অধ্যায় আঠারো – প্রথম প্রাকৃতিক দুর্যোগ

অধ্যায় আঠারো – প্রথম প্রাকৃতিক দুর্যোগ 

খ্রিষ্টপূর্ব ২০৩৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত উর-এর তৃতীয় রাজবংশের শাসনামলজুড়ে ছিল বহিঃশত্রুর হামলা, বিদ্রোহ আর দুর্ভিক্ষের ছোবল। এই নব্য- সুমেরীয় সাম্রাজ্যে আইনের শাসন ছিল প্রসংশনীয় মাত্রায় কিন্তু তার স্থায়িত্ব খুব বেশিদিন থাকেনি। 

৪৭ বছরের সুদীর্ঘ এবং মঙ্গলজনক শাসনামল শেষে শুলগি তার ছেলের হাতে সিংহাসনের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তবে ততদিনে ছেলেরও অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল এবং মাত্র ৮ বছরের মাথায় তার পরিবর্তে মসনদে বসেন শুলগির পৌত্র শু-শিন। শু-শিনের হাত ধরে উর-এর চতুর্থ রাজবংশের সূত্রপাত এবং সেই সময় থেকেই এককালের প্রভাবশালী সাম্রাজ্যটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। 

বেশ কিছুদিন ধরেই পশিচমা সেমাইটদের যাযাবর গোষ্ঠী এমোরাইটরা শক্তি সঞ্চয় করছিল। তারা পশ্চিমের সীমারেখা তথা কানান এবং অন্যান্য নব্য- সুমেরীয় অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছিল। শু-শিনের আমলে এমোরাইটরা প্রবল পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়। 

শত শত বছর কিংবা সহস্র বছর ধরে সমতলভূমির শহরগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ গম উৎপাদন হচ্ছিল। এসব শহরের সম্পূর্ণ জনবসতির খাদ্যের জোগান দেওয়া এই গম চাষের জন্য নদী থেকে খাল কেটে এনে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নদীর পানি বড়ো বড়ো ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হতো যাতে শুষ্ক মৌসুমেও চাষাবাদের কাজে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। 

তবে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদের পানি সুপেয় হলেও তাতে সামান্য লবণের মিশ্রণ ছিল। এই লবণাক্ত পানি যখন ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হতো তখন খনিজ পদার্থবহুল মাটি থেকে সেই পানি আরও বেশি লবণ আহরণ করত। এই সংরক্ষিত পানির বেশির ভাগ অংশই জমি শুষে নিত সেচ দেওয়ার সময় এবং কিছুটা জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ে যেত; আর রেখে যেত আরও কিছু পরিমাণ লবণ যা ভূমির লবণাক্ততা বাড়াত। 

স্যালিনাইজেশন নামক এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিতে লবণের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে শস্য ধ্বংস হতে শুরু করেছিল। গমের ফলনের জন্য লবণাক্ত ভূমি বড়ো ধরনের হুমকি। এই কারণেই সম্ভবত সুমেরীয় শহরের নথিসমূহ থেকে জানা যায় যে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালের আগে দিয়ে গমের পরিবর্তে বার্লির চাষ শুরু হয় —অধিকতর লবণবান্ধব একটি শস্য। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে বার্লির চাষও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় জমির লবণাক্ততার কারণে। শস্যের পরিমাণ কমতে থাকে এবং একইসাথে মাংসেরও আকাল দেখা দেয়; কেননা প্রাণীদের খাবারও কমে যায় একই কারণে। 

একজন লিখিয়ের বর্ণনায় জানা যায় যে শু-শিনের আমলে এসে কিছু আবাদি জমির মাটি একেবারে সাদা হয়ে গিয়েছিল। সেই যুগে প্রচলিত বাগধারায় এই পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। কৃষকরা লবণাক্ত ভূমি নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন। একটি প্রবাদ ছিল এরকম : ‘যেহেতু ফকিররা জানে না কীভাবে বার্লির বীজ বপন করতে হয়, তারা কীভাবে গম উৎপাদন করবে?’ আরেকটি প্রবাদে বলা হয়েছে : “নদী থেকে একজন শক্তিমান মানব উঠে আসবেন এবং তিনি ভূমির সকল লবণ শুষে নেবেন।’ 

সুমেরীয় কৃষকরা একেবারেই অজ্ঞ ছিলেন না; তারা ফসল উৎপাদনের প্রাথমিক এই সমস্যার ব্যাপারে ভালোই জানতেন। কিন্তু এটির একমাত্র সমাধান ছিল শস্যাবর্তন-প্রতি বছর চাষ না করে এক বছর পরপর চাষ করা। এক বছর আবাদ না করার কারণে জমিতে গভীরভাবে আগাছার জন্ম হয় আর সেই আগাছার গোড়াগুলো মাটির নিচের পানি শুষে নিয়ে লবণ দূর করে। এর ফলে পরের বছর ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর কোনো ঝামেলা হয় না। কিন্তু এই এক বছরে সুমের শহরের লোকেরা কী খাবে? আর কীভাবেই বা তারা শুলগি দ্বারা প্রচলিত এবং তার বংশধরদের দ্বারা প্রচারিত কর ও খাজনাগুলো পরিশোধ করবে? 

‘উইড ফ্যালোয়িং’ নামে পরিচিত এই আগাছা উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি চালু না করলে ভূমিগুলো এতটাই বিষাক্ত ও অনাবাদি হয়ে পড়ছিল যে সেসব ভূমি পুনরায় আবাদযোগ্য হতে ৫০ বছরেরও অধিক সময় প্রয়োজন হতো। এই অবস্থায় যখন স্বল্পসংখ্যক উর্বর ও আবাদি জমিগুলোতে এমোরাইটরা আক্রমণ করা শুরু করল তখন তা আর শুধু সামান্য ‘বিরক্তিকর’ ঘটনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তা হয়ে দাঁড়ায় সুমেরীয়দের জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার। মেসোপটেমীয় সমতলভূমিতে সীমিত পরিমাণ আবাদি জমি ছিল। চারপাশের পাহাড় পর্বত ও মরুভূমির আধিক্যের কারণেই এই সীমাবদ্ধতা। 

পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্যের অভাবে সুমেরীয় জনগোষ্ঠীর পেটে থাকত ক্ষুধা এবং তাদের স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে লাগল। এই কারণে তাদের মাঝে ঐক্যের অভাব দেখা দিয়েছিল এবং শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকল। 

উর-এর তৃতীয় রাজবংশ শস্য উৎপাদন থেকে প্রচুর কর ও খাজনা আদায় করতেন যা দিয়ে তারা সৈন্যদের বেতন দিতেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেতন না পেয়ে সৈন্যরা অন্যান্য কাজে চলে যায় এবং এমোরাইটদের বিদায় করা হয়ে দাঁড়ায় চরম দুরূহ একটি ব্যাপার। 

শু-সিন তার শাসনামলের প্রথম তিন বছরে ক্রমাগত সম্মুখযুদ্ধে পরাস্ত হতে থাকলেন। চতুর্থ বছরে এসে তিনি মরিয়া হয়ে একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করলেন যা এর আগে কখনও ব্যবহৃত হয়নি। তিনি একটি ১৭০ মাইল লম্বা প্রাচীর তৈরি করার নির্দেশ দিলেন যা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসের মধ্যবর্তী সমতলভূমিজুড়ে উর-কে এমোরাইটদের হাত থেকে রক্ষা করবে। 

তবে এই প্রাচীরটি শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই আসেনি। শু-সিনের পুত্র ইব্বি-সিন অল্পদিনেই হাল ছেড়ে দেন; তিনি প্রাচীরের পেছনের আবাদি জমিগুলোর প্রতিরক্ষার জন্য কোনো চেষ্টাই করেননি। দারিদ্র্য, অরাজকতা এবং মুহুর্মুহু আক্রমণে তার রাজত্বের তথৈবচ অবস্থার সৃষ্টি হয়—একের পর এক অঞ্চল তার হাতছাড়া হয়ে যায়। শুধু এমোরাইটরাই নয়, তার নিজের ক্ষুধার্ত ও ক্ষুব্ধ প্রজারাও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তার বিরুদ্ধে। ইব্বি-সিনের রাজত্বের দুই বছরের মাথায় তার রাজ্যের উত্তর কোণে অবস্থিত এশনুন্না শহরের লোকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং খাজনা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ইব্বি-সিনের পক্ষে সম্ভব হয়নি যুদ্ধ করে এই শহরটিকে পুনর্দখল করে নেওয়ার। পরবর্তী বছরে আনশানের এলামাইট রাজা ৫০ বছর ধরে চলে আসা চুক্তি ভঙ্গ করে বসেন, যে চুক্তিটি সম্পাদন করেছিলেন শুলগি, তার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। সুসা শহর থেকে সুমেরীয়দের বিতাড়ন করা হয়। আরও দুই বছর পর উম্মা স্বাধীনতা অর্জন করে। ইব্বি-সিনের শাসনের অষ্টম বছরে অতীব সম্মানজনক নিপ্পুর শহরও তাকে রাজা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে। 

তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। ইব্বি-সিনের ক্ষমতা যত কমে আসছিল, তিনি তার সৈন্যবাহিনীর হাতে তত বেশি করে কর্তৃত্ব ছেড়ে দিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় দশম বছরে ইশবি-এররা নামক একজন সেমাইট বংশোদ্ভূত সেনাপতি নিজেই ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে একটি রাজনৈতিক চাল চালেন। 

বলা বাহুল্য, উর তখন দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত ছিল। ইব্বি-সিন তার বিশ্বস্ত সেনাপতি ইশবি এররাকে উত্তরের ইসিন ও কাজাল্লু নামক দুটি শহরে পাঠিয়েছিলেন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। 

মাটির ট্যাবলেটে সংরক্ষিত একগাদা চিঠি থেকে আমরা ইশবি এররার কূটকৌশলের বিস্তারিত জানতে পারি : ‘আমি বিশ ট্যালেন্ট (প্রাচীন যুগে সোনা- রুপা মাপার একক; ১ ট্যালেন্ট প্রায় ৩৩ কেজি) রুপা খরচ করেছি শস্য ক্রয় করার জন্য এবং আমি ইসিনে আছি।… আমার কাছে তথ্য রয়েছে যে মারতু জাতি আমার অবস্থান আর গন্তব্যের মাঝের এলাকায় আক্রমণ করেছে। আমি এখন আপনার কাছে এই শস্য নিয়ে ফিরে আসতে পারছি না, যদি না আপনি আমাকে ছয়শ নৌকা প্রদান করেন এবং ইসিন ও নিপ্পুরের দায়িত্ব প্রদান করেন। যদি আপনি এই কাজটি করতে পারেন তা হলে আমি আপনাকে পনেরো বছর চলার মতো যথেষ্ট পরিমাণ শস্য সরবরাহ করতে পারব।’ 

এটি ছিল দিনদুপুরে ব্ল্যাকমেইল করার শামিল; এবং ইব্বি-সিনও বুঝে গিয়েছিলেন এই চক্রান্তের কথা। কাজাল্লুর গভর্নর তার কাছে পত্র পাঠিয়ে অভিযোগ জানান যে রাজার জন্য শস্য আহরণের ছলে ইশবি এররা প্রকৃতপক্ষে নিপ্পুর দখল করে নিয়েছেন এবং সাথে সাথে তার নিকটবর্তী কিছু শহরে লুটতরাজ চালিয়ে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর ইশবি এররা এখন কাজাল্লুর জন্যও হুমকিস্বরূপ। সেই গভর্নর খেদ নিয়ে লিখেছেন : ‘আমি আমার রাজাকে জানাই যে আমার কোনো মিত্র নেই। আমার পাশে হাঁটার জন্য কাউকে পাচ্ছি না খুঁজে।’ 

ইব্বি-সিনের পক্ষে সম্ভব ছিল না ইশবি এররার বিরুদ্ধাচারণ করার, কারণ তার কাছে ছিল সৈন্যদলের একটি বড়ো অংশের কর্তৃত্ব এবং সর্বোপরি খাদ্যশস্যের সিংহভাগটাও সে দখল করে রেখেছিল কূটবুদ্ধির মাধ্যমে। সুতরাং, স্বভাবতই কাজাল্লুর গভর্নরকে পাঠানো উত্তরে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব এবং মরিয়া ভাব : ‘আমি তোমাকে সৈন্যসামন্ত দিয়েছি এবং তাদের নেতৃত্বভারও তোমার হাতে। তুমি কাজাল্লুর গভর্নর। কীভাবে এটা সম্ভব হলো যে তুমি বুঝলে না ইশবি এররার মতলবটি কী ছিল? কেন তুমি তার বিরুদ্ধে লড়তে যাওনি? এখন ইশবি এররা চাইলেই নিজেকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। এবং সে এমনকি সুমেরীয়ও নয়। দেবতাদের দরবারে সুমেরকে চরমভাবে অসম্মানিত করা হয়েছে এবং যেসব শহরের দায়িত্ব তোমার হাতে ছিল তার সবগুলোর কর্তৃত্বই এখন ইশবি এররার হাতে চলে গিয়েছে। আমাদের একমাত্র আশা এখন মারতুর কাছে তার পরাজিত হওয়া।’ 

কিন্তু এমোরাইটরা ইশবি এররাকে পরাজিত করতে পারেনি এবং যেমনটা ইব্বি-সিন ভয় পাচ্ছিলেন, ঠিকই সেই বিদ্রোহী সেনাপতি নিজেকে ‘ইসিন রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে ঘোষণা করে বসেন এবং ইসিনকে রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি উর শহরের সমগ্র উত্তরাঞ্চলের অধিপতি হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। এই ইসিন রাজবংশ এমোরাইটদের প্রতিহত করতে সমর্থ হয় এবং প্রায় দুইশ বছর ধরে সুমেরীয় সমতলভূমির উত্তরাঞ্চলকে শাসন করে যায়। 

ইতোমধ্যে ইব্বি-সিনের হাতে থেকে যায় শুধু তার বিশাল সাম্রাজ্যের হৃদযন্ত্রটি; অর্থাৎ উর শহরের শাসনভার। 

এই পর্যায়ে এসে আমরা শকুন-শকুনিদের আনাগোনা দেখতে পাই সুমেরীয় সাম্রাজ্যে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০৪ সালে এলামাইটরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠে কিন্ডাত্তু নামক একজন রাজার অধীনে। সেই সাম্রাজ্যে ছিল না সুমেরীয়দের কোনো স্থান এবং দশকের পর দশক ধরে অন্যায় শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা তেঁতে উঠেছিল। তারা টাইগ্রিস নদের উপর দিয়ে ঝড়ের মতো উড়ে আসে, ভেঙে দেয় উরের প্রাচীর, পুড়িয়ে দেয় রাজপ্রাসাদটিকে এবং মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় সকল উপাসনালয় আর পবিত্র স্থানগুলো। এভাবেই পাকাপাকিভাবে যবনিকাপাত ঘটে সুমেরীয় যুগের। 

যেসব ভূমি তখনও লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠেনি সেগুলোকেও পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ইব্বি-সিনকে একজন সাধারণ অপরাধীর মতো বন্দি করে আনশানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীকালে লেখা কবিতাগুলোতে শুধু উর শহরের মৃত্যুকে নিয়ে শোক প্রকাশ করা হয়নি বরং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষ্টির অপমৃত্যুর কথাও বলা হয়েছে—

 ‘শহরের সুউচ্চ তোরণগুলোতে দেখা যায় লাশের স্তূপ 
যেসকল রাস্তায় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান হতো 
সেখানে দেখা যায় ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ছিন্ন 
মস্তক 
যেখানে নাচের অনুষ্ঠান হতো সেখানে লাশের মিছিল 
নদীতে ধুলার বন্যা, শহরে বইছে না কোনো পানির ধারা 
ঘাস-আচ্ছাদিত সমতলভূমি ইটের ভাঁটার মতো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।’ 

উর-এর ধ্বংস হয়ে যাওয়াটা শুধু ইব্বি-সিনের ব্যর্থতাই ছিল না বরং এখানে চন্দ্রদেবতা নান্না এবং অন্যান্য রক্ষাকারী দেবদেবীর অপারগতাকে উন্মোচিত করে দিয়েছিল সবার সামনে। তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন তাদের দায়িত্ব পালনে। 

‘পিতৃদেব নান্না 
তোমার গানটি রূপান্তরিত হয়েছে নির্বাক কান্নায় 
তোমার শহর কাঁদছে তোমার তরে, পথহারা শিশুর মতো
তোমার ঘর তোমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে 
অশ্রুসিক্ত আর্তি জানাচ্ছে : কোথায় তুমি? 
আর কতদিন তুমি তোমার শহর থেকে দূরে থাকবে?’ 

আব্রাহাম ও টেরাহ উর থেকে পালিয়েছিলেন এই আশঙ্কায় যে চন্দ্রদেবতা তাদের শহরকে রক্ষা করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে শহর তো দূরে থাক, সে তার নিজের মন্দিরটিকেও রক্ষা করতে পারেনি। প্রাচীন প্রকৃতি-দেবতা তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল, যেমনটি উর-এর সকল জমি তাদের উর্বরতা হারিয়ে ফেলেছিল। 

সুমেরীয় যুগের পরিসমাপ্তি এভাবেই এসেছিল। সেমাইটদের আধিপত্য শুরু হয়; আক্কাদীয়, এমোরাইট ও এলামাইটরা মিলে সমতলভূমি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। তবে সেই ভূমি আর কখনোই প্রাচীন যুগের রাজাদের সমকালীন উর্বরতা ফিরে পায়নি, যখন সবুজে ছেয়ে থাকা ভূমির মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো অবারিতভাবে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *