ঋগ্বেদ ০৬।০২

ঋগ্বেদ ৬ মণ্ডল, ২ সূক্ত
অগ্নি দেবতা। ভরদ্বাজ ঋষি।

১. হে অগ্নি! তুমি মিত্রের ন্যায় শুষ্ক ইন্ধন সহকারে প্রদত্ত হব্যের উপর অবতরণ কর; অতএব হে সর্ব্বদর্শী, ধনসম্পন্ন অগ্নি! তুমি অন্ন ও পুষ্টিদ্বারা আমাদিগকে বর্দ্ধিত কর।

২. হে অগ্নি! মনুষ্যগণ হব্য ও স্তোত্রদ্বারা তোমার পূজা করে; দ্বেষ-বর্জ্জিত, বারিবর্ষক ও সর্ব্বদর্শী সূর্য তোমাতে প্রবিষ্ট হন।

৩. হে অগ্নি! যৎকালে মনুর সন্তান মনুষ্য সুখাভিলাষী হইয়া যজ্ঞে তোমাকে আহ্বান করে, তৎকালে স্তুতিপাঠক ঋষিক্‌গণ সমসুখভাগী হইয়া যজ্ঞের কেতুভূত তোমাকে প্রজ্বালিত করে।

৪. হে অগ্নি! তুমি দানশীল, যে মর্ত্ত্য যজ্ঞকার্যদ্বারা তোমাকে প্রসন্ন করে, তাহার সমৃদ্ধি হউক। তুমি দীপ্তিশালী, সে ব্যক্তি তোমাকর্ত্তৃক রক্ষিত হইয়া ভীষণ পাপের ন্যায় শত্রুগণকে পরাভূত করে।

৫. হে অগ্নি! যে মর্ত্ত্য ইন্ধনদ্বারা ত্বদীয় মন্ত্র সংস্কৃত আহুতি পরিপুষ্ট করে, সেই ব্যক্তি পুত্রপৌত্রাদিসম্পন্ন গৃহে শত বৎসর পরিমিত আয়ু ভোগ করে।

৬. হে অগ্নি! তুমি দীপ্তিশালী, তোমার নির্ম্মল ধূম অন্তরীক্ষে বিস্তৃত হইয়া (মেঘরূপে) পরিণত হয়; হে পাবক! তুমি স্তোত্রদ্বারা প্রসন্ন হইয়া সূর্য্যের ন্যায় দীপ্তি সহকারে বিরাজিত হও।

৭. হে অগ্নি! তুমি মনুষ্যগণের স্তুতিভাজন, কারণ তুমি অতিথির ন্যায় আমাদিগের প্রিয়, নগরীস্থ (হিতোপদেষ্টা) বৃদ্ধের ন্যায় আশ্রয়যোগ্য এবং পুত্রবৎ পালনীয়।

৮. হে অগ্নি! ঘর্ষণদ্বারা অরণিতে ত্বদীয় বিদ্যমানতা প্রকাশিত হয়; অশ্ব যেরূপ (নিজ আরোহীকে বহন করে) তদ্রুপ তুমি (হব্যবহন) কর; তুমি বায়ুর ন্যায় সর্ব্বত্র গমন কর; তুমি অন্ন ও গৃহ (প্রদান কর); তুমি শিশুর ন্যায় এবং ঘোটকের ন্যায় কুটিলগামী।

৯. হে অগ্নি! তৃণ (ভক্ষণার্থ মুক্তবন্ধন) পশু যেরূপ (সমস্ত তৃণ ভক্ষণ করে) তদ্রুপ তুমি অপতিত (বৃক্ষ সকলকে) ভক্ষণ কর; হে অবিনশ্বর অগ্নি! তুমি দীপ্তিশালী, তোমার শিখাসমূহ অরণ্য সকলকে ছেদন করিতে থাকে।

১০. হে অগ্নি! তুমি যজ্ঞ করিতে অভিলাষী মনুষ্যদিগের গৃহে হোতারূপে প্রবিষ্ট হও। হে মনুষ্য পালন! তুমি তাহাদিগের সমৃদ্ধি বিধান কর। হে অঙ্গিরা! তুমি হব্য স্বীকার কর।

১১. হে অনুকুল দীপ্তিসম্পন্ন, স্বর্গ ও পৃথিবীতে অবস্থিত, দেব অগ্নি! দেবগণের নিকট আমাদিগের স্তোত্র প্রচার কর। স্তোত্রকারীগণকে সাংসারিক সুখে লইয়া যাও। আমরা যেন শত্রু, পাপ ও কষ্ট হইতে পরিত্রাণ পাই; আমরা যেন সেই সকল (পূর্বজন্মের পাপ হইতে) মুক্ত হই; আমরা যেন ত্বদীয় রক্ষা (বলে) তৎসমুদয় হইতে উদ্ধার পাই।