অন্তর্যামী – ৩৭

সাঁইত্রিশ

নিজের প্রিয় স্পটটায় দাঁড়িয়ে আছে চার্লটন। অফিসের জানালায়, ওঅর্কফ্লোরের ওপরে। অনুভব করছে চাপা উত্তেজনা।

পুরো ওঅর্কফ্লোর জ্যান্ত হয়ে উঠেছে আজ রাতে। বারোটা স্টেশনই চালু করা হয়েছে। লালচে আলোয় প্রতিটা স্টেশনের ভেতর শুয়ে আছে একজন করে কন্ট্রোলার, মাথায় লাগানো ইলেকট্রোডের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করছে যার যার সাবজেক্ট বা মার্ককে।

এক সপ্তাহ আগে সূচনা হয়েছে এই অপারেশনের—অ্যালেক্স লিয়ারির অনুরোধে। তিনটে অ্যান্টেনা সাইট থেকে একজন করে মার্ক বেছে নিয়েছে সব কন্ট্রোলার, তাদেরকে বিশেষ নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে ক্যানসাসের টোপেকায়। অপেক্ষা করতে বলেছে বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও ক্যাম্পিং গ্রাউণ্ডে। অপারেশনের এই অংশটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিল চার্লটন, কারণ অ্যান্টেনাগুলোর রেঞ্জের বাইরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মার্কদের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাবে কন্ট্রোলাররা, যতক্ষণ না ক্যানসাসের আকাশে বিমানযোগে পাঠানো হচ্ছে আরেকটা কন্ট্রোল অ্যাসেট। ততদিন মুক্ত, স্বাধীন থাকবে মার্করা। মাথার ভেতর ভুতুড়ে কণ্ঠ শুনতে না পেয়ে দুঃসাহসী হয়ে উঠতে পারে তারা, অনির্দিষ্টকালের জন্যে অচেনা জায়গায় অপেক্ষা না-ও করতে পারে। কে জানে, কন্ট্রোলারদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে পালিয়েও যেতে পারে ওরা।

তবে সৌভাগ্যক্রমে তেমন কিছুই ঘটেনি। আধঘণ্টা আগে, কন্ট্রোল অ্যাসেট জায়গামত পৌঁছুনোর সঙ্গে সঙ্গে কানেকশন রি-এস্টাবলিশ হয়েছে মার্কদের সবার সঙ্গে। যেখানে থাকতে বলা হয়েছিল, সেখানেই অপেক্ষারত অবস্থায় পাওয়া গেছে তাদেরকে। একজনও এদিক-ওদিক যায়নি। গর্ব অনুভব করছে চার্লটন… বুনো প্রাণীকে পোষ মানাবার মত গর্ব।

.

মাঠের ওপর দিয়ে ঝাঁকি খেতে খেতে ছুটছে শেভি। ড্রাইভওয়ে ধরে মেইন রোডে পৌঁছুবার চেষ্টা করেনি রানা, ওদিকে শত্রুরা ওত পেতে থাকতে পারে। তার বদলে গাড়ি নিয়ে ফার্মহাউসকে পাশ কাটিয়েছে, ছুট লাগিয়েছে পেছনের মাঠের ওপর দিয়ে। হেডলাইট জ্বালেনি। চেষ্টা করছে ওদের ফার্মটার এলাকা পেরিয়ে পেছনের ফার্মটায় পৌঁছুতে। সেখানে বিকল্প রাস্তা পাওয়া যাবে মেইন রোডে ওঠার জন্যে।

দু’শো গজের মত নিরাপদে এগোল গাড়ি, তারপর হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠল। অন্ধকারে একটা গর্তে ঢাকা পড়েছিল, পরক্ষণে তুমুল গতির কারণে লাফ দিয়ে উঠে এসেছে। রানার মনে হলো, চারটে চাকাই শূন্যে ঝাঁপ দিয়েছে। মাটিতে নামার পর একদিকে এত বেশি কাত হয়ে গেল গাড়ি, প্রায় উল্টে যাচ্ছিল। টিফানি তীক্ষ্ণস্বরে চিৎকার করে উঠল।

হেডলাইট জ্বেলে দিল রানা। অন্ধকারে ড্রাইভ করা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, অ্যাকসিডেন্ট ঘটে যেতে পারে। জোড়া আলোকরশ্মি সামনে ছুটে যেতেই দেখা গেল বড় বড় গাছের দীর্ঘ এক সারি—দুই ফার্মের মাঝে প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িকে ডানে-বামে নিল রানা, আলো ফেলল ঘন বৃক্ষসারির বিভিন্ন জায়গায়… কিন্তু দৃশ্যমান কোনও ফাঁকফোকর পেল না যেখান দিয়ে ওদের শেভি সীমানা অতিক্রম করতে পারে।

