• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মহাভারতের ছয় প্রবীণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

লাইব্রেরি » নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী » মহাভারতের ছয় প্রবীণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
মহাভারতের ছয় প্রবীণ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

সূচিপত্র

  1. মহাভারতের ছয় প্রবীণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
  2. কথামুখ

মহাভারতের ছয় প্রবীণ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

প্রথম সংস্করণ: জানুয়ারি ২০০২
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
প্রচ্ছদ: সমীর সরকার

শত সাংসারিক অনটনের মধ্যেও কৈশোর-যৌবনের অবুঝ
হৃদয়হীন তাড়নায় যাঁর স্বেচ্ছোন্মুক্ত টিনের বাক্স থেকে
আমি মাঝে-মাঝে একটি-দুটি টাকা চুরি করেছি এবং যাঁর
দুরন্ত দার্শনিক প্রশ্রয়ে কৈশোর-মাতৃহীন এই
পান্থজীবনে আমার বৃদ্ধি ঘটেছে, আমার পরম প্রিয়
সেই মেজদাদার ভাগবত জীবন আরও দীর্ঘ-দীর্ঘতর হোক।
শ্রীঅজিতকুমার ভাদুড়ীর করকমলে এই গ্রন্থার্ঘ্য
নিবেদিত হল।

কথামুখ

ছোটবেলায় সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতেই আমার পিতাঠাকুর স্যামুয়েল স্মাইলস-এর ‘ক্যারেকটার’ নামক গ্রন্থটি পড়াতে আরম্ভ করেন। এখন বুঝি পড়ানো ছাড়াও তাঁর আর একটি উদ্দেশ্য ছিল—পুত্র এবং ছাত্রের চরিত্র-গঠন। স্মাইলস-এর এই গ্রন্থটিতে চরিত্র-তৈরির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের জগতের বহুতর মহান মনীষীদের জীবন এবং তাঁদের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথাও উদাহরণ হিসেবে এসেছে। সেই বয়সে ইংরেজি বই পড়ার আনন্দ ছাড়া আমার চরিত্র-গঠনে এই গ্রন্থের অন্য কোনও উপকারিতা আমার অনুভূত হয়নি। আমার ধারণা—ভারতবর্ষের মানুষের ক্ষেত্রে চরিত্র-গঠনের রীতি-নীতি একেবারেই আলাদা। যেমন ধরুন—উপরিউক্ত গ্রন্থে বেন জনসন থেকে নিউটন, চসার থেকে শেলী—সবারই জীবনোদাহরণ আছে, কিন্তু ওদেশের মহাকাব্যের যে-সব বীর-চরিত্র আছে, অথবা যে-সব দেব-চরিত্র আছে, তার একটিও আদর্শ হিসেবে আসেনি। অথচ ভারতবর্ষে দেখুন—কেউ এখানে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র কিংবা মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস হতে বলে না; অন্তত আমাদের সময়েও বলত না। হয়তো বা আমরাও পুরোনো দিনের লোক, তাই কেরিয়ারের ক্ষেত্রে বড় বড় আদর্শ উচ্চারণ করার থেকেও আমাদের পিতা-মাতারা গার্হস্থ জীবনের ভ্যালুগুলির দিকে বেশি নজর দিতেন। ফলে আমাদের কাছে রামচন্দ্রের পিতৃভক্তি, ভ্রাতৃপ্রেম, জ্যেষ্ঠের কারণে ভরত এবং লক্ষ্মণের আত্মত্যাগ—এই সবই আমাদের কাছে আদর্শ হিসেবে এসেছে।

আশ্চর্যের কথা, রামায়ণ মহাকাব্যের রাম-সীতা, লক্ষ্মণ-ভরতের কথা আমাদের কাছে আদর্শ হিসেবে এলেও মহাভারতের কোনও শুদ্ধ অথবা বৃদ্ধ চরিত্র কখনও আমাদের কাছে আদর্শের বালাই নিয়ে আসেন না। ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃষ্ণা, কুন্তী, এমনকী ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরও কারও উচ্চারণে আদর্শ হিসেবে আসেননি। আর কৃষ্ণ তো ননই, কারণ স্বয়ং পুরাণ-বক্তা শুকদেব একেবারে সহুংকারে সকলকে বারণ করে দিয়ে বলেছেন—কৃষ্ণের আদর্শ যেন মনে-মনেও কেউ অনুসরণ কোরো না, তাতে নিজের বিপদ বাড়বে—নৈতদ্‌ সমাচরেজ্জাতু মনসাপি হ্যনীশ্বরঃ।

মহাভারতের চরিত্রগুলি যে ভারতের গাৰ্হস্থ জীবনে আদর্শ হিসেবে এল না, তার একটা বড় কারণও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, মহাভারতের প্রত্যেকটি চরিত্র বড় জটিল। তার ওপরে প্রত্যেকটি মুখ্যচরিত্রের মধ্যে ধর্ম এবং ধর্মসংকট একত্র মিশে থাকায় সেই জটিলতা আরও বেড়েছে। চরিত্রগুলি যখন চিরাচরিত ধর্মের অনুশাসনের মধ্য দিয়ে নিজের জীবনচর্যা চালাতে থাকে তখন কোনও সমস্যা নেই, চরিত্রগুলিও তখন আপন আন্তর শক্তিতে অধিকতর দীপ্তিমান হয়ে ওঠে। কিন্তু যে মুহূর্তে মহাভারতের মুখ্য চরিত্রগুলির সামনে প্রতিকূল সংকট উপস্থিত হয় এবং সেই সংকটের সমাধান ঘটতে থাকে সাধারণের অনভ্যস্ত পথে, তখনই মহাভারতের মুখ্য চরিত্রগুলি অননুকরণীয় পদ্ধতিতে কঠিন এবং জটিল হয়ে ওঠে। সাধারণ পাঠক তখন স্বভাবসিদ্ধ দুর্বলতায় চরিত্রগুলির বিভিন্ন দিক নিয়ে সংশয়িত হতে থাকেন। হয়তো এই সংশয়ের ফলেই মহাভারতের কোনও চরিত্র কখনোই আদর্শ হিসেবে আমাদের গাৰ্হস্থ জীবন। প্রাণিত করেনি।

সাধারণ মানুষ, মধ্যবুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এমনকী অনেক বিদ্বজ্জনের মুখেও আমি মহাভারতের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন শুনেছি। শুনেছি এমন বিপরীত মন্তব্যও—যা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, মহাভারত অনেক পড়া থাকলেও এই গ্রন্থের বিশালতা সম্পর্কে তাঁদের বোধ সম্পূর্ণ হয়নি। এমন নয় যে, সব কিছুই আমরা ‘জাস্টিফাই’ করতে চাই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, মহাভারতের তাৎক্ষণিক মুহূর্তগুলি দিয়ে মহাভারতের মুখ্য চরিত্রগুলির বিচার করলে চলবে না। আসলে মহাভারতের চরিত্রগুলির সঙ্গে তৎকালীন সমাজের ধর্ম, দর্শন, মানবিকতা, ক্ষত্রিয়ধর্ম, রাজধর্ম এমনভাবে মিশে গেছে যে, সেখানে একটি কি দুটিমাত্র ঘটনার নিরিখে চরিত্রগুলির সাময়িক বিচার করাটাও নিতান্ত বাতুলতা। কৌরবসভায় দ্রৌপদীর অপমানের আগে যুধিষ্ঠির যে তাঁকে পণ রেখেছিলেন, তার জন্য যুধিষ্ঠিরকে যেমন এইকালেও বহুল তিরস্কার সইতে হয়, তেমনই সেকালেও তিনি কম কথা শোনেননি। একইভাবে সেই অপমান-সভাতে কুরুবৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্মের কাছে নিজের চরম অপমানের জন্য বিচার চেয়েছিলেন দ্রৌপদী। ভীষ্ম তাঁর যুক্তি দিয়ে যথাসম্ভব দ্রৌপদীর প্রশ্ন বিচার করা সত্ত্বেও তাঁকে সুরক্ষা দিতে পারেননি। এর জন্য সেকালেও ভীষ্মকে কথা শুনতে হয়েছে, একালেও তাঁকে শুনতে হয়।

ঠিক এইখানেই আমাদের মতো মহাভারত-ব্যসনীর কিছু বক্তব্য আছে। আসলে মহাভারতের চরিত্রগুলির বৈশিষ্ট্য বিচার করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে, এখানে বেশির ভাগ প্রধান চরিত্রগুলির মধ্যে এক ধরনের মহাকাব্যিক শক্তি কাজ করে। এ-শক্তি খুব সাধারণ শক্তি নয়; এ-শক্তি ভারতীয় সমাজের ধর্ম, দর্শন এবং নীতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে এক-একটি চরিত্রকে এক পরম ব্যাপ্ত প্রতীকে পরিণত করেছে। অন্যদিকে অত্যন্ত বিপ্রতীপভাবে যেখানে ধর্ম নেই, নীতি নেই, সেই অন্যায়-অনীতিও এক-একটি চরিত্রের মধ্যে এমন মহাকাব্যিক বিশালতায় উদাহৃত যে, তার গতি এবং শক্তিও কিছু কম নয়। ঠিক এইখানেই মহাভারতের সার্বিক ভাবনার প্রশ্ন আসে।

আমি জানি, যিনি সমালোচক হন, যুক্তি-তর্কের সিদ্ধি তাঁর আপন করায়ত্ত থাকায় নিন্দাবাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তিনি প্রয়োগ করতেই পারেন, বিশেষত প্রশংসা করাটা তাঁর বাধ্যবাধকতাও নয়। কিন্তু এখানে দেখার আছে এইটুকুই যে, নিন্দা যিনি করবেন, তাঁর শক্তি, বুদ্ধি এবং অনুশীলন কতটা আছে। তর্ক-যুক্তি তো সাজানোই যায়, আর প্রধানত যাঁরা পূর্বাহ্নেই অন্য কোনও বিষয় এবং ভাবনার দ্বারা ভাবিত এবং অভিভূত থাকেন, তাঁদের তর্ক-যুক্তিও সেই পূর্বভাবিত বিষয়ের পথেই চালিত হয়। ফলে এঁরা যখন বিচার করেন, তখন মহাভারতের বিশাল সমুদ্র থেকে এক খামচা জল তুলে এনে এক-একটি বিরাট চরিত্রের উদ্দেশে তিলাঞ্জলি রচনা করেন। মনে রাখতে হবে, মহাভারতের প্রত্যেকটি চরিত্রের একটা ‘ফোক্যাল পয়েন্ট’ আছে। যেমন ভীষ্মের চরিত্র চিন্তা করতে গেলে ভরত বংশের সমগ্র উত্তরাধিকারীদের জন্য তাঁর উদার আত্মত্যাগই যেমন প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠা উচিত, তেমনই ধৃতরাষ্ট্রের চরিত্র-বিবেচনায় তাঁর স্নেহানুবন্ধী সংকীর্ণতার সঙ্গে তাঁর অন্তর্গত দ্বিধাদীর্ণ সম্ভাবনাগুলিও উল্লেখ্য হওয়া উচিত।

মহাভারতের চরিত্র-ভাবনায় আরও একটা দিক আমাদের চোখে পড়েছে। দেখেছি—এমনও কেউ কেউ আছেন যাঁরা বহুচর্চিত খলনায়কদের জীবন সম্বন্ধে অনুকম্পাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এমন দেখেছি যাঁরা ব্যাস-ভীষ্ম-বিদুরের মতো উদার-বিশাল ব্যক্তির ওপর কলঙ্কের ভার ন্যস্ত করে দুর্যোধন-কর্ণের গরিমায় মুগ্ধ হয়ে পড়ে। মুগ্ধ হওয়ার কারণ যে একেবারে নেই, তা আমরা মনে করি না। কেননা মহাকাব্যের খল-নায়কের চরিত্রেও এমন কিছু গরিমা, এমন কিছু দৃঢ়তা এবং এমন কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, যা সাধারণ খল-নায়কের থেকে তাঁকে বীরোচিত এককে পরিণত করে। রামায়ণের রাবণ অথবা মহাভারতের দুর্যোধন এই ধরনের একক। এঁদের দৃঢ়তা, এঁদের অহঙ্কার এবং জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত এঁদের হার না-মানা স্বভাবটুকু এমনভাবেই মহাকাব্যের কবির প্রসাদ লাভ করে যে, ভবিষ্যতের মহাকবিরা তাঁদের কবিজনোচিত বেদনা মাখিয়ে সেই চরিত্রগুলিকে রীতিমত করুণরসের আধার করে তোলেন। মাইকেল মধুসূদন রাবণকে তাই করেছেন, রবীন্দ্রনাথ দুর্যোধন-কর্ণকে তাই করেছেন—আমরা এই চরিত্রগুলির প্রতি মমতাকুল হয়ে পড়ি।

কিন্তু কবিপ্রতিভার এই নবনবোন্মেষশালিতায় যদি প্রাবন্ধিকের হৃদয় দীর্ণ হয়ে ওঠে এবং তিনি যদি অতঃপর মূল মহাভারত পড়ে, বা না পড়ে স্বকীয় প্রতিভা বিকীর্ণ করে মহাকাব্যের খলচরিত্রকে মহান প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করেন, তাহলে বিপদ বাড়ে। আজিকালি এই ধরনের কিছু অল্পপ্রাণ প্রাবন্ধিকের দেখা মেলে, যাঁরা অত্যল্প পড়াশুনো করে এবং তার থেকেও কম বুঝে চিরন্তন বিশ্বস্ত কল্পগুলিকে অস্বীকার করার মধ্যে এক ধরনের চটকদারি খুঁজে পান। এঁরা ভীষ্ম-দ্রোণ-বিদুরের মতো বিরাট চরিত্রকে আপন সংকীর্ণ মানসিকতায় বিবৃত করে দুর্যোধন-কর্ণের অশোধ্য দোষগুলিকেও গুণপক্ষে আধান করেন। এঁদের বোঝানো যায় না যে, সমালোচক-প্রাবন্ধিক মাইকেল-রবীন্দ্রনাথ নন, কবিজনের স্বাধীনতা তাঁর প্রাপ্য নয়। তাঁকে যদি মহাভারতের চরিত্র সমালোচনা করতে হয় তবে মহাভারতের কবির প্রসারিত হৃদয়ের অনুবর্তী হয়েই তা করতে হবে। ভারতবর্ষের মনন, দর্শন এবং ভাবনা দিয়ে তিনি যে চরিত্র-সৃষ্টি করেছেন, তাকে উপস্কার-পরিষ্কারের মাধ্যমে ভাঙা-গড়া করা যায়, কিন্তু সে-চরিত্রের মূল আলোকপাতটুকু অতিক্রম করা যায় না, করা উচিত নয়।

করা যে উচিত নয় তার কারণও আছে। কারণ যিনি মহাভারতের অথবা মহাভারতীয় চরিত্রের সমালোচক হবেন, তাঁকে যেমন মহাভারতের কবির হৃদয় বুঝতে হবে, যেমন করে ভারতবর্ষের তদানীন্তন মনন-চিন্তন বুঝতে হবে, তেমনই তাঁকে নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দের গণ্ডীটুকুও ছাড়িয়ে যেতে হবে। উপরন্তু সেই সমালোচকের যেন এক প্রেমিকের হৃদয়ও থাকে, কেননা একমাত্র সেই হৃদয় দিয়েই মহাভারতের প্রত্যেকটি চরিত্রের সৌন্দর্য-মাধুর্য-গভীরতাগুলি অনুভব করা যায়, অনুভব করা যায় প্রতিনায়কের দুষ্টতা, খলতা এবং অবশ্যই তাঁর বিশিষ্টতাও। এই সমালোচকের সহনশীলতা কোথাও কোথাও ক্ষুণ্ণ হবে বই কী, কিন্তু সেই অসহনও হবে প্রেমিকের মতোই, যাতে করে তিনি তাঁর মাননীয় প্রার্থিত চরিত্রটিকে অন্য সমস্ত দ্বিতীয়-মানের চরিত্র থেকে পৃথক সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। আমি সেই প্রেমিকের গর্ব এবং অসহন নিয়েই বলতে চাই—আমি ব্যাস-ভীষ্ম-ধৃতরাষ্ট-বিদুরের চরিত্র-রচনায় পুনরায় এক প্রেমের তপস্যায় বসেছিলাম এবং সেই প্রেমেই বুঝেছি যে,—ভীষ্ম-বিদুরের মতো চরিত্রসৃষ্টির পিছনে মহাভারতের কবির যে গভীরতা ছিল, সেই একই গভীরতা দিয়ে তিনি ধৃতরাষ্ট্র-দুর্যোধন অথবা কর্ণের চরিত্রও চিত্রায়ণ করেছেন—অথচ এঁরা প্রত্যেকে কী পৃথক এবং স্বতোবিশিষ্ট এবং স্বতোবিভিন্ন।

মহাভারতের এই চরিত্রগুলি লিখবার সময় আমার মধ্যে কোথাও যেন একটা ‘হেনোথিইস্টিক্‌ অ্যাটিটুড্‌’ কাজ করেছে। একই সঙ্গে আমি ভুলিনি যে, মহাভারতের সমাজটাও একটা জীবন্ত সমাজ ছিল। এমন একটা সমাজ যেখানে আমাদের আজকের দিনের মতোই স্নেহ-প্রেম-হিংসা-পক্ষপাত আবর্তিত হয়। সুপ্রসিদ্ধ ভরতবংশের উত্তরাধিকারীদের সুস্থ প্রতিষ্ঠার জন্য ভীষ্ম আত্মবলি দেন বটে, কিন্তু সেই বংশের পিতামহ হিসেবে সারাটা জীবন তিনি শুধু দেখে গেলেন, সেবা করে গেলেন, কিন্তু সংসার-মুক্তি নিয়ে চলে গেলেন না। এমন নির্মোহ উপায়ে সংসারে থেকে যাওয়াটা যে সর্বত্যক্ত সন্ন্যাসীর চেয়েও বড় মুক্ত পুরুষের লক্ষণ, সেটা মহাভারতের কবি ছাড়া আর কে এমন করে দেখাতে পারতেন।

বিদুর একটি চরিত্র, যিনি নিতান্তই তাত্ত্বিকভাবে রাজনীতিক অথবা তাত্ত্বিক নেতা। জাতিবর্ণে তিনি হীন, অথচ শক্তি, শীল এবং দৃঢ়তায় তিনি ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠকেও অতিক্রম করেন। অন্যায়ের সঙ্গে তিনি কখনও আপোস করেন না। তিনি যেহেতু মন্ত্রী, অতএব রাজার হিত তাঁকে উচ্চারণ করতেই হবে, নইলে তিনি ধর্ম থেকে চ্যুত হবেন—ঠিক এই ভাবনা থেকেই বিদুরের চরিত্র প্রসারিত; অথচ কী অদ্ভুত দেখুন, যে ধৃতরাষ্ট্রকে তিনি প্রায় সারা জীবন হিতের কথা বলে গেলেন, সেই ধৃতরাষ্ট্র কিন্তু বিদুরের কথা শুনে চলেননি, এমনকী মাঝেমধ্যে তিনি বিদুরের সঙ্গে তঞ্চকতাও করেছেন। আর তিরস্কার! সে তো ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন, কর্ণ—সকলেই সময়ান্তরে, মাঝে-মাঝেই বিদুরকে করে গেছেন কর্তব্যের মতো। এতৎসত্ত্বেও ব্যাসের এই হৃদয়জাত পুত্রটি জ্যেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্রকে কখনও ত্যাগ করে যাননি এবং প্রত্যেক বিপন্ন মুহূর্তে তাঁর পাশে থেকেছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন। বিদুর-চরিত্রের মহিমা এইখানেই।

চরিত্রগত দিক দিয়ে ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম-বিদুরের চেয়ে একেবারেই পৃথক। স্বার্থান্ধতা, স্নেহান্ধতা এবং সর্বোপরি সিংহাসনের সার্থক উত্তরাধিকারী না হওয়ার আক্ষেপ ধৃতরাষ্ট্রকে চিরকাল আকুল করেছে। এই নিরিখে ভীষ্ম-বিদুরের পাশে তাঁর স্থান হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তিনি অন্ধ রাজা এবং তারও ওপরে তিনি ব্যাসের ঔরসজাত জ্যেষ্ঠ পুত্র। ন্যায়-নীতি এবং সত্য তিনি বোঝেন না, তা নয়। তিনি বোঝেন এবং যথেষ্টই বোঝেন, তবুও নিজের অক্ষম জীবনের অপ্রাপ্য রাজপদবি অনুপযুক্ত স্বার্থান্বেষী পুত্রের ওপর ন্যস্ত করতে চেয়ে তিনি স্নেহান্ধতার পরিচয় দিয়েছেন, এই পরিচয় আমাদের চেনা। ব্যাস দেখাতে চেয়েছেন—শারীরিক অন্ধতা নয়, যে অন্ধতা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে অতিক্রম করে, যে অন্ধতা প্রজ্ঞাচক্ষু ধৃতরাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা ব্যাহত করে—সেই অন্ধতা কখনও প্রজাকল্যাণের আধার হতে পারে না। জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যে মোহ আমাদের গ্রাস করে, শুভ চৈতন্য থাকা সত্ত্বেও যে স্বার্থৈষণা আমাদের অন্ধ করে রাখে, ধৃতরাষ্ট্র সেই বিষামৃতের মিলনাধার।

আমরা পূর্বে যে দ্বিতীয় মানের চরিত্রের কথা বলেছি—সে চরিত্র আছে এবং থাকবে, কিন্তু সেই চরিত্রের বিপদ-নির্দেশ হল এইরকম যে, সে তার নিজস্ব জীবনের গুণ এবং বঞ্চনার মাধমে এমন একটা প্ররোচনা তৈরি করে, যাতে মনে হয় তাঁর মধ্যে গ্রহণীয়তা ছিল, মান্যতা ছিল। বৃহৎ জলাধারের তীরস্থিত শান্ত পর্বতের ছায়া জলাধারের মধ্যে প্রতিবিম্বিত হলে, সেই ঝিলিমিলি ছায়া যেমন পর্বতের রূপ অনুকরণ করে, দ্বিতীয় মানের চরিত্রের মধ্যেও সেই শুভ, ভদ্র নীতি-নিয়মের অনুকার থাকে—তাতে তার ওপরে আমাদের মায়া হয়, মমতা হয়, কিন্তু তবু সে সত্য নয়, সে শান্ত পর্বত নয়, সে পর্বতের ছায়ামাত্র। ধৃতরাষ্ট্র চরিত্র এই ভ্ৰম-সংশোধনের রূপায়ণ। মহাভারতের পাঠক যাতে বোঝেন—দ্বিতীয় মানের চরিত্রের মধ্যে জগৎ ও জীবনের যে অনুকৃতি থাকে, তা দেখতে ভাল লাগলেও, তার প্রতি মায়া-মমতা হলেও সে প্রশ্রয়যোগ্য নয়। এমন যে ধৃতরাষ্ট্র, যিনি ঋষি ব্যাসের ঔরসজাত পুত্র, তাঁর মধ্যে ব্যাস-প্রণোদিত শুভবুদ্ধি আছে, কিন্তু স্বার্থের তাড়নায় সেই শুভ-বুদ্ধি তিনি ধরে রাখতে পারেন না, তিনি বিচলিত হন, ঠিক যেমন শান্ত পর্বতের অনুকারিণী ছায়া আপন জীবনাধার জলের মধ্যে বাইরের হাওয়ায় বিচলিত হয়। দ্বিতীয় মানের এই চরিত্রের কাজ প্রথম মানের সত্য চরিত্রগুলিকে প্রতিতুলনায় আরও প্রকট করা। সেই কারণে এই সংকলনে ভীষ্ম-বিদুরের পাশে ধৃতরাষ্ট্রেরও স্থান হয়েছে।

দ্রোণাচার্য এবং কৃপাচার্য—এরা দুজনেই হস্তিনাপুরের রাজবাড়ির কোনও পরম্পরাপ্রাপ্ত পুরুষ নন। কৃপাচার্য যদিও বা শিশুকাল থেকেই রাজবাড়ির ছত্রছায়ায় মানুষ হয়েছেন, কিন্তু দ্রোণাচার্য কুরুবাড়িতে এসেছেন অনেক পরে। যদিও পাঞ্চাল দ্রুপদের ওপর প্রতিহিংসা মেটাতে তিনি কুরুবাড়িতে অস্ত্রাচার্যের পদ অঙ্গীকার করেন, তবু এটা লক্ষণীয় যে, প্রতিহিংসা মিটতেই দ্রোণাচার্য কিন্তু অন্য মানুষ হয়ে যান। কুরুবাড়িতে তাঁর এতটাই প্রতিষ্ঠা ঘটে যে, বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে এমনটাই ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মনে হয়—তিনি গুরুরও অধিক শ্রদ্ধায় প্রতিষ্ঠিত। ভীষ্ম, বিদুর এমনকী ধৃতরাষ্ট্রও তাঁকে সেই শ্রদ্ধাতেই দেখেছেন। গুরু হিসেবেও দ্রোণাচার্যের মধ্যে সেই বাৎসল্য ছিল, যাতে কৌরব-পাণ্ডবের প্রতি তিনি সমদৃষ্টি রেখে চলেছেন। কিন্তু এই সমদৃষ্টির ব্যত্যয় ঘটেছে ন্যায়-নীতির প্রতি দ্রোণাচার্যের পক্ষপাতে। তিনি কুরুবাড়ির অন্ন-বৃত্তি লাভ করেছেন, ফলে হস্তিনাপুরের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন, কিন্তু এই জীবনদান সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে বিরুদ্ধপক্ষ পাণ্ডবদের প্রতি তাঁর দুর্বলতা চিরবিদিত ছিল এবং এই দুর্বলতা ধর্ম-ন্যায়-নীতির জন্যও বটে।

এই গ্রন্থে সংকলিত চরিত্রগুলির পাশে কৃপাচার্য নিতান্তই অনুজ্জ্বল। কিন্তু তবুও তাঁর চরিত্র যে শেষপর্যন্ত লিখেছি, তার কারণ তিনি ভীষ্ম-দ্রোণের অনুষঙ্গী চরিত্র। তিনি ভীষ্মও নন, দ্রোণও নন, কিন্তু মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের অনেক আগে প্রায় ভীষ্মের সমসাময়িক কালে হস্তিনাপুরের রাজবাড়িতে তাঁর প্রবেশ ঘটেছে এবং যুধিষ্ঠির মহাপ্রস্থানের আগে তাঁর ওপরে কুমার পরীক্ষিতের ভার দিয়ে রাজধানী ছেড়ে যান। এই যে এতটা কাল ধরে পরজীবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি হস্তিনাপুরের সঙ্গে জড়িয়ে রইলেন, এই বিশাল সময়টাই বুঝি তাঁকে চিরজীবিতা দিয়েছে। আর সেই কারণেই ভীষ্ম-দ্রোণ-কৃপ—এই বৃদ্ধত্রয়ীর একত্র প্রাবাদিক উচ্চারণ আমরা অস্বীকার করতে পারিনি। কৃপের কথা একটুও না লিখলে ভীষ্ম-দ্রোণের বৃত্তটুকুই সম্পূর্ণ হয় না।

পরিশেষে ব্যাস, সত্যবতী-হৃদয়নন্দনো ব্যাসঃ। ব্যাস মহাভারতের কবি, মহাভারতের বক্তা। প্রসিদ্ধ কুরুবংশের ইতিহাস রচনা করার পিছনে এই প্রেরণাও হয়তো কাজ করে থাকবে যে, এই ইতিহাসের তিনিও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাণ্ডবের কৌরবের এক পিতামহ নয়, দুই পিতামহ। একদিকে ভীষ্ম, যিনি কৌরবগৃহের সাক্ষাৎ গৃহস্থ হয়েও সন্তান-পরম্পরা তৈরি করলেন না। অন্য জন ব্যাস, যিনি সন্ন্যাসী ঋষি হয়েও মায়ের আদেশে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কুরুবাড়ির সন্তান-সাধনার সিদ্ধি দান করলেন। ক্ষেত্রজ পুত্রের পিতা বলে হয়তো সরাসরি তিনি কুরুবাড়ির শাসনতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন, কিন্তু পাণ্ডব-কৌরব—সকলেরই বিপন্ন মুহূর্তগুলিতে ব্যাসকে উপস্থিত হতে দেখেছি। কুরুবাড়িতে সন্তান-ন্যাসের সূত্রে এই রাজবাড়ির ওপর তাঁর যে মায়াটুকু তৈরি হয়েছিল, তাতে তাঁর পারাশর্য্য ঋষিত্ব কতটুকু আহত হয়েছিল, আমরা জানি না, কিন্তু এতে তাঁর নব-রস-রুচিরা কবিত্ব-শক্তি যে বেড়েছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

শাস্ত্রে কাব্যে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস ঈশ্বরের অন্যতম অবতার হিসেবে চিহ্নিত। অন্তত তাঁর মধ্যে সেই বিভূতিময় সত্ত্ব অবশ্যই আছে, যাতে তাঁকে পরম ঈশ্বরের অংশসম্ভব তেজ বলেই মনে হয়। এই তেজ তাঁর কবিত্বের, এই তেজ ধর্মের। ধর্মস্থাপনার সঙ্গে কবিত্বের তেজ মিশে যাওয়ায় ব্যাসের অন্তর্গত হৃদয় যতখানি সূর্যের মতো দীপক, ততখানিই চন্দ্রের মতো আহ্লাদক। কেউ তাঁর করুণা থেকে বঞ্চিত নন। সূর্য-চন্দ্র যেমন একই সঙ্গে পণ্ডিত এবং চণ্ডালের ঘরে আলোক বিতরণ করে, তেমনই ভারতবর্ষের জাতি-বর্ণ-বিবর্ণ সমাজ ব্যাসের প্রসন্নতায় একাকার হয়ে গেছে। সূত-শূদ্র-ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ মহাভারতের সমাজে এতই মেশামিশি করেছে যে, মহাভারতের পরিণতি-পর্বে সেই প্রসন্ন-গম্ভীর-পদা সরস্বতীর উচ্চারণ শুনতে পাই ব্যাসের মুখে—ন মানুষাৎ শ্রেষ্ঠতরং হি কিঞ্চিৎ—মানুষ, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই।

সমগ্র মহাভারত জুড়ে তাই মানুষের ধর্ম কথিত হয়েছে। ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ—সমস্ত মানুষের ভাবনা, চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা এবং প্রাপ্তির সব এই চারটি বর্গের মধ্যেই আবর্তিত হয়। ব্যাস এমন করেই ভরত-বংশের বৃহদ্‌-ইতিহাস রচনা করেছেন, যাতে প্রত্যেক মানুষ তার জীবনের স্বতোবিভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং প্রাপ্তির আদর্শ খুঁজে পাবেন মহাভারতে। যা কিছুই আমরা চাই, অথবা চাই না, অথবা চাওয়া উচিত নয়, যা কিছুই আমরা পাই, অথবা পাই না, অথবা পাওয়া উচিত নয়—তার সবটাই রূপ-রস-স্পর্শ-গন্ধ-শব্দের কাহিনী-তন্ময়তায় ধারণ করে ব্যাস পরম নির্লিপ্ততায় সেই কাহিনীর পাশাপাশি হেঁটে গেছেন। কখনও তিনি কাহিনীর মধ্যে সশরীরে ঢুকে পড়ছেনও, তার পরের মুহূর্তেই কাহিনীর পাশাপাশি ঋষির পরিব্রাজন।

এমন একটি চর্মাম্বর কৃষ্ণবর্ণ মানুষের চরিত্র আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে পরম কৌতূহলপ্রদ মনে হয়েছে। আমি এখানে ব্যাসকে কবি হিসেবে দেখিনি, মহাভারতের মধ্যে মহাকাব্যিক নৈপুণ্য অথবা তাঁর ‘বৈদগ্ধ্য-ভঙ্গী-ভণিতি’ নিয়েও আমার কোনও মাথা-ব্যথা নেই। মহাভারতের টুকরো টুকরো ঘটনা এবং তাঁর বক্তব্য থেকে আমি শুধু মানুষ ব্যাসকে দেখতে চেয়েছি, যিনি ঋষি হয়েও মায়ের ডাক শুনে আসেন, স্নেহে আবিল হন, ভালবাসেন, বকেন, সান্ত্বনা দেন, আর সবার শেষে বলেন—মানুষের থেকে বড় কিছু নেই—ন মানুষাৎ শ্রেষ্ঠতরং হি কিঞ্চিৎ।

এই সংকলনের প্রত্যেকটি চরিত্র-রচনা বিভিন্ন বৎসরে পূজার উপচার হিসেবে সজ্জিত হয়েছিল। উপচারিকা ছিলেন কাকলি চক্রবর্তী। পূজার বেদি ছিল বর্তমান পত্রিকার পুজোসংখ্যা। একমাত্র কৃপাচার্যের স্থান হয়েছিল বর্তমান পত্রিকার ধারাবাহিক রবিবাসরে। এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছেন সমীর সরকার। প্রচ্ছদখানি দেখার পর আমার মুগ্ধ অভিনন্দন না জানিয়ে পারিনি—প্রবীণতা-প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এমন রাজভাবও ব্যঞ্জনায় প্রতিষ্ঠা করাটা মহাকাব্যিক চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ছিল।

গ্রন্থ প্রকাশিত হলেই যাঁদের কথা স্মরণে আসে তাঁরা তাঁরাই—যাঁরা আমাকে ভালবাসেন, স্নেহ করেন এবং আমার ত্রুটিগুলি ক্ষমা করেন। আমার প্রথম লেখাটি যেদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, তখন আমার বয়স ছিল একত্রিশ বছর। আর এই সংকলন যখন পুস্তকাকারে বেরোচ্ছে, তখন আমার বয়স একান্ন বছর। এই কুড়ি কুড়ি বছরের পারে এসেও যাঁরা আমাকে ভালবাসেন, স্নেহ করেন এবং ত্রুটিগুলি ক্ষমা করেন, তাঁদের আমিও ভালবাসি, স্নেহ করি এবং তাঁদের কাছে অনুগৃহীত বোধ করি। যতটা বয়স হয়েছে, তাতে নিজেকে বৃদ্ধ মনে করি না বটে, তবে বৃদ্ধত্বের চর্চা করি এবং সেই চর্চাতে কর্ম, কর্মফল, লেখা, লেখার ফল নিয়ে তেমন আর মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হয় না। এখন যা কিছুই হয় না বা ঘটে না, সেখানেই ঈশ্বরেচ্ছা নেই বলে মনে হয়। আর যা কিছুই ভাল হয় বা শুভ হয়—যেমন এই গ্রন্থ পড়ে কেউ যদি সুখী হন—তবে সেটা ঈশ্বরের করুণা বলে মনে হবে। অতএব আমার পরম উপাস্য দেব কৃষ্ণের প্রতি প্রণাম—বন্দে বৃন্দাবনস্থং যুবতিশতবৃতং ব্রহ্মগোপালবেশম্‌—তিনি বর্তমান লেখকের সঙ্গে অখিল পাঠককুলের সমান-হৃদয়তা বিধান করুন।

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

সূচি

  1. ব্যাস দ্বৈপায়ন
  2. ভীষ্ম
  3. দ্রোণাচার্য
  4. কৃপাচার্য
  5. ধৃতরাষ্ট্র
  6. বিদুর

Book Content

ব্যাস দ্বৈপায়ন 6 Topics
Lesson Content
0% Complete 0/6 Steps
ব্যাস দ্বৈপায়ন – ১
ব্যাস দ্বৈপায়ন – ২
ব্যাস দ্বৈপায়ন – ৩
ব্যাস দ্বৈপায়ন – ৪
ব্যাস দ্বৈপায়ন – ৫
ব্যাস দ্বৈপায়ন – ৬
ভীষ্ম 5 Topics
Lesson Content
0% Complete 0/5 Steps
ভীষ্ম – ১
ভীষ্ম – ২
ভীষ্ম – ৩
ভীষ্ম – ৪
ভীষ্ম – ৫
দ্রোণাচার্য 8 Topics
Lesson Content
0% Complete 0/8 Steps
দ্রোণাচার্য – ১
দ্রোণাচার্য – ২
দ্রোণাচার্য – ৩
দ্রোণাচার্য – ৪
দ্রোণাচার্য – ৫
দ্রোণাচার্য – ৬
দ্রোণাচার্য – ৭
দ্রোণাচার্য – ৮
কৃপাচার্য
ধৃতরাষ্ট্র 12 Topics
Lesson Content
0% Complete 0/12 Steps
ধৃতরাষ্ট্র – ১
ধৃতরাষ্ট্র – ২
ধৃতরাষ্ট্র – ৩
ধৃতরাষ্ট্র – ৪
ধৃতরাষ্ট্র – ৫
ধৃতরাষ্ট্র – ৬
ধৃতরাষ্ট্র – ৭
ধৃতরাষ্ট্র – ৮
ধৃতরাষ্ট্র – ৯
ধৃতরাষ্ট্র – ১০
ধৃতরাষ্ট্র – ১১
ধৃতরাষ্ট্র – ১২
বিদুর 2 Topics
Lesson Content
0% Complete 0/2 Steps
বিদুর – ১
বিদুর – ২
লেখক: নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীবইয়ের ধরন: প্রবন্ধ ও গবেষণা
কলিযুগ - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

কলিযুগ – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

চৈতন্যদেব - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

চৈতন্যদেব – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

কৃষ্ণা কুন্তী এবং কৌন্তেয় - নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

কৃষ্ণা কুন্তী এবং কৌন্তেয় – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

পুরাণী

পুরাণী – নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.