দি অ্যাডভেন্ট অফ স্যাটান – ১

আমেরিকান বন্ধু, নাম তার রেক্স ভ্যান যখনই ইংল্যান্ডে আসতেন গৃহস্বামী ডিউক দ্য রিশলো তাঁর সেরা মদ বার করতেন। সেদিন আটটায় ডিনার খাওয়া হয়ে গেলো। কিন্তু দশটার আগে কফি পরিবেশিত হল না। অতি আশ্চর্য দু-জনের এই বন্ধুত্ব বয়সে, আকৃতিতে, জাতিতে প্রচুর পার্থক্য সত্ত্বেও কিন্তু দু-জনের মধ্যে প্রকৃত বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। 

কয়েক বছর আগে রেক্সকে হঠকারিতার জন্যে সোভিয়েট রাশিয়ায় জেল খাটতে হয়েছিল। অপরাধটা হল, নিষিদ্ধ দেশ রাশিয়ার কিছু গোপন তথ্য তিনি পেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সেই অভিযানে ছিলেন তরুণ রিচার্ড ঈটন আর রাজকন্যা মেরী যাকে ঈটন রাশিয়া 

থেকে বিয়ে করে এনেছিলেন। তবে, বয়স্ক ফরাসী, দেশত্যাগী কুন্ট দ্য রিশলোর সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা অধিক হওয়ায় রেক্স কাউন্টের বাড়িতেই উঠতেন। তাঁদের তৃতীয় বন্ধু, অত্যন্ত বুদ্ধিমান সাইমন অ্যারনের প্রতীক্ষায় ছিলেন। এই সাইমন রাশিয়া থেকে বিতাড়ির হওয়ার সময় নানাভাবে রেক্সকে সাহায্য করেছিলেন। সাইমন ছিলেন এক ইংরেজ ইহুদি। তাঁর আসতে বিলম্ব দেখে রেক্স অবাক হচ্ছিলেন, কারণ তিনজনের এই পুনর্মিলনের ডিনারে সাইমন কোনো সময়ই অনুপস্থিত থাকেননি। ডিনার খেতে বসেই দুইজনের কথা হচ্ছিল। 

রেক্স বললেন, আপনার সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি হয়নি তো? 

আরে না, না। আমার মত নিঃসন্তান ব্যক্তি যার সন্তানের বয়সী দুই বন্ধু, তার পক্ষে কি তাদের একজনের সঙ্গে ঝগড়া করা শোভা পায়? হয়ত হঠাৎ কোনো কাজে আটকে পড়ে থাকবে, নতুবা নিশ্চয় আমার নিকটে গোপন করত না,—তুমি আর আমি—এই দু’জন ছাড়া আর তার তেমন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক’জনই বা আছে বল? আর তার উপর তুমি এই সবে আমেরিকা থেকে এলে। 

হ্যাঁ, আর আছে রিচার্ড, যার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আরও পুরানো। 

কিন্তু গত সপ্তাহে তো আমার ওদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কই, রিচার্ড বা মেরী কারও মুখেই তো সেরকম কিছু শুনিনি। 

কিছুক্ষণ আর দুজনের মধ্যে কোনো কথা হল না। রেক্স অত্যন্ত বিরাটবপু ও শক্তিশালী, তাঁর মুখমণ্ডল সুন্দর না হলেও তাঁর একটা আকর্ষণ আছে। কিন্তু সেই মুখে এখন দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। আর ডিউকের মুখশ্রী সুন্দর, চেহারা একহারা, উচ্চতা মাঝারি। তাঁর চুলে পাক ধরেছে বটে, কিন্তু শরীরে দুর্বলতার কোনো লক্ষণ নেই। 

হঠাৎ কাউন্ট জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা মোকাটার কথা তুমি শুনেছ? 

না তো! কে সে? 

সে হচ্ছে সাইমনের নতুন বন্ধু, সাইমনের বাড়িতেই গত কয়েকমাস হল সে বাস করছে। জান তো, সাইমন গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্ট জনস্ উডে শান্ত পরিবেশে বড় একটা বাড়ি কিনেছে। 

তা, সে তো রিজেন্টস্ পার্কেরও ওদিকে। এই মে–ফেয়ারে এত সুন্দর সুন্দর বাড়ি থাকতে অত দূরে যেতে গেল কেন? 

সেও একটা রহস্য। ডিউকের মুখে একটা হাসি দেখা দিল : সে বলে তার একটা বাগানও দরকার। এর বেশি আর কিছু সে জানাল না। 

মুচকি হেসে রেক্স বললেন, কী বললেন সাইমন বাগান করবে? এও বিশ্বাস করতে হবে? আরে ফুল সম্বন্ধে তো ওর কোনো ধারণাই নেই, ও তো জেরানিয়ামের সঙ্গে ফিউস্যার পার্থক্য জানে না। এছাড়া তার মত এক অবিবাহিত ব্যক্তির অত বড় বাড়ির কী দরকার হতে পারে? 

এ কথার উত্তর হয়ত মোকাটা দিতে পারবে, কিংবা তার আমদানি করা অদ্ভুত চাকরটি।

দেখেছেন নাকি মোকাটাকে? 

দেখেছিলাম একবার, মাস দেড়েক আগে। সাইমন বাড়িতে না থাকায় সে-ই আমার সঙ্গে দেখা করে ভিতরে নিয়ে গিয়েছিল। 

কেমন মনে হয়েছিল তাকে? 

খুব খারাপ। বছর ষাটেক বয়সের এক মস্ত ভুঁড়িওয়ালা লোক সে, মাথাভর্তি টাক, খুব বড় বড় চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, কথায় জড়তা। 

আর তার ভৃত্যটি? 

মুহূর্তের জন্যে আমি তাকে দেখেছিলাম, সে যখন জলঘর পার হয়ে যাচ্ছিল। শিশু বয়সে যে ভূতের কল্পনা আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল তাকে দেখে সে কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। 

কেন, সে কি কালো মানুষ নাকি? 

হ্যাঁ। খুব সম্ভব ম্যাডাগাস্কারের লোক। আশ্চর্য লোক তারা, আধা নিগ্রো আর আধা পলিনেশীয়। ছ ফুট আট ইঞ্চি লম্বা। মুহূর্তের জন্যে তার চোখে আমার চোখ পড়েছিল, সঙ্গে সঙ্গে খুব ইচ্ছে হয়েছিল গুলি করে মারি। অনেক তো ঘুরেছি কত লোক দেখেছি, কিন্তু ওর মত শয়তানী চেহারা আমি আর কখনও দেখিনি। 

সহজে আমি বিচলিত হই না। কিন্তু যা শোনা গেল তাতে সাইমনের সম্বন্ধে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। নিশ্চয় তাকে প্যাঁচে পড়েই ওধরনের মানুষকে বাড়িতে আশ্রয় দিতে হয়েছে। 

দেখ, ডিউক আস্তে আস্তে বললেন, কিছুদিন ধরেই মনে হচ্ছে সাইমন কোনো বিশ্রী ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছে। তোমার অপেক্ষায় থেকেই আমি এতদিন আমার উদ্বেগ চেপে রেখেছিলাম। সাইমন যত ঘনিষ্ঠই হোক তাহলেও তার ব্যাপারে মাথা গলাবার আগে তোমার সঙ্গে পরামর্শ করব বলেই অপেক্ষা করেছিলাম। বল কী করব? 

কী আবার করব? এক্ষুনি দু’জনে যাব ওর বাড়িতে—এই মুহূর্তে, খোলাখুলিভাবে তার সঙ্গে আলোচনা করব। 

কাউন্ট ধীরে বললেন, খুশি হলাম শুনে, আমি সাড়ে দশটায় গাড়ির অর্ডার দিয়েছি। ঠিক আছে তো? কাউন্ট দ্য রিশলোর হিস্পানো গাড়ি সেন্ট জনস্ উডের রাস্তায় থামল। রেক্স নেমে পড়ে চারদিকে তাকালেন। অন্ধকার রাত। বাড়ির উপরতলার ঘরগুলো গাছপালার ফাঁকে মনে হচ্ছে অস্পষ্ট আর রহস্যময়। 

টিপ্‌-টিপ্ বৃষ্টি পড়ছে। ডিউক ঘণ্টা বাজালেন, তারপর একটু পিছিয়ে এসে ভালো করে তাকালেন। বলে উঠলেন, আরে, সাইমনের যে একটা মানমন্দিরও আছে দেখছি, সেদিন তো দেখিনি। কাউন্টের দৃষ্টি অনুসরণ করে রেক্সও দেখতে পেলেন। 

যে ভৃত্য এসে দরজা খুলে দিল সে বোবা কালা। 

আলো ঝলমলে যে ঘরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হল সেখানে ঢুকতে প্রথমটা তাঁদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। চোখ অভ্যস্ত হলে রেক্স বন্ধুর হাতে চাপ দিয়ে বলে উঠলেন, হে ঈশ্বর ও যে এখানে। এক দীর্ঘাঙ্গী কমনীয় মুখশ্রীর তরুণীর প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে তিনি বলে উঠলেন। তরুণীটি কয়েক গজ দূরে সাইমনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। ইতিপূর্বে তিনি দু বার সেই তরুণীকে দেখেছিলেন—একবার নিউইয়র্কের রাস্তায় গাড়ির যানজটে আটকে পড়ায়, আর একবার বুয়েনস এয়ার্সে তিন ব্যক্তির সঙ্গে ঘোড়ায় চড়া অবস্থায়, আর এখন এই মুহূর্তে দেখলেন। 

কাউন্ট একদৃষ্টে সাইমনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, সাইমনও তাকালেন তাঁদের মুখের দিকে। মনে হল সাইমন অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। 

কাউন্ট ছিলেন ভদ্রতার প্রতিমূর্তি। তিনি বললেন, সাইমন, এইভাবে না বলে-কয়ে এসে হাজির হওয়ার জন্যে মাপ চাইছি। 

সাইমন বললেন, কী যে বলেন,—বিশেষ খুশি হলাম আপনাদের দেখে। কী জানেন, আমাদের একটা ছোটখাটো সমিতি আছে, তার কয়েকজন সভ্য এসেছেন। ডিনারে যোগ দিতে পারিনি এজন্যে আমি সত্যিই দুঃখিত। মানে এই মিটিং এর কথা যখন আমার মনে পড়ল তখন ঘড়িতে বাজে বেলা ছ’টা। এরপর যে মোটাসোটা গোলমুখো মানুষের দিকে তাকিয়ে সাইমন তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিলেন দুই পুরানো বন্ধু বলে, কাউণ্ট তাঁকে মোকাটা বলে জানতেন। 

খুশি হলাম আলাপ হতে। মোকাটার কথায় জড়তা—সাইমনের যে কোনো বন্ধুকে স্বাগত জানাতে ভালো লাগে। কিন্তু কথার সঙ্গে তাঁর চোখের চাউনিতে হাসি ফুটল না। তখন কাউন্টের দৃষ্টি এক বয়স্কা স্থলাঙ্গিনীর উপর পড়ল। ভদ্রমহিলা অত্যন্ত সুবেশা এবং অলংকারের ভারে প্রায় নুয়ে পড়া, বললেই হয়। একটা বেশ পুরু চুরুটে তিনি থেকে থেকে বেশ জোরে টান দিচ্ছিলেন। ভদ্রমহিলার নাক তোতাপাখির ঠোঁটের মত। ডিউক বললেন, আপনার চুরুটটা শেষ এবার আমার একটা চুরুট টেনে দেখুন। তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল চোখে পলকের জন্যে ডিউকের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি আংটি শোভিত হাত বাড়িয়ে দিলে বললেন, ধন্যবাদ মঁশিয়ে। বাঃ, দেখছি আপনি এ বিষয়ে বিশেষ সমঝদার। তা আপনাকে তো আগেকার অন্যান্য মিটিং এ দেখিনি। 

কী নাম আপনার? 

ও দ্য রিশলো? হ্যাঁ সত্যিই সমঝদার। আমার নাম দুর্যে,–আমার নাম শুনেছেন হয়ত।

হ্যাঁ শুনেছি বৈকি। তা কী মনে হয়, মিটিংটা বেশ জমবে তো? 

তা আকাশ যদি পরিষ্কার হয়ে যায় তো আজ আমরা অনেক কিছুই শিখতে পাব। ডিউক ভদ্রমহিলার কাছে আরও কিছু খবর পাবেন আশা করেছিলেন, এমন সময় সাইমন চট করে এসে কথাবার্তার ছেদ টেনে ডিউককে আর রেক্সকে নিয়ে চলে গেলেন। যেতে যেতে ডিউক জিজ্ঞাসা করলেন, সাইমন, তাহলে তুমি আপাতত নক্ষত্রবিদ্যায় মন দিয়েছ? অ্যাঁ হ্যাঁ কী জানেন, নক্ষত্রবিদ্যা আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। এই বলে তিনি রেক্সের দিকে তাকালেন। রেক্স তখন তরুণীটির সঙ্গে কথাবার্তায় ডুবে আছেন। 

তরুণীটির দিকে তাকিয়ে যেন পলকের জন্যে ডিউকের বটিচিলির একটা ছবির কথা মনে পড়ে গেল। দেবদূতের মত সুন্দর তাঁর মুখ, কতকটা ইতালীয় ধাঁচের। তারপর তিনি সাইমনের দিকে ফিরলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, কী, মানমন্দিরটার জন্যেই বুঝি বাড়িটা কিনেছ? 

হ্যাঁ আসুন না একদিন রাত্রে, বেশ কয়েকটা তারা দেখতে পাবেন। 

কথাটায় আন্তরিকতার সুর যতই থাকুক এই মুহূর্তে যে তাঁরা স্বাগত নন তা বুঝতে ডিউকের অসুবিধে হল না। 

সাইমন বললেন, আজকের মিটিংটা কোনো সাধারণ মিটিং হলে কথা ছিল না, তাহলে আপনাদের থেকে যেতেই বলতাম। আজ বাৎসরিক সভা কিনা, তাই যাঁরা সভ্য নন— 

ডিউক বললেন, ঠিকই তো, ঠিকই তো। তারপর চাপা গলায় বললেন, মানে আমি একা হলে কথা ছিল না, কিন্তু কি জান, রেক্স হলদে পোষাক পরা মহিলাটির ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহিত হয়ে উঠেছে, ওকে তাড়া দিতে আমার মন সরছে না। 

কী যে বলেন! আপনাদের যে আদৌ চলে যেতে বলতে হচ্ছে এ কথা ভেবে অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করছি। 

এমন সময় এক ভারতীয় এসে উপস্থিত হলেন, মোকাটার সঙ্গে করমর্দন করলেন। আর তাঁর পিছু-পিছু এলেন এক জার্মান যাঁর উপরের ঠোঁট কাটা, চলতি ভাষায় যাকে গন্নাকাটা বলা হয়। 

রেক্স এগিয়ে এলেন। বললেন, সাইমন, অতি আশ্চর্য ব্যাপারটা। এই ভদ্রমহিলাকে আমি বিভিন্ন মহাদেশে দেখেছি, এবং সে কথা তাঁরও মনে পড়েছে—অথচ তোমারই মাধ্যমে আমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। এই বলে তিনি ডিউকের সঙ্গে ভদ্রমহিলার আলাপ করিয়ে দিলেন: আমার বন্ধু ডিউক দ্য রিশলো। আর ডিউক, ইনি হচ্ছে মিস ট্যানিথ। তরুণীটির হাত তুলে রিশলো চুম্বন করলেন। হাতটি প্রায় স্বচ্ছ বলা যায়। পুরানো দিনের ভদ্রতার ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, আমার পরম সৌভাগ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এমন সময়ে পরিচিত হলাম যখন বিদায় নিতে হবে। সাইমনের বাহুতে হাত দিয়ে ডিউক বললেন, একটা কথা সাইমন, যাবার আগে দু মিনিট সময় চাইছি। কথা দিচ্ছি, তার বেশি সময় নেব না। 

বেশ তো, বেশ তো! কিন্তু কী জানেন, আজ যে আপনাদের সঙ্গে ডিনারে যোগ দিতে পারলাম না এজন্যে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তা রেক্স যখন এসেছে তখন আর একদিন একসঙ্গে বসা যাবে। 

নিশ্চয়, নিশ্চয়! কিন্তু সাইমন, আজ রাত্রেই তো মঙ্গল গ্রহ, শুক্র গ্রহের সঙ্গে নয়, শনি গ্রহের সঙ্গে। 

ও! আমার নক্ষত্রবিদ্যায় মরচে পড়ে গেছে দেখছি—কালকের পত্রিকায় ঐ রকমই কি যেন দেখছিলাম। তা আপত্তি আছে, যদি তোমার দূরবীনটা একটু দেখি? এজন্যে বড়জোর পাঁচ মিনিট, আর বেশি দেরি হবে না। সাইমন যেভাবে মাথা নেড়ে জানালেন তাতে তাঁর ইতস্তত ভাবটা প্রায় চাপাই পড়ে গেল। বলে উঠলেন, বেশ তো ঠিক আছে—এখনও তো সকলে এসে হাজির হয়নি। এই বলে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে করে তাড়াতাড়ি উপরে উঠে গেলেন। 

রেক্স বলে উঠলেন, এখানে ইঁদুর আছে সাইমন। কিন্তু ডিউক সেখানেই শত্রু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর সাইমনকে বাধা দেবার সময় না দিয়েই তিনি একটা ঝুড়ির কাছে গিয়ে একটানে ঢাকাটা খুলে ফেললেন। 

কী করছেন—কী করছেন। তাড়াতাড়ি সাইমন বাধা দিতে এলেন, কিন্তু তার আগেই ডিউক যা দেখবার তা দেখে ফেলেছেন। একটা কালো মোরগ আর একটা সাদা মুরগি। মহা ক্রোধে দৌড়ে গিয়ে তিনি সাইমনকে টানতে টানতে নিয়ে এলেন। বলে উঠলেন, মহা আহাম্মক তুমি! ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করতে দেখার চেয়ে বরং তোমার মরা মুখ দেখাও আমার পক্ষে ভালো ছিল। 

ছেড়ে দিন— ছেড়ে দিন আমাকে! সাইমন হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, দেখুন আপনাদের আমি এখানে আনতে চাইনি। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানোর আপনাদের কোনো অধিকার নেই। যার আপনারা! ইতিমধ্যে ডিউকের উত্তেজনা দূর হয়েছে। তিনি বললেন, আমি দুঃখিত, সাইমন। আমি তোমার পিতৃস্থানীয়। তুমি জ্বলন্ত কয়লায় হাত দিতে যাচ্ছে দেখেই বাধা দিয়েছিলাম। নিশ্চয় তুমি স্বীকার করবে, যে খেলা তুমি খেলতে যাচ্ছ তার মতো বিপজ্জনক খেলা আর কিছু হয় না! 

সাইমন বললেন, বিপজ্জনক কেন বলছেন? কত মানুষই তো প্রেতচক্রে বসে, তাদের কার কী অনিষ্ট হয়েছে? 

কাউন্ট বললেন, বেশ তো, তাই যদি হয়, তাহলে কেন আমাদের তা দেখতে বারণ করছ? কিন্তু তা কেমন করে হবে, আপনি তো আমাদের সভ্য নন। তা ছাড়া আমাদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই তেরো হয়ে গেছে। হুম, তেরো হয়ে গেছে, তাই না? শোন সাইমন। তুমি জান, তোমার আর রেক্সের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব এই কারণেই এতদিন বজায় আছে যে কোনো সময়েই আমি তোমার বয়সের আর অভিজ্ঞতার সুযোগ সত্ত্বেও তোমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিনি। কিন্তু আজ আমি বাধা দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমার অনুরোধ, বিশেষ অনুরোধ, এই মুহূর্তে তুমি এই সংসর্গ ছেড়ে আমার সঙ্গে চলে এস। তার জোরেই তোমাকে চলে আসতে অনুরোধ করছি। প্রাচ্য দেশে থাকতে আমি এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করেছিলাম। সাইমন যেন মুহূর্তের জন্যে ইতস্তত করলেন। কাউন্টকে তিনি প্রচুর শ্রদ্ধা করতেন আর ভালোবাসতেন, তাই মনে হল তিনি রাজি হয়েছেন। এমন সময় মোকাটার সুরেলা গলা শোনা গেল—চলে এস সাইমন, সময় হয়েছে, সবাই এসে গেছে। 

যাই। এই বলে সাইমন অসহায়ের মত দুই বন্ধুর মুখের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, আর উপায় নেই, শুনলেনই তো, বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। 

বেশ, তাই যদি, তাহলে দয়া করে আমাদেরও থেকে যেতে অনুমতি দাও। 

আমি অত্যন্ত দুঃখিত, তা সম্ভব নয়। আপনাদের চলে যেতে বলতে বাধ্য হচ্ছি। 

বেশ, তাহলে তাই হোক। এই বলে কাউন্ট এমনভাবে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন যেন হাতে হাত মিলিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই অত্যন্ত আচমকা তাঁর চোয়ালের নিচে প্রচণ্ড জোরে ঘুষি মারলেন। 

সাইমন এর জন্যে একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না, সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন। রেক্স তো একেবারে অবাক! একি, পাগল হয়ে গেলেন নাকি? 

কাউন্ট বললেন, তর্ক কোরো না, তাড়াতাড়ি কর। ওকে নিয়ে যেতেই হবে এখান থেকে যেমন করে হোক, নতুবা ওর সর্বনাশ হবে। 

আর দ্বিরুক্তি না করে মহাশক্তিধর রেক্স সাইমনের দেহ কাঁধে তুলে নিলেন। সিঁড়ি বেয়ে নেমে চললেন দু’জনে। 

ডিউক বললেন, আমি আগে আগে যাচ্ছি, কেউ বাধা দিতে আসলে তাকে সামলাব, —তুমি একে নিয়ে গিয়ে সোজা গাড়িতে তোল। 

কিন্তু যদি শোরগোল শুনে বাড়িসুদ্ধ সবাই দৌড়ে আসে? 

সে অবস্থায় ওকে ফেলে রেখে তুমি তাদের মোকাবিলা করবে। আমি যেমন করে পারি একে নিয়ে যাব। আর যদি ঐ কালো ভৃত্যটা তেড়ে আসে তো খুব সাবধান, ভুলেও তার চোখের দিকে তাকাবে না, তার হাত এড়িয়ে পেটে ঘুষি মারবে। 

ঠিক আছে। 

সিঁড়ি দিয়ে নেমে হলের মাঝখান পর্যন্ত এসে গেছেন, এমন সময় বোবা ভৃত্যটি হঠাৎ হাজির হল। চট্ করে ডিউকের পাশ কাটিয়ে সে মাথা নিচু করে প্রচণ্ড আক্রোশে রেক্সকে তেড়ে যেতে উপক্রম করল। তখনও সে ডিউককে পার হয়ে বিশেষ এগোতে পারেনি, চট করে ডিউক তার কব্জি ধরে ফেললেন, তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে এমন জোরে তাকে টানলেন যে সে সজোরে দেয়ালে ছিটকে পড়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেল। তারপর টলতে টলতে উঠে বসে ভিতরে চলে গেল। 

তাড়াতাড়ি গিয়ে ডিউক গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। রেক্স যখন সাইমনকে গাড়ির ভিতর শুইয়ে দিলেন ততক্ষণে কাউন্ট গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে দিয়েছেন। গাড়ি এগিয়ে চলল। 

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! হাঁপাতে হাঁপাতে ডিউক বলে উঠলেন, সম্ভব হলে ঐ নরকের জীবগুলো আমাদের খুন করত, তবুও সাইমনকে এভাবে নিয়ে যেতে দিত না। 

কী জানি! নিশ্চয় আপনি যা করছেন তার তাৎপর্য বুঝেই করছেন। বুঝতে পারছি না আপনার সঙ্গ কতটা নিরাপদ। 

ডিউক ঈষৎ হেসে বললেন, হয়ত তুমি ভাবছ আমার মাথা খারাপ হয়েছে, পরে এক সময় তোমাকে বুঝিয়ে বলব। 

সাইমনকে লাইব্রেরি ঘরে শুইয়ে দেওয়া হল। ডিউক বললেন, রেক্স, ঐ শয়তানদের আমি তাদেরই অস্ত্রে পরাস্ত করব। 

এমন সময় সাইমন একটা যন্ত্রণাসূচক আওয়াজ করে উঠলেন, চোখ খুললেন। 

পকেট থেকে একটা ছোট গোল আয়না বার করে ডিউক ধীরে ধীরে বললেন, সাইমন, উপর দিকে, আমার দিকে তাকাও। এই বলে তিনি আয়নাটা সাইমনের কপাল থেকে দেড় ফুট দূরে তাঁর চোখ সোজাসুজি নয়, তার থেকে একটু উপরে ধরলেন, যাতে বাতির আলো সেখানে প্রতিফলিত হয়ে তাঁর চোখে পড়ে। 

রেক্স বললেন, একটু নিচে ধরুন, নতুবা যে ওখানে তাকাতে ওর কষ্ট হবে।

তীক্ষ্ণস্বরে তাঁকে চুপ করতে বলে ডিউক বললেন, সাইমন, যেমন বলছি তেমনি তাকাও, আর আমি যা বলছি শোন। তুমি আহত হয়েছ, তোমার মনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কোনো ভাবনা নেই, তুমি তোমার বন্ধুদের সঙ্গে রয়েছ। 

সাইমন পুনরায় চোখ খুলে তাকালেন এবং আয়নার দিকে তাকালেন এবং চোখদুটো সেখানেই স্থির হয়ে রইল। দ্য রিশলো তেমনি ধীরে ধীরে বললেন, তোমাকে আমি ঘুম পাড়াচ্ছি, সাইমন। তোমার দরকার বিশ্রামের, ঘুম থেকে যখন জাগবে তখন আর তোমার শরীরে কোনো যন্ত্রণা থাকবে না। মুহূর্তের মধ্যে তোমার চোখ বুজে যাবে, তারপর দেখবে তোমার মাথা অনেক পরিষ্কার হয়ে গেছে। 

আরও আধমিনিটের জন্যে ডিউক আলোর প্রতিফলন সাইমনের চোখে ফেললেন, তারপর অন্য হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ সেই আয়নার উপর উল্টো করে রেখে সেই হাত আস্তে আস্তে সাইমনের বিস্ফারিত চোখের দিকে এগিয়ে আনলেন। সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শ করার আগেই সাইমনের চোখ নিমীলিত হল। 

কাউন্ট তেমনি শান্তভাবে বলে চললেন, এখন তুমি ঘুমোবে, আগামী কাল বেলা দশটার আগে তোমার ঘুম ভাঙবে না। এবং ঘুম ভাঙামাত্র তুমি আমার কাছে চলে আসবে। হয় এখানে, নয় তো আমার শোবার ঘরে। কারও সঙ্গে কথা কইবে না, কোনো চিঠি তোমার নামে এলে আমার সঙ্গে দেখা করার আগে তা খুলবে না। 

তারপর একটু থেমে তিনি আয়নাটা নামিয়ে রেখে সাইমনের একটা হাত সিধে তাঁর মাথার উপর তুলে ধরলেন। তারপর যখন হাতটা ছেড়ে দিলেন সেটা তেমনি খাড়া আর শক্ত হয়ে রইল, পড়ে গেল না। 

খুশি মনে ডিউক রেক্সকে বললেন, চমৎকার সাফল্য পেলাম। ও এখন সম্মোহনের দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে, ওকে যা বলব ঠিক তা-ই ও করবে। সাফল্যটা অত্যন্ত সহজে এল, এবং তা সম্ভব হয়েছে ও অর্ধসচেতন অবস্থায় ছিল বলে। রেক্সের কিন্তু ব্যাপারটা পছন্দ হল না। তিনি বললেন, ওকে নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করাটা আমি সমর্থন করতে পারছি না এবং আপনি ছাড়া অন্য কেউ হলে কখনই করতে দিতাম না। 

ডিউক বললেন, তুমি যা বললে তা ব্যাপারটা ঠিক না বুঝতে পারার জন্যেই বললে। সম্মোহন বিদ্যা যদি উপযুক্ত লোকের হস্তে থাকে তাহলে তাতে যা কাজ হয় কোনো চিকিৎসাতেই তা সম্ভব হয় না। তারপর তিনি ডেস্ক থেকে একটি বস্তু বার করে এনে সাইমনের কাছে ফিরে গেলেন। তারপরে তেমনি ধীরে ধীরে তাকে বললেন, চোখ মেলে উঠে বস। 

সঙ্গে সঙ্গে সাইমন নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলেন। পরম বিস্ময়ের সঙ্গে রেক্স লক্ষ্য করলেন, সাইমনকে দেখে সম্পূর্ণ জাগ্রত এবং স্বাভাবিক মনে হলেও তিনি যে প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই তা বুঝলেন তাঁর দৃষ্টির শূন্যতা থেকে। এবং যখন ডিউক ডেস্ক থেকে আনা বস্তুটি বাড়িয়ে ধরলেন তখনও তাঁর দিক থেকে কোনো বিতৃষ্ণা জাগল না। বস্তুটি একটি সোনালী স্বস্তিকা, অত্যন্ত মূল্যবান পাথরে খচিত আর সিল্কের ফিতে দিয়ে বাঁধা। 

ডিউক আবার বললেন, সাইমন অ্যারল, এই চিহ্নের সাহায্যে আমি তোমাকে আলোর পরিধির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছি, আলোই এখন থেকে তোমাকে রক্ষা করবে যতক্ষণ এটা ধারণ করবে ততক্ষণ পৃথিবীর, বাতাসের বা আগুনের কোনো শক্তিই তোমার কিছুমাত্র অনিষ্ট করতে পারবে না। এই বলে তিনি স্বস্তিকাটা সাইমনের গলায় পরিয়ে দিলেন। তারপর তেমনি সুরেই বললেন, এবার যাও তোমার ঘরে, এবং আজ রাত্রে যে এখানে থাকবে সে কথা ঘণ্টা বাজিয়ে আমার লোক ম্যাক্সকে ডেকে জানিয়ে দাও, তোমার যা কিছু দরকার হবে ও করবে, যদি তেষ্টা পেয়ে থাকে তো জল খেতে পার। কিন্তু খুব সাবধান মদ একেবারেই চলবে না শান্ত হও, শান্তি তোমাকে ঘিরে বিরাজ করুক। যাও এবার। 

স্বাভাবিক হাসি হেসে সাইমন উঠে দাঁড়ালেন। তারপর দুজনের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, কাল সকালে দেখা হবে, এই বলে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। 

কিন্তু—কিন্তু নিশ্চয় ও ঘুমোচ্ছে না, তাই না? ঈষৎ আশঙ্কার সঙ্গে রেক্স বলে উঠলেন।

হ্যাঁ, ঘুমোচ্ছে বৈকি। কিন্তু তাহলেও কাল ওর সমস্ত কিছুই মনে থাকবে, কারণ স্বপ্নচারীর যে গভীর অবস্থায় পৌঁছলে আমি ওকে সব ভুলে যেতে আদেশ করতে পারতাম সে অবস্থা ওর আসেনি। সে ব্যাপারে সাফল্য পেতে হলে আমার আরও বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন।

কিন্তু দেখবেন জ্ঞান ফিরলে ও খুব রাগান্বিত হয়ে উঠবে-ও হচ্ছে ইহুদি, ওর গলায় কিনা আপনি নাৎসিদের স্বস্তিকা ঝুলিয়ে দিলেন? 

মনটা একটু প্রসারিত করে বোঝবার চেষ্টা কর রেক্স। স্বস্তিকা জগতের সর্বত্র কোনো আবহমান কাল থেকে সুবুদ্ধি আর সুবিবেচনার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক জাতি কোনো না কোনো সময়ে একে গ্রহণ করেছে। যে ক্রুশ চিহ্নকে আমরা নিতান্ত খ্রীষ্টধর্মের প্রতীক বলে গ্রহণ করেছি জেনে রাখ খ্রীষ্টধর্মের হাজার হাজার বছর আগেই তা প্রাচীন মিশরে ভক্তির সঙ্গে পূজিত হত। নাৎসিরা যে স্বস্তিকাকে গ্রহণ করেছে এর কারণ, তারা একে আর্যসম্ভূত বলে জেনেছে এবং নাৎসিদের একটা উদ্দেশ্যই হচ্ছে, আর্যদের একটা বড় অংশকে একত্র করা। নাৎসিদের অধিকাংশেরই এর প্রকৃত তাৎপর্য সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই এবং তাদের কদাচারের ফলে স্বস্তিকার সেই তাৎপর্যের উপর যতই অসম্মান নেমে আসুক তার ফলে তার প্রকৃত তাৎপর্যের উপর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না। ঠিক তেমনি বিচারের নামে স্পেনে যে অত্যাচার চলছিল ক্রুশের প্রকৃত তাৎপর্যের উপর তার কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি। 

রেক্স বললেন, তা অবশ্য বুঝলাম। আমার ঘোরতর আপত্তি হচ্ছে যেভাবে আপনি অনেক কায়দায় একে এখানে নিয়ে এসেছেন তাতে পাগল বলে আপনাকে বন্ধ করে রাখা উচিত, আর নয় তো আমাকেই। 

এ কথায় হাসলেন ডিউক। বললেন, এক অদ্ভুত ব্যাপার আজকের লন্ডনের বুকে ঘটে চলেছে, তাই না? বেশ। এস এ নিয়ে একটু আলোচনা করি। আচ্ছা তুমি তো ব্ল্যাক ম্যাজিক বিশ্বাস কর না। তাই যদি, তাহলে সাইমনের এই আশ্চর্য ব্যবহারের কী কারণ তুমি মনে কর? এটাকে আশ্চর্য বলে মনে কর নিশ্চয়? 

নিশ্চয়, তবে আপনি যেমন বলছেন তেমন আশ্চর্য কিছু নয়। এমন একটা ব্যাপারে সে লিপ্ত ছিল অসংখ্য মানুষের যাতে বিশ্বাস আছে এবং আপনি তো জানেনই, একবার যদি সে কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করে তাহলে সেই চিন্তা ছাড়া অন্য কিছুই তার মনকে নাড়া দিতে পারে না, এবং সেই কারণেই ও আপনাকে একটু অবহেলা করেছিল। হয়ত তার আজ রাতে ডিনারে যোগ না দেওয়ায় আমরা আপত্তি করছি। কিন্তু হয়ত প্রেতচক্রের এই অনুষ্ঠান পেছিয়ে দেওয়া তার পক্ষে শেষ মুহূর্তে সম্ভব হয়নি। তার সেই পার্টিতে নাক গলানোটা স্বভাবতই সে ভালভাবে নিতে পারেনি, এবং এ কথা সে স্বীকার করতে চায় না যে তার পার্টির নরনারীরা অস্বাভাবিক ধরনের, তাই এটাকে মানমন্দিরের ব্যাপার বলে বোঝাতে চেষ্টা করছে, এবং তাতে বেচারা আপনার কাছে ধরা পড়ে গেছে। এরা? প্রচণ্ড খুশি হয়েছে। 

কাউন্ট বললেন, খুবই স্বাভাবিক যে ব্যাপারটা তুমি এইভাবে দেখবে। আচ্ছা, গোড়া থেকেই শুরু করা যাক। স্বীকার করছ নিশ্চয় যে ওকে অজ্ঞান করার পরে আমি এক অতিপ্রাকৃতিক শক্তির বলে ওকে রীতিমত খুশি মনেই শুতে পাঠিয়েছি। 

হ্যাঁ, আজকাল ডাক্তাররাও সম্মোহন শক্তির প্রভাবের কথা স্বীকার করেন। সজ্ঞানে সাইমন কখনই ঐ স্বস্তিকা বরদাস্ত করতে পারত না। 

বেশ, তাহলে তুমি মানছ, এমন কিছু শক্তি প্রয়োগ সম্ভব যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য। কিন্তু আজ তুমি আমাকে যা করতে দেখলে যদি তা অশিক্ষিত লোকদের সামনে করতাম যারা সম্মোহন বিষয়ে কিছু জানে না, তাহলে তারা একে ম্যাজিক বলত, তাই না? 

তা তো বটেই। 

আচ্ছা, এবার আর এক পা এগোনো যাক যদি সেই একই ক্ষমতার প্রয়োগ করে, ধর আমি মাটি থেকে বেশ কয়েক ইঞ্চি উপরে শূন্যে ভেসে থাকি, হয়ত তুমি সেটাকে ম্যাজিক বলবে না, কিন্তু অশিক্ষিত মানুষ তাকে ম্যাজিক বলে সেই পর্যায়ে ফেলবে, কারণ ব্যাপারটা তুমি চিরদিনই অসম্ভব বলে জেনে এসেছ। 

হ্যাঁ, তা ঠিক। 

অবশ্য এ হেন শক্তি যে আমার আছে তা নয়, তবুও আমি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছি, একবার নয়, বেশ কয়েকবার। 

কিন্তু আমি শুনেছি আসলে তারা শূন্যে ভাসে না, দর্শকদের সম্মোহিত করে এরকম দেখানো হয়। 

তাও যদি হয় তাতেও আমার বক্তব্য অপ্রমাণিত হচ্ছে না। যদি স্বীকার কর যে কোনো অজানা ক্ষমতায় আমি সাইমনকে আমার ইচ্ছামত কাজ করাতে পেরেছি, তাহলে এও স্বীকার করবে যে এ হেন এক ক্ষমতা থাকা সম্ভব এবং সেই ক্ষমতা কোনো বিশেষ শক্তিশালী ব্যক্তির হাতে আরও বেশি কার্যকর হতে পারে। 

হ্যাঁ তবে নিশ্চয় এর একটা সীমা আছে। 

কেন সীমা থাকবে? তুমি তো কোনোও ভারি বস্তুর শূন্যে ভেসে থাকা অসম্ভব মনে কর। কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগে কি তুমি বেতারকে সম্ভব মনে করতে? কেউ যদি তা সম্ভব বলে দাবি করত তাহলে তা অলীক কল্পনা মনে করতে না? 

হয়তো তাই। তারপর হঠাৎ সামনে ঝুঁকে রেক্স বললেন, কিন্তু আপনি কি বলতে চান? সম্মোহন বিদ্যা তো শুধুমাত্র মানুষের ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ মাত্র। 

ঠিক, এই তো পথে এসেছ। এই ইচ্ছাশক্তি যেমন ভালো কাজে, তেমনি মন্দ কাজেও প্রয়োগ করা যায়—সংক্ষেপে এ বিষয়ে আমার বক্তব্য এক কথায় এই দাঁড়ায় বটে। একে অদৃশ্য প্রভাব বলা যেতে পারে। এবং এক অতি বিখ্যাত মনস্তত্ববিদ ঠিক এই নামেই একটা বই লিখেছেন, এবং আমি এ পর্যন্ত তাঁর বইয়ের যা বক্তব্য তার দশ ভাগের এক ভাগও তোমাকে বিশ্বাস করতে বলিনি। 

বলেন কী! তা সত্ত্বেও তাঁকে পাগলা গারদে বন্দী করে রাখা হয়নি? 

বিষণ্ণ হাসি হেসে ডিউক বললেন, বন্ধু, মনকে প্রসারিত কর একটু। যীশুখ্রীষ্ট যে সব অলৌকিক কাণ্ড করেছিলেন সে সব বিশ্বাস কর? 

করি। 

আর তাঁর শিষ্যবর্গ, বা অন্যান্য সাধুসন্তরা? 

হ্যাঁ তাও করি। কারণ তাঁরাও স্বর্গ থেকে বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছিলেন। 

হ্যাঁ বিশেষ ক্ষমতা। আচ্ছা, তুমি কি অস্বীকার করবে এই ধরনের বিশেষ ক্ষমতা গৌতম বুদ্ধের এবং তাঁর কিছু শিষ্যেরও ছিল? 

না, কেন অস্বীকার করব? গৌতম বুদ্ধকে অধিকাংশ মানুষই আজকাল ভারতীয় খ্রীষ্ট, বা পবিত্র মানুষ বলে মনে করে। সুতরাং অবশ্যই তাঁর কিছু বিশেষ ক্ষমতা ছিল। 

তাহলে ম্যাজিক কথাটা স্বীকার না করলেও বিশেষ ক্ষমতা, অলৌকিক ক্ষমতা যে মানুষের থাকতে পারে তা তুমি স্বীকার করছ, এবং সেই ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এমন দুই ব্যক্তির মধ্যে যাঁদের বাস ভিন্ন দেশে এবং যাঁদের মধ্যে শত শত বছরের ব্যবধান এবং যাঁদের কিছু শিষ্যও অনুরূপ ক্ষমতার অধিকারী, আর এ হেন ক্ষমতা যে অন্যান্য মানুষের মধ্যে সম্ভব হয়েছে এই কথাও অস্বীকার করতে পার না। 

রেক্স হেসে কথাটা মেনে নিলেন, বললেন, কিন্তু, তার অর্থ এ নয় যে, যেহেতু কিছু মানুষ অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়েছেন সুতরাং ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে কোনো কিছু আছে। 

তাহলে নিশ্চয়ই তুমি ডাকিনীবিদ্যাও বিশ্বাস কর না? 

নিশ্চয়, করি না-ই তো। এ যুগে কেউই করে না। 

তাই নাকি? আচ্ছা ডাকিনীবিদ্যা প্রয়োগের জন্য শেষ কবে মামলা হয়েছিল? 

ধরুন দেড়শো বছর আগে। রেক্স বললেন। 

উঁহু, হয়েছিল ১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দে। প্যারিসের নিকটবর্তী মেলুন-এ। 

কী বিশ্বাস হচ্ছে না? বেশ তাহলে আদালতের নথিপত্রেই আমার এ কথার সমর্থন পাবে। সুতরাং তুমি বলতে পার না ডাকিনীবিদ্যা এ যুগে কেউ বিশ্বাস করে না। এবং এও জেনে রাখ, আজকের দিনেও হাজার হাজার লোক ব্যক্তিগত শয়তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। 

হবেও বা, তারা বোকা-সোকা মানুষ। শিক্ষিত মানুষ নয়। 

হয়তো নয়। কিন্তু তাহলেও যে কোনো চিন্তাশীল মানুষই স্বীকার করবেন যে অমঙ্গলের শক্তি বলে একটা কিছু আছে। 

কেন? 

জান তো, সব গুণেরই একটা বিপরীত গুণ আছে—যেমন ভালোবাসা আর ঘৃণা, আনন্দ আর বেদনা, উদারতা আর স্বার্থপরতা, যীশুখ্রীষ্ট লাওসে অশোক মার্কাস অরেলিস, অ্যাসিসির ফ্র্যান্সিস, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এবং আরও অসংখ্য মানুষের মহত্ত্ব আমরা কেমন করে স্বীকার করতাম যদি না সেই সঙ্গে হেরড, সীজার, বোর্জিয়া, রাসপুটিন, ল্যান্ড্রু, ইভান ক্রয়গার প্রভৃতি অসৎ মানুষের ইতরতার কথা না জানতাম? 

হয়ত আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি। 

বেশ। আচ্ছা এবার শোন গোপন জীবন সম্বন্ধে আমি যা জানি, যা যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছে চলে এসেছে। পারস্য পুরাণের ওজামান্দ আর অরিমানের কাহিনী আর অন্ধকারের চিরন্তন দ্বন্দ্বের কথা, যাদের ক্ষমতা সমান সমান এবং যাদের সংগ্রাম যুগ যুগ ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে—আলোর উদ্দেশ্য মঙ্গল সাধন, আর অন্ধকারের অমঙ্গল সাধন, আলোর প্রতীক স্বাস্থ্য, জ্ঞান, বুদ্ধি ও জীবন, আর অন্ধকারের প্রতীক রোগ, অজ্ঞানতা, ক্ষয় ও মৃত্যু। আলোর মহত্তম প্রকাশ হচ্ছে আত্মার সেই পরমোৎকর্ষের পথে অগ্রসর হওয়া যেখানে পৌঁছলে তা দেহ ত্যাগ করে আলোয় এলাকময় হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু দেখবে, পৌঁছবার পথ যেমন দীর্ঘ তেমনি দুর্গম, মানুষের এক সীমিত জীবনে যেখানে পৌঁছানো অসম্ভব। এবং এই থেকেই পুনর্জন্মে বিশ্বাসের সৃষ্টি। মানুষ বার বার জন্ম নেয় যতদিন না সে দৈহিক সুখ সম্পূর্ণ বর্জন করছে। এই মতবাদ এতই পুরানো যে কবে এর সূত্রপাত কেউই বলতে পারে না। 

দুঃখের বিষয় আজও পর্যন্ত দিন যত ঘণ্টার রাতও ততই, তাই যখন পৃথিবীর বয়স অল্প ছিল, অন্ধকারের শক্তি আজও তখনকার মতই সমানই রয়ে গেছে। ফলে, যখনই কোনো মহাপুরুষের প্রভাবে আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞানতা, লোভ আর ক্ষমতার লালসা এসে তাঁর অনুগামীদের মন মেঘাচ্ছন্ন করে তোলে, ফলে তাঁর বাণী বিকৃত আর অর্থহীন আড়ম্বর আর আচার-সর্বস্ব হয়ে ওঠে। কিন্তু তাতেও প্রকৃত যে সত্য তা কোনোদিনই সম্পূর্ণ হারিয়ে যায় না, এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নতুন নতুন মহাপুরুষ এসে সেই সত্যের প্রকাশে সচেষ্ট হন কিংবা সেই মন্ত্র নির্দিষ্ট কয়েক জনের মধ্যে সঞ্চারিত করে যান। এবং আজও, যখন লন্ডনের নৈশ জীবন যথারীতি চলেছে, এই বর্তমান যুগেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনেক মরমী আছেন যাঁরা সেই পরমোৎকর্ষের সাধনায় একনিষ্ঠ। 

রেক্স বললেন, যাই হোক, এবার সাইমনের প্রশ্নে আসি। সত্যিই কি সে এ হেন এক পাশবিক ব্যাপারে লিপ্ত হয়ে পড়েছে? নিশ্চয়, কোনো সন্দেহ নেই তাতে। কেন, ওদের দলের অন্যদের তুমি লক্ষ্য করনি? ওরা প্রত্যেকেই শয়তানের উপাসক। 

কিন্তু ট্যানিথ? — সে নিশ্চয় নয়, সেও নিশ্চয় সাইমনের মত আকৃষ্ট হয়েই ওখানে গিয়েছিল? 

হয়ত তাই, কিন্তু প্রকৃত প্রমাণ হচ্ছে ঐ ঝুড়িটা যার ভিতরে মোরগ আর মুরগি রাখা ছিল। যুগ যুগের প্রাচীন পদ্ধতিতে তারা তাদের নারকীয় মনিবের জন্যে কালো মোরগ আর সাদা মুরগি বলি দিতে উদ্যত হয়েছে—কে? দরজার একটু আওয়াজ পেয়ে সেদিকে ফিরে রিশলো বলে উঠলেন। 

দরজায় দাঁড়িয়ে ভৃত্য ম্যাক্স বলল, আজ্ঞে এইটে। আমার মনে হয় এটা আপনার কাছে নিয়ে আসা উচিত। এই বলে সে রত্নখচিত স্বস্তিকাটা দেখাল। প্রচণ্ড এক লাফে ডিউক তাকে ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন চিৎকার করতে করতে—সাইমন, আমার হুকুম, স্থির হয়ে থাক। কিন্তু তাঁর ঘরে গিয়ে দেখলেন সাইমনের অন্তর্বাস ছড়িয়ে পড়ে আছে, আর তাঁর শয্যা এলোমেলো হয়ে রয়েছে। ডিউক বসবার ঘরে ফিরে এলেন। তাঁর ধূসর চোখে জ্বলন্ত, ভয়ঙ্কর দৃষ্টি। ভৃত্যের হাত থেকে স্বস্তিকাটা নিয়ে শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা তুমি কোথায় পেলে ম্যাক্স? 

আজ্ঞে এটা আমি মিঃ অ্যাকরনের গলা থেকে খুলে নিয়েছিলাম। 

কী কী বললে? 

আজ্ঞে ঘণ্টা বাজিয়ে আমাকে ডেকে এক দাগ শুরুয়া আনতে বললেন। সেটা নিয়ে যখন ফিরে গেলাম, দেখলাম তিনি ঘুমোচ্ছেন, কিন্তু এমন অদ্ভুতভাবে, যে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। দুসারি দাঁতের ফাঁক দিয়ে জিব বেরিয়ে এসেছে, আর প্রায় সারা মুখটাই কালো হয়ে গেছে। তারপর খেয়াল করলাম তাঁর ঘাড় অত্যন্ত ফুলে উঠেছে, আর এই ফিতেটা অত্যন্ত গভীরভাবে মাংসের ভিতরে চেপে বসেছে। পাছে দম বন্ধ হয়ে মারা যান সেই ভয়ে আমি ফিতেটা কেটে ফেললাম। তখন এই রত্নটা খসে যেতে আমি সোজাসুজি আপনার কাছে নিয়ে আসি। 

ঠিক আছে, তুমি যাও। আমার অপেক্ষায় থেকো না, ফিরতে রাত হতে পারে। দরজা বন্ধ হলে তিনি বললেন, ম্যাক্স পেছন ফেরা মাত্র সাইমনের ঘুম ভেঙেছে, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পোশাক পরে চিমনি দিয়ে পালিয়েছে। 

নিঃসন্দেহে। এবং এতক্ষণে নিশ্চয় সে সেন্ট জনস্ উডের পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। 

চল চল, আমরাও যাব—যেমন করে পারি তাকে উদ্ধার করব। জানি না ঠিক কী ওদের উদ্দেশ্য তবে খুব যে কোনো নোংরা আর ভয়ঙ্করে ঘটনায় ওরা জড়িত তাতে সন্দেহ নেই, নতুবা সাইমনের মত মানুষকে বশ করার মত ঝামেলার ব্যাপারে তারা এগোত না। নিশ্চয় কোনো খুব বড় ব্যাপারে তারা লিপ্ত হয়েছে এবং সেই কাজে তাকে ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। 

দৌড়তে দৌড়তে দুজনে চললেন এবং দৌড়তে দৌড়তেই রেক্স জিজ্ঞাসা করলেন, পারব কি ওকে ধরতে? 

সন্দেহ আছে।—এই ট্যাক্সি। 

ও বড়জোর আমাদের থেকে পাঁচ মিনিট আগে বেরিয়েছে। 

কিন্তু দূরত্ব যেখানে পনেরো মিনিটের, সেখানে পাঁচ মিনিট সময়টা কম নয়। ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে অত্যন্ত গম্ভীর গলায় ডিউক বললেন। 

ব্যাপারটা কী হয়েছে বলে আপনার মনে হয়? 

রেক্স জিজ্ঞাসা করলেন। 

ঠিক বলতে পারছি না, তবে সন্দেহ নেই যে সাইমন সম্পূর্ণভাবে মোকাটার প্রভাবের মধ্যে, এবং বেশ কয়েক মাস ধরেই তাই। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই মোকাটার প্রভাব তার উপর অনেক বেশি প্রবল হবে। আমার আশঙ্কা ছিল, দূর থেকে হলেও মোকাটার প্রভাব হয়ত আমার প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। নিশ্চয় সাইমনকে সে কোনো কিছুর মাধ্যমে ওখান থেকেই লক্ষ্য করছিল এবং সর্বশক্তি ব্যবহার করে তার গলা এমন ফুলিয়ে দিয়েছিল যাতে স্বস্তিকাটা বাধ্য হয়ে খুলে ফেলতে হয়, – ঠিক যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। 

দ্য রিশলোর মতো শিক্ষিত মানুষ যে অতীন্দ্রিয় ব্যাপার এভাবে বিশ্বাস করতে পারেন এই উপলব্ধির ধাক্কা রেক্স তখনও ভালো করে বিশ্বাস করতে পারলেন না। ব্যাপারটার কার্যকর দিকটা নিয়ে তিনি ভাবছিলেন। তাঁরা যখন সাইমনের গৃহ থেকে চলে আসেন তখন সেখানে লোক ছিল অন্তত আটজন। ডিউককে জিজ্ঞাসা করলেন, বন্দুক নিয়েছেন তো? না। আর, নিলেও তা কোনো কাজেই আসত না। 

এ আবার কী উদ্ভট কথা! হয় আপনার মাথা খারাপ হয়েছে, নয় তো আমার! হতাশাব্যঞ্জক ভঙ্গিতে কাঁধ নেড়ে রেক্স বললেন, তবে কি এ সবই এক ভয়ঙ্কর স্বপ্নের অঙ্গ? কিন্তু সেদিনই সন্ধ্যাবেলায় যে ট্যানিথের সঙ্গে আমি কথা কয়েছি সেটা তো স্বপ্ন নয়। এবং তা যদি স্বপ্ন না হয় তাহলে তো কিছুই স্বপ্ন নয়। 

.