1 of 2

স্বর্ণলিপ্সা – ৮

আট

কয়েক ঘণ্টা আগের কথা।

অপারেটিং টেবিলে পড়ে আছে অচেতন পিটার হ্যানন। একইসময়ে ফোনে আলাপ করছে দু’জন লোক। তাদের কথা খুব গোপনীয়। বাইরের কেউ জেনে গেলে বুঝে যেত, এরাই মৃত্যু-মুখে ঠেলে দিয়েছে পিটার হ্যাননকে।

‘কিছুই বুঝতে পারছ না এমন ভাব করছ কেন? বারবার বলেছি, পিটিয়ে সব জেনে নেবে। তারপর কাজ শেষে খুন করবে। এসবের ভেতর তো না-বোঝার কিছুই নেই।’

‘আমরা পেটাতে পেটাতে বুঝলাম, আসলে ও কিছুই জানে না।’

‘খালি হাতে ফিরলে, তার চেয়েও খারাপ যা করেছ, সেটা হচ্ছে ওই যুবক এখনও বেঁচে আছে। এবার যখন-তখন বিপদ হবে। তুমি কি গাধা নাকি?’

‘আমার দোষ ছিল না। আপনাকে তো আগেই বলেছি, ওকে খুনের আগেই হাজির হলো গাড়িটা। তখন বাধ্য হয়ে লুকিয়ে পড়লাম জঙ্গলে।’

‘হ্যাঁ, বুড়ি এক মেয়েলোকের ভয়ে জঙ্গলে গিয়ে সেঁধালে চার-চারটে দামড়া পুরুষমানুষ। এবার বলো, এতবড় কাপুরুষ তোমরা হলে কী করে? তোমাদের কথা শুনে তো মনে হয় চাইলে ওই বেটিকেও একমুহূর্তে শেষ করে দিতে পারতে।’

‘আপনি বলেননি বুড়িকে খুন করতে। তা ছাড়া, সেটা করতে গিয়ে ওই পথে আরও কয়েকজন হাজির হলে, তখন কী করতাম আমরা?’

‘লক আরডাইকের পাশের গ্রাম্যপথ তো এম২৫ নয়। অনায়াসেই সব সামলে নিতে পারতে।’

‘আসলে… কপাল মন্দ, চিফ। কিছুই করার ছিল না। আপনি তো জানেন, আপনার কথামত অন্য হারামিটাকে খতম করে দিয়েছি। …তাই না? তখন তো আর কোনও সমস্যা হয়নি।’

‘ঠিক। তবে আসল খবর বের করতে পারনি। পরের বার তো সব গুবলেট করলে আনাড়ির মত। আমার উচিত ছিল বাক ওয়াকিকে কোরিয়া থেকে ফেরত আনা। হাসতে হাসতে কাজটা শেষ করত। তোমাদের মত কপালের ওপর নির্ভর করত না সে।’

‘বাক ওয়াকি তো আপনার সরাসরি নির্দেশে কাজ করে। তবে আপনিও চান না এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাক সে। চান সেটা?’

‘ওটাই তো আমার ভুল। তোমাদের মত গাধাদেরকে ওই কাজ করতে দেয়াই উচিত হয়নি। সহজ কোনও কাজও তোমরা সুষ্ঠুভাবে সারতে পারো না। অথচ, পয়সা কম দিই না তোমাদেরকে! ‘

‘এবার না হয় এসব কথা বাদই দিন, চিফ। আমরা কিন্তু তন্নতন্ন করে সার্চ করেছি উইলসনের বাড়ি। সেজন্যে নিয়েছি বড়জোর বিশ মিনিট। এর চেয়ে কমসময়ে এই কাজ কেউ পারত না। তার কাছে আরও মোহর থাকলে সেটাও পেতাম। বুঝতে পারছি না, কী কারণে এত ভাবছেন। ওই দুই হারামির সঙ্গে কেউ জড়াতে পারবে না আপনাকে। তা ছাড়া, হ্যানন আছে কোমার ভেতর। একটা কথাও বলবে না।‘

‘কিন্তু কোমা থেকে উঠে এলে, তখন?’

কোমা থেকে ওঠা সহজ না। ভয়ঙ্করভাবে পিটিয়ে হাড়গোড় সব ভেঙে দিয়েছি। ডাক্তার বলেছে, এপিডিউরাল হেমাটোমা। রক্তক্ষরণ হচ্ছে মগজে। এই যে আমরা আলাপ করছি, এখনও শুয়োরটার মগজে অস্ত্রোপচার করছে ডাক্তার। বেঁচে গেলেও সে হবে ভেজিটেবলের মত। বাকি জীবন খাবার নেবে মুখে টিউব দিয়ে।’

‘তা হলেই ভাল। নইলে মহাবিপদ। ওই ছোকরা হঠাৎ করে কথা বলে উঠলে ঝামেলায় পড়বে তোমরা। পরে তোমাদের পেট থেকে সব ফাঁস হলে বিপদে পড়ব আমি।’

‘কখনোই এমনটা হবে না, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।’

‘আমি চাই, নিজে যেন হাসপাতালে চোখ রাখো তুমি। খেয়াল রাখবে কী ঘটছে। হ্যানন চোখ মেললে বা আঙুল নাড়লেও আমাকে জানাবে। মনে রেখো, যা শুরু করেছ, তোমাকেই সেটা শেষ করতে হবে। আমরা কোনও ঝুঁকি নেব না।’

‘হাসপাতালে রোগীকে খুন করা খুব কঠিন কাজ। একটু পর পর আসছে ডাক্তার আর নার্স। রোগীর ওপর চোখ রাখা হচ্ছে পুরো চব্বিশ ঘণ্টা।’

‘তুমি কি টিভি দেখো না নাকি? নিয়মিতই তো রোগীকে খতম করছে মেডিকেল স্টাফরা। ন্যাশনাল হেল্‌থ্ সার্ভিস ওই কাজ না পারলে, সেটা করবে তুমি। কীভাবে করবে জানতেও চাই না। আসল কথা হচ্ছে, ঠিকভাবে কাজটা শেষ হলো কি না। চিরকালের জন্যে যেন ঘুমিয়ে পড়ে হ্যানন। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’

‘জী, বুঝতে পেরেছি।’

‘তুমি বুঝতে পেরেছ, সেটা জেনে খুব আনন্দিত হলাম। তবে যতদিন আমার হয়ে কাজ করবে, মাথায় রেখো, আবারও কোনও কাজে গুবলেট করলে সেটা সহ্য করব না আমি। সেক্ষেত্রে হ্যাননের চেয়েও হাজার গুণ করুণ হবে তোমার হাল। ঠিক আছে, ফোন রাখছি। আবারও ফালতু বিষয়ে আমাকে বিরক্ত করবে না।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *