শোধবোধ

শোধবোধ

অমল মহা ভাবনায় পড়ল।

কাল ইংরিজি গ্রামার ক্লাস। শুধু ক্লাসই নয়— উইকলি পরীক্ষা নেবেন বলেছেন স্যার। আজ সন্ধেবেলা মাস্টারমশাই যখন পড়াতে আসবেন, গ্রামার পড়ানোর জন্য সে বই দেবে কী করে? বইয়ের কী হল তার কৈফিয়তই বা কী দেবে? অন্য ছেলেকে পড়ার বই দেওয়া পছন্দ করেন না বাবা। তারপর আবার না বলে দিয়েছে। এবং ঠিক সময়ে ফেরত না পাওয়ায় পড়া তৈরি করতে পারেনি যদি শোনেন? পরিণতিটা মারাত্মক হতে পারে। ভাবতেই অমলের বুক শুকিয়ে যায়।

সোম আর শুক্রবার ফিফ্থ পিরিয়ডে ইংরিজি গ্রামার ক্লাস। গত সোমবার বিকেলে স্কুল থেকে বেরুনোর মুখে মিহির বলেছিল, ‘অমল, তোর ইংরিজি গ্রামার বইটা দিবি, আজ? কাল ঠিক ফেরত দেব।’

—‘কেন, তোরটা কী হল?’ অমল জানতে চায়।

একটু আমতা আমতা করে বলেছিল মিহির, ‘আমারটা কোথায় যে রেখেছি, খুঁজে পাচ্ছি না। আজকের পড়াটা তোর বই থেকে একবার দেখে নেব।’

‘মাত্র একদিনের জন্যে চাইছে, তাই সে বইটা দিয়েছিল মিহিরকে।’ মনে মনে আশা ছিল, এই সূত্র ধরে মিহিরের সঙ্গে তার ভাব জমবে। মিহিরের সঙ্গে ভাব জমাতে তার খুব ইচ্ছে।

মিহিরের রং শ্যামলা। রোগা ছোটোখাটো চেহারা। চুলের ছিরি নেই— বেড়ে বেড়ে ঘাড় অবধি লম্বা হলে তখন দেয় কদমছাঁট। বেশির ভাগ দিন আধময়লা জামার সঙ্গে পাজামা বা প্যান্ট পরে স্কুলে আসে। পায়ে রবারের চটি। তবে মুখখানি সুন্দর। ঝকঝকে চোখ দুটো। মজার মজার কথা বলে। কথাবার্তায় ভারি বুদ্ধির ছাপ।

লেখাপড়ায় খুব ভালো। কেবল পড়ার বই নয়, মিহির বাইরের বইও বেশ পড়ে। সেটা ওর কথা শুনে বোঝা যায়। কিন্তু ছেলেটি একটু অদ্ভুত ধরনের। কখনো খুব হাসিখুশি, আবার কোনো কোনো দিন চুপচাপ গম্ভীর। কারোর সঙ্গে বেশি মিশতে চায় না। কেমন যেন ওপর ওপর আলাপ রাখে।

শুধু অন্তরঙ্গ হবার লোভেই নয়, বই দেওয়ার পিছনে একটা অন্য কারণও ছিল। মাসখানেক আগে একদিন অমল দেখে মিহির টিফিনের সময় ক্লাসে বসে কী একটা বই পড়ছে। উঁকি মেরে দেখি, বইটার নাম রবিনহুড

মিহির মুখ তুলে বলে, ‘পড়েছিস এটা? কুলদারঞ্জন রায়ের বই। দারুণ গল্প।’

‘না। তোর হয়ে গেছে?’

—‘আর দুপাতা বাকি।’

দে-না আমায় পড়তে।’

মিহির ইতস্তত করে বলে, ‘আমার বই নয়। পাড়ার লাইব্রেরির বই। আর কাউকে দেওয়া বারণ। আচ্ছা নে। কাল ঠিক ফেরত দিস।’

কথার খেলাপ করেনি অমল, বিকেলে না খেলে পড়ে শেষ করে পরদিনই ফেরত দিয়েছিল বইখানা। খানিকটা তারই প্রতিদানে গ্রামার বইটা মিহিরকে না দিয়ে পারেনি। কিন্তু তার জন্যে এমন মুশকিলে পড়বে কে জানত?

সোমবার সে দিয়েছিল গ্রামার বইটা। মঙ্গলবার মিহির বলল, ‘এই যাঃ, ভুলে গেছি আনতে।’

বুধবারেও ওই এক কথা, ‘এই যাঃ, আজও ভুলে গেছি। কাল ঠিক এনে দেব।’

বৃহস্পতিবার মিহির স্কুলেই এল না।

কী করবে? অমল ভেবে কোনো কূলকিনারা পায় না। কী হল তার বইয়ের? মিহির কি তার বইটা হারিয়ে ফেলেছে, তাই আনছে না!’ আর-একটা সম্ভাবনাও তার মনে জাগে। মিহির তার বইখানা পুরনো বইয়ের দোকানে বিক্রি করে দেয় নি তো? মাস দুই আগে সে কালীঘাটে উজ্জ্বলা সিনেমায় মর্নিং শো-এ টারজান দেখতে গিয়েছিল। উজ্জ্বলার কাছেই কতগুলো পুরনো বইয়ের দোকান। পুরনো বই কেনাবেচা করে। হঠাৎ সে দেখে সেইরকম একটা দোকানে মিহির পিছনে দাঁড়াতেই শোনে দোকানি বলছে, ‘দু টাকার বেশি দিতে পারবে না।’

—‘কী রে, কী করছিস?’

অমলের গলা পেয়ে মিহির চমকে উঠেছিল। ঘাড় নেড়ে বলেছিল, ‘কিছু না।’ বলতে বলতেই সে সরে এসেছিল দোকান থেকে। তার হাতে একখানা বই ছিল। চট করে সেটা ঢুকিয়ে নিয়েছিল কাঁধের ব্যাগে। এক নজর দেখেই অমলের মনে হয়েছিল ওটা পড়ার বই। মিহির বোধহয় বইখানা বিক্রি করতে চেষ্টা করছিল? মিহির আর দাঁড়ায়নি। ‘চলি। একটা কাজ আছে’, বলে ব্যস্তভাবে বিদায় নিয়েছিল।

সেই ঘটনাটা মনে পড়তে অমল ভাবল, ‘মিহিরের কি লুকিয়ে পুরনো বইয়ের দোকানে বই বিক্রির অভ্যেস আছে? অমলের পাড়ায় একজনের এই অভ্যেস আছে। দেবুকে কেউ তার বই দিতে চায় না। গল্পের বই বা পড়ার বই পড়তে চেয়ে এনে স্রেফ বেচে দেয় পুরনো বইয়ের দোকানে। সেই পয়সায় সিনেমা দেখে, রেস্টুরেন্টে খায়। বই ফেরত চাইলে বলে— ‘হারিয়ে গেছে।’ ভয়ে ওকে কেউ আর বই দিতে চায় না।

অনেক লেখাপড়ায় ভালো ছেলেরও নাকি এই বদ অভ্যাস থাকে। ছোটোকাকা বলছিল যে ওদের মেডিক্যাল কলেজে থার্ড ইয়ারের একজন স্টুডেন্টের এই স্বভাব। অথচ তার রেজাল্ট খুব ভালো।

বইটা যদি মিহিরের কাছ থেকে উদ্ধার করতে না পারি? ভাবলেই অমলের দিশাহারা লাগে। নিজে পয়সা জমিয়ে একটা নতুন বই কেনা যাবে না? যদি বা যায়, ততদিন কী করবে? মাস্টারমশাই তো আজই জিজ্ঞেস করবেন— ইংরেজি গ্রামার বই কোথায়? অতঃপর বরাতে জবাবদিহি এবং লাঞ্ছনা।

মিহিরের বাড়ি সে চেনে না। রবি থাকে মিহিরের পাড়ায়। মিহির কেন ক্লাসে আসেনি রবি বলতে পারল না। এক পাড়ায় থাকে বটে কিন্তু মিহিরের সঙ্গে তার তেমন ভাব নেই।

রবিকে ধরে অমল, ‘ছুটির পর তোর সঙ্গে যাব। মিহিরের বাড়িটা আমায় দেখিয়ে দিস। আমার একটা বই নিয়েছে। খুব দরকার। ফেরত আনব।’

অমলদের স্কুলটা হাজরা রোড এবং ল্যান্সডাউন রোডের মোড়ের কাছে। অমলের বাড়ি স্কুলের দক্ষিণে, রবির সঙ্গে সে চলল স্কুল থেকে উত্তর দিকে। কিছু দূর গিয়ে তারা ল্যান্সডাউন রোড ছেড়ে বাঁদিকে একটা ছোটো রাস্তায় ঢুকল। তারপর খানিক এঁকেবেঁকে চলে এক জায়গায় থেমে রবি বলল, ‘ওই বাড়িটা। একতলা। হলুদ দরজা।’

রবি চলে গেল। অমল মিহিরের বাড়িটা দেখতে দেখতে এগোল। ছোটো একতলা বাড়ি। খুব পুরনো। দেয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে পড়েছে। জানলা দরজার রংচটা। জানলাগুলোর কোনো কোনো পাল্লা ভাঙা। পাশেই একটা বস্তি। সামনে দিয়ে গেছে নোংরা জলের ড্রেন। দুর্গন্ধ উঠেছে। ইস, এ কী বাড়ি!

বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে অমল জোরে জোরে ডাক দিল, ‘মিহির! মিহির আছে?’

—‘কে?’ এক বিবাহিতা ভদ্রমহিলা দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। মহিলার পরনে মলিন শাড়ি। তাঁর মুখের সঙ্গে মিহিরের মুখের খুব মিল। হয়তো মিহিরের মা।

—‘মিহির আছে।’ মহিলা জবাব দেন।

—‘একটু ডেকে দিন-না।

—‘ওর জ্বর হয়েছে,’ মৃদুস্বরে বললেন মহিলা।

—‘কিন্তু আমার যে একটা বই নিয়েছে ও। খুব দরকার। আজই চাই।’ কাতর কণ্ঠে বলে অমল।

—‘তোমার নাম কী?

—‘অমল। অমল রায়। আমি ওর সঙ্গে পড়ি।’

একটুক্ষণ চুপ করে চেয়ে থেকে কোনো কথা না বলে মহিলা ভিতরে ঢুকে গেলেন।

অনিশ্চিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে অমল। সত্যি ডেকে দেবেন তো? না ওর নাম শুনে মিহির দেখাই করবে না! তাহলে ওর মাকে নালিশ করবে। অমল একটু মুখচোরা ধরনের, কিন্তু আজ বেকায়দায় পড়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

নিঃশব্দে মিহির এসে দরজায় দাঁড়াল। আস্তে আস্তে বলল, ‘ভেরি সরি অমল। তার গায়ে চাদর জড়ানো। শুকনো মুখ।

—‘এই নে’– মিহির অমলের গ্রামার বইখানা এগিয়ে দেয়।

ছোঁ মেরে বইটা টেনে নিয়ে অমল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক বাবা!

—‘জ্বর হয়ে গেল,’ মিহির কাচুমাচু ভাবে হাসে। ‘কাল ঠিক কারো হাতে পাঠিয়ে দিতাম।’

বই ফেরত পেয়ে অমলের মনটা বেজায় হাল্কা। দেরি হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরেই খেলতে ছুটবে। ‘আচ্ছা চলি’, বলেই সে হাঁটা দিল।

মিহির আরও দুদিন স্কুল কামাই করল। এর পর থেকে অমল মিহিরকে একটু এড়িয়ে চলতে লাগল। মিহির সম্বন্ধে ওইরকম খারাপ সন্দেহ করার জন্য তার মনে লজ্জা জমেছে। তাছাড়া ভয়, ফের যদি ও বই চায়। মিহির অবশ্য বই নিয়ে কোনো কথাই তুলল না।

প্রায় দু সপ্তাহ বাদে। বুধবারে। সকাল দশটা নাগাদ অমল স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। খানিক দূরে মিহির তখন স্কুলে ঢুকছে। গেটের পাশে দাঁড়িয়েছিল ওদের ক্লাসের জগবন্ধু। জগবন্ধু ভালো ফুটবল প্লেয়ার। ডানপিটে। তবে পড়াশুনায় সুবিধের নয়। কোনোরকমে পাস করে যায়।

জগবন্ধু মিহিরকে আটকাল। উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘কীরে বই এনেছিস?’

মিহির থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, ‘হ্যাঁ।’

—‘দে।’ জগবন্ধু হাত বাড়ায়।

—‘এখন নয়। টিফিনের পর। প্লিজ।’

—‘হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক।’ মিহির ঘাড় নাড়ে।

স্কুল শুরুর ঘণ্টা পড়ল। অমলের ক্লাসঘর দোতলায়। জগবন্ধু তাড়াতাড়ি ক্লাসে চলল।

অমলের মনে কৌতূহল। মিহির আবার কী বই নিয়েছে? ঠিক সময়ে ফেরত দেয়নি মনে হচ্ছে। ক্লাসে জগবন্ধু বসে অন্য বেঞ্চে। তাই তখনই তাকে জিজ্ঞেস করা গেল না ব্যাপারটা। পরে অমল ভুলে গেল। বিষয়টা মনে পড়ল ফের টিফিনের সময়।

টিফিনের ঘণ্টা পড়লে ক্লাসে বসে ব্যাগ থেকে টিফিন বাক্স বার করল, টিফিন খেয়ে অমল একতলায় নামল। পাঁচিল ঘেরা মস্ত কমপাউন্ড। ছেলেরা হৈ হৈ করে খেলছে— লাট্টু, গুলি, এক্কাদোক্কা। মার্চের শেষাশেষি, তাই কিছু ছেলে ফুটবলও শুরু করে দিয়েছে রবারের বলে। গেটের বাইরে ফুচকা, চীনেবাদাম, আলুকাবলি, পেয়ারা ইত্যাদি নানা মুখরোচক খাবারের পসরা ঘিরে ছেলেদের ভিড়। হঠাৎ অমল দেখল, বারান্দার এক কোণে মেঝেতে উবু হয়ে বসে— মিহির কী জানি লিখছে।

গুটিগুটি এগিয়ে অমল উঁকি মারল। সামনে খোলা ইংরিজি গ্রামার, তাই থেকে মোটা একখানা খাতায় টুকছে মিহির।

পিছনে কেউ টের পেয়ে মাথা ঘোরাল মিহির। অমলকে দেখেই বসে ঝপ করে বন্ধ করে দিল বইটা।

—‘কীরে, কপি করছিস?’ একটু হেসে বলল অমল।

—‘হুঁ।’ মিহিরের মুখ থমথমে। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইল অন্যদিকে। মিহিরের বিরক্ত ভাব দেখে অমল সরে গেল। মনে মনে সে বেশ আহত। কপি করা দেখে ফেলেছি বলে কী এমন দোষ করেছি?

স্কুলের পর অমল জগবন্ধুর সঙ্গ ধরল। যেতে যেতে বলল, ‘তোর কী বই নিয়েছিল মিহির?’

–‘ইংরিজি গ্রামার বই। দেখ-না, সোমবার বলল, তোর ইংরিজি গ্রামার বইখানা একদিনের জন্যে দিবি? ফেরত দেব। আমার বইটা পাচ্ছি না খুঁজে। আজকের পড়াটা একবার দেখে নিতাম। তা দিলাম। নেহাত ওর খাতা দেখে মাঝে মাঝে অঙ্কের হোমটাস্ক টুকে নিই, তাই। তা গতকাল আনল না বইটা। আচ্ছাসে কড়কে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কাল না পেলে মজা দেখাব। তা ভয়ে আজ ঠিক এনেছে।’

অমল বলল, ‘মিহির বোধহয় ওর নিজের ইংরিজি গ্রামারটা হারিয়ে ফেলেছে। টিফিনের সময় দেখলাম, তোর বই থেকে খাতায় টুকছে। আমার কাছ থেকেও নিয়েছিল ইংরিজি গ্রামার বই। একদিনের বদলে তিনদিন রেখে দিয়েছিল। শেষে ওর বাড়ি গিয়ে নিয়ে এসেছি। নিশ্চয় আমারটা থেকেও কপি করেছে, তাই দেরি করছিল।’

বিজয় যাচ্ছিল তাদের পাশে পাশে। বিজয় লেখাপড়ায় ভালো। মিহিরের সঙ্গে পড়াশুনায় তার রেষারেষি। তবে এইট থেকে নাইনে উঠতে সে মিহিরের কাছে হেরে গেছে। কারণ ফোর্থ হয়েছে। বিজয় ঝাঁঝের সঙ্গে বলে উঠল, ‘মিহির মোটেই ওর ইংরিজি গ্রামার হারায়নি। আসলে ও বইটা কেনেইনি। আমি তো ওর পাশে বসি। বছরের গোড়া থেকে দেখছি, একদিনও ইংরিজি গ্রামার বই আনেনি। হয়তো বই কেনার পয়সা সিনেমা-টিনেমা দেখে উড়িয়েছে। এখন এর-ওর কাছে থেকে নিয়ে টুকে কাজ চালাবার ধান্দায়। নিজের বাড়িতে অমনি বানিয়ে বলবে— খুঁজে পাচ্ছি না। হারিয়ে ফেলেছি। বিজয়ের কথা শোনামাত্র অমলের মনে হয়— তাই হবে। মিহির বই কেনেইনি। তবে সত্যি কি ও বই কেনার টাকা খরচা করে ফেলেছে? না কেনার পয়সা জোটে নি? তার মনে ভেসে ওঠে মিহিরের বাড়ি। সেই দীন দরিদ্র আবাস। ওর মায়ের ম্লান রূপ।

অমল মাথা নামিয়ে চলে যায়।

দুদিন বাদে। শুক্রবার। ছুটির পর অমল স্কুল থেকে বেরিয়েই মিহিরকে ধরল। সোজা জিজ্ঞেস করল, ‘তোর ইংরিজি গ্রামার বই থেকে টোকা শেষ হয়ে গেছে?’

মিহির থতমত খেয়ে মাথা নাড়ল।

—‘আর কতখানি বাকি?’

—‘আরও প্রায় চার পাতা। মানে টার্মিনাল পরীক্ষায় যদ্দূর হবে।’ মিহির হতাশভাবে বলে।

—‘একদিনের মধ্যে ওটা কপি করতে পারবি?’

—‘হ্যাঁ।’

—‘মানে আজ যদি দিই কাল ঠিক ফেরত দিবি বইটা?’ বলতে বলতে অমল তার ব্যাগ থেকে গ্রামার বইখানা বের করে।

মিহিরের চোখ চকচক করে ওঠে। মুখ দিয়ে তার কথা বেরয় না।

—‘নে।’ মিহিরের হাতে বইটা গুঁজে দিয়ে অমল উল্টো দিকে রওনা দিল।

—‘শোন।’

মিহিরের ডাকে অমল ফিরে দাঁড়ায়।

—‘চাঁদের পাহাড় পড়েছিস? বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।’ —’নাঃ।’

—‘দারুণ অ্যাডভেঞ্চার। পড়ে দিস।’ মিহির তার ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে এগিয়ে দিল।

—‘তোর পড়া হয়ে গেছে?’

—‘না। টিফিনে পড়েছি আজ বাইশ পাতা। উঁঃ একসেলেন্ট। লাইব্রেরির বই। কাল ফেরত দিস ভাই। উঁহু, একদিনে শেষ করতে পারবি না বোধহয়। ঠিক আছে, সোমবার আনিস।’

মিহিরের মুখে লাজুক মিষ্টি হাসি। যেন ভাবে বোঝাতে চায়— একটুও কি শোধবোধ হল না?

চৈত্র ১৩৯০

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *