অন্তর্যামী – ৩৩

তেত্রিশ

পুরনো হ্যাচব্যাক গাড়িটা চালিয়ে ড্রাইভওয়ে থেকে বেরিয়ে এল জেফরি ফলসাম। মোড় নেবার আগে ঘুরে তাকাল তার ট্রেইলার হোমটার দিকে। দর্শনীয় কিছু নয়, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে ওটাকেই নিজের বাড়ি বলে জানে সে। ওখানে আর কোনোদিন ফিরবে কি না জানে না জেফরি, দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি নিয়ে নামল রাস্তায়। দ্বিতীয়বার ওদিকে না তাকিয়ে চলতে শুরু করল পশ্চিম-অভিমুখী পথে।

একচল্লিশ বছর বয়স তার। পুরোটাই কাটিয়েছে ওয়াইওমিং রাজ্যের প্রত্যন্ত এক শহর ক্লোভারে। রেড সিটি নামে সামান্য বড় আরেকটা শহর রয়েছে দশ মাইল দূরে। তরুণ অবস্থায় বিশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল সে। মাতলামি, গুণ্ডামি, মারপিট… এসব ছিল নিত্যদিনের কাজ। বয়স ত্রিশ হবার পর বোধোদয় ঘটল, সব ছেড়ে দিল সে। যোগ দিল ‘চাচার কাঠের দোকানে। মন দিল নানা ধরনের আসবাবপত্র তৈরির কাজে। শাইয়েনের বড় বড় বিল্ডিং কন্ট্রাক্টররা কিনে নিত সেসব আসবাবপত্র।

কাজটাকে ভালবেসে ফেলেছিল জেফরি। সৃষ্টির আনন্দ পেয়ে বসেছিল ওকে। একেকটা আলমারি, বুকশেলফ, খাট, টেবিল আর চেয়ারকে মনে হতো নিজের সন্তানের মত, পুলকে ভরে যেত হৃদয়। পুরনো জীবনটাকে ভুলে গিয়েছিল সে, আলিঙ্গন করেছিল নতুনটাকে। বাকি জীবন এ-ই করে কাটিয়ে দেবে ভেবেছিল। কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে ধনী হতে পারবে না জানত, কিন্তু দুঃখ হয়নি কোনও। মনের শান্তিটাই ছিল বড়।

সবকিছু বদলে গেল বছরখানেক আগে, যখন একটা ভুতুড়ে কণ্ঠ উদয় হলো তার মাথায়। ভূত… হ্যাঁ, ভূতই বটে, আর কোনও ব্যাখ্যা নেই এর। শুরুতে লড়েছে জেফরি, যুদ্ধ করেছে ওই ভূতের সঙ্গে। কিছুতেই মানতে চায়নি কণ্ঠটার অস্তিত্ব, কিংবা সেটার আদেশ-নির্দেশ। কিন্তু লাভ হয়নি। ধীরে ধীরে বশীভূত হতে হয়েছে ওই ভূতের কাছে, হতে হয়েছে তার হুকুমের চাকর। এক বছরের মাথায়, আজ, পরাস্ত এক মানুষে পরিণত হয়েছে সে; বিনা প্রশ্নে রওনা হয়েছে ভূতের হুকুম তামিল করতে।

হুকুমটা বেশ অদ্ভুত। আজ পর্যন্ত যত আদেশ তাকে দেয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই অদ্ভুত ছিল, কিছু ছিল রীতিমত ভয়ঙ্কর, কিন্তু একটা বিশেষ কারণে আজকেরটা সেগুলোর চেয়ে আলাদা। এখন পর্যন্ত যত কাজ তাকে দিয়ে করানো হয়েছে, সেগুলো সবই ছিল ক্লোভারে, কিংবা আশপাশের দু’চার মাইলের ভেতরে। অথচ হঠাৎ করে আজ তাকে বলা হয়েছে গাড়ি নিয়ে ক্যানসাসের উদ্দেশে রওনা হবার জন্যে। ওখানে পৌঁছে বিশেষ একটা শহরের বিশেষ একটা মোটেলে উঠতে হবে তাকে। এরপর অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী নির্দেশের জন্যে।

কী নির্দেশ আসতে পারে, জানে না জেফরি। কে দিচ্ছে এসব নির্দেশ, তাও জানে না। শুধু এটুকু জানে, যা-ই বলা হোক না কেন, সেটা পালন করতেই হবে তাকে। না করে উপায় নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *