অন্তর্যামী – ১৫

পনেরো

ধপ্ করে চেয়ারে বসে পড়ল লিয়ারি। হতাশা ছেঁকে ধরেছে তাকে। পুরো গ্রাউণ্ড টিম এখন মাটিতে। তল্লাশি চালাতে চালাতে পৌঁছেছে যেখান থেকে উধাও হয়ে গেছে রানা আর মেয়েটা, সেখানে। লিয়ারি অনুমান করেছিল, ওখানে হয়তো কোনও সুড়ঙ্গ বা মাইন শাফট রয়েছে, কিন্তু তেমন কিছুই পায়নি তার টিম। তাদের রিপোর্ট থেকে আরও জানা গেছে, ওখানকার মাটি পাথরের মত শক্ত, কোনও পায়ের ছাপ পড়েনি, কাজেই বোঝা যাচ্ছে না কোনদিকে গেছে তাদের শিকার।

‘বেশ, তা হলে সিস্টেম্যাটিক্যালি এগোনো যাক,’ বলল হুপার। ‘যেভাবেই হোক, স্যাটেলাইটকে ফাঁকি দিয়েছে দু’জনে; তারপর দৌড়াতে শুরু করেছে। বারো মিনিট আগে উধাও হয়েছে ওরা… যদি ধরে নিই, এক মাইল পেরুতে দশ মিনিট নিচ্ছে…’

‘সাত মিনিট ধরো,’ বলে উঠল লিয়ারি। ‘প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটছে ওরা।’

‘ঠিক আছে, সাত মিনিট। তার মানে, ইতিমধ্যে দু’মাইলের মত এগিয়ে গেছে ওরা। তবে কোন্‌দিকে, সেটা জানা যাচ্ছে না। প্রতি তিন থেকে চার মিনিটে এক মাইল করে আমাদের সার্চ এরিয়ার ডায়ামিটার বাড়ছে…’

হুপারের বিশ্লেষণ শোনার আর প্রয়োজন বোধ করল না লিয়ারি। উঠে গিয়ে হ্যাণ্ডসেট তুলে নিল। টিমকে নির্দেশ দিল, ‘কপ্টারটাকে ল্যাণ্ড করাও। এক্ষুণি। সবাই আবার উঠে পড়ো ওটায়। গ্রাউণ্ডে আর কাজ নেই তোমাদের, যা করার করবে আকাশ থেকে। চাঁদের আলো যথেষ্টই আছে, কাজেই অ্যামপ্লিফায়েড নাইট ভিশন হেডসেট পরবে সবাই, ভিজুয়ালি সার্চ চালাবে পুরো বনে—পাঁচশো ফুট ওপর থেকে। ক্লিয়ার?’

ওপাশ থেকে ইতিবাচক সাড়া দিল টিম লিডার হ্যাণ্ডসেট নামাল লিয়ারি। সোজা হতেই দেখল, বোকা বোকা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে হুপার।

‘এরিয়াল সার্চ কোত্থেকে শুরু করব, তা জানা নেই আমার, স্যর,’ বলল সে। ‘কোনদিকে পাঠাব ওটাকে?’

‘মাথা খাটাও,’ বিরক্ত স্বরে বলল লিয়ারি। ‘যে-আমলে কম্পিউটার বা স্যাটেলাইট ছিল না, সে-আমলে মাথা খাটিয়ে এসব বের করত লোকে।’

পাল্টা কিছু বলার সাহস পেল না হুপার। কম্পিউটারের দিকে ফিরে কি-বোর্ডের বাটন চাপল, স্ক্রিনে তুলে আনল মিরাণ্ডা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া একটা ওয়াইড ইমেজ। তার ওপরে বসাল এলাকার টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ।

‘ধরে নিচ্ছি, রানার মত অভিজ্ঞ একজন লোক এলাকাটার নাড়িনক্ষত্র জানে,’ বলল সে।

‘তাতে সন্দেহ নেই,’ সায় জানাল লিয়ারি।

সেক্ষেত্রে তার বোঝার কথা, আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। কিন্তু এই দেখুন, ত্রিশ মাইল দূরে রয়েছে হাইওয়ে ওয়ান-নাইণ্টি-এইট। অতদূর পর্যন্ত আমরা রোডব্লক দিইনি, এমনটা ভাবতেই পারে। কাজেই ওর জন্যে ওখানে পৌঁছুবার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত। তা ছাড়া রাস্তাটায় প্রচুর গাড়ি চলে, যানবাহন জোগাড় করতে চাইলেও রাস্তাটা আদর্শ।’

‘অতদূর যাবে কী করে?’

ম্যাপে একটা জলপথ আলোকিত করল হুপার। ‘এই ঝরনাটা দিয়ে। উপত্যকা থেকে সোজা হাইওয়ের দিকে গেছে ওটা—পুরো ত্রিশ মাইল। স্রোতও বইছে ওদিকে। একটা নৌকা পেলে, অথবা ভেলা বানিয়ে নিতে পারলে সহজেই দূরত্বটা অতিক্রম করা সম্ভব।’

‘ঝরনায় পৌঁছুবার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা কোটা?’

‘এই যে,’ স্ক্রিনে একটা সরলরেখা আঁকল হুপার। ‘যেখানে ওরা উধাও হয়ে গেছে, সেখান থেকে উত্তরদিকে আড়াই মাইল।’ হাতঘড়িতে চোখ বোলাল। ‘এতক্ষণে হয়তো পৌঁছেও গেছে।’

তাড়াতাড়ি কমিউনিকেটর তুলে ব্ল্যাক হকের পাইলটের সঙ্গে কথা বলল লিয়ারি।

‘কপি দ্যাট,’ বলল পাইলট। ‘টিম মেম্বাররা এলেই রওনা হচ্ছি।’

‘এখনও আসেনি ওরা?’,

‘সবে ল্যাণ্ড করছি। এদিকে খোলা জায়গা নেই বললেই চলে, অনেক খুঁজে টিমের লোকেশন থেকে এক মাইল দূরে একটা ক্লিয়ারিং পেয়েছি। ল্যাণ্ড করছি ওখানেই। টিমকে এখানে আসতে বলেছি।’

‘তাড়াতাড়ি করো।’

‘ইয়েস, স্যর।’

.

সাবধানে কপ্টারকে নিচে নামাচ্ছে পাইলট, আশপাশে বড় বড় গাছ—সাধারণ যে-কোনও গাছের চেয়ে অন্তত তিনগুণ লম্বা। পাইলটের মনে হলো, গভীর একটা ফানেলের ভেতরে কপ্টার নিয়ে নামছে সে।

মাটি থেকে বিশ ফুট উচ্চতায় পৌঁছুলে নিচটা পরিষ্কার দেখা গেল—ফার্ন আর নানা ধরনের ঝোপঝাড়ের কার্পেট যেন, অন্তত দু’ফুট পুরু। চাকা জড়িয়ে যাবার ভয় নেই, তবে টেকঅফের সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আলতো করে হেলিকপ্টার নেমে এল ওগুলোর মাঝখানে।

ঘাড় ফিরিয়ে কো-পাইলটের দিকে তাকাল পাইলট। বলল, ‘হিসু করতে চাইলে এখুনি নেমে করে নাও। দু’মিনিটের ভেতর আমাদের টিম পৌঁছে যাবে।’

কথাটা শেষ হতে না হতেই পেছন থেকে শব্দ ভেসে এল–ট্রুপ কম্পার্টমেন্টে উঠে বসেছে কেউ। অবাক হলো পাইলট, এত তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছে গ্রাউণ্ড টিম? ঘুরে ওদিকে তাকাল সে, পরক্ষণে জমে গেল আতঙ্কে।

.

খোলা জমিটার একপার্শে, বড় একটা ঝোপের পেছনে ঘাপটি মেরেছে রানা আর অ্যালি। দশ মিনিট হলো পৌঁছেছে ওরা, অপেক্ষা করছে হেলিকপ্টারের জন্যে। আশপাশে এটাই একমাত্র ল্যাণ্ড করার মত জায়গা, কাজেই রানা নিশ্চিত, গ্রাউণ্ড টিমকে তুলে নেবার জন্য এখানেই নামবে কপ্টার। সেটা ভেবেই প্ল্যান সাজিয়েছে ও। কিন্তু যত সময় গড়াচ্ছে, দুর্ভাবনা বাড়ছে ওর। নিখুঁত পরিকল্পনা বলে কিছু নেই, যে- কোনও দিক থেকেই উদয় হতে পারে অপ্রত্যাশিত বিপদ .. গোলমাল হয়ে যেতে পারে সব কিছু।

তবে ওর আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করে একটু পরেই মাথার ওপরে শোনা গেল রোটরের বজ্রনিনাদ, প্রায়ান্ধকার আকাশের মাঝে অতিকায় এক পতঙ্গের মত লাগছে কপ্টারটাকে। ধীরে ধীরে নিচে নেমে এল ওটা। চাকাগুলো মাটি স্পর্শ করতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এল রানা, ছুট লাগাল তীরবেগে। খোলা দরজা পেরিয়ে এক লাফে উঠে পড়ল ট্রুপ কম্পার্টমেন্টে। বিস্মিত হয়ে পেছনে তাকাল পাইলট, ততক্ষণে রানার হাতে বেরিয়ে এসেছে সিগসাওয়ার।

‘যদি খুন হয়ে যেতে না চাও,’ শীতল গলায় বলল রানা, ‘তোমাদের সাইডআর্মস্ বের করে কনসোলের ওপর রাখো।’

কো-পাইলটও এবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়েছে। চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার। কিন্তু দু’জনের কেউই হুকুমটা তামিল করল না।

এগিয়ে গিয়ে পিস্তলের ডগা দিয়ে পাইলটের নাকে বেমক্কা একটা গুঁতো মারল রানা। রক্ত বেরিয়ে এল গলগল করে। অস্ফুট আওয়াজ করল সে ব্যথায়। চেপে ধরল নাক।

‘তিন পর্যন্ত গুনব,’ রানা বলল। ‘এক… দুই…’

নড়ে উঠল দুই পাইলট। তাড়াতাড়ি হোলস্টার থেকে পয়েন্ট ফোর ফাইভ ক্যালিবারের দুটো পিস্তল বের করে আনল, রেখে দিল সামনের কনসোলের ওপর।

অ্যালি এসে পড়েছে। রানার পেছন পেছন কপ্টারে চড়ল ও।

পাইলটদের উদ্দেশে পিস্তল নাড়ল রানা। ‘বেরোও।’

মুখ চাওয়াচাওয়ি করল দুই পাইলট, তবে নির্দেশটা পালন করতে দেরি করল না। ত্রস্ত হাতে দু’পাশের দরজা খুলল তারা, লাফ দিয়ে নামল ঝোপঝাড়ের মাঝে। এরপর ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে শুরু করল।

পাইলটের সিটে বসল রানা। অ্যালিকে ইশারা করল কো-পাইলটের আসন নিতে। ভারী হেডসেট পরতেই রোটরের আওয়াজ কাটা পড়ল, রেহাই মিলল কানফাটানো শব্দের অত্যাচার থেকে। কনসোলের দিকে হাত বাড়াল রানা, হেডসেটের জ্যাকের পাশে রয়েছে কম-সিলেক্টর সুইচ, ওটা ককপিট অনলি-তে নিয়ে এল। এর অর্থ, বাইরে আর ট্রান্সমিট হবে না ওদের কথাবার্তা।

‘সত্যি সত্যি তুমি ওদেরকে গুলি করতে,’ বলল অ্যালি। প্রশ্ন নয়, নিছক মন্তব্যের ভঙ্গিতে। ‘তিন পর্যন্ত গোনা শেষ হলে। ধোঁকা দিচ্ছিলে না।’

‘সেজন্যেই হুমকিটায় কাজ হয়েছে,’ রানা বলল।

ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলের ওপর ঘুরছে ওর চোখ। স্ট্যাণ্ডার্ড ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক ওড়াবার ট্রেনিং আছে ওর, কিন্তু এটা অন্য ভার্শান—এমএইচ-৬০কে… স্পেশাল অপসের জন্যে বিশেষভাবে তৈরি করা। প্যানেল অবশ্য প্রায় একই রকম, পার্থক্য বলতে বাড়তি কিছু সুইচ দেখা যাচ্ছে। আর আছে একটা অল-পারপাস ডিসপ্লে, সেটায় এখন একটা স্যাটেলাইট ফিড ফুটে উঠেছে। ইমেজটার দিকে তাকিয়ে চমৎকৃত হলো রানা, ওর দেখা যে-কোনও স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে ওটা অনেক বেশি স্পষ্ট, নিখুঁত। পর্দায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে হেলিকপ্টারের থারমাল ইমেজ, খোলা জায়গা পেরিয়ে গাছপালার আড়ালে ঢুকে পড়া দুই পাইলটকেও দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। গ্রাউণ্ড টিমকে খুঁজল রানা। ওরাও আছে। ল্যাণ্ডিং জোন থেকে মোটামুটি পাঁচশো গজ দূরে, দ্রুত এগিয়ে আসছে হেলিকপ্টারে চড়বার জন্যে। এখনও পাইলটদের সঙ্গে দেখা হয়নি গ্রাউণ্ড টিমের, তাই জানে না কী ঘটেছে। তবে জানতে আর দেরিও নেই।

কন্ট্রোলে হাত রাখল রানা। পাওয়ার বাড়াতেই কম্পন বেড়ে গেল ব্ল্যাক হকের। সিটের কিনারা খামচে ধরল অ্যালি। রোটরের আর্তনাদ বেড়ে চলেছে, মাটি ছাড়ল হেলিকপ্টার, উঠে এল বনের মেঝে থেকে। এক্সটেরিয়র লাইটের সুইচ অন করল রানা। যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হলো চারদিকের সেকুইয়া গাছগুলো—গায়ে গা লাগিয়ে যেন একটা বৃত্তাকার দেয়াল তৈরি করেছে। একেকটা গাছ প্রায় দুইশো ফুট উঁচু। রানার মনে হলো একটা কুয়োর তলা থেকে ওপরদিকে উঠছে ওরা। বিপজ্জনক পরিস্থিতি, একটুও যদি ভুল করে, গাছের গায়ে বাড়ি খাবে রোটর ব্লেড, ক্র্যাশ করবে ব্ল্যাক হক।

সাবধানে ওঠা উচিত, কিন্তু সে-উপায় নেই। স্যাটেলাইট ফিডে দেখতে পাচ্ছে রানা, একেবারে কাছে চলে এসেছে গ্রাউণ্ড টিম, এক মিনিটেরও কম সময়ে ওদের তলায় বেরিয়ে আসবে তারা। সন্দেহ নেই, এরপরেই সবগুলো আগ্নেয়াস্ত্র আগুন ঝরাবে হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে। তার আগেই সরে যেতে হবে ওদেরকে, যত দূরে সম্ভব।

দু’দিকে মনোযোগ রাখতে হচ্ছে রানাকে—স্যাটেলাইটের ডিসপ্লে, আর গাছের সারির দিকে। ক্লাইম রেট বাড়িয়ে চলেছে… যে-রেটে অভ্যস্ত, তার চেয়েও বেশি। ভয় হচ্ছে, এই বুঝি নিয়ন্ত্রণ হারায়। উভয়সঙ্কট আর কাকে বলে! দ্রুত উঠতে গেলে ক্র্যাশ করার সম্ভাবনা, আবার ধীরে-সুস্থে উঠতে গেলে নিচ থেকে গুলি খেয়ে ভূপাতিত হতে হবে।

সামনে ঝুঁকে গাছের সারির চূড়া দেখার চেষ্টা করল রানা। এখনও প্রায় সত্তর ফুট বাকি। ডিসপ্লেতে গ্রাউণ্ড টিমের দূরত্ব পঞ্চাশ গজ দেখাচ্ছে। ইমেজটার এক কোণে একটা ডেটা ট্যাগ চোখে পড়ল ওর। স্যাট-আলফা-মিরাণ্ডা- টোয়েন্টিওয়ান। ক্ষণিকের জন্যে চিন্তায় টোকা দিল মিরাণ্ডা শব্দটা ↓ গোপন স্যাটেলাইট প্রজেক্ট মিরাণ্ডা সম্পর্কে কানাঘুষো শুনেছে, এই প্রথম তার বাস্তব নমুনা দেখল।

পরমুহূর্তে অন্ধকার হয়ে গেল ডিসপ্লে। ব্ল্যাক হকের কানেকশন কেটে দেয়া হয়েছে নিশ্চয়ই।

‘হুম,’ পাশ থেকে বলল অ্যালি। ‘ওই স্যাটেলাইট ইমেজ দেখার অধিকার নেই আমাদের।’

‘শোকর করো যে, দূর থেকে আমাদের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারছে না,’ হালকা গলায় বলল রানা। ‘ভবিষ্যতে সে- ব্যবস্থাও থাকবে।’

গাছের চূড়া ছাড়িয়ে উঠে আসছে কপ্টার। রোটরের বাতাসে দোল খেতে থাকা ডালপালা অদৃশ্য হয়ে গেল উইণ্ডশিল্ডের ওপার থেকে। আচমকা মুক্ত আকাশে উঠে এল কপ্টার। চাঁদের আলোয় অপার্থিব দেখাচ্ছে দৃশ্যটা—দূরে উঁচু-নিচু পাহাড়ের অবয়ব, সবুজ অরণ্য যেন গালিচার মত বিছিয়ে আছে তার পাদদেশে। তবে প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হবার সময় নয় এটা। কন্ট্রোল স্টিক সামনের দিকে ঠেলে দিল রানা। নাক একটু নিচু করল ব্ল্যাক হক, শুরু করল এগোতে। আর তখুনি ছুটে এল গুলির প্রথম পশলা।

ঠক ঠক করে আওয়াজ ভেসে এল নিচ থেকে। ব্ল্যাক হকের আর্মার্ড আণ্ডারসাইডে মাথা কুটছে বুলেটবৃষ্টি। চেঁচিয়ে উঠল অ্যালি। একটা লাইট চুরমার হয়ে গেল, টেইল রোটরের দিক থেকে শোনা গেল বিশ্রী একটা শব্দ। শঙ্কিত চোখে প্যানেলের দিকে তাকাল রানা, কিন্তু বিপদসঙ্কেত দেখিয়ে কোনও বাতি জ্বলে উঠল না।

মনে হলো অন্তত দশ সেকেণ্ড ধরে চলছে তাণ্ডব, আসলে পেরিয়েছে মাত্র দুই সেকেণ্ড। সামনের দিকে নাক ঝুঁকিয়ে এগিয়ে চলেছে কপ্টার। খোলা জায়গাটার ওপর থেকে সরে যাবার আগমুহূর্তে গুলির আঘাতে বিস্ফোরিত হলো সামনের ডানদিকের জানালা, আরেকবার চেঁচিয়ে উঠল অ্যালি। পরক্ষণে বনের ওপর দিয়ে ছুট লাগাল ব্ল্যাক হক।

নিরাপদ দূরত্বে পৌছে কেবিন লাইট জ্বালল রানা, ঘুরল অ্যালির দিকে। চোখদুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে মেয়েটার, শ্বাস ফেলছে জোরে জোরে। বাম হাতটা চেপে ধরে রেখেছে ডান হাত দিয়ে। হাতটা যেখানে গিয়ে মিশেছে কাঁধের সঙ্গে, সেখানটা ভিজে উঠেছে রক্তে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *