অধ্যায় উনত্রিশ – ত্রিমুখী প্রতিযোগিতা
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫২৫ থেকে ১৪০০ সালের মধ্যে উত্তরে মিটান্নিরা পশ্চিমের হিট্টিটদের ভূখণ্ড দখল করে নেয় এবং দক্ষিণের মিশরীয়দের সঙ্গে একটি চুক্তি করে।
মিশরের উত্তর সীমান্ত ততদিনে ইউফ্রেটিসের তীর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে রাজ্যের এই অংশ কখনোই খুব বেশি নিরাপদ ছিল না। এটি মেমফিস থেকে অনেক দূরে ছিল এবং হিট্টিটদের বেশি কাছে ছিল। স্বভাবতই মিশরের সীমানা তাদের আরও একটি শত্রুর কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
আরও কয়েক শতাব্দী আগে, প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালের দিকে, জাগরোস পর্বতের ঢাল বেয়ে একটি পার্বত্য জাতি পশ্চিমদিকে যাত্রা শুরু করে। হুরিয়ান নামে পরিচিত এই জনগোষ্ঠী মেসোপটেমিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত টাইগ্রিস নদী পার হয়ে বিভিন্ন শহরের বাইরের প্রান্তে ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে বাসা বাঁধে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ সাল পর্যন্ত অল্প কয়েকটি স্বাধীন হুরিয়ান রাজ্য আসসুর ও নিনেভেহ-এর উপর-মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে—টিকে যায়। কিছু হুরিয়ান আরও পশ্চিমে চলে গেছিল। এসিরীয় বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে হিট্টিটদের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের নথিতে হুরিয়ানদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
হুরিয়ানরা কোনো সুসংগঠিত জাতি ছিল না। তারা আরও বছরের পর বছর আরামে ছন্নছাড়া হয়ে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে ছড়িয়েছিটিয়ে জীবনযাপন করতে পারত; কিন্তু বাদ সাধল একদল অনুপ্রবেশকারী। আরিয়ানদের একটি বিচ্ছিন্ন দল বাকিদের সঙ্গে দক্ষিণে ভারত অভিমুখে অভিযোজন না করে পশ্চিমে এসে মেসোপটেমিয়ায় পৌঁছায়। তাদেরকে হুরিয়ানরা স্বাগত জানিয়ে তাদের সমাজের অংশ করে নেয়। আরিয়ানরা হুরিয়ানদের সঙ্গে মেলামেশা করে পরিবার গঠন করে। তারা নিজেদের মধ্যে বিয়েশাদি করে এবং এক পর্যায়ে দেখা যায় আরিয়ানরাই সর্বময় ক্ষমতা দখল করে নিচ্ছে। পরিশেষে তারা হুরিয়ান শাসকগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়—যাদেরকে ম্যারিয়ানু বলা হতো। এই ম্যারিয়ানু ও হুরিয়ানরা মিলে “মিটান্নি’ রাজ্য নামে পরিচিত হয় এবং তারা যথাক্রমে সম্প্রদায়ের উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়ের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।
হুরিয়ানরা লেখালেখির ব্যাপারে খুব বেশি উৎসাহী ছিলেন না তাই তাদের ভূখণ্ডে ১৭০০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে কী চলছিল তা বোঝা বড়ো দায়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মিশরের রাজা টুথমোসিস তৃতীয় তার উত্তরাভিমুখী অভিযান শুরু করে দিয়েছেন। মিটান্নি রাজত্বের নিজস্ব ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজধানী ছিল ওয়াক্কানিতে—ইউফ্রেটিসের একটু পূর্বদিকে। ইতিহাসের পাতায় প্রথম ম্যারিয়া রাজা হিসেবে পারাট্টারনার নাম পাওয়া যায়। তিনি হাতহেপশুটের সমসাময়িক ছিলেন। তার দিক-নির্দেশনায় হুরিয়ান সেনাবাহিনী মেসোপটেমিয়ার একেবারে নিচের দিকে আসসুর পর্যন্ত পৌঁছে গেছিল।
আসসুর হাম্মুরাবির ব্যাবিলনীয় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে সামসুইলুনা দুইবার এর আধিপত্য হারানোর পর বিভিন্ন যোদ্ধা-সর্দার বিভিন্ন সময় একে দখল করে রেখেছেন। পরিশেষে এই শহর মিটান্নি রাজত্বের একটি প্রদেশে পরিণত হয় এবং এই শহরের রাজা মিটান্নি রাজার দূত হিসেবে রাজ্য শাসন করতে থাকেন।
মিটান্নিরা তখনও মিশরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো শক্তিশালী ছিল না। টুথমোসিস তৃতীয়-এর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা পেছনে হটে। টুথমোসিসের জয়রথের প্রমাণ হিসেবে ইউফ্রেটিসের পূর্ব উপকূলে একটি বিজয় মিনার তৈরি করা হয়েছিল যেটি মিটানি রাজত্বের অংশ ছিল।
টুথমোসিস তৃতীয় যে বছর মিশরে ফিরে এসে মারা গেলেন সেই বছরই সাউসটারার নামক এক ব্যক্তি ওয়াক্কানিতে মিটানির সিংহাসনে বসলেন। তিনি তার নিজস্ব সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করলেন। তার সৈন্যরা পূর্বদিকে টাইগ্রিসের তীর এবং পশ্চিমে এশিয়া মাইনরের কাছে টারসাস পর্যন্ত অগ্রসর হয়।
পূর্বদিকে তারা মোটামুটি বিনা বাধায় এগিয়ে যেতে পারলেও পশ্চিমে হিট্টিটদের মুখোমুখি হয়। দক্ষিণে অগ্রসর হতে গিয়ে সাউসটারার সরাসরি টুথমোসিসের বংশধরদের সামনে পড়ে যান।
হিট্টিটদের সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় তারা একজন আক্রমণাত্মক মিটান্নি রাজার নেতৃত্বাধীন সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর সামনে পড়ে মোটেও খুশি হতে পারেনি।
হিট্টিটদের মধ্যে গুপ্তহত্যার প্রবণতা ও বিরামহীনভাবে রাজপ্রাসাদের পটপরিবর্তনের কারণে যখনই নতুন শাসক আসতেন তখনই তাকে একেবারে গোঁড়া থেকে সব কাজ শুরু করতে হতো। তার নিজের কর্মকর্তা ও হাটুসাসের মানুষদের বোঝাতে হতো যে তিনিই দেশের যোগ্যতম শাসক। এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময় চলে যেত, যার ফলে সীমান্ত রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য শাসকদের হাতে আর তেমন কোনো সময় বা শক্তি থাকত না। দেশের সীমানার প্রান্তে থাকা শহরগুলো একে একে বেদখল হতে লাগল।
সাউসটারার হিট্টিটদের পশ্চিম সীমান্ত আক্রমণ করার প্রায় ৭৫ বছর আগে টেলেপাইনাস নামের একজন হিট্টিট ব্যক্তি এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন।
টেলেপাইনাস প্রকৃতপক্ষে রাজকীয় বংশের সদস্য ছিলেন না। তার শ্যালক একদল গুপ্তঘাতক ভাড়া করে পুরো রাজবংশকে হত্যা করার ব্যবস্থা নেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শুধু রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যরা নয় বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও সকল উত্তরাধিকারী নিহত হয়। এমনকি সরাসরি রাজপরিবারের নয় কিন্তু পরবর্তীতে সিংহাসনের দাবি জানাতে পারে এরকম সকল পরিবারকেও ধ্বংস করেন তিনি। টেলেপাইনাসের শালা বড়ো আকারের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে শুরু করেন। এই অবস্থায় টেলেপাইনাস জানতে পারেন তাকেও হুমকি হিসেবে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে তার শালা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে টেলেপাইনাস নিজেই তার শালাকে শহর থেকে বের করে দিয়ে নিজেকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দেন।
তবে এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা টেলেপাইনাস নিজেই দিয়েছেন, তাই এগুলোকে অনেকাংশে অতিরঞ্জিত বলা যেতে পারে। তবে তার বর্ণনা থেকে অন্তত এটুকু বোঝা যায় কেন হিট্টিট জাতি পিছিয়ে যাচ্ছিল। এক রাজা থেকে আরেক রাজার হাতে ক্ষমতা যাওয়া এবং নতুন রাজার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এতটাই ঘোলাটে হয়ে গেছিল যে তারা তাদের মূল দায়িত্ব রাজ্য শাসনের পেছনে তেমন একটা সময় দিতে পারতেন না। টেলেপাইনাস তার শাসনামলের শুরুতেই এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন। ‘ইডাইট অব টেলেপাইনাস’ নামের নথিতে তিনি বিস্তারিতভাবে এক শাসকের কাছ থেকে পরের শাসকের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের নিয়মকানুন লেখা শুরু করেন। তিনি মুখবন্ধে উল্লেখ করেন, হিট্টিটরা শুধু তখনই টিকতে পারবে যখন এই নিয়মগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘রাজার প্রথম এবং প্রধান স্ত্রীর ঔরসজাত জ্যেষ্ঠ পুত্রকেই (রাজপুত্র ) পরবর্তী রাজা হতে হবে।’ যদি প্রথম সারির কোনো রাজপুত্র না থাকে তা হলে দ্বিতীয় সারির রাজপুত্র (রাজার অন্য কোনো স্ত্রীর সন্তান) উত্তরাধিকার পেতে পারে। যদি কোনো রাজপুত্রই না থাকে সেক্ষেত্রে প্রথম সারির রাজকন্যার স্বামীকে রাজা হিসেবে নির্বাচন করা হবে’- যোগ করেন তিনি।
এই এডিক্ট বা রাজকীয় বার্তায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন জাদুবিদ্যা ব্যবহার ও হত্যাকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। একই কাজ ব্যাবিলনের হাম্মুরাবি আরও ২০০ বছর আগে করে রেখে গেছেন। শুরুর সময়টা এলোমেলো হলেও টেলেপাইনাস চেষ্টা করছিলেন তার রাজত্বে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে। এর আগে পর্যন্ত রাজ্যে মিলিটারি শাসন বলবৎ ছিল। প্রথমবারের মতো হিট্টিটদের সামনে একটি প্রকৃত রাজত্ব হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ এলো।
১৫০০ সালে টেলেপাইনাস মৃত্যুবরণ করেন—যে সময়ে হাতহে পশুট মিশরের ক্ষমতা জোরদখল করেছেন। ততদিনে হিট্টিটরা আগের বছরগুলোর ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়গুলো পেরিয়ে একই স্থিতিশীল রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, হাম্মুরাবি মারা যাওয়ার পর যেমন তার কোডের গুরুত্ব কমে গেছিল, একইভাবে টেলেপাইনাসের ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতি ছাড়া তার এডিক্টও খুব একটা কার্যকর থাকেনি। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তার আগেই মারা গেছিলেন। তার নিজেরই বানানো আইন অনুযায়ী টেলেপাইনাস তার বড়ো মেয়ের জামাইর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যান। কিন্তু খুব শিগির এক গুপ্তঘাতকের কাছে বড়ো জামাই ক্ষমতা হারান এবং এর পরের এক শতক আবারও হিট্টিট সাম্রাজ্য অভ্যন্ত রীণ গোলযোগের মধ্যে দিয়ে যায় এবং এই সময়ের তেমন কোনো নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৬ জন রাজার হাতে ক্ষমতা অদলবদল হয় এবং সীমানার প্রান্ত থেকে একে একে বিভিন্ন শহর তাদের হাতছাড়া হতে থাকে। এই অবস্থায় বিভাজিত ও এলোমেলো হিট্টিট বাহিনী টুথমোসিসের অদম্য বাহিনীর সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যায়। টুথমোসিস বংশের তৃতীয় রাজার বাহিনী কারচেমিশে ঢুকে পড়ে এবং হিট্টিটরা পিছু হটে তাদেরকে সেই এলাকার দখল নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ইতোমধ্যে সাউসটারারও হিট্টিটদের ভূখণ্ডে আক্রমণ শুরু করেন। হিট্টিট বাহিনী মিটানিদেরকেও পরাজিত করতে পারেনি। সাউসটারার খুব সহজেই পশ্চিমের টারসাস দখল করে নেন। আলেপ্পো তাকে নজরানা দিয়ে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়। একই কাজ করে হিট্টিটদের শহর আলালাখ ও উগারিট
এই যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে আসসুরের লোকজন সুযোগ বুঝে মিটান্নি শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। সাউসটারার ধৈর্য সহকারে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠান। তার উদ্দেশ্য ছিল বিদ্রোহীদের শিক্ষা দেওয়া এবং একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো বিদ্রোহ দেখা না দেয় সেটাও নিশ্চিত করা। তিনি আসসুরের স্বর্ণ-খচিত তোরণটি খুলে নিয়ে রাজধানী শহর ওয়াকান্নিতে নিয়ে আসেন।
টুথমোসিস তৃতীয়-এর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মিশরের উত্তরাঞ্চলের পশ্চিমা সেমাইটদের শহরগুলোতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। সাউসটারার মিশরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে উসকে দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। তিনি এমনকি তার নিজের সেনাবাহিনীও পাঠান কাদেশের বিদ্রোহীদের সহায়তা করার জন্য। টুথমোসিসের ছেলে ও সদ্য অভিষিক্ত আমেনহোটেপ দ্বিতীয় শিগগির সৈন্যদল নিয়ে উত্তরের দিকে রওনা হলেন। তার শাসনামলের দ্বিতীয় বছর নাগাদ তিনি মিটান্নি সীমান্তের কাছাকাছি চলে এলেন।
তবে সেখানে বড়ো আকারের কোনো যুদ্ধ হয়নি। সাউসটারারের অধীনে মিটান্নি রাজত্ব বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তাদের ক্ষমতার দাপট এত বেশি ছিল যে আমেনহোটেপ যুদ্ধ করে হেরে যাওয়ার চেয়ে তাদের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।
তিনি তার নিজের দেশে এই চুক্তিকে বিজয় হিসেবে দেখানোর জন্য প্রবল প্রচেষ্টা করেন। কারনাকের এক শিলালিপিতে দাবি করা হয়েছে, মিটানি হাঁটু গেড়ে বসে তার কাছে দয়া ভিক্ষা করেছে। বিষয়টির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে : ‘মিটান্নির প্রধানরা তার কাছে এলেন। তাদের পিঠভর্তি নানারকমের উপঢৌকন। তারা মহান রাজার কাছ থেকে শান্তি ভিক্ষা চাইতে এসেছিলেন। এটি ছিল একটি গৌরবান্বিত মুহূর্ত। এরকমটি প্রাচীন যুগে আর শোনা যায়নি। যে ভূখণ্ড মিশরকে চিনত না তারা এখন মহান রাজার কাছে ক্ষমা চাইছে।’
নিঃসন্দেহে এটি মুখ রক্ষার প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমেনহোটেপ পরাজয়ের ভয়ে আক্রমণ করেননি। এই চুক্তির কোনো অনুলিপি টিকে থাকেনি। তবে কয়েক শতাব্দী পরেও দুই দেশের মধ্যে প্রথাগত একটি সীমানা দেখা গেছে। এটি ওরেন্টেস নদীর পাশ দিয়ে টানা হয়েছিল।
পরবর্তী ১২ বছরের মধ্যে আমেনহোটেপ দ্বিতীয় এবং সাউসটাটার তাদের নিজ নিজ মসনদ তাদের পুত্রদের কাছে হস্তান্তর করেন। টুথমোসিস চতুর্থ অভিষিক্ত হলেন এবং মিটানিদের রাজধানী ওয়াশুল্কানিতে আরটাডামা রাজা হলেন। ১৪২৫ সালের আশেপাশে এই দুই রাজা তাদের মধ্যের শান্তিচুক্তি নবায়ন করলেন। একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর করা হয়েছিল এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে টুথমোসিস আরটাডামার এক কন্যাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন।
কয়েক দশক পর, আরটাডামার নাতির লেখা এক চিঠিতে টুথমোসিস ও আরটাডামার মধ্যে কী ধরনের বার্তার আদানপ্রদান হয়েছিল সেই ব্যাপারে জানা যায়। তার ভাষ্যমতে, টুথমোসিস আরটাডামাকে চিঠি লিখে তার নিজের স্ত্রী হিসেবে তার কন্যার হাত চেয়েছিলেন। ‘তিনি পাঁচ থেকে ছয়বার চিঠি দিয়েছিলেন, তাও আমার দাদা টুথমোসিসের অনুরোধে কর্ণপাত করেনি। তবে সপ্তমবার একই অনুরোধ জানানোর পর আমার দাদা রাজি হন।
তবে এই গল্পটিও বিশ্বাসযোগ্য নয়। মিশরীয় ফারাওরা বিদেশি রাজকন্যা বিয়ে করার জন্য ‘অনুরোধ’ জানাতেন না। তবে মিশরীয়দের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর মিটান্নিরা বিশেষ সম্মান পেতে শুরু করলেন। মেমফিসের রাজকীয় প্রাসাদের মতো মিটানি রাজপ্রাসাদও সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে লাগল।
টুথমোসিস চতুর্থ এই শান্তিচুক্তির জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেননি, তবে এটি প্রাচীন মিশরের জন্য বেশ সুফল বয়ে আনে। এই চুক্তির পর তারা কানানের বাসিন্দাদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। পশ্চিমা সেমাইট শহরগুলো দক্ষিণ ও উত্তরের এই দুই বড়ো সাম্রাজ্যের বিশালতা অনুধাবন করে কোনো ধরনের ঝামেলা পাকানোর চিন্তা বাদ দেয় এবং সেই অঞ্চলে একটি ভয়মিশ্রিত শান্তি বিরাজ করতে থাকে।