শত্রুপক্ষের প্রথম গাড়িটা ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে ফার্মহাউসে। বাড়ির পাশ ঘুরে বেরিয়ে এল ওটা, সোজা ছুটে এল শেভিকে লক্ষ্য করে। ওটার পিছু পিছু উদয় হলো আরও দুটো গাড়ি।

গাড়ির মুখ ঘোরাল রানা, মাঠের পশ্চিমপ্রান্ত লক্ষ্য করে ছুটল এবার। ওদিকে আরেকটা ফার্ম আছে, সেখানে উত্তরমুখী একটা রাস্তা থাকার কথা। শেভিকে দিক বদলাতে দেখে ধাওয়াকারীরাও মুখ ঘোরাল—কোনাকুনি পথে এগিয়ে আসছে পলাতকদের বাধা দিতে। রেঞ্জের মধ্যে পেতেই গুলি ছুঁড়ল একটা গাড়ির ড্রাইভার। সেটা উড়ে গেল শেভির ওপর দিয়ে।

মাথা ঘুরিয়ে চকিতে তাকাল রানা—আরও একটা, গাড়ি যোগ হয়েছে প্রথম তিনটের সঙ্গে। বাকিগুলোও খুব পেছনে নেই, দেখা যাচ্ছে ওগুলোর আলোকরশ্মি। আবারও গুলি করা হলো ওদের উদ্দেশে… এবার একাধিক গাড়ি থেকে। তিনটে বুলেট ওদের নাগাল পেয়ে গেল, আঘাত করল সামনের একটা দরজায়, যেদিকে আরোহী বসে, তবে তেমন কোনও ক্ষতি করতে পারল না।

‘পায়ে হেঁটে চেষ্টা করলে কেমন হয়?’ ইঞ্জিনের আওয়াজকে ছাপিয়ে উঠল টিফানির গলা।

‘দু’মিনিটও টিকব না,’ ওকে বলল রানা।

কোথাও থেকে আরেকটা গুলি হলো, বাতাসে শিস কেটে, বেরিয়ে গেল বুলেটটা। রানা শান্ত রইল, বিপদের সময় অস্থির হওয়া ওর স্বভাব নয়।

‘মাথা নামিয়ে রাখো,’ বলল ও। সামনেটা দেখার জন্যে ঝুঁকে আছে হুইলের ওপর, অতিরিক্ত চাপ পড়ায় গোঙাচ্ছে ইঞ্জিন। ‘খোলা জায়গাটা যদি পেরিয়ে যেতে পারি, সামান্য সুযোগ আছে।’

অ্যালিকে জড়িয়ে ধরে গুটিসুটি হয়ে গেল টিফানি। আর তখুনি চিৎকার করে উঠল রানার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। সামনের উঁচু ঘাসগুলো কেমন যেন অন্যরকম। ব্যাপারটা বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেল বিপর্যয়।

হঠাৎ করে নিচু হয়ে গেল গাড়ির নাক, যেন ডাইভ দিল নিচের দিকে। ফ্রন্ট এণ্ডের চারপাশে ছিটকে উঠল একরাশ পানি, ভিজিয়ে দিল উইণ্ডশিল্ড আর ছাত পর্যন্ত। নিজের অজান্তে চেঁচিয়ে উঠল টিফানি—অ্যালিকে নিয়ে সামনে ছিটকে পড়েছে সে। উইণ্ডশিল্ডের সঙ্গে নাক-মুখ ঠুকে যাচ্ছিল, রানা তড়িৎগতিতে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ঠেকাল ওকে।

ধাম করে এবার গাড়ির পেছনদিক আছড়ে পড়ল। আবারও পানি ছিটকাল। বুদ্ উঠতে শুরু করেছে নিচ থেকে, নৌকার মত দুলছে গাড়ি, তলাচ্ছে ধীরে ধীরে।

সোজা হয়ে চারদিকে তাকাল রানা। কাঁচের ওধারে উঁচু উঁচু ঘাসের ডগা, পানি ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে, গ্রাস করে ফেলেছে একটা অগভীর ডোবাকে। স্বল্প আলোয় ডোবা আর ঘাসে ঢাকা জমির মাঝে পার্থক্য ধরতে পারেনি ও।

কয়েক সেকেণ্ড পরেই ডোবার তলা স্পর্শ করল শেভির চাকা। সাইড উইণ্ডোর মাঝ বরাবর উঠে এসেছে পানি কেশে উঠে থেমে গেল ইঞ্জিন। নোংরা পানির ভেতর মিটমিট করছে হেডলাইটের আলো। শঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছে রানা, ঘাসের ডগাগুলো আলোকিত হয়ে উঠেছে প্রতিপক্ষের আগুয়ান গাড়ির হেডলাইটে।

‘কী করব আমরা?’ ভয়ার্ত গলায় জানতে চাইল টিফানি। হ্যাণ্ডেল টেনে খুলতে চাইল দরজা, কিন্তু লাভ হলো না। পানির চাপ ঠেসে ধরে রেখেছে দরজাটাকে।

স্বাভাবিক ভঙ্গিতে শ্বাস ফেলছে অ্যালি। অচেতন অবস্থাতেই টিফানিকে জড়িয়ে ধরে আছে সে, শিশুর মত।

ঝুঁকে শটগানটা তুলে নিল রানা। গাড়ির সংকীর্ণ অভ্যন্তরে জিনিসটা নাড়াচাড়া করা মুশকিল। অস্ত্রটা কোলের কাছে আনার আগেই বাইরে ইঞ্জিনের আওয়াজ জোরালো হয়ে উঠল। একটা গাড়ি এসে থামল ডোবার কাছে। দরজা খোলা ও বন্ধ হবার শব্দ শোনা গেল।

স্থির হয়ে গেল রানা। দৃষ্টি বিনিময় করল টিফানির সঙ্গে। পরমুহূর্তে গর্জে উঠল একটা রাইফেল। রাতের নীরবতায় বিস্ফোরণের মত শোনাল শব্দটা। ঠক করে শেভির ছাতে বাড়ি খেল বুলেট, বাউন্স করে ছিটকে পড়ল বিশ ফুট সামনের পানিতে।

‘নিচু হয়ে থাকো,’ টিফানিকে বলল রানা। ‘মাথা তুলো না।’

অ্যালিকে কোল থেকে নামাল টিফানি, শোয়াল পায়ের কাছে। এরপর নিজে ঝুঁকে গেল ওর ওপর।

আড়চোখে বাইরে তাকাল রানা, হেডলাইটের আলোয় একটা ছায়া নড়তে দেখল। রাইফেল রিলোড করতে করতে ডোবার কিনারে ঘুরছে আততায়ী, চলে আসতে চাইছে ওর পাশটায়, যাতে ভালমত লক্ষ্যস্থির করে গুলি করতে পারে।

শটগান কক করল রানা। সাবধানে জানালার কাঁচ একটু নামাল, যাতে পানি না ঢোকে গাড়িতে। ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে বের করল শটগানের ব্যারেল। ঘাস সরিয়ে রাইফেলধারী দৃষ্টিসীমায় বেরিয়ে আসতেই ট্রিগার চাপল। লোকটার বুকে লাগল গুলি, ছিটকে পেছনদিকে পড়ে গেল সে।

পরের ত্রিশ সেকেণ্ডে আরও কয়েকটা গাড়ি এসে থামল। তবে প্রথমজনের মত বোকামি করল না ওগুলোর আরোহীরা। আড়াল থেকে পজিশন নিতে শুরু করল। হতাশায় ঠোঁট কামড়াল রানা। সব শেষ হতে চলেছে। চারপাশ থেকে গুলি করে ওদেরকে খতম করবে খুনিরা।

ওর ধারণাকে সত্য প্রমাণ করার জন্যেই প্রথম গুলিটা ছুটে এল উল্টোপাশ থেকে। বিকট শব্দে ভেঙে পড়ল প্যাসেঞ্জার সাইডের উইণ্ডো। গলগল করে ডোবার গন্ধময় পানি ঢুকতে শুরু করল ওখান দিয়ে।

.

স্বপ্নের জগতে ভেসে চলেছে অ্যালি। শরীরে আরামদায়ক এক উষ্ণতা… রানার কাছে এলেই এমন অনুভূতি হয় ওর। অদ্ভুত ওই মানুষটা যেন পৃথিবীর সব মমতা নিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকে ওকে। রানাই কি? বুঝতে চাইল ও। না, অন্য কেউ। আজ আরেকজন উদয় হয়েছে ওর জন্যে মমতা নিয়ে। টিফানি। সে-ই জড়িয়ে ধরেছে তাকে।

টিফানির মমত্ব ভিন্ন এক অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে অ্যালির মাঝে। মনে পড়ে যাচ্ছে বহুদিন আগের স্মৃতি, যখন আরেকজন নারী ওকে এভাবে ধরে রাখত। অদ্ভুত এক প্রশান্তি পাচ্ছে ও, তার মাঝে হারিয়ে যেতে দিয়েছে নিজেকে। যা-খুশি ঘটুক, কিছু যায় আসে না। এই ভালবাসা, স্নেহ আর মমতা পেলে অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই ওর…

হঠাৎ কুঁকড়ে গেল অ্যালি। উষ্ণতা মিলিয়ে গেছে মুহূর্তে, তার বদলে শরীরে শীতল স্পর্শ টের পাচ্ছে। চোখ পিটপিট করল, সামনে সব ঘোলা। পানিতে ডুবে গেছে ও। দুটো হাত খামচে ধরেছে ওর পোশাক, পানি থেকে ওকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে। চাপা গুমগুম আওয়াজ শুনতে পেল, যেন বিস্ফোরণ ঘটছে কাছে কোথাও।

টান খেয়ে পানি থেকে বেরিয়ে এল অ্যালি। সম্পূর্ণ সচেতন, চোখের পলকে পড়ে নিন রানা আর টিফানির মন। পরিষ্কার বুঝল, মরণফাঁদে আটকা পড়েছে ওরা। বাইরে থেকে আবারও গুলির আওয়াজ ভেসে এল, এবার চুরমার হয়ে গেল পেছনের জানালার কাঁচ।

রানাকে অসহায় দেখাচ্ছে। হাতে শটগান থাকলেও সেটা কাজে লাগাতে পারছে না সে। বড় করে শ্বাস ফেলল অ্যালি, যা করার এবার ওকেই করতে হবে।

উইনচেস্টার রাইফেলের বোল্ট টানল জেফরি ফলসাম, খালি কেসিংটা ফেলে দিল ঘাসে, সেখানে ভরল নতুন একটা শেল। ডানে, দশ ফুট দূরে উপুড় হয়ে থাকা লোকটাও রিলোড করছে তার রাইফেল।

লোকটা অচেনা, তাকে আগে কোনোদিন দেখেনি জেফরি, তবে দু’জনেই যে একই পথের পথিক, তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। শুধু ওরা দু’জন নয়, আরও জনাতিনেক অস্ত্রধারী লোক একইভাবে পজিশন নিয়েছে ডোবার ধারে। কয়েকটা গাড়ি এখনও এসে পৌছায়নি, দূরে সেগুলোর আলো দেখতে পেয়েছে জেফরি—নিঃসন্দেহে সেগুলোর আরোহীদেরও পরিচয় এক।

ওরা সবাই ভুতুড়ে কণ্ঠের ভৃত্য।

ব্যাপারটা আরও আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিল জেফরির। মহাক্ষমতাবান ওই ভুতুড়ে কণ্ঠের মালিক স্রেফ একজনকে দাস বানিয়ে ক্ষান্ত দেবে কেন? তার জায়গায় ও থাকলেও আজ্ঞাবহ চাকরের বাহিনী গড়ে তুলত। কঠিন কাজে পাঠাত একাধিক লোক, যাতে ব্যর্থতার ভয় না থাকে। এখানে তা-ই ঘটছে।

একদিক থেকে এতজনের আগমন জেফরির জন্যেও ভাল বটে। মানুষ খুন করতে বেরিয়েছে, দলে ভারী হলে অপরাধের দায়ও ভাগাভাগি হয়ে যায়। কে জানে, খুনটা হয়তো তাকে নিজ হাতে করতেই হবে না। তার হয়ে বাকিরাই সেরে দেবে কাজটা।

উইনচেস্টার তুলে কাঁধে ঠেকাল জেফরি। কক করে চোখ রাখল সাইটে। ডোবায় আটকে পড়া গাড়িটার একটা জানালা খুঁজে নিল। কিন্তু ট্রিগারে চাপ দেবার আগেই বদলে গেল মনের ভাব। মাথা ঘুরিয়ে ডানের লোকটার দিকে তাকাল সে। কেন যেন অসহ্য লাগছে লোকটাকে, ঘৃণায় রি রি করছে দেহ। জেফরির দৃষ্টি যেন অনুভব করল লোকটা। ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘অ্যাই, ওভাবে তাকিয়ে আছ কেন?’

‘চোপ, শালা!’ গাল দিয়ে উঠল জেফরি।

রাগে জ্বলে উঠল লোকটার চোখ। উঠে দাঁড়াল সে, এগিয়ে এল জেফরির দিকে। জেফরিও দাঁড়াল, ঘুরে মুখোমুখি হলো লোকটার।

‘তোমার সমস্যাটা কী?’ কাছে এসে জিজ্ঞেস করল সে।

জবাব না দিয়ে আচমকা নড়ে উঠল জেফরি। রাইফেলের বাট দিয়ে সরাসরি আঘাত হানল লোকটার মুখে। থ্যাচ করে . বিজাতীয় একটা শব্দ হলো, নাক থেঁতলে গেছে লোকটার। গলগল করে বেরিয়ে এল রক্ত। পেছনে উল্টে পড়ল সে। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত হলো না জেফরি, রাইফেল সোজা করে গুলি করল ভূপাতিত লোকটার বুকে। এক গুলিতে পরপারে পাঠিয়ে দিল তাকে।

‘হচ্ছেটা কী?’ খুব কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠল কে যেন, ঘটনাটা দেখতে পেয়েছে সে।

পাঁই করে সেদিকে ঘুরল জেফরি, আরেকটা গুলি ছুঁড়ল কণ্ঠস্বরের উৎসের দিকে। তীক্ষ্ণ একটা আর্তনাদ ভেসে এল ওখান থেকে। দূরে ঘাসের ভেতর থেকে দুটো ছায়াকে লাফিয়ে উঠতে দেখল জেফরি, বিপদ টের পেয়ে পালাবার চেষ্টা করছে। দ্রুত রাইফেল রিলোড করে তাদের উদ্দেশে আরও দুটো গুলি করল জেফরি। প্রথমটা মিস হলো, দ্বিতীয়টা আঘাত হানল একজনের কাঁধে। ছুটন্ত অবস্থায় আধপাক ঘুরে গেল লোকটা, আছড়ে পড়ল মাটিতে।

যেন পাগল হয়ে গেছে জেফরি, রক্তলাল চোখে তাকাচ্ছে প্রান্তরের দিকে। এগোতে থাকা গাড়িগুলো দেখে যেন মাথায় রক্ত চড়ে গেল তার। আবার রাইফেলে শেল ভরল, ঝুঁকে তুলে নিল নিহত লোকটার রাইফেল, এরপর দু’হাতে দুই রাইফেল নিয়ে উন্মাদের মত গুলি করতে থাকল গাড়িগুলোর দিকে।

ব্রেক কষে থেমে গেল গাড়িগুলো। আরোহীরা দরজা খুলে টপাটপ নেমে পড়ল, গাড়ির চেসিসের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে পাল্টা গুলি ছুঁড়ল। ঝাঁপ দিয়ে মাটিতে পড়ল জেফরি, রাইফেলে গুলি ভরতে শুরু করল। জানে, একাকী এতজনের সঙ্গে পেরে উঠবে না, তাও হাল ছাড়ল না। কী যেন হয়েছে ওর। মনের ভেতর চেপে বসেছে তীব্র প্রতিজ্ঞা—জীবন থাকতে ডোবার কাছ ঘেঁষতে দেবে না কাউকে।

.

আচ্ছন্নের মত টিফানির কোলে পড়ে আছে অ্যালি, কাদাপানির মাঝে। শঙ্কিতভাবে ওর শরীর চেক করছে টিফানি, দেখতে চাইছে কোথাও আঘাত লেগেছে কি না, রানাও ঝুঁকে পড়েছে ওর ওপর; কিন্তু সেসব কিছুই টের পাচ্ছে না ও। ওর সমস্ত মনোযোগ এখন ডোবার কিনারের রাইফেলধারী লোকটার ওপর। তার সাহায্যে ঠেকাতে চাইছে হামলাকারীদের। যদি লোকটা খুন হয়ে যায়, তা হলে নতুন কাউকে খুঁজে নেবে।

হঠাৎ সচকিত হলো অ্যালি। রাইফেলধারী লোকটার মাথায় অদ্ভুত কী যেন রয়েছে। প্রথমে খেয়াল করেনি, কিন্তু এখন টের পাচ্ছে। যেন একটা দ্বিতীয় দরজা… যে-দরজা দিয়ে ও লোকটার মাথায় অনুপ্রবেশ করেছে, তার চেয়ে আলাদা। দরজাটা খোলা। ওপারে কী আছে, জানে না অ্যালি। কিন্তু এ-জিনিস ও আগেও অনুভব করেছে, তবে কারও মাথার ভেতরে নয়। অনুভব করেছে ইউটাহ্-র মরুভূমিতে…. সেলফোনের সেই টাওয়ারটায় হাত রেখে!

দরজার ওপাশটা একটা সুড়ঙ্গের মত। মরুভূমির সুড়ঙ্গটা চলে গিয়েছিল মাটির তলায়, কিন্তু এখানকারটা লাফ দিয়ে উঠেছে ওপরে। আকাশের বুক চিরে চলে গেছে দূরে। সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ল অ্যালি, যেন বুলেটের মত ওর দৃষ্টি ছুটে চলল ওটার দৈর্ঘ্য ধরে। এক পলকের জন্যে একটা বিমান দেখতে পেল ও, তারপরেই দেখা দিল নতুন একটা সুড়ঙ্গ। এটা আবার নিচে নেমে গেছে। দ্বিতীয় সুড়ঙ্গটা অনেক লম্বা, বহুদূর গিয়ে মিলেছে প্রত্যন্ত এক জায়গায়।

মরুভূমির সেই সুড়ঙ্গের মাথায় একজন মানুষকে পেয়েছিল অ্যালি। তখন বোঝেনি তার অর্থ। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। ওর স্মৃতি ফিরে এসেছে। ও জানে, সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে কারা বসে আছে… ওখানে বসে তারা কী করে বেড়ায়।

ঠোঁটের কোণে এক টুকরো নিষ্ঠুর হাসি ফুটল অ্যালির। এবার ওদেরকেই ওদের ওষুধের একটু স্বাদ দেয়া যাক।

.

জানালা থেকে ফিরে ডেস্কের কাছে গেল চার্লটন, লিয়ারিকে ফোন করবে, অনেকক্ষণ হলো তার তরফ থেকে কোনও খবর আসেনি… এমন সময় চিৎকার-চেঁচামেচি ভেসে এল ওঅর্কফ্লোর থেকে। তাড়াতাড়ি আবার জানালার কাছে ছুটে গেল সে।

নিচের একটা স্টেশন থেকে ভেসে আসছে চিৎকার, ওটা জেমস কারভার নামে এক কন্ট্রোলারের, তবে সে চেঁচাচ্ছে না। চেঁচাচ্ছে অল্পবয়েসী এক তরুণী অ্যাসিসটেন্ট, স্টেশনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। কেন চেঁচাচ্ছে, তাও পরিষ্কার।

শুয়ে নেই কারভার, উঠে দাঁড়িয়েছে, কপাল থেকে খুলে ফেলেছে সব ইলেকট্রোড। সারা মুখ রক্তাক্ত, স্টেশনের লাল আলোয় মনে হচ্ছে মুখে রং মেখে দাঁড়িয়ে আছে একটা ভূত। এক সেকেণ্ড লাগল রক্তের উৎসটা বুঝতে। শান্তভাবে, যেন বুঝেশুনে, আঙুলের নখ দিয়ে মুখে আঁচড় কাটছে কারভার। হাতের পেশি শক্ত হয়ে ওঠা দেখে বোঝা গেল, আঁচড়গুলো কাটছে সর্বশক্তিতে—তুলে আনছে চামড়া-মাংস… সৃষ্টি করছে গভীর ক্ষত। যেন নিজের মুখটাই খুবলে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করছে লোকটা।

হঠাৎ করেই যেন অ্যাসিসটেন্টকে দেখতে পেল কারভার। দু’চোখে ফুটে উঠল খুনে দৃষ্টি। মেয়েটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করল সে। উল্টো ঘুরে প্রাণপণে দৌড় দিল অ্যাসিসটেন্ট। তাকে ধাওয়া করল কারভার।

চার্লটন ইতিমধ্যে ছুটতে শুরু করেছে। অফিসের দরজা খুলে ল্যাণ্ডিঙে বেরিয়ে এল, একেক লাফে দু’তিনটা করে ধাপ পেরুল সিঁড়ির, কয়েক সেকেণ্ডের ভেতর নেমে এল ওঅর্কফ্লোরে।

তরুণী অ্যাসিসটেন্ট এদিকেই ছুটে আসছে, তাকে পাশ কাটাল চার্লটন, পিছু পিছু ছুটে আসা কারভারকে লক্ষ্য করে রাগবি খেলোয়াড়ের মত ঝাঁপ দিল, তাকে জাপটে ধরে আছড়ে ফেলল মেঝেতে। হুঁক করে শ্বাস বেরিয়ে গেল কারভারের, সেকেণ্ডের ভগ্নাংশের জন্যে অচল হয়ে গেল, সেই সুযোগে তার গায়ের ওপর চড়ে বসল চার্লটন। শরীর মোচড়াল কারভার, মুক্তি পেতে চাইছে, কিন্তু তাকে মেঝেতে আটকে রাখল সে।

‘কী হয়েছে ওর?’

মুখ তুলল চার্লটন। নিজের স্টেশনের দরজায় বিস্মিত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল শেফার্ড, প্রশ্নটা করেছে সে-ই।

জবাব দেবার আগেই অকস্মাৎ নিস্তেজ হয়ে পড়ল কারভার। মুহূর্তকাল পরেই যেন ফিরে এল বাস্তবে। টের পেল কী অবস্থা নিজের। ব্যথায় কাতরে উঠল সে, দু’হাত তুলে চেপে ধরল ক্ষত-বিক্ষত মুখ।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল মাইকেল। মনে হলো সাহায্য করতে আসছে, কিন্তু থমকে গেল কয়েক কদম এগিয়ে। চোখের দৃষ্টি বদলে গেল তার। মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ দেখল। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ওঅর্কফ্লোরের মাঝখানে, একটা চওড়া স্টিলের পিলারের ওপর। সম্মোহিতের মত এগিয়ে গেল ওদিকে। সামনে গিয়ে পিলারটা দু’হাতে আঁকড়ে ধরল সে, ভঙ্গিটা দেখে মনে হলো, মাথা দিয়ে কোনও কাঠের তক্তা ভাঙতে চলেছে একজন কারাতে মাস্টার।

আঁতকে উঠল চার্লটন। চেঁচাল, ‘না, মাইকেল!’

কে শোনে তার কথা! ঊর্ধ্বাঙ্গ পেছনদিকে হেলিয়ে দিল মাইকেল, এরপর পেণ্ডুলামের মত মাথা দুলিয়ে সজোরে আঘাত হানল পিলারের গায়ে-কপাল নয়, পুরো মুখমণ্ডল দিয়ে। স্টিলের ওপর কপাল, নাক আর থুতনির সংঘর্ষের বিশ্রী আওয়াজ হলো, থেবড়ে গেল মুখটা। যখন সোজা হলো মাইকেল, তার সারা মুখে রক্তের ধারা বইছে। ব্যথাতুর কোনও আওয়াজ করল না সে, বরং আবারও পেছনে হেলালো দেহ… আবারও পুরো মাথা দিয়ে আঘাত করল পিলারের গায়ে। এবারের আওয়াজটা হলো ভেজা, ভোঁতা। জ্ঞান হারিয়ে ফেলল মাইকেল, রক্তমাংসের তালে পরিণত হওয়া চেহারা নিয়ে লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে।

এবার বাকি সব কন্ট্রোলার বেরিয়ে এসেছে তাদের স্টেশন থেকে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ওঅর্কফ্লোরে কর্মরত অ্যাসিসটেন্ট আর টেকনিশিয়ানরা। জমে গেছে তারা, বিস্ফারিত চোখে মাইকেলের কাণ্ড দেখছে… কিন্তু কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছে না।

কারভারের গায়ের ওপর এখনও বসে আছে চার্লটন। মাইকেল পড়ে যেতেই তার দিকে ঘুরে গেল সবার চোখ, দৃষ্টিতে নীরব জিজ্ঞাসা। অসহায় বোধ করল চার্লটন, দেবার মত কোনও জবাব নেই তার কাছে। ফ্যাল ফ্যাল করে সবার মুখের দিকে পালা করে তাকাল… আর তারপরেই একটা পরিবর্তন এল তার মাঝে। চেহারা থেকে মুছে গেল অসহায়ত্ব, সেখানে দেখা দিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞার ছাপ। কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।

কারভারকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল চার্লটন। গলা চড়িয়ে বলল, ‘এখান থেকে বেরিয়ে যাও সবাই। এক্ষুণি! এটা আমার হুকুম।’

হুড়োহুড়ি পড়ে গেল জটলার মাঝে। ভয় পেয়ে গিয়েছিল সবাই, তাদেরকে চলে যেতে বলে যেন দয়া দেখিয়েছে চার্লটন। ত্রিশ সেকেণ্ডের ভেতর খালি হয়ে গেল ওঅর্কফ্লোর। গুরুতর আহত মাইকেল আর কারভারকেও সরিয়ে নিয়ে গেল। বিশাল বিল্ডিংটায় একা হয়ে গেল চার্লটন।

ঘুরে গেল সে। সিঁড়ি ধরে উঠে গেল তার অফিসের ল্যাণ্ডিঙে, যাতে ওপর থেকে পুরো ওঅর্কফ্লোরটা দেখতে পায়। নিচে নজর বোলাল সে, দৃষ্টি আটকে গেল দূর প্রান্তের একটা ছায়ার ওপর। জিনিসটা একটা ফিউয়েল ট্যাঙ্ক—ওখানে বিল্ডিঙের জেনারেটর ও ফার্নেস চালাবার জন্যে তরল জ্বালানি রাখা হয়। ট্যাঙ্কটা বিশাল—আঠারো চাকার ট্যাঙ্কার ট্রাকের ট্যাঙ্ক ওটা, সি-ফাইভ কার্গো বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয়েছে। মোটা মোটা হোসের সাহায্যে বিল্ডিঙের হিটিং ও পাওয়ার সিস্টেমের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ট্যাঙ্কটার।

সিঁড়ি দিয়ে আবারও নিচে নেমে এল চার্লটন। দৌড়াতে শুরু করল ট্যাঙ্কের দিকে। কাছে যেতে ভালমত দেখতে পেল, হোসগুলো—ট্যাঙ্কের আউটফ্লো পোর্টের সঙ্গে হেভি-ডিউটি ক্ল্যাম্প দিয়ে আটকানো। বিশ ফুট দূরে রয়েছে একটা ইউটিলিটি শেলফ। ওদিকে এগিয়ে গেল সে। তাক হাতড়ে খুঁজে নিল একটা রেঞ্চ, সেটা নিয়ে একটা হোসের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। রেঞ্চটা অ্যাডজাস্ট করে রসাল ক্ল্যাম্পের বোল্টে, ঘোরাতে শুরু করল।

ধীরে ধীরে ঢিলে হলো ক্ল্যাম্প, এক পর্যায়ে খুলে গেল হোসটা। আউটফ্লো পোর্ট দিয়ে তীব্র বেগে বেরিয়ে এল গ্যাসোলিন, আছড়ে পড়ল ওঅর্কফ্লোরের মেঝেতে। ঝাঁঝালো গন্ধে চার্লটনের নাক আর ফুসফুস জ্বালাপোড়া করে উঠল, চোখ দিয়ে বেরিয়ে এল পানি। কোথায় যেন একটা অ্যালার্ম বেজে উঠল। কিন্তু কোনোকিছুর পরোয়া করল না সে, সংকল্পে অটল রইল।

হাত থেকে রেঞ্চ ফেলে দিয়ে উল্টো ঘুরল চার্লটন, হাঁটতে শুরু করল। ফিউয়েলের ধারায় পিঠ ভিজে গেল তার, অথচ সরে যাবার কোনও চেষ্টা করল না। ইতিমধ্যে মেঝের অনেকখানি ভিজে গেছে, গ্যাসোলিনের স্তর পড়ে গেছে… ধীরে ধীরে তরল গ্যাসোলিন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ওঅর্কফ্লোরে। ছপ্ ছপ্ করে সেই গ্যাসোলিন মাড়িয়ে এগিয়ে চলল চার্লটন। কাঁচঘেরা স্টেশনগুলো পেরুতে শুরু করল শীঘ্রি। প্রথম কয়েকটার দিকে ফিরে তাকাল না, তার গন্তব্য সে ঠিক করে ফেলেছে।

মাইকেলের স্টেশনের সামনে পৌঁছে একটু থামল চার্লটন, তারপর আবার পা বাড়িয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে। জানে, যা সে খুঁজছে, তা এখানে পাওয়া যাবে—একজন ধূমপায়ীর স্টেশনে। ছোট্ট কামরাটার কোনায় একটা ডেস্ক রয়েছে, সরাসরি ওটার কাছে চলে গেল সে। ঝুঁকে ওপরের ড্রয়ারটা খুলল। ভেতর থেকে উঁকি দিল এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা গ্যাস লাইটার।

কয়েক মিনিট পর প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে গেল ওঅর্কফ্লোরের বিল্ডিং।

গোলাগুলি থেমে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে, আশপাশে হাজির হওয়া গাড়িগুলোর আওয়াজও মিলিয়ে গেছে ধীরে ধীরে কোনও এক বিচিত্র কারণে হামলা ও লড়াই থামিয়ে চলে গেছে অস্ত্রধারী লোকগুলো। অ্যালির দিকে তাকিয়ে আছে রানা; বুঝতে পারছে, এসব ওরই কীর্তি। টিফানির কোলে ধ্যানমগ্নের মত পড়ে আছে মেয়েটা, কোথায়-কাকে বশ করছে কে জানে। রহস্যটা টিফানিও আঁচ করতে পেরেছে। রানাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ও কি…’

‘কোনও সন্দেহ আছে?’ পাল্টা জিজ্ঞেস করল রানা।

ছপাৎ করে কাছে কোথাও ছিটকে উঠল পানি। কেউ একজন নেমে এসেছে ডোবায়। ঝট্ করে সোজা হলো রানা, শটগানের ব্যারেল বের করল ভাঙা জানালা দিয়ে। আর তখুনি চোখ খুলল অ্যালি।

‘না, গুলি কোরো না,’ বলে উঠল সে। ‘ও আমাদের কোনও ক্ষতি করবে না।’

‘কে?’

‘যে আসছে।’ নিঃশব্দে হাসল অ্যালি। ‘রিল্যাক্স, রানা। বিপদ কেটে গেছে। এবার সত্যি সত্যি ব্যাপারটার ইতি টেনেছি আমি।’

‘কীভাবে?’

জবাব দিল না অ্যালি। ওর মুখের হাসিটা চওড়া হলো কেবল।

‘হ্যালো?’ পুরুষকণ্ঠের ডাক ভেসে এল বাইরে থেকে। ‘আপনারা ঠিক আছেন?’

‘হ্যাঁ,’ গলা চড়িয়ে বলল রানা। ‘কিন্তু কে আপনি? এখানে কী চান? ‘

‘আমার নাম জেফরি ফলসাম। আমি আপনাদের সাহায্য করতে এসেছি…’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *