স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩০

অধ্যায় ৩০

কুসানাগি ক্যাফেতে পৌঁছে দেখলো হিরোমি ওয়াকাইয়ামা আগেই চলে এসেছে। দ্রুত টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল সে।

“সরি, বসিয়ে রাখলাম আপনাকে।“

“কেবলই এসেছি আমি,” বলল হিরোমি।

“ধন্যবাদ, সময় দেয়ার জন্যে। যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে ছেড়ে দেব।”

“সময় নিয়ে না ভাবলেও চলবে,” মৃদু হেসে বলল হিরোমি। “আপাতত কোন কাজ নেই আমার, সুতরাং সময়েরও অভাব নেই।”

চেহারার ক্লান্ত ভাবটা দূর হয়ে গেছে তার, ভাবলো কুসানাগি। হয়তো ধীরে ধীরে অনুভূতিগুলোকে পোষ মানাতে পারছেন।

একজন ওয়েট্রেস ওদের দিকে এগিয়ে এলে নিজের জন্যে কফির অর্ডার দিল কুসানাগি। “আপনি কি নিবেন, দুধ?”

“লেবু চা,” বলল হিরোমি।

অর্ডার নিয়ে চলে গেল ওয়েট্রেস। “গতবার দুধের অর্ডার দিয়েছিলেন তো, সেজন্যে ভাবলাম…” হেসে বলল কুসানাগি।

“আসলে দুধ খেতে কখনোই অতটা ভালো লাগে না আমার। আর এখন সেটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি।”

“তাই? কেন?”

“আমাকে কি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে?” ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল হিরোমি।

“না,” হাত নেড়ে বলল কুসানাগি। “অবশ্যই না। আমি দুঃখিত। তাহলে এসব ছেড়ে কাজের কথা বলি এখন। আপনাকে আসলে মাশিবাদের রান্নাঘর নিয়ে প্রশ্ন করার জন্যে ডেকেছি আজকে। আপনার কি মনে আছ যে তাদের সিঙ্কের সাথে একটা ফিলট্রেশন সিস্টেম লাগানো আছে?”

“হ্যাঁ।”

“ওটা কখনো ব্যবহার করেছিলেন আপনি?”

“নাহ, একবারও না,” কোনরকম দ্বিধাবোধ ছাড়াই জবাব দিল হিরোমি।

“খুব দ্রুত জবাব দিয়ে দিলেন দেখছি,” কুসানাগি বলল, “মানে, এসব প্রশ্ন শোনার পর সাধারণত কিছুক্ষণ ভাবে সবাই।”

মাথা ঝাঁকালো হিরোমি। “আসলে ওখানকার রান্নাঘরে খুব কমই গিয়েছি আমি। কখনো রান্নার কাজেও সাহায্য করিনি। তাহলে সিঙ্কেরই বা দরকার পড়বে কেন? আমি তো মিস উতসুমিকেও এসব বলেছি। একমাত্র আয়ানে যখন আমাকে কফি বা চা বানাতে বলতেন, তখনই যেতাম রান্নাঘরে। সেটাও কদাচিৎ। তিনি আশেপাশেই থাকতেন।”

“তাহলে এটা সত্য যে রান্নাঘরে কখনো একা সময় কাটাননি আপনি?”

“আসলে কি জানতে চাচ্ছেন, বলুন তো,” হিরোমি ভ্রু কুঁচকে বলল। “আমি শুধু এটাই জানতে চাচ্ছি যে মাশিবাদের রান্নাঘরে কখনো একা ছিলেন কি না। একটু ভেবে দেখুন। কেন গিয়েছিলেন সেটা বলা জরুরি না।”

বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে ভাবলো হিরোমি। এরপর কুসানাগির দিকে তাকিয়ে বলল, “না বোধহয়। আমার সবসময়ই এটা মনে হতো যে মিসেস মাশিবা তার অনুমতি ছাড়া কারও রান্নাঘরে যাওয়াটা পছন্দ করতেন না।”

“আপনাকে কি কখনো সরাসরি এটা বলেছেন তিনি?”

“না, মুখে বলেননি। কিন্তু আমার এরকমটাই মনে হতো। আর আপনি তো জানেনই, কোন গৃহিণীই চায় না তার রান্নাঘরে অন্য কেউ এসে হম্বিতম্বি করুক।”

“তাই তো শুনেছি।”

ওয়েট্রেস এসে কফি এবং চা রেখে গেল টেবিলে। হেসে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে একবার চুমুক দিল হিরোমি। আগে কখনো তাকে এরকম হাসিখুশী দেখেনি কুসানাগি।

অন্তত আমার চেয়ে তার অবস্থা ভালো এখন। সে যা যা বলছে, ইউকাওয়ার গল্পের সাথে মিলে যাচ্ছে।

কফির কাপটায় একবার চুমুক দিয়েই উঠে দাঁড়ালো সে। “সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ।”

“এটুকুই?” অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল হিরোমি।

“যা শোনার শুনে নিয়েছি আমি। আপনি আরাম করে চা শেষ করুন, ‘ বলে বিলের কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে গেল সে।

রাস্তায় বের হয়ে ট্যাক্সি খুঁজছে এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ইউকাওয়া কল দিয়েছে।

“তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে আমার,” বলল পদার্থবিদ। “ দেখা করতে পারবে?”

“নিশ্চয়ই, এখনই আসছি। কিন্তু এখন আবার জরুরি কি কথা? আমি তো ভেবেছিলাম খুনের কৌশলের থিওরিটা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তুমি।”

“আত্মবিশ্বাস এখনও আছে। সেজন্যেই যত দ্রুত সম্ভব, চলে এসো,” বলে ফোন কেটে দিল ইউকাওয়া।

ত্রিশ মিনিট পর ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছুল কুসানাগি।

“তোমাদের সাথে কথা বলার পর থেকে কৌশলটার ব্যাপারে আবারো ভাবছিলাম আমি। কোন একটা বিষয়ে খটকা লাগছিল, কিন্তু ধরতে পারছিলাম না। একটু আগে বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা, তোমাদের তদন্তের জন্যেও জরুরি ওটা,” কুসানাগি ল্যাবে প্রবেশ করা মাত্র বলল ইউকাওয়া।

“গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হচ্ছে।”

“অনেক। আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও-খুনের ঘটনার পর বাসায় ফিরে আয়ানে মাশিবা প্রথম কোন কাজটা করেছিল? তুমি তো তার সাথে ছিলে, তাই না?”

“হ্যাঁ, আমি আর উতসুমি তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় নিয়ে আসি।”

“বাসায় প্রবেশ করেই প্রথমে কি করেছিল সে?” ইউকাওয়া জিজ্ঞেস করল।

“প্রথমে? চারপাশটা ভালোমত একবার দেখ-“

“না, ওটা না,” মাঝপথেই তাকে থামিয়ে দিল ইউকাওয়া। “রান্নাঘরে গিয়েছিল সে, পানি নিতে। ঠিক বলছি?”

মুখ হা হয়ে গেল কুসানাগির। এক মুহূর্ত ভাবলো সে ওদিনকার কথা। “হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। পানি নিতে গিয়েছিল সে।”

“কী জন্যে পানি নিয়েছিল? যদি আমার অনুমান ঠিক হয়, তাহলে বেশ ভালো পরিমাণ পানি দরকার হবে তার,” উৎসাহী কণ্ঠে বলল ইউকাওয়া।

“ফুলগাছে পানি দেয়ার জন্যে। ওগুলো শুকিয়ে যাবে বলা আশঙ্কা করছিল সে। একটা বালতিতে পানি ভরে দোতলার ব্যালকনির গাছগুলোর জন্যে নিয়ে যায়।”

“এটাই!” ইউকাওয়ার চোখ চকচক করছে রীতিমত। “এবারে সব উত্তর মিললো।”

“আমি বোধহয় ধরতে পারছি তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো, তবুও বলো একবার, শুনি,” বন্ধুর উদ্দেশ্যে বলল কুসানাগি।

“খুনির মত করে ভাবার চেষ্টা করছিলাম আমি। বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে সে জানতো যে ফিল্টারের লাইনে বিষ ছিটানো আছে। আর সে যেমনটা আশা করেছিল, তেমনটাই ঘটেছে। বিষাক্ত পানি দিয়ে কফি বানিয়ে খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে ইয়োশিতাকা মাশিবা। কিন্তু কফি বানানোর জন্যে যে পরিমাণ পানি দরকার, তাতে সবটুকু বিষ পাইপ থেকে ধুয়ে যাবার কথা না।”

“তা সত্যি,” সোজা হয়ে বসে বলল কুসানাগি।

“কেউ যদি তখন ফিল্টারটা ব্যবহার করতো, তাহলে তারও মৃত্যু ঘটার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। তদন্তকারী অফিসারদেরও এটা বুঝতে অসুবিধে হতো না যে ভিক্টিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কি। সেজন্যে যত দ্রুত সম্ভব প্রমাণ নষ্ট করাটা জরুরি ছিল তার জন্যে।”

“সেজন্যে ফুল গাছগুলোতে পানি দেয়ার নাম করে…”

“ফিল্টার থেকে বালতিতে পানি ঢেলে নিয়েছে। এতে সম্পূর্ণ বিষ ধুয়ে যাবে ভেতর থেকে। চিন্তা করে দেখো, আসলেও তাই হয়েছিল। স্প্রিং- এইটের সাহায্য না নিলে আমরা ধরতেই পারতাম না যে ভেতরে বিষ ছিল। ফুল গাছগুলোতে পানি দেয়াটা মুখ্য ছিল না, সে আসলে তোমাদের চোখের সামনেই প্রমাণ নষ্ট করেছে সেদিন।”

“তাহলে ঐ পানিটুকুই “

তোমাদের মূল প্রমাণ। ফিল্টারের ভেতরে আর্সেনাস এসিডের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া তাকে দোষী প্রমাণ করতে না পারলেও, পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ আর্সেনাস এসিডের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে সে আটকে যাবে।

ইয়োশিতাকা মাশিবার মৃত্যু নিয়ে আমার থিওরিটাও তখন সঠিক প্রমাণিত হবে।”

“কিন্তু পানি তো নেই। সেদিনই খরচ করে ফেলেছিল সে গাছে পানি দেয়ার নাম করে।”

“তাহলে টবের মাটি টেস্ট করে দেখো। আমি নিশ্চিত স্প্রিং-এইটের লোকজন সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ আর্সেনাস এসিড খুঁজে পাবে। যদিও এটা প্রমাণ করা শক্ত হবে যে আয়ানের ব্যবহৃত পানিই সেটার উৎস। কিন্তু আদালতে বলার মত কিছু পাবে অন্তত।”

ইউকাওয়ার কথা শোনার সময় ভেতরে ভেতরে একটা কথা মনে করার চেষ্টা করছিল কুসানাগি। হঠাৎই সব পরিস্কার হয়ে গেল তার কাছে, মনে পড়েছে ব্যাপারটা। এতদিন একদম ভুলে গিয়েছিল। উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো সে। ইউকাওয়ার দিকে তাকালো চোখ বড় করে।

“কি হলো, এমন করছো কেন? আমার চেহারায় কিছু লেগেছে না কি?” মাথা ঝাঁকালো কুসানাগি। “একটা উপকার দরকার আমার। না, ধরে নাও মেট্রোপলিটন পুলিশ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ইমপেরিয়াল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইউকাওয়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।”

শক্ত হয়ে গেল ইউকাওয়ার চেহারা। “বলো, শুনছি,” ডানহাতের তর্জনী দিয়ে চশমা ঠিক করে বলল সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *