নরক সংকেত – ২৮

২৮

সেপ্টেম্বর ১৯৩৩,

কথা ছিল বিকেলের মধ্যে এসে পড়বে ফ্রিৎজ সারের বাড়ি, কিন্তু ঘর্মাক্ত শরীরে নিজের অবসন্ন দেহটা যখন ফ্রেডরিক টেনে—হিঁচড়ে এনে ফ্রিৎজের বাড়ির চৌকাঠে রাখল তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। রাস্তায় রাস্তায় হ্যাজাকের আলো জ্বলে উঠেছে ল্যাম্পপোস্টগুলোয়। বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও সব জায়গায় পৌঁছোয়নি জার্মানিতে, পৌঁছোলেও ঘরে ঘরে বিদ্যুতের খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই জার্মানদের।

অনেক কষ্টে মাথার টুপির ভেতর থেকে ক্যামেরাটা বের করল ফ্রেডরিক।

কিছুক্ষণ হাঁপিয়ে নিয়ে ও ডাকল, ‘স্যার!’

কোনো উত্তর পাওয়া গেল না।

ফ্রেডরিকের চোখ জুড়ে আসছিল শ্রান্তিতে, তবু জোর করে চোখ দুটো খুলে রেখে নিজের দিকে তাকাল। হাঁটুতে, কোমরের দু—ধারে, কনুইয়ের জায়গায় জামা ছিঁড়ে গেছে, ছড়ে গিয়ে কোথাও কোথাও রক্তও পড়ছে।

ঠান্ডায় ও কাঁপছে মৃদু মৃদু!

ও আবার ডাকল, ‘স্যার!’ এবার একটু জোরে।

প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে হেঁটে এসেছে সে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে নদী পেরিয়ে। তবু রাস্তা ধরে আসতে পারেনি, যদি কেউ দেখে ফেলে! এতটা সময় হাঁটার সময় মাঝে মাঝেই মনের ভুলে চমকে পিছু তাকিয়েছে সে, কেউ পেছনে আসছে কি?

সকালে ভিক্টর যখন ওকে চোখে কালো পট্টি বেঁধে রিজেন্সবার্গের জঙ্গলের মধ্যে সেই পোড়োবাড়িটায় নিয়ে গিয়েছিল, গাড়িতে যেতে যেতে ও কিছুতেই বুঝতে পারেনি কোনদিকে যাচ্ছে।

প্রশ্ন করতে ভিক্টর বলেছিল ‘গর্ভমেন্টের হাইলি কনফিডেনশিয়াল ব্যাপার। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। তবে তোর চিন্তা নেই, মোটা টাকা দিয়ে পুষিয়ে দেওয়া হবে তোকে।’

ফ্রেডরিক তখন মনে মনে নিজেই নিজেকে বলেছিল, ‘মোটা টাকা দিয়ে সারাজীবন পায়ের উপর পা তুলে খাওয়ার সুযোগ এলেও আমি দেশের সঙ্গে এত বড়ো বেইমানি করব না ভিক্টর! আমি তুই নই।’

প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে একনাগাড়ে চলার পর গাড়িটা থেমে গিয়েছিল, তারপর কিছুক্ষণ ওকে হাঁটিয়ে অবশেষে ভিক্টর খুলে দিয়েছিল ওর চোখের বাঁধন।

এতক্ষণ চোখ বন্ধ থাকায় প্রথমে ওর চোখের সামনেটা কেমন অন্ধকার ঠেকছিল, তারপর আস্তে আস্তে ধুলো আর মাকড়সার জালে ভরা পোড়োবাড়ির ভেতরের কালো অন্ধকারের সঙ্গে ওর চোখ সয়ে যেতে সামনে বসে থাকা মানুষটাকে দেখার আগেই ওর চোখ চলে গিয়েছিল ছোট্ট একফালি জানলা বেয়ে দূরের পাহাড়টায়।

সেই মুহূর্তেই ও বুঝতে পেরেছিল, ভিক্টর যতই চতুর হোক না কেন, এই ব্যাপারে ফ্রেডরিককে বোকা বানাতে ও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। হ্যাঁ, ওর পক্ষে সত্যিই জায়গাটা বোঝা সম্ভব ছিল না, যদি না এই জায়গাটা ও মাউন্টেনিয়ারিং—এর বেসিক ট্রেনিং করার সময় প্রতিটা ইঞ্চি চিনত।

বার্লিনে আসার পর প্রথমদিকে ট্রেনিং—এর দলের সঙ্গে যে পাহাড়ে ও প্রথম ট্রেক করতে গিয়েছিল সেটা কী করে ভুলবে? যতই চোখ বেঁধে নিয়ে এসে ওকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হোক, ওই পাহাড়ের বরফে ঢাকা শৃঙ্গটা তো আর মিথ্যে কথা বলবে না!

কিন্তু ভিক্টর কেন ওকে গোপনে এইভাবে নিয়ে এল সেটা বুঝে ওঠার আগেই ওর চোখ পড়েছিল সামনের মানুষটার দিকে।

প্রচুর দেখেছে আগে, পোস্টারে, লিফলেটে, হ্যান্ডবিলে। আজ সামনাসামনি দেখে ও চমকে উঠেছিল।

দেশপ্রধান ফুয়েরার অ্যাডলফ হিটলার!

ভিক্টর, হিটলার, দুজন বডিগার্ড আর ও নিজে ছাড়াও আরও একজন ছিল সেই বাড়িতে, যাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ফ্রেডরিক একটা করে শব্দ জার্মানে কনভার্ট করবে, আর সঙ্গে সঙ্গে সে এনকোড করে ফেলবে সেটাকে।

উহ! তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে। ফ্রিৎজ স্যার, ওঁর স্ত্রী সোফি কেউই কি নেই নাকি বাড়িতে?

ও আরও একবার অতিকষ্টে সর্বশক্তি দিয়ে ডাকল, ‘স্যার, আমি ফ্রেডরিক!’

আচ্ছা, ভিক্টর কি জানত যে ফ্রেডরিকের কাজ শেষ হয়ে গেলেই তাকে মেরে ফেলা হবে? জেনেও ছোট্টবেলার বন্ধুকে কেন সে নিয়ে গিয়েছিল ওখানে?

ওর পুরো জিনিসটাকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করতে লেগেছিল ঘণ্টাখানেক। একটা করে শব্দ বলার সঙ্গে সঙ্গেই সেটাকে অদ্ভুতভাবে কিছু হরফের রূপ দিচ্ছিল ওই কোড করা লোকটা।

অনুবাদ যত এগোচ্ছিল, তত যেন ভেতরে ভেতরে ফ্রেডরিকের শরীর দিয়ে হাজার ভোল্টের কারেন্ট বয়ে চলেছিল।

পুরো লেখাটাই ল্যাবোরেটরিতে একটা রাসায়নিক মৌল তৈরির পদ্ধতি।

সেদিন রাতে ভিক্টর নেশার ঘোরে সব উগরে না ফেললে ও বুঝতেও পারত না যে কী অভিশপ্ত কাজের জন্য এই মৌল তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এখন ও জানে, ইউজেনিক্স অনুযায়ী খাঁটি জার্মানদের উপর এই মৌল প্রয়োগ করে তাদের অতিমানবে পরিণত করা হবে।

অ্যাডলফ বিশেষ কথাবার্তা বলছিলেন না, চুপচাপ বসে তীক্ষ্ন চোখে পরখ করছিলেন এই কোডিং—ডিকোডিং।

ফ্রেডরিক অনুবাদ করতে করতে নিজের অজান্তেই ভয়ে হোক, বা অজানা আশঙ্কায় ঘেমে উঠছিল।

এই সেই মৌল যেটা দিয়ে পুরো পৃথিবী ভাগ হয়ে যাবে দুটো ভাগে? একদিকে পায়ের তলায় পড়ে থাকবে সাধারণ ভালোমন্দ, রোগভোগ মেশানো মানুষ, আর তাদের নিষ্পেষিত করবে কৃত্রিমভাবে তৈরি এক দল অতিমানব?

তাও আবার যুগ যুগ ধরে?

না, কিচ্ছুটি বুঝতে দেয়নি ও।

তবে বুঝতে ওরাও দেয়নি যে কাজ হাসিলের পরই ফ্রেডরিককে খুন করার প্ল্যান করেছে ওরা। এমনকী স্বয়ং দেশনায়ক ওর পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন, তখনও ও কিছু বোঝেনি।

বুঝতে পারতও না, যদি না বডিগার্ডকে করা হিটলারের চোখের সামান্য একটা ইশারা ওর চোখে পড়ত।

ওর ষষ্ঠেন্দ্রিয় বলছে ওঁর ওই ইশারাটা ফ্রেডরিককে মারার জন্যই ছিল।

বুকের ডান দিকের পাঁজরে অসহ্য যন্ত্রণা করছে। জানলা দিয়ে লাফ দেওয়ার একটা গাছের ডাল এসে লেগেছিল।

উহ, ফ্রিৎজ স্যার কি আর আসবেন না বাইরে?

ফ্রেডরিকের মনে হচ্ছিল ও যেন চিৎকার করে বলে, স্যার দেখুন! আমি পেরেছি। সব শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিন সব! খতম করুন ওই শয়তানকে!

দেড় মিনিট! মাত্র দেড় মিনিট সময় পেয়েছিল ও। ওকে একটা বড়ো কেকের টুকরো খেতে দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর আগে শেষ খাওয়া হিসেবে মনে হয়। ওই এনকোড করার লোকটা পেছনে ফিরেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য, সঙ্গে—করে—নিয়ে—আসা কোনো কোডিং রেজিস্টারে কোডগুলো তোলবার জন্য।

আর ফুয়েরায় হিটলার, তার দু—জন বডিগার্ড, আর ভিক্টরকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন, বোধ হয় কীভাবে ফ্রেডরিককে মারা হবে, সে ব্যাপারে ফাইনাল প্ল্যান করে নিতে। ও যে পালাতে পারে, সেটা মনে হয় ওঁদের কারুর মাথাতেই আসেনি।

ও কেকটা খাচ্ছিল।

উলটোদিকের একটা জানলা দিয়ে তাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করতে।

মৃত্যুর আগে মনে হয় অজান্তেই মানুষের শরীরে দুঃসাহস এসে ভর করে। ফ্রিৎজ স্যারের বলা কথাগুলো যে কোথা থেকে এসে ওর মনে অসীম সাহসের সঞ্চার করেছিল।

ও হঠাৎ টুপির একপাশে ঝুলতে থাকা সুতোটাই টান দিয়ে ফোকাস করেছিল হিটলারের উপরে। টেস্ট করে দেখেছিল, এনকোড করা লোকটা কিছু বুঝতে পারে কি না!

নাহ, একটুও আলোর ঝলকানি হয়নি, বুঝতে পারেনি কেউ কিছু। আরও একবার সুতোয় টান মেরেছিল ফ্রেডরিক, এবার কেকটাকে ফোকাস করে।

এবারেও কিছু টের পেল না কেউ।

ব্যস! আর আগুপিছু একটুও ভাবেনি ও। সুযোগ বার বার আসে না। অরিজিন্যাল গ্রিক ভাষায় লেখাটা এনকোড করে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে মুঠোর মধ্যে সেই সাংকেতিক হরফে লেখা রাইটিং প্যাডটা নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল, পাশে জঙ্গলের মধ্যে।

ওরা মনে হয় কল্পনাও করতে পারেনি, আলো—না—ঢোকা ওই ঘন জঙ্গলে কেউ ঝাঁপ মারতে পারে।

কুখ্যাত ব্ল্যাক ফরেস্ট। দিনের বেলাতেও যেখানে আলো—আঁধারি হয়ে থাকে।

চেনা না থাকলে কেউ সেখানে ঢুকলে আর বেরোতে পারে না, গোলকধাঁধায় হারিয়ে যায়।

কিন্তু ফ্রেডরিক যে হাতের তালুর মতো চেনে জায়গাটা। তাই এক মুহূর্তও আর দাঁড়ায়নি সেখানে। এই জঙ্গল পেরিয়েই ট্রেক করে সে ওই পাহাড়টায় উঠেছিল বছর দুয়েক আগে। সেই আন্দাজ নিয়েই ছুটেছিল তীব্রবেগে।

তারপর সারাটা দিন সে ছুটেছে, ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়েছে, মনে হয়েছে পায়ের শিরাগুলো ফেটে রক্ত চলকে পড়বে রাস্তায়। তবু দাঁড়ায়নি সে, এক মুহূর্তের জন্য।

একজন বয়স্ক মহিলা কখন ভেতর থেকে এসে সামনে দাঁড়িয়েছেন, ও খেয়াল করেনি। বেশভূষা দেখে বাড়ির কাজের লোক মনে হচ্ছে। ফ্রেডরিক অস্ফুটে উচ্চারণ করল, ‘জল!’

মহিলা জল নিয়ে এলে খেয়েই ও আর দেরি করল না, সাবধানের মার নেই। পুলিশ এখন ওকে খেপা ষাঁড়ের মতো খুঁজছে। ক্যামেরাটা অন করে পকেট থেকে প্যাডটা বের করে সবকটা পাতার ছবি পরপর তুলে ফেলল ও। তারপর প্যাডটা কুচিয়ে কুটিকুটি করে ফেলল।

একটু নিশ্বাস নিয়ে ও বলল, ‘ফ্রিৎজ স্যার কোথায়?’

মহিলা প্রথমে উত্তর দিল না, তারপর আরও দু—একবার জিজ্ঞাসায় হঠাৎ বিকট একটা আর্তনাদ করে ডুকরে কেঁদে উঠল।

ফ্রেডরিক হতবুদ্ধি হয়ে গেল, ‘কী—কী হয়েছে? ফ্রিৎজ স্যার কোথায়?’

মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আজ সকালেই ফ্রিৎজ স্যারকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাচাউ—এর কিলিং ক্যাম্পে। কোন একটা লেখার জন্য। আর কোনো ট্রেস নেই তারপর থেকে। আর সোফি গেছেন পুলিশ স্টেশনে।

‘দাচাউ ক্যাম্প?’ চমকে উঠল ফ্রেডরিক।

দাচাউ মিউনিখের কাছাকাছি একটা ছোটো মফসসল। সম্প্রতি সেখানকার একটা পরিত্যক্ত কারখানায় খোলা হয়েছে ফুয়েরার হিটলারের প্ল্যানমাফিক দেশের প্রথম কিলিং আর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প।

হিটলার ক্ষমতায় এসে দেরি করেননি, ফেব্রুয়ারি মাসেই জারি করা হয়েছিল সেই অর্ডিন্যান্স, যাতে লেখা ছিল, নাতসি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা একটুও প্রতিবাদ করবে, তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে বন্দি রাখা হবে।

প্রথমে রাজনৈতিক বন্দিদের নাম করে খোলা হলেও আসলে এইসব ক্যাম্পে চলছে ইহুদি আর প্রতিবাদী মানুষজনের উপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের দিয়ে অমানুষিক খাটানো, সবশেষে নির্মমভাবে হত্যা।

মাত্র ছ—মাস হল খুলেছে, তার মধ্যেই হাজারেরও বেশি কয়েদিকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে সরকারিভাবেই। বেসরকারি হিসেবটা দ্বিগুণ বা তারও বেশি। ক্যাম্পের ভেতরের খবর যেন বাইরে না বেরোয়, তা নিয়ে সরকার সতর্ক থাকলেও এইসব খবর তো হাওয়ায় ভাসে।

দাচাউতে নাকি বিশাল বিশাল ওয়াগনে গাদাগাদি করে ইহুদিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, গিয়ে তাদের মেডিক্যাল টেস্ট করে দু—ভাবে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। যারা অক্ষম অসুস্থ বৃদ্ধ বা শিশু, তাদের প্রথমেই সময় নষ্ট না করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্যাস চেম্বার বা ক্রিমেটোরিয়ামগুলোতে আর বাকি সক্ষম সুস্থ সবল মানুষগুলোকে দিয়ে অমানুষিক খাটানো হচ্ছে, মাস কয়েক পর তারাও যখন কঙ্কালসার হয়ে পড়ছে, তাদেরও পাঠানো হচ্ছে গ্যাস চেম্বারে।

এইসবই গোপন সূত্রে পাওয়া মিডিয়ার খবর।

জনসাধারণের মধ্যে এমন ত্রাস ছড়িয়েছে, দাচাউয়ের নাম শুনলেই সবাই কেঁপে উঠছে ভয়ে।

মহিলা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন, ‘ফ্রিৎজ স্যার আর হয়তো ফেরত আসবেন না। ওই ক্যাম্প থেকে কেউ কোনোদিনও ফেরত আসেনি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’

ফ্রেডরিক হতভম্ব হয়ে রক্ত বেরোনো পায়েই থেবড়ে বসে পড়ল মাটিতে।

কোথায় যাবে এখন সে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *