অধ্যায় ২৩
বেশ খানিকক্ষণ ধরেই দোনোমনায় ভুগছে কুসানাগি। এ মুহূর্তে আয়ানে মাশিবার সেলাই স্কুলের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। দৃষ্টি দেয়ালে ঝোলানো ইন্টারকমটার দিকে। বেল চাপবে না কি ইন্টারকমে কল দিবে? অন্য সময় হলে এরকম সাধারণ একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতো না, কিন্তু আয়ানের মুখোমুখি হতে হবে ভাবলেই এক ধরণের অস্থিরতা গ্রাস করে তাকে। অস্থিরতা না বলে একে বিহ্বলতা বলা যায় কি?
হয়তো যায়, হয়তো যায় না।
অবশেষে ইন্টারকমটাই বেছে নিল সিনিয়র ডিটেক্টিভ। কিন্তু অপর পাশ থেকে কেউ রিসিভার তুললো না। বরং কিছুক্ষণ পর আয়ানে এসে দরজা খুলে দিল। ওকে দেখে মোলায়েম একটা হাসি ফুটলো তার মুখে। যেন একজন মা তার ছেলের বাসায় ফেরার জন্যে অপেক্ষা করছিল। “সময় মতই এসে পড়েছেন দেখছি,” বলল সে।
“জি? ওহ, হ্যাঁ,” বিড়বিড় করে ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল কুসানাগি। কাটায় কাটায় দুটা বাজছে। ফোনে এই সময়েই আসবে বলেছিল সে।
দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ওকে ভেতরে আসার অনুরোধ করল আয়ানে।
শেষবার এখানে কুসানাগি এসেছিল হিরোমি ওয়াকাইয়ামাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন সুযোগ পায়নি ভেতরটা ভালোমতো দেখার, তবুও আজকে কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা বদলে গেছে। ওয়ার্ক টেবিল এবং অন্যান্য আসবাবপত্রগুলো অবশ্য জায়গামতই দাঁড়ানো। কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা ধরতে পারলো সে। আগের প্রাণোচ্ছল ভাব হারিয়েছে স্কুলটা।
আয়ানের দেখানো চেয়ারটায় বসে আশপাশে নজর বোলালো সে, ততক্ষণে কাপে চা ঢেলে নিয়ে এলো আয়ানে। মুখে এখনও হাসি লেগে আছে তার। “জায়গাটা খালি খালি লাগছে না?” জিজ্ঞেস করল সে। “হিরোমি ওর জিনিসপত্রগুলো নিয়ে গেছে। আমি বুঝতেই পারিনি কখন সেগুলো এনেছিল ও, জানেন?”
হিরোমি আর কাজ করবে না শুনে অবাক হয়নি কুসানাগি। তার জায়গায় অন্য কোন নারী হলে আরো আগেই এখানে আসা বন্ধ করে দিত প্রণয়ের খবরটা ফাঁস হবার পরপরই।
আয়ানে গতকাল হোটেল থেকে এখানে এসে উঠেছে পাকাপাকিভাবে। সহসা বাড়িতে ফেরার কোন ইচ্ছে নেই তার। কারণটা অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে না কুসানাগির। যে বাড়িতে তার স্বামী খুন হয়েছে, সেখানে কেন ফিরতে চাইবে কেউ?
টেবিলে রাখা চায়ের কাপটা উঠিয়ে একবার চুমুক দিল সে। “ধন্যবাদ,” বলল কৃতজ্ঞ সুরে।
“আজ সকালে ওখানে গিয়েছিলাম,” আয়ানে বলল তার উল্টোপাশের চেয়ারটায় বসে।
“বাসার কথা বলছেন?”
“হ্যাঁ,” বলে নিজের কাপটা তুলে নিলো আয়ানে। “ফুল গাছগুলোতে পানি দিতে গিয়েছিলাম। সব শুকিয়ে গেছে।”
“আমি দুঃখিত,” ভ্রুজোড়া আপনাআপনি কুঁচকে গেল কুসানাগির। “এত ব্যস্ত ছিলাম গত কয়েকদিন…।”
হাত নেড়ে তাকে থামতে বলল আয়ানে। “এসব নিয়ে ভাববেন না। আসলে এরকম কিছুর অনুরোধ করাটাই উচিত হয়নি আমার। কোন ক্ষোভ নেই আমার মনে, বিশ্বাস করুন।”
“আমি পানি দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি। সামনের দিনগুলোতে আর ভুলবো না।”
মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করে দিল আয়ানে। “ঠিক করেছি আমিই প্রতিদিন গিয়ে পানি দেব গাছে, আপনার আর কষ্ট করার দরকার নেই। ইতোমধ্যেই অনেক কিছু করেছেন।
“কি আর করলাম? আচ্ছা, আপনি বলছেন যখন… তাহলে আপনার চাবিটা ফেরত দিয়ে দেব?”
“আপনাদের কাজ কি শেষ? না কি আবার যেতে হবে সেখানে?” কিছুক্ষণ ভেবে জিজ্ঞেস করল আয়ানে।
“সেটা বলা মুশকিল,” সত্যটাই বলল কুসানাগি।
“তাহলে থাক চাবিটা আপনার কাছে। আমার কাছ থেকেও বারবার অনুমতি নিতে হবে না কেউ ওখানে যেতে চাইলে।”
“ঠিক আছে। হারাবে না, এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন,” বুক পকেটে হাত রেখে বলল কুসানাগি।
“আচ্ছা, আপনিই কি ঐ বড় ওয়াটারিং ক্যানটা এনেছেন?”
চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গেল সিনিয়র ডিটেক্টিভ। খালি হাতটা নেড়ে বলল, “ওহ্, ওটা…আসলে আপনার পুরনো ক্যানটা ঠিকই ছিল। কিন্তু আমি ভাবলাম বড়টা দিয়ে সুবিধে হবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল বোধহয়।“
“আরে না, সেজন্যে বলছি না। আমি তো জানতামই না যে ওয়াটারিং ক্যান এত বড় হতে পারে। খুব সুবিধে হয়েছে এখন, আরো আগে কিনলেই পারতাম। ধন্যবাদ আপনাকে।”
“যাক, আপনার পছন্দ হয়েছে জিনিসটা,” কুসানাগি বলল। “আমি ভাবছিলাম পুরনোটাই বোধহয় বেশি ভালো লাগতো।”
“পানি দেয়ার ক্যান আবার ভালো লাগা না লাগার কি আছে? আগেরটা ফেলে দিয়েছেন?”
“হ্যাঁ…কেন, আপনার দরকার ছিল ওটা?”
“না! কাজ কমিয়ে দিয়েছেন,” হেসে মাথা নামিয়ে নিল আয়ানে। কাছের একটা শেলফে রাখা স্কুলের ল্যান্ডলাইন ফোনটায় রিং বেজে উঠল এ সময়।
“আয়ানে বলছি, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? মিস ওতা? হ্যা…কী বললেন? ওহ, ঠিক আছে।”
মিসেস মাশিবার মুখের হাসিটা অটুট থাকলেও কুসানাগির বুঝতে সমস্যা হলো না যে কোন একটা সমস্যা হয়েছে। শব্দ করে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলো সে।
“কিছু হয়েছে?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।
“আমার এক ছাত্রি ফোন দিয়েছিল,” হতাশ কণ্ঠে বলল আয়ানে। ‘পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে আর ক্লাসে আসতে পারবে না। গত তিন বছর ধরে আমার কাছে কাজ শিখছিল সে।”
“বাড়ীর সব কাজ সামলে সেলাইয়ে সময় দেয়াটা কঠিনই বোধহয়?
হাসলো আয়ানে। “আসলে গতকাল থেকে অনেকেই ফোন করে বলছে যে তারা আর আসবে না। ওতাকে নিয়ে ছয়জন হলো।”
“এটা কি দুর্ঘটনাটার কারণে?”
“মনে তো হচ্ছে। তবে সেই সাথে হিরোমির চলে যাওয়াটাও এক্ষেত্রে বড় একটা ভূমিকা পালন করছে। গত বছর থেকে ও পুরোদমে ক্লাস নেয়া শুরু করেছিল। আমার ধারণা অনেকে এখানে আসতো ওর জন্যেই।”
“তাই তিনি কাজ ছেড়ে দেয়াতে তারাও এখানে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে?”
“এটা একটা কারণ তো অবশ্যই। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে…কিভাবে
যে বোঝাবো আপনাকে। বলতে পারেন এখানে এসে আগের মত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না অনেকেই। নারীরা এসব ব্যাপারে একটু স্পর্শকাতর।”
“হুম…”
…” পুরোপুরি না বুঝলেও মাথা নাড়লো কুসানাগি। তার ধারণা ছিল এখানে শিক্ষার্থীরা আসে আয়ানের কাছ শিখতে। তাদের তো খুশি হবার কথা যে এখন থেকে সরাসরি এরকম গুণী একজন শিল্পীর কাছে শিখতে পারবে!
উতসুমি হলে ধরতে পারতো ব্যাপারটা, মনে মনে বলল সে।
“আমি মোটামুটি নিশ্চিত আরো অনেকেই চলে যাবে সামনের দিনগুলোতে। এই ব্যাপারগুলো অনেকটা চেইন রিঅ্যাকশনের মতন। হয়তো স্কুলটাই বন্ধ করে দেয়া উচিত,” মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থাকলো আয়ানে। এরপর হঠাৎই সিটে সোজা হয়ে বলল, “আমি দুঃখিত। এসবের সাথে তো আপনার এখানে আসার কোন সম্পর্ক নেই, তাই না ডিটেক্টিভ?”
সরাসরি তার দিকে তাকালো বিধবা। চোখ নামিয়ে নিল কুসানাগি। “আমি জানি আপনাকে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্বাস করুন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি কেসটার দ্রুত সমাধান করার। আমার মনে হয় আপনার অন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসা উচিত।”
“আমিও সেটাই ভাবছিলাম,” আয়ানে বলল। “অনেকদিন কোথাও যাই না। আগে কিন্তু বেশ ঘোরাফেরা করতাম। এমনকি একা একা বিদেশেও গিয়েছি।”
“হ্যাঁ, শুনেছি। ইংল্যান্ডে বোধহয়?”
“মা বলেছে? অনেক দিন আগের কথা,” বলে আবারো চোখ নামিয়ে নিল আয়ানে। “আপনার একটা সাহায্য দরকার আমার,” খানিকক্ষণের নীরবতার পর বলল সে।
“নির্দ্বিধায় বলুন,” চায়ের কাপ টেবিলে নামিয়ে রেখে বলল কুসানাগি।
“এই দেয়ালটা,” ওরা যেখানে বসে আছে তার বাম পাশের দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে বলল আয়ানে। “একটু খালি খালি লাগছে।”
আসলেও দেয়ালটা খালি। তবে ওখানে যে কিছু একটা ঝোলানো ছিল তা হালকা দাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
“এখানে যে ট্যাপেস্ট্রিটা ঝোলানো ছিল সেটা হিরোমি নিজ হাতে বুনেছিল, তাই ওটা দিয়ে দিয়েছি ওকে। কিন্তু এখন বড্ড বেশি খালি খালি লাগছে না জায়গাটা?”
“হ্যাঁ। নতুন কিছু ঝোলাবেন না কি?”
“হ্যাঁ। আজকে বাসা থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছি সেটা।”
“কি এনেছেন?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।
“আমার বেডরুমে যে ট্যাপেস্ট্রিটা ঝোলানো ছিল।”
“বেশ,” উঠে দাঁড়িয়ে বলল কুসানাগি। “চলুন ঝুলিয়ে ফেলি তাহলে।” ব্যাগের দিকে হাত বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল আয়ানে। “দাঁড়ান, হেসে বললো সে। “আপনি তো এখানে আমাকে কিছু প্রশ্ন করতে এসেছিলেন। সেগুলো সেরে নেবেন আগে?”
“নাহ,” কুসানাগি জবাব দিল। “একটু পরে জিজ্ঞেস করলেও বড় কোন ক্ষতি হবে না।”
“না,” দৃঢ়চিত্তে মাথা নাড়লো আয়ানে। “সেটা হবে না। আপনি এখানে একটা কাজে এসেছেন। আর কাজের গুরুত্ব সবসময় আগে।”
হেসে আবারো বসে পড়লো কুসানাগি। নোটপ্যাডটা বের করে এনেছে পকেট থেকে। আয়ানের চেহারায় আবার ফিরে এসেছে আগের গাম্ভীর্য।
“প্রশ্নগুলো শুনতে আপনার হয়তো খুব একটা ভালো লাগবে না, আশা করি কিছু মনে করবেন না।”
মাথা নাড়লো আয়ানে।
“আপনার সাথে দেখা হবার পূর্বে মি. মাশিবার যার সাথে সম্পর্ক ছিল তার পরিচয় জানতে পেরেছি আমরা। মিস জুঞ্জি সুকুই। নামটা কি পরিচিত লাগছে আপনার কাছে?”
“সুকুই…?”
“হ্যাঁ, বানানটা এরকম,” বলে নোটপ্যাডে অক্ষরগুলো সাজিয়ে দেখালো কুসানাগি।
“এই প্রথম নামটা শুনলাম,” সরাসরি তার চোখে দিকে তাকিয়ে বলল আয়ানে।
“মি. মাশিবা কি কখনো আপনার সাথে কোন লেখিকার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন? বাচ্চাদের বইয়ের লেখিকা।“
“বাচ্চাদের বই?” ভ্রুকুটি করে বলল আয়ানে।
“হ্যাঁ, মিস সুকুই বেশ কয়েকটা ছবির বইয়ের রচয়িতা। হয়তো মি. মাশিবার কাছ থেকে কোন আর্টিস্টের ব্যাপারে কিছু শুনেছিলেন আপনি?”
টেবিল থেকে কাপটা উঠিয়ে আবারো চুমুক দিল আয়ানে। “সরি, কিন্তু আমাকে ও কখনো কোন লেখিকার সম্পর্কে কিছু বলেনি। বললে মনে থাকতো। তাছাড়া খুব বেশি লেখক লেখিকা বা আর্টিস্টদের সাথে পরিচয় থাকার কথাও না ওর।”
“ঠিক আছে,” বলল কুসানাগি।
“ওর এই প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে কি কেসের কোন সম্পর্ক আছে?” আয়ানে জিজ্ঞেস করল।
“সেটাই জানার চেষ্টা করছি আমরা।”
“ওহ,” চোখ নামিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল আয়ানে।
“আরেকটা প্রশ্ন করতে চাচ্ছিলাম,” কুসানাগি বলল। “সাধারণত এরকম কিছু জিজ্ঞেস করি না। কিন্ত যার কথা বলছি তিনি যেহেতু আমাদের মাঝে আর নেই…”
“মানে?”
“মানে মিস সুকুই…তিনি দু’বছর আগে মারা গেছেন।”
বিস্ময় চাপা দেয়ার চেষ্টা করল না আয়ানে।
“তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, মি. মাশিবা তার এই সম্পর্কটার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেননি। আপনি কিছু বলতে পারবেন, কেন অমনটা করেছিলেন তিনি? আপনাদের সম্পর্কের ব্যাপারেও কি রাখঢাক করতেন?”
কাপটা দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে কিছুক্ষণ ভাবলো আয়ানে। “আমার স্বামী কখনো আমাদের সম্পর্কের কথা কারো কাছ থেকে লুকোয়নি। প্রথম যেবার দেখা হয়েছিল, মি. ইকাইও ছিলেন সেখানে।”
“হ্যাঁ, সেটা জানি।”
“তবে,” বলে কাপে চুমুক দিল আয়ানে। “মি. ইকাই যদি ওখানে না থাকতো তাহলে হয়তো সম্পর্কের ব্যাপারটা শুরুতেই কাউকে বলতো না ও।”
“সেটা কেন?”
“কারণ তখন আমাদের আলাদা হয়ে যাবার ব্যাপারে কারো কাছে কোন কৈফিয়ত দিতে হতো না।”
“তাহলে আপনার ধারণা ‘আলাদা হয়ে যেতে হবে এই কথাটা শুরু থেকেই মাথায় ঘুরতো তার?”
“আমি যে মা হতে পারবো না, এই সম্ভাবনাটা নিয়ে নিশ্চয়ই ভেবেছে সে। যদি বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হতাম, তাহলে ও বোধহয় আরো বেশি খুশি হতো।”
“কিন্তু আপনারা বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করার আগেই বিয়ে করে ফেলেছিলেন?”
একটা চতুর হাসি ফুটলো আয়ানের চেহারায়। আগে তার এই রূপ দেখেনি কুসানাগি। “আসলে আমি ওকে চেষ্টার সুযোগটাই দেইনি। জন্মনিরোধক পিল খেতাম বিয়ের আগ অবধি।”
“হুম। মিস সুকুইও জন্মনিরোধক পিল খেতেন কি না কে জানে, সাবধানে কথাটা বলল কুসানাগি। জানে যে একটা সীমা লঙ্ঘন করছে।
“মনে হয় না। সেজন্যেই তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে ইয়োশিতাকা।“
“দূরে সরে গিয়েছেন বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?”
“একদম সহজ তো ব্যাপারটা! ওর চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই প্রেগন্যান্ট হতে পারেননি তিনি। তাই সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে,” যেন খুব সাধারণ একটা ব্যাপারে কথা বলছে, এমন ভঙ্গিতে বলল আয়ানে।
নোটপ্যাডটা বন্ধ করে দিল কুসানাগি। “ধন্যবাদ,” কলম পকেটে ঢুকিয়ে বলল।
“এটুকুই? আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না?”
“না, আপাতত এটুকুই যথেষ্ট। যদি আমার কোন প্রশ্নে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তাহলে দুঃখিত।”
“কিছু মনে করিনি আমি। ইয়োশিতাকার সাথে পরিচয় হবার আগেও বেশ কয়েকজনের সাথে সম্পর্ক ছিল আমার।”
“জি, সেটাই স্বাভাবিক,” বলেই মনে মনে নিজেকে গালি দিল কুসানাগি।
আয়ানে হাসছে মলিন ভঙ্গিতে।
“চলুন ট্যাপেস্ট্রিটা ঝুলিয়ে ফেলি তাহলে,” কুসানাগি বলল।
“হ্যাঁ,” বলে ব্যাগের দিকে হাত বাড়িয়ে এবারো থেমে গেল আয়ানে। “নাহ, এখন ঝোলাবো না। দেয়ালটা পরিস্কার করতে হবে আগে। পরে কোন এক সময়।“
“আসলেই? ওটা ঝোলালে কিন্তু ঘরের সৌন্দর্য্য বেড়ে যাবে। আমার সাহায্যের দরকার হলে অবশ্যই বলবেন।”
ধন্যবাদ জানিয়ে বাউ করল আয়ানে।
সেলাই স্কুল থেকে বের হয়ে আজকের প্রশ্নোত্তর পর্ব নিয়ে ভাবতে লাগলো কুসানাগি। আয়ানে যেভাবে জবাব দিয়েছে সেটা নিয়েই ভাবছে মূলত। তার নিজের প্রতিক্রিয়াও কম নাটকীয় ছিল না, যদিও কিছু বুঝতে দেয়নি।
হঠাৎই ইউকাওয়ার বলা কথাটা মনে হওয়াতে থমকে গেল সে। আমার মনে হয় না ব্যক্তিগত ভাবে তুমি এতটা দূর্বল যে নিজের কাজের সাথে আবেগ মেশাবে।
আশা করা যায় তার বন্ধু ঠিকই বলেছে।