অধ্যায় ২
মাশিবাদের সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে কেন যেন খটকা লাগলো হিরোমি ওয়াকামার। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে জোর করে হাসছে তারা- বিশেষ করে আয়ানে।
“এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখার জন্যে দুঃখিত,” নিচে নেমে বলল ইয়োশিতাকা। এরপর জিজ্ঞেস করল ইকাইদের কাছ থেকে কিছু শুনেছে কি না।
“কিছুক্ষণ আগে ইউকিকো মেসেজ দিলো, আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে এসে পড়বে,” হিরোমি বলল তাকে।
“তাহলে শ্যাম্পেইনের বোতল বের করে ফেলি।”
“না, তুমি বসো। আমি করছি,” হন্তদন্ত হয়ে বলল আয়ানে। “হিরোমি, গ্লাসগুলো বের করতে পারবে?”
“অবশ্যই।”
“আমি তাহলে টেবিল সাজিয়ে ফেলি “ ইয়োশিতাকা বলল।
রান্নাঘরের দিকে ছুট দিলো আয়ানে। ডাইনিং রুমের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা কাপবোর্ডের দিকে এগোলো হিরোমি। এই কাপবোর্ডটা একটা অ্যান্টিক, প্রায় তিরিশ লাখ ইয়েন লেগেছে কিনতে-তেমনটাই শুনেছে সে। ভেতরের গ্লাসগুলোও মানানসই।
খুব সাবধানে ভেতর থেকে পাঁচটা সরু শ্যাম্পেইন গ্লাস বের করল সে। দুটো ব্যাকারাট আর তিনটা ভেনেশিয়ান নকশার। অতিথিদের ভেনেশিয়ান নকশার গ্লাস দিয়ে আপ্যায়ন করাটা মাশিবাদের একটা রীতি I
ডাইনিং টেবিলটায় আটজন একসাথে বসতে পারলেও আজকে পাঁচজনের জন্যে টেবিল সাজাচ্ছে ইয়োশিতাকা। অনেক আগে থেকেই নিয়মিত ডিনার পার্টির আয়োজন করে অভ্যস্ত সে। হিরোমিও এতদিনে জেনে গেছে যে কী কী করতে হবে।
প্রতিটা চেয়ারের সামনে একটা করে শাম্পেইন গ্লাস রাখলো সে। রান্নাঘর থেকে পানির আওয়াজ ভেসে আসছে। ইয়োশিতাকার দিকে এগিয়ে গেল হিরোমি।
“ওকে কিছু বলেছো তুমি?” ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল। “সেরকম কিছু না,” না তাকিয়েই জবাব দিলো ইয়োশিতাকা। “কথা তো বলেছো?”
এই প্রথম ওর দিকে তাকালো লোকটা, “কিসের ব্যাপারে?”
“কিসের ব্যাপারে মানে?”-আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল।
“এসে গেছে ওরা,” রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লো ইয়োশিতাকা। “আমি কাজ করছি। তুমি একটু দরজাটা খোলো না!” আয়ানে জবাব দিলো।
“খুলছি,” ইন্টারকমের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলল ইয়োশিতাকা।
দশ মিনিট পর সবাই খাবার টেবিলে বসে পড়লো, ওরা মোট পাঁচজন। সবাই হাসছে-কিন্তু হিরোমির কাছে প্রত্যেকের হাসিই মেকি বলে মনে হচ্ছে। যেন খুব কষ্ট করে হাসিখুশি একটা পরিবেশ জিইয়ে রেখেছে তারা। এই ধরণে মেকি ব্যবহার কিভাবে আয়ত্ত্ব করে লোকে সেটা ভেবে অবাক লাগলো ওর। জন্ম থেকে কেউ এই ক্ষমতা নিয়ে বড় হয় না নিশ্চয়ই হিরোমি জানে যে এরকম পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে তা শিখতে আয়ানের কম করে হলেও এক বছর লেগেছে।
“আপনার রান্নার তুলনা হয় না আয়ানে,” হোয়াইটফিশ মুখে দিয়ে বলল ইউকিকো ইকাই, “এই মাছটা সবাই রান্না করতে পারে না, দারুণভাবে ম্যারিনেট করা হয়েছে,” প্রতি দাওয়াতেই সবগুলো খাবারের প্রশংসা করা ইউকিকোর স্বভাব।
“এই রান্না তো তোমার ভালো লাগবেই!” পাশের সিট থেকে বলল তার স্বামী তাতসুহিকো। “তুমি তো সবসময় দোকানের সস দিয়ে ম্যারিনেট করো।”
“মাঝে মাঝে নিজেও সস বানিয়ে নেই।”
“আওজিসো সস, পুদিনা পাতা দিয়ে-এর বেশি কিছু না।”
“তো? ওটাই তো ভালো!”
“আমার নিজেরও আওজিসো ভালো লাগে,” বলল আয়ানে।
“শুনেছো? আর তোমার শরীরের জন্যেও ভালো জিনিসটা,” হাসি ফুটলো ইউকিকোর মুখে।
“ওকে আর প্রশ্রয় দিবেন না, আয়ানে,” তাতসুহিকো বলল, “না-হলে দেখা যাবে এর পরে আমার স্টেকেও ঐ সস মেখে দিয়েছে।“
“সেটা করলে ভালোই লাগবে কিন্তু,” ইউকিকো বলল, “পরেরবার চেষ্টা করবো।”
তাতসুহিকো বাদে সবাই হেসে উঠল।
তাতসুহিকো ইকাই একজন আইনজীবি। বেশ অনেকগুলো কোম্পানির লিগাল অ্যাডভাইজর সে। ইয়োশিতাকা মাশিবার কোম্পানিও তার মধ্যে পড়ে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সাথেও জড়িত সে। দু’জনের বন্ধুত্ব বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে
ওয়াইন রেফ্রিজারেটর থেকে একটা বোতল বের করে হিরোমির গ্লাসে ঢালবে কি না জিজ্ঞেস করল তাতসুহিকো।
“আমার লাগবে না, ধন্যবাদ,” গ্লাস সরিয়ে নিয়ে বলল হিরোমি।
“আসলেও লাগবে না? আমি তো ভেবেছিলাম হোয়াইট ভালো লাগে আপনার।”
“আসলেও ভালো লাগে, কিন্তু আজকের মত যথেষ্ট হয়েছে। ধন্যবাদ।” তার বদলে ইয়োশিতাকার গ্লাস ভরে দিল তাতসুহিকো।
“তোমার শরীর ঠিক আছে তো?” আয়ানে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ- আমি ঠিক আছি। কয়েকদিন ধরে একটু বেশিই ড্রিঙ্ক করে ফেলছি, লাগাম টানতে হবে।”
“আপনার বয়সই তো পার্টিতে গিয়ে ড্রিঙ্ক করার!”
আয়ানের গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে নিজের গ্লাস ভর্তি করল তাতসুহিকো। ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেল নিজের স্ত্রীর গ্লাসটা, “ইউকিকোর জন্যে আপাতত অ্যালকোহল মানা, তাই একা একা ড্রিঙ্ক করতে হয় আমাকে।
“ওহ হ্যাঁ! ভুলেই গিয়েছিলাম,” কাঁটাচামচ প্লেটে রেখে বলল ইয়োশিতাকা, “কিছুদিন তো এসব বন্ধ রাখতে হবে আপনাকে, তাই না?”
“যদি না একসাথে দুইজনের জন্যেই খেতে চায় আর কি,” তাতসুহিকো বলল ওয়াইনের গ্লাস নাড়তে নাড়তে। “এখন যা-ই খাবে, বুকের দুধে সেটার একটা প্রভাব থাকবে।“
“কবে থেকে আবার ড্রিঙ্ক করতে পারবে?” ইয়োশিতাকা জিজ্ঞেস করল।
“আরও প্রায় এক বছর পর, ডাক্তারের মতে।”
“আমার মতে দেড় বছর বন্ধ রাখা উচিত,” তাতসুহিকো বলল পাশ থেকে। “এমনকি দুই বছর বন্ধ রাখলেও কোন ক্ষতি নেই। আর এতদিন যদি বন্ধ থাকেই, তাহলে একেবারে ছেড়ে দিতে ক্ষতি কি?”
“মানে বাচ্চার যত্নও নিতে হবে, এসব থেকেও দূরে থাকতে হবে। অসম্ভব! অবশ্য তুমি যদি আমাদের ছোট্ট রাজপুত্রের যত্ন নিতে রাজি হও, তাহলে ভেবে দেখতে পারি।”
“থাক!” তার স্বামী বলল, “কিন্তু এক বছর বন্ধ রাখতেই হবে। এরপর অল্প অল্প করে, ঠিক আছে?”
চোখ বড় করে কিছুক্ষণ তাতসুহিকোর দিকে তাকিয়ে থাকলো ইউকিকো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার হাসি ফুটলো তার চেহারায়। তাকে দেখে যে কারও মনে হবে যে এই ধরনের সাংসারিক খুনসুটি উপভোগ করে সে।
দুই মাস আগে একটা ফুটফুটে বাচ্চা হয়েছে ওদের। অনেক দিনের অপেক্ষার পর প্রথম সন্তান। তাতসুহিকোর বয়স বেয়াল্লিশ আর ইউকিকোর পঁয়ত্রিশ। একদম শেষ বয়সে এসে বাচ্চা হয়েছে-এমনটাই বলে বেড়ায় ওরা।
আজকের দাওয়াতটাও ওদের বাচ্চা হওয়ার উপলক্ষেই বলতে গেলে। পরিকল্পনাটা ইয়োশিতাকার, সব আয়োজন করেছে আয়ানে।
“আজ রাতে তো দাদা-দাদীর কাছে আছে বাবু?” জিজ্ঞেস করল ইয়োশিতাকা।
“হ্যাঁ,” মাথা নেড়ে বলল তাতসুহিকো, “যতক্ষণ ইচ্ছে বাইরে থাকতে পারবো আজকে। নাতিকে কাছে পেয়ে খুব খুশি দুইজন। এই জন্যেই বাবা- মা কাছাকাছি থাকাটা একটা বড় সুবিধা।”
“তবে আমি একটু চিন্তিত,” স্বীকার করল ইউকিকো, “মাঝেমাঝে তোমার মা একটু বেশিই যত্ন নিয়ে ফেলে বাবুর, বুঝতে পারছো তো আমি কি বলছি? আমার এক বান্ধবী বলেছে যে কোলে তুলে নেয়ার আগে বাচ্চাদের কিছুক্ষণ কাঁদতে দেয়া উচিত।”
ইউকিকোর খালি গ্লাস দেখে উঠে দাঁড়ালো হিরোমি। “আমি আপনার জন্যে পানি নিয়ে আসছি।”
“মিনারেল ওয়াটারের বোতল আছে ফ্রিজে, পুরোটাই নিয়ে এসো, আয়ানে বলল তার উদ্দেশ্যে।
রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ খুলল হিরোমি। ফ্রিজটা বিশাল, দুইটা দরজা- মাঝখান থেকে খোলে। একটা দরজার তাকে সারি সারি মিনারেল ওয়াটারের বোতল। সেখান থেকে একটা বোতল তুলে নিয়ে টেবিলে ফিরে আসলো সে। আয়ানের চোখে চোখ পড়তেই ঠোঁট নেড়ে নীরবে একবার ধন্যবাদ জানালো তাকে।
“তোমাদের জীবনই পাল্টে গেছে, তাই না? প্রথম সন্তান বলে কথা,” ইয়োশিতাকা বলল।
“একদম। বাসায় ফেরার পর বাবুকে নিয়েই কাটে সময়,” জবাবে বলল তাতসুহিকো।
“এটাই ভেবেছিলাম। কাজে কোন প্রভাব পড়েনি তো? সবাই অবশ্য বলে যে বাচ্চা হওয়ার পরে দায়িত্ববোধ না কি বেড়ে যায়। বাবা হবার পর তুমিও এখন আগের চেয়ে সতর্ক কাজের ব্যাপারে?”
“তা বলতে পারো।”
পানির বোতলটা নিয়ে সবার গ্লাসে ঢেলে দিল আয়ানে। মুখের এককোণায় হাসি।
“এবার তো তোমাদের পালা,” ইয়োশিতাকা আর আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল তাতসুহিকো। “তোমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর হতে চলল। নব্য বিবাহিত-এই পর্ব তো কেটে গেছে এতদিনে?”
“ডার্লিং!” স্বামীর হাতে আলতো করে চাপড় দিয়ে বলল ইউকিকো, “এটা কিরকম প্রশ্ন?”
“আচ্ছা বাবা!” জোর করে হেসে বলল তাতসুহিকো, “সবার জীবন পরিকল্পনা ভিন্ন,” গ্লাসের বাকি ওয়াইনটুকু এক ঢোকে শেষ করে ফেলল সে, দৃষ্টি হিরোমির দিকে। “আপনার কি খবর, হিরোমি?” জিজ্ঞেস করেই হাত উঁচু করল সে, “চিন্তা করবেন না, অবিবাহিত একজন ভদ্রমহিলাকে উল্টোপাল্টা কিছু জিজ্ঞেস করবো না আমি। আপনার স্কুলে সব কেমন চলছিলাম তা-ই জানতে চাচ্ছিলাম। সব ঠিক তো?”
“এখন পর্যন্ত তো ঠিকই আছে। তবে অনেক কিছু শেখা বাদ এখনও।”
“সবচেয়ে সেরা টিচারের ছাত্রি আপনি,” বলল ইউকিকো। এরপর আয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কয়েকদিনের জন্যে সবকিছু হিরোমির ওপর ছেড়ে দেবেন?”
মাথা নেড়ে সায় জানালো আয়ানে। “আমার পক্ষে যা যা শেখানো সম্ভব ছিল, সব শিখিয়ে দিয়েছি।“
“বাহ! দারুণ,” হাসিমুখে হিরোমির দিকে তাকিয়ে বলল ইউকিকো।
লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করল হিরোমি। সে জানে, তার ব্যাপারে আসলে কোন আগ্রহ নেই ইকাইদের। কিন্তু এভাবে প্রশ্ন করছে যাতে ওর নিজের অস্বস্তি না লাগে টেবিলে। এখানে একমাত্র সে-ই অবিবাহিত।
“ভালো কথা,” দাঁড়িয়ে বলল আয়ানে, “আপনাদের জন্যে একটা উপহার আছে।” সোফার পেছন থেকে বড় একটা কাগজের ব্যাগ বের করে টেবিলে নিয়ে আসলো সে। ভেতরের জিনিসটা বের করার সাথে সাথে ইউকিকোর মুখ হা হয়ে গেল বিস্ময়ে। তাতসুহিকোও অবাক হয়েছে। একটা সুতোর নকশা করা বেডকভার। তবে সাধারণ বেডকভারের চেয়ে অনেক ছোট।
“বাবুর বিছানার জন্যে এটা ব্যবহার করতে পারবেন আপনারা,” আয়ানে বলল, “আর যখন বাবু বড় হয়ে যাবে তখন ট্যাপেস্ট্রি হিসেবে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পারবেন।”
“অসাধারণ নকশা!” উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল ইউকিকো। “অনেক অনেক ধন্যবাদ, আয়ানে,” বেডকভারের একপাশ ধরে বলল সে, “ওর অনেক পছন্দ হবে। ধন্যবাদ!”
“চমৎকার একটা উপহার। এরকম একটা বেডকভার বানাতে তো অনেক সময় লাগে, তাই না?” হিরোমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল তাতসুহিকো।
“এটা সেলাই করতে কতদিন লেগেছে? সাত মাস?” আয়ানেকে পাল্টা জিজ্ঞেস করল হিরোমি। এখনও এত জটিল কিছু সেলাই করাটা আয়ত্তে আসেনি তার।
ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল আয়ানের, “ঠিক মনে নেই আমার,” বলল সে, এরপর ইউকিকোর দিকে তাকালো, “আপনার পছন্দ হয়েছে দেখে খুব খুশি লাগছে।”
পছন্দ হবে না!” ইউকিকো বলল, “কিন্তু এরকম একটা উপহার গ্রহণ করাটা উচিত হবে কি না বুঝতে পারছি না। ডার্লিং তুমি কি জানো, এরকম বেডকভারের দাম কত? গিনজা গ্যালারিতে একটা আসল আয়ানে মিতা বেডকভার দশ লাখ ইয়েনের নিচে বিক্রি হয় না।”
“কি!” এবারে আসলেও বিস্মিত হয়েছে তাতসুহিকো। কয়েকটা সেলাই করা কাপড়ের টুকরোর যে এত দাম হতে পারে সে ধারণা ছিল না তার।
“এর আগে কখনও ওকে কোন কিছুতে এত মনোযোগ দিয়ে সেলাই করতে দেখিনি আমি,” ইয়োশিতাকা বলল এ সময় পাশ থেকে। “এমনকি আমার ছুটির দিনগুলোতেও ঐ সোফাতে বসে এক মনে সুঁই সুতো নিয়ে কাজ করে গেছে ও।”
“সময়মতো শেষ করতে পেরেছি, তাতেই খুশি আমি,” বলল আয়ানে। ডিনার শেষ হবার পর লিভিং রুমে চলে আসলো সবাই। ইয়োশিতাকা আর তাতসুহিকো হুইস্কি নিয়ে বসেছে এবার। ইউকিকো কফি চাইলে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো হিরোমি।
“আমি কফি বানাচ্ছি,” ওকে থামিয়ে বলল আয়ানে, “তুমি হুইস্কির জন্যে পানি আর বরফ নিয়ে এসো। ফ্রিজে বরফ আছে,” এটুকু বলে সিঙ্কের কাছে গিয়ে কেতলি ভরে নিলো সে।
টে নিয়ে লিভিং রুমে ফিরে হিরোমি দেখলো যে বাগান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এখন। মাশিবাদের বাগানে ছোট ছোট অনেকগুলো রঙিন বাতি জ্বলে চারপাশ থেকে। এই রাতের বেলাতেও ছোট ছোট গাছ আর গুল্মগুলো চকচক করছে।
“এতগুলো ফুল গাছের যত্ন নেয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না,” তাতসুহিকো বলল।
“আমি অবশ্য বাগান নিয়ে এত কিছু জানি না,” ইয়োশিতাকা বলল, “এটা পুরাপুরি আয়ানের কৃতিত্ব। দোতলার বারান্দাতেও কিছু গাছ আছে। প্রতিদিন গাছে পানি দেয় ও। আমি সাহায্য করতে পারি না সেরকম। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না, ফুলগাছগুলো ভীষণ পছন্দ ওর।”
ইয়োশিতাকার যে বাগান করা নিয়ে কোন আগ্রহ নেই সেটা বুঝতে সমস্যা হলো না হিরোমির, প্রাকৃতিক জিনিসের প্রতি বরাবরই আগ্রহ কম লোকটার।
রান্নাঘর থেকে তিনজনের জন্যে কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে আয়ানে। হুইস্কির কথা মনে পড়ায় দ্রুত দু’টা গ্লাসে পানি ঢালতে শুরু করল হিরোমি।
রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাসায় ফেরার কথা বলল ইকাইরা।
“দারুণ কিছু সময় কাটলো। উপহারটাও চমৎকার,” দাঁড়িয়ে বলল তাতসুহিকো। “পরের পার্টি আমাদের বাসায়। যদিও বাবুর কারণে পুরো বাসাই এলোমেলো।”
“তাড়াতাড়িই সব পরিস্কার করা শুরু করবো আমি,” স্বামীর ভুড়িতে খোঁচা মেরে বলল ইউকিকো, এরপর হাসিমুখে আয়ানের দিকে তাকালো “আমাদের রাজপুত্রকে দেখতে আসতে হবে কিন্তু আপনাদের। একটা পান্ডার মত দেখতে হয়েছে ও।”
আয়ানে তাদের নিশ্চিত করল যে সময় করে ঘুরে আসবে একদিন।
হিরোমির নিজেরও বাসায় ফেরার সময় হয়েছে, তাই ইকাইদের সাথেই বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে। একই ট্যাক্সিতে যাওয়ার প্রস্তাব দিল তাতসুহিকো।
“হিরোমি, কাল বাইরে যাবো আমি,” সে জুতো পরার সময় বলল আয়ানে।
“তিন দিনের ছুটি তো কাল থেকে। কোথাও যাচ্ছেন ঘুরতে?” ইউকিকো জিজ্ঞেস করল।
“বাবা-মা’র সাথে দেখা করতে যাবো।”
“সাপোরোতে?”
মৃদু হেসে মাথা নাড়লো আয়ানে, “হ্যাঁ, বাবার শরীর খুব একটা ভালো না। মা সারাদিন একাই থাকে। তাই ভাবলাম ঘুরে আসি একবার।”
“আহহা, এর মাঝে আমরা আপনাকে এত কষ্ট দিয়ে গেলাম!” বোকার মত হেসে বলল তাতসুহিকো।
দ্রুত মাথা নাড়লো আয়ানে, “আরে ধুর, কি যে বলেন আপনারা। সেরকম কিছু হয়নি বাবার।” এরপর হিরোমির দিকে তাকালো সে, “কিছু লাগলে ফোন দেবে, আমার মোবাইল নম্বর তো আছেই তোমার কাছে।”
“আপনি ফিরবেন কবে?”
“সেটা এখনও জানি না,” বলল আয়ানে, “তোমাকে ফোন করে জানাবো নিশ্চিত হয়ে। তবে খুব বেশি দিন না।“
“ঠিক আছে,” ইয়োশিতাকার দিকে একবার তাকালো হিরোমি, তবে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে রেখেছে সে।
অবশেষে বিদায় নিয়ে মাশিবাদের বাসার সামনে থেকে মেইন রোডের দিকে হাঁটতে লাগলো ওরা তিনজন। একটা ট্যাক্সি ক্যাব ডাক দিলো তাতসুহিকো। হিরোমি যেহেতু প্রথমে নেমে যাবে তাই সে সবার শেষে উঠল ট্যাক্সিতে।
“বাচ্চাকাচ্চার ব্যাপারে খুব বেশি কথা বলিনি আশা করি,” ট্যাক্সি ছাড়ার পর বলল ইউকিকো।
“বললে কি অসুবিধা? আমাদের বাচ্চা হওয়া উপলক্ষেই তো দাওয়াত দিয়েছিল,” তাতসুহিকো বলল সামনের সিট থেকে। “আর ওরাও তো বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করছে, তাই না?”
“কিছুদিন আগে তো সেরকমই কিছু একটা বলেছিল ইয়োশিতাকা…”
“ওদের কারো হয়তো কোন সমস্যা আছে, সেজন্যেই বাচ্চা হচ্ছে না। সেরকম কিছু শুনেছেন না কি আপনি, হিরোমি?”
“না, শুনিনি,” বলল হিরোমি।
“ওহ,” ইউকিকোর কন্ঠস্বর শুনে মনে হলো সে হতাশ।
হিরোমির মনে হলো যে ওর কাছ থেকে তথ্য বের করার জন্যেই একসাথে ট্যাক্সিতে আসার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
*
পরদিন সকালে বরাবরের মতনই সকাল ন’টায় নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হলো হিরোমি। গন্তব্য দাইকানইয়ামার একটা পাঁচতলা বিল্ডিং। সেখানেই একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে সেলাইয়ের স্কুল খুলেছে ওরা। স্কুল খোলার পরিকল্পনা অবশ্য আয়ানের। আয়ানে মিতার কাছ থেকে সরাসরি সেলাইয়ের কৌশল শেখার জন্যে প্রায় ত্রিশজনের মত শিক্ষার্থী আসে।
বিল্ডিং থেকে বের হয়ে বাইরে স্যুটকেস হাতে আয়ানেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো হিরোমি। ওকে দেখে হাসলো আয়ানে।
“আয়ানে! কিছু হয়েছে?”
“না, যাওয়ার আগে তোমাকে একটা জিনিস দেয়ার জন্যে এসেছি,” বলে জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা চাবি বের করল আয়ানে।
“এটা কিসের জন্যে?”
“আমাদের বাসার চাবি। কাল তোমাকে তো বললামই যে কবে ফিরবো ঠিক নেই…তাই এটা তোমার কাছে থাক। যদি হঠাৎ দরকার পড়ে।”
“বেশ।”
“কোন সমস্যা হবে?”
“না, সেটা না। কিন্তু এটা তো বাড়তি চাবি নিশ্চয়ই। আপনার কাছে আসলটা আছে তো?”
“সেটার দরকার নেই আমার। দরকার হলে বাসায় ফেরার পথে তোমাকে ফোন করলেই হবে। আর তুমি না পারলে আমার জামাই দেখা করবে আমার সাথে।”
“ঠিক আছে তাহলে…
“ধন্যবাদ,” হিরোমির হাতে চাবিটা দিলো আয়ানে। শক্ত করে ওটা মুঠিতে নিল ও।
“যাই এখন,” স্যুটকেস টানতে টানতে হাঁটা শুরু করল আয়ানে।
“দাঁড়ান,” হিরোমি বলল, “আয়ানে?”
থেমে পেছনে ফিরলো আয়ানে, “হ্যাঁ?”
“না…মানে… সাবধানে যাবেন।”
“আচ্ছা,” ওর উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে আবার হাঁটা শুরু করল আয়ানে।
*
সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লাস নিল হিরোমি, দম ফেলারও ফুরসত নেই। শেষ শিক্ষার্থীটা যখন বিদায় নিল, হিরোমির ঘাড় আর কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। ক্লাসরুম পরিস্কার করা শেষ করেছে ঠিক এই সময় বেজে উঠল মোবাইল ফোনটা। ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে একবার ঢোঁক গিললো সে। ইয়োশিতাকা।
“আজকের মত ক্লাস শেষ না?” সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল লোকটা।
“এখনই শেষ হলো।”
“বেশ। আমি এখন কয়েকজন ক্লায়েন্টের সাথে আছি। এই কাজ শেষ করেই বাসায় ফিরবো আমি। তুমিও এসে পড়ো।”
এত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাটা বলল সে যে হিরোমি কী বলবে ভেবে পেল না।
“যদি না অন্য কোন পরিকল্পনা থাকে তোমার।”
“না, অন্য কোন পরিকল্পনা নেই। তুমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে?”
“একদম নিশ্চিত। কয়েকদিনের মধ্যে ফিরবে না ও, জানোই তো তুমি।”
নিজের হ্যান্ডব্যাগের দিকে তাকালো হিরোমি। আয়ানে তাকে যে চাবিটা দিয়েছিল সেটা এখনও আছে ভেতরে।
“আর তোমার সাথে একটা ব্যাপারে কথাও বলতে হবে আমার।“ “কি?”
“সেটা দেখা হলে বলবো। নয়টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসবো আমি। তুমি আসার আগে একটা কল দিয়ো,” ও জবাব দেয়ার আগেই লাইন কেটে দিল সে।
*
একটা পাস্তার দোকানে বসে একা একাই খেয়ে নিলো হিরোমি, এরপর ইয়োশিতাকাকে ফোন দিল। বাসাতেই ছিল সে। ও আসছে শুনে উচ্ছাস ভর করল তার কণ্ঠে ট্যাক্সিতে বসে মাশিবাদের বাসায় যাওয়ার পথে নিজেকে কেন যেন বড্ড ঘেন্না হলো হিরোমির। ইয়োশিতাকা যে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধে ভুগছে না এই ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকছে তার কাছে। তবে সে নিজেও কম খুশি নয় মনে মনে।
হেসে দরজা খুলে দিল ইয়োশিতাকা। কোন লুকোছাপা নেই তার মধ্যে। একদম শান্ত আর স্বাভাবিক। লিভিংরুমে ঢুকতেই কফির গন্ধ নাকে আসলো।
“কতদিন হলো নিজে কফি বানাই না,” রান্নাঘর থেকে দুটো কফিভর্তি কাপ নিয়ে এসে বলল ইয়োশিতাকা, কোনটারই পিরিচ নেই। “আশা করি খুব খারাপ বানাইনি,” একটা কাপ ওর দিকে বাড়িয়ে দিল সে। না।“
“তোমাকে এর আগে কখনও রান্নাঘরে দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না।”
“আসলেও যাইনি। বিয়ের পর থেকে বাসার কোন কাজই করিনি বলতে গেলে।”
“আয়ানে খুব সংসারি,” বিড়বিড় করে বলল হিরোমি। কফির কাপে চুমুক দিল একবার। কিছুটা তিতকুট স্বাদ।
“বেশি কফি দিয়ে দিয়েছি,” হতাশ স্বরে বলল ইয়োশিতাকা।
“আমি বানাবো আবার?”
“না, এখন আর সে ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই। পরেরবার বানিয়ো। আর তোমাকে এখানে কফি নিয়ে আলোচনা করার জন্যে ডাকিনি আমি,” মার্বেলের তৈরি টেবিলে কফির কাপটা নামিয়ে বলল ইয়োশিতাকা। “গতকাল ওর সাথে কথা বলেছি আমি।”
“ধরতে পেরেছিলাম আমি।”
“তবে তোমার কথা বলিনি। ওর ধারণা অপরিচিত কেউ। যদি আমার কথা সে বিশ্বাস করে থাকে আরকি।“
সকালের কথা ভাবলো হিরোমি। ওর হাতে চাবিটা দেয়ার সময় একটা হাসি লেগে ছিল আয়ানের ঠোঁটের কোণে। কোন ধরণের বিতৃষ্ণা ছিল না সে হাসির আড়ালে।
“কি বললেন আয়ানে?”
“মেনে নিয়েছে।”
“আসলেই?”
“হ্যাঁ, আসলেই। তোমাকে তো বলেই ছিলাম যে মেনে নেবে।” মাথা ঝাকালো হিরোমি। “কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না, কিন্তু এত সহজে কিভাবে মেনে নিল সে তা মাথায় ঢুকছে না আমার।“
“কারণ এটাই শর্ত ছিল, আমার শর্ত। যাইহোক, তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করে কাজ নেই। সব ঠিকঠাক।”
“তাহলে আমাদের আর কোন সমস্যা থাকলো না?”
“ঠিক বলেছো,” হিরোমির কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টানতে টানতে বলল ইয়োশিতাকা। আলিঙ্গনে কোন বাঁধা দিল না হিরোমি। কানের কাছে ইয়োশিতাকার ঠোঁট অনুভব করল, “রাতটা থেকে যাও।”
“বেডরুমে?”
একটা দুষ্টু হাসি ফুটলো ইয়োশিতাকার ঠোঁটে। “আমাদের একটা গেস্ট রুম আছে। ডাবল বেড সেখানে।“
মাথা নেড়ে সায় জানালো হিরোমি। এখনও সবকিছু কেমন যেন অবিশ্বাস্য ঠেকছে তার কাছে, অস্বস্তিবোধ হচ্ছে কিছুটা।
পরদিন সকালে রান্নাঘরে কফি বানাচ্ছে এমন সময় ইয়োশিতাকা ভেতরে ঢুকে বলল তাকে কফি বানানো শেখাতে।
“আয়ানের কাছ থেকেই শিখেছি আমি।”
“ভালো তো। শেখাও আমাকে,” হাত ভাঁজ করে বলল ইয়োশিতাকা।
ড্রিপারের ওপরে একটা ফিল্টার পেপার রেখে চামচ দিয়ে মেপে কফি দানা সেখানে রাখলো হিরোমি। সামনে ঝুঁকে পরিমাণটা লক্ষ করল ইয়োশিতাকা।
“প্রথমে গরম পানি দেবে। অল্প একটু। দেখবে দানাগুলো ফুলতে শুরু করেছে,” কেতলি থেকে অল্প একটু ফুটানো পানি ড্রিপারে ঢাললো হিরোমি, এরপর বিশ সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার পানি ঢালা শুরু করল, “চারপাশ দিয়ে পানি ঢালতে হবে। খেয়াল রাখবে দু-জনের জন্যে যে পরিমাণ পানি দরকার সে দাগ পর্যন্ত পৌঁছেছে কি না। পৌঁছানো মাত্র থেমে যাবে। না থামলে কফি অত কড়া হবে না।”
“বেশ জটিল।”
“কখনও নিজের জন্যে কফি বানাওনি না কি?”
“কফিমেকার দিয়ে বানিয়েছি। বিয়ের পর আয়ানে ফেলে দিয়েছিল মেকারটা। এভাবে কফি বানালে না কি স্বাদ বেড়ে যায়।”
“তোমার কফিভক্তির কথা নিশ্চয়ই জানতো সে। তাই সবচেয়ে সেরাটাই দিতে চেয়েছে।”
মৃদু হেসে মাথা নাড়লো ইয়োশিতাকা। হিরোমি যতবারই তার প্রতি আয়ানের ভালোবাসার কথা বলা শুরু করেছে প্রতিবারই এমনটাই করেছে সে।
কফিতে চুমুক দিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে এভাবে বানালেই বেশি স্বাদ হয়। রবিবারে বন্ধ থাকে সেলাই স্কুল, কিন্তু হিরোমি এদিন ইকেবুকুরোর একটা শিল্পকলা স্কুলে পার্ট টাইম চাকরি করে। এ কাজটাও আয়ানে নিয়ে দিয়েছিল তাকে।
বের হবার সময় পেছন থেকে ইয়োশিতাকা কাজ শেষে ফোন দিতে বলল ওকে, রাতে একসাথে ডিনার করবে। মানা করার কোন কারণ খুঁজে পেল না হিরোমি।
*
কারুশিল্প স্কুলে কাজ শেষ হতে হতে সাতটা বেজে গেল। বের হবার আগে ইয়োশিতাকার নম্বরে ফোন দিলো হিরোমি, কিন্তু ধরলো না সে। কয়েকবার চেষ্টা করে মাশিবাদের ল্যান্ড লাইনে ফোন করল, কিন্তু লাভ হলো না।
বাইরে কোথাও গিয়েছে না কি? কিন্তু মোবাইল ফোন রেখে তো কোথাও যায় না সে।
মাশিবাদের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল হিরোমি। যাওয়ার পথে আরও কয়েকবার ফোন দিল কিন্তু ধরলো না ইয়োশিতাকা।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাসাটায় পৌঁছে গেল হিরোমি। উপরে তাকিয়ে দেখলো যে লিভিং রুমের বাতি জ্বলছে। তবুও কেউ দরজা খুলছে না বা ফোন ধরছে না।
শেষমেশ ব্যাগ থেকে চাবিটা বের করে সামনের দরজা খুলে ভেতরে পা দিলো। হলওয়েতেও বাতি জ্বলছে। জুতো খুলে ছোট হলওয়েটা পার হয়ে আসলো সে। কফির মৃদু গন্ধ নাকে আসলো। দিনের বেলা নিশ্চয়ই কফি বানিয়েছিল ইয়োশিতাকা।
লিভিং রুমের দরজা খোলার সাথে সাথে জমে গেল ও।
নিশ্চল ভঙ্গিতে কাঠের মেঝের ওপর হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছে ইয়োশিতাকা। পাশেই কফির কাপ থেকে কালো রঙের গাঢ় কফি ছড়িয়ে পড়েছে মেঝেতে।
অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে আমার নম্বরটা কত যেন? কতবার তো দেখেছি! কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা বের করল হিরোমি। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না নম্বরটা।