দি পেল হর্স – ২০

বিংশ অধ্যায় 

জিনজারকে ফোনে জানালাম যে, আগামীকাল বোর্নমাউথে ‘ডিয়ার পাক’ হোটেলে উঠেছি। কিছুদিন ওখানে থাকার পক্ষে হোটেলটা সত্যিই উপযুক্ত। তাছাড়া হোটেলটা থেকে বেরিয়ে লন্ডনে গোপনে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করাও সহজ হবে। 

জিনজার জবাব দিলো—তুমি এখানে এলে একঘেয়েমি কিছুটা কাটবে। নইলে আমি নিজেই ওখানো যাবো। 

সহসা আমার মনে একটা সন্দেহ দেখা দিল। শুধালাম—জিনজার তোমার কণ্ঠস্বর বদলে গেছে কেন? 

—ও কিছু না। ঠিক আছে। তুমি ভেবো না। 

—কিন্তু তোমার গলার স্বর? 

—গলায় একটু ঘা হয়েছে, আর কিছু না। 

ফোনে জিনজারের কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হলো—মার্ক, ভয় পেয়ো না। সত্যি বলছি ভয় পাওয়ার মতন কিছু হয়নি। 

—হয় তো নয়। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। তোমার ডাক্তারকে আসতে বলো। এক্ষুনি। 

—ঠিক আছে। 

ফোন রেখে বসে রইলাম। ভয়…না, না। ভয়ের শিকার হবে না। বছরের এ সময়টা চারধারে ফ্লু হয়। হয় তো সামান্য ঠান্ডা লেগে হয়েছে। কিন্তু আমার মনের চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে অন্য দৃশ্য। সিবিল ময়ূরকণ্ঠী রঙ পোশাক পরে বলছে, হুকুম করছে। আর ঘড়ির রেখা টানা মেঝেতে বেল্লা অশুভ মন্ত্র আওড়াচ্ছে—তার হাতে ছট্‌ফট্ করছে সাদা মোরগ। 

আর বাক্সটা…ওটা আর মানসিক কুসংস্কারের বাক্স নয় ওটা এক বৈজ্ঞানিক উন্নতির সম্ভাবনা…কিন্তু তা সম্ভব নয়…কিছুতেই সম্ভব নয়। মিসেস ডেন ক্যালথ্রপ বললেন—খারাপ খবর। মনে হচ্ছে একটা অশুভ খবর। 

—তারা যা করতে পারে বলেছে তা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আপনি বিশ্বাস করতে পারেন না। 

—এর আগে তুমি আর স্বীকার করেছো, এমনটা ঘটতে পারে, ঘটা সম্ভব অথবা তুমি যা করছো তা করতে না। তুমি বিশ্বাস করেছো এবং রাতে প্রমাণও দেখেছো। 

—প্রমাণ? কি প্রমাণ দেখেছি? 

—জিনজার অসুস্থ হয়েছে এটাই প্রমাণ। 

—আপনি কি বলছেন এই হাস্যকর যাদু বিদ্যায় কাজ হয়? 

মিসেস ক্যালথ্রপ বললেন—কিছু কিছু কাজ হয়। এর মুখোমুখি আমাদের হতেই হবে। এটা এক ধরনের জমকালো সাজ সরঞ্জাম-এর সাহায্যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা তৈরি করা হয়। সেই অবস্থার আড়ালে এসব কাজ করা হয়। 

—তাহলে পুলিশকে সব কিছু জানানো দরকার। বললাম। 

—পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো কিছু করতে আগ্রহী হবে না। 

সহসা মিসেস ক্যালথ্রপ বলে উঠলেন—মনে হচ্ছে আমি বোকামি করছি। বোকামি করছি। বোকা বনছি। এটা এক ধরনের যোগ সাজশ। এই সব যোগ সাজশের মাধ্যমে ওরা—আমাদের সম্মোহিত করেছে। ওরা আমাদের দিয়ে যা ভাবাতে চায় তাই ভাবা ছাড়া আমরা আর কিছু করতে পারছি না। মিসেস ক্যালথ্রপ বললেন, ঘণ্টা দুয়েক পরে জিনজার আমাকে দেখেছেন। আমার জ্বর বেড়েছে। তাঁর ধারণা আমার ‘ফ্লু’ হয়েছে। ফ্লুতে তো জ্বর হয়, তাই না? তুমি আসছো শুনে দারুণ ভালো লাগছে। 

****

ইনসপেক্টর লেজুনকে ফোন করে বললাম—মিস করিগ্যান অসুস্থ। 

—কি বলছেন? জিনজার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

ডাক্তার জানিয়েছে, ওর ফ্লু হয়েছে। হতেও পারে, কিন্তু নাও হতে পারে। জানি না ওর জন্যে কি করতে পারবেন। তবে ওকে দেখবার জন্যে স্পেশ্যালিস্ট ডাক্তার ব্যবস্থা করতে পারেন। 

—কি ধরনের স্পেশ্যালিস্ট? 

—একজন মনঃ বিশ্লেষক। যিনি সম্মোহন এবং মস্তিষ্ক ধোলাই সম্পর্কে সব কিছু জানেন তেমন একজন বিশেষজ্ঞ ত পাওয়া যায়, তাই না? 

—নিশ্চয় আছে। দু একজন আমাদে দপ্তরের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে। ইস্টারব্রুক মনে হচ্ছে আমরা যে ভয় করেছিলাম তাই ঘটতে চলেছে। 

সজোরে ফোনটা নামিয়ে রাখলাম।