স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৭

অধ্যায় ৭

ফোনের শব্দে চোখ খুলল হিরোমি।

ঘুম আসছিল না, তাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল এতক্ষণ। প্রস্তুতি নিচ্ছিল আরেকটা নির্ঘুম রাতের। ইয়োশিতাকা যে ঘুমের ঔষধগুলো দিয়েছিল তাকে, সেগুলোর কয়েকটা এখনও আছে। কিন্তু ইচ্ছে করেই ওগুলোর কোনটা মুখে দেয়নি।

হালকা মাথাব্যথা নিয়ে উঠে বসলো। ফোন ধরতেও ভয় লাগছে। এই সময়ে কে ফোন দেবে? ঘড়ির দিকে তাকালো একবার। দশটা বাজতে চলেছে।

ডিজিটাল ডিসপ্লেতে নামটা দেখেই ঝিমুনি কেটে গেল পুরোপুরি। যেন ঠাণ্ডা পানির ছিটে এসে লেগেছে চোখেমুখে। আয়ানে মাশিবা। রিসিভ বাটনে চাপ দিল দ্রুত

“হ্যালো, হিরোমি বলছি,” জড়ানো কণ্ঠে বলল।

“হ্যালো, আমি, আয়ানে। ডিস্টার্ব করলাম তোমাকে? ঘুমোচ্ছিলে?”

“না। শুয়ে ছিলাম। সকালে ফিরতে পারিনি দেখে দুঃখিত।”

“সমস্যা নেই। ঠিক আছো এখন?”

“হ্যাঁ। আপনি কেমন আছেন? খুব বেশি ক্লান্ত, না?” হিরোমি জিজ্ঞেস করল। ডিটেক্টিভ দু’জন আয়ানেকে সবকিছু খুলে বলেছে কি না কে জানে।

“হ্যাঁ, কিছুটা ক্লান্ত। আমার কাছে সবকিছু এখনও অবাস্তব মনে হচ্ছে, জানো? মানে কিভাবে যে…

হিরোমির নিজেরও এরকমই মনে হচ্ছে। যেন কোন দুঃস্বপ্ন হঠাৎই বাস্তব হয়ে উঠেছে। “বুঝতে পারছি,” বলল সে।

“সত্যি বলছো, হিরোমি? তোমার শরীর খারাপ না তো?”

“না, আসলেও ঠিক আছি। কালকে কাজেও যেতে পারবো।”

“ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না তোমাকে। আসলে আমি ভাবছিলাম…এখন দেখা করতে পারবে কি না।”

“এখন?” হঠাৎই সতর্ক হয়ে উঠল হিরোমির কন্ঠস্বর। বুকের অস্বস্তি ভাবটা ফিরে এসেছে।

“সামনাসামনি তোমার সাথে কিছু ব্যাপারে কথা বলতে চাই আমি। খুব বেশি সময় লাগবে না। তুমি যদি বেশি ক্লান্ত হও তো আমি তোমার ওখানে আসতে পারি।”

ফোনটা শক্ত করে কানের সাথে চেপে ধরলো হিরোমি। “না, আমিই আসছি আপনার বাসায়। এক ঘন্টা সময় দিন।”

“আসলে আমি এখন একটা হোটেলে আছি।”

“জি?”

“পুলিশের লোকেরা বাসায় কিছু জিনিস খতিয়ে দেখছে, তারাই বলেছে এখানে থাকতে। স্যাপোরোতে যাওয়ার সময় স্যুটকেসে যা যা নিয়েছিলাম, ওগুলো নিয়েই চলে এসেছি এখানে।”

দক্ষিণ টোকিওর একটা হোটেলের ঠিকানা দিল আয়ানে। কি নাগাওয়া স্টেশনের কাছে জায়গাটা।

“আসছি,” বলে ফোন কেটে দিল হিরোমি।

তৈরি হতে হতে ভাবতে লাগলো যে কোন ব্যাপারে কথা বলতে চায় আয়ানে। আমার ভালো থাকা নিয়ে যদি এতই চিন্তা থাকে তার, তাহলে এভাবে তাড়াহুড়া করে যেতে বলতো না নিশ্চয়ই। হয়তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানাতে চাচ্ছেন।

ট্রেনে করে কি নাগাওয়া যাওয়ার পথেও এক মুহূর্তের জন্যে স্থির থাকতে পারলো না হিরোমি। কি এমন বলার আছে আয়ানের? সে কি ওর আর মি. মাশিবা সম্পর্কের কথা জেনে গেছে কোনভাবে? ফোনে গলার স্বর শুনে অবশ্য সেরকমটা মনে হয়নি। না কি ইচ্ছে করেই চেপে গেছে?

হিরোমি কল্পনা করার চেষ্টা করল, ওদের সম্পর্কের কথা শোনার পর আয়ানের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। কিন্তু কিছুই মাথায় এলো না। এর আগে কখনো তাকে রাগতে দেখেনি ও। সবসময়ই চুপচাপ, ধীর-স্থির। কিন্তু কেউই রাগের উর্ধ্বে নয়। একেকজনের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশের ধরণ আলাদা মাত্র।

স্বামীর সাথে নিজের শিক্ষানবিশের সম্পর্কে আয়ানের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা ধরতে না পারায় কিছুটা ভয়ই লাগলো হিরোমির। তবে সিদ্ধান্ত নিল, আয়ানে যদি সরাসরি জিজ্ঞেস করে, ফালতু কোন অজুহাত দেবে না; ক্ষমা চাইবে শুধু। অবশ্য ক্ষমা পাবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। চাকরিটাও হয়তো চলে যেতে পারে। নিজেকে প্রস্তুত রাখাই ভালো।

হোটেলে পৌঁছে আয়ানেকে ফোন দিল হিরোমি। তাকে সরাসরি রুমে চলে আসতে বলল আয়ানে। হোটেলেরই একটা বাথরোব গায়ে জড়িয়ে রেখেছে। “দুঃখিত তোমাকে হঠাৎ এভাবে ডেকে পাঠানোর জন্যে,” বলল সে।

“সমস্যা নেই। কী যেন বলতে চাইছিলেন?”

“বসো,” রুমের দুটো সোফার একটার দিকে নির্দেশ করে বলল আয়ানে।

গোটা রুমে একবার নজর বুলিয়ে বসে পড়লো হিরোমি। দুটো বিছানা ঘরটায়। একটার ওপরে আয়ানের সুটকেস খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে বাসা থেকে নিজের ওয়ার্ডোবের অর্ধেক জিনিস তুলে এনেছে সে। দীর্ঘ সময় থাকতে হবে ধরেই নিয়েছে।

“কিছু খাবে?”

“না, ধন্যবাদ।”

“তাও বের করে রাখলাম, যদি খেতে ইচ্ছে করে,” হোটেলের ফ্রিজ থেকে উলং চায়ের বোতল বের করে দুটো গ্লাসে ঢাললো আয়ানে।

“ধন্যবাদ,” বলে একটা গ্লাস নেয়ার জন্যে হাত বাড়িয়ে দিল হিরোমি। তেষ্টা পেয়েছিল সেটা বুঝতেই পারেনি এতক্ষণ।

“তোমাকে কি জিজ্ঞেস করেছিল ডিটেক্টিভ দু’জন?” বরাবরের মতনই কোমল সুরে জিজ্ঞেস করল আয়ানে।

গ্লাস নামিয়ে রেখে একবার ঠোঁট ভিজিয়ে নিল হিরোমি। “অচেতন অবস্থায় মি. মাশিবাকে যখন আমি প্রথম দেখি তখন তার কী অবস্থা ছিল। আর তাকে হত্যা করতে পারে এমন কাউকে চিনি কি না।”

“কী বললে তুমি?”

“আমি বলেছি, এ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই আমার,” হাত নেড়ে বলল হিরোমি।

“সেটাই হবার কথা। অন্য কিছু জিজ্ঞেস করেছিল?”

“নাহ, আর কিছু না,” মেঝের দিকে তাকিয়ে বলল হিরোমি। রোববার সকালে আপনার স্বামীর সাথে কফি খাবার ব্যাপারেও প্রশ্ন করেছিল।

মাথা নেড়ে অপর গ্লাসটা তুলে নিল আয়ানে। একবার চুমুক দিয়ে কপালের সাথে চেপে ধরলো ওটা, যেন মাথা গরম হয়ে আছে তার।

“হিরোমি, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই আমি।”

আয়ানের চোখের দিকে তাকালো হিরোমি। এক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো, কড়া কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে, কিন্তু পরমুহূর্তেই বদলে গেল চেহারার অভিব্যক্তি। তার দৃষ্টিতে ক্রোধ বা ঘৃণা কোনটারই অস্তিত্ব নেই। কেবল প্রিয়জন হারানোর বেদনা আর শোক। ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটাও মনের কষ্টের প্রতিচ্ছবি যেন।

“আমাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা বলেছিল ও,” অনুভূতিহীন কণ্ঠে বলল আয়ানে।

আবারো মেঝের দিকে দৃষ্টি ফেরালো হিরোমি। ওর হয়তো একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গি করা উচিত ছিল, কিন্তু সেই ইচ্ছেটাও নেই। আয়ানের চেহারার দিকে তাকানো সম্ভব নয় তার পক্ষে।

“শুক্রবারে কথাটা আমাকে বলেছিল ও। ইকাইদের আসার আগে। বলছিল যে, এমন একজন মহিলার সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না যে কি না তার সন্তানের মা হতে পারবে না।”

কিছুই বলল না হিরোমি। সে জানে, আয়ানেকে ডিভোর্সের ব্যাপারে বলেছিল ইয়োশিতাকা, কিন্তু সেটা যে এভাবে, তা জানতো না।

“এটাও জানিয়েছিল, ওর জীবনকে পূর্ণতা দেবে এমন একজনের সাথে দেখা হয়েছে। তার নাম প্রকাশ করেনি, কিন্তু এটা বলেছিল, তাকে আমি চিনি না।”

হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে হিরোমির। সত্যটা জানেন তিনি। কৌশলে আমার মুখ থেকে শুনতে চাইছেন।

“আমার ধারণা মিথ্যে বলছিল ও,” আয়ানে বলল। “ঐ নারীর পরিচয় আমি জানি। তাকে খুব ভালোভাবেই চিনি। এজন্যেই ইচ্ছেকৃতভাবে নামটা চেপে গেছে।”

হিরোমির প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে আয়ানের কথাগুলো শুনতে। বুকের ওপর চেপে বসা পাথরটার ওজন বাড়ছেই চক্রবৃদ্ধি হারে। চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে।

আয়ার্নের চেহারায় অবশ্য অবাক হবার কোন লক্ষণ নেই। সেই হাসিটাই লেগে আছে মুখে, যেন ছোট একটা বাচ্চার সাথে কথা বলছে। “তোমার কথাই তো বলছিল ও, তাই না হিরোমি?”

মুখে হাত দিয়ে কান্না ঠেকানোর চেষ্টা করল হিরোমি। কিন্তু লাভ হলো না। গাল বেয়ে অঝোরে নামছে অশ্রুধারা।

“তোমার সাথেই সম্পর্ক ছিল ওর, তাই না?”

এখন আর অস্বীকার করার কোন মানেই হয় না। মাথা নেড়ে সায় দিল হিরোমি।

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল আয়ানের বুক চিড়ে। “এটাই ভেবেছিলাম।”

“আয়ানে, আমি…”

“না, কিছু বলার দরকার নেই। ও যখন আমাকে ডিভোর্সের কথা বলেছিল তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, সব শেষ। যদিও আমি নিজেও চাইছিলাম, আমার ধারণা যেন মিথ্যে হয়। তোমার সাথে এত সময় কাটানোর পরেও এরকম কিছু আমার নজরে পড়বে না, তা হতে পারে না। তাছাড়া ও অভিনয়ে বরাবরই কাঁচা।”

“আপনি নিশ্চয়ই খুব রেগে আছেন।”

মাথা একদিকে কাত করল আয়ানে। “রাগ? জানি না। কষ্ট পেয়েছি বলতে পারো। আমি নিশ্চিত যে ও-ই প্রথমে তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছিল। কিন্তু তুমিও তো তাকে না করোনি-আমার রাগ হওয়াটা কি ভুল হবে? তবে আমার কিন্তু এমন মনে হচ্ছে না, তুমি ওকে আমার কাছ থেকে চুরি করেছো। আমার প্রতি ওর যে ভালোবাসাটুকু ছিল, তা নিঃশেষ হয়েছে প্রথমে। এরপরে তোমার কাছে গিয়েছে। ওকে ধরে রাখতে না পারাটা আমারই ব্যর্থতা।”

“আমি দুঃখিত,” হিরোমি বলল কোনমতে। “আমি জানি, আমার না বলা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি এতবার বলেছেন যে…”

“সাফাই দেয়া লাগবে না,” এবারে কিছুটা ঠাণ্ডা স্বরে বলল আয়ানে। “না-হলে দেখা যাবে তোমাকে আসলেই ঘৃণা করা শুরু করবো, হিরোমি। তুমি কিভাবে ওর প্রেমে পড়লে এটা শুনতে কি ভালো লাগবে আমার?”

ঠিকই বলেছেন। মাথা ঝাঁকালো হিরোমি। এখনও মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে সে।

,

“বিয়ের সময় একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা,” আয়ানে বলল, আবারও কোমল হয়ে এসেছে তার গলার স্বর। “বলেছিলাম, এক বছরেও যদি আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা না হয় তাহলে গোটা ব্যাপারটা আবারো ভেবে দেখবো। সত্যি বলতে, আমাদের দু’জনের কারো বয়সই কিন্তু কম নয়। তাই এসব ব্যাপারে ডাক্তার দেখিয়ে সময় নষ্ট করাটাও বাস্তবিক হবে না। তোমার সাথেই যে ওর সম্পর্ক-এটা জেনে ভীষণ অবাক হয়েছি সত্যি। কিন্তু ও যে এরকম কিছু করবে তা মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে না। এমনটাই তো কথা ছিল।”

“আমাকে কথাটা বলেছিলেন তিনি,” হিরোমি মাথা না উঁচিয়েই বলল,

শনিবারে যখন ওদের দেখা হয়েছিল তখনও কথাটা বলেছিল ইয়োশিতাকা। ‘শর্ত’ কথাটা ব্যবহার করেছিল সে। আয়ানের সাথে এটাই শর্ত আমার। ও মেনে নিতে বাধ্য। হিরোমি তখন ব্যাপারটাকে অতটা গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু এখন আয়ানের কথা শুনে মনে হচ্ছে বুঝে শুনেই সব করেছে ইয়োশিতাকা।

“আমি স্যাপ্পোরোতে ফিরে গিয়েছিলাম সব কিছু নিয়ে ভাবতে। যে বাড়িটাতে ও আমাকে ডিভোর্সের কথা বলেছে সেখানে থেকে কিছু চিন্তা করাটা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। এজন্যেই তোমাকে আমার চাবি দিয়ে গিয়েছিলাম- যাতে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না হয়। জানতাম যে আমার অনুপস্থিতিতে দেখা করবে তোমরা; তাহলে চাবি দিয়ে যেতে অসুবিধে কোথায়?”

আয়ানে যেদিন ওর অ্যাপার্টমেন্টে এসেছিল সেদিনের কথা মনে করল হিরোমি। ওর সেলাই শিক্ষকের মাথায় কী চলছিল সে ব্যাপারে ধারণাই করতে পারেনি সে। ভেবেছিলাম ভরসা করে চাবিটা দিয়ে যাচ্ছেন। এতটা বোকা আমি? আয়ানে যখন ওর হাতে চাবিটা দেখেছিল শেষবারের মতন, তখন তার মনের ভেতরে কী চলছিল তা ভেবে মনে মনে গুঙিয়ে উঠল হিরোমি।

“ইয়োশিতাকা আর তোমার সম্পর্কের ব্যাপারে ডিটেক্টিভদের কিছু বলেছো?”

মাথা নাড়লো হিরোমি। “তারা কোনভাবে বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা। অন্য কোন উপায় ছিল না আমার।”

“বেশ। মিথ্যে বললে পরিস্থিতি আরো ঘোলা হতো বরং। কারণ ছাড়া বাসায় কেনই বা যাবে তুমি। এভাবেই নিশ্চয়ই ভেবেছে তারা। আমাকে কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কিছু বুঝতে দেয়নি।”

“তাই?”

“আমার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করছিল। আমাকে নিশ্চয়ই সন্দেহও করে।”

“কি?” এবারে মাথা উঁচু না করে পারলো না হিরোমি। “মানে, আপনি

একজন সন্দেহভাজন এই কেসে?”

“কেন হবো না? আমার স্বামীর অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল। আমাকে সন্দেহ না করাটাই অস্বাভাবিক।”

এবারো ঠিক বলেছেন। হিরোমি অবশ্য এক মুহূর্তের জন্যেও সন্দেহ করেনি আয়ানাকে। একেতো ঘটনার সময় স্যাপ্পোরোতে ছিল সে। তাছাড়া ইয়োশিতাকা বলেছিল, সবকিছু স্বাভাবিকই আছে। হয়তো আবারো বোকামির পরিচয় দিয়েছি আমি।

“অবশ্য ওদের সন্দেহে আমার কিছু যায় আসে না,” ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে চোখ মুছলো আয়ানে। “আমি শুধু জানতে চাই যে…আসলে কি হয়েছিল। হিরোমি, তুমি কি আসলেও কিছু জানো না? তোমার সাথে শেষ কখন দেখা হয়েছিল ওর?”

প্রশ্নটার জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না হিরোমির, কিন্তু মিথ্যে বলার অবকাশ নেই। “গতকাল সকালে। একসাথে কফি খেয়েছিলাম আমরা। ডিটেক্টিভ দু’জন আমার সাথে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথাও বলেছে। কিন্তু কোন ধরণের অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি আমার।”

“ঠিক আছে।” ঘাড় কাত করে হিরোমির দিকে তাকালো আয়ানে। “ডিটেক্টিভদের কাছ থেকে কিছু লুকাওনি তো?”

“না।”

“বেশ। কিন্তু তোমার যদি মনে হয় যে কোন একটা ব্যাপার তাদেরও জানা উচিত, তাহলে দেরি করবে না। সাথে সাথে ফোন দেবে। সন্দেহের তালিকায় না-হলে তোমার নামও ঢুকে যাবে।”

“আমার ধারণা আমাকে ইতোমধ্যেই সন্দেহ করে ওরা। এই উইকেন্ডে একমাত্র আমার সাথেই দেখা হয়েছিল মি. মাশিবার।”

“সেটা ঠিক। এ ব্যাপারটা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবে।”

“তাদেরকে কি আমি আজকের কথাও বলবো? মানে আমাদের দেখা করার ব্যাপারটা।”

মাথা নাড়লো আয়ানে। “লুকানোর কোন কারণ দেখছি না,” কপালে হাত দিয়ে বলল সে। “তারা জানলেও কিছু যায় আসে না। গোপন করার চেষ্টা করলেই বরং অন্যভাবে নিতে পারে।”

“ঠিক আছে।”

একটা মলিন হাসি ফুটলো আয়ানের ঠোঁটে। “ব্যাপারটা একটু কেমন যেন, তাই না? আমি এমন একজনের সাথে এক রুমে বসে আছি যার সাথে আমার স্বামীর সম্পর্ক ছিল কিন্তু একে অপরের সাথে ঝগড়া বাদ দিয়ে শান্ত স্বরে কথা বলছি কেবল। মৃত্যু সব বদলে দেয়।”

কী বলবে বুঝতে পারলো না হিরোমি। তার নিজেরও একই রকম অনুভূত হচ্ছে। ইয়োশিতাকা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আয়ানের রাগের কোন পরোয়া করতো না সে। কিন্তু এখন এসব রাগ অভিমানের কোন মানেই নেই। এক দিক দিয়ে চিন্তা করলে ক্ষতির পরিমাণ আয়ানের চেয়ে ওরই বেশি। কিন্তু সেটা কাউকে বলতে পারবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *