০৪. বেলজিয়ান ভদ্রলোকেরা

গ্রামের মধ্যে যে বাড়িটাতে বেলজিয়ান ভদ্রলোকেরা আশ্রয় নিয়েছিলেন সেটা জনদের বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। আমি পোয়ারোর খোঁজে চললাম। বাড়িটার কাছাকাছি আসতেই মিঃ ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে দেখা হল। উনি খুব হন্তদন্ত হয়ে আসছেন। ভেবে অবাক হলাম বাড়িতে এরকম একটা অঘটন ঘটে গেল কিন্তু ভদ্রলোক এতক্ষণ কোথায় ছিলেন।

আমাকে দেখেই উনি আক্ষেপের সুরে বললেন তার স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদটা তিনি এইমাত্র পেয়েছেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম তিনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন। ভদ্রলোক বললেন তিনি ডেনবীর বাড়িতে ছিলেন। কথা বলতে বলতে রাত একটা বেজে গিয়েছিল, ডেনবী তাকে কিছুতেই ছাড়ছিল না। তারপর ল্যাচকিটা আনতেও তিনি ভুলে গেছিলেন সেজন্য ডেনবীর বাড়িতেই রাত কাটিয়েছেন।

এবার, তিনি খবরটা কার কাছে পেলেন জানতে চাইলাম। মিঃ ইঙ্গলথর্প বললেন ডাঃ উইলকিন্স ডেনবীকে খবরটা দিয়েছেন। তারপর মিসেস ইঙ্গলথর্প যে কী ভাল ছিলেন সেসব বলতে লাগলেন, আবার একথাও বললেন তার স্ত্রী বলে তিনি এসব বলছেন না ভদ্রমহিলা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

আমার মনটা বিষিয়ে উঠল। এত ভণ্ডামি সহ্য হচ্ছিল না, তাড়া আছে বলে আমি বিদায় নিলাম।

একটু পরে লিস্টওয়েজ কুটিরের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিলাম। এই বাড়িতেই পোয়ারো থাকে। কিছুক্ষণ কোনো সাড়া পেলাম না দেখে আবার দরজায় শব্দ করলাম। এবার পোয়ারো দরজা খুলল। আমাকে দেখে সে বেশ আশ্চর্য হয়েছে বলেই মনে হল।

ঘরের ভেতর ঢুকে তাকে জানালাম আমার আসার কারণটা। পোয়ারো আমার কথা শুনতে শুনতে পোশাক পরে তৈরি হয়ে নিল।

আমি ওকে একে একে সব বললাম–কিভাবে আমার ঘুম ভাঙল, মিসেস ইঙ্গলথর্পের শেষ কথা, তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতি, ওদের দুজনের আগের দিনের ঝগড়া, মেরী ক্যাভেণ্ডিসের সঙ্গে তার শাশুড়ির কথোপকথনের কথাগুলো বললাম। এমনকি, মিসেস ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে ইভিলিন হাওয়ার্ডের ঝগড়ার কথা এবং যাওয়ার আগে ইভিলিন আমাকে যে সতর্কবাণী দিয়েছিল তা বললাম।

তবে সব কথাগুলো ঠিকমত গুছিয়ে বলতে পারলাম না। পোয়ারো আমাকে বলল অত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই, ধৈর্য ধরে শান্তভাবে ঘটনাগুলো এবার বিশ্লেষণ করতে হবে। যেগুলি প্রয়োজীয় সূত্র শুধু সেগুলিকেই মনে রাখতে হবে আর বাকীগুলো ভুলে যেতে হবে। সে জানতে চাইল তার কথা আমি বুঝতে পেরেছি কিনা। আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।

এবার পোয়ারো হঠাৎ আমাকে বলল আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের কথা বলতে ভুলে গেছি। আমি বললাম সব কথাই তো জানিয়েছি। পোয়ারো বলল গতকাল রাত্রে মিসেস ইঙ্গলথর্প ভালো করে খেয়েছেন কিনা সেকথা আমি তাকে জানায়নি।

আমি বললাম যে আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। পোয়ারো আমাকে চিন্তা করে দেখতে বলল। আমি একটু ভেবে দেখলাম যতদূর মনে পড়ছে উনি বিশেষ কিছুই খাননি।

পোয়ারো এবার দেরাজ খুলে ওর হাতব্যাগটা নিয়ে বলল যে ও যাবার জন্য তৈরি।

আমরা রওনা হলাম। বাড়ির দরজার কাছে এসেই পোয়ারো থমকে দাঁড়ালো, বলল বাগানে ফুলগুলো কি সুন্দরভাবে ফুটে আছে অথচ বাড়ির মানুষগুলো কত শোকার্ত।

পোয়ারো কি জানতে চাইছিল জানি না, তবুও মনে হল সত্যিই কি সকলে দুঃখে শোকে ভেঙে পড়েছে। মিসেস ইঙ্গলথর্পের মৃত্যুতে সকলের আঘাত লেগেছে হয়ত, কিন্তু সত্যিই শোকার্ত বোধহয় কেউ নয়। কারণ, ওঁর সঙ্গে তো কারও রক্তের সম্পর্ক ছিল না–উনি জন ও লরেন্সের নিজের মা তো ছিলেন না।

কিছুক্ষণ চুপচাপ পোয়ারো পায়চারি করল।

আমার হঠাৎ মনে পড়ল মিসেস ইঙ্গলথর্পের গত রাত্রে কফি খেতে দেওয়া হয়েছিল। কথাটা পোয়ারোকে বললাম। পোয়ারো জানতে চাইল কটার সময় কফি পরিবেশন করা হয়।

আমি বললাম প্রায় আটটার সময়।

পোয়ারো বলল তাহলে ভদ্রমহিলা কফিটা পান করেন আটটা থেকে সাড়ে আটটার সময়। মিসেস ইঙ্গলথর্প যে মারা গেছেন তার কারণ সম্ভবতঃ কফির মধ্যে দিয়ে স্ট্রিকনিন তার শরীরে গেছে। এখন কথা হল, স্ত্রিকনিন অতি মারাত্মক বিষ এবং খুব দ্রুত কাজ করে। ঐ বিষ শরীরে প্রবেশ করলে প্রায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল এই যে, মিসেস ইঙ্গলথর্পের ক্ষেত্রে সেটা পরদিন ভোর পাঁচটার সময় প্রকাশ পেল। তবে ঐ বিষ পান করার আগে বা পরে প্রচুর আহার করল বিষের উপসর্গ দেরিতে দেখা দেয়, তাই বলে এত দেরি কখনই নয়। আবার ভদ্রমহিলা গত রাত্রে কোনো ভারী খাবারও খাননি। তাহলে বিষের লক্ষণ এত দেরিতে দেখা গেল কেন? যাই হোক ময়না তদন্তে হয়ত কিছু জানা যেতে পারে–একথা বলে পোয়ারো মাথা নিচু করল।

এমন সময় জন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। তাকে খুব অবসন্ন দেখাচ্ছিল। সে পোয়ারোকে বলল যাতে এ ব্যাপারে বেশি জানাজানি হয়। এই বলে সে মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরের চাবি দুটো আমার হাত দিয়ে পোয়ারো যা যা দেখতে চায় তা দেখাতে বলল।

এবার আমরা দুজনে ঐ ঘরটাতে গেলাম। পোয়ারো ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল। তারপর মনোযোগ সহকারে ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করল। আমাকে চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল আমি কেন ওভাবে দাঁড়িয়ে আছি। আমি মনের কথাটা বলেই ফেললাম–পাছে পায়ের ছাপটাপ নষ্ট হয়ে যায় এজন্য আমি দাঁড়িয়ে আছি।

পোয়ারো আমার কথা শুনে হেসে ফেলল, বলল এ ঘরে কি কোনো লোক ঢুকেছে, সুতরাং এসব চিন্তা না করে চারদিকে ভালো করে দেখতে বলল। তারপর আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

টেবিলের ওপর চাবি লাগানো একটা ছোট্ট হাল্কা গোলাপী রঙের হাতব্যাগের ওপর পোয়ারোর নজর পড়ল, চাবিটা খুলে আমার হাতে দিল পোয়ারো। ছোট ইয়েল তালার চাবি সেটা, কোনো বিশেষত্ব আমার নজরে এল না। শুধু দেখলাম গর্তটাতে একটু তার জড়ানো।

এরপর পোয়ারো ভাঙা দরজাটা পরীক্ষা করতে লাগল, যেটা ভাঙা হয়েছিল ঘরে ঢোকার জন্য। ওটাতে যে চাবি দেওয়া ছিল, সম্ভবতঃ সেই ব্যাপারে সে নিশ্চিত হতে চাইছিল। উল্টোদিকে সিনথিয়ার ঘরের দরজাটাও বার বার খুলে দেখল। একটু পরে একটা চিমটে দিয়ে দরজার তালার মধ্যে থেকে কিছু টেনে বের করল পোয়ারো, তারপর খুব সযত্নে সেটাকে একটা খামের মধ্যে রেখে দিল।

এরপর এক এক করে দেরাজগুলো টেনে বের করল পোয়ারো। একটা দেরাজে দেখলাম একটা পাত্র রয়েছে, একটা স্পিরিট ল্যাম্প আর ছোট সসপ্যান রয়েছে। সসপ্যানের মধ্যে রয়েছে কিছু গাঢ় রঙের তরল পদার্থ। কাছেই একটা খালি কাপ আর রেকাবি রয়েছে।

এই জিনিষগুলো কেন আমার নজরে এল না ভেবে নিজের ওপর ভীষণ রাগ হল। দেখলাম পোয়ারো ঐ তরল পদার্থের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে জিভে লাগালো, বলল কোকোর সাথে একটু রাম মেশানোই আছে বলে মনে হচ্ছে।

এবার ঘরের মেঝের দিকে নজর দিল সে। বিছানার কাছে একটা টেবিল উল্টে পড়ে আছে–একটা টেবিল ল্যাম্প, কিছু বই, দেশলাই, একগোছ চাবি আর একটা কফির কাপের ভাঙা টুকরো চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে।

পোয়ারো বলে উঠল ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্যজনক। আমি কি হয়েছে জানতে চাইলাম। পোয়ারো বলল চিমনির কঁচটা মাটিতে পড়ে দুটুকরো হয়ে গেছে, কিন্তু কফির কাপটা একেবারে গুঁড়িয়ে আছে।

আমি বললাম কেউ মনে হয় ওটাকে মাড়িয়ে দিয়েছে। পোয়ারো বলল সত্যিই কেউ কাপটা মাড়িয়ে দিয়েছে একেবারে গুঁড়ো করে দেবার জন্য। হয়ত ওটার মধ্যে স্ত্রিকনিন ছিল আবার হয়ত বা ওটাতে আদৌ স্ট্রিকনিন ছিল না।

ব্যাপারটা আমার ঠিক বোধগম্য হল না। কিন্তু এই মুহূর্তে পোয়ারোকে কিছু প্রশ্ন করা বৃথা, কোনো কথাই সে এখন বলবে না দেখলাম, পোয়ারো আবার অনুসন্ধান শুরু করেছে। মেঝে থেকে চাবির গোছাটা তুলে নিয়ে দুএকটা চাবি পরীক্ষা করে শেষে একটা চাবি দিয়ে গোলাপী হাতব্যাগটা খুলে ভেতরে দু একবার নজর বুলিয়ে আবার বন্ধ করে দিয়ে চাবির গোছাটা পকেটে চলান করল এবার।

হাত ধোয়ার বেসিনের দেরাজগুলো খুব সতর্কভাবে পরীক্ষা করল সে। তারপর বাঁদিকের জানলার কাছে এগিয়ে গেল, মেঝের কার্পেটে একটা গাঢ় বাদামী রঙের দাগ ওর নজের পড়ল। গন্ধশোঁকার একটু চেষ্টাও করল পোয়ারো।

শেষ পর্যন্ত একটা টেস্ট টিউবে কিছু কোকো ঢেলে মুখটা বন্ধ করে একটা ছোট খাতা বের করল পোয়ারো। এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল এই ঘরটা থেকে সে ছটা সূত্র পেয়েছে।

আমি তাকে এক এক করে সেগুলো বলতে বললাম। পোয়ারো বলতে শুরু করল–প্রথমতঃ গুঁড়িয়ে যাওয়া একটা কফির কাপ; দ্বিতীয়ত তালায় চাবি দেওয়া হাতব্যাগ; তৃতীয়ত মেঝের ঐ দাগটা।

আমি বাধা দিয়ে বললাম দাগটা তো অনেক পুরনো হতে পারে। পোয়ারো বলল, দাগটা এখনও ভিজে রয়েছে। তা থেকে কফির গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে সুতরাং দাগটা একেবারে টাটকা।

সে আবার বলতে লাগল–চতুর্থতঃ এক-টুকরো গাঢ় সবুজ রঙের কাপড়ের ছেঁড়া টুকরো যেটা সে খামের মধ্যে রেখেছে। পঞ্চমতঃ মেঝের টেবিলের পাশে পড়ে থাকা মোম। সেদিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে পোয়ারো বলল মোেমটা গতকাল পড়েছে বলে তার মনে হয়। আমি বললাম তাই হবে, কারণ গতকাল যা অবস্থা গেছে, মিসেস ইঙ্গলথর্প হয়ত নিজেই বাতিটা মেঝেতে ফেলে দিয়েছেন। আবার এও হতে পারে লরেন্স গতকাল ঐ সময় যে বাতি হাতে ঘরে ঢুকেছিল–এটা সেটা হতে পারে।

পোয়ারো বলল এটা লরেন্সের বাতি নয়, লরেন্স যেটা এনেছিল সেটা গোলাপী রঙের আর এটা সাদা রঙের। আর মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে কোনো বাতি ছিল না, শুধু ঐ ল্যাম্পটা ছিল।

এরপর ছনম্বর সূত্রটা কি জিজ্ঞাসা করতে পোয়ারো বলল সেটা এখন সে বলবে না।

ঘরের চতুর্দিকে শেষবারের মত চোখ বুলিয়ে নিয়ে পোয়রা তাপচুল্লীটা দেখতে গেল। ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসে, পোয়ারো তাপচুল্লীর ছাই উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে হঠাৎ আমার কাছে চিমটেটা চাইল।

চিমটেটা ওর হাতে দিতেই খুব সাবধানে তাপচুল্লীর ছাইয়ের মধ্যে থেকে পোয়ারো আধ পোড়া এক টুকরো কাগজ টেনে বের করল। কাগজটা নিয়ে ভাল করে লক্ষ্য করতেই চোখে পড়ল কাগজটায় দুটো ইংরেজী হরফ–এল আর এবং লেখা। কাগজটা সাধারণ কাগজ অপেক্ষা বেশ পুরু।

হঠাৎ একটা কথা মনে উঁকি দিল, পোয়ারোকে বললাম কাগজটা উইলের ছেঁড়া অংশ নয়। তো, পোয়ারো শান্তভাবে জানাল আমরা ধারণা ঠিক। পোয়ারোর শান্তস্বর শুনে আমি হতবাক হলাম। পোয়ারো বলল সে এরকমই একটা কিছু পাবে বলে আশা করেছিল।

কাগজের টুকরোটা আমি পোয়ারোর হাতে ফিরিয়ে দিতেই সেটাকে যত্ন করে সে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম উইলটা কে পোড়ালো।

পোয়ারোর ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে মিঃ ইঙ্গলথর্পের ঘরে ঢুকলাম। পোয়ারো চারদিকে গভীর মনোযোগ সহকারে তাকালো। একটু পরে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমরা মিঃ ও মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘর দুটোর দরজাই বন্ধ করে দিলাম।

পোয়ারো বলল সে ডরকাসকে কিছু প্রশ্ন করতে চায় আর মিসেস ইঙ্গলথর্পের নিভৃত কক্ষটা দেখতে চায়। সেই ঘরে পোয়ারোকে পৌঁছে দিয়ে আমি ডরকাসের খোঁজে গেলাম।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডরকাসকে নিয়ে ফিরে এলাম কিন্তু যে ঘরটাতে পোয়ারো ছিল সেখানে তাকে পেলাম না। পোয়ারোর নাম ধরে ডাকতেই সে সাড়া দিল, দেখলাম জানলার পাশে ফুলগাছের কাছে দাঁড়িয়ে সে ফুলগুলোর তারিফ করছে।

আমি বললাম সে যেন ফুলের প্রশংসা ছেড়ে এই ঘরে আসে কারণ তার কথা মতো ডরকাসকে আমি নিয়ে এসেছি।

একটা ছোট ঘরে ডরকাস অপেক্ষা করছিল। এই বাড়ির পরিচারিকা সে। বয়স হয়েছে চুলে যথেষ্ট পাক ধরেছে। পোয়ারোকে দেখে মনে হল ডরকাসের মন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠল। কিন্তু পোয়ারো কৌশলে ওর মন জয় করে ফেলল।

একটা চেয়ার টেনে পোয়ারো বসে পড়ে ডরকাসকেও বসতে অনুরোধ করল। তারপরই প্রশ্নোত্তরের পালা শুরু হল। পোয়ারো ডরকাসকে জিজ্ঞাসা করল সে তো এই বাড়িতে অনেকদিন আছে তাই না। ডরকাস জানাল প্রায় দশ বছর ধরে সে এখানে আছে। পোয়ারো এবার বলল সে কতকগুলি প্রশ্নের সঠিক উত্তর চায় ডরকাস নিশ্চয়ই সেগুলি জানাবে। এবারে জন ক্যাভেণ্ডিস অনুমতি দিয়েছেন। ডরকাস সম্মতি জানাল।

পোয়ারো বলল প্রথমে সে গতকালের ঘটনার কথা জানতে চায়। মিসেস ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে কারও ঝগড়া হয়েছিল কিনা সে কথা জানতে চাইল। ডরকাস একটু ইতস্ততঃ করতে লাগল। পোয়ারো তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল, বলল মিসেস ইঙ্গলথর্প তো আর ফিরে আসবেন না, কিন্তু কেউ যদি তাকে খুন করে থাকে সেই খুনীকে খুঁজে বের করে যথাযোগ্য শাস্তি দিতে হবে।

এই কথাগুলো শুনেই ডরকাসের মুখটা কঠিন হয়ে উঠল। সে জানাল এই বাড়িতে এমন একজন আছে যার সঙ্গে কারও বনিবনা নেই। উনি এই বাড়িতে আসার পর থেকেই সমস্ত অশান্তির সূত্রপাত।

পোয়ারো মন দিয়ে ডরকাসের কথাগুলো শুনতে লাগল। এবার সে ঝগড়ার ব্যাপারটা জানতে চাইল। ডরকাস বলতে লাগল বিকাল চারটে নাগাদ যখন সে বড় হলঘরটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন সে ঐ ঘরটায় চেঁচামেচি শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন মিসেস ইঙ্গলথর্প মিঃ ইঙ্গলথর্পকে বলছিলেন তিনি তাকে মিথ্যা কথা বলে ঠকিয়েছেন। তাঁর নামে মিথ্যা দুর্নাম ছড়াচ্ছেন। মিঃ ইঙ্গলথর্প উত্তরে কি বলছিলেন তা শোনা যাচ্ছিল না। মিসেস ইঙ্গলথর্প আবার বলতে লাগলেন যে তিনি মনস্থির করেছেন তার কর্তব্য তিনি করবেন। স্বামী-স্ত্রী কলঙ্ক রটবার ভয়ে তিনি কখনই চুপ করে থাকবেন না।

এরপরেই পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে ডরকাস বুঝতে পারে ওঁরা বেরিয়ে আসছেন, তখন সে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে যায়।

পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল মিসেস ইসলথর্প যে মিঃ ইঙ্গলথর্পের সঙ্গে কথা বলছিলেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই তো। ডরকাস জানান সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত।

এরপর কী হল জানতে চাইলে ডরকাস। বলল বিকাল পাঁচটা নাগাদ মিসেস ইঙ্গলথর্প তাকে ডাকেন, সেই সময় তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল। ডরকাসকে তিনি বলতে থাকেন যে তিনি ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। তার হাতে একটা কাগজ ছিল যাতে কিছু লেখা ছিল। লেখাটার দিকে তাকিয়ে উনি বলছিলেন শুধুমাত্র এই কথাগুলোর জন্যই সব পাল্টে গেল। একথাও বললেন যে পুরুষ জাতটা খুব বিশ্বাসঘাতক।

এমন সময় মিসেস ক্যাভেণ্ডিস এসে পড়ায় কথায় ছেদ পড়ল। পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল সেই কাগজটার শেষ পর্যন্ত কী হল। ডরকাস বলল সে এ ব্যাপারে ঠিক জানে না, তবে তার ধারণা সেটা মিসেস ইঙ্গলথর্প তার গোলাপী হাতব্যাগে রেখেছিলেন।

পোয়ারো জানতে চাইল ঐ ব্যাগেই কি মিসেস ইঙ্গলথর্প তাঁর দরকারী কাগজপত্র রাখতেন। ডরকাস জানাল রোজ সকালে উনি সেটা সঙ্গে নিয়ে নামতেন আবার রাত্রে নিয়ে যেতেন। ঐটাতে সব দরকারী কাগজ থাকত।

পোয়ারো প্রশ্ন করল ঐ হাতব্যাগের চাবিটা উনি কবে হারিয়ে ফেলেছিলেন। ডরকাস বলল গতকাল দুপুরে খাওয়ার সময় ওটা হারিয়ে যায়। তারপর অনেক খোঁজাখুঁজি সত্ত্বেও সেটা পাওয়া যায়নি। পোয়ারো তাকে চিন্তা করতে বারণ করল। এরপর ওপরের ঘরে হাতব্যাগে লাগানো যে চাবিটা পোয়ারো পকেটে রেখেছিল সেটা বের করে ডরকাসকে দেখিয়ে জানতে চাইল এটাই সেই চাবি কিনা।

ডরকাস অবাক চোখে পোয়ারার হাতের চাবিটার দিকে তাকিয়ে জানাল এটাই সেই চাবি যা সে অনেক খুঁজেও পায়নি। পোয়ারো বলল চাবিটাতো ডরকাসের পাওয়ার কথা নয় কারণ চাবিটা যেখানে থেকে আজ পাওয়া গেল গতকাল সেখানে ছিল না।

এবার পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল মিসেস ইঙ্গলথর্পের কি কোনো গাঢ় সবুজ রঙের পোশাক ছিল। ডরকাস জানাল যে ঐ রঙের কোনো পোশাক তার গিন্নিমার নেই। বাড়িতে অন্য কারও এরকম পোশাক আছে কিনা পোয়ারো জানতে চাইল। এর উত্তরে ডরকাস বলল সিনথিয়ার একটা পোশাক আছে যার রঙ হালকা সবুজ। এছাড়া অন্য কারও সবুজ রঙের পোশাক নেই।

পোয়ারো কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে প্রশ্ন করল মিসেস ইঙ্গলথর্প কি গতরাত্রে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। ডরকাস দৃঢ় স্বরে জানাল তার গিন্নি মা ওষুধ খাননি। পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিনা। ডরকাস বলল দুদিন আগে মিসেস ইঙ্গলথর্প শেষ পুরিয়াটা খেয়েছিলেন, তারপর আর নতুন ওষুধ আনানো হয়নি। বাক্সটা তাই খালি ছিল।

পোয়ারো এরপর জিজ্ঞাসা করল গতকাল মিসেস ইসলথ ডরকাসকে দিয়ে কোনো কাগজে সই করিয়েছিলেন কিনা। ডরকাস বলল সেরকম কোনো ব্যাপার ঘটেনি। গত সন্ধ্যায় মিসেস ইঙ্গলথর্প কি কোনো চিঠি লিখেছিলেন, একথাও পোয়ারো জানতে চাইল। ডরকাস উত্তরে বলল সে চিঠি লেখার ব্যাপারে কিছুই জানে না কারণ সন্ধ্যাবেলার সে বাইরে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে অ্যানী কিছু জানতে পারে বলে সে জানাল। ডরকাস বলল সে এখন কফির কাপগুলো ধুতে যাবে কারণ অ্যানি কাপগুলো গত রাত্রে ধুয়ে রাখতে ভুলে গেছে।

পোয়ারো হাত তুলে ডরকাসকে থামিয়ে দিয়ে বলল তার একটা অনুরোধ আছে। এখনও যখন কফির কাপগুলো ধোওয়া হয়নি তখন আরও কিছুক্ষণ ওগুলো থাক, সে ওগুলো পরীক্ষা করে দেখতে চায়।

এবার পোয়ারো। দরকাসকে বলল অ্যানিকে পাঠিয়ে দিতে। ডরকাস যাওয়ার আগে পোয়ারো তার কাছ থেকে জেনে নিল কজ মালী বাগানে কাজ করে। ডরকাস জানাল যুদ্ধের আগে পাঁচজন ছিল বর্তমানে তিনজন মাত্র কাজ করে। এই তিনজন হল বুড়ো ম্যানিং, ছোকরা উইলিয়াম আর একটি অল্প বয়সী মেয়ে।

এরপর ডরকাস চলে গেল। আমি মুখ ফসকে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম পোয়ারো কিভাবে জানল মিসেস ইঙ্গলথর্প ঘুমের ওষুধ খেতেন।

পোয়ারো আমার কথা শুনে একটা কার্ডবোর্ডের বাক্স বের করে দেখাল। আমি প্রশ্ন করলাম সে ওটা কোথায় পেল। পোয়ারো জানাল এটাই তার ছনম্বর সূত্র যা সে মুখ ধোয়ার বেসিনের কাছে পেয়েছে।

আমি বললাম ডরকাস কিন্তু জানিয়েছে মিসেস ইঙ্গলথর্প শেষ পুরিয়াটা দুদিন আগে খেয়েছিলেন। সেই অনুসারে ছনম্বর সূত্রটা মূল্যহীন।

পোয়ারো আমাকে বাক্সটা ভালো করে দেখতে বলল। আমি কিন্তু কোনো বিশেষত্ব খুঁজে পেলাম না। এই ব্যাপারটা পোয়ারো বুঝতে পেরে আমাকে লেবেলটা লক্ষ্য করতে বলল। পোয়ারোর কথামতো লেবেলটা ভালো করে দেখলাম, তাতে শুধু লেখা আছে প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমের আগে একটা পুরিয়া : মিসেস ইঙ্গলথর্প।ব্যাপারটা আমি তবুও কিছু বুঝতে পারলাম না।

পোয়ারো আমাকে বুঝিয়ে বলল ঐ বাক্সটার লেবেলে কোনো কেমিস্টের নাম নেই। কিন্তু কোনো কেমিস্ট কখন নামের লেবেল না দিয়ে বাক্স পাঠায় না।

ব্যাপারটা বুঝে আমি বশে উত্তেজনা অনুভব করলাম। পোয়ারো আমাকে চিন্তিত হতে বারণ করল।

এমন সময় পায়ের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলাম অ্যানী এসে গেছে। অ্যানী বেশ অল্পবয়সী। দুর্ঘটনার জন্য তাকে বেশ উত্তেজিত মনে হল।

পোয়ারো দেরি না করে অ্যানীকে কয়েকটা প্রশ্ন করল। মিসেস ইঙ্গলথর্প গত রাত্রে কটা চিঠি লিখেছিলেন এবং সেগুলোর নাম ঠিকানা অ্যানী জানে কিনা পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল।

একটু চিন্তা করে অ্যানী বলল মোট চারটে চিঠি ছিল, একটা মিস হাওয়ার্ডের নামে, একটা উকিল মিঃ ওয়েলসের নামে আরেকটা ট্যাডমিন, টারের খাবারওয়ালা রসের নামে। কিন্তু বাকি চিঠিটা কার নামে ছিল তা অনেক চিন্তা করেও অ্যানী মনে করতে পারল না।

পোয়ারো এবার দ্বিতীয় প্রশ্নটা করল, মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে একটা সসপ্যানে সে কিছু কোকো দেখেছে। সেজন্য তার জিজ্ঞাসা হল উনি কি রোজই কোকো খেতেন।

অ্যানী জানাল দুধ চিনি আর দুচামচ রাম মেশানো থাকত। সে-ই রোজ গিন্নিমার ঘরে সেটা পৌঁছে দিত। পোয়ারো জানতে চাইল কটার সময় অ্যানী এটা দিয়ে আসত। অ্যানী বলল জানালার পর্দাগুলো টেনে দেওয়ার সময়।

পোয়ারো এবার জিজ্ঞাসা করল সে কি রান্নাঘর থেকেই সোজা ওটা নিয়ে যেত? অ্যানী জানাল যে রান্নাঘরে গ্যাসচুল্লীর কাছে বেশি জায়গা নেই, তাই ঠাকুর ঐ কোকো আগে বানিয়ে রাখত। অ্যানী সেটা বাঁদিকের টেবিলে রেখে দিত। পরে সময়মত গিন্নিমার ঘরে দিয়ে আসত।

পোয়ারো প্রশ্ন করল গতরাত্রে কটার সময় সে কোকোটা টেবিলে রাখে। অ্যানী বলল প্রায় সওয়া সাতটার সময় টেবিলে রাখে আর আটটা নাগাদ মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে নিয়ে যায়।

এই কথাগুলো শুনে পোয়ারো সেগুলো পুনরাবৃত্তি করল। এই সময় অ্যানী হঠাৎ বলে উঠল সে কোকোর মধ্যে নুন মেশায়নি। পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল অ্যানী কি করে জানল যে কোকোর মধ্যে নুন ছিল।

অ্যানী জানাল সে প্রথমে দেখেনি। ট্রেতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার নজরে পরে ট্রেতে নুন ছড়ানো রয়েছে। তখন সে ভেবেছিল আবার নতুন করে কোকোটা তৈরি করবে। কিন্তু অন্য কাজের চাপে সে ভুলে যায়।

কথাগুলো শুনে নিজেকে আর সংযত রাখতে পারছিলাম না। অ্যানী তার অজান্তেই একটা মারাত্মক সূত্র আমাদের জানিয়ে দিল। অ্যানী যেটাকে নুন বলে ভেবেছে আসলে সেটা যে স্ট্রিকনিন বিষ তা ওর জানা নেই।

পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে তার শান্ত মূর্তি দেখে অবাক হলাম। তবে এটাই ওর স্বভাব, এই অবস্থায় ওর মনোভাব বোঝা কঠিন। সে এবার অ্যানীকে প্রশ্ন করল, অ্যানী যখন মিসেস ইঙ্গলথর্পের ঘরে ঢুকেছিল তখন কি মিস সিনথিয়ার ঘরের দরজাটা বন্ধ ছিল। অ্যানী জানাল ঐ দরজা কখনও ভোলা হত না।

সেই সময় মিঃ ইঙ্গলথর্পের ঘরের দরজাও বন্ধ ছিল কিনা পোয়ারো জানতে চাইল। একটু ইতস্ততঃ করে অ্যানী জানাল সে ঠিক লক্ষ্য করেনি তবে তার ধারণা দরজাটা ভেজানো ছিল।

পোয়ারো এবার জানতে চাইল অ্যানী ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় মেঝেতে মোম পড়ে থাকতে দেখেছিল কিনা। অ্যানী জানাল মিসেস ইঙ্গলথর্পের কোনো মোমবাতি ছিল না, শুধু একটা ল্যাম্প ছিল।

এরপর পোয়ারো জানতে চাইল মিসেস ইঙ্গলথর্পের কোনো গাঢ় সবুজ রঙের পোশাক আছে কি না। অ্যানী জানাল এই রঙের কোনোও পোশাক নেই।

এরপর অ্যানী চলে যেতেই আমি পোয়ারোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বলতে লাগলাম পোয়ারো একটা দারুণ বিষয় আবিষ্কার করেছে। বিষটা যে কফিতে নয় কোকোতে ছিল এটাই পোয়ারোর আবিষ্কার। প্রায় মধ্যরাতে যদি তিনি কোকোটা পান করে থাকেন তাহলে বিষের লক্ষণ এত দেরিতে হল কেন–এটা জিজ্ঞাস্য থেকে গেল।

পোয়ারো আমাকে জিজ্ঞাসা করল বিষটা যে স্ত্রিকনিন আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিনা। আমি বললাম নিশ্চয়ই না হলে ট্রেতে নুনের মত ওগুলো কি ছিল। পোয়ারো বলল ওটা শুধুমাত্র নুনও হতে পারে।

পোয়ারোর স্বভাবের এই বৈশিষ্ট্যটি আমি অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারিনি। এই সময় ওর সঙ্গে তর্ক করা বৃথা।

পোয়ারো এবার ওঠার জন্য প্রস্তুত হল। যাওয়ার আগে ডেস্কের কাছে গেল, মিসেস ইঙ্গলথর্পের চাবির গোছা দিয়ে অনেক চেষ্টা করে পোয়ারো খুলতে চাইল। শেষ পর্যন্ত এমনিতেই ওটা খুলে গেল। ডেস্কের ভেতরে সারিবদ্ধ কাগজ পরিচ্ছন্নভাবে গোছানো আছে। পোয়ারো এগুলো পরীক্ষা করল না দেখে অবাক হলাম। পোয়ারো ডেস্কের ঢাকনাটা বন্ধ করে দিল।

আপন মনে পোয়ারো বলতে লাগল ডেস্কে কোনো ডাকটিকিট থাকা উচিৎ ছিল। কিন্তু সে কোনো টিকিট দেখতে পেল না।

যাই হোক পোয়ারো আমাকে যাওয়ার জন্য তাড়া দিল আর একটা বহু পুরনো খাম আমার দিকে ছুঁড়ে দিল। দেখলাম, নোংরা ছোট একটা খাম, তাতে আড়াআড়িভাবে কি সব যেন লেখা আছে। কথাগুলো পড়ার চেষ্টা করলাম, দেখলাম তাতে লেখা আছে–আমার সম্পত্তি..আমার, অধিকার..অধিকার…তার সম্পত্তি–এই ধরনের কথা।

আমি যথারীতি এ সবের কিছুই বুঝলাম না।