বিদুর – ১

॥ ১ ॥

ভেবেছিলাম—আমি যখন পরিণত বৃদ্ধটি হব, তখন আমি বিদুরের চরিত্র লিখব। যখন পক্ক কেশ, জীর্ণ দন্ত, ন্যুব্জ দেহ আমার ইন্দ্রিয়বৃত্তি এবং বিষয়বাসনা রোধ করবে, ভেবেছিলাম—সেইদিন আমি বিদুরের চরিত্র লিখব। মৃত্যুপথযাত্রীর শবদেহ অগ্নিসাৎ করার পর গঙ্গার ধারে দাঁড়ালে যে মন্ত্র শুনতে পাওয়া যায়—ভাই-বন্ধু, দারা-সূত কেউ আর তোমার এই পথের সঙ্গী নয়, তোমার সাথের সাথী হয়ে এখন যে তোমার সঙ্গে যাচ্ছে, সে হল শুধু ধর্ম—ঠিক এই মন্ত্র শোনার পর মনের মধ্যে যে বৈরাগ্য আসে, ভেবেছিলাম—সেই বৈরাগ্য এলে আমি বিদুরের চরিত্র লিখব। বাংলাদেশের হতদরিদ্র বৈষ্ণবের বাড়িতে বৈষ্ণব সমাগম হলে হঠাৎ হঠাৎ একটি সাধারণ দিন উৎসবে রূপান্তরিত হয়। সেইরকম একটি দিনে সকালবেলার বাল্যভোগে খুদকুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা জাউ গোপালের ভোগে লেগেছিল। ভেবেছিলাম—আবার যদি তেমন দিন আসে, যেদিন একাসনে বৈষ্ণবদের সঙ্গে বসে খুদের জাউ প্রসাদ পাব, সেইদিন অন্তঃকরণ শুদ্ধ করে পুবমুখো হয়ে বসে বিদুরের চরিত্র লিখব।

কিন্তু হল না। সেসব কিছুই হল না। বৃদ্ধত্বের পরিণতি, বৈরাগ্য, শুদ্ধতা অথবা সত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যেসব আন্তর গুণ লাগে, সেইসব আন্তর গুণ আমার মধ্যে সঞ্জীবিত হবার আগেই পরম ক্রোধিত হয়ে আমি বিদুরের চরিত্র লিখতে বসেছি। কেননা, সত্ত্ব, শুদ্ধতা, বৈরাগ্য ইত্যাদি আন্তর গুণ যদি সত্যিই একদিন আমাকে ধীরপ্রশান্ত করে তোলে, তবে আমার মধ্যে যে ক্ষমাবৃত্তির সঞ্চার ঘটবে, তাতে আমি সেইসমস্ত অধম ব্যক্তিকে ক্ষমা করে ফেলব—যাঁরা শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আপন মনোবিকারে বিদুরের মতো মহান চরিত্রকে কলুষিত করে গেলেন।