স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২৭

অধ্যায় ২৭

একটা চামচের সাহায্যে কাগজের ফিল্টারের ওপর কফির গুঁড়ো ঢেলে দিল ইউকাওয়া।

“কফি মেকার ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন দেখছি,” উতসুমি মন্তব্য করল পেছন থেকে।

“অভ্যস্ত হচ্ছি-এটা ঠিক। কিন্তু সেই সাথে অসুবিধেগুলোও পরিস্কার হচ্ছে।”

“তাই? কী রকম?”

“আপনাকে আগেই ঠিক করতে হবে যে কত কাপ কফি বানাতে চান। মাঝপথে কেউ এসে গেলে আবারো কষ্ট করে সবকিছু যোগ করতে হবে, এটা বিরক্তিকর। আমি সাধারণত একটু বেশিই বানাই, কিন্তু মাঝে মাঝেই ফেলে দিতে হয় বাড়তিটুকু। ভালো কফি এভাবে নষ্ট করার পক্ষপাতী নই আমি। তাছাড়া বার্নার ঠিকঠাক মত বন্ধ না করলে কফির স্বাদের ওপর প্রভাব পড়ে। বুঝতে পারছেন?”

“আজকে আপনাকে এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আপনি খাবার পর যেটুকু বাঁচে সেটুকুতেই চলবে আমার।”

“আরে নাহ, আজকে সমস্যা হবে না। চার কাপ বানিয়েছি আমি। আমার জন্যে, আপনার জন্যে আর কুসানাগির জন্যে। বাড়তিটুকু আমি আপনারা যাবার পরে খাবো।”

ওদেরকে খুব বেশি সময় আতিথেয়তা দেয়ার ইচ্ছে নেই পদার্থবিদের, এটা পরিস্কার। উতসুমির অবশ্য মনে হচ্ছে না যে খুব দ্রুত যেতে পারবে এখান থেকে। ইউকাওয়া কোন রকম ভণিতা না করে ওদের সমাধানটা বলে দিলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

“পুরো ডিপার্টমেন্ট আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ, প্রফেসর,” বলল সে। “আপনি যদি জোর না দিতেন তাহলে স্প্রিং এইটে ফিলট্রেশন সিস্টেমটা পাঠানোর কথা মাথায় আসতো না।”

“আমাকে ধন্যবাদ জানানোর কোন দরকার নেই। অন্য যে কোন বিজ্ঞানী আমার জায়াগায় থাকলে একই পরামর্শই দিত,” ডিটেক্টিভের মুখোমুখি বসে বলল ইউকাওয়া। একটা দাবার বোর্ড রাখা তাদের মাঝে; সেখান থেকে একট সাদা নৌকা তুলে নিয়ে আঙুলে ঘোরাতে লাগলো সে। “তাহলে আর্সেনাস এসিড খুঁজে পেয়েছে তারা?”

“আমরা বলেই দিয়েছিলাম যাতে ভালো করে অ্যানালাইসিস করা হয়। এটা মোটামুটি নিশ্চিত, ফিল্টারেই বিষ মেশানো হয়েছিল ইয়োশিতাকা মাশিবাকে হত্যা করার জন্যে।”

মাথা নাড়লো ইউকাওয়া। নৌকাটা আগের জায়গায় নামিয়ে রাখলো সে। “ফিলট্রেশন সিস্টেমের ঠিক কোন জায়গায় বিষের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে তারা?”

“আসলে ঠিক ফিল্টারের ভেতরে নয়, ওয়াটার আউটলেট-মানে যেখানটায় ফিলট্রেশন সিস্টেমের সাথে মূল লাইনের পানি এসে মেশে সেখানকার পাইপে কোনভাবে বিষ ছিটিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ একদম সন্ধিস্থলে।”

“ওহ।”

“একটাই সমস্যা,” উতসুমি বলল। “তারা বুঝতে পারছে না যে কাজটা কিভাবে করল খুনি। স্প্রিং-এইটের রিপোর্টটা তো পেয়ে গেছি আমরা। আপনার নিশ্চয়ই এখন কৌশলটা বলতে সমস্যা নেই।”

সাদা ল্যাব কোটের হাতা দুটো কনুই অবধি ভাঁজ করে নিল ইউকাওয়া। “ফরেনসিকের লোকেরা বুঝতে পারেনি?”

“তাদের মতে কেবল একটাই সম্ভাব্য পথ আছে। পাইপটা সম্পূর্ণরূপে খুলতে হবে ফিলট্রেশন সিস্টেম থেকে, এরপর বিষ ছিটিয়ে আবারো বসিয়ে দিতে হবে আগের জায়গায়। কিন্তু সেটা করলে বোঝা যাবার কথা, পাইপ কিংবা সন্ধিস্থলে কোন না কোন চিহ্ন থাকতোই। আর আপনি তো জানেনই, ওরকম কিছু পাওয়া যায়নি।”

“কিভাবে কাজটা করা হয়েছে তা একদম ঠিকঠাক জানতে হবে আপনাদের?”

“অবশ্যই। আমরা যদি প্রমাণই করতে না পারি যে কাজটা কিভাবে করা হলো তাহলে কাউকে সন্দেহ করেও লাভ নেই।”

“ফিল্টারে বিষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সত্ত্বেও?”

“অপরাধটা কিভাবে সংঘটিত হয়েছে, এটাই প্রথমে জানতে চাওয়া হবে কোর্ট থেকে। আসামী পক্ষের উকিল নিশ্চয়ই তদন্তে ভুল হয়েছে-এই যুক্তি দেখাবে।”

“তাই?”

“তারা বলবে, কোন না কোনভাবে সামান্য পরিমাণ আর্সেনাস এসিড ফিল্টারে প্রবেশ করেছে। কারণ টেস্টে যে পরিমাণ আর্সেনাস এসিডের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তা আসলেও সামান্য।

“চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো ইউকাওয়া। “হ্যাঁ, এটা বলার ভালো সম্ভাবনা আছে। আর যদি আপনাদের পক্ষ থেকে পাল্টা কোন যুক্তি দেখানো না হয়, সেক্ষেত্রে আসামী পক্ষের উকিলদের যুক্তিই মেনে নেবে আদালত।”

“সেজন্যেই কিভাবে কাজটা করা হয়েছিল সেটা আপনার কাছ থেকে জানাটা জরুরি। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টও আপনার পথ চেয়ে বসে আছে। ওদের কয়েকজন তো আমার সাথে এখানে আসতেও চেয়েছিল।”

“আমি চাই না পুলিশের লোকে ভরে যাক আমার ল্যাব,” মৃদু হেসে বলল ইউকাওয়া।

“তাই আমি একাই এসেছি। ডিটেক্টিভ কুসানাগিও এসে পড়বেন।

“ওর জন্যে আমরা একটু অপেক্ষা করি? একই কথা দু’বার বলতে ভালো লাগবে না আমার। তাছাড়া একটা ব্যাপার জানতে হবে আমার, ‘ বলল ইউকাওয়া। “আপনার ডিপার্টমেন্টের মতে-নাহ, এভাবে বলাটা ঠিক হবে না। আপনি বাদে আপনার ডিপার্টমেন্টের লোকদের কি ধারণা? ইয়োশিতাকা মাশিবার খুন হবার মোটিভ কি?”

“পরকীয়া।”

“এত সংক্ষেপে না। একটু ভেঙে বলুন,” ইউকাওয়া বলল। “কে কাকে ভালোবাসতো, কে ভিক্টিমকে এতটাই ঘৃণা করতো যে তাকে খুন করল এবং কেন?”

“সবই তো এ মুহূর্তে অনুমান।”

“আচ্ছা, ধরুন আপনার ব্যক্তিগত অভিমত জানতে চাচ্ছি আমি।” মাথা নাড়লো উতসুমি। মাথা নিচু করে এক মুহূর্ত ভেবে নিল যে কি বলবে।

কফিমেকার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই। ইউকাওয়া উঠে গিয়ে দুটো কাপ ধুয়ে ফেলল সিঙ্কে।

“আসলে,” উতসুমি বলল পেছন থেকে, “আমার ধারণা আয়ানে মাশিবাই খুনি। স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে না পেরে কাজটা করেছেন তিনি-এমনটা নয় যে, শুধুমাত্র তার কাছে ডিভোর্স চেয়েছিলেন মি. মাশিবা; তার প্রিয় শিক্ষার্থীর সাথে সম্পর্কেও জড়িয়েছেন। এটাই তাকে ঠেলে দেয় খুনের দিকে।“

“মাশিবাদের বাসায় যেদিন ইকাইদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল সেদিনই কি সিদ্ধান্তটা নেন তিনি?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করল।

“চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা হয়তো সেরাতেই নেন। কিন্তু আমার ধারণা এর বেশ আগে থেকেই খুনের ইচ্ছে দানা বাঁধতে থাকে তার মনে। ইয়োশিতাকা আর হিরোমি ওয়াকাইয়ামার সম্পর্কের ব্যাপারে জানতেন তিনি। হিরোমি যে প্রেগন্যান্ট এটাও ধরতে পেরেছিলেন।”

টেবিলে কফির কাপদুটো নিয়ে ফিরে এলো ইউকাওয়া। একটা উতসুমির সামনে নামিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করল। “আর মিস জুঞ্জি সুকুইয়ের ব্যাপারে কি ধারণা আপনার? খুনের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই তাহলে? কুসানাগি তো এই বিষয়েই তদন্ত করছে বোধহয় এখন?”

ল্যাবে আসার পর প্রথমেই জুঞ্জি সুকুই এবং আয়ানে মাশিবার আগে থেকে একে অপরকে চেনার সম্ভাবনার ব্যাপারে প্রফেসরকে জানিয়েছে উতসুমি।

“কোন সম্পর্ক নেই সেটা বলবো না। এটা খুবই সম্ভব যে ইয়োশিতাকা মাশিবাকে যে আর্সেনাস এসিড প্রয়োগে খুন করা হয়েছে মিস সুকুইও সেই আর্সেনাস এসিডই পানিতে মিশিয়ে খেয়েছিলেন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে। কোন একভাবে আয়ানে মাশিবা সেটা যোগাড় করেছিলেন তার কাছ থেকে।”

“আর?” কাপে একবার চুমুক দিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল ইউকাওয়া।

“মানে?” বুঝতে না পেরে বলল উতসুমি।

“কেসটার সাথে জুঞ্জি সুকুইয়ের সম্পৃক্ততা এটুকুই? শুধু বিষের জোগান দিয়েছিলেন তিনি? তার মৃত্যুর সাথে হত্যার মোটিভের কোন সম্পর্ক নেই?”

“সেটা বলা কঠিন…”

শুকনো একটা হাসি ফুটলো ইউকাওয়ার ঠোঁটে। “তাহলে আপনাকে কৌশলটা বলে দেয়া ঠিক হবে না আমার।“

“কি?! কেন?”

“কারণ এখনও মূল কারণটা ধরতে পারেননি আপনি।”

“আপনি পেরেছেন?”

“কিছুটা।”

কাপটা দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে ইউকাওয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকলো উতসুমি। দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে এল এসময়।

“ভালো সময়ে এসেছে! হয়তো কুসানাগি এ বিষয়ে আলোকপাত করতে পারবে,” উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলল প্রফেসর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *