স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – ৩৩

অধ্যায় ৩৩

একটা বহুতল ভবনের বেসমেন্টে বারটা। সিঁড়ি ভেঙে ভেতরে ঢুকে একদম পেছনের দিকের টেবিলটায় ইউকাওয়া আর কুসানাগিকে বসে থাকতে দেখলো উতসুমি।

“সরি, দেরি করে ফেলেছি,” কুসানাগির পাশে একটা সিটে বসে বলল জুনিয়র ডিটেক্টিভ।

“খবর কি?” কুসানাগি জিজ্ঞেস করল।

“ভালো। দুটো জায়গার বিষের গঠন একদম হুবহু মিলে গেছে,” মাথা নেড়ে বলল সে।

“বাহ।”

জুঞ্জি সুকুইয়ের মা’র বাসা থেকে উদ্ধার করা আর্সেনাস এসিডের ক্যানটা স্প্রিং এইটে পাঠায় ওরা। সেখানে টেস্টে দেখা যায় যে ক্যানের আর্সেনাস এসিডের সাথে ইয়োশিতাকা মাশিবার কফিতে যে আর্সেনাস এসিড ছিল, সেটার গঠন পুরোপুরি মিলে গেছে। আয়ানে মাশিবার স্বীকারোক্তির সত্যতাও প্রমাণ হয় এতে।

“কেসটার ঝামেলা তাহলে শেষ হলো অবশেষে,” ইউকাওয়া বলল।

“তা বটে,” কুসানাগি বলল পাশ থেকে। “আমরা সবাই যেহেতু এখানে আছিই এখন, টোস্ট হয়ে যাক?” ওয়েটারকে ডেকে শাম্পেইন অর্ডার করল সে। “এ যাত্রা আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছো তুমি ইউকাওয়া, এটা স্বীকার করতেই হবে। যত ইচ্ছে গেল আজকে, বিল আমার।

“এ যাত্রা? বলো যে ‘আবারো বাঁচিয়ে দিয়েছো আমাকে। আর আমি তো আসলে মিস উতসুমিকে সাহায্য করেছি, তোমাকে না।”

“হয়েছে, থামো। সুযোগ পেলেই কথা প্যাঁচাতে শুরু করো। বাহ, শ্যাম্পেইন এসে গেছে!”

তিনজন শ্যাম্পেইনের গ্লাস একসাথে ঠুকে ‘কানপাই!’ বলে চেঁচিয়ে উঠল।

“আমি সবচেয়ে অবাক হয়েছি এটা শুনে যে, তুমি ঐ জিনিসটা রেখে দিয়েছিলে,” এক রাউন্ড ড্রিঙ্ক শেষ করার পর বলল ইউকাওয়া।

“কোন জিনিসটা?”

“মিসেস মাশিবার ফুলগাছে পানি দেয়ার খালি ক্যানটা।”

“ওহ ওটা,” মেঘ ডাকলো যেন কুসানাগির চেহারায়।

“আমি শুনেছিলাম যে তুমি নিজ থেকেই গাছে পানি দেয়ার ব্যাপারে সাহায্যের কথা বলেছিলে তাকে। কিন্তু বড় ওয়াটারিং ক্যানটার ব্যাপারে জানতাম না। যাইহোক, পুরনো ক্যানটা কেন রেখে দিয়েছিলে? উতসুমির কাছে শুনলাম তোমার ডেস্ক ড্রয়ারে ছিল ওটা।”

কটমট দৃষ্টিতে উতসুমির দিকে তাকালো কুসানাগি, কিন্তু অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিল জুনিয়র ডিটেক্টিভ।

“ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কারসাজি বলতে পারো,” অবশেষে বলল সে।

“ওহ হ্যাঁ, তোমার বিখ্যাত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”

“তাছাড়া পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এটা জানতাম, তদন্তে কোন জিনিসই ফেলনা নয়।”

“আসলেও ফেলনা নয়, ঠিক বলেছো,” শ্যাম্পেইনের গ্লাসে লম্বা চুমুক দিয়ে কিছুটা জড়ানো কন্ঠে বলে ইউকাওয়া। “আমি তো ভেবেছিলাম

স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জিনিসটা রেখে দিয়েছো তুমি।”

“কী বলতে চাচ্ছো?”

“নাহ, কিছু না। বাদ দাও।”

“আসলে,” উতসুমি বলল এ সময়। “আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই আমি, প্রফেসর।”

“নিশ্চয়ই, করুন।”

“কৌশলটার কথা কিভাবে মাথায় এসেছিল আপনার? ভাবতে ভাবতে বের করে ফেলেছিলেন?”

হাসি ফুটলো ইউকাওয়ার চেহারায়। “কোন কিছু মাথায় আপনা- আপনি এসে হাজির হয় না ম্যাডাম। তবে হ্যাঁ, অনেক বেশি ভেবেছি আমি কেসটা নিয়ে। প্রথমবার খটকা লাগে ফিল্টারের অবস্থা দেখে। আমি পরিস্কার বুঝতে পেরেছিলাম, দীর্ঘ সময় ওটা ব্যবহার করা হয়নি।”

“আচ্ছা। কিন্তু আমরা তো এটা বের করতে পারছিলাম না যে ফিল্টার পর্যন্ত বিষ কিভাবে গেল।”

“হ্যাঁ। আমি খেয়াল করেছিলাম, ফিল্টারের বাইরের অংশে ধূলো জমে আছে। অথচ আপনার কথা শুনে মনে হয়েছিল মিসেস মাশিবা ঘরদোর পরিস্কার রাখতে পছন্দ করেন। আপনিও তো শ্যাম্পেইনের গ্লাসগুলো অগোছালো অবস্থায় দেখে তাকে সন্দেহ করেন, তাই না? আপনার অনুমান যদি ঠিক বলে ধরে নেই, তাহলে মিসেস মাশিবার সিঙ্কের নিচটুকুও ঝকঝকে করে রাখার কথা।”

মাথা নাড়লো উতসুমি। ইউকাওয়ার ব্যাখ্যা শোনার পর এখন ব্যাপারটা কত সহজ মনে হচ্ছে।

“তখন মনে হয়েছিল যে ইচ্ছেকৃতভাবে ফিল্টারটা অব্যবহৃত ফেলে রাখা হয়েছিল। আর সেটার কারণ নিয়ে চিন্তা করতে গিয়েই আইডিয়াটা মাথায় আসে।”

“আমি আসলেও অভিভূত আপনার কাজ দেখে,” মাথা দুলিয়ে বলল উতসুমি।

“আমাকে প্রশংসার কোন দরকার নেই, মিস উতসুমি। প্রশংসা যদি কারো প্রাপ্য হয়েই থাকে, তাহলে সেটা মিসেস মাশিবার। একমাত্র কোন নারীর পক্ষেই এতটা ধৈর্য্য ধরে এরকম কিছু করা সম্ভব।”

“ওহ আপনাদের তো বলতে ভুলে গিয়েছি, মিস হিরোমি ওয়াকাইয়ামা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাচ্চা নষ্ট করবেন না তিনি।”

“এটাই তো হবার কথা ছিল, তাই না?” ইউকাওয়া বলল। “হ্যাঁ, কিন্তু তাকে রাজি করিয়েছে আয়ানে মাশিবা।“

এক মুহূর্তের জন্যে জমে গেল পদার্থবিদ। “এটা…বুঝতে পারলাম না,” ধীরে ধীরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল সে।

“নারীদের আপনারা বুঝতে পারলেই বরং অবাক হতাম,” উতসুমি বলল সান্ত্বনা দেয়ার সুরে।

“তাহলে তো বলতে হবে, এই কেসটার সমাধান করতে পেরেছি আমরা কারণ ভাগ্য সহায় ছিল। কী বলো তুমি-” বলে কুসানাগির দিকে ঘুরে মুখ বন্ধ করে ফেলল ইউকাওয়া।

পাশের সিটে বসে থাকা সিনিয়র ডিটেক্টিভের দিকে তাকালো উতসুমি। টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।

বেচারা বড্ড বেশি ক্লান্ত,” ইউকাওয়া বলল। “পারফেক্ট ক্রাইমের সমাধান হলেও ওর হৃদয়ের সমস্যাগুলোর কিন্তু সমাধান হয়নি। ঘুমিয়ে যদি একটু শান্তি পায়।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *