খুনে বৈজ্ঞানিক অন্তর্ধান রহস্য

খুনে বৈজ্ঞানিক অন্তর্ধান রহস্য

খুনে বৈজ্ঞানিক অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনের আগে এই রহস্য সমাধানের নায়ক বাবলু ও সিরাজ কীভাবে গোয়েন্দাগিরিতে এল তা জানানো দরকার।

বাবলু ক্লাস নাইনে পড়ে। সে ছিল অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির ভক্ত। খেলাধুলায় চৌকস আর বেজায় ডানপিটে। গল্পের বই পড়ার ঝোঁক থাকলেও সময় বেশি পেত না পড়ার। ক্লাসের পড়াও যে রয়েছে! অন্তত মোটামুটি ভাবে পাস করা চাই। ডিটেকটিভ বই কিছু পড়লেও তাই নিয়ে আগে বিশেষ মাথা ঘামায়নি। কিন্তু তার পরমবন্ধু ও সহপাঠী সিরাজের কল্যাণে বাবলু পুজোর ছুটির সময় বেশ কিছু রহস্যময় গোয়েন্দা গল্প পড়ে ফেলে চমৎকৃত হয়। মনে ধরে যায় গোয়েন্দাদের ব্যাপার-স্যাপার। এরপর ক্লাসের বাৎসরিক পরীক্ষা হয়ে যেতে বাবলু চুটিয়ে গোয়েন্দা গল্প পড়ে, গ্রামের লাইব্রেরি থেকে এবং এর-ওর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে। মগজে গজগজ করতে থাকে গল্পের বইয়ের নানা গোয়েন্দাদের কীর্তিকলাপ। বিচিত্র সব অপরাধের বৃত্তান্ত এবং সেইসব কুকীর্তি ধরে ফেলার রকমারি কৌশল। শুধু বাঙালি গোয়েন্দাদের কথা নয়, অনুবাদের মাধ্যমে সে পড়ে ফেলে অনেক বিদেশি গোয়েন্দাকাহিনিও।

পড়তে পড়তে বাবলুর শখ চাপল যে শুধুমাত্র ছাপার অক্ষরে অন্য গোয়েন্দাদের বাহাদুরি জেনে কী লাভ? হাতে-কলমে নিজেও কাজে নামব। থিওরি থেকে প্র্যাকটিস। মনের এই প্রবল বাসনা সে জানাতে চলল বন্ধু সিরাজের কাছে।

সিরাজ লেখাপড়ায় দারুণ। ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হয়। তবে সে গোবেচারি ভালোমানুষ নয় মোটেই। সে প্রচুর গল্পের বই পড়ে। ক্ষুরধার বুদ্ধি তার।

ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে বাবলু-সিরাজদের গ্রাম পারুলডাঙা। সিরাজকে তার বাড়ি থেকে ডেকে এনে গ্রামে এক অশথ গাছতলায় বেদিতে নিরালায় বসে বাবলু ঘোষণা করল, ‘আমি ডিটেকটিভ হব। ঠিক করে ফেলেছি।’

—‘অ্যা ডিটেকটিভ! তুই?’ সিরাজ চমকায়।

—‘কেন, আমি পারব না?’ বাবলু ক্ষুব্ধ।

—‘না না, তা বলছি না। মানে তোর তো অন্য অ্যাম্বিশন ছিল। হয় নামকরা ফুটবল প্লেয়ার হবি, নয়তো জাহাজের নাবিক। হঠাৎ মত বদলালি যে?’

—‘এই লাইনটাই আমার বেশি পছন্দ হচ্ছে।’ বাবলু দৃঢ় স্বরে জানায়।

—‘কার কোথায় প্রতিভা লুকিয়ে থাকে সবসময় কি আগে থেকে তা টের পাওয়া যায়? বুঝলি সুযোগ আর চেষ্টায় কত মানুষের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়…’

গত বার্ষিক পরীক্ষার রচনার জন্য মুখস্থ করা কটা লাইন তাক বুঝে ঝেড়ে দেয় বাবলু।

—‘হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো বটেই।’ সায় দেয় সিরাজ।

বাবলু বলে চলে, ‘এই যেমন ধর জগন্নাথপুরের ভোম্বল যে কোনোদিন মিলিটারি হয়ে ইউনিফর্ম পরে, বুট মশমশিয়ে গাঁয়ে ঢুকবে, ভেবেছিল কেউ? ওর চেহারাটা লম্বা চওড়া ছিল বটে, কিন্তু নেহাতই গোবেচারি ক্যাবলা। গাঁয়ের লিকলিকে ছোঁড়াগুলো অবধি ওর পেছনে লাগত, ওর ওপর মাতব্বরি ফলাত। সৎ মায়ের গঞ্জনায় বেচারা বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে আর্মিতে ঢোকে। কোনোমতে টিকেও যায়। আর এখন? গাঁয়ে ওর কী খাতির। ও নিজে ডেকে দুটো কথা বললে ওর সমবয়সিরা গদগদ হয়ে যায়। ছুটিতে বাড়ি এলে কতজন আসে ওর খোঁজখবর নিতে। ভোম্বলের এখন তলোয়ারের মতন মোচ। আর কী স্মার্ট চালচলন। বাংলা হিন্দি ইংরিজিতে বুলি ছোটায়। সত্যি সত্যি একটা যুদ্ধও নাকি লড়েছে। ভোম্বলের সৎ মা এখন একদম টাইট। ও বাড়ি এলে যেন কৃতার্থ। চা চাইলেই বানিয়ে দেয়।’

সিরাজ মনে মনে ভাবে, ‘ইস গাদাগাদা গোয়েন্দা গল্প গিলে বাবলুর মাথাটি বিগড়েছে।’ বাইরে অবশ্য সে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে, ‘তা কোনো ট্রেনিং নিবি নাকি এ লাইনে?’

—‘কি দরকার নেই।’ বাবলু উড়িয়ে দেয় প্রস্তাব। বলে, ‘দেশি বিদেশি সব ডিটেকটিভ একটি মোদ্দা বাণী দিয়েছেন— চোখ কান খোলা রাখো। মগজের বুদ্ধিকে খেলাও। ব্যাস, তাহলেই বেশির ভাগ রহস্যের সমাধান মিলবে। আমি এই উপদেশই ফলো করব।’

সিরাজ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, ‘বেশ তবে কাজে নেমে পড়। আপিস কোথায় করবি? কলকাতায়?’

—‘না। এখুনি কলকাতায় যাওয়া অসুবিধে, থতমত খায় বাবলু, ভাবছি আপাতত এখানেই।

—‘রাইট।’ সিরাজ উৎসাহে দেয়, ‘এখানেই হাতেখড়ি হোক। পাড়াগাঁ বলে অবহেলা করিস না। আমাদের পারুলডাঙায় আর আশেপাশের গ্রামে কি রহস্যের অভাব? কত অপরাধ ঘটছে এখানে তার সব কি কিনারা হয়? বড়ো শহরে কিছু ঘটলেই খবরের কাগজে বেরোয়। তাই লোকে জানতে পারে। গ্রামদেশের বেশির ভাগ খবরই কাগজে ছাপে না। গ্রামের বহু রহস্যজনক ঘটনা রীতিমতো জটিল। অপরাধবিদ্যায় এখানকার লোকের এলেম কিছু কম? ট্রেনিং পিরিয়ডে সে সব রহস্যের কিছু সমাধান করতে পারলে তোর ভিত খুব মজবুত হবে।’

—‘ঠিক বলেছিস।’ বাবলু ভারি খুশি।

সিরাজ বলল, ‘তা অ্যাসিস্ট্যান্ট কাকে নিচ্ছিস?’

—‘অ্যাসিস্ট্যান্ট!’

—‘হ্যাঁ। একজন সহকারী না থাকলে কি গোয়েন্দাকে মানায়? বইয়ে দেখিসনি, দেশি বিদেশি প্রায় সব বাঘা বাঘা ডিটেকটিভের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে। নইলে যে গোয়েন্দার দর কমে যায়।’

—‘তা বটে। কিন্তু আমি সহকারী পাব কোথায়?’ একটু দমে যায় বাবলু।

—‘আমাকে দিয়ে চলবে?’ যেন দ্বিধাভরে জিজ্ঞেস করে সিরাজ।

-–‘যা, ঠাট্টা করছিস?’

—‘ঠাট্টা নয় রে। সিরিয়াসলি বলছি।’

—‘তুই আমার সহকারী হবি? খেপেছিস? তোর যা বুদ্ধি, আর এ লাইনে পড়াশোনা, বরং আমার সহযোগী হতে পারিস। মানে আমরা হব জোড়া ডিটেকটিভ। পার্টনার।’

—‘না ভাই, আমার সহকারী হওয়াই ভালো। পার্টনার হয়ে কাজ নেই। তোর নাম হলে আমার নামটাও জানবে লোকে। দরকার হলে আমি সাধ্যমতো বুদ্ধি জোগাব, হেল্প করব।’

বাবলু মনে মনে হাঁপ ছাড়ে। কারণ সিরাজ পার্টনার হলে সে কি আর পাত্তা পেত? সিরাজ নামে সহকারী, আর কাজে সহযোগী হলেই তার সবচেয়ে সুবিধে। বাবলু বিপুল উৎসাহে রহস্য সন্ধানে নেমে পড়ে গোয়েন্দাগিরিতে হাত পাকাতে।

.

দিন কয়েক বাদে, এক ছুটির দিন সকালে বাবলু হাজির হল সিরাজের কাছে। তার চোখ মুখ থমথম করছে। সিরাজ বোঝে যে গুরুতর কিছু একটা ঘটেছে। কারণটা জানতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। বাবলু উত্তেজিত গলায় বলে, ‘জানিস গত পরশু আমাদের গ্রামের লাইব্রেরি থেকে একটা গল্পের বই হারিয়েছে। খুব সম্ভব চুরি হয়েছে। কেসটা আমি তদন্ত করব ঠিক করেছি। উদ্ধার করব বইটা।’

—‘কী বই?’ জিজ্ঞেস করে সিরাজ।

—‘নাম: খুনে বৈজ্ঞানিক। লেখক : মেঘনাদ। পড়েছিস বইটা?’

—‘না।’

—‘উঃ দারুণ বই। ছোটোদের রহস্য উপন্যাস। পড়তে পড়তে যেন দম বন্ধ হয়ে যায়। গা শিউরে ওঠে। মাত্র তিন মাস আগে কেনা হয়েছে বইটা। গ্রাহকদের মধ্যে, মানে আমাদের মতো ছেলেদের মধ্যে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে বইটা নিয়ে। যে নিচ্ছে বইটা সে নিজে তো পড়ছেই কয়েকবার, তার বাড়ির অন্য সব ছোটোরাও পড়ছে। মায় সে-বাড়ির বেশির ভাগ বড়োরা অবধি বইটা না পড়ে ছাড়ছে না। ভজা তো আবার লুকিয়ে ভাড়া খাটিয়েছে বইখানা।’

—‘ভাড়া? কী রকম?’ সিরাজ অবাক।

—‘ভজা নিজে পড়ে, তার বাড়ির লোকদের পড়া হয়ে গেলে লুকিয়ে ওর পাড়ার কেষ্টকে বইটা পড়তে দিয়েছিল। শর্ত, বইটা মাত্র একবেলা রাখতে পারবে পড়তে। আর তার বদলে ভজাকে দুটো বেগুনি খাওয়াতে হবে, বদ্যির দোকানে গরম ভাজা। আর এ কথা কাউকে বলা চলবে না। বেচারি কেষ্ট তাড়াতাড়ি ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ পড়ার লোভে সেই শর্ত মেনে বেগুনি খাইয়েছে ভজাকে। লাইব্রেরি থেকে বইখানা পেতে তার তখনও ঢের দেরি। ওই বই নিয়ে লাইব্রেরির সামনে একদিন তুমুল ঝগড়া লাগে। তখনই কেষ্ট ফাঁস করে দেয় ভজার কীর্তি।

লাইব্রেরিয়ান গোপালবাবু তাই নিয়ম করেছেন যে অন্য বই সাত দিন রাখতে পেলেও তিনদিনের বেশি রাখতে পারবে না ওই বইটা। নেহাত আমার সঙ্গে গোপালবাবুর একটু বেশি জানাশোনা আছে তাই লাকিলি বইখানা আসা মাত্র পড়তে পেয়েছিলাম। ফের পড়ব বলে ডিমান্ড দিয়ে রাখি চার দিন আগে। ভেবেছিলাম এবার পেলে তোকেও পড়াব।’

—‘কী ভাবে হারাল বইটা?’ প্রশ্ন করে সিরাজ।

—‘গতকাল একজন বইটা ফেরত দেয়। সেইদিনই বিজয়ের নেবার পালা। লাইব্রেরিয়ান ওঁর টেবিলের একপাশে রেখে দেন বইটা। ঘণ্টাখানেক বাদে বিজয় এসে চাইলে দেখা যায় যে নেই। উধাও। অনেক খুঁজেও আর বইটা পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে গোপালবাবু ওঁর খাতায় বইটার নামের পাশে লিখে দিয়েছেন— লস্ট। বললেন, অনেক বই-ই এমনি হারায়। বিশেষ করে যেগুলোর চাহিদা বেশি। কখন যে কে টুক করে তুলে নিয়ে যায়! আমি একা আর কত নজর রাখব? যা হোক আমি কিন্তু ছাড়ছি না।’

—‘কীভাবে এগুবি ভেবেছিস?’ সিরাজের কৌতূহল।

—‘শুধু ভাবিনি। কাজেও এগিয়েছি খানিকটা। গোপালবাবুর থেকে ‘খুনে বৈজ্ঞানিকে’র ডিমান্ড লিস্টটা চেয়ে নিয়েছি। ওটা দেখলেই বোঝা যাবে কার কার এই বইটা পড়তে বিশেষ আগ্রহ। খুব সম্ভব তাদেরই কেউ সরিয়েছে। এদের পেছনেই আমি তদন্ত করব। মানে ইনভেস্টিগেশন।’

—‘কজন বইটা চেয়ে নাম লিখিয়েছে?’

—‘গত পরশু অবধি তেরোজন ছিল ডিমান্ড লিস্টে। এর মধ্যে দুজনকে বাদ দিচ্ছি। বিজয় আর আমি। বাকি এগারোজন যে কেউ অপরাধী হতে পারে।

—‘কীভাবে ইনভেস্টিগেশন করবি?’

—‘উপায় একটা ভেবেছি।’ বাবলুর ঠোটে রহস্যময় হাসি ফোটে কিন্তু আর মুখ খোলে না। বোঝা গেল যে সে তার তদন্ত পদ্ধতি আপাতত গোপন রাখতে চায়।

সিরাজও এই নিয়ে আর জোরাজুরি করে না। শুধু বলে, ‘বইটা ফেরত দেবার ঘণ্টাখানেক বাদে আবিষ্কার হয় যে বই উধাও। তাই তো?’

—‘হুঁ।’

—‘তাহলে ওই সময়ের মধ্যে যারা বই নিয়েছে তাদের মধ্যে একবার খোঁজ করে দেখতে পারিস। যদি কেউ ভুল করে বইটা নিয়ে গিয়ে থাকে।’

বাবলু বলল, ‘ভুল করলে নিশ্চয়ই দু-একদিনের মধ্যেই ভুলটা ধরা পড়বে। তখন বইটা ফেরত দিয়ে যাবে।’

–‘অত তাড়াতাড়ি ভুল ধরা নাও পড়তে পারে’, সিরাজের সংশয়, ‘অনেকে লাইব্রেরি থেকে বই এনে অনেক দিন স্রেফ ফেলে রাখে না-উল্টিয়ে।

—‘বেশ তাদের কাছে খোঁজ করব।’ বাবলু সায় দেয়।

এরপর দুই বন্ধুতে কয়েকদিন আর এ বিষয়ে কথা হয় না। বাবলুর সদাই কেমন ব্যস্তসমস্ত ভাব। সিরাজ জানে ও ঠিক নিজেই বলবে তদন্তের ফলাফল।

পাঁচদিন বাদে স্কুল ছুটির পর বাবলু সিরাজের সঙ্গ ধরল। খানিক পাশাপাশি হাঁটে দুজন।

—‘খোঁজ পেলি বইটার?’ সিরাজ নিজেই জানতে চায়।

—‘নাঃ। বই চেয়ে যারা নাম লিখিয়েছিল তাদের এগারো জনকে বাজিয়ে দেখেছি। কিন্তু তেমনি কোনো ক্লু পাইনি। অবশ্য একটা কেস বাদে।’

—‘কীভাবে বাজালি? সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলি নাকি?’

—‘খেপেছিস। আমি কি অতই বুদ্ধু। সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলে কি চোর স্বীকার করবে? আমি অন্য কথা বলতে বলতে হঠাৎ ওই বইটার কথা তুলেছি। বইয়ের গল্পটা ওরা জানে কিনা পরখ করেছি। যে বইটা পড়েনি তার পক্ষে গল্পটা না জানাই স্বাভাবিক। তাই না?’

—‘বটেই তো। তারপর?’

—‘কারো সঙ্গে খেজুরে আলাপ করতে করতে ফট করে বলেছি, আচ্ছা ডক্টর মুস্তাফির কোন চোখটা জানি কাচের ছিল?’

—‘ডক্টর মুস্তাফি কে?’

—‘রতনগড়ের মালিক। আধা উন্মাদ নিষ্ঠুর অতি প্রতিভাবান এক সায়েনটিস্ট। ওই তো খুনে বৈজ্ঞানিক। যে মানুষ জাতটাকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখে। একটার পর একটা মানুষকে সে রতনগড়ে নিয়ে যায় ভুলিয়ে-ভালিয়ে গোপনে। তাদের ওপর অদ্ভুত সব এক্সপেরিমেন্ট চালায়। তার ফলে বন্দি মানুষগুলোর প্রাণ বলি দিতেও তার বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা নেই। আবার কাউকে জিজ্ঞেস করেছি, আচ্ছা ডক্টর মুস্তাফির সেই ভয়ংকর শিকারি কুকুরটার কী নাম যেন? এমনি সব ছোটোখাটো কিন্তু অব্যর্থ ফাঁদ-পাতা প্রশ্ন। গল্পটা ভালো করে না জানলে যার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।’

—‘বাঃ দিব্যি কৌশল করেছিলি। তা কী রকম উত্তর পেলি?’

—‘দশজন আমার প্রশ্নের জবাবই দিতে পারেনি। তাদের ভেতর সাত জন বলেছে তারা গল্পটার কিছুই জানে না। তবে শুনেছে অন্যের মুখ থেকে। এখন নিজে পড়তে চায়। ডিমান্ড দিয়ে রেখেছে। কিন্তু লম্বু খোকা ঠিক উত্তর দিয়ে দিল।

‘অমনি ওকে চেপে ধরলাম। কী করে জানলি তুই? বইটা তো এখনও লাইব্রেরি থেকে পাসনি। তখন বলে কিনা, বইটা ও পড়ে ফেলেছে ছোটনের বাড়িতে বসে। খুব তাড়াহুড়ো করে লুকিয়ে। ও নাকি ছোটনের বাড়ি গিয়েছিল। দুজনে একসঙ্গে ট্যুইশনি পড়তে যাবে, তাই। ছোটন তখন চান করছে। তারপর ভাত খেল। ছোটনের খাটের ওপর বইখানা ছিল। দেখেই লম্বু খোকা বইটা পড়তে শুরু করে। গোগ্রাসে গিলে শেষ করে। কিন্তু নিজের বাড়িতে আনতে পারেনি বইটা। দেয়নি ছোটন। আর একবার ধীরেসুস্থে পড়ার তার ভারি ইচ্ছে। খোকা বলল, ও শুনেছে যে বইটা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। লাইব্রেরি থেকে হারিয়েছে। খুব আপসোস করল তাই। আমার কিন্তু ধারণা ওটা ওর ভান। ওই কালপ্রিট। নইলে অত নার্ভাস হল কেন? ওই চুরি করেছে বইখানা। আমার প্রশ্নের জবাবটা বেফাঁস বেরিয়ে যেতে ওই সব বানিয়ে বানিয়ে বলল। আবার বলে কিনা লাইব্রেরিয়ানকে বলিস না আমি বইটা একবার পড়ে ফেলেছি। তাহলে বই খুঁজে পেলে আমায় আর দিতে চাইবে না। যারা মোটে পড়েনি তাদের আগে দেবেন।’

সিরাজ ভেবে বললে, ‘খোকার কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ছোটন তো নিয়েছিল বইটা। ওই ঘরেই তখন ছিল কি বইটা? ছোটনকে জিজ্ঞেস করিস। তুইও তো একবার পড়েছিস কিন্তু সাধ মেটেনি। তাই ফের পড়তে চাইছিস।’

বাবলু জোর দিয়ে বলে, ‘উঁহু, খোকাটা মিটমিটে শয়তান! ও একবার জগনের স্ট্যাম্পের অ্যালবাম দেখতে দেখতে দুটো স্ট্যাম্প সরিয়েছিল। পরে ধরা পড়ে যায়। চুরিবিদ্যেয় বেটা পোক্ত। আমি ওকে নজরে রাখছি। সুযোগ পেলেই ওর ঘরে গিয়ে ওর বইটই সার্চ করে দেখব গোপনে। জানিস সেদিন বই হারানোর সময় ও লাইব্রেরিতে ছিল কিছুক্ষণ।

—‘তাই নাকি?’ এবার সিরাজও সন্দিগ্ধ। সে বলে, ‘আচ্ছা যারা ওই দিন, ওই সময়ে বই ইস্যু করেছিল তাদের কাছে খোঁজ নিয়েছিলি? মানে যদি কেউ ভুল করে নিয়ে গিয়ে থাকে?’

—‘হ্যাঁ নিয়েছি। মোট দশজনের কাছে। লাভ হয়নি। উল্টে বিমানস্যারের কাছে আচ্ছা ধ্যাতানি খেলাম এই নিয়ে।

—‘বিমানস্যার? মানে আমাদের বাংলায় টিচার বিমানবিহারী বসু?’

—’হ্যাঁ হ্যাঁ। আর কটা বিমানস্যার আছে পারুলডাঙায়।

—‘কেন কী বলেছিলি?’

—‘কী আবার। সবাইকে যা বলেছি— একটু দেখবেন স্যার খুঁজে, লাইব্রেরির একটা গল্পের বই, নাম ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’, আপনার বইয়ের সঙ্গে মিশে কি চলে এসেছে ভুলে? ব্যাস শুনেই উনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। এমনিই তো রাগি মানুষ। কড়া গলায় বললেন, আমি সেদিন ভুল করে কোনো বেশি ব‍ই আনিনি। বরং ভুল করে আমার একটা ইস্যু করা বই সেদিন ফেলে এসেছিলাম লাইব্রেরিতে। পরে গিয়ে নিয়ে আসি বইটা। বাংলা প্রবন্ধের বই। তোমায় কে পাঠিয়েছে? লাইব্রেরিয়ান? ওর তো যত সন্দেহ আমার ওপর। যত্ত সব—’

—‘বাপরে। আমি তো পালিয়ে বাঁচি। কী মেজাজ!’

—‘উনি বুঝি বই ফেলে এসেছিলেন ভুলে?’

—‘হ্যাঁ। লাইব্রেরিয়ান গোপালবাবু বললেন, বিমানস্যার প্রায়ই বই ইস্যু করে লাইব্রেরিয়ানের টেবিলে রাখেন। তারপর পত্রিকা-টত্রিকা পড়ে বই ভুলে ফেলে রেখে চলে যান। উনি তো দুটো বই পান একসঙ্গে। কখনো একটা, কখনো বা দুটো বই-ই ফেলে রেখে গেছেন। পরে খেয়াল হলে এসে নিয়ে যান। এই নিয়ে গোপালবাবু একবার অনুযোগও করেছেন বই হারিয়ে যাবার ভয়ে। তাই বিমানস্যার গোপালবাবুর ওপর চটে ছিলেন। সুযোগ পেয়ে আমার ওপর ঝাল ঝাড়লেন। যাকগে, লম্বু খোকাকে আমি ওয়াচ করব। আর ভেবেছি, যেসব ছেলে সেদিন লাইব্রেরিতে ছিল তাদের মধ্যে কারো চুরিটুরি করার রেকর্ড থাকলে তাদের ওপরেও নজর রাখব। মোট কথা ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ অন্তর্ধান রহস্য আমি সল্ভ করবই।’ দৃঢ়স্বরে নিজের সংকল্প জানিয়ে বাবলু বিদায় নিল।

.

কয়েক দিন বাদে। সন্ধের পর গ্রাম নিঝুম হয়ে গেছে। সিরাজ পড়ছিল নিজের ঘরে বসে জানলার কাছে। বাবলুর ডাক শুনে বেরিয়ে এল। আজ স্কুলে বাবলুর সঙ্গে তার বিশেষ কথাবার্তা হয়নি। এমন অসময়ে হঠাৎ? সিরাজের ঘরে ঢোকে দুজনে। ফাঁকা ঘরে একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে বাবলু বলে ওঠে, ‘জানিস ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ পাওয়া গেছে।’ কিন্তু এমন একটা দারুণ খবর ঘোষণা করার সময়েও তার চোখে-মুখে ফোটে না কোনো উচ্ছ্বাস বা আনন্দ।

—‘কী করে?’ সিরাজ উত্তেজিত।

নিস্পৃহ বাবলুর জবাব, ‘বিমানস্যার নাকি নিয়ে গিয়েছিলেন ভুল করে। আজ বিকেলে লাইব্রেরিতে এসে ফেরত দিয়ে গেলেন।’

—‘ভুল করে! কিন্তু তোকে যে বলেছিলেন…..

—‘হ্যাঁ, সেদিন নিজের ইস্যু করা একটা বই ভুল করে লাইব্রেরিতে ফেলে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু গতকাল রাতে নিজের ঘরে টেবিলে বইপত্তর ঘাঁটতে ঘাঁটতে আবিষ্কার করেন ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’। কী করে যে বইটা ওখানে এল উনি নাকি বুঝেই উঠতে পারছেন না। তবে মনে করছেন ওঁরই ভুল। কারণ যে বইটা ফেলে এসেছিলেন সেটা আর ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’-এর সাইজ আর বাঁধাইয়ে ভীষণ মিল। দুটোর মলাটের রং-ও এক। হলদে।’

–‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ বাঁধানো বই?’

—‘হুঁ। মাস দুয়েকের ভেতর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বইটার মলাট ছিঁড়ে যায়, বাঁধাই আলগা হয়ে যায়। তখন বাঁধাতে হয়। মলাটের ওপর অবশ্য বড়ো বড়ো করে বইয়ের নাম লেখা আছে।’

—‘কীভাবে হল ভুলটা?’

—‘বিমানস্যার বলছেন যে লাইব্রেরির বইয়ের সঙ্গে আরও কয়েকটা বইখাতা নিজের বাড়ি ফিরে পড়ার টেবিলে নামিয়ে রেখেই উনি একবার মুদির দোকানে যান দেশলাই কিনতে। বাড়িতে বলে দিয়েছিল দেশলাই কিনে আনতে, ভুলে গিয়েছিলেন আগে কিনতে। বাড়ি ফিরেই মনে পড়ে। দোকান থেকে এসে লাইব্রেরির বই দুটো আলাদা করতে গিয়ে দেখেন দুটোর মধ্যে একটা বই রয়েছে। অন্য বইটার জন্যে তেমন খোঁজাখুঁজি না করে তক্ষুনি ছোটেন লাইব্রেরিতে। আগেও এমন কাণ্ড হয়েছে। বইটা পেয়েও যান লাইব্রেরিয়ানের টেবিলে। এখানে অবশ্য স্যারের মনে হচ্ছে, প্রথমবার বাংলা প্রবন্ধর বদলে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ই এনেছিলেন। আর তাড়াহুড়ো করে রাখার সময় বাড়িতে টেবিলে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ সরে গিয়ে অন্য বইয়ের ভিতর মিশে যায়। জানিস বিমানস্যার কৌতূহলী হয়ে কাল রাতে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ পড়ে ফেলেছেন। আজ ফেরত দেবার সময়, এমন উদ্ভট যাচ্ছেতাই বাল্যশিক্ষার অনুপযুক্ত বই লাইব্রেরিতে রাখা উচিত নয়, এইসব উপদেশ ঝেড়ে গেলেন লাইব্রেরিয়ানকে। তবে বইখানা ভুল করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে কিঞ্চিৎ লজ্জাও প্রকাশ করেছেন। তখন আমি লাইব্রেরিতে ছিলাম, তাই শুনলাম সব।’

সিরাজ ভুরু কুঁচকে বলল, ‘বিমানস্যার প্রথমবারে ভুলে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক নিয়ে গিয়েছিলেন হতে পারে। তাড়াতাড়ি রেখে বেরুনোর কারণে বইটা পাশে সরে গিয়েছিল, তাও সম্ভব। কিন্তু সাত দিনের মধ্যে বইখানা স্যারের নজরে পড়ল না? যখন ওটা ওঁর টেবিলেই ছিল। এটা কেমন জানি অদ্ভুত ঠেকছে। উঁহু, মনে হচ্ছে ব্যাপার অন্য কিছু।’

—‘আচ্ছা বিমানস্যারের ছেলে নন্তু কি ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’-এর জন্যে ডিমান্ড দিয়ে রেখেছে?’

—‘হ্যাঁ। ওর নম্বর ছিল সাত।’ জানায় বাবলু।

—‘তুই ওর কাছে বইটার কথা পেড়েছিলি?’

—‘হ্যাঁ।’

—‘কী বলেছিল নন্তু?’

—‘ও বলেছিল বইখানা ও দেখেছে, কিন্তু হাতে পায়নি। পড়াও হয়নি। গল্পটা ও জানে না। তবে শুনেছে দারুণ গল্প।’

সিরাজ বলল, ‘বলছিস ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’-এর মলাটের ওপর নাম লেখা আছে। দুদিকেই?’

—‘না, শুধু সামনের দিকে মলাটের ওপর।’

সিরাজ বলে, ‘দ্যাখ, বাবলু, আমার মনে হচ্ছে নন্তু বইটা সরিয়েছিল স্যারের টেবিল থেকে। লাইব্রেরিয়ানের টেবিলে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ নিশ্চয়ই উলটিয়ে রাখা ছিল। স্রেফ বইটার সাইজ আর মলাটের রং দেখে স্যার ওটা প্রবন্ধের বই ভেবে ভুলে নিয়ে আসেন। নামটা আর পড়েননি। লাইব্রেরিতে নির্ঘাত স্যারের বইখাতার গায়েই ছিল ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’। বিমানস্যার বাড়ি এসে বইটই নামিয়ে রেখে দোকানে যেতেই নন্তু ঠিক ওই ঘরে ঢুকেছিল। নন্তু ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’-এর চেহারা আগে দেখেছিল, মানে বাঁধাইয়ের পরে। তাতেই সন্দেহ হয় মলাট দেখে। স্যার ধপ করে বইটই নামাবার ফলে হয়তো ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ পাশে উলটিয়ে পড়ে। অর্থাৎ এবার সামনের দিকটা ওপরে। যেদিকে নাম লেখা আছে বইয়ের। যেভাবেই হোক ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ দেখে চিনে ফ্যালে নন্তু। বোঝে বাবা ভুল করে এনেছে। এমন ভুল তো হরদম হয় স্যারের। সঙ্গে সঙ্গে নন্তু বইখানা সরায়। নিয়ে কেটে পড়ে ঘর থেকে। তাই বিমানস্যার দোকান থেকে ফিরে আর বইটা দেখেননি। ভাবেন, আর একখানা বই ফেলে এসেছেন ভুলে। পড়া শেষ হয়ে গেলে কদিন বাদে নস্তু ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ ফের বাবার টেবিলে রেখে দেয়। তারপর স্যারের নজরে পড়ে বইটা।

সিরাজ বলে, ‘শোন বাবলু তুই নন্তুকে চেপে ধর। দ্যাখ ও অপরাধ স্বীকার করে কিনা? করবে না হয়তো। তখন দরকার হলে ভয় দেখাবি। বলবি, নন্দপুরের সাধুবাবা গুণে বলেছিলেন যে একটা ছেলে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ বইটা চুরি করেছে। বলবি, তুই সাধুবাবার কাছে গিয়েছিলি বইটা হারাবার পর হদিস জানতে। বইটা আর একবার পড়ার জন্যে খুব আশা করেছিলি কিনা। হারিয়ে যেতে মন ভারি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই সাধুবাবার কাছে গিয়েছিলি যদি চোরকে ধরে বইখানা উদ্ধার করা যায়, সেই মতলবে। সাধুবাবার এমনি অলৌকিক ক্ষমতা আছে শুনেছিলি। সাধুবাবা এই চোরের যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে নন্তুর চেহারা বয়স অবিকল মিলে যাচ্ছে। আর কাউকে অবশ্য এখনও বলিসনি কথাটা। দ্যাখ, ও কী বলে?

‘আর এই অস্ত্রে যদি কাজ না হয়, ওকে বলবি, বিমানস্যারকে বলে দেব তুই ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ পড়ার জন্য নাম লিখিয়ে রেখেছিস। সব্বাই জানে বিমানস্যার রহস্য ডিটেকটিভ গল্পের ওপর কী ভীষণ খাপ্পা। আর নন্তু ওর বাবাকে যমের মতন ভয় করে।’

.

পরদিন বিকেলে নদীর ধারে বসে আছে সিরাজ। দেখল যে বাবলু হনহন করে আসছে। বাবলু সিরাজের কাছে এসেই উৎফুল্ল স্বরে জানাল, ‘তুই ঠিক ধরেছিস। তোর প্রথম অস্ত্রেই কেল্লা ফতে। নন্তুই হাতিয়েছিল বইখানা। বিমানস্যার বই রেখে দোকানে গেছেন, সেই ফাঁকে। নন্তু তখন ঢুকেছিল স্যারের পড়ার ঘরে। বইটার চেহারা দেখেই ওর সন্দেহ হয়। বইটা উলটে দ্যাখে স্বয়ং ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’। ব্যাস তক্ষুনি বইটা নিয়ে সরে পড়ে। বোঝে, বাবা এটা ভুল করে এনেছে অন্য বই ভেবে। নন্তু দু-দুবার পড়ে ফেলেছে বইটা।

—‘আমি যখন ইনভেস্টিগেশনে গিয়ে ওর কাছে ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ হারানো মানে চুরি যাবার কথা তুলি, নন্তু নার্ভাস হয়ে সেদিনই বইটা রেখে দেয় ওর বাবার টেবিলে অন্য বইয়ের ভেতর গুঁজে। তবে বিমানস্যার ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’ আবিষ্কার করেন আরো তিনদিন বাদে।’

—‘স্কুলে নন্তুকে জিজ্ঞেস করলি বুঝি?’ জানতে চায় সিরাজ।

—‘হ্যাঁ টিফিনের সময় ধরেছিলাম ওকে। নন্দপুরের সাধুবাবার কথা বলতেই ঘাবড়ে গিয়ে সব কবুল করে ফেলল। জানিস, নন্তু কাল আমায় বদ্যির দোকানের ভেজিটেবল চপ খাওয়াবে বলেছে। মানে ঘুষ আর কি? আমার মুখ বন্ধ করতে। যাতে ওর বাবাকে না বলে দিই বা আর কাউকে।’

—‘অ্যাঁ, ভেজিটেবল চপ! শুধু তোকে? আর অ্যাসিস্ট্যান্ট বাদ?’

–‘আরে না না। তোকেও খাওয়াতে হবে বলে রেখেছি। বলেছি, আমি ছাড়া কেবলমাত্র তুই জানিস ব্যাপারটা। তোর মুখও বন্ধ করা দরকার।’

—‘যাক এবার তোর গোয়েন্দাগিরি সাকসেসফুল।’ উৎসাহ দেয় সিরাজ।

—‘ধুৎ।’ বাবলুর আপসোস, ‘আমি আর ধরতে পারলাম কই? বিমানস্যার ভুল করলেন। আবার নিজেই নিজের ভুল বুঝে বই ফেরত দিয়ে গেলেন। আমার ক্রেডিট কোথায়?’

সিরাজ বলল, ‘তোর ক্রেডিট আছে বইকী। তুই তদন্তে নেমে নন্তুকে ওই বইটার কথা জিজ্ঞেস না করলে ও ঠিক গাপ মেরে দিত ‘খুনে বৈজ্ঞানিক’। মোটেই বাবার টেবিলে আর ফেরত রেখে আসত না।’

—‘তা হতে পারে।’ বাবলু কিঞ্চিৎ প্রফুল্ল হয়।

সিরাজ বাবলুর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে, ‘আর কেস করে তোর ফিজ ও মিলল।’

—‘ফিজ? ফিজ আবার কী পেলাম?’ বাবলু ভুরু কোঁচকায়।

—‘কেন ভেজিটেবল চপ। ওটা অবশ্য লাইব্রেরি কমিটিরও খাওয়ানো উচিত ছিল তোকে। যাকগে এবার ছেড়ে দে। পরে রেট বাড়াস।’

—‘ঠিক বলেছিস।’ বাবলু একগাল হাসে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *