1 of 2

স্বর্ণলিপ্সা – ৪৫

পঁয়তাল্লিশ

লোকটা হালকা হলেও হাতের পেশি ইস্পাতের তারের মত টানটান। এত আক্রোশ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে যে তাল হারিয়ে মেঝেতে পড়ল রানা। ক্ষিপ্র চিতার মত ওর ওপর চড়াও হলো লোকটা। দু’হাতে টিপে ধরেছে রানার গলা। রানা বুঝে গেল, যে-কোনও সময়ে ভেঙে যাবে ওর কণ্ঠনালী। ঝট করে দু’হাতে লোকটার দুই কড়ে আঙুল ধরল রানা। তবে আক্রমণকারী হুঁশিয়ার লোক। হাতদুটো গুটিয়ে নিয়েই ঘুষি মারল ওর চোয়ালে। দু’জনের পায়ের ধাক্কা খেয়ে র‍্যাক থেকে ঝরঝর করে নামল কিছু যন্ত্রপাতি। একটা ভারী রেঞ্চ পড়ল হামলাকারীর মাথার ওপর। মৃদু গুঙিয়ে উঠে সরে যেতে চাইল সে। অবশ্য আগেই তার সোলারপ্লেক্সাস বরাবর মাঝারি ওজনের দুটো ঘুষি বসিয়ে দিয়েছে রানা। প্রায় একইসময়ে ধড়মড় করে উঠে দাঁড়াল দু’জন। রানা ভাবল, এবার দেরি না করে আক্রমণে যাবে। তবে জানালা পথে আসা মৃদু আলোয় মাঝারি আকারের মানুষটাকে দেখে থমকে গেল।

একই হাল আক্রমণকারীর। ফ্যাসফেঁসে গলায় বলল, ‘রানা! তুমি? তুমি এখানে কী করে?’

‘আপনি তা হলে এখানে, ওস্তাদ!’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল রানা। ‘আপনাকেই খুঁজছিলাম।’

কয়েক মুহূর্ত পরস্পরের দিকে চেয়ে রইল যোগ্য ওস্তাদ ও তার তুখোড় শিষ্য, তারপর সামনে বেড়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরল ওরা।

‘আপনাকে দেখে ভাল লাগছে, রেন,’ বলল রানা। ‘আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।’

‘আম তো বুঝলাম, রা-টা কে? মিরাণ্ডা? বেশি কাঁদাকাটি করছে?’

‘করবে না? কাউকে কিচ্ছু না বলে কী ছেলেমানুষী কাজটা করলেন আপনি, ওস্তাদ? আমরা আছি কী করতে? আমাদের মানুষ বলে মনে করেন না বুঝি?’

‘তোমার লাগেনি তো, বাছা,’ বকা খেয়ে কথা ঘোরাবার চেষ্টা করল রানার শ্রদ্ধেয় গুরু। স্নেহ ভরে শিষ্যের পিঠে হাত বোলাচ্ছে।

‘না, একেবারেই না,’ বলল রানা, ‘পড়ার সময়ে আপনার ট্রেইনিং ঠিকই মনে ছিল।’

‘আরেকটু হলেই আমাদের দু’জনের যে-কোনও একজন মারা পড়ত আজ,’ ওকে ছেড়ে পিছিয়ে গেল বেন হ্যানন। ‘আমি ভেবেছি ওই কুকুরের বাচ্চাগুলোর কেউ।’

‘এখন সংখ্যায় কমে গেছে,’ র‍্যাক থেকে লণ্ঠন নিয়ে একহাত দিয়ে আড়াল করে আলো জ্বেলে নিল রানা।

গত কয়েক মাস ধরে অসুখে ভুগে শুকিয়ে দুই গাল চুপসে গেছে বেন হ্যাননের। কপালে গভীর বলিরেখা। আগের চেয়ে হালকা হয়েছে তার রুপালি চুল। পাইপের ভেতর দিয়ে আসতে গিয়ে গায়ের ছেঁড়া পোশাকে লেগেছে কাদা। রানার মনে হলো দিনের পর দিন ডানজনে থেকে দুর্বল হয়ে গেছে মানুষটা। মুখে কিছু বলল না ও। বরাবরের মতই বেনের চোখে জ্বলছে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। স্বয়ং মৃত্যু ছাড়া ওই আলো নিভিয়ে দিতে পারবে না কেউ।

‘তুমি এ জায়গা খুঁজে পেলে কী করে, রানা?’

‘সে অনেক কথা, ওস্তাদ… পরে সব বলব। মিরাণ্ডা ভাবী পাঠিয়েছেন। খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।’

ওর মুখে স্ত্রীর কথা শুনে আবেগের ছাপ পড়ল হ্যাননের চোখে। নিচু গলায় জানতে চাইল, ‘ও ঠিক আছে তো? শেষ কখন কথা বলেছ? বাক ওয়াকি নামের এক হারামজাদা বলেছিল মিরাণ্ডার ক্ষতি করবে। তা-ই যদি করে থাকে, দুনিয়ার কোথাও লুকিয়ে বাঁচবে না।’

মৃদু মাথা নাড়ল রানা। ‘কিচ্ছু ভাববেন না। কোনও ক্ষতি হয়নি। হবেও না। আপাতত রোমে ভাইয়ের বাড়িতে আছেন। বিপদে নেই। তবে আপনার কথা ভেবে মানসিক যন্ত্রণায় আছেন।’ ওর মনে পড়ল পকেটে আছে কোয়ার্ট আর বেলের মোবাইল ফোন। তাই দেরি না করে একটা মোবাইল ফোন বের করে বেন হ্যাননের হাতে দিল। ‘নিন, কথা বলুন। আপনি যে ভাল আছেন সেটা জানিয়ে দিন।’

মোবাইল ফোনের দিকে চেয়ে ঝুঁকে গেল বৃদ্ধ মানুষটার কাঁধ। রানার মনে হলো যন্ত্রটা ব্যবহার করবে না হ্যাঁকড়া বুড়ো। তবে পরক্ষণে আস্তে করে মাথা নাড়ল। ‘হুঁ, ফোন করা উচিত। তবে, কেন যেন মনে হচ্ছে ঝামেলা শেষ হয়নি। না, বাছা, সব শেষ হওয়ার আগে কথা না বলাই ভাল।’

লণ্ঠন সামনে রেখে মেঝেতে মুখোমুখি হয়ে বসল রানা আর বেন। সংক্ষেপে গত ক’দিনের ঘটনা তাকে জানাল রানা। যোগাযোগ করেছিল মিরাণ্ডা ভাবী। তারপর গ্রামে যেতেই স্থানীয় মস্তানদের সঙ্গে গোলমাল হলো ওর। পরে খুন হয়েছে বাক ওয়াকির সঙ্গী। ওই দলের হাতেই মারা গেছে বিলি ম্যাকগ্রা। এসবে জড়িয়ে পড়েছে জেসিকা। সে-সময়ে রানা জানতে পেরেছে যে ঐতিহাসিক গুপ্তধন নিয়ে কামড়াকামড়ি করছে একদল কুকুর। গ্র্যানিট পাথরের মত কঠিন মুখে রানার কথা শোনার পর জানতে চাইল বেন, ‘হাসপাতালে পিটারকে দেখতে গিয়েছিলে? ও কেমন আছে?’

‘শেষবার শুনেছি এখনও জ্ঞান ফেরেনি। আমি দুঃখিত।’

‘এজন্যে পস্তাতে হবে ওদেরকে। স্টুয়ার্ট, তার ঘুষখোর পুলিশ আর তাদের দলের সবাইকে।’

‘আপনি যথেষ্ট করেছেন, বেন। বাকিটুকুর ভার আমার উপর ছেড়ে দিন। আপনার বিশ্রাম দরকার।’

‘তা-ই?’ কড়া চোখে ওকে দেখল হ্যানন। ‘এই কথা বলার সাহস তুমি পেলে কী করে?’

মানুষটা রেগে গেছে জেনেও বলল রানা, ‘বলছি, কারণ মিরাণ্ডা আমাকে বলেছেন আপনি অসুস্থ। গত কয়েক দিনে আমার বারবার মনে হয়েছে, বোধহয় মারাই গেছেন। আপনি যেন আরও অসুস্থ না হন, সেটা চাইছি মিরাণ্ডা আর আমার জন্যেই।’

চোখ পাকিয়ে ওকে দেখছে বৃদ্ধ। দুই মণির আলোটা হয়ে গেছে বরফের টুকরোর মত শীতল। নিজের চেয়ে আকারে বড় লোককে স্রেফ দৃষ্টি দিয়ে আগেও ঘাবড়ে দিয়েছে সে। ‘তুমি পাগল হলে, রানা? আমি অসুস্থ? কে বলেছে? মিরাণ্ডা বড়বেশি দুশ্চিন্তা করে। বুড়ো বেন হ্যাননের কিছুই হয়নি। স্টুয়ার্টের দলের লোকগুলোকে শেষ না করে থামব না।’ ডান তর্জনী রানার বুকে তাক করল সে। ‘ভুলেও আমাকে ফেলে কিছু করবে না, বাছা। নইলে বাকি জীবনেও তোমাকে ক্ষমা করব না।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল রানা। কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল বের করে বেনের হাতে ধরিয়ে দিল। ‘জানতাম এটাই বলবেন। ওস্তাদ, আপনার মনে আছে তো কীভাবে পিস্তল চালাতে হয়?’

‘একটু একটু,’ হাসল বেন। ‘দু’চারটে নতুন কৌশলও দেখাতে পারব, তোমাকে।’

‘তো, চলুন, রওনা হই,’ বলল রানা। ‘যে-কোনও সময়ে দুর্গে পৌঁছে যাবে আরও দশজন প্রাক্তন সৈনিক। এদিকে দুর্গে আটকা পড়েছে জেসিকা। ওকে খুঁজছে বাক ওয়াকি আর স্টুয়ার্ট। মেয়েটাকে উদ্ধার করে সরিয়ে দিতে হবে।’

‘কোনও প্ল্যান আছে, বাছা?’ জানতে চাইল রেন।

‘না,’ জানাল রানা, ‘ওদেরকে সামনে পেলেই গুলি করব। কাজ শেষ হলে সোজা ফিরব যে যার বাড়িতে।’

‘গুড। তবে আমার কাছে আরও ভাল একটা প্ল্যান আছে। তুমি যখন এলে, সেসব নিয়েই কাজ করছিলাম।’

‘আপনি কী করতে চান?’

মৃদু হেসে লণ্ঠন নিয়ে উঠে দাঁড়াল বেন হ্যানন। হাতের ইশারায় রানাকে বলল সঙ্গে যেতে। ‘নিজেই দেখো, বাছা। মন ভাল হয়ে যাবে।’

.

বাজে ঝামেলায় পড়েছে বাক ওয়াকি। বিড়বিড় করে গালি দিচ্ছে নিজেকে। মাসুদ রানার শেষ গুলিটা লেগেছে তার বাম কাঁধে। নাইন এমএম হলো-পয়েন্ট বুলেট চুরমার করেছে হাড়, সেই সঙ্গে ছিঁড়ে দিয়েছে বেশ কয়েকটা নার্ভ। কাঁধ থেকে মরা সাপের মত ঝুলছে অসাড় বামহাত। অবশ হয়ে যাচ্ছে শরীরের বামদিক। একবার তীব্র ব্যথা শুরু হলে ওই ক্ষত পাগল করে দেবে ওকে। রক্তে ভিজে সপ-সপ করছে শার্ট ও জ্যাকেট। ঘামে ভিজে গেছে ভুরু। টপ-টপ করে স্বেদবিন্দু পড়ছে চোখে। দ্রুত হাঁটছে বাক ওয়াকি, পেছনের মেঝেতে রয়ে যাচ্ছে রক্তের ফোঁটা।

কয়েক দফা সিঁড়ি ভেঙে দুর্গের প্রথমতলায় উঠল সে। সুস্থ হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে কল দিল স্টুয়ার্টকে। সংক্ষেপে জানাল নিচে কী ঘটেছে। এইমাত্র লাঞ্চ শেষ করে দামি ওয়াইনে চুমুক দিয়েছে স্টুয়ার্ট। বাক ওয়াকির কথা শুনে খেপে গিয়ে চিৎকার করে গালাগালি করল সে।

যত দ্রুত সম্ভব ফোন রেখে বাটারি রুমের দিকে চলল বাক ওয়াকি। ওখানেই আছে দুর্গের সমস্ত মদের লকার। ওই ঘরেই জেসিকা থমসনকে পাহারা দিচ্ছিল লিয়ন বেনেট। ভেতর থেকে বন্ধ ছিল দরজা। তবে কপাট এখন আধখোলা। দরজা পেরিয়ে রক্তের ছাপ গেছে প্যাসেজ ধরে ডান দিকে।

বাটারি রুমের মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে লিয়ন বেনেট। বাক ওয়াকি দেখল লোকটার হাতে এখনও মোবাইল ফোন। একফোঁটা নড়ছে না সে। উধাও হয়েছে জেসিকা থমসন। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে দামি মদের বোতল- ভাঙা কাঁচ ও ক্রিস্টালের গ্লাস। মদে ভাসছে মেঝে। তবে তার সঙ্গে মিশে আছে লাল রক্ত। বেনেটের ক্ষুরধার বাউই ছোরাটা গেঁথে আছে তারই পেটে। শ্বাস চলছে খুব ধীরে।

লোকটার দিকে পা বাড়িয়ে পিছলে গিয়েও সামলে নিল বাক ওয়াকি। বসে পড়ল অনুচরের পাশে। অক্ষত হাতে চওড়া ছোরাটা ধরে টেনে বের করতে গিয়ে বুঝল, পেটের গর্ত থেকে খুলে আসছে না ওটা।

‘বেনেট! লিয়ন! কথা বলো!’

জবাব নেই লোকটার তরফ থেকে। রক্তক্ষরণ আর শকের কারণে জ্ঞান নেই। তাকে সরাতে গিয়ে বাক ওয়াকি বুঝল, একহাতে কাজটা পারবে না। এবার কী করবে ভাবতে শুরু করেছে, এমনসময় ঝড়ের বেগে বাটারি রুমে ঢুকল রন স্টুয়ার্ট। পেট ভরে লাঞ্চ খেলেও মেজাজ তার ভয়ানক তিরিক্ষি হয়ে আছে। রক্তের সাগরের সামনে থমকে গিয়ে টলে উঠল সে। চারপাশ দেখে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কী হয়েছে? ওই কুত্তী কই?’

‘এমন কোথাও গেছে, যেখানে ওকে আমরা খুঁজব না,’ বিরক্ত হয়ে বলল বাক ওয়াকি। চাইছে বিদায় হোক রন স্টুয়ার্ট।

‘ওকে খুঁজে বের করো! জলদি!’

‘ওই মেয়ের চেয়েও বড় ঝামেলায় আছি আমরা,’ বলল বাক ওয়াকি। ‘ডানজন থেকে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেছে বেন হ্যানন। এ-ও জানি না কোথায় আছে মাসুদ রানা। কারাগার হিসেবে আপনার ডানজন মোটেই মজবুত ছিল না। এতক্ষণে ওখান থেকে বেরিয়ে গেছে সে।’

‘এসব কী বলছ!’ আরও রেগে গেল স্টুয়ার্ট। ‘ওকে নিচে ফেলে এখানে পালিয়ে এসেছ?’

পিটপিট করে চোখ থেকে ঘাম ঝরাল বাক ওয়াকি। ‘আরে, অন্তত আমার দিকটা তো দেখবেন, নাকি? তাকান এদিকে! গুলি খেয়েছি, বাজেভাবে আহত। একা আমি কোনভাবেই ওর সঙ্গে পারতাম না। আমার কথা বুঝতে পেরেছেন? মৌরেন লরি আর তার দলের অন্যরা না এলে একা কিছুই করতে পারব না। আমি তো আর খুন হওয়ার জন্যে চাকরি নিইনি আপনার।’

‘কীজন্যে তোমাকে চাকরি দিয়েছি, আর করছটা কী, ভাল করেই বুঝতে পারছি,’ বেসুরো গলায় চেঁচাল স্টুয়ার্ট। ‘যাও, আগে খুঁজে বের করো কুত্তীটাকে! তারপর কী করতে হবে সেটা আমি বলে দেব!’

‘আপনি কি কানা নাকি? দেখছেন না মেঝেতে পড়ে আছে আহত একজন মানুষ? আপনার চেয়ে ওর মূল্য আমার কাছে ঢের বেশি। আপনি তো আছেন সোনার নেশায়। অথচ, ওই জিনিস হয়তো কোনও কালেই ছিল না।’

‘বললেই হলো?’ টুইডের কোটের পকেট থেকে চকচকে রুপালি, ছোট্ট একটা পিস্তল বের করল রন স্টুয়ার্ট। এই জিনিস আগে কখনও তার কাছে দেখেনি বাক ওয়াকি। সে কিছু বলার আগেই অজ্ঞান লিয়ন বেনেটের মাথার দিকে অস্ত্রটা তাক করেই ট্রিগার টিপে দিল স্টুয়ার্ট। বদ্ধ জায়গায় কড়াৎ আওয়াজে গর্জে উঠেছে পিস্তল। খুব কম রেঞ্জে মিস হলো না বুলেট। বেনেটের মাথার পাশ থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোল রক্তের স্রোত। মাত্র একবার নড়ে উঠেই স্থির হয়ে গেল দেহটা।

‘হলো? এবার তো আর ওকে সাহায্য করা যাবে না! যাও, খুঁজে আনো মেয়েলোকটাকে। খুঁজে বের করবে মাসুদ রানাকেও। যত ধরনের গুবলেট করেছ, সেগুলো তোমাকেই ঠিক করতে হবে।’

মৃত সঙ্গীকে দেখল বাক ওয়াকি, তারপর মুখ তুলে তাকাল রন স্টুয়ার্টের দিকে। ভুলে গেছে যে সে আহত। বাকি জীবনেও হয়তো ঠিক হবে না বামহাত। প্রচণ্ড রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। হ্যাঁচকা টানে বেনেটের পেট থেকে বাউই ছোরাটা বের করেই উঠে দাঁড়াল। ঠিক করেছে, ফাঁসিয়ে দেবে সে হারামি ব্যবসায়ীর পেট।

বিপদ বুঝে চট্ করে দরজার দিকে সরে গেছে স্টুয়ার্ট ওখান থেকে বাক ওয়াকির দিকে পিস্তল তাক করল। বিকৃত চেহারায় বলল, ‘এক মিলিয়ন পাউণ্ড, ওয়াকি! কাজ শেষ করো! নগদ দেব!’

কথাটা শুনে থমকে গেল ঠাণ্ডা-মাথার খুনি। শক্ত হাতে ধরেছে ছোরার হ্যাণ্ডেল। ‘পুরো এক মিলিয়ন পাউণ্ড?’

‘দেড় মিলিয়ন! না, দুই! কীভাবে কাজটা শেষ করবে সেটা তোমাকেই বুঝতে হবে। পুরো দুই মিলিয়ন পাউণ্ড!’

কড়া চোখে স্টুয়ার্টকে দেখছে বাক ওয়াকি। তার মনের ভেতর প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মেছে লোকটার প্রতি। হারামজাদাটা বড়লোক বলেই মনে করে যা খুশি করিয়ে নেবে মানুষকে দিয়ে। তবে এ-ও ঠিক, দুই মিলিয়ন পাউণ্ড মেলা টাকা। ওই পরিমাণ টাকা পেতে পারে ভাবতেই রাগ কমল তার। আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘আগে হাত থেকে পিস্তল ফেলুন, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না।’

‘তোমাকে গুলি করে আমার কোনও ফায়দা নেই। মন দিয়ে শোনো আমার কথা। হয়তো পরেও চাকরি করতে পারবে।’

‘পিস্তল ফেলুন,’ আবারও বলল বাক ওয়াকি।

‘তা হলে আগে হাত থেকে তুমি ছোরা ফেলো।

কয়েক মুহূর্ত ভেবে হাত থেকে ছোরা ছেড়ে দিল বাক ওয়াকি। খটাং শব্দে পড়ে রক্তের পুকুরে অলস ঢেউ তুলল অস্ত্রটা। কোটের পকেটে পিস্তল পুরল স্টুয়ার্ট।

‘ঠিক আছে, নগদ দুই মিলিয়ন পাউণ্ডের জন্যে আমাকে দিয়ে যে-কোনও কাজ করাতে পারবেন,’ বলল ওয়াকি। ‘তবে একটা কথা, এই লড়াই শেষ হলে মাসুদ রানা আমার। আমিই শেষ করব তাকে। সেই প্রথম থেকেই সব ধরনের গোলমাল তৈরি করেছেন স্বয়ং আপনি। এবার আমি সেটা নিজের মত করে শেষ করব। আর এরপর কখনও আপনার কোনও কাজ নেব না। আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?’

আবারও বেজে উঠেছে ফোন। স্টুয়ার্টের ওপর থেকে চোখ না সরিয়ে ফোন ধরল সে।

যোগাযোগ করেছে মৌরেন লরি। জানিয়ে দিল ক্রিস কোল আর দলের অন্য আটজন সহ লণ্ডন থেকে ইনভার্নেস এয়ারপোর্টে পৌছে গেছে। আধঘণ্টা পর হাজির হবে দুর্গে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *