বেটুদার ফেয়ারওয়েল

বেটুদার ফেয়ারওয়েল

নভেম্বর মাসের শেষাশেষি।

বেটুদা বুধবার অফিস থেকে ফিরলেন। প্যান্ট-শার্ট ছেড়ে লুঙ্গি পরে, হাত মুখ ধুয়ে, চা জলখাবার খেলেন। তারপর শোয়ার ঘরের খাটের নীচ থেকে খবরের কাগজে জড়ানো ক্রিকেট বুট দুটো টেনে বের করলেন।

এখনও বলতে আসেনি কেউ, তবে কানে এসেছে সামনের রোববার খেলা। বলবে ঠিকই। যদি খেলতেই হয়— সীজন-এর প্রথম ম্যাচ— একটু ফিটফাট হয়ে মাঠে নামা উচিত।

.

মিনিট পনেরো বাদে বেটুদার স্ত্রী মিনু বউদি শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখলেন, মেঝেতে উবু হয়ে বসে বেটুদা। তাঁর বাঁ হাতে একখানা ক্রিকেট বুট। ডান হাতে ভেজা ন্যাকড়া। সামনের বাটিতে চকখড়ি গোলা। একমনে বুটে রং লাগাচ্ছেন।

বউদি থমকে দাঁড়ালেন। বললেন— ‘কী ব্যাপার?’

বেটুদা একটু থতমত খেয়ে মুখ তুলে বোকা বোকা হেসে বললেন, ‘না মানে বড্ড ময়লা হয়েছিল।’

—‘বুঝেচি। এ বছরও আবার। গেল বছর না শপথ করলে, আর নয় এই শেষ।’

—‘না না এখানে আসেনি কেউ ইনফর্ম করতে। আমি কোনো কথাই দিইনি।’

—’দেবার জন্যে তো তৈরি হয়ে বসে আছ। ডাকলেই ছুটবে। ঠিক আছে, আমিও দেখে নেব’– দুম দুম করে মেঝে কাঁপিয়ে বউদি সরবে বেরিয়ে গেলেন।

মনটা খিঁচড়ে গেল বেটুদার। ডান পায়ের বুটের ভোঁতা নাকটা সবে মাত্র কলি ফিরিয়ে ধবধবে হয়েছে। ‘ধুত্তেরি’– বুট দুটো ছুড়ে দিলেন খাটের তলায়। খড়ি-গোলা জল দিলেন ফেলে। তারপর বারান্দায় গিয়ে গুম হয়ে বসে রইলেন চেয়ারে।

মিনু বউদির দোষ নেই। এর আগে পর পর দু-বছর প্রতিজ্ঞা করেও বেটুদা কথা রাখেন নি। এটা থার্ড ইয়ার। দু-দুবছর সীজন শেষে বেটুদা বাড়িতে ঘোষণা করেছেন— ব্যাস আর নয়। এবার রিটায়ার করব। কিন্তু ফের পরের শীতে খেলতে নেমেছেন।

বেটুদা ক্রিকেট পাগল। ক্রিকেট খেলতে ডাকলে আর থাকতে পারেন না। তেমন উঁচু দরের খেলোয়াড় হতে পারেন নি। নিজের স্কুল এবং কলেজের হয়ে খেলেছিলেন ক্রিকেট। কিছুদিন ময়দানে ঘোরফেরা করেছিলেন বড়ো টিমে খেলবার আশায়। সুবিধে হয় নি। একটা ফার্স্ট ডিভিশন ক্লাবে খেলেছিলেন বটে দুবছর। তবে সীজন-এর অর্ধেকই বসিয়ে রাখত। সে এক যন্ত্রণা। অতঃপর উচ্চাশা ত্যাগ করে সাউথ-ক্যালকাটায় নিজের পাড়ার ক্লাব ইয়াং বেঙ্গল স্পোর্টিং-য়েই বরাবর খেলে আসছেন। ইয়াং-বেঙ্গল খেলে সেকেন্ড ডিভিশনে।

বড়ো প্লেয়ার হতে না পারার জন্য বেটুদার দুঃখ নেই। ক্রিকেট খেলেই তাঁর আনন্দ। কিন্তু না, এবার একটা ফাইনাল ডিসিশন নিতেই হবে।

বেটুদার বয়স চৌত্রিশ বছর। সেটা ব্যাপারই নয়। বডি পারফেক্টলি ফিট। গত বছরেও বেশ ভালো ফর্মে খেলেছেন। আসল ঝঞ্ঝাট বেধেছে সংসার নিয়ে। বাড়িতে তিনি একা পুরুষ। আর আছে— স্ত্রী, মা এবং চার বছরের ছেলে বিল্টু। বিয়ে হয়েছে সাত বছর। প্রথম প্রথম মিনু বউদি বেটুদার এই ক্রিকেট প্রীতি মেনে নিলেও ক্রমেই বেঁকে বসেছেন। কারণ ক্রিকেট সীজন পড়লেই ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল অবধি বেটুদাকে ছুটির দিনে কোনো কাজে পাওয়া যায় না।

.

বেটুদার ক্রিকেট নিয়ে বাড়িতে অভিযোগ সবারই। মিনু বউদি বলেন- ‘শীত বসন্তই হচ্ছে বেড়াবার টাইম। শ্যামবাজার, মানিকতলা, সল্টলেক, বজবজ, সুখচর, বদ্যিবাটি ধারে ধারে আমাদের কত আত্মীয় বন্ধুবান্ধব। কোথাও আমার যাওয়া হয় না। কি না মশায়ের ব্যাট-বল খেলা আছে। নেহাত ওরা যদি কেউ নিয়ে যায় দয়া করে। এই ভিড়ের বাসে ট্রেনে কি আমি একা একা ছেলে নিয়ে যাওয়া আসা করতে পারি!

‘গত বছর ডিসেম্বরে তোমার মামাতো ভাই শিবুর বিয়ে হল। দিন ফেলল রোববার। যাতে আত্মীয়রা সবাই সকাল সকাল আসতে পারে। আর তুমি কি না খেলা সেরে আমাদের নিয়ে হাজির হলে সন্ধে ছটায়। লজ্জার এক শেষ। আমোদটাই মাটি হল।

‘শীতকালে ছুটির দিনে মার্কেট গিয়ে একটু দেখে শুনে কেনাকাটা করার উপায় নেই। কে নিয়ে যাবে?’

বিল্টুর অভিযোগ— গত শীতে বাবলু খুব চিড়িয়াখানা দেখেছে। গোটা দিন ধরে। ওর বাবা মা নিয়ে গেছিল। আর আমায় কেউ নিয়ে যাচ্ছে না। বাবাকে এত করে ধরলাম, কিছুতেই নিয়ে গেল না। বলল, পরের শীতে ঠিক নিয়ে যাব।

পর পর দুবছর ধরে মা বলছেন— জয়দেব কেঁদুলির মেলা দেখতে যাব পৌষ সংক্রান্তিতে। সংক্রান্তির দিন অজয় নদীতে স্নান ভারি পুণ্য কাজ। কী চমৎকার বাউল গান হয় মেলায়। বোলপুরে উঠব রাজুদার বাড়িতে। ওরা বারবার লিখছে আসতে। ওরাই দেখবার ঘোরবার সব ব্যবস্থা করে দেবে। বক্রেশ্বরে গরম জলের কুণ্ডে চান করব। আমার বাতের ব্যথার উপকার হবে। তুই শুধু আমায় পৌঁছে দিয়ে আয়— পরের হপ্তায় নিয়ে আসবি।

কিন্তু ওই সময় ক্রিকেটের ফুল-সিজন। ছুটির দিনে ম্যাচ। অন্যদিন সকালে জোর নেট প্র্যাকটিস। সময় কই? বেটুদা তাই এড়িয়ে গেছেন— ‘এবার নয় পরের বছর।’

মা আক্ষেপ করেন, ‘আর আমার যাওয়া হয়েছে।’

বেটুদা মানেন যে তিনজনের অভিযোগই খাঁটি। আত্মীয়স্বজন, শ্বশুরবাড়ির লোক, দূরের বন্ধুবান্ধব বিরক্ত। ডিসেম্বর টু মার্চ-এপ্রিল বেটুদার পাত্তা পাওয়া যায় না ছুটির দিনে এলে— নিজে যাওয়া তো দূরে থাক। মনকে শক্ত করলেন বেটুদা। বুট জোড়া দিয়ে দেব তপনকে। ছেলেটা খাসা ব্যাট করে। ফিউচার আছে। বুট কিনতে পারে না। ফুটো কেডস পরে খেলে। তবে কাউন্টি-ক্যাপটা রেখে দেব। হয়তো একদিন বিল্টু পরে মাঠে নামবে। বিল্টুকে নিজে হাতে ধরে খেলা শেখাব– এমনি কত কী ভাবনা আসে? হঠাৎ হাঁক শোনা গেল—– ‘বেটুদা! ও বেটুদা! বেটুদা আছেন?’ শার্টটা গায়ে গলিয়ে নিয়ে বেটুদা সদর দরজা খুলে বললেন, ‘ও হাবুল?’

হাবুল তড়বড়িয়ে বলল, ‘বেটুদা রোববার খেলা। বান্ধব সংঘের সঙ্গে। মন্টুদা বলে পাঠাল। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। বান্ধবের গ্রাউন্ডে সকাল সাড়ে নটায়। আপনি ঠিক যাবেন।

বেটুদা গম্ভীরভাবে ঘাড় নাড়লেন, ‘না রে পারব না। বলে দিস।’

‘না না, খেলতেই হবে। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ বলে লাইটলি নেবেন না, মন্টুদা বলেছে। পরের হপ্তা থেকে লিগ ম্যাচ শুরু। আর ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ নেই তাছাড়া বান্ধব গতবার আমাদের হারিয়েছিল। এবার বদলা চাই।’ হাবুল বোঝায়।

গম্ভীর বিষণ্ন মুখে আবার মাথা দোলায় বেটুদা, ‘না রে, লিগ, ফ্রেন্ডলি কোনো ম্যাচই আর খেলব না। মন্টুকে বলে দিস, আমি রিটায়ার করছি।’

হাবুল থ হয়ে খানিক চেয়ে থেকে বলল, ‘সেকী! কেন?’

—‘অসুবিধা হচ্ছে। বাড়িতে কাজ থাকে ছুটির দিনে।’

—‘কী কাজ?’ হাবুলের বাড়িতে গাদা লোক। সে দেখে, বাবা কাকারা ছুটির দিনে বাইরে থাকলেই বাড়ির মেয়েরা খুশি। কারণ ঘরে থাকলেই বারবার চা এবং নানান ফরমাস।

কী কী কাজের জন্য অসুবিধা তার লিস্ট দিতে যাচ্ছিলেন বেটুদা, হঠাৎ খেয়াল হল স্ত্রী হয়তো পাশের ঘরে কান খাড়া করে আছে। তাই সামলে নিয়ে বললেন, ‘সে অনেক কাজ। আমি একা। মন্টুকে বলে দিস।’

হাবুল চলে গেল। দশ মিনিটের মধ্যে এল ক্যাপ্টেন মন্টু স্বয়ং— ‘বেটুদা, কী ব্যাপার? খেলবেন না কেন?’ বেটুদা বললেন, ‘ভাই, রিটায়ার করলাম। অনেকদিন তো খেলছি।’

—‘তবে যে দুদিন নেট প্র্যাকটিস করলেন?’

বেটুদা লুকিয়ে দুদিন নেট প্র্যাকটিস করেছেন অন্যের কেডস ধার করে। বাড়িতে জানে না। চট করে ঘরের দিকে একটা সন্ত্রস্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেটুদা বললেন, ‘ও এমনি। বডি ফিট রাখতে। এবার নতুনদের চান্স করে দিই সিনিয়াররা সরে দাঁড়াই।’

মন্টু কিঞ্চিৎ উত্তপ্ত স্বরে বলল, ‘নতুনরা নিজের জোরে চান্স পেতে হয় পাবে। আপনি ক্লাবের কথাটা একটু ভাবুন। আচ্ছা হাবুল বলছিল, আপনার বাড়ির কাজে কী সব অসুবিধা হচ্ছে?’

—‘হ্যাঁ। কাজটাজ আছে। গোটা ক্রিকেট সিজনে ছুটির দিনগুলো বরবাদ হয়ে যায়।

—‘কী কাজ?’

—‘সে অনেক। তোমরা বুঝবে না।’

মন্টু সত্যিই বোঝে না, সে এখনও বিয়ে-থা করেনি। ঝাড়া হাত পা। চাকরি বাদে বাকি সময়টুকু খেলা নিয়েই মেতে থাকে। মন্টু বোঝায়, ‘কেসটা আর একবার কনসিডার করুন বেটুদা।’

বেটুদা মাথা নাড়েন— ‘নাঃ।’

হতাশ হয়ে চলে যায় মন্টু। পাছে ফের কেউ অনুরোধ জানাতে আসে, সেই ভয়ে বেটুদা বাজারের থলি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

বাজার সেরে ফেরার পথে গলির মোড়ে বেটুদাকে ধরলেন শ্যামানন্দবাবু। শ্যামানন্দবাবু ওরফে শ্যামবাবু ইয়াং বেঙ্গলের ক্রিকেট সেক্রেটারি। নিজের বাড়ির বাইরে ব্লকে তিনি ওৎ পেতে বসেছিলেন।

শ্যামবাবু মানুষটি ছোটোখাটো শুকনো চেহারা। অন্য সময় ধুতি পাঞ্জাবি পরলেও ম্যাচের দিন মাঠে গেলে ক্রিকেটের মর্যাদা রাখতে ধারণ করেন ঢলঢলে ফুলপ্যান্ট, শার্ট, একটা ছাইরঙা কোট এবং পায়ে কালো বুট জুতো। সব কটি জিনিসই আদ্যিকালের। ভদ্রলোক হাতে-কলমে ক্রিকেট কদ্দূর খেলেছেন বলা মুশকিল। তবে ক্রিকেট জগতের সমস্ত খবর তাঁর কণ্ঠস্থ। তারই জোরে ক্লাবের ক্রিকেট সেক্রেটারিরর পোস্টটা প্রায় একচেটিয়া করে রেখেছেন। শ্যামবাবু বললেন, ‘এই যে বেটু কী শুনছি, তুমি নাকি খেলা ছেড়ে দিচ্ছ?’

—‘আজ্ঞে হ্যাঁ। অনেকদিন তো দেখলাম।’

—‘তোমার বয়স কত হে?’ শ্যামবাবু চোখ পাকান।

—‘আজ্ঞে চৌত্রিশ পুরেছি।’

—‘ওনলি থার্টিফোর। জ্যাক হবস-এর নাম শুনেছ? ইংল্যান্ডের ফেমাস ক্রিকেটার। হবস কদ্দিন অবধি টেস্ট খেলেছিলেন জান? আটচল্লিশ। আপ টু ফটিএইট ইয়ারস।’

বেটুদা মাথা চুলকান।

শ্যামাপদবাবু বললেন, ‘মন্টু কী সব বলছিল। তোমার নাকি বাড়ির কাজে ডিফিকাল্টি হচ্চে?’

—‘আজ্ঞে হ্যাঁ। গোটা সিজন, একটাও ছুটির দিনে সময় দিতে পারি না। বাড়িতে কত কাজ থাকে।’

‘তাই নিয়ম,’ দার্শনিক ভাবে ঘোষণা করলেন শ্যামবাবু ‘দশের কাজ করলে ঘরের কাজে একটু টান পড়েই। এই আমাকেই দেখো না। ক্রিকেট সেক্রেটারি, দুগ্গা পুজো আর রবীন্দ্রজয়ন্তী কমিটির মেম্বার— এত সব সামলাতে গিয়ে ঘরের কাজে কি আর অবহেলা হয় না? খুব হয়। উপায় কী? পাবলিক ডিমান্ড।’

বেটুদা ভাবলেন, শ্যামবাবুর বিপুলকায়া গৃহিণী সংসার সামলাতে একাই যথেষ্ট। চাকরি ছাড়া শ্যামবাবুর সংসারে আর কী কাজ? তবে মুখে বললেন, ‘তা বটে। কিন্তু—’

—‘আর একবার দেখো ভেবে। এ সেকেন্ড থট।’

—‘আজ্ঞে মাপ করবেন। আমি স্থির করে ফেলেছি।’ বেটুদা দৃঢ়চিত্ত।

বেটুদা বৃহস্পতিবার অফিস গেলেন। বাড়ি ফিরলেন। পাড়ায় ঢুকে ডাইনে বাঁয়ে তাকালেন না। চা-টা খেয়ে খবরের কাগজখানা নিয়ে বসলেন। সকালে সময় পাননি ভালো করে পড়ার। প্রথম পৃষ্ঠাটা সবে শুরু করেছেন, বাইরে ডাক শোনা গেল— ‘বেটুদা আছেন?’

মন্টুর গলা। গম্ভীর মুখে বেটুদা দরজা খুললেন।

মন্টু ভজা এবং আরও দুটি ছেলে দাঁড়িয়ে।

মন্টু বলল, ‘বেটুদা, আমাদের কেসটা কিছু ভাবলেন?’

বেটুদা ঘাড় নাড়লেন, ‘বলেছি তো ভাই, আর খেলব না।’

—‘তাই হবে,’ হাতের চেটো উল্টে হতাশ ভাবে বলল মন্টু, ‘কিন্তু এই রোববার আপনাকে খেলতেই হবে। মানে ওটা হবে আপনার ফেয়ারওয়েল ম্যাচ। আমরা অ্যারেঞ্জ করছি।’

—‘না না, ওসব কী দরকার?’ বেটুদা আপত্তি তোলেন।

—‘কে বলল দরকার নেই? আলবৎ দরকার আছে,’ ভজা উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘আপনি অ্যাদ্দিন সার্ভিস দিলেন আর ক্লাব আপনার জন্যে এটুকু করবে না? আমরা সেক্রেটারি শ্যামবাবুর সঙ্গে কথা বলেছি। উনি খুব এনকারেজ করেছেন। এই একটু সামান্য ঘটা। আমাদের সাধ্যমতো।’

মন্টু বলল, ‘বান্ধবকে জানিয়ে দিয়েছি অকেশনটা। লাঞ্চটা যেন স্পেশাল দেয়। এবার ওদের লাঞ্চ দেওয়ার কথা। বাকি অ্যারেঞ্জমেন্ট আমাদের।’

বেটুদা অভিভূত হয়ে বললেন, ‘বেশ তাই হবে। তোমরা বলছ যখন?’ মন্টুর দল ব্যস্ত হয়ে চলে গেল। বেটুদা ক্রিকেট বুট জোড়া টেনে বের করে সযত্নে খড়ি লাগাতে বসলেন। শুক্র শনি নেটে যাবেন। একটু তৈরি হয়ে নামা ভালো। হাজার হোক ফেয়ারওয়েল ম্যাচ। যা তা খেললে মান থাকবে না। গলা তুলে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে জানালেন, ‘বলে গেল রবিবার খেলতেই হবে। সেদিন আমার ফেয়ারওয়েল ম্যাচ। ব্যাস, দি এন্ড।’

ওপক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ এল না।

বেটুদা পাড়ায় বিশেষ ব্যক্তি হয়ে উঠলেন। শুক্র শনি পাড়ায় বেরতেই নানান সম্ভাষণ জোটে—

—‘বেটুদা আপনি নাকি রিটায়ার করছেন? সত্যি এখনো কিন্তু ফাস্টক্লাস ফর্মে ছিলেন।’

‘কী হে বেটু, এবার নাকি খেলা ছাড়ছ? তা অনেক দিন চালালে বটে। ক্রেডিট আছে।’

পাড়ার গদাইদা আর বেটুদা সমবয়সি। একই সঙ্গে ক্রিকেট শুরু করেছিলেন। কিন্তু গদাইদা খেলা ছেড়েছেন পাঁচ বছর আগে।

দেখা হতেই গদাইদা বললেন, ‘কনগ্রাচুলেশন বেটু। এ ওয়াইজ ডিসিশন। ঠিক সময় খেলা ছাড়া একটা মস্ত জাজমেন্ট। এই আমাকেই দেখো। এক্কেবারে কারেক্ট সময় রিটায়ার করেছি।’

ঘোড়ার ডিম করেছিস। মনে মনে ভাবলেন বেটুদা। ভুঁড়ি হয়ে গিছল। দৌড়তে পারতিস না। টিমে চান্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে ছেড়েছিস। বেটার ভারি হিংসে। দেখা হলেই ফুট কাটত— ‘কীরে বেটু আর কদ্দিন চালাবি, শিং ভেঙে বাছুরের দলে?’ এখন খুব খুশি।

যাহোক মুখে একটু হাসি টেনে বেটুদা বললেন, ‘মন্টুরা ছাড়ছিল না। কিন্তু বড্ড অসুবিধে হচ্ছে। বাড়িতে আমি একা। কত কাজ। ছুটির দিনগুলো নষ্ট হয়।

–‘কারেক্ট। আমরা এখন ফ্যামিলিম্যান। আমিও তো ঠিক এইজন্যেই ছাড়লুম।’

বেটুদা ভাবলেন, ফের গুল। বাড়িতে তুই কুটোটি নাড়িস না। স্রেফ খেয়ে ঘুমিয়ে দিন দিন মুটোচ্ছিস।

.

রবিবার। লেক মাঠে বান্ধব সংঘের গ্রাউন্ড। সকাল নটার মধ্যে দুইপক্ষই মাঠে হাজির। কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে নটায় ম্যাচ শুরু হবে। দুদলই তিন ঘণ্টা করে ব্যাট করার সুযোগ পাবে। মাঝখানে পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাঞ্চ ব্রেক। অবশ্য তিন ঘণ্টা ব্যাট করার আগেই কোনো দল অল ডাউন হয়ে গেলে অন্য দল ব্যাট করতে নামবে। ঠিক হয়েছে যাদের মোট রান বেশি হবে তারাই জিতবে।

মাঠে বেশ ভিড়। প্রচুর দর্শক। বেটুদার পাড়ার অনেকে এসেছে, বান্ধব সংঘেরও অনেক সভ্য। দুই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি ইত্যাদির পদের কিছু গণমান্য ব্যক্তি উপস্থিত। সামিয়ানা খাটানো হয়েছে। তার নীচে সারি সারি ভাড়া-করা চেয়ার পাতা। একটা টেবিলও রয়েছে। তার ওপর একটা ঝকঝকে পিতলের ফুলদানি। এইখানেই খেলার পর ইয়াং বেঙ্গলের পক্ষ থেকে ফেয়ারওয়েল জানানো হবে বেটুদাকে। দু-চারটে বক্তৃতা হবে! একটা প্রেজেনটেশনও নাকি দেওয়া হবে। ভজা খুব খাটছে। সে নিজে তেমন খেলে-টেলে না। কিন্তু ইয়াং বেঙ্গলের সবচেয়ে উৎসাহী সভ্য। একটা হুজুগ পেলেই মেতে ওঠে।

ধোপদুরস্ত সাদা শার্টপ্যান্ট, ধবধবে বুট, নেভি-ব্লু ব্লেজার কোটে দারুণ স্মার্ট লাগছিল বেটুদাকে! ইয়াং বেঙ্গলের অন্য প্লেয়াররাও আজ যথাসাধ্য ফিটফাট। শ্যামবাবুর জুতোয় তিন বছর বাদে পালিশ পড়েছে। বান্ধব সংঘের কয়েকজন হ্যান্ডশেক করে গেল বেটুদার সঙ্গে।

বান্ধবের ক্যাপ্টেন অভয় দত্ত বলল, ‘বেটুদা আমি ছবছর খেলছি আপনার এগেনস্টে। এরপর মিস করব আপনাকে।

বান্ধবের ক্রিকেট সেক্রেটারি শিবদাস মুখুজ্যে বললেন, ‘বেটুবাবু, ম্যাচ খেলা ছাড়ছেন বলে মাঠ ছাড়বেন না। বাচ্চাদের কোচিং-এর ভার নিন। আমি বলি খেলার চেয়েও সেটা বড়ো কাজ।’

বেটুদা হাসি হাসি মুখে সবার হাতে হাত মেলাচ্ছেন। সবার কথা শুনছেন। আম্পায়ার দুজন মাঠে নামল, তারপর দুদলের দুই ক্যাপ্টেন। টস্ হল। বান্ধব টসে জিতে ব্যাটিং নিল। ইয়াং বেঙ্গলের ফিল্ডিং।

বোলিংয়ে বেটুদার বিশেষ সুনাম নেই। মোটামুটি অফস্পিন করতে পারেন। তবে লেংথ থাকে না, তাই দু-চার ওভারের বেশি বোলিং জোটে না। আজ কিন্তু বেটুদাকে দিয়ে অনেকক্ষণ বলা করানো হল— ফেয়ারওয়েলের অনারে। আট ওভারে বল করে একটা উইকেটও পেলেন। বেটুদাকে বল করতে ডাক দিতেই দর্শক হাততালি দিল। তার বলে একজন ক্যাচ আউট হতেই এমন হাততালি পড়ল যে বেটুদা নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলেন।

লাঞ্চ অবধি বান্ধব করল আট উইকেটে একশো বাহান্ন রান।

লাঞ্চের সময় বেটুদাকে মাঝখানে রেখে দু দলের প্লেয়াররা খেতে বসল। স্পেশাল গেস্ট হিসেবে বেটুদাকে জোর করে একটার বদলে দুটো কমলালেবু গছালেন বান্ধবের প্রেসিডেন্ট।

লাঞ্চের পর ইয়াং বেঙ্গল ব্যাট করতে নামল। পনেরো মিনিট বাদে তাদের প্রথম উইকেট পড়ল বারো রানে। এবার বেটুদার পালা।

পায়ে প্যাড, বাঁ বগলে ব্যাট, ডান হাতের মুঠোয় ধরা জোড়া ব্যাটিং গ্লাভস, মাথায় গাঢ় লাল কাউন্টি ক্যাপ। একটু সামনে ঝুঁকে ভারিক্কি চালে হেঁটে বেটুদা মাঠে ঢুকতেই প্রবল হাততালি। বান্ধব সংঘের খেলোয়াড়রাও হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানাল বেটুদাকে।

বেটুদার মনটা হালকা। দুদিন ধরে নিজের খেলার প্রশংসা শুনতে শুনতে মনে বেশ আত্মবিশ্বাস। ইচ্ছে কয়েকটা ভালো স্ট্রোক দেখাই। একটা বড়ো স্কোর করতে পারলে চমৎকার হয়। মনে রাখবে লোকে। না করলেই বা কী? ডন ব্র্যাডম্যান তাঁর জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে কত করেছিলেন? শূন্য। তাতে কি ব্র্যাডম্যানের খ্যাতি কিছু কমেছে? শুধু কি সেই স্কোরটাই মনে রেখেছে লোকে? তাঁর আগের খেলা ভুলে গেছে?

সতর্কভাবে গার্ড নিলেন বেটুদা। বল করছে বাদল সাহা। বেশ জোরে বল করে। বাদল ইচ্ছে করেই বলের পেসটা একটু কমালো। ওভারের বাকি তিনটে বল করল অফস্টাম্পের খানিক বাইরে। যাতে বেটুদা চোখ সেট করার সুযোগ পান। একটা ভদ্র গোছের রান পান বিদায় দিনে। বাদলের তৃতীয় বলে বেটুদা খাসা একখানা স্কোয়ার কাট মারলেন। সোজা চার। খুব হাততালি পড়ল।

দেখতে দেখতে বেটুদার স্কোর এগিয়ে চলে। বেটুদার স্কোর কুড়ি না পেরনো অবধি বান্ধবের প্লেয়াররা তাঁকে আউট করার মোটেই চেষ্টা করেনি। বরং নেহাত সাদামাটা বলই দিয়েছে। কিন্তু তারপর তারা শঙ্কিত হল। এ ব্যাপার চললে যে বান্ধব হারবে। হোক একজিবিশন ম্যাচ তা বলে ইয়াং বেঙ্গলের কাছে হারা চলবে না। প্রেস্টিজ যাবে। বেটুদাকে ফেরত পাঠানো দরকার। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা শুরু করে।

কিন্তু তখন বেটুদাকে রোখে কার সাধ্যি! জড়তা কেটে গেছে। ওইটাই বেটুদার দুর্বলতা— প্রথমদিকে বড্ড নার্ভাস থাকেন। ফলে প্রায়ই টপ করে আউট হয়ে যান। এখন হাত খুলে মারছেন। সামান্য লুজ বল পেলেই পিটুনি। একখানা ছয়ও হাঁকালেন।

উল্লাসে ফেটে পড়ছে দর্শকরা। হাততালির ঝড় বইছে। বান্ধবের প্লেয়াররাও তারিফ জানাতে বাধ্য হয় বেটুদাকে। পঞ্চাশে পৌঁছে বেটুদা একটা চান্স দিলেন। তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে বল বুক সমান উঁচু হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল ফার্স্ট এবং সেকেন্ড স্লিপের মধ্যে দিয়ে— বেশ জোরে। ফার্স্ট স্লিপ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ক্যাচটা রাখতে পারল না হাতে। বেটুদা তাতে বিন্দুমাত্র ঘাবড়ালেন না। যথারীতি খেলে চললেন। ইতিমধ্যে তিনবার পার্টনার বদলেছেন বেটুদা। অর্থাৎ ইয়াং বেঙ্গলের আরও তিনটে উইকেট পড়েছে। তবে বেটুদা অবিচল।

ইয়াং বেঙ্গলের পঞ্চম উইকেট পড়ল। এবার বেটুদা আউট— এল. বি. ডবলু। স্কোর বোর্ড দেখাল, লাস্ট ব্যাটসম্যান— ৭৮। মোট রান তখন একশো সাঁইতিরিশ। আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় রয়েছে হাতে। অর্থাৎ ম্যাচ ইয়াং বেঙ্গলের হাতের মুঠোয়।

বেটুদা দৃপ্ত ভঙ্গিতে ফিরে চললেন। তিনি উইকেট থেকে বাউন্ডারি লাইনে পৌঁছানো অবধি বেজে চলে করতালি। টুপিতে হাত রেখে বেটুদা এই অভিনন্দনের উত্তর জানান। মাঠের বাইরে আসতেই আরও একদফা করমর্দন ও অভিনন্দন। প্যাড-ট্যাড খুলে রেখে এসে বেটুদা চেয়ারে বসে হাসি হাসি মুখে খেলা দেখতে লাগলেন। আর মাত্র দু ওভারে ষোলো রান তুলে ফেলে ইয়াং বেঙ্গল ম্যাচ জিতে গেল।

খেলা শেষ হবার পর আধঘণ্টা কেটে গেছে। বেটুদা বসে বসে গল্প করছেন। হঠাৎ খেয়াল হল, তাঁর কাছাকাছি ইয়াং বেঙ্গলের কেউ নেই। পাশে যারা রয়েছে সবাই বান্ধব সংঘের লোক। তিনি এদিক-ওদিক চেয়ে দেখেন, কিছু দূরে মন্টু, ভজা, শ্যামানন্দ বাবু এবং ইয়ং বেঙ্গলের আরও সাত-আটজনের জটলা। হাতটাত নেড়ে ওরা খুব কথা বলছে।

বেটুদা ভাবলেন, নিশ্চয়ই আমার বিদায় সভা নিয়ে আলোচনা চলছে। আর দেরি না করে লাগিয়ে দিক। সভার পর চা-টা আছে। কতক্ষণ বক্তৃতা চলবে কে জানে? খিদে পেয়ে গেছে।

মিনিট পাঁচ বাদে মন্টু এসে ডাকল, ‘বেটুদা একবার আসবেন। এই দিকে। একটু দরকার।

বেটুদাকে নিয়ে মন্টু ইয়াং বেঙ্গলের সেই জটলার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। অমনি সবাই তাদের ঘিরে ধরল। মন্টু ঘুরে দাঁড়িয়ে অতি বিনীতভাবে বলল, ‘বেটুদা আমাদের একটা রিকোয়েস্ট মানে দাবিও বলতে পারেন, আপনার এখন রিটায়ার করা চলবে না।’

—‘মানে!’ বেটুদা থ।

–‘মানে এবার আমাদের লিগ চ্যাম্পিয়ান হবার খুব চান্স। আপনি না খেললে হবে না।’

–‘তোমরা যদ্দিন না চ্যাম্পিয়ান হবে তদ্দিন আমায় খেলে যেতে হবে।? বলছ কী!’ বেটুদা উত্তেজিত।

—‘না না তা বলছি না, কেবল এই সিজনটা। আর একটা বছর। প্লীজ।’

শ্যামবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, ‘রাইট। বী রিজনেবল বেটুদা তোমার আর কী বা বয়স— ওনলি থার্টিফোর। মনে রেখো গ্রেট জ্যাক হবস—’

—‘না না তা হয় না। লোকে কী ভাববে? অ্যানাউন্স করে ফেলেছি। ফেয়ারওয়েল ম্যাচ অবধি হয়ে গেল।’

বেটুদার আর্তনাদকে থামিয়ে দিলেন শ্যামবাবু, ‘কিস্তু ভাববে না। আমরা আবার অ্যানাউন্স করে দিচ্ছি— তোমার রিটায়ারমেন্ট পোস্টপোন্ড। সামনের বছর ফের তোমার ফেয়ারওয়েল ম্যাচ হবে। প্রেজেনটেশনটা তো রইলই। ইতিহাসে এমন ঢের হয়েছে।’

—‘লোকে যে হাসবে,’ বেটুদা খুঁত খুঁত করেন।

—‘তা বটে,’ বেটুদাকে ক্ষীণ সমর্থন জানায় গদাইদা। এই একমাত্র সমর্থন পেলেন বেটুদা।

ভজা আস্তিন গুটিয়ে বলল, ‘কোন বাপের বেটা হাসবে শুনি? দাঁত ছটকে দেব না। হাসবে নয় বেটুদা, কাঁদবে। আপনি এই সিজনে খেলছেন শুনলে ওই বান্ধবের চোখেই জল এসে যাবে। ভাবছিল আপনি না খেললে ওদের খুব মওকা। নির্ঘাত চ্যাম্পিয়ানশিপটা মেরে দেবে।’

—‘তা বটে।’ গতিক বুঝে তৎক্ষণাৎ মত পালটালেন গদাইদা।

—‘তাছাড়া আমার যে আরও অনেক অসুবিধে। বাড়িতে কত কাজ। গোটা সিজন কিচ্ছু করতে পারি না।’ বেটুদা প্রাণপণে বোঝান।

—‘দশের কাজ করলে ঘরের কাজে একটু টান পড়ে। আচ্ছা শুনি কী কাজ? তারপর না হয় ঠিক করা যাবে,’ বললেন শ্যামবাবু।

—‘হ্যাঁ হ্যাঁ’– সবাই সায় দেয়।

বেটুদা মন্টুর দিকে তাকিয়ে রেগে বললেন, ‘গোটা ক্রিকেট সিজন তোমাদের বউদির কোথাও বেড়ানো হয় না। মার্কেটিং হয় না। বজবজ সুখচর বদ্যিবাটি— কত জায়গায় তার যাবার সাধ। ছুটির দিন মানেই আমার খেলা। কে নিয়ে যাবে?’

—‘আমরা’ উত্তর দিল ভজা, ‘ননপ্লেয়িং মেম্বাররা পালা করে ডিউটি দেব। বউদিকে সব জায়গায় ঘুরিয়ে আনব। বজবজ বদ্যিবাটি কি? দিল্লি বম্বে হলেও ও কুছপরোয়া নেই।’

—‘নেক্সট?’ শ্যামবাবুর গলা।

—‘বিল্টুকে চিড়িয়াখানা দেখাব বলেছি এই শীতে। সারাদিন কাটাবে। তার কি হবে?’

—‘যাবে আলবৎ যাবে। এই হাবুল এটা তোর ডিউটি। আসছে রোববারই প্রোগ্রাম কর। তোর ভাইপো দুটিকেও সঙ্গে নিবি। বিল্টুর ফ্রেন্ড!’ সমাধান দিল ভজা।

শ্যামবাবু বললেন- ‘নেক্সট।’

—‘আর তোমাদের মাসিমা মানে আমার মাকে বোলপুর নিয়ে যাবে কে? জয়দেবের মেলা দেখবেন। দিয়ে আসতে এবং নিয়ে আসতে হবে।’

—‘আমি,’ নিজের বুকে টোকা মেরে জানাল ভজা, ‘বোলপুরের কাছেই শান্তিনিকেতনে আমার এক দাদা থাকে। ওসব রুট আমার চেনা।’

বেটুদার মুখে আর কথা সরে না।

—‘ব্যাস, প্রবলেম সলভড।’ শ্যামবাবুর মন্তব্য।

–‘না না মন্টু,’ আগে আমার বাড়ি থেকে পারমিশন নিয়ে এসো। তোমাদের বউদিকে রাজি করাও। তবে ফাইনাল কথা দেব।’ বেটুদা শেষ চেষ্টা করেন।

—‘ভজা মন্টু কুইক,’ তাড়া দিলেন শ্যামবাবু, ‘চট করে একটা ট্যাক্সি ধরে চলে যা। তোরা ফিরে এলেই টি পার্টি শুরু হবে।’

আধঘণ্টার মধ্যেই মন্টুরা ফিরে এল। মুখে একগাল হাসি। অর্থাৎ বেটুদার ফেয়ারওয়েল এ বছর হচ্ছে না।

১৩৯০

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *