অশুদ্ধি-সংশোধন – তৃতীয় পরিচ্ছেদ
নানা কারণে শিক্ষার্থিগণের রচনায় বর্ণাশুদ্ধি ঘটিয়া থাকে। রচনার অন্যান্য উৎকর্ষ থাকা সত্ত্বেও শুধু বর্ণাশুদ্ধির জন্যই রচনাটি কীটদষ্ট কুসুমের মতো পরীক্ষকের বিরক্তি উৎপাদন করে। সুতরাং প্রতিটি শব্দের নির্ভুল বানান প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রীর জানিয়া রাখা উচিত।
ভিন্নার্থবোধক সমোচ্চারিত বা প্রায়-সমোচ্চারিত শব্দ
বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলি শব্দ আছে যাহাদের উচ্চারণ প্রায় একরূপ, অথচ বানান ও অর্থ সম্পূর্ণ বিভিন্ন। কথাবার্তা বলিবার সময় এইরূপ শব্দ-ব্যবহারে সতর্ক না থাকিলেও লিখিবার সময় আমাদের হুঁশিয়ার হইতেই হয়, নচেৎ অর্থ-বিভ্রাট ঘটিয়া থাকে। নিম্নে এইরূপ সমোচ্চারিত বা প্রায়-সমোচ্চারিত ভিন্নার্থবোধক শব্দের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল।—
অচ্যুত—বিষ্ণু
অচ্ছুত—অস্পৃশ্য
অংশ—ভাগ
অংস—স্কন্ধ
অখ্যাত—খ্যাতিহীন
আখ্যাত—বিখ্যাত
অজিত—যাহা আয়ত্তে আসে নাই
অর্জিত—অর্জন করা হইয়াছে এমন
অদৃশ্য—চক্ষুর অগোচর
অধৃষ্য—অপরাজেয়, দুর্ধর্ষ
অনিদ্র—নিদ্রাহীন
অনিদ্রা—নিদ্রাহীনতা
অদৃষ্ট—ভাগ্য, যাহা দৃষ্ট নয়
অধৃষ্ট—অনুদ্ধত, বিনীত
অকিঞ্চন দরিদ্র (বিণ)
আকিঞ্চন—দারিদ্র্য (বি)
অনু—পশ্চাৎ
অণু—ক্ষুদ্রতম অংশ
অনুভব—উপলব্ধি
অনুভাব-মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ
অধিরোহণ—আরোহণ
অধিরোপণ—আরোহণ করানো
অভি—উপসর্গবিশেষ
অভী—নিৰ্ভীক
অবদ্য—অকথ্য
অবধ্য-বধের অযোগ্য
অবদান—কীর্তি
অবধান—মন দিয়া শোনা
অপগত—বিগত
অনিশ—অবিরাম
অবগত—জানা
অনীশ—প্রভুহীন
অঘ্রান-মাসবিশেষ
আঘ্রাণ—গন্ধগ্ৰহণ
অপেক্ষা—বিলম্ব, প্রত্যাশা
উপেক্ষা—অনাদর
অনীল—নীল নয়
অনিল—বায়ু
অনুদিত—অপ্রকাশিত, উদিত নহে
অনুদিত—ভাষান্তরিত, পরে উদিত
অন্তরঙ্গ—আত্মীয়
অন্তরজ্ঞ—বিশেষজ্ঞ
অন্য—অপর
অন্ন–ভাত, খাদ্য
অপচয়—ক্ষতি
অবচয়—সংগ্রহ
অবাচীন—দক্ষিণদিক্-সম্বন্ধীয়
অর্বাচীন—আধুনিক
অনিতা—অশিষ্টা
অনীতা—গৃহীতা নয়
অপেক্ষমাণ—যিনি অপেক্ষা করিতেছেন
অপেক্ষ্যমাণ—যাঁহার জন্য অপেক্ষা করা হইতেছে
অন্তঃশিলা—যাহার নীচে পাথর আছে
অন্তঃসলিলা—যাহার মধ্যে জল আছে
অন্ত—শেষ (বিশেষ্য)
অন্ত্য—অবশিষ্ট, চরম (বিণ)
অন্তঃ—ভিতর
অপসৃত—পলায়িত
অপসারিত—স্থানান্তরিত
অবসৃত—অবসরপ্রাপ্ত
অব্যবহিত–সংলগ্ন
অব্যবহৃত—যাহা ব্যবহার করা হয় নাই
অবিমিশ্র—বিশুদ্ধ
অবিমৃশ্য—অবিবেচক
অর্থ—মূল্য
অর্ঘ্য—পূজার উপকরণ
অবিহিত—অনুচিত
অভিহিত—কথিত
অবিধেয়—অন্যায়
অভিধেয়—নাম, সংজ্ঞা
অলক—কুঞ্চিত কেশদাম
অলোক-অসাধারণ
অলখ—দৃষ্টির অগোচর
অলয়—অক্ষয়
আলয়—আশ্রয়
অবিনীত—উদ্ধত
অভিনীত—যাহা অভিনয় করা হইয়াছে
অশন-ভোজন
অসন—নিক্ষেপ
অশিত—ভক্ষিত, তীক্ষ্ণ নয়
অসিত—কৃষ্ণ
অভিবাসন–দেশান্তরে বসতিস্থাপন
অভিভাষণ—সম্ভাষণপূর্বক বক্তৃতা
অস্ত্র—নিক্ষেপযোগ্য আয়ুধ
শস্ত্র—হস্তে ধারণ করিয়া আঘাত করিবার আয়ুধ
অপুত্রকা—যে মায়ের পুত্রকন্যা নাই
অপুত্রিকা—যে মায়ের কন্যা নাই
অপসরণ-পলায়ন
অপসারণ—স্থানান্তরিত করা কাজটি
অশ্ম-প্রস্তর
অশ্ব—ঘোড়া
অপস্রিয়মাণ—যাহাকে অপসারিত করা হইতেছে
অপসৃয়মান–যিনি নিজেই সরিয়া যাইতেছেন
অস্পৃশ্য—যাহাকে ছোঁয়া উচিত নয়
অস্পৃষ্ট—যাহাকে ছোঁয়া হয় নাই
অবতরণ—নামিয়া আসা
অবতারণ—নামাইয়া আনা
অস্থায়ী—যাহা স্থায়ী নয়
আস্থায়ী—গানের প্রথম পদ
অভিসন্ধি—মন্দ অভিপ্ৰায়
অভিষ্যন্দী—ক্ষরণশীল
অবিধান—অন্যায় নিয়ম
অভিধান—শব্দার্থকোষ
অবেদন—অনুভূতি-লোপ
আবেদন—প্রার্থনা, দরখাস্ত
অঙ্কন—দাগ দেওয়া, চিত্রণ
অঙ্গন—আঙিনা, উঠান
অঞ্জন—কাজল, সুর্মা
আদান–গ্রহণ
আধান—সম্পাদন, সঞ্চার, স্থাপন
আদি—প্রথম
আধি—মনোবেদনা
আদৃত—আদরপ্রাপ্ত
আধৃত—গৃহীত
আপণ—দোকান
আপন—নিজ
আভরণ—অলংকার
আবরণ—আচ্ছাদন
আবৃত্তি—ছন্দোভাবসহ সরব পাঠ
আবৃতি—আবরণ, বেষ্টন
আয়ত—বিস্তৃত
আয়ত্ত—অধিকৃত
আয়তি—সধবার লক্ষণ, বিস্তার
আয়তী—সধবা নারী
আরভমাণ—যে আরম্ভ করিতেছে
আরভ্যমাণ—যাহার আরম্ভ হইতেছে
আস্য—মুখমণ্ডল
হাস্য—হাসি
আহরণ—চয়ন
আরোহণ—উপরে উঠা
আহুত—অগ্নিতে সমৰ্পিত
আহৃত—যাহাকে আহ্বান করা হইয়াছে
আহুতি—হোম
আহূতি—আহ্বান
আয়াস—শ্রম
আয়েশ—আরাম
আয়স—লৌহময়
আশয়—আধার, অভিপ্রায়
আশ্রয়—আবাস
আভাস—ইঙ্গিত, দীপ্তি
আভাষ—সম্ভাষণ, ভূমিকা
ইস—বিস্ময়সূচক অব্যয়
ঈষ—লাঙ্গলের ফলা
ইতি—শেষ
ঈতি—শস্যের ষড়বিঘ্ন
ইহা—-এইটি
ঈহা—চেষ্টা, ইচ্ছা
উৎপল—পদ্ম
উপল—প্রস্তরখণ্ড
উত্তাল-অত্যুচ্চ
উত্তল—অর্ধবৃত্তাকারে উন্নত উপরিতলযুক্ত বস্তু
উদ্যত—প্রস্তুত
উদ্ধত—অবিনীত
উপাধেয়—উপস্থাপনযোগ্য
উপাদেয়—উপভোগ্য
উপযুক্ত—যোগ্য
উপর্যুক্ত—উল্লিখিত
আসক্তি—অনুরাগ
আসত্তি—নৈকট্য
উদর—জঠর
উদার মহৎ
উদ্গীত—উচ্চরবে গীত, উচ্ছ্বসিত
উদগীথ—সামগান
উদ্দেশ—লক্ষ্য, সন্ধান
উদ্দেশ্য—অভিপ্রায়
উরু—বিশাল, মহান্
ঊরু—মানুষের কুঁচকি থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেহাংশ
উপায়—আয়, সাধনকৌশল
উপেয়—যাহার সাধনা করা হয়
উপহার—পুরস্কার
উপাহার—জলযোগ
উপাদান—উপকরণ
উপাধান—বালিশ
উন্মীলন—সম্যক্ প্রকাশ
উন্মুলন—সমূহ উচ্ছেদ
রিক্ত—শূন্য
ঋক্থ—উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য ধন
ঋতি—গতি
রীতি—নিয়ম
ওষুধি—ফল পাকিলে যে গাছ মরে
ঔষধি—ভেষজ উদ্ভিদ্
কেন্দ্রাতিগ–কেন্দ্র হইতে দূরে
কেন্দ্রাভিগ—কেন্দ্রের দিকে
কুঙ্কুম—কুসুম ফুল
কুমকুম—আবীরপূর্ণ গোলক
কুট—দুর্গ, বৃক্ষ, পর্বত
কূট—কুটিল, পর্বতচূড়া
কুসম—অল্প গরম
কুসুম—পুষ্প
কুজন—খারাপ লোক
কূজন—পাখির ডাক
কুল—বংশ, সমূহ, ফলবিশেষ
কূল–নদীতীর
কীর্তি—যশ
কৃত্তি—ব্যাঘ্রচর্ম
কৃতজ্ঞ—উপকার মনে রাখে যে
কৃতঘ্ন—উপকারীর ক্ষতি করে যে
কৃত্য–করণীয়
কৃত্ত—খণ্ডিত
কৃতি—রচনা, সাধনা
কৃতী—কৃতকার্য
কমনীয়—মনোহর, সুন্দর
কামনীয়—কামনার যোগ্য
কটি—কোমর
কোটি—শত লক্ষ
কবরী—খোঁপা
করবী—পুষ্পবিশেষ
কপাল—ললাট
কপোল—গণ্ড, গাল
করতল—হাতের তল (চেটো)
করতাল—হাততালি, কাঁসার বাদ্যযন্ত্র মন্দিরা
কর্মঠ–কর্মদক্ষ
কমঠ—কচ্ছপ
কৃত—সম্পন্ন
ক্রীত—যাহা কেনা হইয়াছে
কপোত—পায়রা
খপোত—ব্যোমযান, বিমান
কৰ্তৃ—কর্তা
কর্ত্রী—গৃহিণী
কশা—চাবুক
কষা–-হিসাব করা
কাঁদুনে-যে কাঁদে
কাঁদানে—যে কাঁদায়
গাথা—পদ্য
গাঁথা –রচনা করা
গায়কী—বিশেষ গীতরীতি
গায়িকা—যে মেয়ে গান করে
চূত–আম্র, আম্রবৃক্ষ
চ্যুত–ভ্রষ্ট চিত্ত-মন
চিত্র—ছবি
চৈত্ত—চিত্ত-সম্বন্ধীয়
চৈত্য—বৌদ্ধমঠ, প্রার্থনামন্দির
চৈত্র—বাংলা সনের শেষ মাস
গুড়—খেজুর তাল আখের রসজাত মিষ্ট খাদ্য
গূঢ়—গুপ্ত, অপ্রকাশিত
গিরিশ—মহাদেব
গিরীশ—হিমালয়
গুল্ফ—গোঁফ
গুল্ফ—গোড়ালি
গুম্ফন—রচনা, সৃষ্টি
গোলক—গোলাকার বস্তু
গোলোক—বৈকুণ্ঠধাম
গ্রন্থী—বহু গ্রন্থপাঠক
গ্রন্থি—-গাঁট
গ্রামীণ—গ্রাম্য, গ্রামসম্বন্ধীয়
গ্রামণী—গ্রামের নেতা
গৃহীতা—যে নারীকে গ্রহণ করা
গ্রহীতা—গ্রহণকারী (পুং)
ঘূর্ণমান—যাহা ঘুরিতেছে
ঘূর্ণ্যমান—যাহাকে ঘোরানো হইতেছে
হইয়াছে
জাতি—বংশ, বৰ্ণ
জাতী—মালতী ফুল
জাতিস্মর—পূর্বজন্মের কথা যাহার স্মরণে আছে
জাতীশ্বর—বর্ণশ্রেষ্ঠ
জীবন—প্রাণ, আয়ু
যীবন—বিড়ালের ডাক
জলা—জলময় নিম্নভূমি (বি)
( জ্বলাপোড়া, দগ্ধ হওয়া (ক্রি)
জাল—তার বা সুতো দিয়ে বোনা ফাঁদ; কৃত্রিম
জ্বাল—আগুনের তাপে গরম করা জ্বালা-যন্ত্রণা
জালা—মৃৎপাত্রবিশেষ
যমক—কাল্যের অলংকারবিশেষ
চন্দ্ৰমা—চন্দ্ৰ
চন্দ্রিকা—জ্যোৎস্না
চর্চা—অনুশীলন
চর্যা–আচরণ
চলচ্চিত্র—ছায়াছবি
চলচ্চিত্ত—চঞ্চলমতি
চাণক্য—ইতিহাসবিখ্যাত পণ্ডিত
চানক্য—চাদোয়া
চির—দীর্ঘকাল
চীর—ছিন্নবাস
জ্যোতিষ—জ্যোতির্বিদ্যা
যতীশ—মুনিশ্রেষ্ঠ
জ্যেষ্ঠ—বয়সে বড়ো
জ্যৈষ্ঠ—বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস
টিকা—তিলক
টীকা—সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
তত্ত্ব–গূঢ় অর্থ, সংবাদ
তথ্য—বিষয়
তদীয়—তাহার
ত্বদীয়—তোমার
তরা—পার হওয়া (ক্রিয়া)
ত্বরা–দ্রুততা, ব্যস্ততা (বি)
ত্বরিত—ক্ষিপ্র, শীঘ্র
তড়িৎ—বিদ্যুৎ
তরণি—সূর্য
তরণী—নৌকা তরুণী-যুবতী
তাদৃশ—সেইরূপ
ত্বাদশ—তোমার মতো
দর্ব—রাক্ষস দর্প—অহংকার
দৰ্ভ—দূর্বা, কুশ ইত্যাদি তৃণ
দাড়ি—চিবুক, শ্মশ্রু
দাঁড়ী—দাঁড় টানে যে
দাঁড়ি—পূর্ণচ্ছেদ, তুলাদণ্ড
দারী—ভেদ করে এমন
দ্বারী—দারোয়ান
ধারী—ধারণকারী
দার—পত্নী
দ্বার—দরজা
দ্বারা—দিয়া
ধারা—প্রবাহ
দুকুল—দুই বংশ
দুকূল—দুই তীর, ক্ষৌমবাস
দূত-চর
দ্যূত—পাশা
দূতী—সংবাদবাহিকা
দ্যুতি–দীপ্তি
দুরবস্থ—দরিদ্র
দুরবস্থা—দারিদ্যে
দয়িত—প্রিয়
দ্বৈত—দুইয়ের ভাব
দৈত্য—অসুর
দীপ—প্রদীপ
দ্বিপ-হস্তী
দ্বীপ—জলবেষ্টিত স্থল
দূরভাষণ—টেলিফোন
দুর্ভাষণ—কটূক্তি
দুরস্থ—দূরবর্তী
দুরস্ত—পরিপাটী
দিনেশ—সূর্য
দীনেশ—দরিদ্রের বন্ধু
দেশ—রাজ্য
দ্বেষ—হিংসা
দহন—অগ্নি, পোড়া, জ্বলা
দোহন—দুধ দোয়া
দশন—দাঁত, কামড়
দর্শন—দেখা, সাক্ষাৎকার
দীপ্ত—উজ্জ্বল
দৃপ্ত—গর্বিত
দুর্ভগ—ভাগ্যহীন
দুর্ভোগ—দুর্গতি
দুর্ভগা—অভাগিনী (স্ত্রী)
দুর্ভাগা-হতভাগ্য (পুং)
দুষ্কৃতি—দুষ্কার্য (বি)
দুষ্কৃতী—দুষ্কর্মকারী (বিণ)
ধনী—ধনশালী
ধ্বনি—শব্দ
ধনি—হে সুন্দরী
ধড়া—কটিবস্ত্র
ধরা—পৃথিবী
ধেয়—গ্রহণীয়
ধ্যেয়—ধ্যানযোগ্য
নম্র—বিনয়ী, শান্ত, নমনীয়
নৰ্ম—ক্রীড়া
মর্ম—হৃদয়
ধুনি—সন্ন্যাসীর অগ্নিকুণ্ড
ধুনী–নদী
ধনাত্মক—শূন্য অপেক্ষা বড়ো রাশি
ধ্বন্যাত্মক—শব্দের অনুকারমূলক
ধুম—জাঁকজমক
ধুম—ধোঁয়া
নন্দিত–বন্দিত
নিন্দিত—নিন্দাপ্রাপ্ত
নিদান—মূল কারণ
নিধান—খনি
নিষঙ্গ—বাণ রাখার আধার
নিঃসঙ্গ—-সঙ্গীহীন
নিঃসংজ্ঞ—সংজ্ঞাহীন
নিয়োজ্য—ভৃত্য
নিয়োগ্য—প্রভু
নিরাশ—হতাশ
নিরাস—ভঞ্জন, নিবারণ
নিরত–ব্যাপৃত, নিযুক্ত
নীরত—বিরত
নিরাপত্তা—বিপন্মুক্তি
নিরাপত্তি—যাহাতে আপত্তি নাই
নিরস্ত—ক্ষান্ত
নিরস্ত্র—অস্ত্রহীন
নিশুতি—গভীর
নিষুতি—নিদ্রা, নিদ্রিত
নীপ—কদম্ব
নৃপ—নরপতি
নিহত—বিনষ্ট
নিহিত—রক্ষিত
নীর—জল
নীড়—পাখির বাসা
নীরাহার—জলপান
নিরাহার—অনাহার
নিরসন—দূরীকরণ
নিরশন—অনাহার
নিরাকার—আকারহীন
নীরাকার—জলের আকারের মতো
নীতি—ধর্মসংগত বিধান
নিতি—নিত্য
নির্দয়—দয়া নাই যাহার
নির্দায়-দায়িত্বমুক্ত
নির্জর—জরাহীন
নির্ঝর-ঝরনা
নির্জ্জর—দেহের স্বাভাবিক তাপযুক্ত
নিশিত—শাণিত
নিশীথ—মধ্যরাত্র
নিধন—সংহার, বিনাশ, মৃত্যু (বি)
নির্ধন—ধনহীন, দরিদ্র (বিণ)
নির্বচন—সূত্র
নির্বাচন—বাছিয়া লওয়া
নিবৃত্ত—বিরত
নিৰ্বত—নিযুক্ত, সন্তুষ্ট
নিবৃতি—শান্তি, অবসান
নিবৃত্তি—ক্ষান্তি
নৃত্য—নাচ
নিত্য—প্রতিদিন, সর্বদা
নীরোগভবন—রোগমুক্তদের বাসগৃহ
নীরোগীভবন—রোগমুক্ত হওয়া কাজটি
পঠন—নিজে পড়া
পাঠন—অপরকে পড়ানো
পাবন—শোধক বা শোধন
পবন—বায়ু
পদ্ম—পুষ্পবিশেষ
পদ্য—ছন্দোবদ্ধ রচনা
পাদ্য—পা ধুইবার জল
পদ্মালয়—পদ্মশোভিত পুষ্করিণী
পদ্মালয়া—লক্ষ্মীদেবী
পরিচ্ছদ—পোশাক
পরিচ্ছেদ—গ্রন্থের বিষয়বিভাগ
পরুষ—কর্কশ
পুরুষ—নর
পক্ষ—দল, ডানা
পক্ষ্ম—অক্ষিলোম
পরভৃৎ—কাক
পরভৃত—কোকিল
পরীক্ষিত—যাহার পরীক্ষা হইয়াছে
পরীক্ষিৎ—অর্জুনের পৌত্র
পুরোযায়ী—অগ্রগামী
পরিযায়ী—অভিবাসনকারী
পরিষদ্—সভা
পারিষদ সভার সদস্য
পতন—ধ্বংস
পত্তন—আরম্ভ
প্রভূত—প্রচুর
প্রভুত্ব—আধিপত্য
পচ্য—রাঁধিবার যোগ্য
পাচ্য যাহা পরিপাক করা যায়
পরামর্শ—যুক্তি, উপদেশ
পরামর্ষ—ক্ষমা, সহন
পরান্ন—-অন্যের অন্ন
পরাহ্ণ—বিকালবেলা
পাকস্থলী—পেটের যে অংশে খাদ্যদ্রব্য হজম হয়
পাকস্থালী–রান্নার পাত্র
পবিত্র-পুত, বিশুদ্ধ, নিষ্পাপ
প্রবৃত্ত–নিযুক্ত
পূর্বাহ—আগের দিন
পূর্বাহ্ণ—দিনের প্রথমভাগ
পূর্বাভাষ—মুখবন্ধ, ভূমিকা
পূর্বাভাস—ভাবী ঘটনার অগ্রিম ইঙ্গিত
পুণ্য—সুকৃতি
পূর্ণ—ভরতি, পুরা
পিষ্ট—চূর্ণিত
পৃষ্ট—জিজ্ঞাসিত
স্পষ্ট—ছোঁয়া হইয়াছে যাহাকে
পৃষ্ঠ—পশ্চাদ্দেশ
পূর্বরাত্র—একই রাত্রির প্রথমাংশ
পূর্বরাত্রি—গতরাত্রি
পর্যাপ্ত—পরিমিত অথচ পূর্ণ
অপর্যাপ্ত—প্রয়োজনের অতিরিক্ত
প্রকার—রকম
প্রাকার—প্রাচীর
প্রতিবেদন—বিবরণ
পরিবেদন—জ্যেষ্ঠ অবিবাহিত থাকা সত্ত্বেও কনিষ্ঠের বিবাহ
প্রথিত—বিখ্যাত
প্রোথিত—ভূমিগর্ভে নিহিত
প্রদান—বিতরণ
প্রধান—মুখ্য
প্রস্ত—দফা, সেট
প্রস্থ—বিস্তার
প্রাপ্ত—যাহা পাওয়া গিয়াছে
প্রাপ্য—যাহা পাওয়া উচিত
পোষক-পালনকারী
পোশাক—পরিচ্ছদ
প্রণব—ওঁকার-মন্ত্র, আদিধ্বনি
পণব—বাদ্যযন্ত্রবিশেষ
প্রতিমা—প্রতিমূর্তি
প্রাথমা—স্থূলতা
প্রভব—উৎপত্তিস্থান
প্রভাব–প্রভুত্ব
প্রসাদ—অনুগ্রহ
প্রাসাদ—অট্টালিকা
প্রত্যহ—প্রতিদিন
প্রত্যূহ—বাধাবিঘ্ন
প্রসাদন—সন্তুষ্টীকরণ
প্রসাধন—অঙ্গসজ্জা-সম্পাদন
প্রতীক্ষমাণা—অপেক্ষাকারী নারী
প্রতীক্ষ্যমাণা—যে রমণীর জন্য অপেক্ষা করা হয়
বলি—যজ্ঞে নিবেদ্য বস্তু
বলী—বলশালী
বিবক্ষা—বলিবার ইচ্ছা
বিবিক্ষা—প্রবেশের ইচ্ছা
বিধুর—ক্লিষ্ট, কাতর
বিদুর—কৃষ্ণভক্ত
বিদুর—বিশেষ দূরবর্তী
বিমর্শ—বিশেষ বিবেচনা
বিমষ—বিষণ্ণ (বিণ), অসন্তোষ (বি)
ফাল্গুনি—অর্জুন
ফাল্গুনী—ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা
বনিতা—নারী
ভণিতা—কবিনামযুক্ত ছন্দোবদ্ধ উক্তি
বিতান—মণ্ডপ
বিথান—স্থানচ্যুত
বিধান—শাস্ত্রবিহিত ব্যবস্থা
বিগ্ন—ভীত
বিঘ্ন—ব্যাঘাত
বাণী—বাক্য
বানি—পারিশ্রমিক
বীক্ষমাণ—বিশেষভাবে দেখিতেছে যে
বীক্ষ্যমাণ—যাহাকে বিশেষভাবে দেখা হইতেছে
বাধা–ব্যাঘাত
বাঁধা—আটকানো (ক্রি), বন্ধক (বি)
বিভব—ঐশ্বর্য, শক্তি
বিভাব—প্রেরণা, উদ্দীপনা
বয়স-বয়ঃক্রম
বায়স—কাক
বার্তা—খবর, সংবাদ, বৃত্তি
বাত্যা-প্রবল বায়ু, ঝড়
বাত–কথা, বাতাস
বাদ—বাধা, শত্রুতা, বর্জন
বাণ—শর
বান–বন্যা
বর্ণ-–রং, অক্ষর, জাতি
বর্ণ-–বর্ণনার যোগ্য
বন্দন—পূজা
বন্ধন—বাঁধন
বল্লব—গোপ, পাচক
বল্লভ—স্বামী, প্রণয়ী
বর্ষাতি-বর্ষারোধকারী জামা
বর্ষাতী—বর্ষায় উৎপন্ন
বিশদ—বিস্তৃত
বিষদ—বিষ দেয় যে
বিষাদ –দুঃখ
বিষাণ—শৃঙ্গাকার বাদ্যযন্ত্ৰ (বি)
বিষান—বিষাক্ত হওয়া (ক্রি)
বিবৃত—বর্ণিত
বিবৃত্ত—ঘূর্ণিত
বিদ্ধ-–ছিদ্রিত
বৃদ্ধ—বুড়া
বিকৃত-–বিকারপ্রাপ্ত
বিক্রীত—যাহা বেচা হইয়াছে
বসন—বস্ত্ৰ
বেসন—ছোলা মটর প্রভৃতির গুঁড়া
বাসন–-বিপদ, কুক্রিয়া, নেশা, পাপ
বিজন—জনশূন্য
বীজন—বাতাস দেওয়া
বিজিত—পরাজিত
বীজিত—বাতাস দেওয়া হইয়াছে
বিজেতা—জয়লাভকারী (পুং)
বিজিতা—পরাজিতা (স্ত্রী)
বিত্ত—সম্পত্তি
বৃত্ত—গোলাকার ক্ষেত্র
ব্রজ—বৃন্দাবনধাম
বজ্ৰ—বাজ
বর্জ্য—পরিত্যাগ করার যোগ্য
বেদ—হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ
ভেদ—পার্থক্য
বেধ—গভীরতা বা স্থূলতা
বেদনা—যন্ত্রণা
বেদানা—ফলবিশেষ
বৃত্য–বরণীয়
বৃত্র—অসুরবিশেষ
বৈয়াসকি—ব্যাসের পুত্র
বৈয়াসিক—ব্যাস দ্বারা রচিত
বৈচিত্র্য—চিত্তের ভাবান্তর
বৈচিত্র্য—বিচিত্রতা
বীরোচিত—বীরের উপযুক্ত
বিরচিত—প্রণীত
বিশ—কুড়ি
বিষ—গরল
বিস—মৃণাল, পদ্মের ডাঁটা
বিস্তর—প্রচুর
বিস্তার—ব্যাপ্তি
বিদ্যমান—অবস্থিত
বিধ্যমান—যেটি বিদ্ধ করা হইতেছে
ব্যঙ্গ—বিকলাঙ্গ, বিদ্রুপ, উপহাস
ব্যঙ্গ্য—ব্যঞ্জনাবৃত্তির দ্বারা বোধ্য
বিস্মৃত—বিস্মরণযুক্ত
বিস্মিত—চমৎকৃত
বিত্রস্ত-বিশেষ ভীত
বিভ্রত—বিশেষভাবে স্খলিত
বিরাট্—সর্বব্যাপী, বিশাল
বিরাট—মৎস্যরাজ্য
ব্যবহিত—ব্যবধানবিশিষ্ট
ব্যবহৃত-যাহা ব্যবহার করা
ব্যাঘ্র–বাঘ
ব্যগ্র—আগ্রহযুক্ত
ভূষা—অলংকার
ভুসা—কালি
ভাস্কর–সূর্য, মূর্তিনির্মাণকারী
ভাস্বর—উজ্জ্বল
ভিত–ভিত্তি, দিক্, পাশ
ভীত—শঙ্কিত
ভ্রষ্ট—-চ্যুত
ভৃষ্ট—ভাজা হইয়াছে এমন
ভগিনী—বোন
ভোগিনী—বিলাসিনী
ভগবতী—দুর্গা
ভাগবতী—ভগবদ্-বিষয়ক
ভয়াবহ—ভয়ংকর
ভয়াপহ—ভয় অপহরণ করেন যিনি
মঞ্জরী—মুকুল, অঙ্কুর
মঞ্জীর—নূপুর
মঞ্জিল—প্রাসাদ
মজুর—শ্রমিক
মঞ্জুর—অনুমোদিত, গৃহীত
মঞ্জুল—সুন্দর (বিণ), কুঞ্জবন (বি)
মতি—মনের গতি
মোতি—মুক্তা
মনোভব—কামদেব
মনোভাব—অভিপ্রায়
মদ্য–-সুরা, মদিরা
মধ্য—মাঝামাঝি
যজ্ঞ—বৈদিক পূজানুষ্ঠান
যোগ্য—উপযুক্ত
মূল্যবান্—দামী (বিণ)
মূল্যমান—মূল্যের পরিমাণ (বি)
মুক—বোবা
মুখ—বদন
মহিত—পূজিত
মোহিত—মুগ্ধ
মাতাল—মত্ত
মাথাল—তালপাতার টোকা
মাথালো—বুদ্ধিমান্
মিলন—-সন্ধি
মীলন—প্রকাশ
মুখ্য—প্রধান
মূখ–নির্বোধ
মুখপত্র—ভূমিকা, মুখবন্ধ
মুখপাত্র—প্রতিভূস্থানীয় ব্যক্তি বা প্রতিনিধিস্থানীয় পত্রিকা
মূর্ধন্য—মূর্ধা যাহার উচ্চারণস্থান
মধ্যাহ্ন—দুপুরবেলা
মাতৃপিতৃহীন—মাতামহ নাই যাহার
পিতৃমাতৃহীন—পিতামহী নাই যাহার
পিতামাতৃহীন—পিতামাতা নাই যাহার
যান—যাহাতে চড়িয়া যাওয়া যায়
জান—জীবন বা দৈবজ্ঞ
যুযুৎসু—যুদ্ধ করিতে ইচ্ছুক
জুজুৎসু—মল্লবিদ্যা, কুস্তি
যোদ্ধা—যুদ্ধপটু বীর
যোধ্যা—যে নারীকে যুদ্ধে পরাস্ত করা যায়
যতি—ছেদচিহ্ন যতীঋষি
জ্যোতি-আলো, দীপ্তি
রসনা—জিহ্বা
রশনা—নারীর কটিভূষণ
রঞ্জিত—রংযুক্ত, সন্তোষিত
রণজিৎ—যুদ্ধজয়ী
রাঁধনি—মসলাবিশেষ
রাঁধনী—পাচিকা
রহিত—বাতিল
রোহিত—রুই মাছ
রাজর্ষি—ঋষিতুল্য জীবনযাপনকারী রাজা
রাজশ্রী–রাজ্যের অধিষ্ঠাত্রী ও মঙ্গলকারিণী দেবী
রুচি—ইচ্ছা
রুজি—দৈনিক আয়
মেধ–যজ্ঞ
মেদ–চর্বি
ললিত—সুন্দর
লোলিত—শিথিল
যোগরূঢ়—যৌগিক অথচ বিশেষ অর্থপ্রকাশক
যোগারূঢ়—যোগসাধনায় মগ্ন
লক্ষ—শত সহস্র
লক্ষ্য—দৃষ্টি, উদ্দেশ্য, লক্ষণীয়
লক্ষণ—চিহ্ন
লক্ষ্মণ—সুমিত্রার জ্যেষ্ঠ পুত্র
যাচক—প্রার্থী
যাজক—পুরোহিত
যোজক—সংযোগকারী
লবণ–নুন
লবন—ছৈদন, ছেদনযন্ত্র
লব্ধ—অর্জিত
লভ্য—লাভ হিসাবে পাওয়ার যোগ্য
লেহ্য—যাহা চাটিয়া খাইতে হয়
ন্যায্য–ন্যায়সংগত
শংকর-শিব
সংকর—মিশ্রণ
সকল—সব
শকল—খণ্ড, মাছের আঁশ
শম—শান্তি
সম—সমান, গানে তালের সমাপ্তি
শরদ—সরোদ নামে বাদ্যযন্ত্র
শরৎ—ঋতুবিশেষ
শারদ—শরৎকালীন
সভা—পরিষৎ
শোভা—সৌন্দর্য
সরাই—পান্থশালা
সোরাই—জলের কুঁজা
শশাঙ্ক-চন্দ্ৰ
সশঙ্ক—শঙ্কাযুক্ত
শেখর—শিরোভূষণ
শিখর—গিরিশৃঙ্গ
সমর্থক—সমর্থনকারী
সমার্থক—একই অর্থবিশিষ্ট
শাত-ছিন্ন
সাত—সপ্ত
সমীহ—সম্ভ্রম প্রদর্শন
সমীহা—চেষ্টা, ইচ্ছা
সব্য-বাম
সভ্য-সভায় সাধু
শয়িত—যে শুইয়া আছে
শায়িত—যাহাকে শোয়ানো হইয়াছে
শপ্ত—শাপগ্রস্ত
সপ্ত—সাত
সন্ধা—স্থিরনিষ্ঠা
সন্ধ্যা—দিনরাত্রির সন্ধিকাল
সাময়িক—স্বল্পকাল স্থায়ী
সামরিক—যুদ্ধ-সম্বন্ধীয়
শারদা—দুর্গা
সারদা—সরস্বতী
শান্ত-ধীর
সান্ত—সসীম
শিল—শিলা
শীল—স্বভাব
সীল—নামমুদ্রা, মৎস্যবিশেষ
সর্গ—কাব্যের অধ্যায়
স্বর্গ—দেবলোক
শর্ব—শিব
সর্ব—সকল, শিব, বিষ্ণু
সব-সমস্ত
শব—মৃতদেহ
সংখ্যা—অঙ্ক
শঙ্কা—ভয়
সত্তর—৭০ অঙ্ক বা পরিমাণ
সত্বর—তাড়াতাড়ি
সংবিৎ—চেতনা
সংবীত—বেষ্টিত
সজ্জা–-বেশভূষা
শয্যা—বিছানা
সংজ্ঞা—চৈতন্য
সংজ্ঞার্থ—পারিভাষিক অর্থ
সংবৃত—আবৃত, সংকুচিত
সংবৃত্ত—নিষ্পন্ন
সংশয়—সন্দেহ
সংশয়-আশ্রয়
শত্রু—যে ঘৃণা বা ক্ষতি করে
শত্রু—দেবরাজ ইন্দ্ৰ
স্মৃতি—পথ
স্মৃতি–স্মরণ
সংহত—সুদৃঢ়
সংহতি–সমন্বয়, নিবিড় ঐক্য
সংহিত—সংকলিত
শিত—তীক্ষ্ণ
শীত—ঋতুবিশেষ
সিত—সাদা
সর—দুধ বা দইয়ের উপরে ঘন ও নরম সুস্বাদু আস্তরণ
শর—বাণ, তৃণবিশেষ
সরজ—দুধের সর হইতে উৎপন্ন
সরোজ–পদ্মফুল
সখিত্ব—সখার ভাব, সখ্য
সখীত্ব—সখীর ভাব
সলিল—জল
সলীল—লীলাযুক্ত
শরবৎ—তীরের মতো
শরবত—সুমিষ্ট শীতল পানীয়
শস্য—ফসল
শোষ্য—যাহাকে শোষণ করা চলে
সিতা—চিনি, মিছরি
সীতা—জনকদুহিতা
শিতা—দুর্বলা
শিকড়—মূল
শীকর—জলকণা
শিরিস—একপ্রকার আঠা
শ্রীশ—নারায়ণ
শিরীষ—বৃক্ষ বা ফুলবিশেষ
সীমন্ত—সিঁথি
সীমান্ত—শেষ সীমা
সীস—ধাতুবিশেষ
শিস্—মুখে বাঁশীর মতো শব্দ
সিতি—শ্বেত, নীল, কৃষ্ণ
সিঁথি—কেশরাশির মধ্যবর্তী সরলরেখা
স্বকৃত—নিজের তৈয়ারী
সকৃৎ—একবার
শকৃৎ—বিষ্ঠা
সুক্ত—তিক্তাস্বাদ ব্যঞ্জনবিশেষ
সূক্ত—বেদমন্ত্র
শুক্তি—ঝিনুক
সূক্তি—শোভন বাক্য, সুভাষিত
শুর—বীর
সুর—দেবতা, নিয়ন্ত্রিত গীতধ্বনি
সূর—সূর্য
শূকর—শুয়োর
সুকর–সুসাধ্য
সুত—পুত্ৰ
সুতো—সূত্র, তন্তু
সূত—সারথি
শুচি-পবিত্র
সুচী—তালিকা, সূচ
শুদ্ধ—পবিত্র
সুদ্ধ—সমেত, কেবল
শুক–ব্যাসনন্দন, পাখিবিশেষ
শূক—শুঁয়াপোকা
সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য
শুকনাস—শুকপাখির মতো নাসিকাবিশিষ্ট
সুখনাশ—আরামের বা আনন্দের শেষ
সান্দ্র–তরল অথচ গাঢ়
সান্ধ্য–সন্ধ্যা-সম্বন্ধীয়
সিক্থ—একগ্রাস অন্ন
সিক্ত—ভিজা
সবল—বলযুক্ত
শবল—নানাবর্ণযুক্ত
স্ববল—নিজের শক্তি
শৌরি—শ্রীকৃষ্ণ
সৌরি–যম
স্তবক—গুচ্ছ
স্তাবক—খোশামোদকারী
স্বর—আওয়াজ
স্মর—কামদেব
শ্মশ্রু—দাড়ি
শ্বশ্রূ—শাশুড়ী
শৈত্য—শীতের ভাব
শৈত্য—শুরুতা
সইব—সহ্য করিব
শৈব—শিবের ভক্ত
শম্ভু–শিব
স্বয়ম্ভূ—ব্রহ্মা
শিকার—মৃগয়া
স্বীকার—অঙ্গীকার
শ্রুতি—বেদ, শ্রবণ, কৰ্ণ
সুতি—নিঃসরণ, গলন
সত্য—যথার্থ
সত্ত্ব—সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ
স্বত্ব—অধিকার
ষত্ব-ষ-এর ব্যবহারবিধি
স্বগত—আত্মগত
স্বৰ্গত—স্বর্গে গত
স্ত্রৈণ—স্ত্রীর বশীভূত
স্তৈন—চৌর্য
সজন—জনগণের সহিত
স্বজন—আত্মীয় ষষ্টি-ষাট (৬০) সংখ্যা
ষষ্ঠী—ছয়ের স্থানীয়া, দেবীবিশেষ
যষ্টি—লাঠি
সর্জন–সৃষ্টি
সজ্জন—সদ্ব্যক্তি
সেবমান—সেবাকারী পুত্র বা শিষ্য
সেব্যমান—সেবাগ্রহণকারী গুরু বা পিতা
স্কন্দ—কার্তিকেয়
স্কন্ধ—সর্গ, বৃক্ষকাণ্ড, কাঁধ
স্বয়ংবর—কন্যাকর্তৃক পতিনিৰ্বাচন
স্বয়ংভর—স্বাবলম্বী
স্বেদ—ধর্ম
শ্বেত-সাদা
সাধুতা—সজ্জনতা
স্বাদুতা—মিষ্টত্ব
সাধন—-সম্পাদন
স্বাদন—আস্বাদ গ্রহণ
সাক্ষর—অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন
স্বাক্ষর—দস্তখত
স্তম্ব—তৃণগুচ্ছ
স্তম্ভ—থাম
সরূপ—সমান রূপবিশিষ্ট
স্বরূপ—আন্তর রূপ
সত্তা—অস্তিত্ব, বিদ্যমানতা
সততা-সাধুতা, ন্যায়পরায়ণতা
স্বাদ—খাদ্যের গুণাগুণ-বোধ
সাধ—ইচ্ছা, কামনা, শখ
শরণ—আশ্রয়
স্মরণ—স্মৃতি, মনে মনে চিন্তা
সরণ—গমন
স্মিত—ঈষৎ হাস্যযুক্ত
স্মৃত—যাহা স্মরণ করা হইয়াছে
হর্ষ—আনন্দ
হ্রস্ব—খাটো, খর্ব, ক্ষুদ্র
স্বার্থ—নিজের প্রয়োজন
সার্থ—বণিগ্দল
সার্থক—সফল
হরিদশ্ব—সূর্য
হরিতাশ্ম—মরকতমণি
হিমাদ্রি—হিমালয়
হেমাদ্রি—সুমেরু পর্বত
কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ্য কর : ছেলের মনের কালি (কলঙ্ক) সর্বাঙ্গে মেখেই তো বিশ্বমাতা কালী (দেবী কালিকা) হয়েছেন। এ কাব্যের প্রতি সর্গে (অধ্যায়ে) স্বর্গ (দেবভূমি)-জ্যোতি করিছে বিরাজ। “গান শুনেই অন্নরস (খাদ্য) ছেড়ে ঠাকুর এখন অন্যরসে (অপর) মজেছেন।” “মায়া তত্ত্ব (গূঢ় অর্থ) নয়, কিন্তু তথ্য (প্রকৃত অবস্থা)।” আভিজাত্য এ শিশুর ভালপট-’পরে দীপ্যমান স্বর্ণাক্ষরে রাখে নাই আপন স্বাক্ষর (দস্তখত)। জনে জনে করিতে সাক্ষর (অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন) যুবজন উঠেছে মাতিয়া। অবিরাম (না থামিয়া) ঝমঝম চলেছে যে বৃষ্টি। অভিরাম (মনোরম) দৃশ্য হেন হেরিনি জীবনে। আপন (নিজ) কোলে ঝোল টানতে গিয়েই তাঁর ভরা আপণ (দোকান) বিলীন হল। সেনাদল শত্রুকে আক্রমণে উদ্যত (প্রস্তুত) হল। তার উদ্ধত (দুর্বিনীত) ব্যবহারে সকলেই মর্মাহত হলেন। তাঁর হৃদয় কমলের (পদ্মের) মতো কোমল (নরম)। “কৃত্তিবাস (শ্রীরাম পাঁচালী-রচয়িতা) কীর্তিবাস (বিখ্যাত) কবি এ বঙ্গের অলংকার।” রাজগুরু কুশাসনে (তৃণাসনে) উপবেশন করলেন। রাজার কু-শাসনে (অবিচারে) রাজ্য ধ্বংস হয়। গিরিশ (মহাদেব)-করে গিরীশ (হিমালয়) করে গৌরী-সম্প্রদান। পৃথিবী একটি বিরাট্ গোলক (গোলাকার বস্তু)। গোলোকের (বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মীই তো মর্ত্যে মা সারদা। চিত্ত (মন)-জয়ই সাধনার প্রথম ও শেষ কথা “যেমন চিত্রের (ছবির) পদ্মেতে পড়ে ভ্রমর ভুলে র’ল।” তার চোখেমুখে বিরক্তির লক্ষণ (চিহ্ন) ফুটে উঠল। “লক্ষ্মণ (রামানুজ) ভ্রাতৃভক্তির অন্নব্যঞ্জন।” জীব (প্রাণী)-হৃদিমাঝে সদা বসতি শিবের। সংসারের ঘানি টানতে টানতেই জিব (জিহ্বা) বেরিয়ে যাচ্ছে। “বাংলাদেশে বর্ষা (ঋতুবিশেষ) এসে লাগিয়ে দিল ধুম!” শত্রুর শিরস্ত্রাণ লক্ষ্য করে প্রহরী বর্শা (অস্ত্র) নিক্ষেপ করল। “দুঃখ বিনা (ব্যতীত) সুখলাভ হয় কি মহীতে?” রাজবালা বীণা (বাদ্যযন্ত্র)-বাদনে নিরত ছিলেন। বাঙালীর মুখে সে হাসি আর নেই। মাধবের কৃপায় মূকও (বোবা) মুখর হয়। “ও দুটি চরণ শীতল জানিয়া শরণ (আশ্রয়) লইনু আমি।” আপনাকে কোথায় দেখেছি স্মরণ (স্মৃতি) হচ্ছে না। “যেমন ভয়ংকর আস্য (মুখ), তেমনি অভয়ংকর হাস্য (হাসি)।” “অসীম সিন্ধুকে (সমুদ্রকে) বন্দী করতে পেরেছে কে কবে লোহার সিন্দুকে (বড়ো বাক্সে)?” বর্তমানে যে বই যত বেশী বিকৃত (শ্রীভ্রষ্ট) সে বই তত বেশী বিক্রীত (বিক্রয় করা হইয়াছে এমন)। নামে কিছু আসে যায় বইকি, কেননা নামই সব, নামহারা শুধু শব (মৃতদেহ)। সবাই যদি যজ্ঞ (বৈদিক ক্রিয়া) নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন, তাহলে দেশরক্ষার যোগ্য (উপযুক্ত লোক মিলবে কোথায়? পুরাণ (প্রাচীন লোকশিক্ষার কাব্যগ্রন্থ)-কাহিনী বলে কি হরিশ্চন্দ্র পুরানো (সেকেলে) হয়েছে? “যত করি তাড়া নাহি পাই সাড়া (আহ্বানের উত্তর), খুঁজে ফিরি সারা (সমস্ত) দেশটা।” কবি বৃক্ষচ্ছায়ায় শয়িত (শয়ান ছিলেন, শুশ্রূষাকারীরা তাঁকে ধরাধরি করে শয্যায় শায়িত (যাহাকে শোয়ানো হইয়াছে) করলেন। “শর (তীর)-জালে আচ্ছন্ন গগন।” একমাত্র অনুরাগের স্বরই (কণ্ঠধ্বনি) ঈশ্বরকে সরাসরি স্পর্শ করে। এমন সুগেয় (গাওয়া) গীতটি গেঁয়ো (গ্রাম্য) গায়কের কণ্ঠে পড়ে আর শ্রব্য রইল না। “ভক্তের ভালোবাসা (প্রেম) যাঁর সবচেয়ে ভালো বাসা (শ্রেষ্ঠ আশ্রয়) তিনিই তো পীতবাস।” “পাহাড়ের গম্ভীরতা (গাম্ভীর্য) ও পুকুরের গভীরতা (নিম্নের দিকে সুদূর বিস্তৃতি) দুইটিরই কিছুমাত্র লাঘব হইয়াছিল বলিয়া মনে হয় না।” “দেহকে যারা দেহাতীতের আলয় (আশ্রয়) বলে জেনেছে, তাঁরই আলোয় (আলোকে) যারা দেহালয়কে দেখেছে, একমাত্র তারাই বলতে পারে ‘আমার এই দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো। “ আপনার আগমনের অব্যবহিত (ব্যবধানশূন্য) পূর্বেই এতদিনের অব্যবহৃত (ব্যবহার করা হয় নাই এমন) এসরাজটি ঝাড়ামোছা হয়েছে। পরশ্ব (আগামীদিনের পরদিন) আপনাদের ওখানে যাচ্ছি। পরস্ব (পরের ধন)-অপহারীকে কে বিশ্বাস করে? “উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন (পূজা) করি তাঁরে।” প্রেমের বন্ধনেই (বাঁধন) সেই চির-অধরা ধরা দেন। “ভারতের কপালে (ললাটে) হিমাচল, তাই তার কপোলে (গণ্ডদেশে) জাহ্নবী-যমুনার ধারা।” রক্তকরবী (পুষ্পবিশেষ) ছিল নন্দিনীর প্রিয়তম অলংকার। “অলকে কুসুম না দিয়ো, শুধু শিথিল কবরী (খোঁপা) বাঁধিয়ো।” দৈত্যরাজ বলি (অসুরবিশেষ—প্রহ্লাদের পৌত্র) ছিলেন আন্তর বলে প্রচণ্ড বলী (বলবান্)। এমনকিছু কথা কাউকে বলা উচিত নয় যাতে তার প্রাণে বেদনা (ব্যথা) লাগে। একদানা ভাত যাদের জোটে না তাদের আঙুর-বেদানা (ফলবিশেষ) খেতে বলা উপহাস করা বইকি। কোনো প্রতিষ্ঠানের পত্তনের (আরম্ভ) মূলে প্রচণ্ড পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দরকার, কিন্তু স্বার্থপরতার সামান্যতম ঘুণেই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের পতন (বিনাশ) ঘটায়। “দীনতারা, ঘুচাও দীনের (দরিদ্র) দুর্দিন (সময়)।” অপভাষ (নিন্দা) ও অপভাষা (নিকৃষ্ট ভাষা) কারো মুখেই শোভা পায় না, তা তিনি যে-ই হন। “আশার আশা (আকাঙ্ক্ষা) ভবে আসা (আগমন)।” “সে যে গান শুনিয়েছিল হয়নি সেদিন শোনা (শ্রবণ করা), সে গানের পরশ লেগে হৃদয় হল সোনা (স্বর্ণ)।”
শুদ্ধীকরণ
যেকোনো ভাষা শুদ্ধভাবে লিখিতে হইলে সে ভাষার প্রতিটি শব্দের বানান শুদ্ধভাবে জানা চাই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বঙ্গভাষী ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ভাষাতেই বানানভুলের বহর ক্রমশঃ বাড়িয়া চলিয়াছে। তাহাদের ভাষা সুন্দর, ভাব স্বচ্ছ, অথচ অপরিমিত বানানভুল থাকায় লেখাটি পরীক্ষকের বিরক্তি জাগায়।
ছাত্রছাত্রীগণের এই যে বানানভুলের প্রবণতা ইহার পিছনে প্রেরণাও কম নাই। অত্যাধুনিকতার দোহাই দিয়া ব্যাকরণের নিয়ম লঙ্ঘন করিয়া ইচ্ছামতো বানান লিখিবার মোহ শিক্ষিতমহলেই যেখানে ক্রমবর্ধমান, অনেক কবি-সাহিত্যিক তথা তাঁহাদের গ্রন্থ প্রকাশকগণ বানানের বিশুদ্ধিরক্ষায় যেখানে চরম শৈথিল্যপ্রদর্শন করেন, শিক্ষার শক্তিশালী মাধ্যমরূপে স্বীকৃত দূরদর্শনের পর্দায় যেখানে বানানভুলের ছড়াছড়ি, তরল-মতি ছাত্রছাত্রীগণ সেখানে বানানভ্রান্তির সহজ শিকারে যে পরিণত হইবে ইহা তো খুবই স্বাভাবিক। ছাত্রসমাজের এই সঙ্কটমুহূর্তে শিক্ষকগণকেই সর্বাধিক যত্নবান্ হইতে হইবে। ছাত্র-শিক্ষক উভয়কেই মনে রাখিতে হইবে–মাতৃ-অঙ্গে পঙ্কনিক্ষেপের অধিকার কাহারও নাই, তা তিনি যেকোনো বিষয়ে যত বড়োই হউন না কেন এবং তাঁহার নামের পশ্চাতে দেশীবিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের খেতাব যত আয়ত-পরিমাণেই থাকুক না কেন।
বানানভুলের হাত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য ছাত্রছাত্রীদের এখন হইতেই হুঁশিয়ার হইতে হইবে। ব্যাকরণের সূত্রগুলি কণ্ঠস্থ করিতে হইবে, প্রতিটি শব্দ নির্ভুল উচ্চারণ করিতে হইবে, সে উচ্চারণ কান পাতিয়া শুনিতে হইবে, প্রতিটি শব্দের বানান সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করিতে হইবে, বারকয়েক লিখিয়া বানানগুলিকে আয়ত্ত করিতে হইবে। দশবার পড়িলে যে ফল পাওয়া যায়, একবার লিখিলে ততোধিক সুফল পাওয়া যায়। বিজ্ঞাপন বা পত্রপত্রিকা দেখিয়া বানান শিখিবে না। একখানি চলন্তিকা (অভিধান) বা সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সর্বদাই হাতের কাছে রাখিবে। সন্দেহ জাগিবামাত্র নির্ভুল বানানটি অভিধানে দেখিয়া লইবে। আগ্রহ, অধ্যবসায় আর নিয়মিত অভ্যাস ছাড়া বানানশিক্ষার আর কোনো সহজপথ নাই।
সমাসবদ্ধ পদটিকে বিচ্ছিন্নভাবে লেখা, পঙ্ক্তির শেষে কোনো শব্দ পুরাপুরি না ধরিলে কোন্ অংশে শব্দটিকে ভাঙিতে হয় ঠিকমতো না জানিয়া যেখানে—সেখানে ভাঙা—এ-সমস্তই বানানভুল বলিয়া ধরা হয়।
সচরাচর যে-সমস্ত শব্দ ছাত্রছাত্রীরা ভুল করিয়া থাকে, আমরা সেইসমস্ত শব্দের নির্ভুল রূপটিই তুলিয়া ধরিলাম, শিক্ষার্থীর সম্মুখে অশুদ্ধ রূপ তুলিয়া ধরা আদৌ মনস্তত্ত্বসম্মত নয় বলিয়াই এই ব্যবস্থা। বিশেষ প্রয়োজনস্থলে বন্ধনীমধ্যে সংশোধনের কারণটিও প্রদত্ত হইল। এই প্রসঙ্গে ণত্ববিধি, যত্ববিধি, সন্ধি, লিঙ্গ, বচন, বিশেষণ, সমাস, প্রত্যয় প্রভৃতি অধ্যায়গুলি ও তৎসংশ্লিষ্ট অনুশীলনীগুলি বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য। (আমরা ব্যাকরণসিদ্ধ শুদ্ধ রূপগুলিরই উল্লেখ যথাস্থানে করিলাম। সঙ্গে-সঙ্গে ব্যাকরণবিরুদ্ধ অথচ বহুপ্রচলিত শব্দগুলিরও উল্লেখ যথাযথ করিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীর পক্ষে ব্যাকরণবিরুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়—এই কথাটি নিজেদের স্বার্থেই ছাত্রছাত্রীগণের সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত।)
(১) ই, ঈ-ঘটিত : পৃথিবী, শারীরিক (শরীর + ষ্ণিক), শরীরী, পিপীলিকা, বিভীষিকা, বিভীষণ, নিমীলিত, সম্মিলিত, মরীচিকা, শ্রীমতী, মতি, বাসুকি, দাবি, দধীচি, দীধিতি (আলোক), মীমাংসা, রথী, সারথি, ভাগীরথী, বাল্মীকি, উন্মীলন, সম্মিলন, সুধী (সম্বোধনের একবচনেও সুধী, কদাপি সুধি নয়), অতীন্দ্ৰিয়, সমীহ, নীরাকার, ঈপ্সিত, গাণ্ডীবী, উষ্ণীষ, হীন, তুহিন, প্রীতি, প্রতীতি, প্রাচী, প্রতীচী, অবাচী, উদীচী, উদীচ্য, বীভৎস, ইঙ্গিত, অতীব, বীতশ্রদ্ধ, বীতরাগ, সমীরিত, অঞ্জলি, নির্ণেয়, নির্ণীত, গীতাঞ্জলি, নির্নিমেষ, আরতি, ভারতী, সমীচীন, উদাসীন, ঔদাসীন্য, সমীপ, পাণিনি, পরীক্ষা, অতীত, পরীক্ষিত, পরীক্ষিৎ, নিরীক্ষণ, নিরীক্ষিত, সীমন্ত, সিঁথি, কীর্তনীয়, কীর্তনিয়া (কীর্তনগান যাঁহার পেশা), কীর্তি, ভিড়, গণ্ডি, প্রিয়, নিয়তি, পুঞ্জিত, পুঞ্জীভূত, গৃহীত, গ্রহীতা, গ্রহীত্রী (গ্রহণ করেন এমন নারী), পীযূষ, গৃহস্থালি, পাকস্থলী, পাকস্থালী (রন্ধনপাত্র), উদীরিত, পূরবী, দেরি, দেবী, কিরীটী, কিরীটিনী, অনীকিনী, জৈমিনি, গরীয়সী, মহীয়সী, অরুন্ধতী, অপকারী, অপকারিতা (অপকারিন্ + তা, ন্ লোপ), উপকারী, উপকারিতা, প্ৰতিযোগী, প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উপযোগী, উপযোগিতা, কিঙ্কিণী, নীরস, বিরস, ফাল্গুনী (ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা), ফাল্গুনি (অর্জুন), কৃষিজীবী, মসীজীবী, বার্তাজীবী, জীবিকা, মনস্বী, মনীষী, মনস্বিতা, মনস্বিনী, সখীত্ব (নারীদের মধ্যে বন্ধুত্ব), সখিত্ব (বন্ধুত্ব), বিকীর্ণ, বিকিরণ, উদগীর্ণ, উদগিরণ, বিজিগীষা (বি—√জি + সন্ + অ + আ), বন্দী, বন্দিত্ব, দায়ী, দায়িত্ব, স্থায়ী, স্থায়িত্ব, একাকী, একাকিত্ব, একাকিনী, চমৎকারিত্ব, স্ত্রীত্ব, নারীত্ব, সর্বাঙ্গীণ, সর্বাঙ্গিক, ধন্বন্তরি, ত্রিপুরারি, স্থবির, মুরারি, শ্রোত্রিয়, অভীপ্সিত (অভি + ঈপ্সিত), উপাধি, পদবী, সলিল (জল), সলীল (লীলাযুক্ত), ভারবি, নীবার, জ্যোতিরীশ।
(২) উ, ঊ-ঘটিত : স্তূপ, স্তূপীকৃত, চূষ্য, চূষণীয়, মহীরুহ, দুরধিগম্য, উর্বর, ঊষর, মধুসূদন, নিষুদিনী, মুহূর্ত, মুহুর্মুহুঃ, মুমূর্ষু, ঊর্ধ্ব, অনূর্ধ্ব, তদূর্ধ্ব, সিন্দুর, সিঁদুর, নূপুর, সমূহ, শূন্য, ঊহ্য, মূঢ়, অব্যূঢ়, নূতন, নতুন, কটূক্তি, সরযূ, বিদ্রূপ, আকৃতি, উদ্ভূত, পরাভূত, অদ্ভুত [ অৎ (আশ্চর্যরূপে)—√ভূ + ডুতচ্—হ্রস্ব সূত্রানুসারে ধাতুর দীর্ঘস্বর হ্রস্ব হয় ]; কৌতুক, কৌতূহল, কেয়ূর, বৈদূর্য, দূষিত, দূষণীয়, দৃষ্য, প্রতিকূল, অনুকূল, বধু, ন্যূন, স্ফুরণ, শুশ্রূষা, শার্দূল, ধূপ, ধুনা, ধূম, ধুমধাম, দূর, দূরত্ব, দুরবস্থা, দুরন্ত, মূর্তি, মূর্ত, ময়ূর, পুণ্য, পূর্ণ, দুর্গা, দুর্গতি, ভুল, ক্রূর, প্রসূন, প্রসূত, স্ফুট, পরিস্ফুট, জাগরূক (√জাগৃ + ঊক), স্ফূর্তি, শূদ্র, পীযূষ, ঊরু (জানু), উরু (মহান), ধূসর, ধূলি, ধুলা, খেলাধুলা, ধুলো, ত্রিভুজ, স্থূল, হুলস্থুল, ধূর্ত, গণ্ডূষ, সূক্ষ্ম, শম্ভু, ধূর্জটি, স্বয়ম্ভূ, দুরূহ, আহুতি (যজ্ঞাগ্নিতে ঘৃতাদি দান), আহুতি (আহ্বান), ভূষণ, স্যূত, অনুস্যূত, বুভুক্ষা, বুভুক্ষু, উর্বশী, মুমুক্ষু, তৃষ্ণী, মূর্ছা, পুরাণ, পূরণ, পুরা: * মৃত্যুত্তীর্ণ, মরূদ্যান, লুতাতন্তু, যুথিকা, জুঁই, বিদুষী, বিদুর (কৃষ্ণভক্ত), বিদুর (বিশেষ দূরবর্তী), বিধুর (ক্লিষ্ট), বিরূপাক্ষ, চমু, ভুবন, ভূলোক, শূর, সুর, সূর, পূর্ব, পুব, পূজা, পূজক, পূজনীয়, পূজারী, পূজোপাসনা, পুজো, চ্যুত, অচ্যুত, চূত, চূড়া, কূপ, কুয়া।
(৩) খ, খ্য, স্খ, ক্ষ, ক্ষ্ম-ঘটিত : সখ্য, আখ্যা, কামাখ্যা, আখ্যাত, ব্যাখ্যা, ব্যাখ্যাত, ব্যাখ্যাত্রী, আলেখ্য, দক্ষ, যক্ষ, পক্ষ, পাক্ষিক, শিক্ষা, দীক্ষা, রুক্ষ, লক্ষণ (চিহ্ন), সমীক্ষা, মোক্ষ, ভক্ষ্য, ভক্ষণ, লক্ষ্য, লক্ষিত, লক্ষ্মী, লক্ষ্মণ (রামানুজ), সূক্ষ্ম, পক্ষ্ম (নেত্রলোম), যক্ষ্মা, স্খলন, স্খলিত, ক্ষুণ্ণ, ক্ষালন, ক্ষালিত, শঙ্খ, শৃঙ্খলা, উচ্ছৃঙ্খল, খিন্ন, পুঙ্খানুপুঙ্খ, কাঙ্ক্ষিত, আকাঙ্ক্ষা, শুভাকাঙ্ক্ষী।
(৪) ট্, ট, ঠ-ঘটিত : ইষ্ট, যথেষ্ট, আষ্টে-পৃষ্ঠে, ষষ্টি (৬০), যষ্টি, ষষ্ঠী, গোষ্ঠী, গরিষ্ঠ, লঘিষ্ঠ, ভূমিষ্ঠ, কনিষ্ঠ, স্বাদিষ্ঠ, বরিষ্ঠ, ঘনিষ্ঠ, পাপীষ্ঠ, পুষ্ট, পিষ্ট, স্পষ্ট, পৃষ্ঠ, পৃষ্ঠা, অঙ্গুষ্ঠ, দৃষ্টি, দিঠি, ষট্চক্র, ষট্পদ, পিষ্টক, ইষ্টক, ষট্ক (Sestet)।
(৫) র, ড়, ঢ়-ঘটিত : আষাঢ়, প্রগাঢ়, দৃঢ়, নীর, নীড়, গরুড়, আড়ম্বর, ষড়যন্ত্র, ষড়বিংশ, ষড়ভুজ, আড়ষ্ট, গূঢ়, রূঢ়, আরূঢ়, লীঢ়, অব্যূঢ়। শিশুদের বর্ণপরিচয় করাইবার সময় ব-এ শূন্য র, ড-এ শূন্য র, ঢ-এ শূন্য র—এইরূপ ভুল শিক্ষা দিবার ফলেই শিশুরা র, ড়, ঢ় বর্ণগুলির নামও শিখে না, প্রত্যেকটির সুনির্দিষ্ট উচ্চারণও শিখে না। এমন-কি আকাশবাণী দূরদর্শন প্রভৃতি শিক্ষাপ্রসারের শক্তিশালী মাধ্যমগুলিতে শিক্ষিত বয়স্কদের মুখেও এই বর্ণ-তিনটির যে ব্যাপক উচ্চারণ-বিকৃতি শুনা ও দেখা যাইতেছে, তাহার ফল অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক হইতে পারে। এবিষয়ে শিক্ষক-সমাজকেই অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করিতে হইবে। “ছাত্রগণের কর্তব্য অনুগঙ্গ বঙ্গদেশের লোকদের মুখে উচ্চারণ শুনিয়া প্ৰকৃত উচ্চারণ শিখিয়া লওয়া।”—কবিশেখর কালিদাস রায়।
(৬) ত, ৎ, থ-ঘটিত : উচিত, ভবিষ্যৎ, কুৎসিত, অজিত, সনৎ, ইন্দ্ৰজিৎ, রণজিৎ, রঞ্জিত, জগৎ, জাগ্রৎ, ঐরাবত, ঋণগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত, অভ্যস্ত, গৃহস্থ, মুখস্থ, অস্থি, পরাস্ত, সারস্বত, খদ্যোত, প্রদ্যোত, নিশ্চিত, কৃৎ, তদ্ধিত, অর্জিত, উপস্থিত, তফাত, ফেরত, কৈফিয়ত, পঞ্চায়ত, জমায়ত, ফুরসত, মারফত, পরীক্ষিৎ (রাজাবিশেষ), পরীক্ষিত, পশ্চাৎপদ, ভগবৎ, ভাগবত, নিশীথ, স্বাস্থ্য, করিতকর্মা, নিরাপৎসু, মৃতবৎ, জীবিতবৎ, অদ্ভুত, শরবত, সহবত, বিদ্যুৎ, বৈদ্যুত, উতরাই, হারজিত।
(৭) ণত্ব-বিধি-ঘটিত : প্রমাণ, প্রণাম, প্রাণ, পরান, শূন্য, প্রণাশ, প্রনষ্ট (নশ্ ধাতুর তালব্য শ মূর্ধন্য ষ হইলে দন্ত্য ন আর মূর্ধন্য ণ হয় না), বিপণন, বানপ্রস্থ, বণিক্, দুর্নাম, অর্চনা, অবনী, ক্ষুণ্ণ, সর্বাঙ্গীণ, প্রাঙ্গণ, পূর্বাহ্ণ (হ্ + ণ = হু); অপরাহ্ণ, প্রাহ্ণ, পরাহ্ণ, সায়াহ্ন (হ্ + ন = হ্ন), মধ্যাহ্ন, চিহ্ন, জাহ্নবী, রসায়ন, রামায়ণ, উত্তরায়ণ, দক্ষিণায়ন, রুগ্ণ (গ্ ও ণ সংযুক্তভাবে লেখা যায় না, এইজন্য পাশাপাশি বসাইতে হয়; কিন্তু গ্ + ন = গ্ন : ভগ্ন, মগ্ন, লগ্ন); রণেন্দ্র, বেণী, লক্ষ্মণ (নামবিশেষ), লক্ষণ (চিহ্ন), মূর্ধন্য, গগন, গণনা, কনক, কণিকা, যন্ত্রণা, পূর্ণ, পুণ্য, দরুন, দারুণ, ধরন, ধারণ, কঙ্কণ, কীর্তন, স্থাণু, গুণ, গুণন, ফাল্গুন, আগুন, মৃন্ময়, চিন্ময়, হিরণ্ময়, হিরণ্ময়ী, ক্ষুন্নিবৃত্তি, পাণিনি, ফণিনী, ক্ষত্ৰিয়াণী, গ্রন্থন, মুদ্রণ, ষাণ্মাসিক, অগ্রহায়ণ, অঘ্রান, গুঞ্জরন, শিহরন, কার্পণ্য, ভ্রাম্যমাণ, অপেক্ষমাণ, অপেক্ষ্যমাণ, ক্ষীয়মাণ, বক্ষ্যমাণ (পরে বক্তব্য), প্রবাহিণী, উচ্চার্যমাণ (যাহা উচ্চারিত হইতেছে), ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মন্, ম্রিয়মাণ, ক্রিয়মাণ, অপস্রিয়মাণ (কর্মবাচ্যে), অপসৃয়মান (কর্তৃবাচ্যে = বাংলা শব্দ, পরস্মৈপদী ধাতুতে শানচ্ প্রয়োগ সংস্কৃত ব্যাকরণসিদ্ধ নয় বলিয়া ন), পরিবহণ, নির্বাচন, নির্বাপণ, নির্গমন, কুণাল, লুণ্ঠন, লণ্ঠন, মাণবক, ভিক্ষান্ন, বর্ষীয়ান, ষণ্ণবতি।
(৮) শ্, খ্, স্-ঘটিত : উর্বশী, শর্ত, শখ, শৌখিন, ভস্ম, ভীষ্ম, শস্য, শোষ্য, শিষ্য, অবতংস, নিস্তব্ধ, স্বাতী, ঈষৎ, শ্রীচরণেষু, সুচরিতাসু, নিরাপৎসু, স্নেহাস্পদেষু, দুর্বাসা, অভিলাষ, অভিসার, পুরস্কার, পরিষ্কার, পুষ্করিণী, আবিষ্কার, বহিষ্কার, বহিষ্করণ, অনুসন্ধান, আনুষঙ্গিক, নিষূদন (ই-বর্ণ ও উ-বর্ণান্ত উপসর্গের পর সন্ন্জ সুদ্ ইত্যাদি ধাতুর স য হয়), শোষণ, শাসন, বিস্ময়, বিস্মৃত, প্ৰশংসা, পরিস্ফুট, বিস্ফারিত, বিস্ফোটক, বিস্ফোরণ, নৃশংস, দুর্বিষহ, ঊষা, উষসী, প্রদোষ, প্রতিষেধক, পরিষেবা, প্রসুপ্ত, সুষমা, স্যূত, শুশ্রূষা, সংশয়, সংস্রব, জিনিস, শহর, পুলিস, পালিশ, পোশাক, পোষক, পৃষ্ঠপোষক, ধূলিসাৎ, অগ্নিসাৎ, সশঙ্ক, শশাঙ্ক, সস্তা, শসা, পুষ্প, বৃহস্পতি, সিদ্ধ, নিষিদ্ধ, নিষ্পন্ন, আসার, আষাঢ়, নিস্পন্দ, নিস্পৃহ, পরিশ্রুত, চাক্ষুষ, অভিষেক, পরিষিক্ত, অভিশাপ, অভিসম্পাত, আশিস্, আশীর্বাদ, শ্বশ্রূ, শ্মশ্রু, শান্ত, সান্ত (অন্ত-বিশিষ্ট), সান্ত্বনা, পসলা, পসরা, পসার, পসারী, হিমশিম, মুশকিল, তামাশা, মজলিস, সুপারিশ, শ্রুতি (শ্রবণ, কর্ণ, বেদ), সুতি (ক্ষরণ), স্রবণ।
(৯) সন্ধি-ঘটিত : উত্ত্যক্ত (উদ্ + ত্যক্ত), দুরদৃষ্ট (দুঃ + অদৃষ্ট), দুরবস্থা (দুঃ + অবস্থা), সন্ন্যাস, কটূক্তি, মরূদ্যান, মৃত্যুত্তীর্ণ (মৃত্যু + উত্তীর্ণ), জাত্যভিমান (জাতি + অভিমান), শুদ্ধ্যশুদ্ধি, ভূম্যধিকারী, অধ্যয়ন, অত্যন্ত, অত্যধিক, যদ্যপি (যদি + অপি, যদ্যপিও নহে, কেননা সংস্কৃত অপি এবং বাংলা ও একার্থক), অদ্যাপি, মুষ্ট্যাঘাত (মুষ্টি + আঘাত), হৃৎকমল, হৃৎকম্প, হৃৎস্পন্দন, হৃৎপিণ্ড, হৃৎপদ্ম, হৃদ্গত, হৃদরোগ, হৃবিহারিণী, হৃন্মন্দির, হৃৎপ্রকাশনী, হৃদযোগ, হৃদযমুনা, মৃভাণ্ড, মৃৎপাত্র, বিদ্যুৎস্ফুরণ, পশ্বধম (পশু + অধম), পশ্বাচার, মদনুজ, তদনুরূপ, ত্বদনুরূপ, পশ্চাদপসরণ, জ্যোতিরিন্দ্র (জ্যোতিঃ + ইন্দ্ৰ), অন্তরিন্দ্রিয়, বহিরাগত (বহিঃ + আগত), পুনরন্বেষণ, শিরোদেশ, শিরশ্ছেদ, শিরচ্যুত, ইতঃপূর্বে, স্বতঃসিদ্ধ, শিরঃপীড়া, মনঃক্ষুণ্ণ, মনঃকষ্ট, তেজঃপুঞ্জ, তেজোময়, তেজশ্চন্দ্র, নভঃস্পর্শী, নভোলোভী, নভশ্চর (অবশ্য খাঁটী বাংলা শব্দ হিসাবে নভতল, নভচর শিষ্ট প্রয়োগ, কিন্তু নভোচর বা নভোতল নয়), মনোযোগ, তপোবল, শিরোরত্ন, শিরোধার্য, স্রোতঃপথ, স্রোতোবেগ, ইতোমধ্যে, সদ্যোজাত (সদ্যঃ + জাত), মনোমোহন, মনোনয়ন, মনোবাঞ্ছা, মনশ্চেতনা, উজ্জ্বল, ‘সংবিৎ, প্রিয়ংবদা, সংবৎসর, নীরত, নীরদ (নিঃ + রদ), নীরস, নীরক্ত, নীরোগ, নীরব, সম্মুখ, সম্মান, সম্মত, সম্মোহন, সম্মেলন, সন্মার্গ, বয়ঃপ্রাপ্ত, বয়ঃকনিষ্ঠ, অধঃপাত, অধঃপতন, অধোবদন, অধোমুখ, বয়োবৃদ্ধ, ত্রয়োদশী, ত্রয়স্ত্রিংশ, পৃথগন্ন (পৃথক্ + অন্ন), বাগীশ্বরী, ষড়যন্ত্র (ষট্ + যন্ত্র), ষড়দর্শন, ষড়বিঘ্ন, ষড়ভুজ, ষড়ঋতু, ষড়স, ষড়ধা, গজ, ষড়ভাব, ষড়শীতি, ষোড়শ, [ পৃথক্, বাক্, প্রাক্, দিক্, ষট্, বিরাট্ শব্দের হস্ চিহ্ন অত্যাবশ্যক ]; উচ্ছ্বাস (উদ্ + শ্বাস), এতদঞ্চলে (এতদ্ + অঞ্চলে), বিদ্যুদালোক (বিদ্যুৎ + আলোক), তড়িদাহত (তড়িৎ + আহত), বিদ্যুৎপ্রবাহ, বিদ্বদ্বল্লভ, বিদ্যুদ্বরূপিণী, এতদ্বারা (এতদ্ + দ্বারা), বিপদগ্রস্ত, বিপৎপাত, বিপৎসঙ্কুল, বিপদভঞ্জন, বিপন্মুক্ত, আপৎকালীন, তৎসম, তৎসত্ত্বেও, এতৎসন্নিধানে, জ্যোতীরূপা (জ্যোতিঃ + রূপা), অগ্ন্যুৎপাত, অগ্ন্যুদ্গার, অগ্ন্যুদ্গম, জ্যোতিরীশ, চক্ষুরত্ন, তদপেক্ষা, জগদিন্দ্র (জগৎ + ইন্দ্ৰ), জগদীশ, ভগবদ্গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত, ভগবদুপাসনা, জগদানন্দ, জগদতীত, চিদঘন, বাগ্রহ্ম, হরিশ্চন্দ্র, জ্যোতিহীন, নিরবচ্ছিন্ন, মনশ্চক্ষু, মনস্তুষ্টি, মনশ্চিকিৎসা, মনোজিৎ, স্বাধীনতোত্তর, দ্ব্যর্থ, শিরচুম্বন, সদ্যশ্ছিন্ন, বক্ষোদেশ, বক্ষঃপঞ্জর। কিন্তু মনান্তর, মনচোরা, মনতোষ, বক্ষোপরি, বক্ষপট, শিরোপরি, বয়সোচিত প্রভৃতি শব্দ বাংলার নিজস্ব সৃষ্ট বলিয়া সঙ্গতভাবেই শিষ্টপ্রয়োগ হিসাবে গণ্য হইতেছে।
(১০) সমাস-ঘটিত : রোগী, নীরোগ, দোষী, নির্দোষ, জ্ঞানী, নিজ্ঞান, অজ্ঞান, ধনী, নির্ধন, পিতৃহারা, মাতৃজাতি, মাতৃদেবী, মাত্রালয়, ভ্রাতৃবৃন্দ, গুণিগণ (গুণিন্ + গণ—ন্ লোপ), ধনিগৃহ, স্বামিপুত্র (স্বামিন্ + পুত্র–ন্ লোপ), বিদ্বৎসমাজ, যুবসভা, যুবশক্তি, মহিমমণ্ডিত (মহিমন্ + মণ্ডিত–ন্ লোপ), গরিমময়, নীলিমদেবী (নীলিমন্ + দেবী–ন্ লোপ), নীলিমলেখা (“পুবদিগন্ত দিল তব দেহে নীলিমলেখা”–রবীন্দ্রনাথ, অথচ “সেদিন কবিত্বহীন বিধাতা একা রবেন বসে নীলিমাহীন আকাশে।”—রবীন্দ্রনাথ); গরিমমণ্ডিত, মহিমরঞ্জন, রাজগণ, যুবরাজ, হংসডিম্ব, করিশিশু, ছাগদুগ্ধ, হস্তিদল, হস্তিশাবক, পক্ষিশাবক, পক্ষিরব, করিযূথ, কালিদাস, কালীপ্রসাদ, কালীপদ, কালীকিঙ্কর, কালীশঙ্কর, দেবিদাস, ষষ্ঠিদাস, দেবীপ্রসাদ, চণ্ডীদাস বা চণ্ডিদাস, যোগিগণ, যোগিরাজ, মহাত্মগণ, দুরাত্মবৃন্দ, পথিপ্রদর্শক, প্রাণিতত্ত্ব, সাক্ষিস্বরূপ, স্থায়িভাবে, ফণিভূষণ (ফণিন্ + ভূষণ–ন্ লোপ), শশিমুখী, শশিভূষণ, কিন্তু শশীবাবু (বাংলা শব্দে সংস্কৃত সমাসের নিয়ম খাটে না), ছাত্রীগণ, কর্মিবৃন্দ, স্বার্থ, সার্থক, লজ্জিত, সলজ্জ (লজ্জার সহিত বর্তমান), সক্ষম (ক্ষমার সহিত বর্তমান), শঙ্কিত, সশঙ্ক (শঙ্কার সহিত বর্তমান), সশ্রদ্ধ, কৃতজ্ঞ, সানন্দ, নির্দোষা, অপরাধী, নিরপরাধ, নিরপরাধা, নিরভিমান, নিরভিমানা, সালংকারা, পিতামাতৃহীন বা মাতাপিতৃহীন (মাতাপিতা নাই যাহার), মাতৃপিতৃহীন (মাতামহ নাই যাহার), পিতৃমাতৃহীন (পিতামহী নাই যাহার), পদস্খলন, দোষক্ষালন, সুবুদ্ধি, অহর্নিশ, অহোরাত্র (অহন্ + রাত্রি), দিবারাত্র (অর্ধ, দিবা, পুণ্য, মধ্য, পূর্ব প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে সমাসে রাত্রি শব্দ রাজ হয়)। ঘটনাটা মধ্যরাত্রেই ঘটেছে। এখন রোজ পূর্বরাত্রে লোডশেডিং চলছে।—কিন্তু পূর্বরাত্রিতে (গতরাত্রি) রোগিণী নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছেন।
মাতৃবৃন্দ স্ত্রীলোক প্রভৃতি সমাসবদ্ধ পদ সংস্কৃতমতে পুংলিঙ্গ। সেই হিসাবে ইহাদের তৎসম বিশেষণগুলিও পুংলিঙ্গ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। গরীয়ান্ মাতৃবৃন্দ। সুকৃতিশালী স্ত্রীলোক। মনোরম রমণীগণ।
সরোষ, সশ্রদ্ধ প্রভৃতি বহুব্রীহি সমাসনিষ্পন্ন শব্দগুলির অনুকরণে সশঙ্কিত, সকরুণ, সচকিত, সকম্পিত, সকৃতজ্ঞ, সলজ্জিত, সকাতর প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ সংস্কৃত ব্যাকরণসিদ্ধ না হইলেও দীর্ঘদিন ধরিয়া বাংলা ভাষায় চলিয়া আসিতেছে।—”স্মিতহাস্যে নাহি চল সলজ্জিত বাসরশয্যাতে স্তব্ধ অর্ধরাতে।”—রবীন্দ্রনাথ।
সঠিক, সকৃতজ্ঞ শব্দগুলির সৃষ্টি ও প্রয়োগ-সম্বন্ধে আচার্য সুনীতিকুমারের মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। “ “বেঠিক’ এই তিন-অক্ষর শব্দটির সঙ্গে পাল্লা দিবার জন্য সঠিক শব্দটির সৃষ্টি। এখানে ‘স’ শব্দটির অর্থ ‘সহিত’ নয়, ‘অতিশয়’ (স—intensive), সঠিক = খুব ঠিক।” সেইরূপ “সকৃতজ্ঞ = নিরতিশয় কৃতজ্ঞ।”
(১১) প্রত্যয়-ঘটিত : অনুষ্ঠাতব্য, শ্রোতব্য (শ্রুতব্য নয়), দূষণীয় (দোষণীয় নয়), গ্রহীতব্য, গ্রহীতা (কর্তৃবাচ্যে—পুং), বন্দ্য, বন্দনীয়, লক্ষ্য, লক্ষণীয়, সেব্য, সেবনীয়, দণ্ড্য, দণ্ডনীয়, গণ্য, গণনীয়, পূজ্য, পূজনীয়, চর্ব্য, চর্বণীয়, সহ্য, সহনীয়, গ্রাহ্য, গ্রহণীয়, চিন্ত্য, চিন্তনীয়, চূষ্য, চূষণীয়, মান্য, মাননীয়, উচ্চার্য, উচ্চারণীয়, বিশ্বাস্য, বিশ্বসনীয়, আস্বাদ্য, আস্বাদনীয়, রম্য, রমণীয় [ ধাতুতে হয় ণ্যৎ যৎ প্রত্যয়ের যেকোনো একটি, না হয় অনীয় প্রত্যয় যোগ কর : একই সঙ্গে ণ্যৎ (বা যৎ) এবং অনীয় যুক্ত হয় না ]; পরিত্যাজ্য [ পরি—√ত্যাজ্ + ণ্যৎ : বানানটি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর, কদাপি পরিত্যজ্য নয়। ‘পরিত্যজ্য’ সংস্কৃত অসমাপিকা ক্রিয়া, যাহার অর্থ ‘পরিত্যাগ করিয়া’। তিষ্ঠ, ত্রাহি প্রভৃতি অতি-মুষ্টিমেয় কয়েকটি সংস্কৃত সমাপিকা ক্রিয়া বাংলায় চলে। “তিষ্ঠ কেশরী, দোলা হতে এস নেমে”—কবিশেখর কালিদাস রায়। “আবার ‘ত্রাহি ত্রাহি’ ডাক পড়িয়া গেল।”—মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ]; বিদ্যা, বিদ্বান্, জাগ্রৎ [ জাগ্রত শব্দটি সংস্কৃত বিশেষণ নয়, ক্রিয়াপদ (√জাগ্ + লোট্ ত)—সংস্কৃত ক্রিয়াপদ বাংলায় চলে না; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ শব্দটির বহুল প্রয়োগ করিয়াছেন]; উচ্চার্যমান, প্রতীক্ষমাণ [ যিনি প্রতীক্ষা করিতেছেন ], অপেক্ষ্যমাণা (যে নারীর জন্য অপেক্ষা করা হইতেছে), লজ্জমান, ত্রপমাণা, ম্রিয়মাণ, ক্রিয়মাণ, অপসৃয়মান (কর্তৃবাচ্যে), কিন্তু অপস্রিয়মাণ (যেটিকে অপসারিত করা হইতেছে : কর্মবাচ্যে); যেমন : রঙ্গমঞ্চে বাল্মীকির আশ্রম ক্রমশঃ অপস্রিয়মাণ (কর্মবাচ্যে) হইতে লাগিল। আবার অপসৃয়মান (শব্দটি সংস্কৃত ব্যাকরণবিরুদ্ধ বলিয়াই ধাতুর সৃ এবং প্রত্যয়ের ন অটুট রহিয়াছে) : “পশ্চাতে তাঁর অপসৃয়মান দ্বাপরযুগের সূর্যাস্তের আলো।” (বানান দুইটি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর); মোহ্যমান (মুহ্যমান অশুদ্ধ প্রয়োগ : চলন্তিকা দ্রষ্টব্য), অনুদিত (ভাষান্তরিত অর্থে কর্মবাচ্যে এবং পরে উদিত অর্থে কর্তৃবাচ্যে), আহুত (অগ্নিতে সমর্পিত <√ হু), আহুত (যাহাকে আহ্বান করা হইয়াছে <√ ত্বে), শয়িত (কর্তৃবাচ্যে), শায়িত (কর্মবাচ্যে—যাহাকে শোয়াইয়া দেওয়া হইয়াছে), উত্ত্যক্ত (উদ্—√ত্যজ্ + ক্ত, সন্ধি লক্ষ্য কর), পৃষ্ট (√প্রচ্ছ + ক্ত), পরীক্ষিৎ (পরি—√ঈক্ষ্ + ক্বিপ্ কর্তৃবাচ্যে), পরীক্ষিত (পরি—√ঈক্ষ্ + ক্ত কর্মবাচ্যে), রণজিৎ, রঞ্জিত, অধ্যয়ন, সৰ্জন (সৃজন নয়—একমাত্র বিসর্জন রূপটি দৃষ্ট হয়), স্খলন, ক্ষালন (স্খালন নয়), দোষী (দূষী ‘নয়), অনুরাগী, প্রতিযোগী, অধিকারী, প্রতিদ্বন্দ্বী, অভিলাষী (কিন্তু অনুরাগিগণ, কর্মিবৃন্দ, আরোহিবর্গ, প্রতিযোগিবৃন্দ, যাত্রিদল, প্রতিদ্বন্দ্বিগণ—গণ, বৃন্দ, দল, গোষ্ঠী ইত্যাদির যোগে ইন্ ভাগান্ত মূল শব্দের অন্ত্য ন্ লুপ্ত), জিগীষা, অভীপ্সা, চিকীর্ষা, উপচিকীর্ষা, শুশ্রূষা, শুশ্রূষ, অভিষেক, অভিষিক্ত, পরিষেবক, পরিষিক্ত, সেচন (সিঞ্চন নয়), মন্থন, মথিত [ মস্থিত নয়, √মস্থ + ক্ত, ন্ লোপ। রবীন্দ্রনাথ মস্থিত প্রয়োগ করিয়াছেন—”সে মিলনে আধ্যাত্মিকতা পরিপূর্ণ মাত্রায় মন্থিত হইয়া উঠে।”—‘পঞ্চভূত’ ]; পণ্ডিতম্মন্য, কৃতার্থম্মন্য, আকাঙ্ক্ষা (আ—√কাঙ্ক্ষ + অ + আ), হিতাকাঙ্ক্ষী, ন্যায্য, ব্যাধি (বি-আ—√ধা + কি), ব্যধিকরণ (বি-অধি—√কৃ + অনট্), ব্যভিচারী, ব্যবধান, ব্যবহার; এলায়িত (বাংলা শব্দ), আলুলায়িত (√আলুলায় নামধাতু + ক্ত), আলুলিত।
পরিষদ্ (সভা), পারিষদ (সভ্য), পার্বত, পার্বতী, ভৌম, সৌম্য, সারস্বত, ভগবৎ, ভাগবত (ভগবৎ + ষ্ণ), অন্ত (বি), অন্ত্য (বিণ), একতা, ঐক্য (এক + ষ্ণ্য), ঐকতান (একতান + ষ্ণ, কদাপি ঐক্যতান নয়), ঐকমত্য (একমত + ষ্ণ্য, কদাপি ঐক্যমত নয়), একত্র (এক + এ–একত্রে বা একত্রিত নয়, সপ্তম্যন্ত পদে এ বা ইত হয় না), কাঞ্চি, দাশরথি, আর্জুনি (ষ্ণি প্রত্যয়সিদ্ধ বলিয়া ই-কারান্ত), গার্গ্য, জামদগ্ন্য, যাজ্ঞবল্ক্য, মাহাত্ম্য, অগস্ত্য, সাংখ্য, দৌরাত্ম্য, দৈর্ঘ্য, বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য, যাথার্থ্য [ ষ্ণা প্রত্যয়সিদ্ধ বলিয়া অন্ত্য য-ফলাটি অপরিহার্য। শব্দের শেষে রেফ ( ́) সমন্বিত ব্যঞ্জন বা র্-ফলা, অথবা সংযুক্ত বর্ণ থাকিলে, শব্দটিতে যখন ষ্ণ্য প্রত্যয় যুক্ত হয় তখন নবগঠিত শব্দটিতে প্রত্যয়ের য-ফলাটি লোপ করিবার একটা সহজ প্রবণতা দেখা দেয়; এটি মারাত্মক অভ্যাস ]; পৌরোহিত্য (পুরোহিত + ষ্ণ্য, রো লক্ষ্য কর), ভৌগোলিক (ভূগোল + ষ্ণিক, গো লক্ষ্য কর), উৎকর্ষ (উদ্—√কৃষ্ + অল্—শব্দটি নিজেই বিশেষ্য : সুতরাং অতিরিক্ত তা প্রত্যয়যোগে উৎকর্ষতা করিবার প্রয়োজন নাই ]; অপকর্ষ, দারিদ্র্য (দারিদ্র্যও হয়; দরিদ্র + ষ্ণ : চলন্তিকা দ্রষ্টব্য) বা দরিদ্রতা, যাথার্থ্য বা যথার্থতা, দৌর্বল্য বা দুর্বলতা, পৌরুষ বা পুরুষত্ব, ঔদার্য বা উদারতা, সারল্য বা সরলতা, বৈশিষ্ট্য বা বিশিষ্টতা, শৈথিল্য বা শিথিলতা, স্বাতন্ত্র্য বা স্বতন্ত্রতা, বৈচিত্র্য বা বিচিত্রতা, চাতুর্য বা চতুরতা, মাধুর্য বা মধুরতা, দৈন্য বা দীনতা, নৈঃসঙ্গ্য বা নিঃসঙ্গতা, জাড্য বা জড়তা, সাম্য বা সমতা [ দরিদ্র, যথার্থ, দুর্বল ইত্যাদি বিশেষণে হয় ষ্ণ্য, না হয় ত্ব বা তা প্রত্যয় যোগ করিয়া বিশেষ্যপদ পাইবে। একই সঙ্গে ষ্ণ্য এবং ত্ব বা তা প্রত্যয় যোগে লব্ধ রূপটি ব্যাকরণসঙ্গত নয়। প্রশ্নে এইরূপ অশুদ্ধ রূপের সংশোধন করিতে বলিলে ষ্ণ্য বা ত্ব বা তা প্রত্যয়সিদ্ধ যেকোনো একটি শুদ্ধ রূপ দিতে পার; তবে ষ্ণ্য-প্রত্যয়ান্ত রূপটি দেওয়াই অধিকতর বাঞ্ছনীয়]; সখ্য (সখি + ষ্ণ্য : কদাপি সখ্যতা নয়), স্বত্ব (স্ব + ত্ব : অধিকার), সত্ত্ব (সৎ + ত্ব), মহত্ত্ব (মহৎ + ত্ব), সত্তা [ বিদ্যমানতা অর্থে সৎ + তা, কদাপি সততা নয়, বা সৎ + তা = সত্ত্বা-ও নয়, কেননা ত্বা বলিয়া কোনো প্রত্যয় নাই ]; অন্তঃসত্ত্বা [শব্দটি অন্তরে সত্ত্ব আছে এই অর্থে নিত্য স্ত্রী বলিয়া আ প্রত্যয়যুক্ত হইয়াছে]; সামর্থ্য (সমর্থ + ষ্ণ্য), ঔদ্ধত্য (উদ্ধত + ষ্ণ্য), প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অপকারিতা (তা প্রত্যয়-যোগে প্রাতিপদিকের অন্ত্য ন্ লুপ্ত হইয়াছে), নীলিমদেবী, গরিমময়, মহিমময়ী, গরিমমণ্ডিত (ইমন্ প্রত্যয়ান্ত শব্দের অন্ত্য ন্ লোপ পায়), মধুরিমা (মাধুরিমা নয়), মাধুরী, পাশ্চাত্য (দক্ষিণাপশ্চাৎপুরসস্ত্য সূত্রানুযায়ী পশ্চাৎ + ত্যক্—ক্ ইৎ, ত্য থাকে); ত্রিবার্ষিক, চতুর্বার্ষিক, পঞ্চবার্ষিক (দ্বিতীয় পদের আদ্যস্বরের বৃদ্ধি)। কিন্তু পারলৌকিক, ঔদৈহিক, ঐহলৌকিক, পাঞ্চভৌতিক (প্রাতিপদিকের অন্তর্গত উভয় পদেরই আদ্যস্বর বৃদ্ধি পাইয়াছে), প্রফুল্ল, উৎফুল্ল, ব্যাকুল, আকুল (শব্দগুলি নিজেই বিশেষণ, তাই অতিরিক্ত ইত প্রত্যয় যোগ করিয়া প্রফুল্লিত, আকুলিত, ব্যাকুলিত করিবার প্রয়োজন নাই); শ্রীমান্ (শ্ৰী + মতুপ্—কর্তৃকারকের একবচন), অংশুমান্, বুদ্ধিমান্, রুচিমান্, সংস্কৃতিমান্ কিন্তু লক্ষ্মীবান্ [ লক্ষ্মী শব্দের উপধা ম্ থাকায় মতুপ্ ৰতুপ্ হইয়া লক্ষ্মীবৎ শব্দ হইয়াছে, তাহারই কর্তৃকারকের একবচনে লক্ষ্মীবান্ ], ভগবান্ (অ-বর্ণান্ত শব্দের উত্তর মতুপ্ বতুপ্ হয়), শ্রদ্ধাবান্, আত্মবৎ [ আত্মন্ + মতুপ্–ন্ লোপ, এবং আত্মন্ শব্দের উপধা অ থাকায় তৎপরবর্তী মতুপ্ বতুপ্ হইয়াছে ]; কৰ্তৃত্ব, নিয়ম্ভূত্ব।
স্তূপীকৃত (স্তূপ + অভূততদ্ভাবে দ্বি + √কৃ + ক্ত, শব্দের অন্ত্য অ ঈ হইয়া স্তূপী হইয়াছে), রাশীকৃত (রাশি + অভূততদ্ভাবে চি + √কৃ + ক্ত, রাশি’র অন্ত্য হ্রস্বস্বর দীর্ঘ হইয়াছে), লঘুকরণ (লঘু + অভূততদ্ভাবে চি + √কৃ + অনট্—’লঘুর অন্ত্য হ্রস্বস্বর দীর্ঘ হইয়াছে), তদ্রূপ রাষ্ট্রীয়ীকরণ, দ্রবীভবন, নবীভবন, নিজস্বীকরণ, নবীভূত, দ্রবীভূত, ভস্মীভূত, আধুনিকীকরণ, বাক্যান্তরীকরণ, জাতীয়ীকরণ, একত্রীকরণ, নিরস্ত্রীকরণ, নীরোগীকরণ (নীরোগ করা কাজটি), নীরোগীভবন (রোগমুক্ত হওয়া কাজটি), কিন্তু নীরোগভবন (রোগমুক্তদের বাসগৃহ—শব্দটি শুদ্ধ); নৈতিক (নীতি + ষ্ণিক), সাময়িক, কিন্তু আর্থনীতিক, রাজনীতিক, সামসময়িক (অর্থনীতি, রাজনীতি, সমসময় প্রভৃতি শব্দের কেবল আদি স্বরের বৃদ্ধি হয় বলিয়া অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক নয়, সমসাময়িক নয়; তবে ব্যাকরণদুষ্ট এইসব শব্দের প্রয়োগ বহুদিন চলিয়া আসিতেছে); মুখস্থ, গৃহস্থ, কণ্ঠস্থ, উদরস্থ (“থাকে যে” এই অর্থে অধিকরণবাচক পদের উত্তর স্থা ধাতুর স্থ যুক্ত হয়, কদাপি স্ত নয়); আবার “গ্রাস করা হইয়াছে” অর্থে করণবাচক পদের উত্তর √গ্রস্ + ক্ত = গ্রস্ত হয়; যেমন—রোগগ্রস্ত, ব্যাধিগ্রস্ত, জরাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ইত্যাদি; কদাপি গ্রস্থ লিখিও না। ধনশালী, বলশালী, সম্পৎশালী, সম্পত্তিশালিনী, সমৃদ্ধিশালী, সম্ভ্রমশালী (কদাপি সমৃদ্ধশালী সম্ভ্রান্তশালী নয়; কেননা বিশেষ্যপদের উত্তর শালিন্ প্রত্যয় যুক্ত হয়, বিশেষণের উত্তর নয়); দোষী, গুণী, ধনী, জ্ঞানী, অপরাধী, অহংকারী (আছে অর্থে ইন্ প্রত্যয়ান্ত শব্দ), কিন্তু নির্দোষ, নির্ধন, নিজ্ঞান, নিরপরাধ, নিরহংকার; এইসমস্ত বিশেষণে অ যোগে বিশেষ্যপদ হয় : নির্দোষতা, নির্গুণতা, অজ্ঞানতা ইত্যাদি। দুষ্কৃত, দুষ্কৃতি (বি)—দুইটি শব্দেই দুষ্কার্য বা পাপ বুঝায়; সুতরাং দুষ্কৃতকারী, দুষ্কৃতিকারী শব্দদ্বয়ে পাপী বুঝায় আর দুষ্কৃতী (দুষ্কৃতি) শব্দটিতেও দুষ্কর্মকারী পাপী বুঝায়। তাই পাপী অর্থে দুষ্কৃতকারী, দুষ্কৃতিকারী এবং দুষ্কৃতী—এই তিনটি শব্দই ব্যাকরণসঙ্গত, কিন্তু কদাপি দুষ্কৃতীকারী নয়।
(১২) লিঙ্গ-ঘটিত : সেবকা, গৃহীতা (কর্মবাচ্যে), গ্রহীত্রী, আধুনিকী, অধীনা, পরাধীনা, দিগম্বরা, প্রতীক্ষ্যমাণা (যে নারীটির প্রতীক্ষা করা হইতেছে : কৰ্মবাচ্যে), প্রতীক্ষমাণা (প্রতীক্ষা করিতেছেন এমন মহিলা), সাপরাধা, সালংকারা, ধনিনী কিন্তু নির্ধনা, দোষিণী কিন্তু নির্দোষা, অভিমানিনী কিন্তু নিরভিমানা, অহংকারিণী কিন্তু নিরহংকারা, অলংকারিণী কিন্তু নিরলংকারা, অপরাধিনী কিন্তু নিরপরাধা; গার্গ্য কিন্তু গার্গী, সূর্য কিন্তু সূরী, মনুষ্য কিন্তু মনুষী, মাধুর্য কিন্তু মাধুরী (স্ত্রীলিঙ্গে শব্দান্ত য-এর লোপ); শ্রীমতী, জাগ্রতী, ধীমতী, বুদ্ধিমতী, শক্তিমতী, আয়ুষ্মতী, কিন্তু ভগবতী, ধর্মবতী, শ্রদ্ধাবতী, বিদ্যাবতী, লক্ষ্মীবতী (মতুপ্ প্রত্যয়ের ম “ব” হইয়া গিয়াছে); সম্পৎশালিনী মাতা, কিন্তু সম্পৎশালী মাতৃবৃন্দ; কীর্তিমতী মহিলা, কিন্তু কীর্তিমান্ মহিলাগণ; সুন্দরী রমণী, কিন্তু সুন্দর রমণীবৃন্দ; বিদুষী স্ত্রী, কিন্তু বিদ্বান্ স্ত্রীলোক [ স্ত্রী-বাচক শব্দের সঙ্গে লোক, বৃন্দ, গণ ইত্যাদির সমাস হইলে সমস্ত-পদটি পুংলিঙ্গ হইয়া যায়। সেইজন্য তাহার তৎসম বিশেষণটিকেও পুংলিঙ্গ হইতে হয়—ইহাই সংস্কৃত ব্যাকরণসম্মত রীতি ]; শ্রদ্ধাস্পদেষু [ আস্পদ ক্লীবলিঙ্গ বলিয়া স্ত্রীলিঙ্গের রূপ হইবে না ]।
(১৩) যুক্তাক্ষর-ঘটিত : পক্ক, আয়ত্ত, উজ্জ্বল, স্বায়ত্ত, লক্ষ্মী, লক্ষ্য (দৃষ্টি), লক্ষ (সংখ্যাবিশেষ), বিশালাক্ষী, লক্ষ্মণ, লক্ষণ, সন্ন্যাস, সরস্বতী, স্বাস্থ্য, জ্বলিত, জ্বলন্ত, প্রোজ্জ্বল, প্রজ্বলিত, জাজ্বল্যমান, সান্ত্বনা, ইয়ত্তা, অগস্ত্য, নৈঋত, চিক্কণ, নিক্বণ, ধ্বংস, অশ্বত্থ, বিদ্যা, বিদ্বান্, ক্বচিৎ, ব্যুৎপত্তি, দ্বন্দ্ব, সত্ত্বেও, সচ্ছল, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাক্ষর, সন্ধ্যা, বিন্ধ্য, অন্তঃসত্ত্বা, আশ্বাস, আশ্বস্ত, স্বস্তি, অস্বস্তি, প্রশস্তি, প্রায়শ্চিত্ত, শ্মশান, অন্ত্যেষ্টি, উদ্যম, সূক্ষ্ম, যক্ষ্মা, বৈচিত্র্য, ঔজ্জ্বল্য, তত্ত্ব, সত্ত্ব, ইক্ষ্বাকু, সত্বর (তাড়াতাড়ি), সত্তর (সংখ্যা), উত্ত্যক্ত, দ্ব্যর্থ, ন্যগ্রোধ, ন্যুব্জ, ন্যূন, মাৎস্যন্যায়, ঔজ্জ্বল্য, বিল্ব, বৈশিষ্ট্য, এতদ্বারা, স্বাতন্ত্র্য, পাশ্চাত্ত্য, গার্হস্থ্য, স্যমন্তক
(১৪) যে-সমস্ত শব্দের যুক্তবর্ণ ভাঙ্গাই চলে না : অঙ্ক, অঙ্কন, কিঙ্কর, অঙ্কিত, অঙ্কুর, অঙ্কুশ, অঙ্গ, অঙ্গন, অঙ্গনা, অঙ্গার, অঙ্গাঙ্গি, অঙ্গী, অঙ্গীকার, অঙ্গুরি, অঙ্গুলি, আকাঙ্ক্ষা, আকাঙ্ক্ষী, কাঙ্ক্ষিত, কাঙ্ক্ষণীয়, কঙ্কণ, কুঙ্কুম, গঙ্গা, জঙ্গম, জঙ্গল, জঙ্ঘা, গলনাঙ্ক, টঙ্কা, ডঙ্কা, তুরঙ্গ, ত্রিশঙ্কু, নিরঙ্কুশ, নিঃশঙ্ক, পঙ্ক, পঙ্কজ, পঙ্কিল, পুঙ্খ, অনুপুঙ্খ, পুঙ্খানুপুঙ্খ, প্রসঙ্গ, প্রাসঙ্গিক, প্রাঙ্গণ, বঙ্কিম, বঙ্গ, বিহঙ্গ, ভঙ্গ, ভঙ্গিমা, ভঙ্গী, ভুজঙ্গ, ভৃঙ্গার, ভৃঙ্গী, রঙ্গ, রঙ্গমঞ্চ, রণরঙ্গ, লিঙ্গ, শঙ্কা, শঙ্কিত, শঙ্কিল, শঙ্কু, শশাঙ্ক, কিঙ্কর, পঙ্খ, শঙ্খ, শৃঙ্গ, ষড়ঙ্গ, সঙ্গ, সঙ্গম, সঙ্গী, সঙ্গে, সাঙ্গ, স্থিরাঙ্ক, হিমাঙ্ক।
(১৫) যে-সমস্ত শব্দে হস্ চিহ্ন (-) অটুট থাকেই : অচ্, অপ্, আপদ্, আশিস্, ঋক্, ঋথ, এতদ্, কোন্, গদ্গদ, জলমুক্, ণিচ্, ত্বক্, তির্যক্, দিক্, দৃক্ , ধিক্, পঙ্ক্তি, পৃথক্, প্রাক্, বণিক্, বাক্, বাদশাহ্, বিপদ্, বিরাট্ (ভগবান্, বিশাল), ষট্ (ষড়), সম্পদ্, সম্যক্, সমিধ, সর্বভুক্, ষ, সম্রাট্, শাস্ত্রবিদ (শাস্ত্রবিৎ), স্রক্, সুহৃদ্। ইহা ছাড়া ব্যঞ্জনান্ত ধাতু ও প্রত্যয়ের হস্ চিহ্ন, ভগবান, বিদ্যাবান্, বিদ্বান্, শক্তিমান্, সংস্কৃতিমান্, রুচিমান্ প্রভৃতি মতুপ্ প্রত্যয়ান্ত শব্দের হস্ চিহ্ন এবং সংস্কৃত উপসর্গের হস্ চিহ্ন অটুট রাখিতেই হয়। তৎসম শব্দের হস্ চিহ্ন লোপ অন্য কেহ করিলেও শিক্ষার্থীর পক্ষে ইহা অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ।
(১৬) একই সঙ্গে রেফ ও স্-ফলাযুক্ত শব্দ : আর্দ্র, স্নেহার্দ্র, দয়ার্দ্র, গাৰ্গ, চর্ব্য, দৈর্ঘ্য, বর্জ্য, যাথার্থ্য, সামর্থ্য, সৌহার্দ্য, হর্ম্য।
কিন্তু সূর্য, শৌর্য, বীর্য, ধৈর্য, ধার্য, তুর্য, পর্যন্ত, চর্য, ঐশ্বর্য, আচার্য প্রভৃতি শব্দে রেফ-যুক্ত য-কারের অতিরিক্ত J-ফলাটি না দিলেও চলে।
(১৭) উচ্চারণ-ঘটিত (উচ্চারণ-অনুযায়ী বানান নয়) : জ্যেষ্ঠ, জ্যৈষ্ঠ, শ্যেন, বন্দ্যোপাধ্যায়, নিশ্চয়ই, অনেকক্ষণ, ব্যথা, ব্যথিত, ব্যয়িত, ব্যতীত, ব্যতিহার, ব্যতিব্যস্ত, ব্যতিক্রম, ব্যতিরেক, ব্যক্ত, ব্যঙ্গ, ব্যক্তি, ব্যয়, ব্যঞ্জন, ব্যগ্র, ব্যর্থ, ব্যষ্টি, ব্যবহার, ব্যবহৃত, ব্যবধান, ব্যবহিত, ব্যবস্থা, ব্যবহারিক (ব্যাবহারিক), ব্যভিচার, ব্যত্যয়, ব্যসন, ব্যস্ত, ব্যধিকরণ (উচ্চারণে স্বাভাবিক এ কিংবা অ্যা ধ্বনি থাকিলেও বানান কেবল য-ফলাযুক্ত), নৈঋত, চ্যবন, অন্ত্যজ।
(১৮) উচ্চারণদোষ-ঘটিত (উচ্চারণ বিকৃত হওয়ার ফলে বানানও বিকৃতি পায়; সুতরাং বানান ও উচ্চারণে শুচিতারক্ষা করিতে ছাত্রগণ সচেষ্ট হইবে) : সম্বন্ধ, সম্মেলন, সম্মুখ, সম্মান, সম্মোহন, কথোপকথন, পরোপকার, অস্থি, অস্তিত্ব, দোষী, দূষণীয়, গরুড়, ন্যূন, নীরদ, অশ্বত্থ, চর্ব্য, কর্তৃক, কৰ্তৃ, কর্ত্রী, যুগল, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ, সমৃদ্ধিশালী, দুরবস্থা, পূজাস্পদ, হঠাৎ, গর্দভ, কৌস্তুভ, ভালুক, ভল্লুক, হতভম্ব, প্রদ্যোত, নিমজ্জিত, দুন্দুভি, দামোদর, টিপ্পনী, ভূমিষ্ঠ, যথেষ্ট, রোগী, আর্দ্র, রুক্ষ, অন্ত্যজ, ভর্তৃহরি, ভর্ৎসনা, বাসক, অরবিন্দ, অরুন্ধতী, চূষ্য, পরিত্যাজ্য, সামসময়িক, দোষক্ষালন, পদস্খলন, অভ্যন্তরীণ, আভ্যন্তরিক, সর্বসাকল্য, পৌরোহিত্য, ভৌগোলিক, অবিমৃশ্যকারিতা (অবিমৃষ্যকারিতা), সনির্বন্ধ, ভগবান, ব্যবসায়, হাসপাতাল, টাকশাল, হাসি, ঘোড়া, বাসা, চাঁদা, বাঁশি, জলুস, গুম্বজ, জাহাঁপনা, গোসাঁই, অনসূয়া, চাকচক্য, হুজুর।
(১৯) কয়েকটি যুক্তাক্ষরের রূপ-সম্বন্ধে ধারণার অভাব-ঘটিত : অঞ্জলি (ঞ + জ = ঞ্জ), অনুজ্ঞা (জ্ + ঞ জ্ঞ), অভিজ্ঞ, যজ্ঞ, জাহ্নবী (হ্ + ন = হ্ন), অপরাহ্ণ (হ্ + ণ = হু), শত্রু (ত্ + রু = ক্র), শত্রু (ক্ + র = ক্র), ব্রাহ্মণ (হ্ + ম = হ্ম), লক্ষ ( ক্ + ক্ষ), লক্ষ্মী (ক্ + ষ্ + ম = ক্ষ্ম), তীক্ষ্ণ (ক্ + + ষ্ + ণ = ক্ষ), শ্রুতি (শ্ + উ = শ্রু), সুতি (ক্ষরণ), শুশ্রূষা (শ্র + উ = শ্রু)। (২০) বিবিধ প্রয়োগ-ঘটিত অশুদ্ধি : আকণ্ঠ (আকণ্ঠ পর্যন্ত নয়), তদ্রূপ আজানু, আশৈশব; অদ্যাপি, যদ্যপি (অদ্যাপিও, যদ্যপিও নয়); আয়ত্ত বা অধীন (আয়ত্তাধীন নয়); অধীন (অধীনস্থ নয়); আরোগ্যলাভ করা (আরোগ্য হওয়া নয়); সন্তুষ্ট হওয়া (সন্তোষ হওয়া নয়); বিদায় লওয়া (বিদায় হওয়া নয়); বাসা বাঁধা (নির্মাণ করা); কিন্তু যুদ্ধ বা দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধা (আরম্ভ হওয়া); লোপ পাওয়া বা লুপ্ত হওয়া; বিস্ময়বোধ করা বা বিস্মিত হওয়া (বিস্ময় হওয়া নয়); আশ্চর্যান্বিত হওয়া (আশ্চর্য হওয়া নয়); তৃপ্তি পাওয়া বা তৃপ্ত হওয়া; কার্যনিবন্ধন বা কার্যহেতু (কার্যনিবন্ধনহেতু নয়); অসুস্থতাবশতঃ (অসুস্থবশতঃ নয়); আশ্বস্ত হওয়া বা আশ্বাস পাওয়া, আশ্চর্যজনক ঘটনা; অবকাশ পাওয়া; সাক্ষ্য দেওয়া (সাক্ষী দেওয়া নয়); মৌন (বি) অবলম্বন করা বা মৌনী (বিণ) হওয়া; ঠাকুরমা (ঠাকুমা নয়); মামার বাড়ি (মামাবাড়ি নয়); বিরক্ত করা, বিরক্ত হওয়া, বিরক্তি জাগা, বিরক্তি জাগানো, বিরক্তিকর; অনুপস্থিতিতে (অনুপস্থিতে নয়); স্বীকার করা বা স্বীকৃত হওয়া; জাতীয়ীকরণ (জাতীয়করণ নয়), সম্ভ্রমশালী (সম্ভ্রান্তশালী নয়), স্বাধীনতোত্তর (স্বাধীনোত্তর নয়), মহতী সভা, কিন্তু মহা সমাবেশ; মহান্ নেতা, কিন্তু মহতী নেত্রী (কদাপি মহান্ নেত্রী নয়); খোদার উপর খোদকারি (কারসাজি নয়); আইনটা এখনও পূর্ববৎ বলবৎ (বলবান্ নয়) রয়েছে; তিনি আমাদের পুত্রবৎ (সাদৃশ্যার্থে বৎ প্রত্যয়, সকল লিঙ্গে বৎ রূপেই প্রযুক্ত, কদাপি বান্ নয়) স্নেহ করেন; মহারাজ এতদিনে পুত্রবান্ হয়েছেন (‘আছে’ অর্থে মতুপ্ প্রত্যয়টির মৎ অংশ বৎ হইয়া পুংলিঙ্গের কর্তৃকারকের একবচনে বান্ হইয়াছে, স্ত্রীলিঙ্গ হইলে বতী হইত); ঢাকের বাঁয়া (ঢোলের বাঁয়া নয়); নিমন্ত্রণবাড়িতে চমৎকার খেলাম (দারুণ নয় বেদনাদায়ক ব্যাপারেই ‘দারুণ’ কথাটি চলে, অন্যত্র নয়); প্রধান অতিথিমশায় মনোজ্ঞ ভাষণ দিলেন (ভীষণ বা দারুণ নয়); মাননীয় অতিথিবৃন্দকে সাদর অভিনন্দন জানানো হল (উষ্ণ নয়, কথাটিতে ইংরেজী warm কথাটির আক্ষরিক অনুবাদের উৎকট গন্ধ রহিয়াছে)।
পাথরচাপা কপাল (পাষাণচাপা নয়); ঘরের ছেলে (গৃহস্থের সন্তান নয়); মানুষ করা (মনুষ্য করা নয়); লেখাপড়া (পড়ালেখা নয়), পাল-পার্বণ (পার্বণ-পাল নয়); প্রেমের যমুনা (প্রেমের গঙ্গা নয়); বয়সের গাছপাথর (বয়সের ইটপাথর বা গাছপালা নয়); চিনির ডেলা, ননীর পুতুল (মাখনের পুতুল নয়); কই মাছের প্রাণ (মাগুর মাছের প্রাণ নয়); চোখে সরষে ফুল দেখা (চোখে হলদে ফুল দেখা নয়); চিত্তপটে আঁকা; মনোমন্দিরে দেবতা প্রতিষ্ঠা করা; মানসক্ষেত্রে সত্যের বীজ বপন করা (মানস-মন্দিরে নয়); কর্পূরের মতো উবিয়া যাওয়া (মরীচিকার মতো নয়); অগ্নিতে আহুতি দেওয়া; জলে বিসর্জন দেওয়া; ভস্মে ঘি ঢালা (ভস্মে ঘৃতাহুতি নয়); ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো (ঝুড়ি নয়), গড্ডলিকা প্রবাহ (গড্ডালিকা নয়), প্রবেশ নিষিদ্ধ (নিষেধ নয়), চরণে সমর্পণ করা; চরণে আশ্রয় লওয়া; ষোড়শ (ষষ্ঠদশ নয়) অধ্যায়; জন্মশতবার্ষিক উৎসব, কার্যকরী ব্যবস্থা বা পদ্ধতি (কিন্তু কার্যকরী সমিতি কদাপি নয়)।
অনুশীলনী
১। অর্থপার্থক্য দেখাইয়া বাক্যরচনা কর : কুল কূল, বিজন বীজন, আপন আপণ, অশ্ব অশ্ম, সর্গ স্বর্গ, গিরিশ গিরীশ, অর্ঘ অর্ঘ্য, নিশিত নিশীথ, বলি বলী, মুখপত্র মুখপাত্র, সুত সুত, বিস্মিত বিস্মৃত, স্বত্ব যত্ন সত্ত্ব, অবদান অবধান, আহুতি আহুতি, বিত্ত বৃত্ত, শূর সূর, শয্যা সজ্জা, কুট কুট, আরোহণ আহরণ, সত্য সত্ত্ব, শান্ত সান্ত, অবিহিত অভিহিত, সুচি শুচি, করি করী, কৃত ক্রীত, জ্বলা জলা, বানি বাণী, গাথা গাঁথা, দূত দ্যুত, বান বাণ, দূতী দ্যুতি, শ্মশ্রু শ্বশ্রু, নীড় নীর, প্রাসাদ প্রসাদ, মুখ মূক, শব সব, অবিরাম অভিরাম, পূর্বাহ পূর্বাহ্ণ, শরণ স্মরণ, মহাশয় মহদাশয়, বর্ষা বর্শা ভরসা, ত্রিংশ ত্রিংশৎ, পরিষদ্ পারিষদ, স্বীকার শিকার, আশা আসা, অধ্যয়ন অধ্যাপন, পঠন পাঠন, পাট পাঠ, পাঠন পাটন, আষাঢ় আসার, কৃতি কৃতী, দ্বীপ দীপ, দ্বিপ দ্বীপ, দিনেশ দীনেশ, মহাপরাক্রম মহৎপরাক্রম, নিরসন নিরশন, কুজন কুজন, পরস্ব পরশ্ব, সার্থ স্বার্থ, চির চীর, চ্যুত চূত, মেদ মেধ, বেদ বেধ, ভেদ বেধ, পদ্য পদ্ম, শয়িত শায়িত, শুক্তি সূক্তি, সুক্ত সূক্ত, সন্ধা সন্ধ্যা, সপ্ত শপ্ত, কৃত্তিবাস কীর্তিবাস, মহিত মোহিত, সর্ব শর্ব, প্রভব প্রভাব, ধুনি ধুনী, দুকুল দুকূল, সবিতৃ সবিত্রী, কর্তৃ কর্ত্রী, প্রাপ্য প্রাপ্ত, বন্দ্য বন্দ, শ্রদ্ধাভাজন শ্রদ্ধাবান্, পঞ্চমপাণ্ডব পঞ্চপাণ্ডব, উপাদেয় উপাধেয়, আদৃত আধৃত, অভিভাষণ অভিবাসন, জ্যোতিষ যতীশ, কেতাব খেতাব, চৈত্ত চৈত্য, স্বজন সজন, প্রদান প্রধান, সংগঠন সংঘটন, জমক যমক, বৃতি বৃত্তি, ব্যগ্ৰ ব্যাঘ্র, শিখর শেখর, বধ্য বদ্ধ, মঞ্জরী মঞ্জীর, ভোজ্য ভোগ্য, দ্বারা দারা, দাত্রী ধাত্রী, দ্বারা ধারা, অলক অলোক, অলখ অলক, স্কন্দ স্কন্ধ, রঞ্জিত রণজিং, পরভৃৎ পরভৃত, ভীত ভিত, ঘূর্ণিবার্তা ঘূর্ণিবাত্যা, সত্বর সত্তর, তাদৃশ ত্বাদৃশ, বন্ধ বন্ধ্য, জ্যোতি যতী, সুবাস সুভাষ, বিরাট্ বিরাট, দিক্ দিক, সখীত্ব সখিত্ব, সূর্যা সূরী, সুখনাশ শুকনাস, ত্বৎকৃত তৎকৃত, অনুসৃত অনুস্যূত, তদ্বারা ত্বন্দ্ব্বারা, শস্য শোষ্য, নিধন নির্ধন, অপীত আপীত, অজন্ত অজন্তা, কতগুলি কতকগুলি, সুরেন্দ্র শূরেন্দ্র, বিতরে ভিতরে।
২। কারণ দেখাইয়া শুদ্ধ কর : চর্বচোষ্য, অধীনস্থ, আয়ত্তাধীন, সত্ত্বর, মধ্যাহ্ণ, অচিন্ত্যনীয়, অনাটন, নৃসংশ, দূর্দান্ত, চিক্কন, ভূমিষ্ট, দূর্গা, খদ্যোৎ, ঘনিষ্ট, স্বতোসিদ্ধ, ওতোপ্রোত, নীরোগী, প্রফুল্লিত, পক্ক, সম্ভ্রান্তশালী, রুচিবান, ভূম্যাধিকারী, মাতৃস্বসা, স্খালন, উচ্ছ্বসিত, লক্ষ্যণীয়, বিদূষী, সত্ত্বা, পীপিলিকা, দধিচী, আনুসঙ্গিক, দারিদ্রতা, দুরাদৃষ্ট, অচিন্ত, সখ্যতা, পৈত্রিক, সমৃদ্ধশালী, স্বরস্বতী, আকাঙ্খা, শ্রদ্ধাভাজনীয়, গড়ুর, পর্যাটন, শিরোপীড়া, এতদ্বারা, হৃপিণ্ড, অত্যান্ত, বীভিষীকা, ত্যজ্য, উত্যক্ত, জাত্যাভিমান, রসায়ণ, যক্ষা, সন্মান, চিন্ময়, যদ্যপিও, আকণ্ঠ পর্যন্ত, সকল বালকেরা, উচিৎ, নীরিহ, আষ্পদ, কথপোকথন, পূর্বাহ্ন, বাগেশ্বরী, ঐক্যতান, স্বায়ত্ব, লজ্জাস্কর, ভাগিরথী, পৌরহিত্য, অনুমত্যানুসারে, পরিত্যজ্য, উচ্ছ্বল, শিরচ্ছেদ, নভোচর, এতৎব্যতীত, নীরোদ, সংস্কৃতিবান্, শূর্পনখা, স্বচ্ছল, অন্তর্ভূক্ত, ব্রজগোপিনী, বিকীরণ, প্রাঙ্গন, চাক্ষুস, লক্ষীমা, প্রজ্জ্বলিত, দিগেন্দু, সর্বাঙ্গীন, আদ্যাক্ষর, পথমধ্যে, মুমুর্ষু, আশীষ, মুহূর্ত, শিরমণি, সুসুপ্তি, বাহুল্যতা, ব্যাক্ত, বাল্মিকী, ঋণগ্রস্থ, সদ্যজাত, ফনীভূষণ, গোলকপতি, বিদ্যান্, বিপৎগ্রস্থ, মুখস্ত, কলুষতা, উজ্জ্বল, প্রোজ্জল, পরিক্ষা, মান্যমান্, মৃয়মান, দুরাবস্থা, সত্বা, সত্বেও, তথাপিও, ঐক্যতা, লক্ষী, সন্মুখ, পশ্চাদপদ, বিদ্যুৎবাহিনী, হে সুধি, মহদাশয় (ব্যক্তি), ষষ্ঠদশ, দুষ্পাচ্য, পরিস্কৃত, উচ্ছাসিত, জাগ্রত, সবিনয়পূর্বক, কুৎসিৎ, ভৌগলিক, সকৃতজ্ঞ, হৃৎগত, গ্রাহ্যনীয়, জ্ঞানমান, দায়ীত্ব, সম্বৎসর, ব্যাবহার, জ্যোতীন্দ্র, রোগগ্রস্থ, পৌরুষতা, দাহ্যনীয়, আরতী, আগতকল্য, সুহৃদসাক্ষাৎ, সুহৃদর্শন, বিপদসূচক, মনোসংযোগ, নীলিমাদেবী, রঞ্জিৎকুমার, অপগণ্ড, নিভাননী, বপিত, সন্মোহন, বৈশিষ্ট, দাতা ও গৃহীতা, সক্ষম, নির্দোষী, নির্দোষিতা, জগদীন্দ্র, সন্নাসিনী, কুরঙ্গিণী, সুকৃতিশালিনী মাতৃবৃন্দ, সশঙ্কিত, শ্রীমদ্ভাগবৎ, শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা, এতদ্সত্বেও, ছন্দোকুশলী, দৈন্যতা, উৎকর্ষতা, নিরপরাধী, নিরপরাধিনী, বিদ্যুৎলোক, বিদ্যুতুল্লসিত, প্রতিযোগীতা, অপকর্ষতা, সাবধানী, মনযোগী, অপরাহ্ন, কল্যাণীয়ায়ু, আবশ্যকীয়, অধ্যায়ন, সদ্যপাতী, ঔদ্ধত্ব, ব্যাথা, সান্তনা, দৌরাত্ম, যুদ্ধমান, শ্রেয়োফল, বাকপতি, নভোচারিণী, সদ্যোপ্রসু, বাগ্শুদ্ধি, স্থায়ীত্ব, বিশ্বাসনীয়তা, শূণ্য, ইতোপূর্বে, আঠাশ, যৎপরনাস্তি, প্রদ্যুৎ, দৃকপাত, মৌনতা, মন্থিত, ষড়ভূজা, শিরপীড়া, মানসক্ষেত্রে অঙ্কিত, হৃদয়মন্দিরে ভক্তিবীজ রোপণ করা, মরীচিকার মতো উবিয়া যাওয়া, দেশমাতৃকার চরণে সবকিছু ডুবাইয়া দেওয়া, আবহমান কাল হইতে।
৩। কোনটি শুদ্ধ বিচার কর : উৎকর্ষতা উৎকর্ষ; সহাশীল সহনশীল; সমৃদ্ধশালী সমৃদ্ধিশালী; ঐকমত্য ঐক্যমত; ভৌগলিক ভৌগোলিক; আয়ত্ব আয়ত্ত; মুখর মুখরিত; স্বার্থকতা সার্থকতা; প্রফুল্ল প্রফুল্লিত; ইতিমধ্যে ইতোমধ্যে; আনুসঙ্গিক আনুষঙ্গিক; মধুসুদন মধুসূদন; শিরচ্ছেদ শিরশ্ছেদ; সর্বনাশ সর্বনাস; শূর্পণখা শূর্পনখা; তেজষ্ক্রিয় তেজস্ক্রিয়; প্রণষ্ট প্রনষ্ট; ইতিপূর্বে ইতঃপূর্বে; জগতাতীত জগদতীত; বিদ্যান বিদ্বান্; সতর্ককরণ সতর্কীকরণ; পরিষেবক পরিসেবক; নির্লোভ নির্লোভী; অর্থনৈতিক আর্থনীতিক; নির্দোষতা নির্দোষিতা; অন্তর্ভুক্ত অন্তর্ভূত; পাশ্চাত্ত্য পাশ্চাত্য; রাষ্ট্রীয়করণ রাষ্ট্রীয়ীকরণ; গ্রহীতব্য গৃহীতব্য; প্রনাশ প্রণাশ; দুষ্কৃতিকারী দুষ্কৃতীকারী; প্রত্যক্ষীভূত প্রত্যক্ষভূত; অনুষ্ঠাতব্য অনুষ্ঠিতব্য; বিদ্যুতাধার বিদ্যুদাধার; রসায়ণ রসায়ন; সংস্কৃতিমান্ সংস্কৃতিবান্; সুহৃৎসংঘ সুহৃদসংঘ; পথকৃৎ পথিকৃৎ; পশ্চাৎপট পশ্চাদপট; প্রতিশ্রুতিমান্ প্রতিশ্রুতিবান্; পুরষ্কার পুরস্কার; পরিষ্কার পরিস্কার; উন্নতশীল উন্নতিশীল।
৪। শুদ্ধ করিয়া লিখ : তাহার সৌজন্যতা দর্শনে আমরা সানন্দিত হইলাম। জ্যোতীন্দ্র মনোকষ্টে সন্যাসী হইয়াছে। বহু বালকেরা পক্ষীশাবক ধরিয়া অকারণ যন্ত্রণা দেয়। বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের জেষ্ঠপুত্র শশীবদন পাশ্চাত্য আদবকায়দায় বেশ অভ্যস্থ। অর্থের স্বার্থকতা সম্বন্ধে মহিমারঞ্জন বাবুর সঙ্গে আমাদের অনেক কথপোকথন হইয়াছিল। দেখিলাম অর্থনৈতিক সমস্ত তত্বাবলীই তাহার নখমুকুরে বিদ্যমান। প্রোজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে আশীষকুমার আশৈশব হইতে সঞ্চিত বিষয়সমূহ বিসর্জন দিলেন। ফণীবাবুর মতোন নির্লোভী নিরহংকারী মানুষ ক্বচিত দেখা যায়। সুবুদ্ধিমান্ বালকটির বুদ্ধিমানতার পরিচয় পাইয়া সকলেই যৎপরোনাস্তি সন্তোষ হইলেন।
৫। বিশুদ্ধ শব্দটি নির্বাচন কর :
(i) দূষণীয় / দূষনীয় / দোষণীয় / দোষনীয়
(ii) সন্মন্ধে / সম্বন্ধে / সম্মন্ধে
(iii) প্রজ্জলিত / প্রজ্বলিত / প্রজ্জ্বলিত
(iv) স্বত্ত্বা / স্বত্তা / স্বত্ত্বা / সত্তা (বিদ্যমানতা অর্থে)
(v) স্বত্ব / স্বত্ত / স্বত্ত্ব / সত্ত্ব (অধিকার অর্থে)
(vi) সত্ত্ব / স্বত্ত / স্বত্ত্ব / সত্ত (শ্রেষ্ঠ গুণ অর্থে)
(vii) শুদ্ধকরণ / শুদ্ধিকরণ / শুদ্ধীকরণ
(viii) ষড়দর্শন / ষড়দর্শন / ষদর্শন / ষটদর্শন
(ix) ত্রয়োত্রিংশৎ / ত্রয়স্ত্রিংশৎ / ত্রয়োস্ত্রিংশৎ
( x) প্রদ্যুৎ / প্রদ্যুত / প্রদ্যোত / প্রদ্যোৎ
(xi) কিরিটীনী / কিরীটীনি / কীরিটীনী / কিরীটিনী
(xii) দিকদর্শন / দিকদর্শন / দিগ্দর্শন / দিগদর্শন
(xiii) হরিদ্বর্ণ / হরিৎবর্ণ / হরিদবর্ণ
(xiv) পাণিনী / পাণীনী / পাণীনি / পাণিনি
( xv) অচ্ছ্বাস / অগ্ন্যুচ্ছ্বাস / অগ্নচ্ছাস / অগ্ন্যুচ্ছাস
( xvi) শ্রীমতি / শ্রীমতী / শ্রীমানী (শ্রীমান্-এর স্ত্রীলিঙ্গ)
( xvii) সংবিত / সম্বিত / সংবিৎ / সম্বিদ্ / সম্বিৎ
( xviii) জাগ্রদবস্থা / জাগ্রতাবস্থা / জাগ্রদাবস্থা / জাগ্রতবস্থা
(xix) নির্দোষীতা / নির্দোষিতা / নির্দোষতা
( xx) অপস্রিয়মাণ / অপস্রিয়মান (যাঁহাকে অপসারিত করা হইতেছে)
( xxi) মৃয়মাণা / মৃয়মানা / ম্রিয়মাণা / ম্রিয়মানা
( xxii) সমৃদ্ধশালি / সমৃদ্ধশালী / সমৃদ্ধিশালি / সমৃদ্ধিশালী
( xxiv) ত্বরিদ্গতি / ত্বরিদগতি / ত্বরিৎগতি / ত্বরিতগতি
( xxv) শিরঃচ্যুত / শিরোচ্যুত / শিরদ্রুত / শিরচ্যুত
( xxiii) বিদ্যুতায়ন / বিদ্যুদায়ন / বিদ্যুতয়ন / বিদ্যুদয়ন
( xxvi) প্রোজ্জ্বল / প্রোজ্জ্বল / প্রজ্জল / প্রজ্জ্বল
( xxvii) এতদ্বারা / এতদ্বারা / এতদ্দারা
( xxviii) সায়ত্ত্ব / স্বায়ত্ত / স্বায়ত্ব
( xxix) উত্যক্ত / উত্ত্যক্ত / উত্তক্ত
(xxx) সার্বভৌমত্ব / সার্বভৌমত্য / সার্বভৌমত্ত
৬। বন্ধনীমধ্য হইতে উপযুক্ত শব্দাংশটি নির্বাচন করিয়া প্রতিটি বাক্যের শূন্যস্থান বা শূন্যস্থানগুলি পূরণ কর :
(ক) সংস্কৃতি…. মানুষ সকলেরই শ্রদ্ধাস্পদ (মান্ / বান্)।
(খ) পরি ত জলসরবরাহের প্রতি তি পাইলাম (শ্রু / স্রু)।
(গ) শাখা …… ত …..ত-মঞ্জরীটি বেশ দৃষ্টিনন্দন (চূ / চ্যু)।
(ঘ) মধ্যশিক্ষা-পর্য …..র অনুমোদন পেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া যায় (তে / দে)।
(ঙ) ‘ণ’ এই বর্ণটির নাম মূর্ধ… ণ (ণ্য / ন্য)।
৭। বন্ধনীমধ্য হইতে উপযুক্ত শব্দটি বাছিয়া আয়তাক্ষর স্থানে বসাও :
(i) শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ফাল্গুনির বন্ধুত্ব অতুলন। (সখ্যতা / সখ্য)
( ii) জহ্নুমনি গঙ্গাকে জানু চিরে মুক্তি দিলেন। (ঊরু / উরু)
( iii) সমাজে সব মানুষের শক্তি-সমতা চাই। (সাম্য / সাম্যতা)
(iv) সীতার সঙ্গে সরমার বেশ সখীভাব ছিল। (সখিত্ব / সখীত্ব)
(v) হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হয়েছে। (ব্যাঘাত / ব্যাহত)
(vi) শুক্রাচার্য বলিকে ক্ষান্ত হতে বললেও দৈত্যরাজ বামনদেবের পরিচর্যায় পূর্ববৎ নিযুক্ত রইলেন। (নিরত / নীরত)
(vii) সহস্র তিরস্কারেও জড়ভরত নীরব রহিলেন, কিছুতেই তাঁহার নীরবতা ক্ষুণ্ণ হইল না। (মৌন / মৌনী)
(viii) ঝটিকায় বৃক্ষটি শাখাশূন্য হইয়াছে। (ভগ্নশাখ / ভগ্নশাখা)
( ix) আমার এ নিদারুণ সন্দেহ কে বিদূরিত করবেন? (নিরশন / নিরসন) (x) পরমানন্দ মাধব সকলেরই বন্দনার যোগ্য। (বন্দ্য / বন্দনীয়)