অধ্যায় তিন – আভিজাত্যবাদের জাগরণ
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬০০ সাল থেকে সুমের শহরে বংশপরম্পরায় রাজাদের আবির্ভাব ঘটতে শুরু করে।
মহাপ্লাবনের পর, সুমেরীয় রাজার তালিকা থেকে আমরা উত্তরে অবস্থিত ভুট্টাখেত পরিবেষ্টিত ‘কিশ’ শহরের কথা জানতে পারি যা পরিণত হয় সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে। তালিকাটি নতুন করে শুরু হয় এবং তাতে ‘কিশের প্রথম রাজবংশ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বেশ কয়েকজন রাজার নাম। কিশের প্রথম রাজার নাম ছিল গাউর এবং তার পরপরই আসে চমৎকারভাবে নামকরণ করা ‘গুল্লা নিবাদা আন্নাপাড’ নামের একজন রাজা। এরপর আরও উনিশজন রাজার পর আসেন এনমেবারাজ্ঞেসি, যিনি ছিলেন বন্যার পর রাজত্ব করতে আসা বাইশতম রাজা। এই লেখনীসূত্রে আমরা জানতে পারি যে এনমেবারাজ্ঞেসি খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ সালের আশেপাশে রাজত্ব করেছিলেন—যা প্রথম সুমেরীয় রাজত্বের জন্য নির্দিষ্ট করা প্রথম তারিখ।
কিন্তু এতেও সুমেরীয় ইতিহাসে একটি বড়ো ফাঁক থেকে যায়—মহাপ্লাবন (সেটা যখনই হয়ে থাকুক না কেন) থেকে ২৭০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝে কী হয়েছিল সেই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বন্যার পরে আর কোনো রাজা পূর্বের মতো তিন হাজার ছয়শ বছর কিংবা তার গুণিতক পরিমাণ সময় ধরে রাজত্ব করতে পারেননি বরং রাজত্বের সময়পর্ব খর্ব হতে থাকে।
সব মিলিয়ে ২২,৯৮৫ বছর ৩ মাস ৩ দিন পার হয়েছিল বন্যা হওয়ার পর থেকে এনমেবারাজ্ঞেসির সিংহাসনে আরোহণের আগ পর্যন্ত। এই সংখ্যাটি নিখুঁত বলে মনে হলেও এটি প্রকৃতপক্ষে তেমন কোনো উপকারে আসে না। সুমেরীয় সাহিত্যের পণ্ডিতগণ বন্যাপূর্ব রাজাদের ‘পৌরাণিক’ এবং তাদের উত্তরসূরিদেরকে ‘আধা- ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেন; যার অর্থ আমাদের কাছে কখনোই পরিষ্কার নয়।
এনমেবারাজ্ঞেসির আগে রাজত্ব করা একুশজন রাজার ব্যাপারে শুধু একটি তথ্যই জানা যায়—তাদের নাম এবং তারা কবে থেকে কবে পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন; এর বেশি কিছু না। তালিকার অর্ধভাগের পরে ব্যতিক্রম হিসেবে ইটানার কথা বলা যায়, যিনি ছিলেন ১৩তম রাজা।
ইটানা, যিনি স্বর্গে আরোহিত হয়েছিলেন, যার দখলে ছিল সকল ভূমি। তিনি ১,৫৬০ বছর রাজত্ব করেছিলেন এবং তার সন্তান বালিহ। তিনি ৪০০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। এখানে সাদা চোখে যা দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ইতিহাস রয়েছে।
রাজাদের তালিকা আবারো শুরু হতে হতে উপত্যকার চেহারা তার বর্তমান অবস্থার মতো হয়ে গিয়েছিল প্রায়। উপসাগরের মাথা উত্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। উপত্যকাকে আর্দ্র করে রাখা বিনুনির মতো জলধারাটি জমাটবদ্ধ পলিমাটির ধাক্কায় দুদিকে সরে গিয়ে দুটি বিশাল আকৃতির নদীতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বর্তমানে আমরা সেই নদী দুটিকে ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নামে চিনি, যে নামগুলো গ্রিকদের দেওয়া। আরও প্রাচীনকালে পশ্চিমমুখী নদীটিকে ডাকা হতো উরুন্তু নামে এবং দ্রুততর ও আরও রুক্ষ পূর্বমুখী নদীটির নাম দেওয়া হয়েছিল ধনুক থেকে ছুটে আসা দ্রুতগামী তীরের সাথে মিলিয়ে—ইদিগলাত।
এই দুটি নদীর মাঝে বিভিন্ন শহর গড়ে উঠতে থাকে। ভূতত্ত্ববিদ্যা মারফত জানা যায় যে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ সাল নাগাদ গ্রামবাসীদের বড়ো বড়ো গোষ্ঠী তাদের সম্পূর্ণ জীবনচেতনা বদলে প্রাচীরবেষ্টিত শহরে চলে এসেছিল, যাকে বলা হয় ‘স্ট্রিমিং ইন’ বা ‘ভেসে আসা’।
কিন্তু এই রূপান্তরটি সর্বদা শান্তিপূর্ণ ছিল না। জেনেসিসে বর্ণিত বন্যার উপাখ্যান থেকে আমরা প্রতিবন্ধকতার একটি চিত্তাকর্ষক নমুনা দেখতে পাই। যখন নোয়াহ আবার নতুন করে জীবন শুরু করলেন, তার বংশধররা সমগ্র শুষ্ক ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ল। শিনারে (দক্ষিণ মেসোপটেমীয় সমতলভূমির সেমিটিক নাম) শহর তৈরি করার ব্যাপারটিকে চরম উৎকর্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই শহরের বাসিন্দারা তাদের দক্ষতা নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তারা ভেবেছিল যে এমন একটি মিনার তৈরি করবে যেটি স্বর্গ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এটি এমন একটি মিনার হবে যেটি শুধু সমগ্র পৃথিবীর জন্য ঈর্ষণীয় নয় বরং সৃষ্টিকর্তার কাছেও এটিকে নিয়ে বড়াই করা যাবে। এই স্পর্ধামূলক কাজের কারণে তৈরি হয়েছিল ভাষাগত বিভ্রান্তি, বিচ্ছিন্নতা এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ।
ব্যাবেলের মিনার বাইবেলে বর্ণিত বন্যার মতোই অনির্দিষ্ট অতীতের অংশ।
কিন্তু এই বিবরণ থেকে আমরা ইট-কাদায় তৈরি শহরগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা পাই, যেগুলো প্রাচীর ও মিনার দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল মেসোপটেমিয়াতে। এরকম এক ডজন প্রাচীরঘেরা শহর, যাদের চারপাশে প্রায় ছয় মাইলব্যাপী শহরতলি ছড়িয়ে ছিল, সর্বক্ষণ একে অপরের সাথে শক্তি প্রদর্শনের লড়াইতে ব্যস্ত ছিল। এরিদু, উর, উরুক, নিপ্পুর, আদাব, লাগাশ, কিশ ও আরো কিছু শহরের নাম পাওয়া যায়। সম্ভবত এই প্রাচীন নগরকেন্দ্রগুলোতে প্রায় হাজার চল্লিশেক মানুষের বসবাস ছিল।
প্রতিটি শহরের প্রতিরক্ষার ভার একজন দেবতার হাতে ছিল, যার মন্দিরে আশেপাশের পল্লি অঞ্চলগুলো থেকে অসংখ্য তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটত। এবং এই শহরগুলো তাদের ক্ষমতার বিস্তার ঘটাত সেসব পল্লি এলাকা পর্যন্ত– আরও অধিক ভূমি দখলে রাখার আকাঙ্ক্ষায়। পশুপালকরা শহরে আসত দেবতার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করতে আর বেচাকেনা করতে এবং রাজা ও পুরোহিতদের ধার্যকৃত কর ও খাজনা প্রদান করতে। তারা উপাসনা ও বাণিজ্যের জন্য শহরের উপর নির্ভর করত কিন্তু শহরে চাহিদাও প্রায় সমপরিমাণই ছিল।
পূর্বে শিকারি ও আহরণকারী গোষ্ঠীদের মাঝে চালু থাকা সাম্যবাদী পন্থাগুলো ততদিনে বাতিল হয়ে গিয়েছে। শ্রেণিতত্ত্ব চালু হয়ে গিয়েছে ততদিনে—শহর ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; এরপর আসত পল্লি অঞ্চলের স্বার্থ।
মহাপ্রলয়ের প্রায় দশটি প্রজন্মের পর (আনুমানিক) শ্রেণিতত্ত্ববাদ একটি নতুন রূপ ধারণ করে। প্রথমবারের মতো মানুষ শাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে রক্তের উপর ভিত্তি করে, শক্তিমত্তা কিংবা জ্ঞানের পরিধির উপর নয়।
বন্যাপরবর্তী সময়ে কিশ শহরের দশম রাজা আতাবের পুত্র ছিলেন বংশপরস্পরায় রাজত্ব পাওয়া প্রথম রাজা। এরপর কিশের নাতিও একইভাবে রাজত্ব পান। লিপিবদ্ধ ইতিহাসে রক্ত সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তিন প্রজন্ম ধরে রাজত্ব করার প্রথম উদাহরণ হচ্ছেন কিশ ও তার বংশধররা। পরবর্তী রাজা ইটানা সিংহাসনে আরোহণ করে নতুন এক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন।
ইটানা সম্পর্কে রাজতালিকায় একটি কথাই লেখা হয়েছে, যার সারমর্ম হলো, ‘তিনি স্বর্গে আরোহণ করেন।’ এর চেয়ে বেশি কোনো ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দেওয়া হয়নি সেখানে। তার ব্যাপারে আরও জানতে হলে আমাদেরকে অনেক পরে লেখা একটি কবিতার দ্বারস্থ হতে হবে, যেখানে আরও পুরানো সুমেরীয় ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই কবিতায় ইটানা একজন ধার্মিক রাজা যে দেবতাদের প্রতি বিশ্বস্ত। কিন্তু তার একটি বড়ো দুঃখ রয়েছে—তিনি নিঃসন্তান। তিনি বিলাপ করেন এভাবে—
“আমার প্রার্থনায় আমি দেবতাদের সম্মান জানিয়েছি
এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছি মৃত আত্মাদের প্রতি
স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারীরা আমার ধূপের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে
দেবতারা আমার উৎসর্গকৃত ভেড়াগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে
এখন আমার লজ্জা দূর করে দাও আর আমাকে একটি পুত্রসন্তান
প্রদান করো’
একটি ভীতিপ্রদ স্বপ্নে ইটানা দেখতে পান যে পুরো শহর শাস্তি পাবে, যদি তিনি তার মসনদের জন্য কোনো উত্তরসূরি রেখে যেতে না পারেন-
‘কিশ শহর ফুঁপিয়ে কাঁদছে
শহরের সকল মানুষ শোক প্রকাশ করছে
ইটানার নেই কোনো উত্তরাধিকারী’
এখানে বলা বাহুল্য যে মানবজীবনে আরেকটি বড়ো ধরনের পরিবর্তন এসেছিল ততদিনে। রাজত্ব একটি বংশগত ব্যাপারে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। যে নেতাই মানুষের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব ঘাড়ে নিলেন, তিনিই হয়ে গেলেন সেই কাজের জন্য ‘জন্ম থেকেই যোগ্য’। তার বংশপরিচয়ই তাকে সেই পদের জন্য যোগ্য বানিয়ে দিলো। প্রথমবারের মতো আমরা একটি অভিজাত শ্রেণি তৈরি হতে দেখলাম, যে শ্রেণির জন্মই হয়েছে শাসন করার জন্য।
ওদিকে দেবতারা ইটানার উপর দয়া করলেন এবং তাকে একটি রাস্তা দেখালেন : তাকে ঈগলের পিঠে চড়ে স্বর্গে যেতে হবে যেখানে সে একটি জন্ম- উদ্ভিদ খুঁজে পাবে, যা তাকে পুত্রসন্তানের পিতা হতে সহায়তা করবে। ট্যাবলেটে আর কিছু লেখা নেই এবং বাকি গল্পটি হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে। কিন্তু সেই রাজতালিকা থেকে আমরা জানতে পাই যে ইটানার মৃত্যুর পর তার পুত্র বালিহ রাজত্ব করেছিলেন, যা থেকে আমরা ধরে নিতে পারি যে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিল।
রক্ত-সম্পর্ক থেকেই অনেক সময় অসমতার জন্ম হয়। রাজত্বের মতবাদের মতো, জন্মগত আভিজাত্যের চিন্তাধারাটি কখনোই বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি। জন্মগতভাবে নেতৃত্ব পাওয়া মানুষদের নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি ভূমির দখল থাকা দরকার। যে কারণে ইটানা তার পুত্রের জন্য অনেক দখলকৃত জমির ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।
মেসোপটেমিয়ার শহরগুলো স্বাধীন ছিল। প্রতিটি শহর একজন স্থানীয় রাজপুত্রের শাসনাধীন ছিল। কিন্তু কিশ শহর ছিল দুই নদীর মাঝখানে, যাকে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুবিধাজনক একটি অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সুমেরে কাঠের উৎপাদন হতো না; অল্প কিছু আমদানিকৃত পামগাছ ছিল যা থেকে তৃতীয় শ্রেণির গৃহনির্মাণের উপকরণ পাওয়া যেত। সেখানে ছিল না কোনো পাথর, তামা, অবসিডিয়ান আগ্নেয় শিলা কিংবা অন্য কোনো উন্নতমানের উপকরণ; সেখানে ছিল শুধু কাদা এবং অল্প কিছু বিটুমেনের খনি। বিটুমেন বা এম্ফন্ট (পিচ) ব্যবহৃত হতো মশালে এবং মর্টার বাইন্ডার হিসেবে।
উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত জাগরোস পাহাড় থেকে কিংবা উত্তর-পশ্চিমের লেবানন পর্বতমালা থেকে কাঠ আনতে হতো। দক্ষিণ আরবীয় পর্বতমালা থেকে তামা, উত্তর ও পূর্বের পাথুরে এলাকা থেকে নীলা, পশ্চিমের মরুভূমি থেকে পাথর এবং দূর উত্তর থেকে অবসিডিয়ান পাথর আসত। এসব দ্রব্যের বদলে সুমেরীয় শহরগুলো কৃষিভিত্তিক সমাজে উৎপাদিত পণ্য, যেমন খাদ্যশস্য, কাপড়, চামড়া, মাটির পাত্র ইত্যাদি নিয়ে বাণিজ্য করত। পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর এশিয়ার একটি বিশাল এলাকাজুড়ে সুমেরীয় মাটির পাত্র এবং বাটির ব্যবহার বিস্তার লাভ করে।
বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পাদিত হতো টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর এক মাথা থেকে আরেক মাথা দিয়ে। স্বল্প পরিমাণে বাণিজ্য পূর্ব ও পশ্চিমের মরুভূমির মধ্য দিয়েও হতো। ইউফ্রেটিস নদীর পুরানো নাম ‘উরুন্তু’–এর মানে ‘তামার নদী’। প্রত্নতত্ত্ববিদ চার্লস পেলেগ্রিনো উল্লেখ করেন যে মেসোপটেমীয় উপত্যকায় একটি একমুখী, সমান্তরাল সভ্যতার জন্ম হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘এটি ছিল এমন একটি মরুদ্যান যা দৈর্ঘ্যে হাজার হাজার মাইল লম্বা কিন্তু প্রস্থে দশ কিলোমিটারেরও কম।’ স্রোতের নিচের দিকে অবস্থিত একটি শহর যদি উপরের দিকে অবস্থিত লেবানন থেকে সিডার গাছের গুঁড়ি আমদানি করার জন্য তাদের নিজস্ব কোনো পণ্য পাঠাতে চাইত (বিনিময়মূল্য হিসেবে), তা হলে সেই দ্রব্যগুলো কিশ শহরের মধ্য দিয়ে নিতে হতো। কিশের রাজা তার শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে একটি অংশ নিজের তহবিল বাড়ানোর জন্য সংগ্রহ করতেন।
ইটানার ছেলে উত্তরাধিকারসূত্রে মসনদ পেতে পেতে কিশ দক্ষিণে অবস্থিত পুরানো শহর এরিদুর জায়গায় সমতলভূমির সবচেয়ে শক্তিশালী শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সাল নাগাদ অন্যান্য শহরের রাজারাও নিজেদেরকে ‘কিশ শহরের রাজা’ হিসেবে দাবি করা শুরু করেন—যদিও তা মূলত একটি সম্মানজনক পদবি ছিল, অন্য সুমেরীয় শহরের উপর নিজেদের আধিপত্য ফলানোর জন্য।
মাসোহারা সংগ্রহ করা এক জিনিস আর অন্য একটি দেশ দখল করা পুরোপুরি ভিন্ন একটি ব্যাপার। ইটানা এবং তার আত্মীয়স্বজনরা কখনোই সুমেরের অন্যান্য শহরে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি।
সমতলভূমির এক মাথা থেকে আরেক মাথায় সৈন্যসামন্ত পরিবহণের ঝামেলার কারণেই হয়তো বা কিশের রাজারা অন্যান্য শহর দখলে অনাগ্রহী ছিলেন। অথবা তাদের মাথায় আধিপত্যবাদের চিন্তাই আসেনি, যা তাদের রাজত্ব ও আভিজাত্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত। প্রথম সাম্রাজ্যবাদী মানুষটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি রাষ্ট্র থেকে এসেছিলেন।