উনিশ
সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে জাগল মাইকেল শেফার্ড। প্রাতঃকৃত্য সারল, স্টিম শাওয়ার নিল, এরপর বেরিয়ে এল বেডরুমের ব্যালকনিতে—সকালের প্রথম সিগারেটটা উপভোগ করার জন্যে। ওর বেডরুমটা উপত্যকার দিকে মুখ করা, পরিষ্কার চোখে পড়ছে তুষারে ছাওয়া পাহাড়ি দেয়াল, বাতাস মাথা কুটছে সে-দেয়ালে। ওপরে, প্রায়-আলোকিত হয়ে ওঠা আকাশের গায়ে মিটমিট করছে রাতের শেষ কিছু নক্ষত্র।
প্যাটিয়োর দরজা খুলে যাবার আওয়াজ পেল সে। নিচে তাকিয়ে অল্পবয়েসী মেয়েদুটোকে বেরিয়ে আসতে দেখল ওখান দিয়ে—খিলখিল করে হাসছে, ফিসফাস করছে পরস্পরের কানে। জোরে কথা বললেও অবশ্য কিছু যেত- আসত না। বিদেশি একটা ভাষায় কথা বলে এরা, মাইকেল তার বিন্দুবিসর্গও বোঝে না। ওঁদের আসল নামও জানা নেই ওর… কেউ জানায়নি… নিজের সুবিধের জন্য দুটো ফুলের নামে ডাকে ওদেরকে—ডেইজি আর টিউলিপ। মেয়েদুটো কোনও আপত্তি করেনি তাতে।
সুইমিং পুলের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ডেইজি আর টিউলিপ, অপেক্ষা করছে পানির ওপর থেকে থারমাল কাভার সরে যাবার জন্যে। দু’জনেরই পরনে সংক্ষিপ্ত টু-পিস বিকিনি—শরীরের ঐশ্বর্যগুলো ঢেকে রাখার বদলে প্রকট করে তুলেছে আরও। সুইমিং পুলের আবরণ সরে যাবার ফাঁকে নিজেরাও নিরাবরণ হয়ে গেল। নিখুঁত দেহবল্লরী—ভোরের আলোয় ভিনাসের মূর্তির মত লাগছে ওদেরকে। কাভার সরে যাওয়ায় বাষ্প উঠতে শুরু করেছে পুলের উষ্ণ পানি থেকে, সাদা মেঘ যেন ঘিরে ধরছে নগ্ন দুই নারীকে। একেবারে শেষ মুহূর্তে মুখ তুলে মাইকেলের দিকে তাকাল ওরা, আমন্ত্রণের ভঙ্গিতে কটাক্ষ হানল, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পানিতে। কবজিতে বাঁধা ঘড়ি দেখল মাইকেল, শিফট শুরু হতে এখনও আধঘণ্টা বাকি, অনায়াসে যোগ দেয়া যায় ওদের সঙ্গে।
জীবন যে কত বিস্ময়কর মোড় নিতে পারে, তা ভাবা যায় না। মাত্র দেড় বছর আগে মাইকেল ছিল এক সামান্য লজিস্টিকস্ স্পেশালিস্ট… সোজা কথায় গুদামের কর্মচারী… রামাদি-র এক সাপ্লাই ডিপোয় কাজ করত ও। গুদামের বড় বড় মাকড়সা মারার পাশাপাশি ওর দায়িত্ব ছিল ইরাকে নিয়োজিত আমেরিকান বেসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে টয়লেট পেপার, পটেটো চিপস্ আর কফি বিতরণ করা। সত্যিকার সামরিক বাহিনী ইরাক ছাড়ার পরেও এরা রয়ে গিয়েছিল ওখানে, দেশটার সম্পদ শুষে নেবার জন্যে। প্রতি সকালে পার্টিকেল-বোর্ডে তৈরি ছোট্ট হাউজিং ইউনিটে ঘুম ভাঙত ওর, অনুভব করত হতাশা। বয়স তেইশ পেরিয়ে চব্বিশের দিকে চলেছে; ওহায়য়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া ডিপ্লোমাটা কয়েক হাজার মাইল দূরে, রচেস্টারে, নিজের বাড়ির দেয়ালে ফ্রেমবন্দি হয়ে শোভা পাচ্ছে, আর সে কিনা কলুর বলদের মত খেটে মরছে ইরাকের তপ্ত মরুভূমিতে! ভবিষ্যৎ কী তার? এভাবে লক্ষ্যহীনভাবে কতদিন ঘুরপাক খাবে সে?
পরিস্থিতিটা বদলে গেল পনেরো মাস আগে। রাতের বেলা ওর দরজার তলা দিয়ে একটা বিজ্ঞপ্তি ঢুকিয়ে দিয়ে গেল কেউ। তাতে লেখা:
সুবর্ণ সুযোগ!
লোভনীয় বেতন।
চমৎকার আবাসস্থল (মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে)।
পরিবার-পরিজন থেকে অন্তত পাঁচ বছর বিচ্ছিন্ন থাকার মত মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
যদি রাজি থাকেন তো যোগাযোগ করুন নিচের ঠিকানায়।
বিঃদ্রঃ কাজে যোগ দেবার আগে শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাশ করতে হবে।
সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো না মাইকেলের। ইরাকে দম আটকে আসছিল ওর, এ-অবস্থায় দূরে কোথাও থাকা- খাওয়াসহ ভাল বেতনের একটা কাজের সন্ধান পেলে সেটা অগ্রাহ্য করার প্রশ্নই আসে না। একমাত্র সমস্যা হলো, পাঁচ বছর পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। তবে সেটাও বড় কোনও সমস্যা নয়। উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের কারণে বহুদিন আগেই বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাকে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। বছর পাঁচেক কারও দেখা-সাক্ষাৎ না হলে কেউ উতলা হয়ে উঠবে না, বরং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। কাজেই পরদিনই বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া ঠিকানায় গিয়ে হাজির হলো সে।
জায়গাটা ওদেরই কম্পাউণ্ডের শেষ মাথায়। পরিত্যক্ত একটা হ্যাঙার—নোংরা, বিবর্ণ, মেঝেটা শুকিয়ে থাকা তেল- গ্রিজের দাগে ভরা। পেছনের কামরায় যাবার একটা দরজা রয়েছে, কেউ ঢুকতে-বেরুতে গেলেই কামরার ভেতরটা দেখতে পাচ্ছিল মাইকেল, সেটা নানা ধরনের ভারী, হাই-এণ্ড মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টে ভরা। এম.আর.আই. মেশিন জাতীয় একটা যন্ত্র চিনতেও পেরেছে বলে মনে হলো।
তবে পেছনের কামরায় যাবার আগে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। হ্যাঙারের ভেতরে চেয়ার-টেবিল রাখা হয়েছে, সেখানে বসে পরীক্ষা দিতে হলো ওকে—রিক্রুটিং প্রসেসের ভেতর ওটাই ছিল সবচেয়ে অদ্ভুত ধাপ। না, প্রশ্নগুলো জটিল ছিল না। সত্যি বলতে কী, ওসব প্রশ্নের সঠিক বা ভুল কোনও জবাবও হয় না। নিজের মত করে উত্তর দিতে হয়। যেমন, তোমার বাড়িতে আগুন লেগেছে, এবং তোমার পোষা কুকুর ভেতরে আটকা পড়েছে। তুমি কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুকুরটাকে উদ্ধার করবে? অথবা… তোমার প্রিয় কোনও মানুষ নিশ্চিতভাবে মরতে চলেছে। যদি বলা হয়, তার বদলে আরেকজনকে সেখানে পাঠালে তোমার প্রিয় মানুষটি বেঁচে যাবে, তুমি কি কাউকে পাঠাতে রাজি হবে?
টানা দু’দিন পরীক্ষা দিতে হলো এ-ধরনের প্রশ্নের ওপর। এরপর ওকে আলাদা করে নেয়া হলো বাকি সব প্রার্থীদের কাছ থেকে। বিশাল হ্যাঙারের এক কোণে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে বসানো হলো। বছর ত্রিশেক বয়সের এক যুবক বসল ঠিক ওর পেছনে, আরেকটা চেয়ার নিয়ে। একটা খাম দেয়া হলো ওকে। খাম খুলে বোকা বনে গেল। না, কোনও প্রশ্ন নয়। সাদা কাগজে লেখা হয়েছে কিছু নির্দেশ… অদ্ভুত সব নির্দেশ।
আগামী পাঁচ মিনিট গভীর মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করো, জীবনে সবচেয়ে খারাপ কোন্ কাজটা করেছ তুমি, যেটার কথা কেউ জানে না।
ভেবে দেখো, তুমি কি কখনও তোমার খুব কাছের কোনও মানুষকে ভয়ঙ্কর কষ্ট দিয়েছ?
এর কোনও অর্থ খুঁজে পেল না মাইকেল। এ-ধরনের নির্দেশ দেবার মানে কী! ও যদি নির্দেশ না মানে… বসে বসে মাথার ভেতর গানের সুর ভাঁজে… সেটা কি আর জানতে পারবে ওরা? বাস্তবে অবশ্য তেমন কিছু করল না ও। কৌতূহলের বশে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করল, সবক’টা নির্দেশ—মনে মনে স্মরণ করল ওর জীবনের সবচেয়ে কালো অধ্যায়গুলো। অবাক ব্যাপার, কেন যেন ক্লান্তি ছেঁকে ধরল ওকে। কখনও কখনও টনটন করে উঠল মাথা, কিংবা কপালের দু’পাশ শিরশির করে উঠল।
এক ঘণ্টা চলল এই পরীক্ষা। এরপর পেছনে বসা যুবক উঠে দাঁড়াল। পকেট থেকে একটা সেলফোন বের করে কাকে যেন রিং দিল, কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল হ্যাঙার থেকে। বিশ মিনিট পর পেছনের কামরায় ডাক পড়ল মাইকেলের। পরের চার ঘণ্টা জুড়ে মেডিক্যাল চেকআপ করা হলো ওর—রক্ত-পরীক্ষা, এক্স-রে আর এম.আর.আই. থেকে শুরু করে যত ধরনের টেস্ট করা সম্ভব, সব। দিনশেষে… সন্ধ্যা যখন নামি নামি করছে, ওকে হ্যাঙারের লাগোয়া একটা অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো। সামনে বসে রয়েছে মাঝবয়েসী দু’জন লোক। চেহারা, গলার স্বর… সবই ভীষণ রকম রসকষহীন।
‘চাকরিটা যদি তুমি নাও,’ বলল তাদের একজন, ‘সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটস নামে একটা কোম্পানির হয়ে কাজ করতে হবে। কিছু জানো ওদের সম্পর্কে?’
মাথা ঝাঁকাল · মাইকেল। ‘হ্যাঁ। নামকরা ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর।’
‘একটা ড্রাগের তিনটে ডোজ নিতে হবে তোমাকে। তার প্রথমটা… ছোট্ট একটা ট্যাবলেট… নিতে হবে আজ রাতেই।’
‘আমাকে কি ড্রাগ ট্রায়ালের জন্যে বাছাই করা হয়েছে?’
‘না।’
‘কী করে ড্রাগটা?’
‘ক্ষতিকর কিছু নয়। ওটার সত্যিকার উদ্দেশ্য তোমাকে পরে জানানো হবে। আর বিজ্ঞপ্তিটা আশা করি ভালমত পড়েছ? পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ব্যাপারটাতে আমরা খুবই সিরিয়াস। কোনও ফোন থাকবে না তোমার। ইন্টারনেট অ্যাকসেস পাবে না। এমনকী চিঠি পাঠাবারও কোনও সুযোগ থাকবে না তোমার।
লোভনীয় বেতনটা কত, জানতে পারি?’
‘বছরে দু’লাখ ডলার। চাইলে পুরোটাই জমাতে পারবে, কারণ তোমার থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা আমরা করছি। একটা পাই-পয়সাও খরচ হবে না তোমার।’
নিচু সুরে শিস দিয়ে উঠল মাইকেল। হেলান দিল চেয়ারে। জিজ্ঞেস করল, ‘কী ধরনের চুক্তিপত্র সই করতে হবে আমাকে?’
‘কিছুই না,’ কাটা কাটা গলায় বলল লোকটা। ‘যে- কাজের জন্যে তোমাকে বাছাই করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গোপনীয়, মি. শেফার্ড। এতটাই গোপন যে, কাজটার তুচ্ছাতিতুচ্ছ তথ্যও যদি তুমি বাইরের কাউকে জানাও, সঙ্গে সঙ্গে খুন করা হবে তোমাকে। তেমন কিছু ঘটলে আমরা চাই না কোনও পেপার ট্রেইল থাকুক।’
মাইকেলের মনে হলো, ঠাট্টা করছে লোকটা। এসব কথা এভাবে কেউ সরাসরি বলে নাকি! কিন্তু লোকটার হিমশীতল চোখের দিকে তাকাতেই থমকে গেল। বুঝল, এক বিন্দু মিথ্যে বলেনি সে।
চুপচাপ কয়েক মিনিট বসে রইল মাইকেল। তারপর পিঠ সোজা করে বসল। বলল, ‘প্রথম ট্যাবলেটটা দিন।’
মজার একটা ঘটনা ঘটল সে-রাতে। নিজের হাউজিং ইউনিটে ফেরার খানিক পরেই এক ছেলে এসে মোটাসোটা একটা খাম দিয়ে গেল ওকে। খাম থেকে বেরুল একটা পুরু ফোল্ডার। মাইকেল ভাবল, জরুরি কোনও কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে বোধহয়। কিন্তু ফোল্ডারের পাতা উল্টে চক্ষু চড়কগাছ। অন্তত শ’খানেক রূপসী তরুণীর প্রোফাইল জড়ো করা হয়েছে ওর ভেতর। সবার বয়স আঠারো থেকে বিশের মাঝে। তাদের দৈহিক বর্ণনা, শখ, পছন্দ-অপছন্দ, ইত্যাদির তালিকা করা হয়েছে নিখুঁতভাবে। সঙ্গে রয়েছে পাকা হাতে তোলা রঙিন ছবি—কাপড়-পরা, এবং কাপড়-ছাড়া… দু’রকমই। প্রতিটা মেয়েই যেন একেকটা ডানাকাটা পরী। নাম দেয়া হয়নি কারও, শুধু দেয়া হয়েছে পরিচিতিমূলক কোড নাম্বার।
একটা চিরকুট পাওয়া গেল ফোল্ডারের সঙ্গে। তাতে লেখা: এখান থেকে দু’জনকে বেছে নাও। আগামীকাল সকাল আটটার ভেতর আমাদের রিক্রুটিং অফিসে ওদের কোড নাম্বার জানিয়ে দিয়ো।
পরের সন্ধ্যায় একটা সি-সেভেনটিন ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফটে তোলা হলো মাইকেলকে। অজানার উদ্দেশে উড়াল দিল বিমানটা। যাত্রাপথের প্রায় পুরো সময়টাই ঝিমোল মাইকেল, কিংবা ঘুমাল। জেগে উঠল অচেনা এক কম্পাউণ্ডে ল্যাণ্ড করার পর। সেই থেকে এই কম্পাউণ্ডেই আছে ও, এটাই হয়ে উঠেছে ওর ঘরবাড়ি। জায়গাটা ঠিক কোথায়, তা আজও জানতে পারেনি। চারপাশের দৃশ্য দেখে মনে হয়, কানাডার উত্তরে কোথাও হতে পারে। পুরোপুরি পাহাড়ি এলাকা, উঁচু উঁচু পাহাড়-পর্বত যেন বেড়ার মত ঘিরে রেখেছে ওদের কম্পাউণ্ডকে। সারা বছর বরফে ছেয়ে থাকে পাহাড়গুলো… বিরাজ করে কনকনে ঠাণ্ডা।
বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে রাস্তাঘাটের কোনও সংযোগ নেই কম্পাউণ্ডে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে কেবল ছোট্ট একটা এয়ারস্ট্রিপ—মাঝারি আকারের বিমান ওঠানামা করে ওখানে, নিয়ে আসে যাত্রী ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল। এয়ারস্ট্রিপকে সাপোর্ট দেবার জন্যে আশপাশে গড়ে তোলা হয়েছে হ্যাঙার, টাওয়ার ও কয়েকটা বিল্ডিং। সরু একটা রাস্তা আছে কম্পাউণ্ডের ভেতর-এয়ারস্ট্রিপ থেকে শুরু হয়ে গাছপালার মাঝ দিয়ে এগিয়েছে; চক্রাকারে ঘুরে এসেছে পুরো উপত্যকার সীমানা, পথে সংযোগ ঘটিয়েছে পাহাড়ের দিকে মুখ করে বানানো ডজনখানেক বাড়ির মাঝে। মোটামুটি একশো গজ তফাতে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িগুলো; এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে উঁচু গাছপালার কারণে প্রাকৃতিক দেয়াল থাকে দু’পাশে… এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি দেখা না যায়।
বাতাস দিক বদলেছে। সুইমিং পুলের ওপর থেকে সরে যাচ্ছে বাষ্পের মেঘ। ডেইজি আর টিউলিপকে দেখতে পেল মাইকেল—জলকেলিতে মত্ত। ঘাড় ফিরিয়ে ওর দিকে তাকাল টিউলিপ। হাতছানি দিয়ে ডাকল। মৃদু হাসল মাইকেল, বড় করে একটা টান দিল সিগারেটে।
মাইকেল এখানে পৌঁছুবার পরদিন এসেছে মেয়েদুটো। এরাই যে সেই বাছাই করা মেয়ে, তা প্রথমে বুঝতে পারেনি, ভেবেছিল ওরা ওরই মত দু’জন টেস্ট সাবজেক্ট। ফিরে তাকায়নি ওদের দিকে। ওর ভেতর তখন মুগ্ধতা খেলা করছিল বাড়িটা নিয়ে। বিজ্ঞপ্তিতে চমৎকার আবাসস্থলের কথা বলা হয়েছিল, তাই বলে সেটা যে এত দারুণ হবে, ভাবতে পারেনি। একদম নতুন একটা বাড়ি, দেয়ালের পেইণ্ট আর নতুন কার্পেটের গন্ধ তখন পর্যন্ত মিলিয়ে যায়নি। আরাম- আয়েশের যে-ধরনের ব্যবস্থা আছে, তা শুধুমাত্র কোটিপতির বাড়িতে দেখা যায়। হিটেড পুল, হট টাব, এমনকী প্যাটিয়োর টাইলসের তলায়ও বসানো আছে ইলেকট্রিক্যাল কয়েল, যাতে তীব্র শীতেও প্যাটিয়ো ও সুইমিং পুলের আনন্দ উপভোগ করতে অসুবিধে না হয়। অত্যাধুনিক সারাউণ্ড সাউণ্ড সিস্টেম-সহ একটা হোম থিয়েটার আছে বাড়িতে। সওনা আছে। বিশাল কিচেনে রয়েছে সাব-যিরো ফ্রিজ। কিচেন কাউন্টারের ওপর বসানো আছে একটা টাচ-ডিসপ্লে, তাতে হরেক রকমের খাবারদাবারের তালিকা। সেখান থেকে একটা হোক, বা দশটা হোক, খাবারের অর্ডার দিলেই আধঘণ্টার মধ্যে তা চলে আসে। তার জন্যে কোনও পয়সা দিতে হয় না। নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিল না মাইকেল। এতসব খাতিরদারির বিনিময়ে কী করতে হবে ওকে, বুঝতে পারছিল না।
প্রথম কয়েক সপ্তাহ সেভাবেই কাটল। কাজের ব্যাপারে পরিষ্কার কোনও ধারণা পাওয়া গেল না। চার্লটন নামে বুড়োমত একটা লোক আসত মাঝে মাঝে, মাইকেলকে কম্পাউণ্ডে থাকার নিয়মকানুন জানাত, প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা উপদেশ দিত… কিন্তু সেসব থেকে কিছুই বোঝা যায় না। চার্লটন তাকে জানিয়েছিল, ড্রাগের আরও দুটো ডোজ নিতে হবে ওকে—যথাসময়ে ওষুধটা পাঠিয়ে দেয়া হবে। মাইকেল যদি অ্যালকোহল বা মারিজুয়ানা ব্যবহার করতে চায় তো কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই—দুটোই যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে বাড়িতে; তবে নেশাটা মাত্রাতিরিক্ত করা চলবে না। পরিমিত পরিমাণ অ্যালকোহল বা মারিজুয়ানা ব্যবহার করলে ড্রাগ ট্রায়াল বা আসল কাজটায় কোনও প্রভাব পড়বে না।
‘সেই আসল কাজটা কী?’ সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল মাইকেল।
‘ও-নিয়ে এখুনি মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই,’ বলেছে চার্লটন। ‘কয়েক সপ্তাহ পরের ব্যাপার ওটা। আপাতত নিজেকে মানিয়ে নাও নতুন পরিবেশের সঙ্গে। সময়টা উপভোগ করো। বাইরে বেরুলে মার্ক করা হাইকিং ট্রেইল পাবে, কাছের বিভিন্ন পাহাড়ে চড়া যায় ওগুলো ধরে। মেয়েদুটোকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারো। যদি প্রতিবেশীদের কারও সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, কুশল বিনিময় করতে পারো, কিন্তু গপ্পো জুড়তে যেয়ো না। তোমার মত একই কাজে এসেছে ওরা, কিন্তু সেটা নিয়ে কোনও ধরনের আলোচনা করা যাবে না। ওদেরকেও একই নির্দেশ দিয়ে এসেছি আমি।’
সেদিনকার আলোচনা চার্লটন শেষ করেছিল কিছুটা হেঁয়ালির সুরে। বলেছিল, ‘বেজমেন্টে একটা ল্যাণ্ডফোন আছে, নিশ্চয়ই দেখেছ? ওটা আমার অফিসের সঙ্গে সরাসরি কানেক্ট করা, আর কোথাও নয়। রিসিভার তুলে বোতাম চাপলেই রিং চলে যাবে আমার কাছে। যদি কোনোকিছু জানার থাকে… যদি অস্বাভাবিক কিছু ঘটে… নির্দ্বিধায় কল কোরো আমাকে।’
কথা শেষ করে চলে গিয়েছিল লোকটা।
পরের কয়েক সপ্তাহ চার্লটনের পরামর্শ মোতাবেক চলেছে মাইকেল। মাথা থেকে সমস্ত প্রশ্ন-ট্রশ্ন ঝেড়ে ফেলে উপভোগ করেছে সময়টা। শুরু থেকেই টের পেয়েছিল, কথা বলার সঙ্গী হিসেবে ডেইজি আর টিউলিপকে পাঠানো হয়নি ওর কাছে, পাঠানো হয়েছে স্রেফ মনোরঞ্জনের জন্যে। অচেনা এক ভাষায় কথা বলে দু’জনে, সম্ভবত পূর্ব ইয়োরোপের কোনও দেশের ভাষা… রোমানিয়ান হতে পারে—মেয়েদুটোর সঙ্গে টিভিতে দেখা রোমানিয়ান জিমন্যাস্টদের মিল পায় মাইকেল। অবশ্য, যে-দেশ থেকেই আসুক না কেন, তাতে কী এসে যায়? বাক্য বিনিময় ছাড়াও ভাবের আদানপ্রদান হতে পারে, বিশেষ করে ওদের সম্পর্কটার সিংহভাগ যেহেতু শরীরী ভাষায় সম্পন্ন হয়।
ডেইজি আর টিউলিপকে নিয়ে খুব একটা অসুবিধে হয়নি মাইকেলের। সময় কাটানোর জন্যে নানা রকম কায়দা বের করে নিয়েছিল—ড্রিঙ্ক করা, তাস খেলা, হাইকিঙে বেরুনো, কখনও বা হোম থিয়েটারে তিনজনে মিলে সিনেমা দেখা… সবশেষে রাতে এক বিছানায় শোয়া—আদিমতম খেলায় মেতে ওঠা। আক্ষরিক অর্থেই ওর জীবন হয়ে উঠেছিল স্বপ্নের মত।
স্বপ্নিল জীবনটায় ছন্দপতন ঘটল একদিন। চার্লটন যার আভাস দিয়ে গিয়েছিল; সেটা ঘটে গেল হঠাৎ করে। এতই সাদামাটাভাবে ঘটল; শুরুতে ব্যাপারটা ধরতেই পারল না মাইকেল। তিন নম্বর ট্যাবলেটটা খাওয়ার মাসখানেক পরের ঘটনা সেটা। ততদিনে ওষুধটার কথা ভুলে গেছে ও, আরাম- আয়েশের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, অন্য কোনোকিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। ঘটনাটা যখন ঘটল, তখন ও নেশার ঘোরে—মারিজুয়ানা টেনে বিছানায় পড়ে আছে। আচমকা ভারী হয়ে এল মাথা, মনে হলো দৃষ্টিভ্রম দেখা দিয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি দৃষ্টিভ্রমও নয়… কিছু দেখতে পাচ্ছে না, শুধু শুনতে পাচ্ছে দু’জন মানুষের কণ্ঠ। ভাল করে খেয়াল করতেই চিনতে পারল কণ্ঠদুটো—ডেইজি আর টিউলিপ… বরাবরের মত তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে চলেছে। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক এ-কারণে যে, ওরা কেউই কামরায় নেই। হ্যালিউসিনেশন হচ্ছে—এই ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিল মাইকেল, তবে মনে একটু খুঁতখুঁতানি রয়ে গেল। নেশা করছে বহুদিন, কিন্তু এ-ধরনের ব্যাপার আগে কখনও হয়নি ওর। অবশ্য কখনও হয়নি বলে এখন হবে না, এমনটা ভাবাও ঠিক নয়। সবকিছুরই প্রথম বলে একটা কথা আছে।
বিকেল নাগাদ টের পেয়ে গেল মাইকেল, ব্যাপারটা হ্যালিউসিনেশন নয়, অন্য কিছু। কিচেনে বসে ছিল সে, পাশে টিউলিপ, সম্পূর্ণ নেশামুক্ত অবস্থায়। হঠাৎ করে আবারও ভারী লাগল মাথাটা। টিউলিপের কণ্ঠ শুনল, এরপরেই চোখের সামনে ভেসে উঠল নানা ধরনের বিচ্ছিন্ন দৃশ্য। অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল; দেখল, কিছু বলছে না সে, আনমনে একটা গাজর চিবুচ্ছে। এরপরেই মানসচোখে একটা পেপসির ক্যান দেখতে পেল মাইকেল। অবাক কাণ্ড… সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল টিউলিপ, ফ্রিজের কাছে গিয়ে একটা পেপসির ক্যান বের করল। মাইকেলের বিস্মিত দৃষ্টি দেখে ভ্রূকুটি করল সে, ইশারায় জানতে চাইল, ওকেও একটা পেপসি দেবে কি না। মাথা নাড়ল মাইকেল, কিচেন থেকে বেরিয়ে বেজমেন্টের দিকে রওনা হলো। চার্লটনের কাছে ফোন করতে হবে ওকে।
চুপচাপ সব শুনল লোকটা। এরপর শান্ত কণ্ঠে জানাল, মাইকেলের সন্দেহই ঠিক। সত্যিই মেয়েদুটোর চিন্তা শুনতে পেয়েছে ও, ওরা যা কল্পনা করেছে তা চোখের সামনে দেখতে পেয়েছে। হ্যাঁ, ট্যাবলেটগুলোর প্রভাবেই সেটা সম্ভব হয়েছে, এবং সদ্য-পাওয়া ক্ষমতাটা সাময়িক নয়, বরং চিরস্থায়ী। চার্লটন সেই সঙ্গে এ-ও জানাল, ব্যাপারটা স্রেফ মাইওরিডিঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ড্রাগটা ওকে আরও কিছু ক্ষমতা দিয়েছে, তবে সেগুলো কাজে লাগাতে হলে ট্রেইনিং নিতে হবে ওকে। পরদিন সকাল থেকে শুরু হবে সেই ট্রেইনিং।
‘আর কী ক্ষমতা?’ জানতে চেয়েছিল মাইকেল।
‘সহজ করে বলি। মানুষের চিন্তাভাবনাকে রেডিয়ো সিগনালের মত করে ভাবো। তোমার ভেতর ওই সিগনাল শুধু রিসিভ নয়, ট্রান্সমিট করারও ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে।’
‘মানে কী? ওদের মাথায় আমি নিজের চিন্তাভাবনা ঢুকিয়েও দিতে পারব?’
‘তারচেয়েও বেশি। তুমি ওদের ভেতর আবেগ-অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে—হাসি, কান্না, আনন্দ, ব্যথা, ঘৃণা, ভালবাসা, অপরাধবোধ… যা-খুশি-তাই!’
‘এসব করে লাভ কী?’
‘লাভ আছে। মানুষ পরিচালিত হয় তার আবেগ-অনুভূতি দিয়ে, তাই না?’
আচমকা চরম সত্যটা অনুধাবন করল মাইকেল, যেন কেউ একটা ধারাল কাঁচ ধরিয়ে দিয়েছে তার হাতে।
‘আমি তা হলে একটা অস্ত্র?’ বলল ও। ‘মানুষের মাথায় গোলমাল পাকানোর জন্যে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাবেন আপনারা?’
‘তা-ই করবে তুমি, তবে তার জন্যে কোথাও যাবার প্রয়োজন পড়বে না।’
ব্যালকনির রেলিঙে হেলান দিয়ে পরের কয়েকটা সপ্তাহের কথা স্মরণ করল মাইকেল। প্রাথমিক ট্রেইনিং… নিজের সত্যিকার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া… ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বোঝা। মাইগুরিডিংটা সবার বেলায় কাজ করছিল, কিন্তু বাকিটা কাজ করছিল স্রেফ অল্প কিছু মানুষের ওপর। এর জন্যে যে-ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা রীতিমত ভীতিকর। চার্লটন স্বীকার করেছে, টেকনোলজিটা কীভাবে কাজ করে, সেটা তারও জানা নেই। ওটা ডেভেলপের দায়িত্বে রয়েছে কোম্পানির একদল প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার–দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অতি সংগোপনে কাজ করে চলেছে তারা, হয়তো এখানকারই মত একেকটা কম্পাউণ্ডে, তাদের নিজস্ব ডেইজি আর টিউলিপদের নিয়ে। ইকুইপমেন্টগুলোর কার্যকারিতা দেখার সুযোগ হয়েছে মাইকেলের, তবে এখনও… কাজ শুরু হবার এক বছর পরেও… পুরো প্রজেক্ট রয়ে গেছে এক্সপেরিমেন্টাল বা বিটা পর্যায়ে। অবশ্য খুব দ্রুত এগোচ্ছে সবকিছু, মাঝে মাঝে মাইকেলের মনে হয়, প্রজেক্টের কিছু কিছু বিষয়ে এখনও অন্ধকারে রাখা হয়েছে ওকে।
কেঁপে উঠল মাইকেল। ঠাণ্ডা বাতাস, আর কিছু না—নিজেকে প্ররোধ দিল ও। মানসিক কোনও পীড়া নেই ওর মাঝে। বিবেকের সঙ্গে অনেক আগেই সমঝোতা করে নিয়েছে ও, প্রথমদিনের সেই টেলিফোনটার সময়। চার্লটন সাহায্য করেছিল তাতে।
লোকটা বলেছিল, ‘চাইলে সময় নিয়ে ব্যাপারটা ভালমত ভেবেচিন্তে দেখতে পারো। এ-মুহূর্তে ধাক্কা খাওয়া অবস্থায় আছ তুমি, হয়তো বা কিছুটা বিচলিত, তবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি চাই, ওপরে গিয়ে তুমি ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতিটা বিশ্লেষণ করো। এই বাড়ি… সুন্দরী দু’জন সহচরী… স্বীকার তো করবে, তোমার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বেলায় আমরা কোনও কার্পণ্য করিনি?’
‘জী… জী, মি. চার্লটন। তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’ কথাটা তড়িঘড়ি করে বলেছিল মাইকেল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়েছিল, তখন পর্যন্ত চার্লটনকে ধন্যবাদ জানায়নি সে… কাউকেই জানায়নি। কী আশ্চর্য, এতটা অকৃতজ্ঞ ও হলো কী করে! ‘স্যর, বলে বোঝাতে পারব না, আমি কতটা কৃতজ্ঞ। আরও আগেই ধন্যবাদ জানাইনি বলে ক্ষমা চাইছি…’
‘ও-নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না, মাইকেল। মন দিয়ে আমার কথা শোনো। যে-কাজ তুমি করতে চলেছ, তা সহজ নয়। খারাপ কাজ করতে হবে তোমাকে—এমন সব মানুষের সঙ্গে, যারা হয়তো নির্দোষ, নিরপরাধ। এসব প্রাপ্য নয় তাদের। তারপরেও করতে হবে। আমাদেরকে সাহায্য করবে তুমি, ঠিক যেভাবে আমরা তোমাকে সাহায্য করেছি। ঠিক আছে?’
‘জী, স্যর।’
‘যখন খুব খারাপ লাগবে, এই বাড়িটার কথা ভেবো… দুই বান্ধবীর কথা ভেবো। মনে রেখো, আমাদের কথামত না চললে সব হারাতে হবে তোমাকে।’
‘আমি হারাতে চাই না, স্যর।’
‘আরেকটা কথা মনে রেখো: যা ঘটতে চলেছে, তার জন্যে তুমি দায়ী নও। তুমি না চাইলেও ওসব ঘটবে। তুমি না করলে অন্য কাউকে দিয়ে ওগুলো করিয়ে নেব আমরা। কাজেই যেটা ঠেকানোর উপায় নেই, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ কী? তারচেয়ে ওতে যোগ দিয়ে নিজেকে লাভবান করে তোলাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? আমি কি অযৌক্তিক কিছু বলছি?’
‘না, স্যর। সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত কথা।’
‘গুড।’
সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। গোড়াটা পায়ের তলায় ফেলে মাড়িয়ে ফেলল মাইকেল। নিচে তাকাল। পুলের অগভীর অংশে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে চুমো খাচ্ছে ডেইজি আর টিউলিপ। শরীরের উত্তাপ টের পেল ও। চুলোয় যাক সব চিন্তাভাবনা। কোনও অপরাধবোধ নেই ওর মাঝে। ব্যালকনি পেরিয়ে সিঁড়ি ধরে নামতে শুরু করল—শার্ট খুলতে খুলতে।