৫.২ শব্দ ও বাক্যাংশের বিশেষ অর্থে প্রয়োগ

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – শব্দ ও বাক্যাংশের বিশেষ অর্থে প্রয়োগ
( Idiomatic use of words and phrases)
বাচ্যার্থ, লক্ষ্যার্থ ও ব্যঙ্গ্যার্থ

শব্দ ও তাহার অর্থ অবিচ্ছিন্ন। প্রত্যেকটি শব্দ বিশেষ বিশেষ শক্তিদ্বারা অর্থের প্রকাশ ঘটায়। শব্দের অর্থপ্রকাশক এই শক্তিকে বৈয়াকরণগণ প্রধানতঃ তিনটি ভাগে ভাগ করিয়াছেন–(১): অভিধা, (২) লক্ষণা ও (৩) ব্যঞ্জনা।

২০৫। বাচ্যার্থ : কোনো শব্দ উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে তাহার সুবিদিত যে অর্থটি পাঠক বা শ্রোতার সহজেই বোধগম্য হয়, তাহাকে শব্দের বাচ্যার্থ বা মুখ্যার্থ বলে ( Literal Sense)। যে শক্তিবলে শব্দ তাহার এই বাচ্যার্থটি প্রকাশ করে সেই শক্তির নাম অভিধাশক্তি। অভিধাই শব্দের মুখ্য শক্তি। বাচ্যার্থটিকে দেখাইয়া দিয়া শব্দের এই অভিধাশক্তিটি ক্ষান্ত হয়। (ক) “পাখি সব করে রব।” (খ) মাথাটা ভালো করে মোছ, এখনও জল ঝরছে যে! (গ) এতটা কালি ফেলে দিয়েছ? (ঘ) শেক্সপিয়র বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার।—এখানে প্রত্যেকটি উদাহরণের আয়তাকার শব্দগুলির সুপ্রচলিত অর্থটি সহজেই বোধগম্য হইতেছে।

২০৬। লক্ষ্যার্থ : শব্দের বাচ্যার্থটি বাধাপ্রাপ্ত হইলে তৎসংশ্লিষ্ট যে গৌণ আর একটি অর্থ পাঠক বা শ্রোতাকে অনুমানের দ্বারা বুঝিয়া লইতে হয়, সেই অর্থটিকে শব্দের লক্ষ্যার্থ বলে (Secondary Meaning)। যে শক্তিবলে শব্দ তাহার লক্ষ্যার্থটিকে প্রকাশ করে তাহাই শব্দের লক্ষণাশক্তি। এই লক্ষণাশক্তি শব্দের লক্ষ্যার্থটিকে দেখাইয়া দিয়াই ক্ষান্ত হয়। (ক) পাখি এখন খাঁচা ছাড়লেই বাঁচি। (পাখি = প্ৰাণ, খাঁচা = দেহ)। (খ) নবীনবাবুই আমাদের গ্রামের মাথা। (মাথা = অধিবাসীদের মধ্যে প্রধান)। (গ) ছেলেটা শেষে বাপ-মা’র মুখে কালি দিল। (কালি = কলঙ্ক)। (ঘ) তিনি এখন শেক্সপিয়র পড়ছেন। (শেক্সপিয়র তাঁহার গ্রন্থাবলী)। (ঙ) “মেয়েটা সুকুমার রায়ে মশগুল হয়ে আছে।”—প্ৰদত্ত উদাহরণগুলি একটু লক্ষ্য করিলেই বুঝিবে যে, লক্ষ্যার্থটি বাচ্যার্থের সঙ্গে সম্বন্ধ—বিশিষ্ট; সুতরাং ইহা বাচ্যার্থেরই একপ্রকার সম্প্রসারণ। মনে রাখিও, লক্ষণাশক্তি কোনো শব্দের আশ্রয়ে প্রকাশ পাইলেও ইহা সমস্ত বাক্যটিরই শক্তি।

২০৭। ব্যঙ্গ্যার্থ : বাচ্যার্থ ও লক্ষ্যার্থকে অতিক্রম করিয়া বাক্যের আর একটি যে চমৎকার অর্থ অনুশীলিত পাঠক বা শ্রোতার বোধগম্য হয়, সেই অর্থটিকে ব্যঙ্গ্যার্থ বা ধ্বনি (Suggested Serise) বলা হয়। বাক্যের যে শক্তিবলে এই ব্যঙ্গ্যার্থটি প্রকাশ পায়, তাহাকে ব্যঞ্জনাশক্তি বলে। ব্যঙ্গ্যার্থটি বাচ্যার্থের আবরণে আবৃত থাকে; অথচ বাচ্যার্থ ও লক্ষ্যার্থকে অতিক্রম করিয়া ইহা আপন লাবণ্যে ঝলমল করিতে থাকে। রমণীদেহের লাবণ্যেরই মতো ইহা দেহাশ্রিত হইয়াও দেহাতীত। অব্যক্ত অথচ হৃদয়রঞ্জক এই ব্যঙ্গ্যার্থটি হৃদয়ঙ্গম করিয়া সহৃদয় পাঠকচিত্ত অপূর্ব আনন্দরসে আপ্লুত হয়।

(ক)

দিবাকর নিশাকর দীপ্ত তারাগণ।
দিবানিশি করিতেছে তমঃ নিবারণ।।
তারা না হরিতে পারে তিমির আমার।
এক সীতা বিহনে সকল অন্ধকার।।

—কৃত্তিবাস

জীবনসঙ্গিনী সীতাকে হারাইয়া রামচন্দ্রের অন্তরে যে অন্তহীন বেদনার অন্ধকার জমিয়া উঠিয়াছে, চন্দ্ৰসূর্য-গ্রহ-তারার সম্মিলিত আলোকেও তাহা দূরীভূত হইবার নয়। একমাত্র সীতার প্রসন্ন উপস্থিতিই সে বেদনাকে মুহূর্তে দূর করিতে পারে। রামচন্দ্রের চক্ষে চন্দ্রসূর্য অপেক্ষা সীতার এই যে উৎকর্ষ, সহৃদয় পাঠকের কাছে ইহাই ব্যঙ্গ্যার্থ (ধ্বনি)। মনোহর এই ব্যঙ্গ্যার্থটি বাচ্যার্থকে আশ্রয় করিয়াও বাচ্যার্থ ও লক্ষ্যার্থকে অতিক্রম করিয়া গিয়াছে।

(খ) শ্রীশ্রীমা বললেন, “ঠাকুরের সেবার জন্য আমার নরেন সাগরপার থেকে শ্বেতপদ্ম এনেছে।

শ্বেতদ্বীপবাসিনী নিবেদিতার সৌন্দর্য-মাধুর্য স্নেহ-প্রেম-মমতা সেবা-যত্ন—ভালোবাসা কোমলতা-পবিত্রতা—একটিমাত্র শব্দ ‘শ্বেতপদ্ম’-টির মধ্য দিয়া চমৎকারভাবে প্রকাশ পাইতেছে।

মনে রাখিও, স্মৃতির সাহায্যে বাচ্যার্থ, অনুমানের দ্বারা লক্ষ্যার্থ আর সহৃদয়তার দ্বারা ব্যঙ্গ্যার্থের বোধ জন্মে।

সুন্দর বাক্যরচনা দীর্ঘ অনুশীলন-সাপেক্ষ। বাক্যরচনায় বাচ্যার্থ নয়, লক্ষ্যার্থ বা ব্যঙ্গ্যার্থটিই যাহাতে সুন্দররূপে প্রকাশ পায় সেইদিকে লক্ষ্য রাখিতে হয়। সেইজন্য বিশেষ কয়েকটি প্রতিশব্দ, ভিন্নার্থক শব্দ প্রভৃতির উদাহরণ দেওয়া হইল।

প্রতিশব্দ ( Synonym)

২০৮। প্রতিশব্দ : কোনো শব্দের পরিবর্তে একই অর্থ-প্ৰকাশক অন্য যে-সকল শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাহাদিগকে প্রথম শব্দটির প্রতিশব্দ বলে।

কোনো রচনায় প্রবন্ধে বা ব্যাখ্যায় একই শব্দ একাধিকবার ব্যবহৃত হইবার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু একই শব্দ একবারের বেশী ব্যবহৃত হইলে লেখার মাধুর্য নষ্ট হইয়া যায়। অথচ সেই শব্দটির প্রতিশব্দগুলি জানা থাকিলে এবং প্রয়োজনমতো উপযুক্ত প্রতিশব্দটি নির্বাচিত করিয়া প্রয়োগ করিতে পারিলেই রচনার শ্রুতিমাধুর্য অলংকার-গৌরব ও অর্থদ্যুতি বৃদ্ধি পায়। কয়েকটি বিখ্যাত শব্দের প্রতিশব্দ দেওয়া হইল :

অক্ষি : আঁখি, চোখ, নেত্র, লোচন, চক্ষু, নয়ন, ঈক্ষণ, দৃষ্টি, দর্শন।

অগ্নি : অনল, আগুন, সর্বভুক্, বহ্নি, হুতাশন, বিভাবসু, হুতবহ, বৈশ্বানর, পাবক, বায়ুসখ, সর্বশুচি, কৃশানু, কৃষ্ণবত্মা, বীতিহোত্র, তনূনপাৎ, ঘৃতান্ন, ঘৃতাৰ্চিঃ। অর্থ : টাকা, ধন, সম্পদ, ঐশ্বর্য, বিভব, বিষয়, সম্পত্তি, বিত্ত, বৈভব। অশ্ব : ঘোড়া, ঘোটক, হয়, বাজী, তুরগ, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম।

আকাশ : অম্বর, গগন, বিমান, নভঃ, নভোমণ্ডল, নভস্তল, ব্যোম, অন্তরীক্ষ, অভ্র, শূন্য, দ্যুলোক, খ।

ইচ্ছা : অভিলাষ, কাঙ্ক্ষা, আকাঙ্ক্ষা, কামনা, ঈপ্সা, অভীপ্সা, বাঞ্ছা, বাসনা, অভিপ্রায়, রুচি, অভিরুচি, সাধ, স্পৃহা, লিপ্সা, আকিঞ্চন, ঈহা, মনোরথ।

ঈশ্বর : ঈশ, ধাতা, বিধাতা, পরমেশ, পরমেশ্বর, ভগবান্, বিভু, জগৎপিতা, জগৎপাতা, বিশ্বপিতা, বিশ্বপাতা, বিধি, সৃষ্টিকর্তা, জগদীশ, ইলাহি, স্রষ্টা।

কন্যা : তনয়া, কুমারী, সুতা, আত্মজা, দারিকা, নন্দিনী, দুহিতা, পুত্রী, মেয়ে, কন্যকা, নন্দনা, তনুদ্ভবা, তনুজা।

কিরণ : প্রভা, বিভা, রশ্মি, কর, অংশু, দীপ্তি, জ্যোতিঃ, দ্যুতি, মরীচি, দীধিতি, ময়ূখ, আভা।

গৃহ : আলয়, বাস, আবাস, নিবাস, ভবন, নিকেতন, ঘর, আগার, মন্দির, গেহ, নিলয়, সদন, ধাম, বাটী, বাড়ি, কুটির, বেশ্ম, আয়তন।

চন্দ্র : চাঁদ, চন্দ্রমা, শশাঙ্ক, মৃগাঙ্ক, শশধর, সুধাকর, সিতাংশু, শীতাংশু, শশী, হিমকর, নিশাকর, সোম, নিশানাথ, নিশাপতি, সুধাংশু, হিমাংশু, তারানাথ, ইন্দু, বিধু, দ্বিজরাজ, কুমুদবন্ধু, বিরোচন, দশাশ্ব, ক্ষপাকর, অন্তোজ।

চুল : কেশ, অলক, কুন্তল, চিকুর, শিরোরুহ।

জল : অপ্, অম্বু, অন্তঃ, উদক, বারি, তোয়, পয়ঃ, নীর, সলিল, কম্, ইরা, ইলা।

তরঙ্গ : ঢেউ, ঊর্মি, লহরী, তুফান, ওঘ, বীচি, কল্লোল, হিল্লোল।

নদী : তটিনী, সরিৎ, স্রোতস্বতী, স্রোতস্বিনী, স্রোতোবহা, প্রবাহিণী, নিম্নগা, তরঙ্গিণী, কল্লোলিনী, নির্ঝরিণী, শৈবলিনী।

পদ্ম : কমল, উৎপল, শতদল, পুণ্ডরীক (শ্বেত), পুন্নাগ (শ্বেত), পঙ্কজ, সরোজ, তামরস, সরসিজ, অব্জ, সরোরুহ, অরবিন্দ, কুবলয় (নীল), ইন্দীবর (নীল), কোকনদ (রক্ত), নলিন, নলিনী, রাজীব, কঞ্জ, নীরজ, কুশেশয়, অম্বুজ।

পুত্র : তনয়, কুমার, কোঙর, সুত, আত্মজ, নন্দন, ছেলে, দারক, তনূদ্ভব।

পৃথিবী : ধয়া, ধরণী, বসুধা, বসুন্ধরা, পৃথ্বী, ভূ, ভূমি, ভূলোক, ক্ষৌণী, বসুমতী, ধাত্রী, ইরা, ইলা, ধরিত্রী, মেদিনী, মহী, অবনী, ক্ষিতি, ভুবন, জগৎ, সর্বংসহা, উর্বী, বিশ্বম্ভরা।

বায়ু : অনিল, সমীর, মরুৎ, মারুত, বাত, পবন, সমীরণ, গন্ধবহ, বাতাস, অগ্নিসখ, প্রভঞ্জন, বায়, নভস্বান্।

বিদ্যুৎ : চপলা, বিজলী, দামিনী, সৌদামিনী, চঞ্চলা, তড়িৎ, ক্ষণদ্যুতি, ক্ষণপ্রভা, ইরম্মদ, চিকুর, অক্ষজ, শম্পা।

মহেশ্বর : শিব, শম্ভু, মহাদেব, মহেশান, শঙ্কর, ঈশান, কৃত্তিবাস, স্থাণু, নকুল, ভোলানাথ, ধূর্জটি, ব্যোমকেশ, গঙ্গাধর, বিলোচন, বিরূপাক্ষ, পশুপতি, গিরিশ, চন্দ্রশেখর, ত্র্যম্বক, ত্রিপুরারি, মৃত্যুঞ্জয়, রুদ্র, হর, সর্ব, শর্ব, নীলকণ্ঠ, শূলী, শশিশেখর, মৃড়, ফণিভূষণ, শশিভূষণ, অহিভূষণ, মৃগাঙ্কমৌলি, চন্দ্রমৌলি, শশাঙ্কশেখর, নীললোহিত, ভব, বামদেব, অঘোর, কপর্দী, চন্দ্রচূড়, চন্দ্রাপীড়, পিনাকী, পিনাকপাণি, প্রমথেশ, শিতিকণ্ঠ, সিতিকণ্ঠ, গুড়াকেশ, মহেশ, ইন্দুমৌলি, স্মরজিৎ, স্বয়ম্ভূ, পুরঞ্জয়।

মাকড়সা : ঊর্ণনাভ, মর্কট, জালিক, লূতা।

মেঘ : জলদ, জলধর, জলধারী, বারিদ, পয়োদ, জীমূত, অভ্র, অম্বুদ, অন্তোদ, পর্জন্য, নীরদ, ঘন, পয়োধর, জলমুক্, পয়োমুক্, কাদম্বিনী, বারিধর, ধারাধর। মাতা : মা, জননী, প্রসূতি, অম্বা, গর্ভধারিণী, জনয়িত্রী, প্রসবিনী, প্রসূ, প্রসবিত্রী, মাতৃকা, জনিকা।

রাত্রি : রাতি, রজনী, যামিনী, নিশা, শর্বরী, বিভাবরী, নিশীথিনী, ক্ষপা, ত্রিযামা, ক্ষণদা, তমস্বিনী।

সমুদ্র : সাগর, পাথার, পারাবার, বারিধি, সিন্ধু, অর্ণব, জলনিধি, রত্নাকর, তোয়ধি, উদধি, জলধি, পয়োধি, অম্বুধি, দ্বীপী, নীলাম্বু, বারীশ, বারীন্দ্র, বারিনিধি, পারী, পয়োনিধি, অন্তোনিধি, অব্ধি, ইরাবান, অম্ভোধি।

সর্প : সাপ, ভুজগ, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম, পন্নগ, অহি, উরগ, আশীবিষ, ফণী, নাগ, কাকোদর, দ্বিজ, অকৰ্ণ, দ্বিজিত্ব।

সূর্য : অরুণ, রবি, অর্ক, আদিত্য, তপন, ভানু, ভাস্কর, মিহির, মার্তণ্ড, সবিতা, মরীচিমালী, দিনমণি, দিনকর, দিননাথ, প্রভাকর, দিনেশ, অংশুমালী, দিবাকর, অমিতাভ, ত্বিষাম্পতি, বিবস্বান, বিভাবসু, ধ্বান্তারি, সহস্রাংশু, অগ, দ্যুমণি, বীতিহোত্র, ময়ূখমালী, পুষা, সুর, তরণি, অর্যমা, তমোহর, তমোনাশ, তমসাপহ, তমোঘ্ন, তমোহা, অংশুধর, অংশুমান্, কমলেশ, কমলপতি, মিত্র, সপ্তাশ্ব, হরিদশ্ব, বিরোচন।

হস্তী : মাতঙ্গ, করী, করেণু, গজ, নাগ, দন্তী, কুঞ্জর, বারণ, দ্বিপ, হাতি, দ্বিরদ

ভিন্নার্থক শব্দ

২০৯। ভিন্নার্থক শব্দ : যে শব্দ বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাহাকে ভিন্নার্থক শব্দ বলে। এইরূপ শব্দের কতকগুলি উদাহরণ দেখ :

অঙ্ক : (১) গণিত—ছেলেটি অঙ্কে বড়ো কাঁচা।

(২) ক্রোড়—মাতৃ-অঙ্ক সন্তানের নিশ্চিন্ত আশ্রয়।

(৩) নাটকের পরিচ্ছেদ—নাটকটির তৃতীয় অঙ্কই সর্বাপেক্ষা রসোত্তীর্ণ।

(৪) সংখ্যাবোধক চিহ্ন-সন্ন্যাসী অঙ্কপাত করিয়া শ্রীর ভাগ্যগণনা করিতে লাগিলেন।

(৫) হিসাব—কার জীবনের অঙ্ক এমন খাপে খাপে মিলে যায়?

অর্থ : (১) ধন—অর্থই অনর্থ ঘটায়।

(২) মানে—শুধু পড়িলেই হয় না, অর্থও বুঝিতে হয়।

(৩) প্রয়োজন—অসময়ে সেখানে যাওয়ার অর্থ হয় না।

(৪) উদ্দেশ্য—এ কথা বলার অর্থ কী?

(৫) অভিলাষ—ব্রহ্মবিদ্যালাভার্থে সত্যকাম গুরুসমীপে উপস্থিত।

উত্তর : (১) দিক্—ভারতের উত্তরে দেবতাত্মা হিমালয় বিরাজমান হয়।

(২) জবাব—চিঠির উত্তর এখনও আসেনি।

(৩) ভাবী—মায়ের আশীর্বাদেই তাঁর উত্তরজীবন আলোকোজ্জ্বল অধিকারী।

(৪) বিরাট-রাজার পুত্র—অর্জুন উত্তরের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে চলিলেন।

(৫) দুর্লভ—কবি শ্রীমধুসূদন ছিলেন লোকোত্তর প্রতিভার

(৬) মীমাংসা—কঠিন প্রশ্নের উত্তরও তিনি মুখে মুখে বলতেন।

কথা : (১) প্রসঙ্গ—সবার মুখেই নেতাজীর কথা।

(২) প্রতিশ্রুতি—উনি যখন কথা দিচ্ছেন, তখন আর চিন্তা কী?

(৩) ব্যাপার—এ তো বড়ো কম কথা নয়!

(৪) অনুরোধ—আমার এই একটা কথা তোমায় রাখতেই হবে।

(৫) আলোচনা—ওদের পারিবারিক কথায় না থাকাই ভালো।

(৬) পরামর্শ—আপনার সঙ্গে একটা গোপন কথা ছিল।

(৭) গল্প—”মনে পড়ে সুয়োরানী দুয়োরানীর কথা।”

(৮) উপদেশ—বাপ-মা’র কথা অবহেলা করতে নেই।

(৯) ইশারা—ওস্তাদ ছেলেটার চোখের তারা পর্যন্ত কেমন কথা কয়, দেখলেন?

‘পর!”

(১০) তর্ক–তার সঙ্গে কথায় এঁটে ওঠা রীতিমতো শক্ত।

(১১) সম্ভাবনা—আজ বিকালে তাঁর এখানে ভাষণ দেবার কথা।

কর :

(১) কিরণ—”আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের ’পর!”

(২) খাজনা—করভারে প্রপীড়িত দেশবাসিগণ।

(৩) হস্ত—অমৃতভাণ্ড দিয়েছে বিধাতা মায়ের কোমল করে।

(৪) হস্তিশুণ্ড –কর আছে বলেই তো হস্তীর আরেকটি নাম করী।

গ (৫) হিন্দুর উপাধিবিশেষ—রাধাগোবিন্দ কর চিকিৎসাজগতে একটি অবিস্মরণীয় নাম।

গুণ : (১) সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ—ব্রহ্ম ত্রিগুণাতীত।

(২) ধর্ম—দাহিকাশক্তি আগুণের গুণ।

(৩) জ্যা—ধনুতে গুণ পরাইতে যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন।

(৪) রজ্জু—”একবার ইন্দ্র একবার আমি গুণ টানিতে লাগিলাম।”

(৫) সুফল–বিজ্ঞানের অনেক গুণ।

(৬) পূরণ—কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়া গুণ করিলে ফল হয় শূন্য

জাল : (১) ফাঁদ—সিংহ অনতিবিলম্বে জালে বন্দী হইল।

(২) নকল—নবদ্বীপ উইল জাল করিল।

(৩) ছল—মায়াবীর মায়াজাল ভেদিব নিশ্চয়।

(৪) সমূহ—সূর্যের রশ্মিজাল জীবের পক্ষে হিতকর।

(৫) ভেজাল, কৃত্রিম—জাল ঔষধে বাজার ছেয়ে গেছে।

পক্ষ : (১) ডানা—রাবণ জটায়ুর পক্ষচ্ছেদ করলেন।

(২) মাসার্ধ-এখন সিতপক্ষ চলছে।

(৩) দল—উভয়পক্ষে হাতাহাতি হবার উপক্রম।

(৪) একাধিকবার বিবাহিত ব্যক্তির স্ত্রী—তাঁর এখন তৃতীয় পক্ষ চলছে।

(৫) দিক্—ওঁর উপদেশ আপনার পক্ষে হিতকর হবেই।

পদ : (১) চরণ—গুরুপদে নমিল রাজন।

(২) দৃষ্টান্ত—মহাজনের পদ অনুসরণ করাই আমাদের কাম্য।

(৩) কার্য—তিনি এখন উচ্চপদে আসীন।

(৪) বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা ধাতু—বাক্যের এক-একটি অংশকে পদ বলে।

(৫) গীতিকবিতা—চণ্ডীদাসের পদ মুহূর্তেই প্রাণ মন কেড়ে নেয়।

(৬) ভোজের ব্যঞ্জন—ছেলের বউভাতে বটুকবাবু বহু উপাদেয় পদের আয়োজন করেছিলেন।

ফল : (১) বৃক্ষের শস্য—গাছটিতে এ-বছরই প্রথম ফল ধরল।

(২) পরিণাম—যেমন কর্ম, তেমনি ফলভোগ কর।

(৩) উপকার—মূর্খকে উপদেশ দিলে কোনো ফল হয় কি?

(৪) শেষ—ফল কথা, ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকলে উন্নতিলাভ অসম্ভব।

(৫) সিদ্ধি—আন্তরিক চেষ্টায় ফললাভ না হয়ে যায় না।

বাস : (১) বস্ত্র পরিধানে ছিন্নবাস বিশীর্ণ শরীর।

(২) মোটরচালিত বড়ো আকারের যান-এমন ঢিমেতালে চললে এক্সপ্রেস বাস পাবেন কি?

(৩) আলয়–”আমার হৃদয় তোমার বাসের যোগ্য করে তোল।”

(৪) সুগন্ধ—ফুলবাসে মুগ্ধ মধুকর।

(৫) সন্ধান—”ধনের পাইয়া বাস আসিল বীরের পাশ।”

ভাব : (১) ভালোবাসা-রাবেয়ার সঙ্গে রাজিয়ার এখন খুব ভাব। (২) অভিপ্রায়—বুঝিনু এবার, দ্বিজ, মনোভাব তব।

(৩) মর্মকথা—কবিতাটির ভাব বিশ্লেষণ কর।

(৪) প্রকার—একই বস্তুকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

(৫) আধ্যাত্মিক তন্ময়তা—কৃষ্ণকথা শুনলেই রাধা ভাবে আকুল হন।

(৬) ক্রিয়া (ব্যাকরণে)—বাক্যটিকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত কর।

মাথা : (১) মস্তক—তাঁর মাথার আঘাত গুরুতর বলেই তো মনে হচ্ছে।

(২) নেতা–নিবারণবাবুই তো এখন গ্রামের মাথা।

(৩) বুদ্ধি—মেয়েটির অঙ্কে বেশ মাথা।

(৪) লোক—মাথাপিছু দু’টাকা চাঁদা পড়েছে।

(৫) অর্থ—তার কথার কোনো মাথা আছে?

(৬) উচ্চতা—ভায়েদের মধ্যে মন্মথই মাথায় বড়ো।

(৭) সর—দইয়ের মাথাটার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি কার না থাকে?

রস : (১) সারাংশ—ফলের রস স্বাস্থ্যপ্রদ।

(২) নিঃস্রাব—ক্ষতের মুখ দিয়া রস পড়িতেছে।

(৩) কাব্যের রস—’ছিন্নমুকুল’ করুণ রসাত্মক কবিতা।

(৪) রসিকতা—ভদ্রলোক বেশ রসের কথা বলেন তো!

(৫) সামর্থ্যজনিত গর্ব—ভারী রস হয়েছে দেখছি যে!

(৬) আনন্দ—অভাজন ও রসে বঞ্চিত।

(৭) প্রবল অনুরাগ—”রসভারে দুহুঁ তনু থরথর কাঁপই।”

(৮) আকর্ষণ-রস ফুরিয়ে যেতেই বন্ধুর দল খসে পড়েছে।

লোক : (১) মানুষ—লোকটা মোটেই সুবিধের নয়।

(২) কর্মচারী-দোকানের জন্যে একজন বিশ্বাসী লোক চাই।

(৩) জগৎ—ভগবান্ ত্রিলোকের অধীশ্বর।

(৪) জন্ম—ইহলোক পরলোক সবই জলাঞ্জলি দিয়েছি।

(৫) জনসাধারণ—লোকমতকে উপেক্ষা করার মানসিকতা শ্রীরামচন্দ্রের ছিল না।

সুর : (১) দেবতা—সুর আর অসুরের সংগ্রাম লাগিয়াই রহিয়াছে।

(২) সংগীতের নিয়ন্ত্রিত ধ্বনি—সুরজ্ঞান না থাকিলে সঙ্গীত-সাধনা বিড়ম্বনামাত্র।

(৩) মত—শ্রমিকেরা সুর পালটিয়েছে দেখছি।

(৪) কণ্ঠস্বর—ভিখারীটি করুণ সুরে ভিক্ষা চাইল।

হাত : (১) হস্ত—মায়ের হাতের শাকান্নও যে স্নেহামৃতে ভরা।

(২) প্রস্থ—বাড়ি যাবার আগে এক হাত তাস খেলে নিই, আসুন।

(৩) যোগাযোগ—এ চুরির পিছনে নিশ্চয়ই চাকরটার হাত আছে।

(৪) দক্ষতা—এসরাজে তাঁর চমৎকার হাত।

(৫) কর্তৃত্ব—এ বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই, ভাই।

(৬) নাড়ী-হাতটা একবার দেখুন, ডাক্তারবাবু।

(৭) করলেখা—জ্যোতিষী হাত দেখতে বসলেন।

হার : (১) মালা—কণ্ঠে তাহার সাতনরী হার শোভা পাইতেছে।

(২) পরাজয়—পাশাখেলায় যুধিষ্ঠিরের হার হল।

(৩) দর—সেভিংস ব্যাঙ্কের সুদের হার কিছুটা বেড়েছে।

(৪) অনুপাত—দুদিকের হার যার সামঞ্জস্যপূর্ণ, তারই চেহারাকে দোহারা বলা যায়।

ভিন্নার্থক শব্দের আরও কয়েকটি উদাহরণ দেখ (বাক্য নিজে গঠন কর) :

কাণ্ড–ব্যাপার, বিবেচনা, অধ্যায়, কুকীর্তি, গাছের গুঁড়ি।

কাল-–কল্য, মৃত্যু, সময়, ধ্বংস, সর্বনাশের কারণ।

খোলা-–আবরণ, বালিশের ওয়াড়, মৃদঙ্গ, নৌকার গহ্বর, কাপড়ের জমি, সুপারি ইত্যাদি বৃক্ষের বল্কল, হুঁকার আধার।

ঘন–মেঘ, নিবিড়, দুর্গম, গাঢ়, ঠাসা, প্রবল, সমান তিন রাশির গুণফল। চক্র—চাকা, মণ্ডল, সুদর্শন, সর্পের ফণাস্থিত চিহ্ন।

চাল—গৃহের আচ্ছাদন, আচার-ব্যবহার, চাউল, পাশা লুডো ইত্যাদি খেলায় সম্মুখের দিকে ঘুঁটিসরানো, ফন্দি, অহংকারসূচক আচরণ।

জাত–জাতি, উৎপন্ন, সমুহ (দ্রব্যজাত), উৎসব, রক্ষিত, প্রকার। জাতি—জন্ম, প্রকার, বর্ণ, মালতী ফুল।

ঠাট—ছলাকলা, চালচলন, প্রচলিত ধারা, কাঠামো, সৈন্যদল।

দণ্ড—লাঠি, শাস্তি, জরিমানা, যুদ্ধ, সময়ের বিভাগ (পল বিপল ইত্যাদি)। দর্শন—দৃষ্টি, দেখা, জ্ঞান, তত্ত্ববিদ্যা, আরশি।

দ্বিজ-–ব্রাহ্মণ, দত্ত, অণ্ডজ প্রাণী, চন্দ্র।

ধারা—প্রকৃতি, প্রবাহ, বর্ষণ, আইনের বিভাগ, আচরণ।

পাত্র-–আধার, ভাজন, যোগ্যব্যক্তি, লোক, বর, নাট্যোল্লিখিত ব্যক্তি, অমাত্য।

পাট-–পাটগাছ, রেশম, ভাঁজ, স্তর, তক্তা, প্রধান, সিংহাসন, অস্তাচল, বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র, গৃহের নিত্যকর্ম, প্রস্থ, প্রলেপ, অনুষ্ঠান।

পাশ-–পার্শ্ব, রজ্জু, ফাঁস, বরুণের অস্ত্র, গুচ্ছ, পাশা।

প্রকৃতি-প্রজা, নিসর্গ, স্বভাব, শক্তি।

বড়–স্পর্ধাপূর্ণ, খ্যাতিমান্, ধনবান্, উদার, সম্ভ্রান্ত

ভোর—প্রভাত, বিহ্বল, ব্যাপিয়া, পরিমিত

যোগ-সম্বন্ধ, গণিতের প্রক্রিয়া, সুযোগ, সাধনা, পুণ্যতিথি।

সারা—সমস্ত, শেষ করা, ক্লান্ত, সংশোধন করা, নীরোগ হওয়া, সংস্কার করা।

স্কন্ধ—কাঁধ, দেহ, বৃক্ষের কাণ্ড, কাব্যগ্রন্থের অধ্যায়, সৈন্যবিভাগ।

হাওয়া–-বাতাস, জলবায়ু, অল্প সংসর্গ, সাধারণের মতিগতি।

বাগবিধি (Idioms) (ক) বিশিষ্টার্থক শব্দ

বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলি শব্দ বা শব্দসমষ্টি আছে যেগুলি আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত না হইয়া কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ সূক্ষ্ম অর্থেই ব্যবহৃত হয়। বক্তব্যবিষয়টিকে সংক্ষেপিত অথচ রসসিক্ত করিয়া তুলিতে এইসমস্ত শব্দের ক্ষমতা প্রচুর। নীচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে পদটি কোন্ বিশেষ অর্থটি প্রকাশ করিতেছে উল্লেখ করিতে হইবে। [ সাধু বা চলিত যেকোনো রীতিতে বাক্যরচনা করিতে পার : পরীক্ষার খাতায় যেকোনো একটি রীতি আগাগোড়া অনুসরণ করিবে। ]

বিশেষ্যপদের বিশিষ্ট ব্যবহার ॥

কাজ : দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন রাজার প্রধান কাজ (কর্তব্য)। মূর্খকে উপদেশ দিলে কাজ (সুফল) কিছু হয় না, উপরন্তু গালমন্দ খেতে হয়। ছবিটায় রঙের কাজ (কলাকৌশল) কী চমৎকার, দেখেছেন? নামী কোম্পানির কাছে সারাবার পর ঘড়িটায় বেশ কাজ (উপকার) দিচ্ছে। রমেশবাবুর মতো কাজের কাজীকে (উপযুক্ত কর্মীকে) নির্বাচন করে আপনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। তুমি যে এমন কাজের বার (অকেজো), জানতাম না। এরকম কথা-কাটাকাটিতে কাজ (প্রয়োজন) কী, হাতেকলমে দেখিয়েই দিন না।

কান : দুষ্ট লোকের মিষ্ট কথায় কান দিও না (গ্রাহ্য করা)। কান পেতে শোন, দূর থেকে কিসের একটা শব্দ আসছে না (মনোযোগ দেওয়া)? দরজার পাশে দাঁড়িয়ে চাটুজ্যেগিন্নী কান খাড়া করে শুনতে লাগলেন (আগ্রহ-সহকারে)। বেসুরো গান কানে বড়ো লাগে (শ্রুতিকটু)। এর কথা তার কাছে, তার কথা ওর কাছে বলে কান ভাঙানোই তোমার ব্যবসায় দেখছি (কুমন্ত্রণা দেওয়া)। বিভিন্ন পরীক্ষায় মেয়েরা এখন উচ্চস্থান লাভ করে ছেলেদের কান কেটে দিচ্ছে (পরাস্ত করা)।

গা : আপনারা এখন গা তুলুন, আসন পাতা হয়ে গেছে (উঠা)। ভাইবোনের গায়ে এমন বেয়াদবের মতো হাত তুলবে না, বলে দিচ্ছি (প্রহার করা)। দাদা বাপেরই তুল্য, দু-কথা বলেছেন, গায়ে মেখে নাও (সহ্য করা)। নদীর গায়েই ছিল গাজী-সাহেবের আস্তানা (তীর)। সময় থাকতে পড়াশোনায় গা করছ না, পরে আপশোস করতে হবে যে (মনোযোগ দেওয়া)। পাওনাদারের ভয়ে এমন করে কতদিন গা ঢাকা দেবে (লুকাইয়া থাকা)? আপিসে খোঁচা খেয়ে কিছু লোক বাড়িতে এসে গায়ের ঝাল ঝাড়েন (আক্রোশ মিটানো)। গোবিন্দসিংহের প্রেরণায় শেষে রানা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন (জড়তা পরিহার-পূর্বক কর্তব্যরত হওয়া)। মাত্র দুটো খেলায় দলের পরাজয় হয়েছে বলে দলনেতার কি এমন করে গা মেলে দেওয়া উচিত (নিশ্চেষ্ট থাকা)? লোডশেডিং এখন মানুষের গা-সওয়া হয়ে গেছে (অভ্যস্ত)। ভূতের গল্প শুনে রামখোকাদের গায়ে কাঁটা দেয়, এমন তো কখনও দেখিনি (রোমাঞ্চিত হওয়া)। এত বড় বংশের ছেলে, এমন কাজ করলি যে রাজ্যের লোক গায়ে থুতু দিচ্ছে (ঘৃণা প্রকাশ করা)। আমরা সবাই খেটে মরব, আপনি গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়াবেন, তা হবে না (দায়িত্ব এড়ানো)। আপনার কথাবার্তা শুনলে গায়ে ফোসকা পড়ে (অসহ্য যন্ত্রণাবোধ হওয়া)। এতদিনে মা-মরা ছেলেটার গায়ে একটু মাস লেগেছে (হৃষ্টপুষ্ট হওয়া)।

চোখ : ছেলেটাকে চোখে চোখে রেখো (সতর্ক দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখা)। “আমার চোখ খুলে গেছে মোহনলাল (জ্ঞানলাভ করা)।” গুরুজনকে এতবড়ো কথা বললে, তোমার কি চোখের চামড়াও নেই (সামান্যতম লজ্জা)! দু-বেলা খেয়ে আঁচাতে দেখলে অনেকেরই চোখ টাটায (ঈর্ষা করা)। চোখ টিপতেই সশস্ত্র প্রহরী এসে হাজির (চক্ষুভঙ্গির দ্বারা ইশারা করা)। “সম্রাট্, চোখ রাঙাচ্ছেন কাকে (ভয় দেখানো)?” চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালে তোমাদের কি কাণ্ডজ্ঞান কোনোদিনই হবে না (বিশেষভাবে বুঝানো)? তোকে তো এমনকিছু বলা হয়নি বাপু যে চোখ ছলছল করবে (অবরুদ্ধ অশ্রুতে চক্ষু পূর্ণ হওয়া)। মিথ্যা কথায় জগদ্বাসীর চোখে ধুলো দিতে পারেন (ঠকানো), কিন্তু নিজের মনকে চোখ ঠারবেন কী করে (স্তোক দেওয়া)? সমাজ-সংসারকে সাদা চোখে (নেশাগ্রস্ত বা সংস্কারাচ্ছন্ন নয় এমন দৃষ্টিতে) দেখতে শিখলে সসাগরা পৃথিবী আমাদের মুঠোয় আসবে। পাড়াগাঁয়ের ছেলে এমন চোখে-মুখে কথা বলে, এরকমটা বড়ো-একটা দেখা যায় না (বাক্‌চাতুর্য প্রকাশ করা)।

জল : সকালবেলা একটু জল (হালকা খাবার) না খেয়ে বেরতে পারি না। আপনার কাছে প্রতিকারের আশ্বাস পেয়ে প্রাণটা জল হয়ে গেল (শীতল)। তোমার ওই চোখের জলে গলে জল হবার লোক (দয়াদ্রচিত্ত) গোপেন গাঙ্গুলী নয়। ছেলেটা তিন বছরেও পাস করতে পারল না, টাকাগুলো জলে গেল (নষ্ট হওয়া)। ছেলে আপনার কাজকর্ম কিচ্ছু করে না, কেবল এই বাস্তুভিটেটুকু দেখে মেয়েকে তো আর হাত-পা বেঁধে জলে দিতে পারি না (অপাত্রে দান করা)। এমন দুর্যোগে বাড়ি ফেরার জন্য উতলা হয়ে পড়লেন, আপনি কি জলে পড়েছেন (ভয়ানক বিপদ্‌গ্রস্ত হওয়া)?

পা : ভিটেতে পা দিতে-না-দিতেই ঝগড়া আরম্ভ হয়েছে (উপস্থিত হওয়া)। কালোবাজারী দৌলতে তিনি যা করেছেন, তাতে কয়েক পুরুষ পায়ের উপর পা দিয়ে চলবে (নিশ্চিন্ত আরামে থাকা)। সূর্য ডুবে এসেছে, পা চালিয়ে নাও (দ্রুতপদে চলা)। আপনার আশ্রয়ে এসেছি, আপনি পায়ে না রাখলে কে রাখবে হুজুর (অনুগ্রহ করা)? ওই বড়ো লোকের পা-চাটা আমার ধাতে সইবে না (চাটুকারিতা করা)। আপনার পায়ে তেল দেওয়ার লোক অনেক পাবেন (অত্যন্ত হীনতার সঙ্গে খোশামোদ করা), জীবন জোয়ারদার সে ধাতের লোকই নয়। ওদিকে আর পা বাড়াবেন না হুজুর, বড়ো তরফের লোকজন ওত পেতে রয়েছে (অগ্রসর হওয়া)।

পেট : পেটের জ্বালা বড়ো জ্বালা (ক্ষুধা)। আমরা যাকিছু করি প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে সবই পেটের জন্য (প্রাণধারণ করা)। দেখতে এতটুকু হলে কী হবে, ওর পেটে-পেটে বুদ্ধি (মনে মনে)। পেটের দায়ে সে এখন পরের কাছে হাত পাততে আরম্ভ করেছে (অন্নকষ্টে থাকা)। আমতা-আমতা না করে পেটের কথাটা (মনোভাব) খোলসা করে বল। সরকারী চাকরি করে যদি পেট চলত (খাওয়া—পরার সঙ্কুলান হওয়া), তাহলে আর ছেলে পড়াতাম না। পেটে এক মুখে আর, এমন লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা উচিত নয় (ভয়ানক কুটিল প্রকৃতির)। বিরুদ্ধ পক্ষকে হাতে না মেরে পেটে মারলে (অন্নসংস্থানের পথ বন্ধ করা) দু দিনেই ঢিট হয়ে যাবে।

মাটি : উৎসবের আনন্দ হঠাৎ বৃষ্টি এসে মাটি করে দিল (নষ্ট)। পাকিস্তানের বিষয়সম্পত্তি সব মাটির দরে ছাড়তে হল (খুব সস্তায়)। যার লাঠি তারই মাটি (ভূসম্পত্তি)। দিন নেই রাত নেই, স্কুল স্কুল করে দেহটা পর্যন্ত মাটি করলেন (নিপাত), কী পেলেন প্রতিদানে? হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় পায়ের তলায় মাটি পাচ্ছিলাম না (নির্ভর করার মতো উপায়), চাকরিটা হতে একটু স্বস্তি পেলাম। রঞ্জন এখন অন্য দলে ভিড়েছে, এ দিকের মাটি আর মাড়ায় না (আসা)।

মুখ : এ ছেলে বংশের মুখ রাখবে বলে মনে হয় (সুনাম অর্জন করা)। মুখে মধু (কথা—বার্তায়), বুকে বিষ। বড়ো মুখ করে তোমার কাছে এসেছি (গৌরব), বঞ্চিত করো না। চাকরবাকরকে অমন মুখ করতে (তিরস্কার করা) নেই। মুখ তুলে চাও, মা জগন্ময়ী (প্রসন্ন হওয়া)। ওর যা মুখ (জঘন্য কথাবার্তা), ওর বাড়ি আমায় আর যেতে বলবেন না মশায়। এতটুকু মেয়ের মুখ (আস্বাদজ্ঞান) বলিহারি দিদি, তরকারিতে কোথায় একটু নুন কম হয়েছে কি না হয়েছে, ঠিক ধরে ফেলেছে। এতদিন ধরে অনেক অন্যায় অপমান সহ্য করে ছোটোবাবু এবার মুখ খুলেছেন (প্রথম প্রতিবাদ করা)।

বিশেষণপদের বিশিষ্ট ব্যবহার ॥

কাঁচা : দেখলেই বোঝা যায় এটা কাঁচা হাতের লেখা (অপরিণত)। তোমাদের চেঁচামেচিতে ছেলেটার কাঁচা (অপূর্ণ) ঘুমটা ভেঙে গেল। অল্প বয়সে কাঁচা (নগদ) পয়সার মুখ দেখেই ছেলেটা বিগড়েছে। এমন কাঁচা কাজ (ত্রুটিপূর্ণ) তাঁর দ্বারা সম্ভব নয়। গ্রামের কাঁচা (মাটির) রাস্তা বর্ষায় তো একহাঁটু হবেই। গেরুয়ার রঙটা কাঁচা (অস্থায়ী), তাই একধোপেই উঠে গেল। তদ্রুপ, কাঁচা (অনিপুণ) লোক, কাঁচা (প্রাথমিক) খাতা, কাঁচা (বিশুদ্ধ) সোনা, কাঁচা (উপাদান-বস্তু) মাল ইত্যাদি।

পাকা : উত্তরে খানিকটা গেলেই পাকা (বাঁধানো) সড়ক পেয়ে যাবেন। তাঁর মতো পাকা (পরিণতবুদ্ধি) লোককে যখন পাঠিয়েছেন, তখন পাকা (চূড়ান্ত কথাই নিয়ে আসবেন। কাপড়ের রঙটা পাকা (স্থায়ী) বলেই মনে হচ্ছে। গুপের মতো পাকা (ওস্তাদ) গুণ্ডা আর একটাও এ তল্লাটে নেই। তাঁর পাকা (শুভ্র) চুলের সম্মানটা অন্ততঃ রেখে চলো। বাড়িভাড়ার পাকা (চূড়ান্ত) রসিদ এসে গেছে। রবিবার ইভার পাকা দেখা (আশীর্বাদ), আপনাকে আসতেই হবে। ভাড়া-করা পাকা বাড়িতে (ইষ্টকনির্মিত) বাস করার চেয়ে নিজের কুঁড়েঘরে থাকায় অনেক শান্তি।

মোটা : দাদু কয়লার কারবারে মোটা (প্রচুর) টাকা রোজগার করতেন। এত চেষ্টাতেও তার মোটা বুদ্ধিতে (স্থূল) যদি একটুও ধার ধরত। আমার এমন মোটা (অমার্জিত) গলায় কীর্তনগান চলে না। গরিবের সংসারে মোটা ভাত মোটা কাপড় (অত্যন্ত সাধারণ স্তরের জীবিকার সংস্থান) জুটলেই যথেষ্ট।

ক্রিয়াপদের বিশিষ্ট ব্যবহার

উঠা : এত অল্প জিনিসপত্রে মদনবাবুর মন উঠলে (সন্তুষ্ট হওয়া) হয়। এত দিনে এ বাড়ির অন্ন আমার উঠল (চাকরি যাওয়া)। কথাটা বড়োবাবুরও কানে উঠেছে (কর্ণগোচর হওয়া)। গোবরজল খাইয়ে মানুষকে জাতে ওঠানোর দিন (সামাজিক মর্যাদা দেওয়া) আর নেই। এখন খরচ উঠলে (মূলধনটুকুর প্রত্যাবর্তন হওয়া) বাঁচি, লাভ চুলোয় যাক।

করা : হরেকেষ্ট মুখ্যু হোক, এ বাজারেও তো করে (উপার্জন করা) খাচ্ছে। বউমাকে নৌকো করে (যোগে) নিয়ে আসবে গৌরী। “আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে (সমবেত হওয়া) চাঁদের লোভে লোভে।” লোহার কারবারে লোহিয়ারা মোটা টাকা করেছে (সঞ্চয়)। উমেশপ্রসাদ ওকালতিতে এই অল্পদিনেই চমৎকার নাম করেছে (খ্যাতি পাওয়া)।

কাটা : দুঃখের রজনী কাটতেই চায় না (শেষ হওয়া)। কবিতার বই বাজারে কাটে (বিক্রয় হয়) খুব কম, পোকায় কাটে (নষ্ট করা) খুব বেশী। “কেটে যাবে মেঘ, নবীন গরিমা ভাতিবে আবার ললাটে তোর” (দূরীভূত হওয়া)। গরম দুধে একচির লেবু দিয়ে ছানা কেটে নেবে (তৈরী করা)। কচি মনে যে দাগ কেটেছে (প্রভাব পড়া), তা তো আর মোছবার নয়। ঠান্‌দি ছড়া কাটেন (আবৃত্তি করা) বটে! “তোমরা ফোঁটাকাটা (অঙ্কন করা) অনুস্বরবাদীর দল।” বড়োদের সঙ্গে অকারণে কথা-কাটা (প্রতিবাদ করা) তোমার স্বভাব হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করেও যুগের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছি না, বারে বারেই তাল কেটে যাচ্ছে (সামঞ্জস্যহীন হওয়া)।

তোলা : ছেলেরা চাঁদা তুলতে বেরিয়েছে (সংগ্রহ করা)। এখন আর পুরনো কথা তুলে (উত্থাপন করা) কোনো লাভ হবে কি? রুমালে কী সুন্দর ফুল তুলেছে রুমা (অঙ্কন করা)! মাঝি, তুই পাল তুলে দে ভরা গাঙে (খাটানো)। তাকে গোবরজল খাইয়ে জাতে তোলা (সমাজভূত করা) হল। তল্পি তোল সাধুজী, এখানে আর সুবিধে হবে না (গুটানো)।

ধরা : ধর (মনে করা) তাঁর দেখা পেলে না, তখন কী করবে? ধরা গলায় (ভগ্ন) গান ধরা (আরম্ভ করা) যায় না। একটানা পানদোষের ফলে তাঁকে রোগে ধরেছে (আক্রমণ করা)। ডাক্তারবাবু এত করেও রোগ ধরতে (নির্ণয় করা) পারলেন না। ধরণীবাবুকে ধর (সনির্বন্ধ অনুরোধ করা), বসুধার চাকরিটা হয়ে যাবে। আর কিছু কর আর না কর, ওই পাকা মাথার কথাটা ধর (গ্রাহ্য করা), এ যাত্রায় তরে যাবে। জামাটা জামাইয়ের মনেই ধরেনি (পছন্দ হওয়া)। মিতা জেদ ধরেছে (দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া) বিয়ে ও করবে না। এ ট্রেনখানা মেন লাইন ধরে (পথ দিয়ে) বর্ধমান গেলেও ব্যান্ডেলে ধরে (থামা) না। বৃষ্টি ধরে (বন্ধ হওয়া) এল বলে। তরকারিটা যেন ধরে না যায় (পুড়িয়া যাওয়া), দেখিস। গিলে-করা আদ্দির পাঞ্জাবি ছেড়ে তিনি এখন মোটা গেরুয়া ধরেছেন (পরিধান করা)। নেতাজীর পথ ধরতে (অবলম্বন করা) যথেষ্ট মনোবল চাই। ঠিকমতো ঘুঁটে না দিয়ে হাওয়া করলে কি আঁচ ধরে (প্রজ্বলিত হওয়া)?

(খ) বিশিষ্টার্থক বাক্যাংশ বা শব্দসমষ্টি

অকালকুষ্মাণ্ড (অপদার্থ)–না বাপু, তোমার মতো অকালকুষ্মাণ্ডকে দিয়ে এমন অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ হবে না। অক্কা পাওয়া বা পটোল তোলা (মরিয়া যাওয়া—লঘু অর্থে)—পালের গোদাটা কবে অক্কা পাবে, গেরামের হাড় জুডুবে! অগ্নিপরীক্ষা (নিদারুণ দুঃসময়ের মধ্য দিয়া কাল কাটানো)—ভারতবাসীর এখন অগ্নিপরীক্ষা চলিতেছে, এ-সময় সকলপ্রকার ভেদবুদ্ধির কথা ভুলিয়া সকলকে জাতীয় সংহতির জন্য সচেষ্ট হইতে হইবে। অন্ধের যষ্টি বা অন্ধের নড়ি (অসহায়ের শেষ সম্বল)—বেড়ালছানাগুলিই নিঃসন্তান বৃদ্ধার শেষবয়সে অন্ধের যষ্টি হয়ে রয়েছে। অকূল পাথার (সমূহ বিপদ্)—হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় অপোগণ্ড ভাইগুলোকে নিয়ে সাধন অকূল পাথারে পড়ল। অকূলে কূল পাওয়া (বিপন্মুক্ত হওয়া)—সদ্যপ্রয়াত মণিবাবুর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটা আসতে তবে না ওঁর ছেলেমেয়েরা অকূলে কূল পেল। অপ্রস্তুতে পড়া (অপ্রতিভ হওয়া)—সকাল সাতটার ট্রেন যখন বারোটায় পৌঁছল, তখন রামবাবুর বাড়িতে গেলে ওঁরা অপ্রস্তুতে পড়বেন ভেবে সোজা হোটেলের দিকেই পা বাড়ালাম। অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন)—-পররাজ্য-লোলুপের কাছে পঞ্চশীলের মাহাত্ম্য-ব্যাখ্যা অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কিছু নয়। অমাবস্যার চাঁদ বা ডুমুরের ফুল (দুর্লভদর্শন)—নাটকের মহলা দিতে সবাই আসছে, বাবলুরই কেবল পাত্তা নেই; ও কি অমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠল? অগস্ত্যযাত্রা (শেষ যাত্রা)–কেনারাম কোন্ সকালে কেরোসিন তেলে লাইন দিয়েছে, এখনও এল না—ও কি অগস্ত্যযাত্রা করল? অহিনকুল সম্বন্ধ বা আদায়-কাঁচকলায় বা সাপে-নেউলে (ঘোর শত্রুতা) –বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে দু’ভায়ের এখন অহিনকুল সম্বন্ধ, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই। অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া (সঠিক পথ না জানায় আন্দাজে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা)—প্রতিটি প্রশ্নের প্রয়োগপদ্ধতি না জেনে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লে কেবল নির্বুদ্ধিতারই পরিচয় দেওয়া হয়। অন্নচিন্তা চমৎকারা (পেটের চিন্তাতেই অস্থির)-কঠোর দারিদ্র্যের কবলে পড়ে অন্নচিন্তা যাদের চমৎকারা, তাদের কাছে শিক্ষাসংস্কৃতির ছিটেফোঁটাও আশা করা যায় কি? অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী বা ফোঁপরা ঢেঁকির চোপরা বেশী (অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তির বাহ্য চালচলনে অহংকারের মাত্রাধিক প্রকাশ)—রবীন্দ্রনাট্য-সম্বন্ধে তোমার এ প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে ভেবেচিন্তে দিতে হবে, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীদের দলে আমি নেই।

আকাশ থেকে পড়া (অত্যধিক বিস্মিত হওয়া)—আসন্ন দুর্যোগ উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরবই শুনে পিসিমা তো আকাশ থেকে পড়লেন। আলোর নীচেই অন্ধকার (আদর্শের পাশেই আদর্শহীনতার অবস্থান)—প্রধানশিক্ষকের ছেলেটিই তো সেদিন পরীক্ষা পণ্ড করার নেতৃত্ব দিল, একেই তো বলে আলোর নীচেই অন্ধকার। আঁস্তাকুড়ের পাতা (হেয় ব্যক্তি)—আমরা হলুম গিয়ে আঁস্তাকুড়ের পাতা, আপনাদের ভোট দিয়ে আমরা কখনও স্বর্গে যেতে পারি? আহ্লাদে আটখানা (অত্যধিক পুলকিত)—মামার দেওয়া টিনের উড়োজাহাজটা পেয়ে পাপিয়া একেবারে আহ্লাদে আটখানা। আকাশকুসুম বা শূন্যে সৌধনির্মাণ (অবাস্তব সুখকল্পনা)—স্কুলমাস্টারি করে খাস শহরের বুকে একখানা বাড়ি তৈরি করার চিন্তা আকাশকুসুম বইকি। আক্কেল-গুড়ুম (হতবুদ্ধিতা)—দুশো বত্রিশ টাকা ইলেকট্রিক বিলের জায়গায় পাঁচহাজার টাকার বিল আসতে দেখে আমার তো আক্কেলগুড়ুম। আক্কেল সেলামি (অনভিজ্ঞতার দণ্ড)—ভাগে কারবার করতে গিয়ে আপনাকে কয়েক হাজার টাকা আক্কেল-সেলামি দিতে হয়েছে তাহলে। আদাজল খেয়ে লাগা বা কোমর বেঁধে লাগা বা উঠে-পড়ে লাগা (অত্যধিক উদ্যম-সহকারে কাজ করা)—গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আমাদের হাবুল সাফল্যলাভের উদ্দেশ্যে এবার আদাজল খেয়ে লেগেছে। আমড়াকাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ)–আগে তো বেশ কাজকর্ম করছিলে, দিনের দিন এমন আমড়াকাঠের ঢেঁকি হয়ে উঠছ কেন? আকাশে তোলা (অত্যধিক প্রশংসা করা)—প্রথম সাফল্যের ফলে সফলকাম ব্যক্তিকে একেবারে আকাশে তোলা উচিত নয়, মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। আড়িপাতা (অন্তরালে থাকিয়া কোনোকিছু শুনিবার চেষ্টা)—একটু আস্তে বল, নতুন চাকরটার আড়িপাতা অভ্যাস আছে, তাই একটু সতর্ক থাকা দরকার। আপ ভালো তো জগৎ ভালো (নিজে ভালো হইলে সকলকেই ভালো লাগে)—স্বার্থপরের কাছে সমস্ত মানুষই ঘোর স্বার্থপর; অথচ সাদা চোখে দেখলে জগৎটাই চমৎকার দেখায়; তাই তো শুনতে পাই—আপ ভালো তো জগৎ ভালো। আমতা-আমতা করা (স্পষ্ট করিয়া না বলা)—উকিলের জেরার মুখে সাজানো সাক্ষী শেষে আমতা-আমতা করিতে লাগিল। আকাশপাতাল প্রভেদ বা আসমান-জমিন ফারাক (বিরাট্ পার্থক্য) –স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতায় আকাশপাতাল প্রভেদ। আসর জাঁকানো (ভাবভঙ্গী ও কথাবার্তায় সমবেত ব্যক্তিদের মধ্যে নিজেকে বিশিষ্টরূপে জাহির করা)-আশিস্বাবু আসাম-ভ্রমণের আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে একেবারে আসর জাঁকিয়ে বসেছেন। আষাঢ়ে গল্প (দীর্ঘ বিরক্তিকর কাহিনী)—ওসব আষাঢ়ে গল্প রেখে কাজের কাজ কিছু কর, যাতে দুটো পয়সা পকেটে আসে। আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ অবস্থার উন্নতি বা বিরাট্ পদোন্নতি)—কর্তৃপক্ষের নেকনজরে পড়ে কৃষ্ণগতিবাবু এখন সুপারভাইজার হয়ে হম্বিতম্বি করছেন, অথচ পাঁচ বছর আগে উনি আমাদেরই মতো করণিক ছিলেন—আঙুল ফুলে কলাগাছ তো একেই বলে।

ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ব)—আচ্ছা ইঁচড়ে পাকা ছেলে তো! বড়োদের সামনে এইভাবে রসিকতা করে? উঁকি দেওয়া (অলক্ষ্যে দেখার চেষ্টা)—কাঞ্চনকৌলীন্যপূর্ণ সমাজে বাস করে লটারির টাকায় ভাগ্য ফেরাবার ইচ্ছেটা মাঝে মাঝে মনে উঁকি দেয় বইকি। উত্তম-মধ্যম (প্রচণ্ড প্রহার)—পকেটমারকে পুলিসে দেওয়ার চেয়ে আচ্ছা করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দাও। উচ্ছের ঝাড় (কুখ্যাত বংশ)—ওর বাবা ছিল ডাকাতের সর্দার, ভাইগুলোর কেউ পকেটমার, কেউ দাঙ্গাবাজ, আর ও হয়েছে ছিঁচকে চোর—আশ্চর্য হবার কিছু নেই, উচ্ছের ঝাড় তো! উলুবনে মুক্তো ছড়ানো (অপাত্রে দান)—কচিকাঁচাদের কাছে রবীন্দ্র-জীবনদর্শন ব্যাখ্যা করা আর উলুবনে মুক্তো ছড়ানো একই—কোনোটাই কাজে লাগে না। উভয়সঙ্কট (দু দিকেই মহাবিপদ্)—মামা বলেন কারবার দেখতে বাবা মোটা টাকার চাকরি ছাড়তে বারণ করেন—কোন্ দিক্ রাখি! আমার হয়েছে উভয়সঙ্কট। একচোখো (পক্ষপাতদুষ্ট)—শিক্ষকের পক্ষে একচোখো নীতি অবলম্বন কখনই উচিত নয়, তাঁকে সমদর্শী হতে হবে। এক যাত্রায় পৃথক্‌ ফল (একইরকম ভালো কাজ করিয়া সমান ফল না পাওয়া)—শ্রেণীর প্রথম ছাত্রটি আর নতুন ভরতি-হওয়া ছাত্রটি—দুজনেই জ্যামিতির শক্ত সম্পাদ্যটি একইরকম লিখেছে, অথচ নম্বরের দিক্ দিয়ে বেশ হেরফের হয়ে গেছে; এক যাত্রায় পৃথক্‌ ফল একেই বলে। একহাত নেওয়া (প্রতিশোধ গ্রহণ)—এতদিন বহু বঞ্চনা-সত্ত্বেও চুপচাপ থেকে বাঞ্ছারাম এবারে খুড়োর ওপর বেশ একহাত নিয়েছে। এসপার ওসপার (ভালোমন্দ একটাকিছু চরম নিষ্পত্তি)—নিত্যদিন এমন ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়? তাই সবাই চাইছেন একটাকিছু এসপার ওসপার হয়েই যাক। ওজন বুঝে চলা (ক্ষমতামতো কাজ করা)—পাড়ার পাঁচজনের কথায় নির্বোধের মতো না নেচে, নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা—অনুসারে ওজন বুঝে চলবে; তাহলে আর বিপদে পড়তে হবে না।

কপাল ঠুকে কাজে নামা (ফলাফল ভাগ্যের হাতে সমর্পণপূর্বক কাজে হাত দেওয়া)—চাকরির আশায় বসে না থেকে কপাল ঠুকে লজেন্স ফিরির কাজে নেমে পড়েছি—দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়। কইমাছের প্রাণ (অত্যধিক কষ্টসহিষ্ণু)—সীতা-সাবিত্রীর দেশের মেয়ে আমরা, সমাজের সর্বপ্রকার নির্যাতন সয়ে যাওয়াই তো আমাদের ধর্ম, আমাদের তো পুঁটিমাছের প্রাণ নয়, কইমাছের প্রাণ। কলের পুতুল (ব্যক্তিত্বহীন)—আমি কি যুক্তি-বুদ্ধি-বিবেক-বর্জিত একটা কলের পুতুল যে, ইচ্ছামতো আমাকে ওঠাবে বসাবে? কপাল ফেরা (সুদিন আসা)—সাহেবের নজরে একবার পড়তে পার, কপাল ফিরতে দেরি হবে না—চটপট উঁচু পদে ঠিকই উঠে যাবে। কত ধানে কত চাল (বাস্তব অভিজ্ঞতা)—বাপের পয়সা এতদিন দু হাতে উড়িয়ে এসেছ, এবার নিজের ঘাড়ে সংসারের বোঝা বয়ে দেখ কত ধানে কত চাল। কলুর বলদ (পরাধীন চাকুরে)—ওপরওয়ালার হুকুম তামিল করেই চলেছি, অথচ দুবেলা দুমুঠোও জোটে না—কলুর বলদ ছাড়া আমরা আর কী বলুন? কড়ায়-গণ্ডায় (পুরাপুরি)—আপনার পাওনাটা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিন মোড়লমশায়, এক পয়সাও বাকি রাখিনি। কাজও নেই কামাইও নেই (কর্মহীন অথচ সর্বদাই অকাজে ব্যস্ত)—কমলাক্ষবাবুকে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গাতে কখনই পাবেন না, তাঁর কাজও নেই কামাইও নেই। কালঘাম ছুটিয়ে দেওয়া (প্রাণান্তকর পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি)—ধন্যি মশায়, এমন ছেলেকে মানুষ করার ভার দিয়েছেন যে আমাদের সকলের কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছেন। কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা (অসময়ে নষ্ট হওয়া)—বাপমা-মরা ভাগনেটাকে কাছে রেখে মানুষ করার চেষ্টা করছ ভালো কথা, কিন্তু পাড়ার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে যেন মিশতে দিও না, কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরে যাবে। কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অসম্ভব বস্তু)—জাপান সয়াবীনের তৈরী নিরামিষ মাংস প্রস্তুত করছে, এ কি আমের অভাবে কাঁঠালের আমসত্ত্ব নয়? কানপাতলা (অত্যধিক বিশ্বাসপরায়ণ)—আপনার মতো শিক্ষিত লোকের পক্ষে এমন কানপাতলা হওয়া সাজে না; যে যা বলবে, সেটাকেই সত্যি বলে ধরে না নিয়ে নিজে যাচাই করে দেখবেন না? কান ভারী করা (গোপন নিন্দার দ্বারা কাহারও বিরুদ্ধে অসন্তোষ জাগানো)-আমার বিরুদ্ধে আমার সহকর্মীদের কান ভারী করে আপনার লাভটা কী হবে শুনি? কালনেমির লঙ্কাভাগ (কোনো দুর্লভ বস্তু হস্তগত হওয়ার পূর্বেই সেটিকে উপভোগ করার কল্পনায় মশগুল হওয়া)—সরকারী অনুদানের টাকাটা পুরো আগে হাতে আসুক, তারপরে তো সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাব; আগেভাগেই কালনেমির লঙ্কাভাগ করে লাভ কী? কূপমণ্ডূক (সংকীর্ণমনা)—এত লেখাপড়া শিখেও পণপ্রথা ছুঁতমার্গ প্রভৃতি অমানবিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যদি না-ই পারলাম, তাহলে কূপমণ্ডূকতা আমাদের ঘুচল কোথায়? কেউকেটা (অতি তুচ্ছ ব্যক্তি)—চালচলনে অতি-সাধারণ দেখে রমেশবাবুকে কেউকেটা মনে করো না, তিন বিষয়ের এম-এ উনি। কেঁচে গণ্ডূষ (নতুনভাবে শুরু)—আপিসে কলম পিষে-পিষে সবই ভুলে গেছি, এখন দায়ে পড়ে ছাত্র পড়াতে গিয়ে দেখছি কেঁচে গণ্ডূষ না করলে আর উপায় নেই। কেঁচো খুঁড়তে সাপ (সামান্য বিষয়ের অনুসন্ধানে গুরুতর রহস্যভেদ)—ফন্দীবাজ নন্দীমশায় বুঝলেন ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়াই ভালো, শেষে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যদি সাপ বেরিয়ে পড়ে! কেষ্টবিষ্টু (গণ্যমান্য—ব্যঙ্গে)—আমি কী এমন নামডাকওয়ালা হোমরাচোমরা কেষ্টবিষ্টু যে আমার জন্য সকলকে এত শশব্যস্ত হতে হবে! কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা (এক শত্রুকে দিয়া অন্য শত্রুকে শেষ করা)—প্রতিদ্বন্দ্বীর পিছনে বিপক্ষের প্রদ্যোতবাবুকে কৌশলে লাগিয়ে দিয়ে মাধববাবু কেমনভাবে মনস্কামনা সিদ্ধ করলেন দেখলে? কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলাই হল রাজনীতির বড়ো কথা। খেতের চাষে দুঃখ নাশে (কঠিন পরিশ্রমে স্বচ্ছন্দে সংসার চালানো)—ভগবান্ হাত-পা দিয়েছেন, মগজ দিয়েছেন, সেই বলবুদ্ধি খাটিয়েই বুক সোজা রেখে সংসার চালাই; খেতের চাষে দুঃখ নাশে হচ্ছে আমার জীবন-নীতি। খয়ের খাঁ (তোষামোদকারী)—ইংরেজ সরকার ভারতে একদল খয়ের খাঁ তৈরি করার মতলবেই ‘রায়বাহাদুর’ ‘রায়সাহেব’ ইত্যাদি চাকচক্যময় উপাধির সৃষ্টি করেছিল।

গজকচ্ছপের লড়াই (দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর সংঘর্ষ)—সামনের ভোটে এবার গজকচ্ছপের লড়াইটা জমবে ভালো, রামবাবু রহিমসাহেব কেউ তো আর কমতি যান না। গড্ডলিকা-প্রবাহ (পালের ভেড়ার মতো অন্ধভাবে অগ্রগামীর অনুগমন)—আর পাঁচজন অশিক্ষিত লোকের মতো গড্ডলিকা-প্রবাহে গা না ভাসিয়ে স্বাধীন চিন্তাশক্তির একটু পরিচয় রেখে যাও। গভীর জলের মাছ (অত্যন্ত বুদ্ধিমান্ ও চাপা)–দীপ্তিদি একেবারে গভীর জলের মাছ, হাজার চেষ্টা করেও পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো গোপন কথা ওঁর কাছ থেকে জানা যাবে না। গলে যাওয়া (আত্মহারা হওয়া)—দু ফোঁটা চোখের জলে গলে যাবে গণশা গোসাঁই? গাছপাথর (হিসাব)—রহমৎ সাহেবের বয়সের কি আর গাছপাথর আছে, কিন্তু এখনও কেমন ডাঁটো রয়েছেন দেখেছ? গুড়ে বালি (নিষ্ফল আশা)–মামার বিষয়সম্পত্তি দু হাতে ওড়াবে ভেবেছ? সে গুড়ে বালি, মাখনবাবু তলে-তলে সমস্তকিছু রামকৃষ্ণ মিশনকে দান করে দিয়েছেন। গোকুলের ষাঁড় (নিষ্কর্মা ভবঘুরে)—রাজু পাঁড়ের নাতিটা আস্ত গোকুলের ষাঁড় বনে যাচ্ছে, খায় দায় আর দিনরাত পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। গোবর-গণেশ (অকর্মণ্য ও নির্বোধ)—এমন গোবর-গণেশ আর একটাও দেখিনি বাপু, ঘটে বুদ্ধি-টুদ্ধি যদি একটুও থাকে! গোঁফখেজুরে (আশ্চর্যরকমের কুঁড়ে)–আচ্ছা গোঁফখেজুরে লোক তো তুমি, হাত বাড়ালেই তো খাতাটা পেয়ে যাও, তাও নিতে পারছ না? গোবরে পদ্মফুল বা ছাইগাদায় পদ্মফুল বা দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ (অসাধুবংশে সজ্জনের আবির্ভাব—অমন ডাকাতের বংশে এমন হরিভক্ত জন্মেছে! এ যে গোবরে পদ্মফুল ফুটেছে দেখছি। গৌরচন্দ্রিকা (ভূমিকা)—অকারণ এত সব কথা বলছ কেন? তোমার ওই গৌরচন্দ্রিকা রেখে গলা ঝেড়ে আসল বক্তব্যটা বলে ফেল দেখি।

ঘরের শত্রু বিভীষণ (যে আপনজন আপাতস্বার্থের লোভে বিশ্বাসঘাতকতা করে)—যে দেশের আত্মরক্ষার গোপনতথ্য ঘরের শত্রু বিভীষণের চক্রান্তে বিদেশী গুপ্তচরের হস্তগত হয়, সে দেশ তো চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ঘষে-মেজে (অনেক চেষ্টা-চরিত্র করিয়া)—ধৈর্য ধরে বহু পরিশ্রম করে ছেলেটাকে ঘষে-মেজে তৈরি তো করলাম, এখন ভগবানের হাত। ঘাই মারা (টুকিটাকিতে বিদ্যাবুদ্ধির পরিচয় দেওয়া)—নরেনবাবু গভীর জলের মাছ, কিন্তু তাল বুঝে মাঝে মাঝে বেশ ঘাই মারেন আর তাতেই তাঁর জ্ঞানের গভীরতার প্রকাশ দেখতে পাই। ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া (মানে মানে বিপদ্ কাটা)—আজ একে বইখানা দেখে আসিনি, তার উপর ক্লাসে বিশুবাবুর বদলে হেড স্যার এলেন, সারা ঘণ্টা বুক দুরদুর করেছে, ঘণ্টা পড়তে তবে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে (স্বজাতির দুর্দশায় আনন্দ উপভোগ করে এমন আহাম্মক)—পলটুকে তিরস্কার পেতে দেখে ক্লাসের অনেকেই মুচকি হাসি হাসছিল, তারা জানত না যে তাদেরও অনুরূপ অবস্থা হবে—একেই বলে ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। ঘুণাক্ষরে টের পাওয়া (বিন্দুবিসর্গ জানা)–আচারের জারটা আস্তে আস্তে নামাবি, মা যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পান! ঘোড়া দেখে খোঁড়া হওয়া (পরিশ্রমসাধ্য কাজে সহায়ক-লাভে অলস হওয়া)—এইটুকু রাস্তা এতদিন তো হেঁটেই আসছিলেন, বাস চালু হতেই ঘোড়া দেখে খোঁড়া হয়েছেন?

,

চক্ষুশূল (অপ্রিয় ব্যক্তি—যাহাকে দেখামাত্র সর্বাঙ্গ জ্বলে)—রাজেনবাবুর প্রথম পক্ষের ছেলেটি হয়েছে নতুন বউয়ের চক্ষুশূল, মায়ের মতো ভালোবাসা দূরের কথা, দিনরাত পিছনে লেগেই রয়েছেন। চাঁদের হাট (বহু গুণিজনের একত্র সমাবেশ)—ডক্টর ব্যানার্জীর কনিষ্ঠ পুত্রের উপনয়ন উপলক্ষে শহরের বহু চিকিৎসক অধ্যাপক সংগীতশিল্পীর সমাবেশ হয়েছিল—একেই বলে চাঁদের হাট। চিনির বলদ (পরের সুখবৃদ্ধির জন্য খাটা অথচ নিজে বিন্দুমাত্র ভোগের সুযোগ না পাওয়া)—চিরপদদলিত বঞ্চিত শোষিত নিপীড়িত দারিদ্র্যদীর্ণ হতভাগ্য ভারতীয় শ্রমজীবীর দল চিনির বলদের মতো বিশ্বসভ্যতার ভার বহন করেই চলেছে। চোখে সরষেফুল দেখা (সমূহ বিপদে দিশেহারা হওয়া)—পরীক্ষা এসে গেছে অথচ কোনো বই-ই ভালোভাবে দেখা হয়নি, চোখে তাই সরষেফুল দেখছি। চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো (বিশেষভাবে বুঝাইয়া দেওয়া)—গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে কথা বলতে হয়, চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালে এ কাণ্ডজ্ঞান কি কোনোদিনই হবে না? চোখে ধুলো দেওয়া (ঠকানো)—মিথ্য কথার মুনশিয়ানায় জগদ্বাসীর চোখে ধুলো দিতে পারেন সহজেই, কিন্তু নিজের বিবেককে ভুল বোঝাবেন কী করে? চোখের মাথা খাওয়া (অসাবধানতাবশতঃ দেখায় অক্ষম)—পেনসিলটা তো টেবিলেই রয়েছে অথচ পেনসিল পেনসিল করে চেঁচাচ্ছ, চোখের মাথা খেয়েছ নাকি? চাচা আপন প্রাণ বাঁচা (আত্মরক্ষার তাগিদ সর্বাপেক্ষা জরুরী)-পাড়ায় আন্ত্রিক রোগ ছড়িয়ে পড়তে-না-পড়তে পরাশরবাবু ছেলেমেয়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাড়ি দিলেন, চাচা আপন প্রাণ বাঁচার নীতি যে সবার কাছে সবচেয়ে জরুরী। চোখ থাকতে কানা (চক্ষুষ্মান্ অথচ চৈতন্যবান্ নয়)—সস্তা হাততালির লোভে বিনোদনের নামে বিকৃতরুচির কিছু অনুষ্ঠান দেখিয়ে দূরদর্শন জাতির ভবিষ্যৎ সম্পদ কচিকাঁচাদের কী ক্ষতি যে করে চলেছে, দেশের কর্ণধারেরা তা বুঝতে পারছেন না—একেই বলে চোখ থাকতে কানা। চোখা চোখা কথা (মর্মদাহী)—ছোট্ট ছেলের মুখে এমন চোখা চোখা কথা শুনলে পিত্তি জ্বলে যায়।

ছাইচাপা আগুন (প্রচ্ছন্ন প্রতিভা)—বস্তিতে বাস করে বলে আদৌ এরা ঘৃণ্য নয়, খুঁজলে এদের মধ্যেও ছাইচাপা আগুনের সন্ধান পাবেন, যথাযথ সুযোগ ও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে যারা সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ছাতি ফোলানো (সাহসের সঙ্গে গর্ব প্রকাশ করা)—যখন-তখন ছাতি ফোলানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তেমন-তেমন লোকের পাল্লায় পড়লে ফোলানো ছাতি চুপসে যাবে। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা (যৎসামান্য লাভের জন্য ভয়ানক দুর্নামের ভাগী হওয়া)—ও বিশ-পঁচিশের কাণ্ড নয় মশায়, করকরে পাঁচশ চাই; ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে শর্মা নারাজ। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি (বিপৎকালে অল্প ক্ষতি স্বীকারেও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা)—বেশ বড়ো মুখ নিয়েই বরেনবাবু ছাত্রাবাস চালাবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাঁর তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি গোছের অবস্থা। জিলিপির পেঁচ (কুটিল বুদ্ধি)—মধুমাখানো কথা শুনে ভুলবেন না যেন, ওর পেটে পেটে জিলিপির পেঁচ। জলে কুমির ডাঙায় বাঘ (দুই দিকেই মহাবিপদ—রাবণের বিরূপতা করলে রাবণ মারবে, অথচ স্বর্ণমৃগরূপ ধারণ করলে রামের বাণে মৃত্যু ঘটবে, মারীচের তখন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। জল-উঁচুর দল (ক্ষমতাবানের মনজোগানোই যাহাদের কাজ)—রাম কহ, শর্মা ও দলে কদাপি নাম লেখাবে না, ওঁরা হলেন জল-উঁচুর দল, ওখানে মাধ্যাকর্ষণ যে উলটো ধারায় বয়। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে (সমস্ত ব্যাপারে)—খেলার মাঠে, চড়ুইভাতিতে, বন্যাত্রাণে, নিমন্ত্রণ-বাড়ির পরিবেশনে–ঝালে-ঝোলে-অম্বলে আমাদের দেখতে পাবেন, কোথায় নেই আমরা? ঝোপ বুঝে কোপ মারা (সুযোগমতো কাজ হাসিল করা)–বকেয়া পাওনাগণ্ডা আদায় করতে হলে ন’কর্তা যখন খুশমেজাজে থাকবেন, সেই সময় ঝোপ বুঝে কোপ মারতে হবে। ঝড়ঝাপটা (বাধাবিঘ্ন)—জীবনে চলার পথ তো গোলাপছড়ানো নয়, অনেক ঝড়ঝাপটার সম্মুখীন হতে হবে মা, এখন থেকে ভগবান্ তাই আমাকে তৈরী করে নিচ্ছেন।

টনক নড়া (চৈতন্য হওয়া)—এতদিন পরে সরকারের টনক নড়েছে যে, দেশে দ্রব্যমূল্য আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। টাকার কুমির (বিপুল সম্পত্তির অধিকারী)—ছেঁড়া পোশাক আর সাদামাটা চালচলন দেখে কে বুঝবে যে নেত্যবাবু একটি টাকার কুমির? টিমটিম করা (অত্যন্ত ক্ষীণভাবে অস্তিত্ব রক্ষা করা)—আমাদের গাঁয়ে হাই স্কুল দূরের কথা, একটিমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, তাও টিমটিম করছে। টেক্কা দেওয়া (প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়া)—উপর্যুপরি কয়েক বৎসর হান্ড্রেড পারসেন্ট পাস করিয়ে আমাদের স্কুল শহরের অনেক নামকরা স্কুলকে টেক্কা দিয়েছে। ঠুটো জগন্নাথ (আপাতদৃষ্টিতে শক্তিমান্, কিন্তু কার্যতঃ অকর্মণ্য)—যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদে জেল্লা অনেক, কিন্তু পদাভিষিক্ত ব্যক্তিটি আসলে ঘুঁটো জগন্নাথ, কারণ একক প্রচেষ্টায় তিনি যা-ই করতে চান, তাতেই বাধা। ঠোঁটকাটা (অপ্রিয় অথচ স্পষ্টবক্তা)—অমিয়র মতো ঠোঁটকাটা লোককে সঙ্গে নাও, দরকার হলে যে দু কথা বড়ো সাহেবের মুখের ওপরই বলতে পারবে। ডানহাত (প্রধান সহায়)–মেনাহাতী নিহত হওয়ায় সীতারাম রায়ের ডানহাতটাই গুঁড়ো হয়ে গেল। ডানহাতের ব্যাপার (আহার)—শহর-পরিক্রমা পরে হবে, ডানহাতের ব্যাপারটা আগে সেরে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, নইলে পরে আর খাওয়ার সময়-সুযোগ পাওয়া যাবে না। ডিগবাজি খাওয়া (উলটা ফল ফলা)–দেওয়ালী উপলক্ষে বাজিবারুদ নিয়ে খুব মেতে থাকায় প্রতিবছরই বেশকিছু ছেলে বাৎসরিক পরীক্ষায় ডিগবাজি খায়। ডুমারা (আত্মগোপন করা)–চরম নির্বুদ্ধিতা আর অসতর্কতার কারণে গত সপ্তাহে বাবার কাছে বকুনি খেয়ে বন্ধুবিহারী সেই যে ডুব মেরেছে আজও তার টিকির পাত্তা নেই। ঢিমে-তেতালায় (অত্যন্ত মন্থরগতিতে)—এমন ঢিমে-তেতালায় চললে লাস্ট লোকাল ট্রেনও ধরতে পারবে না, সাতটার মেল ট্রেনটা তো কোন্ ছার। ঢোক গেলা (সরল ভঙ্গীতে কোনোকিছু প্রকাশে অক্ষম হওয়ায় গলাধঃকরণের ভঙ্গীদ্বারা ইতস্তত করা)—ঢোক গেলা বন্ধ করে সরাসরি বল, ঠিক টাইমে রোজ স্কুলে আসতে পারবে কি না।

তাল সামলানো (বিপদ্ ঠেকানো)–বড়ো মেয়ের বিয়েতে হাজার-তিনেক টাকা দেনা হয়েছে, সেই তাল আগে সামলাই, তারপর ছোটোটির বিয়ের চিন্তা। তাসের ঘর (ক্ষণভঙ্গুর)—একমাত্র পুত্রের অকালমৃত্যুতে পীযূষবাবুর জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। তিলকে তাল করা (অতিরঞ্জিত করা)—তুমি আর তিলকে তাল করো না বাপু, সামান্য একটু দুধ কোথা পড়েছে কি না পড়েছে, তাই নিয়ে সারা বাড়ি মাথায় করছ। তিলাঞ্জলি দেওয়া (সম্পূর্ণ সম্বন্ধত্যাগ)—রজনীবাবুর মতো জাঁদরেল রাজনীতিবিদ হঠাৎ কেন যে রাজনীতিতে তিলাঞ্জলি দিয়ে মৌনী হলেন, জানি না। তীর্থের কাক (পরানুগ্রহপ্রত্যাশী লোভাতুর ব্যক্তি)—বেলা চারটে বেজে গেল, তীর্থের কাকের মতো এখনও ঠাকুরের প্রসাদী লুচির আশায় বসে আছ? তুলসীবনের বাঘ (ছদ্মবেশী শয়তান)—পরনে গেরুয়া পোশাক, মুখে ধর্মোপদেশ আর কপালে চন্দনফোঁটা দেখে ভুলবেন না যেন যে ওটি তুলসীবনের বাঘ, মানুষ গেলার জন্য ওত পেতেই রয়েছে। তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠা (হঠাৎ অতিশয় ক্রুদ্ধ হওয়া)—অমন দামী পার্কার পেনটা নির্বুদ্ধিতায় খুইয়েছি শুনলে বাবা এক্ষুনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবেন। তেলেনা ভাঁজা (বক্তব্যের মুখবন্ধরূপে নানান বাজে কথা বলা)—অবান্তর অজস্র কথা বলে তোমার তেলেনা ভাঁজা রাখ, গলা ঝেড়ে আসল কথাটা বলে ফেল দেখি। থই পাওয়া (অথই বিপদে একটু নিশ্চিন্ত আশ্রয় পাওয়া)–বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় শশিভূষণ খুব বেকায়দায় পড়েছিল, কিন্তু কয়েকটা টিউশন পেয়ে এখন একটু থই পাচ্ছে। থতমত খাওয়া (হতবুদ্ধি হওয়া)—সেদিন বাংলার ঘণ্টায় হঠাৎ প্রধানশিক্ষকমশায়কে ক্লাসে আসতে দেখে ছেলেরা তো রীতিমতো থতমত খেয়ে গেল।

দাঁও মারা (সহজে মোটা লাভ করা)—শহরতলির কয়েকবিঘে জমি দশ বছর আগে কাঠাপ্রতি দুশো টাকায় কিনে কেনারাম এখন দশহাজার টাকায় কাঠা দরে বিক্রয় করে বেশ দাঁও মারছে। দাঁড় করানো (অনেক চেষ্টায় সফলকাম হওয়া)—মাজাঘষা করে যাঁরা একটা-আধটা ছবি দাঁড় করান, তাঁদের আদৌ শিল্পী বলা যায় কি? দাঁত ফোটানো (আয়ত্ত করা)—এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজীর যা প্রশ্ন হয়েছিল, অনেক পরীক্ষার্থীই তাতে দাঁত ফোটাতে পারেনি। দিনে ডাকাতি (প্রকাশ্যে প্রতারণা করা)—বলেন কি দাদা, আশি টাকার টেস্ট পেপার একশো টাকা বলছেন, এ যে দিনে ডাকাতি আরম্ভ করলেন! দেহ রাখা (পরলোকগমন করা)—বিষয়সম্পত্তি উইল করে ঠাকুরদা নিশ্চিন্তচিত্তে কাশীধামেই দেহ রাখলেন। দিল্লিকা লাড্ডু (যে জিনিস পাইলে মানুষ অনুতপ্ত হয়, অথচ না পাইলেও হতাশ হয়)—আমাদের দেশে সরকারী চাকুরি হচ্ছে দিল্লিকা লাড্ডু, যতদিন কেউ না পায়, ততদিন তার জলুস থাকে, যেই পায় অমনি অনুতাপ জাগে। দুধের মাছি (সুখাভিলাষী বন্ধু কিন্তু বিপদ-সম্বন্ধে খুব হুঁশিয়ার)—লটারির টাকার টানে তোমার আশেপাশে অনেক দুধের মাছি জুটছে, কিন্তু দেখবে—বিপদের দিনে ওরাই বেমালুম হাওয়া হয়ে যাবে।

ধনুকভাঙা পণ (কঠিন প্রতিজ্ঞা)—পরীক্ষায় পাস না করা পর্যন্ত পরেশ নাকি ফুটবল আর ছোঁবে না—তার ধনুকভাঙা পণ। ধরাকে শরাজ্ঞান (অত্যধিক দেমাকে জগৎকে তুচ্ছজ্ঞান করা)–ভারি তো লটারিতে হাজার-কয়েক টাকা পেয়েছেন, তাতেই যে মাটিতে পা পড়ছে না, একেবারে ধরাকে শরাজ্ঞান করছেন! ধামাধরা (ক্ষমতাবানের চাটুকারিতা করা)—শৈলেনবাবু করিতকর্মা লোক, জেনারেল ম্যানেজারের ধামা ধরে এখন তো আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন –নিজেকে কোম্পানির মালিক বলেই ভাবছেন। নখদর্পণে (কণ্ঠস্থ)– খেলার মাঠের জুতোসেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সবরকম খবরই খেলাপাগল ক্ষুদিরামের নখদর্পণে। ননীর পুতুল (বিলাসী ও শ্রমবিমুখ)—আলস্য ও বিলাসিতার প্রতিমূর্তি তুমি তো সামান্য পরিশ্রমেই কাতর হও; ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া ননীর পুতুল সেই তুমি নাকি যাবে সাইকেলে করে দিল্লি? মাঝপথেই না গলে যাও। নয়-ছয় (বিশৃঙ্খল তছনছ)—বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মহাজনের টাকা এমন নয়-ছয় করলে বাপের আমলের রবরবার কারবার দুদিনেই লাটে উঠবে যে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় (খুবই টানাটানির সংসার)–রাত্রে খড়কুটোর আগুন আর দিনমানে সূর্যের প্রসন্ন করস্পর্শই যাদের একমাত্র শীতবস্ত্র, অপরিসীম দারিদ্র্যগ্রস্ত তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোবে, এ আর কী এমন বড়ো কথা? নাকানি-চোবানি খাওয়া (নাকাল হওয়া)–তোমার চটকদার কথায় একবার মামলা করতে গিয়ে নাকানি—চোবানি খেয়েছি, আর অমন নিগ্রহ ভোগ করতে রাজী নই। নাম রাখা (খ্যাতি বজায় রাখা)—দেখে নেবেন স্যার, মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম দশজনের মধ্যে থাকার সুবাদে বরুণ এবার স্কুলের নাম রাখবেই। নারদের নিমন্ত্রণ (সাধ্যের অতীত লোকজনকে নিমন্ত্রণ)—ভট্‌ট্চায্যিমশায় বললেন দুশো লোক খাবে, খেয়েছে পাঁচশো, এখনও শ-খানেক বাকি, এ যে নারদের নিমন্ত্রণ দেখছি! নিজের চরকায় তেল দেওয়া (অন্যের বিষয়ে লক্ষ্য না রাখিয়া নিজের উন্নতির দিকে লক্ষ্য রাখা)–বাবুয়া অঙ্কটা করল কি করল না সেদিকে না তাকিয়ে নিজের চরকায় তেল দাও কেবলচাঁদ; এমনি করে ফাঁকি দিয়ে-দিয়েই তো একটা বছর খুইয়েছ।

পথে বসানো (হঠাৎ কাহাকেও দারুণ বিপদে ফেলা)—নিজের কারবার নিজে দেখুন, ম্যানেজারবাবুর উপর এমনি ধারা পুরোপুরি নির্ভর করলে কোনো দিন যে উনি আপনাকে পথে বসাবেন না, কে বলতে পারে? পরকাল ঝরঝরে (ভবিষ্যৎ একেবারে নষ্ট)—এখন থেকে মন দিয়ে কাজকর্ম কর, নইলে পরকাল ঝরঝরে; শেষজীবনে দু বেলা দু মুঠো জুটবে কীভাবে? পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা (অন্যকে দিয়া নিজের কাজ কৌশলে হাসিল করা)—শনিবারের লাস্ট ঘণ্টার ক্লাসটা সোমনাথবাবুকে দিয়ে তো সারাটা বছর চালিয়ে দিলেন, এমন করে পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে আর কতদিন চলবে? পগার পার (ধরাছোঁয়ার বাইরে নিরাপদ দূরত্বে)—নজরবন্দী সুভাষচন্দ্র পলাতক হয়েছেন, এ খবর যখন ব্রিটিশ সরকারের নজরে এল, তখন তিনি ভারতসীমান্ত ছাড়িয়ে একেবারে পগার পার। পরের মুখে ঝাল খাওয়া (পরের কথায় উত্তেজিত অবস্থায় মন্তব্য করা)—কারো সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করার আগে, পরের মুখে ঝাল না খেয়ে নিজেই একটু তলিয়ে দেখা দরকার। পাকা ধানে মই দেওয়া (সাফল্যের মুখে কাহারও সর্বনাশসাধন করা)—আমি কি তোমার পাকা ধানে ম‍ই দিয়েছি যে, এমন করে আমার পিছনে লাগছ? পায়ে তেল দেওয়া (অত্যন্ত হীনতার সঙ্গে খোশামোদ করা)—আপনার পায়ে তেল দেওয়ার মতো ব্যক্তিত্বহীন লোক অনেক পাবেন তলাপাত্রমশায়, জীবন জোয়ারদার সে ধাতের লোকই নয়। পিলে চমকানো (আকস্মিকভাবে ভয় পাওয়া)—ফাইনাল খেলা চলাকালীন হঠাৎ মাঠের মধ্যে পুলিসের গাড়িটা আসতেই ছেলেদের পিলে চমকে গেল। পেটভাতা (শ্রম-বিনিময়ে পেটভরা ভাত মাত্র)—কালাচাঁদ শুধু দু বেলা দু মুঠো খেতে পেলেই মুখ বুজে রাতদিন প্রাণপণ পরিশ্রম করে; পেটভাতায় এমন অনুগত বিশ্বাসী চাকর পাওয়া সৌভাগ্যই বলতে হবে। পোঁ-ধরা (ক্ষমতাবানের কথায় সায় দেওয়া)—বড়োলোকের পোঁ-ধরা যার স্বভাব তার কাছ থেকে নিরপেক্ষ মতামত আশা না করাই ভালো। পোয়া-বারো (সুবর্ণসুযোগ)-তোমার তো এখন পোয়া-বারো তেরো—এদিকে মোটা মাইনের সরকারী চাকরি, ওদিকে সদ্যপ্রয়াত মামার বিপুল বিষয়-সম্পত্তি। পৌষমাস (সুসময়)—খেলোয়াড়দের দলবদলের ফলে এই চৈত্রেই কোনো ক্লাবের পৌষমাস, কারো-বা সর্বনাশ। ফাঁকা আওয়াজ (বৃথা আস্ফালন)—যতই গলাবাজি করুন গজেনবাবু, আপনাদের ওই ফাঁকা আওয়াজে ভয় পাবার লোক ভবেন মজুমদার নয়। ফাঁদ পাতা (পরের সর্বনাশ করার জন্য কৌশল অবলম্বন করা)—প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে জব্দ করার জন্য তো কম ফাঁদ পাতলেন না, কিন্তু পারলেন কি সদাচারী নিষ্পাপ প্রভাতবাবুর গায়ে একটা আঁচড়ও কাটতে? ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া (সামান্য আঘাত-সহনেও অপারক)—ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায় যারা, তারা নাকি সরকারী দমননীতির প্রতিবাদে আমরণ অনশন করতে চলেছে?

বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো (আপাতকঠিন শাসনব্যবস্থার বাস্তব ব্যর্থতা—ছোটোদের শাসনের ব্যাপারটুকু যাতে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো না হয়, সহৃদয় বড়োদেরই সেদিকে হুঁশিয়ার হওয়া চাই! বালির বাঁধ (দুর্বল প্রতিরোধ)—সত্যের সম্মুখে মিথ্যার বালির বাঁধ কতক্ষণ টিকবে? বাস্তুঘুঘু (দীর্ঘকাল গৃহে বসবাসকারী অথচ তলে-তলে পরিবারের সর্বনাশ সাধনে লিপ্ত অনপসরণীয় দুষ্টপ্রকৃতির মানুষ)—শিবতুল্য কেদারবাবুর মামাতো ভাই বাস্তুঘুঘু সত্যশরণবাবু ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার টাকা ব্যাঙ্ককর্মীদের যোগসাজশে এতদিন আত্মসাৎ করে আসছিলেন, পুলিস এবার তাঁকে কবজা করেছে। বিড়ালতপস্বী বা বকধার্মিক (সাধুর ছদ্মবেশধারী ভণ্ড)—গায়ে নামাবলী আর মুখে হরিনাম ও অনর্গল তত্ত্বকথা শুনে ভাববেন না গোসাঁইজী ভোগসুখে বীতরাগ হয়েছেন; উনি একটি বিড়ালতপস্বী, সুযোগ পেলেই নিজমূর্তি ধরবেন। বিদুরের ক্ষুদ (দরিদ্রের শ্রদ্ধাদত্ত সামান্যতম দ্রব্য)—গরিবের ভাঙাকুঁড়েয় পায়ের ধুলো দিয়েছেন যখন, তখন এই যৎসামান্য বিদুরের ক্ষুদেই সন্তুষ্ট হতে হবে। বুক দিয়ে পড়া (প্রাণপণ চেষ্টা করা) পাড়ার যেকোনো বিপদে এমন বুক দিয়ে পড়তে অজয়ের মতো নিঃস্বার্থ সেবাব্রতী আর কেউ নেই। বেঙের আধুলি (দরিদ্রের যৎসামান্য সঞ্চয়)—গরিবের সবই তো নিয়েছেন হুজুর, বেঙের আধুলি এই বাস্তুভিটেটার দিকে আর নজর দেবেন না। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় (খোদ কর্তার চেয়ে অধস্তন কর্মচারীর কর্তৃত্ব আরও অসহনীয়)—উপেনকে জমিদার যত না তিরস্কার করলেন; তাঁর মোসাহেবের দল ততোধিক করলেন; একেই বলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। বিনা মেঘে বজ্রাঘাত (কোনো প্রকার পূর্বাভাস ছাড়াই মহাসর্বনাশ ঘটা)—২৩শে জুন (১৯৮৫) আয়ার্ল্যান্ডের অদূরে অতলান্তিক-বুকে ভারতীয় জাম্বো জেট কনিষ্ক অতর্কিতে বিধ্বস্ত হওয়ায় বেশ কিছু ভারতীয় পরিবারে বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হল। বড়র পিরীতি বালির বাঁধ (বড়োলোকের বন্ধুত্ব বড়োই ঠুনকো) বড়োলোকের ঘরে মেয়ের বিয়ে দেবার চেষ্টা না করাই ভালো, কোথায় লৌকিকতার সামান্যকিছু ত্রুটি ঘটবে আর সঙ্গে-সঙ্গে বড়োর পিরীতি বালির বাঁধ মুহূর্তে টুটে যাবে। বোবার শত্রু নাই (কোনোকিছু প্রসঙ্গে মুখ না খোলাই সর্বাপেক্ষা নিরাপদ্)—কার কথার টিকে কার ঘরে যে কখন আগুন লাগায় জানি না, তাই সবার মুখে সবকিছু আলোচনাই শুনি, কিন্তু কোনো মন্তব্যই প্রকাশ করি না, বোবার তো শত্রু নেই।

ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই (ভাইদের মধ্যে পৃথক্ পৃথক্ স্থানে বসবাস)—মহিমবাবু চোখ বুজতে-না-বুজতে বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে দু-ছেলের মধ্যে এমনসব কাণ্ডকারখানা ঘটতে লাগল যে, পৈতৃক ভিটেয় ঠাঁই না হওয়ায় ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই হয়ে গেল। ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন (বাক্যে আর কাজে গরমিল ঘটিলেই বিপদ্)—সেবারে ভোটের আগে বিভূতিবাবু ভোটারদের তো গালভরা অনেক প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন, কিন্তু ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন—এই নীতিবাক্যটি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন বলেই তো এবারের ভোটে এমন ভরাডুবি হলেন। ভগবানের মার দুনিয়ার বার (দৈবঘটিত আঘাত পার্থিব প্রতিবিধানের অতীত)—অধর্ম করার চিন্তাও কদাপি মনে আনবে না, তিনি কখন কোন্‌দিক্ দিয়ে আঘাত দেবেন কেউ জানে না—ভগবানের মার দুনিয়ার বার। ভরাডুবি (সাফল্যের মুখে মহাসর্বনাশ)—পরীক্ষার সময় পড়ার চাপে অনেক ছেলেই স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে পারে না, কিন্তু হঠাৎ অসুখবিসুখ করলে যে ভরাডুবি হবে একথাটা তো মনে রাখতে হবে। ভস্মে ঘি ঢালা (অপব্যয় করা)—যেকোনো অমিতব্যয়ীকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা আর ভস্মে ঘি ঢালা একই কথা। ভাগের মা (যৌথ ব্যাপার)—পাঁচ শরিকের বাড়ি, ইচ্ছা হলেই সংস্কার করা যায় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সকলেই সম্মতি দেয়—ভাগের মা কি সহজে গঙ্গা পায়? ভাঙে তবু মচকায় না (প্রাণ দিতে প্রস্তুত কিন্তু ইজ্জত দিতে নয়)—কারখানা খোলার আগে সপরিবার অনশনে মরব, কিন্তু আত্মীয়ের দ্বারস্থ হব না—ভাঙতে হয় একেবারে ভাঙব, তবু মচকাব কেন? ভূতের বেগার (পণ্ডশ্রম)—একটা কানাকড়ি যে কাজে আসবে না, তেমন কাজের পিছনে অনর্থক এমন ভূতের বেগার খেটে কোনো লাভ আছে কি?

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন (সদুদ্দেশ্য সিদ্ধ করিতে জীবন পণ করা)—মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন—এই সংকল্প নিয়েই আমাদের সবরকম জাতধর্ম-জনিত ভেদবুদ্ধি সংকীর্ণতা আর আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় সংহতি সাধন করতে হবে। মগের মুলুক (অরাজক)—পথেঘাটে রাহাজানি, বিভিন্ন ট্রেনে ডাকাতি—দেশটা একেবারে মগের মুলুক হল না কি? মণিকাঞ্চনযোগ (চমৎকার মিলন)–আজ নেহরুর দ্বিজশক্তির সঙ্গে নেতাজীর ক্ষাত্রতেজের যদি মণিকাঞ্চনযোগ হত, তবে দেশটাকে সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া যেত। মাটির মানুষ (অত্যন্ত নিরীহ)—নির্লোভ সরল সাদাসিধে সুধাংশুবাবু একেবারে মাটির মানুষ ছিলেন, সাত চড়েও মুখে রা-টি থাকত না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলা (কঠোর পরিশ্রম করা)—টাকাকড়ি কি খোলামকুচি যে চাইলেই পাবে? দস্তুরমতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করতে হয়। মান্ধাতার আমল (অত্যন্ত প্রাচীন)—শিক্ষাপ্রসারের সঙ্গে-সঙ্গে দেশের বুকে মান্ধাতার আমলের রীতিনীতি খসতে আরম্ভ করেছে। মিছরির ছুরি (মিষ্ট অথচ বেদনাদায়ক)—কানাইবাবুর কথাগুলো মিছরির ছুরি, শুনতে বেশ মিষ্টি অথচ সোজা আঁতে গিয়ে বিঁধে যায়। মশা মারতে কামান দাগা (অতি-তুচ্ছ ব্যাপারে বিরাট্ প্রস্তুতি লওয়া)—সামান্য একটা ঘড়ি চুরির ব্যাপারে আপনি পুলিস কমিশনার পর্যন্ত দৌড় দিয়েছেন? এ যে দেখছি মশা মারতে কামান দাগার ব্যবস্থা। মুখে থাবা দিয়ে রাখা (অনেক কষ্টে সংযত রাখা)—কী করে যে রামানন্দবাবুর মুখে থাবা দিয়ে রেখেছি ভগবান্ জানেন, নইলে আপনার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে তিনি এতদিনে ফেটে পড়ে আপনার সর্বনাশ করে তবে ছাড়তেন। মুনীনাঞ্চ মতিভ্রমঃ (মুনিঋষিদেরও যেখানে মতিভ্রম হয় সেখানে সাধারণলোকের তো কথাই নাই)—মুনীনাঞ্চ মতিভ্ৰমঃ এই আপ্ত বাক্যদ্বারা নিজেদের ভ্রমপ্রমাদকে সমর্থন করার চেয়ে, সেই ভ্রমপ্রমাদ যাতে আমাদের পরিশুদ্ধ করতে পারে সেদিকে সচেতন থাকা দরকার। মেঘ না চাইতে জল (অনিশ্চিত প্রাপ্তির স্থানে আশার অতিরিক্ত প্রাপ্তি)—নজরুলগীতির ছোটোখাটো ধরনের একজন শিল্পী চাইছিলেন, ধীরেনদাকেই হাতের কাছে পেয়ে এনে দিলাম; একেবারে মেঘ না চাইতেই জল—জমান এবার জলসা।

যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ (জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ আশায় আশায় থাকে)—কারবারে আঘাতের পর আঘাত খেয়েও অক্ষয়বাবু মরেন নি, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ—এই মন্ত্রই ওঁকে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের শীর্ষে এনেছে। যখের ধন (হাড়-কৃপণ ব্যক্তির গচ্ছিত টাকাপয়সা)—একমাত্র পুত্রবধূর দারুণ অসুখের সময়ও মাত্রাতিরিক্ত কঞ্জুস যজ্ঞনাথ সেবাশুশ্রূষার ব্যবস্থা করেনি, পাছে তার যখের ধনে টান পড়ে। যমের অরুচি (যমেও যাহাকে স্মরণ করে না)—পাড়ার হাড়জ্বালানো বুড়োটা দীর্ঘকাল ভুগে ভুগে ছেলেবউমা সবার হাড় জ্বালাচ্ছে—এমন মৈনাককেই যমের অরুচি বলতে হয়। যথা পূর্বং তথা পরং (যথেষ্ট চেষ্টা সত্ত্বেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়া)–তিন-তিনজন মাস্টারমশায় রেখেও আপনার ছেলের পরীক্ষার ফল তো যথা পূর্বং তথা পরং রয়েছে দেখছি; ছেলেকে নিয়ে আপনারও মাঝে মাঝে বসা দরকার—যখন খুশি, যতটুকু পারেন। যাচলে সোনা চোদ্দ আনা (ভালো জিনিসও যাচিয়া দিলে যোগ্য মর্যাদা পায় না)—দিদির বিয়ে দিতে হবে, তাই জায়গাটা বিক্রি করতে চাই, কিন্তু নিকটতম প্রতিবেশী আপনি যে সামান্য দর দিচ্ছেন তা তো যাচলে সোনা চোদ্দ আনাই দাঁড়াচ্ছে দেখছি। যত দোষ নন্দ ঘোষ (নন্দ ঘোষের বেটার যত দোষ সমস্তই নন্দ ঘোষে আরোপিত)–মেসবাড়ির গদাই ঠাকুর মুখ বুজে সারাটা দিন খেটে চলে, তবু কারো মন পায় না, উপরন্তু কে কখন কী ত্রুটি ঘটাল তার জন্য গদাইয়ের ওপরই সবাই ঝাল ঝাড়ে, এরই নাম যত দোষ নন্দ ঘোষ। যতন নহিলে নাহি মিলায়ে রতন (ঐকান্তিক যত্নে সাফল্য সুনিশ্চিত)—আমাদের পাড়ার ভূতনাথ শুধু মাধ্যমিকেই যা বারকয়েক ধাক্কা খেয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকে আদাজল খেয়ে এমনভাবে লাগল যে, মাস্টার ডিগ্রি পর্যন্ত সিঁড়িগুলো টকাটক উতরে গেল, একেই বলে যতন নহিলে নাহি মিলায়ে রতন। যাক প্রাণ, থাক মান (প্রাণের অপেক্ষাও ইজ্জতের মূল্য অনেক বেশী)—বাকি টাকাটা ফাইনালের আগেই খেলোয়াড়দের হাতে হাতে ধরিয়ে দেব, না হলে চূড়ান্ত খেলায় ইজ্জত নিয়ে টানাটানি হতে পারে—এখন যে যাক প্রাণ থাক মান পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। যেমন কুকুর তেমনি মুগুর (যথোপযুক্ত প্রতিষেধকের ব্যবস্থা)—যে-সব মুনাফাখোর সামান্য ছলছুতোয় নিত্য-ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েই চলে, তাদের সংযত করতে যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা সরকারের হাতে থাকা দরকার; যেমন কুকুর তেমনি মুগুর হওয়া চাই তো।

রথদেখা কলাবেচা বা এক ঢিলে দুই পাখি মারা (একই সঙ্গে একাধিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করা)—রজতদা বলল, “পরীক্ষার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম; ভাবলাম মাসীমার বাড়িটাও সেই তালে ঘুরে যাই, রথদেখাও হল, কলাবেচাও হল, কেমন?” রাঘববোয়াল (অত্যন্ত লোভী)—আপিসের ছোটোবড়ো সবরকমের বাবুই এক-একটা রাঘববোয়াল, সবাই সুযোগের সন্ধানে সর্বদা হাঁ করেই রয়েছেন। রাঙা মুলো বা পিতলের কাটারি বা শিমুলফুল (রূপবান্ অথচ অপদার্থ)–রাঙা মুলোদের নিয়ে আপিস চালাতে গেলে কারবারে দুদিনেই লালবাতি জ্বলবে। লঙ্কাকাণ্ড (তুমুল ঝগড়া)—মিটিং-এ যা হল—টেবিল চাপড়ানো, চেআর ছোঁড়াছুঁড়ি, ফাইল পোড়ানো—একেবারে লঙ্কাকাণ্ডই বটে। লাগামছাড়া (অসংযত)—প্রতিটি জিনিসের দাম দিন-দিন লাগামছাড়া হয়ে জনসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু (লোভের প্রচণ্ডতায় সর্বনাশ সাধিত হয়)—ব্যাঙ্কের ফিক্সড্ ডিপোজিটের টাকাটা তুলে ললিতবাবু শেয়ার বাজারে লাগিয়ে মোটা সুদ পাওয়ার আশায় ছিলেন; কিন্তু হঠাৎ শেয়ারের দর চরচর করে পড়ে যাওয়ায় লাখদেড়েক টাকার লোকসানটা বুকে বেজায় ধাক্কা দিল; একেই বলে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।

শবরীর প্রতীক্ষা (দীর্ঘ সাগ্রহ অপেক্ষা)—পরীক্ষা তো যাহোক মোটামুটি দিলাম; ফলাফলের জন্য কতদিন যে শবরীর প্রতীক্ষায় থাকতে হবে কে জানে! শাপে বর (আশঙ্কিত অনিষ্টের পরিবর্তে আশাতীতভাবে ইষ্টলাভ)—চিত্তরঞ্জন দাসের আই সি এস পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা নিখিল ভারতের পক্ষে শাপে বর হইয়াছিল। শিবরাত্রির সলতে (একমাত্র বংশধর)—পর পর দুটি ছেলেকে যমের হাতে সঁপে দিয়ে বিধবাটি কোলের এই শিবরাত্রির সলতেটি নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। শিরে সংক্রান্তি (আসন্ন বিপদ্)—পরীক্ষা এসে গেছে, শিরে সংক্রান্তি, এখনও তুই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছিস! শাঁখের করাত (যে জিনিস থাকাও বেদনাদায়ক, না থাকাও বেদনাদায়ক, অথচ যাহা হইতে কিছুতেই নিস্তার নাই)—শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী ছিল শ্রীমতীর কাছে শাঁখের করাত, সে বাঁশি শুনলে তাঁর মন উচাটন হয়ে উঠত, আবার না শুনলেও ঘরে মন টিকত না। সাপের পাঁচ পা দেখা (হঠাৎ সুযোগপ্রাপ্তির দেমাকে স্ফীত হওয়া)—রাষ্ট্রশক্তির দুর্বলতায় দুর্বৃত্তরা যখন বেমালুম খালাস পায়, তখন তারা সাপের পাঁচ পা দেখে বইকি। সাত রাজার ধন (অমূল্য সম্পদ)—কানা হোক খোঁড়া হোক, সন্তান সবসময়ই মায়ের কাছে সাত রাজার ধন। সাতেও নাই, পাঁচেও নাই (সমস্তরকম ঝঞ্ঝাট হইতে মুক্ত, নিরপেক্ষ)—পাঁচটি ভাইয়ের মধ্যে বড়ো কর্তাই যা কারো সাতেও নেই পাঁচেও নেই, অথচ বিপদের মুহূর্তে যেকোনো ভাই কাছে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি কাউকে বিমুখ করেন না। সুখের পায়রা (সুসময়ের বন্ধু)—তোমার আর্থিক প্রতিপত্তি দেখে এখন যারা ঝাঁক বেঁধে তোমার চারপাশে ভিড় জমিয়েছে, স্বার্থে ঘা পড়বার সামান্যতম আশঙ্কা দেখা দিলেই এইসব সুখের পায়রা একে-একে বেমালুম উড়ে যাবে। সবে ধন নীলমণি (একমাত্র সম্বল)—আমাদের পাশের নামকরা স্কুলটি সম্প্রতি উচ্চ-মাধ্যমিকের অনুমোদন পাওয়ায় আমাদের স্কুলে ভরতি-হওয়া প্রায় সব ভালো ছেলেই ওখানে চলে গেল; উপাধ্যক্ষের স্টার-পাওয়া ছেলেটিই এখন একাদশ শ্রেণীর সবে ধন নীলমণি।

হালে পানি পাওয়া (নিদারুণ বিপদে কিছুটা সাহায্য পাওয়া)—বাবা হঠাৎ দেহরক্ষা করায় মা ও ভাইবোনদের নিয়ে অথই জলে পড়েছিলাম; কয়েকটা বিমার ‘টাকা পেতে তবে হালে পানি পেয়েছি। হিতে বিপরীত (ভালো করিতে গিয়া বিপাকে পড়া)—মূর্খকে উপদেশ দিলে ভালো ফল কোনোদিনই ফলে না, চিরকালই হিতে বিপরীত ঘটে; কেননা, উপদেষ্টার ক্ষতি করার জন্যই সে মূর্খ উঠেপড়ে লাগে। হাড়িকাঠে মাথা গলানো (মৃত্যুর খপ্পরে হাজির হওয়া)—শাগরেদগুলোকে একে একে খতম করে হুকুমচাদ পুলিসের বড়ো কর্তাকে বলল, “হুকুম চাঁদের চৌহদ্দিতে পা দেওয়া আর হাড়িকাঠে মাথা গলানো যে একই ব্যাপার, তা আপনাকে আজ হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেব।” হরিহর আত্মা (একমন একপ্রাণ)—ধনীর দুলাল কঙ্কণ আর গরিব বিধবার ছেলে কুশল একেবারে হরিহর আত্মা, সুখে দুঃখে সমান অংশী। হর্ষবর্ধনের ঠাট (আভিজাত্যপূর্ণ চালচলন)—মাত্র হাজার টাকা পেনশনে চাকরিজীবনের সেই হর্ষবর্ধনের ঠাট বজায় রাখা চলে কি? হাটে হাঁড়ি ভাঙা (গোপন কলঙ্ক সাধারণে প্রকাশ করা)—আমার পিছনে লাগবেন না বলছি, আপনার সব কুকীর্তিই আমার জানা, কোন্ দিন দেব হাটে হাঁড়ি ভেঙে। হাড় জুড়ানো (স্বস্তিলাভ)—খিটখিটে বড়োবাবুটার কাল হওয়ায় কেরানীকুলের হাড় জুড়িয়েছে; এখন তারা নিশ্চিন্তে কাজ করছে। হাতটান (চুরির অভ্যাস)—মাখনের হাতটান ছিল না, জিনিসপত্তর তো এমনি ছড়ানোই থাকে, অথচ এতটুকু খোয়া যায়নি। হাত করা (বশে আনা) টাকার লোভ দেখিয়ে হাবুলবাবুর মতো আদর্শবাদী লোককে হাত করবে, স্বপ্নেও ভেবো না। হাত দেওয়া (আরম্ভ করা)—একেবারে শেষমুহূর্তে এমন একটা শক্ত কাজে হাত দেওয়া আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। হাত-পা বেঁধে জলে ফেলা (অসহায়ভাবে সর্বনাশের পথে ঠেলিয়া দেওয়া)– হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিলেতফেরত ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিলাম, এখন দেখছি হাত-পা বেঁধে মেয়েকে জলেই ফেলে দিয়েছি, কারণ জামাই একেবারেই অলস অকর্মণ্য অপদার্থ। হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল)–ব্যবসায় ফেঁদে দেখাই যাক না কী হয়, হাতের পাঁচ স্কুলমাস্টারি তো রইলই। হাতে-কলমে (ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা) বিজ্ঞানশিক্ষা শুধু বই পড়ে হয় না, হাতে-কলমেও শিখতে হয়। হাল ছাড়া (হতাশ হওয়া)—পরীক্ষায় তিনবার ফেল করে ছেলেটি শেষে হাল ছেড়ে দিল। হরিঘোষের গোয়াল (নিদারুণ হইহট্টগোলে যেখানে কাজের কাজ কিছুই হয় না)—শিক্ষাসংসদের কর্তাব্যক্তিরা স্কুলের চত্বরে হাজির হয়ে প্রচণ্ড হইহট্টগোল শুনে ভাবলেন, তাঁরা কি হরিঘোষের গোয়ালে ঢুকছেন? হাতে মারে না ভাতে মারে (শত্রুস্থানীয়ের রুজিরোজগারের পথ একেবারে বন্ধ করা)) দোলগোবিন্দবাবুকে কবজা করতে না পেরে প্রতিপক্ষরা তাঁকে হাতে না মেরে ভাতে মারার চেষ্টা করছেন।

(গ) প্রবচন

২১০। প্রবচন : বহুকাল ধরিয়া লোকমুখে প্রচলিত জনপ্রিয় উক্তিকেই প্রবচন বলা হয়।

প্রবচনের দ্বারা অল্পকথায় সহজ সরলভাবে অথচ শোভনভঙ্গীতে জীবনের গভীরতর সত্যের স্বচ্ছ প্রকাশ ঘটে। যুগপরিবর্তনের সঙ্গে-সঙ্গে ভাষার বহিরঙ্গের কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যুগের পরিবর্তনেও প্রবচনগুলির রূপের কোনো পরিবর্তন ঘটে নাই। বাংলা ভাষার এক বিশিষ্ট সম্পদ এই প্রবচন। প্রত্যেকটি প্রবচনের মূলে কত যুগসঞ্চিত অভিজ্ঞতা যে বিদ্যমান, তাহার হিসাব কে করিবে? কয়েকটি প্রবচন ও সেগুলির অর্থ দেওয়া হইল। ইহাদের মধ্যে কয়েকটির বাক্যে প্রয়োগও দেখানো হইল; বাকি প্রবচনগুলিও তোমরা চেষ্টা করিয়া নিজস্ব বাক্যে প্রয়োগ কর।

অতি লোভে তাঁতী নষ্ট—বেশী লোভ করিলে নিজের সর্বনাশই ঘটে। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ—পাছে কু-অভিপ্রায় প্রকাশ পায় এই আশঙ্কায় বদলোক নিজেকে অতিরিক্ত ভক্তিমান্ বলিয়া প্রচারের চেষ্টা পায়, কিন্তু তাহার এই বাহ্যভক্তির আতিশয্যই সকলের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে। অতি দর্পে হতা লঙ্কা অত্যধিক অহঙ্কারে সর্বনাশ সাধন করে। অতিবুদ্ধির গলায় দড়ি—নিজেকে খুব বেশী বুদ্ধিমান্ মনে করিলে প্রায়ই ঠকিতে হয়। অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট কোনো ব্যাপারে একাধিক লোক কর্তৃত্ব করিলে কাজটি পণ্ডই হয়। আঠারো মাসে বছর—নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনোদিনই কোনো কাজ যে করিতে পারে না। আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখায়-অপরকে আচরণ শিক্ষা দিবার পূর্বে নিজেকে সেই আচরণে অভ্যস্ত হইতে হয়; তখন আর উপদেশদানের প্রয়োজন হয় না—তাঁহার আচরণ দেখিয়াই অন্যে শিক্ষালাভ করে। ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়—কাহারও প্রতি দুর্ব্যবহার করিলে বিনিময়ে অন্ততঃ কিছুটা দুর্ব্যবহারও পাইতে হয়। ইল্লত যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে—আপন স্বভাব কেহই ছাড়িতে পারে না। উঠন্তি মুলো পত্তনিতেই চেনা যায়—ভবিষ্যতে কে কীরূপ হইবে প্রথমজীবনেই তাহার আভাস পাওয়া যায়। উড়ে এসে জুড়ে বসা—হঠাৎ আসিয়া বিনা অধিকারে কোনোকিছুর সর্বেসর্বা হইয়া উঠা। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে—একের প্রাপ্য ভুলবশতঃ অন্যকে দেওয়া। উলটা বুঝলি রাম—ইচ্ছা করিয়া ভালো কথার বিপরীত অর্থটি গ্রহণের ফলে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হওয়া। এক মাঘে শীত যায় না—বিপদ্ একবার কাটিল বলিয়া প্রতিবারই যে কাটিবে এমন নয়। একা রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর—এক বিপদ্ কাটিতে না কাটিতে আরেক বিপদ। এগুলে সর্বনাশ পিছুলে নির্বংশ—উভয়-সংকট। কড়ায় কড়া কাহনে কানা—নগণ্য ব্যাপারে অতি সাবধান, অথচ বিশেষ প্রয়োজনীয় ব্যাপারে একেবারে কাছা-আলগা। কনের ঘরের পিসি আর বরের ঘরের মাসী বা চোরকে বলে চুরি করতে, গেরস্থকে বলে সজাগ থাকতে বা সাপ হয়ে কামড়ায়, রোজা হয়ে ঝাড়ে—যে লোক ভালোমানুষ সাজিয়া দু পক্ষকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকানি দেয়। কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী—স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে লোক খুব তোষামোদ করে, অথচ স্বার্থসিদ্ধি হইলেই নিজ মূর্তি ধরে। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা—এক যন্ত্রণার উপর অন্য এক নিদারুণ যন্ত্রণা। কানা গোরু বামুনকে দান—অকেজো জিনিস দান করিয়া সরলচিত্ত লোকের কাছে দাতা হিসাবে নাম কেনা। কিবা বিয়ে তায় আবার দু পায়ে আলতা—কোনোপ্রকারে কার্যোদ্ধার যেখানে লক্ষ্য, সেখানে আনুষ্ঠানিক খুঁটিনাটি না মানাই ভালো। কিল খেয়ে কিল চুরি করা—অপমান গোপনে-গোপনে হজম করা। খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে, কাল হল হালগোরু কিনে বা যার কাজ তারেই সাজে, অন্য লোকে ঠেঙা বাজে—কোনো বিশেষ কাজের অনুপযুক্ত লোক সেই কাজে হাত দিলে ফল বিপরীত হয়, লোকটিরও দারুণ দুর্নাম রটে। খোঁড়ার পা খানাতেই পড়ে—যাহার যে বিপদ্ কাটাইবার শক্তি কম, তাহাকে সেই বিপদই জড়াইয়া ধরে। খেয়ার কড়ি গুনে দিয়ে সাঁতরে নদী পার বা টকের জ্বালায় পালিয়ে এসে তেঁতুলতলায় বাস–অসুবিধা দূর করিবার জন্য যথেষ্ট খরচ করা সত্ত্বেও অসুবিধা দূর না হওয়া। গরজ বড়ো বালাই বা গরজে গয়লা ঢেলা বয়—প্রয়োজনের দাবি আগে মিটাইতে হয়। গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল—যাহার কর্তৃত্ব কেহই পছন্দ করে না, অথচ সব কাজেই যে কর্তৃত্ব করিতে যায়। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল বা গাছে না উঠতেই এক কাঁদি—কার্যারম্ভের পূর্বে ফল উপভোগের ব্যবস্থা। গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া—উৎসাহ দিয়া কাহাকেও বিপজ্জনক কাজে লিপ্ত করিয়া পরে তাহাকে অসহায় অবস্থায় ফেলিয়া বেমালুম চলিয়া যাওয়া। গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না—আশপাশের অতিপরিচিত ব্যক্তি বিশেষ গুণী হইলেও যোগ্য মর্যাদা পান না। গোরু মেরে জুতো দান—জঘন্য অপরাধ করিয়া প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ যৎসামান্য—ভালো কাজ করা। গোলে হরিবোল দেওয়া—ভিড়ের সুযোগে কর্তব্যে ফাঁকি দেওয়া। ঘরজ্বালানে পরলানে –পরিজনদের সুখশান্তি নষ্ট করে, অথচ বাইরের লোকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে এমন লোক। ঘরপোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায়—কোনো ব্যাপারে একবার যিনি দারুণ ঠকিয়াছেন, তিনি সেই ব্যাপারে আর মাথা গলান না। ঘরে নাই ভাত দুয়ারে বাজে ঢাক—দরিদ্রের লোকদেখানো আড়ম্বর। ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি—সহজেই সব বিপদ এড়াইয়া যে কেবল আরামে কাল কাটাইয়াছে, এবার সে কঠিন পাল্লায় পড়িবে। ঘোড়া ডিঙাইয়া ঘাস খাওয়া—প্রধান উদ্যোগীকে নিয়মমতো কিছু না জানাইয়া কার্যসিদ্ধির চেষ্টা।

চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করা–শোনা বিষয়টি স্বচক্ষে দেখিয়া সত্যাসত্য-সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া। চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছনে কেন ছেঁদা–বহু দোষে দোষী লোক অন্যের সামান্য দোষের নিন্দায় পঞ্চমুখ হয়। চেনা বামুনের পৈতের দরকার নেহ—পরিচিত ব্যক্তিকে আর কোনোভাবে পরিচিত করাইতে হয় না। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে—বিপদের সময় বুদ্ধি খোলে না, অথচ বিপদ্ কাটিবার সঙ্গে-সঙ্গে বুদ্ধি খোলে। চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী—অসাধু ব্যক্তিকে উপদেশদান ব্যর্থ হয়। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই—অসাধুর সঙ্গে অসাধুরই আত্মীয়তা গড়িয়া উঠে। চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা বা শুঁড়ীর সাক্ষী মাতাল–অসৎ ব্যক্তি অসৎ ব্যক্তিকেই সমর্থন করে। চোরের মার বড়ো গলা—যে যত বেশী অপরাধী, সে তত বেশী জোর গলায় নিজের সাধুতার প্রমাণ দিবার চেষ্টা করে। ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো—অত্যন্ত সামান্য জিনিসও মাঝে মাঝে দরকারে আসে; অথবা, কোনো ভালো কাজে নয়, কেবল দুর্নামের কাজটুকুই যাহাকে দিয়া করাইয়া লওয়া হয়। ছুঁচ হয়ে ঢোকে, ফাল হয়ে বেরয়—প্ৰথম-প্রথম যৎসামান্য দাবি জানায়, সে দাবি পূর্ণ হইবামাত্র বিরাট্ দাবি আদায়ের জন্য উগ্রমূর্তি ধরে। জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ—যাহার উপর নির্ভর করিতেই হয়, সেই ক্ষমতাবানের অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করা নিজস্বার্থেরই পরিপন্থী। জহুরী জহর চেনে বা সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে—যে বিষয়ে যাহার অভিজ্ঞতা আছে, সে তাহা ভালোই বুঝে। জ্যান্ত মাছে পোকা পড়ানো—সৎ লোককে উচ্চকণ্ঠে অসৎ বলিয়া প্রচার করা। ঝিকে মেরে বউকে শেখানো—বিনাদোষে আপনজনকে শাস্তি দিয়া পরোক্ষে অন্যকে শিক্ষা দেওয়া।

ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়-মন্দ লোকের সংখ্যাই অত্যধিক। ঠেলার নাম বাবাজী—বিপদে পড়িলেই অবজ্ঞাত মানুষের সমাদর করা। ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলায় না—আয় অপেক্ষা ব্যয় অনেক বেশী। ডুবে ডুবে জল খায়, শিবের বাবাও টের না পায়—বাহিরে সাধু অথচ ভিতরে-ভিতরে অসাধুতা চালায়। ঢাকীসুদ্ধ বিসর্জন—মূল পর্যন্ত সমস্ত কিছুই বিনষ্ট হওয়া। ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার—ক্ষমতা না থাকিলে কর্তৃত্ব করিতে যাওয়া নির্বুদ্ধিতা ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে—উন্নত অবস্থাতেও মানুষ স্বভাবের পরিবর্তনে অক্ষম।

তিল কুড়িয়ে তাল বা রাই কুড়িয়ে বেল—একটু একটু করিয়া বড়ো জিনিস গড়িয়া তোলা। তেলা মাথায় তেল দেওয়া যাহার অনেক আছে তাহাকে আরও দিবার প্রবৃত্তি। তোকে গড় নয়. তোর কাজের পায়ে গড়-প্রয়োজনের তাগিদে নিতান্ত অবাঞ্ছিত লোকেরও দ্বারস্থ হওয়া। দশচক্রে ভগবান্ ভূত—জনগণের চক্রান্তে ভগবান্ নামক ব্যক্তি জীবিত থাকিয়াও শেষ পর্যন্ত ভূত বলিয়া পরিগণিত হইয়াছিল; সেইরূপ একাধিক দুষ্টলোকের চক্রান্তে জ্বলন্ত সত্যও মিথ্যা বলিয়া প্রতিপন্ন হওয়া। দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ—মিলিয়া-মিশিয়া কাজ করিয়া যদি বাঞ্ছিত ফল নাও পাওয়া যায়, ক্ষতি নাই। দশের লাঠি একের বোঝা—একাধিক ব্যক্তির কাজ একজনের উপর পড়িলে তাহার পক্ষে দুর্বহ হয়। দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষা—মারাত্মক শত্রুকে সমাদরে পালন করা। দু-নৌকোয় পা দেওয়া—দুই বিরুদ্ধ পক্ষের সঙ্গে সদ্‌ভাব রাখিতে গিয়া নিজের সর্বনাশ ডাকিয়া আনা। দুষ্ট গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো—ক্ষতিকর কিছু থাকা অপেক্ষা না থাকাই ভালো। দুষ্টকে উঁচু পিঁড়ে—সমাজের ক্ষতিকারক অথচ প্রভাবশালী ব্যক্তির অপ্রীতিভাজন হওয়ার আশঙ্কায় তাহাকে বাহ্য সম্মান দেওয়া। ধরি মাছ না-ছুঁই পানি—ভালো কাজের ফলভোগে উৎসুক অথচ বিপদের ঝুঁকি লইতে অনিচ্ছুক। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে বা ধর্মের ঢাক আপনি বাজে—সত্য একদিন প্রকাশ পাইবেই। ধান ভানতে শিবের গীত—অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের উত্থাপন। নাচতে না জানলে উঠোনের দোষ—নিজের ত্রুটির জন্য অন্যকে দায়ী করা। নির্ধনের ধন হলে দিনে দেখে তারা—হঠাৎ ধনপ্রাপ্তির দেমাকে অসম্ভবও সম্ভব করার কল্পনায় মশগুল। নেই-মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো—একেবারে কিছু না পাওয়া অপেক্ষা যৎকিঞ্চিৎ পাওয়াও ভালো। নেড়া বেলতলায় ক’বার যায়—যে কাজে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা পায়, সে কাজে মানুষ আর হাত দেয় না। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা—নিজের সমূহ ক্ষতি করিয়াও অন্যের কিছুটা অন্ততঃ ক্ষতি করিবার দুশ্চেষ্টা। নিজের বেলায় আঁটিসাঁটি, পরের বেলায় দাঁতকপাটি—নিজের স্বার্থপরতায় বেশ তৎপর, কিন্তু অপরের স্বার্থরক্ষার বেলায় ভয়ানক বেদনাপ্রাপ্ত নদীর কূলে বাস, ভাবনা বারো মাস—বিপজ্জনক স্থানে বসবাস করিলে কোনোদিনই নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। নুন খাই যার, গুণ গাই তার—কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অত্যধিক আগ্রহ।

পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে—বাধ্য হইয়া অবস্থার সঙ্গে আপস করা। পান থেকে চুন খসা—সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি হওয়া। পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায় বা উৎপাতের কড়ি চিৎপাতে যায়—অসৎপথে উপার্জিত অর্থ অচিরেই অকাজে নিঃশেষ হয়। পেটে খেলে পিঠে সয়—লাভের সম্ভাবনা থাকিলে নিগ্রহ সহ্য করা যায়। ফেল কড়ি মাখ তেল—-কোনোকিছু পাইতে হইলে নগদমূল্য দিতেই হয়। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা—বদলোকের পাল্লায় পড়িয়া নাজেহাল হওয়া। বামন গেল ঘর তো লাঙ্গল তুলে ধর—মনিবের অনুপস্থিতিতে কাজে ফাঁকি দেওয়া। বোঝার উপর শাকের আঁটি—গুরুভারের উপর সামান্য অথচ দুর্বহ ভারবৃদ্ধি। বালির তাত অসহ্য—খোদ কর্তার অপেক্ষা অধস্তন কর্মচারীর কর্তৃত্ব অসহনীয়। ভাঁড়ে মা ভবানী বা পকেট গড়ের মাঠ—শূন্য ভাণ্ডার। ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাড়া–অনুগ্রহদত্ত জিনিস ভালো না মন্দ, সে বিচার করা উচিত নয়। ভুশুণ্ডীর কাক—অতিবৃদ্ধ বহুদর্শী ব্যক্তি (ঈষৎ ব্যঙ্গে)। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—ব্যথিতকে আরও বেদনা দেওয়া। মরা হাতি লাখ টাকা—প্রকৃত জ্ঞানিগুণী অথর্ব হইলেও আদরণীয়। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত—সামান্য ব্যক্তির ক্ষমতাও অনিবার্যরূপে সামান্য। মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসী পড়ে তাঁতী, চন্দ্রসূর্য হার মেনেছে জোনাক জ্বালে বাতি অথবা হাতিঘোড়া গেল তল, পিঁপড়ে বলে কত জল—একান্ত অভিজ্ঞ লোকেও যে কাজ করিতে সাহস পায় না, বাহাদুরি দেখাইতে মূর্খই সেই কাজে হাত দেয়।

যত গর্জে তত বর্ষে না—আড়ম্বর যেখানে যত বেশী, আন্তরিকতা সেখানে তত কম। যাঁহা বাহান্ন তাঁহা তিপ্পান্ন—অনেক দূর যখন আসিয়াছি, তখন আর একটুতেই বা আপত্তি কেন? যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা—অপ্রিয় জনের গুণও দোষ বলিয়া মনে হয়। যা নাই ভারতে তা নাই ভারতে—ভারতবর্ষে বা মহাভারতে যাহা নাই, বিশ্বভূমণ্ডলে তাহা মিলিবে না। যার ধন তার নয় নেপোয় মারে দই, জেলে মলো বিল ছিচে চিলে মারে কই—ভালো কাজ করেন যিনি, তিনি ফল ভোগ করার আগেই করিতকর্মারা ফাঁকতালে ফলটুকু ভোগ করিয়া ফেলে। যে খায় চিনি তারে জোগান চিন্তামণি—ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ—কোনো পদে বৃত হইয়া সেই পদসুলভ স্বভাব-লাভ। যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল—যেমন কাজ তাহার প্রতিফলও সেইরূপ। রাবণের চিতা—নিরবচ্ছিন্ন যন্ত্রণা। রাম না হতেই রামায়ণ—কোনোকিছু ঘটিবার পূর্বেই তাহার প্রচার। লঙ্কায় রাবণ মলো, বেহুলা কেঁদে পাগল হল—সম্পূর্ণ পারম্পর্যহীন ব্যাপার। লাভের গুড় পিঁপড়ে খায–ন্যায্য প্রাপ্য দুর্ভাগ্যবশতঃ হাতছাড়া হওয়া। শঠে শাঠ্যং—প্রবঞ্চক ব্যক্তির সঙ্গে শঠতা করা। শক্তের ভক্ত নরমের যম—শক্তিমানকে ভয় করা অথচ দুর্বলের উপর অত্যাচার করা। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা—একটি সৎকার্যদ্বারা অতীতের অনেক দুষ্কর্ম গোপন করার চেষ্টা। শিব গড়তে বাঁদর—ভালো করিতে গিয় মন্দ করা। সবুরে মেওয়া ফলে—ধৈর্য ধরিলে বাঞ্ছিত ফললাভ হয়। সস্তার তিন অবস্থা—স্বল্পমূল্যে পাওয়া কোনো জিনিসের পিছনে শেষ পর্যন্ত অনেক বেশী খরচ হয়। সাত ঘাটের জল খাওয়ানো—খুব নাকাল দেওয়া। সাপের ছুঁচে গেলা—খুব অবাঞ্ছিত ব্যাপারে অজ্ঞাতবশতঃ নিদারুণভাবে জড়াইয়া পড়া। সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়—মন্দমতি লোক অকারণে দুঃখ-দুর্গতি ডাকিয়া আনে। সোজা আঙুলে কি ঘি ওঠে বা লাথির ঢেঁকি কি টুসকিতে ওঠে—বদস্বভাবের লোককে মিষ্ট কথায় বশে আনা যায় না। হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা—নিজের ভুলে সুখের পথে কাঁটা দেওয়া। হাতি যখন ডহরে পড়ে, চামচিকেতে লাথি মারে—মানী ব্যক্তির দুর্দিনে সামান্য লোকেও তাঁহাকে অপমানিত করে। হাতে পাঁজি মঙ্গলবার—প্রত্যক্ষভাবেই যখন জানিবার উপায় রহিয়াছে, তখন অনুমানের উপর নির্ভর করা কেন? হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না—আদেশদাতার অপসারণ সম্ভব হইলেও হুকুমের পরিবর্তন কদাপি হয় না।

প্রয়োগ : (১) মঞ্চসজ্জার ব্যাপারে অনেকেই কর্তৃত্ব করছেন দেখে মানে-মানে সরেই পড়লাম; অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন শেষ পর্যন্ত নষ্টই হয়, হয়েছেও তাই। (২) নেহাত গেঁয়ো যোগী বলেই যোগীনবাবু এতদিন ভিখ পাচ্ছিলেন না, যেই-না মুম্বাই পাড়ি দিলেন, অমনি নামডাকে গগন ফাটতে আরম্ভ করল। (৩) বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে হবে, ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো কুলদাবাবু যখন রয়েইছেন, তাঁকেই গিয়ে ধর না কেন? (৪) এরকম করলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে, তবুও পরীক্ষাকক্ষে কর্তব্যপরায়ণ নজরদার আপনি পাবেন না। (৫) একলাফে দুটো প্রমোশন পেয়েও রামবাবুর কেরানী-অবস্থার সেই ফুট-কাটা স্বভাবটা আর গেল না—ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও তো ধান ভানে। (৬) অতিথি-অভ্যাগত, প্রাক্তন ছাত্র আর বর্তমান ছাত্রদের আপ্যায়নের ভার একজনের উপর না রেখে তিনজন শিক্ষকের উপর ছেড়ে দিন, দশের লাঠি একের বোঝা হবে কেন? (৭) এমন মাটির মানুষ অপরেশবাবুর রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত হয়নি, শেষে দুর্নামের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে পার্টি ছাড়লেন, একেই বলে দশচক্রে ভগবান্ ভূত। (৮) সাড়ে দশ হাজার টাকার চাকরি আর বাবার জমজমাট ব্যবসায় এক সঙ্গে বজায় রাখবে কী করে? দু নৌকোয় পা দিয়ে শেষে চাকরিও যাবে, ব্যবসায়েও ভরাডুবি হবে না কি? (৯) আসন্ন আন্দোলনে সব কর্মীকেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, ধরি মাছ না-ছুঁই পানি-র নীতি আর চলতে দেওয়া হবেই না। (১০) ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গাওয়া আমাদের শিবুর একটা নেশায় দাঁড়িয়ে গেছে; নইলে পণপ্রথার ভয়াবহতা-সম্বন্ধে বলতে গিয়ে হঠাৎ খালিস্তান নেপালীস্তান ইত্যাদির কথা এনে ফেলবে কেন? (১১) আমাদের দেশে অধিকাংশ শ্রমিকনেতা বরের ঘরের পিসী কনের ঘরের মাসী, শ্রমিকদেরও তাতান, মালিকপক্ষকেও তোয়াজ করেন। (১২) আমাদের এই ভারত স্টেশনার্স-এ যা পেলেন পেলেন, না পেলে পুরীর এ তল্লাটে তা আর পাবেন না, যা নাই ভারতে তা নাই ভারতে গোছের অবস্থা। (১৩) ছোটো বউমা মর্যাদাসম্পন্ন পণের টাকা সঙ্গে আনেনি বটে, কিন্তু যত্ন-আত্তিতে শ্বশুরশাশুড়ীকে মাথায় করে রেখেছে, তবু মিত্তিরগিন্নীর মন ভরছে না; একেই বলে যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। (১৪) নতুন কর্তার পাল্লায় পড়ে এতদিনের ঝানু ফাঁকিবাজ ফেলুচরণ একেবারে ঢিট হয়ে গেছে—যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল হয়েছে। (১৫) সারা জীবনটা জোচ্চুরি ঠকবাজি করে পরের সর্বনাশ-সাধন করে শেষ বয়সে একটু-আধটু ধর্মকর্ম করলে কি ভগবানের মন পাওয়া যায়? এ তো শাক দিয়ে মাছ ঢাকা দেবার চেষ্টা। (১৬) পণপ্রথার চাপে এতদিন পাত্রীর পিতারই নাভিশ্বাস উঠেছে, এবার পাত্রের পিতাকেও চোখে অন্ধকার দেখতে হবে—ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতেই হয়। (১৭) জাল চিঠি দেখিয়ে সাদাসিধে মানুষ গোবিন্দবাবুকে ঠকাতে পার, কিন্তু মেন গেট-এ ছাত্র-ইন্সপেক্টরকে ঠেকাবে কী করে–এ যে একা রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর গোছের অবস্থা। (১৮) কর্পোরেশনকে যথারীতি ট্যাক্স দিয়ে আসছি অথচ রাস্তাঘাট নালানর্দমা পরিষ্কার রাখার দায় নাকি আমাদেরই বহন করতে হবে—এ তো দেখছি খেয়ার কড়ি গনে দিয়ে সাঁতরে নদী পার! (১৯) সব কাজেই নাক গলানো বড়ো কর্তার স্বভাবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, অথচ ওঁর কর্তৃত্ব কারুরই পছন্দ নয়—উনি হচ্ছেন গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল। (২০) গত মাসের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির জ্বালা জুড়োতে-না-জুড়োতে আরেকটা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে পিলে চমকে উঠছে—ঘরপোড়া গোরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরাবে, এ আর এমন আশ্চর্য কি? (২১) ভজেনবাবুর মতো লেফাফাদুরস্ত আর একটাও পাবে না; পোশাকপরিচ্ছদের আভিজাত্যে কে বুঝবে যে ওঁর ঘরে নেই ভাত, দুয়ারে বাজে ঢাক? (২২) শিক্ষকজীবনে তিল কুড়িয়ে তাল প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটাই তো একমাত্র ভরসা, সঞ্চয়ের অন্যান্য পথ তো একেবারে বন্ধ। (২৩) তেলা মাথায় তেল দেওয়া মানুষের স্বভাব, গরিবের কথা কে আর ভাবে? (২৪) গ্রামসেবার কাজ সবাই মিলে আরম্ভ করি আসুন, সার্থকতা পেলে ভালো, না পেলেও ক্ষতি নেই, দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। (২৫) দেশের কোটি-কোটি সাধারণ মানুষ যেখানে দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়াই চালাচ্ছে শুধু বাঁচার তাগিদে, সেখানে মুষ্টিমেয় বিলাসীর বিলাসিতা অপরাধ বইকি। (২৬) অল্প মূলধনের দোহাই দিয়ে নিজের অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা করবে না, খেলুড়ে লোক কানাকড়িতেও খেলে, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা বলাটা মানুষের স্বভাব। (২৭) বাংলাদেশ সীমান্ত-বরাবর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে শুনেই বেনাপোলের বেণীবাবুরা বড়ো ভাবনায় পড়লেন—আবার কি নতুন করে উদ্বাস্তু হতে হবে? তাঁদের যে ভাগ্যের পরিহাসে নদীর কূলে বাস, ভাবনা বারো মাস ধরনের পরিস্থিতি! (২৮) গণপতিবাবু, এতদিন ধরে মালিকপক্ষের নুন খেয়েছেন বলে তাঁদের গুণ গাইছেন, কিন্তু তাঁদের এতবড়ো অন্যায়কেও নির্লজ্জের মতো মেনে নিতে আপনার বিবেকে বাধছে না? (২৯) ভুলেও অধর্মের পথে পা বাড়িয়ো না বাপু, মনে রেখো—পাপের ধন শেষ পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্তেই যায়। (৩০) যে প্রতিষ্ঠানে কর্তাব্যক্তিরা খুব বড়ো বড়ো কথা বলেন, সেখানে কাজকর্ম যে কী রকমটা হয়, সে তো জানতে কারো বাকি থাকে না, যত গর্জে কখনোই তত বর্ষে না। (৩১) আত্মীয়কে গৃহশিক্ষক রাখছেন রাখুন, কিন্তু বেতনটুকু মর্যাদাসম্পন্ন হওয়া চাইই-ফেল কড়ি মাখ তেল রীতিটি মেনে চলাই নিরাপদ। (৩২) পুকুরসমেত জায়গাটা কেনবার জন্য দশ লাখ টাকা দিতে যখন আমরা প্রস্তুত আছি, তখন আর দু-দশ হাজারে বেজার লাগবে না নিশ্চয়ই; ও তো যাঁহা বাহান্ন তাঁহা তিপ্পান্ন। (৩৩) আট টাকা মিনিবাস-ভাড়া বাঁচাবার জন্য সমস্ত পথটা হেঁটেই এলাম, কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়েতেই খেয়ে গেল—জুতোটা গেল ছিঁড়ে, পায়ে পড়ল ফোসকা। (৩৪) আমার প্রিয় দলের না হয় অপ্রত্যাশিত পরাজয় হয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে তোমার ভাইয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার কী সম্পর্ক আছে যে হাহুতাশ করছ? এ যেন সেই লঙ্কায় রাবণ মলো, বেহুলা কেঁদে পাগল হল গোছের অবস্থা নয়! (৩৫) আসামীকে দিয়ে কিছুই কবুল করানো গেল না শুনে পুলিনবাবু বললেন, “আচ্ছা করে ধোলাই ওষুধ প্রয়োগ না করলে চলবে না; লাথির ঢেঁকি কি টুসকিতে কখনো ওঠে লছমীনারানবাবু?” (৩৬) আপনার মতো শক্তের ভক্ত আর নরমের যমকে আমি ভয় পাই না; রাস্তাঘাট ও যানবাহনের ব্যবস্থার উন্নতি না হলে সকলেরই এমন দু-দশ মিনিট দেরি হবে; পারলে সকলেরই বিরুদ্ধে সমান শাস্তি প্রয়োগ করবেন। (৩৭) জরাজীর্ণ দোতলা বাড়িখানা মাত্র নব্বই হাজার টাকায় পঞ্চবাবু কিনলেন বটে, কিন্তু এখন তাঁর সস্তার তিন অবস্থা হয়েছে; খোলনলচে পালটাতে গিয়ে পুরো সাত লাখ টাকার ধাক্কা। (৩৮) দুর্ধর্ষ ধড়িবাজ সাতকড়িবাবুর পিছনে অমন করে কাঠি দেবেন না, উনি কখন যে কীভাবে আপনাকে সাত ঘাটের জল খাওয়াবেন, তা কেউ জানে না। (৩৯) ওঁদের পারিবারিক ব্যাপারে মীমাংসা করতে গিয়ে আমার হয়েছে সাপের ছুঁচো গেলা অবস্থা; এখন দুটো অপোগণ্ড ভাইকে মাসিক দুশো টাকা করে মাসোহারা দিতে হচ্ছে। (৪০) রমণীবাবু চলে যাওয়ার পর নতুন হেডমাস্টারমশায় এলেন, কিন্তু তাঁর কাছেও বিশেষ সুবিধে আদায়ের চেষ্টা না করাই ভালো—ভাই, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।

অনুশীলনী

১। বাক্যগুলিতে বাচ্যার্থ, লক্ষ্যার্থ বা ব্যঙ্গ্যার্থ কোনটি প্রকাশ পাইতেছে বল : (ক) যে ডাল ধরি যে মুই ভাঙিয়া পড়ে সে ভুঁই। (খ) এমন ঠোঁটপাতলা লোক কখনও দেখিনি। (গ) প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাটাই তো আমাদের চাকুরে জীবনের রাই কুড়িয়ে বেল। (ঘ) সমস্ত জাতিটা এখন খাবি খাচ্ছে। (ঙ) বাপমার কথা শুনবে। (চ) “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।” (ছ) “জল অস্থির, কিন্তু নদী অস্থির নহে, নিস্তরঙ্গ।” [ জল—প্রফুল্লমুখীর ললিতলাবণ্য, নদী—প্রফুল্লর দৃষ্টিনন্দন দেহ ] (জ) লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে গেলাম। (ঝ) তার জিবের সামনে কেউ দাঁড়াতেই পারছে না। (ঞ) “গোরুর বাঁটে দুধ আছে ঠিকই, কিন্তু সে দুধে স্নেহ আর তেমন নেই।”

২। প্রতিটি শব্দের পাঁচটি করিয়া বিশিষ্ট প্রয়োগ দেখাও : চাল, কাল, মাথা, মুখ, হাত, চোখ, কথা, কান, গলা, গা, বর্ণ, বুক, নাক, বড়ো, ছোটো, পাকা, কাঁচা, বসা, অঙ্ক, গুণ, দণ্ড, কর, পাট, জাত, মোটা, তাল, কাটা, ধরা।

৩। নীচের প্রতিজোড়া শব্দের ডানদিকে শূন্যস্থানটিতে এমন একটি শব্দ বসাও যেটি পাশের বন্ধনীমধ্যস্থ শব্দটির একটি প্রতিশব্দ হইবে এবং ধ্বনির দিক্ দিয়াও প্রদত্ত শব্দজোড়ার সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলিয়া যাইবে : (ক) তরুণ, বরুণ, …… [ সূর্য ] (খ) ধনী, মণি, …… [ ভুজঙ্গ ] (গ) জননী, রজনী, …… [ ধরিত্রী ] (ঘ) চম্পা, পম্পা, ……. [ বিদ্যুৎ ] (ঙ) অসি, মসী, …… [ সুধাংশু ] (চ) প্রলয়, অলয়, …… [ আবাস ] (ছ) অদ্য, সদ্য, ……. [ কমল ] (জ) মরণ, শরণ, …… [ পদ ] (ঝ) গণ, ক্ষণ, ……. [ যুদ্ধ] (ঞ) সহোদর, লম্বোদর, ……[ সৰ্প ] (ট) আধি, নিধি, …… [ ঈশ্বর ] (ঠ) কিঙ্কর, কঙ্কর, …… [ মহাদেব ] (ড) কণিকা, ধনিকা, …… [ জননী ] (ঢ) ধাবক, শাবক, …… [ অগ্নি ] (ণ) ইন্দু, বিন্দু, …….. [ পাথার ]।

৪। শব্দগুচ্ছটির বা প্রবচনটির অর্থ বলিয়া শব্দগুচ্ছ দিয়া বা প্রবচন দিয়া বাক্যরচনা কর : লোহার কার্তিক, শ্রীঘর, মাথায় করে রাখা, হাতে মাথা কাটা, কোঁচা দুলিয়ে বেড়ানো, রাহুর দশা, একাদশে বৃহস্পতি, কলকে পাওয়া, পুকুরচুরি, পুকুরের ইলিশ, সাতখুন মাপ, গৌরচন্দ্রিকা, চক্ষু চড়কগাছ, রাজাউজির মারা, হাতেখড়ি, তুলসীবনের বাঘ, দুধের মাছি, বলির পাঁঠা, সোনায় সোহাগা, বেঙের সর্দি, কলির সন্ধ্যা, ছেলের হাতের মোয়া, কপাল ফেরা, দক্ষযজ্ঞ, গণেশ উলটানো, ঘরের ঢেঁকি কুমির, ঘরভেদী বিভীষণ, চোখে ধুলো দেওয়া, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির, মেও ধরা, মুখে চুনকালি দেওয়া, জিব কাটা, মাথায় খুন চড়া, ওত পাতা, মুখে ফুলচন্দন পড়া, ফোড়ন কাটা, মাঠে মারা যাওয়া, আক্কেল গুড়ুম, নিজের কোলে ঝোল টানা, ক-অক্ষর গোমাংস, কইমাছের প্রাণ, কুলকাঠের আঙার, ঝাঁকের কই, খুঁড়িয়ে বড়ো হওয়া, গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো, বিসমিল্লায় গলদ, ঘোল খাওয়ানো, চক্ষুদান করা, চর্বিতচর্বণ, ঢিঢি পড়া, পুঁটিমাছের প্রাণ, মাকালফল, গলার কাঁটা, সোনা ফলানো, রুইকাতলা, চুনোপুঁটি, কংস-মামা, পি-পু-ফি-শু, দু নৌকোয় পা দেওয়া, ঘাট মানা, মুরুব্বির জোর, হাতের পুতুল, কূপমণ্ডূক, জলউঁচুর দল, শেয়ালের যুক্তি, লাটে ওঠা, ষোল কলায় পূর্ণ, চোখের বালি, আদার ব্যাপারী, ঢাকঢাক গুড়গুড়, সাক্ষিগোপাল, কেষ্টবিষ্টু, দাঁও মারা, মুখচোরা, হাতসাফাই, লেফাফাদুরস্ত, বিষকুম্ভ পয়োমুখ, ছিনে জোঁক, জগাখিচুড়ি, ফুঁকে দেওয়া, রক্তের টান, স-সে-মি-রা, অগ্নিশর্মা, অর্ধচন্দ্র দেওয়া, ঔষধ ধরা, রগচটা, পায়াভারি, নাড়ীনক্ষত্র, সেয়ানে সেয়ানে, উড়নচণ্ডী, আকাশ থেকে পড়া, জড়ভরত, শাঁখের করাত, বকধার্মিক, সুখের পায়রা, ভূতের বেগার, কুরুক্ষেত্র, মাথায় ওঠা, হরিঘোষের গোয়াল, নিজের ঢাক নিজেই পেটা, সাপে-নেউলে, আদায়-কাঁচকলায়, বর্ণচোরা আম, দহরম-মহরম, তুষের আগুন, বিন্দু-বিসর্গ, বাড়াভাতে ছাই, বিনা মেঘে বজ্রাঘাত, বুদ্ধির ঢেঁকি, সোনার পাথরবাটি, অমাবস্যার চাঁদ, ভস্মে ঘি ঢালা, সবুরে মেওয়া ফলে, ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে, মাছের মায়ের কান্না, মাছের তেলে মাছভাজা, উড়োখই গোবিন্দায় নম, আপনি বাঁচলে বাপের নাম, লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন, হালে পানি পাওয়া, একহাতে তালি বাজে না, পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা, সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে, ভেড়ার গোয়ালে আগুন লাগা, অনভ্যাসে চন্দনের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে, কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন, সাপ হয়ে কামড়ায় রোজা হয়ে ঝাড়ে, সমুদ্রে শয়ন যার কী ভয় শিশিরে, পেটে খিদে মুখে লাজ সে কুটুমে কিবা কাজ, বানরের গলায় মুক্তোর মালা, মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন, তিন মাথা যার বুদ্ধি নেবে তার, নিজের ভাগে ভাত জোটে না শঙ্করাকে ডাকে, গাছেরও খায় তলারও কুড়োয়, পেটে বোমা মারলেও ক বেরবে না, আসরে মশাল নেই ঢেঁকিঘরে চাঁদোয়া, ঘরের কাঠ উইয়ে খায় কাঠ কুড়তে বনে যায়, দশদিন চোরের একদিন সেধের, বনেদীর আঁস্তাকুড়ও ভালো, বড়ো মাছের কাঁটাও ভালো, হাতে দই পাতে দই তবু বলে কই কই, রাখে কৃষ্ণ মারে কে, হাতের কঙ্কণ দর্পণে দেখা, এক ক্ষুরে মাথা মুড়ানো, শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না, কাঞ্চন ফেলে কাচে গেরো, হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী, ভরাডুবির মুষ্টিলাভ, না আঁচালে বিশ্বাস নেই, খাল কেটে কুমির আনা, নিজের ধন পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ মরেন কাঁথা বয়ে, সামনে দিয়ে ছুঁচ গলে না পিছন দিয়ে হাতি গলে যায়, অজাযুদ্ধে আঁটুনি সার, ঝড়ের আগে এঁটো পাত, যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা, পান দিয়ে ছিবড়ে মাগা, জোড়াতালির সেলাই খুলতেই-বা কতক্ষণ, হাত দিয়ে জল গলে না, গলা টিপলে দুধ বেরয়, শরীরের নাম মহাশয় যা সওয়াবে তাই সয়, বিড়ালতপস্বী, বুকে বসে দাড়ি উপড়ানো, হাড়িকাঠে মাথা গলানো, লঙ্কায় রাবণ ম’ল বেহুলা কেঁদে পাগল হল, ভিজেবেড়াল, ধড়াচূড়া।

৫। ত্রুটি সংশোধন কর : বাঁশবনের বাঘ, হালে জল পাওয়া, শিবরাত্রির প্রদীপ, আপনি বাঁচলে বংশের নাম, বৃন্দাবনের ষাঁড়, কপালের ঘাম পায়ে ফেলা, খোদার ওপর কারসাজি, মামাবাড়ি, ঠাকুমা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *