ঋগ্বেদ ০৮।০০৮

ঋগ্বেদ ০৮।০০৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল  সূক্ত ৮
অশ্বিদ্বয় দেবতা। কণ্বগোত্রীয় সধ্বংসাখ্য ঋষি।

১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা দর্শনীয়, তোমাদের রথ হিরন্ময়, তোমরা সমস্ত রক্ষার সহিত আগমন কর, সোমময় মধু পান কর।

২। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা ভোক্তা, হিরন্ময় শরীরবিশিষ্ট, কবি ও গম্ভীরচিত্র; তোমরা সূৰ্য্যের ন্যায় উজ্জল রথে অবশ্য আমাদের নিকট আগমন কর।

৩। হে অশ্বিদ্বয়! দোষবর্জিত স্তুতিপ্রযুক্ত অন্তরিক্ষ হইতে মনুষ্য লোকাভিমুখে আগমন কর ও কণ্বদিগের যজ্ঞে অভিযুত সোম পান কর।

৪। কণ্বের পুত্র এই যজ্ঞে তোমাদের জন্য সোমময় মধু অভিষব করিতেছেন; অতএব হে অশ্বিদ্বয়! অধোলোকের প্রতি প্ৰীতিবিশিষ্ট হইয়া তোমরা দ্যুলোক হইতে ও অন্তরিক্ষ হইতে আগমন কর।

৫। হে অশ্বিদ্বয়! সোমপানার্থে আমাদের স্তুতিবিশিষ্ট এই যজ্ঞের আগমন কর। হে কবি ও নেতাদ্বয়! তোমরা স্তুতিপ্রযুক্ত ও কৰ্ম্মপ্রযুক্ত স্তোতার বৃদ্ধি প্রদান কর।

৬। হে নেতাদ্বয়! পূর্বকালে ঋষিগণ যখন তোমাদিগকে রক্ষার্থে আহ্বান করিয়াছিলেন, হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা আগমন করিয়াছিলে। অতএব আমার এই সুস্তুতির নিকট আগমন কর।

৭। হে স্বৰ্গবিৎ অশ্বিদ্বয়! তোমরা দ্যুলোক ও অন্তরিক্ষ হইতে আমাদের নিকট আগমন কর; হে বৎসের প্রতি প্রকৃষ্ট জ্ঞানবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! তোমরা বুদ্ধির সহিত আগমন কর; হে আহ্বান শ্রবণকারিদ্বয়! তোমরা স্তোত্রের সহিত আগমন কর।

৮। আমি ভিন্ন অন্য কেহ কি স্তোম দ্বারা অশ্বিদ্বয়ের উপাসনা করিতে পারে? কণ্বের পুত্র বৎসঋষি স্তুতিদ্বারা তোমাদিগকে বৰ্দ্ধিত করিতেছে।

৯। হে অশ্বিদ্বয়! এই যজ্ঞে স্তোতা রক্ষার্থে স্তুতিদ্বারা তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছে। হে পাপশূন্য, শত্রুবিনাশকগণের শ্রেষ্ঠ অশ্বিদ্বয়! তোমরা আমাদের সুখপ্রদ হও।

১০। হে অন্নযুক্ত ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! যোষিৎ তোমাদের রথে আরোহণ করিয়াছিলেন। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা সমস্ত অভিলষিত পদার্থ প্ৰাপ্ত হও।

১১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা যে স্থানে আছ, বহুতর রূপযুক্ত রথে আরোহণ করতঃ সেই স্থান হইতে আগমন কর। কবির পুত্র কবিবৎস মধুময় বাক্য উচ্চারণ করিতেছেন।

১২। হে বহুমদবিশিষ্ট, বহুধনযুক্ত, ধনপ্রদ জগৎ বাহক অশ্বিদ্বয়! আমার এই স্তোত্র প্রশংসা কর।

১৩। হে অশ্বিদ্বয়! আমাদিগের জন্য যশস্কর সমস্ত ধন দান কর, আমাদিগকে প্রজোৎপাদনরূপ কৰ্ম্মবান কর, নিন্দাকদিগের বশীভূত করিও না।

১৪। হে নাসত্যদ্বয়! দূরদেশেই থাক, অথবা নিকটেই থাক, যে স্থান হইতেই হউক, সহস্ররূপবিশিষ্ট রথে আগমন কর।

১৫। হে নাসত্যদ্বয়! যে বৎস ঋষি স্তুতিদ্বারা তোমাদিগকে বৰ্দ্ধিত করিয়াছেন, তাহার জন্য সহস্ররূপবিশিষ্ট, ঘৃতক্ষরণশীল অন্ন প্রদান কর।

১৬। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা উহার জন্য ঘৃতধারাযুক্ত বলকর অন্ন প্রদান কর। হে দানাধিপতিদ্বয়! ইনি আপনাদের সুখের জন্য স্তুতি করিয়াছেন এবং নিজের জন্য ধন অভিলাষ করেন।

১৭। হে শত্রভক্ষক বহুভোজী নেতা অশ্বিদ্বয়! তোমরা আমাদের এই স্তুতিক্রমে আগমন কর, আমাদিগকে সুশ্ৰী কর ও পার্থিব পদার্থ প্রদান কর।

১৮। প্রিয় মেঘনামক ঋষিগণ, দেবগণের আহ্বান সময়ে তোমাদিগকে সমস্ত রক্ষার সহিত আহ্বান করিয়াছে। তোমরা যজ্ঞে শোভা পাও।

১৯। হে সুখপ্রদ, আরোগ্যপ্রদ, স্তুতিযোগ্য অশ্বিদ্বয়! যে বৎস স্তুতিদ্বারা তোমাদিগকে বর্ধিত করিয়াছে, তাহার অভিমুখে আগমন কর।

২০। যে উপায়দ্বারা কণ্বকে, মেধাতিথিকে, বশকে, ও দশব্রজকে, এবং গোশর্য্যকে রক্ষা করিয়াছ, হে নেতাদ্বয়! তাহাদ্বারা আমাদিগকে রক্ষা কর।

২১। হে নেতা অশ্বিদ্বয়! যাহা দ্বারা প্রাপ্তব্য ধনের জন্য ত্রসদস্যুকে রক্ষা করিয়াছিলে, তাহারই দ্বারা আমাদিগকে অন্নলাভার্থে উত্তমরূপে রক্ষা কর।

২২। হে বহু ত্ৰাতা, শত্ৰুনাশকগণের শ্রেষ্ঠ অশ্বিদ্বয়! দোষশূন্য স্তোম ও বাক্য সকল তোমাদিগকে প্রবর্ধিত করুক। তোমরা আমাদের সম্বন্ধে বহুলরূপে অভীপ্সিত হও।

২৩। অশ্বিদ্বয়ের তিন পদ(১) গুহায় বর্তমান থাকিয়া পরে আবির্ভূত হইতেছে। কবি অশ্বিদ্বয়, যজ্ঞের হেতুভূত এই পদের সাহায্যে জীবলোকে শ্রেষ্ঠ হইয়াছেন।

————
(১) অর্থাৎ রথের তিন চক্র। সায়ণ।