স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ২১

অধ্যায় ২১

“আমাকে যখন হিরোমি জিজ্ঞেস করল যে কেন এই প্রশ্নগুলো করছি, এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গিয়েছিলাম। আসলে আমি নিজেও তো জানি না!” বলে কফির কাপটা তুলে উসুমি। “ডিপার্টমেন্টে যোগ দেয়ার পর প্রথমেই আমাদের শেখানো হয় যে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মনে মনে পরিস্কার একটা লক্ষ্য ঠিক করে রাখতে। যাতে সন্দেহভাজনকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে ঐ লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারি।” হিরোমি ওয়াকাইয়ামার সাথে সদ্য শেষ হওয়া প্রশ্নোত্তর পর্বের বিবরণ ইউকাওয়াকে শোনাতে ল্যাবরেটরিতে এসেছে জুনিয়র ডিটেক্টিভ।

“হ্যাঁ, সেটা অবশ্যই জরুরি,” উসুমির নোটবুক থেকে মাথা উঠিয়ে বলল ইউকাওয়া। “কিন্তু এবার আমরা যে অপরাধটার তদস্ত করছি সেটাকে অন্য কোন কেসের সাথে তুলনা করলে চলবে না। এরকম ব্যতিক্রমী অপরাধ সম্পর্কে তদন্ত করে কিছু বের করা কখনোই সহজ নয়। ভুলে যাবেন না, আমি কিন্তু আগেও কঠিন কঠিন রহস্যের সমাধানে আপনাদের ডিপার্টমেন্টকে সাহায্য করেছি,” বলে কিছুক্ষণের জন্যে থামলো সে।। একটা ব্যাপার কি জানেন? যখন আমরা জটিল কোন রহস্যের মুখোমুখি হই, তখন অনেক কিছুর দ্বারাই আমাদের মন প্রভাবিত হতে পারে। বিশেষ করে কেউ যদি আগে থেকে কোন একটা বিষয়ে বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করে রাখে, তখন সে চাইবে সমাধানটা সেভাবেই হোক। কিন্তু এই কেসের ক্ষেত্রে তেমনটা হতে দেয়া চলবে না। আপনি কি পদার্থদবিদ রেনে ব্লন্দলটের নাম শুনেছেন?”

“না।”

“উনিশ শতকের শেষ দিকের একজন ফরাসী বিজ্ঞানী। নতুন এক ধরণের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের দাবি করেছিলেন তিনি। নাম দিয়েছিলেন ‘এন-রে। তার মতে এই এন-রে’গুলো যেকোন বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দেয়। পুরো পদার্থবিজ্ঞানের দুনিয়ায় হৈ চৈ পড়ে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা যায় যে বাস্তবে এটার কোন অস্তিত্বই নেই। অন্যান্য যত ল্যাবরেটরিতে এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে, কোথাও বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো সম্ভব হয়নি।”

“ধোঁকাবাজি করেছিলেন তিনি?”

“না, এটাকে ধোঁকাবাজি বলাটা ঠিক হবে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রেনে এই এন-রে’র অস্তিত্ব বিশ্বাস করে গেছেন।“

“এতে লাভ কি হলো?”

“এখানে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। রেনে তার এক্সপেরেমেন্টের ফলাফল, অর্থাৎ ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে কি না এটার বিচার করতেন নিজে যা দেখছেন সেটা দিয়ে। আর ওটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। তার কাছে মনে হতো যে ঔজ্জ্বল্য বেড়ে গেছে, যেখানে এন-রে’র কোন অস্তিত্বই নেই। তিনি সেটাই দেখতেন, যেটা তিনি দেখতে চাইতেন।”

“একজন নামকরা পদার্থবিদের জন্যে এটা তো বড়সড় একটা ভুল।”

“আমি আপনাকে গল্পটা বলেছি পূর্বধারণার ব্যাপারে সাবধান করার জন্যে। আর মিস ওয়াকাইয়ামার কাছে কোন কিছু না জানিয়েই আপনাকে পাঠানোর কারণও এটা,” আবারো নোটবুকের দিকে দৃষ্টি ফেরালো ইউকাওয়া।

“বেশ। এখন আপনার কি মনে হচ্ছে? আমরা কি এখনও কাল্পনিক সমাধানের পেছনে ছুটছি।”

জবাব না দিয়ে হাতের নোটবুকটার দিকে দীর্ঘ একটা সময় তাকিয়ে থাকলো ইউকাওয়া। “মাত্র কয়েক বোতল পানি ছিল ফ্রিজে?” কিছুক্ষণ পর ভূকুটি করে নিজের উদ্দেশ্যেই বলল যেন।

“আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে ব্যাপারটা,” উতসুমি বলল। “মিসেস মাশিবা আমাকে বলেছিলেন যে তিনি সবসময় খেয়াল রাখতেন যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মিনারেল ওয়াটার মজুত থাকে। কিন্তু ঘটনার দিন মাত্র একটা বোতল ছিল। এটা কি কিছু ইঙ্গিত করে?”

বুকের ওপর হাত ভাঁজ করে চোখ বুজলো ইউকাওয়া।

“প্রফেসর?” উতসুমির ভয় হলো যে ঘুমিয়েই গেল কি না সে।

“অসম্ভব,” জবাবে বলল পদার্থবিদ

“কি অসম্ভব?”

“এটা হতেই পারে না, কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে…” চশমা খুলে নিয়ে দুই আঙুল দিয়ে চোখের পাতায় আলতো করে চাপ দিল ইউকাওয়া, বাক্যটা শেষ করল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *