স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ১২

অধ্যায় ১২

“ধরুন একটু”—বলে মোবাইল ফোনটা নামিয়ে রেখে ডেস্কের ল্যান্ডফোনের রিসিভারটা কানে চাপালো তাতসুহিকো ইকাই। “কি? হ্যাঁ। সেইজন্যেই তোমাকে পাঠিয়েছি ব্যাপারটা সামলাতে পুরোটা। চুক্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বিস্তারিত লেখা আছে এ ব্যাপারে…হ্যাঁ। ওটুকু আমি দেখে দেব, সমস্যা নেই। ঠিক আছে, ধন্যবাদ।” রিসিভার নামিয়ে রেখে আবারো মোবাইলটা কানে ঠেকালো তাতসুহিকো। “সরি, অন্য একটা ফোন এসেছিল। হ্যাঁ, ওর সাথেই কথা বলছিলাম। জি, মিটিংয়ে যেমনটা আলোচনা করেছিলাম আমরা…বুঝতে পেরেছি।

অবশেষে ফোনে কথা বলা শেষ হলো তাতসুহিকোর। সামনে রাখা মেমো প্যাডে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পেন্সিল দিয়ে লেখতে শুরু করল। সিইও’র ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে, তার নিজের ডেস্ক। কিছুদিন আগেও ইয়োশিতাকা মাশিবা বসতো এখানে।

মেমোটা তার পকেটে ঢুকিয়ে পাশের সোফায় বসে থাকা কুসানাগির দিকে তাকালো সে। “দুঃখিত, আপনাকে এতক্ষণ অপেক্ষা করালাম।”

“সমস্যা নেই, আপনি ব্যস্ত বুঝতেই পারছি।”

“আসলেও একটু ব্যস্ত। মাশিবা যখন ছিল তখন একাই সবকিছু সামলাতো সে। এটা নিয়ে অনেকবার ওর সাথে বচসা হয়েছে আমার। এখন ওর অনুপস্থিতিতে সবাই পানিতে পড়ে গেছে। সেখান থেকেই একটু একটু করে উদ্ধারের চেষ্টা করছি,” কথাগুলো বলতে বলতে সোফায় কুসানাগির পাশে এসে বসলো ইকাই।

“আপনি কি সিইও পদেই থাকবেন?”

হাত নেড়ে সম্ভাবনাটা দূর করে দিল আইনজীবী। “আসলে ম্যানেজমেন্টের কোন পোস্টে থাকার ইচ্ছা বা যোগ্যতা কোনটাই নেই আমার। আমি কলকাঠি নাড়ি পর্দার পেছন থেকে। এই ডেস্কটায় যত তাড়াতাড়ি অন্য কেউ এসে বসবে আমার জন্যে তত সুবিধে। আপনার যদি মনে হয়ে থাকে, কোম্পানি হাতিয়ে নেয়ার জন্যে মাশিবাকে খুন করেছি আমি, তাহলে ভুল করছেন।”

ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল কুসানাগির।

উচ্চস্বরে হেসে উঠল ইকাই, “দুঃখিত, শেষ কথাটা মজা করে বলেছি। আসলে এরকম ব্যাপার নিয়ে ঠাট্টা করা উচিত নয়। মনে হয় ওর

অনুপস্থিতিতে সব কিছু সামাল দিতে দিতে মাথাটা গেছে আমার।”

“আমি দুঃখিত যে আপনাকে এরকম ব্যস্ত সময়ে এসে বিরক্ত করছি,” কুসানাগি বলল।

“আরে নাহ, দুঃখিত হতে যাবেন কেন। আমি নিজেও তদন্তের ব্যাপারে সব কিছু বিস্তারিত জানতে চাই। নতুন কোন তথ্য হাতে এসেছে আপনাদের?”

“বলতে পারেন, ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে কেসটাকে দেখছি আমরা এখন। তাছাড়া, কফিতে বিষ কিভাবে মিশলো সেটার ব্যাপারে কিছুটা হলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।”

“বাহ, ভালো তো।”

“আপনি কি এটা জানতেন, মি. মাশিবা অতিরিক্ত রকমের স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন? এমনকি ট্যাপের পানিও খেতেন না।”

এক ভ্রু উঁচু করল তাতসুহিকো। “এটাকে ঠিক অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচেতনতা বলাটা বোধহয় উচিত হচ্ছে না। আমি নিজেও ট্যাপের পানি খাই না, বেশ কয়েক বছর যাবত।“

“তাই?” কুসানাগি বলল। বড়লোকের ভাবসাবই আলাদা। “কোন বিশেষ কারণ আছে?”

“সেরকম কিছু না আসলে,” সামনের ডেস্কের দিকে তাকিয়ে বলল তাতসুহিকো। “ঠিক কবে থেকে যে ট্যাপের পানি খাওয়া বন্ধ করেছিলাম সেটা ভুলেই গেছি। এমন না যে ট্যাপের পানির স্বাদ অন্যরকম। বরং এটা হতে পারে যে কোন মিনারেল ওয়াটার কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়েছিলাম…” হঠাৎই কুসানাগির দিকে তাকালো সে। “পানিতে বিষ মেশানো হয়েছিল?”

“শতভাগ জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, কিন্তু এটা একটা সম্ভাবনা। শুক্রবার রাতে যখন মাশিবাদের বাসায় দাওয়াতে গিয়েছলেন, মিনারেল ওয়াটার খেয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ, মিনারেল ওয়াটারই দিয়েছিল। পানিতে বিষ মিশিয়েছিল তাহলে?”

“আমাদের কাছে তথ্য আছে, কফি বানানোর সময় মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে পানি ব্যবহার করতেন মি. মাশিবা। আপনি কি এটা জানতেন?” পাল্টা প্রশ্ন করল কুসানাগি।

“হ্যাঁ,” মাথা নেড়ে বলল তাতসুহিকো। “এভাবেই তাহলে কফিতে বিষ মিশেছিল।”

“এখন প্রশ্ন হচ্ছে-ঠিক কখন পানিতে বিষ মিশিয়েছিল খুনি? আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই, মি. মাশিবা কি উইকেন্ডে কারো সাথে বাসায় দেখা করেছিলেন কি না? গোপনেও হতে পারে সেটা।”

“গোপনেও হতে পারে মানে?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কুসানাগির দিকে তাকালো তাতসুহিকো

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখন পর্যন্ত এরকম কারো নাম জানতে পারিনি। কিন্তু এটা খুবই সম্ভব, ঐ দুই দিনে কেউ হয়তো তার বাসায় গিয়েছিল। মি. মাশিবার সম্মতিতেই।”

“মানে আপনি জানতে চাইছেন, মিসেস মাশিবার অনুপস্থিতিতে অন্য কোন নারীকে বাসায় নিয়ে এসেছিল কি না ইয়োশিতাকা।”

“এটা একটা সম্ভাবনা।”

সোজা হয়ে বসলো তাতসুহিকো। “দেখুন ডিটেক্টিভ, কিছু ব্যাপারে পরিস্কার হয়ে নেওয়া ভালো। আমি জানি, তদন্তের খাতিরে কিছু ব্যাপার গোপন রাখতে হয় আপনাদের। ক্রিমিনাল ইনকোয়্যারি সম্পর্কে ধারণা আছে আমার। তবে আপনাকে আমি নিশ্চিত করছি, এখানে আপনি আমাকে যা বলবেন তা আর কেউ জানবে না। বিনিময়ে আমিও যা যা জানি সব আপনাকে বলবো।”

কিছু না বলে তাতসুহিকোর দিকে তাকালো কুসানাগি।

“আপনারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে মাশিবার একজন প্রেমিকা ছিল,” সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলল তাতসুহিকো।

“এ সম্পর্কে কতটা জানেন আপনি,” চেহারার ভাব যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলল কুসানাগি।

“এক মাস আগে আমার কাছে সবকিছু স্বীকার করেছিল সে। “জীবনসঙ্গী পরিবর্তন” করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কাউকে নিশ্চয়ই পেয়ে গেছে ইতোমধ্যেই,” চোখ কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল তাতসুহিকোর। “আপনারা নিশ্চয়ই তার পরিচয়ই জেনে গেছেন। সেজন্যেই আমার সাথে কথা বলতে এসেছেন। তাই না?”

মুচকি হাসলো কুসানাগি। “হ্যাঁ, একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল মি. মাশিবার।”

“তার পরিচয় জানতে চাইবো না আমি। তবে সম্ভাব্য একজনের কথা মাথায় আসছে।”

“কিছু খেয়াল করেছিলেন?”

“আসলে যুক্তি দিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করেছিলাম। মাশিবা এরকম কেউ না যে কি না বারে গিয়ে মেয়ে পটানোর চেষ্টা করবে। অফিসের কারো সাথেও কোন প্রকার সম্পর্কে জড়ানোর কথা নয় তার। সুতরাং এভাবে চিন্তা করলে কেবল একজন নারীর কথাই মাথায় আসে, যে সবসময় তার আশপাশে ছিল,” ইকাই মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। “আমার নিজের বিশ্বাস করতে তাও কষ্ট হচ্ছে জানেন? বউকে এসব ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না!”

“আমরা সেই নারীর কাছ থেকেই জানতে পেরেছি যে উইকেন্ডে মাশিবাদের বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। এখন আমাদের জানতে হবে যে তিনি বাদে অন্যকেউ ঐ দু’দিনে সেখানে গিয়েছিলেন কি না।”

“মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে স্ত্রীর অনুপস্থিতি একজন নয়, বরং আরো বেশি প্রেমিকাকে বাসায় নিয়ে এসেছিল মাশিবা! এ দেখি রীতিমত ক্যাসানোভা!” উরুতে চাপড় দিয়ে বলল তাতসুহিকো। “কিন্তু আমার মনে হয় না এরকম কিছু হয়েছিল। মাশিবা চেইন স্মোকার হতে পারে, কিন্তু একসাথে দু’টা সিগারেট খাওয়ার মতো মানুষ নয় ও।”

“মানে?”

“সে হয়তো একজনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় অন্যজনের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু একইসাথে দু’জনের সাথে প্রেম করার কথা নয় তার। আমার ধারণা নতুন প্রেমিকার সাথেই আগামী জীবনটা কাটানোর পরিকল্পনা করছিল সে। এমনকি এটাও হয়তো সত্য যে, স্ত্রী’র সাথে ভালো করে সময়ও কাটাতো না সে, সম্পর্কটা হবার পর থেকে। আসলে একবার কথায় কথায় ও আমাকে বলেছিল, শুধু ‘তৃপ্তির জন্যে সেক্স, এটা ভবিষ্যতের জন্যে তুলে রেখেছে সে।”

“অর্থাৎ সন্তান চাই তার?”

“হ্যাঁ, সবকিছু তো সেদিকেই ইঙ্গিত করছে,” তাতসুহিকোর ঠোঁটে প্রচ্ছন্ন হাসির আভাস।

তাহলে তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল বলতে হবে, ভাবলো কুসানাগি। “আপনার কি ধারণা, সন্তান ধারণই কি তার বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল?”

“প্রধান-টধান কিছু না। এটাই ছিল তার বিয়ে করার একমাত্র উদ্দেশ্য,” আড়মোড়া ভেঙে বলল তাতসুহিকো। “অনেক আগে থেকেই সন্তান নেয়ার ব্যাপারে আমার সাথে আলাপ করতো ও। যখন ব্যাচেলর ছিল, তখনও বলতো। যত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেয়া যায়, তত না কি ভালো ওর জন্যে। কেবল উপযুক্ত মা খুঁজে বের করার অপেক্ষা। সেজন্যে অনেকের সাথেই সম্পর্কে জড়িয়েছে ও, লোকে প্লেবয় হিসেবেই চিনতো তাকে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ওর উদ্দেশ্যে ছিল একটাই- একদম সঠিক জীবনসঙ্গী বেছে নেয়া।”

“বারবার জীবনসঙ্গী বলছেন। বিয়ে না করেও কিন্তু অনেকে জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয় ইদানীং। তার কি উচিত ছিল না একজন সঠিক স্ত্রীর খোঁজ করা?”

জবাবে কাঁধ ঝাঁকালো তাতসুহিকো। “ওর কাছে জীবনসঙ্গী বা স্ত্রী এসবের একটাই মানে। ‘এমন একজনকে চাই আমার, যে আমার সন্তানের মা হতে পারবে। ঘরদোরের কাজ করার জন্যে অনেক লোক পাওয়া যাবে–এটাই বলেছিল আমাকে।”

“তাই?”

“হ্যাঁ। আমি একবার আয়ানের তারিফ করে ওকে কিছু কথা বলেছিলাম। তিনি যেভাবে ওর যত্ন নেন, সেটা আসলেও প্ৰশংসনীয় সেটার প্রেক্ষিতেই এই কথাগুলো বলে। একজন আদর্শ স্ত্রী বলতে যা বোঝায়, আয়ানে মাশিবা একদম সেটাই। ও যখন বাসায় থাকতো, তখন সবসময় লিভিংরুমের সোফায় বসে সেলাইয়ের কাজ করতো সে, যাতে যে কোন দরকারে ছুটে যেতে পারে। তবে এসবের কোন মূল্য ছিল না ইয়োশিতাকার কাছে। ওর মতে যে মহিলার সন্তান ধারণের কোন ক্ষমতা নেই, তার সাথে সাজিয়ে রাখা শো-পিসের কোন পার্থক্য নেই। দুটোই জায়গা নষ্ট করছে।”

“নারীবাদীদের কানে এই কথা গেলে তারা মি. মাশিবাকে ছেড়ে কথা বলতো না,” মন্তব্য করল কুসানাগি। “সন্তান নেয়ার জন্যে এরকম উতলা হয়ে ছিল কেন সে?”

“তা বলতে পারবো না। মানে, সন্তান আমিও চেয়েছি। কিন্তু ওর মত বাড়াবাড়ি কখনো করিনি ব্যাপারটা নিয়ে। অবশ্য একবার যখন আপনি বাবা হবেন, তখন পুরো জীবনটাই বদলে যাবে,” উষ্ণ হেসে বলল তাতসুহিকো। নব্য সন্তানের জনকদের চেহারায় এরকম হাসি দেখা যায়। “হয়তো তার এরকম চিন্তাভাবনার পেছনে শৈশবের একটা ভূমিকা আছে।”

“তাই? কিরকম?”

“আপনি কি এটা জানেন যে মাশিবা শৈশবে খুব একটা পারিবারিক সময় কাটাতে পারেনি?”

“শুনেছি কিছুটা। কিন্তু আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাই।

মাথা নাড়লো ইকাই। “আসলে ও যখন ছোট ছিল তখনই বিচ্ছেদ হয়ে যায় ওর বাবা মা’র। ওর বাবা দেখাশোনার ভার পান সন্তানের। কিন্তু কাজের জন্যে বাসায় খুব বেশি সময় কাটাতে পারতেন না তিনি। তাই একরকম দাদীর কাছে বড় হয় মাশিবা। কিন্তু সেই পরিস্থিতিও বদলে যায় যখন ওর দাদী মারা যান। এর কয়েকমাসের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওর বাবাও পরলোকে পাড়ি জমান। তখন বিশের আশপাশে বয়স ওর। ট্রাজেডি বলতে পারেন। পুরোপুরি একা হয়ে যায় মাশিবা। পারিবারিক সূত্রে বেশ বড় একটা অঙ্কের সম্পত্তির মালিক হয় সে। কিশোর বয়স থেকেই কাজ করা শুরু করে, সুতরাং ব্যবসার হাল ধরতেও সমস্যা হয়নি। কিন্তু ঐ যে-পরিবার থেকে খুব একটা ভালোবাসা পায়নি।”

“নিজে সস্তানের পিতা হয়ে সেই অপূর্ণতাটাই পূর্ণ করতে চাচ্ছিলেন তিনি?”

“এটাই কি স্বাভাবিক না? রক্তের সম্পর্কের কাউকে চাচ্ছিলো ও-একদম নিজের কেউ। কারণ-” খানিকটা ঠাণ্ডা স্বরে পরের কথাগুলো বলল তাতসুহিকো ইকাই, “আপনি আপনার প্রেমিকা বা স্ত্রী-কে যতটাই ভালোবাসুন না কেন, জিনগতভাবে তাদের সাথে কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই।”

কুসানাগি ধরতে পারছে, মি. মাশিবা আর তাতসুহিকোর দৃষ্টিভঙ্গি খানিকটা একইরকম। একারণেই ভিক্টিমের আচরণ সম্পর্কে জানতে এই কথাগুলো কাজে দেবে।

“সেদিন কথায় কথায় শুনলাম, মি. মাশিবা আর আয়ানের যখন প্ৰথম দেখা হয়েছিল, আপনি সেখানে ছিলেন। একটা পার্টিতে বোধহয়?”

“হ্যাঁ। একটা শিল্প-মেলা শেষে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি থেকে লোক এসেছিল। এই পার্টিগুলোতে প্রায়ই নতুন লোকজনের সাথে পরিচয় হয়, যেগুলো একসময় প্রণয়ে রূপ নেয়। বিবাহিতরা খুব একটা যায় না, তবে সেবার আমাকে মাশিবা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল। ওকে না কি একজন ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে যেতেই হতো। ওখানেই নিজের হবু স্ত্রীর সাথে পরিচয় হয় তার। আসলে জীবনে চলার পথে কখন যে কার সাথে দেখা হয়ে যায়, বলা মুশকিল। আর নতুন কারো সাথে পরিচয় হওয়ার জন্যে ওটাই ওর জন্যে একদম সঠিক সময় ছিল।”

“একথা কেন বললেন?”

ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল ইকাইয়ের। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বলে ফেলেছে সে, মনে মনে ভাবলো কুসানাগি।

“আয়ানের সাথে দেখা হবার আগে একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল ওর, ‘ কিছুক্ষণ পর বলল আইনজীবি। “পার্টির কিছুদিন আগেই ব্রেক-আপ হয়ে যায় তাদের। হয়তো ওর চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ঘটনাটা। এজন্যেই তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে ফেলে,” এটুকু বলে ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ালো ইকাই। “দয়া করে আয়ানেকে এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না। মাশিবার কাছে প্রমিস করেছিলাম যে কেউ জানবে না ঘটনাটা।”

“আপনি কি জানেন, কেন আগের সম্পর্কটার ইতি টেনে দেয় সে?”

কাঁধ ঝাঁকালো ইকাই। “আসলে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে খুব একটা বেশি কথা বলতাম না আমরা। তবে যদি ধারণা করতে বলেন, তাহলে বলবো, সেই প্রেমিকার হয়তো সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা ছিল না অথবা সন্তান ধারণে অক্ষম ছিল সে।”

সেজন্যেই আয়ানেকে বিয়ে করে সে এবং একই কারণে হিরোমির কাছে যায়…

সাধারণত লোকজনকে বুঝতে খুব একটা সমস্যা হয় না কুসানাগির, কিন্তু ইয়োশিতাকা মাশিবাকে কেন যেন ধরতেই পারছে না সে। আয়ানে চমৎকার একজন মহিলা, মাশিবার মত সফল একজন ব্যবসায়ীর আদর্শ জীবনসঙ্গী। তাহলে তার সাথে কেন খুশি থাকতে পারলো না সে?

“আগের প্রেমিকা কেমন ছিল তার?”

আবারো কাঁধ ঝাঁকালো ইকাই। “জানি না আমি। কখনো দেখা হয়নি তার সাথে। মাশিবা গোপনীয়তা পছন্দ করতো। হয়তো বিয়ের সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করার পরে জানাতো।”

“ব্রেক-আপের সময়টাই সে কি স্বাভাবিক ছিল?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

“হ্যাঁ, কোন রকমের অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি। অবশ্য সে ব্যাপারে কখনো বিস্তারিত কথা বলিনি আমরা। “আপনি নিশ্চয়ই এটা ভাবছেন না যে সেই প্রেমিকার হাত ছিল ওর মৃত্যুতে?” প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে কুসানাগির দিকে তাকালো ইকাই।

মাথা ঝাঁকালো কুসানাগি। “ওরকম কিছু না। ভিক্টিম সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব তথ্য জানার চেষ্টা করছি কেবল।”

হেসে হাত নাড়লো ইকাই। “আপনি যদি এটা ভেবে থাকেন যে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রাক্তন প্রেমিকাকে বাসায় নিয়ে এসেছিল সে, তাহলে ভুল পথে এগোচ্ছেন। এই কথাটা জোর দিয়ে বলতে পারি আমি, তার স্বভাবের সাথে এটা যায় না।“

“কারণ একই সাথে দু’টা সিগারেট টানার মানুষ নয় সে, তাই তো?”

“হ্যাঁ,” মাথে নেড়ে সম্মতি জানালো ইকাই।

“কথাটা মাথায় থাকবে আমার,” ঘড়ির দিকে একবার তাকালো কুসানাগি। “সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে,” উঠে দাঁড়িয়ে বলল।

দরজার দিকে হাঁটছিল সে, কিন্তু দ্রুত তার পাশ কাটিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ধরলো তাতসুহিকো ইকাই।

“ধন্যবাদ,” বলল কুসানাগি।

“ডিটেক্টিভ কুসানাগি,” গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল তাতসুহিকো। “আপনার তদন্তের ধরণের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাই না আমি, কিন্তু একটা ব্যাপারে অনুরোধ আছে আমার।”

“কি?”

“মাশিবা কোন সেইন্ট বা সাধুর মত জীবন যাপন করতো না, এটা মানছি। ভালোমতো খোঁজ খবর করলে হয়তো অনেক কিছুই জানতে পারবেন। কিন্তু আমার মতামত যদি চান, তাহলে বলবো যে ওর মৃত্যুর সাথে অতীতের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং খুব বেশি গভীরে গিয়ে খোঁজ খবর না করলেই বোধহয় ভালো হবে। কোম্পানির সময়ও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।”

কোম্পানির ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত, না কি অন্য কিছু? ‘আমরা যদি কিছু জানতেও পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি যে সেটা গণমাধ্যম পর্যন্ত যাবে না,” বলে বাইরে বেরিয়ে এলো সে।

লিফটের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করল কুসানাগি, ভেতরে ভেতরে কেন যেন ভিক্টিমের প্রতি এক ধরণের বিতৃষ্ণা কাজ করতে শুরু করেছে তার। নারীরা তার চোখে বাচ্চা পয়দা করার মেশিন বৈ কিছু ছিল না! নিজের এতটা রেগে ওঠা দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেল সে।

সবার প্রতিই কি একইরকম দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করতো মাশিবার? কর্মচারীরা কি তার কাছে কেবল কোম্পানির কাজ করার মেশিন? ক্লায়েন্টরা টাকা কামানোর কারখানা? এভাবে চিন্তা করলে তো পুরো জীবনে অনেকেরই বিরাগভজন হবার কথা তার।

হিরোমি ওয়াকাইয়ামা এখনও সন্দেহের উর্ধ্বে নয় অবশ্য। তবে আয়ানের কথাতেও যুক্তি আছে। কেন নিজের সন্তানের পিতাকে হত্যা করতে যাবে কেউ? তবে এতক্ষণ ইয়োশিতাকা মাশিবা সম্পর্কে যা যা শুনলো সে, কোন নারীর সাথে তার সম্পর্কের কখন অবনতি ঘটে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। স্ত্রীকে ছেড়ে হিরোমির সাথে জীবন শুরু করতে চাইছিল সে, কারণ হিরোমি সন্তানসম্ভবা ছিল। তাকে সে আসলেও ভালোবাসতো কি না কে জানে। হয়তো স্বার্থপরের মতন এমন কিছু একটা করেছিল যেটায় তাকে ঘৃণা করতে বাধ্য হয় হিরোমি।

তবে উতসুমির যুক্তিও ফেলনা নয়, খুন করার পর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আলামত লুকোনোর চেষ্টা না করাটা খুব বড় রকমের বোকামী। আর হিরোমি ওয়াকাইয়ামা মোটেও বোকা নয়। এই যুক্তির পাল্টা কোন যুক্তি খুঁজে পায়নি কুসানাগি। “হয়তো ভুলে গিয়েছিল সে”- কথাটা ধোপে টিকবে না।

আয়ানের আগে যার সাথে সম্পর্ক ছিল মাশিবার, তার সম্পর্কে খোঁজ নিবে বলে সিদ্ধান্ত নিল কুসানাগি। বিল্ডিং থেকে বের হবার আগেই পরিকল্পনা শুরু করে দিল কিভাবে এগোবে সেটা নিয়ে।

*

“ওর প্রাক্তন প্রেমিকা?”

“আমি জানি এটা একটা স্পর্শকাতর বিষয়। বিশেষ করে আপনার জন্যে,” ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল কুসানাগি।

আয়ানে যে হোটেলে থাকছে সেটারই লাউঞ্জে বসে আছে দু’জন। কিছুক্ষণ আগে কুসানাগি ফোন করে দেখা করার কথা জানিয়েছিল।

“এটার সাথে কি তদন্তের কোন সম্পর্ক আছে?”

“আসলে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যেহেতু আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে খুন হয়েছেন আপনার স্বামী-সুতরাং সামান্য মোটিভ আছে, এরকম সবার ব্যাপারেই খোঁজ নিতে হবে আমাদের।”

একটা মলিন হাসি ফুটলো। “ওকে যতটা চিনেছি, এটা বলতে পারবো যে আগের সম্পর্কটাও হুট করে শেষ করে দিয়েছিল সে। যেমনটা আমার সাথে করেছে।”

“ইয়ে…,” পরের কথাটা বলবে কি না ভাবলো কুসানাগি। “আমি যতটা বুঝতে পারছি…আপনার স্বামী এমন কাউকে খুঁজছিলেন যিনি তার সন্তানের মা হতে পারবেন। এরকম পুরুষেরা সাধারণত তাদের উদ্দেশ্যটাকে এতই গুরুত্ব দেয় যে সঙ্গীর প্রতি নজরই দেয় না অনেক সময়। হয়তো এ কারণেই তার আগের প্রেমিকা রাগ পুষে রেখেছে তার ওপর।”

“যেরকমটা আমি পুষে রেখেছি?”

“আমি কিন্তু সেটা বলিনি…

“না, ঠিক আছে,” হাত উঁচিয়ে বলল আয়ানে। “জুনিয়র ডিটেক্টিভের নাম যেন কি ছিল? মিস উতসুমি? তার কাছ থেকে আপনারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে হিরোমি আমার স্বামীর “উদ্দেশ্য” পূরণের দিকেই এগোচ্ছিল? এইজন্যেই আমাকে ছেড়ে ওর সাথে সংসার শুরু করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল ইয়োশিতাকা। এখন আমি যদি বলি এই কারণে তার ওপর কোন ক্ষোভ পুষে রাখিনি আমি, তাহলে সেটা ভুল বলা হবে।”

“কিন্তু আপনার পক্ষে তো খুনটা করা অসম্ভব।”

“আপনি এ ব্যাপারে একদম নিশ্চিত দেখছি।”

“প্লাস্টিকের বোতলগুলোতে কিছু পাওয়া যায়নি, সুতরাং এটা ভাবাটাই সমীচিন হবে যে সরাসরি কেতলির পানিতেই বিষ মেশানো হয়েছিল। আর সেটা আপনার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাহলে একটা মাত্রই সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে…রবিবারে কেউ একজন এসে কেতলির পানিতে বিষ মিশিয়েছে। এটা বিশ্বাস করাটা একটু শক্তই যে আপনার স্বামীর অগোচরে কেউ প্রবেশ করেছিল বাসায়, সুতরাং যে এসেছিল, মি. মাশিবাই তাকে নিয়ে এসেছিলেন। অনেক খোঁজ নিয়েছি আমরা, সবার সাথে কথাও বলেছি-কিন্তু সেই ব্যক্তির পরিচয় জানতে পারিনি। এটা এখনও একটা রহস্য। এসব গোপনীয়তা মানুষ সাধারণত বিশেষ কিছু সম্পর্কের ক্ষেত্রেই অবলম্বন করে।”

“প্রেমিকা না কি প্রাক্তন প্রেমিকা?” জিজ্ঞেস করল আয়ানে। “আসলে, ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করতাম আমি, কিন্তু ও কখনো আগের প্রেমিকা সম্পর্কে কথা বলেনি আমার সাথে।”

“কিছুই বলেননি? এক্ষেত্রে একদম সাধারণ তথ্যও কিন্তু আমাদের কাজে আসতে পারে, মিসেস মাশিবা।”

কাঁধ ঝাঁকালো আয়ানে। “অতীত সম্পর্কে কথা বলার মত মানুষ কখনোই ছিল না ইয়োশিতাকা। সবসময়ই একটা দেয়াল তুলে রেখেছিল। এমনকি আগে যে রেস্তোরাঁগুলোতে একবার গিয়েছে সেগুলোতেও দ্বিতীয়বার যেতে চাইতো না। মানে আগের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে যেখানে গিয়েছে, সেগুলোর কথা বলছি।

“বেশ,” ভ্রু কুঁচকে বলল কুসানাগি। একটু পরেই সে জিজ্ঞেস করতো যে কোন রেস্তোরাঁগুলোতে নিয়মিত যাতায়ত ছিল মাশিবাদের।

ইয়োশিতাকা মাশিবা সাবাধানী ছিল, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তার অফিসে বা বাসায় হিরোমি ওয়াকাইয়ামার উপস্থিতির কোন চিহ্ন কিন্তু পায়নি তারা আপাতদৃষ্টিতে, কফির কাপটা ছাড়া। তার মোবাইল ফোনে যে নম্বরগুলো ছিল সেগুলোও বেশিরভাগ কাজ সংক্রান্ত বা পুরুষ বন্ধুদের। হিরোমির ফোন নম্বর সেভও করেনি সে।

“দুঃখিত যে আপনাকে সাহায্য করতে পারলাম না।“

“দুঃখিত হবার কিছু নেই।“

“কিন্তু”—কথাটা শেষ করবার আগেই ফোন বেজে উঠল আয়ানের। মোবাইলটা বের করে ডিসপ্লের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো সে। “ফোনটা ধরলে কি কোন সমস্যা হবে?” দ্বিধান্বিত স্বরে বলল পরমুহূর্তে।

“না, কিসের সমস্যা,” কুসানাগি বলল।

“হ্যালো? আয়ানে বলছি।”

শান্তস্বরেই কিছুক্ষণ কথা বলল সে, কিন্তু খানিক বাদের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল তার। উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে কুসানাগির দিকে তাকালো একবার। “অবশ্যই, আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি কি-ওহ, আচ্ছা। ঠিক আছে। ধন্যবাদ,” লাইন কেটে দিল সে। “আমার বোধহয় বলা উচিত ছিল যে আপনি আছেন এখানে?” থুতনিতে ডানহাত ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

“কে ফোন করেছিল?”

“ডিটেক্টিভ উতসুমি।”

“কেন?”

“উনি রান্নাঘরটা আবার খতিয়ে দেখতে চান। আমার কোন আপত্তি আছে কি না জিজ্ঞেস করার জন্যে ফোন দিয়েছিলেন। খুব বেশি সময় না কি লাগবে না।”

“রান্নাঘরে আবার কি খতিয়ে দেখবে? কি চলছে ওর মাথায়?” বিড়বিড় করে নিজেকেই প্রশ্ন করল কুসানাগি।

“হয়তো কফিতে কিভাবে বিষ মিশলো সেটা আরো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি।”

“সেটাই হবে হয়তো,” হাতঘড়ির দিকে তাকালো কুসানাগি, এরপর টেবিলে রাখা বিলটা হাতে তুলে নিল। “ওর সাথে আমিও ঘুরে দেখি রান্নাঘরটা। আপনার সমস্যা হবে কোন?”

“নাহ,” আয়ানে বলল নিচের দিকে তাকিয়ে। “আসলে আমার একটা অনুরোধ আছে।”

“জি?”

“আমি জানি, এটা আপনার দায়িত্বে পড়ে না …“

“নির্দ্বিধায় বলুন।”

হাসলো আয়ানে। আরেকবার মোচড় দিয়ে উঠল কুসানাগির ভেতরটা। “আসলে বাসার ফুলগাছগুলোতে পানি দেয়ার সমস্য হয়েছে। যখন আমি এখানে উঠেছিলাম, ভেবেছিলাম খুব বেশিদিন থাকতে হবে না। বড়জোর দুই দিন।”

“আমি দুঃখিত আপনার এই অসুবিধার জন্যে,” কুসানাগি বলল। “আপনি খুব শিঘ্রই বাসায় ফিরতে পারবেন, আমি দেখছি ব্যাপারটা। ফরেনসিকের কাজ প্রায় শেষ। এখন আরেকবার সরেজমিনে পুরো বাসা আমাদের কর্মকর্তারা দেখার পরেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যাবে। আমি আপনাকে জানাবো।”

“না, ঠিক আছে। আসলে আমার এখানে থাকলেই বোধহয় ভালো লাগবে আগামী কয়েকদিন। কিছুদিন আগেও যেখানে আমরা দু’জন ছিলাম, এখন সেখানে একা একা থাকার কথা ভাবলেও যেন কেমন লাগে।“

“আমি বুঝতে পারছি।”

“আমি জানি, সত্যটা খুব বেশিদিন অস্বীকার করে থাকতে পারবো না। তবুও আরো কয়েকটা দিন এখানেই থাকবো, অন্তত শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানটা শেষ না হওয়া অবধি।”

“ওহ, ভালো কথা মনে করেছেন। খুব দ্রুতই মি. মাশিবার লাশ হস্তান্তর করা হবে।”

“ধন্যবাদ। তাহলে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত…” বলল আয়ানে। “আর আমার বাসার ফুলগাছগুলোতে পানি দেয়ার কথা ভাবছিলাম আগামীকাল, কিছু জিনিসও দরকার ছিল। আমি জানি এটা সেরকম কোন ব্যাপার নয়, কিন্তু আমি চাই না গাছগুলো পানির অভাবে মারা যাক।”

“ভাববেন না। আমি ফুলগাছগুলোতে পানি দিয়ে দেব। বাগানের পাশাপাশি আপনার বারান্দায় রাখা টবগুলোতেও তো পানি দিতে হবে?”

“আসলেও কোন সমস্যা হবে না আপনার? আমি আসলে নিজের কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাতে চাই না কখনোই।”

“আপনার সহায়তার বিনিময়ে এটুকু করা তো আমাদের কর্তব্য। আমি না পারলেও অন্য কাউকে দিয়ে গাছে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করবো, চিন্তা করবেন না।”

কুসানাগি উঠে দাঁড়ালে আয়ানেও উঠল। তার চোখের দিকে তাকালো সে। “ফুলগাছগুলো আমার খুব প্রিয়,” অবসাদ মাখা কণ্ঠে কথাগুলো বলল আয়ানে। খানিকটা অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলো কুসানাগি।

“বুঝতে পারছি,” বলল সিনিয়র ডিটেক্টিভ। তার মনে আছে, স্যাপ্পোরো থেকে ফেরার পরেই গাছগুলোতে পানি দিয়েছিল মিসেস মাশিবা।

“বিয়ের আগে থেকেই গাছগুলো ছিল আমার সাথে। সবগুলোর সাথেই কোন না কোন স্মৃতি জড়িয়ে আছে…” শূন্যদৃষ্টিতে কথাগুলো বলল আয়ানে। হঠাৎই সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো ঠেকতে লাগলো কুসানাগির কাছে।

“আমি অবশ্যই গাছগুলোতে পানি দেব। চিন্তা করবেন না,” বলে বিল মেটানোর জন্যে কাউন্টারের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করল সে।

হোটেলের সামনে থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে মাশিবাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আসার আগে আয়ানে যে চেহারায় তাকে বিদায় দিয়েছে সেটা এখনও স্পষ্ট তার মানসপটে।

এসময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে হঠাৎই একটা হোম রিপেয়ার সেন্টার চোখে পড়লো তার। ট্যাক্সিচালককে গাড়ি থামাতে বলে দরজা খুলল সে। “এখনই আসছি,” বলে বের হয়ে গেল।

পাঁচ মিনিট পর লাফাতে লাফাতে গাড়িতে এসে উঠল।

একটা পুলিশ ক্রুজার পার্ক করে রাখা আছে মাশিবাদের বাড়ির সামনে। প্রতিবেশীদের কৌতূহল তুঙ্গে উঠবে এখন, মনে মনে বলল সে।

ইউনিফর্ম পরিহিত একজন অফিসার দাঁড়িয়ে আছে সামনের গেটের সামনে। মি. মাশিবা যেদিন মারা যান সেদিনও একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করছিল সে। কুসানাগির উদ্দেশ্যে একবার কেবল মাথা নাড়লো।

প্রবেশপথের মুখে তিন জোড়া জুতো দেখতে পেলো কুসানাগি। ট্রেইনারটা উতসুমির। অন্য দুটো পুরুষের জুতো। একটা সস্তা, প্রতিদিনের ব্যবহারে মলিন। অন্যটা চকচকে, নতুন। আরমানির লোগো দেখা যাচ্ছে।

হলওয়ে পার হয়ে লিভিংরুমের উদ্দেশ্যে হাঁটলো সে। দরজাটা খোলাই আছে; ভেতরে ঢুকে দেখলো রুমটায় কেউ নেই। রান্নাঘর থেকে একজনের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।

“দেখে তো মনে হচ্ছে না যে কেউ ছুঁয়েছিল।”

“তাই না?” উতসুমি জবাব দিল। “ফরেনসিকের লোকেরাও একই কথা বলেছে। গত অন্তত এক বছরে কেউ এগুলোতে হাত দেয়নি।”

রান্নাঘরে উঁকি দিল কুসানাগি। সিঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উতসুমি, তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে আছে একজন। কেবিনেটের দিকে তাকিয়ে আছে সে, তার চেহারা দেখতে পেলো না কুসানাগি। কিশিতানি দাঁড়িয়ে আছে অন্য দু’জনের পাশে। সে-ই প্রথম খেয়াল করল কুসানাগিকে।

“হ্যালো, স্যার,” বলল সে।

চমকে ঘুরে তাকালো উত্তসুমি। লাল হয়ে উঠেছে তার চেহারা।

“কি করছো তোমরা এখানে?” জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“আপনি এখন এখানে…”

“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে। আমি জিজ্ঞেস করেছি যে এখানে কি করছো তোমরা?”

“ফোর্সের একজন দক্ষ কর্মীর সাথে এই সুরে কথা বলাটা কি ঠিক?” সিঙ্কের নিচে মাথা ঢুকিয়ে রাখা লোকটা জিজ্ঞেস করল। কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে কুসানাগির দিকে ফিরলো সে।

বিস্ময়ে খানিকটা পিছিয়ে গেল কুসানাগি। “ইউকাওয়া?! তুমি এখানে—” কথাটা শেষ না করে চোখ বড় করে উতসুমির দিকে তাকালো। “আমাকে না জানিয়ে ওর সাথে কথা বলছিলে তুমি, তাই না?”

নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়াচ্ছে উতসুমি।

“এই কথাটাও বোধহয় ঠিক বললে না। তার কি আসলেও অনুমতি নেয়ার দরকার আছে আমার সাথে কথা বলার জন্যে?” বলে কুসানাগির দিকে তাকিয়ে দরাজ হাসলো ইউকাওয়া। “অনেক দিন দেখা সাক্ষাৎ হয় না। আরেকটু ফুলেছো মনে হচ্ছে।”

“আমি ভেবেছিলাম তুমি আর আমাদের কোন কাজে সাহায্য করবে না।”

“এমনটাই কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু সবকিছুরই একটা ব্যতিক্রম থাকে। এই যেমন যখন আমাকে এমন একটা কেসের কথা বলা হলো যেখানে অপরাধ কিভাবে সংঘটিত হয়েছে সেটার বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আমার তো আগ্রহ হবেই, না কি? অবশ্য এই কেসটায় অন্য একটা বিশেষ কারণেও আগ্রহী হয়েছি… কিন্তু সেটা তোমাকে জানানোর কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি না,” উতসুমির উদ্দেশ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে বলল ইউকাওয়া।

জুনিয়র ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো কুসানাগি। “এটাই তোমার ‘রান্নাঘর আবার খতিয়ে দেখা”? ওকে এখানে নিয়ে আসা?”

বিস্ময়ে হা হয়ে গেল উতসুমির মুখ। “মিসেস মাশিবা আপনাকে বলেছে?”

“তুমি যখন তাকে ফোন দিয়েছিলে তখন সেখানেই ছিলাম আমি। কিশিতানি, তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে এখানে কোন কাজ আছে তোমার।”

জমে গেল কিশিতানি। “ইয়ে…আমাকে বলা হয়েছিল যেন মিস উতসুমি এবং প্রোফেসর সাহেবের সাথে আসি, যাতে কোন কিছু তাদের দৃষ্টি না এড়িয়ে যায়।”

“বেশ, এবার তাহলে গাছগুলোতে পানি দাওগে, যাও।”

“পানি?” কিশিতানি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। “গাছে?”

“মিসেস মাশিবা তার নিজের বাসা খালি করে দিয়েছেন যেন আমরা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে পারি। এর বিনিময়ে অন্তত তার গাছগুলোতে পানি দিতেই পারি আমরা। তুমি বাগানের গাছগুলোতে পানি দাও, আমি ব্যালকনিরগুলোতে দিচ্ছি।”

কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলালো কিশিতানি। মাথা নেড়ে ক্র কুঁচকে বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে।

উতসুমি আর ইউকাওয়ার দিকে ফিরলো কুসানাগি। “দুঃখিত, একই প্রশ্ন আবারো করার জন্যে। কিন্তু কি খতিয়ে দেখছিলে তোমরা? শুরু থেকে বলো,” বলে বয়ে আনা কাগজের ব্যাগটা নিচে নামিয়ে রাখলো সে।

“ওটা কি?” ব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করল উতসুমি।

“কেসের সাথে এটার কোন সম্পর্ক নেই, সুতরাং এ ব্যাপারে তোমার না ভাবলেও চলবে। বেশ, শুরু করো তাহলে?” বুকের ওপর হাত ভাঁজ করে রেখে ইউকাওয়ার দিকে তাকালো কুসানাগি।

প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালো ইউকাওয়া। এগুলোও নিশ্চয়ই আরমানি, মনে মনে বলল কুসানাগি। সিঙ্কে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে পদার্থবিদ। হাতে দস্তানা পরে আছে সে। “তোমাদের নতুন ডিটেক্টিভ একটা ধাঁধাঁ সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছে আমাকে। ‘এমন কোন উপায় আছে কি, যেটার মাধ্যমে দূর থেকেও কাউকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা সম্ভব?’ খুনটা এমনভাবে হতে হবে যে কোন চিহ্নও থাকবে না।” রহস্যটা জটিল, তাই না? আমাদের পদার্থবিজ্ঞানেও এরকম সমস্যা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন।”

“দূর থেকে?” উতসুমির দিকে তাকিয়ে বলল কুসানাগি। “তুমি এখনও তাহলে মিসেস মাশিবাকে সন্দেহ করো। ধরেই নিয়েছো, খুনটা সে করেছে, এখন ইউকাওয়াকে দিয়ে প্রমাণ করানোর চেষ্টা করছো সেটা।”

“আমি যে একমাত্র মিসেস মাশিবাকেই সন্দেহ করি, তা নয়। শুধু এটুকু নিশ্চিত করতে চাই যে শনি এবং রবিবারে অ্যালিবাই আছে, এমন কারো পক্ষেও কাজটা করা সম্ভব।”

“একই কথা। তার পেছনেই লেগে আছো তুমি।” ইউকাওয়ার দিকে ফিরলো কুসানাগি। “সিঙ্কের নিচে কি দেখছিলে?”

“মিস উতসুমির কাছ থেকে শুনে যতটুকু বুঝলাম, তিন জায়গায় বিষের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে,” তিন আঙুল দেখিয়ে বলল ইউকাওয়া। “ভিক্টিমের কফি কাপে। কফির গুঁড়োতে আর ফিল্টারে। এবং পানি ফুটোতে ব্যবহার করা কেতলিতে। এরপরেই গোলমালের শুরু। দুটো সম্ভাবনা আছে এক্ষেত্রে হয় কেতলিতে সরাসরি বিষ মেশানো হয়েছিল, অথবা পানিতে মেশানো হয়েছে। যদি পানিতে মেশানো হয়ে থাকে, তাহলেও দুটো সম্ভাবনা আছে। বোতলজাত পানিতে নয়তো ট্যাপের পানিতে।”

“ট্যাপের পানিতে? তুমি কি বলতে চাচ্ছো যে পানির মূল লাইনে বিষ মেশানো হয়েছিল?” নাক দিয়ে শব্দ করে বলল কুসানাগি।

ইউকাওয়া চেহারায় অবশ্য কোন পরিবর্তন আসলো না। “যখন একটা সমস্যার অনেকগুলো সম্ভাব্য সমাধান থাকে, তখন সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ হচ্ছে একটা একটা করে সম্ভাবনা বাদ দেয়া। ফরেনসিক থেকে বলা হয়েছে যে পানির লাইন বা ফিল্টারে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। কিন্তু নিজের চোখে কিছু না দেখে বিশ্বাস করি না আমি। সেজন্যেই সিঙ্কের নিচটা খতিয়ে দেখছিলাম। পানির লাইনে কিছু করতে চাইলে, সেখানেই করাটা সুবিধাজনক।”

“কিছু পেয়েছো?”

ধীরে ধীরে মাথা ঝাঁকালো ইউকাওয়া। “নাহ, ফিলট্রেশন সিস্টেমের লাইন থেকে শুরু করে সাপ্লাই লাইন, সব ঠিকই আছে। ফিল্টারেও কোন সমস্যা নেই। অবশ্য পুরো সিস্টেমটা খুলে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমার ধারণা সেটাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। এ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে কফি বানানোর পূর্বেই পানিতে বিষ মেশানো হয়েছিল। বোতলের পানিতে।”

“কিন্তু খালি বোতলগুলোতে তো কোন বিষের অস্তিত্ব মেলেনি।“

“আমরা এখন ল্যাব থেকে ফাইনাল রিপোর্টটা পাইনি,” উতসুমি মনে করিয়ে দিল পাশ থেকে।

“কিছু পাবেও না ওরা। আমাদের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট ভালো কাজ করে,” ভাঁজ করে রাখা হাত নামিয়ে বলল কুসানাগি। ইউকাওয়ার দিকে ফিরলো আবার। “তাহলে, কি ভাবছো? এত কষ্ট করে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে মর্ত্যে এলে, এই সামান্য ব্যাপার জানানোর জন্যে?”

“পানির ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া শেষ; এবারে কেতলিটা দেখবো। কেবলই তো বললাম, কেতলিতেও সরাসরি বিষ মেশানো হয়ে থাকতে পারে।”

“আমিও এটাই বলছি,” কুসানাগি জবাব দিল। “এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারো যে রবিবার সকাল অবধি কেতলির পানিতে বিষ ছিল না। অবশ্য এটা হিরোমি ওয়াকাইয়ামার কথা।”

জবাবে কিছু না বলে সিঙ্কের পাশে রাখা কেতলিটা হাতে তুলে নিল ইউকাওয়া।

“এটা আবার কি?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল। “তুমি সাথে করে একটা কেতলি নিয়ে এসেছো?”

“এই মডেলের কেতলিটাই মি. মাশিবা ব্যবহার করেছিলেন। আমার অনুরোধে মিস উতসুমি জোগাড় করেছেন এটা,” বলে ট্যাপ থেকে কেতলিতে গরম পানি ঢাললো ইউকাওয়া। এরপর সিঙ্কে ঢেলে দিল পানিটুকু। “কোন বিশেষত্ব নেই, দেখতেই পাচ্ছো।”

আবারো কেতলিতে পানি ভরে চুলোয় চাপিয়ে দিল সে।

“এখন কি করছো?”

“দেখো, দেখে শেখো,” বলে সিঙ্কে আবারো হেলান দিয়ে দাঁড়ালো ইউকাওয়া। “তাহলে, তোমার ধারণা রবিবার এই বাসায় এসে কেতলিতে বিষ মিশিয়েছে খুনি।”

“অন্য কোন উপযুক্ত ব্যাখ্যা নেই এটা ছাড়া।“

“যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় কাজটা। খুনি নিশ্চিত হবে যে তার আগমনের ব্যাপারে মি. মাশিবা কাউকে বলবে না। না কি তোমার ধারণা মি. মাশিবা খানিকক্ষণের জন্যে বাইরে গিয়েছিল, সেটারই সুযোগ নিয়েছে কেউ?”

“নাহ, চুরি করে কেউ ঢুকেছিল মনে হয় না। আমার ধারণা খুনি এ ব্যাপারে একদম নিশ্চিত ছিল, মি. মাশিবা কাউকে কিছু বলবে না।”

“বেশ। তাহলে মি. মাশিবা চাইছিলেন না, তার অতিথির ব্যাপারে প্রতিবেশীরা কিছু জানুক,” বলে মাথা নেড়ে উতসুমির দিকে তাকালো ইউকাওয়া। “চিন্তা কোরো না। তোমার বস এখনও ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারে।”

“একথা বলার মানে কি?” চোখমুখ শক্ত করে জিজ্ঞেস করল কুসানাগি।

“না, কিছু না। আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছি যে দুই পক্ষই যদি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারে, তাহলে তাদের মতের অমিল হওয়াটাও একটা ভালো বিষয়।”

হেঁয়ালি ছাড়া কথা বলতে পারে না। সবসময় আমাকে ছোট দেখানোর ধান্ধা। কুসানাগির দৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন আসলো না। ইউকাওয়ার অবশ্য এসবে কিছু যায় আসে না।

ধীরে ধীরে ফুটতে শুরু করল কেতলির পানি। চুলো বন্ধ করে দিয়ে ঢাকনাটা তুলে ভেতরে উঁকি দিল ইউকাওয়া। “এটাই দেখতে চাচ্ছিলাম,” কেতলির পানি সিঙ্কে ঢালতে শুরু করল সে।

কুসানাগি অবাক হয়ে খেয়াল করল, ভেতরের পানি টকটকে লাল। “এসব কি?”

কেতলিটা সিঙ্কে নামিয়ে রেখে কুসানাগির দিকে তাকালো ইউকাওয়া। ‘একটু আগে একটা কথা বলিনি। কেতলিটার ভেতরের তলায় লাল রঙের পাউডার ছিল, আর পাউডারগুলোর ওপরে ছিল জেলাটিনের একটা পরত। গরমে জেলাটিন ধীরে ধীরে গলে গেছে এবং পাউডার পানিতে মিশেছে।” মুখ থেকে হাসি মুছে গেছে পদার্থবিদের। “কেতলিটা দু’বার ব্যবহার করেছিল ভিক্টিম মারা যাবার আগে?”

“হ্যাঁ,” জবাব দিল উতসুমি। “শনিবার রাতে আর রবিবার সকালে।“

“ইচ্ছে করলে জেলাটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিচের পাউডার কখন পানির সাথে মিশবে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ফরেনসিককে বলুন ব্যাপারটা ভেবে দেখতে। জেলাটিন কেতলির ভেতরে কোথায় লাগানো হয়েছিল সেটা নিয়েও ভাবতে বলবেন। জেলাটিনের বদলে অন্য কিছু ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়ে খোঁজ খবর করলেও ভালো হবে।”

“ঠিক আছে,” বলে নোটপ্যাড খুলে খসখস করে লিখতে শুরু করল উতসুমি।

“কি ব্যাপার, কুসানাগি,” ইউকাওয়া বলল। “তোমাকে দেখে খুব একটা খুশি মনে হচ্ছে না।“

“এটার সাথে আমার খুশি বা অখুশি হবার কোন সম্পর্ক নেই। আমি শুধু এটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কোন সাধারণ খুনি এতকিছু নিয়ে আসলেও ভাবতে যাবে কি না।”

“এতকিছু? এতকিছু কই পেলে। জেলাটিন সম্পর্কে জানে এরকম যে কেউ কাজটা করতে পারে। এই যেমন ধরো কারো স্ত্রী, যে রান্নার নানারকম কৌশল জানে।”

দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় শুরু করল কুসানাগি। এটা তার একটা বদভ্যাস। ভীষণ মানসিক চাপের সময় নিজের অজান্তেই শুরু হয়ে যায়। এটা পরিস্কার, উতসুমির পাশাপাশি এখন ইউকাওয়াও আয়ানে মাশিবাকে সন্দেহ করছে। কী এমন কথা তাকে বলেছে উতসুমি?

এমন সময় জুনিয়র ডিটেক্টিভের ফোনটা বেজে উঠল। কিছুক্ষণ কথা বলে লাইন কেটে দিল সে। “ল্যাব থেকে একটা রিপোর্ট এসেছে,” বলে কুসানাগির দিকে তাকালো সে। “আপনার ধারণাই ঠিক-খালি বোতলগুলোতে কিছু পায়নি তারা।”

“এখন এক মিনিট নীরবতা পালন করবো সবাই।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *