স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১০

অধ্যায় ১০

সেলাই ক্লাসে থাকা অবস্থায় হিরোমির সাথে যোগাযোগ করল কুসানাগি। কিশিতানিকে সাথে নিয়ে রওনা হয়ে গেল খানিক বাদেই। সেলাই স্কুলটা একটা সাদা রঙের টালির বিল্ডিংয়ের চারতলায়। আরো বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আছে আশেপাশে। সদর দরজায় কোন তালা চোখে পড়লো না। লিফটে চেপে চারতলায় চলে আসলো ওরা।

কুসানাগি ডোরবেল চাপার প্রায় সাথে সাথে দরজা খুলে গেল। হিরোমির চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে, ভীষণ উদ্বিগ্ন সে।

“এভাবে হঠাৎ বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত,” ভেতরে প্রবেশ করে বলল কুসানাগি। “আসলে…” বাক্যটা শেষ করতে পারলো না সে। আয়ানে মাশিবা দাঁড়িয়ে আছে হিরোমির পেছনে।

“কিছু জানতে পেরেছেন আপনারা?” আয়ানে জিজ্ঞেস করল ডিটেক্টিভদের দিকে এগিয়ে এসে।

“দুঃখিত, মিসেস মাশিবা। জানতাম না আপনিও এখানে আছেন।”

“হিরোমি আমাকে কিছু জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করছিল। ওকে কি কোন কাজের জন্যে দরকার আপনাদের? যা যা জানে সবই তো ইতোমধ্যে খুলে বলেছে আপনাদের।”

শান্ত স্বরে কথাগুলো বলল আয়ানে। কিন্তু প্রচ্ছন্ন বিরক্তির সুরটা কান এড়ালো না কুসানাগির। তার সাথে চোখাচোখি হলো ডিটেক্টিভের। সদ্য বিধবার বিষাদমাখা দৃষ্টির সামনে ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে গেল।

“আসলে, নতুন কিছু তথ্য জানতে পেরেছি আমরা,” হিরোমির দিকে ফিরে বলল কুসানাগি। “আপনাকে আমাদের সাথে স্টেশনে যেতে হবে।”

বিস্ফোরিত নয়নে কিছুক্ষণ ডিটেক্টিভের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিল হিরোমি।

“কেন?” আয়ানে জিজ্ঞেস করল, “ওকে কেন স্টেশনে নিয়ে যাবেন আপনারা?”

“এ মুহূর্তে সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারছি না, দুঃখিত। মিস ওয়াকাইয়ামা, আপনাকে এখনই আমাদের সাথে যেতে হবে। চিন্তা করবেন না, আমরা সাধারণ গাড়িতেই এসেছি, পুলিশের গাড়িতে নয়।“

একবার আয়ানের দিকে আরেকবার ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো হিরোমি। “ঠিক আছে,” হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বলল এরপর, “কিন্তু সেখানে তো থাকতে হবে না আমাকে? বাসায় ফিরে আসতে পারবো?”

“কাজ শেষ হলে।”

“তৈরি হয়ে নিচ্ছি আমি।”

পেছনের ঘর থেকে হ্যান্ডব্যাগ আর জ্যাকেট নিয়ে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো হিরোমি। তার অনুপস্থিতিতে আয়ানে মাশিবার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলা সম্ভব হলো না কুসানাগির পক্ষে। যদিও বুঝতে পারছে, জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে মহিলা।

কিশিতানির পেছনে পেছন হলওয়েতে বেরিয়ে গেল হিরোমি। কুসানাগিও তাদের অনুসরণ করার জন্যে ঘুরেছে এমন সময় তার বাহু চেপে ধরলো আয়ানে। “দাঁড়ান,” কুসানাগির উদ্দেশ্যে বলল সে, “হিরোমিকে তো সন্দেহ করছেন না আপনারা, তাই না?”

ইতস্তত বোধ করতে লাগলো কুসানাগি। বাইরেই হিরোমিকে নিয়ে অপেক্ষা করছে কিশিতানি। “আপনারা নামুন,” বলে দরজা বন্ধ করে আয়ানের মুখোমুখি হলো সে।

“আমি…আমি দুঃখিত,” বলে কুসানাগির হাত ছেড়ে দিল আয়ানে। “কিন্তু ওর পক্ষে কোনভাবেই কাজটা করা সম্ভব না। আপনারা যদি ওকে সন্দেহ করে থাকেন, তাহলে ভুল করছেন।”

“আমাদের কাজই হচ্ছে সবগুলো সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা, সেটা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন।”

দৃঢ় ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো আয়ানে। “ওর এই কাজটা করার সম্ভাবনা শূন্য, বুঝতে পারছেন? আমার স্বামীকে হত্যা করার কোন কারণ নেই ওর।”

“এটা কেন বলছেন?”

“আপনি তো জানেন, তাই না? ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে?”

অবাক হলো কুসানাগি। “তাহলে আপনি জানতেন?”

“হ্যাঁ। হিরোমির সাথে সেদিন এ ব্যাপারে কথাও হয়েছে আমার। সব স্বীকার করেছে সে।”

হোটেলে হিরোমির সাথে কি কি কথা হয়েছে সবকিছু খুলে বলল আয়ানে। কুসানাগি সব শুনে বিস্মিত হলো ঠিকই, কিন্তু তাদের দু’জনকে আজকে একসাথে এখানে কাজ করতে দেখে আরো বেশি অবাক হয়েছিল। হয়তো মি. মাশিবা মৃত বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবুও এটা বিশ্বাস করা একটু কষ্টই যে এরকম বিশ্বাসঘাতকতার পরও হিরোমির সাথে কাজের সম্পর্ক বজায় রেখেছে আয়ানে।

“আমি স্যাপ্পোরোতে গিয়েছিলাম কারণ ইয়োশিতাকার সাথে একই বাসায় থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। দুঃখিত যে এই ব্যাপারে মিথ্যা বলেছিলাম আপনাকে,” মাথা নিচু করে বলল আয়ানে। “কিন্তু আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে হিরোমির ইয়োশিতাকাকে খুন করার কোন কারণই নেই। ওকে সন্দেহ করতে পারেন না আপনারা।“

কি বলবে খুঁজে পেল না কুসানাগি। নিজের স্বামীর যার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল তাকে কেন রক্ষা করতে চাইবে কেউ? “বুঝতে পারছি আপনার কথা,” বলল সে। “কিন্তু কারো পক্ষে কি করা সম্ভব বা সম্ভব না তা বিবেচনা করলে তদন্ত হয় না। আমরা যা করি, উপযুক্ত প্রমাণ পেলেই করি।”

“উপযুক্ত প্রমাণ? মানে আপনারা প্রমাণ পেয়েছেন যে হিরোমিই আমার স্বামীকে বিষ খাইয়েছে?” এবার আয়ানের বিস্মিত হবার পালা।

লম্বা করে শ্বাস নিল কুসানাগি। আয়ানের তীব্র চাহনির সামনে হার মানতে বাধ্য হলো সে। এখন যদি তাকে প্রমাণের ব্যাপারে কিছু বলেও, কি আর ক্ষতি হবে? তদন্তের কাজ তো বাধাগ্রস্ত হবে না। “কফিতে কিভাবে বিষ মিশেছিল তা জানতে পেরেছি আমরা।” কেতলিতে বিষের অস্তিত্ব খুঁজে পাবার ব্যাপারে বিস্তারিত খুলে বলল কুসানাগি। “মিস ওয়াকাইয়ামা বাদে রবিবার সকালে অন্য কারো পা পড়েনি আপনার বাসায়।”

“বিষ, কেতলিতে? এতে কিভাবে প্রমাণিত হলো যে ও জড়িত?”

“এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়,” শান্তস্বরে বলল কুসানাগি। “কিন্তু সবকিছু সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। মিস ওয়াকাইয়ামা নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণ করার আগ পর্যন্ত তাকে সন্দেহভাজন হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।”

“কিন্তু…” শুরু করেও শেষ করতে পারলো না আয়ানে।

“আমাকে যেতে হবে এখন,” একবার মৃদু বাউ করে বের হয়ে গেল কুসানাগি।

হিরোমিকে নিয়ে স্টেশনে পৌঁছুতেই তাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল মামিয়া। সাধারণত এরকম জিজ্ঞাসাবাদ স্থানীয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হয়ে থাকলেও, চিফ মামিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টেই চলবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। অর্থাৎ তিনি প্রায় নিশ্চিত সব স্বীকার করে নেবে হিরোমি। একবার স্বীকারোক্তি পেয়ে গেলে গ্রেফতারী পরোয়ানার জন্যেও আবেদন করতে সমস্যা হবে না। তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হবে মেগুরো স্টেশনে। সবকিছুই মিডিয়ার কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কৌশল।

কুসানাগি ডেস্কে বসে অপেক্ষা করছে রিপোর্টের জন্যে, এমন সময় স্টেশনে ফিরলো উতসুমি। “হিরোমি ওয়াকাইয়ামা নির্দোষ,” ঢুকেই বলল সে।

জুনিয়র ডিটেক্টিভের যুক্তি শুনে ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল কুসানাগির। উতসুমির এই যুক্তিটাও গাঁজাখুরি মনে হচ্ছে তার কাছে ব্যাপার এটা নয়। বরং তার উল্টোটা। আসলেও যুক্তি আছে উতসুমির কথায়। হিরোমি ওয়াকাইয়ামা যদি কেতলিতে বিষ মেশাতো তাহলে পরবর্তীতে সেটা ধুয়ে পরিস্কার করে রাখার পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল তার কাছে।

“তাহলে কেতলির পানিতে বিষ মেশালো কে?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল। “এটা বোলো না যে, আয়ানে মাশিবা, কারণ আমরা ইতোমধ্যেই জানি যে সেটা অসম্ভব।”

“আমি জানি না কে মিশিয়েছে। একমাত্র সম্ভাবনা হচ্ছে হিরোমি ওয়াকাইয়ামা মাশিবাদের বাসা থেকে সেদিন চলে যাওয়ার পর অন্য কেউ প্রবেশ করেছিল ভেতরে।”

মাথা ঝাঁকালো কুসানাগি। “ভেতরে অন্য কেউ প্রবেশ করেছিল, এর কোন আলামত নেই। ইয়োশিতাকা মাশিবা একাই ছিলেন সেখানে।”

“এটা তো একদম নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব না। আমরা হয়তো এখনও জানি না। যাইহোক, মিস ওয়াকাইয়ামাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন লাভ নেই। বরং এটা তার নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী,” দৃপ্ত কন্ঠে কথাগুলো বলল উতসুমি।

কুসানাগি ভাবছে কী করবে, এমন সময় পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। কিছুটা স্বস্তি বোধ করে ফোনের ডিসপ্লের দিকে তাকাতেই আবারো অস্বস্তি চেপে ধরলো তাকে। আয়ানে মাশিবা ফোন দিয়েছে।

“কাজের সময় ফোন দেয়ার জন্যে দুঃখিত। কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।”

“হুম?” শক্ত করে ফোনটা চেপে ধরলো কুসানাগি।

“কেতলিতে বিষের অস্তিত্ব পাবার অর্থ এটা নয় যে, কেউ কেতলিতেই বিষ মিশিয়েছে।“

“এটা কেন বলছেন?”

“কথাটা আগেই আপনাদের জানালে সুবিধে হোতো বোধহয়, কিন্তু আমার স্বামী ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন ছিল। ট্যাপের পানি সরাসরি খেতো না সে। এমনকি রান্নার সময়েও ট্যাপের পানি ব্যবহার করতে দিত না, ফিল্টারের পানি ব্যবহার করতে হতো। কেবলমাত্র বোতলজাত পানি পান করতো ইয়োশিতাকা। কফি বানানোর ক্ষেত্রেও ওটাই ব্যবহার করতাম। আমি নিশ্চিত যে রবিবারেও বোতলের পানি ব্যবহার করা হয়েছিল।”

“অর্থাৎ আপনি বলতে চাচ্ছেন যে বোতলের পানিতে বিষ মেশানো হতে পারে?”

পাশের ডেস্কে বসে থাকা উতসুমির দৃষ্টি বদলে গেল কথাটা শুনে।

“আমি একটা সম্ভাবনার কথা বললাম। হিরোমির পক্ষে কাজটা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর যদি বোতলের পানিতে বিষ মেশানো হয়ে থাকে, তাহলে যে কেউ করতে পারে কাজটা।”

“সেটা সত্যি। কিন্তু …“

“যেমন,” আয়ানে থামলো না, “আমিও করতে পারি।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *