ঋগ্বেদ ০৬।২২

ঋগ্বেদ ০৬।২২
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ২২
ইন্দ্র দেবতা । ভরদ্বাজ ঋষি ।

১। মানবগণের যিনি একমাত্র আহ্বানযোগ্য, যিনি স্তোতৃবর্গের নিকট আগমন করেন, যিনি অভীষ্টপূরক, বলবান, সত্যনিষ্ঠ, শক্রবিজয়ী, বিবিধ জ্ঞানসম্পন্ন ও শক্তিমান, আমি এই সমস্ত স্তোত্রদ্বারা সেই ইন্দ্রের স্তব করিতেছি।

২। আমাদিগের প্রাচীন পিতা নবগ্ব সপ্তর্ষিগণ হব্য প্রদানপুৰ্ব্বক সেই ইন্দ্রেরই স্তব করিয়াছিলেন, তিনি শক্ৰ গৰ্ব্বখর্বকারী, পৰ্য্যটনকারী, মেঘ সমূহে অবস্থিত ও অলঙ্ঘ্য বাক্।

৩। আমরা সেই ইন্দ্রের নিকট পুত্রপৌত্ৰাদি পরিচারকবর্গ ও পশুযুদ্ধ সহকারে অবিচ্ছিন্ন, অক্ষয় ও সুখদায়ক ধন প্রার্থনা করিতেছি। হে অশ্বগণের অধিপতি! তুমি আমাদিগকে সুখী করিবার নিমিত্ত সেই ধন আহরণ কর।

৪। হে ইন্দ্ৰ! যদি পূৰ্ব্বকালে ত্বদীয় স্তোতৃগণ সুখলাভ করিয়া থাকেন, তবে আমাদিগকেও সেই সুখ প্রদান কর। হে দুৰ্দ্ধৰ্ষ, শক্রবিজয়ী, ঐশ্বৰ্য্যশালী পুরুহূত! তুমি অসুরনিহন্তা(১), তোমার জন্য কোন ভাগ ও কোন হব্য কল্পিত হইয়াছে।

৫। যে যজমান স্বতিদ্বারা বজ্রপাণি, রথারূঢ়, বহুলোকের আশ্রয়দাতা, বহুকর্মের অনুষ্ঠানকারী, বলপ্রদাতা ইন্দ্রের গুণ কীৰ্ত্তন করে, সেই যজমান শীঘ্ৰ সুখলাভ করিবার নিমিত্ত অগ্রসর হয় এবং শক্রর সম্মুখীন হয়।

৬। হে নিজবলে বলীয়ান ইন্দ্র! তুমি এই মায়াদ্বারা প্রবৃদ্ধ, প্রসিদ্ধ বৃত্রকে পৰ্ব্বযুক্ত ও মনোবৎ বেগগামী বজ্র দ্বারা চূর্ণ করিয়াছ। হে শোভন দীপ্তিশালী মহেন্দ্ৰ! তুমি নিজ দুৰ্দ্ধর্ষ বজ্রশদ্বারা অক্ষয়, অশিথিল ও দৃঢ় পুরী সকল ভগ্ন করিয়াছ।

৭। হে ইন্দ্ৰ! আমি প্রাচীনদিগের ন্যায় প্রাচীন ও নিরতিশয় বলশালী তোমার গৌরব নবীনতর স্তোত্রদ্বারা বিস্তৃত করিতেছি। অপরিমেয় ও শোভন বহনকারী ইন্দ্ৰ যেন আমাদিগকে সমস্ত বিঘ্ন হইতে উদ্ধার করেন।

৮। হে ইন্দ্ৰ! তুমি উৎপীড়কদিগের জন্য পৃথিবী, স্বর্গ ও অন্তরিক্ষস্থিত স্থান সকল সন্তপ্ত কর। হে অভীষ্টবর্ষী! তুমি নিজ দীপ্তিদ্বারা সৰ্ব্বত্র তাহাঁদিগকে দাস কর এবং স্তুতি দ্বেষ্টার নিমিত্ত স্বৰ্গ ও অন্তরিক্ষকে সন্তপ্ত কর।

৯। হে সমুজ্জ্বল মূৰ্ত্তি ইন্দ্র! তুমি স্বৰ্গীয় ও পার্থিব জনগণের অধীশ্বর। হে স্বত্যতীত ইন্দ্ৰ! তুমি যে বজম্বারা মায়া উচ্ছিন্ন কর, দক্ষিণ হস্তে সেই বজ্ৰধারণ কর।

১০। হে ইন্দ্ৰ! তুমি আমাদিগকে সমবেত, বিপুল মঙ্গলময় সম্পত্তি প্রদান কর, যেন শক্ৰগণ বর্ষণ করিতে সমর্থ না হয়। হে বজ্ৰধর! তুমি ষে সম্পত্তিদ্বারা কি দস্যু, কি আর্য্য সমুদয় মানব শক্রকে(২) সুজেয় সম্পাদন করিয়াছ। … … …?

১১। হে বহুলোকের বন্দনীয়, সৃষ্ট বিধায়ক, যাগার্হ ইন্দ্ৰ! তুমি সৰ্ব্ব প্রশংসিত সেই সমস্ত অশ্ব সমভিব্যাহারে আমাদিগের নিকট আগমন কর, যাহাদিগকে কি অদেব, কি দেব, কেহই নিরুদ্ধ করিতে সমর্থ হয় না। এই সমুদয় মশ্ব সমভিব্যাহারে তুমি শীঘ্ন আনাদিগের সম্মুখে উপস্থিত হও।

————–
১) মূলে “অসুরঘ্নঃ” আছে। অর্থ বলবান শত্রুদিগের হন্তা। ইহা ভিন্ন ষষ্ঠ মণ্ডলের অন্য কোনও স্থানে “অসুর” শব্দ ব্যবহৃত হয় নাই।

২) ভারতবর্ষে লোকের মধ্যে তৎকালে এই বিভাগটী ছিল, “আর্য্য” ও “দস্যু”। অন্য প্রকার জাতি সৃষ্ট হয় নাই।