1 of 2

স্বর্ণলিপ্সা – ৪৬

ছেচল্লিশ

জেসিকা জানে, ও বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে নেহায়েত কপাল জোরে। পাহারায় ছিল মাত্র একজন লোক। ওকে আটকে রাখা হয়েছিল দুর্গের অনেক ভেতরের দিকের এক ঘরে। আর সেজন্যেই গ্লাস-বোতল পতনের জোর আওয়াজ শুনতে পায়নি কেউ। ওই নোংরা শুয়োরটার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অনেক হালকা লাগছে এখন!

গ্রামে রানার কটেজে বন্দি হয়েই জেসিকা দেখেছে, ওর দিকে চেয়ে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছে টাকমাথা এক লোক। তখনই বুঝেছে, প্রথম সুযোগে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইবে কুকুরটা। দুর্গের ওই মদের গুদামে বন্দি হওয়ার একঘণ্টার মধ্যেই রীতিমত উন্মাদ হয়ে উঠল সে।

.

ঘরের একধারে শত শত ক্রেট বোঝাই দুর্মূল্য ওয়াইনের বোতল রাখা। দেয়ালের র‍্যাকে থরে থরে সাজানো আছে বিশ বছরের পুরনো দামি মদের বোতল। মাঝারি এক এইল-এর পিপের ওপর বসে জেসিকা ভাবছে, কীভাবে খুলবে হাতের প্লাস্টিকের কেই টাই। ওদিকে ঘরের আরেক দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে একের পর এক সিগারেট ফুঁকে চলেছে আর একদৃষ্টে গিলছে ওকে মুশকো পাহারাদার টেকো লোকটা। দৃষ্টিতে কেমন এক ঘোর। দু’চোখ দিয়ে চাটছে জেসিকার কোমর থেকে বুক, তারপর অধর পর্যন্ত। ঠোঁটে লোভী হাসি। বামহাতে আলগা করে ধরে আছে বিশাল এক চকচকে ছোরা। বহুক্ষণ পর বলল সে, ‘ডার্লিং, তুমি জানো, শেষমেশ তোমার কপালে কী ঘটবে? তোমাকে বাঁচতে দেবে না ওরা।’

‘আমি তোমার ডার্লিং নই।’

ওর কথায় কাঁধ ঝাঁকাল লোকটা। ‘তোমাকে নিয়ে ওরা কী করবে ভাবতে গিয়ে খুব খারাপ লাগছে আমার। তুমি চাইলে আমি অবশ্য তোমাকে সাহায্য করতে পারি।’

এবার কী আসছে, সেটা বুঝে চুপ করে থাকল জেসিকা।

‘কিন্তু তোমাকে সাহায্য করলে তার বদলে তো আমার কিছু প্রাপ্য হয়, নাকি?’

শুয়োরটা ওকে সরাসরি দৈহিক মিলনের প্রস্তাব দিচ্ছে! শিরশির করছে জেসিকার বুক। ঢোক গিলল। আশা করল লোকটা যেন বুঝতে না পারে, ও ভয় পেয়েছে। মুখে রা নেই।

‘আমি না হয় তোমার সঙ্গে একটু ফুর্তিই করলাম,’ বলল লোকটা, ‘তুমিও কিন্তু দারুণ মজা পাবে। একেবারে স্বর্গের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছে দেব তোমাকে, তারপর এখান থেকে মুক্ত করে দেব। বুঝতেই পারছ কতবড় ঝুঁকি নিচ্ছি। বদলে তো আমার কিছু প্রাপ্য হয়, হয় না?’

জেসিকা বুঝল, শুকনো কথায় থামবে না জানোয়ারটা। মেঝেতে সিগারেট ফেলে জুতো দিয়ে ওটা পিষে দিল সে। দেয়াল থেকে সরে এল ওর কয়েক ফুটের ভেতর। চোখে- মুখে কামুক হাসি। বারকয়েক জিভ চেটে ছোরাটা তাক করল জেসিকার বুকের দিকে। ‘তোমার ও-দুটো খুব সুন্দর, তাই না, ডার্লিং? তুমি ব্রেসিয়ার খুললে আমি না হয় দু’চোখ মেলে দূর থেকেই ও দুটো একটু দেখলাম? তোমার কোনও আপত্তি নেই তো?’

নির্বিকার চোখে তাকে দেখল জেসিকা। কয়েক মুহূর্ত পর শুকনো গলায় বলল, ‘গাধা কোথাকার, আমার হাত তো হ্যাণ্ড টাই দিয়ে বাঁধা। পোশাক খুলব কী করে?’

খিলখিল করে হেসে উঠল লোকটা। ‘তা হলে তুমি বলছ, হাত খুলে দিলে নিজে থেকে আমাকে সব দেখাবে, ঠিক কি না?’

‘হয়তো, কে জানে!’ জোর করে মুচকি হাসল ও।

‘ভালই বলেছ। আসলে গাড়ি না চালিয়ে তো আর কেউ কেনে না। ঠিক কি না? যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কি না বুঝতে হবে না?’

‘তুমি যন্ত্রপাতি দেখতে চাইলে আমার আপত্তি নেই,‘ বলল জেসিকা। ‘তবে নিজে তোমাকে কিছুই দেখাতে পারব না, সেটা তো বুঝতেই পারছ?’

আরও দু’পা এগোল হবু-ধর্ষক। তার মুখের বিশ্রী দুর্গন্ধে বমি এল জেসিকার। ‘ঠিক আছে, ডার্লিং, তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াও। আমি তোমার হাতের বাঁধন খুলে দিচ্ছি। এরপর কিন্তু দু’জন মিলে দারুণ মজা হবে। ঠিক আছে? আপত্তি নেই তো তোমার?’

পিপে থেকে নেমে দাঁড়াল জেসিকা। ধক-ধক করছে বুকের ভেতর অস্থির হৃৎপিণ্ড। ওর পেছনে চলে গেল লোকটা। আদরমাখা গলায় বলল, ‘সাবধান, কেমন? ছোরাটায় কিন্তু অসম্ভব ধার, চাই না তোমার হাত কেটে যাক।’ কবজিতে ইস্পাতের শীতল স্পর্শ টের পেল জেসিকা। আটকে ফেলেছে দম। ছোরার ফলা এতই ধারাল যে কুট শব্দে কেটে গেল প্লাস্টিকের টাই। শরীরের দু’দিকে নেমে এল জেসিকার দু’হাত। এঁটে বসা প্লাস্টিকের টাই কবজিতে তৈরি করেছে জ্বলুনি। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল জেসিকা। চুমু দেবে বলে আরেকবার ঠোঁটদুটো ভিজিয়ে নিয়ে লোকটা ঘেঁষে আসছে কাছে। মস্ত টাকে জমেছে কয়েক বিন্দু ঘাম। চাপা স্বরে বলল সে, ‘ঠিক আছে, এবার আস্তে আস্তে খোলো তোমার ব্লাউয আর ব্রেসিয়ার।’

দু’হাত বুকের কাছে নিল জেসিকা। মুখটা সামান্য হাঁ করে উদগ্র আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছে ধর্ষকপ্রবর—এই বুঝি খুলল ব্লাউয় ও ব্রেসিয়ার। এরপরই তো দেখবে দুধ-সাদা, ফর্সা…

তখনই ঝট্ করে জেসিকার ডানহাতের তর্জনী ও মধ্যমা সামনে বেড়ে খচ্ করে ঢুকল লোকটার দুই চোখে। বেদম ব্যথা পেয়ে বিকট আর্তনাদ ছাড়ল ধর্ষক। মুহূর্তে অন্ধ হয়ে গেছে চোখের তীব্র যন্ত্রণায়। ভীষণ রেগে গিয়ে ছোরা গেঁথে দিতে চাইল মেয়েটার পেটে। তবে আগেই পিছিয়ে গেছে জেসিকা। পরক্ষণে ওর লাথি পড়ল ধর্ষকের অণ্ডকোষের ওপর। এবারের আর্তচিৎকার হলো গতবারের তিনগুণ জোরে। আহত ভালুকের মত চাপা গর্জন ছেড়ে একপাশ থেকে আরেক পাশে ছোরা চালাল সে। আরেকটু হলে ওটার ডগা ফুটো করে দিত জেসিকার পাঁজর। টলমল করে পিছিয়ে কাত হয়ে এইল-এর একটা পিপের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল জেসিকা।

‘হারামজাদী-মাগী, এবার তোর পেটের নাড়িভুঁড়ি বের করে নেব!’ জেসিকার সামনে দানবের মত দাঁড়িয়ে গেল লোকটা। ওপর থেকে সাঁই করে নামল হাতের ছোরা। জেসিকা বুঝে গেল, এখন আর সরে যেতে পারবে না। তবুও শেষ আশা হিসেবে কষে লাথি ছুঁড়ল শত্রুর হাঁটুর বাটির ওপর। ফলে পা পিছলে ওয়াইনের ক্রেটের ওপর ঠাস্ করে মাথা দিয়ে পড়ল লোকটা। ওপরের র্যাক থেকে পড়ে ঝনঝন আওয়াজে ভাঙল একরাশ বোতল ও গ্লাস। মেঝেতে গড়াচ্ছে লালচে ওয়াইন। ধড়মড় করে উঠতে গিয়ে পায়ের নিচে বোতল হড়কে যেতেই আবার আছাড় খেল লোকটা। হাত থেকে ফস্কে গেল ছোরা। আর তখনই ছোঁ দিয়ে ওটা তুলে নিয়েই তৈরি হয়ে গেল জেসিকা।

এদিকে ওয়াইনের গলাভাঙা একটা বোতল হাতে উঠে দাঁড়াতে চাইল হবু-ধর্ষক। পুলিশের সব নিয়ম মেনে চলে জেসিকা। এক্সটেণ্ডে ব্যাটন হাতে যে-কোনও লোককে ঠাণ্ডা করে দেয়ার ট্রেইনিং আছে ওর। মাটিতে ফেলে আম লক করে হ্যাণ্ডকাফ পরাতেও সময় লাগবে না। কিন্তু মিলিটারি ট্রেইনিং পাওয়া খুনিকে ঠেকাতে পারবে না সামান্য এক ছোরা দিয়ে। আরও বড় কথা, লোকটার হাতে এখন ভাঙা বোতল। জেসিকার গলা ফাঁক করে দেবে এক পোঁচে।

মুহূর্তে সব বুঝে গেল জেসিকা। সামনে বেড়েই গায়ের জোরে ক্ষুরধার ছোরাটা ঘ্যাঁচ করে গেঁথে দিল লোকটার পেটে। ছিটকে এসে ওর মুখে এসে লাগল তাজা রক্ত। আহত বন্য পশুর মত কর্কশ গর্জন ছেড়েই পেট চেপে ধরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল লোকটা।

এদিকে ঘুরেই দরজার দিকে ছুটল জেসিকা। মনে মনে প্রার্থনা করছে, আশপাশে যেন শয়তানটার দলের কেউ না থাকে। কপাল ভাল, করিডোর ফাঁকা। একদৌড়ে প্রথম বাঁকের ওদিকে গেল জেসিকা। ছুটতে ছুটতে ঢুকে পড়ল আরেক করিডোরে। এদিকটা দুর্গের সার্ভিস সেকশন। দেয়াল সাদা চুনকাম করা। মেঝে কমদামি পাথরের তৈরি। কোথাও শিল্পের কোনও চিহ্ন নেই।

জেসিকা বুঝে গেল, এবার ওকে খুঁজতে বেরোবে একদল লোক। হয়তো এরই ভেতর রওনা হয়ে গেছে। হয়তো স্টুয়ার্টের সঙ্গে আছে পাঁচ বা দশজন। সহজে হাল ছাড়বে না তারা। তবে ভরসার কথা, দুর্গের এক শ’র বেশি ঘর ও করিডোরের কোথাও হয়তো লুকিয়ে পড়তে পারবে জেসিকা পরে মাথা ঠাণ্ডা হলে ভেবে বের করবে কী করা উচিত।

কিছুক্ষণ হেঁটে কারুকাজ করা এক খিলান পেরোল ও। আবারও পৌঁছে গেছে দুর্গের রেসিডেনশিয়াল এলাকায়। দু’দিকের দেয়ালে ঝুলছে দামি ট্যাপেস্ট্রি ও পেইন্টিং। মেঝে চকচকে সাদা মার্বেলের। আধখোলা এক দরজা দেখে ভেতরে উঁকি দিল জেসিকা। কয়েক মুহূর্ত পর বুঝে গেল ঘরে কেউ নেই। চট্ করে ভেতরে ঢুকে ভিড়িয়ে দিল দরজা। আগে কখনও এতবড় ডাইনিংরুম দেখেনি। চারদেয়ালে সোনাপানি করা ফ্রেমে ঝুলছে বিশাল আয়না। ওর প্রতিটি প্রতিবিম্বের গালে ও মুখে লাল রক্তের ছিটা। নিজেকে কেন যেন খুব দুর্বল আর অসহায় মনে হলো ওর। ঠোঁটে লবণাক্ত স্বাদ টের পেতেই হাত দিয়ে মুখ মুছল। ঘরের মাঝে মস্ত টেবিলে বসতে পারবে ষোলোজন মানুষ। টেবিলের এমব্রয়ডারি করা স্যাটিন টেবিলক্লথ নেমেছে মেঝের কাছে। ঘরের একদিকে বুক সমান উঁচু ফায়ারপ্লেস। অন্যদিকে বিরাট জানালায় মেঝে পর্যন্ত দামি পর্দা। জানালার দিকে চোখ যেতেই জেসিকা দেখল, বিকেলের মরা আলোয় দুর্গের আঙিনায় ঝরছে সফেদ তুষার। যে-কোনও সময়ে তুমুল বেগে শুরু হবে তুষারঝড়।

আকাশের রুদ্রমূর্তি দেখে মন দমে গেল ওর। বুঝতে দেরি হলো না, এখন দুর্গ ছেড়ে কোথাও গেলে শীতের ভেতর মরে পড়ে থাকবে। ক’মুহূর্ত পর হামাগুড়ি দিয়ে টেবিলের কাপড়ঘেরা তাঁবুর মত জায়গাটায় ঢুকল জেসিকা। ভয় লাগছে। শ্বাস অনিয়মিত। শান্ত করতে চাইল মনটাকে। ভাবছে: এরপর কী করবে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *