লৌহকপাট – ১.১২

বারো

অফিসে এসে দেখলাম, ব্যস্ততা দেখাবার মত উপকরণ টেবিলে বিশেষ কিছু সঞ্চিত নেই। অগত্যা ডাকের ফাইলটা টেনে নিয়ে উলটে-পালটে দেখছিলাম। তাও এক সময়ে শেষ হয়ে গেল। তখন সব শেষের চিঠিখানার দিকে চোখ রেখে চুপ করে বসে ছিলাম।

গুনগুন করে কীর্তন ভাঁজতে ভাঁজতে হৃদয়বাবুর প্রবেশ। হেলমেটটা ব্র্যাকেটে ঝুলিয়ে দিয়ে আরাম করে পা ছড়িয়ে বসে একটা সিগারেট ধরালেন এবং বেশ খানিকটা ধোঁয়া ছাড়লেন। তারপর আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বিষয়টা যেন অত্যন্ত জটিল বলে মনে হচ্ছে, মলয়বাবু! কী ওটা, Differential Calculus, না Law of Relativity?

আমিও গম্ভীরভাবে জবাব দিলাম, তার চেয়ে জটিল।

—যথা?

—নোটিশ পাওয়া গেল, মহম্মদ পর্বতের কাছে যাবেন না; পর্বতমহাশয় অভিযান করছেন মহম্মদের দরবারে।

—অর্থাৎ?

—অর্থাৎ ফিঙ্গার-প্রিন্ট কেসের আসামী ভূপেশ সেনের বিচার হবে জেলে! এস. ডি. ও. লিখেছেন কোর্টের আয়োজন করতে।

হৃদয়দা বললে, এর মধ্যে জটিলতাটা দেখলেন কোথায়?

বললাম, বিষয়টা তলিয়ে দেখুন। বিচারপ্রার্থী বন্দী প্রকাশ্য বিচারশালায় দাঁড়াবার অধিকার পেল না—

—বিচারক নেমে এলেন তাঁর বিচার করতে জেলখানায়, কেমন? যোগ করলেন হৃদয়বাবু।

আমি বললাম, তাই তো দাঁড়াচ্ছে।

—কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন, এর মধ্যে একটা জিনিস রয়েছে, যার নাম administrative necessity.

—সেইখানেই তো আমার আপত্তি। শাসনতান্ত্রিক প্রয়োজন যখন বিচারের আদর্শকে ডিঙিয়ে যায়, তখন আর যাই হোক, কোর্টের মর্যাদা রক্ষা পায় না। শাসনদণ্ডের কাছে মাথা নোয়ালো ন্যায়দণ্ড; এর চেয়ে মারাত্মক আর কি হতে পারে?

—আপনি বড্ড বেশী তলিয়ে গেছেন মলয়বাবু।

—না হৃদয়দা, আমি একেবারে সারফেস থেকে দেখছি। সবাই জানে, আসামী যতক্ষণ বিচারাধীন আইনের চোখে সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। ব্রিটিশ ল’-এর এই হচ্ছে গোড়াকার কথা। তার দোষমুক্তি প্রমাণের ভার তার নিজের ওপরে নয়, অভিযোক্তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে সে অপরাধী। অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজেকে সমর্থন করবার তার যে মৌলিক অধিকার সেটা হবে নিরঙ্কুশ এবং তার জন্যে তাকে দিতে হবে পরিপূর্ণ সুযোগ আর অবাধ সুবিধা। এই জেলের মধ্যে তার কোটা সম্ভব, বলুন?

হৃদয়দা প্রতিবাদ করলেন না। অনুকূল শ্রোতা পেয়ে আমার উৎসাহ বেড়ে গেল এবং তারই ঝোঁকে একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিয়ে ফেললাম। শেষটায় বললাম, ইংরেজ পৃথিবীকে অনেক কিছু দিয়েছে—অনুপম সাহিত্য, সুগভীর দর্শন এবং মহাশক্তিশালী জড়বিজ্ঞান। কিন্তু আমার মনে হয়, তার সব অবদানকে ছাড়িয়ে গেছে একটা জিনিস, যাকে বলা যেতে পারে Rule of law. ব্যক্তির চেয়ে বড় বিধান এবং তারই কাছে নির্বিচারে মাথা নোয়াবে প্রাইম মিনিস্টার থেকে টম্, ডিক্, হ্যারি,—এটা হল British Jurisprudence-এর প্রথম কথা। অন্য দেশে যান। বেশী দূরে নয়, ইংলিশ চ্যানেল পার হলেই দেখবেন, অত বড় Revolution-এর জন্মভূমি যে ফ্রান্স, সেখানেও আইনের চোখে সব মানুষ সমান নয়। সেখানে রাজপুরুষদের জন্যে বিশেষ আইন, তাদের বিচারের জন্যে স্বতন্ত্র বিচারশালা। একজন সাধারণ ইংরেজের চোখে সেটা শুধু বিসদৃশ নয়, অন্যায়। সাম্রাজ্যের স্বার্থে সেই ইংরেজকে আজ কোথায় টেনে নামিয়েছে!

বক্তৃতার নেশায় লক্ষ্য করিনি যে হৃদয়বাবুর পদযুগল ইতিমধ্যে কখন টেবিলের তলা থেকে উপরে প্রমোশন লাভ করেছে। দেহের ভঙ্গী অর্ধশয়ন, চক্ষু মুদ্রিত এবং হস্তে অর্ধদগ্ধ সিগারেট।

—ঘুমুলেন নাকি, হৃদয়দা?

—ঘুমুতে আর দিলেন কই?

—একদম ঝিম্ ধরে গেলেন যে! সাড়া-শব্দ দিন।

হৃদয়বাবু টেবিলের উপর থেকে পা নামিয়ে এবার সোজা হয়ে বসলেন। তারপর গম্ভীরমুখে বললেন, আপনার আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে আমার জ্ঞান এত গভীর যে, কোনো রকম মন্তব্য করে বাচালতা প্রকাশ করবো না। আপনার বক্তৃতা শুনে অন্য একটা কথা মনে হল। তাই শুধু বলবো। সেটা আমার একটা থিওরি। শুনে আবার হাসবেন না তো? বললাম, যদি হাসি, বলতে হবে আপনার থিওরি সার্থক। পৃথিবীতে বেশীর ভাগ থিওরিই তো কেবল চোখের জলের সৃষ্টি করে গেছে।

হৃদয়বাবু এবার চারিদিকটা দেখে নিয়ে চাপা গলায় বললেন, আজ হোক, কাল হোক, ইংরেজকে একদিন জাল গুটিয়ে সরে পড়তেই হবে। সেদিন যদি বেঁচে থাকি, পেনসন তো পাবো না নিশ্চয়ই; অথচ পেটের সংস্থান তো করতে হবে। তাই ঠিক করেছি একখানা ইস্কুল-পাঠ্য ইতিহাস লিখবো। তাতে একটা অধ্যায় থাকবে—ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের কারণ। কি কারণ? উত্তর—ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন। ইংরেজের সঙ্গে সত্যিকার বিশ্বাসঘাতকতা যদি কেউ করে থাকে, তা সে নিজের ভাষা। থিওরিটা মনঃপূত হল না, কি বলেন?

আমতা আমতা করে বললাম, কেমন যেন বোধগম্য হচ্ছে না।

হৃদয়বাবু এবার নড়েচড়ে বসে বললেন, ভেবে দেখুন তো একবার, ১৮৫৭ সালের পর ওদের রাজত্বের ভিত যখন পাকাপোক্ত হয়ে বসল, কত আশা করে এই ভাষাকে ওরা নিয়ে এসেছিল সেই সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপার থেকে। উদ্দেশ্য কি? একমাত্র সাম্রাজ্য বিস্তার। ভেবেছিল, এর কয়েকটা ডোজ পেটে পড়লেই নেটিভের প্রাণে রাজভক্তির বাণ ডেকে যাবে। বশংবদ কেরানী সরবরাহের অভাব হবে না কোনোদিন। সেদিকে ওরা ভুল করেনি। কিন্তু কি জানি, কোথায় ছিল একটুখানি হিসেবের গোল। তাই ইংরেজি ইস্কুলের কারখানা থেকে কাতারে কাতারে কেরানী যেমন তৈরী হল, তার সঙ্গে বেরোল আর একরকম জীব, আপনাদের ইকনমিকসের ভাষায় যাকে বলে by-product, অর্থাৎ কয়লার খনি থেকে যেমন বেরিয়ে আসে দু-চারখানা কমল হীরে। এদের চেহারা একেবারে আলাদা। ডোজ-মাপা বিদ্যার বরাদ্দটুকু পান করেই তারা ক্ষান্ত হল না, নিঃশেষে শুষে নিল পশ্চিম দিগন্তের বিপুল জ্ঞান-ভাণ্ডার; এবং তারই জেরে মোক্ষম আঘাত দিল সাম্রাজ্যের বুকের উপর। এদের চিনতে পারছেন নিশ্চয়ই। এরাই হচ্ছে আপনাদের গোখলে, গান্ধী, সুভাষ, প্যাটেল, চিত্তরঞ্জন, জওহরলালের দল—কেরানী ফ্যাক্টরির মারাত্মক by-product; ইংরেজি পণ্ডিতের গুরুমারা চেলা। টোল বা মক্তব থেকে এদের জন্ম হত না কোনোদিন।

—শুধু কি এরাই? বলে চললেন হৃদয়বাবু, আমার মনে হচ্ছে ফ্যাক্টরি থেকে আসল মাল আর বেরোচ্ছে না। আজকাল যা কিছু আসছে সবই ঐ by-product, তফাত শুধু প্যাকিং মোড়কটার। কোনোটা খদ্দর কোনোটা আবার খাকী—

বলে তিনি চোখের কোণ দিয়ে আমার দিকে একটু বিশেষভাবে তাকালেন। তারপর বললেন, আপনি আপসোস করছিলেন না?—সেই ইংরেজ আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে! আপসোস আমারও হয়। তবে সেটা অন্য কারণে—কী ওরা চাইল, আর কী ঘটল! লোকে শিব গড়তে বাঁদর গড়ে। ওরা বাঁদর গড়তে শিব গড়ে ফেলল। বানাতে গেল আরো গোটাকয়েক হৃদয় সামন্ত, কপালদোষে সেগুলো হয়ে গেল মলয় চৌধুরী। হৃদয়দা নিজের রসিকতায় নিজেই হো হো করে হেসে উঠলেন। খোদা বক্‌স, মোয়াজ্জেম হোসেন আরও কে কে তখন ঘরে ঢুকছে।

—কী খবর হৃদয়দা, বড্ড ফুর্তি যে আজ?

—আরে ভাই, বল কেন? এত কষ্ট করে একখানা নতুন গান লিখলাম, তা মলয়বাবুর মোটেই পছন্দ হল না। মুখখানা কি রকম তোলো হাঁড়ি করে বসে আছেন, দ্যাখ।

মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, কি গান লিখলেন, আমরা একটু শুনতে পাইনে? হৃদয়বাবু চাপা গলায় কীর্তনের সুরে গাইলেন,

প্রভাতে উঠিয়া
হুঁকা হাতে নিয়া
কানু কহিলেন, রাই গো,
তোমার মালসাতে কি আগুন আছে?

একটা হাসির রোল উঠিল।

.

কোর্ট বসল সুপারের ঘরে।

হাকিম সদ্য আমদানী ব্রিটিশ সিভিলিয়ান। বেশভূষায় চেষ্টাকৃত তাচ্ছিল্যের লক্ষণ সুস্পষ্ট। পাইপ সংযোগে দুর্বোধ্য ভাষাকে অধিকতর দুর্বোধ্য করবার যে মনিব-সুলভ প্রচেষ্টা, তাতে এখনো পুরোপুরি দক্ষ হয়ে ওঠেননি। আসামী ভূপেশ সেন স্বদেশী মামলায় জেল খাটছে, কিন্তু পুলিশের বিশ্বাস, ওটা তার একটা গৌরবময় আবরণ। আসলে সে অন্ধকারের জীব। অতএব কর্তৃপক্ষের হুকুম এল, তার আঙুলের ছাপ দিতে হবে পুলিশের খাতায়। ভূপেশ করল যথারীতি অস্বীকার। তারই জের এই মামলা

হাকিম তাঁর নবলব্ধ বাঙলায় প্রশ্ন করলেন, টুমি টিপ্ ডিটে অস্বীকার আছো?

ভূপেশ দু-বগলে হাত পুরে কড়িকাঠের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

ম্যাজিস্ট্রেট সুর চড়িয়ে বললেন, জবাব ডাও।

ভূপেশ নিরুত্তর। কোর্ট-ইনস্পেক্টর অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করছিলেন। সেদিকে ফিরে সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, Is your accused deaf and dumb, Inspector?

— I am examining him, Your Honour. ব্যস্ত হয়ে জবাব দিলেন ইনস্পেক্টর। তারপর ভূপেশের দিকে ফিরে বললেন, কি মশাই, হাকিম কি বলছেন, শুনতে পাচ্ছেন না?

ভূপেশ জবাব দিল ইংরাজীতে, পাচ্ছি। আপনার সাহেবকে বুঝিয়ে দিন, ভদ্রলোকের কাছ থেকে জবাব পেতে হলে প্রশ্নের ভাষাও ভদ্র হওয়া দরকার।

—হোয়াট! রুখে উঠলেন সাহেব। কিন্তু এবার প্রশ্ন করলেন ইংরেজিতে, আমি জানতে চাই তুমি টিপ্ দেবে কিনা?

ভূপেশ জবাব দিল, না।

—না ডিলে কঠোর শাস্তি পেটে হবে।

ভূপেশ হেসে বলল, বৃথা আস্ফালন না করে, সেটা চটপট দিয়ে ফেললেই তো পার এমনি করে চলল কিছুক্ষণ বাদানুবাদ—একে আই. সি. এস এস. ডি. ও, তায় নবাগত। কালা আদমীর ঔদ্ধত্য সহ্য করবার কথা নয়, অভ্যাসও হয়নি। তিনি যে কোর্টে, একথা সম্ভবত মনে রইল না। হঠাৎ হুকুম দিয়ে বসলেন, Take his finger-impression by force.

ইনস্পেক্টর ইতস্তত করতে লাগলেন। জোর করে টিপ্ নেওয়া যদি চলত, তাহলে আর এত মামলা-মোকদ্দমার প্রয়োজন ছিল কী?

সাহেবের ধৈর্যের বাঁধ একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। বিকট চীৎকার করে উঠলেন, পাকড়ো উসকো। দুজন কনস্টেবল এগিয়ে এসে ভূপেশকে ধরতেই সে এক ঝাপটায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হুঙ্কার দিল—বন্দেমাতরম্।

—শাট্ আপ্‌, ইউ স্কাউড্রেল! গর্জে উঠলেন এস. ডি. ও।

উত্তরে এল পালটা গর্জন—মহাত্মা গান্ধীজী কী জয়!

জেলের ভিতর থেকে শত কণ্ঠে উঠল তার প্রতিধ্বনি—মহাত্মা গান্ধীজী কী জয়!

সাহেবের লাল মুখ থেকে মনে হল রক্ত ফেটে পড়বে, আর চোখ থেকে ঠিকরে পড়বে আগুন। নীচের ঠোঁট সজোরে কামড়ে ধরে একবার তাকালেন ভূপেশের দিকে। মুহূর্তে সে দৃষ্টি নেমে এল টেবিলের উপর। সেখানে পড়েছিল তাঁর হান্টার। হঠাৎ সেটা তুলে নিয়ে সপাং করে বসিয়ে দিলেন আসামীর উদ্ধত কপালে। ভূপেশ ঘুরে পড়ে গেল এবং দু’হাতে কপাল চেপে ধরে সমস্ত শক্তি দিয়ে বলে উঠল, মহাত্মা গান্ধীজী কী জয়

পঁচিশ হাত দূরে জেল-গেট। খবর পৌঁছতে লাগল পঁচিশ সেকেণ্ড। তারপর শুরু হল তাণ্ডব। গেট রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ল গেট-কীপারের পক্ষে। উপায়ান্তর না দেখে সে বাজিয়ে দিল পাগলা ঘণ্টা। ফতুয়া গায়ে চটি পায়ে ছুটে এলেন জেলর সাহেব। আর তার পিছনে ততোধিক বিচিত্র বেশে আমরা, তাঁর অনুচরবৃন্দ। রাইফেলধারী স্কোয়াড গেট পার হয়ে থেমে গেল। সমস্ত রাস্তা জুড়ে লাইন করে বসে আছে বন্দীর দল। ‘বন্দে মাতরম্’ থেমে গেছে; কিন্তু সবারই মুখে উৎকণ্ঠা, চোখে উত্তেজনা। নেতৃস্থানীয় কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রথম লাইনে, গেটের ঠিক সামনেটায়। তাদেরই একজনকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন করলেন তালুকদার সাহেব, ব্যাপার কি বরেনবাবু?

ক্ষীণকায় বরেনবাবু তীক্ষ্ণ কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ব্যাপার তো দেখতেই পাচ্ছেন। গুলি চালান, রাস্তা সাফ হয়ে যাবে। একটাকে তো ওদিকে সাবাড় করে এলেন।

—কাকে আবার সাবাড় করলাম? বলছেন কি আপনি!

বরেনবাবু শ্লেষের সঙ্গে বললেন, আকাশ থেকে পড়লেন যেন মনে হচ্ছে। ভূপেশ সেন খতম—সে সুসংবাদ কি জানা নেই আপনার?

—ভূপেশ সেন খতম! সত্যিই আকাশ থেকে পড়লেন তালুকদার। ফোর্স ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন এবং গেটের বাইরে আসতেই, ডিমিস্ করবার হুকুম দিলেন। সবাই মিলে ছুটে গেলাম অফিসে। কোর্টের চিহ্নমাত্র দেখা গেল না। হাকিম, পেস্কার, ইনস্পেক্টর, সিপাহী সব যেন ভোজবাজির মত উড়ে গেছে। মেঝের উপর চিত হয়ে পড়ে আছে আসামী ভূপেশ সেন। কপালের ক্ষত থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে দু-চারজন জেলের লোক। ডাক্তার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল তুলো আর ওষুধ নিয়ে। পিছনে স্ট্রেচার হাতে দুজন সাধারণ কয়েদী।

ঘটনা যা ঘটবার ঘটে গেল। আমাদের কাজ হল রিপোর্ট দেওয়া। সে রিপোর্টের ভাষা কতটা জোরালো হলে জেলের তরফ থেকে উপযুক্ত প্রতিবাদ জানানো হবে, অথচ শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের ক্রোধের উদ্রেক হবে না, এইটাই হল বিবেচনার বিষয়। প্রথম দিকটার উপর জোর দিলেন স্বল্পাভিজ্ঞ সুপার, যুদ্ধ-প্রত্যাগত উষ্ণরক্ত ক্যাপ্টেন, মর্যাদা সম্বন্ধে যিনি অতিমাত্রায় আত্মসচেতন; আর দ্বিতীয় বিষয়টা বিশেষভাবে আঁকড়ে রইলেন বহুদর্শী, শীতল-শোণিত প্রৌঢ় জেলর, প্রেস্টিজের ফাঁকা বুলি যাঁর কাছে একেবারেই অর্থহীন। এই দুই বিরুদ্ধ শক্তির সমন্বয়ে রিপোর্টের মুসাবিদা যখন ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল, এমন সময় সাইকেল মারফত সুপারের নামে জরুরী চিঠি এসে উপস্থিত। এস. ডি. ও সাহেব লিখছেন, একটা বেয়াড়া এবং বিপজ্জনক আসামীকে দমন করবার জন্যে কোর্টের মধ্যেই কিঞ্চিৎ বলপ্রয়োগের প্রয়োজন হয়েছিল। জেলসুপারের আফিসে বসে এই অপ্রিয় কর্তব্য পালন করতে হয়েছে বলে তিনি ক্ষমা চাইছেন এবং আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছেন।

ক্যাপ্টেন ব্যানার্জি চিঠিখানা তালুকদার সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, লোকটা একেবারে কাঁচা। ইটনের গন্ধ এখনো মুখ থেকে যায়নি, দেখছি। নিজের মৃত্যুবাণ পাঠিয়ে দিয়েছে নিজের হাতে,—বলে হো হো করে হেসে উঠলেন।

ব্যানার্জির উল্লসিত হবার কারণ ছিল। এই ক’দিন আগেই ক্লাবের পানশালায় তাঁর মিলিটারী কৌলীন্যের প্রতি অমার্জনীয় তাচ্ছিল্য দেখিয়েছে এই অর্বাচীন এবং উন্নাসিক সিভিলিয়ান। সেই আক্রোশের জ্বালা মেটাবার সুযোগ উপস্থিত।

চিঠিখানা পকেটস্থ করে বিজয়ীর আনন্দ নিয়ে তিনি ছুটলেন এই ছোট হাকিমের উপরওয়ালা বড় হাকিম অর্থাৎ স্বয়ং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দরবারে। সে তক্তে যিনি অধিষ্ঠিত, তিনি বিলাতী সিভিলিয়ান। কিন্তু তফাত অনেক। তাঁর মুখে ইটন বা অক্সফোর্ডের গন্ধ একেবারে লুপ্ত হয়ে গেছে, উগ্র হয়ে উঠেছে খাঁটি এবং পুরোদস্তুর ‘ভারতীয়’ গন্ধ। তাঁর তাম্রাভ দেহ-চর্মে এবং কেশ-বিরল-মস্তকে দেশী সূর্যের প্রভাব সুস্পষ্ট। চিঠিখানা তিনি নিঃশব্দে পাঠ করলেন এবং ধীরভাবে পকেটে পুরলেন। তারপর ঘটনা সম্বন্ধে একটা মোটামুটি আভাস গ্রহণ করে বিনয় ও সৌজন্যে বিগলিত হয়ে বললেন, আপনি যে এতটা কষ্ট স্বীকার করেছেন, এজন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, ক্যাপ্টেন ব্যানার্জি। এসব অপ্রিয় ব্যাপারে আপনাকে আর বিব্রত হতে হবে না। বাকী যেটুকু আমার হাতে ছেড়ে দিন। যা কিছু করবার, আমিই করবো, বলেই উঠে দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন ব্যানার্জির দিকে। ইঙ্গিতটা বুঝতে কষ্ট হল না। সুপার-সাহেব কলের পুতুলের মত সেই প্রসারিত হাতখানায় কোনো রকমে একটা দোলা দিয়ে নিঃশব্দে নিষ্ক্রান্ত হলেন।

‘মৃত্যুবাণের’ পরিণাম যে এই দাঁড়াবে, স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ক্যাপ্টেন ব্যানার্জি।

প্রতিশ্রুত ‘অ্যাকশনে’ বিলম্ব হল না। যথারীতি একোয়ারী কমিটি নিযুক্ত হল। মেম্বর দুজন—ম্যাজিস্ট্রেট স্বয়ং এবং তাঁর সঙ্গে রইলেন কারাবিভাগের বড়কর্তা, ততোধিক ঝানু এবং পক্বকেশ শ্বেতাঙ্গ আই. এম. এস্.। যথাসময়ে তাঁরা দর্শন দিলেন আবার এই সুপারের ঘরে।

প্রথম আলোচনার বিষয় হল মেডিক্যাল সাক্ষ্য। রিপোর্ট রয়েছে দু-খানা। প্রথমটা দিয়েছেন ক্যাম্‌বেল-ফেরত এস্. এ. এস্। দ্বিতীয়টা, লড়াই-ফেরত আই. এম. এস। একজন নগণ্য জেলডাক্তার; আর একজন মহামান্য সিভিল সার্জন। তাঁদের মতের পার্থক্যও পদানুরূপ। আমাদের ডাক্তার লিখেছেন, ক্ষতের পরিমাণ তিন ইঞ্চি লম্বা এবং এক ইঞ্চি গভীর। সম্ভবত লাঠি বা ঐজাতীয় কোনো কঠিন বস্তু দ্বারা আঘাতের ফলে তার উৎপত্তি। সিভিল সার্জনের মতে, আঘাতের পরিধি এক ইঞ্চি দীর্ঘ, এক-চতুর্থাংশ ইঞ্চি প্রস্থ; উৎপত্তির কারণ—কোনো কঠিন বস্তুর উপর আকস্মিক পতন।

জেলডাক্তারকে তলব করা হল। ম্যাজিস্ট্রেট-সাহেব দুখানা রিপোর্টই তাঁর হাতে দিয়ে বললেন, এ সম্বন্ধে আপনার কিছু বলবার আছে?

ডাক্তার বললেন, নো স্যার।

ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন, রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে আপনি ক্ষত পরীক্ষা করেছিলেন ২৪ তারিখে, আর সিভিল সার্জন করেছেন ২৫ তারিখে। একদিনের ব্যবধানে কোনো আঘাতের এতখানি উন্নতি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? ডাক্তার জানালেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছুই বলবার নেই। ইনস্পেক্টর-জেনারেল বললেন, আপনার রিপোর্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত আমাদের করতে হচ্ছে যে, হয় আপনার সাধারণ জ্ঞানের অভাব, নয়তো আপনি সরকার-বিরোধী কোনো প্রভাবের অধীনে পরিচালিত হয়েছিলেন।

ডাক্তার বললেন, সে সম্বন্ধে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।

আমাদের অফিসে দুজন কেরানী ছিল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। সুপারের আদেশে তাদের একটা জবানবন্দী নেওয়া হয়েছিল এবং সে-কাজটা পড়েছিল আমার উপর। অত্যন্ত জোরের সঙ্গে তারা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছিল। সুতরাং বিবৃতির ভাষাটাও ছিল * অনুরূপ জোরালো। তার একটা নকল কমিটির কাছে পেশ করা হয়েছিল। সুতরাং কেরানীদ্বয়ের ডাক পড়ল। ম্যাজিস্ট্রেট প্রশ্ন করলেন, আপনারা কদ্দূর লেখাপড়া করেছেন? একজন বলল, সে ম্যাট্রিক পাশ করে আই. এ. পর্যন্ত পড়েছে, আর একজন জানাল সে আই. এস. সি পাশ করেছে।

—তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, এ বিবৃতি আপনাদের নয়?

—আজ্ঞে, ওটা আমাদেরই স্টেটমেণ্ট।

ম্যাজিস্ট্রেট বিস্ময়ের সুরে বললেন, এরকম ইংরেজি আপনারা বলতে বা লিখতে পারেন?

তারা জানাল, আমরা বাংলায় বলেছি; ডেপুটি জেলর মলয়বাবু সেটা ইংরেজিতে তর্জমা করে লিখেছেন।

ম্যাজিস্ট্রেট আশ্বস্ত হয়ে বললেন, ও-ও, তাই বলুন। মলয়বাবু ঠিকমত তর্জমা করলেন কিনা, সেটা অবশ্যই আপনাদের জানবার কথা নয়।

কেরানীদ্বয় নিরুত্তর।

সকলের শেষে এলেন কোর্ট-ইনস্পেক্টর। আসামীর আকৃতি এবং প্রকৃতি সম্বন্ধে একটা ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে বললেন, কেস সম্পর্কে হাকিমের সঙ্গে আসামীর দু-চারটে কথা- কাটাকাটি হচ্ছিল। হঠাৎ লোকটা আস্তিন গুটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল এস. ডি. ও. সাহেবের উপর। আমরা তখনো এগিয়ে যেতে পারিনি। হাকিম উঠে দাঁড়িয়ে দু-হাত দিয়ে এমনি করে ঠেকাতে গেলেন। তাঁর হাতে লেগে আসামী ছিটকে পড়ল ঐ ধারে। ওখানে ছিল একটা টেবিল। বোধ হচ্ছে ঐ টেবিলটাই হবে। ওরই কোণে লেগে একটুখানি কেটে গেল কপালের এই ডান দিকটায়।

কমিটির মেম্বারদ্বয় পরস্পরের দিকে তাকালেন। উভয়ের মুখেই ফুটে উঠল একটা নিশ্চিন্ত তৃপ্তির ভাব। মনে হল, এতক্ষণ তাঁরা অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন। ইনস্পেক্টর তাঁদের আলোকের সন্ধান দিয়ে রক্ষা করলেন।

কমিটির রায় আপাতত মুলতুবি রইল। কিন্তু তাঁদের আসন্ন সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে আমাদের কারুরই কোনো সন্দেহ রইল না!

সাহেবরা চলে গেলে ইনস্পেক্টরও যাবার আয়োজন করছিলেন। জেলরসাহেব ডেকে বললেন, এত তাড়া কিসের? আসুন না, একটু চা খাওয়া যাক। ছোকরাদের মধ্যে কে একজন বলল, হ্যাঁ, বড্ড পরিশ্রম গেল আপনার। গলাটা একটু ভিজিয়ে নিন, স্যার।

সুধাংশু বলে উঠল, সত্যি একখানা সীন যা দেখলাম; তার মধ্যে আবার সবচেয়ে সেরা পার্ট আপনার। বিবেকটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন, দাদা?

কে একজন বলল, দাদার ওসব বিবেক-টিবেকের বালাই নেই।

জেলর সাহেব বিরক্তি প্রকাশ করলেন। একটু ধমকের সুরে বললেন, আহা, থাম নারে বাপু।

ইনস্পেক্টর কিন্তু বিরক্তির লক্ষণ দেখালেন না। চায়ে চুমুক দিয়ে হাসি মুখেই বললেন, বলতে দিন। ছেলেছোকরাদের কথা গায়ে মাখলে চলে না। একটু থেমে চায়ের কাপে আরো গোটাকয়েক চুমুক দিয়ে বললেন, বিবেকের কথা কে বলছিলে, ভাই? তুমি? ‘তুমি’ বলছি বলে মনে কিছু করো না যেন।

—না, না। মনে করবো কেন? আপনি স্বচ্ছন্দে বলুন।

ইনস্পেক্টর সিগারেট ধরিয়ে দু-একটা টান দিয়ে বললেন, সত্য-নিষ্ঠা, মহানুভবতা— ইত্যাদি বড় বড় বুলি তোমাদের বয়সে আমরাও অনেক ঝেড়েছি। তারপর দেখলাম ওগুলো ঐ স্বদেশীওয়ালাদের খদ্দরের ঝোলাতেই মানায় ভাল। যারা কাজের লোক, অর্থাৎ সংসারে যাদের উপার্জন করে খেতে হয় এবং দশজনকে খাওয়াতে হয়, তাদের ওসব বালাই থাকলে সত্যিই চলে না। চাকরি যখন করতে হবে, তখন একমাত্র লক্ষ্য হবে উন্নতি, অর্থাৎ মনিবকে খুশী রাখা। গোটা দুই মিছে কথা বলে যদি সে কাজটা হাসিল করা যায়, দোষের তো কিছুই দেখি না।

‘সুধাংশু বলল, এ একেবারে খাঁটি কথা বলেছেন দাদা। আপনার উন্নতি মারে কে? প্রমোশন বলুন, খেতাব বলুন সব আপনার হাতের মধ্যে।

এসব কথার কোনো জবাব না দিয়ে ইনস্পেক্টর বললেন, তোমাদেরও বলি, এ পথে যখন এসেছ, এই পথ ধরেই চল। দু’নৌকায় পা দিও না। হঠাৎ একদিন কোথায় তলিয়ে যাবে টেরও পাবে না। ঐ বিবেকের বোঝা সেদিন কোন কাজেই লাগবে না।

হৃদয়বাবুকে খুঁজে পাওয়া গেল, জেলের পাশে একটা খেজুর গাছের ঝোপ ছিল, তারই এক কোণে।

—এখানে বসে কি করছেন, দাদা?

—ভাবছি।

—কি ভাবছেন?

—ভাবছি, আমার ইতিহাসখানা এবার আরম্ভ করা দরকার।

—এত শীগগির?

—শীগির কোথায় দেখছেন? ওদের তো হয়ে এল। ঘুণে ধরা বাড়ি ভেঙে পড়তে আর দেরি নেই।

ভেঙে পড়বে! ঐ ইনস্পেক্টরের মত লোহার পিলার ওদের কত আছে তার খবর রাখেন?

—যতই থাক, তবু আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, দিন ওদের ঘনিয়ে এসেছে। ভীরুর রাজত্ব বেশিদিন টেকে না মলয়বাবু।

—ভীরু!

হৃদয়বাবু সোজা হয়ে বসে বললেন, ভীরু নয়? তেরো বছর আগেকার কথা স্মরণ করুন। ১৯১৯ সাল। নিরীহ চাষাভূষা, অসহায় নারী আর অবোধ শিশুর রক্তে ভেসে গেল জালিয়ানওয়ালাবাগ। আমরা যেমন করে ইঁদুর মারি, ঘরের নর্দমা বন্ধ করে ঠেঙিয়ে ওরা তার চেয়েও অনায়াসে গুলি করে মারল মানুষ। গুলি করতে যাদের পারলো না, তাদের পিঠে ভাঙল চাবুক। লজপত রায়কে ধরে বুকে হাঁটিয়ে নিয়ে গেল প্রকাশ্য রাজপথে এমনি দিনের বেলায়। তারপরে এল এমনিধারা এক কমিশন। মনে আছে কি বলেছিল জেনারেল ডায়ার? বুক টান করে বলেছিল, হাঁ আমি মেরেছি এবং বেশ করেছি। আরো মারতাম যদি গুলি ফুরিয়ে না যেত

তাঁর পেছনে এসে দাঁড়াল মাইকেল ওডায়ার। বললেন, Dyer is right. তারই প্রতিধ্বনি উঠল পার্লামেন্টে, উঠল ওদের প্রেসে এবং অসংখ্য সভা-সমিতির প্রকাশ্য অধিবেশনে। ভেবে দেখুন একবার বুকের পাটা! আমাদের রাজ্য; আমরা যেমন করে পারি শায়েস্তা করবো। এই তো পুরুষের মত কথা। আর আজ? সামান্য একটা লাঠির খোঁচা মুছে ফেলবার জন্যে কী রকম হিমশিম খেয়ে গেল এতগুলো জাঁদরেল আই. সি. এস. আর আই. এম-এস. এর গোষ্ঠী। ইনস্পেক্টরকে শিখণ্ডি খাড়া করে লুকিয়ে রইল জঘন্য মিথ্যার ধামা মাথায় দিয়ে। কি জন্যে, না গোটাকয়েক নিরীহ কাগজওয়ালার বাক্যবাণের ভয়ে।

হৃদয়বাবুর কণ্ঠে এই ঝাঁজ এবং তাঁর সদাপরিহাসদীপ্ত মুখে এইরকম তীব্র ঘৃণার কুঞ্চন কোনোদিন দেখিনি। নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলাম। উনি তেমনি তিক্ত কণ্ঠে বললেন, জানেন মশাই, ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী একদিন দম্ভভরে এদেরই নাম দিয়েছিলেন স্টীল ফ্রেম। সে স্টীলের আর জোর নেই। তার আগাগোড়া মরচে ধরে গেছে। অত বড় জাতটার গোটা মেরুদণ্ডটাই বেঁকে গেছে। রাজদণ্ড বইবার শক্তি আর নেই।

—তাই তো বলছিলাম, এবার আমার বই শুরু না করবার আর কারণ দেখি না। হ্যাঁ, আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।

—কি কাজ, বলুন।

হৃদয়দা অনুনয়ের সুরে বললেন, আপনার জানাশুনা হোমরা-চোমরা ব্যক্তি দু-চারজন নিশ্চয়ই আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরতলায়। একটু তদ্বির-টদ্বির করবেন ভাই, বইখানা যেন আমার উতরে যায়।

2 Comments
Collapse Comments
Tapobrata Mukherjee January 17, 2024 at 7:23 am

১:১১ থেকে আর পড়া যাচ্ছে না কেনো?

বাংলা লাইব্রেরি (Administrator) January 19, 2024 at 7:35 pm

সরি, এবার ঠিক করে দেয়া হয়েছে। আর কোনও পর্ব মিসিং থাকলে জানাবেন প্লিজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *