অন্তর্যামী – ৩৮

আটত্রিশ

ওয়াশিংটন ডি.সি.। এক সপ্তাহ পর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর জন্যে উইলার্ড হোটেল যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। একশো বছরেরও বেশি পুরনো এই হোটেলটা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। বনেদি এই স্থাপনায় যেন-তেন কারও প্রবেশাধিকার নেই। বছরভর হোটেলটা মুখর হয়ে থাকে কংগ্রেস সদস্য, সিনেটর, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আর প্রভাবশালী অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পদচারণায়। বিভিন্ন প্রয়োজনে উইলার্ড হোটেল তাঁদের প্রথম পছন্দ।

ন্যাশনাল আণ্ডারওয়াটার অ্যাণ্ড মেরিন এজেন্সির ডিরেক্টর অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটন তার ব্যতিক্রম নন। অফিসের বাইরে লাঞ্চ-ডিনার সারতে হলে, কিংবা কারও সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ করতে হলে তিনি উইলার্ড হোটেলে চলে আসেন। আজও এসেছেন। রেস্টুরেন্টের একটা টেবিল দখল করে নীরবে সারছেন দুপুরের খাওয়া।

‘অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন! হোয়াট আ নাইস সারপ্রাইয়!’

উচ্ছ্বসিত একটা কণ্ঠ শুনে মুখ তুললেন অ্যাডমিরাল। মার্কিন সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সেক্রেটারি দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর সামনে।

‘গুড আফটারনুন, মি. সেক্রেটারি,’ স্মিত হাসলেন অ্যাডমিরাল। ‘নাইস টু মিট ইউ।’

‘আপনি দেখছি একাকী লাঞ্চ – করছেন, বললেন সেক্রেটারি। ‘আমি আপনার সঙ্গে বসলে কোনও আপত্তি আছে?’

‘কী যে বলেন, আপনার সঙ্গ পেলে আমি খুব খুশি হব।

‘ধন্যবাদ।’

চেয়ার টেনে অ্যাডমিরালের মুখোমুখি বসলেন সেক্রেটারি। বেয়ারাকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিলেন। এরপর বললেন, ‘আপনাকে এখানে দেখব, আশা করিনি।’

‘ভুল বললেন,’ নীরস কণ্ঠ অ্যাডমিরালের। ‘আমি যে এখানে প্রায়ই লাঞ্চ করি, সেটা সবাই জানে। সেজন্যেই আমার সঙ্গে দেখা করতে এখানে এসেছেন আপনি।’

চোখের পলকে কাঠিন্য ভর করল সেক্রেটারির গলায়। ‘কী বলতে চান?’

‘অভিনয় থামাতে পারেন, মি. সেক্রেটারি। আপনি কেন এসেছেন, আমি জানি। ইন ফ্যাক্ট, গত ক’দিন থেকেই আমি অপেক্ষা করছি, আপনি কখন যোগাযোগ করেন।’

‘কী বলতে চান?’

‘বলতে চাই যে, একটা বিশেষ প্রজেক্টের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ব্যাপারে জানা আছে আমার।’

‘জানেন? ক্রুদ্ধ দেখাল সেক্রেটারিকে। ‘তা হলে আর কথা ঘুরিয়ে লাভ কী? প্রশ্নটা সরাসরিই করি। মেয়েটা কোথায়?’

‘দুঃখিত,’ মাথা নাড়লেন অ্যাডমিরাল। ‘আমার জানা নেই। ইচ্ছে করেই খোঁজ নিইনি। বলা যায় না, পোষা- মাইণ্ডরিডার দিয়ে আমার মাথা থেকে ওটা জেনে নিতে পারেন আপনি।’

‘তার কোনও প্রয়োজন নেই, অ্যাডমিরাল। আপনার পেট থেকে কথা বের করার আরও অনেক কায়দা জানা আছে আমার। এমন প্যাঁচে ফেলব, আপনার পরিচয়… আপনার পজিশন… কোনোকিছুই কাজে আসবে না। রাষ্ট্রদ্রোহিতা খুব খারাপ একটা জিনিস। কী করেছেন আপনি, কোনও আইডিয়া আছে? জানেন, কত বড় ক্ষতি করেছেন দেশের?’

‘এবারও ভুল বলছেন,’ অ্যাডমিরাল নির্বিকার। ‘আমি কিছুই করিনি, করেছে অ্যালিসন মিচেল নামের মেয়েটা। তাও দেশের ক্ষতি করেনি, করেছে আপনার ক্ষতি। মাইণ্ডরিডিং আর মাইণ্ড-কন্ট্রোলের যে-অবৈধ গবেষণা চালাচ্ছিলেন আপনারা, সেটার বারোটা বাজিয়েছে। সবগুলো অ্যান্টেনা সাইট বন্ধ হয়ে গেছে আপনাদের, কানাডিয়ান রকির কন্ট্রোল সাইট ধ্বংস হয়ে গেছে, এমনকী আপনাদের চিফ রিসার্চারও মারা পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ও যতক্ষণ বেঁচে আছে, দ্বিতীয়বার প্রজেক্টটা চালু করতে পারছেন না আপনারা। ‘

রাগে ফুঁসতে শুরু করেছেন সেক্রেটারি। বললেন, ‘আমার ক্ষতি? ওই প্রজেক্ট কীসের জন্যে চালানো হচ্ছিল বলে মনে হয় আপনার?’

‘দয়া করে দেশের দোহাই দেবেন না। মানুষের ওপর অমানুষিক গবেষণা চালাবার অধিকার দেশ আপনাকে দেয়নি। মাইণ্ড-কন্ট্রোল বা মাইওরিডিঙের মাধ্যমে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বেলাতেও একই কথা খাটে।

‘নীতিকথা শোনাচ্ছেন আমাকে? এসব বুলি আউড়ে আপনি আর আপনার সাগরেদ মাসুদ রানা আমেরিকার ক্ষতি করবেন, আর আমরা সেটা বসে বসে সহ্য করব?’

‘শুনে খুশি হবেন, কথাগুলো আমাদের কারও নয়, স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের। জী, ঠিকই শুনছেন। আপনাদের কীর্তি আমি তাঁকে জানিয়েছি, এবং সব শুনে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন।’

থমকে গেলেন সেক্রেটারি। ‘প্রেসিডেন্ট?’

‘হ্যাঁ,’ বললেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। ‘তাঁকে না জানিয়ে আপনারা যে এমন একটা প্রজেক্ট চালাচ্ছিলেন, এটা তিনি মোটেই সহজভাবে নেননি। আপনাকে পদচ্যুত করে লিগ্যাল অ্যাকশন নিতে চেয়েছিলেন তিনি, শুধুমাত্র কেলেঙ্কারি এড়ানোর জন্যে তাঁকে নিবৃত্ত করেছি আমি। রাষ্ট্রদ্রোহিতার কথা বললেন না? অভিযোগটা আমার বিরুদ্ধে নয়, বরং আপনার বিরুদ্ধেই উঠেছে।’

‘আ… আমি রাষ্ট্রদ্রোহী?’

‘অবশ্যই। আমেরিকার একটা টপ সিক্রেট স্যাটেলাইট নেটওঅর্কের নিয়ন্ত্রণ আপনি অবৈধভাবে তুলে দিয়েছিলেন একজন প্রাইভেট কন্ট্রাক্টরের হাতে। এর ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। দেশের স্বার্থ দেখেননি আপনি, বরং বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন মাতৃভূমিকে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়? অ্যান্টেনা সাইটের মাধ্যমে নিরপরাধ কিছু মানুষকে দিয়ে যা যা করিয়েছেন, সেসব নাহয় বাদই দিলাম।’

মুখের ভাষা হারালেন সেক্রেটারি। খাবার সার্ভ করার জন্যে বেয়ারা এসে পড়ায় অ্যাডমিরালও চুপ হয়ে গেলেন। লোকটা চলে গেলে মুখ খুললেন আবার।

‘আপনার জন্যে প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে পরিষ্কার কয়েকটা নির্দেশ আছে, মি. সেক্রেটারি। সেগুলো জানাব বলেই গত কয়েকদিন থেকে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম আমি।’

‘কী নির্দেশ?’

‘প্রথমত, মাইণ্ডরিডিং এবং মাইণ্ড-কন্ট্রোলের এই গবেষণা চিরতরে থামাতে হবে আপনাকে। সেটা শুধু নীতির প্রশ্নে নয়, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেও। আপনাদের এই রিসার্চের ফলে যেসব মাইণ্ড-কন্ট্রোলার তৈরি হচ্ছে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। যে-কোনও মুহূর্তে আমেরিকার বিরুদ্ধেই ওরা বিদ্রোহ করে বসতে পারে। সেটা যদি না-ও হয়, শত্রু কোনও দেশ ওই রিসার্চ ডেটা চুরি করে নিজেরা মাইণ্ড-কন্ট্রোলার তৈরি করে বসতে পারে। তারচেয়ে এই গবেষণাকে আগে বাড়তে না দেয়াই ভাল।’

‘অনেক দেরি হয়ে গেছে, অ্যাডমিরাল, ‘ বললেন সেক্রেটারি। ‘সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটস্ বহুদিন আগেই একদল মাইণ্ড-কন্ট্রোলার তৈরি করেছে।’

‘তারা এখনও শিশু, আপনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে,’ বললেন অ্যাডমিরাল। ‘প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় নির্দেশটা ওদের ব্যাপারে। আমরা জানি, মাইণ্ড-কন্ট্রোলের ক্ষমতা অবদমিত করে রাখার কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে, অ্যানিমেল টেস্টিঙে তাতে সাফল্যও পাওয়া গেছে। কাজেই প্রেসিডেন্ট চান, বাচ্চাগুলোকে জিনেটিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন আপনারা। সেই সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করবেন, আর কখনও কোনও মাইণ্ড-কন্ট্রোলার তৈরি করবেন না। যদি রাজি থাকেন, তা হলে কোনও অ্যাকশন নেয়া হবে না আপনার বা আপনার সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে।’

চোয়াল শক্ত হলো সেক্রেটারির। ‘দিস ইজ ব্ল্যাকমেইল। এভাবে প্রগতি ঠেকানো যায় না। জিনেটিক্স নামক প্যাণ্ডোরার বাক্স খুলে গেছে, এখন সেটার ডালা বন্ধ করার কোনও কায়দা নেই।’

‘না থাকুক, কিন্তু বাক্স থেকে অশুভ কিছু বেরুলে সেটাকে তো ঠেকাবার চেষ্টা করতে পারি আমরা!’

‘ব্ল্যাকমেইল করে?’ হাসলেন সেক্রেটারি। ‘আজ নাহয় আমাকে বেকায়দায় পেয়েছেন, কিন্তু অন্য কেউ যদি কাজটায় হাত দেয়, তাকে কীভাবে থামাবেন?’

‘সে-ব্যবস্থা তো আছেই, হেঁয়ালির সুরে বললেন অ্যাডমিরাল

এক সেকেণ্ড লাগল কথাটার অর্থ বুঝতে। এরপর তিক্ত স্বরে সেক্রেটারি বললেন, ‘অ্যালিসন মিচেল?’

‘হ্যাঁ। ও মাঠে থাকছে। জিনেটিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ওর ক্ষমতা কেড়ে না নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আপনি বা আপনার সঙ্গীরা যদি প্রেসিডেন্টের নির্দেশগুলো না মানেন, গোপনে কিছু করার চেষ্টা করেন, ও জানতে পারবে। ভাগ্যক্রমে যদি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনও মাইণ্ড- কন্ট্রোলার তৈরিও করেন, অ্যালি তাকে ঠেকাবে।’

‘আর আপনার ধারণা, কেউ ওর নাগাল পাবে না?’

‘না। কারণ অ্যালি এখন আর একা নয়। খুব যোগ্য একটা ফার্ম ওর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে—রানা এজেন্সি। ওরা তাকে লুকিয়ে রাখবে, প্রয়োজনে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করবে।’

‘রানা এজেন্সি!’ চোয়াল ঝুলে পড়ল সেক্রেটারির। ‘আপনারা বিদেশি একটা ফার্মের হাতে মেয়েটাকে তুলে দিয়েছেন?’

‘স্বদেশি এজেন্সিগুলোর ওপর যদি ভরসা করা না যায় তো কী আর করা! তা ছাড়া আমরা আসলে এজেন্সিটার হাতে নয়, রানার হাতে অ্যালির দায়িত্ব দিয়েছি। ওকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করা যায়, মেয়েটাকে ও কখনোই কারও স্বার্থোদ্ধারের হাতিয়ার হতে দেবে না। ইতিমধ্যে সে-প্রমাণ আমরা পেয়েছি। অ্যালিও ওকে বিশ্বাস করে।’

‘কাজটা আপনারা ভাল করলেন না,’ চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন সেক্রেটারি। ‘যদি ভেবে থাকেন, মুখ বুজে সব মেনে নেব আমি…’

‘সেক্ষেত্রে আপনাকে এখুনি সাবধান করে দেয়া প্রয়োজন

‘মনে করছি, মি. সেক্রেটারি,’ তীক্ষ্ণকণ্ঠে বললেন অ্যাডমিরাল। ‘মাসুদ রানা, অ্যালিসন মিচেল অথবা ডা. টিফানি ক্যানট্রেলের গায়ে যদি ফুলের টোকাও পড়ে, তার জন্যে আপনাকে দায়ী করা হবে। কাজেই মুখ বুজে সব মেনে নেয়াই আপনার জন্যে মঙ্গল।’

দাঁত কিড়মিড় করলেন সেক্রেটারি।

‘আপনার খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে,’ তাঁকে বললেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন।

‘নিকুচি করি খাবারের!’ ঝট্ করে উঠে দাঁড়ালেন সেক্রেটারি। ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়ল চেয়ার। সেদিকে ফিরে তাকালেন না। উল্টো ঘুরে হন হন করে হাঁটতে শুরু করলেন। বেরিয়ে গেলেন রেস্টুরেন্ট থেকে।

বেয়ারা ছুটে এসেছে আওয়াজ শুনে। চেয়ার ওঠাতে ওঠাতে জিজ্ঞেস করল, ‘এনি প্রবলেম, অ্যাডমিরাল? উনি কিছু না খেয়ে এভাবে চলে গেলেন কেন?

‘হঠাৎ করে বদহজম হয়েছে ওঁর,’ মুচকি হেসে বললেন হ্যামিলটন। ‘সহজে ওটা সারবে বলে মনে হয় না।’

.

ক্যানসাস থেকে ওকলাহোমা-গামী ইণ্টারস্টেট ৩৫-এর পাশের একটা নির্জন মোটেলের সামনে ঠিক রাত দুটোয় থামল একটা সাদামাটা চেহারার টয়োটা সেডান। ভেতরে দু’জন আরোহী। মোটেলের দিকে ফিরে সাঙ্কেতিক ভঙ্গিতে দু’বার হেডলাইট জ্বালল-নেভাল ড্রাইভার। কয়েক মুহূর্ত পরেই খুলে গেল মোটেলের একটা কামরার দরজা। তিনটে ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এল সেখান দিয়ে। রানা, অ্যালি আর টিফানি।

গত সাতদিন ধরে চলার ওপর রয়েছে ওরা। রাত নামলে থামছে কোনও হোটেল বা মোটেলে। আজ যেমন এখানে থেমেছে। তবে এ-ই শেষ। আজ রাতের পর এমন অনিশ্চিতভাবে ছোটাছুটি থামতে চলেছে ওদের।

স্বাভাবিক পদক্ষেপে টয়োটার দিকে এগিয়ে গেল তিনজনে। গাড়ির দুই আরোহীও নেমে পড়েছে ততক্ষণে। কাছে যেতেই সম্মান জানাল রানাকে।

‘কেমন আছ তোমরা?’ বলল রানা। ‘আশা করি, ওদিককার খবরাখবর সব ভাল? রেডিয়োতে কোডেড মেসেজ পাঠিয়েছে ববি, তাই তোমাদেরকে খবর দিলাম।’

‘সব ঠিক আছে, মাসুদ ভাই,’ জানাল ড্রাইভার।

‘এসো, পরিচয় করিয়ে দিই,’ বলল রানা। ‘এ হলো অ্যালি, আর ইনি ডা. টিফানি ক্যানট্রেল। অ্যালি-টিফানি, এরা. হলো…’

‘আমি জানি,’ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল অ্যালি। ‘বিপুল ওসমান আর গালিব হোসেন—তোমার ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির অপারেটর। সেই সঙ্গে বিসিআই এজেন্টও বটে।’

মুখ চাওয়াচাওয়ি করল বিপুল আর গালিব। এরপর বিপুল বলল, ‘ওরেব্বাপরে, ওর সম্পর্কে যা শুনেছি, তা দেখছি একবিন্দু মিথ্যে নয়।’

গালিব হাসল। বলল, ‘কেমন আছ, অ্যালি? আমাদের সঙ্গে যেতে কোনও আপত্তি নেই তো?’

‘না, আপত্তি নেই,’ বলল অ্যালি। ‘তোমরা খুব ভাল, আমি বুঝতে পারছি। রানা খুব ভরসা করে তোমাদের ওপর।

রানার দিকে তাকাল টিফানি। দুখী গলায় বলল, ‘তা হলে সত্যি সত্যি আলাদা হয়ে যাচ্ছি আমরা?’

‘হ্যাঁ,’ রানা বলল। ‘তোমাদের মঙ্গলের জন্যেই এ- ব্যবস্থা। বিপুল আর গালিব তোমাদেরকে নিরাপদ কোনও জায়গায় নিয়ে যাবে, নাম-ধাম পাল্টে লুকিয়ে রাখবে। কোথায়, সেটা ওরা ছাড়া কেউ জানবে না… আমিও না। কাজশেষে অ্যালি ওদেরকেও ভুলিয়ে দেবে সব। একমাত্র এভাবেই তোমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’

‘জানি।’

‘সরি, বাকি জীবন সম্ভবত গা-ঢাকা দিয়ে কাটাতে হবে তোমাদেরকে।’

‘তাতে কোনও সমস্যা নেই।’

‘সারাজীবনের জন্যে বাঁধা পড়তে চলেছ অ্যালির সঙ্গে। আপত্তি নেই তো?’

‘প্রশ্নই ওঠে না, রানা। আমার কারণে যাকে হারিয়েছে ও, তার জায়গা পূরণ করা তো আমারই দায়িত্ব! যদিও জানি না, ওর মায়ের অভাব কোনোদিন পূর্ণ করতে পারব কি না।’

‘কেউ যদি পারে তো সেটা তুমি,’ দৃঢ় বিশ্বাসের সুরে বলল রানা। ‘ওকে তুমি কতটা ভালবাসো, তা আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।’

‘আমি জানি,’ বলে উঠল অ্যালি।

হাসল রানা। ‘তা তো বটেই।’

‘অ্যালি,’ টিফানি বলল, ‘রানাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে না?’

‘উঁহুঁ,’ মাথা নাড়ল অ্যালি। ‘কারণ রানাকে ছেড়ে যাচ্ছি না আমরা। যত দূরে যাই… যেখানেই যাই… ও কোনও না কোনোভাবে আমাদের সঙ্গে থাকবে।’

বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল রানার। ঝুঁকে অ্যালিকে জড়িয়ে ধরল ও।

গলা খাঁকারি দিল বিপুল। ‘আমাদেরকে রওনা হতে হয়, মাসুদ ভাই। অনেক দূর যেতে হবে।’

কপালে চুমো খেয়ে অ্যালিকে আলিঙ্গন থেকে মুক্তি দিল রানা। টিফানির গালেও চুমো খেল। বলল, ‘ভাল থেকো। কখনও আমাকে প্রয়োজন মনে হলেই ফোন কোরো রানা এজেন্সির যে-কোনও ব্রাঞ্চে। ছুটে চলে আসব আমি।’

মাথা ঝাঁকাল অ্যালি আর টিফানি। বিপুল আর গালিবের পিছু পিছু উঠে পড়ল গাড়িতে। জ্যান্ত হয়ে উঠল টয়োটার ইঞ্জিন, হেডলাইট জ্বলে উঠল। জানালার কাঁচে দু’হাত ঠেকিয়ে রানার দিকে চেয়ে আছে অ্যালি। এতক্ষণ হাসিখুশি থেকেছে, কিন্তু হঠাৎ করে চোখ ছলছল করছে ওর।

‘থ্যাঙ্ক ইউ, রানা,’ মাথার ভেতর ওর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল রানা। ‘থ্যাঙ্ক ইউ ফর এভরিথিং।’

গাড়ি ছেড়ে দিল।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *