একুশ শতকে নারী-ভাবনা

একুশ শতকে নারী-ভাবনা

নতুন শতকে নারী আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি কী হবে? নারীর সামগ্রিক ‘অবস্থা’ ও ‘অবস্থানে’র কতখানি গুণগত পরিবর্তন আমরা আশা করি? পিতৃতন্ত্র, ধর্ম, নারীর শারীরিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, কুমারীত্ব, সতীত্ব, মাতৃত্ব, লিঙ্গভিত্তিক আইন (বিশেষত ধর্মীয় পারিবারিক আইন) নারীকে কতটা বেঁধে রাখতে পারবে সীমিত ভূমিকায়? বিবাহ, পরিবার, কর্মস্থল (উৎপাদন ও সেবামূলক), সমাজ ও রাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যমূলক নীতি ও চর্চার কতখানি মেনে নেবে নারী? অথবা আদৌ সেগুলো মানবে কিনা তারা? ধর্ষণসহ মেয়েদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও নির্যাতনের (পারিবারিক ও যৌন নির্যাতনসহ) বিরুদ্ধে, যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে ব্যক্তি ও সমষ্টিগত কী ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়? উচ্চতর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নারীর সম্পৃক্ততার এমন করুণ অবস্থা কতদিন চলবে? এর পরিবর্তন সম্ভব কী করে? প্রয়োজনে নিরাপদ ও বৈধ গর্ভপাতের ব্যবস্থা এবং পছন্দমতো জন্মনিরোধক বস্তুর সহজলভ্যতার নিশ্চয়তাসহ প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে নারীর অন্তর্ভুক্তি তার মৌলিক অধিকার স্বীকৃতিরই অন্যতম শর্ত বলে বিবেচিত হবে নিশ্চয়ই এ শতাব্দীতেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কন্যা-ভ্রূণ হত্যা ও আনুষঙ্গিক প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, নারী-পুরুষের আনুপাতিক হারের ক্রমহ্রস্বমান গতি, মাতৃত্বজনিত মৃত্যুর (যে-মাতৃত্বের একটা বড় অংশই অনাকাঙ্ক্ষিত) ভয়াবহ উচ্চ হার বন্ধ করা কি অসম্ভব? পপুলেশন মোমেন্টামের অবধারিত ফল, মোট জনসংখ্যায় কিশোর-কিশোরী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যাধিক্য, উন্নয়নশীল সমাজে নরনারীর সম্পর্কের প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে কি? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে নারী- পুরুষের যৌনসংযোগ ছাড়াও সন্তান ধারণ এখন সম্ভব। অবধারিতভাবেই তা আরো সহজতর হবে ভবিষ্যতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে। জরায়ুহীন কন্যার ডিম্বকোষ বের করে নিয়ে জামাতার শুক্রাণুর সঙ্গে টেস্ট টিউবে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ভ্রূণকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল কন্যার মাতার জরায়ুতে এ শতাব্দীতেই। নির্দিষ্ট সময়ে ভূমিষ্ঠ সেই সন্তানের প্রকৃত জননী কে? শিশুটির পিতার স্ত্রী না শাশুড়ি? জামাইয়ের সঙ্গে শাশুড়ির সম্পর্কের প্রকৃতিটাই-বা কী এখানে? প্রযুক্তির এ ধরনের অগ্রগতির কী প্রতিফলন ঘটবে নারী-পুরুষের সনাতন সম্পর্কে তথা বৃহত্তর মানবিক সম্পর্কে? বিবাহের আবশ্যিকতা ও বন্ধ্যাত্ব কি তা হলে লোপ পাবে? যৌনতাকে প্রজনন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে শিখেছে নারী এ শতাব্দীতেই। বিবাহ-পূর্ব যৌনসম্পর্ক স্থাপনকেও স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে অধিকাংশ পশ্চিমা সমাজ। আজীবন অতিবাহিত থাকার হার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এটা কি এভাবে বাড়তেই থাকবে? আগামী শতকগুলোতে নিজের শরীর ও যৌনতার ওপর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে তো নারী? সমকামিতা ও স্বেচ্ছায় নিঃসন্তান থাকার সামাজিক স্বীকৃতি পেতে আর কতদিন বাকি তাদের? জন্ম নিয়ন্ত্রণ, সন্তান প্রতিপালন ও গৃহকাজে পুরুষসঙ্গীর সহযোগিতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য খুব কি বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে? এইচআইভি ও এইডসের ভীতি যৌন আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে কি? এইডসের ভয় পুরুষকে কনডম ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করায় পরবর্তীকালে সে কি গর্ভনিরোধেও তা ব্যবহারে সমান আগ্রহী হবে? এতদিন এ ব্যাপারে তার ঔদাসীন্যের মূল কারণ ছিল কী নিজের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকা? নারীকে সরাসরি পণ্য করে তোলে যে-পতিতালয় ও পাচার-ব্যবস্থা অথবা পণ্য করতে সাহায্য করে যে- পর্নোগ্রাফি, বিকৃত বিজ্ঞাপন ও বৃহত্তর গণমাধ্যম, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইন ও বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন হবে তো? দেশনেত্রী বা সরকার প্রধান যদি নারী হয় কিংবা সংসদে নারীর উপস্থিতি যদি নগণ্য না হয় তা হলেই কি পিতৃতন্ত্রের ভিত নড়ে যাবে? নাকি ক্ষমতায় আরোহণ করার পর নারীর শরীর ধারণ করা সত্ত্বেও তারা পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বই করবেন যেমন করছেন আজ? আসলে নারী-লিঙ্গের প্রতিস্থাপন নয়, ‘নারীসুলভ’ দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে রাষ্ট্রযন্ত্রে। নির্মম প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, যুদ্ধের বদলে শান্তি, সম্পদ আহরণে ও ক্ষমতার বড়াইয়ের বদলে সততা, নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা এবং অসফল ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর প্রতি কাঠিন্য ও পৌরুষত্ব প্রদর্শনের বদলে দরদ, মর্যাদা ও স্নেহশীলতার প্রকাশ এ ধরনের ‘নারীসুলভ’ গুণাবলির উদাহরণ—যা একটি ব্যক্তিসত্তাকে কেবল পূর্ণতা দেয় না, সমগ্র সমাজের মান উন্নয়ন করে, গোটা জাতির জীবনকে করে তোলে আরো আকর্ষণীয় ও সুখকর। আলোকিত মানুষ নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে পথ হাঁটে। রাষ্ট্রের ও সমাজের পুরুষ রূপ তো আমরা পাঁচ হাজার বছর ধরেই দেখে আসছি। এখন আমরা চাই অবদমিত নারী এবং নারীর সহযোগী শক্তি প্রগতিশীল পুরুষের যৌথ উদ্যোগে কিছু মানবিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে—রাজছত্রে এবং পরিবারে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ‘নারীকরণ’ (স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো যে ইতিবাচক অর্থে ‘নারীবাদী’) মানবজাতির কল্যাণই বয়ে আনবে, মাতৃতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা করবে না। কেননা পিতৃতন্ত্রের বদলে মাতৃতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা আমাদের মোটেও কাম্য নয়।

আদিমকালে খাদ্যসংগ্রহ ও পশুশিকার করে মানুষ যখন জীবনধারণ করত, তখন নারীর বিচরণক্ষেত্র ও অধিকার আজকের মতো সীমিত ছিল না। বরং প্রজনন-ক্ষমতার জন্যে তার বিশেষ সমাদর ও মর্যাদা ছিল সমাজে। কৃষি ও পশুপালনের মাধ্যমে সভ্যতার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নারী গৃহবন্দী হলো। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ও শিল্প উন্নয়নের যুগে ভাবা গিয়েছিল নারীর অধিকার বিস্তৃত হবে, কেননা সীমিত শারীরিক ক্ষমতার যে অজুহাতে নারীকে একেবারে প্রান্তিক অবস্থায় অর্থাৎ গৃহকাজে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, মেশিনের ব্যবহার সে-বাধা অর্থাৎ দৈহিক পার্থক্য দূর করে দেবে বলে আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু কার্যত সেটা ঘটে নি। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পরিবারের উদ্ভব নারীকে ততদিনে সম্পূর্ণ কোণঠাসা করে গৃহকোণে বেঁধে দিয়েছে। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক শাসনের চাবিটি চলে গিয়েছে পুরুষের হাতে। আগামী শতাব্দীতে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দশটা-পাঁচটা অফিস না করে ঘরে বসেই লোকে অনেক কাজ করতে পারবে। সন্তান পালনে পুরুষ তাতে আরো বৃহত্তর ভূমিকা পালন করার সুযোগ পাবে, যদি সদিচ্ছা থাকে। এক সময় ভাবা গিয়েছিল সমাজতন্ত্রের শ্রেণিবিভেদহীন মতাদর্শ স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিকভাবেই নারীর মুক্তি ও কল্যাণ বয়ে আনবে। বাস্তবে তারও তেমন প্রতিফলন ঘটে নি। কিছুটা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা সত্ত্বেও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ও যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক দেশের নারীর অবস্থানও পুরুষের তুলনায় অনেকটাই পেছনে ছিল। অর্থনৈতিক মুক্তিও যে নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও বিভেদমূলক আচরণ নিবারণের একমাত্র শর্ত নয়, জাপানই তার বড় উদাহরণ। সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা লোপ পাওয়ার পর মুক্তবাজার অর্থনীতি ও গ্লোবালাইজেশনের রমরমা প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগ নারীর জন্য আজ বিশেষ হুমকিস্বরূপ। আমাদের সবচেয়ে বড় আশা এখন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। চলতি বছরসহ বিগত অনেক বছর ধরেই নারীর সামাজিক অবস্থানের শীর্ষে রয়েছে এই সকল দেশ। এবং সেটা তারা করতে পেরেছে অনেকগুলো সংস্কার (সরকার অনুমোদিত পিতৃত্বজনিত ছুটি একটি উদাহরণ) এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যা নারীর জৈবচক্র ও প্রজননের মতো বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছে। এর উল্টো প্রান্তে অবস্থান করছে অনেকগুলো আফ্রিকান সমাজ, যেখানে পুরুষ নারীকে শুধু তার যৌনসম্ভোগ ও সন্তান উৎপাদনেই ব্যস্ত রাখে নি, কৃষিকাজ, পশুপালনসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভারও তুলে দিয়েছে অনায়াসে নারীর হাতে। সেইসব সমাজে অকর্মণ্য পুরুষ মদ ও অন্যান্য নেশা করে অলস দিন যাপন করে আর পিঠের পেছনে শিশু বেঁধে পাহাড়ে-জঙ্গলে কঠিন শ্রমে জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় নারী। এ অবস্থার আবশ্যকীয় পরিবর্তন ঘটতেই হবে সামনের শতাব্দীতে।

শতাব্দী অনেক লম্বা সময়। এ বিশাল সময়ের ব্যাপ্তিতে নারীর অবস্থানে কী ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে, তা কারো পক্ষে সঠিকভাবে অনুমান করা সম্ভব নয়। কেননা এ সময়ে চারপাশের অন্য অনেক কিছুই, যা নারীর অবস্থান নির্ণয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, দ্রুত বদলাতে থাকবে। যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং), জনসংখ্যা, কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন, ধর্মীয় প্রভাব, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ধারার ক্রমবিকাশ ও বিন্যাসও চিন্তার অতীত। আগামী শতকে কী ধরনের প্রত্যাশা আমরা করতে পারি নারীর জীবনে, তার মোটামুটি একটা ধারণা পেতে হলে গত দুই শতকের নারী আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্পর্কে সংক্ষেপে পর্যালোচনা করতে হয়। তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে, ধর্ম ও বিবাহের মতো মজবুত প্রতিষ্ঠানকেই বোধহয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে ভবিষ্যতে। বসতে হবে তাদের তৃতীয় সহস্রাব্দের আলোকিত ও যৌক্তিক মানুষের মুখোমুখি।

আঠার শতকের শেষাংশে ও উনিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন পশ্চিমে নারীমুক্তি-আন্দোলনের ইশতেহার হিসেবে পরিচিত ম্যারি ওলস্টোনক্র্যাফটের (১৭৫৯- ১৭৯৮) “এ ভিনডিকেশন অব দ্য রাইটস অব উউমেন” (১৭৯২)-এর তিনটি সংস্করণ বেরিয়ে গেছে এবং পশ্চিমে নারীর সম-অধিকার নিয়ে চারদিকে তোলপাড় হচ্ছে, তখন ভারত উপমহাদেশে নারীর আক্ষরিক অর্থে বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারের দাবি সবেমাত্র উচ্চারিত হতে শুরু করেছে। নারী ও পুরুষ উভয়েরই বাল্যবিবাহ, পুরুষের বহুবিবাহ, বিধবা-বিবাহে নিষেধাজ্ঞা, সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা, কন্যাসন্তান হত্যা, স্ত্রীশিক্ষার অভাব—সব মিলিয়ে নারীর সামাজিক অবস্থা তখন ছিল খুবই সংকটাপন্ন। বিবাহের রীতিনীতি ও শিক্ষার সুযোগের এ অসম বণ্টনের শিকার ছিল শুধু হিন্দু নারীই নয়, মুসলমান নারীও (বিধবা-বিবাহে কট্টর নিষেধাজ্ঞা ও সহমরণ ব্যতীত)।

ভারতের আরেকটি পৈশাচিক রীতির কথা খুব বেশি আলোচিত হয় না। সেটি হলো, একসময় বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে শিশুকন্যা হত্যার ব্যাপক প্রচলন ছিল এ দেশে। আঠার ও উনিশ শতকেও এর উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে পূর্ব-সীমান্তের নাগাভূমি থেকে শুরু করে পশ্চিম-সীমান্তের কচ্ছ পর্যন্ত। অন্যদিকে ভারতের মধ্যাঞ্চল থেকে জম্মু ও কাশ্মির পর্যন্ত। রাজস্থানের রাজপুতদের মধ্যে এর প্রচলন ছিল খুব বেশি। কোথাও ধর্মবিশ্বাসে, কোথাও স্রেফ জাত্যাভিমানে, কোথাও বিবাহের জটিলতা এড়াতে, কোথাও শত্রু বা আক্রমণকারীর হাতে ভবিষ্যতে নারীর শ্লীলতাহানির আশঙ্কায় কখনো তাদের শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হত, কখনো মাটিতে পুঁতে ফেলা হত, কখনো-বা জলে ভাসিয়ে দেওয়া হত। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বিবাহিত পত্নীদের কন্যাসন্তানরাই এই বর্বর প্রথার সবচেয়ে বড় শিকার ছিল। উপপত্নী বা যৌনকর্মীদের গর্ভের শিশুকন্যারা এ রোষানল থেকে অনেক সময়েই বেঁচে যেত, কারণ তাদের বংশমর্যাদা রক্ষার দায় যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না দেবতার উদ্দেশে উৎসর্গিত হবার পবিত্রতা। এ ধরনের নিষ্ঠুর রীতির বিরুদ্ধে জেমস টমসন, জেমস কোগাস, লড কর্নওয়ালিশ ও জন স্রাচ-সহ বেশ কিছু ইংরেজের কঠিন আন্দোলনের ফলে ১৮৭০ সালে শিশুকন্যাহত্যা-নিবারণ বিল পাস হয়। এর আগের দুই দশকে যথাক্রমে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও অম্বরের রাজা জয় সিং বহু চেষ্টা করেও এই কুপ্রথার অবসান ঘটাতে পারেন নি।

বহু খসড়া-প্রস্তাব ও আবেদনপত্র জমা হওয়া সত্ত্বেও বহু-বিবাহ-নিষেধক কোনো আইন শেষ পর্যন্ত প্রণয়ন করা সম্ভব হয় নি সেকালে। যদিও ১৮৬৬ সালে তা বাংলা সরকারের অনুমোদন পায়। কিন্তু ভারত সরকার এ আবেদনে শেষ পর্যন্ত সাড়া দেয় নি। তবে বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায় ও মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মতো প্রগতিশীল লোকদের সামাজিক আন্দোলনের মুখে বহু-বিবাহের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই হ্রাস পায়। আর ১৮৯১ সালে সহবাসসম্মত বয়স সম্বন্ধে এক আইন পাস করে ১২ বছরের কম বালিকার সঙ্গে সহবাস করলে স্বামীর দণ্ডনীয় অপরাধ হবে বলে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে মেয়েদের শিশুকালে বিবাহ কিছুটা হলেও কমতে শুরু করে। সহমরণ বা সতীদাহ প্রথা আইনের সাহায্যে নিবারিত হলো ১৮২৯ সালে। আর ১৮৫৬ সালে পাস হয় বিধবাবিবাহ আইন। হুমায়ুন আজাদের ভাষায় “রামমোহন রায় ও বেন্টিংস হিন্দু বিধবাকে প্রাণ দিয়েছিলেন (সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ করে) আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দিয়েছিলেন জীবন” (বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করে)।

কিছু ইংরেজের সক্রিয় সহযোগিতায়, বিশেষ করে মিশনারিদের উদ্যোগে, ভারতে স্ত্রীশিক্ষার উন্মেষ ঘটে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। ১৮০৭ সালে শ্রীরামপুরে বিবি হানা মার্শম্যান একটি বালিকা-বিদ্যালয় খোলেন। মাত্র আট জন ছাত্রী নিয়ে প্রথম বিদ্যালয় শুরু হয়। ১৮৪৯ সালে প্রাতিষ্ঠানিক নারীশিক্ষার সূচনা হয় বেথুন প্রতিষ্ঠিত ভিক্টোরিয়া গার্লস স্কুলে (বেথুন স্কুল)। বিদ্যাসাগরেরও যথেষ্ট অবদান ছিল স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে। অবলা দাস, কামিনী রায়, কাদম্বিনী খাস্তগীর, প্রিয়তমা দত্ত, বিধুমুখী বসু, চন্দ্রমুখী বসুরা প্রথম সারির মেয়ে যাঁরা উচ্চশিক্ষায় যোগ দিয়েছিলেন। চিকিৎসা জগতে এসেছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, মেরি মিত্র। ঠাকুরবাড়ির স্বর্ণকুমারী দেবী, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী দিয়েছিলেন তখন নারী-আন্দোলনের নেতৃত্ব। মুসলমান নারী- জাগরণ ও সংস্কারে এগিয়ে এসেছিলেন বেগম রোকেয়া। ১৯১১ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় বিধানে নিষ্পেষিত নারীদের অবস্থা বর্ণনা করে লেখা তাঁর রচনাসমূহ সেই সময় মুসলমান সমাজের নারীদের কাছে নতুন বার্তা বয়ে এনেছিল।

এদিকে ১৭৯২ সালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে পশ্চিমে। ফ্রান্সে বিবাহবিচ্ছেদের আইন প্রবর্তিত হয়। উনিশ শতকের প্রথম তিন দশকে আমেরিকার নারী-আন্দোলন সেখানকার দাসমুক্তি-আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। ১৮৪৮ সালে নিউইয়র্কের সেনেকা ফসের ঐতিহাসিক কনভেনশনে নারীমুক্তির ঘোষণা পাঠ করা হয়। সেই অধিবেশনে নারীর কিছু মৌলিক অধিকার আদায়ের দাবিতে ১২টি প্রস্তাব রাখা হয়। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার, বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার, ভোটের অধিকার, উচ্চশিক্ষার অধিকার, সংসদে ও আদালতে বসার অধিকার নিয়ে এই অধিবেশনে এগিয়ে এলেন এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যান্টন ও সুসান বি এন্থনি। বিশ শতকের গোড়ার দিকে, তাঁদের মৃত্যুর আগে, তাঁরা দেখে যেতে পেরেছিলেন মেয়েদের কিছু আইনগত স্বীকৃতি, যেমন সম্পত্তিতে অধিকার, চাকরির ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুযোগ। ১৯২০ সালে আসে আমেরিকার নারী-আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার—–মেয়েরা ভোট দেবার অধিকার অর্জন করে। সবার আগে অবশ্য নারীকে ভোটাধিকার দেয় নিউজিল্যান্ড ১৮৯৩ সালে। দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়া। সেখানে নারীর ভোটাধিকার স্বীকৃত হয় ১৯০২ সালে। ভারতে আংশিকভাবে এ দাবি মেনে নেওয়া হয় ১৯২৭ সালে বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের নেতৃত্বে। যদিও প্রথম ভোটাধিকার পায় মাদ্রাজ ১৯২১ সালে। আর বাংলা পায় ১৯২৫ সালে। বাংলাদেশের নারীসমাজ প্রথম ভোট দেয় ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে।

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে হঠাৎ করেই পশ্চিমের বেগবতী নারী-আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় নারীরা নিজেদের কথা ভিন্ন করে ভাবার আর তেমন সুযোগ পায় নি। নারী- আন্দোলনের এই ভাঁটার সময় আশার আলো জ্বালিয়ে রাখে ভার্জিনিয়া উলফের “এ রুম অফ ওয়ান্স ঔন” (১৯২৭)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার চার বছরের মধ্যেই বের হয় নারীর ওপর বৈষম্যের বিষয়ে এ যাবৎ লিখিত সকল গ্রন্থের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত বইটি। নারী-আন্দোলনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনাকারী এই বইটি হলো সিমন দ্য বোভোয়া রচিত ‘সেকেন্ড সেক্স’ (১৯৪৯)। অসমসাহসী, মুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত, যুগের তুলনায় অনেক অগ্রগামী, আজীবন অবিবাহিতা এই ফরাশি নারীবাদী জীবদ্দশায় গর্ভনিরোধকের ব্যবহার ও গর্ভপাত দুটোই করেছেন এবং প্রকাশ্যে তা স্বীকারও করেছেন। সেই সময় এই দুটিই ছিল ফ্যান্সে আইনবহির্ভূত। অন্য আরো কিছু সমমনা নারীর সঙ্গে তিনি একটি অবৈধ গর্ভপাত নেটওয়ার্ক চালু করেছিলেন। নিজের অ্যাপার্টমেন্টকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন অন্য মেয়েদের গর্ভপাতের জন্যে ব্যবহার করতে। গর্ভপাত বেআইনি থাকায় সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে প্রকাশ্যে গর্ভপাত সম্ভব ছিল না তখন। এই গ্রন্থে সার্ত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্রীমতী সিমন ব্যাখ্যা করেছিলেন কেমন করে পুরুষ দ্বারা নারীর চরিত্র নির্মিত হয় সমাজে। প্রকৃতিগতভাবে তারা কখনো সেভাবে বেড়ে ওঠে না। সিমন দেখিয়েছিলেন, সভ্যতার প্রতিটি স্তরে পুরুষতন্ত্র নারীকে কী রকম ‘সীমাবদ্ধ’ ও পুরুষকে ‘অসীম’ বলে চিত্রায়িত করেছে। তিনি যখন এই গ্রন্থটি লেখেন, তখন তাঁর ধারণা ছিল নারীর সকল সমস্যারই সমাধান হবে সমাজতন্ত্র বিকাশের মাধ্যমে। নিজেকে তখনো নারীবাদী ভাবতেন না তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর ধারণা পাল্টায় এবং সত্তরের দশকে এসে তিনি নিশ্চিত হন যে, নারীর প্রতি পুরুষের এই যে বৈষম্য এটা শুধু পুঁজিবাদী দেশেই নয়, সমাজতান্ত্রিক দেশেও বিদ্যমান। তখন থেকে সক্রিয় নারীবাদী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। বহুল প্রচার ও জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরও বোভোয়ার এই গ্রন্থটির সমস্ত বিশ্লেষণ নারীবাদীরা মেনে নেন নি। যেমন মেরি বার্ড কখনো স্বীকার করেন নি যে, সভ্যতার সকল স্তরেই নারী অবদমিত ছিল। তিনি নারীর শরীর ও মাতৃত্বকেও তার ক্ষমতার বিকাশের অন্তরায় হিসেবে দেখেন নি, যেমন দেখেছেন বোভোয়া।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পর কিছুদিন পুরোদমে চলে ‘বেবি ব্যুমে’র অধ্যায়। যুদ্ধফেরত সৈনিকরা ঘরের দিকে মুখ ফেরায় আর ঘরে বসে নারী সন্তানবতী হয় ঘনঘন। নারী-আন্দোলন পারিবারিক এই পুনর্মিলনে কয়েক বছরের জন্যে থমকে দাঁড়ায়। তারপর ষাটের দশকে প্রকাশিত হয় আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : বেটি ফ্রিডানের “দ্য ফেমিনিন মিস্টিক”। বেটি তাঁর গ্রন্থে দেখিয়েছেন, কোমলবতী, স্নেহশীলা ও সহনশীল সেই চিরন্তন নারীরূপকে নিজের মধ্যে যথাযথ প্রতিফলিত দেখতে না পেয়ে আধুনিক শিক্ষিত ও আত্মসচেতন স্ত্রীরা কী নিদারুণ দ্বন্দ্ব ও সংকটে দিন কাটাচ্ছে আমেরিকায়। ১৯৭০ সালে বের হয় আরেকটি যুগান্তকারী গ্রন্থ। কেট মিলেটের “সেক্সুয়েল পলিটিক্স”। এই বইতে কেট নারী-পুরুষ সম্পর্কে ও যৌনতার ভেতরও রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রকাশ খুব স্পষ্ট করে দেখতে পেয়েছেন। নারী- পুরুষের সনাতন যৌন ভূমিকা সকল উপকথা, রূপকথা ও ধ্রুপদী সাহিত্যে এমন প্রবলভাবে উপস্থিত যে, এর মায়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে দুটি পূর্ণ মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষের পরস্পরকে গ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

ষাটের দশকে অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্যায়ের নারীবাদী আন্দোলনের জোয়ারে এসে আমেরিকার নারীবাদ দুটি পরিষ্কার মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে যায়। এক দল শিক্ষিত কর্মজীবী নারী জড়িয়ে পড়েন কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতি ও আইনে নারীর সমান অধিকারের স্বীকৃতির আন্দোলনে। অন্য দল, যাঁরা অধিকাংশই অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং ষাটের দশকে যুদ্ধবিরোধী ও বর্ণবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীর যৌন স্বাধীনতা ও যৌনদাসত্বের মুক্তি-সংগ্রামে। পরবর্তীকালে এই দুই দলই নিজেদের দাবি থেকে কিছু কাটছাঁট করে অভিন্ন এক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে আমেরিকার নারীরা যখন ভোটাধিকার লাভ করার পর অর্জনের আনন্দে আত্মহারা এবং পরবর্তী চার দশক দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে নিজেদের সামাজিক অবস্থানকে নিয়ে কোনো সংগঠিত আন্দোলন করতে ব্যর্থ, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন যৌনতার ক্ষেত্রে মেয়েদের মুক্ত করার জন্যে ও উন্নততর সামাজিক আইন প্রণয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়ে। তারা সেখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যেই বিবাহবিচ্ছেদকে মুক্ত ও স্বাধীন করে তোলে। গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়। সন্তানজন্মের অবৈধতার অবসান ঘটে। ফলে বিবাহ কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। গর্ভপাত অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে যায়। দ্রুত শিল্পায়নের মুখে যখন রাষ্ট্রে শ্রমশক্তির দারুণ প্রয়োজন, তখন বিবাহে অনীহা ও গর্ভপাতের এই হিড়িক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনে। স্তালিনকে তখন দেখা যায় সামাজিক রীতিনীতিতে রাশ টেনে ধরতে। সনাতন পিতামাতার ভূমিকার ইতিবাচক দিকগুলো বড় করে তুলে ধরেন স্তালিন। গর্ভপাত অবৈধ হয়ে যায়। বিবাহবিচ্ছেদ কঠিন হয়ে পড়ে। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও পরিবারে, যৌনতা ও প্রজননের ক্ষেত্রে, নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতায় সোভিয়েত রাষ্ট্রের এই হস্তক্ষেপ নারী-স্বাধীনতার অগ্রগতিকে এক ধাপ পিছিয়ে দেয়।

নারী নিজের দেহের ওপর, তার প্রজনন-ক্ষমতার ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ আনতে গর্ভনিরোধ ও গর্ভপাতকে বৈধ করে তোলার জন্যে বহু বছর ধরেই আন্দোলন করে এসেছে। কিন্তু ম্যালথাস থেকে শুরু করে সমাজতান্ত্রিক তাত্ত্বিকেরা কেউ এ বিষয় দুটিকে নারীর মানবিক ও ব্যক্তিগত অধিকার বা দাবি বলে কখনো মানেন নি; রাষ্ট্রের বা সমাজের প্রয়োজনে এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত নীতির অংশ হিসেবেই বিবেচনা করছেন। কিন্তু নারীর প্রজনন-ক্ষমতার ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ কতটা মৌলিক, কতটা জরুরি তা তুলে ধরেন ও সেই লক্ষ্যে কাজ করে যান ইংল্যান্ডের নারীবাদী জন স্টুয়ার্ট মিল, মেরি স্টোপস্ ও ভারতের অ্যানি বেসান্ত্। বহু আন্দোলনের পর ফ্রান্সে ১৯৭৫ সালে, ইতালিতে ১৯৭৭ সালে ও স্পেনে ১৯৮৫ সালে গর্ভপাত বৈধ হয়। বহু দেশে আজো গর্ভপাত অবৈধ। নেপালের নারী কয়েদিদের ৫০%ই জেল-যাতনা ভোগ করছে গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে। গর্ভপাত নেপালে পুরোপুরি বেআইনি এবং গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তি ন্যূনতম ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড।

অন্যদিকে চীনের বিপ্লবের পর প্রাথমিক পর্যায়ে নারীমুক্তির ব্যাপারটায় সম্পূর্ণ জোর দেওয়া হয়েছিল উৎপাদনের ওপর অর্থাৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এর ফলে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের বেশ অগ্রগতি হয় এটা সত্য। কিন্তু সমাজে নারী- পুরুষের আচার-আচরণের পরিমিতি ও নিয়ন্ত্রণ ঘটতে থাকে সরাসরি আইনের মাধ্যমে। মেয়েদের সৌন্দর্যচর্চা, বৈভব, নিজেদের আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। চুল ছোট করে ছাঁটা, নারী-পুরুষের একই রকম ধূসর পোশাকের ব্যবহার, মেয়েদের ব্রা না পরা, এক সন্তানের সীমাবদ্ধতার মতো নিয়মকানুনের মাধ্যমে যৌনতার প্রচণ্ড অবদমন শুরু হয়। এই পিউরিটানিজ্ম্ চীনের নরনারী যে প্রকৃতপক্ষে মেনে নেয় নি এবং রাষ্ট্রীয় দমন হিসেবেই গণ্য করেছে, তা গত দুই দশকে এই ঋজু নিয়মকানুনের শিথিলতায় চীনবাসীর প্রবল উৎসাহী প্রতিক্রিয়াতেই বোঝা গেছে।

১৯৬০-১৯৯০–এই তিন দশকে নারী সরকার-প্রধানদের বিপুল আবির্ভাব ঘটে বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু এঁদের অধিকাংশই লৈঙ্গিকভাবে স্ত্রীজাতির প্রতিনিধিত্ব করলেও মতাদর্শে পুরুষতন্ত্রেরই প্রতিনিধি। ফলে এঁদের উপস্থিতিতে নারী-আন্দোলন তেমন শক্তি অর্জন করে না। এইসব রাষ্ট্র বা সরকার-প্রধান নারীদের অধিকাংশেরই অভ্যুদয় ঘটেছে তাঁদের পুরুষ নিকট-আত্মীয় সরকার-প্রধানের মৃত্যুজনিত শূন্যতায় অথবা সহানুভূতিতে। যে সকল সরকারপ্রধান নারীনেত্রীর আবির্ভাব ঘটে এ সময় তাঁরা হলেন শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে (শ্রীলঙ্কা), ইন্দিরা গান্ধী (ভারত), গোল্ডা মেয়ার (ইজরায়েল), ইসাবেলা পেরন (আর্জেন্টিনা), মার্গারেট থেচার (যুক্তরাজ্য), কোরাজন আকিনো (ফিলিপাইন), বেনজির ভুট্টো (পাকিস্তান), খালেদা জিয়া (বাংলাদেশ), চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা (শ্রীলঙ্কা), শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ)। এইসব ক্ষমতাশীল নারী সরকার- প্রধানের চেয়ে নারীমুক্তির সংগ্রামে অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন মরক্কোর নারীবাদী লেখক ফাতেমা মার্নিসি – যিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৪র ভেতর তিনখানি মূল্যবান গ্রন্থ লেখেন ধর্মের জাঁতাকলে মুসলমান নারীর শোচনীয় অবস্থা বর্ণনা করে।

বিংশ শতাব্দীর নারী-আন্দোলনের সফলতার দুটি মাইলফলক হলো সহজলভ্য জন্মনিরোধকের-বিশেষত খাবার বড়ির-আবিষ্কার ও জাতিসংঘ কর্তৃক নারীর সার্বিক অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতিদান। জন্মনিরোধক বড়ির আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞানের বিরাট সাফল্যই নয়, মানব-ইতিহাসেরও এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই ঘটনা নারীর যৌন অভিজ্ঞতাকে প্রজনন-অভিজ্ঞতা থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ দিয়েছে। এর আগে এ দুটোকে আলাদা করে ভাবার তেমন অবকাশ ছিল না এবং সন্তান ধারণের সম্পূর্ণ দায়ভার নিজের কাঁধে চাপিয়ে প্রকৃতি ও পুরুষের কাছে একরকম বন্দী হয়ে ছিল নারী।

অন্যদিকে জাতিসংঘের পত্তনের পর একেবারে প্রথম সনদেই নারীর সমান অধিকার পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালকে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ ও ১৯৭৫-১৯৮৫-কে নারীদশক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৬ সালের ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস উপলক্ষে ব্রাসেলসে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালে নারীর যৌনতাকে বিপরীতলিঙ্গের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে সীমিত করে রাখা, ধর্ষণ, মাতৃত্ব, শিশুর ওপর যৌন অনাচার, অজাচার বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়। এছাড়া এ সময় মেক্সিকো সিটিতে (১৯৭৫), কোপেনহেগেনে (১৯৮০) ও নাইরোবিতে (১৯৮৫) তিনটি আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য নিরসনের জন্যে বিভিন্ন সুপারিশমালা পেশ করা হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তা অনুমোদন করা হয়। নারীর অধিকার মৌলিক মানবাধিকার বলে স্বীকৃত হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা—বিশেষ করে ধর্ষণকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করা হয় এবং তার প্রতিকারে সকল সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এটা অনস্বীকার্য যে, জাতিসংঘের সক্রিয় উদ্যোগ ছাড়া নারী-আন্দোলন বিচ্ছিন্নভাবে পশ্চিমা নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ থাকত। সত্তরের দশকে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর নারীর সঙ্গে পাশ্চাত্যের নারীদের একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম নির্মিত হয়। সেইসঙ্গে দাতা দেশগুলোর নির্দেশে স্বল্প-উন্নত দেশগুলো নারী-উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগী হয়ে পড়ে।

নারীর যৌন ও প্রজনন অধিকারের আরেকটি বড় মাইলফলক ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘ আয়োজিত ও কায়রোতে অনুষ্ঠিত প্রজনন-স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ICPD (International Conference on Population and Development)। এ সম্মেলনে প্রজনন ও জন্মনিয়ন্ত্রণে নারীর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা (স্বেচ্ছায় সন্তানহীন থাকার স্বাধীনতাসহ) স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব, নারী-পুরুষের সুস্থ ও আনন্দময় যৌনজীবন যাপনের (যৌনবাহী রোগ বা অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান ধারণের ভয় থেকে মুক্ত) অধিকার ও প্রজনন-স্বাস্থ্যে পুরুষের যথাযথ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এটি একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। কেননা প্রকৃতিগতভাবে প্রজননের প্রায় পুরো দায়ভারটাই গ্রহণ করতে হয় নারীকে। অথচ এ ব্যাপারে নারীর মতামত ও সিদ্ধান্ত কিংবা প্রজনন-স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে তার অধিকার প্রায়ই স্বীকৃত হয় না। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা যেমন UNICEF, WORLD BANK, UNFPA ও WHO গত পাঁচ বছর ধরে খেয়াল রাখছে ICPD-তে উচ্চারিত শপথসমূহ কোনো দেশে কীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে হেগে অনুষ্ঠিত হলো ICPD+ সম্মেলন, সেখানে ICPD-র মূল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে আরো জোরালোভাবে। এ ছাড়া জাতিসংঘ আশির দশক থেকে একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে সেই দেশের নারীর অবস্থানকে চিহ্নিত করে আসছে। অতি সম্প্রতি (ডিসেম্বর ১৯৯৯) জাতিসংঘ নারীর ওপর বৈষম্য ও নির্যাতনের প্রতিকারে আরেকটি নতুন প্রটোকল অনুমোদন করেছে। এ প্রটোকলের আওতায় নারীরা বৈষম্য ও যৌন হয়রানিসহ অন্যান্য নিপীড়নের ব্যাপারে নিজ দেশে প্রতিকার না পেলে এখন থেকে সরাসরি জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এ বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার দিবসে ২৩টি দেশ (স্ক্যান্ডিনেভিয়ান সব কটি দেশসহ) এ প্রটোকলে সই করেছে এবং ১০টি দেশের পার্লামেন্টে এটি অনুমোদন পেলেই এই প্রটোকল কার্যকর হবে।

নারী-আন্দোলনের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গতা পাবে না কয়েকজন অবিস্মরণীয় পুরুষ- নারীবাদীর ভূমিকা স্মরণ না করলে। পশ্চিমে এঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য উইলিয়াম টমসন, জন স্টুয়ার্ট মিল, কার্ল মার্ক্স, ফ্রেডরিক এঙ্গেলস আর বাংলায় রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

সবশেষে, বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু সাংবিধানিক ও আইনগত সংস্কারের উল্লেখ করব, যা নারীর অধিকার আদায়ের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। ভারতের সংবিধানে নারী-পুরুষের উভয়ের সমান অধিকার স্বীকৃত হলেও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে হিন্দু নারী বহু বছর অমানবিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে হিন্দু ধর্মীয় আইনের কিছুটা সংস্কার ঘটে ভারতে। ১৯৫৫ সালে “হিন্দু বিবাহ অ্যাক্ট”-এ দুটি মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো হয়। এতে পুরুষের এক বিবাহ বিধিবদ্ধ হয় ও বিবাহবিচ্ছেদ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যে স্বীকৃত হয়। ১৯৫৯-এর বিবাহিত নারীর সম্পত্তি অ্যাক্ট নারীর সম্পত্তিতে অধিকার স্বীকার করে নেয়।

বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সম্পত্তি ও পারিবারিক আইন যেহেতু ধর্ম দ্বারা নির্দেশিত, বিবাহ ও উত্তরাধিকারে নারী- পুরুষের অধিকারে যথেষ্ট তারতম্য রয়েছে। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলেই মুসলমান পুরুষের একাধিক পত্নী গ্রহণে বেশ কিছুটা কড়াকড়ি আরোপিত হয়। তবু আজো বহুবিবাহ লোপ পায় নি, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। পারিবারিক আইনের যে- ধারায় একাধিক বিবাহকে নিরুৎসাহ করা হয়, তারই ভেতরে এর বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগেরও অবকাশ রয়েছে। যদিও সংবিধান অনুযায়ী নারী-পুরুষের ভেদাভেদমূলক যে-কোনো অসম বিধানসমূহ (যা মূলত ধর্মীয় সম্প্রদায়গত) বাতিল বলে বিবেচিত হওয়ার কথা, কার্যত সে-সব বিধান সাংবিধানিক নির্দেশ অগ্রাহ্য করে পুরোপুরি বলবৎ আছে। বাংলাদেশের নারীদের বহু আকাঙ্ক্ষিত সর্বজনীন পারিবারিক দেওয়ানবিধি (uniform family code) আজো প্রবর্তন করা হলো না। দক্ষিণ এশিয়ায় একই রাষ্ট্রের একই জনগণের ভেতর ধর্মীয় ভিত্তিতে যে বিভিন্ন রকম পারিবারিক ও উত্তরাধিকারের আইন প্রযোজ্য হয়ে থাকে, এই সত্য উন্মোচন আধুনিক বহু রাষ্ট্রের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।

বাংলাদেশে নারীদের জন্যে আরেকটি কালাকানুন ‘রাষ্ট্রধর্ম বিল’। বহু নারী- সংগঠন এর বিরোধিতা করলেও নারীপক্ষ সংস্থাটি ছাড়া অন্য কেউ এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে নি। তবে ধর্ষণ ও নারী পাচারসহ নারীর বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের কঠিন শাস্তির ব্যাপারে আইনগত কিছু ইতিবাচক সংযোজন হয়েছে। জাতীয় সংসদে ৩০টি মহিলা আসনের সংরক্ষণ একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বদলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা বাছাই হওয়ায় নারীর প্রতিনিধিত্ব না করে এই সংসদ-সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলেরই প্রতিনিধিত্ব করেন। নারী সাংসদরা তাই কার্যত জনগণ বা নারীসমাজ কারো কাছেই নন, জবাবদিহি করেন তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল অর্থাৎ সরকারের কাছে। তাই প্রত্যক্ষ ভোটে নারী সংসদ-সদস্যের নির্বাচন হওয়া দরকার। আর এই সংরক্ষিত নারী-আসনগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা সংরক্ষিত থাকা দরকার সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের জন্যে। ভারতের লোকসভাতেও নারীর জন্যে সংরক্ষিত আসনের দাবি উঠেছে। প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্যে গৃহীতও হয়েছে। সেখানেও এই প্রস্তাব পাস হলে যেন নারীর যথাযথ প্রতিনিধিত্বই ঘটে, সংখ্যাগরিষ্ঠের হাত পোক্ত করার হাতিয়ার যেন না হয়ে ওঠে নারী। বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর জন্যে আসন সংরক্ষিত রাখা খুব মর্যাদাকর বা সুখকর অভিজ্ঞতা নয় নারীবাদীদের জন্যে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর গোটা অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত কিছুকালের জন্যে সংরক্ষিত আসনের এই সীমিত উপস্থিতি আরোপিত হলেও মেনে নেওয়া জরুরি। আশা করা যায়, নতুন শতক পেরুবার আগেই এর প্রয়োজন থাকবে না আর।

বাংলাদেশে নারীদের জন্যে সরকারি পর্যায়ে আরো দুটি ভালো উদ্যোগ— স্থানীয় সরকারে মহিলা-আসন নিশ্চিতকরণ এবং বিধবা ও দুস্থ মহিলাদের জন্যে সরকারি ভাতা প্রদান। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শহরে, বিশেষ করে রাজধানীতে, বিরাট শ্রমশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে গার্মেন্টসের মেয়েরা। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত নারীরা মিটিং, মিছিল ও সক্রিয় আন্দোলন করে যা পারে নি, এই খেটে-খাওয়া মেয়েরা তাই অর্জন করেছে বহু দুর্দশার মধ্যে থেকে, নিজেদের বাঁচার তাগিদে। নারীদের জন্যে নির্ধারিত সকাল-সন্ধ্যা কাজ করার বাধ্যবাধকতা ও পথেঘাটে রাতে-বিরেতে পুরুষসঙ্গীহীন হেঁটে চলাফেরা করার ব্যাপারে সামাজিক বাধা ও বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা গোটা নারীসমাজের সম্মুখযাত্রার পথকে আলোকিত করে চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে এনজিওদের গ্রামাঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়নের বিশাল কর্মকাণ্ডে এবং শহরাঞ্চলে বিশ লক্ষাধিক গার্মেন্টস-কন্যাদের বিপুল ও সবল উপস্থিতিতে আগামী শতাব্দীতে যদি নারী-আন্দোলনের নেতৃত্ব শহরভিত্তিক মধ্যবিত্ত নারীদের হাত থেকে পুরোপুরি চলে যায় প্রথমোক্ত দুই অবহেলিত নারীসমাজের হাতে, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *