৫.১ বাক্য

পঞ্চম অধ্যায় – বাক্য-প্রকরণ
প্রথম পরিচ্ছেদ
বাক্য

আমি যদি বলি, “আমায় ভালো দেখে একখানা গল্পের বই দাও,” তবে আমার প্রয়োজনটুকু বুঝিয়া আমাকে একখানি গল্পের বই আনিয়া দিবে। আমায়, একখানা, ভালো, দেখে, গল্পের, বই, দাও এবং তুমি (ঊহ্য)—এই মোট আটটি পদের সাহায্যে আমার মনোভাবটি প্রকাশ করিলাম এবং তোমাদেরও বুঝিতে কোনো অসুবিধা হইল না। এই আটটি সুসজ্জিত পদের সমষ্টিকে বাক্য বলে।

১৮৮। বাক্য : যে কয়টি সুসজ্জিত পদের দ্বারা মনের কোনো একটি ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায়, তাহাদের সমষ্টিকে বাক্য বলে।

সুসজ্জিত কথাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উপরের কথাগুলি যদি “বই গল্পের দাও একখানা দেখে ভালো আমায়” এইরকম এলোমেলোভাবে বলি, বক্তব্যটি বুঝিতে তোমাদের বেশ অসুবিধা হইবে। কিংবা যদি বলি “বুবাই টেবিল আকাশ আলো অন্ধকার”—তখনও আমার মনোভাব বলাও হইল না, তোমরা বুঝিতেও পারিলে না। কেননা, কথাগুলির পরস্পরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নাই। কিন্তু ওই কথাগুলির প্রত্যেকটি লইয়া এক-একটি বাক্যরচনা করিলে পাইবে—(ক) বুবাই বকবক করিতেছে। (খ) টেবিলটা বড়ো টলমল করে। (গ) আকাশ আমাদের উদার হতে শিক্ষা দেয়। (ঘ) আলো মনের মাঝে আশা জাগায়। (ঙ) অন্ধকার জাগায় ভীতি।

বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলির তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা চাই—(১) আসত্তি (নৈকট্য), (২) যোগ্যতা ও (৩) আকাঙ্ক্ষা।

১৮৯। আসত্তি : বাক্যের বিভিন্ন অংশ যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট করার নাম আসত্তি। সিদ্ধার্থের পড়িল শরাহত কোলে চিন্তারত রাজহংসটি—বাক্য নয়। বাক্যের প্রতিটি পদ উপস্থিত, কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে থাকায় ভাবপ্রকাশের অসুবিধা হইতেছে। বলিতে হইবে—শরাহত রাজহংসটি চিন্তারত সিদ্ধার্থের কোলে পড়িল। তেমনি, প্রাচীন ভারত বলেছে—মানুষ অমৃতের পুত্র। রক্তের সম্পর্ক বড়ো কথা, না, প্রাণের সম্পর্ক?

১৯০। যোগ্যতা : কোনো পদসমষ্টি উচ্চারিত হইবার সঙ্গে-সঙ্গে ভাবপ্রকাশের যদি কোনো অসংগতি না থাকে, তবে ওই পদসমষ্টির বাক্যগঠনের যোগ্যতা রহিয়াছে বুঝিতে হইবে। (ক) অনিন্দিতা আগুনে সাঁতার দিতেছে।

(খ) সূর্য পশ্চিমদিকে উদিত হয়।—আদৌ বাক্য নহে। মানুষের পক্ষে আগুনে সাঁতার দেওয়া অসম্ভব, আর প্রকৃতির নিয়মে সূর্যও কখনো পশ্চিমদিকে উঠে না। বলিতে হইবে– (ক) অনিন্দিতা পুষ্করিণীতে (বা নদীতে) সাঁতার দিতেছে। (খ) সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয়। এখন ভাবপ্রকাশে আর কোনো বাধা রহিল না।

১৯১। আকাঙ্ক্ষা : বাক্যের কিছু অংশ বলিবার পর অবশিষ্টাংশটুকু বলিবার জন্য বক্তার যেমন আগ্রহ থাকে, না-বলা অংশটি শুনিবার জন্য শ্রোতারও মনে তেমনি একটি আগ্রহ জন্মে। বাক্যে ব্যবহৃত পদসমষ্টি যদি এই আগ্রহ পরিতৃপ্ত করিতে পারে তবেই সেই বাক্যটির আকাঙ্ক্ষা আছে বুঝিতে হইবে। “তোমাদের শ্রেণীর মনীষা” এইটুকু বলিয়া যদি আর কিছু না বলি, তাহা হইলে অবশিষ্টাংশটুকু শুনিবার জন্য কি তোমাদের মন ব্যাকুল হইয়া উঠিবে না? সেই ব্যাকুলতা দূর করিবার জন্য যখন বলিলাম “নিখিল ভারত সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হইয়াছে” অমনি তোমাদের ব্যাকুলতা দূরীভূত হইল, আমারও আকুলতা মিটিয়া গেল। বক্তা-শ্রোতা সকলেরই আকাঙ্ক্ষা মিটাইবার ক্ষমতা বাক্যটির রহিয়াছে। তাই বাক্যটিতে ব্যবহৃত পদগুলি পূর্ণাকাঙ্ক্ষা।

উদ্দেশ্য ও বিধেয়

প্রত্যেকটি বাক্যের দুইটি প্রধান অংশ থাকে—একটি উদ্দেশ্য, অন্যটি বিধেয়। (১৬০ পৃষ্ঠায় ৬৫ ও ৬৬ নং সংজ্ঞার্থ দেখ।) বাক্যের কর্তৃকারকই মূল উদ্দেশ্য। কর্তৃপদটি যখন ঊহ্য থাকে, তখন ক্রিয়াটিকে কে বা কী প্রশ্ন করিলে যে উত্তরটি পাইবে তাহাই উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্যের পরিচায়ক পদ যদি কিছু থাকে তাহাকে উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক বলে। উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক সাধারণতঃ উদ্দেশ্যের পূর্বেই বসে।

মূল উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক বাদে বাক্যের অন্য অংশটি হইতেছে বিধেয়। বিধেয় অংশের মূল হইল সমাপিকা ক্রিয়া। মূল বিধেয়ের পরিচায়ক পদাদি থাকিলে তাহাকে বিধেয়ের সম্প্রসারক বলে। “এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ় মাসে নামে তমালবনে।”—বাক্যটিতে ছায়া—মূল উদ্দেশ্য, কালো কোমল—উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক, নামে—মূল বিধেয়, এমনি করে আষাঢ় মাসে তমালবনে—বিধেয়ের সম্প্রসারক। বিধেয়ের সম্প্রসারক ক্রিয়াবিশেষণ বা কর্ম, করণ, সম্প্রদান, অপাদান বা অধিকরণকারক হয়।

উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্প্রসারণ ॥

মূল উদ্দেশ্যের পূর্বে তাহার পরিচায়ক বিশেষণপদ বসাইয়া উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারিত করা হয়। আর, মূল বিধেয়টির পূর্বে কীভাবে, কেমন করিয়া, কতক্ষণ ধরিয়া ইত্যাদি বুঝায় এমন ক্রিয়াবিশেষণ বা কর্ম, করণ, সম্প্রদান, অধিকরণবাচক পদ বসাইয়া বিধেয়টিকে সম্প্রসারিত করা হয়। সম্প্রসারণের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া গেল।

(ক) স্বামীজী একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন।

এখন স্বামীজী—এই মূল উদ্দেশ্যটিকে উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত করা হইতেছে।—

(১) বীরসন্ন্যাসী স্বামীজী।

(২) বেদান্তকেশরী বীরসন্ন্যাসী স্বামীজী।

(৩) বিশ্ববিজয়ী বেদান্তকেশরী বীরসন্ন্যাসী স্বামীজী।

(৪) শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মন্ত্রশিষ্য বিশ্ববিজয়ী বেদান্তকেশরী বীরসন্ন্যাসী স্বামীজী।

এইবার, একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন—এই বিধেয় অংশটিকে সম্প্রসারিত করা হইতেছে।

(১) ইংলন্ড হইতে একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন।

(২) সাগরপারের শ্বেতদ্বীপ ইংলন্ড হইতে একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন।

(৩) গণদেবতার সেবার জন্য সাগরপারের শ্বেতদ্বীপ ইংলন্ড হইতে একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন।

(৪) দুর্গত ভারতের গণদেবতার সেবার জন্য একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন। আমাদের মূল বাক্যটি সম্প্রসারণের পর দাঁড়াইল—শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মন্ত্রশিষ্য বিশ্ববিজয়ী বেদান্তকেশরী বীরসন্ন্যাসী স্বামীজী দুর্গত ভারতের গণদেবতার সেবার জন্য সাগরপারের শ্বেতদ্বীপ ইংলন্ড হইতে একটি শ্বেতপদ্ম আনিলেন। (সরল)

(খ) কিশোর সুভাষচন্দ্র জাতীয় পোশাকপরিচ্ছদকে অঙ্গাভরণ করলেন। কিশোর সুভাষচন্দ্র—এই উদ্দেশ্যটিকে উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত করা হইল।

(১) আশৈশব ইওরোপীয় আদবকায়দায় লালিতপালিত কিশোর সুভাষচন্দ্র।

(২) অভিজাত বংশের সন্তান আশৈশব ইওরোপীয় আদবকায়দায় লালিত—পালিত কিশোর সুভাষচন্দ্র।

এইবার জাতীয় পোশাকপরিচ্ছদকে অঙ্গাভরণ করলেন—এই বিধেয় অংশটিকে উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত করা হইতেছে।

(১) প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের অনুপ্রেরণায় জাতীয় পোশাকপরিচ্ছদকে অঙ্গাভরণ করলেন।

(২) সপ্তম শ্রেণীতে ভরতি হওয়ার দিন থেকেই প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের অনুপ্রেরণায় জাতীয় পোশাকপরিচ্ছদকে অঙ্গাভরণ করলেন।

(৩) র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট ইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভরতি হওয়ার দিন থেকেই প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের অনুপ্রেরণায় জাতীয় পোশাকপরিচ্ছদকে অঙ্গাভরণ করলেন। মূল বাক্যটি দাঁড়াইল—অভিজাত বংশের সন্তান আশৈশব ইওরোপীয় আদবকায়দায় লালিতপালিত কিশোর সুভাষচন্দ্র র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট ইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভরতি হওয়ার দিন থেকেই প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের অনুপ্রেরণায় জাতীয় পোশাকপরিচ্ছদকে অঙ্গাভরণ করলেন। (সরল)

বাক্যের প্রকারভেদ

রূপের দিক্ দিয়া বাক্য তিন রকমের—(১) সরল, (২) জটিল ও (৩) যৌগিক।

১৯২। সরল বাক্য : যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য ও একটিমাত্র বিধেয় থাকে, তাহাকে সরল বাক্য বলে। (ক) ভবশঙ্করী বড় হিংসুটে। (খ) “ফাঁসির মঞ্চ হল মালঞ্চ।” (গ) সর্বজনীন দুর্গোৎসবে প্রবীণ পুরোহিত উদাত্তকণ্ঠে চণ্ডীপাঠ করিতেছেন। (ঘ) “তিনি তলোয়ার খুলে তারাবাইকে তাঁর শয়নঘর থেকে একেবারে হাত ধরে টেনে বাইরে আনবার চেষ্টা করলেন।”

সরল বাক্যে মূল উদ্দেশ্য থাকিবে একটি আর মূল বিধেয়ও (সমাপিকা ক্রিয়া) থাকিবে মাত্র একটি। অবশ্য অসমাপিকা ক্রিয়া এক বা একাধিক থাকিতে পারে।

১৯৩। জটিল বাক্য : যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং তাহার অধীন এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকে, তাহাকে জটিল বাক্য বলে। প্রধান খণ্ডবাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া এবং প্রতিটি অপ্রধান খণ্ডবাক্যেও একটি করিয়া সমাপিকা ক্রিয়া থাকে বলিয়া জটিল বাক্যে অন্ততঃপক্ষে দুইটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকিবেই।—”সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল, সেই গিয়েছে সবার আগে সরে।” ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি।” “এই অন্তরমহলে মানুষের যে মিলন, সেই মিলনই সত্য মিলন।”

অপ্রধান খণ্ডবাক্যগুলি কোনো সাপেক্ষ সর্বনাম, নিত্যসম্বন্ধী অব্যয় বা সংশয়সূচক অব্যয়দ্বারা প্রধান খণ্ডবাক্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই সংযোগ তিনপ্রকারে সাধিত হয়—(১) বিশেষ্যভাবে, (২) বিশেষণভাবে ও (৩) ক্রিয়াবিশেষণভাবে।

(১) বিশেষ্যভাবে : তুমি যে আসবে না, আমি জানতাম। “কেবল মনে পড়ে জল পড়ে পাতা নড়ে।’

(২) বিশেষণভাবে : “নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।” যে অঙ্কগুলো কষতে বলেছিলাম—সেগুলো কষেছ?

(৩) ক্রিয়াবিশেষণভাবে : এখানে যখনই বৃষ্টি হয়, মুষলধারে হয়। ১৯৪। যৌগিক বাক্য : একাধিক সরল বা জটিল বাক্যের সংযোগে গঠিত বাক্যই যৌগিক বাক্য। (ক) ছেলেটি বুদ্ধিমান্ কিন্তু অলস। (দুইটি সরল) (খ) ভিতরের আলো এখন জ্বলে উঠেছে, সুতরাং বাইরের আলোর আর প্রয়োজন কী? (দুইটি সরল) (গ) ভরতের অশ্রু রামচন্দ্রকে বিচলিত করিল, কিন্তু পাছে পিতৃসত্য ভঙ্গ হয় এইজন্য তিনি ভরতের অনুরোধ রাখিতে পারিলেন না। (একটি সরল ও একটি জটিল) (ঘ) যে ছেলে ভক্তিমান, গুরুজনদের আশীর্বাদ সে স্বতঃই লাভ করে, আর তার জীবনপথে যে-সমস্ত বাধা-বিপত্তি আসে সেগুলোও ধীরে ধীরে দূরীভূত হয়। (দুইটি জটিল বাক্য)

যৌগিক বাক্যে অন্ততঃ দুইটি প্রধান খণ্ডবাক্য থাকেই। খণ্ডবাক্যগুলি সমুচ্চয়ী অব্যয়ের দ্বারা সংযুক্ত হইয়া পরস্পর নিরপেক্ষভাবে থাকে।

বাক্য-বিশ্লেষণ

১৯৫। বাক্য-বিশ্লেষণ : বাক্যের প্রধান অংশগুলিকে বিশ্লিষ্ট করিয়া একটির সঙ্গে অন্যটির সম্বন্ধ বুঝাইয়া দেওয়ার নাম বাক্য-বিশ্লেষণ।

প্রতিটি বাক্যে মূল উদ্দেশ্য ও মূল বিধেয় থাকিবেই। উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক থাকিতে পারে, নাও থাকিতে পারে। উদ্দেশ্য বা বিধেয় ঊহ্য থাকিলে সেটিকে বিশ্লেষণকালে উদ্ধার করিয়া দেখাইতে হয়। কয়েকটি সরল বাক্যের বিশ্লেষণ দেখ।—

(ক) বীরসন্ন্যাসী স্বামীজী বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। (খ) নেতাজী ভারতগৌরব। (গ) “মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা।” (ঘ) “আমরা ইহার অস্থি দিয়া পৃথিবীর দেহ নূতন করিয়া নির্মাণ করি।” (ঙ) “দিবসের শেষ আলোক মিলাল নগরসৌধ-’পরে।”

 উদ্দেশ্যবিধেয়
 মূল উদ্দেশ্যঐ সম্প্রসারকমূল বিধেয়ঐ সম্প্রসারক
(ক)স্বামীজীবীরসন্ন্যাসীপ্রতিষ্ঠা করেনবেলুড় মঠ
(খ)নেতাজী (হন)ভারতগৌরব
(গ)(তোমরা) এসো এসোমার অভিষেকে ত্বরা
(ঘ)আমরা নির্মাণ করিইহার … করিয়া
(ঙ)আলোকদিবসের শেষমিলালনগরসৌধ-’পরে

জটিল বাক্যের বিশ্লেষণ : (১) প্রথমে প্রধান খণ্ডবাক্যটি দেখাও। (২) অপ্রধান খণ্ডবাক্যগুলি দেখাইয়া ইহাদের প্রত্যেকটির সহিত প্রধান খণ্ডবাক্যটির অথবা অন্য কোনো খণ্ডবাক্যের পারস্পরিক সম্বন্ধটি দেখাও। (৩) সংযোজক সর্বনাম বা অব্যয়গুলি নির্দেশ কর। (৪) পরিশেষে প্রতিটি খণ্ডবাক্যকে সরল বাক্যের নিয়মে বিশ্লেষণ কর। কয়েকটি আদর্শ বিশ্লেষণ দেখ।—

(ক) মানবাত্মার মহত্ত্ব যে জানে না, স্বাবলম্বন-শক্তি তাহার আসে না।

(১) স্বাবলম্বন শক্তি … না—প্রধান খণ্ডবাক্য।

(২) মানবাত্মার … জানে না—বিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য—প্রধান খণ্ডবাক্যস্থিত ‘তাহার’ পদটিকে বিশেষিত করিতেছে।

(খ) তিনি কোথায় থাকেন, জানি না।

(১) (আমি) জানি না—প্রধান খণ্ডবাক্য।

(২) তিনি থাকেন—বিশেষ্যস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য—প্রধান খণ্ডবাক্যস্থিত ‘জানি না’ সমাপিকা ক্রিয়ার কর্ম।

(গ) যদি নিজের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি চাও, তবে সময়ের সদ্ব্যবহার কর।

(১) তবে সময়ের কর—প্রধান খণ্ডবাক্য।

(২) যদি চাও—ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য– প্রধান খণ্ডবাক্যস্থিত ‘সদ্ব্যবহার কর’ ক্রিয়াটিকে বিশেষিত করিতেছে।

(৩) যদি-তবে—নিত্যসম্বন্ধী অব্যয়।

(ঘ) অধ্যাপক বোরিস স্মির্নফ—পেশায় যিনি শল্যচিকিৎসক, সোভিয়েট স্নায়ু-শল্যবিদ্যার বিকাশে যাঁর অবদান বিস্ময়কর—সম্প্রতি এককভাবে রুশ ভাষায় মূল মহাভারতের অনুবাদ করেছেন। [ সোভিয়েট আলোচনী ]

(১) অধ্যাপক বোরিস স্মিনফ সম্প্রতি করেছেন—প্রধান খণ্ডবাক্য।

(২) পেশায় যিনি শল্যচিকিৎসক—বিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য—প্ৰধান খণ্ডবাক্যস্থিত ‘বোরিস স্মির্নফ’ পদটিকে বিশেষিত করিতেছে।

(৩) সোভিয়েট … বিস্ময়কর—বিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য—প্ৰধান খণ্ডবাক্যস্থিত ‘বোরিস স্মির্নফ’ পদটিকে বিশেষিত করিতেছে।

উপরের প্রতিটি প্রধান ও অপ্রধান খণ্ডবাক্যকে পুনরায় সরল বাক্যের নিয়মে বিশ্লেষণ করিলে তবেই পূর্ণাঙ্গ বাক্য-বিশ্লেষণ হইবে।

যৌগিক বাক্যের বিশ্লেষণ : (১) প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যকে পৃথক্‌ কর। (২) অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকিলে কোন্ নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যের সহিত সেটির কী সম্বন্ধ তাহা দেখাও। (৩) সংযোজক অব্যয় বা সর্বনামগুলি নির্দেশ কর। (৪) শেষে প্রতিটি খণ্ডবাক্যকে সরল বাক্যের রীতিতে বিশ্লেষণ কর। কয়েকটি উদাহরণ দেখ।–

(ক) ছেলেটি বুদ্ধিমান্ কিন্তু অলস।

(১) ছেলেটি বুদ্ধিমান্—নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্য।

(২) (ছেলেটি) অলস—নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্য।

(৩) কিন্তু—সংযোজক অবস্থা।

(খ) আমি ঠিক সময়েই আসিয়াছি, কিন্তু আপনি কাজে এত ব্যস্ত ছিলেন যে আমাকে লক্ষ্যই করেন নাই।

(১) আমি ….. আসিয়াছি—নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্য।

(২) আপনি কাজে …… ছিলেন—প্রধান খণ্ডবাক্য।

(৩) যে (আপনি) আমাকে … নাই—ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য –প্রধান খণ্ডবাক্যস্থিত ‘এত’ পদটিকে বিশেষিত করিতেছে।

(৪) কিন্তু—সংযোজক অব্যয়।

এখন প্রতিটি খণ্ডবাক্যকে সরল বাক্যের মতো পৃথভাবে বিশ্লেষণ করিলে পূর্ণাঙ্গ বাক্য-বিশ্লেষণ হইবে।

বাক্য-সংকোচন

১৯৬। বাক্য-সংকোচন : একাধিক কথায় প্রকাশিত কোনো ভাবকে প্রয়োজনমতো একটি শব্দে প্রকাশ করার নাম বাক্য সংকোচন।

বিস্তৃত ভাবটিকে অল্প-পরিসরে প্রকাশ করিতে পারিলে, শুধু যে বক্তব্য-বিষয়টি সহজ ও স্পষ্ট হয় তাহা নয়, ভাষায় গাম্ভীর্য ও দৃঢ়পিনদ্ধতারও সৃষ্টি হয়। বাক্যের রূপ-পরিবর্তনে বাক্য সংকোচন বিশেষ সহায়ক। স্ত্রী-প্রত্যয়, কৃৎ-প্রত্যয়, তদ্ধিত—প্রত্যয় ও সমাসের সাহায্যে বাক্য সংকোচন করা হয়। কয়েকটি উদাহরণ :—

অগ্রে গমন করে যে—অগ্রগামী। অসম্ভব কাণ্ড ঘটাইতে যে নারীর পটুতা রহিয়াছে—অঘটন-ঘটনপটীয়সী। অনু (পশ্চাতে) গমন করে যে—অনুগামী। অঙ্গুলিদ্বারা গণনা করা যায় যাহা—অঙ্গুলি গণ্য। অঙ্গুলি-দ্বারা মাপা যায় যাহা—অঙ্গুলিমেয়। অগ্রে জন্মিয়াছেন যিনি—অগ্রজ। অনু (পশ্চাতে) জন্মিয়াছেন যিনি—অনুজ। অনুকরণ করা যায় না যাহা—অননুকরণীয়। অনুসন্ধান করিবার ইচ্ছা—অনুসন্ধিৎসা। অনুসন্ধান করিতে ইচ্ছুক—অনুসন্ধিৎসু। অবশ্যই হইবে যাহা—অবশ্যম্ভাবী। অনুকরণ করা যায় যাহার—অনুকার্য। অন্য গতি নাই যাহার—অনন্যগতি। অমৃতের মতো হইতেছে যাহা—অমৃতায়মান। অংশ আছে এমন মানুষ—অংশী। অন্যের অপেক্ষা করেন না যিনি—অনপেক্ষ। অগ্রপশ্চাৎ না ভাবিয়া কাজ করে যে—অবিমৃশ্যকারী। অনুকরণ করিবার ইচ্ছা—অনুচিকীর্ষা। অনুকরণ করিতে ইচ্ছুক—অনুচিকীর্ষু। অধীত হইতেছে যাহা—অধীয়মান। অপমান করান যিনি—অমানয়িতা। অচ্ছ উদক যাহার—অচ্ছোদ। অরিকে দমন করিয়াছেন যিনি—অরিন্দম। অন্য ভাষায় রূপান্তরিত–অনুদিত। অপনয়ন করা অসম্ভব যাহা—অনপনেয়। অতি আয়াসে যাহা সাধন করা যায়—অত্যায়াসসাধ্য। অর্থে যাহার মূল্যনির্ধারণ করা যায় না—অনর্ঘ। অঙ্গ নাই যাহার—অনঙ্গ অভিলষিত বস্তুর অপ্রাপ্তিতে অসহিষ্ণুতা—অমর্ষ। অপনয়ন করেন যিনি—অপনেতা। অধ্যয়ন করা হইয়াছে যাহা—অধীত। অবাঞ্ছনীয় প্রবেশ—অনুপ্রবেশ। অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত এমন—অনুষ্ঠাতব্য। অসুয়া নাই যে নারীর—অনসূয়া। অন্যদিকে মন নাই যাহার—অনন্যমনা। অন্ত নাই যাহার—অনন্ত। অপকার করিবার ইচ্ছা-অপচিকীর্ষা। অপকার করিতে ইচ্ছুক—অপচিকীর্ষু। অনুজের মতো কিছুটা—অনুজকল্প। অস্ত্র আজীব যাহার—অস্ত্রাজীব। অনুগতের ভাব—আনুগত্য। অনন্তের ভাব—আনন্ত্য। অঞ্জনার নন্দন—আঞ্জনেয় (হনুমান্)। অর্জুনের পুত্র—আর্জুনি। অতিশয় ক্রুরতা—আনৃশংস্য। অতিথির আপ্যায়ন—আতিথ্য। অভ্যন্তর-সংক্রান্ত—আভ্যন্তরিক। অর্থনীতি-সম্পর্কীয়—আর্থনীতিক। অভীষ্ট বস্তুর প্রাপ্তি—ইষ্টাপত্তি। অবস্থার উপযোগী করিয়া লওয়া—উপযোজন। অনেকের মধ্যে এক—একতম। অগভীর সতর্ক নিদ্রা-কাকনিদ্রা। অমাবস্যা—পূর্ণিমার জোয়ার—কটাল, কোটাল। অন্যের দ্বারা কাজ করাইয়া লন যিনি—কারয়িতা। অঙ্গুষ্ঠের মধ্যভাগের উপরিভাগ—কুর্চ। অভিমানভরে প্রত্যাখ্যাত নায়কের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অনুতপ্তা নায়িকা—কলহান্তরিতা। অতীর্থকে তীর্থ করা—তীর্থীকরণ। অদৃশ্য হওয়া যায় যে বিদ্যায়—তিরস্করণী। অনেক কষ্টে যাহা অধ্যয়ন করা যায়—দুরধ্যয়। অনেক দুঃখে যাহা উত্তীর্ণ হওয়া যায়—দুরুত্তীর্য। অনেক দুঃখে যেখানে প্রবেশ করিতে হয়—দুষ্প্রবেশ্য। অতিকষ্টে গ্রহণযোগ্য—দুরভিগ্রহ। অদগ্ধের দগ্ধ হওয়া—দগ্ধীভবন। অদ্রবকে দ্রব করার কাজ—দ্রবীকরণ। অনেক কষ্টে যাহাকে ভেদ করা যায়—দুর্ভেদ্য। অনেক কষ্টে যাহাকে ত্যাগ করা যায়—দুস্ত্যজ। অনেক কষ্টে যেখানে গমন করিতে হয়—দুর্গম, দুৰ্গ। অনেক দুঃখে যাহা পার হওয়া যায়—দুস্তর। অনেক দুঃখে যাহা পাওয়া যায়—দুষ্প্রাপ্য। অনেক কষ্টে যাহাকে দমন করা যায়—দুর্দম। অনেক কষ্টে যাহা হজম করা যায়—দুষ্পাচ্য। অনেক দুঃখে যাহার আরোগ্য হয়—দুরারোগ্য। অদ্রবকে দ্রব (তরল) করা—দ্রবীভবন। অন্ধকারের অরি-ধ্বান্তারি। অতি দীর্ঘ নহে যাহা-নাতিদীর্ঘ। অতি শীতলও নয়, অতি উষ্ণও নয় যাহা—নাতিশীতোষ্ণ। অক্ষির সম্মুখে—প্রত্যক্ষ। অক্ষির অগোচরে—পরোক্ষ। পরিতোষ-সহকারে যাহা দেওয়া হয়—পারিতোষিক। অন্যের উপর নির্ভরশীল গাছ—পরগাছা। অন্যের অনুগ্রহে পালিতা—পরভৃতিকা। অভীষ্টলাভের নিমিত্ত পূজা—পুরশ্চরণ। অক্ষির দ্বারা আনীত—প্রত্যক্ষ। অগ্রসর হইয়া মান্য ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা—প্রত্যুদ্‌গমন। অতিশয় চঞ্চল—ব্যালোল। অন্যের হইয়া যে স্বাক্ষর করে—বকলম। অতিশয় ভীত—বিত্রস্ত। অন্যকে ভোজনে আপ্যায়িত করেন যিনি—ভোজয়িতা। অশ্ব রাখিবার স্থান—মন্দুরা। অতীতের গৌরবময় বিষয়ের প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধার ভাব—মূল্যবোধ। অতিশয় তরুণ—যবিষ্ঠ। অলব্ধ বস্তুর লাভ ও লব্ধ বস্তুর রক্ষা—যোগক্ষেম। অন্য লিপিতে লিখন—লিপ্যন্তর। অত্যন্ত আগ্রহান্বিত–লালায়িত। অলংকারের শব্দ-শিঞ্জন, শিঞ্জিত। অবলীলার সঙ্গে—সাবলীল। অপরকে স্নান করানোর কাজ—স্নাপন। অতিশয় সাধু-সাধিষ্ঠ। অতিশয় ক্ষুব্ধ—সংক্ষুব্ধ। অট্টালিকার শ্রেণী—হাবেলী, হর্ম্যরাজি। অশ্বের চিৎকার—হ্রেষা। অসৎ চিন্তা ও কার্যে লজ্জা—হ্রী।

আস্ত অজকে গ্রাস করে যে—অজগর। আদি নাই যাহার—অনাদি। আশ্রয় করার যোগ্য—অনুজীব। আবক্ষ জলে নামিয়া স্নান—অবগাহন। আগমনের কোনো তিথি নাই যাহার—অতিথি। আর অবিবাহিতা রাখা যায় না যাহাকে—অরক্ষণীয়া। আধারস্থ বস্তু—আধেয়। আরম্ভ করিতেছে যে—আরভমাণ। আরম্ভ হইতেছে যাহার–আরভ্যমাণ। আয়ুর হিতকর—আয়ুষ্য। আকৃষ্ট হইতেছে যে—আকৃষ্যমাণ। আরোহণ করিয়াছে যে-আরূঢ়। আদর পাইতেছে যে-আদ্রিয়মাণ। যাহাকে আলিঙ্গন করা হইয়াছে—আলিঙ্গিত, আশ্লিষ্ট। আকাশ-মারফত প্রেরিত বাণী—আকাশবাণী। আদর করার যোগ্য-আদরণীয়। আচরণের যোগ্য—আচরণীয়। আকাশ ও পৃথিবী—ক্রন্দসী। আপন গলদেশে সবিনয় বস্ত্রাঞ্চল বেষ্টন করিয়াছেন যিনি—গলল গ্নীকৃতাস। আবেগবিহ্বলতাবশতঃ অব্যক্ত কণ্ঠধ্বনি—গদ্‌গদ (বি)। আমিষ ভক্ষণ করেন না যিনি—নিরামিষাশী। আনন্দ নাই যাহার-নিরানন্দ। আঘাতকারীকে হত্যা করে যে-প্রতিহস্তা। আগন্তুকের সম্মানে দণ্ডায়মান হওয়া—প্রত্যুত্থান। আগন্তুকের সম্মানে সম্যক্ উত্থিত—প্রত্যুত্থিত। আদবকায়দা জানে না যে—বেয়াদব। আমার মতো দেখায় যাহাকে—মাদৃশ। আয় বুঝিয়া ব্যয় করেন যিনি—মিতব্যয়ী। আরবী বা ফারসী চতুর্দশপদী কবিতা—রোবাইয়াৎ। আনুষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপদ্বারা বেদপাঠ—স্বাধ্যায়। আপনাকে (নিজেকে) হীন মনে করার ভাব-হীনম্মন্যতা। আপনাকে যে হীন মনে করে—হীনম্মন্য। আহ্বান করা হইতেছে যাহাকে—হুয়মান।

ইন্দ্রকে জয় করিয়াছেন যিনি—ইন্দ্রজিৎ। ইহার তুল্য—ঈদৃশ। ইহকাল সম্বন্ধীয়—ঐহিক। ইহলোক সম্বন্ধীয়—ঐহলৌকিক। ইতিহাস লেখেন যিনি—ঐতিহাসিক। ইচ্ছার অনুরূপ—ঐচ্ছিক। ইতরার পুত্র—ঐতরেয়। ইন্দ্রজালে পারদর্শী—ঐন্দ্রজালিক। ইন্দ্রিয়ের বিষয়—ঐন্দ্রিয়িক। ইতস্ততঃ গমনশীল—ক্রমমাণ। ইন্দ্রিয় জয় করিয়াছেন যিনি—জিতেন্দ্রিয়। ইক্ষুরসজাত মদ্য—শীধু। ইন্দ্রজাল জানেন যিনি—সৌভিক, ঐন্দ্রজালিক।

ঈষৎ পীতবর্ণবিশিষ্ট—আপীত। ঈষৎ নীল রঙবিশিষ্ট—আনীল। ঈষৎ মুক্ত—আমুক্ত। ঈশ্বরে বা পরলোকে যাহার বিশ্বাস আছে—আস্তিক। ঈশ্বরের ভাব—ঐশ্বর্য। ঈশ্বরের বিষয়ে—ঐশ্বরিক।

উচ্ছিষ্ট হয় নাই যাহা—অনুচ্ছিষ্ট। উচিত নয় যাহা—অনুচিত। উপকারীর উপকার স্বীকার করে না যে—অকৃতজ্ঞ। উচ্চারণ করা যায় না যাহা—অনুচ্চার্য। উদিত নহে—অনুদিত। এক স্থান হইতে অন্য স্থানে রোপণ—অবরোপণ। একজনের ভাষ্য অন্যের দ্বারা লিখিয়া লওয়া—অনুলিখন। উচ্চারিত হইতেছে যাহা—উচ্চার্যমাণ। উদিত হইতেছে যাহা—উদীয়মান। উদক পানের অভিলাষ—উদন্যা। উপচিয়া পড়িতে উদ্যত যাহা—উপচীয়মান। উর্বর নয় যাহা—ঊষর। উপদেশলাভের যোগ্য—উপদেষ্টব্য। উপদেশপ্রাপ্ত হইতেছে এমন—উপদিশ্যমান। উৎপন্ন হইতেছে এমন—উৎপদ্যমান। উত্তপ্ত করা হইয়াছে এমন—উত্তাপিত। উচ্ছ্বসিত করা হইয়াছে এমন—উচ্ছ্বাসিত। উচ্চকণ্ঠে গীত—উদ্‌গীত। উচ্ছেদের যোগ্য—উৎসাদনীয়। উপদেশ ব্যতীত জাত প্রথমজ্ঞান-উপজ্ঞা। উত্তর দিক্ সম্পর্কিত—উদীচ্য। উপেক্ষিত শস্যকণায় জীবনধারণ করে যে—উজ্জীবী। উপকার করিবার বাসনা—উপচিকীর্ষা। উপকার করিতে ইচ্ছুক—উপচিকীর্ষু। উপন্যাস লেখেন যিনি—ঔপন্যাসিক। উপমন্যুর পুত্র—ঔপমন্যব। উপকারীর উপকার স্বীকার করেন যিনি-কৃতজ্ঞ। উচ্চারণ করিতে বেশ কষ্ট হয় যাহা—দুরুচ্চার্য। উপমা নাই যে নারীর—নিরুপমা। উপস্থিত—বুদ্ধি আছে যাহার—প্রত্যুৎপন্নমতি। অনুরূপ বুদ্ধি—প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। উপত্যকায় শিং (দাঁত) দিয়া পশুগণের মাটি খুঁড়িয়া খেলা—বপ্ন। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ধনসম্পদ্—রিথ, ঋক্‌থ। উপযুক্ত বয়স পাইয়াছে এমন—সাবালক। উদাত্ত ও অনুদাত্তের মধ্যবর্তী কণ্ঠস্বর—স্বরিত।

ঋণী নহেন যিনি—অঋণী। ঋষির উক্তি—আর্য। ঋজুর ভাব—আর্জব। ঋতুর সম্বন্ধে—আর্তব। ঋষির মতো—ঋষিতুল্য। ঋষির মতো কিছুটা—ঋষিকল্প। ঋণগ্রস্ত অবস্থা—ঋণিতা। ঋতুতে ঋতুতে যিনি যজ্ঞ করেন—ঋত্বিক্। ঋণ আছে যাহার—ঋণী। ঋণশোধের অবস্থা নাই যাহার—দেউলিয়া।

এ পর্যন্ত শত্রু জন্মে নাই যাহার–অজাতশত্রু। এখনও দাড়িগোঁফ গজায় নাই যাহার—অজাতশ্মশ্রু। এক অক্ষৌহিণীর দশ ভাগের এক তাগ সৈন্য—অনীকিনী। এক হইতে আরম্ভ করিয়া—একাদিক্রমে। একটি বিষয়েই যাহার চিত্ত নিবদ্ধ—একাগ্রচিত্ত। একের ভাব—একতা, ঐক্য। একমত হওয়ার ভাব—ঐকমত্য। একতানের ভাব—ঐকতান। একবার ফল দিয়া মরিয়া যায় যে গাছ—ওষধি। একবারমাত্র সন্তান প্রসব করিয়াছেন যিনি—কাকবন্ধ্যা। একদিনেই তিনটি তিথির সংযোগ—ত্র্যহস্পর্শ। একটি ধারা ধরিয়া চলে যাহা—ধারাবাহিক। একহাতে মাথা ও অন্যহাতে পা দুইটিকে উপরদিকে উত্তোলন—পাথালি। এক ভাষার মধ্যে অন্য ভাষার প্রয়োগ—বুকনি। একটুতেই ভয়ে অস্থির হয় যে—ভয়তরাসে। এক-অষ্টমাংশ ইঞ্চি—যবোদর। এক যুগের অবসান ও অন্য যুগের আরম্ভ যে সময়ে—যুগসন্ধি। একবার শুনিলেই যাহার মনে থাকে—শ্রুতিধর। একই পতি যাহাদের—সপত্নী। একই সময়ে একই গুরুর শিষ্য—সতীর্থ। একই তীর্থের যাত্রী—সতীর্থ। একই মায়ের পুত্র—সোদর, সহোদর। একবারমাত্র গর্ভধারণ করিয়াছেন যিনি—সকৃৎগর্ভা। একই সময়কার—সামসময়িক। ওষ্ঠদ্বারা উচ্চারিত হয় যাহা—ঔষ্ঠ্য, ওষ্ঠ্য। ওজন করে যে—তৌলিক

কোনোকিছুতেই যে ভীত নয়—অকুতোভয়। কার্য সফল হয় নাই যাহার—অকৃতকার্য। কখনও সূর্যের মুখ দেখে নাই যে নারী—অসূর্যম্পশ্যা। কল্পনা করা যায় না যাহা—অকল্পনীয়। ক্রমাগত চেষ্টা—অধ্যবসায়। কন্যা নাই এমন মা—অপুত্রিকা। ক্ষুধাতৃষ্ণা নিদ্রাক্লান্তি জয় করিবার বিদ্যা—অতিবলা, বলা। কুল (বংশ-পরিচয়) ও শীল (স্বভাব) সম্পর্কে কিছু জানা যায় নাই যাহার–অজ্ঞাতকুলশীল। কামনা সিদ্ধ হয় নাই যাহার–অকৃতকাম। ক্ষয় নাই যাহার—অক্ষয়। কণ্ঠ পর্যন্ত—আকণ্ঠ। কর্ণ পর্যন্ত—আকর্ণ। ক্ষতিপূরণস্বরূপ প্রদত্ত অর্থ—আনুতোষিক। কেশ সম্বন্ধীয়—কৈশিক। কৃত্তিই বাস (পরিধেয়) যাঁহার কৃত্তিবাস। কীর্তিতে বাস (অধিষ্ঠান) যাঁহার—কীর্তিবাস। কানের পাশে লম্বিত কেশগুচ্ছ—কাকপক্ষ। কুমুদশোভিত পুষ্করিণী—কুমুদিনী। কৃত উপকার ভুলিয়া উপকারীর অপকার করে যে—কৃতয়। কুন্তীর নন্দন—কৌন্তেয়। ক্লেশ পাইতেছে যে—-ক্লিশ্যমান। কী করিতে হইবে যে বুঝিতে পারে না—কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কনিষ্ঠা ভগিনী—কনীনিকা। কৃষি যাহার জীবিকা—কৃষিজীবী। কর দেয় যে—করদ। ক্রয় করার যোগ্য—ক্রেয়। করিবার যোগ্য—করণীয়। কবজি হইতে কনিষ্ঠাঙ্গুলি পর্যন্ত করতল—করভ। কুমারী মাতার সন্তান—কানীন। কুম্ভকারের কুম্ভাদি নির্মাণের চক্র—কুলালচক্র। কাঁচা মাংস—ক্রব্য। ক্রমশঃ বিস্তৃত হইতেছে যাহা—ক্রমবিস্তার্যমাণ। কুম্ভ নির্মাণ করে যে—কুম্ভকার। ক্লেশ সৃষ্টি করে যে—ক্লেশকর। কাহার মতো দেখায়—কীদৃশ। কশ্যপ মুনির সন্তান—কাশ্যপেয়। করা উচিত বা করার যোগ্য—কর্তব্য, করণীয়। ক্ষতি করে যে—ক্ষতিকর। ক্ষণকালের মধ্যেই ভাঙ্গিয়া যায় যাহা—ক্ষণভঙ্গুর। ক্ষমা পাইবার যোগ্য—ক্ষমার্হ। কূপাদির চতুর্দিকস্থ চাতাল—গজগিরি। ক্ষমা করিবার ইচ্ছা—চিক্ষমিষা। করিবার ইচ্ছা—চিকীর্ষা। করিতে ইচ্ছুক—চিকীর্ষু। কাঠ চিরিবার মজুরি—চেরাই। কয়েকটি গ্রাম বা মৌজার সমষ্টি-ডিহি। ক্ৰমশঃ বেগ বৃদ্ধি করা হইয়াছে এমন—ত্বরিত। কাজ করিতে দেরি করে যে—দীর্ঘসূত্র, দীর্ঘসূত্রী। কুজন নাই যেখানে—নিম্বুজ। কোনোকিছুর চারিদিকে আবর্তন—পরিক্রমা। কর্তব্যে উদাসীনতা—প্রমাদ। কনুই হইতে মণিবন্ধ পর্যন্ত অংশ—প্রকোষ্ঠ। কথা দিয়া যিনি কথা রাখেন—বাষ্ঠি। কোথাও উঁচু, কোথাও নীচু—বন্ধুর, উচ্চাৰ্চ। ক্রমশঃ শীর্ণ হইতেছে যাহা—বিশীর্ণমান। কুকুরের ডাক—বুক্কন। কবিতায় কবির পরিজ্ঞাপক উক্তি—ভণিতা। ক্ষুদ্রাকৃতি মানব—মাণবক। কাঁদিয়াছে এমন—রুদিত। কনুই হইতে বদ্ধমুষ্টি হস্তাগ্র পর্যন্ত পরিমাণ—রত্নি। কর্ণের নিম্নভাগের কোমলাংশ—লতি। কচি ঘাসে ঢাকা জমি—শাম্বল।

খেলার পুতুল—ক্রীড়নক। খে (আকাশে) চরে যে—খেচর। খ (আকাশ) দ্যুতিময় করে যে—খদ্যোত। খুশী করিবার ইচ্ছা—প্রিয়চিকীর্ষা।

গানের ধুয়া ও আভোগের মধ্যবর্তী অংশ—অন্তরা। গুরুগৃহে বাস করে যে—অন্তেবাসী। গৃহস্থ হইয়াও যিনি গৃহাদিতে মমত্ববুদ্ধিশূন্য—অনিকেত। গাঢ় (অথবা ঈষৎ) লাল—-আরক্ত। গন্ধদ্রব্যদ্বারা বিলেপন—উদ্বর্তন। গমন করিতে ইচ্ছুক—গন্তুকাম। গণপতির উপাসক—গাণপত্য। গণ্ডারের মেরুদণ্ডে (গাণ্ডী প্রস্তুত ধনু—গাণ্ডীব। গাণ্ডীব ধনু যাঁহার—গাণ্ডীবধন্বা। গাণ্ডীব ধরেন যিনি—গাণ্ডীবধারী। গাণ্ডীব আছে যাঁহার—গাণ্ডীবী। গুরুর মতো—গুরুতুল্য। গঙ্গার পুত্র—গাঙ্গেয়। গ্রন্থ রচনা করেন যিনি—গ্রন্থকার। গণিতশাস্ত্র জানেন যিনি—গাণিতিক। গদ্যপদ্যময় রচনা—চম্পু। গুরুর দোষ আচ্ছাদন করে যে-ছাত্র। গমন করিতে পারে যাহা—জঙ্গম। গোপন করিবার ইচ্ছা—জুঘুক্ষা। গমন করিবার ইচ্ছা—জিগমিষা। গ্রহণ করিবার ইচ্ছা—জিক্ষা। গুণ না দেখিয়া কেবল দোষই দেখে যে—দোষৈকদর্শী। গানের ধুয়ার পুনরাবৃত্তি-দোহারকি। গ্রন্থাদির টীকা—দীপিকা। গো-দহন করে যে কন্যা-দুহিতা। গমন করে না যে—নগ। গভীর রজনী—নিশীথ। গ্রন্থশেষে কবিনাম ও রচনাকালের উল্লেখ—পুষ্পিকা। গ্রন্থাদির অধ্যায়—স্কন্ধ। গাঢ়বন্ধ চতুর্দশপদী কবিতা-বিশেষ—সনেট।

ঘুরিতেছে যাহা—ঘূর্ণমান, ঘূর্ণায়মান। ঘোরানো হইতেছে যাহাকে—ঘূর্ণমান। ঘৃণার উদ্রেক করে যে—ঘৃণাকর। ঘোষের সন্তান—ঘোষজা। ঘোষের স্ত্রী—ঘোষজায়া। ঘ্রাণের যোগ্য—ম্রেয়, ঘ্রাতব্য। ঘুমাইতেছে যে—ঘুমন্ত। ঘন বা জমাট হইয়াছে যাহা—ঘনীভূত। ঘৃণার যোগ্য—ঘৃণ্য। ঘৃণা করা হইয়াছে এমন—ঘৃণিত। ঘৃণার সহিত বর্তমান—সঘৃণ।

চিন্তা করা যায় না যাহা—অচিন্ত্য, অচিন্তনীয়। চতুরঙ্গ সেনাবিশিষ্ট বাহিনী—অক্ষৌহিণী। চোখের কোণ–অপাঙ্গ। চকচক করার ভাব—চাকচক্য। চিবাইয়া খাইতে হয় যাহা—চর্ব্য। চুষিয়া খাইতে হয় যাহা—চূষ্য। চোষা হইয়াছে যাহা—চুষিত। চীনদেশীয় রেশমী বস্ত্র—চীনাংশুক। চক্ষে দেখা যায় যাহা চাক্ষুষ চিরকাল মনে রাখিবার যোগ্য—চিরস্মরণীয়। চৈত্র মাসের ফসল-চৈতালি। চলিতেছে যাহা—চলমান, চলিষ্ণু, চলন্ত। চিরকাল ধরিয়া চলিতেছে যাহা—চিরন্তন (স্ত্রীলিঙ্গে চিরন্তনী)। চিরকাল কাজ করিতেছে তো করিতেছেই—চিরক্রিয়। চারিখানি চালাযুক্ত ঘর—চৌরী। চৌত্রিশ অক্ষরের অনুপ্রাসে রচিত দেবস্তব—চৌতিশা। চিরকাল জীবিত থাকেন যিনি—চিরজীবী। চিন্তা করা উচিত এমন—চিন্তনীয়। চর্ম দ্বারা দ্রব্য তৈরি করে যে—চর্মকার। চাঁদোয়াঢাকা স্থান—মণ্ডপ। চন্দ্র সূর্য যতকাল থাকিবে ততকাল—যাবচ্চন্দ্রদিবাকর। চর্বিত খাদ্যদ্রব্য পুনরায় চর্বণ—রোমন্থন। চতুর্দিকে দ্বারযুক্ত প্রাসাদ—সর্বতোভদ্র। চমৎকার সাদৃশ্য—সৌসাদৃশ্য।

ছোটোছোটো ডালপালাযুক্ত ক্ষুদ্র গাছ—ক্ষুপ। ছাত্রের মতো—ছাত্রতুল্য। ছুতারের কাজ—তক্ষণ। ছিদ্রপথে আগত আলোকরশ্মির দ্বারা দৃষ্ট বাতাসে ভাসন্ত ধূলিকণা—এসরেণু। ছায়াময় স্থান—প্রচ্ছায়। ছাদের উপরিস্থ গৃহ—বলভি। ছয়টি মাতার সন্তান—যাণ্মাতুর। ছয়মাস অন্তর-অন্তর ঘটে—যাণ্মাসিক।

জানা যায় না যাহা—অজ্ঞেয়। জানা যায় নাই যাহা—অজ্ঞাত। জ্বলন্ত অঙ্গারের চক্রবৎ ঘূর্ণনে সৃষ্ট অগ্নিবলয়—অলাতচক্র। জলময় স্থান—অনূপ। জ্ঞান নাই যাহার—অজ্ঞান। জরা নাই যাহার—অজর। জানু পর্যন্ত—আজানু। জানু পর্যন্ত লম্বিত—আজানুলম্বিত। জল ও স্থল উভয় স্থানেই চরে যে—উভচর। জীবনসংগ্রামে টিকিয়া থাকা—-উদ্বর্তন। জ্যোৎস্নাপানকারী পক্ষী—চকোর। জহ্নুর কন্যা—জাহ্নবী। জনকরাজার কন্যা—জানকী। জলাশয়ে নির্মিত গৃহ-জলটুঙি। জন্মিতেছে এমন—জায়মান। জল দেখিলেই রোগী ভয় পায় যে রোগে—জলাতঙ্ক। জীবনধারণের জন্য অবলম্বিত পেশা—জীবিকা। জায়ার অর্থে জীবনধারণ করে যে—জায়াজীব। জয়সূচক উৎসব—জয়ন্তী। জয় করা হইয়াছে এমন—জিত। জীবিত থাকিবার ইচ্ছা—-জিজীবিষা। জীবিত থাকিতে ইচ্ছুক—-জিজীবিষু। জানিবার ইচ্ছা –– জিজ্ঞাসা। জানিতে ইচ্ছুক—-জিজ্ঞাসু। জয় করিবার বাসনা—জিগীষা। জয় করিতে ইচ্ছুক জিগীষু। জলে চরে যে—জলচর। জগৎ-সম্পৰ্কীয়—জাগতিক। জীবিত আছে এমন—জীবন্ত। জানা হইয়াছে যাহা—জ্ঞাত। জানা উচিত—জ্ঞেয়। জয় করিবার যোগ্য—জেয়, জেতব্য। জলে ডুবিয়া নিমজ্জিত বস্তু উদ্ধার করে যে-ডুবুরি, ডুবারি। জরা নাই যাঁহার—নির্জর, অজর। জ্যেষ্ঠ অবিবাহিত থাকিতে যে কনিষ্ঠ বিবাহ করে—পরিবেত্তা। অনুরূপ বিবাহ—পরিবেদন। অনুরূপ বিবাহের পুরোহিত—পরিকর্তা।

ঝাড়ামোছা হয় যাহার দ্বারা-ঝাড়ন। টাট্টুঘোড়ায় টানা দুই চাকার গাড়ি—টাঙ্গা। ঠাকুরের ভাব—-ঠাকুরালি। ডিহির শাসনকর্তা–ডিহিদার। ডুবিতেছে যাহা—ডুবন্ত। ঢেউয়ের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দ—ছলচ্ছল। ঢেঁকিতে ধান ভানিয়া জীবিকানির্বাহ করে যে—ভারানী।

তোষামোদ করিবার জন্য কাহারও কাছে যাওয়া—উপসর্পণ। তর্কাতর্কির কচকচ শব্দ—কচকচি। তন্ত্রী ছাড়া বীণার সমগ্র অবয়ব—কোলম্বক। তণ্ডুমুনি-প্রবর্তিত পুরুষের উদ্দাম নৃত্য—তাণ্ডব। তড়িৎ হইতে উৎপন্ন—তাড়িত। তস্করের কাজ—তাস্কর্য। তরিতে (ত্রাণ পাইতে) ইচ্ছুক—তিতীর্ষ। তীরনিক্ষেপে ওস্তাদ—তীরন্দাজ। ত্বরায় গমন করে যে—তুরগ, তুরঙ্গ, তুরঙ্গম। তিমিকেও গিলিয়া ফেলে এমন জীব—তিমিঙ্গিল। তিল-তিল করিয়া আহৃত সৌন্দর্যের পুঞ্জীভূত প্রতিমা—তিলোত্তমা। তাহার সদৃশ—তাদৃশ। ত্যাগ করা হইতেছে যাহাকে—-ত্যজ্যমান। তিনভাগের একভাগ—তেহাই। তিনটি নদীমুখের মিলনস্থল—তেমোহানা। তোমার সদৃশ—ত্বাদৃশ। তাঁতের মাকু—প্রবাণী। তৃষ্ণার সঙ্গে—সতৃষ্ণ। ত্বরার সহিত—সত্বর। তরল অথচ গাঢ়—সান্দ্র। তৃণাদির গুচ্ছ—স্তম্ব।

দ্বিতীয় নাই যাহার—অদ্বিতীয়। দার পরিগ্রহ করেন নাই যিনি—অকৃতদার, অকৃতোদ্বাহ। দিনের শেষ ভাগ—অপরাহ্ণ। দশ-বারোবৎসর বয়স্কা বালিকা—অকুমারী। দক্ষিণ দিক্—অবাচী। দেবত্বপ্রাপ্ত মনুষ্যবিশেষ-ঋভু। দিনে একবারমাত্র আহার করেন যিনি—একাহারী। দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণ গোধূলি। দেবমন্দির ও নাটমন্দিরের মধ্যবর্তী স্থান—জগমোহন। দাবি করিবার নির্দিষ্ট সময় উতরাইয়া যাওয়া—তামাদি। দক্ষ প্রজাপতির কন্যা—দাক্ষায়ণী। দিতে হইবে—দেয়। দড়ির মতো লম্বা দাগ—দগড়া. দাগড়া। দুরবস্থায় পড়িয়াছেন যিনি—দুরবস্তু। দূরের ঘটনাও যিনি দেখিতে পান—দূরদর্শী। দেশের প্রতি যাঁহার প্রেম আছে—দেশপ্রেমিক। দুর্ভাবনা করিতেছে যে—দুর্মনায়মান। দুষ্কর্ম করে যে—দুষ্কৃতী, দুষ্কর্মকারী। দোহনের যোগ্য—দুহ্য। দোহন করা হইতেছে যাহাকে—দুহ্যমানা। দগ্ধ হইয়াছে যাহা—দগ্ধীভূত। দূর করা হইয়াছে যাহা—দূরীকৃত। দানের ইচ্ছা—দিৎসা। দুই পর্বতের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি—দ্রোণি। দুরাত্মার কাজ—দৌরাত্ম্য। দুইদিকের হার (অনুপাত) সমান যাহার–দোহারা দুই পুত্রের জননী—দ্বিপুত্রিকা। দুই মাতার সন্তান—দ্বৈমাতুর। দান করা উচিত যাহা—দাতব্য। দেখা উচিত যাহা–দ্রষ্টব্য, দর্শনীয়। দেখিবার ইচ্ছা—দিক্ষা। দেখিতে ইচ্ছুক—দিদৃক্ষু। দুইপ্রকার অর্থ যাহার দ্ব্যর্থক, দ্ব্যর্থ। দুইবার জন্ম যাহার—দ্বিজ। দুই রথীর মধ্যে যে যুদ্ধ—দ্বৈরথ। দূতের কাজ—দৌত্য। দূরস্থিত বস্তু স্পষ্টভাবে দেখার বৈজ্ঞানিক যন্ত্র—দূরবীক্ষণ। দ্রোণের পুত্র—দ্রৌণি। দ্রুপদের কন্যা–দ্রৌপদী। দেখিতে না দেখিতে চুরি করে যে—দেখচোর। দেবতা হইয়াও মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি—দেবর্ষি। দেবতাদের শত্রু—দেবারি। দুইয়ের সত্তা—দ্বৈত। দুইটি অণুর সমবায়ে গঠিত—দ্ব্যণুক। দুইদিন অন্তর ঘটে এমন—দ্ব্যাহিক। দূতীর কাজ—দূতীয়ালি। দ্রুতগতিতে গমন করে যে—দ্রুতগামী। দেবতাকে জয় করিয়াছেন যিনি—দেবজিৎ। দর্শন করার যোগ্য—দর্শনীয়। দিবা করে যে দিবাকর। দ্রব (তরল) হইয়াছে যাহা—দ্রবীভূত। দয়া নাই যাহার—নির্দয়। দেবতাকে নিবেদনের উপচার—নৈবেদ্য। দ্বিতীয়বার বিবাহিতা নারী–পুনর্ভূ। দেবতা বা মান্য ব্যক্তিকে দক্ষিণে রাখিয়া বৃত্তাকারে পরিক্রমা—প্রদক্ষিণ। দুগ্ধবতী গাভী—পয়স্বিনী। দুইটি বা তদূর্ধ্ব তলবিশিষ্ট অট্টালিকা—বালাখানা। দরজার চৌকাঠের দুই পাশের কাঠ—বাজু। দুঃখবেদনায় ভারাক্রান্ত-বিধুর। দিব্য আবেশের প্রভাবে বক্তৃতাকারী—বক্তার। দুইপার্শ্বে বৃক্ষশ্রেণীযুক্ত পথ—বীথি। দত্ত উদ্‌গত হয় নাই এমন হস্তিশিশু—মাকনা। দমন করে যে—শময়িতা। দুইটি হস্তই যাহার সমান দক্ষতায় চলে—সব্যসাচী।

ধনুকে শরযোজনা—অধিরোপণ। ধনুকের ছিলা—জ্যা। ধনুকের ছিলার শব্দ—টঙ্কার। ধনিগৃহের ছাদযুক্ত তোরণ—দেহলী। ধন জয় করেন যিনি ধনঞ্জয়। ধন দেন যে দেবী-ধনদা। ধনুর্বিদ্যায় নিপুণ যিনি-ধানুস্ক। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র—ধার্তরাষ্ট্র। ধুনা জ্বালাইবার পাত্র—ধুনাচি। ধূম ছড়াইতেছে এমন—ধূমায়মান। ধ্যানের যোগ্য—ধ্যেয়। ধ্যান করেন যিনি-ধ্যাতা। ধাতু প্রস্তর প্রভৃতির দ্বারা মূর্তি-নির্মাণকারী-ভাস্কর।

নিবারণ করা যায় না যাহা—অনিবার্য। ন্যায় নয় যাহা অন্যায়। নাম জানা যায় নাই যাহার—-অজ্ঞাতনামা। নিকেতন নাই যাহার—অনিকেত, অনিকেতন। নীলবর্ণের পদ্ম-ইন্দীবর, কুবলয়। নিতান্ত প্রয়োজনেও ব্যয়কুণ্ঠ যিনি—কৃপণ নারিকেল খেজুর প্রভৃতির নৌকাকৃতি পুষ্পকোষ—চুমরি। নিদ্রাকে জয় করিয়াছেন যিনি-জিতমিত্র। নিন্দা করিবার বাসনা-জুগুপ্সা। নিন্দা করিতে ইচ্ছুক—জুগু। নদী ও বৃষ্টির জলে উর্বর দেশ—দ্বৈমাতৃক। নিজেকে ধন্য মনে করে যে—ধন্যান্য। নিজেকে ধন্য মনে করার ভাব—ধন্যম্মন্যতা। নবপ্রসূতা গাভী—ধেনু। নৌ চলাচলের যোগ্য—নাব্য। ন্যায়শাস্ত্র জানেন যিনি—নৈয়ায়িক। নীরে জন্ম যাহার—নীরজ। নীর দান করে যে—নীরদ। নির্মাণের ইচ্ছা—নির্মিৎসা। নির্দোষের ভাব—নির্দোষতা। নিতান্ত দগ্ধ করে যে—নিদাঘ। নদী মাতা যাহার–নদীমাতৃক। নির্মিত হইতেছে যাহা –নির্মীয়মাণ। নিঃশেষে পান করা হইয়াছে যাহা নিপীত। নিন্দনীয় নয় যাহা—নিরবদ্য, অনবদ্য। নভঃ (আকাশ)-এ বিচরণ করে যে—নভশ্চর। নিশাকালে (রাত্রিতে) বিচরণ করে যে– নিশাচর। নিন্দার যোগ্য—নিন্দাহ, নিন্দনীয়। নিশা (রাত্রি) করে যে-নিশাকর। নূতন অবস্থায় পুনরায় পরিণত করা-নবীকরণ। নূপুরের ধ্বনি—নিক্কণ। নিমজ্জিত হইতেছে যাহা—নিমজ্জমান। নৃতত্ত্বের বিষয় জানেন যিনি-নৃতাত্ত্বিক। নিজেকে পণ্ডিত মনে করেন যিনি—পণ্ডিতম্মন্য। নিজেকে পণ্ডিত মনে করার ভাব—পণ্ডিতম্মন্যতা। নানা বিষয়ে অল্প ও অগভীর জ্ঞানের অধিকারী—পল্লবগ্রাহী। নানা বিষয়ে অল্প ও অগভীর জ্ঞান—পল্লবগ্রাহিতা। নদ্যাদির বালুকাময় তীরের যতদূর জোয়ারের জল উঠিয়া থাকে—পুলিন, সৈকত। নদীর ধারে ধারে বন্যারোধের জন্য ছোটো ছোটো বাঁধ—পাতারি। নিয়মিত সময়ের মধ্যেই গ্রন্থপাঠের সমাপ্তি—পারায়ণ। নিজেই পতিনির্বাচন করে যে নারী—পতিংবরা, স্বয়ংবরা। নিজের রঙ লুকায় যে—বর্ণচোরা। নারীর কটিভূষণ চন্দ্রহার ইত্যাদি—রশনা। নারীর লীলায়িত নৃত্য—লাস্য। নাভি পর্যন্ত লম্বিত হার—ললন্তিকা। নিজেকে শিক্ষিত মনে করেন যিনি—শিক্ষিতম্মন্য। নিজেকে হীন মনে করা হীনম্মন্যতা।

পূর্বে যাহা শোনা যায় নাই—অশ্রুতপূর্ব। পূর্বে ঘটে নাই যাহা—অভূতপূর্ব। পূর্বে অনুভূত হয় নাই যাহা—অননুভূতপূর্ব। প্রকৃত কুমার—অকুমার। পরের গুণে দোষারোপ করে যে—অসূয়ক। পানের অযোগ্য যাহা—অপেয়। পতিও নাই, পুত্রও নাই যে নারীর—অবীরা। পরদ্রব্য হরণ না করা—অস্তেয়। পরে উদিত—অনূদিত। প্রতিবিধান করা যায় না যাহার—অপ্রতিবিধেয়। পূর্বে অধ্যাপক ছিলেন যিনি-অধ্যাপকচর। পিতার মৃত্যুর পর যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় অনুপিতৃমরণজ, উপরতপিতৃজ। পুত্রকন্যা নাই এমন মা—অপুত্রকা। পরদোষ অন্য কাহাকেও না বলা—অপৈশুন, অপৈশুন্য। পান করা হয় নাই যাহা অপীত। প্রথমা স্ত্রী বিদ্যমানে দ্বিতীয়বার বিবাহকারী—অধিবেত্তা। ওইরূপ জীবিতা প্রথমা স্ত্রী—অধিবিন্না। ওইরূপ বিবাহ–অধিবেদন। পূর্বে চিন্তা করা হয় নাই যাহা—অচিন্তিতপূর্ব। পরাভূত করা যায় না যাহাকে—অপরাজেয়। পৃথিবী ও পার্থিব সবকিছুর জ্ঞান—অপরাবিদ্যা। পাশের বা সামনের কুঞ্চিত কেশদাম অলক। প্রিয়জনের ব্যবহারে যে মনোবেদনা-অভিমান। পূর্বে দৃষ্ট হয় নাই যাহা—অদৃষ্টপূর্ব। পূর্বে সৃষ্ট হয় নাই যাহা—অসৃষ্টপূর্ব। প্রকাশের যোগ্য নহে যাহা—অপ্রকাশ্য। পরিচয় জানা যায় নাই যাহার—অজ্ঞাত পরিচয়। পা হইতে মাথা পর্যন্ত—আপাদমস্তক। প্রথমে রমণীয় কিন্তু পরে সেরূপ নহে যাহা—আপাতরম্য। প্রথম-প্রথম মধুর অথচ পরে সেরূপ নয় যাহা—আপাতমধুর। প্রবল ভাবাবেগ-উচ্ছ্বাস। পদ্মতুল্য নেত্রবিশিষ্ট—উৎপলাক্ষ। প্রস্তুত না হইয়াই যিনি বক্তৃতা করেন—উপস্থিতবক্তা, তাৎক্ষণিকবক্তা। পার্বতপথ যেখানে নিম্নমুখী হইয়াছে—উতরাই। পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশে নিবেদিত ভোজ্যাদি—কব্য। পাখির কলরব—কাকলি। পুঁথি রাখার জন্য বেতের তৈয়ারী ঝাঁপি—খুঙ্গি। পরম গুণসম্পন্ন পুরুষ—গুণাকর। পেচকের চিৎকার—ঘুৎকার। পারঘাটের তত্ত্বাবধায়ক-ঘাটোয়াল। প্রতিদান দেওয়া যায় না এমনভাবে উপকৃত চিরক্রীত। পূর্বজন্মের কথা স্মরণ আছে যাহার—জাতিস্মর। প্রথম দর্শনেই চোখের তারায় তারায় যে মিত্রতা—তারামৈত্রী। প্রতিদিন ঘটে বা প্রকাশিত হয় যাহা দৈনিক। প্রতীক নাই যাহার—নিষ্প্রতীক। পীরের কবর ও স্মৃতিমন্দির—দরগা। পিতৃগণের উদ্দেশে দত্ত পিণ্ড জলাদি—নিরাজ। প্রবল বাতাসের পরস্পর সংঘাতধ্বনি—নির্ঘাত (বি)। পথনির্মাণের জন্য মাটি কাটায় পথিপার্শ্বস্থ খাত—নয়ানজুলি। পান করা যায় যাহা–পেয়। পুত্রকামনায় যজ্ঞ—পুত্রেষ্টি। পূজা পাইবার যোগ্য—-পূজ্য, পূজনীয়, পূজার্হ। প্রমাণ করেন যিনি—প্রমাতা। পারে যাইবার কড়ি—পারানি। পা দিয়া পান করে যে—পাদপ। পূজা করা হইয়াছে যাঁহার—পূজিত। পূজা করা হইতেছে যাঁহার—পূজ্যমান। পর্বতের সম্বন্ধে—পার্বত, পার্বতীয়। পতিপুত্রবতী নারী—পুরন্ধ্রী, বীরা। পশমদ্বারা প্রস্তুত—পশমী। পলায়ন করিতেছে যে-পলায়মান। পরিবর্তন হইতেছে যাহার—পরিবর্তমান॥ পরমপুরুষকে জানা যায় যে বিদ্যায়—পরাবিদ্যা। পুষ্পচন্দনাদির পিষ্ট সুমিষ্ট গন্ধ—পরিমল। পৃষ্ঠ (পশ্চাৎ) হইতে যিনি পোষকতা করেন—পৃষ্ঠপোষক। প্রভাতকালীন স্তব-প্রভাতী। পূর্ব দিক্—প্রাচী। পৃথুর শাসিত ভূমিখণ্ড—পৃথ্বী। পূর্বপূর্ব জন্মের কৃতকর্মের ফল-প্রাক্তন। প্রজ্ঞাবতী নারী—প্রাজ্ঞা। প্রাজ্ঞ জনের স্ত্রী—প্রাজ্ঞী। পরমপদে স্থিত—পরমেষ্ঠী। পশুপৃষ্ঠে বসিবার আসন—পর্যাণ, পালান। পরের প্রতি মিথ্যা দোষারোপ-পৈশুন, পৈশুন্য। প্রিয়বাক্য বলে যে নারী—প্রিয়ংবদা। পিধানে রক্ষিত—পিহিত। পরিব্রাজকের জীবন বা বৃত্তি—প্রব্রজ্যা, পরিব্রজ্যা। পীড়িত হইতেছে যে—পীড্যমান। প্রীত করা হইতেছে যাহাকে—প্রীয়মাণ। প্রতিবিধান করিবার ইচ্ছা—প্রতিবিধিৎসা। পথচলার খরচ—পাথেয়। পূর্ব বৎসরের আগের বৎসর—পরারি। পুরাকালের বিষয় জানেন যিনি—পুরাতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক। প্রণাম করিতে করিতে প্রদক্ষিণ—প্রদক্ষিণা। পরের মুখ চাহিয়া থাকে যে—পরমুখাপেক্ষী। পট আঁকেন যিনি—পটুয়া। পণ্যদ্রব্য জীবিকা যাহার—পণ্যাজীব। পূর্বদিবসের রাত্রি—পূর্বরাত্রি। প্রকৃষ্ট যে জ্ঞান—প্রজ্ঞা। প্রণামের যোগ্য—প্রণম্য। পরিত্যাগ করা হইয়াছে যাহাকে—পরিত্যক্ত। পরিত্যাগ করা উচিত যাহাকে—পরিত্যাজ্য। প্রিয় কার্য করিতে ইচ্ছুক—প্রিয়চিকীর্ষু। পাইতে ইচ্ছুক—প্রেপ্স। পঞ্চ অগ্নির মধ্যে তপস্যাকারিণী—পঞ্চতপা। পশ্চাতে গমন করে যে—পশ্চাদ্‌গামী। পঙ্কে জন্মে যাহা–পঙ্কজ। প্রকাশিত হইবে এমন বা প্রকাশ করিবার যোগ্য যাহা—প্রকাশ্য। পান করিবার ইচ্ছা—পিপাসা। পান করিতে ইচ্ছুক—পিপাসু। পড়িতেছে যাহা—পড়ন্ত। পিতার ভগিনী—পিতৃস্বসা। পুরুষের ভাব-পুরুষালী। পার্শ্বে (পাশাপাশি) বিচরণ করে যে—পার্শ্বচর। পিতার মতো কিছুটা—পিতৃকল্প। পরলোক সম্বন্ধীয়-পারলৌকিক, পারত্রিক। প্রবন্ধ-সম্বন্ধীয় বা প্রবন্ধের রচয়িতা—প্রাবন্ধিক। পুষ্টিদান করে যে—পুষ্টিকর। প্রশ্ন করার যোগ্য—প্রষ্টব্য। প্রশংসা করিবার যোগ্য—প্ৰশংসার্হ, প্রশংসনীয়। প্রস্তরে পরিণত হওয়া—প্রস্তরীভবন। পাওয়ার যোগ্য—প্রাপ্তব্য। প্রয়োগ করা হইতেছে এমন—প্রযুজ্যমান। পুণ্যকর্মের ফলশ্রবণ—ফলশ্রুতি। প্রচুর ফলমণ্ডিত—ফলাঢ্য। পায়রা প্রভৃতি থাকিবার খোপ—বিটঙ্ক। পাখি ধরিবার ফাঁদ—বিটঙ্ক। পণ্ডিতের তুল্য—বিদ্বৎকল্প। প্রহরীদের পর্যায়ক্রমে শয়ন-বিশায়। প্রবেশের ইচ্ছা—বিবিক্ষা। প্রবেশে ইচ্ছুক—বিবিষ্ণু। পুরুষের কর্ণভূষণ—বীরবৌলি। পশুপক্ষীর বন্ধনরজ্জু—বিতংস। পূর্বে বিদ্যমান ছিল যাহা—ভূতপূর্ব। পাতালের গঙ্গা—ভোগবতী। পরিব্রাজকের ভিক্ষা—মাধুকরী। প্রধান কেরানী মুৎসুদ্দী। পুরুষানুক্রমে ভোগ্য—মৌরুসী। পুনঃপুনঃ কাঁদিতেছে এমন রোরুদ্যমান। পুষ্করিণীর মধ্যস্থলের গভীরতা—রই। প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়াছে এমন—লবেজান। প্রথমে শুইয়াছিলেন, পরে উঠিয়াছেন—শরিতোত্থিত। পায়ের শোথরোগ—শ্লীপদ। পুরুষের কটিবন্ধ—সারসন। প্রত্যুপকার-নিরপেক্ষ হিতকারী—সুহৃদ। পরগৃহে বাস করিয়া শিল্পকার্যদ্বারা জীবিকানির্বাহ করে যে নারী—সৈরিন্ধ্রী

ফিকে লাল—কষায়। ফিকে লাল রঙবিশিষ্ট—কাষায়। ফুলের সাজি—করগুক। ফেলিয়া দেওয়া হইতেছে যাহাকে—পাত্যমান। ফল প্রসব করে যাহা—ফলপ্রসূ। ফেলিয়া দিবার যোগ্য—ফেলনা। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা—ফাল্গুনী। ফুটিতেছে যাহা—ফুটন্ত। ফুল না হইয়া ফল হয় যে বৃক্ষে―বনস্পতি।

বাক্যে যাহা প্রকাশ করা যায় না—অনির্বচনীয়। বাক্যমনের অগোচর যিনি—অবাত্মনসগোচর। বাগদত্তা হওয়া সত্ত্বেও যে কন্যার বিবাহ অন্য পুরুষের সঙ্গে হয় (যে কন্যার ভাবী স্বামী মৃত, অথবা যে কন্যা ভাবী স্বামী-কর্তৃক প্রত্যাখ্যাতা)—অন্যপূর্বা। বায়ুর অনুকূল-অনুবাত। বিদেশে থাকেন না যিনি—অপ্রবাসী। বিনা আয়াসে যাহা লাভ করা যায়—অনায়াসলভ্য। বলিবার যোগ্য নয় যাহা—অবক্তব্য। বোধবুদ্ধি নাই যাহার—অবোধ। বিনা বেতনের কাজ—অবৈতনিক। বস্তু রাখিবার পাত্র–আধার। বিলক্ষণরূপে সেচন—আসেচন। বলা হইয়াছে যাহা—-উক্ত। বাহিত হইতেছে যাহা—উহ্যমান। বিষয়সম্পত্তি হইতে আয়—উপস্বত্ব। বক্ষ-সংরক্ষক বর্ম—উরস্ত্রাণ, উর”। বেলাভূমিকে অতিক্রম করিয়াছে যে—উদ্বেল। বাস্তু হইতে উৎখাত—উদ্বাস্তু। বুকে ভর দিয়া চলে যে—উরোগামী, উরগ, উরঙ্গ, উরঙ্গম। বাতাসে উবিয়া যায় এমন—উদ্বায়ী। বোধের উদ্রেক করে যে—উদ্‌বোধক। বলা হয় নাই অথচ অনুমান করা যায় যাহা উহ্য। বাঞ্ছিতফল দান করে যে বৃক্ষ—কল্পবৃক্ষ। ব্যাঘ্রের চর্ম—কৃত্তি। বিষ্ণুর গদা—কৌমোদকী। বায়ুসহযোগে শব্দকারী বাঁশ—কীচক। বৈষ্ণবের ব্যবহার্য তিলকমাটি—গোপীচন্দন। বয়সে সকলের বড়ো—জ্যেষ্ঠ। বীজবপনের উপযুক্ত সময় জো। বার বার জ্বলিতেছে যাহা—জাজ্বল্যমান। বার বার দীপ্তি পাইতেছে যাহা—দেদীপ্যমান। বাহ্য বিষয়ের জ্ঞান জন্মে যে ইন্দ্রিয়দ্বারা—জ্ঞানেন্দ্রিয়। বীণার ধ্বনি—ঝঙ্কার। বারংবার দুলিতেছে যাহা—দোদুল্যমান। বৎসরে দুইবার ফসল ফলে যে জমিতে—দোফসলী, দোজমি। বৎসরে দুইবার ফলে যে গাছ—দোফলা। বৃহৎ পুষ্করিণী—দীর্ঘিকা। বাক্যমধ্যে কর্তা কর্ম ক্রিয়া প্রভৃতির অস্থানে প্রয়োগ—দুরন্বয়। বিশেষ ব্যুৎপন্ন—নিষ্ণাত বিকল্প নাই যাহার—নির্বিকল্প। বীণার বা নূপুরের ধ্বনি—নিক্বণ। বেহাত হওয়া বিষয়ের পুনঃপ্রাপ্তি—-নষ্টোদ্ধার। বেদবিহিত অনুষ্ঠান করে না যে—নিরগ্নি। বিদেশে স্থায়িভাবে বসবাসের জন্য যাত্রা—প্রবসন। বায়ুর প্রতিকূলে—প্রতিবাত। বিশেষভাবে প্রতিপালন—পরিপোষণ। বামপদ প্রসারিত ও দক্ষিণপদ সঙ্কুচিত করিয়া শিকারে বসা—প্রত্যালীঢ়। বাঞ্ছিত ফল দেয় যে—ফলপ্রদ। বয়সের তুল্য সখা—বয়স্য। বাষ্পে রূপান্তরিত হইয়াছে যাহা—বাষ্পীভূত। বীর প্রসব করেন যিনি—বীরপ্রসূ। বিজ্ঞান জানেন যিনি—বৈজ্ঞানিক। বেদান্ত জানেন যিনি-বৈদান্তিক। বুদ্ধদেবের উপাসক—বৌদ্ধ। বিদ্যালাভই উদ্দেশ্য যাহার বিদ্যার্থী। বেদের সম্বন্ধে—বৈদিক। বেদ জানেন যিনি বেদবিদ, বেদজ্ঞ। ব্যাপ্ত হইবার ইচ্ছা—বীপ্সা। বিধান করিতে ইচ্ছুক—বিধিৎসু। বিধানসভার সদস্য—বিধায়ক। ব্যাঘ্রচর্মে আচ্ছাদিত—বৈয়াস্ত্র। বৎসের প্রতি গভীর স্নেহবাৎসল্য। বিশ্বনরের জঠরে বিরাজিত অগ্নি—বৈশ্বানর। বৃদ্ধি (সুদ)-দ্বারা জীবিকানির্বাহ করে যে—বৃদ্ধিজীবী। বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ—বিপ্র। ব্যাপ্ত হইয়া বিরাজ করেন যিনি—বিভু। বিজয়লাভে ইচ্ছা—বিজিগীষা। বিজয়লাভে ইচ্ছুক—বিজিগীষু। বাহিত হইতেছে যাহা—বাহ্যমান। বিহায়সে (আকাশে) বিহার করে যে—বিহগ, বিহঙ্গ, বিহঙ্গম। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা যাঁহার জীবিকা—বুদ্ধিজীবী। বিষ্ণুর উপাসক—বৈষ্ণব। বিশেষভাবে ঈক্ষণ করিতেছেন যিনি—বীক্ষমাণ। বিশেষভাবে ঈক্ষণ করা হইতেছে যে নারীকে—বীক্ষ্যমাণা। বলা হইবে যাহা—বক্ষ্যমাণ। বহু দেখিয়াছেন যিনি—বহুদর্শী, ভূয়োদশী। বালকের অহিত–বালাই। বাসের ইচ্ছা—বিবৎসা। বাছুর মারা গিয়াছে যে গাভীর-ৎিসা। ব্যাসের পুত্র—বৈয়াসকি। ব্যাসের রচিত—বৈয়াসিক। ব্যাকরণ জানেন যিনি—বৈয়াকরণ। বিগতা পত্নী যাহার–বিপত্নীক। বলিতে ইচ্ছা—বিবক্ষা। বলিতে ইচ্ছুক—বিবক্ষু। বিবাদ করিতেছে এমন—বিবদমান। বমি করিবার ইচ্ছা—বিবমিষা। বর্ণাশ্রম ধর্মের তৃতীয় আশ্রম বানপ্রস্থ। বিশেষভাবে বিবেচনা—বিমর্শ। বিশেষ বিবেচনা করিয়া কাজ করেন যিনি—বিমৃশ্যকারী। বিলাপ করিতেছে যে—বিলপমান। বিপরীত ভাব—বৈপরীত্য। বিধানের যোগ্য—বিধেয়। বহন করা যায় যেটিকে—বাহ্য। বহুসন্তানবতী দুঃখিনী নারী—বালপুত্রিকা। বিশেষভাবে বিভক্ত হইতেছে এমন—বিভজ্যমান। বলিবার যোগ্য যাহা বা বলিতে হইবে এমন—বক্তব্য। বিশ্বকে জয় করিয়াছেন যিনি—বিশ্বজিৎ। বৎসর-সম্পর্কীয়—বাৎসরিক। বর্ষ-সংক্রান্ত বা প্রতি বর্ষে অনুষ্ঠেয়—বার্ষিক। ব্যবহার (আইন বা মামলা-মকদ্দমা) জীবিকা যার—ব্যবহারজীবী। ব্যবহার আজীব (জীবিকা) যাহার—ব্যবহারাজীব। বর দান করেন যে দেবী বরদা। বারি দান করে যে—বারিদ। বন্দনা করার যোগ্য—-বন্দনীয়। বরণের যোগ্য—বরণীয়। ব্যাখ্যা (বিশদ বিবরণ বা বর্ণনা) করেন যিনি—ব্যাখ্যাকার। বল (শক্তি) দান বা বৃদ্ধি করে যাহা-লকর। বৃদ্ধি পাইতেছে যাহা—বর্ধমান, বর্ধিষ্ণু। বহু দেখিয়া-শুনিয়া লব্ধ অভিজ্ঞতা—ভূয়োদর্শিতা। বেগের ক্রমিক হ্রাসপ্রাপ্তি—মন্দন। বুদ্ধদেবের সংসার ছাড়িয়া গমন—মহাভিনিষ্ক্রমণ। বিবাহকালে বরকন্যাকে প্রদত্ত ধনরত্ন—যৌতুক। বিড়ালের মিউমিউ ডাক—যীবন। বর্তমান নৃপতির জ্যেষ্ঠপুত্র ও সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারী—যুবরাজ। বিরুদ্ধ রসের সমাবেশে রসভঙ্গ—রসাভাস। বারংবার রোদন করিতেছে যে—রোরুদ্যমান। বারংবার লেহনকারী—লেলিহান। বাহিরের আদবকায়দায় দক্ষ অথচ ফাঁকিবাজ—লেফাফাদুরস্ত। বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মীসদৃশা সতত পতিসেবাপরায়ণা নারী—লক্ষ্মীশ্রীময়ী। বেদপাঠক ব্রাহ্মণ–শ্রোত্রিয়। বসন্ত ইত্যাদি রোগের টিকা হয় নাই যাহার–সোঁদা। বিকল্প আছে যাহার—সবিকল্প। সমহারে বেগের ক্রমিক বৃদ্ধিপ্রাপ্তি-সমত্বরণ।

ভিতরে সার কিছুই নাই যাহার–অন্তঃসারশূন্য। ভাবা যায় না যাহা—অভাবনীয়। ভ্রাতা নাই যাহার–অভ্রাতৃক। ভিতরে থাকিয়া গোপনে সমূহ ক্ষতিসাধন—অন্তর্ঘাত। ভ্রমপ্রমাদশূন্য মুনিবাক্য—আপ্তবাক্য। ভিক্ষুধর্মে দীক্ষা—উপসম্পদা। ভ্রূদ্বয়ের মধ্যস্থল (বা ভ্রমধ্যস্থ লোমরাজি)—কুর্চা। ভ্রমরের শব্দ—গুঞ্জন। ভিক্ষাও মেলে না যখন—দুর্ভিক্ষ। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা চতুর্থী ও শুক্লা চতুর্থীর দূষিত চন্দ্র, যেটিকে হঠাৎ দেখিয়া ফেলিলে দ্রষ্টার নামে অকারণে নিন্দা রটে—নষ্টচন্দ্র। ভগবানে যাহার বিশ্বাস নাই—নাস্তিক। ভয় নাই যাহার– নির্ভীক। ভগবান্ বিষ্ণুর শঙ্খ—পাঞ্চজন্য। ভক্ষণের ইচ্ছা—-বুভুক্ষা। ভক্ষণে ইচ্ছুক—বুভুক্ষু। ভোরে গাহিবার উপযুক্ত স্তব—ভোরাই। ভগীরথের আনীত নদী—ভাগীরথী। ভাগ পাওয়ার অধিকারী—ভাগী। ভাঙ খাইতে অভ্যস্ত—ভাঙড়। ভাতের জন্য পরের গলগ্রহ—ভাতুড়ে। ভয় দেখানো হইয়াছে এমন—ভীষিত। ভুজের সাহায্যে গমন করে যে—ভুজগ, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম। ভূমিতে চরে যে—ভূচর ভ্রাতার মতো—ভ্রাতৃতুল্য। ভিক্ষা জীবিকা যাহার–ভিক্ষাজীবী। ভাষ্য (সূত্রের ব্যাখ্যা অথবা খেলার ধারাবিবরণী) করেন যিনি-ভাষ্যকার। ভাসিতেছে যাহা—ভাসন্ত। ভস্ম হইয়াছে যাহা—ভস্মীভূত। ভিক্ষা আজীব (জীবিকা) যাহার—ভিক্ষাজীব। ভিক্ষালাভই উদ্দেশ্য যাহার—ভিক্ষার্থী। ভৃগুর পুত্ৰ ভাৰ্গৰ। ভগবান্ বিষ্ণুর ধনু—শার্স। ভ্রাতাদের পারস্পরিক প্রীতি—সৌভ্রাত্র। ভগিনীদের মধ্যে পারস্পরিক প্রীতি—সৌভাগিন্য। ভয়জনিত সত্বরতা—সংবেগ। ভগবান্ বিষ্ণুর চক্র—সুদর্শন। ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের আনন্দাংশের শক্তি—হ্লাদিনী।

মূল্য নির্ণয় করা যায় না যাহার–অমূল্য। মান্য ব্যক্তিকে সমাদরে বরণ করিবার উপচার—অর্ঘ্য। মৃত্যু নাই যাহার—অমর। মায়া (ছলনা) জানে না যে—অমায়িক। মান্য ব্যক্তির বিদায়কালে তাঁহার সঙ্গে কিছুদূর যাওয়া—অনুব্ৰজন। মর্মকে ভেদ করে যাহা—অরুন্তুদ, মর্মভেদী। মাটি ভেদ করিয়া যাহা উপরে উঠে—উদ্ভিদ। মূল রোগের আনুষঙ্গিক অন্য রোগ—উপসর্গ। মৃগয়ার জন্য প্রতীক্ষারত ব্যাধের গুপ্তস্থান—উপশয়। মৃত জীবজন্তুর দেহ যেখানে ফেলা হয়—উপশল্য। মানবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়া যিনি চারিত্রিক উৎকর্ষে দেবতাকেও অতিক্রম করেন—ঋভু। মুসলমান আসলের বিচারক কাজীর বিচারকার্য—কাজিয়ত। ময়ূরের ডাক—কেকা। মড়ার মাথার খুলি—খর্পর। ময়ূরপুচ্ছের অর্ধচন্দ্রাকার চিহ্ন—চন্দ্রক। মূল্যবান্ জিনিসপত্র রাখিবার ভাণ্ডার—তোশাখানা মূল গায়কের গানের ধুয়া ধরিয়া যে সহকারী গায়ক গান করেন—দোহার। মূল্য হইতে ছাড় দেওয়া অংশ—ধরাট। মমতা নাই যাহার–নির্মম। মান্য ব্যক্তির পা ধুইবার জল—পাদ্য। মনোহারিণী রমণী—প্রমদা। মৃত্যুকামনায় উপবাস—প্রায়োপবেশন, প্রত্যুপবেশন। মহিলাদের বেশবিন্যাস—বিচ্ছিত্তি। মাতার সপত্নী (বিরুদ্ধ মাতা)—বিমাতা। মরিতে ইচ্ছুক-মর্তুকাম। মধুপান করে যে—মধুপ মধু চুষিয়া খায় যে পাখি—মৌচুষকী। মল্লে মল্লে যুদ্ধ—মালামো। মর্মে আঘাত দেয় যাহা—মর্মঘাতী। মজুরের পারিশ্রমিক—মজুরি। ময়ূরের কণ্ঠের ন্যায় বিচিত্র বর্ণ যাহার—ময়ূরকণ্ঠী (শাড়ি)। মনুর অপত্য—মানব, মনুষ্য, মানুষ। মন্দ গতিতে গমন করে যে—মন্দগামী। মনের মধ্যে জন্ম হইয়াছে যাহার—মনোজ, মনসিজ। মনকে জয় করিয়াছেন যিনি—মনোজিৎ। মাছ ধরা যাহার জীবিকা—মৎস্যজীবী। মসি (লিখিবার কালি) জীবিকা যাহার—মসিজীবী। মণিরত্নাদি কাটিয়া পালিশ করেন যে শিল্পী—মণিকার। মিতার ভাব—মিতালি। মৃত্তিকাদ্বারা নির্মিত—মৃন্ময়। মাটি দিয়া তৈয়ারী—মেটে। মাতার ভগিনী—মাতৃস্বসা। মর্মকে ছেদন করে যাহা—মর্মচ্ছেদী। মর্মকে দহন করে যাহা—মর্মদাহী। মুষ্টির দ্বারা পরিমাপযোগ্য—মুষ্টিমেয়। মৃগ চলাচল করে যে পথে—মার্গ। মৃগয়া আজীব যাহার–মৃগাজীব। মূর্ধা যাহার উচ্চারণস্থান—মূর্ধন্য। মহুয়াফুল হইতে প্রস্তুত সুরা—মাধুকী। মধুজাত সুরা—মধ্বাসব। মন্থন করা হইতেছে যাহাকে—মথ্যমান। মন্থন করা হইয়াছে যাহাকে—মথিত। মূর্বানির্মিত ছিলা—মৌবী। মুনির ভাবে অধিষ্ঠিত—মৌনী। মনের ঐশ্বর্য—মনীষা। মনীষার অধিকারী—মনীষী। মনীষীর ভাব—মনীষিতা। মুনির ভাব—মৌন। মাথার চুল—শিরোরুহ। মন্ত্রের সহিত—সমন্ত্রক। মাসের শেষদিন—সংক্রান্তি। মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের কাছে বৃন্দা-কর্তৃক বিরহিণী শ্রীমতীর বিরহবেদন-জ্ঞাপন—সখীসংবাদ।

যাওয়া যায় না যেখানে—অগম্য। যাহাতে কেহ জানিতে না পারে এমনভাবে—অজ্ঞাতসারে। যাহার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট আর কিছুই নাই—অনুত্তম। যাহাকে বারংবার দেখিয়াও আশা মিটে না—অসেচনক। যাহার নিকট হইতে দান গ্রহণ করা যায় না—অপ্রতিগৃহ্য। নিজের ছিল না যাহা, সেটিকে নিজের করিয়া লওয়া—আত্তীকরণ, আত্মীকরণ, স্বীকরণ। কোনো কাজেই লাগে না যে গাছ—আগাছা। যিনি আসিয়াছেন—আগন্তুক। যজ্ঞীয় পায়সান্ন—চরু। যেদিকে জয় সেইদিকেই কাত হয় যে—জয়কেতে। যাহার অনুকূলে আদালত ডিক্রী দেয়—ডিক্রীদার। যাহার উপদিষ্ট জ্ঞান কার্যক্ষম হয়—তত্ত্বদর্শী। যাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করা দুঃসাধ্য—দুর্নিরীক্ষ্য। যে জমির জন্য কর দিতে হয় না—নিষ্কর, লাখেরাজ। যাহার বালকত্ব এখনও কাটে নাই—নাবালক। যে জলাশয়ে বহু পদ্ম জন্মে—পদ্মাকর। যাহার স্বামী বিদেশে থাকেন—প্রোষিতভর্তৃকা। যাহার পত্নী বিদেশে থাকেন—প্রোষিতপত্নীক। যাহার ভার্যা বিদেশে থাকেন—প্রোষিতভার্য। যাহার সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে বসিলে দোষ হয়—পক্তিদূষক। যুদ্ধে যিনি বীভৎস কার্য করেন না—-বীভৎসু (অর্জুনের নাম)। যাহার ভরণপোষণের ভার লওয়া উচিত—ভরণীয়। যাহার মৃত্যু আসন্ন—মুমূর্ষু। যে মায়ের ছেলেমেয়ে বাঁচে না—মৃতবৎসা। যজ্ঞের উপযুক্ত—মেধ্য। যতদিন জীবন থাকিবে—যাবজ্জীবন। যুদ্ধে স্থির থাকেন যিনি যুধিষ্ঠির। যাহার পরে আর কিছুই নাই—যৎপরোনাস্তি। যত্ন করিতেছে এমন—যতমান। যথার্থের ভাব—যাথার্থ্য। যে সময় হইতে বা যে সময় পর্যন্ত—যদবধি। যবের মণ্ড—যাগু। যজ্ঞসেনের কন্যা—যাজ্ঞসেনী। যাহাতে চড়িয়া যাওয়া যায়—যান। যাহারা যুদ্ধ করিতেছে—যুযুধান। যৌগিক অথচ বিশেষ একটি অর্থে সীমাবদ্ধ শব্দ—যোগরূঢ়। যোগসাধনায় মগ্ন—যোগারূঢ়। যাহার মতো ইহাকে দেখে বা ইহা দেখায়—যাদৃশ। যুদ্ধ করিতে ইচ্ছুক—যুযুৎসু। যাহা রাষ্ট্রের পরিচালনায় ছিল না, তাহাকে রাষ্ট্রের অধিকারে আনা—রাষ্ট্রীয়ীকরণ। যে দুর্দিনকে রাত্রির মতো মনে হয়—রাত্রিম্মন্য। যাহার পায়ের আঙুল পাতলা চামড়া দিয়া পরপর জোড়া—লিপ্তপাদ, লিপ্তপদ। যাহা লঘু ছিল না তাহাকে লঘু করা—লঘুকরণ যে লোকের কথা স্পষ্ট বুঝা যায় না—লোহল। যাহা শোনানো হইয়াছে—শ্রাবিত। যাহা শোনা হইতেছে—শ্রয়মাণ। যাহাকে স্পষ্ট করা হইয়াছে—স্পষ্টীকৃত। যুদ্ধে জয়লাভ অথবা মৃত্যুবরণ এমন শপথকারী সৈন্য—সংশপ্তক। যাহা সদৃশ (অনুরূপ বা তুল্য) ছিল না, তাহাকে সদৃশ করা—সদৃশীকরণ।

রেশমী কাপড়—ক্ষৌম। নাই রদ (দন্ত) যাহার—নীরদ। রুকে নীরোগ করা কাজটি—নীরোগীকরণ। রন্ধন করার যোগ্য—পচ্য। রাত্রির প্রথমাংশ—পূর্বরাত্র। রাধিকার দূতী—বৃন্দা। রব শুনিয়া যে আসে—রবাহুত। রূপই আজীব (জীবিকা) যে নারীর—রূপাজীবা। রাজতুল্য ব্যক্তি—রাজড়া। রস আস্বাদন করা হয় যাহার দ্বারা—রসনা। রস দেয় যে—রসদ। রসদ দেন যিনি—রসদদার। রসায়নশাস্ত্র জানেন যিনি-রসায়নবিদ। রথ চলার মতো প্রশস্ত পথ—রথ্যা। রোজের উপার্জন—রুজি। রজোগুণের প্রকাশক–রাজসিক। রাজগণের বৃত্তান্ত—রাজবৃত্ত, রাজবৃত্তিকা। রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কীয়—রাবীন্দ্রিক। রত্ন প্রসব করেন যিনি—রত্নপ্রসূ। রাত্রিকালীন যুদ্ধ—সৌপ্তিক।

লঙ্ঘন করা যায় না যাহা—অলঙ্ঘ্য। লয় নাই যাহার—অলয়। লৌকিক নয়—অলৌকিক। লজ্জা পাইতেছে যে নারী–ত্রপমাণা, লজ্জমানা। লৌকিক দেবতার ভারপ্রাপ্ত পূজারী—দেয়াসীন। লইয়া যাওয়া হইতেছে যাহা—নীয়মান। লোভ নাই যাহার–নির্লোভ। লাভ-ক্ষতি-বিষয়ে অতি-সচেতন—পাটোয়ার। লাফাইয়া চলে যে—প্লবগ। লবণ বিক্রয় করেন যিনি—লাবণিক। লেহন করিয়া খাইতে হয় যাহা—লেহ্য। লেহন করা হইয়াছে যাহা–লীঢ়, অবলীঢ়। লক্ষবার অগ্নিশুদ্ধ-লাখবান। লাভ করিবার প্রবল বাসনা (আকাঙ্ক্ষা)—লিপ্সা। লাভ করিতে প্রবলভাবে ইচ্ছুক—লিপ্স। লীলার সহিত বিদ্যমান—সলীল। লজ্জার সঙ্গে বর্তমান—সলজ্জ।

শোক নাই যাহার-অশোক। শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ইষ্টমন্ত্র জপ—অজপা। শিষ্যের শিষ্য—অনুশিষ্য। শত্রুর পক্ষে যুদ্ধের যোগ্য নয় যে ভূমি—অযোধ্যা। শত্রু আহত হয় যাহাতে—আহব। শূন্যে উড়িতেছে এমন—উড্ডীয়মান। শ্রীকৃষ্ণের বক্ষোভূষণ পদ্মরাগমণি—কৌস্তুভ। শুভক্ষণে জন্ম যাহার–ক্ষণজন্মা। শিবের বাদ্যযন্ত্র—ডমরু। শাসন করা দুঃসাধ্য যাহাকে—দুঃশাসন। শ্বেতবর্ণের পদ্ম—পুণ্ডরীক, পুন্নাগ। শ্রীকৃষ্ণের পরিধেয় বস্ত্র—পীতধড়া। শুক্লা প্রতি পদের চাঁদ—বালেন্দু। শুষ্ক পত্রাদির শব্দ—মর্মর। শ্লথগতিতে গমন করে যে—শ্লথগামী শত্রুকে জয় করিয়াছেন যিনি—শত্রুজিৎ। শিলায় (প্রস্তরে) রূপান্তরিত হইয়াছে এমন—শিলীভূত। শিবের উপাসক—-শৈব। শক্তির উপাসক—শাক্ত। শরণ লওয়া যায় যাহার—শরণ্য (স্ত্রীলিঙ্গে শরণ্যা)। শ্রবণেন্দ্রিয়ের দ্বারা গ্রাহ্য—শ্রাবণ। শ্রদ্ধা পাইবার যোগ্য—শ্রদ্ধেয়, শ্রদ্ধার্হ। শান্তনুর সন্তান—শান্তনব। শাস্তি দেন যে পুরুষ—শাস্তা। শাস্তি দেন যে নারী—শাস্ত্রী। শাস্ত্রে অধিকার আছে এমন পুরুষ—শাস্ত্রী। শত্রুকে বধ করেন যিনি—শত্রুঘ্ন। শুনিবার ইচ্ছা—শুশ্রূষা। শুনিতে ইচ্ছুক—শুশ্রূষু। শিক্ষালাভই উদ্দেশ্য যাহার—শিক্ষার্থী। শুভকামনাই উদ্দেশ্য যাহার—শুভার্থী। শিক্ষিকার কাজ—শিক্ষিকাত্ব। শতবর্ষ বাঁচে যে—শতায়ু। শতলহরী হার—শতেশ্বরী। শুভকামনা করেন যিনি—শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভৈষী। শুভ দেন যে দেবী—শুভদা। শঙ্কার সহিত বিদ্যমান—-সশঙ্ক। শ্রদ্ধার সঙ্গে—সশ্রদ্ধ। শিষ্যের সঙ্গে—-সশিষ্য। শোভন হৃদয় যাহার—-সুহৃৎ, সুহৃদ্। শিরোমধ্যস্থ সহস্রদল পদ্ম—সহস্রার। ষণ্মাস-সম্পৰ্কীয়—ষাণ্মাসিক।

সাধন করা যায় না যাহা—অসাধ্য। সিত (শ্বেত) নয় যাহা–অসিত। সর্বদা চিন্তা বা ধ্যান—অনুধ্যান। সদৃশ শব্দ—অনুনাদ। সুগন্ধময় করা—অনুবাসন সভায় উপস্থিত জনমণ্ডলীকে সম্ভাশপূর্বক বক্তৃতা—অভিভাষণ। সপত্নীতুল্য শত্রুশূন্য যিনি—অসপত্ন। সমুদ্র পর্যন্ত—আসমুদ্র। সমুদ্র হইতে হিমাচল পর্যন্ত—আসমুদ্রহিমাচল। স্বার্থসিদ্ধির জন্য উপহারাদি অবৈধ দান—উপদা। সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধি—উপচয়। স্বর্ণকারের তুলাদণ্ড—এষণী। সরস্বতীর বীণা– কচ্ছপী। স্বর্ণরৌপ্য ভিন্ন অন্যসব ধাতু—কুপ্য। সমৃদ্ধ গ্রাম—কসবা। সকলের চেয়ে বয়সে ছোটো—কনিষ্ঠ। সামান্য উষ্ণ—কবোষ্ণ। সর্বকালে ও সর্বাবস্থায় একভাবে স্থিত—কূটস্থ। সকলের মধ্যে গুরু—গরিষ্ঠ। সুরেলা ধ্বনি-তান। স্বামিপরিত্যক্তা নারী—ত্যক্তভর্তৃকা, নাথোঙ্কিতা। সুদে টাকা খাটানো—তেজারতি (বি)। অনুরূপ ব্যবসায়-সম্বন্ধীয়—তেজারতী (বিণ)। সহজে সাধন করা যায় না যাহা—দুঃসাধ্য। সহজে অপনয়ন করা যায় না যাহা—দুরপনেয়। স্বপ্নে শিশুর হাসিকান্না—দেয়ালা। স্বর্গ ও পৃথিবী—দ্যাবাপৃথিবী। সদ্য দোহনের ফলে বা ধারায় দোহনের কারণে ঈষৎ উষ্ণতাযুক্ত—ধারোষ্ণ। সংকীর্তন-শেষে ভাবাবেশে ধুলায় গড়াগড়ি দেওয়ার উৎসব—ধুলট। সংসারে বিরাগ-নির্বেদ। সম্যক্‌ আকুল—নিরাকুল। স্পৃহা নাই যাহার-নিস্পৃহ। স্পন্দন নাই যাহার নিস্পন্দ। সর্বাপেক্ষা প্রিয়—প্রিয়তম। সপ্ততন্ত্রী বীণা—পরিবাদিনী। সেনাবিভাগের হাতি ও উটের থাকিবার জায়গা—পিলখানা। সামান্য পরিশ্রমেই যে নারী কাতর হয়—ফুলটুসি। সংবাদপত্রে বার্তা সংগ্রহ ও প্রদান জীবিকা যাহার—বার্তাজীবী। সংকেতস্থানে গিয়া যে নায়িকা প্রত্যাশিত নায়ককে দেখিতে পান না—বিপ্রলব্ধা। সকলের মধ্যে বলীয়ান্ (শক্তিশালী)—বলিষ্ঠ। সকলের মধ্যে বরণীয়—বরিষ্ঠ। সম্মানের সঙ্গে নিযুক্ত—বৃত। সর্বাপেক্ষা বেশী—-ভূয়িষ্ঠ। সৌভাগ্যের বিষয় যে—ভাগ্যিস। সম্পৎকালের বন্ধুত্ব—ভ্রামরীমিত্রতা। স্থান হইতে স্থানান্তরে গমন করে যে—যাযাবর। সমস্ত ধনসম্পদ্—যথাসর্বস্ব। সংগ্রামের ইচ্ছা—যুযুৎসা। সানাই ইত্যাদি যন্ত্রসহযোগে যে ঐকতান—রোশনচৌকি। সকলের মধ্যে লঘু—লঘিষ্ঠ। সধবা নারীর প্রেত—-শঙ্খিনী। স্থাবরজঙ্গমের সঙ্গে সচরাচর।সুহৃদের ভাব—সৌহার্দ্য, সৌদ। সার দান করেন যে দেবী—সারদা। স্ত্রীর বশীভূত—স্ত্রৈণ। সরসীতে জন্মে যাহা—সরসিজ। সরোবরে জন্মে যাহা—সরোজ। সর্বভূমির অধীশ্বর—সার্বভৌম। সর্বস্ব গিয়াছে যাহার—সর্বস্বান্ত। সভায় শোভন—সভ্য। সৌভাগ্যবতীর পুত্র—-সৌভাগিনেয়। সৌভাগ্যবতীর কন্যা—সৌভাগিনেয়ী। সূর্যের উপাসক—সৌর। সূর্যের পুত্র—সৌরি। সূর্যের মানবী পত্নী—সুরী। সোমের পুত্র—সৌম্য। সুমিত্রার নন্দন—সৌমিত্রি, সৌমিত্র। সুজনের আচার—-সৌজন্য। সুধাধবলিত গৃহ—সৌধ। সৈন্যদলের শিবির—স্কন্ধাবার। সুমিষ্ট গন্ধ—সৌগন্ধ, সৌগন্ধ্য। সৃষ্টি করিবার ইচ্ছা—সিসৃক্ষা। সেবা করিবার ইচ্ছা—সিষেৰিষা। সত্য অথচ প্রিয় বাক্য বা অনুরূপ বক্তা—সুনৃত। স্মৃতিশাস্ত্রে পারদর্শী—স্মার্ত সবকিছুই সহ্য করে যে—সর্বংসহ। সমস্ত অভীষ্ট পূর্ণ করে যে—সর্বার্থসাধক। সর্বজনে উপলব্ধি করিয়াছে এমন—সর্বানুভূত। সুন্দর দন্তযুক্তা—সুদতী। সত্ত্বগুণ আছে যাঁহার—সাত্ত্বিক। সর্বাপেক্ষা স্বাদু—স্বাদিষ্ঠ। সঞ্চয় করা হইতেছে যাহা—সঞ্চীয়মান। সর্বজনের কল্যাণে—সর্বজনীন। সর্বজনের সম্পর্কিত—সার্বজনীন। স্নান করানো হইয়াছে যাহাকে—স্নাপিত। সারথির বৃত্তি—সারথ্য। স্মরণ করার যোগ্য যাহা—স্মরণীয়, স্মর্তব্য। সতিনের পুত্র—সাপত্ন্য। সম্যক্ বীক্ষণ—সংবীক্ষণ। সূচের মতো তীক্ষ্ণলোমবিশিষ্ট—সূচিরোমা। সেনাপতির পদ বা কাজ—সৈনাপত্য। সংসদের সদস্য—সাংসদ। সচেতন করার দায়িত্বে আছেন যিনি—সচেতক। স্থপতির কাজ—স্থাপত্য। সম্যক্‌ ইন্ধনপ্রাপ্ত—সনিদ্ধ। সত্যকে জয় করিয়াছেন যিনি—সত্যজিৎ। সুরকে জয় করিয়াছেন যিনি—সুরজিৎ। স্থলে চরে যে—স্থলচর। সময়-সম্পৰ্কীয় বা নির্দিষ্ট সময়ান্তরে প্রকাশ্য—সাময়িক। সমর (যুদ্ধ)-সংক্রান্ত—সামরিক। সমাজ-সম্বন্ধীয় বা সমাজে স্বীকৃত ও প্রচলিত—সামাজিক। সরমার নন্দন—সারমেয়। সার দেন যে দেবী—সারদা। সুখ দেয় যে—সুখদ (স্ত্রীলিঙ্গে সুখদা)। স্মরণে রাখার যোগ্য—স্মরণীয়। স্বর্ণ দ্বারা অলংকার নির্মাণ করেন যিনি—স্বর্ণকার। সুখ (আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য) দান করে যে—সুখকর। স্বর্ণ প্রসব করে যাহা—স্বর্ণপ্রসূ। স্ত্রীয়ের সহিত বর্তমান—সস্ত্রীক। সাধারণের জন্য আরামপ্রদ উষ্ণজলের স্নানঘর—হামাম। সর্বস্ব হৃত হইয়াছে যাহার হৃতসর্বস্ব। সদ্যোজাত ঘৃত—হৈয়ঙ্গবীন।

হরিণের চর্ম—-অজিন। হাতিঘোড়া রাখিবার স্থান—আস্তাবল। হস্তী বাঁধিবার স্তম্ভ—আলান। হাতির পা বাঁধিবার শিকল—আন্দু, আন্ধু। হস্তীর নেত্রগোলক—ঈষিকা। যে সৈন্যদল হাতিতে চড়িয়া যুদ্ধ করে গজানীক। হাঁটু হইতে গোড়ালি পর্যন্ত দেহাংশ—জঙ্ঘা। হরণ করিবার ইচ্ছা—জিহীর্ষা। হরণ করিতে ইচ্ছুক-জিহীর্ষ। হত্যা (বধ) করিবার ইচ্ছা—জিঘাংসা। হত্যা করিতে ইচ্ছুক জিঘাংসু। হস্তীর বন্ধনস্থান বা বন্ধনরজ্জু—বারী। হাসি পবিত্র ও সুন্দর যে নারীর—শুচিস্মিতা। হাসি মিষ্ট যে নারীর—সুস্মিতা। হৃদয় বিদীর্ণ করে যাহা—হৃদয়বিদারক। হৃদয়ে গমন করে যাহা—হৃদয়ঙ্গম। হৃদয়কে আকর্ষণ করে যাহা—হৃদয়গ্রাহী। হৃদয়ের প্রীতিকর—হৃদ্য। হিমবানের কন্যা—হৈমবতী। হিত সাধনই উদ্দেশ্য যাহার—হিতার্থী। হিতকামনা করেন যিনি—হিতাকাঙ্ক্ষী, হিতৈষী।

বিপরীতার্থক শব্দ

দিনের শেষে ধরার বুকে এখন অন্ধকার নামিয়া আসিতেছে। রাত্রির শেষে আবার আলোক ফুটিয়া উঠিবে। আমরা সুখে হাসি, দুঃখে কাঁদি। এই বাক্যগুলিতে লক্ষ্য কর—দিনের ও রাত্রির, অন্ধকার ও আলোক, সুখে ও দুঃখে এবং হাসি ও কাঁদি—প্রতিটি যুগ্ম শব্দ পরস্পর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করিতেছে। এই ধরনের শব্দকে বিপরীতার্থক শব্দ বলে।

১৯৭। বিপরীতার্থক শব্দ : কোনো শব্দ অন্য একটি শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করিলে সেই শব্দদ্বয়কে পরস্পরের বিপরীতার্থক শব্দ বলে।

বিপরীতার্থক শব্দের প্রয়োগে অল্প পরিসরের মধ্যে ভাবকে সার্থকভাবে পরিস্ফুট করা যায়। ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে বাক্যপরিবর্তনে এই শ্রেণীর শব্দের বিশেষ প্রয়োজন আছে। কিন্তু বিপরীতার্থক শব্দ নির্বাচনে শিক্ষার্থীকে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকিতে হইবে।—

(ক) মূল শব্দটি যদি তৎসম হয়, বিপরীতার্থক শব্দটিকেও তৎসম হইতে হইবে; আর মূল শব্দটি যেখানে তদ্‌ভব দেশী বা বিদেশী, বিপরীতার্থক শব্দটিও সেখানে যথাক্রমে তদ্‌ভব দেশী বা বিদেশী হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই শ্বেত শব্দটির বিপরীত কৃষ্ণ, এবং সাদা শব্দটির বিপরীত কালো। তেমনি উচ্চ—নীচ; কিন্তু উঁচু-নীচু। সম্মুখে—পশ্চাতে; কিন্তু সামনে—পিছনে গ্রাম্য—নাগরিক; কিন্তু গেঁয়ো—শহুরে। আরম্ভ—শেষ; কিন্তু শুরু—সারা। মুক্ত—বদ্ধ, বন্ধ; কিন্তু খোলা—ঢাকা। উষ্ণ-শীতল; কিন্তু গরম—ঠাণ্ডা।

(খ) মূল শব্দটি যদি বিশেষ্য বিশেষণ বা ক্রিয়াপদ হয়, বিপরীতার্থক শব্দটিও তখন যথাক্রমে বিশেষ্য বিশেষণ বা ক্রিয়াপদ হইবে। হাসি (বি)—কান্না (বি); হাসি (ক্রি)—কাঁদি (ক্রি); সরব (বিণ)—নীরব (বিণ); ভাঙা (ক্রি)—গড়া (ক্রি); ভাঙা (বিণ)–গোটা (বিণ); বৈফল্য (বি)—সাফল্য (বি); প্রকাশ্যে (ক্রি-বিণ)—গোপনে (ক্রি-বিণ); অকস্মাৎ (ক্রি-বিণ)—ক্রমশঃ (ক্রি-বিণ); ঈষৎ (বিণ)—বিশদ (বিণ); অভিমান (বি)—নিরভিমানতা, অমায়িকতা (বি)।

(গ) মূল শব্দটির লিঙ্গ বিপরীতার্থক শব্দে অক্ষুণ্ণ থাকিবে—অর্থাৎ মূল শব্দটি পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ হইলে, বিপরীত শব্দটিকেও যথাক্রমে পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ হইতে হইবে। সবল (পুং) –দুর্বল (পুং); দোষী (পুং)—নির্দোষ (পুং)); দোষিণী (স্ত্রী)—নির্দোষা (স্ত্রী); অপরাধিনী (স্ত্রী)—নিরপরাধা (স্ত্রী); পাপিনী (স্ত্রী)—নিষ্পাপা (স্ত্রী)। উত্তল—অবতল; অসমঞ্জস—সুসমঞ্জস। কিন্তু দিবস—রজনী (বা দিবা-রাত্রি) লিঙ্গ ক্ষুণ্ণ হইয়াছে।

(ঘ) মূল শব্দটির কারক বিপরীত শব্দটিতেও অক্ষুণ্ণ রাখিতে হইবে। প্রভাত—সন্ধ্যা (কর্তৃ); প্রভাতে—সন্ধ্যায় (অধিকরণ); আসলকে—নকলকে (কর্ম) যত্নে—অবহেলায় (করণ); নিজের—পরের (সম্বন্ধপদ); আপনারে অপরেরে (কর্ম বা সম্প্রদান—কবিতায়)।

এখন বিশেষ প্রয়োজনীয় বিপরীতার্থক শব্দের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পরপৃষ্ঠায় দেখ :

