সৃষ্টির রহস্য : নারী ও পুরুষ
জীবজগতে যৌন ও অযৌন এই দুইরকম বংশবৃদ্ধির প্রচলন থাকলেও সৃষ্টির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্যে যৌন প্রজননই বেশি দক্ষ ও কার্যকর পদ্ধতি বলে বিবেচিত। যদিও এটা সর্বজনবিদিত যে যৌন প্রজননকে সার্থক করে তোলার জন্যে যে শক্তি, সম্পদ, ধৈর্য ও সময় ব্যয় করা হয়, তাতে এই প্রজনন যথেষ্ট ব্যয়বহুল ব্যাপার। মানুষসহ বৃহত্তর প্রাণীকুলের মধ্যে পুরুষ ও নারীর ভেতর যৌন মিলন ঘটাবার জন্যে যে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া বিদ্যমান, একজনের সঙ্গে যৌনক্রিড়ায় অংশগ্রহণ করবার জন্যে-সেই বিশেষ একজনের ভেতর নিজের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করাবার জন্যে অন্যজনের যে আকুতি বা আর্তি, যে দীর্ঘ প্রতিক্ষা বা বিশেষ লীলাখেলা, তা যেমন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তেমনি ব্যয়সাধ্য এবং কখনো কখনো ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তা সত্ত্বেও যে কারণে যৌন প্রজনন অযৌন বিভাজনের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর বলে স্বীকৃত, তা হলো যৌন প্রজননে পুরুষ ও নারীর দুটি ভিন্ন জিনস একত্রে মিলিত হয়ে নতুন প্রাণী সৃষ্টি করে এবং প্রতিটি সৃষ্ট প্রাণই হয় স্বতন্ত্র ও অভিনব। শুধু পরিবার পরিবারে ভিন্নতা নয়, একই মা-বাবার প্রতিটি সন্তানই এক জন থেকে আরেক জন আলাদা। এর ফলে প্রত্যেকটি প্রজন্ম যে ব্যাপক বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব লাভ করে, তাতে হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কোনো বিশেষ বা ভয়ঙ্কর রোগবালাই অথবা কোনো বড় ধরনের জলবায়ুর হেরফেরে সম্পূর্ণ প্রজন্ম একসঙ্গে বিনষ্ট বা নির্মূল হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে না, যে বিনাশ অযৌন বিভাজনে সৃষ্ট অভিন্ন জিনসের প্রাণীদের বেলায় ঘটার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া নারী বা পুরুষ কারো জিনসের কোথাও যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে, যৌন প্রজননের ফলে অন্যপক্ষের সুস্থ জিনসের সাহায্যে পরবর্তী প্রজন্মে তা সারিয়ে নেয়া বা মেরামত করিয়ে নেয়া সম্ভব। ফলে মা-বাবার একজনের মধ্যে কোনো অসুস্থ বা অস্বাভাবিক জিন্ যদি থাকেও, তবু সন্তান সেটা নাও পেতে পারে যদি মা-বাবার অন্যজনের মধ্যে সেই বিশেষ জিনটি সুস্থ ও সঠিক থেকে থাকে। একইরকমভাবে, কখনো কখনো আবার এক জনের বিশেষ কোনো ভালো জিন অন্যজনের ভালো জিনের সঙ্গে মিলে আরো বেশি ভালো, উন্নততর ও শক্তিশালী জিনের জন্ম দিতে পারে পরবর্তী প্রজন্মে, যা তার বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে, অথবা বিশেষ কোনো বিষয়ে বা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মেধা বা প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে পারে। (অবশ্য এর উল্টোটিও যে একেবারে ঘটে না, তা নয়)।
ফলে সুস্থ ও সবল প্রজন্ম গড়ার ক্ষেত্রে যৌন প্রজনন নিঃসন্দেহে অযৌন বিভাজনের চাইতে শ্রেষ্ঠতর, অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী ও অনেক বেশি দক্ষ প্ৰক্ৰিয়া। এত বেশি টেকসই ও উন্নততর পদ্ধতি বলেই শত ঝামেলা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এবং যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হলেও হাজার হাজার বছরের বিবর্তনের মধ্যেও যৌন সংযোগ ও যৌন প্রজনন বহাল তবিয়তে আজো বেঁচে আছে : বেঁচে আছে, নারী পুরুষের আকর্ষণের মূল উপাদান হিসেবে, তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও আবেগ প্রকাশের বৃহত্তম মাধ্যম হিসেবে, জীবজগতের সবচেয়ে প্রগাঢ় আনন্দ ও তৃপ্তির উৎস হিসেবে।
কিন্তু যৌন প্রজননের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর যে ভূমিকা, তাদের যে আগ্রহ বা অগ্রাধিকার অথবা পরবর্তী প্রজন্ম সৃষ্টির ব্যাপারে তাদের নিজস্ব যে ধ্যান-ধারণা বা প্রত্যাশা, তার রকম ও প্রকৃতি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। প্রকৃতি থেকে আহরিত কিছু তথ্য থেকে ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট করে বলা যায়।
পুরুষ বরাবরই তার নিজস্ব বংশ বৃদ্ধি ও বংশের পবিত্রতা রক্ষায় ব্যস্ত। নারী ব্যস্ত সন্তানের কল্যাণ কামনায়। যেটা করলে বা যেভাবে করলে তার ভবিষ্যৎ সন্তান সুস্থ, শক্তিশালী ও দীর্ঘজীবী হবে, নারী সেটাই করবে। সে নিজের চেয়ে সন্তানের কথা—বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বেশি ভাবে। অর্থাৎ সৃষ্টির রহস্য খুঁজলে আরেকবার নতুন করে প্রমাণিত হবে, পুরুষ স্বার্থপর ও নারী কল্যাণময়ী, নিঃস্বার্থপ্রাণ।
নিচের বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী থেকে সংগৃহীত জীবজগতের কিছু উদাহরণ থেকে ওপরের কথাগুলোর সপক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো সম্ভব।
ক. মাছির (কাটা ফলের উপর উড়ন্ত বিশেষ ধরনের মাছি) কথাই ধরা যাক। পুরুষ ও মেয়ে মাছি একবার সঙ্গমে লিপ্ত হবার পর মেয়ে মাছি তার শরীরের গুপ্ত পকেটে প্রায় পাঁচশ’ শুক্রাণু জমা করে রাখতে পারে। যতক্ষণ না মিলনের জন্যে তার নিজস্ব ডিম্বকোষ তৈরি হচ্ছে, সে এই শুক্রাণুগুলো ধরে রাখতে পারে। তবে পরবর্তী সঙ্গমে প্রাপ্ত শুক্রাণু অনায়াসে আগেরগুলোর জায়গা দখল করে নিতে পারে। সেটা পুরুষ মাছি ভালো করেই জানে। আর তাই নিজের জিনস রক্ষা ও তার পবিত্রতা নিশ্চয়তা দান করতে পুরুষ মাছি তার বীর্যের সঙ্গে প্রায় ষাট রকম বিভিন্ন প্রোটিন ঢেলে দেয় মেয়ে মাছির শরীরে। প্রথমত এগুলো তার নিজস্ব বীর্যকণাকে খাদ্য ও শক্তি যোগায় নিষেক-ক্রিয়ার সফলতা নিশ্চিত করার জন্য। দ্বিতীয়ত, এ প্রোটিনগুলো মেয়ে মাছিটির যৌনাকাঙ্ক্ষা দাবিয়ে রাখে যাতে সে অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে আগ্রহী না হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রোটিন আবার বাধ্য করে স্ত্রী মাছিকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ডিম্বকোষ তৈরি করে ফেলতে যাতে তার শরীরে সংরক্ষিত শুক্রাণুর সঙ্গেই অবাধারিতভাবে তার মিলন ঘটে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলো এই প্রোটিনগুলো অন্য মাছির শুক্রাণুর জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঠিক বিষের মতো। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষের শুক্রাণু নিধনের এই যুদ্ধে বেচারা স্ত্রী মাছিটিও সম্পূর্ণ রক্ষা পায় না। কেননা এই বিশেষ ধরনের বিষকর প্রোটিন তার নিজের শরীরেও কিছুটা বিষক্রিয়া ঘটায়। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে, নিজে বেঁচে থাকার তাগিদেও নারী মাছিগুলো এক বা দুই পুরুষের চাইতে বেশি পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয় না। একই জিনিস ঘটে এক ধরনের বন্য বেড়ালদের মধ্যেও। সঙ্গমের পর পুরুষ বেড়ালটা সার্বক্ষণিকভাবে পাহারা দিয়ে রাখে স্ত্রী বেড়ালটিকে – যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়ে বেড়ালটি যৌনতাড়িত থাকে। এই পাহারা দেবার একটাই উদ্দেশ্য। মেয়ে বেড়ালটি যাতে অন্য কোনো পুরুষ বেড়ালের সাথে মিলিত হতে না পারে এবং তার শুক্রাণু দিয়েই নিশ্চিতভাবে যাতে জন্ম নেয় শিশু বেড়াল। নিজের বংশের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার পর সে চলে যায়। তখন অন্য পুরুষ বেড়াল তার সঙ্গিনীর কাছে এলেও সে আর আগের মতো তাড়া করে না।
খ. ব্যাঙ প্রজাতির ভেতর দুই রকম পুরুষ রয়েছে। এক রকম পুরুষ তাদের সঙ্গিনীদের যৌন মিলনে আহ্বান করার জন্য অনুচ্চ ও সংক্ষিপ্ত ডাক দেয়। অন্য পুরুষ ব্যাঙের ডাক হয় অনেক চড়া ও লম্বা। দেখা যায় প্রথম ধরনের পুরুষরা আশপাশ থেকে ক্রমাগত ডাক দিলেও মেয়ে ব্যাঙেরা তাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ছুটে যায় দূরের সেই উঁচুলয়ের দীর্ঘস্থায়ী ডাকের দিকেই। প্রথম প্রথম বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন হয়তো এই শেষোক্ত পুরুষ- ব্যাঙের বাহ্যিক পৌরুষালী চমকই এই আকর্ষণের মূল কারণ। পরে তাঁরা এই দুই রকম পুরুষ ব্যাঙের শুক্রাণু নিয়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে ল্যাবরেটরিতে স্ত্রী ব্যাঙের ডিম্বাশয়ের সঙ্গে কৃত্রিমভাবে মিশিয়ে দুই রকম ব্যাঙাচির সৃষ্টি করলেন। দেখা গেল, গড় আয়ু, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে অনুচ্চ ও সংক্ষিপ্ত ডাকের ব্যাঙের প্রজন্ম, লম্বা ও উঁচু স্বরে ডাকিয়ে পুরুষ ব্যাঙের প্রজন্মের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া সার্থক ও সুস্থ ব্যাঙাচি জন্ম নেবার হারও এই শেষোক্ত দলে অনেক বেশি। ফলে কোনো পুরুষ ব্যাঙের ডাকে নারী ব্যাঙ সাড়া দেবে, তা স্থির করা হয় পরবর্তী প্রজন্মের কল্যাণে ও টিকে থাকার লড়াইয়ে কোন পুরুষ ব্যাঙের শুক্রাণু বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসু হবে, তার ওপর।
গ. একই রকমভাবে মাছির মধ্যেও এক প্রজাতি রয়েছে যাদের পুরুষদের চোখ দুটো মুখমণ্ডলে লাগানো থাকে না। দুটি সরু কাঠির ডগায় সেগুলো সামনের দিকে ঝোলে স্প্রিংয়ের মতো। এই কাঠি বা স্টকগুলো কারো কারো ছোট হয়, কারো কারো অনেক লম্বা। দেখা যায় স্ত্রী মাছিগুলো লম্বা স্টকের পুরুষদের প্রতিই বিশেষভাবে আকর্ষিত হয় ও তাদের সঙ্গে মিলিত হতে সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে। এই বিশেষ প্রজাতির মাছিদের মধ্যে আবার পুরুষদের চাইতে নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা এক অভিনব তথ্য আবিষ্কার করলেন। এটা তো সর্বজনবিদিত যে পুরুষদের বীর্যে ‘এক্স’ ও ‘ওয়াই’ দুই রকম ক্রোমোজমই থাকে। আর মেয়েদের শরীরে থাকে শুধু ‘এক্স’ ক্রোমোজম। ‘এক্স’-এর সাথে ‘এক্স’ ক্রোমোজমের মিলন ঘটলে কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। অন্যদিকে ‘এক্স’-এর সাথে ‘ওয়াই’ মিললে জন্মে ছেলে সন্তান। অর্থাৎ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে মায়ের কোনো ভূমিকা নেই। বাবার ক্রোমোজমই সেটা ঘটায়।
এই বিশেষ প্রজাতির পুরুষ মাছিদের বীর্যের ‘এক্স’ ক্রোমোজমগুলো বড়োই স্বার্থপর। তারা ‘ওয়াই’ ক্রোমোজমকে ক্রমাগত আক্রমণ করে পরাস্ত করে দিতে থাকে। ফলে সঙ্গমের পর দেখা যায় বীর্যে খুব কম সংখ্যক ‘ওয়াই’ ক্রোমোজমই রয়েছে অথবা একেবারেই নেই। পরিণতিতে কেবল কন্যা মাছিরই জন্ম হয়। পুরুষ মাছিগুলো এটা করে তার আধিপত্য বিস্তার ও পৌরুষত্ব প্রমাণ করতে। সেইসঙ্গে এই আশা বা আকাঙ্ক্ষাও থাকে যে অল্প পুরুষ থাকলে একা বহু স্ত্রীসঙ্গ উপভোগ করা যাবে। কিন্তু এই স্বার্থপরতার কারণে এ গোটা প্রজাতিই ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়ায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুরুষ মাছির অভাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে তাই এগিয়ে আসে স্ত্রী মাছি। লম্বা স্টকের যে পুরুষ মাছিগুলোকে মেয়ে মাছিগুলো বিশেষ পছন্দ করে এগিয়ে যায়, দেখা যায় তাদের বীর্যের ‘ওয়াই ক্রোমোজমগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী মজবুত ও সাহসী। ‘স্বার্থপর এক্স’ ক্রোমোজমের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে তারা। ফলে মেয়ে মাছিগুলো ‘লং স্টক আইড’ মাছির কাছে শুধু সৌন্দর্যের নেশায় মত্ত হয়ে ছোটে না, পরবর্তী প্রজন্মের নিশ্চয়তা দিতে অর্থাৎ কন্যা মাছির সঙ্গে সঙ্গে পুত্র মাছির জন্মও যাতে সম্ভব হয় সে জন্যই যায়।
ঘ. এটা সকলেরই জানা যে, কোকিলরা অন্য পাখির বাসায় গিয়ে ডিম পেড়ে আসে। আমাদের দেশে যদিও প্রধানত কাকের বাসাতেই ডিম পাড়তে যায় কোকিলরা, জাপানিজ কোকিলরা যায় তিন রকম পাখির বাসায় ডিম ছেড়ে আসতে। কেননা একেক কোকিলা একেক রকম ডিম পাড়ে। পরজীবী এই স্ত্রী পাখিদের অনেক ছলাকলা করতে হয় অন্য পাখিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজের সন্তানদের বড়ো করিয়ে নিতে। গড়ন, রঙ ও আকৃতিতে তার ডিম যাতে আলাদা করা না যায় তার জন্যে উপযুক্ত ঘর খুঁজে হন্যে হয়ে বেড়ায় কোকিলরা। কারণ একবার যদি অন্য পাখিগুলো টের পায় এগুলো তার নিজের ডিম নয়, সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেবে মাটিতে। তা দেবার প্রশ্নই আসে না। কোকিলা তাই খুঁজে বেড়ায় এমন এক নীড় যে রকম নীড়ে সে নিজে বড়ো হয়েছিল। পুরুষ কোকিলের কিন্তু কোনো বাছ-বিচার নেই, মাথাব্যথাও নেই। তিন রকম কোকিলার মধ্যে যাকে সামনে পায় তার সঙ্গেই সে মিলিত হতে ব্যগ্র হয়ে পড়ে। একবারও ভেবে দেখে না কোথায় খুঁজে পাবে তার স্ত্রী-সঙ্গী উপযুক্ত ঘর, যেখানে তাদের সন্তান বড়ো হবে। সৌভাগ্যবশত কোকিল প্রজাতির ডিমের রঙ, আকৃতি, গড়ন সবই আসে মায়ের কাছে থেকে। বাবার কোনো ভূমিকা নেই। মা তাই তার প্রজ্ঞা ও বুদ্ধির বলে ঠিক জায়গায় ডিম রেখে আসে। তা না হলে কোকিল বলে সুমিষ্ট কণ্ঠের এই পাখিটিকে বোধহয় আর দেখাই যেত না।
ঙ. স্ত্রী ফুলের সঙ্গে বাতাস, মৌমাছি বা অন্য কোনো পতঙ্গবাহিত সঠিক পুরুষ রেণুর মিলন ঘটলেই ফলের জন্ম হয়। হাওয়া ও কীটপতঙ্গ কত রকম গাছ থেকে কত রকম রেণুই না বয়ে আনে। কেমন করে তাহলে সঠিক মিলন ঘটে? আসলে স্ত্রী ফুলের গায়ে এমন একটি স্বচ্ছ ও সরু পর্দা রয়েছে যা দিয়ে সে সঠিক রেণুকে ঠিক চিনতে পারে। চেনার পর তাকে জাপটে ধরে রাখে সেই পর্দা। বাড়তি ও অনাকাঙ্ক্ষিত রেণুগুলো তখন ঝরে পড়ে শূন্যে। এ বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচিত ও সংগৃহীত রেণু সুস্থ ফসলের জন্যে অত্যন্ত জরুরি। কেননা ভুল বা অত্যধিক রেণু জমা হলে কাঙ্ক্ষিত ফল তৈরির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে প্রকৃতিতে যা পরিষ্কার প্রমাণ করে দেবে সন্তানের মঙ্গল ও সুস্থ প্রজন্ম তৈরি স্ত্রী জাতির সবচেয়ে বড়ো আকাঙ্ক্ষা। তার একান্ত ব্যক্তিগত আচরণ, পছন্দ-অপছন্দের অনেকটাই সেই চিন্তার চারপাশে ঘোরে। অন্যদিকে পুরুষের প্রধানত দুটি লক্ষ্য। এক. যত বেশি ও যত রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ স্ত্রী-সঙ্গ উপভোগ করা যায়। দুই. নিজের বংশ বা জিনস-এর বিস্তার ঘটানো ও তার পবিত্রতা রক্ষা করা।