দি পেল হর্স – ১৬

ষোড়শ অধ্যায় 

দ্বিতীয়বার মিস্টার ব্রাডলির সাথে দেখা করতে আমি একটুও ভীত, বিব্রত হলাম না। আসলে এই অভিযানে আমার মন দারুণ খুশি। ঠিক আসার আগেই জিনজার আমাকে সাবধান করে বলেছিলো, নিজের ভূমিকায় অভিনয় করার সময় নিজের কথাও মনে রেখো—আর সত্যিই আমি সেই চেষ্টা করছি। 

আমাকে সাদরে আহ্বান করে ঘরে বসালো। বললো আপনাকে দেখে বেশ বিব্রত মনে হচ্ছে। উদ্বিগ্ন এবং সতর্ক। আপনার সতর্কতা খুবই স্বাভাবিক। আপনি নিশ্চয়ই কোনো একটা কাজের জন্য বাজী ফেলতে চাইছেন? 

বললাম চাই। কারণ কাজটা খুবই আমার কাছে জরুরী। 

—মনে হচ্ছে আপনি এখানে নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। ভাবছেন, আমার অফিসে কিছু ছারপোকা রেখে দিয়েছি। ব্রাডলি বললো। 

কথাটা বুঝতে না পেরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। 

—মাইক্রোফোন, টেপরেকর্ডার, এসবের কথাই বলছি। না, এবং আমার এখানে ওসব রাখা নেই। তবে আপনি যদি আলোচনা করার জন্য অন্য কোথাও যেতে চান, আমি সেখানেই যাবো। ভাঁটা চোখ, বেঁটে খাটো লোকটা বললো। 

—না, এখানেই আলোচনা করাই ভালো। আপনার চুক্তির শর্ত বলুন। বললাম। 

—খুব ভাল কথা। মনে হচ্ছে, কোনো ঘটনার জন্য আপনার মন খুবই উদ্বিগ্ন। এখন ঘটনাটা আমাকে খুলে বলুন। জীবনে বহু অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আপনার কাহিনী শুনে মনে হয়, আপনাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পারবো। লোকে বলে, বিপদ ভাগাভাগি করে নিলে বিপদ অর্দ্ধেক হয়ে যায়। 

কাজেই প্রথম বয়সে ডোরিনকে ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করার কাহিনী, তারপর ইতালিতে তার সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হওয়ার কথাও বললাম। ইতালিতে ছাড়াছাড়ির পর থেকে ডোরিন আমার কাছে কোনো চিঠি লেখেনি। 

লেখেনি সে কোথায় আছে, কি করছে। তাই আমিও তার কাছে চিঠি লিখে তার খবর নিতে পারিনি। কিন্তু আচমকা ডোরিন লন্ডনে ফিরে এসেছে। এর মধ্যে আমি আর একটা মেয়েকে ভালোবেসেছি। মেয়েটি আমাকে চায়। ঠিক করেছি, ওকে বিয়ে করবো, কিন্তু ডোরিন ফিরে এসে এখন আমায় বিপদে ফেলেছে। 

—আপনার স্ত্রী কি বিবাহবিচ্ছেদে রাজী হচ্ছে না? 

—না। তাই ত আপনার কাছে এসেছি। আপনি আমাকে আমার স্ত্রীর হাত থেকে মুক্ত করুন। কি আপনার চুক্তি জানান, করুণ কণ্ঠে বললাম। 

—আপনার প্রতি আপনার স্ত্রীর মনোভাব কি? 

—সে আমার কাছে ফিরে আসতে চায়। তার এই ইচ্ছাকে আমি অযৌক্তিক মনে করি।

—আপনার স্ত্রী ত বিদেশে থাকতো, তাই বললেন না। 

—সে বলেছে। আমি ঠিক জানি না। 

বোধ হয় প্রাচ্য দেশেই ছিলো। জানেন তো ও সব দেশে নানা রোগের জীবাণু কিলবিল করে। বেশ কয়েক বছর ওদেশে থাকার জন্য অনেক রোগের বীজাণু তার মধ্যে ঢুকেছে। সেই সব বীজাণুর বিস্ফোরণ ঘটলে মৃত্যু হওয়া সম্ভব। এ ধরনের দু-তিনটা ঘটনা আমি জানি। আপনার স্ত্রীর জীবনেও তা ঘটতে পারে। আপনি যদি খুশি হন তবে আমি এক্ষেত্রে কিছু অর্থ বাজী ধরতে রাজী আছি। বললো মিস্টার ব্রাডলি। 

বললাম—আমার স্ত্রী আরো বহুদিন বেঁচে থাকবে। 

—স্বীকার করছি, আপনার দিকে পাল্লা ভারি। আসুন বাজী ধরি। এখন থেকে খৃস্টমাস এর মধ্যে মহিলার মৃত্যু হবে। বাজির দর। পনের শ’য়ের অনুপাত হবে এক। 

—আরো আগে ঘটনাটা ঘটানো প্রয়োজন। আর অপেক্ষা করতে পারছি না। ইচ্ছা করেই কথাগুলো মিস্টার ব্রাডলিকে বললাম। আমি আমার প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্য অধীর হয়ে উঠেছি—ঘটনাটা তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘটালে আমার জীবন আনন্দে ভরে যাবে। তাছাড়া বেশি দেরী করলে আমার স্ত্রী সোজাসুজি হাজির হবে হারসিয়ার কাছে—তখন আমার বিপদ বাড়বে। 

—তবে আপনার যখন জরুরি প্রয়োজন তখন ঘটনাটা তাড়াতাড়ি করার জন্য চেষ্টা করতেই হবে। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে আপনার স্ত্রীকে খতম করার ব্যবস্থা করতেই হবে। বাজির দর তাহলে পড়বে আঠারশ তে এক এই অনুপাত হবে এক অনুপাতে। 

বুঝতে পারলাম। এবার একটু দর কষাকষি করা প্রয়োজন। তাই প্রতিবাদ করেই জানালাম যে, এত টাকা আমার কাছে নেই। কিন্তু প্রয়োজন হলে সমস্ত অর্থ জোগাড় করা যে আমার পক্ষে সম্ভব তা আঁচ করে নিয়েছিল ব্রাডলি। তার বদ্ধ ধারণা—হারসিয়ার হাতে যথেষ্ট অর্থ আছে। মিস্টার ব্রাডলি জানান যে, ঠিক আছে। বিয়ের পর চুকিয়ে দেবেন। 

চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করলাম। ঋণপত্রের আদলে লেখা চুক্তিপত্র।

শুধালাম—এই চুক্তিপত্র কি আদালতে সিদ্ধ? 

—আদালতে মামলা করা সম্ভব। তবে আমি বলবো, তা করবেন না। বরং আপনি গিয়ে আপনার স্ত্রীর পরা একটা পোশাক নিয়ে আসুন। 

—পোশাক? কি হবে? 

—এই যেমন হাতের দস্তানা বা বডিস কিংবা এক পাটি মোজা। ওটা থিরজা গ্রের প্রয়োজন। 

—কিন্তু কেন? 

—আমাকে প্রশ্ন করবেন না, মিস্টার ইস্টারব্রুক। জানি, জানি। কিন্তু বলতে পারবো না। মিস গ্রে তার কাজকর্ম গোপন করতে চায়। আর আপনাকে আমি একটা উপদেশ দিতে চাই। আপনার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করুন তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে আসুন। তিনি যেন বুঝতে পারেন, আপনি তার সাথে সমঝোতা করতে চান। তারপর কয়েক সপ্তাহের জন্য আপনি বাইরে কোথাও চলে যান। তবে যাওয়ার আগে স্ত্রীর একটা ব্যবহার করা পোশাক নিয়ে সুচ ডিপিঙে যান। আপনার কে একজন খুড়তুতো বোন আছেন না, বলেছিলেন? 

—হাঁ, কিন্তু কেন? 

—তাহলে কাজটা খুব সহজেই চুকবে। আপনার বোনের বাড়িতে আপনি নিশ্চয় কয়েকদিন থাকতে পারবেন। 

—অন্য লোকেরা বেকার ভাগ কি করেছে? তারা কি স্থানীয় সরাইখানায় থেকেছে?

—কেউ কেউ থেকেছে। আবার বোর্নমাউথ থেকে মোটরে যাতায়াত করেছে। 

—কিন্তু আমার খুড়তুতো বোনকে ওখানে থাকার কি কারণ বলবো? সে কি ভাববে?

—বলবেন পেল হর্সের মানুষজনদের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। ওদের ধর্ম সাধনায় যোগ দেবেন। মিস গ্রে এবং তাঁর মাধ্যমের উপর অশরীরী আত্মার ভর হয়। তার সেই ভর নিজের চোখে দেখবেন। মিস্টার ব্রাডলি বললো। 

—ঠিক আছে। কিন্তু ওখান থেকে ফিরে আমি লন্ডনে থাকবো ভাবছি। 

—না, কোনোভাবেই লন্ডনে থাকবেন না। 

—কেন? 

মিস্টার ব্রাডলি বললো—মক্কেলরা যদি আমাদের হুকুম মেনে চলেন তবে তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য। 

—আচ্ছা বোর্নমাউথে থাকবেন কোনোও হোটেলে। লোকজনের সঙ্গে চেনা পরিচয় করে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগবে। 

মিস্টার ব্রাডলির নোংরা হাতে হাত মিলিয়ে করমর্দন করে চলে এলাম।