মূল শব্দ – বিপরীত

অখ্যাতি – সুখ্যাতি

অগ্র – পশ্চাৎ

অগ্রজ – অনুজ

অচল – সচল

অধঃ – ঊর্ধ্ব

অধোগামী – ঊর্ধ্বগামী

অধোগমন – ঊর্ধ্বগমন

অধমর্ণ – উত্তমর্ণ

অনুকূল – প্রতিকূল

অনুগ্রহ – নিগ্রহ

অনুবাত – প্রতিবাত

অনুরক্ত – বিরক্ত

অনুরাগ – বিরাগ

অনুরাগী – বিরাগী

অন্তঃ – বহিঃ

অন্তর্মুখী – বহির্মুখী

অন্তরে – বাহিরে

অপকারী – উপকারী

অপকারিতা – উপকারিতা

অপরাধী – নিরপরাধ

অবনত – উন্নত

অবনতি – উন্নতি

অবতরণ – উত্তরণ

অভিজ্ঞ – অনভিজ্ঞ

অজ্ঞ – প্রজ্ঞ, প্রাজ্ঞ

অন্ধ – চক্ষুষ্মান্

অবাচী – উদীচী

অস্তগামী – উদয়োন্মুখ

অস্তিত্ব – নাস্তিত্ব

অহিংস – সহিংস

অভ্যস্ত – অনভ্যস্ত

অভিমানী – নিরভিমান

অভিমানিনী – নিরভিমানা

অমৃত গরল

অৰ্পণ গ্রহণ

অলস পরিশ্রমী

অল্পতা আধিক্য

অশন অনশন

অসীম সসীম

অন্তর্বাস বহির্বাস

অলংকাণী নিরলংকারা

অহংকারী নিরহংকার

আকর্ষণ বিকর্ষণ

আকুঞ্চন প্রসারণ

আগমন নির্গমন

আচর্য অনাচর্য

আত্মীয় অনাত্মীয়

আদান প্ৰদান

আদি অস্ত

আদ্য অন্ত্য

আদায় অনাদায়

আদৃত অনাদৃত

আবাহন বিসর্জন

আবির্ভাব তিরোভাব

আপদ্ নিরাপত্তা

আপ্যায়ন প্রত্যাখ্যান

আসক্তি বৈরাগ্য

আবৃত অনাবৃত

আমদানি রপ্তানি

আয় ব্যয়

আরব্ধ সমাপ্ত

আরম্ভ শেষ

আরোহণ অবরোহণ

আর্দ্র, সিক্ত শুষ্ক

আশা নিরাশা

আসল নকল

আসামী ফরিয়াদী

আস্তিক নাস্তিক

আস্তিক্য নাস্তিক্য

আস্তীর্ণ অনাস্তীর্ণ

আস্তৃত অনাস্তৃত

আস্বাদিত অনাস্বাদিত

আহত অনাহত

আহার অনাহার

আহুত অনাহুত

আহূত অনাহুত

আহুতি অনাহূতি

আশীর্বাদ অভিশাপ

ইচ্ছায় অনিচ্ছায়

ইতর ভদ্র

ইষ্ট অনিষ্ট

ইহলোক পরলোক

ইদানীন্তন তদানীন্তন

ঈদৃশী তাদৃশী

উগ্র সৌম্য

উচিত অনুচিত

উচ্চ নীচ

উৎকর্ষ অপকর্ষ

উৎকৃষ্ট অপকৃষ্ট

উত্তর দক্ষিণ

উত্তর প্রত্যুত্তর

উত্তরায়ণ দক্ষিণায়ন

উঠন্ত পড়ন্ত

উত্তম অধম

উত্তাপ শৈত্য

উত্থান পতন

উত্থিত পতিত

উদয় অস্ত

উদ্যত বিরত

উদ্যতি বিরতি

উদ্যম বিরাম

উত্তীর্ণ অনুত্তীর্ণ

উদ্ধত বিনত

উন্নয়ন অবনয়ন

উন্নীত অবনমিত

উন্মীলন নিমীলন

উপকৃত অপকৃত

উপকৃতি অপকৃতি

উপচিকীর্ষা অপচিকীর্ষা

উত্তরীয় অন্তরীয়

উদার অনুদার

উর্বর ঊষর

উর্বরতা ঊষরতা

উপচিকীর্ষ অপচিকীর্ষ

উষ্ণ শীতল

ঊর্ধ্বগ নিম্নগ

ঊষা সন্ধ্যা

ঋজু বক্র

একাল সেকাল

এরূপ সেরূপ

ঐক্য অনৈক্য

ঐচ্ছিক আবশ্যিক

ঐহিক পারত্রিক

ওস্তাদ আনাড়ী

ঔদাসীন্য আসক্তি

ঔদ্ধত্য বিনতি

কচি ঝুনো

কদাচার সদাচার

কমতি বাড়তি

কাঁচা পাকা

কঠিন কোমল

কাপুরুষ বীরপুরুষ

কুখ্যাত সুখ্যাত

কুটিল সরল

কুৎসিত সুন্দর

কর্মঠ অকর্মণ্য

কুপথ সুপথ

কুরুচি সুরুচি

কুলীন অন্ত্যজ

কৃতজ্ঞতা কৃতঘ্নতা

কৃত্রিম নৈসর্গিক

কৃপণ বদান্য

কৃশ স্থূল

কৃশাঙ্গী স্থূলাঙ্গী

কৃষ্ণ শুক্ল, শুভ্র

কৃষ্ণা শুক্লা, শুভ্রা

ক্রয় বিক্রয়

ক্রেতা বিক্রেতা

কেন্দ্রাভিগ কেন্দ্রাতিগ

কেন্দ্রীকরণ বিকেন্দ্রীকরণ

ক্রোধ প্রীতি

ক্ষয়, ক্ষতি – বৃদ্ধি

ক্ষয়িষ্ণু বর্ধিষ্ণু

ক্ষণস্থায়ী দীর্ঘস্থায়ী

ক্ষিপ্ৰ মন্থর

ক্ষিপ্ত প্রকৃতিস্থ

ক্ষীয়মাণ বর্ধমান

ক্ষুদ্রতম বৃহত্তম

ক্ষুদ্রত্ব বৃহত্ত্ব

খাঁটী ভেজাল

গরিমা লঘিমা

গরিষ্ঠ লঘিষ্ঠ

গলগ্রহ প্রতিপাল্য

গুপ্ত প্রকাশিত

গূঢ় ব্যক্ত

গৃহী সন্ন্যাসী

গৃহীত বর্জিত

গেঁয়ো শহুরে

গৌরব অগৌরব

গ্রহণ বর্জন

গ্রহণীয় বর্জনীয়

গ্রাম্য নাগরিক

ঘাত প্রতিঘাত

ঘন – তরল, বিরল

ঘাতক পালক

ঘুমন্ত জাগন্ত

ঘৃণিত সমাদৃত

চঞ্চল স্থির

চড়াই উতরাই

চল অচল

চলিত সাধু

চালাক বোকা

চ্যুত অচ্যুত

ছেলে বুড়ো

ছেলেমি বুড়োমি

ছোটো বড়ো

জটিল সরল

জড় চেতন

জন্ম মৃত্যু

জয় পরাজয়

জয়ী পরাজিত

জাগ্রৎ সুপ্ত

জিন্দাবাদ মুর্দাবাদ

জীবন মরণ

জীবিত মৃত

জোড় বিজোড়

জোয়ার ভাটা

জ্ঞাতসারে অজ্ঞাতসারে

জ্যেষ্ঠা কনিষ্ঠা

জ্বলন্ত নিভন্ত

ঝগড়া ভাব

টক মিষ্টি

টাটকা বাসী

ঠকা জেতা

ঠাণ্ডা গরম

ঠিক বেঠিক

ডুবন্ত ভাসন্ত

তরল কঠিন

তরুণ বৃদ্ধ

তারুণ্য বার্ধক্য

তাপ শৈত্য

তিক্ত মিষ্ট

তিরস্কার পুরস্কার

তীক্ষ্ণ স্থূল

তীব্র মৃদু

তেজী মন্দা

তির্যক ঋজু

তোষণ দূষণ

ত্যাজ্য গ্রাহ্য

তুষ্টি রুষ্টি

তন্ময়তা মন্ময়তা

ত্বরান্বিত বিলম্বিত

নদীয় মদীয়

ত্বরিত শ্লথ

ত্বাদৃশ মাদৃশ

দক্ষিণ বাম

দাতা গ্রহীতা

দাস প্ৰভু

দিন রাত্রি

দিবস রজনী

দিবাকর নিশাকর

দুরন্ত শান্ত

দুর্গম সুগম

দুষ্কর সুকর

দুষ্কৃতি সুকৃতি

দুঃশীল সুশীল

দুষ্ট শিষ্ট

দীর্ঘায়ু স্বল্পায়ু

দোষ গুণ

দোষী নির্দোষ

দোষিণী নির্দোষা

দোস্ত দুশমন

দূর নিকট

দৃঢ় শিথিল

দেনা পাওনা

দেনদার পাওনাদার

দ্যুলোক ভূলোক

দ্রুত মন্থর

দ্রুতগামী মন্দগামী

ধনী নির্ধন

ধনিনী নির্ধনা

ধবল শ্যামল

ধর্ম অধর্ম

ধীর অধীর

ধৃত মুক্ত

নতুন পুরনো

নন্দিত নিন্দিত

নম্র উদ্ধত

নম্রতা ঔদ্ধত্য

নশ্বর অবিনশ্বর

নরম কড়া

নাবালক সাবালক

নাবালকত্ব সাবালকত্ব

নাস্তিত্ব অস্তিত্ব

নিদ্রা জাগরণ

নিদ্রিত জাগ্রৎ

নিন্দা প্ৰশংসা

নিকৃষ্ট উৎকৃষ্ট

নিরত – বিরত, নীরত

নিরপেক্ষ সাপেক্ষ

নিরবলম্ব স্বাবলম্ব

নিরবয়ব সাবয়ব

নিরবকাশ সাবকাশ

নিরাকার সাকার

নিরস্ত্র সশস্ত্র

নিরীহ দুর্দান্ত

নিৰ্গুণ সগুণ

নির্দয় সদয়

নির্মল সমল

নির্লজ্জ সলজ্জ

নিশ্চেষ্ট সচেষ্ট

নীরস সরস

নূতন পুরাতন

নৈঃশব্দ্য সশব্দতা

ন্যূন অধিক

পর – অবর, আপন পরার্থ

পরিত্যক্তা গৃহীতা

পরিত্যাজ্য গ্রহণীয়

পাপ পুণ্য

পাপী পুণ্যবান্

পরুষ কোমল

পুরুষ – নারী, প্রকৃতি

পুরাতনী চিরন্তনী

পুরোভাগ পশ্চাদ্‌ভাগ

পূর্ব পশ্চিম

পূর্বাহ্ণে পরাতে

পূর্ণ শূন্য

প্রকৃষ্ট নিকৃষ্ট

প্রচুর স্বল্প

পূর্বসূরী উত্তরসুরী

প্রাচী প্রতীচী

প্রারম্ভ পরিণাম

প্ৰজ্বলন নির্বাপণ

প্রতিযোগী সহযোগী

প্রত্যক্ষ পরোক্ষ

প্রবল দুর্বল

প্রবণতা ঔদাসীন্য

প্রবাসী স্ববাসী

প্রবিষ্ট প্রস্থিত

প্রবীণ নবীন

প্রবেশ প্রস্থান

প্রভু ভৃত্য

প্রভূতবিত্ত স্বল্পবিত্ত

প্রমাণিত অনুমিত

প্রশংসাই নিন্দার্হ

প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্বাস নিশ্বাস

প্রসারণ সংকোচন

প্রসারিত সংকুচিত

প্রাখর্য স্থূলত্ব

প্রাচীন অর্বাচীন

প্রাতিকূল্য আনুকূল্য

ফলবান্ নিষ্ফল

বক্তা শ্রোতা

বন্দনা গঞ্জনা

বন্ধন মুক্তি

বন্ধু শত্রু

বন্ধুর মসৃণ

বন্য গৃহপালিত

বিশদতা স্বল্পতা

বলিষ্ঠ দুর্বলতম

বহাল বরখাস্ত

বহির্দৃষ্টি অন্তর্দৃষ্টি

বহির্ভূত অন্তর্ভূত

বাদী প্ৰতিবাদী

বাস্তব কল্পিত

বিজন সজন

বিজেতা বিজিত

বিধর্মী সধর্মী

বিধি নিষেধ

বিনয় ঔদ্ধত্য

বিপথ সুপথ

বিপন্ন নিরাপদ্

বিপন্নতা নিরাপত্তা

বিফলতা সফলতা

বিবাদ সুবাদ

বিদ্যমান অন্তর্হিত

বিদ্যমানতা অন্তৰ্ধান

বিরল বহুল

বিরহ মিলন

বিষ অমৃত

বিলম্বিত দ্রুত

বিস্তৃত সংক্ষিপ্ত

ব্যক্ত গুপ্ত

ব্যর্থ চরিতার্থ

ব্যর্থতা চরিতার্থতা

বিষাদ প্রসাদ

বিষণ্ণ প্ৰসন্ন

বাহ্য আভ্যন্তর

বিকাশ বিলয়

বিশিষ্ট সাধারণ

বিরহিণী সোহাগিনী

বিতর্কিত তর্কাতীত

বৈধ নিষিদ্ধ

ভর্তা ভৃত্য

ভালো মন্দ

ভিন্নার্থক সমার্থক

ভীরু সাহসী

মর্যাদা অমর্যাদা

মহাত্মা নীচাত্মা

মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ

মুখর মৌনী

মুখরতা মৌন

মৃদু গম্ভীর

মুক্ত বন্দী

মুখ্য গৌণ

মূর্খ জ্ঞানী

যশ কলঙ্ক

যুষ্মদীয় অস্মদীয়

রমণীয় কুৎসিত

রসিক বেরসিক

রাজী গররাজী

রুষ্ট তুষ্ট

রোগগ্রস্ত রোগমুক্ত

লঘু গুরু

রোগী নীরোগ

রোগিণী নিরোগা

লাভ লোকসান

লোভী নির্লোভ

শত্রু মিত্র

শয়ন উত্থান

শয়িত উত্থিত

শীত গ্রীষ্ম

শোক হর্ষ

শায়িত উত্তোলিত

সঞ্চয় অপচয়

সধবা বিধবা

শ্রদ্ধা ঘৃণা

সপ্রতিভ অপ্রতিভ

সবল দুর্বল

সন্ধি বিগ্রহ

সজীব নির্জীব

সবাক্‌ নির্বাক

সবীজ নির্বীজ

সমষ্টি ব্যষ্টি

সরল কুটিল

সম্প্‌ বিপদ্

সদর্থক নঞর্থক

সংহত বিভক্ত

সরস নীরস

সরব নীরব

সরবতা নীরবতা

স্বাতন্ত্র্য সাধারণত্ব

সাক্ষরা নিরক্ষরা

সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য

সক্রিয় নিষ্ক্রিয়

সাম্য বৈষম্য

সার্থক নিরর্থক

সাধু চোর

সুখী দুঃখী

সুধা হলাহল

সিক্ত শুষ্ক

সুসহ দুঃসহ

সুগম দুর্গম

সুলভ দুর্লভ

স্থাবর জঙ্গম

স্থূল সূক্ষ্ম

সৃষ্টি সংহার

সান্ন নিরন্ন

সুদর্শ দুদর্শ

স্মৃতি বিস্মৃতি

সুভগা দুর্ভগা

সুবহ দুর্বহ

সুদর্শন কুদর্শন

স্ববাস প্রবাস

স্বাধীনা পরাধীনা

স্বার্থপর পরার্থপর

হরণ পূরণ

হর্ষ বিষাদ

হতবুদ্ধি স্থিতবুদ্ধি

হ্রস্ব দীর্ঘ

হ্রস্বতা দীর্ঘতা

হ্রাস বৃদ্ধি

কোনো কোনো শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ ক্ষেত্রবিশেষে এক-একপ্রকার হয়। কোটি বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ তাহা বুঝিয়া প্রয়োগ করিবে। যেমন, উত্তর-দক্ষিণ (দিক্ বুঝাইলে); উত্তর-প্রত্যুত্তর (বাদানুবাদ বুঝাইলে); পূর্বপদ—উত্তরপদ (সমাসে); প্রশ্ন-উত্তর। সাধু—চলিত (ভাষারীতি বুঝাইলে); সাধু—চোর বা তস্কর (চরিত্র বুঝাইলে)। এখন বিপরীতার্থক শব্দের কয়েকটি প্রয়োগ দেখ :

প্রয়োগ : পৃথিবীতে স্বর্গ আছে, নরকও আছে। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশী বিষামৃতে ভরা। “কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা।” “ঔরঙ্গজীব, এইবার তোমার উত্থান না পতন?” জগতে অর্থই সমস্ত অনর্থের মূল। “দূরকে করিলে নিকট বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।” “ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর।” দিন নেই রাত্রি নেই, আকাশটা কেবল কেঁদেই চলেছে। “এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মুসলমান।” সকলেরই আয়-অনুযায়ী ব্যয় করা উচিত। তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তিই হস্তচ্যুত হয়েছে। দোষেগুণেই মানুষ তৈরী হয়। “কণ্ঠস্বরের চড়াই-উতরাই ভাঙিতে ভাঙিতে অবশেষে হঠাৎ এক-সময়ে থামিতেন।” আমার ইহকাল গেল, পরকালও যেতে বসেছে। তিনি সমস্ত স্তুতিনিন্দার অতীত। সুখ তাঁকে উল্লসিত করে না, দুঃখও তাঁকে ম্রিয়মাণ করে না। “সম্প্রসারণই জীবন, সঙ্কোচনই মৃত্যু।” কী সব আকাশ-পাতাল ভাবছ? বাইরে প্রবীণ হয়েও অন্তরে তিনি নবীন। “তুমি অধম—তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?” “স্মরিব সত্যে দূরিব মিথ্যা ভয়।” “জননী তোমার সন্তান-তরে কত-না বেদনা, কত-না হর্ষ।” “আমরা পূর্ব, তোমরা পশ্চিম। আমরা ঊষা, তোমরা গোধূলি।” আসলে নকলে তফাত কী? যিনি ভয়াল তিনিই দয়াল। তাঁর আশীর্বাদ পেয়েই মূক হয় মুখর, চঞ্চল হয় শান্ত। সব ক্ষুরধার দুর্গম পথই চলেছে নশ্বর থেকে অবিনশ্বরের দিকে, অন্ধকার থেকে আলোয়, নাস্তি থেকে অস্তিতে। “অধর্মেরই বয়স হয়, ধর্মের কোনো বয়স নেই।” “বিষ হতে মোরে অমৃতে তুলিয়া লহ।” সাধনার উচ্চতম মার্গে ধ্যানী ধ্যেয় একাকার হয়ে যায়। তাঁর মতো স্থিতবুদ্ধি লোকও সুধাংশুবাবুর সামনে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন। “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!” “সেই বিশ্বাসনিষ্ঠ সরলতা তাহাকে (শকুন্তলাকে) ক্ষণকালের জন্য পতিত করিয়াছে, কিন্তু চিরকালের জন্য উদ্ধার করিয়াছে।”—রবীন্দ্রনাথ। জগতের সব নেতাই স্বার্থ নিয়ে উন্মাদ, স্থিতধী বিরলদৃষ্ট। সূক্ষ্ম অনুভূতির কথা বাক্যে প্রকাশ পেলে খানিকটা স্থূল হয়ে পড়ে। “জড়িয়ে গেছে সরু মোটা দুটো তারে, জীবনবীণা ঠিক সুরে আর বাজে না রে।” “বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে।” “চাই অন্নপ্রাশনে আরম্ভ, অমৃতপ্রাশনে সমাপ্তি।”—”বিধিচক্র’। বিরহ আছে বলেই তো মিলন এত স্পৃহণীয়। জীবনে দৈব আর পুরুষকার দুই-ই দরকার। যেখানে বন্ধন সেখানেই মুক্তি। শিষ্টের পালনের ভার নাও, দুষ্টের দমনের ভার সরকারের। আলোয় আকর্ষণ জাগায়, অন্ধকারে বিকর্ষণ। “তখন আমি গাইতে শুরু করলাম পাগলের মতো, যত গান জানতাম—আনন্দের-বিষাদের, পূর্ণতার-শূন্যতার।” মহাপুরুষের স্পর্শে উন্মার্গগামীও সন্মার্গগামী হয়। “দাতা গ্রহীতা অপেক্ষা নিকৃষ্ট।” “সকলে জানু পেতে বসল, রাজা এবং ভিক্ষু, সাধু এবং পাপী, জ্ঞানী এবং মূঢ়।” “হে মৃত্যুঞ্জয়, আমাদের সমস্ত ভালো এবং সমস্ত মন্দের মধ্যে তোমারই জয় হউক।” “লাভক্ষতি নিন্দাস্তুতি শোকহর্ষ শুভ-অশুভ সব আমাদের পক্ষে সমান হোক!” “হাসি কান্না হীরাপান্না দোলে ভালে।” “এরা পরকে আপন করে, আপনারে পর।”

ছেদচিহ্ন ও যতিচিহ্নের ব্যবহার

কথা বলিবার সময় আমরা একটানা বলি না, বলিতে পারি না। শ্বাস-প্রশ্বাস লইবার জন্য এবং বাগ্যন্ত্রকে বিশ্রাম দিবার জন্যও মাঝে মাঝে আমাদের থামিতে হয়। কখনও একটু কম থামি, কখনও-বা একটু বেশী। কোনোকিছু পড়িবার সময়ও তেমনি একটানা পড়িতে নাই। একটানা পড়িয়া গেলে পাঠ্যবিষয়ের অর্থ নিজেও বুঝিতে পারি না, কোনো শ্রোতা থাকিলে তিনিও বুঝিতে পারেন না। সেইজন্য প্রয়োজনমতো স্থানে স্থানে কম বা বেশী সময়ের জন্য থামিতে হয়। আবার অপ্রয়োজনে থামিলেও অর্থ-বিভ্রাট ঘটিয়া থাকে।

কথা বলার ও সরব পাঠের সময় কমবেশী থামিবার প্রসঙ্গ ছাড়া স্বরভঙ্গীর প্রসঙ্গটিও আসিয়া যায়। (ক) পঞ্চাশ পয়সার টিকিট চাইলাম, ষাট পয়সার দিলেন কেন? (খ) কী ভয়ানক গরম পড়েছে! (ক)-চিহ্নিত বাক্যের শেষে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন রহিয়াছে; সুতরাং বাক্যটি পড়িবার সময় শেষদিকে প্রশ্নের ঝোঁকটি সুনিশ্চয় ফুটাইয়া তুলিতে হইবে। (খ)-চিহ্নিত বাক্যের শেষে একটি বিস্ময়বোধক চিহ্ন রহিয়াছে; সেইজন্য বাক্যটি পড়িবার সময় বিস্ময়ের ভাবটি কণ্ঠস্বরে ঠিক-ঠিক ফুটাইয়া তুলিতে হইবে। অন্যথায় অর্থবোধে অন্তরায় সৃষ্টি হইবে। এইজন্য ঠিক-ঠিক পাঠের সুবিধার্থে লিখিত রচনায় বিশেষ কতকগুলি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়; এই চিহ্নগুলিকে ছেদচিহ্ন বলে।

১৯৮। ছেদচিহ্ন : সরব পাঠকে শ্রুতিমধুর করিবার জন্য লিখিত রচনায় বাক্যের কোন্ অংশটুকু কণ্ঠস্বরের কোন্ ভঙ্গীতে কীভাবে কতটুকু জোর দিয়া পড়িতে হয়, বাক্যের কোথায় কতটুকু থামা দরকার, যে-সমস্ত চিহ্নের দ্বারা তাহা নির্ধারিত হয়, তাহাদিগকে ছেদচিহ্ন বা বিরামচিহ্ন (Sense—Pause) বলে।

কতকগুলি ছেদচিহ্ন বাক্যের শ্রেণীনির্দেশ করে। বাক্যের রূপান্তর-সাধনে তথা অর্থ-পরিবর্তনেও এই ছেদচিহ্নের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে। সেইজন্য ছেদচিহ্নগুলির নাম এবং সেগুলি প্রয়োগের নিয়মগুলি মনোযোগ সহকারে ভালো করিয়া লক্ষ্য কর। তোমাদের রচনাতেও এগুলির যথাযথ প্রয়োগ না করিলে রচনা অর্থহীন হইয়া উঠিবে।

। পূর্ণচ্ছেদ (।)

সাধারণভাবে একটি বাক্য যেখানে শেষ হয়, কণ্ঠস্বরের বিশেষ কোনো ভঙ্গীর যেখানে প্রয়োজন হয় না, সেইখানেই পূর্ণচ্ছেদ বসে। যেমন : “এক যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ।” “নিন্দুকগুলো খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে।” “পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই।” “রাজ্য না থাকলেও রাজা বলে মানে।” “রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়াইয়া রহিল।” তুমি তো বেশ গরম-গরম কথা বলছ দেখছি। ২৯শে মে, ১৯৮৫ দিনটি বিশ্বক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে কালো দিনরূপে চিহ্নিত হয়ে রইল।

প্রাচীন বাংলা কবিতায় প্রত্যেক পঙ্ক্তির শেষে পূর্ণচ্ছেদের ব্যবহার হইত, বাক্য সমাপ্ত হউক আর নাই হউক।

(ক) সুবর্ণের বাণিজ্যে মাণিক্য দিয়ে ডালি।
তোমা বধে রঘুকুলে রাখিলাম কালি।

(খ) যার নায়ে পার করে ভব পারাবার।
ভাল ভাগ্য পাটুনী তাহারে করে পার।

(গ) কহিল নারদ মুনি ধর্মশাস্ত্র মত।
এ কর্ম তোমার রাজা না হয় উচিত॥

প্রতিটি জোড় পঙ্ক্তির শেষে একসঙ্গে দুইটি পূর্ণচ্ছেদ বসিতেছে। বর্তমানে কবিতায় কোথাও আর এইপ্রকার জোড়া পূর্ণচ্ছেদের প্রয়োগ হয় না। আধুনিক বাংলা কবিতায় চরণের শেষে বাক্য শেষ হইলে পূর্ণচ্ছেদ বসিবে। পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তি ডিঙাইয়া বাক্য যেখানে শেষ হইবে–তাহা পঙ্ক্তির প্রথমের দিকেই বা মাঝের দিকেই হউক, কিংবা শেষেই হউক—সেইখানেই পূর্ণচ্ছেদ বসিবে।

(ক) ভারত-রসের স্রোতঃ আনিয়াছ তুমি
জুড়াতে গৌড়ের তৃষা সে বিমল জলে।

(খ) গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে—
মৈত্রমহাশয় যাবে সাগর-সঙ্গমে
তীর্থস্নান লাগি।

(গ) এ নরক সহিতে কি পারিতাম, হে বন্ধু, যদি না
লিপ্ত হতো রক্তে মোর, বিদ্ধ হতো গূঢ় মর্মমূলে
তোমার অক্ষয়মন্ত্র। অন্তরে লভেছি তব বাণী
তাই তো মানি না ভয়, জীবনেরই জয় হবে জানি।

। অর্ধচ্ছেদ (;)

মাঝে মাঝে কোনো একটি বড়ো বাক্যের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোটো বাক্য একটি বা একের বেশী থাকে। এইরূপ ছোটো ছোটো বাক্যের শেষে অর্ধচ্ছেদ বসে। অর্ধচ্ছেদের স্থানে পূর্ণচ্ছেদ অপেক্ষা একটু অল্প সময় থামিতে হয়। যেমন : “নিশ্চয়ই বৃদ্ধ ভয়ে এই কাজ করিয়া ফেলিয়াছে; সাক্ষীর বাক্সের মধ্যে উঠিয়া বুড়া বুদ্ধি ঠিক রাখিতে পারে নাই; এমনতরো আস্ত নির্বোধ সমস্ত শহর খুঁজিলে মিলে না।” “মেলা অস্থায়ী বলেই আনন্দদায়ক; সে যখন স্থায়ী হয়, তখন তার নাম বাজার। মেলা যেন কবিতা; বাজার গদ্য।” বিধিবদ্ধ নিয়মে ছবি আঁকলেই ছবি প্রাণ পায় না; ছবিতে কারুকারের ভাবলাবণ্য ও ভক্তির পবিত্রতা মেশাতে হয়; তাতেই ছবি প্রাণবন্ত হয়। “কেরানী অবতারে বধ্য অসুর দপ্তরী; মাস্টার অবতারে বধ্য ছাত্র; স্টেশন-মাস্টার অবতারে বধ্য টিকেটহীন পথিক; ব্রাহ্মাবতারে বধ্য চালকলাপ্রত্যাশী পুরোহিত ডাক্তার অবতারে বধ্য রোগী; উকিল অবতারে বধ্য মোয়াক্কল; হাকিম অবতারে বধ্য বিচারার্থী; জমিদার অবতারে বধ্য প্রজা; সম্পাদক অবতারে বধ্য ভদ্রলোক এবং নিষ্কর্মাবতারে বধ্য পুষ্করিণীর মৎস্য।”

। পাদচ্ছেদ (,)

বাক্যাংশের শেষে, কিংবা একই ধরনের দুইটি বা তাহাদের বেশী পদ পর পর উল্লেখ করিলে, কাহাকেও সম্বোধনে অথবা সাল, তারিখ, ঠিকানা বা উপাধি উল্লেখ করিতে হইলে অথবা উদ্ধরণ-চিহ্ন প্রয়োগ করিবার পূর্বে এই পাদচ্ছেদ ব্যবহৃত হয়। পাদচ্ছেদের স্থানে অর্ধচ্ছেদ অপেক্ষাও অল্প সময় থামিতে হয়। যেমন : রাম, শ্যাম, যদু, মধু সবাই এসেছে। “ধর্ম গেল, জাতি গেল, এখন তো প্রাণ পর্যন্ত যায়।” “কেষ্ট, আয় রে কাছে।” অক্ষয় মালঞ্চ, বাজেপ্রতাপ। শ্রীযুক্ত তারাপদ চট্টোপাধ্যায়, এম-এ, সাহিত্য-ভারতী। “তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে।” ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ। “ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।”

একই ধরনের দুইয়ের বেশী পদ উল্লেখ করিবার সময় ‘ইত্যাদি’ বা ‘প্রভৃতি’-র উল্লেখ না থাকিলে, শেষ দুইটি পদের মধ্যে পাদচ্ছেদ না বসাইয়া ‘ও’ ‘এবং’ ‘আর’ যেকোনো একটি সংযোজক অব্যয় বসাইতে হয়। যেমন : প্রেমেন, রমেন আর হীরেনকে ডাক তো গজেন। “কথাসাহিত্যে আমরা সর্বাগ্রে তিনটি বস্তুর প্রত্যাশা করি—কাহিনী, চরিত্রায়ণ ও বাগবিভূতি।” কর্মযোগীর ছয়টি ঐশ্বর্য—শক্তি, সাহস, শ্রম, উৎসাহ, ধৈর্য আর অধ্যবসায়।

পাদচ্ছেদ নাই এমন স্থানেও সরব পাঠকালে অতি অল্পসময়ের জন্য থামিতে হয়ই। মনে হয় সেইসব স্থানে অদৃশ্য পাদচ্ছেদ রহিয়াছে। এই অদৃশ্য পাদচ্ছেদগুলি যতখানি অর্থবোধক ততোধিক সৌন্দর্যবোধক। ইহারা সরব পাঠকে বড়োই শ্রুতিসুখকর করিয়া তোলে। ইহা বুদ্ধির প্রশ্ন নহে, বোধের প্রশ্ন। দীর্ঘকাল অনুশীলনের ফলে এই বোধ জাগ্রৎ হয়। “আমার ক্যাম্প-চেয়ারের পাশেই (,) দীর্ঘ দীর্ঘ ঘাস (,) আধ-শুকনো, সোনালী রঙের। রোদ-পোড়া মাটির (,) সোঁদা গন্ধ, শুকনো ঘাসের গন্ধ, কি একটা বনফুলের গন্ধ, যেন দুর্গাপ্রতিমার (,) রাঙতার ডাকের সাজের (,) গন্ধের মতো। মনের মধ্যে এই উন্মুক্ত, বন্য জীবন (,) আনিয়া দিয়াছে একটি মুক্তি (,) ও আনন্দের অনুভূতি—যাহা (,) কোথাও কখনও আসে না (,) এইরকম বিরাট (,) নির্জন প্রান্তর (,) ও জনহীন অঞ্চল ছাড়া। অভিজ্ঞতা না থাকিলে (,) বলিয়া বোঝানো বড়ই কঠিন (,) সে মুক্ত জীবনের উল্লাস।’

[আরণ্যক : বিভূতিভূষণ]

এইরূপ আরও একটি উদাহরণ দেখ : মৃত্যুঞ্জয় (,) বারবার করিয়া (,) এই স্বর্ণপুঞ্জ স্পর্শ করিয়া (,) ঘরময় ঘুরিয়া ঘুরিয়া (,) বেড়াইতে লাগিল। ছোটো ছোটো স্বর্ণখণ্ড টানিয়া (,) মেজের উপরে ফেলিতে লাগিল, কোলের উপর তুমিতে লাগিল, একটার উপরে আর-একটা (,) আঘাত করিয়া (,) শব্দ করিতে লাগিল, সর্বাঙ্গের উপর বুলাইয়া (,) তাহার স্পর্শ লইতে লাগিল। অবশেষে (,) শ্রান্ত হইয়া (,) সোনার পাত বিছাইয়া (,) তাহার উপর শয়ন করিয়া (,) ঘুমাইয়া পড়িল।

[গুপ্তধন : রবীন্দ্রনাথ ]

। জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?)

যে বাক্যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বুঝায়, সেই বাক্যের শেষে এই জিজ্ঞসা-চিহ্ন বসে। এইরূপ চিহ্নের স্থানে পূর্ণচ্ছেদের মতোই থামিতে হয়। যেমন : নবীনবাবু কি এখনো আসেননি? সুজাতা আজ কী খাবে, ডাক্তারবাবু? ভাত? না, রুটি? চোখের মাথা খেয়েছ নাকি? “কোন্ দেশের মানুষ খাইতে না পাইয়া ঘাস খায়? কাঁটা খায়? উইমাটি খায়?” “স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?” আমাদের দেশপ্রীতি কি আদৌ বুকের, না একান্তই মুখের? “জিজ্ঞাসা করিলাম, কত বড় পাড়? কেমন স্রোত?” “তুই দাঁড় টানতে পারিস?” “এ সমস্যার কি পূরণ হয় না? এ সঙ্কট হইতে কি পরিত্রাণের উপায় নাই? বঙ্গীয় লেখককুল কি এই প্রতিকূল বাত্যায় ভগ্নপোত হইয়া অপার সমুদ্রে ভাসিবেন? তাঁহারা কি কুলে উঠিতে পারিবেন না?” “কেন দিলে নির্বাসন ভ্রাতৃকুল হতে?”

ছেদচিহ্নের যথাযথ প্রয়োগ না করিলে অর্থবোধে বিঘ্ন ঘটে বা অর্থ সম্পূর্ণ পালটাইয়াও যায়। একটা? না, দুটো?—একটানা দুটো। গুরুজনের কথা শুনবে, না শুনলে জীবনে দুঃখ পাবে। [পাদচ্ছেদটি ‘না’-এর পরে বসাইলে বাক্যটির অর্থই পালটাইয়া যাইবে।] মিথ্যা কথা বলিবে না, বলিলে শাস্তি পাইবে। [এক্ষেত্রে পাদচ্ছেদটি ‘না’-এর পূর্বে বসাইলে অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত হইয়া যাইবে।]

। বিস্ময়াদিসূচক-চিহ্ন (!)

বিস্ময়, আনন্দ, ঘৃণা প্রভৃতি মনের ভাব প্রকাশ করিতে কিংবা কাহাকেও সম্বোধন করিতে এই বিস্ময়াদিসূচক-চিহ্নের প্রয়োগ হয়। যেমন : ছিঃ ছিঃ! ভাই! একি ব্যবহার! মরি মরি! কী অপূর্ব ছবি! আঃ, বড় বিরক্ত কর তুমি! “আশ্চর্য তোমার লজ্জাবোধ, মোহনলাল!” “আহা কী দেখিলাম!” “গাইল, ‘জয় মা জগন্মোহিনি! জগজ্জননি! ভারতবর্ষ!’ “ “নমি তোমা, নরদেব! কি গর্বে গৌরবে দাঁড়ায়েছ তুমি!” “অদ্রিতলে শিলাখণ্ড—দৃষ্টি অগোচরে বহু অদ্রি-ভার!” “কি অসাধারণ ধৈর্য! কি অভাবনীয় সহিষ্ণুতা-শক্তি!” “সিংহাসন! যে ফিরালো মাতৃস্নেহপাশ তাহারে দিতেছ, মাতঃ, রাজ্যের আশ্বাস! “

পূর্ণচ্ছেদ, জিজ্ঞাসা-চিহ্ন ও বিস্ময়াদিসূচক-চিহ্ন বাক্যের শ্রেণীনির্দেশ করে।

। উদ্ধরণ-চিহ্ন (“…” বা ‘…’)

বাক্যমধ্যে কাহারও কোনো বক্তব্য অবিকল উদ্ধৃত করিবার সময় এই উদ্ধরণ-চিহ্নের ব্যবহার হয়। উদ্ধরণ-চিহ্নটির পূর্বে একটি পাদচ্ছেদ বসে। যেমন—রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন, “দেশ শুধু মাটিকে লইয়া নহে, দেশ মানুষকে লইয়াও।” ভগিনী নিবেদিতা ঐতিহাসিক যদুনাথকে বলেছিলেন, “কোনো বিদেশীর কাছে নিজের জাতীয় পতাকা কখনও অবনমিত করবে না।” ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছেন, “গুরু ও বেদান্তবাক্যে আস্তিক্যবুদ্ধিই শ্রদ্ধা।” নেতাজী বলিয়াছেন, “তু মুঝে খুন দে, মৈ তুঝকো আজাদি দুঙ্গা।” “চঞ্চল বালক আসি শুধায় ব্রাহ্মণে, ‘ঠাকুর, কখন আজি আসিবে জোয়ার?” “কহিলা সত্রাসে পাণ্ডুগণ্ডদেশ রক্ষঃ মিত্রচূড়ামণি,—”কি আর কহিব দেব? কাঁপিছে এ পুরী রক্ষোবীরপদভরে, নহে ভূকম্পনে।’

আরম্ভের ও সমাপ্তির উদ্ধরণ-চিহ্নের আকৃতিগত পার্থক্যটুকু ভালোভাবে লক্ষ্য কর।

কোনো উদ্ধৃতিমধ্যে অন্য কাহারও উক্তি থাকিলে সেই উক্তিটি ‘…’ এই উদ্ধরণ-চিহ্নের মধ্যে রাখাই ভালো। যুধিষ্ঠির বললেন, “দুঃখপীড়িত এই সংসারে মানুষ নিজের কামনার জালে নিজেই মাকড়সার মতো জড়িয়ে আছে। স্বয়ং ব্ৰহ্মা বলেছেন, ‘শুধু পাপ ও অধর্ম থেকেই নয়, ধর্ম এবং পুণ্যেরও ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। ভালো এবং মন্দ উভয়ের দোষ থেকে মুক্ত হলে, মাটি আর সোনা এক হয়ে যায়।’

একাধিক অনুচ্ছেদব্যাপী একটানা কাহারও সুদীর্ঘ উক্তি যথাযথ উদ্ধৃত করিতে হইলে প্রতিটি অনুচ্ছেদ আরম্ভকালে আরম্ভের উদ্ধরণ-চিহ্নটি যথাযথ দিতেই হইবে, কিন্তু সেই-সেই অনুচ্ছেদশেষে সমাপ্তিসূচক উদ্ধরণ-চিহ্নটি বসে না—কেবল সর্বশেষ অনুচ্ছেদটির শেষেই সমাপ্তিসূচক উদ্ধরণ-চিহ্নটি শেষবারের মতো একবারই বসিবে।

। পদসংযোজক-চিহ্ন (-)

(ক) কোনো পঙ্ক্তির শেষে একটি শব্দ সম্পূর্ণ বসাইবার স্থানসংকুলান না হইলে পদটির প্রথমাংশ বসাইয়া একটি পদসংযোজক-চিহ্ন দিয়া পঙ্ক্তিটি শেষ করিতে হয়। (খ) সমাসবদ্ধ পদ লিখিবার সময়, কিংবা (গ) অনেক স্থানে শ্রুতিমাধুর্য নষ্ট হইবার আশঙ্কায় পরস্পর সন্নিহিত দুইটি পদ সন্ধিবদ্ধ না করিয়া মাত্র পদসংযোজক-চিহ্নদ্বারা যুক্ত করা হয়। (ঘ) বহুপদময় বিশেষণ পদটিকেও এই চিহ্ন দ্বারা একটিমাত্র পদে পরিণত করা হয়। যেমন—আত্মীয়-কুটুম্ব, বন্ধু-বান্ধব সকলকেই জানিয়েছি। শিশু-উদ্যানে আজ জন্মাষ্টমী-উৎসব পালিত হচ্ছে। “সদ্য-গজিয়ে ওঠা কচি কচি পাতা।” মনের কোণে দেয় যে উঁকি দিনগুলো সেই পিছনে-ফেলে-আসা। সেই দারিদ্র্য-ফুটে-ওঠা মুখে অনেক-কষ্টের-টেনে—আনা হাসি বেশীক্ষণ টিকল না। “বর্তমান বাংলাদেশের অনেক সাহিত্যিকই হইলে-হইতে-পারিত বনস্পতি।” “সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।”

। দৃষ্টান্ত-চিহ্ন (:)

যেকোনো উদাহরণ দিবার সময় এই চিহ্নের প্রয়োগ হয় বলিয়াই ইহার নাম দৃষ্টান্ত-চিহ্ন (কোলন)। যেমন : নীচের প্রতিটি উদাহরণে কোন্ মূল শব্দে কী প্রত্যয় যুক্ত হইয়াছে বল : নেতৃত্ব, বৃহত্তর, গল্পবাজ, কাশ্মীরী।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত-চিহ্নের সঙ্গে একটি রেখা-চিহ্নও বসানো হয়। যেমন : পুরুষার্থ চারিটি :–ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ।

। রেখা-চিহ্ন (—)

(ক) কোনো বিষয়ে দৃষ্টান্ত দিবার পূর্বে, (খ) পূর্বের কথাটি স্পষ্টতর করিবার জন্য অন্যতর বাক্যাংশ প্রয়োগের পূর্বে, অথবা (গ) একটি বিষয় বলিতে বলিতে অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করিবার পূর্বে এই রেখা-চিহ্নের ব্যবহার হয়। যেমন : গুণ তিনটি– সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ। “সকলেই লিখিবে—যে বাঙ্গালী, সেই লিখিবে।” এ প্রশ্নের উত্তর—কিছু মনে করবেন না—বড়ো বড়ো পণ্ডিতেও পারবেন কিনা সন্দেহ। “তখন সেইরূপ আর একটা ছায়া—শুষ্ক কৃষ্ণবর্ণ, দীর্ঘাকার, উলঙ্গ—প্রথম ছায়ার পাশে আসিয়া দাঁড়াইল।” “পরের অস্ত্র কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্র নির্ভয়ে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠে—এইখানেই মানুষের পতন।” “এই যে হৃদ্যতাটুকু—এই যে ব্যথার ব্যথী ভাব—ইহা আর কিছুতেই থাকে না।”

অনেকে রেখা-চিহ্নের পূর্বে একটি কোলন (:) বসান। অনেক সময় শুধু কোলন বসাইয়াই উদাহরণ দেওয়া হয়, রেখা-চিহ্নের দরকারই হয় না।

১০। লোপ-চিহ্ন ( ’ )

পদমধ্যস্থ কোনো বর্ণের বিলোপ ঘটিলে সেই লুপ্ত বর্ণের স্থানে যে ঊর্ধ্ব-কমার প্রয়োগ হয়, তাহাকে লোপ-চিহ্ন বলে। যেমন : (ক) “চুমাটি খাইতে মু’খানি গেল যে নড়ে!” [ এখানে পূর্ণাঙ্গ মুখখানি পদটি বসাইলে ছন্দপতন ঘটে বলিয়া কবি মোহিতলাল পদটির খ বর্ণটিকে লোপ করিয়া লোপ-চিহ্নযোগে পদটিকে তিনমাত্রায় আনিয়াছেন। ] (খ) “আঁকিতেছিল সে যত্নে সিঁদুর সীমন্তসীমা-’পরে।” [ এখানে রবীন্দ্রনাথ উপরে কথাটির উ স্বরবর্ণটিকে লোপ করিয়া তৎস্থানে লোপ-চিহ্ন বসাইয়া শব্দটিকে দুই মাত্রায় সংকুচিত করিয়াছেন। ] (গ) “কে ওই রমণী প’ড়ে একধারে।” [ পড়িয়া এই সাধু রূপের ক্রিয়াপদটি অপিনিহিতি ও অভিশ্রুতি স্তরদ্বয় অতিক্রম করিয়া শেষে স্বরসঙ্গতির প্রভাবে পড়ে এই চলিত রূপটি লাভ করিয়াছে। এই লোপ-চিহ্নের জন্যই প ও-কারের উচ্চারণ পাইয়াছে—বিশেষভাবে লক্ষ্য কর। ] (ঘ) “নিল সে আমার কালব্যাধিভার আপনার দেহ-’পরে।” (ঙ) “সত্য ভঙ্গ করে এতগুলি প্রাণী তুই ডুবাবি সাগরে!”

বর্তমানে চলিত রীতির রচনা ব্যাপকতালাভ করিয়াছে; তাই প্রতিটি চলিত ক্রিয়াপদে (কী সমাপিকা, কী অসমাপিকা) কিংবা অন্যান্য পদে লোপ-চিহ্ন প্রয়োগ করিতে হইলে লেখার গতি পদে পদে ব্যাহত হইবে। তাই রবীন্দ্রনাথ লোপ-চিহ্ন ব্যবহারকে খুবই সীমিত করিয়া আনিলেন। যেমন : “এমন করে কি মরণের পানে ছুটিয়া চলিতে আছে!” “মা হয়ে আপন পুত্র দিলি দেবতারে।” “কী বলেছি রোষবশে-ওগো অন্তর্যামী, তাই সত্য হল!” “জানি তারও পথ দিয়ে বয়ে যাবে কাল।” “হাড়কাঠের সামনে তারা যে ভ্যাঁ করে ডাকে, সেটাকেও বাহুল্য বলে আপত্তি করে।”

১১। বর্জন-চিহ্ন (…)

উদ্ধৃতি দিবার সময় অপ্রয়োজনীয় অংশ বর্জন করিলে সেই স্থানে এই বর্জন-চিহ্ন প্রয়োগ করা হয়। যেমন : (ক) “ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের দৃষ্টি যাতে ক্রুদ্ধ হয়ে না ওঠে, সেই দৃষ্টিতে কৌরবেরা যাতে দগ্ধ হয়ে না যায়, তাই দয়ালু যুধিষ্ঠির চক্ষু আবৃত করে চলেছেন। শত্রুদের উপরে আপন বাহুবল প্রয়োগ করবেন এই কথা জানাবার জন্যই ভীম তাঁর বাহুদ্বয় প্রসারিত করে চলেছেন। অযুত বাণবর্ষণের পূর্বাভাসরূপে অর্জুন বালুকা বর্ষণ করে চলেছেন। …….

(খ) “কিছুদিন আগে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, দরিদ্রের মধ্যে দিয়ে নারায়ণ আমাদের সেবা পেতে চান। একেই বলি বাণী। এ বাণী স্বার্থবোধের সীমার বাইরে মানুষের আত্মবোধকে অসীম মুক্তির পথ দেখালে। এ তো কোনো বিশেষ আচারের উপদেশ নয়, ব্যবহারিক সংকীর্ণ অনুশাসন নয়। ছুঁৎমার্গের বিরুদ্ধতা এর মধ্যে আপনিই এসে পড়েছে, তার দ্বারা মানুষের অপমান দূর হবে বলে, সেই অপমানে আমাদের প্রত্যেকের আত্মাবমাননা।”—রবীন্দ্রনাথ।

১২। বন্ধনী-চিহ্ন ()

(ক) বাক্যস্থিত কোনো পদ বা পদসমষ্টির ব্যাখ্যার প্রয়োজন হইলে, (খ) কোনো উদ্ধৃতির উৎস-নির্দেশ করিবার সময় এবং (গ) নাটকের অভিনয়ে মঞ্চনির্দেশের বিষয়গুলি বন্ধনী-চিহ্নের অন্তর্ভূত রাখা হয়।

(i) “দিবসের পঞ্চম অথবা ষষ্ঠভাগে (সন্ধ্যায়) নিজগৃহে যে শাকান্ন আহার করে, যে অঋণী অপ্রবাসী, সেই সুখী।”

(ii) সকল ধর্ম পরিত্যাগ করে একমাত্র আমাতেই শরণ নাও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ ও অশুভ থেকে মুক্তি দেব। দুঃখ করো না। [শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ১৮/৬৬]

(ii) চন্দ্রা। তরী ডোবাবে একদিন বলে দিলুম, তোমার সেই সাধের নন্দিনী।

[ গোকুল ও খোদাইকরের প্রবেশ ]

(iv) নুরজাহান। [ উচ্চৈঃস্বরে ] লয়লা!

লয়লা। [ তদ্রূপ উচ্চৈঃস্বরে ] নুরজাহান

যতিচিহ্ন

এইবার যতিচিহ্ন (Metrical Pause)। ছেদ ও যতিচিহ্ন কদাপি এক নয়। কবিতার প্রতিটি চরণে সমমাত্রার একাধিক পর্ব থাকে। যতিচিহ্ন সেই পর্বগুলিকে পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেয়। যতির উপর ছন্দের দোলা নির্ভর করে, আর ছেদের উপর বাক্যের অর্থ নির্ভর করে।

যতি দুই রকমের—অৰ্ধতি (।) ও পূর্ণতি (II)। দুইটি পর্বের মধ্যস্থিত যতিকে অর্ধযতি বলা হয়। চরণের শেষস্থ যতির নাম পূর্ণযতি। অর্ধযতি বা পূর্ণযতির সঙ্গে স্থানে স্থানে কোনো কোনো ছেদচিহ্ন মিলিয়া যাইতে পারে। কেবল যতিচিহ্নের জন্য কোথাও থামিবার প্রয়োজন নাই। কয়েকটি উদাহরণ দেখ :

(ক) মহাভারতের কথা | অমৃত-সমান। || (৮+৬) মাত্রা
হে কাশি, কবীশদলে | তুমি পুণ্যবান্॥ ||  (৮+৬) মাত্রা

প্রথম চরণে পূর্ণযতির সঙ্গে পূর্ণচ্ছেদ ও দ্বিতীয় চরণের শেষে পূর্ণযতির সঙ্গে জোড়া পূর্ণচ্ছেদের মিলন ঘটিয়া গিয়াছে।

(খ) গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা। || (৮+৫) মাত্রা
কূলে একা বসে আছি, | নাহি ভরসা। || (৮+৫) মাত্রা

(গ) আইল পতাকী-দল, | উড়িল পতাকা, || (৮+৬) মাত্রা
ধূমকেতুরাশি যেন | উদিল সহসা || (৮+৬) মাত্রা
আকাশে! রাক্ষসবাদ্য | বাজিল চৌদিকে। || (৮+৬) মাত্রা

শ্রীমধুসূদন-রচিত প্রবহমান অমিত্রাক্ষর ছন্দের উদাহরণটিতে প্রথম পঙ্ক্তিতে অর্ধযতি ও পূর্ণযতি পাদচ্ছেদের সঙ্গে মিলিয়া গিয়াছে; তৃতীয় পক্তির শেষে পূর্ণযতি ও পূর্ণচ্ছেদ মিলিয়া গিয়াছে।

(ঘ) এ বয়স কাঁপে | বেদনায় থরো | থরো। || (৬+৬+২) মাত্রা

ছয়-মাত্রার দুইটি পূর্ণ পর্বের পরে-পরে অর্ধযতি এবং দুই মাত্রার খণ্ড পর্বটির সঙ্গে-সঙ্গে চরণ শেষ হওয়ায় পূর্ণযতি পড়িয়াছে; বাক্য শেষ হওয়ায় পূর্ণচ্ছেদও ওই সঙ্গে পড়িয়াছে। থরোথরো কথাটি অর্ধযতির দ্বারা দুইটি ভাগে বিভক্ত হইয়া প্রথমাংশটি দ্বিতীয় পর্বে চলিয়া গিয়াছে এবং শেষাংশটি দুই মাত্রার পৃথক্ একটি খণ্ডপর্বে পরিণত হইয়াছে। পরের উদাহরণ দুইটিতেও দ্বিতীয় চরণে বাক্য শেষ হওয়ায় পূর্ণযতি ও পূর্ণচ্ছেদ একই সঙ্গে পড়িয়াছে।

(ঙ) নির্মল সে নীলিমায় | প্রভাত ও সন্ধ্যায় রাঙালো ||
যুগে যুগে সূর্যোদয় | সূর্যাস্তের আলো। ||

(চ) জ্বলে শৈলে সূর্য কিরণবিম্ব,। দলিত ছিন্ন | কুজঝটি; || (৬+৬+৬+৪)
শোভে অভ্র-সুষমা, | যেন রে শুদ্ধা | গৌরকান্তি | অম্বিকা। || (৬+৬+৬+৪)

এখানে জ্বলে, শোভে এই দুইটি অতিরিক্ত কথাকে অতিমাত্রার পর্ব বলা হয়। এইরকম কথা ছন্দের বাহিরে থাকিবে, অথচ ছন্দের নিয়মিত দোলাটি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, সেদিকে বিশেষ সচেতন থাকিতেই হইবে।

বাক্যের অন্যান্য শ্রেণীবিভাগ

অর্থানুসারে বাক্যকে আবার সাতটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়—(1) নির্দেশাত্মক, (২) প্রশ্নসূচক, (৩) অনুজ্ঞাসূচক, (৪) প্রার্থনাসূচক, (৫) বিস্ময়াদিবোধক, (৬) কার্যকারণাত্মক ও (৭) সন্দেহবোধক। এইসব ক্ষেত্রে বাক্যরচনায় ছেদচিহ্নের যথাযথ প্রয়োগ একান্ত অপরিহার্য।

(১) নির্দেশাত্মক : যে বাক্যে কোনোকিছু নির্দেশ করা বা অস্বীকার করা হয় তাহাই নির্দেশাত্মক (নির্দেশক) বাক্য। নির্দেশাত্মক বাক্যকে আবার অস্ত্যর্থক (ইতিবাচক) ও নাস্ত্যর্থক (নেতিবাচক) এই দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়।—

(ক) অস্ত্যর্থক : কবিতাটি বড়োই সুখপাঠ্য। মিথ্যাবাদীকে সকলেই অবিশ্বাস করে। “মিটিল সব ক্ষুধা, সঞ্জীবনী সুধা এনেছে অশরণ লাগি রে।” “(আমার) নিজহাতে গড়া বিপদের মাঝে বুকে করে নিয়ে রয়েছ।” “লছ লহু হাসে পহুঁ পিরীতির সার।”

(খ) নাস্ত্যর্থক : “দুবেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।” তোমার এখানে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সংখ্যা বেশী নয়। যাবজ্জীবন চেষ্টা করলেও কেউ সব আশা পূর্ণ করতে পারে না। “রূপ দেখি হিয়ার আরতি নাহি টুটে।” “তন্দ্রা মম রইবে না আর চক্ষে।” “এ শোকের সান্ত্বনা হত্যা নহে।” “নহে নহে প্রিয়, এ নয় আঁখিজল।”

দুইটি নেতিবাচক বাক্যাংশ মিলিয়া একটি ইতিবাচক বাক্যের সৃষ্টি করে : এখানে এমন কেউ নেই যিনি ঠাকুরের প্রসাদ পাননি (এখানে উপস্থিত সকলেই ঠাকুরের প্রসাদ পেয়েছেন—এই অর্থই প্রকাশ পাইতেছে)।

(২) প্রশ্নসূচক : যে বাক্যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বুঝায় তাহাই প্রশ্নসূচক (প্রশ্নবাচক) বাক্য। “দা-ঠাউর, বাড়ি আছ কি?” সুখ কি বাইরে খোঁজবার জিনিস? “কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ?” “কে দিল ঔষধ রোগে, ক্ষতে প্রলেপন—স্নেহে-অনুরাগে?” “দাঁড়িয়ে কে রে ও? তোরি ছেলে নাকি? মদনা না ওর নাম?” “কেন দিলে নির্বাসন ভ্রাতৃকুল হতে?”

(৩) অনুজ্ঞাসূচক : যে বাক্যে আদেশ উপদেশ অনুরোধ উপরোধ ইত্যাদি বুঝায় তাহাকে অনুজ্ঞাসূচক (অনুজ্ঞাবাচক) বাক্য বলে। এমন কাজ আর কখনও করো না। “প্রেমে হও বলী।” ভাই, আমাকে একটু সাহায্য কর। “সেই মধুব্রহ্মের ভজনা কর।”

(৪) প্রার্থনাসূচক : যে বাক্যে বক্তা কোনোকিছু প্রার্থনা বা ইচ্ছা প্রকাশ করে তাহাকে প্রার্থনাসূচক (ইচ্ছাবাচক) বাক্য বলে। জগদীশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তোমাদের চলার পথ বাধামুক্ত হোক। “আমায় দে মা তবিলদারি।” “মা, আমায় মানুষ কর।” শূন্যাঞ্জলি তোমার পূর্ণাঞ্জলি হোক। “এস আমার দৈন্যমাঝে রাজার সাজে।” “যৌবনেরই পরশমণি করাও তবে স্পর্শ।”

(৫) বিস্ময়াদিবোধক : যে বাক্যে আনন্দ, বিস্ময়, উৎসাহ, ঘৃণা, ক্রোধ, ভয় প্রভৃতি মনের ভাব প্রকাশ পায় তাহাকে বিস্ময়াদিবোধক (আবেগবাচক) বাক্য বলে। “আহা কী সুন্দর নিশি, চন্দ্রমা উদয়!” “মরি মরি! কী মনোরম সূর্যোদয়!” “রে লক্ষ্মণ! ক্ষত্রকুলগ্লানি তুই!” কী জঘন্য অপরাধ! “শাবাশ! শাবাশ! তোরা বাঙালীর মেয়ে।” হায় হায়! সর্বনাশ হল! “এ যে দেখি তুই বাপেরেও গেলি জিতে!” “ইশ! সাধ করে আবার নাম রাখা হয়েছে মহেশ! “

(৬) কার্যকারণাত্মক : যে বাক্যে কার্যের কোনো কারণ বা শর্তের উল্লেখ থাকে তাহাকে কার্যকারণাত্মক (শর্তসাপেক্ষ) বাক্য বলে। যদি আপনি একবারটি আসেন, আমাদের আনন্দ ষোলকলায় পূর্ণ হয়। মন দিয়ে না পড়লে সাফল্য আসবেই না। ধানবিক্রির টাকাটা এসে গেলে চাঁদা দেব। “তুমি কমলাকান্ত দূরদর্শী, কেননা আফিমখোর।” “অন্তরে লভেছি তব বাণী, তাই তো মানি না ভয়, জীবনেরই জয় হবে জানি।” “অ্যাটম বোমের লড়াই শুরু হলে পৃথিবীটাই হবে ধ্বংস, বাঁচবে না কেউ।”

(৭) সন্দেহবোধক : বুঝি, বোধ হয়, হয়তো প্রভৃতির প্রয়োগে বক্তার সন্দেহ বা অনুমান প্রকাশ পাইলে বাক্যটিকে সন্দেহবোধক (সন্দেহবাচক) বাক্য বলা হয়। তোরা বুঝি এবাড়ি ছেড়ে দিচ্ছিস! বোধ হয় সভায় তিনি আসছেন না। চাকরিতে হয়তো সে ইস্তফাই দেবে। “কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে!” “কোথা যেন হতেছে প্রলয়!” “যদি কোথাও শান্তি থাকে তা অদ্বেষে।” “হেনকালে ডাকল বুঝি নীরব তব শঙ্খ।” “বলিতে পারি না, বুঝি তাহার ভিতর একটু ব্যঙ্গ ছিল।” “তখন ছিন্নভিন্ন মেঘের আড়ালে বোধ করি যেন চাঁদ উঠিতেছিল।” “এ বাঙালী বাবুটির মাথায় নিশ্চয় দোষ আছে।”

উক্তি-পরিবর্তন

১৯৯। উক্তি : বক্তার কথাগুলি যথাযথ উদ্ধৃত করা বা তাঁহার মূল ভাবটি প্রকাশকের নিজের কথায় বলাকে উক্তি বলা হয়।

বাংলা ভাষায় উক্তি দুইপ্রকার—প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ।

প্রত্যক্ষ উক্তি-বক্তার কথাগুলি যথাযথ উদ্ধৃত করাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। রাম বলিল, “আজ স্কুলে যাব না।” ভবানন্দ তাহাকে বলিল, “সংবাদ কিছু পাইলে?”

পরোক্ষ উক্তি—বক্তার কথাগুলি যথাযথ উদ্ধৃত না করিয়া সম্পূর্ণরূপে প্রকাশকের নিজের ভাষায় বলিলে পরোক্ষ উক্তি হয়। রাম বলিল যে, সে আজ (একই দিন বুঝাইলে; নতুবা সেদিন) স্কুলে যাইবে না। সংবাদ সে কিছু পাইয়াছে কিনা ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিল।

উক্তি-পরিবর্তনের সাধারণ নিয়ম

(১) প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার কথাগুলি যথাযথ উদ্ধরণ-চিহ্নের (‘…’ বা “…”) মধ্যে থাকে। উদ্ধরণ-চিহ্নটির পূর্বে পাদচ্ছেদ (,) বসে। পরোক্ষ উক্তিতে উদ্ধরণ-চিহ্নটি তুলিয়া দিয়া উক্তিটির পূর্বে ‘যে’ সংযোজক অব্যয়টি বসাইতে হয়।

(২) সর্বনাম, পুরুষ ও ক্রিয়াপদ পরোক্ষ উক্তিতে অর্থানুযায়ী পরিবর্তিত হয়। (৩) প্রত্যক্ষ উক্তির সম্বোধনপদটি পরোক্ষ উক্তিতে কর্মকারকের বিভক্তিযুক্ত হয়।

(৪) প্রত্যক্ষ উক্তির কতকগুলি বিশেষণ বা ক্রিয়াবিশেষণ পরোক্ষ উক্তিতে এইভাবে পরিবর্তিত হয় : এখন—তখন; এই—সেই; এখানে-সেখানে; আগামীকল্য—পরদিন; গতকল্য—পূর্বদিন; আজ—সেদিন; এবার—সেবার; পরশু—গতকল্যের পূর্বদিন অথবা আগামীকল্যের পরদিন।

উক্তি-পরিবর্তনের সময় মূল ক্রিয়াপদটি যদি সাধু রীতিতে থাকে, তাহা হইলে উদ্ধৃতিটি চলিতে থাকিলেও সাধু রীতিতে রূপান্তরিত করিতে হইবে।

এখন বিভিন্ন ধরনের বাক্যের উক্তি-পরিবর্তন দেখ।—

নির্দেশাত্মক বাক্য

(১) প্রত্যক্ষ : শ্যামলেন্দুবাবু বলিলেন, “আগামীকল্য দিল্লি যাইব।”

পরোক্ষ : শ্যামলেন্দুবাবু বলিলেন যে পরদিন তিনি দিল্লি যাইবেন।

(২) প্রত্যক্ষ : অৰ্চনা বলিল, “গতকল্য আমাদের বাড়িতে এক সাধু আসিয়াছেন।”

পরোক্ষ : অর্চনা বলিল যে পূর্বদিন তাহাদের বাড়িতে এক সাধু আসিয়াছেন।

(৩) প্রত্যক্ষ : পণ্ডিতমশায় বললেন, “এই বীজে অঙ্কুরোদ্‌গম হবে না। “

পরোক্ষ : পণ্ডিতমশায় বললেন যে সেই বীজে অঙ্কুরোদ্‌গম হবে না।

(৪) প্রত্যক্ষ : চণ্ডীদাস কয় নবপরিচয় কালিয়া-বঁধুর সনে।

পরোক্ষ : চণ্ডীদাস কহিতেছেন যে, কালিয়া-বঁধুর সঙ্গে (রাধার নবপরিচয় ঘটিয়াছে।

(৫) প্রত্যক্ষ : “তুমি অদ্য হইতে তিন দিবস উপবাস করিয়া দেখ। তুমি যদি ইতিমধ্যে নসীরামবাবুর ভাণ্ডারঘরে ধরা না পড়, তবে আমাকে ঠেঙ্গাইয়া মারিও।”

[ বিড়াল : বঙ্কিমচন্দ্র ]

পরোক্ষ : মার্জারী কমলাকান্তকে একটি শর্ত জানাইল যে, সে (কমলাকান্ত) সেই দিন হইতে তিন দিবস উপবাস করিয়া দেখুক। সে (কমলাকান্ত) যদি ইতিমধ্যে নসীরামবাবুর ভাণ্ডারঘরে ধরা না পড়ে, তবে সে (খুশিমতো) তাহাকে (মার্জারীকে) ঠেঙ্গাইয়া মারিতে পারে।

(৬) প্রত্যক্ষ : “আগুনে গিয়েছে জ্বলে রূপ,
তবু ভালোবাসে পোড়া মুখ,
সুখেদুখে দিন কাটে বেশ।”

[ সহমরণ : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ]

পরোক্ষ : (মিশিওয়ালী বলিল যে, তাহার) রূপ আগুনে জ্বলিয়া গিয়াছে, তবু (তাহার মাঝি-স্বামী সেই) পোড়া মুখ ভালোবাসে। সুখেদুখে তাহার দিন বেশ কাটিতেছে।

প্রশ্নসূচক বাক্য

প্রত্যক্ষ উক্তিটি প্রশ্নসূচক হইলে প্রকাশকের ক্রিয়াটি ‘প্রশ্ন করিলেন’, ‘জিজ্ঞাসা করিলেন’ প্রভৃতি রূপে পরিবর্তিত হয়। বাক্যের শেষে জিজ্ঞাসাসূচক চিহ্নের পরিবর্তে পূর্ণচ্ছেদ বসে। ‘যে’ সংযোজক অব্যয়টি এরূপ ক্ষেত্রে আদৌ বসিবে না।

(১) প্রত্যক্ষ : রাম শ্যামকে বলিল, “তুমি কি নদীর ধারে বেড়াতে যাবে?” পরোক্ষ : রাম শ্যামকে জিজ্ঞাসা করিল সে (শ্যাম) নদীর ধারে বেড়াইতে যাইবে কিনা।

(২) প্রত্যক্ষ : প্রধানশিক্ষিকামহাশয়া বলিলেন, “অমলা, গতকল্য বিদ্যালয়ে আস নাই কেন?”

পরোক্ষ : অমলা পূর্বদিন বিদ্যালয়ে আসে নাই কেন তাহা প্রধানশিক্ষিকা—মহাশয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন।

(৩) প্রত্যক্ষ : আলেকজান্ডার বলিলেন, “পুরু, আমার কাছে কীরূপ ব্যবহার আশা কর?”

পরোক্ষ : আলেকজান্ডার পুরুকে জিজ্ঞাসা করিলেন তিনি (পুরু) তাঁহার (আলেকজাণ্ডারের) কাছে কীরূপ ব্যবহার আশা করেন।

(৪) প্রত্যক্ষ : চন্দ্রা। বেয়াই, অমন উলটিয়ে কথা কও কেন?

পরোক্ষ : (বিশুকে) বেয়াই বলে সম্বোধন করে চন্দ্রা জানতে চাইল সে (বিশু) অমন উলটিয়ে কথা কয় কেন।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্য

প্রত্যক্ষ উক্তিটি অনুজ্ঞাসূচক বাক্য হইলে প্রকাশকের ক্রিয়াটি অর্থ-হিসাবে ‘আদেশ করিলেন’, ‘অনুরোধ করিলেন’, ‘উপদেশ দিলেন’ ইত্যাদি রূপে পরিবর্তিত হয়।

(১) প্রত্যক্ষ : মনীষাদি বলিলেন, “রঞ্জিতা, কথা না বলিয়া অঙ্কটি কষ।” পরোক্ষ : রঞ্জিতাকে কথা না বলিয়া অঙ্কটি কষিবার জন্য মনীষাদি আদেশ করিলেন।

(২) প্রত্যক্ষ : দাদা আমাকে বলিলেন, “গুরুজনের বাধ্য হইও।” পরোক্ষ : দাদা আমাকে গুরুজনের বাধ্য হইতে উপদেশ দিলেন।

(৩) প্রত্যক্ষ : বাবলুকে বললাম, “তোমার কলমটা একবার দাও না।” পরোক্ষ : কলমটা একবার দেবার জন্য বাবলুকে অনুরোধ করলাম।

প্রার্থনাসূচক বাক্য

প্রত্যক্ষ উক্তিটি প্রার্থনাসূচক বাক্য হইলে মূল ক্রিয়াটি ‘প্রার্থনা করিলেন, ‘প্রার্থনা জানাইলেন’ ইত্যাদি রূপে পরিবর্তিত হয়।

(১) প্রত্যক্ষ : নরেন্দ্রনাথ দেবীকে বলিলেন, “মা, আমায় শুদ্ধা ভক্তি দাও।” পরোক্ষ : নরেন্দ্রনাথ দেবীর কাছে শুদ্ধা ভক্তির প্রার্থনা জানাইলেন। (২) প্রত্যক্ষ : গান্ধীজী গাহিলেন, “সবকো সন্মতি দে ভগবান্।” পরোক্ষ : সকলকে সন্মতি দিবার জন্য গান্ধীজী সঙ্গীতের মাধ্যমে ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানাইলেন।

(৩) প্রত্যক্ষ : কৰ্ণ। আজিও তেমনি
আমারে নির্মমচিত্তে তেয়াগো, জননী,
দীপ্তিহীন কীর্তিহীন পরাভব-’পরে।

[ কর্ণকুন্তীসংবাদ : রবীন্দ্রনাথ ]

পরোক্ষ : কুন্তীকে জননী বলে সম্বোধন করে কর্ণ সেদিনও তেমনি দীপ্তিহীন কীর্তিহীন পরাভব-’পরে তাঁকে (কর্ণকে) নিমমচিত্তে ত্যাগ করবার জন্য (তাঁর কাছে) প্রার্থনা জানালেন।

(৪) প্রত্যক্ষ : প্রধান। (অন্ধকারের ভিতর থেকে) দুটো খেতে দাও বাবু! ও বাবারা….

পরোক্ষ : অন্ধকারের ভিতর থেকে প্রধান বিয়েবাড়ির বাবুদের ‘বাবারা’ বলে সম্বোধন করে তাকে দুটো খেতে দেবার জন্য বড়োই কাতরকণ্ঠে আবেদন জানাল।

বিস্ময়াদিসূচক বাক্য

প্রত্যক্ষ উক্তিটি যদি বিস্ময়াদিসূচক বাক্য হয়, তবে প্রকাশকের ক্রিয়াটিকে বিস্ময়, আনন্দ, খেদ ইত্যাদি অর্থ-হিসাবে পরিবর্তিত করিয়া লইতে হয়। বাক্যের শেষে বিস্ময়সূচক-চিহ্নের পরিবর্তে পূর্ণচ্ছেদ বসে।

(১) প্রত্যক্ষ : বেলা বলিল, “কী চমৎকার ছবি!”

পরোক্ষ : বেলা আনন্দে বলিয়া উঠিল যে ছবিটি বড়োই চমৎকার।

(২) প্রত্যক্ষ : খুড়ো বললেন, “হায় হায়! কী বিপদেই না পড়লাম!”

 পরোক্ষ : খুড়ো খুব খেদোক্তি করে বললেন যে তিনি বড়োই বিপদে পড়েছেন।

(৩) প্রত্যক্ষ : সেকেন্দার বললেন, “কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস!”

পরোক্ষ : সেকেন্দার সেলুকাসকে সম্বোধন করে সবিস্ময় বললেন যে এই দেশ অত্যন্ত বিচিত্র।

(৪) প্রত্যক্ষ : কোতোয়াল বলিল, “এ কী বেয়াদবি!”

[ তোতাকাহিনী : রবীন্দ্রনাথ ]

পরোক্ষ : কোতোয়াল বিরাট্ বিস্ময়ের সঙ্গে জানাইল যে, উহা (রোগা ঠোঁট দিয়া পাখিটার খাঁচার শলা কাটার চেষ্টা) ভয়ানক বেয়াদবি।

এখন, নানা ধরনের বাক্য-সংবলিত অনুচ্ছেদের উক্তি-পরিবর্তন দেখা

(ক) একাদশী মুখ ফিরাইয়া বলিল, আজ্ঞে, এই যে শুনি; হাঁ রে নফর, তুই কি আমার মাথায় পা দিয়ে ডুবুতে চাস রে! সে দু’টাকা এখনো শোধ দিলিনে, আবার একটাকা চাইতে এসেচিস কোন্ লজ্জায় শুনি? বলি সুদ-টুদ কিছু এনেচিস?

[ একাদশী বৈরাগী : শরৎচন্দ্র ]

পরোক্ষ উক্তি : (অপূর্বর কথায়) একাদশী মুখ ফিরাইয়া যথারীতি সম্ভ্রমের সঙ্গেই জানাইল যে (তাহাদের লাইব্রেরীর) কথাটা সে শীঘ্রই শুনিবে। পরে নফরকে সম্বোধন করিয়া বিস্ময়ের সুরে সে জিজ্ঞাসা করিল সে (নফর) তাহার (একাদশীর) মাথায় পা দিয়া তাহাকে ডুবাইতে চায় কি না। (পুরাতন) দুইটাকা এখনো সে শোধ দিল না, অথচ আবার একটাকা সে চাহিতে আসিয়াছে কোন্ লজ্জায় তাহা একাদশী জানিতে চাহিল। সে (নফর) সুদ-টুদ কিছু আনিয়াছে কি না, তাহাও সে (একাদশী) জানিতে চাহিল। [ মূল ক্রিয়াপদটি সাধু রীতিতে আছে বলিয়া সমস্ত উদ্ধৃতিটিকেই সাধুতে আনিতে হইয়াছে। ]

(খ) চন্দ্রা। আহা, কী মধুর। বাবা, অনেক দিন এমন কথা শুনি নি। দাও দাও, আমাকে একটু পায়ের ধুলো দাও।

পরোক্ষ : চন্দ্রা অতি বিস্ময়ের সুরে জানাল যে গোসাঁইজীর কথাগুলো বড়োই মধুর। বেশ শ্রদ্ধাভরে ‘বাবা’ বলে তাঁকে সম্বোধন করে জানাল যে তেমন (মধুর) কথা সে অনেকদিন শোনে নি। তাকে একটু পায়ের ধুলো দেবার জন্যে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে সে প্রার্থনা জানাল।

(গ) রাজা দোব্রু বলিলেন, “এই গর্তের মুখে ঢুকতে হবে। আসুন আমার সঙ্গে। কোন ভয় নেই। জগরু আগে যাও।” [ আরণ্যক : বিভূতিভূষণ ]

পরোক্ষ : রাজা দোরু বলিলেন যে সেই গর্তের মুখে [ তাঁহাদের ] ঢুকিতে হইবে। (এই বলিয়া সত্যচরণকে) তাঁহার সঙ্গে আসিবার জন্য অনুরোধ করিলেন। তিনি (রাজা) তাঁহাকে (সত্যচরণকে) নির্ভয় হইবার আশ্বাসও দিলেন। জগরুকে আগে যাইবার জন্য তিনি আদেশ করিলেন।

(ঘ) সে (নিন্দুক) বলিয়া উঠিল, “মহারাজ, পাখিটাকে দেখিয়াছেন কি? “ রাজার চমক লাগিল, বলিলেন, “ঐ যা! মনে তো ছিল না। পাখিটাকে দেখা হয় নাই।”

ফিরিয়া আসিয়া পণ্ডিতকে বলিলেন, “পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই।”

[ তোতাকাহিনী : রবীন্দ্রনাথ ] পরোক্ষ : সে (নিন্দুক) যথোচিত সম্মানসহকারে মহারাজকে সম্বোধন করিয়া তিনি পাখিটাকে দেখিয়াছেন কি না জিজ্ঞাসা করিল।

রাজার চমক লাগিল, বিপুল বিস্ময় প্রকাশ করিয়া তিনি জানাইলেন যে [ পাখির কথা ] তাঁহার তো মনেই ছিল না। সঙ্গে-সঙ্গে ইহাও জানাইলেন যে পাখিটাকে [ তাঁহার ] দেখা হয় নাই।

ফিরিয়া আসিয়া তিনি পণ্ডিতকে বলিলেন যে, পাখিটাকে তাঁহারা কেমন শিখান তাহার কায়দাটা দেখা চাই।

(ঙ) ইন্দ্র বিরক্ত হইয়া ফিফিস্ করিয়া তর্জন করিয়া উঠিল, তবে এলি কেন? চল্ তোকে ফিরে রেখে আসি—কাপুরুষ। [ শ্রীকান্ত : শরৎচন্দ্র ]

পরোক্ষ : ইন্দ্র বিরক্ত হইয়া ফিফিস্ করিয়া তর্জন করিয়া জানিতে চাহিল আমি তাহা হইলে [ তাহার সঙ্গে ] আসিলাম কেন। চট করিয়া কাপুরুষ বলিয়া তীব্র তিরস্কার করিয়া আমাকে ফিরিয়া [ বাড়িতে ] রাখিয়া আসিবার মতলবও সেই সঙ্গে সে জানাইয়া দিল।

চ) এর আবার আপত্তি কি। তবে দেখবার এখন বিশেষকিছু নেই। আচ্ছা চলুন, আমি যাব। জগরু আমার সঙ্গে এস।

পরোক্ষ : আমার প্রস্তাবের উত্তরে তিনি (রাজা দোব্‌রু পান্না) জানাইলেন যে ইহাতে কোনো আপত্তি থাকিতে পারে না। তিনি অবশ্য ইহা বলিলেন যে তখন দেখিবার বিশেষকিছুই নাই। এই বলিয়াই তিনি সেখানে চলিবার অনুরোধ জানাইলেন এবং আমাদের সঙ্গে তাঁহারও যাইবার সঙ্কল্প জানাইলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ জগরুকে তাঁহার সঙ্গে যাইবার আদেশ দিলেন।

(ছ) হ্যাঁঃ, নাও তোমার ভারতরক্ষা-বিধান। ও আইন যাঁরা একদিন করে—ছিলেন দেখবে তাঁদের অনেকেই আজ অধীনের বাড়িতে—(হাসি) কি করে কম করি বলো? এক তো ফ্রেন্ডস অ্যান্ড রেলেশন যা এখানে রয়ে গেছে, তাদের সংখ্যাই তো শ পাঁচেকের কম নয়। [ নবান্ন : বিজনবিহারী ভট্টাচার্য ]

পরোক্ষ : তৃতীয় ভদ্রলোকের কথায় সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রকাশ করে বড়কর্তা তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেন যে, ভারতরক্ষা-বিধানের কথা তাঁর (তৃতীয় ভদ্রলোকের না বলাই ভাল। তিনি আরও জানালেন যে ওই আইন যাঁরা একদিন করেছিলেন তাঁদের অনেককেই তৃতীয় ভদ্রলোক সেদিন বক্তার বাড়িতে দেখতে পাবেন। সঙ্গে-সঙ্গে হেসে তাঁকেই জিজ্ঞাসা করলেন [ নিমন্ত্রিতের সংখ্যা ] কম করবার কোনো উপায় তিনি নির্দেশ করতে পারেন কিনা। এক তো ফ্রেন্ডস অ্যান্ড রেলেশন যা সেখানে রয়ে গেছে, তাদের সংখ্যাই তো শ পাঁচেকের কম নয়।

(জ) কৰ্ণ। মাতঃ, নিরুত্তর?
লজ্জা তব ভেদ করি অন্ধকার স্তর
পরশ করিছে মোরে সর্বাঙ্গে নীরবে,
মুদিয়া দিতেছে চক্ষু।—থাক্ থাক্ তবে।
কহিয়ো না কেন তুমি ত্যজিলে আমারে।

পরোক্ষ : কর্ণ কুন্তীকে ‘মাতঃ’ বলিয়া সসম্ভ্রম সম্বোধন করিয়া তিনি (কুন্তী নিরুত্তর কেন জানিতে চাহিলেন। তিনি আরও জানাইলেন যে, তাঁহার (কুন্তীর) লজ্জা অন্ধকার স্তর ভেদ করিয়া নীরবে তাঁহাকে (কর্ণকে) সর্বাঙ্গে স্পর্শ করিতেছে, তাঁহারও চক্ষু [ লজ্জায় ] মুদ্রিত করিয়া দিতেছে। তাহা হইলে ওই প্রসঙ্গ এখন বন্ধই থাকুক। কেন তিনি কর্ণকে ত্যাগ করিলেন, সে কথা বলিতে কর্ণ তাঁহাকে নিষেধ করিলেন।

(ঝ) কৰ্ণ। মাতঃ, করিয়ো না ভয়।
কহিলাম, পাণ্ডবের হইবে বিজয়।
আজি এই রজনীর তিমির ফলকে
প্রত্যক্ষ করিনু পাঠ নক্ষত্র-আলোকে
ঘোর যুদ্ধফল।

পরোক্ষ : কুন্তীকে ‘মাতঃ’ বলিয়া সসম্ভ্রম সম্বোধনপূর্বক কর্ণ [যুদ্ধফল-সম্বন্ধে তাঁহাকে ভয় করিতে নিষেধ করিলেন। সম্পূর্ণ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গেই তিনি (কর্ণ) জানাইলেন যে, পাণ্ডবের বিজয় হইবেই। তাঁহার এই উক্তিকে বিশ্বাসযোগ্য করিবার জন্য ইহাও বলিলেন যে, এই কথা কর্ণ তাঁহাকে বলিতেছেন (অন্য কেহ নহেন)। আপন বক্তব্যের স্বরূপ-সমর্থনে বলিলেন যে, সেদিন সেই রজনীর তিমিরফলকে | প্রতিফলিত ] নক্ষত্র-আলোকে ঘোর যুদ্ধফল তিনি (কর্ণ) প্ৰত্যক্ষ পাঠ করিয়াছেন।

(ঞ) জয়কালী রুদ্ধদ্বারের পশ্চাতে গিয়া কহিলেন, “যা বেটারা, ফিরে যা! আমার মন্দির অপবিত্র করিস নে।” [ অনধিকার প্রবেশ : রবীন্দ্রনাথ ]

পরোক্ষ : জয়কালী রুদ্ধদ্বারের পশ্চাতে দাঁড়াইয়া ধাবমান ডোমেদের তিরস্কারের সুরে ফিরিয়া যাইবার জন্য আদেশ করিলেন। সেই সঙ্গে তাঁহার মন্দির অপবিত্র করিতেও তিনি নিষেধ করিলেন।

(ট) সীমার উচ্চৈঃস্বরে বলিল, “ওহে! আর বিলম্ব করিতে পারিব না। আমার রক্ষিত মস্তক আনিয়া দাও, শীঘ্রই যাইব।”

[ কারবালার পরে : মীর মোশারফ হোসেন ] পরোক্ষ : সীমার উচ্চৈঃস্বরে গৃহস্বামী আজরকে সম্বোধন করিয়া বলিল যে, সে আর বিলম্ব করিতে পারিবে না। তাহার রক্ষিত মস্তকটি আনিয়া দিবার আদেশ দিল; সে শীঘ্রই চলিয়া যাইবে ইহাও জানাইল।

(ঠ) দাদা বড় দুঃখিত হইয়া বলিলেন, “ভাল করিনি। সব টাকা তার কেটে নিয়ে আড়াই টাকা উসুল করেছিলাম। আমার এতটা ইচ্ছে ছিল না।”

[ বাল্য-স্মৃতি : শরৎচন্দ্র ]

পরোক্ষ : দাদা বড় দুঃখিত হইয়া আক্ষেপের সুরে বলিলেন যে, তিনি ভাল করেন নাই। সব টাকা তাহার কাটিয়া লইয়া আড়াই টাকা তিনি উসুল করিয়াছিলেন। তিনি আরও জানাইলেন যে, তাঁহার এতটা ইচ্ছা ছিল না। [ মূল ক্রিয়াপদটি সাধু রীতিতে আছে, তাই সমস্ত উদ্ধৃতিটিকেই সাধু রীতিতে আনিতে হইয়াছে। ]

(ড) মেজদাদা বলিলেন, “ভাল করিনি সুকুমার। যা হবার হয়েছে, কিন্তু রামকে তুই অত মেরেছিলি কেন?”

পরোক্ষ : মেজদাদা সুকুমারকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন যে, তিনি (মেজদাদা) [ গদাধরের টাকা কাটিয়া ] ভাল করেন নাই। তবু, আশ্বাসের সুরে বলিলেন যে, যাহা হইবার তাহা তো হইয়াছেই। কিন্তু রামকে সুকুমার অত মারিয়াছিল কেন, তাহাও তিনি জানিতে চাহিলেন।

(ঢ) “আমাদের কালো চামড়া দেখিয়া ঘৃণা করিও না! এ পৃথিবীর মৎস্য—মাংসে আমাদেরও কিছু অধিকার আছে। খাইতে দাও—নহিলে চুরি করিব। আমাদের কৃষ্ণ চর্ম, শুষ্ক মুখ, ক্ষীণ সকরুণ মেও মেও শুনিয়া তোমাদের কি দুঃখ হয় না?”

পরোক্ষ : মার্জারী কমলাকান্তের কাছে আর্জি জানাইল যে, তাহাদের কালো চামড়া দেখিয়া তিনি যেন ঘৃণা না করেন। সেই সঙ্গে ইহাও জানাইল যে, এ পৃথিবীর মৎস্য-মাংসে তাহাদেরও কিছু অধিকার আছে। এই বলিয়া তাহাকে খাইতে দিবার জন্য তাঁহার কাছে দাবিও জানাইল। খাইতে না দিলে চুরি করিবে ইহাও জানাইয়া রাখিল। সেই সঙ্গে, তাহাদের কৃষ্ণ চর্ম, শুষ্ক মুখ, ক্ষীণ সকরুণ মেও মেও শুনিয়া কমলাকান্তদের আদৌ দুঃখ হয় কি না, জানিতে চাহিল।

(ণ) জগাই মজুমদার ছুটে গিয়ে তাঁর মেয়েকে বললেন, ওরে দোলা, প্রিয়তোষ হিন্দু হতে রাজী হয়েছে, তাকেই বিয়ে কর। দেরি নয়, ওর শুদ্ধিটা আজই হয়ে যাক, কাল বিয়ে হবে।

হিন্দোলা আকাশ থেকে পড়ে বললে, কি তুমি বলছ বাবা! এই পরশু বললে গুঞ্জন ঘোষ, আবার আজ বলছ প্রিয়তোষ! এই দেখ, গুঞ্জন আমাকে কেমন হীরের আংটি দিয়েছে, বেচারা মনে করবে কি? তুমি তাকে কথা দিয়েছ, আমিও দিয়েছি, তার খেলাপ হতে পারে না।

পরোক্ষ : জগাই মজুমদার ছুটে গিয়ে তাঁর মেয়েকে দোলা বলে সম্বোধন করে বললেন যে, প্রিয়তোষ হিন্দু হতে রাজী হয়েছে; (সুতরাং) তাকেই (প্রিয়তোষকেই) বিয়ে করার জন্য দোলাকে তিনি আদেশ দিলেন। [ সে ব্যাপারে ] দেরি করতেও নিষেধ করলেন। ওর (প্রিয়তোষের) শুদ্ধিটা সেদিনই হয়ে যাবার প্রস্তাব দিলেন। পরের দিন বিয়ে হবে তাও জানালেন।

হিন্দোলা বাবার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে অসঙ্গত কথা বলার জন্য বাবার কাছে অনুযোগ জানাল। দুদিন আগে তিনি বলেছেন গুঞ্জন ঘোষ, আবার সেদিন বলছেন প্রিয়তোষ। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে দোলা বলল যে, গুঞ্জন তাকে চমৎকার হীরের আংটি দিয়েছে। এই অবস্থায় বেচারা (গুঞ্জন) কী মনে করবে, তাও তার বাবার কাছে জানতে চাইল। তিনি তাকে (গুঞ্জনকে) কথা দিয়েছেন, সেও (হিন্দোলাও) কথা দিয়েছে। বলেই সে দৃঢ়ভাবে জানাল যে, এ-সব কথার খেলাপ হতে পারে না।

(ত) “এই কথা শুনি আমি আইনু পূজিতে
পা দুখানি। আনিয়াছি কৌটায় ভরিয়া
সিন্দূর; করিলে আজ্ঞা সুন্দর ললাটে
দিব ফোঁটা। এয়ো তুমি, তোমার কি সাজে
এ বেশ? নিষ্ঠুর, হায়, দুষ্ট লঙ্কাপতি!
কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ? কেমনে হরিল
ও বরাঙ্গ-অলঙ্কার, বুঝিতে না পারি!”

[ মেঘনাদবধ কাব্য : শ্রীমধুসূদন ]

পরোক্ষ : সরমা সীতাকে জানাইলেন যে, [ চেড়ীরা নিশাকালে মহোৎসবে রত আছে ] শুনিয়া তিনি সীতার পা দুখানি পূজা করিতে আসিয়াছেন। তিনি (সরমা) কৌটায় সিন্দূর ভরিয়া আনিয়াছেন, সীতা আজ্ঞা করিলে তিনি তাঁহার (সীতার) সুন্দর ললাটে (সিন্দূর)-ফোঁটা দিবেন। সরমা ইহাও জানাইলেন যে, তিনি (সীতা) এয়োতী। [ আয়তিচিহ্নহীন ] সেই বেশ তাঁহাকে আদৌ সাজে কি না জানিতে চাহিলেন। সেই সঙ্গে আক্ষেপের সুরে দুষ্ট লঙ্কাপতিকে নিষ্ঠুর বলিয়া উল্লেখ করিলেন। পদ্মের পর্ণ কেহ ছিঁড়িয়া থাকে কি না সীতার কাছে তিনি জানিতে চাহিলেন। ওই বরাঙ্গ-অলঙ্কার তিনি (রাবণ) কেমন করিয়া হরণ করিলেন, তাহা তিনি (সরমা) বুঝিতে পারিতেছেন না।

বাক্যান্তরীকরণ

বাক্যান্তরীকরণ কথাটির অর্থ হইল—অর্থ অটুট রাখিয়া বাক্যের রূপান্তর সাধন সরল, জটিল ও যৌগিক—যেকোনো ধরনের বাক্যকে অন্য ধরনের বাক্যে রূপান্তরিত করা যায়, অবশ্য প্রদত্ত বাক্যটিতে পরিবর্তনযোগ্য উপাদান থাকা চাই। আবার, অস্ত্যর্থক, নাস্ত্যর্থক, প্রশ্নসূচক, অনুজ্ঞাসূচক, বিস্ময়াদিবোধক, প্রার্থনাসূচক, কার্যকারণাত্মক এবং সন্দেহবোধক—যেকোনো এক ধরনের বাক্যকে অন্য ধরনের বাক্যে রূপান্তরিত করাও যায়। তবে মূল বাক্যটির ভাষারীতি (সাধু বা চলিত) পরিবর্তিত বাক্যটিতেও অক্ষুণ্ণ রাখিতে হইবে।

সরল হইতে জটিল বা যৌগিক

(ক) সরল বাক্যের অন্তর্গত কোনো পদ বা পদসমষ্টিকে সম্প্রসারিত করিয়া একটি অপ্রধান খণ্ডবাক্যে রূপান্তরিত করিলে জটিল বাক্য পাওয়া যায়। (খ) প্রদত্ত সরল বাক্যটির অন্তর্গত কোনো পদ বা পদসমষ্টিকে সম্প্রসারিত করিয়া একটি নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যে রূপান্তরিত করিলে বাক্যটি যৌগিক বাক্যে পরিণত হয়। প্রয়োজনমতো সংযোজক, বিয়োজক, সংকোচক, হেতুৰোধক, সিদ্ধান্তবাচক প্রভৃতি সমুচ্চয়ী অব্যয়-দ্বারা এই নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যগুলির সংযোগসাধন করিতে হইবে। কয়েকটি উদাহরণ দেখ।—

(১) সরল : “ইন্দ্র আশ্বাস দিলেও আমি রাজী হইলাম না।” জটিল : যদিও ইন্দ্ৰ আশ্বাস দিল, তথাপি আমি রাজী হইলাম না। যৌগিক : ইন্দ্ৰ আশ্বাস দিল বটে, কিন্তু আমি রাজী হইলাম না।

(২) সরল : অসুস্থতার জন্য গতকল্য অনুপস্থিত ছিলাম। জটিল : যেহেতু অসুস্থ ছিলাম, সেই হেতু গতকল্য অনুপস্থিত ছিলাম। যৌগিক : অসুস্থ ছিলাম,

সেইজন্য গতকল্য অনুপস্থিত ছিলাম।

(৩) সরল : আপনার উপহার দেওয়া বইখানি খুঁজে পাচ্ছি না। জটিল : আপনি যে বইখানি উপহার দিয়েছিলেন, সেটি খুঁজে পাচ্ছি না। যৌগিক : আপনি একখানি বই উপহার দিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানি খুঁজে পাচ্ছি না।

(৪) সরল : “ভেদবুদ্ধি বিদূরিত না হইলে জাতীয় সংহতির আশা নাই।” জটিল : যতদিন ভেদবুদ্ধি বিদূরিত না হয়, ততদিন জাতীয় সংহতির আশা নাই। যৌগিক : আগে ভেদবুদ্ধি বিদুরিত হউক, তবেই জাতীয় সংহতির আশা।

(৫) সরল : “ভিত্তি দৃঢ় না হইলে পাথরে গড়া তাজমহলও এতকাল স্থায়ী হইত না।” জটিল : ভিত্তি যদি দৃঢ় না হইত, তাহা হইলে পাথরে গড়া তাজমহলও এতকাল স্থায়ী হইত না। যৌগিক : ভিত্তি নিশ্চয়ই দৃঢ়, নচেৎ পাথরে গড়া তাজমহলও এতকাল স্থায়ী হইত না।

(৬) সরল : উন্নতি করিতে হইলে পরিশ্রমী হও। জটিল : যদি উন্নতি করিতে চাও, তবে পরিশ্রমী হও। যৌগিক : পরিশ্রমী হও, তবেই উন্নতি করিবে।

(৭) সরল : সত্যের পূজারী বলিয়া তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। জটিল : যেহেতু তিনি সত্যের পূজারী, সেই হেতু তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। যৌগিক : তিনি সত্যের পূজারী, সেইজন্য তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র।

(৮) সরল : তুমি না গেলে আমিও যাইব না। জটিল : তুমি যদি না যাও, আমিও যাইব না। যৌগিক : তুমি যাও (চল), নচেৎ আমিও যাইব না।

(৯) সরল : পরমপণ্ডিত হইলেও ব্যবহারে তিনি বড়োই অমায়িক। জটিল : যদিও তিনি পরমপণ্ডিত, তবুও ব্যবহারে বড়োই অমায়িক। যৌগিক : তিনি পরমপণ্ডিত, কিন্তু ব্যবহারে বড়োই অমায়িক।

(১০) সরল : “মানুষকে শক্তি দিতে হইলে মানুষকে বিস্তৃত করা চাই।” জটিল : মানুষকে যদি শক্তি দিতে হয়, তবে মানুষকে বিস্তৃত করা চাই। যৌগিক : মানুষকে শক্তি দেওয়া দরকার, সেইজন্য মানুষকে বিস্তৃত করা চাই।

(১১) সরল : “আহারাদির কাজ খুব সংক্ষেপে সারিলেও সেখান হইতে রওনা হইতে একটা বাজিয়া গেল।” জটিল : আহারাদির কাজ যদিও খুব সংক্ষেপে সারা হইল, তবুও সেখান হইতে রওনা হইতে একটা বাজিয়া গেল।

যৌগিক : আহারাদির কাজ খুব সংক্ষেপেই সারা হইল, কিন্তু সেখান হইতে রওনা হইতে একটা বাজিয়া গেল।

(১২) সরল : “ইতিহাসের এইসমস্ত উপকরণ-সংগ্রহের ভার ছাত্রগণ লইলে অল্পসময়ের মধ্যে আমরা জাতীয় ইতিহাস রচনায় হস্তক্ষেপ করিতে পারি।” জটিল : ইতিহাসের এইসমস্ত উপকরণ-সংগ্রহের ভার যদি ছাত্রগণ লয়, অল্পসময়ের মধ্যে জাতীয় ইতিহাস রচনায় আমরা হস্তক্ষেপ করিতে পারি। যৌগিক : ইতিহাসের এইসমস্ত উপকরণ-সংগ্রহের ভার ছাত্রগণ লউক, তবেই অল্পসময়ের মধ্যে জাতীয় ইতিহাস রচনায় আমরা হস্তক্ষেপ করিতে পারি।

(১৩) সরল : “কমলাকান্তের দপ্তর পড়িলেও কিছু উপকার হইতে পারে।” জটিল : যদি কমলাকান্তের দপ্তর পড়, তাহাতেও কিছু উপকার হইতে পারে। যৌগিক : কমলাকান্তের দপ্তর পড়, তাহাতেও কিছু উপকার হইতে পারে।

জটিল হইতে সরল বা যৌগিক

(ক) জটিল বাক্যের অন্তর্গত বিশেষ্যস্থানীয়, বিশেষণস্থানীয়, বা ক্রিয়াবিশেষণ-স্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্যকে সঙ্কুচিত করিয়া একটিমাত্র পদে বা পদসমষ্টিতে পরিণত করিলে সরল বাক্য পাইবে। পদসঙ্কোচন কার্যে কৃৎ-প্রত্যয়, তদ্ধিত-প্রত্যয় ও সমাসের সাহায্য একান্ত অপরিহার্য। (খ) জটিল বাক্যের অন্তর্গত অপ্রধান খণ্ডবাক্যকে নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যে পরিণত করিলে যৌগিক বাক্য পাওয়া যায়।

(১) জটিল : যখনই স্কুলে পৌঁছিয়াছি, তখনই বৃষ্টি আরম্ভ হইয়াছে। সরল : স্কুলে পৌঁছনমাত্র বৃষ্টি আরম্ভ হইয়াছে। যৌগিক : স্কুলে পৌঁছিয়াছি, আর বৃষ্টিও আরম্ভ হইয়াছে।

(২) জটিল : “হুজুর যদি আমার কথাটা শোনেন, তবে আমাকে আর এ আদেশ করবেন না।” সরল : আমার কথাটা শুনলে হুজুর আমাকে আর এ আদেশ করবেন না। যৌগিক : হুজুর আমার কথাটা একবারটি শুনুন, তাহলে আর আমাকে এ আদেশ করবেন না।

(৩) জটিল : “রাত্রি যখন এগারটা, তখন কলিকাতার বাবু কাবু।” সরল : রাত্রি এগারটায় কলিকাতার বাবু কাবু। যৌগিক : রাত্রি তখন এগারটা, এমন সময় কলিকাতার বাবু কাবু।

(৪) জটিল : যে বইখানি আমি কিনিয়াছি, তাহা আর কোথাও পাওয়া যাইবে না। সরল : আমার কেনা বইখানি আর কোথাও পাওয়া যাইবে না। যৌগিক : আমি একখানি বই কিনিয়াছি, সেখানি আর কোথাও পাওয়া যাইবে না।

(৫) জটিল : “ইউরোপীয়দের আমরা যতই নিন্দা করি-না, অনেক বিষয়ে তাঁহারা খাঁটি মানুষ।” সরল : আমাদের হাজার নিন্দা সত্ত্বেও ইউরোপীয়গণ অনেক বিষয়ে খাঁটি মানুষ। যৌগিক : ইউরোপীয়দের আমরা খুবই নিন্দা করি, কিন্তু অনেক বিষয়ে তাঁহারা খাঁটি মানুষ

(৬) জটিল : “বাংলা ভাষায় যে কীর্তি উপার্জন করা যাইতে পারে, সে কথা তাঁহাদের স্বপ্নের অগোচর ছিল।” সরল : বাংলা ভাষায় কীর্তি-উপার্জনের কথা তাঁহাদের স্বপ্নের অগোচর ছিল। যৌগিক : বাংলা ভাষাতেও কীর্তি-উপার্জন করা যায়, কিন্তু সে কথা তাঁহাদের স্বপ্নের অগোচর ছিল।

(৭) জটিল : “সূচীর অগ্রভাগে যে পরিমাণ ভূমি বিদ্ধ হয়, তাও ছাড়ব না।” সরল : সূচ্যগ্রপরিমিত ভূমিও ছাড়ব না। যৌগিক : সূচীর অগ্রভাগে অতি সামান্য-পরিমাণ ভূমিই বিদ্ধ হয়, কিন্তু আমি তাও ছাড়ব না।

(৮) জটিল : যদি মন দিয়া পড়াশুনা কর, তবেই পরীক্ষায় পাস করিবে। সরল : মন দিয়া পড়াশুনা করিলেই পরীক্ষায় পাস করিবে। যৌগিক : মন দিয়া পড়াশুনা কর, তবেই পরীক্ষায় পাস করিবে।

(৯) জটিল : অপরাধ যখন করিয়াছ, তখন শাস্তি পাইবেই। সরল : অপরাধী বলিয়া শাস্তি পাইবেই। যৌগিক : অপরাধ করিয়াছ, অতএব শাস্তি পাইবেই। (১০) জটিল : “যায় যদি প্রাণ দেশের তরে, পাবি মোক্ষফল।” সরল : দেশের তরে প্রাণটা গেলে পাবি মোক্ষফল। যৌগিক : দেশের তরে যাক না প্রাণ, তবু পাবি মোক্ষফল।

(১১) জটিল : “পৃথ্বীরাজ যখন শুনলেন ছোটো ভায়ের কাণ্ড, তখন রাগে লজ্জায় তাঁর চোখমুখ লাল হয়ে উঠল।” সরল : ছোটো ভায়ের কাণ্ড শুনে রাগে লজ্জায় পৃথ্বীরাজের চোখমুখ লাল হয়ে উঠল। যৌগিক : পৃথ্বীরাজ ছোটো ভায়ের কাণ্ড শুনলেন, আর সঙ্গে-সঙ্গে রাগে লজ্জায় তাঁর চোখমুখ লাল হয়ে উঠল।

(১২) জটিল : “যদি আমি তুমি কবিতা লিখিতে অভ্যাস করি, তাহা হইলে কি কালিদাস হইতে পারিব?” সরল : আমি তুমি কবিতা লিখিতে অভ্যাস করিলেই কি কালিদাস হইতে পারিব? যৌগিক : আমি তুমি কবিতা লিখিতে অভ্যাস করিতে পারি, কিন্তু তাহাতেই কি কালিদাস হইতে পারিব?

(১৩) জটিল : “যে অন্ধকারের মধ্যে যাত্রা করিয়াছিলাম সে অন্ধকার আর ছিল না।” সরল : যাত্রাকালীন অন্ধকার পরে আর ছিল না। যৌগিক : অন্ধকারেই যাত্রা করিয়াছিলাম, কিন্তু সে অন্ধকার পরে আর ছিল না।

(১৪) জটিল : “দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে এমন একটি মধুর সম্বন্ধ ছিল যে, দক্ষিণার আর্থিকতা তাহার মধ্যে স্থান পাইত না।” সরল : দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে বেশ একটি মধুর সম্বন্ধ থাকায় দক্ষিণার আর্থিকতা তাহার মধ্যে স্থান পাইত না। যৌগিক : দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে বেশ একটি মধুর সম্বন্ধ ছিল, তাই দক্ষিণার আর্থিকতা তাহার মধ্যে স্থান পাইত না।

(১৫) জটিল : যে আনন্দ আকাশে-আলোকে-বিশ্বভুবনে উদ্ভাসিত, আমাতেও সেই আনন্দেরই প্রকাশ। সরল : আমাতেও সেই আকাশে-আলোকে-বিশ্বভুবনে উদ্ভাসিত আনন্দেরই প্রকাশ। যৌগিক : সেই আনন্দ আকাশে-আলোকে—বিশ্বভুবনে উদ্ভাসিত, তাই আমাতেও সেই আনন্দেরই প্রকাশ।

(ক) যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত একটি নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যকে অটুট রাখিয়া অন্য নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যকে সঙ্কুচিত করিয়া পদ বা পদসমষ্টিতে পরিণত কর। সংযোজক অব্যয়গুলি তুলিয়া দিয়া দেখ—বাক্যে একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া আছে কিনা। নবগঠিত বাক্যটি হইবে সরল।

(খ) যৌগিক বাক্যের নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যগুলির মধ্যে একটিকে অটুট রাখিয়া অন্য খণ্ডবাক্যগুলিকে বিশেষ্য, বিশেষণ বা ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্যে রূপান্তরিত করিলে জটিল বাক্য পাওয়া যায়। কয়েকটি উদাহরণ দেখ।—

(১) যৌগিক : তিনি ক্রুদ্ধ হন বটে, কিন্তু সেই ক্রোধ অধিকক্ষণ থাকে না। সরল : তিনি ক্রুদ্ধ হইলেও সেই ক্রোধ অধিকক্ষণ থাকে না। জটিল : যদিও তিনি ক্রুদ্ধ হন, তবুও তাঁহার সেই ক্রোধ অধিকক্ষণ থাকে না।

(২) যৌগিক : ভোর হইল, আর আশ্রমবালকগণের বন্দনাগান আরম্ভ হইল। সরল : ভোর হইলে আশ্রমবালকগণের বন্দনাগান আরম্ভ হইল। জটিল : যখন ভোর হইল, তখন আশ্রমবালকগণের বন্দনাগান আরম্ভ হইল।

(৩) যৌগিক : “রঙ তার কালো, অথচ দেখতে সুপুরুষ।” সরল : রঙ কালো হলেও দেখতে সে সুপুরুষ। জটিল : যদিও তার রঙ কালো, তবুও সে দেখতে সুপুরুষ।

(৪) যৌগিক : স্টেশনে পৌঁছিলাম, আর ট্রেনটিও ছাড়িয়া দিল। সরল : স্টেশনে পৌঁছিবামাত্র ট্রেনটি ছাড়িয়া দিল। জটিল : যখনই স্টেশনে পৌঁছিলাম, তখনই ট্রেনটি ছাড়িয়া দিল।

(৫) যৌগিক : “আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা আনিয়া দিব।” সরল : আমাকে রক্ত দিলে আমি তোমাদের স্বাধীনতা আনিয়া দিব। জটিল : যদি আমাকে রক্ত দাও, তবে আমি তোমাদের স্বাধীনতা আনিয়া দিব।

(৬) যৌগিক : পরমের পদে শরণ নাও, শান্তি পাবে। সরল : পরমের পদে শরণ নিলে শান্তি পাবে। জটিল : যখন পরমের পদে শরণ নেবে, তখনই শাস্তি পাবে।

(৭) যৌগিক : স্বামীজী পরম দেশপ্রেমিক, এ কথা সকলেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন। সরল : স্বামীজীর পরম দেশপ্রেমের কথা সকলেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন। জটিল : স্বামীজী যে পরম দেশপ্রেমিক, এ কথা সকলেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন।

(৮) যৌগিক : ভাবিয়া-চিন্তিয়া কাজ করিও, দুঃখ পাইবে না। সরল : ভাবিয়া-চিন্তিয়া কাজ করিলে দুঃখ পাইবে না। জটিল : যদি ভাবিয়া-চিন্তিয়া কাজ করো, তবে দুঃখ পাইবে না।

(৯) যৌগিক : তাঁর প্রতিশ্রুতি পেলাম, আর আমাদের উল্লাস দেখে কে? সরল : তাঁর প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর আমাদের উল্লাস আর দেখে কে? জটিল : যখন তাঁর প্রতিশ্রুতি পেলাম, তখন আর আমাদের উল্লাস দেখে কে?

(১০) যৌগিক : কিছু টাকা পেলাম, কিন্তু তাতেও অভাব মিটল না। সরল : কিছু টাকা পাওয়া সত্ত্বেও অভাব মিটল না। জটিল : যদিও কিছু টাকা পেলাম, তবুও অভাব মিটল না।

(১১) যৌগিক : “আমরা বনবাসী বটে, কিন্তু লৌকিক ব্যাপারে নিতান্ত অনভিজ্ঞ নহি।” সরল : বনবাসী হইলেও লৌকিক ব্যাপারে আমরা নিতান্ত অনভিজ্ঞ নহি। জটিল : যদিও আমরা বনবাসী তবুও লৌকিক ব্যাপারে নিতান্ত অনভিজ্ঞ নহি।

(১২) যৌগিক : “আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা শক্তিতে আশঙ্কা হয় শীঘ্রই এ-সমস্ত লোপ পাইবে, অথচ এ-সমস্তই নৃতত্ত্বের আলোচনায় একটি বিশেষ সহায়।” সরল : আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা শক্তিতে শীঘ্রই এ-সমস্ত লোপ পাইবার আশঙ্কা থাকিলেও এ-সমস্তই নৃতত্ত্বের আলোচনায় একটি বিশেষ সহায়। জটিল : আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশা শক্তিতে যদিও এ-সমস্ত শীঘ্রই লোপ পাইবার আশঙ্কা রহিয়াছে, তবুও এ-সমস্তই নৃতত্ত্বের আলোচনায় একটি বিশেষ সহায়।

(১৩) যৌগিক : “সোনার আঙটি কড়ে আঙুলের মাপে হইলেও চলে, কিন্তু একটা কাপড় সেই মাপের হইলে তাহা ঠাট্টার পক্ষেও নেহাত ছোটো হয়।” সরল : কড়ে আঙুলের মাপে সোনার আঙটি চলিলেও সেই মাপের একটা কাপড় ঠাট্টার পক্ষেও নেহাত ছোটো হয়। জটিল : কড়ে আঙুলের মাপে সোনার আঙটি যদিও চলে, তবুও সেই মাপের একটা কাপড় ঠাট্টার পক্ষেও নেহাত ছোটো হয়।

(১৪) যৌগিক : “আর কিছু হউক বা না হউক, আফিঙ্গের অসীম মহিমা বুঝিতে পারিবে।” সরল : আর কিছু না হইলেও আফিঙ্গের অসীম মহিমা বুঝিতে পারিবে। জটিল : যদি আর কিছু নাও হয়, তবু আফিঙ্গের অসীম মহিমা তো বুঝিতে পারিবে।

অর্থের গঠনভঙ্গীতে বাক্যান্তরীকরণ

(১) অস্ত্যর্থক : জননী আর জন্মভূমিকে সকলেই ভালোবাসে।

নাস্ত্যর্থক : এমন কেহ নাই যে জননী আর জন্মভূমিকে ভালোবাসে না।

প্রশ্নাত্মক : জননী আর জন্মভূমিকে কে না ভালোবাসে?

(২) নাস্ত্যর্থক : আপনাদের ঋণ কোনোদিনই ভুলব না।

প্রশ্নসূচক : আপনাদের ঋণ কোনোদিন কি ভুলতে পারি?

অস্ত্যর্থক : আপনাদের ঋণ চিরকাল মনে থাকবে।

(৩) প্রশ্নবাচক : এ অত্যাচার কোন্ মানুষ সইতে পারে?

নির্দেশাত্মক : এ অত্যাচার কোনো মানুষ সইতে পারে না।

(৪) প্রশ্নাত্মক : আন্তরিক পরিশ্রম কি কখনও ব্যর্থ হয়?

অস্ত্যর্থক : আন্তরিক পরিশ্রম সর্বদাই সাৰ্থক হয়।

নাস্ত্যর্থক : আন্তরিক পরিশ্রম কখনই ব্যর্থ হয় না।

(৫) বিস্ময়াদিসূচক : কী মিষ্টি গলা!

নির্দেশাত্মক : গলাটি বড়োই মিষ্টি।

(৬) অনুজ্ঞাসূচক : দেশমাতৃকার যোগ্য সেবক হও।

নির্দেশক : দেশমাতৃকার যোগ্য সেবক হইতে উপদেশ দিতেছি।

(৭) নির্দেশাত্মক : ভুলগুলি তোমাদের এখনই সংশোধন করিতে বলিতেছি।

অনুজ্ঞাসূচক : ভুলগুলি তোমরা এখনই সংশোধন কর।

(৮) প্রার্থনাসূচক : সকলের কল্যাণ হোক।

নির্দেশাত্মক : সকলের কল্যাণ কামনা করছি।

(৯) নির্দেশক : ছেলেটিকে আপনি অকারণ শাস্তি দিয়াছেন।

প্রশ্নাত্মক : ছেলেটিকে শাস্তি দিবার কোনো কারণ ছিল কি?

(১০) অন্ত্যর্থক : কাঙালীর মা চুপ করিয়া রহিল।

নাস্ত্যর্থক : কাঙালীর মা কোনো কথাই বলিল না।

(১১) বিস্ময়াদিসূচক : অপরাধীর প্রতিও কবির কী সহানুভূতি!

নির্দেশক : অপরাধীর প্রতিও কবির সহানুভূতি খুবই গভীর।

(১২) নাস্ত্যর্থক : পরগাছার কোনো বৃক্ষগৌরব থাকিতে পারে না।

প্রশ্নাত্মক : পরগাছার কি কোনো বৃক্ষগৌরব থাকিতে পারে?

(১৩) নাস্ত্যর্থক : প্রতিভা যে দেবদত্ত শক্তি একথা সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়।

অন্ত্যর্থক : প্রতিভা যে দেবদত্ত শক্তি একথা অনেকাংশে সত্য।

(১৪) প্রত্যক্ষ উক্তি : পৃথ্বীরাজ নুড়োকে খাটিয়ায় শুইয়ে দিয়ে বললেন, “ভয় নেই, কেমন আছ তাই জানতে এলাম।”

পরোক্ষ উক্তি : পৃথ্বীরাজ খুড়োকে খাটিয়ায় শুইয়ে অভয় দিয়ে বললেন যে তিনি (খুড়ো) কেমন আছেন তাই জানতে এসেছেন।

(১৫) প্রশ্নবাচক : প্রতিভা কি শিক্ষানিরপেক্ষ?

নির্দেশাত্মক : প্রতিভা শিক্ষাসাপেক্ষ।

(১৬) অস্ত্যর্থক : “লুচির পাত্রটাকে মাত্র বাকি রাখিতাম।”

নাস্ত্যর্থক : লুচির পাত্রটাকে ছাড়া আর কিছুই বাকি রাখিতাম না।

প্রশ্নাত্মক : লুচির পাত্রটাকে ছাড়া আর কিছু বাকি রাখিতাম কি?

(১৭) অস্ত্যর্থক : সকলপ্রকার উন্নতিই পরিশ্রম-সাপেক্ষ।

প্রশ্নবাচক : কোন্ প্রকার উন্নতি পরিশ্রম-নিরপেক্ষ?

নাস্ত্যর্থক : কোনোপ্রকার উন্নতিই পরিশ্রম-নিরপেক্ষ নয়।

(১৮) অস্ত্যর্থক : “আমার থিয়েটারে হারমনিয়ম বাজাতেই হবে।”

নাস্ত্যর্থক : থিয়েটারে আমার হারমনিয়ম না বাজালে চলবেই না।

(১৯) প্রত্যক্ষ উক্তি : রাজা ভাগিনাকে বলিলেন, “একবার পাখিটাকে আনো তো, দেখি।”

পরোক্ষ উক্তি : রাজা পাখিটাকে একবার দেখিবেন বলিয়া ভাগিনাকে আনিতে বলিলেন।

(২০) নাস্ত্যর্থক : “কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে আর বলা হইল না।”

অস্ত্যর্থক : কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে অকথিতই রহিয়া গেল।

(২১) ইতিবাচক : ভাগ্যে এমনসব নমুনা কদাচিৎ চোখে পড়ে।

নেতিবাচক : ভাগ্যে এমনসব নমুনা সর্বদা চোখে পড়ে না

(২২) অস্ত্যর্থক : অল্প লোকেই বেদের অর্থ বুঝিত।

নাস্ত্যর্থক : অধিকাংশ লোকই বেদের অর্থ বুঝিত না।

প্রশ্নাত্মক : কয়জন লোক বেদের অর্থ বুঝিত?

(২৩) প্রশ্নাত্মক : “যদি সর্বশব্দগ্রাহী কোন কর্ণ থাকে, তবে তোর ডাক পৌঁছিবে না কেন?”

নির্দেশাত্মক : যদি সর্বশব্দগ্রাহী কোনো কর্ণ থাকে, তবে তোর ডাক নিশ্চয়ই পৌঁছিবে।

(২৪) নাস্ত্যর্থক : কালিদাস যে লেখাপড়া শিখেছিলেন তাতে সন্দেহ নেই।

অস্ত্যর্থক : কালিদাস যে লেখাপড়া শিখেছিলেন তা সন্দেহের অতীত। প্রশ্নাত্মকঃ কালিদাসের লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ জাগবে কেন?

(২৫) নেতিবাচক : প্রতিদিন আর সে নহবত বাজিবে না।

প্রশ্নাত্মক : প্রতিদিন কি আর সে নহবত বাজিবে?

(২৬) নাস্ত্যর্থক : “ভাই বসন্তের কোকিল, তোমার কোন দোষ নাই।” অস্ত্যর্থক : ভাই বসন্তের কোকিল, তুমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

(২৭) প্রশ্নবাচক : তোর নাম কীরে?

অনুজ্ঞাবাচক : তোর নামটা বল্ তো।

(২৮) প্রশ্নবাচক : এর চেয়ে বীরত্বের পরিচয় আর কী হতে পারে?

নাস্ত্যর্থক : এর চেয়ে বীরত্বের পরিচয় আর কিছুই হতে পারে না।

(২৯) নাস্ত্যর্থক : সেই সৌম্যমূর্তি এখানে উপস্থিত নাই।

অস্ত্যর্থক : সেই সৌম্যমূর্তি এখানে অনুপস্থিত।

(৩০) অস্ত্যর্থক : কাল বিগুণ হইলে সবই লোপ পায়। নাস্ত্যর্থক : কালবৈগুণ্যে কিছুই থাকে না।

প্রশ্নবাচক : কালবৈগুণ্যে কিছু থাকে কি?

(৩১) নাস্ত্যর্থক : জগতে কিছুই স্থায়ী নয়।

অস্ত্যর্থক : জগতে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী (অস্থায়ী)।

প্রশ্নবাচক : জগতে কোন্ জিনিস স্থায়ী?

(৩২) অস্ত্যর্থক : ভারতবর্ষকে স্বদেশ বলিয়া ভক্তির সহিত উপলব্ধির চেষ্টা সেই প্রথম।

নাস্ত্যর্থক : ভারতবর্ষকে স্বদেশ চেষ্টা ইতঃপূর্বে হয় নাই।

(৩৩) প্রশ্নাত্মক : “ভয়ের সহিত যে চির-অপরিচিত তাহাকে আমিই বা কেমন করিয়া, কী বলিয়া বাধা দিব?”

নাস্ত্যর্থক : ভয়ের সহিত যে চির-অপরিচিত, তাহাকে আমি তো কোনোপ্রকারেই কিছু বলিয়া বাধা দিতে পারিব না।

(৩৪) অস্ত্যর্থক : তখন ধীরে ধীরে সমস্ত বিষয়টাই পরিস্ফুট হইয়া উঠিল।

নাস্ত্যর্থক : তখন ধীরে ধীরে বিষয়টার কোনো অংশই আর অপরিস্ফুট রহিল না।

(৩৫) প্রশ্নাত্মক : নিরাপত্তা কোথায়?

নির্দেশাত্মক : বিপন্নতা সর্বত্র। (‘নিরাপত্তা’-র বিপরীতার্থক শব্দ-প্রয়োগে)

(৩৬) নাস্ত্যর্থক : আপনার কাছে কোনোপ্রকার পক্ষপাতিত্বই আশঙ্কা করি নাই।

অস্ত্যর্থক : আপনার কাছে সর্বপ্রকার নিরপেক্ষতাই আশা করিয়াছিলাম।

(৩৭) নেতিবাচক সরল : “ভেদবুদ্ধি বিদূরিত না হইলে জাতীয় সংহতির আশা নাই।”

প্রশ্নবাচক যৌগিক : আগে ভেদবুদ্ধি বিদূরিত হউক, নতুবা জাতীয় সংহতির আশা কোথায়?

(৩৮) অস্ত্যর্থক জটিল : “যিনি সত্য ও অসত্যের যাথার্থ্য নির্ণয় করতে পারেন তিনিই যথার্থ ধর্মজ্ঞ।”

নাস্ত্যর্থক সরল : সত্যাসত্যের যাথার্থ্যনির্ণয়ে অক্ষম ব্যক্তি যথার্থ ধর্মজ্ঞ নন।

প্রশ্নাত্মক সরল : সত্যাসত্যের যাথার্থ্যনির্ণয়ে পারঙ্গম ব্যক্তি ব্যতীত আর কে যথার্থ ধর্মজ্ঞ?

(৩৯) অনুজ্ঞাবাচক সরল : “আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।”

শর্তসাপেক্ষ যৌগিক : আধমরাদের তুই ঘা মার্, নইলে ওরা বাঁচবে না। কার্যকারণাত্মক জটিল : আধমরাদের তুই যদি ঘা মারিস, তাহলেই তারা বাঁচবে।

(৪০) নঞর্থক : “ভূগোলে আজ পর্যন্ত তাহাদের কোনো পরিচয় পাওয়া যায় নাই।”

আক্ষেপসূচক : হায়! ভূগোলে আজ পর্যন্ত তাহাদের পরিচয় সম্পূৰ্ণ অলিখিতই রহিয়াছে।

(৪১) প্রশ্নাত্মক জটিল : “বাহিরে ভুল হানবে যখন অন্তরে ভুল ভাঙবে কি?” ইতিবাচক সরল : বাহিরে ভুল হানলেও অন্তরে ভুল-ভাঙার সম্ভাবনা অল্পই।

(৪২) সন্দেহবাচক : “জন্ম লব হয়তো সে কোনো ফেনশীর্ষ সাগরের তীরে ডুবারীর ঘরে।”

নির্দেশক : ফেনশীর্ষ সাগরের তীরে কোনো ডুবারীর ঘরে জন্মিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে মোর।

(৪৩) অস্ত্যর্থক জটিল : “যে গাছে সুগন্ধ ফুল ফোটে, সে গাছে আহাৰ্য ফল না ধরলেও চলে।”

নাস্ত্যর্থক সরল : সুগন্ধ ফুলের গাছে আহার্য ফল না ধরলেও ক্ষতি কিছু নেই।

(৪৪) অস্ত্যর্থক সরল : পরাজয়েও তাঁর কুন্দশুভ্র হাসি অমলিন থাকে।

নাস্ত্যর্থক যৌগিক : তিনি পরাজিত হন বটে, কিন্তু তখনও তাঁর কুন্দশুভ্র হাসি মলিন হয় না।

(৪৫) প্রশ্নসূচক : “কেবল গলার স্বর থাকিলেই কি কেহ সুগায়ক হইতে পারে?” অস্ত্যর্থক : গলার স্বর ছাড়াও আরো কিছু গুণ থাকিলে তবেই না কেহ সুগায়ক হইতে পারে।

(৪৬) কার্যকারণাত্মক জটিল : “উৎসব প্রাঙ্গণ হইতে সামান্য ভিক্ষুকও যদি ম্লানমুখে ফিরিয়া যায়, শুভ উৎসব যেন একান্ত ক্ষুণ্ণ হয়।”

প্রশ্নবাচক সরল : উৎসবপ্রাঙ্গণ হইতে সামান্য ভিক্ষুকও ম্লানমুখে ফিরিয়া গেলে শুভ উৎসব কি একান্ত ম্লান হয় না?

(৪৭) প্রশ্নসূচক সরল : “ছাত্রগণ ব্যতীত কে এই আপাতনীরস কার্যে হস্তক্ষেপ করিবে?”

অস্ত্যর্থক সরল : একমাত্র ছাত্রগণই এই আপাতনীরস কার্যে হস্তক্ষেপ করিতে পারে।

নাস্ত্যর্থক জটিল : ছাত্রগণ ব্যতীত আর এমন কেহই নাই, যে এই আপাতনীরস কার্যে হস্তক্ষেপ করিতে পারে।

(৪৮) প্রশ্নসূচক : “ভগবান্! এত বড় একটা মহাপ্রাণ আজ পর্যন্ত তুমিই বা কয়টা দিতে পারিলে?”

নঞর্থক : ভগবান্! এত বড় একটা মহাপ্রাণ আজ পর্যন্ত তুমিও তো বেশী দিতে পারিলে না।

ইতিবাচক : ভগবান্! এত বড় একটা মহাপ্রাণ আজ পর্যন্ত তুমিও তো অল্পই দিতে পারিলে।

(৪৯) সন্দেহবোধক : “প্রত্যুত্তরে আমি একটি ছোট্ট নিশ্বাস চাপিয়া ফেলিলাম—পাছে সে শুনিতে পায়।”

সরল : তাহার শুনিতে পাইবার আশঙ্কায় প্রত্যুত্তরে আমি একটি ছোট্ট নিশ্বাস চাপিয়া ফেলিলাম।

(৫০) নাস্ত্যর্থক : “সেও আর কোনো কথা কহিল না।”

অস্ত্যর্থক : সেও তারপর নির্বাক্ রহিল।

(৫১) নাস্ত্যর্থক জটিল : “কিন্তু কিসে যে তোমার ভয় আছে তাও তো বুঝিলাম না।”

অস্ত্যর্থক জটিল : কিন্তু কিসে যে তোমার ভীতি জাগায় তাও তো আমার বোঝাবুঝির ঊর্ধ্বে। (‘ভয়’-এর বিকল্প বিশেষ্য-প্ৰয়োগে)

(৫২) কার্যকারণাত্মক সরল : “আপনি আমাকে হাজতবাসের সুযোগ না দিতে চাইলে সে সুযোগ আমি জোর করে আদায় করব আপনাকে পিটিয়ে।”

কার্যকারণাত্মক জটিল : যদি আপনি আমাকে হাজতবাসের সুযোগ না দিতে চান, সে সুযোগ আমি জোর করে আদায় করব আপনাকে পিটিয়ে

কার্যকারণাত্মক যৌগিক : আমাকে হাজতবাসের সুযোগ দিন, নতুবা সে সুযোগ আমি জোর করে আদায় করব আপনাকে পিটিয়ে।

(৫৩) প্রশ্নসূচক জটিল : “যেটা অন্যায় তাকে প্রশ্রয় দেবেন?” অনুজ্ঞাবাচক সরল : অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।

(৫৪) প্রার্থনাসূচক : “কুত্তী। সন্ধ্যার তিমির আসুক নিবিড় হয়ে।”

নির্দেশাত্মকঃ কুন্তী সন্ধ্যার তিমির নিবিড় হয়ে আসবার প্রার্থনা জানালেন।

(৫৫) কার্যকারণাত্মক যৌগিক : “নরকেও সুন্দর আছে, কিন্তু সুন্দরকে কেউ সেখানে বুঝতেই পারে না, নরকবাসীর সবচেয়ে বড়ো সাজা তাই।”

কার্যকারণাত্মক সরল : নরকে সুন্দর থাকা সত্ত্বেও সেই সুন্দরকে সেখানে কেউ বুঝতে পারে না বলেই নরকবাসীর সবচেয়ে বড়ো সাজা তাই।

(৫৬) কার্যকারণাত্মক জটিল : “সহজ নিশ্বাসে যখন বাধা পড়ে, তখনই মানুষ হাঁপিয়ে নিশ্বাস টানে। “

কার্যকারণাত্মক সরল : সহজ নিশ্বাসে বাধা পড়লেই তো মানুষ হাঁপিয়ে নিশ্বাস টানে।

কার্যকারণাত্মক যৌগিক : সহজ নিশ্বাসে একবার বাধা পড়ুক, অমনি মানুষ হাঁপিয়ে নিশ্বাস টানে।

(৫৭) প্রার্থনাসূচক : “হে মুনিপুঙ্গব! আপনি অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করুন।”

নির্দেশাত্মক : মুনিপুঙ্গবকে সশ্রদ্ধ সম্বোধন করিয়া (করে) অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করিবার (করবার) জন্য জনমেজয় প্রার্থনা জানাইলেন (-জানালেন)।

(৫৮) নঞর্থক : যত্নের দ্বারা অর্জন না করিলে কোনো বস্তুই নিজের হয় না। প্রশ্নাত্মক : যত্নের দ্বারা অর্জিত না হইলে কোনো বস্তু কি নিজের হয়?

(‘অর্জন’ পদান্তরসাধন এবং ‘না’ পরিহার)

(৫৯) প্রশ্নাত্মকঃ নিজের জিনিস পরকে দেবার মতো ক্ষমতা ভগবান্ কি মানুষকে পুরোপুরি দিয়েছেন?

অস্ত্যর্থক : নিজের জিনিস … ভগবান্ মানুষকে আংশিক দিয়েছেন।

নাস্ত্যর্থক : নিজের জিনিস … ভগবান্ মানুষকে পুরোপুরি দেন নি।

(৬০) অনুজ্ঞাসূচক : “কুন্তী। ধৈর্য ধর্ ওরে বৎস, ক্ষণকাল।”

নির্দেশাত্মক : ‘বৎস’ বলে কর্ণকে স্নেহভরে সম্বোধন করে কুন্তী তাঁকে ক্ষণকাল ধৈর্য ধরতে অনুরোধ জানালেন।

বাচ্য

২০০। বাচ্য : ক্রিয়ার যে প্রকাশভঙ্গীর দ্বারা জানা যায় যে, (১) ক্রিয়াটির অন্বয় বাক্যের কর্তৃপদের সহিত কি না, (২) কর্মপদের সহিত কি না, অথবা (৩) কর্তৃ-কর্ম কোনোটির সহিত অন্বিত-না-হওয়া ক্রিয়াটির দ্বারা কেবল ক্রিয়ার ভাব বুঝাইতেছে কি না—ক্রিয়ার সেই প্রকাশভঙ্গীকেই বাচ্য বলা হয়।

বাচ্য চারি প্রকার—কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য ও কর্মকর্তৃবাচ্য।

(১) কর্তৃবাচ্য—বাক্যবিন্যাসে কর্তৃপদ যখন বাক্যে প্রাধান্যলাভ করে, ক্রিয়া যখন স্বতঃই কর্তৃপদের অনুগামী, তখন ক্রিয়ার কর্তৃবাচ্য হয়।

এই বাচ্যে ক্রিয়াটি সকর্মিকা ও অকর্মিকা দুইই হইতে পারে। সকর্মিকা হইলে তাহার কর্ম থাকিবে। এই বাচ্যে কর্তৃপদে কর্তৃকারকের বিভক্তি এবং কর্মপদে কর্মকারকের বিভক্তি হয়। যেমন—পাখিরা গান গায় (অকর্মিকা)। তোমরা আসছ কখন (অকর্মিকা)? অনিন্দিতা দৃষ্টিহীন ব্যক্তিটিকে ভিক্ষা দিতেছে (সকমিকা)। শিশু চাঁদ দেখিতেছিল (সকর্মিকা)। কাজটা আমিই করব (সকর্মিকা)। সে ভাত খেয়েছে কি (সকর্মিকা)? এ ব্যাপারে রমণীবাবুকে ডাকুন (সকর্মিকা)। কাজটা একা তুমিই করবে (সকর্মিকা)? “নির্মল সে নীলিমায় প্রভাতে ও সন্ধ্যায় রাঙালো যুগে যুগে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের আলো।” (সকর্মিকা) “আনিয়াছি কৌটায় ভরিয়া সিন্দুর।” (সকর্মিকা) “উড়ায়েছে ধূলিজাল, উড়িয়াছে বিজয়পতাকা।” (যথাক্রমে সকর্মিকা ও অকর্মিকা) প্রতিটি উদাহরণে লক্ষ্য কর—কর্তৃপদের পুরুষানুসারে ক্রিয়ার পুরুষ হইতেছে।

বাচ্যান্তর করিবার ক্ষেত্রে, কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়াটি যখন সকর্মিকা তখন বাচ্যটিকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করা হয়। আর কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়াটি যেখানে অকর্মিকা সেখানে কর্তৃবাচ্য হইতে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করা হয়; কেননা ক্রিয়াটি অকর্মিকা বলিয়া তাহার তো কর্মই নাই; কর্মটি না থাকিলে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করার প্রশ্নই থাকিবে না।

(২) কর্মবাচ্য—বাক্যবিন্যাসে কর্মপদটি যখন কর্তৃপদে পরিণত হইয়া বাক্যে প্রাধান্য পায় এবং ক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তখন ক্রিয়ার কর্মবাচ্য হয়।

এই বাচ্যে কর্তৃপদে করণের (বা কর্মের, অথবা সম্বন্ধপদের) বিভক্তি হয় এবং কর্মে শূন্যবিভক্তি (কখনও-বা কে) হয়। আর ক্রিয়াবাচক বিশেষণের সঙ্গে হ-ধাতুর (যা, আহ্, পড়, চল্ প্রভৃতি) যোগে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়। বাংলায় অধিকাংশ ক্রিয়ার কর্মবাচ্যের রূপ নাই বলিয়াই কর্মবাচ্যের ক্রিয়াগঠনের

এই ব্যবস্থা। যেমন—অনিন্দিতার দ্বারা দৃষ্টিহীন ব্যক্তিটিকে ভিক্ষা দেওয়া (প্রদত্ত) হইতেছে। শিশু কর্তৃক চাঁদ দেখা (দৃষ্ট) হইতেছিল। কাজটা আমাকেই করতে হবে। তার ভাত খাওয়া হয়েছে কি? এ ব্যাপারে রমণীবাবুকে ডাকা হউক। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের আলোক-ধারায় যুগে যুগে নির্মল সে নীলিমা প্রভাতে ও সন্ধ্যায় হল যে রঞ্জিত। কৌটায় ভরিয়া সিন্দুর আনা হইয়াছে। ধূলিজাল উড়ানো হইয়াছে। লক্ষ্য কর—ক্রিয়াটি কর্মনিষ্ঠ বলিয়া কর্মপদটির পুরুষানুসারে ক্রিয়ার পুরুষ হইতেছে।

বাংলায় যে কয়েকটি ক্রিয়ার কর্মবাচ্যের রূপ আছে, তাহাদের কর্মবাচ্যের রূপ আর ণিজন্ত রূপ প্রায়ই অভিন্ন। কোরাস গানটা ভালো শোনাচ্ছে (শ্রুত হচ্ছে) না। দূর থেকে চাঁদকে খুব ছোটো দেখায় (দৃষ্ট হয়)। “সে পর্যন্ত যাওয়া ভাল দেখায় না।’

(৩) ভাববাচ্য—যে বাক্যবিন্যাসে ক্রিয়ার ভাবই প্রধানভাবে বুঝায়, তাহাকে ভাববাচ্য বলে। ভাববাচ্যে কর্তৃপদে সম্বন্ধপদের বা কর্মকারকের বিভক্তি হয় এবং ক্রিয়াটি সর্বদাই প্রথমপুরুষের রূপে থাকে। কর্তৃবাচ্যের কোনো ক্ৰিয়া যখন অকর্মিকা, তখনই তাহাকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করা যায় (কর্ম নাই বলিয়া কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করিবার পথ তাহার বন্ধ)। কর্তৃবাচ্য হইতে ভাববাচ্যে আনিতে হইলে কর্তৃবাচ্যের কর্তৃপদটিতে সম্বন্ধপদের বিভক্তি (র, এর, দের অথবা কর্মকারকের বিভক্তি (কে) যোগ কর এবং ক্রিয়াটিকে সর্বদাই প্রথমপুরুষের রূপে রাখ। যেমন—পাখিদের গান গাওয়া হয়। তোমাদের আসা হচ্ছে কখন? বিজয় পতাকার উড়া (উড্ডীন হওয়া) হইয়াছে। এই তিনটি ভাববাচ্যের কর্তৃবাচ্য-রূপগুলি কর্তৃবাচ্যের অনুচ্ছেদটিতে দেওয়া হইয়াছে, দেখিয়া লও। কয়েকটি নূতন উদাহরণ—মহাশয় থাকেন কোথায়? (কর্তৃবাচ্য)—মহাশয়ের থাকা হয় কোথায় (ভাববাচ্য)? তুমিই প্রথমে গাইবে (কর্তৃবাচ্য)—তোমাকেই প্রথমে গাইতে হবে (ভাববাচ্য)। পুরী থেকে একবারটি ঘুরে আসি (কর্তৃবাচ্য)—পুরী থেকে একবারটি ঘুরে আসা যাক (ভাববাচ্য)। এই অবেলায় আপনি আর খাবেন কি? (কর্তৃবাচ্য)—এই অবেলায় আপনার আর খাওয়া চলবে কি (ভাববাচ্য)? কোন্ ট্রেনে যাচ্ছিস? (কর্তৃবাচ্য)–কোন্ ট্রেনে তোর বা তোদের যাওয়া হচ্ছে (ভাববাচ্য)? ভিতরে বসুন (কর্তৃবাচ্য)—ভিতরে বসা হোক (ভাববাচ্য)। লক্ষ্য কর—ভাববাচ্যের ক্রিয়াটি সর্বদাই হ-ধাতুনিষ্পন্ন অকর্মিকা ক্রিয়া এবং মধ্যম ও প্রথমপুরুষে একই রূপে থাকে; কেবল উত্তমপুরুষের বেলায় যা ধাতুনিষ্পন্নও হয়।

ভাববাচ্য প্রয়োগের চমৎকার একটি সামাজিক প্রয়োজনও রহিয়াছে। অল্পপরিচিত কিংবা অল্পবয়স্ক ব্যক্তি বা অপরিচিত বয়ঃকনিষ্ঠের সঙ্গে কথাবার্তা বলিবার সময় আপনি বা তুমি অথবা তুই—কোন্ সর্বনামটি ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকিলে এই ভাববাচ্যের আশ্রয়টি বেশ নিরাপদ “কেমন বেড়ালি বা বেড়ালে বা বেড়ালেন” (কর্তৃবাচ্যের প্রয়োগ) না বলিয়া ‘কেমন বেড়ানো হলো?” বলা হয়। সেইরূপ “এখন দিনকতক এখানে থাকছিস বা থাকছ বা থাকছেন তো?” না বলিয়া স্বচ্ছন্দে “এখন দিনকতক এখানে থাকা হবে তো?” বলিয়া ভদ্রতারক্ষা করি।

(৪) কর্মকর্তৃবাচ্য—যে বাক্যবিন্যাসে কর্তার উল্লেখ থাকে না, কর্মটিই কর্তৃপদ অধিকার করে বলিয়া প্রতীয়মান হয়, তাহাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। “পায়ের শিকল কাটিল না।” শিকল যে কাটে সে কর্তৃপদ এবং শিকল কর্ম। কিন্তু সেই কর্তৃপদের উল্লেখ বাক্যে না থাকায় শিকল পদটি নিজেই যেন কর্তৃপদ অধিকার করিয়া বসিয়াছে। পদটি মূলতঃ ছিল কর্ম, কর্তৃপদ পাইয়া হইয়াছে কর্মকর্তৃপদ। বাচ্যটির নাম তাই কর্মকর্তৃবাচ্য। এবং কাটিল (√কাট্ + ইল) সকর্মিকা ক্রিয়াটি সঙ্গে-সঙ্গে অকর্মিকারূপে ব্যবহৃত হইতেছে। সেইরূপ (ক) ডুগডুগির আওয়াজেই খটাখট খুলল জানাবাবুদের ওই জানালাগুলো। যাহারা জানালা খুলিয়াছে তাহারা বাক্যটির কর্তৃপদ; কিন্তু বাক্যে তাহাদের কোনো উল্লেখই নাই। বাক্যটি এমনভাবে গঠিত হইয়াছে যে, ‘জানালাগুলো’ পদটি নিজেই যেন কর্তৃপদ অধিকার করিয়া বসিয়াছে। পদটি মূলতঃ ছিল কর্ম, এখন অনুমানে কর্তৃপদ পাইয়া হইয়াছে কর্মকর্তৃপদ। বাচ্যটির নাম তাই কর্মকর্তৃবাচ্য। এবং খুলল (√খুল্ + ল) এই সকর্মিকা ক্রিয়াটি সঙ্গে-সঙ্গে অকর্মিকারূপে ব্যবহৃত হইতেছে। (খ) “ভাঙল সুখের হাট।” অভাগিনীর সুখের হাটটি ভগবান্ ভাঙিয়া দিলেন; সুতরাং ভগবান্ কর্তৃপদ এবং হাট কর্মপদ। কিন্তু বাক্যটিতে কর্তৃপদের কোনো উল্লেখই নাই, ফলে হাট কর্মপদটি কর্তৃপদটিকে অধিকার করিয়াছে বলিয়া মনে হইতেছে। তাই হাট হইল কর্মকর্তৃপদ। বাচ্যটির নামও তাই কর্মকর্তৃবাচ্য। এবং ভাঙল (√ ভাঙ্ + ল) সকর্মিকা ক্রিয়াটি সঙ্গে-সঙ্গে অকর্মিকারূপে ব্যবহৃত হইতেছে। (গ) বালতিটা এখনও ভরছে (√ভর্ + ছে)? (ঘ) ভিড়ে ঘড়িটা হারিয়েছে (√হারা + এছে) তো? (ঙ) খদ্দর ছেঁড়ে (√ছিঁড় + এ) কম। (চ) অত লিচু খেও না, পেট কামড়াবে (√কামড়া + বে)। (ছ) “প্রভাতের ফল…… বিকালবেলায় বিকায় (√বিকা + এ) হেলায় সহিয়া নীরব ব্যথা।”

এই বাচ্যের ক্রিয়াটিকে সকর্মিকা (অন্ততঃ প্রেরণার্থক ধাতুনিষ্পন্ন) হইতেই হইবে, নতুবা তাহার কর্ম থাকিবে না। আর কর্ম না থাকিলে ক্রিয়মাণ থাকিয়া কর্মকর্তৃপদ হইবে কে? কর্মকর্তৃপদ না হইলে তো কর্মকর্তৃবাচ্যই হইবে না। আরও উদাহরণ—(i) রাত্রি নটায় অনুষ্ঠান ভাঙল। (ii) মাথাটা ধরেছে বড্ড। (iii) “পেটও তো তাদের যথেষ্ট ভরছে।” (iv) স্টেশনে পৌঁছনোমাত্র ট্রেনটা ছেড়ে দিল। (v) “ছিঁডুক বস্ত্ৰ, লাগুক ধুলাবালি।”

কর্মকর্তৃবাচ্যের ক্রিয়ার রূপ কেবল কর্তৃবাচ্যের—সর্বদাই প্রথমপুরুষের উল্লিখিত বাক্যগুলির কর্তৃপদকে খুঁজিতে গিয়া ক্রিয়াগুলির সিদ্ধ ধাতু (যথাক্রমে কাট্, খুল্, ভাঙ্, ভর্, হারা, ছিঁড়, কামড়া, বিকা, ধর্, ছাড়) যদি অক্ষুণ্ণ থাকে তবেই বাচ্যটি কর্মকর্তৃবাচ্য, কিন্তু ণিজন্ত ধাতুর প্রয়োজন হইলে কেবল কর্তৃবাচ্য হইবে। (i)—চিহ্নিত বাক্যটির অনুল্লিখিত কর্তৃপদ সভাপতিমহাশয় অনুষ্ঠান ভাঙলেন (√ভাঙ্), এবং বাক্যের ক্রিয়া ভাঙল (√ভাঙ্)—একই ধাতু; সুতরাং কর্মকর্তৃবাচ্য। (জ) এতক্ষণে ট্রেনটা ছাড়ল। এই বাক্যটিতে অনুল্লিখিত কর্তৃপদ স্টেশনমাস্টার ট্রেনটা ছাড়লেন (√ছাড় + লেন), এবং বাক্যে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদ ছাড়ল (√ছাড় + ল)—উভয়ক্ষেত্রেই একই ধাতু ছাড়। সুতরাং কর্মকর্তৃবাচ্য। উপরের (ক) হইতে (ছ) পর্যন্ত বাক্যগুলির কর্তৃপদ খুঁজিতে গিয়া দেখ ক্রিয়াপদগুলির সিদ্ধ ধাতু অক্ষুণ্ণ রহিয়াছে। কিন্তু—(i) কবিতার বই বাজারে কাটে (√কাট্ + এ) কম। বাক্যটির কর্তা বিক্রেতা। বিক্রেতা বই কাটান (√কাটা—সাধিত + ন)। কাট্ এবং কাটা এক ধাতু নয়। (ii) “টাকা এতদিন খেটেছে (√খাট্ + এছে) তো।” বাক্যটির কর্তা মানুষ। মানুষ টাকা খাটায় (√খাটা–ণিজন্ত + এ)। খাট্ এবং খাটা কি একই ধাতু? (iii) “সুরলোকে বাজে জয়শঙ্খ।” কেহ শঙ্খ বাজায় (√বাজা—ণিজন্ত + এ), তাই শঙ্খ বাজে (√বাজ্ + এ)। এখানেও বাজ্ এবং বাজা ধাতু কদাপি এক নয়। সুতরাং উল্লিখিত তিনটি বাক্যই কর্তৃবাচ্যের, এবং ক্রিয়াগুলি মূলতঃ অকর্মিকা, প্রতীয়মান অকর্মিকা নয়। এই ব্যাপারে “ক্রিয়মাণত্ত যৎ কর্ম স্বয়মেব প্রসিধ্যতি” সূত্রটির কেবল শেষাংশের উপর নয়, ক্রিয়মাণন্তু কথাটির উপরও লক্ষ্য রাখিবে।

বাচ্য-পরিবর্তন

২০১। বাচ্য পরিবর্তন : বাক্যের অর্থ অপরিবর্তিত রাখিয়া এক বাচ্যের বাক্যকে অন্য বাচ্যে রূপান্তরিত করার নাম বাচ্য-পরিবর্তন।

কেবল কর্তৃপদ, কর্মপদ ও ক্রিয়াপদের রূপান্তর ঘটাইয়া বাচ্য-পরিবর্তন করা হয়। বাচ্য-পরিবর্তনে ক্রিয়ার কালের বা ভাবের কোনো পরিবর্তন ঘটানো হয় না। সাধু বা চলিত ভাষারীতিটিও অক্ষুণ্ণ রাখিতে হয়।

(ক) কর্তৃবাচ্য হইতে কর্মবাচ্য—কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া সকর্মিকা হইলে বাক্যটিকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করা যায়। কর্তৃপদে করণ বা কর্মকারকের অথবা সম্বন্ধপদের বিভক্তি আর কর্মপদে শূন্যবিভক্তি হয়। হ, যা, আছ, পড় প্রভৃতি ধাতুর যোগে গঠিত ক্রিয়াপদটি কর্মের অনুগত হয়। তৎসম ধাতুজ ক্রিয়ার পূর্বে ক্ত-প্রত্যয়াত্ত বিশেষণ এবং খাঁটী বাংলা ধাতুজ ক্রিয়ার পূর্বে আ-প্রত্যয়ান্ত বিশেষণ বসে।

(১) কর্তৃবাচ্য : অচিন্ত্যবাবু ‘কবি শ্রীরামকৃষ্ণ’ গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন।

কর্মবাচ্য : অচিন্ত্যবাবু কর্তৃক ‘কবি শ্রীরামকৃষ্ণ’ গ্রন্থ রচিত হইয়াছে।

(২) কর্তৃবাচ্য : পুলিস চোর ধরিয়াছে।

কর্মবাচ্য : পুলিস কর্তৃক চোর ধৃত হইয়াছে। [ সংস্কৃত রীতি ]

পুলিসের হাতে চোর ধরা পড়িয়াছে। [খাঁটী বাংলা রীতি]

(৩) কর্তৃবাচ্য : সাপটা মারতে পারনি?

কর্মবাচ্য : (তোমার হাতে) সাপটা মারা পড়েনি?

(৪) কর্তৃবাচ্য : এবারের পূজা-সংখ্যা ‘দেশ’ পড়িয়াছেন?

কর্মবাচ্য : এবারের পূজা-সংখ্যা ‘দেশ’ আপনার পড়া হইয়াছে?

(৫) কর্তৃবাচ্য : জরুরী সভা আহ্বান করুন। [ কর্তৃপদের উল্লেখই নাই ]

কর্মবাচ্য : জরুরী সভা আহূত হউক।

(৬) কর্তৃবাচ্য : মামাকে চিঠি দিয়েছ?

কর্মবাচ্য : মামাকে (তোমার) চিঠি দেওয়া হয়েছে?

(৭) কর্তৃবাচ্য : বইখানা আজই কিনবে।

কর্মবাচ্য : (তোমাকে) বইখানা আজই কিনতে হবে।

(৮) কর্তৃবাচ্য : “তাই তোমাকে চিঠি লিখছি।”

কর্মবাচ্য : তাই তোমাকে (আমার) চিঠি লেখা হচ্ছে।

(খ) কর্মবাচ্য হইতে কর্তৃবাচ্য—করণ, কর্ম বা সম্বন্ধপদের বিভক্তিযুক্ত পদটিকে কর্তৃকারকে আনিয়া, কর্তৃকারকের বিভক্তিযুক্ত পদটিকে কর্মে রূপান্তরিত করিয়া, হ যা আছ্ পড় প্রভৃতি ধাতুযোগে গঠিত সমাপিকা ক্রিয়াটি বাতিল করিয়া কৃদন্ত পদটির মূল ধাতু হইতে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করিতে হয়।

(১) কর্মবাচ্য : রূপরেখা’-দ্বারা বইখানি সুন্দর ছাপা হইয়াছে।

কর্তৃবাচ্য : ‘রূপরেখা” বইখানি সুন্দর ছাপিয়াছে।

(২) কর্মবাচ্য : “ওঁর (শ্রীরামকৃষ্ণের) সব ধর্ম দেখা আছে।”

কর্তৃবাচ্য : উনি (শ্রীরামকৃষ্ণ) সব ধর্ম দেখেছেন।

(৩) কর্মবাচ্য : সমস্যা সমাধানের জন্য সকলকে ডাকা হোক কর্তৃবাচ্য : সমস্যা সমাধানের জন্য সকলকে ডাকুন।

(৪) কর্মবাচ্য : জয়সিংহ আমার নিজের হাতে গড়া।

কর্তৃবাচ্য : জয়সিংহকে আমি নিজের হাতে গড়িয়াছি (গড়েছি)।

(৫) কর্মবাচ্য : রমাকে পাত্রপক্ষের আশীর্বাদ করা হয়ে গেছে? কর্তৃবাচ্য : রমাকে পাত্রপক্ষ আশীর্বাদ করে গেছেন?

(৬) কর্মবাচ্য : ছবিটি আমার আগেই দেখা।

কর্তৃবাচ্য : ছবিটি আমি আগেই দেখিয়াছি (দেখেছি)।

(৭) কর্মবাচ্য : এমন চমৎকার কবিতা বড়ো-একটা দেখা যায় না। কর্তৃবাচ্য : এমন চমৎকার কবিতা বড়ো-একটা দেখি না।

(৮) কর্মবাচ্য : “তাঁকে টিকিট কিনতে হয় নি।”

কর্তৃবাচ্য : তিনি টিকিট কেনেননি।

(গ) কর্তৃবাচ্য হইতে ভাববাচ্য—কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়াটি অকর্মিকা হইলে (অথবা সকর্মিকা ক্রিয়ার কর্মটি উহ্য থাকিলে) বাক্যটিকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করা হয়। ভাববাচ্যে কখনও কর্তা ঊহ্য থাকে, কখনও-বা কর্তায় সম্বন্ধপদের বা কর্মকারকের বিভক্তি হয়। খাঁটী বাংলায় আ-প্রত্যয়ান্ত ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের সহিত ভাববাচ্যের ক্রিয়া যুক্ত হয়। ক্রিয়াটি হ-ধাতুনিষ্পন্ন হইয়া সর্বদাই প্রথমপুরুষের রূপে থাকে।

(১) কর্তৃবাচ্য : রোজ সকালে এদিকে যান (যাও বা দাস) কোথা?

ভাববাচ্য : রোজ সকালে এদিকে যাওয়া হয় কোথা?

(২) কর্তৃবাচ্য : এখন একটু ঘুমাব।

ভাববাচ্য : এখন আমাকে একটু ঘুমাতে হবে।

(৩) কর্তৃবাচ্য : কেমন ঘুমালেন?

ভাববাচ্য : আপনার কেমন ঘুম হল?

(৪) কর্তৃবাচ্য : ছেলেমেয়েরা খেয়েছে? (সকর্মিকা ক্রিয়ার কর্মটিই নাই)

ভাববাচ্য : ছেলেমেয়েদের খাওয়া হয়েছে?

(৫) কর্তৃবাচ্য : মশায়, কোথা থেকে আসছেন?

ভাববাচ্য : মশায়ের কোথা থেকে আসা হচ্ছে?

(৬) কর্তৃবাচ্য : আমরা তাহলে এখন উঠি?

ভাববাচ্য : আমাদের তাহলে এখন ওঠা হোক?

(ঘ) ভাববাচ্য হইতে কর্তৃবাচ্য—ক্রিয়ার সহিত সম্পর্কযুক্ত র (এর) অথবা কে বিভক্তিযুক্ত পদটিকে বাক্যের কর্তৃপদে পরিণত করিয়া, হ বা যা-ধাতুনিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়াটিকে লোপ করিয়া কৃদন্ত পদটির মূল ধাতু হইতে কর্তৃবাচ্যের কর্তৃপদের উপযোগী সমাপিকা ক্রিয়াটি গঠন কর।

(১) ভাববাচ্য : বারবেলা পড়ে গেল, আমার আর যাওয়া হল না।

কর্তৃবাচ্য : বারবেলা পড়ে গেল, আমি আর যাচ্ছি না।

(২) ভাববাচ্য : আমার হাতে আর তোমার ছাড়ান নেই।

কর্তৃবাচ্য : আমি আর তোমায় ছাড়ছি না।

(৩) ভাববাচ্য : আপনাদের এখন কি ভবানীপুরেই থাকা হয়?

কর্তৃবাচ্য : আপনারা এখন কি ভবানীপুরেই থাকেন?

(৪) ভাববাচ্য : বিজয়ার দিন খাওয়া হল কখন?

কর্তৃবাচ্য : বিজয়ার দিন খেলেন (খেলে বা খেলি) কখন?

(৫) ভাববাচ্য : মাটিতে সকলকেই বসতে হবে।

কর্তৃবাচ্য : মাটিতে সকলেই বসবে (বসবেন বা বসবি)।

(৬) ভাববাচ্য : তোমার ছেলের আজ পড়া হয় নাই।

কর্তৃবাচ্য : তোমার ছেলে আজ পড়ে (পড়া করে) নাই।

বাচ্যান্তর-সাধনে নবগঠিত বাক্যটি শ্রুতিমধুর হওয়া চাই, নতুবা বাচ্য—পরিবর্তনের কোনো সার্থকতাই থাকে না। “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”—কর্তৃবাচ্যের এই বাক্যটিকে ব্যাকরণের নিক্তি ধরিয়া আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটাইলে দাঁড়াইবে—আমার সোনার বাংলা, তুমি আমার দ্বারা ভালোবাসিত হও।—বাক্যটি কেমন শুনাইবে? সুতরাং এরূপ বাক্যের বাচ্য—পরিবর্তন বিধেয় নহে।

কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের পরস্পর রূপান্তর অসম্ভব। কর্মকর্তৃবাচ্যেরও বাচ্যান্তর হয় না। বাচ্যান্তরীকরণের আরও কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ্য কর

(১) “কমলাকান্তের মনের কথা এ জন্মে আর বলা হইল না।” (কর্মবাচ্য)—কমলাকান্ত মনের কথা এ জন্মে আর বলিতে পারিল না (কর্তৃবাচ্য)। (২) মেলায় দেশের স্তবগান গীত, দেশানুরাগের কবিতা পঠিত ও দেশী শিল্প ব্যায়াম প্রভৃতি প্রদর্শিত হইত (কর্মবাচ্য)।—মেলায় (লোকে) দেশের স্তবগান গাহিত, দেশানুরাগের কবিতা পাঠ করিত ও দেশী শিল্প ব্যায়াম প্রভৃতি প্রদর্শন করিত (কর্তৃবাচ্য)। (৩) অল্প লোকই বেদের অর্থ বুঝিত (কর্তৃবাচ্য)।—অল্প লোকের দ্বারাই বেদের অর্থ বুঝা হইত (কর্মবাচ্য)। (৪) কিছুই বলা যাচ্ছে না (কর্মবাচ্য)।—কিছুই বলতে পারছি না (কর্তৃবাচ্য)। (৫) সইতে হল (ভাববাচ্য)।—সইলাম (কর্তৃবাচ্য)। (৬) আজকের কাগজখানা এখনও পড়িনি (কর্তৃবাচ্য)।—আজকের কাগজখানা এখনও আমার পড়া হয়নি (কর্মবাচ্য)। আজকের কাগজপড়া (কৃদন্ত বিশেষ্য) এখনও আমার হয়ে ওঠেনি (ভাববাচ্য)। (৭) “সহসা প্রাঙ্গণের মধ্যে একটা পদশব্দ শোনা গেল।” (কর্মবাচ্য)—সহসা প্রাঙ্গণের মধ্যে [জয়কালীদেবী] একটা পদশব্দ শুনলেন (কর্তৃবাচ্য)। (৮) ছারপোকা আর মশার জ্বালায় সারারাত জেগেই কেটে গেল। (ভাববাচ্য)—ছারপোকা আর মশার জ্বালায় সারারাত জেগেই কাটালাম (কর্তৃবাচ্য)। (৯) “পাণ্ডবের হইবে বিজয়।” (ভাববাচ্য)—পাণ্ডবেরা হইবে বিজয়ী (কর্তৃবাচ্য)। (১০) কুলীন বামুনকে পড়ে থাকতে হল, চাঁড়াল-জোলার তরে যাওয়া হল। (ভাববাচ্য)—“কুলীন বামুন রইল পড়ে, তরে গেল চাড়াল-জোলা।” (“র্তৃবাচ্য) (১১) “কথাটা আমাকেই পাড়তে হল।” (ভাববাচ্য)—কথাটা আমিই পাড়লাম (কর্তৃবাচ্য)। (১২) সেখানে তোমাদের ভালোই থাকা হয়েছিল তো (ভাববাচ্য)? সেখানে তোমরা ভালোই ছিলে তো? (কর্তৃবাচ্য) (১৩) “বাজবে যে আজ মহোল্লাসে তোমার মহাশঙ্খ।” (কর্তৃবাচ্য)—আজ যে তোমার মহাশঙ্খের মহোল্লাসে বাজা হবে (ভাববাচ্য)। (১৪) যেমন দেবেন, তেমনি পাবেন। (কর্তৃবাচ্য)—যেমন দেওয়া হবে, তেমনি পাওয়া হবে (ভাববাচ্য)। (১৫) “আঘাত খেয়ে অটল রব।” (কর্তৃবাচ্য)—আঘাত খেয়ে আমাদের অটল থাকা হবে (ভাববাচ্য)। (১৬) “আসিবে না পৃথিবীতে সেদিন আবার।” (কর্তৃবাচ্য)—পৃথিবীতে সেদিনের আবার আসা হইবে না (ভাববাচ্য)। (১৭) “ধনীর দোষেই দরিদ্রে চোর হয়।” (কর্তৃবাচ্য)—ধনীর দোষেই দরিদ্রকে চোর হইতে (হতে) হয় (ভাববাচ্য)। (১৮) এখানে আমরা বহাল তবিয়তেই আছি। (কর্তৃবাচ্য)—এখানে আমাদের বহাল তবিয়তেই থাকা হচ্ছে (ভাববাচ্য)। (১৯) পূজারী ব্রাহ্মণ লাঠিহতে তাড়া করিয়া আসিল। (কর্তৃবাচ্য)—লাঠিহস্তে পূজারী ব্রাহ্মণের তাড়া করিয়া আসা হইল (ভাববাচ্য)। (২০) “ কোথায় ভাসায়ে দেবে সাম্রাজ্যের দেশ-বেড়াজাল।” (কর্তৃবাচ্য)—সাম্রাজ্যের দেশ-বেড়াজাল [মহাকালের দ্বারা] কোথায় ভাসাইয়া দেওয়া হইবে (কর্মবাচ্য—’ভাসায়ে’ ক্রিয়াটির প্রবণতা সাধুর দিকে বলিয়া সাধু রীতিতেই করিতে হইল, যদি ‘ভাসিয়ে’ থাকিত তবে চলিতেই করিতে হইত)। (২১) “ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, ঢায় দুটো ভাত, একটু নুন।” (কর্তৃবাচ্য)—ক্ষুধাতুর শিশুর দ্বারা স্বরাজ চাওয়া হয় না, দুটো ভাত, একটু নুন চাওয়া হয় (কর্মবাচ্য)। (২২) “অন্তরে লভেছি তব বাণী।” (কর্তৃবাচ্য)–(আমাদের/আমার) দ্বারা অন্তরে তোমার বাণী লাভ করা হইয়াছে (কর্মবাচ্য)। (২৩) “এ সংসারের ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস সকলই তোমরা খাইবে, আমরা কিছুই পাইব না কেন?” (কর্তৃবাচ্য) –এ সংসারের….সকলই তোমাদের দ্বারা খাওয়া হইবে, আমাদের দ্বারা কিছুই পাওয়া হইবে না কেন? (কর্মবাচ্য)

বাক্য-সংযোজন

২০২। বাক্য-সংযোজন : পরস্পর অর্থ-সম্বন্ধযুক্ত দুই বা ততোধিক বাক্যকে, অর্থের কোনো পরিবর্তন না ঘটাইয়া, একটিমাত্র বাক্যে সংহত করার নাম বাক্য-সংযোজন। নবগঠিত বাক্যটি সরল, জটিল, যৌগিক—যেকোনো ধরনের হইতে পারে। বাক্য-সংযোজনের নিয়মগুলি লক্ষ্য কর।

(১) বাক্যাবলী হইতে একটিমাত্র প্রধান বাক্য বাছিয়া লইয়া ভাবী বাক্যটির কর্তৃপদ ও তদনুরূপ সসমাপিকা ক্রিয়াটি নির্ধারণ কর।

(২) প্রয়োজনমতো অন্যান্য বাক্যগুলিকে কৃৎ বা তদ্বিত-প্রত্যয়যোগে বা সমাসের নিয়মে সঙ্কুচিত করিয়া এক-একটি গদে পরিণত কর।

(৩) প্রয়োজনমতো অপ্রধান সমাপিকা ক্রিয়াগুলিকে অসমাপিকায় পরিণত কর।

(৪) প্রয়োজনমতো অব্যয়পদের সাহায্য গ্রহণ কর।

বাক্য-সংযোজনের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল, লক্ষ্য কর।—

(ক) বিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) দেবব্রত ছিলেন শান্তনুর জ্যেষ্ঠপুত্র, তাঁহার পত্নী গঙ্গার গর্ভজাত। (২) পিতাকে সুখী করিবার উদ্দেশ্যে তিনি নিজ জীবনের সুখ-আহ্লাদ সবকিছু বিসর্জন দিবার জন্য এক ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেন। (৩) সেই প্রতিজ্ঞার জন্য তিনি ভীষ্ম আখ্যা লাভ করেন।

এখানে মূল কর্তা দেবব্রত এবং মূল সমাপিকা ক্রিয়া লাভ করেন। এই মূল সূত্র ধরিয়া বাক্যগুলিকে সংযুক্ত করিলে দাঁড়াইবে—

সংযুক্ত বাক্য : শান্তনুর জ্যেষ্ঠপুত্র গাঙ্গেয় দেবব্রত পিতৃসুখহেতু নিজ জীবনের সুখ-আহ্লাদ সবকিছু বিসর্জন দিবার জন্য এক ভীষণ প্রতিজ্ঞা করিয়া ভীষ্ম আখ্যা লাভ করেন। (সরল বাক্য)

(খ) বিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) অকস্মাৎ গোলপোস্টে লাগিয়া গোলরক্ষক মাথায় আঘাত পাইল। (২) স্বেচ্ছাসেবকগণ তাহাকে ধরাধরি করিয়া তৎক্ষণাৎ‍ প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষে লইয়া গেল। (৩) এই কক্ষটি প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের কক্ষ-সংলগ্ন ছিল। (৪) প্রতীক্ষারত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা করিলেন। (৫) আঘাত গুরুতর মনে হইল। (৬) চিকিৎসক তৎক্ষণাৎ আহতকে গাড়িতে করিয়া হাসপাতালে লইয়া চলিলেন। (৭) গাড়িটি চিকিৎসকের নিজের।

সংযুক্ত বাক্য : অকস্মাৎ গোলপোস্টে লাগিয়া মাথায় আঘাত পাইলে স্বেচ্ছাসেবকগণ গোলরক্ষককে ধরাধরি করিয়া প্রধানশিক্ষকমহাশয়ের কক্ষ-সংলগ্ন প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষে লইয়া আসিল, কিন্তু প্রতীক্ষারত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়া আঘাত গুরুতর মনে হওয়ায় তৎক্ষণাৎ নিজের গাড়িতে করিয়া আহতকে হাসপাতালে লইয়া চলিলেন। (যৌগিক বাক্য)

(গ) বিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) সৈনিকটি পলাইতেছিল। (২) প্রহরিগণ তাহাকে ধরিয়া সম্রাটের সম্মুখে আনিল। (৩) তিনি তখন তাহাকে পলাইবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। (৪) সৈনিকটি বলিল, “পীড়িতা জননীকে দেখিবার জন্য আমি অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়াছি।” (৫) নেপোলিয়ঁ সেই মুহূর্তেই তাহাকে মুক্তি দিলেন। (৬) সম্রাট্ নিজেও যে খুব মাতৃভক্ত ছিলেন।

সংযুক্ত বাক্য : পলায়মান সৈনিকটিকে প্রহরিগণ ধরিয়া আনিলে তাহার পলাইবার কারণ জিজ্ঞাসা করিয়া যখন সম্রাট্ জানিতে পারিলেন যে পীড়িতা জননীকে দেখিবার জন্য সে অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়াছে, তখন মাতৃভক্ত নেপোলিয় সেই মুহূর্তেই তাহাকে মুক্তি দিলেন। (জটিল বাক্য)

(ঘ) বিযুক্ত বাক্যাবলী : “জ্যৈষ্ঠমাসের শেষে গিরিবালা জ্বরে পড়িল। দুই-তিন দিন সকালবেলা ভিজিয়া ভিজিয়া সে ফুল তুলিয়াছিল। আমি ভোরে চা খাইয়া অফিসে চলিয়া যাইতাম। আমার স্ত্রীর কথা সে গ্রাহ্য করিত না। এই অত্যাচারের ফলস্বরূপ তাহার সর্দিজ্বরের মতো হইল। প্রথমে আমরা ততটা খেয়াল করি নাই।”

সংযুক্ত বাক্য : আমি ভোরে চা খাইয়া অফিসে চলিয়া গেলে জ্যৈষ্ঠমাসের শেষে দুই-তিন দিন সকালবেলা আমার স্ত্রীর কথা গ্রাহ্য না করিয়া ভিজিয়া ভিজিয়া ফুল-তোলার অত্যাচারের ফলস্বরূপ গিরিবালার সর্দিজ্বরের মতো হওয়াটা প্রথমে আমরা ততটা খেয়াল করি নাই। (সরল)

(ঙ) বিযুক্ত বাক্যাবলী : ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ উৎকৃষ্ট মহাকাব্য। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইহার রচয়িতা। যশোহরের অন্তর্গত সাগরদাঁড়ি গ্রামে তাঁহার নিবাস ছিল। তিনি এই মহাকাব্য রচনা করিয়া বঙ্গদেশে চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছেন।

সংযুক্ত বাক্য : (১) যশোহরের অন্তর্গত সাগরদাঁড়ি গ্রামে যাঁহার নিবাস ছিল সেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ শীর্ষক এক উৎকৃষ্ট মহাকাব্য রচনা করিয়া বঙ্গদেশে চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছেন। (জটিল)

(২) যশোহরের অন্তর্গত সাগরদাঁড়ি গ্রামনিবাসী মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ শীর্ষক এক উৎকৃষ্ট মহাকাব্য রচনা করিয়া বঙ্গদেশে চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছেন। (সরল)

(চ) বিযুক্ত বাক্যাবলী : আমরা পুরুষানুক্রমে সংস্কৃতব্যবসায়ী। পিতৃদেব অবস্থার বৈগুণ্যবশতঃ ইচ্ছানুরূপ সংস্কৃত পড়িতে পারেন নাই; ইহাতে তাঁহার অন্তঃকরণে অতিশয় ক্ষোভ জন্মিয়াছিল। তিনি সিদ্ধান্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন, আমি রীতিমতো সংস্কৃত শিখিয়া চতুষ্পাঠীতে অধ্যাপনা করিব। এজন্য পূর্বোক্ত পরামর্শ তাঁহার মনোনীত হইল না।

সংযুক্ত বাক্য : পুরুষানুক্রমে সংস্কৃতব্যবসায়ী বংশের লোক আমার পিতৃদেব অবস্থাবৈগুণ্যে ইচ্ছানুরূপ সংস্কৃত পড়িতে না পারায় অতিশয় ক্ষুব্ধ অন্তঃকরণে প্রাক্-সিদ্ধান্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন যে রীতিমতো সংস্কৃত শিক্ষা করিয়া চতুষ্পাঠীতে আমি অধ্যাপনা করিব, এজন্য পূর্বোক্ত পরামর্শ তাঁহার মনোনীত হইল না। (যৌগিক বাক্য)

(ছ) বিযুক্ত বাক্যাবলী : মার্জারসুন্দরী আনন্দে দুগ্ধপান করিল। সেই দুগ্ধ একজন গোয়ালিনীর দেওয়া। তাহার নাম প্রসন্ন। দুগ্ধ আদৌ জলমিশ্রিত ছিল না। দুগ্ধপানে মার্জারী পরিতৃপ্ত হইল। তখন তাহার মানসিক সুখের ঊর্ধ্বে আর কোনো সুখ ছিল না। সেই সুখের কথা এ জগতে প্রকটিত করিবার অভিপ্রায় জাগিল। অমনি সে মধুর স্বরে বলিয়া উঠিল “মেও”। তাহার সে দিনের স্বরটি কোকিলের স্বরকেও হার মানাইয়া দিল।

সংযুক্ত বাক্য : মার্জারসুন্দরী আনন্দে প্রসন্ন নামে একজন গোয়ালিনী-প্রদত্ত সম্পূর্ণ নির্জল দুগ্ধপানে পরিতৃপ্ত হইয়া সে দিনের সেই বৎপরোনাস্তি মানসিক সুখের কথা এ জগতে প্রকটিত করিবার অভিপ্রায়ে কোকিলবিনিন্দ। মধুরস্বরে বলিয়া উঠিল “মেও”। (সরল)

বাক্য-বিয়োজন

২০৩। বাক্য-বিয়োজন : একটি বৃহৎ বাক্যকে অর্থসম্বন্ধযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি বাক্যে প্রকাশ করার নাম বাক্য-বিয়োজন।

বাক্য-বিয়োজন হইতেছে বাক্য-সংযো নের বিপরীত প্রক্রিয়া। সুতরাং (১) সমাসবদ্ধ বৃহদাকার পদগুলিকে বা কৃদন্ত বা তদ্ধিতান্ত পদকে এক-একটি ক্ষুদ্র বাক্যে বিশ্লিষ্ট করিয়া, (২) অসমাপিকা ক্রিয়াগুলিকে সমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করিয়া বাক্যগুলিকে এক-একটি ক্ষুদ্র বাক্যের রূপ দিয়া বাক্য-বিয়োজন করা হয়। মূল বাক্যস্থিত অব্যয়গুলিকে প্রয়োজনমতো বাদ দিতে হয়। কয়েকটি উদাহরণ দেখ।—

(ক) সংযুক্ত বাক্য : কলিকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত বিচারপতি অশেষ গুণশালী স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘকাল বঙ্গদেশে শিক্ষাবিস্তারকার্যে ব্রতী ছিলেন। নিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। (২) এই কার্যে তিনি খুব খ্যাতিলাভ করেন। (৩) তিনি বঙ্গদেশে শিক্ষাবিস্তারকার্যে ব্রতী ছিলেন। (৪) তিনি দীর্ঘকাল এই কার্য করিয়াছিলেন। (৫) তিনি যে-সমস্ত গুণের অধিকারী ছিলেন তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না।

(খ) সংযুক্ত বাক্য : “বহুকালের পর ভাগীরথীর দর্শনলাভ করিয়া আমার অন্তঃকরণে কেমন এক অনির্বচনীয় ভাবের উদয় হইয়াছে, তাহাতেই অকস্মাৎ আমার নয়নযুগল হইতে বাষ্পবারি বিগলিত হইল।”

বিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) বহুকাল পরে ভাগীরথীর দর্শনলাভ ঘটিল। (২) ইহাতে আমার অন্তঃকরণে কেমন এক ভাবের উদয় হইয়াছে। (৩) এই ভাব বাক্যে প্রকাশ করা যায় না। (৪) এমন ভাবের উদয় হওয়ায় অকস্মাৎ আমার নয়নযুগল হইতে বাষ্পবারি বিগলিত হইল।

(গ) সংযুক্ত বাক্য : “পিসিমার মুখে শুনেছি রুপোকাকা নাকি সাজিমাটির নৌকোতে চড়ে ওর কুড়ি-বাইশ বছর বয়সের সময় দক্ষিণ-দেশ থেকে আমাদের গ্রামের ঘাটে নিরাশ্রয় অবস্থায় এসে নেমেছিল।”

বিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) রুপোকাকা নাকি সাজিমাটির নৌকোয় করে আসে। (২) ওর তখন কুড়ি-বাইশ বছর বয়স। (৩) ও দক্ষিণ-দেশ থেকে এসেছিল। (৪) নৌকো আমাদের গ্রামের ঘাটে এসে লেগেছিল। (৫) ওকে তখন আশ্রয় দেবার মতো কেউ ছিল না। (৬) এসব কথা আমাদের পিসিমার মুখে শোনা।

(ঘ) মূল বাক্য : “পঁচিশ বছর আগে যে বৃদ্ধকে দেখেছিলুম, ঠিক তারই মতো একটি বৃদ্ধ গদির উপর বসে মোটা একটি বই নিয়ে সাপ-খেলানো সুরে কী পড়ছিল।”

বিযুক্ত বাক্যাবলী : (১) পঁচিশ বছর আগে এক বৃদ্ধকে দেখেছিলুম। (২) এ বৃদ্ধটি ঠিক তারই মতো দেখতে। (৩) বৃদ্ধটি গদির উপর বসে ছিল। (৪) সে মোটা একটি বই নিয়ে কী পড়ছিল। (৫) সে সুর করে করে পড়ছিল। (৬) তার সুরটা ছিল সাপ-খেলানো সুর।

বাক্য-প্রসারণ

২০৪। বাক্য-প্রসারণ : বাক্যের মূল ভাবটিকে অক্ষুণ্ণ রাখিয়া বাক্যান্তর্গত কোনো কোনো পদকে অপ্রধান খণ্ডবাক্যে বা নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যে পরিণত করিয়া, অথবা উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্প্রসারণ ঘটাইয়া বাক্যের যে বিস্তৃতি সম্পাদন করা হয়, তাহাকে বাক্য-প্রসারণ বলে। ইহা বাক্য-সংকোচনের বিপরীত প্রক্রিয়া।

বাক্যস্থিত এক বা একাধিক পদকে প্রসারিত করিয়া যেখানে বিশেষ্যস্থানীয় বা বিশেষণস্থানীয় বা ক্রিয়াবিশেষণ-স্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্যে পরিণত করা হয়, সেখানে নবগঠিত বাক্যটি জটিল। (ক) পিতামাতার আদেশ সর্বদা শিরোধার্য (সরল)। পিতামাতা যে আদেশ করিবেন, তাহা সর্বদা শিরে ধারণ করিবার যোগ্য (জটিল)। (খ) পরমুখাপেক্ষীর উন্নতিলাভ অসম্ভব (সরল)। পরের মুখের (সাহায্যের) অপেক্ষা যে করে, তাহার উন্নতিলাভ কোনোদিনই সম্ভব নয় (জটিল)।

প্রদত্ত বাক্যমধ্যস্থ এক বা একাধিক পদকে এক-একটি নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যে রূপান্তরিত করিলে নবগঠিত বাক্যটি হইবে যৌগিক। (ক) সত্যে অবিচল থাকিয়া তিনি অবশেষে জয়ী হইলেন (সরল)। তিনি সত্যে অবিচল ছিলেন, তাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হইলেন (যৌগিক)। (খ) নিদারুণ দারিদ্র্যসত্ত্বেও তিনি কখনও লোভের বশীভূত হন নাই (সরল)। তিনি নিদারুণ দরিদ্র ছিলেন, তথাপি তিনি কখনও লোভের বশীভূত হন নাই (যৌগিক)।

বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশকে সম্প্রসারিত করিয়াও বাক্য-প্রসারণ করা হয়। [ ৪৫৭-৪৫৯ পৃষ্ঠায় দেখ ] নবগঠিত বাক্যটি সরল, জটিল বা যৌগিক—যেকোনো ধরনের হইতে পারে। (ক) সম্রাট্ অশোক রাজধর্মের আদর্শ হইয়া রহিয়াছেন (সরল)।—চন্দ্রগুপ্ত-প্রতিষ্ঠিত মৌর্যবংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট্ অশোক নানাভাবে প্রজার কল্যাণসাধন করিয়া সকল দেশের সকল যুগের রাজধর্মের আদর্শ হইয়া রহিয়াছেন (সরল)। (খ) রমেশ বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিল না (সরল)।—যেহেতু অসৎসঙ্গে পড়িয়া আমার ছোটো তাই রমেশ সারা বৎসর পড়াশুনায় অবহেলা করিয়াছে, সেই হেতু সে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিল না (জটিল)। আমার ছোটো ভাই রমেশ অসৎসঙ্গে পড়িয়া সারা বৎসর পড়াশুনায় অবহেলা করিয়াছে, সেইজন্য সে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিল না (যৌগিক)। আমার ছোটো ভাই রমেশ অসৎসঙ্গে পড়িয়া সারা বৎসর পড়াশুনায় অবহেলার দরুন বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিল না (সরল)। (গ) “প্রীতির দানে কোনো অপমান নাই, কিন্তু হিতৈষিতার দানে মানুষ অপমানিত হয়।” (যৌগিক)—প্রীতির প্রেরণায় যখন কাহাকেও কোনোকিছু দান করা হয়, গ্রহীতার পক্ষে সেই দান-গ্রহণে কোনো অপমান নাই, কিন্তু হিতৈষিতা-সাধন করিতেছি এইরকম অভিমান লইয়া যখন কিছু দান করা হয়, সেই দানে মানুষ অপমানিত হয় (যৌগিক)।

অনুশীলনী

১। বাক্য কাহাকে বলে? বাক্যের বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণযোগে আলোচনা কর।

২। সরল, জটিল ও যৌগিক বাক্যের সংজ্ঞার্থ বল। প্রত্যেকটির দুইটি করিয়া উদাহরণ দাও এবং বুঝাইয়া দাও কেন উহাদের সরল বা জটিল বা যৌগিক বলা হয়।

৩। বাক্যগুলিকে বিশ্লেষণ কর : “জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।” ভগবানকে ডাক, শান্তি পাবে। বাড়ি আসিয়াই বাবার চিঠি পাইয়াছি। “মিতব্যয়ী হও, কিন্তু কৃপণ হইও না।” “যে দেখে সে আজ মাগে যে হিসাব, কেহ নাহি করে ক্ষমা।” সত্য আর অসত্যের যাথার্থ্য যিনি নির্ণয় করিতে পারেন তিনিই যথার্থ ধর্মবিদ। “আমার মধ্যে উচ্ছ্বসিত এই যে নিশ্বাস, এ তোমারই তপ্ত প্রাণস্পর্শ।”

৪। প্রতিটি শব্দগুচ্ছকে এক-একটি শব্দে প্রকাশ কর; যাহা দেওয়া যায় না; যাহারা বিবাদ করিতেছে; একই সময়ে বর্তমান; যিনি অনেক দেখিয়াছেন; যাহা বিনা আয়াসে সাধন করা যায়; যাহা সহজে লঙ্ঘন করা যায় না; যাহা বাড়িতেছে; যাহা বৃদ্ধি পাইতেছে; একমতের ভাব; যাহা বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না; অপকার করিবার ইচ্ছা; উপকার করিতে ইচ্ছুক হরণ করিতে ইচ্ছুক; যাহা উড়িয়া যাইতেছে; যাহা কামনার যোগ্য; জয় করিবার ইচ্ছা; বিজয়লাভে ইচ্ছুক; বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক উপাধি-বিতরণ উৎসব; যাহার শ্রী আছে যে নারীর শ্রী আছে; যে পড়ে; মাটি দিয়া তৈয়ারী; মুনির ভাব; সখীর ভাব; যাহা ক্ষয়প্রাপ্ত হইতেছে; ন্যায়শাস্ত্রে পারদর্শী; বারমাসের কাহিনী; খেলায় পটু; শান্তিপুরে তৈয়ারী; ভোজনের ইচ্ছা; তেজ আছে এমন রমণী; পিতার মতো; যাহা উক্ত হইবে; যাহা মৰ্মকে পীড়া দেয়; সাহার শুনিবার ইচ্ছা আছে; সাধুর ভাব; যিনি বিষ অপহরণ করেন; শঠের আচরণ; সোনা দিয়া তৈয়ারী; ভূগোলের সম্বন্ধে; পুরোহিতের কাজ; মিথিলার সম্বন্ধে; দূতের কাজ; তিলজাত বস্তু; যাহার ধী আছে; অলঘুকে লঘু করা; ভূমিতে পরিণত; দারুর দ্বারা নির্মিত; যাহার জন্য অপেক্ষা করা হইতেছে; মৃত্তিকার দ্বারা নির্মিত; নিম্ন-ওষ্ঠে সংলগ্ন করিয়া ফুৎকারযোগে বাজাইবার বাঁশি; যাহার আগমনের কোনো তিথি নাই; অরুণের নন্দন; একবার ফল দিয়া যে গাছ মরিয়া যায়; চমরী গাভীর পুচ্ছ-নির্মিত ব্যজন; হীরামণিমুক্তাখচিত অলংকার; টেলিগ্রাফের যন্ত্রসাহায্যে প্রেরিত সংবাদ; বিশেষভাবে ঈক্ষণ করিতেছেন রিনি; সন্ন্যাসীর জলপাত্রবিশেষ; নিকষার পুত্র; সমানের ভাব; যে নারী প্রতীক্ষা করিতেছেন; যে নারীর পতিও নাই পুত্রও নাই; যাহার পুত্র হয় নাই; বৃষ্টিতে ও নদীজলে পুষ্ট দেশ; যে নিজেকে পণ্ডিত ভাবে; জীবিত থাকিয়াও যে মৃতবৎ; যে বুকে ভর দিয়া গমন করে; যে দুইবার জন্মগ্রহণ করে; যে ইন্দ্রিয় জয় করিয়াছে; যে গাছে বছরে দুইবার ফল হয়; প্রকৃত কুমার; অক্ষরজ্ঞান নাই যাহার; বসুর স্ত্রী; বসুর পুত্র; উপকারীর ঋণ স্বীকার করে না যে; যাহাতে কোনো বিসংবাদ (বিরোধ) নাই; যাহা সঞ্চয় করা হইতেছে; লাভ করতে ইচ্ছুক; মূর্ধা যাহার উচ্চারণস্থান; বেদে যিনি অভিজ্ঞ; ঈষৎ নীলবর্ণ-বিশিষ্ট; বিবেচনাপূর্বক কাজ করে না যে; নদী মাতা যাহার; যাহা পূর্বে হয় নাই; যাহার কোনো কর্ম নাই; যাহা জ্বলজ্বল করিতেছে; যাহা কোথাও নীচু কোথাও উঁচু; পরের সৌভাগ্য দেখিয়া যে কাতর হয়; যে একই পঙ্ক্তিতে স্থানলাভ করিবার অযোগ্য; বেদান্ত জানেন যিনি; ভিক্ষালাভই উদ্দেশ্য যাহার; যাহার দুইটি হাত সমান চলে; সর্বনের কল্যাণে; সর্বজনের সম্পর্কিত; যেখানে রজ (ধূলিকণা) নাই; যিনি শুইয়া রহিয়াছেন; যাহাকে শোয়ানো হইয়াছে; যে নারীর জন্য প্রতীক্ষা করা হইতেছে; বিবস্বানের পুত্র; পুরুষানুক্রমে ভোগ্য; দিব্য আবেশের প্রভাবে বক্তৃতাকারী; যাহার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট আর কিছু নাই; ভ্রমপ্রমাদশূন্য মুনিবাক্য; শিরোমধ্যস্থ সহস্রদল পদ্ম; মুল্যবান্ জিনিসপত্র রাাখিবার ভাণ্ডার; যিনি কর্মে ক্লেশ অনুভব করেন না; যে গাছে ফুল না হইয়া ফল হয়; প্রিয়জনের ত্রুটিপূর্ণ আচরণে জাত মনোবেদনা; যে ব্রাহ্মণ বেদ অধ্যয়ন করেন না; হস্তদ্বয়ের করতলদ্বারা গঠিত কোষ; অনায়াসে যাহা জপ করা যায়, সংসর্গ হইতে প্রাপ্ত শিক্ষা; প্রথম জাত ধ্বনিটির অনুবর্তী ক্রমবিলীয়মান ধ্বনিসমূহ; উপায় (সাধন) দ্বারা যে অতীষ্টকে পাইতে হয়; একটু পরেই যাহার মাধুর্য নষ্ট হয়।

৫। বিপরীতার্থক শব্দ দিয়া বাক্যরচনা কর : আবাহন, নিরাপত্তা, পারত্রিক, ব্যষ্টি, জাগ্রৎ, দুর্লভ, দুর্বল, আসমান, নুখ্য, বিগ্রহ, তিরোভাব, গরিমা, বিকৃতি, তবিয্যং, সমষ্টি, অস্তিত্ব, পাপিনী, দুঃসহ, প্রতিপাল্য, নিরক্ষরা, সাম্য, রোগিণী, নির্দোষা, গ্রহণীয়, গৃহীতা, শায়িত, ধনিনী, কর্মঠ, বৃহত্ত্ব, ঊষা, নিমীলিত, বিজেতা, নিন্দিত, আকুঞ্চন, ঊর্ধ্বগমন, বিস্মৃতি, বিপক্ষ, স্তুতি, হর্ষ, জঙ্গম, পাপ, ঢড়াই, আবির্ভাব, ঐহিক, উন্নতি, শূন্য, আরোহণ, সুযোগ, অবনত, অধস্তন, উষ্ণ, গ্রহণ, স্থূল, সার্থক, প্রত্যক্ষ, আদান, অস্ত্র, গরিমা, পরোক্ষ, সন্ধি, ভারী, দাতা, আসামী, নিবৃত্তি, বৃদ্ধি, মুখ্য, উন্মাদ, কৃতজ্ঞ, অনুকূল, হ্রাস, ভরাট, স্থাবর, লঘু, আগামী, আগমন, উৎকর্য, প্রকৃতি, সঞ্চয়, পুরোগামী, সংযোগ, অনুগ্রহ, উত্থান, সুখ, অলাভ, পরাজয়, সাধু, মৃত্যু, অর্পণ, উত্তম, উগ্র, বেশী, ভাটা, জীবন, চোর, দক্ষিণ, গুণ, প্রবল, নিত্য, পুণ্য, সুশীল, লোভী, বিয়োগ, সংকোচন, অপচয়, বিচ্ছেদ, জরা, অতিবৃষ্টি, অবহেলা, অবরোহণ, কৃতঘ্ন, শৈত্য, সংকুচিত, তন্বী, গুরু, শয়িত, সাধুবাদ, অবনমিত, সুপ্তি, খাপখাওয়া, তাণ্ডব, প্রত্যাখ্যান, দ্বীপ, সরেস, গোপনে, ঢিলে, বৈধ, ত্বরান্বিত, আপ্যায়িত, আরম্ভ, আরব্ধ, শুরু, বিপন্ন, দায়, অত্য, আঘ্রাতা, অবতল, উত্তরীয়, ভেঙেছি, দরিদ্রতা, অন্তর্বাস, বহির্ভূত, উৎপথ, রুদ্ধ, যুক্ত, মুক্ত।

৬। যথাস্থানে ছেদচিহ্ন বসাও : (ক) ইন্দ্ৰ খুশী হইয়া বলিল এই তো চাই কিন্তু আস্তে ভাই ব্যাটারা ভারী পাজী আমি ঝাউবনের পাশ দিয়ে মক্কাক্ষেতের ভেতর দিয়ে নৌকো এমনি বার করে নিয়ে যাব যে ওরা টেরও পাবে না আর টের পেলেই বা কি ধরা কি মুখের কথা (খ) কৃষক মজুরের দুর্গতি দেখে তলস্তয় উচ্চারণ করলেন তাঁর বেদমন্ত্র পবিত্র হও মুক্ত হও অহিংসার অস্ত্র দিয়ে হিংসা আর বর্বরতাকে জয় করো

৭। বাক্যগুলিকে নির্দেশমতো রূপান্তরিত কর : (ক) দানা না পাইলে আর কি চেঁচায়? [ জটিল ] (খ) অনেক পরীক্ষার পর বাক্সকয়েক দেশালাই তৈরী হইল। [ যৌগিক ] (গ) যত্নশীলই রত্নলাভে অধিকারী। [ যৌগিক ] (ঘ) সংসারে অন্য অভাব অনেক আছে, কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট। [ সরল ] (ঙ) নিন্দুকগুলো খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে। [ যৌগিক ] (চ) এই প্রকৃতিগত পার্থক্য দেখিয়াই আমরা বিদ্যাসাগরের অসাধারণত্ব অনুভব করি। [ যৌগিক ] (ছ) তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের কথা সকলেই জানে। [ প্রশ্নবোধক (জ) বিবদমান বিশ্বের সুমতি হোক। [ নির্দেশাত্মক ] (ঝ) সে ‘হাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলিল না। [ অস্ত্যর্থক ] (ঞ) আপস পাপের সঙ্গেও চলে না, বাপের সত্ত্বেও না। [ প্রশ্নসূচক ] (ট) মিথ্যা কথা বলিও না। [ নির্দেশাত্মক ] (ঠ) শিশুটিকে বিরক্ত করছ কেন? [ অনুজ্ঞাসূচক ] (ড) ইতিহাস কী নিদারুণভাবেই না নিজেকে আবর্তিত করে! [ নির্দেশাত্মক ] (ঢ) শ্রদ্ধাবান্ ছাত্রকে কে না ভালোবাসেন? [ অস্ত্যর্থক ] (ণ) বিদেহী আত্মার শান্তিকামনা করিতেছি। [ প্রার্থনাসূচক ] (ত) পড়াশুনায় ছেলেটির গভীর অনুরাগ দেখছি! [ বিস্ময়বোধক ] (থ) আমরা ভারতীয় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হয়েছি। [ ‘হয়েছি’ স্থানে ‘পেয়েছি’ বসাও ] (দ) পাপীকে ঘৃণা করা উচিত কি? [ নাস্ত্যর্থক ] (ধ) বিজ্ঞানের শক্তি অপরিমেয়। [ নাস্ত্যর্থক ] (ন) এরপর আমি লেঠেলদের জিজ্ঞেস করলুম, তারা ঈশ্বরকে একহাত খেলবার অনুমতি দেবে কি না। [ প্রত্যক্ষ উক্তি ] (প) যা যদৃচ্ছাক্রমে আসে, তাতে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট, সে-ই যথার্থ সুখী। [ সরল ] (ফ) পরগাছার বৃক্ষগৌরব থাকে না। [ প্রশ্নাত্মক জটিল ] .(ব) পরাজয়েও তাঁর কুন্দশুভ্র হাসি অমলিন থাকে। [ না-সূচক যৌগিক ] (ভ) সুখ বাইরে খোঁজবার জিনিস নয়। [ প্রশ্নাত্মক ] (ম) কোনো বিষয়কে অল্পের মধ্যে সহজ করে তিনিই বুঝিয়ে দিতে পারেন যিনি সেই বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী। [ সরল ] (য) যত্নের দ্বারা অর্জন না করিলে কোনো বস্তুই নিজের হয় না। [ ‘অর্জন’ পদান্তর ঘটাও, ‘না’ পরিহার কর ] (র) মানুষের মৃত্যু মর্মান্তিক, কিন্তু মনুষ্যত্বের মৃত্যু ততোধিক মর্মান্তিক। [ ‘কিন্তু’ পরিহার কর, ‘ততোধিক’-এর পরিবর্তে ‘অধিকতর’ বসাও ] (ল) “যে ভ্ৰমে পতিত হয় ঋতপথ তাহারই প্রাপ্য।” [ সরল ] (শ) জীবনের সমধিক মঙ্গলসাধক বাক্যই সত্য বাক্য। [ জটিল ] (ষ) বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটেছে। [ ‘অনুষ্ঠানে’ পদটিকে কর্তৃকারকে পরিণত কর ] (স) অখণ্ড অনুভূতি চিরকালই বিশ্লেষণের অতীত। [ না—সূচক ] (হ) যেখানে বিজ্ঞানের শেষ সেখানেই ধর্মের আরম্ভ। [ সরল ] (ক্ষ) “যে কড়ি তোর প্রভুর দেওয়া সে কড়ি তুই নিস রে হেসে।” [ সরল ]

৮। উক্তি পরিবর্তন কর : কল্যাণী আসিয়া বলিল, “দাদামশায়, আদর যাবার সময় কাঁদছিল।” মুখোপাধ্যায়মহাশয় বলিলেন, “কি বললি?” কল্যাণী বলিল, “হ্যাঁ, দাদামশায়, যাবার সময় চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল।”

৯। (ক) কর্তৃবাচ্যে একটি বাক্য রচনা করিয়া উহাকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তিত কর, এবং এই বাক্যদ্বয়ের সাহায্যে কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্যের পার্থক্য বুঝাইয়া দাও।

(খ) বাচ্য পরিবর্তন কর, কোন্ বাচ্য হইতে কোন্ বাচ্যে আনিলে, উল্লেখ কর : লোভ ত্যাগ কর। “আমরা সকলে বিপথে চলেছি।” অসত্যের দ্বারা সত্য বিনষ্ট হয় না। “পাখিটার শিক্ষা পুরো হইয়াছে।” ভিতরে এসে বসুন। রাস্তায় ডুগডুগির আওয়াজে ফটাফট খুলল জানালাগুলো। বইখানা কি আপনার পড়া হয়েছে? পুরী আমার আগেই দেখা। এমন ছটাকে ব্রেনে ঈশ্বরতত্ত্ব ধরে? ভরাপেটে দ্রুত চলা যায় না। পুরানো গ্লাসটা এতদিনে ভাঙল। হঠাৎ পাঞ্জাবিতে তোমায় রোগা-রোগা দেখাচ্ছিল।

১০। উদাহরণ-সহকারে পরিভাষাগুলির ব্যাখ্যা কর : যোগ্যতা, বাক্য, বাচ্য, ভাববাচ্য, কর্মকর্তৃবাচ্য, বাচ্য-পরিবর্তন, বাক্য-বিশ্লেষণ, বাক্য সংকোচন, বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংযোজন, বাক্য-বিয়োজন, বাক্য-সম্প্রসারণ, বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়

১১। নির্দেশমতো একটি বাক্যে পরিবর্তন কর : (ক) পঁচিশ বছর আগে এক বৃদ্ধকে দেখেছিলুম। এ বৃদ্ধটি ঠিক তারই মতো। বৃদ্ধটি গদির উপর বসে ছিল। সে মোটা বই নিয়ে কী পড়ছিল। তার সুরটা ছিল সাপখেলানো সুর। (জটিল বাক্যে) (খ) স্ত্রীশিক্ষা সমাজের অগ্রগতির পক্ষে অপরিহার্য। বিদ্যাসাগরমশায় এদেশে প্রথম স্ত্রীশিক্ষার প্রবর্তন করেন। তিনি বীরসিংহ গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তিনি জাতির প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি। (সরল বাক্যে) (গ) ‘গাছকে চারা অবস্থায় গোরুছাগলের হাত থেকে বাঁচাবার জন্যে কী করি? চারিদিকে শক্ত বেড়া দিই। গাছ বড়ো হলে গোরুছাগলে তার কোনো ক্ষতিই করতে পারে না। এমনকি সেই গাছে হাতি বেঁধে রাখলেও গাছের কোনো ক্ষতি হয় না, অথচ হাতি জব্দ হয়।” (যৌগিক বাক্যে)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *