1 of 2

স্বর্ণলিপ্সা – ১৩

তেরো

ধূসর মেঘে ছেয়ে গেছে বিমর্ষ আকাশ। বিমানের ডিম্বাকৃতি জানালা দিয়ে নিচে চেয়ে আছে রানা। দেখতে না দেখতে ইনভার্নেস শহর পেছনে ফেলে সাত মাইল দূরের এয়ারপোর্টে পৌছে গেল কেএলএম বিমান। এয়ারপোর্ট ঘিরে কুয়াশামোড়া সব টিলা। দূরে বরফের চাঁইভরা উত্তাল নর্থ সি। দমকা হাওয়া ও প্রবল শিলাবৃষ্টি ছুটে আসছে আইসল্যাণ্ড থেকে, ফলে আরও শীতল হয়েছে স্কটল্যাণ্ডের পরিবেশ। বুদ্ধি করে গরম কাপড় এনেছে বলে মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে দিল রানা। একটু পর তাপমাত্রা আরও কমে গেলে শিলাবৃষ্টির বদলে শুরু হবে ভারী তুষারপাত।

বিমান থেকে নেমে এয়ারপোর্ট টার্মিনালে পা রেখে প্রথমেই মিরাণ্ডার কাছে ফোন দিল রানা। ভেবেছিল শুনবে এরই ভেতর যোগাযোগ করেছে বেন হ্যানন। কিন্তু কপাল মন্দ ওর। ফোন রেখে দেয়ার আগে রানা বলল, ‘আমি খুঁজে বের করব বেনকে। কোনও দুশ্চিন্তা করবেন না, মিরাণ্ডা।’

এয়ারপোর্ট টার্মিনালেই রয়েছে ছোট একটা কার রেন্টাল কোম্পানির স্টল। কাস্টমার নেই বলে তারা বলতে গেল না, গাড়ির ক্ষতি হলে মেরামতির জন্যে বাড়তি টাকা দিতে হবে। রানা অবশ্য মনস্থির করেছে, সাধ্যমত যত্ন নেবে গাড়িটার।

এবার ওর গন্তব্য কিনলোকার্ড গ্রাম। ওখানেই গিয়েছিল বেন হ্যানন। গ্রামটা দক্ষিণ-পশ্চিমে সত্তর মাইল দূরে দুর্গম, পাহাড়ি এলাকায়। তাই গাড়ি হিসেবে রানা বেছে নিয়েছে দু’হাজার পনেরো সালের টয়োটা আরএভি ৪২০। ওটা বিলাসবহুল হলেও যথেষ্ট শক্তপোক্ত।

রোড এ৯২ ধরে রওনা হলো রানা। এই দীর্ঘ পথের ধারে রয়েছে মাইলের পর মাইল রহস্যময় লক নেস। আগে বলা হতো ওই লেকে বাস করে প্রাগৈতিহাসিক দানবীয় প্রাণী। টয়োটা ফোর-হুইল-ড্রাইভের ওয়াইপার সড়াৎ-সড়াৎ শব্দে সরিয়ে দিচ্ছে উইণ্ডস্ক্রিন থেকে তুষার ও বৃষ্টির পানি। পুরো শক্তি ব্যয় করে তপ্ত হাওয়া ছাড়ছে হিটার। সাঁই-সাঁই করে পিছনে পড়ছে প্রাচীন বিধ্বস্ত দুর্গ ও পুরনো আমলের সব গ্রাম। এদিকের এলাকার মানুষ মুখে মুখে ছড়িয়ে দিয়েছে লক নেসের দানবের ভয়ঙ্কর সব কাহিনী। আজও ওটাকে দেখতে নানান দেশ থেকে আসে হাজার হাজার টুরিস্ট। ফোর্ট অগাস্টাস থেকে পথ গেল ক্যালেডোনিয়ান ক্যানেলের মাঝ দিয়ে গ্লেন মোর-এ। পাশে রানা পেল অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার লক লোচি। কখনও চোখে পড়ল পথের ধারে ইংলিশ ও গ্যালিক সাইনবোর্ড।

আঁকাবাঁকা সত্তর মাইল পেরোতে রানা নিল মাত্র তেষট্টি মিনিট। নির্জন পথ। খুব কম গাড়িই চোখে পড়েছে ওর। ঝরঝর করে ঝরছে বৃষ্টি ও তুষার। শূন্যের নিচে নেমে গেছে বাইরের তাপমাত্রা। রানা যেন রয়েছে আরামদায়ক বুদ্বুদের ভেতর। আগে সামনে পড়ল লক আরডাইকের পুব তীর। ধূসর জলের হ্রদটাকে ঘিরে রেখেছে পাইনের জঙ্গল ও রুক্ষ, কুয়াশাময় পাহাড়। পথের ধারের এক সাইনবোর্ড দেখিয়ে দিল সামনেই কিনলোকার্ড গ্রাম। নীরব, সরু পথে চলে পাঁচ মিনিট পর ওখানে পৌঁছে গেল রানা।

গ্রামের বাড়িগুলো ধূসর পাথরের তৈরি। বয়স কমপক্ষে এক থেকে দেড় শত বছর। পুরনো এক চার্চ দেখল রানা। পাশেই কবরস্তান। সামান্য যেতেই সামনে পড়ল গ্রামের পেট্রল স্টেশন, মুদি দোকান ও পোস্ট অফিস। আরেকটু গিয়েই রানা পেল মিরাণ্ডার বলে দেয়া পথ। ওখানেই রয়েছে পিটারের বাড়ি।

ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা বেন হ্যাননের। কাজেই রানারও উচিত প্রথমে ওখানে খোঁজ নেয়া। পথের ধারে টেরেস দেয়া সারি সারি বাড়ি। পিটারের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করে নেমে পড়ল রানা। আপাতত বরফ ও বৃষ্টি থেমে গেলেও উত্তর থেকে হু-হু করে আসছে ভীষণ শীতল হাওয়া। ড্রাইভিং দরজা লক করে আড়মোড়া ভেঙে নিয়ে ধীর পায়ে ছোট বাড়িটার দিকে এগোল রানা।

যা ভেবেছে, সদর দরজা লক করা। সামনের জানালা দিয়ে উঁকি দিলেও কিছুই দেখতে পেল না রানা। ভেতরে রয়েছে নেটের পর্দা। সদর দরজা থেকে সরে যেতেই চোখে পড়ল দুই বাড়ির মাঝে সরু একটা গলি। ওই পথে বোধহয় যাওয়া যাবে বাড়ির পেছনে।

ওর ধারণাই ঠিক। পিটারের বাড়ির পেছনে আবর্জনাময় ঝোপঝাড়ে ভরা ছোট এক জায়গায় এসে দাঁড়াল রানা। কিছু দিন আগেও চারকোনা এক জায়গায় ছিল কোনও গাড়ি। চার জায়গায় ডেবে গেছে মাটি। আগে ওখানে ছিল ভারী চাকা। হলদেটে ঘাসে পড়েছে কালচে মোবিল। মাত্র ক’দিন আগে ভ্যান বা লম্বাটে কোনও গাড়ি সরানো হয়েছে পেছনের উঠান থেকে। রানার চোখে পড়ল ঝোপের ভেতর কয়েকটা পুরনো প্লাগ। তবে গায়ে এত জং নেই যে ধরে নেবে দিনের পর দিন খোলা আকাশের নিচে আছে ওগুলো। ঝোপের পাশে নোংরা কাপড়। ওটা দিয়ে ডলে তোলা হয়েছে বাদামি জং। রানার ধারণা হলো, ওই ভ্যান নিয়ে কোথাও গেছে বেন হ্যানন। গাড়ি মেরামতের দক্ষ মিস্ত্রি সে। এদিক-ওদিক যেতে যানবাহন লাগবে তার। তাই চালু করেছে পিটারের ফেলে রাখা গাড়ি।

এরপর বেন কী করেছে, ভাবতে চাইছে রানা। তারই ফাঁকে দেখছে পিটারের বাড়িটা। পেছনের একটা জানালার কাঁচ ভাঙা। ওখানে গিয়ে দাঁড়াল রানা। মুহূর্তে বুঝল, জানালা খোলা হয়েছে জোরাজুরি করে। এবড়োখেবড়ো ভাঙা কাঁচের মাঝ দিয়ে সাবধানে হাত ভরেও কোনও লাভ হলো না। জানালায় তালা মারা। বেন চলে যাওয়ার আগে বোধহয় বন্ধ করে গেছে। এবার পেছন দরজায় গিয়ে থামল রানা। ভেতর থেকে আটকে দেয়া হয়েছে ল্টি। কম আওয়াজ করে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে জানালা ব্যবহার করেছে চোর। তিন মিনিট পর একই কায়দায় বাড়ির ভেতরে ঢুকল রানা। ভাল করেই জানে, কোথাও নেই ওর হাতের ছাপ

তচনচ হয়েছে বাড়ির ভেতরটা। কয়েকজন মিলে খুঁজে দেখেছে কিছু। পরে কেউ না কেউ কাজে নেমেও বাদ দিয়েছে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা। লিভিংরুম সার্চ করতে গিয়ে ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে রানা পেল ওষুধের ছোট্ট শিশি। নিজের জিনিস হলে ওটা ফেলে যেত না চোর। লেবেলে ইতালিয়ান ভাষায় লেখা: সিগ. বি. হ্যানন। সিগ. মানে সিনর।

এ বাড়িতে ঢুকেছে বেন। পিটারের নিকটাত্মীয় বলে বোধহয় তার হাতে চাবি দিয়েছিল পুলিশের লোক। অন্য কোথাও না উঠে ভাতিজার বাড়িতে এসেছিল সে। হয়তো ভেবেছিল এখান থেকেই শুরু করবে তদন্তের কাজ। তবে ভেতরে ঢুকে দেখল আসবাবপত্র সব ছড়িয়ে রেখেছে একদল তস্কর। সে-সময় বোধহয় রেগে গিয়েছিল বেন। এবং তখনই খরচ করেছে ওষুধের শিশির শেষ বড়ি। মানুষটা এখন কেমন আছে ভাবতে গিয়ে কু ডাকল রানার মন। বেন ভেবেছিল এই বাড়িতে থাকলে বিপদ হতে পারে। তাই চলে গেছে গাড়ি নিয়ে।

কিন্তু সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কোথায় থাকতে পারে সে?

লিভিংরুমে উল্টে পড়া এক ড্রয়ারের নিচে রানা পেল পিটারের ডকুমেন্টগুলো। সেসবের ভেতর রয়েছে বাড়ির ইন্সুরেন্স, নানান বিল, রিসিট আর ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেণ্ট। রানা খুঁজছে ভেহিকেল পেপার্স। ওগুলো বোধহয় রয়ে গেছে পিটারের কোম্পানির অফিসে। তবে হতাশ না হয়ে তল্লাসী করতে থাকল রানা। একটু পর মেঝেতে পেল পুরনো এক ফোর্ড ক্যাম্পার ভ্যানের এমওটি সার্টিফিকেট ও রেজিস্ট্রেশন ডকুমেণ্ট। লগবুক থেকে রানা জানল, ওই গাড়ির বয়স পনেরো বছর। বোধহয় বহুদিন ধরে পড়ে ছিল জঙ্গুলে উঠানে।

ক্যাম্পার ভ্যানটা নিয়ে গেছে বলে যে-কোনও জায়গায় যেতে পারবে বেন। বাড়ি হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে ওটাকে। প্রিয় ওস্তাদকে খুঁজে নেয়ার পথে একধাপ এগোতে পেরেছে বলে মনে হলো রানার।

আরও কয়েক মিনিটে অন্যান্য ঘর ঘুরে দেখল রানা। এখন আর বাড়িতে নেই পিটার বা রবার্টের পাওয়া মোহর। নতুন কিছু জানারও নেই এখানে। জানালা পথে আবারও বেরোল রানা। পাশের গলি ধরে ফিরল সামনের উঠানে।

বাজে মাত্র চারটা। অথচ এরই ভেতর আরও এক ডিগ্রি কমে গেছে তাপমাত্রা। ফিকে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে বিকেলের হলদেটে ম্লান আলো। এদিকের দেশগুলোয় শীতকালে হঠাৎ করেই ঝুপ করে নামে সন্ধ্যা। আকাশের বুকে ঘন হয়ে জমেছে ধূসর মেঘ। বাতাসে ভর করে ভাসতে ভাসতে এখানে-ওখানে ঝুপ ঝুপ করে ঝরছে তুলোর মত সাদা তুষার। রাতে বোধহয় শুরু হবে ভারী তুষারপাত। গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে শীতের দীর্ঘ রাতের প্রস্তুতি হিসেবে জ্বেলে নেয়া হয়েছে কাঠ পোড়াবার চুলা। বাড়ির চিমনিগুলো বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে মন উতলা করে দেয়া চ্যালাকাঠ পোড়া অদ্ভুত শৈশবের সুবাস। রানার মনে হলো, মুহূর্তে ফিরে গেছে হাজার হাজার বছর আগে। হরিণ শিকার করে জ্বেলে নিয়েছে আগুন। লকলকে শিখা ঘিরে বসেছে দলের সবাই। শিকারের চামড়া ছাড়িয়ে এবার শুরু হবে মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার দারুণ ভোজ। আনমনে জ্যাকেটের চেইন গলা পর্যন্ত টেনে নিল রানা। পকেট থেকে নিয়ে মাথায় পরল কালো উলের বেনি হ্যাট। টয়োটার দিকে পা না বাড়িয়ে এগিয়ে চলল গ্রাম ঘুরে দেখার জন্যে।

কিছুই এড়াচ্ছে না ওর চোখ। ভাবছে মিরাণ্ডার কথা। বেচারির যথেষ্ট কারণ আছে ভয় পাওয়ার। ওর নিজের মনে যেসব চিন্তা উঁকি দিচ্ছে, কোনটাই স্বস্তিকর নয়। চরম অসুস্থ বেন গ্রাম্য এই এলাকায় না এলেই ভাল করত। আরও একটা ভাবনা জেঁকে বসেছে রানার মনে। কিনলোকার্ড গ্রাম যতই শান্ত আর নিরীহ বলে মনে হোক, এখানেই রয়েছে একাধিক নৃশংস খুনি। সুযোগ পেলে আবারও মানব হত্যা করবে তারা। হয়তো এই মুহূর্তে কোনও ঝোপ থেকে চোখ রেখেছে ওর ওপর। ক্ষুধার্ত বাঘের মত অপেক্ষা করছে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে।

রবার্টকে খুন করা হয়েছে এ গ্রামে। নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে পিটারকে। তার বাড়িতে ঢুকেছে একাধিক ডাকাত। আর এসব তদন্ত করতে এসে হারিয়ে গেছে বেন হ্যানন। ক্রমেই বড় হচ্ছে অপরাধ তালিকা। সুতরাং রানা এখন আছে অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকায়।

ফুটপাথে গ্রামবাসীর কয়েকজনকে দেখে তাদের উদ্দেশে মৃদু হাসি উপহার দিল রানা। মুখে বলল: গুড ইভনিং। বুঝে গেছে, এরা ভাবছে ও টুরিস্ট। বা কোনও ব্যবসায়ী। জরুরি কাজে এসেছে। অভিযাত্রীও হতে পারে, শীতে ক্যাম্প করবে পাহাড়ে।

আর্মিতে চাকরির সময় বা পরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সে যোগ দেয়ায় যেভাবে নজর রাখত শত্রু এলাকায়, ঠিক তেমনভাবেই গ্রামটা রেকি করছে রানা। তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে জেনে নেবে কতটা শক্তি ধরে শত্রুপক্ষ। বা তারা হামলা করলে সেটা আসবে কোথা থেকে। কিছুই ওর চোখ না এড়ালেও সাধারণ যে-কেউ ভাববে আনমনে হেঁটে চলেছে বিদেশি অচেনা এক যুবক।

কিনলোকার্ড গ্রামটা আসলে ওর জন্যে যুদ্ধক্ষেত্র। বেনের ওপর শত্রুপক্ষের আক্রমণ এলে, তাদেরকে চরম শাস্তি দেবে রানা। সেজন্যে মানসিকভাবে তৈরি। যেহেতু খুন করেছে রবার্টকে এবং পিটারকে আহত করা হয়েছে, তাই কখনোই মাফ পাবে না খুনিরা। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, কখন এবং কোথা থেকে হামলা করবে তারা।

হঠাৎ করেই শুরু হলো ভারী তুষারপাত। পথের একটু দূরের এক পারের জানালার কাঁচ ভেদ করে আসছে হলদেটে আলো। ওটা যেন হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে রানাকে। আরেকটু হেঁটে দেখতে পেল দালানের দরজায় বড় করে লেখা: ডাবল আর্ম পাব। পথ থেকে একটু ভেতরে ওই পানশালা। বাইরের উঠানে কয়েকটা গাড়ি। পথের ধারে ল্যাম্পপোস্টের সোনালি আলোয় গিনি সোনার মত ঝিকমিক করছে গাড়িগুলোর ছাতে ও বনেটে জমে থাকা তুষার।

কোনও জায়গার মানুষ সম্পর্কে জানতে হলে সেরা জায়গা হচ্ছে কোনও পাব বা বার। মানুষের কথাবার্তা থেকে মনে তৈরি হবে পরিষ্কার ধারণা। হাতঘড়ি দেখল রানা। বাজে মাত্র সোয়া চারটা। অথচ এরই ভেতর আকাশ কালো হয়ে ঘনিয়ে এসেছে সন্ধ্যা। হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে তাপমাত্রা। তাজা খবর জানতে হলে ওর উচিত একগ্লাস সোনালি গরল কিনে পাবে বসে থাকা। কাজেই ওর কপাল খোলে কি না তা দেখার জন্যে পাবের দরজা টেনে ঢুকে পড়ল রানা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *