নরক সংকেত – ১২

১২

পরের দিন সকালে উঠে প্রিয়ম অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পর ব্রেকফাস্ট সেরে রুদ্র একটা ফোন করল ড শ্যুমাখারকে। প্রথমে অনেকক্ষণ আউট অফ রিচ বলছিল। তারপর একবার রিং—হতে —না—হতেই ভদ্রলোকের গলা শোনা গেল, ‘হ্যাঁ ম্যাডাম, বলুন। গুড মর্নিং!’

‘গুড মর্নিং!’ রুদ্র মিষ্টি করে হাসল, ‘আজ কি একটু ফ্রি আছেন? দেখা করা যেতে পারে কি একবার? একটু আলোচনা ছিল।’

ভদ্রলোক যেন একটু চিন্তা করছেন, ‘আজ? উমম, দুপুরে হলে অসুবিধা হবে কি? এই ধরুন লাঞ্চের পর, তিনটে নাগাদ?’

রুদ্র বলল, ‘একেবারেই নয়। বলুন, কোথায় যাব? আপনার ক্লিনিকে যাব কি?’

‘না না!’ ড শ্যুমাখার হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘ক্লিনিকে একদমই আসবেন না, এখানে এসব ডিসকাশন একেবারেই নিরাপদ নয়, বলেছিলাম না আপনাকে?’

রুদ্র বলল, ‘না, আমি গেলে কাউকে বুঝতে দিতাম না কিছু। যাই হোক, তাহলে বলুন কোথায় দেখা করবেন?’

ড শ্যুমাখার একটু থেমে বললেন, ‘এক কাজ করুন। হাইড পার্কে আসতে পারবেন?’

রুদ্র বলল, ‘সেটা কোথায়? আচ্ছা ঠিক আছে, আমি দেখে নিচ্ছি জি পি এস —এ।’

ড শ্যুমাখার তবু বলে দিলেন কীভাবে হাইড পার্ক যেতে হবে হিলিংডন থেকে। রাখার আগে একটু চাপা গলায় বললেন, ‘আর জিনিসগুলো সাবধানে রেখেছেন তো? আজ আনতে পারলে ভালো হত।’

‘কয়েকদিন একটু অপেক্ষা করুন, আমি এগোতে না পারলে আপনাকে দিয়ে দেব। চিন্তা করবেন না। ওটা খুব নিরাপদে রাখা আছে।’ আশ্বস্ত করে ফোনটা ছাড়ল রুদ্র।

লন্ডন শহরের যে চারটে বড়ো রয়াল পার্ক আছে, তার মধ্যে এই হাইড পার্ক একটা। রুদ্র আসার আগে লন্ডনের ওপর লেখা সেই বইটাতেও পড়ছিল, কেনসিংটন প্যালেস আর বাকিংহাম প্যালেসের মাঝামাঝি খুব স্ট্র্যাটেজিকাল লোকেশনে এই পার্কটা। প্রায় পাঁচশো বছর আগে ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের লোকেদের শিকার করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তখন অবশ্য সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারত না। এখন এই পার্কে হাজার হাজার ফুলের সমাবেশ, তার সঙ্গে কোনো জনসমাবেশের জন্য রয়েছে স্পিকার’স কর্নার।

মানুষগুলো চলে যায়, কিন্তু স্থাপত্য ইতিহাস হয়ে যায়।

রুদ্র ড শ্যুমাখারের বলে দেওয়া মতো পার্কেরই একদিকে ওয়েলিংটন আর্কের সামনে অপেক্ষা করছিল। এখানকার প্রতিটা ঐতিহাসিক বাড়ি বা সৌধই এত সুন্দর, বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বেশিরভাগ সৌধই কোনো—না কোনো যুদ্ধজয়ের গৌরব বহন করে চলেছে। কত ছবি তুলবে! ফোনের মেমরি কার্ড ফুল হয়ে যাবে, তবু ছবি শেষ হবে না, এত সুন্দর সব কিছু।

আসলে পুরো ইউরোপটা এতটাই অভিজাত, চোখের পলক ফেলা যায় না।

পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ও একটু আদুরে গলায় ফোন করল প্রিয়মকে, ‘তুমি আজ যদি ছুটি নিতে, দারুণ ঘোরা হত সারাদিন। কী সুন্দর ওয়েদার আজ!’

ওপাশ থেকে প্রিয়মের গলা ভেসে এল, ‘হুঁ, সে তো জানি। কিন্তু কী করব, ক্লায়েন্টগুলো আসার আর সময় পেল না, আমি যত বলি আমার সবচেয়ে বড়ো ক্লায়েন্ট এসেছে এখন ইন্ডিয়া থেকে, কে শোনে কার কথা।’

রুদ্র হেসে গড়িয়ে পড়ল। প্রিয়ম ইয়ার্কি মারতেও পারে।

প্রিয়ম বলল, ‘তুমি কোথায় রয়েছ?’

রুদ্র বলল, ‘হাইড পার্কে এসেছি। ড শ্যুমাখার আসছেন।’

প্রিয়ম বলল, ‘নিজে নিজে চলে গেলে? ক্যাবে?’

রুদ্র বলল, ‘না, বাসে এলাম।’

প্রিয়মের হতাশ গলা শোনা গেল, ‘ধুস! ভাবলাম বউকে নিয়ে পুরো লন্ডন চেনাব, সেখানে বউ তো দেখছি আমার আগেই সব ঘুরে ফেলল! তাও আবার একটা আধবুড়োর সঙ্গে! আমি নিজেই এখনও ওদিকটায় যাইনি কখনো।’

রুদ্র কী বলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ দূরে পার্কে এন্ট্রান্সের বাইরে ওই লাল কালো যমদূতের মতো বাইকটা দেখেই চমকে উঠল। এক ঝলকের জন্য চোখাচোখি হতেই সেই জাপানি লোকটা আড়ালে চলে গেল।

এই লোকটা কে? যেখানে ও যাচ্ছে সেখানেই ওকে ফলো করে চলেছে?

পরক্ষণেই ও ড শ্যুমাখারকে হন্তদন্ত হয়ে এদিকে আসতে দেখল। ডাক্তারবাবু আজ ফর্মালে, একটা কালো রঙের প্যান্ট পরেছেন, উপরে আকাশি রঙের একটা ফুলহাতা শার্ট। চোখে চশমাটাও অন্য পরেছেন, ধূসর ফ্রেমের সরু রিমলেস চশমা।

রুদ্রর হঠাৎ রানি এলিজাবেথের হাত থেকে ওঁর পুরস্কার নেওয়ার ছবিটার কথা মনে পড়ে গেল।

ও আড়চোখে বাইকের লোকটার দিকে তাকাতে গেল, কিন্তু আর দেখতে পেল না।

বাইকটাও ভ্যানিশ।

আচ্ছা, এই বাইকওলা লোকটা কাকে ফলো করছে? ওকে? না, ড শ্যুমাখারকে? সন্দেহ নেই, ডাক্তারকেই ফলো করছে, ওকে করবেই—বা কেন! ওকে চেনেটাই—বা কে। তবে যদি ছবিগুলো হাতানো ওর মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তবে কি ও বা ওরা জানতে পেরে গেছে রুদ্রর কাছে ছবিগুলো রয়েছে?

কী করে জানল?

ড শ্যুমাখার কাছে এসে বললেন, ‘চলুন ম্যাডাম, একটু দেরি হয়ে গেল।’

রুদ্র ড শ্যুমাখারের পিছু পিছু পার্কের পাশেই একটা ছোটো রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। একবার ভাবল এই ফেউ লাগার কথাটা বলবে, কিন্তু সেটা বলার আগেই ড শ্যুমাখার দু—কাপ কফির অর্ডার দিয়ে ওর দিকে ঈষৎ ঝুঁঁকে বললেন, ‘কিছু এগোলেন ব্যাপারটায়?’

রুদ্র বলল, ‘না, সে—রকম কিছু নয়। জাস্ট একটু দেখছিলাম। তবে দু—একটা ব্যাপার চোখে পড়েছে।’

ড শ্যুমাখার আগ্রহের স্বরে বললেন, ‘কীরকম?’

‘যেমন,’ রুদ্র বোঝাতে চেষ্টা করল, ‘কোনো একটা রাইটিং প্যাডের একটা করে কাগজে মোটা কালির পেন দিয়ে লিখে সেগুলোকে একদম টপ ভিউ থেকে ছবি তোলা হয়েছে। আর, প্রতিটারই নীচে একই ধরনের দুটো হরফ রয়েছে, এটা কিছুর লোগো হতে পারে।’

ড শ্যুমাখার বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি ওটা খেয়াল করেছি। কী বলুন তো, আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’

রুদ্র বলল, ‘আচ্ছা, তার আগে একটা কথা আমায় বলুন, এইরকম কি কোনো মৌল থাকতে পারে যেটা শুধুমাত্র ল্যাবোরেটরিতে তৈরি করা সম্ভব, কিন্তু কোনোভাবেই সেটা নেচারে, মানে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না?’

ড শ্যুমাখার বললেন, ‘হ্যাঁ, কেন যাবে না? ওগুলোকে বলে সিন্থেটিক এলিমেন্ট। পিরিয়ডিক টেবিলের মোটামুটি অ্যাটমিক নম্বর পঁচানব্বই থেকে একশো আঠেরো যে মৌলগুলো আছে, সেগুলো সবই তাই। প্রচণ্ড আনস্টেবল বলে ওগুলোকে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, কয়েকটার তো হাফ—লাইফ কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড। হাফ—লাইফ কী জানেন তো?’

রুদ্র হাসল। অনেকদিন কেমিস্ট্রির টাচে না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকে পঁচানব্বই পেয়েছিল ও, সেখানে হাফ—লাইফ জানবে না, ইয়ার্কি নাকি! ওইসব সময়ে তো মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি মানে এই পিরিয়ডিক টেবিল কণ্ঠস্থ ছিল।

ও বলল, ‘হ্যাঁ। তেজস্ক্রিয় পদার্থ, মানে রেডিয়ো অ্যাক্টিভ এলিমেন্টগুলো তো খুব আনস্টেবল হয়, সেগুলো ক্ষয় হতে হতে প্রাথমিক অবস্থার অর্ধেক হতে যত সময় নেয়, সেটাকে বলে ওই পদার্থের হাফ—লাইফ। যার হাফ—লাইফ যত কম, তত আনস্টেবল। মানে, ওই যে আপনি বললেন, ওই সিনথেটিক এলিমেন্টগুলোর হাফ—লাইফ কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড, তার মানে ওই সময়টুকুর মধ্যেই ওটা ক্ষয়ে অর্ধেকে পরিণত হবে।’

ড শ্যুমাখার বললেন, ‘আপনি ব্যাঙ্কে চাকরি করেন না?’

রুদ্র একটু লাজুক মুখে বলল, ‘হ্যাঁ।’

উনি আরও অবাক হয়ে গেলেন, ‘ফিন্যান্সের লোক হয়ে আপনি কেমিস্ট্রি বা বায়োলজির এত কিছু জানলেন কী করে বলুন তো?’

আপনি আর কী করে জানবেন ডাক্তারবাবু, আমাদের দেশের সবাইকেই সব বিষয়ে পণ্ডিত হতে হয়। আর সরকারি অফিসে চাকরি করতে হলে তো হয়েই গেল, পিয়োন হওয়ার পরীক্ষায় পাশ করতে গেলেও ইতিহাস, বিজ্ঞান, ইকনমিক্স গুলে খেতে হয়!

ও বলল, ‘আমার হাইস্কুলে এগুলো সাবজেক্ট ছিল তো!’

ড শ্যুমাখার বললেন, ‘ভেরি ইম্প্রেসিভ! আপনার ওপর আমার বিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। পারলে আপনিই পারবেন।’

রুদ্র জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, সিনথেটিক এলিমেন্টগুলোর হাফ—লাইফ এত কম, তার মানে সেগুলো ডেফিনিটলি রেডিয়ো অ্যাক্টিভ, তাই তো?’

ড শ্যুমাখার মাথা নেড়ে বললেন, ‘এখনও পর্যন্ত চব্বিশটা সিনথেটিক এলিমেন্ট রয়েছে পিরিয়ডিক টেবিলে, প্রতিটাই হাইলি রেডিয়ো অ্যাক্টিভ, কিন্তু!’ ওঁকে কিঞ্চিত অসহিষ্ণু দেখাল, ‘কিন্তু আপনি প্লিজ বলবেন, এগুলো জিজ্ঞেস করছেন কেন? এগুলোর কোনো ক্লু কি পেয়েছেন আপনি ওই ছবিগুলো থেকে?’

রুদ্র এবার একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘বলছি। আগে কয়েকটা জিনিস জানার আছে আমার। নতুন কোনো এলিমেন্ট যদি কেউ তৈরি করেন যেটার অ্যাটমিক নম্বর একশো পনেরো বা তারও বেশি, সেটা কি রেডিয়ো অ্যাক্টিভ হতেই হবে।’

ড শ্যুমাখার বললেন, ‘অত ভারী মৌলর নিউট্রন—প্রোটন রেশিয়ো খুব হাই হবে, কাজেই রেডিয়ো অ্যাক্টিভ হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুবই আনস্টেবল হবে সেটা।’

রুদ্র বলল, ‘আপনি বলেছিলেন মৌলটা বাতাসে থাকা নাইট্রোজেনের সঙ্গে মিশে রিঅ্যাকশন করে যে কম্পাউন্ডটা উৎপন্ন করবে, সেটা ব্লাড ভেসেলে প্রবেশ করালে সেটা মানুষের জিনটাকে বদলে ফেলবে, তাই তো? কিন্তু ওটা যদি রেডিয়ো অ্যাক্টিভ হয়, তবে তো শরীরের ক্ষতিও করবে।’

ড শ্যুমাখার চমকে উঠে বললেন, ‘আপনি নাইট্রোজেনের সঙ্গে রিঅ্যাকশন করতে পারে, এরকম এলিমেন্টের সন্ধান পেয়েছেন ওই ছবিগুলোতে? তৈরির প্রসেসটা বুঝতে পেরেছেন?’

রুদ্র বলল, ‘বলছি। আপনি আগে আমার প্রশ্নটার উত্তর দিন। মৌলটা যদি তৈরি করাও যায়, সেটা ক্যান্সারকে দূর করলেও শরীরের তো অন্যভাবে ক্ষতি করবে, ব্যাপারটা তো আলটিমেটলি বাজেই হবে।’

ড শ্যুমাখার একটু অধৈর্যভাবে বললেন, ‘এখনও পর্যন্ত, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন মলিবডেনাম করতে পারে, আর সেটাও থ্রু এনজাইম। বাতাসের সংস্পর্শে এসে করতে পারে না কারণ নাইট্রোজেন এমনিতেই অত অ্যাক্টিভ নয়। আর মলিবডেনামের কোনো এইরকম আইসোটোপ আছে কিনা আমার জানা নেই যেটা নাইট্রোজেনের সঙ্গে নিজে নিজেই রিয়্যাক্ট করে মানুষের ব্লাডে ঢুকে তার জিনটাকে মডিফাই করে দেবে, মানে আমাদের ইউজেনিক্স সেকথা বলে না। আপনি এবার প্রসেসটা বলুন। আমি ভাবতেই পারিনি আপনি এত তাড়াতাড়ি…..!’

রুদ্র মাঝপথে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ইউজেনিক্সটা কী?’

ড শ্যুমাখার এবার একটু চমকে গিয়ে বললেন, ‘জিন, জিনটাকে মডিফাই করার কথা বলছিলাম আর কি!’

রুদ্র একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘দেখুন ড শ্যুমাখার, আপনি একটা ভালো কাজে আমার হেল্প চেয়েছিলেন বলে আমি আগ্রহ দেখিয়েছিলাম, তো তাতে যেটুকু বুঝতে পেরেছি, সেটা হল প্রতিটা ছবিতে অজস্র যে হরফগুলো লেখা রয়েছে, সেগুলো সবই আসলে ইংরেজির এক একটা অক্ষরকে রিপ্রেজেন্ট করছে।”

ড শ্যুমাখার হাঁ হয়ে গেলেন, ‘ইংরেজির অক্ষর? আ—আপনি শিয়োর? ইংরেজিরই? কীরকম একটু বলবেন?

রুদ্র বোঝাবার চেষ্টা করল, ‘এগুলোকে বলে ক্রিপটোগ্রাফি। আমি এখনও পুরোটা বুঝতে পারিনি, তবে এটা লক্ষ করেছি একই ধরনের হরফ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লেখা হয়েছে। ইংরেজিতে ছাব্বিশটা অক্ষর রয়েছে মোট, সবকটা ছবিতেই মোট তেরো ধরনের হরফ রয়েছে, সেগুলোর কোনোটার ভেতরে ফুটকি রয়েছে, কোনোটার ভেতরে নেই। তার মানে, যদি এটা ধরে নিই, ফুটকি দেওয়া হরফটা অন্য কোনো অক্ষরকে রিপ্রেজেন্ট করছে, তাহলে তেরো দু—গুণে ছাব্বিশটা টোটাল হরফ রয়েছে, যেটা আমাদের ইংরেজি বর্ণমালাতেও আছে।’

ড শ্যুমাখারের চোখ অস্বাভাবিক জ্বলজ্বল করছিল, ‘আপনি সত্যিই জিনিয়াস!’

রুদ্র মাথা নাড়ল, ‘জিনিয়াসের কিছু না, এটা একটা নর্মাল অবজারভেশন যেটা যেকোনো কোড ডিসাইফার করতে গেলে প্রয়োজন হয়। আমি এখনও ওই হরফগুলোর মানে বুঝতে পারিনি।’

উত্তেজনায় ড শ্যুমাখারের চোখটা লাল হয়ে যাচ্ছিল, ‘ছবিগুলো এনেছেন?’

রুদ্র বলল, ‘না। আপনি আমাকে আর দু—দিন মতো টাইম দিন। আমি চেষ্টা করছি। তার মধ্যেও আমি কিছু না বের করতে পারলে আপনাকে প্রোফেশনাল ক্রিপটোলজিস্টের কাছে যেতে হবে। কারাণ তারপর আমাকে প্যারিস চলে যেতে হবে, সেখানে আমার ওয়ার্কশপ আছে।’

শ্যুমাখার বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন সেটা রুদ্র আরও বুঝতে পারল, যখন দেখল বিল মেটাতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় ওঁর হাত থেকে পার্সটাই পড়ে গেল। রুদ্র তুলে দিতে যেতে সেটার খোলা মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল প্রায় পাঁচ ছ—টা সিম। একে একে সেগুলো তুলে ওঁর হাতে দিল রুদ্র।

মিনিট কুড়ি পরে রুদ্র যখন ড শ্যুমাখারকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফেরার বাস ধরল, তখন ওর মনটা বেশ খুশি লাগছিল এই ভেবে, ভদ্রলোক বড়ো মুখ করে ওর সাহায্য চাইতে এসেছিলেন, ও এখনও পর্যন্ত একটু হলেও হেল্প করতে পেরেছে। সবচেয়ে বড়ো কথা এতে প্রিয়মেরও মুখরক্ষা হবে।

ড শ্যুমাখারের অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এত তাড়াতাড়ি এতটা প্রোগ্রেস উনি আশা করেননি।

গুনগুন সুরে একটা সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ও প্রিয়মকে ফোন করল, ‘আমার অ্যাপো কমপ্লিট। এখন বাড়ির পথে। তুমি কোথায়?’ বলেই ও লক্ষ করল লাল কালো বিশাল বাইকটা ওর বাসের ঠিক পাশে পাশেই যাচ্ছে।

জাপানি লোকটা বাইক চালাতে চালাতেই একঝলক তাকাল ওর দিকে। তারপরেই স্পিড কয়েক গুণ বাড়িয়ে হু হু করে চলে গেল সামনের দিকে।

মুহূর্তে মিলিয়ে গেল যেন চোখের সামনে থেকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *