অন্তর্যামী – ২৮

আটাশ

শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে নিজের বাড়ির প্রাইভেট অফিসে ঢুকল লিয়ারি। টেলি-কনফারেন্সের কম্পিউটারগুলো অন করল। পর্দায় ভেসে উঠল তার সান্তা মনিকার অফিসের কম্পিউটার রুম। টেকনিশিয়ানরা মৌমাছির মত ব্যস্ত, সমস্ত কম্পিউটার রিকনফিগার করছে, যাতে ইনকামিং ডেটা রিসিভ করতে অসুবিধে না হয়। মিরাণ্ডাগুলোকে রিঅ্যাসাইন করা হয়েছে শিকাগোর ওপর। ব্লাইণ্ড জোন কাভার করার জন্যে নেয়া হচ্ছে শহরের সব স্ট্রিট ক্যামেরার ফিড।

মিরাণ্ডার মাস্টার ফ্রেমটা পাঁচ মাইল বিস্তৃত। লেক মিশিগানের পাশে পুরো শহর যেন মাকড়সার জালের মত ফুটে উঠেছে থারমাল ইমেজে। এ-ধরনের পরিস্থিতির জন্যে দুটো এ.এইচ.সিক্স লিটল বার্ড হেলিকপ্টার রাখা হয়েছিল দুটো বিল্ডিঙের ছাতে, সেগুলো টেকঅফ করতে শুরু করেছে। প্রথমটা ইতিমধ্যে উঠে গেছে আকাশে, দ্বিতীয়টাও উঠতে দেরি নেই।

হেডসেট তুলে নিল লিয়ারি। যোগাযোগ করল কপ্টারের পাইলটের সঙ্গে। বলল, ‘বিল্ডিংটা একশো তলা। টপ ফ্লোর থেকে নিচের দিকে গুনতে শুরু করো। তোমাদের টার্গেট, তিরাশি নম্বর ফ্লোর। ওখানে যাকেই পাবে, তাকেই গুলি করার অনুমতি দেয়া হলো তোমাদের।’

.

‘থ্যাঙ্ক ইউ।’

রানার হাত ধরল অ্যালি। মুঠো শক্ত করার আগে ওর হাতে কাঁপুনি অনুভব করল রানা।

‘কীসের জন্যে?’ জানতে চাইল ও।

‘আমাকে এভাবে ভালবাসার জন্যে… আমাকে আগলে রাখার জন্যে। আমি সব শুনতে পাই, রানা। সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে ভাবছ তুমি। এই যেমন, এখন। নিজেকে বাদ দিয়ে তুমি আমার কথা ভাবছ। চাইছ, তুমি মরলেও আমার যেন কিছু না হয়। অথচ এমন ভালবাসা পাবার মত কিছু করিনি আমি। আমি এর যোগ্য নই।’

ঝট্ করে ওর দিকে তাকাল রানা। অ্যালির কণ্ঠে কীসের যেন সুর ফুটে উঠেছে। বিচ্ছেদের সুর? নাকি বিদায়ের?

‘অ্যালি, কী করেছ তুমি?’ শঙ্কিত গলায় জানতে চাইল ও।

‘আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।’ রানাকে জড়িয়ে ধরল মেয়েটা।

কাঁচের দেয়ালের ওপাশে চোখ চলে গেল রানার। স্কাইলাইনে ফুটে উঠেছে একটা আকাশযানের আলো—বড়জোর মাইলখানেক দূরে। এদিকে ছুটে আসছে দ্রুতবেগে। আবছাভাবে শোনা গেল রোটরের আওয়াজ। এ.এইচ.সিক্স কিংবা তার কাছাকাছি কোনও মডেল, চিনতে পারল রানা। হিম হয়ে এল শরীর। মানসচোখে দেখতে পাচ্ছে, রাইফেল বাগিয়ে কপ্টারের খোলা দরজায় বসে আছে স্নাইপার—গুলি করতে উদ্যত। কিন্তু ওরা খবর পেল কী করে?

ঘাড় ফিরিয়ে এবার বাথরুমের দিকে তাকাল রানা। খোলা দরজা দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কাউন্টারের ওপর রাখা কর্ডলেস ফোন। জ্বলজ্বল করছে ডিসপ্লের সবুজ আলো। কী করেছে অ্যালি, তা বুঝতে আর অসুবিধে হলো না ওর।

.

প্যারাশুট হারনেসের শেষ ক্লিপটা লাগাতে গিয়ে হঠাৎ স্থির হয়ে গেল ভেরোনিকা। মুখ তুলতেই চোখাচোখি হলো এলিনার সঙ্গে। তারও একই অবস্থা। দু’জনেই রানার মন পড়তে পারছে।

‘সর্বনাশ!’ ফিসফিসাল এলিনা। ‘সত্যি সত্যি ফোন করেছে?’

‘দাঁড়াও, আমি দেখে আসছি,’ বলল ভেরোনিকা। হাতের রাইফেলটা এলিনাকে দিয়ে দৌড়াতে শুরু করল। চলে গেল দক্ষিণের দেয়ালে। কাঁচের ওপর দু’হাত ঠেকিয়ে বাইরে তাকাল।

ইতিমধ্যে নদী পেরিয়ে এসেছে হেলিকপ্টার। মিশিগান অ্যাভিনিউ ধরে এগিয়ে আসছে সামনে। পেছনে, আর.এম.সি. প্লাযার ছাত থেকে ‘আরেকটা হেলিকপ্টার টেকঅফ করল।

মৃদু একটা ঘণ্টার আওয়াজ ভেসে এল এলিভেটরের দিক থেকে। নিশ্চয়ই বিল্ডিঙের সিকিউরিটি পার্সোনেল আর পুলিশ এসেছে। তবে তা নিয়ে মাথা ঘামাল না ভেরোনিকা। অ্যাপার্টমেন্টের দরজাটা যথেষ্ট ভারী। ওটা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে পারবে না কেউ।

আসল সমস্যা হলো হেলিকপ্টারদুটো। কিছু একটা করতে হয় ওগুলোর ব্যাপারে। সবচেয়ে কাছের ক্লজিটটার দিকে এগিয়ে গেল ও। দরজা খুলে তাকগুলোর গায়ে ধাক্কা দিল। ভেতরদিকে সরে গেল তাক, উন্মুক্ত হলো একটা গোপন কেবিনেট—তাতে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র।

.

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে আছে রানা। অ্যালিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে, অন্য হাতে পিস্তল তাক করে রেখেছে দরজার দিকে। কিন্তু এরপর কী করবে, ভেবে পাচ্ছে না। কাঁচের দেয়ালের দিকে তাকাল, মৃত্যুদূতের মত ছুটে আসছে দুটো হেলিকপ্টার। ঠেকাবার কোনও কায়দা নেই।

‘আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো,’ আবার বলল অ্যালি।

সংবিৎ ফিরে পেল রানা। অ্যালির দিকে তাকাল। বলল, ‘এভাবে হাল ছেড়ে দিয়ো না। এখনও বেঁচে আছি আমরা।’

‘আমার কথা ভুলে যাও, রানা,’ করুণ গলায় বলল অ্যালি। ‘আমি হয়তো সত্যিই একটা দানব। আমার মরে যাওয়াই ভাল।’

‘বাজে কথা! তোমাকে ফেলে আমি কোথাও যাচ্ছি না।’

‘যদি কপালজোরে আমরা কোনোভাবে বেঁচে যাই, আর আমি সেই ভয়ঙ্কর মানুষটায় পরিণত হই, তখন তুমি এ- মুহূর্তটার কথা ভাববে, রানা। তোমার মনে হবে, আমাকে না- বাঁচানোই উচিত ছিল। আমি চাই না, আমাকে নিয়ে কখনও তোমার অমন চিন্তা আসুক। তারচেয়ে মরতে দাও আমাকে।

‘অসম্ভব! মরতে হয়, দু’জনেই মরব। তার আগে একটু চেষ্টা করতে দাও আমাকে।’

কয়েক মুহূর্ত রানার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল অ্যালি। এরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ‘বুঝেছি, তোমাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারব না। বেশ, করো চেষ্টা।’

একটু হাসল রানা। ‘এ-ই তো লক্ষ্মী মেয়ের মত কথা!’

হাতের সমস্যার দিকে এবার নজর দিল ও। বিশ সেকেণ্ডের ভেতর পৌঁছে যাবে সামনের কপ্টার। অন্যদিকে হলঘরে ওদের অপেক্ষায় রয়েছে দুটো সশস্ত্র মেয়ে। নাকি একজন? এক জোড়া পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়েছে রানা, সম্ভবত ওদের একজন হেলিকপ্টারের পজিশন দেখতে গেছে। তারমানে হলঘরে রয়েছে একজন, অ্যালিকে হাতের মুঠোয় পেতে চাইলে এখুনি হামলা করবে সে। তার আগেই যা করার করতে হবে রানাকে।

বেডরুমের দরজার দিকে তাকাল রানা। পাল্লাটা প্লাইউডের তৈরি, ঠুনকো। ওয়ার্ডরোবের ধাক্কায় ফাটল দেখা দিয়েছে ওতে। মাথায় বিদ্যুৎচমকের মত একটা আইডিয়া এল, কিন্তু সেটাকে চাপা দিল ও। ভাবল আরেকটা কৌশল নিয়ে। ঝট্ করে উঠে দাঁড়াল। অ্যালিকে চমকে উঠতে দেখল ও, নিঃসন্দেহে পড়তে পারছে ওর মন। হাত বাড়িয়ে রানাকে বাধা দিতে চাইল মেয়েটা। কিন্তু সে-বাধা মানল না রানা, কাঁচের দেয়ালের দিকে ছুট লাগাল। সর্বান্তঃকরণে ভাবছে, গুলি করে কাঁচ ভাঙবে, তারপর ঝাঁপ দেবে বাইরে। আঁতকে ওঠার মত একটা আওয়াজ করল অ্যালি।

একেবারে শেষ মুহূর্তে মত পাল্টাল রানা। উল্টো ঘুরে এবার প্রাণপণে ছুটল বেডরুমের দরজার দিকে। মেঝেতে পড়ে থাকা ওয়ার্ডরোবটাকে স্প্রিংবোর্ডের মত ব্যবহার করল, একটা পা ঠেকিয়ে ঝাঁপ দিল সামনে। শূন্যে থাকতেই দু’পা ভাঁজ করে ফেলল, পাল্লার গায়ে আছড়ে পড়ল হাঁটু ঠেকিয়ে।

যা আশা করেছিল, তা-ই ঘটল। দুর্বল পাল্লা নিতে পারল না ওর আঘাত। বিশ্রী শব্দ তুলে ফেটে গেল প্লাইউড। দরজার একটা অংশসহ হলঘরের ভেতর আছড়ে পড়ল রানা। পড়েই একটা গড়ান খেল, এরপর পিস্তলটা ছাতের দিকে তুলে একটা গুলি করল। নির্দিষ্ট কোনও টার্গেট নেই, গুলি ছুঁড়ল স্রেফ মাযল ফ্ল্যাশের জন্যে, যাতে সেই আলোয় দেখে নিতে পারে শত্রুর অবস্থান। চকিতের জন্যে দেখতে পেল, এলিনাকে। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার বামে, কয়েক গজ দূরে। হাতে একটা জি-থার্টি সিক্স অ্যাসল্ট রাইফেল। দারুণ কৌশলে রানা বোকা বানিয়েছে ওকে—জানালা দিয়ে বাইরে ঝাঁপ দেবার কথা ভেবেছে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে দিক পাল্টে বেরিয়ে এসেছে হলঘরে। পুরো ঘটনা ঘটেছে মাত্র কয়েক সেকেণ্ডের ব্যবধানে, রানার ভাবনাচিন্তা এত দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে যে, তাল মেলাতে পারেনি বেচারি।

তবে প্রাথমিক চমকটা কাটতে সময় লাগল না এলিনার। মাযল ফ্ল্যাশের আলো নেভার আগেই তাকে রাইফেল ঘোরাতে দেখল রানা, গুলি করতে চলেছে। তাকে সে-সুযোগ দিল না ও, এলিনার লোকেশন লক্ষ্য করে যন্ত্রচালিতের মত তিনটা গুলি করল। গলা আর বুক পেতে সেগুলো গ্রহণ করল এলিনা, দড়াম করে আছড়ে পড়ল মেঝেতে।

একটা চিৎকার শুনল রানা। অ্যালি নয়, ভেরোনিকার গলা। অ্যাপার্টমেন্টের দক্ষিণ দিক থেকে আসছে। মেঝের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল রানা, মেঝে হাতড়াচ্ছে। এলিনার রাইফেলটা পেয়ে গেল শীঘ্রি। ওটা তুলে তাক করল দক্ষিণ দেয়ালের দিকে। কিন্তু দেখতে পেল না কাউকে—ভেরোনিকা সরে গেছে।

বেডরুমের দরজায় উদয় হলো অ্যালি। ওর দিকে এগোতে গিয়ে থেমে গেল রানা, পায়ে ধাতব কিছু একটা বাড়ি খেয়েছে। এলিনা পড়ে যাবার সময়ও শব্দটা শুনতে পেয়েছে ও। রাইফেলের ওপর একটা ফ্ল্যাশলাইট লাগানো আছে, সুইচ টিপে অন্ করল ওটা। আলো ফেলল এলিনার ওপর। প্যারাশুট পরে আছে মেয়েটা। ওটার ক্লিপের সঙ্গে বাড়ি খেয়েছে রানার পা।

আলোটা আবার নিভিয়ে ফেলল রানা। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল অ্যাপার্টমেন্টের দক্ষিণ দিকে। এখনও খালি। ওদিক থেকে হামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভেরোনিকা। রানার হাতে একটা ভারী অস্ত্র চলে এসেছে—সেটা মাইগুরিডিং না করেও বুঝতে পেরেছে মেয়েটা। ঠোঁটের কোণে হালকা এক টুকরো হাসি ফুটল রানার। এ-মুহূর্তে ওই মাইণ্ডরিডিং একটা বাড়তি সুবিধে দিচ্ছে ওকে। কপালের দু’পাশের ব্যথাটার তীব্রতা থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারছে, শত্রু কাছে কি দূরে রয়েছে।

ঘুরে হলঘরের উত্তর প্রান্তে তাকাল ও। ছায়ায় ঢাকা। হামলা চালানোর জন্যে আদর্শ। দক্ষিণ প্রান্ত থেকে লাইব্রেরির ভেতর দিয়ে পৌঁছুনো সম্ভব ওখানে। ভেরোনিকা নিশ্চয়ই সে- চেষ্টা করছে।

অ্যালির বেডরুমের জানালায় অদ্ভুত এক গুঞ্জন শোনা গেল। হেলিকপ্টারের আওয়াজে কম্পন উঠেছে কাঁচে। দরজা দিয়ে সাবধানে উঁকি দিল রানা। সামনের কপ্টারটা চলে এসেছে—দক্ষিণের একটা বিল্ডিঙের ছাত পেরিয়ে গেল, ওটা মাত্র এক ব্লক দূরে।

‘ধরো এটা।’ অ্যালির হাতে সিগ-সাওয়ারটা ধরিয়ে দিল রানা। ম্যাগাজিনে এখনও দুটো বুলেট আছে। ইশারা করল হলঘরের উত্তর প্রান্তের দিকে। ‘কোনোকিছু নড়তে দেখলেই গুলি করবে।’

বাধ্য মেয়ের মত মাথা ঝাঁকাল অ্যালি। পিস্তল বাগিয়ে দাঁড়াল।

হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসল রানা। রাইফেলটা নামিয়ে রাখল একপাশে। তারপর দ্রুত হাতে এলিনার শরীর থেকে খুলতে শুরু করল প্যারাশুটটা।

.

প্রথম হেলিকপ্টারের কোডনেম স্প্যারো ফোর-ওয়ান। কম্পিউটার রুমের দুটো মনিটরে ভেসে উঠেছে ওটার আরোহী দু’জন স্নাইপারের হেলমেট-ক্যামেরা ফিড। এ- মুহূর্তে টাওয়ারের দক্ষিণ পাশ দেখাচ্ছে ক্যামেরাদুটো। নিজের অফিসে বসে লিয়ারিও দেখতে পাচ্ছে সেই ছবি।

পাইলটের কণ্ঠ শোনা গেল স্পিকারে। ‘নো মুভমেন্ট অন দ্য টার্গেট লেভেল।’

হেলিকপ্টারের আওয়াজে জেগে উঠেছে ওপর-নিচের সব ফ্লোরের অধিবাসীরা। ছুটে এসেছে জানালায়। কী ঘটছে দেখতে চায়। হেলিকপ্টার থেকে একটা স্পটলাইট জ্বেলে তিরাশি নম্বর ফ্লোরে আলো ফেলা হলো। দক্ষিণ পাশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘোরানো হলো আলোটা। কিন্তু কারও দেখা পাওয়া গেল না।

‘স্প্যারো ফোর-ওয়ান, বিল্ডিঙের চারপাশে ঘুরে দেখো, ‘ কম্পিউটার রুম থেকে নির্দেশ দিল হুপার। ‘ওরা ভেতরেই আছে। প্রতিবেশীরা গুলির শব্দ শুনেছে ওখান থেকে। স্প্যারো ফোর-টু, তোমার লোকদের নামাও।

‘ইয়েস, স্যর। আউট।’

জুম করা মিরাণ্ডার ফ্রেমে দ্বিতীয় কপ্টারটাকে পৌছুতে দেখা গেল। টাওয়ারের ছাতের ওপরে গিয়ে স্থির হলো ওটা, টপাটপ ওটা থেকে লাফিয়ে নামল চারজনের একটা স্পেশালিস্ট টিম। নিচে নেমেই দৌড়াতে শুরু করল। স্টেয়ারওয়েল অ্যাকসেসের কাছে গিয়ে ক্ষণিকের জন্যে থামল তারা। একটু পরেই জ্বলজ্বলে একটা হিট সিগনেচার দেখা গেল ওখানে, বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সিঁড়িঘরের দরজার তালা। বাধাটা দূর হতেই সিঁড়ির ভেতরে অদৃশ্য হয়ে গেল টিমটা।

.

হারনেসের শেষ ক্লিপটা খুলে ফেলেছে রানা। প্যারাশুটটা এলিনার শরীর থেকে খুলে নিয়ে হাতে তুলল রাইফেল। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল। চকিতে তাকাল হলঘরের দক্ষিণ কোণে। এখনও দেখা নেই ভেরোনিকার।

দুটো কপ্টারেরই আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এখন। প্রথমটা বিল্ডিঙের চারদিকে চক্কর দিতে শুরু করেছে। দ্বিতীয়টা ল্যাণ্ড করেছে ছাতে। ওটার ভাইব্রেশন ছড়িয়ে পড়েছে বিল্ডিঙের পুরো কাঠামোয়… তবে খুব সামান্য সময়ের জন্যে। কয়েক সেকেণ্ডের ভেতর কম্পনটা থেমে যাওয়ায় রানা বুঝল, একটা টিম নামিয়ে দিয়ে গেছে ওটা। মনে মনে হিসেব করল তাদের টাইমলাইন। ছাত থেকে তিরাশি তলায় পৌঁছুতে মোটামুটি চার মিনিট নেবে ওরা। ঠেকানোর উপায় নেই। দরজা দিয়ে ঢুকতে না পারলে ওপরতলার মেঝে কেটে ঢুকবে। তার আগেই ওদের নাগালের বাইরে চলে যেতে হবে।

অভ্যস্ত ভঙ্গিতে ঝটপট প্যারাশুটটা পরে ফেলল রানা। ক্লিপ লাগিয়ে শরীরের সঙ্গে শক্ত করে আঁটল। তারপর ইশারা করল অ্যালিকে। মাথা ঝাঁকাল মেয়েটা। পিস্তল নামিয়ে ঢুকে পড়ল বেডরুমে। ওকে অনুসরণ করল রানা।

‘আমার গায়ে চড়বে তুমি,’ ভেতরে ঢুকে বলল রানা। ‘পা দিয়ে জড়িয়ে ধরবে কোমর, আর দু’হাত দিয়ে ধরবে গলা। যত জোরে পারো। আর কোনোদিকে মনোযোগ দেবার প্রয়োজন নেই। ওকে?’

দোনোমনো ভঙ্গিতে সায় জানাল অ্যালি। ভয় পাচ্ছে ও। আর তখুনি কপালের দু’পাশে অদৃশ্য এক চাপ অনুভব করল রানা। ভেরোনিকা। কাছে চলে এসেছে। মরিয়া হয়ে উঠেছে সে।

আর দেরি করল না অ্যালি, এক লাফে উঠে পড়ল রানার গায়ে। জাপটে ধরল ওকে। রাইফেলটা এক হাতে উঁচু করল রানা… সুইচটা আগেই সেট করেছে অটোতে… টিপে দিল ট্রিগার। মুষলধারে বুলেট ছুটল। পিছু পিছু ছুটল রানা। শেষ মুহূর্তে হাত থেকে ফেলে দিল রাইফেল, দু’হাতে আঁকড়ে ধরল অ্যালিকে, এরপর ঝাঁপিয়ে পড়ল কাঁচের ওপর। গুলির আঘাতে ফাটল ধরেছিল, এবার আর অক্ষত রইল না কাঁচ, ভেঙেচুরে পথ করে দিল। তিরাশি তলা থেকে নিচে পড়ছে রানা আর অ্যালি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *