নরক সংকেত – ৩৪

৩৪

টেম্পলহফ যে এককালে বিশাল এয়ারপোর্ট ছিল, সেটা দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায়। রাতের অন্ধকারে রানওয়েগুলো যেন প্রেতপুরীর শ্মশানের মতো দাঁড়িয়ে আছে বহুদিনের অব্যবহারে সেগুলোর ওপর আগাছা জন্মে গেছে। পূর্ণিমার রাতে সেই সুবিশাল প্রাঙ্গণের উপর চাঁদের আলো পড়ে কেমন মায়াময় দেখাচ্ছে।

এয়ারপোর্টের প্রধান প্রবেশপথের একপাশে একটা বিশাল বড়ো ভয়ালদর্শন ইগলের স্ট্যাচু। গোটা পাখির নয়, শুধু গলা পর্যন্ত। এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন মনে হয় গোটা পাখিটা মাটির তলায়, শুধু রাক্ষুসে ঠোঁট সমেত মুন্ডুটা ওপরে বের করে কড়া নজর রাখছে সে চারপাশে। সেটার সামনের বিশাল গ্রাউন্ডটায় আলো জ্বলছে, থিকথিকে পাহারা, বড়ো বড়ো বন্দুক কাঁধে পুলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। রুদ্ররা সেটা দূর থেকেই দেখতে পেল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলেছিল ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত, তার ঠিক পরে পরেই এই টেম্পলহফ এয়ারপোর্টটা তৈরি করা হয়। তার কয়েক বছর পরে হিটলার এবং তাঁর নাতসি পার্টি ক্ষমতায় আসার পর এটাকে পুরো ঢেলে সাজানো হয়। ওইসময়ে এটাই ছিল সবচেয়ে বড়ো কমার্শিয়াল এয়ারপোর্ট। অনেক বছর হল এই এয়ারপোর্ট পরিত্যক্ত, জার্মানি সরকারের পক্ষ থেকে একটা জাতীয় উদ্যান করে দেওয়া হয়েছিল মাঝে, কিন্তু গোটা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রিফিউজি প্রবেশ করছে জার্মানিতে, এত লোককে সরকার শেলটার দেবে কী করে?

সেইজন্য এত বড়ো পড়ে থাকা জায়গাটা কাজে লাগিয়ে এখন সে জায়গায় রিফিউজি শিবির করা হয়েছে।

আকাশের বুক চিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরো এয়ারপোর্ট বিল্ডিংটা। অনেকটা লক আউট হয়ে যাওয়া কারখানার মতো। সহায়সম্বলহীন দুঃস্থ মানুষগুলোর কোনো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না, সবাই মনে হয় নিদ্রায় মগ্ন।

ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো রিফিউজি ক্যাম্প!

গাড়িটা থামতেই রুদ্র লাফিয়ে নামল, নেমেই ছুটল সেই ক্যাম্পের দিকে।

প্রিয়ম হতবুদ্ধির মতো ফেলিক্সের দিকে তাকাতেই সে বলল, ‘উনি কী করতে চাইছেন বুঝতে পারছি না। এখন ন—টা বেজে গেছে। ক্যাম্পে থাকা মানুষেরা সব খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়েছে। তার ওপর স্যার অলরেডি নতুন একটা সিকিউরিটি টিম পাঠিয়েছেন, তারাও আটকাতে পারে ওঁকে। এমনিতেই কাল অ্যাটাকের চান্স রয়েছে, আজ আবার উলটোপালটা কিছু হলে আমাদের দিকে এসক্যালেকশন চলে আসবে।’

জিমি অবশ্য দাঁড়ায়নি, রুদ্রর পেছন পেছন সেও ছুটছিল ক্যাম্পের দিকে, ‘ম্যাডাম, দাঁড়ান! আপনি অন্ধকারে রাস্তা গুলিয়ে ফেলবেন!’

রুদ্র থমকে দাঁড়াতেই জিমি পাশে এসে বলল, ‘এয়ারপোর্ট লবিটায় ঢোকার চারটে এন্ট্রান্স ছিল। দুটো এখন পার্মানেন্টলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটা সামনের দিকে আছে, কিন্তু সেখানে গার্ড রয়েছে। আপনি কি ভেতরে যেতে চাইছেন?’

রুদ্র বলল, ‘হ্যাঁ!’ বিশাল পাখিটার স্ট্যাচুর আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে ও একটু দম নিল, চাপা গলায় বলল, ‘দাঁড়ান। এখান থেকে আমাদের দেখা যাবে না। একটু অ্যাজেন্ডাটা ঠিক করে নিই। আপনি একবার ওই সিকিউরিটি অফিসারকে ফোন করুন তো কী কন্ডিশন জানতে চেয়ে। আমরা এখানে রয়েছি সেটা বলবেন না।’

জিমি ফোন করল, কিছুক্ষণ জার্মান ভাষায় কথা চালিয়ে রুদ্রর দিকে তাকাল, ‘ম্যাক্স বলল সামনের এন্ট্রান্সে ওর গার্ডরা কড়া পাহারা দিচ্ছে, আর পেছনের গেটে নতুন টিম। সবার নাইট ডিউটি অ্যালোকেট করা হয়েছে, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে, চিন্তার কিছু নেই।’

রুদ্র জিজ্ঞেস করল, ‘ম্যাক্স কে?’

জিমি বলল, ‘ও—ই এই পুরো ক্যাম্পের চিফ সিকিউরিটি অফিসার।’

রুদ্র জিজ্ঞেস করল, ‘পেছন দিকে কি কোনো গার্ড থাকত না আগে?’

জিমি মাথা নাড়ল, ‘না, ওই দিকটা দিয়ে খাবার সাপ্লাই হয়, কোনো পাহারা থাকে না তেমন। আর ওটা ঠিক গেটও নয়, আমি একবার আগে এসেছিলাম এখানে, একটা টেম্পোরারি এগজিট টাইপ।’

ফেলিক্স আর প্রিয়মও এগিয়ে এসে ওদের সঙ্গে অন্ধকারে দাঁড়াল। রুদ্র চাপা গলায় বলল, ‘আমরা পেছন দিয়ে ঢুকব। এখান থেকে কীভাবে যাব পেছনের গেটে?’

ফেলিক্স কিন্তু কিন্তু করল, ‘কিন্তু পেছন দিক দিয়ে কেন? এদিকে গেলে তো ম্যাক্স নিজেই রয়েছে, আমাদের ঢুকতে সুবিধে হবে। আমাদের সঙ্গে কোনো অর্ডারও নেই।’

রুদ্র দৃঢ় গলায় বলল, ‘অত ফর্ম্যালিটি করতে গেলে আসল জিনিসটাকে আর আটকাতে পারবেন না। ম্যাক্সকে দরকার নেই। আমাদের পেছন দিয়েই ঢুকতে হবে। তাড়াতাড়ি বলুন রুটটা! হাতে একদম সময় নেই।’

জিমি বলল, ‘পেছনের গেটে যেতে গেলে আমাদের এদিক দিয়ে এগোলে হবে না, ওরা দেখতে পেয়ে যাবে। আমাদের পিছিয়ে গিয়ে বাইরের রোড দিয়ে গিয়ে কাঁটাতার টপকে ঢুকতে হবে।’

রুদ্র আর একটুও না চিন্তা করে বলল, ‘তাই করুন।’

রাস্তা নামেই, সরু গলিপথ একটা, দীর্ঘদিনের অব্যবহারে তা প্রায় লুপ্ত হয়ে মিশে গেছে দু—পাশের অগাছা ভরা জঙ্গলের সঙ্গে। বড়ো বড়ো গাছগুলোর মধ্যে দিয়ে ওদের চারজনের দ্রুত পায়ে চলা সেখানকার মাটির শুকনো পাতাগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষ করে একটা মৃদু আওয়াজ তুলছিল।

মিনিট পাঁচেক চলার পরে জিমি ডান দিকে ঘুরল, ‘সামনেই কাঁটাতারের পাঁচিল। এইদিকটা পুরোটাই তাই দিয়ে ঘেরা।’

রুদ্র বিড়বিড় করল, ‘হুঁ। ঠিক যেরকম নাতসি পিরিয়ডে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে ঘেরা থাকত। তারগুলোতে ইলেকট্রিক দেওয়া থাকত, যাতে কেউ পালানোর চেষ্টা করলেই তৎক্ষণাৎ মারা যায়। এক্সটারমিনেশন ক্যাম্পগুলোতেও তাই।’

এদিকটায় এত অন্ধকার, কেউ কাউকেই দেখতে পাচ্ছিল না প্রায়। প্রিয়মের চাপা গলা শোনা গেল, ‘এক্সটারমিনেশন ক্যাম্প মানে যেগুলোয় মানুষদের মেরে ফেলা হত, তাই তো?’

রুদ্র ফিসফিস করল, হ্যাঁ। জেনোসাইড। মানে হাজার হাজার মানুষকে একসঙ্গে মারা হত। শুধু তাই, এই ক্যাম্পগুলোকে হিডেন রাখার জন্য তারগুলোকে ইলেকট্রিফাই করে গাছের সরু ডাল দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হত, যাতে কেউ বুঝতে না পারে।’

অন্ধকারেরও অনেক স্তর থাকে, কিছুক্ষণ থেকে চোখ সয়ে যাওয়ার পর হালকা অন্ধকার, মিশমিশে অন্ধকারের পার্থক্যগুলো দেখতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের মানুষগুলোরও আবছা অবয়ব বোঝা যায়।

রুদ্র একটু থেমে বলল, ‘এতদিন খুচরো খুচরো করে রিফিউজিদের মেরে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, এবার একসঙ্গে কয়েক হাজারকে মেরে আরও বড়ো ত্রাস তৈরি করতে চাইছে এরা। আর তার জন্য আদর্শ জায়গা এই টেম্পলহফ! জিমি, আপনি এগোন, আমরা আপনাকে ফলো করছি।’

ফেলিক্স বলল, ‘কিন্তু সে তো প্রায় পনেরো মিটার উঁচু, আমরা টপকে যাব, কিন্তু আপনারা দুজনে পারবেন কী করে? সঙ্গে কোনো ফোল্ডেড ল্যাডারও তো নেই। আর তা ছাড়া আমরা এভাবে কোনো অর্ডার ছাড়া কাজ করতে পারি না। আপনার কথা ঠিক হলে এইভাবে আনপ্রিপেয়ারড অবস্থায় আমরা চারজন গিয়ে কি কিছু করতে পারব? তার চেয়ে বরং পটসড্যামে ফোন করি, স্যারকে জানাই, তারপর ফুল ফোর্স এলে…!’

রুদ্র বাধা দিল মাঝপথে, ‘একদম নয়। প্লিজ কাউকে জানাবেন না। আপনাদের অর্ডার করার অধিকার আমার নেই, তবু আপনাদের দুজনকেই আমার সিনসিয়ার মনে হয়েছে, সেই জোর থেকে অনুরোধ করছি, যেটা বলছি করুন প্লিজ। আমরা তৈরি আছি, বরং ওরাই আমাদের দেখা পাওয়ার জন্য প্রস্তুত নেই। দেরি করবেন না। প্লিজ চলুন। আর পাঁচিল আমরা ঠিক টপকাতে পারব।’

কিন্তু মিনিট দুয়েক এগিয়েই চারজনকে থমকে দাঁড়াতে হল। এদিকটায় গাছগুলো খুব একটা উঁচু নয়, ফলে আকাশ দেখা যাচ্ছে, চাঁদের ক্ষীণ আলোয় ওরা স্পষ্ট দেখতে পেল, সামনের কাঁটাতারের পাঁচিলটা প্রায় দু—মানুষ উঁচু হলেও ওরা অনায়াসেই সেটা পেরোতে পারবে।

শুধু ওরা কেন, পাঁচ বছরের একটা শিশুও পার হয়ে যেতে পারবে সেই পাঁচিল।

কারণ পাঁচিলের ঠিক মধ্যিখান দিয়ে প্রায় আধ মিটার ব্যাসের একটা গর্ত করা। রুদ্ররা কাছে গিয়ে দেখল, কেউ বা কারা পাঁচিলের ঠিক মাঝ বরাবর তারগুলোকে গোল করে কেটে এই গর্তটা করেছে।

ও কিছু বলার আগেই একটু দূর থেকে প্রিয়মের গলা শোনা গেল, এদিকেই একটা গর্ত আছে!’

কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল, কয়েক পা অন্তর অন্তর পাঁচিলের গায়ে এইরকম গর্ত খোঁড়া হয়েছে, অন্তত দশটা।

ফেলিক্স বলল, ‘এগুলো কী? কারা এসব করেছে?’

রুদ্র ভালো করে লক্ষ করছিল পাঁচিলের চারপাশ, চাঁদের আলোয় যতটুকু দেখা যায়। তার মধ্যেই ও বেশ কিছু ছেঁড়া তার মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে নিজের মনে বিড়বিড় করল, ‘এই গর্তগুলো একেবারে টাটকা!’ একটা লম্বা দেখে সরু তার হাতে তুলে নিল ও, তারটা পুরোনো, কিন্তু কাটা অংশটা টাটকা। গর্ত পেরিয়ে ওপাশে যেতে যেতে ও ফেলিক্সকে বলল, ‘যারা করেছে, তারা যে কোনো সৎ উদ্দেশ্যে করেনি, সে—ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। চলুন শিগগিরই।’

পাঁচিল পেরিয়ে বেশ কিছুটা ঝোপঝাড়ে ভরতি, সেটা পেরিয়েই টেম্পলহফের পেছন দিকটা দেখতে পেল ওরা।

জিমি হঠাৎ বলল, ‘দাঁড়ান। আপনারা আগে যাবেন না। আপনারা আমাদের দেশের অতিথি। কিছু হলে আমাদের ওপর দায় পড়বে। আপনারা পেছনে আসুন। আমাকে আর ফেলিক্সকে যেতে দিন।’

টেম্পলহফের পেছনদিকটা অব্যবহারে আর অযত্ন গাছগাছালির আড়ালে চাপাই পড়ে গেছে প্রায় এদিকটা জঙ্গলের মধ্যে হওয়ায় ঠান্ডাটাও বেশ বেশি। তবু দূর থেকে যেন একটা মৃদু আলোর চিহ্ন দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল।

জিমি আর ফেলিক্স ওদের বন্দুক উঁচিয়ে খুব সন্তর্পণে এগোতে লাগল সামনের দিকে।

প্রিয়ম রুদ্রর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, ‘দুম করে এগিয়ে যেয়ো না। ওদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র আছে, আগে ওরা যাক। আচ্ছা, ফোর্স আসার জন্য ওয়েট করতে হত না?’

রুদ্র চাপা স্বরে বলল, ‘সাবধানতা ভালো, কিন্তু অনেক সময় সেটা করতে গেলে সুযোগটাই হাতছাড়া হয়ে যায় প্রিয়ম। যা থাকে কপালে, চলো।’

গেটের দিকে কিছুটা এগোতেই হঠাৎ যেন দুটো লোক আকাশ ফুঁড়ে এসে পথ আটকাল। তাদের পরনে ইউনিফর্ম।

টেম্পলহফ এয়ারপোর্টের সিকিউরিটির টিম।

জিমি সঙ্গে সঙ্গে চাপা গলায় বলল, ‘ফেডেরাল পুলিশ থেকে আসছি।’ বাঁ—হাত দিয়ে ওর কোমরের কাছে আটকে থাকা আইডেন্টিটি কার্ডটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করল লোক দুটোর।

কিন্তু তাতে কিছু লাভ হল না। একটা লোক জোরে জোরে মাথা নাড়ল দু—পাশে, অন্যজন রুক্ষভাবে যেটা বলল সেটার অর্থ রুদ্র না বুঝলেও সেটা যে না বাচক শব্দ, সেটুকু বুঝতে অসুবিধা হল না ওর।

জিমি আরও কিছুক্ষণ ধরে ওদের বোঝাবার চেষ্টা করল, তারপর হতাশভাবে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মুশকিল হয়ে গেল তো! এরা মনে হয় নতুন টিম, বুঝতেই চাইছে না কিছু। ওইজন্যই আমি ম্যাক্সকে জানিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম।’

রুদ্র তীক্ষ্নচোখে দেখছিল লোক দুটোর দিকে।

ফেলিক্স কোনো কথা না বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে নম্বর টিপতে লাগল, ‘ভালোই কড়াকড়ি করেছে দেখছি। এদের চিফ সিকিউরিটি অফিসার বোধ হয় সামনের দিকে আছেন, তাঁকে একবার ফোন করে দেখি। উনি অর্ডার দিলে এরা নিশ্চয়ই যেতে দেবে।’

কিন্তু ফোনটা কানে দেওয়ার আগেই রুদ্র এগিয়ে গিয়ে ফেলিক্সের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কলটা ডিসকানেক্ট করল, তারপর দৃঢ়স্বরে বলল, ‘রিভলভার বের করুন। আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিয়োর, এরা সত্যিকারের গার্ড নয়। আর প্লিজ, নিজেদের মধ্যেও ইংরেজিতে কথা বলুন।’

ফেলিক্স ভ্রূ কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই সম্পূর্ণ আচম্বিতে সামনের লোক দুটোর একজনের বন্দুক থেকে ধেয়ে আসা গুলি হাতে লেগে ওকে ধরাশায়ী করে দিল।

লোকটার রিভলভারে সাইলেন্সার লাগানো, ছোটো একটা পটকা ফাটার চেয়েও কম আওয়াজ হল, ফেলিক্স অস্ফুট একটা আর্তনাদ করে ডান হাতের গুলি লাগা জায়গাটা চেপে ধরে বিকৃত মুখে কোনোমতে উঠে দাঁড়াল।

লোক দুটো রুদ্রর কথাটা বুঝতে না পারলেও কিছু একটা আন্দাজ করেছে নিশ্চয়ই।

ফেলিক্সের গায়ে গুলি লাগামাত্র জিমি সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় লোক দুটোকে কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের ব্যবধানে কাঁধের ঠিক ওপরে কানের পিছনের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রদ্দা মেরে শুইয়ে দিল মাটিতে।

এত তাড়াতাড়ি ঘটনা দুটো ঘটল, যে কেউ কিছু ভাবারই অবকাশ পেল না। ওঁদের হাতের বন্দুক দুটো ছিটকে পড়ল মাটিতে।

সামান্য ছটফট করে লোক দুটো নিশ্চল হয়ে গেল।

রুদ্র তারিফ করার ভঙ্গিতে জিমির দিকে তাকাল, তারপর ফেলিক্স আর জিমি ওকে আটকাবার আগেই ছুটতে শুরু করল গেটের দিকে।

এটা ঠিক গেট নয়, অনেকটা তাঁবুর দরজার মতো। প্যারাসুট জাতীয় মোটা কাপড় দিয়ে অস্থায়ী একটা মুখ করা হয়েছে এয়ারপোর্টটার। এখানে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের খাবার, জল এইসবই এইদিক দিয়ে সাপ্লাই করা হয়।

গেটে ঢোকার আগেই প্রিয়ম এসে রুদ্রর হাত চেপে ধরল, ‘একা যেয়ো না। আগে ওদের যেতে দাও।’

রুদ্র থমকে দাঁড়াল কয়েক মুহূর্তের জন্য, তারপরেই জিমি আর ফেলিক্সের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি ঢুকছি। তোমরাও এসো।’ কথাটা বলেই ওর হাতে থাকা ওই লম্বা ধারালো তারটা দিয়ে আড়াআড়ি সজোরে আঘাত করল গেটের প্যারাসুট কাপড়ের পর্দাটায়, আঘাত করেই লম্বালম্বি তারটাকে নামিয়ে আনল নীচে।

মুহূর্তে পুরো পর্দাটা দু—ফালা হয়ে কেটে গেল।

রুদ্রকে সরিয়ে ফেলিক্স আর জিমি ঢুকে প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না। তারপর চোখ একটু সয়ে যেতে দেখল এটা ক্যাম্পের একদম ভেতরে ঢোকার আগে একটা ফাঁকা ঘর, দূরে ক্ষীণ একটা আলো জ্বলছে তিরতির করে। এ ছাড়া আর কোনো আলো নেই।

ঘরের ঠিক মধ্যিখানে সার দিয়ে কয়েকটা লম্বা গোলাকার পাইপ রাখা, আর তার ঠিক পাশেই ওদের দিকে পেছন ঘুরে কেমন জবুথবু হয়ে বসে আছে একজন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *