে থাকা অবস্থাতেও একজন স্ত্রী তার স্বামীর কফিতে বিষ মেশাতে পারে। কিন্তু সেই উপায়টা কারো পক্ষে অনুসরণ করার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। মানে বুঝতে পারছেন? কৌশলটা অবলম্বনের চেষ্টা করা যেতে পারে, কিন্তু সাফল্য লাভের আশা নেই বললেই চলে।”

“সরি, এখনও পরিস্কার হচ্ছে না আমার কাছে ব্যাপারটা,” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল উসুমি। “তাহলে আপনি আমাকে হোমওয়ার্ক দিলেন এটা প্রমাণ করার জন্যে যে কাজটা করা অসম্ভব? কেন?”

“মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্নের জবাব খোঁজার চাইতে এটা প্রমাণ করা জরুরি যে প্রশ্নটার কোন জবাবই নেই।”

“কিন্তু আমার তো জবাব দরকার, প্রফেসর। এরকম কাগজে কলমের সম্ভাবনা দিয়ে আর চলছে না। প্রকৃত সত্যটা জানতে হবে। এটাই আমার কাজ।”

চুপ থাকলো ইউকাওয়া। হট চকলেট কিছুক্ষণ আগে দিয়ে গেছে ওয়েটার। কাপটা তুলে নিয়ে একবার চুমুক দিল সে। “অবশ্যই,” অবশেষে বলল সে। “ঠিক বলেছেন আপনি।”

“প্রফেসর…”

কাগজটা ফিরিয়ে নিল ইউকাওয়া। “আসলে এটা আমাদের, মানে বিজ্ঞানীদের একটা স্বভাব বলতে পারেন,” বলল সে। “কাল্পনিক সমাধানগুলো দিয়েও আমরা আকৃষ্ট হই। কিন্তু, আপনি তো একজন গোয়েন্দা, বিজ্ঞানী নন। আপনার সময়ের একটা মূল্য আছে। মরীচিকার পেছনে ছোটা আপনার উচিত হবে না।”

কাগজটা যত্ন করে ভাঁজ করে জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো সে। “ভুলে যান যে আমি কিছু বলেছি,” হেসে বলল কিছুক্ষণ পর।

“আপনি আমাকে কৌশলটা সম্পর্কে বলুন না,” উতসুমি বলল। “তখন আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবো যে কাজটা আসলেই করা সম্ভব কি না। এরপর নাহয় আপনি যে ব্যাপারটা বুঝতে বললেন, সেটা বোঝার চেষ্টা করবো।”

“তা সম্ভব নয়,” ইউকাওয়া বলল।

“কেন?”

“আপনি যদি কৌশলটা সম্পর্কে একবার জানতে পারেন, তাহলে কেসটা সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে। তাছাড়া যে বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার মত সময় নেই আপনার, সেটা জানারও কোন প্রয়োজন দেখছি না। যাইহোক, সমাধানটা বলতে পারবো না আমি।”

বিলের কাগজটা নেয়ার জন্যে হাত বাড়ালো ইউকাওয়া, কিন্তু তার আগেই উতসুমি উঠিয়ে নিল ওটা। “আমি দিচ্ছি,” বলল সে।

“অসম্ভব!” ইউকাওয়া বলল। “আপনাকে আমি ডেকে এনেছি।” অন্য হাতটা প্রফেসরের দিকে বাড়িয়ে দিল উতসুমি। “তাহলে আমাকে কাগজটা দিন। আমি ঘাঁটবো ব্যাপারটা নিয়ে, কথা দিচ্ছি।”

“কিন্তু এটা তো একটা কাল্পনিক সমাধান।“

“তাতে কিছু আসে যায় না আমার। এটাই যদি একমাত্র সমাধান হয়ে থাকে, তাহলে আমি সেটা জানতে চাই।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে পকেট থেকে আবারো কাগজটা বের করে উতসুমির হাতে দিল প্রফেসর। এক ঝলক সেটার দিকে তাকিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো উতসুমি। “যদি দেখা যায় যে এই সমাধানটা আসলে ‘কাল্পনিক’ নয়, তাহলে কেসটার একটা গতি হলেও হতে পারে।”

“হয়তো,” বিড়বিড় করে বলল ইউকাওয়া। কোন উৎসাহ নেই তার কন্ঠে। এক হাতে নিচে নেমে আসা চশমাটা ঠিক করল সে।

“আমরা কি আসলেও পারবো না?”

“কৌশলটা যদি কাল্পনিক না-ও হয়ে থাকে,” পদার্থবিদ বলল গম্ভীর স্বরে। “তবুও আপনি বা আমি কিছু প্রমাণ করতে পারবো না। এটা একটা ‘পারফেক্ট ক্রাইম’।“

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *