চতুর্থ পরিচ্ছেদ – লিঙ্গ
লিঙ্গ কথাটির অর্থ লক্ষণ বা নিদর্শন; এই লক্ষণ দেখিয়া যাবতীয় বিশেষ্য—শব্দকে আমরা মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করিতে পারি। (১) পুরুষ, (২) স্ত্রী ও (৩) ক্লীব অর্থাৎ যাহা পুরুষও নয়, স্ত্রীও নয়। সুতরাং লিঙ্গ তিনপ্রকার—পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ।
৭৫। পুংলিঙ্গ : যে শব্দে পুরুষজাতীয় জীব বুঝায় তাহা পুংলিঙ্গ। যেমন—পিতা, শিক্ষক, জ্ঞানবান্, মহাশয়, ছেলে, বাবা, রাজা, ব্যাঘ্র, মোরগ ইত্যাদি। ৭৬। স্ত্রীলিঙ্গ : যে শব্দে স্ত্রীজাতীয় জীব বুঝায় তাহা স্ত্রীলিঙ্গ। যেমন—মাতা, শিক্ষিকা, জ্ঞানবতী, মহাশয়া, মেয়ে, মা, রানী, ব্যাঘ্রী, মুরগী ইত্যাদি।
৭৭। ক্লীবলিঙ্গ : যে শব্দে পুরুষও বুঝায় না, স্ত্রীও বুঝায় না, তাহা ক্লীবলিঙ্গ। যেমন—গাছ, ফুল, ফল, দোয়াত, কলম, বই, কালি, জামা, জুতা, বাড়ি, ঘর, হাসি, কান্না, যাওয়া, আসা ইত্যাদি।
৭৮। উভয়লিঙ্গ : যে-সমস্ত শব্দে পুরুষও বুঝায়, স্ত্রীও বুঝায়, তাহাদিগকে উভয়লিঙ্গ বলে। কবি, কেরানী, শিশু, সন্তান, সন্ততি, অপত্য, শত্রু, বন্ধু, অন্ধ, খঞ্জ, পয়মন্ত, উত্তরপুরুষ, পূর্বপুরুষ, কীর্তনিয়া, ক্ষণজন্মা, শাস্ত্রবিদ্, ঔপন্যাসিক, উদারচেতা, বাস্তুহারা, মাতৃহারা, আত্মহারা, চিত্রতারকা, অধরা, ভাস্কর, নীচমনা, আত্মভোলা, মালিক, সবজান্তা, রোগা, রাঁধুনী, রাগী, চালাক ইত্যাদি। “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।” “চণ্ডীদাস আর রজকিনী এরাই প্রেমের শিরোমণি।”
লক্ষ্য কর, প্রাণিবাচক শব্দেরই পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ হয়; আর অপ্রাণিবাচক জড় পদার্থ বা ভাব বুঝাইলে ক্লীবলিঙ্গ হয়।
সংস্কৃতেও পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ এবং ক্লীবলিঙ্গ—এই তিনটি লিঙ্গ আছে। কিন্তু লিঙ্গবিচারে সংস্কৃত বাংলা ভাষার মতো বাস্তববাদী নয়, বহুলাংশে কল্পনাবিলাসী। বাংলায় লিঙ্গনির্ণয় করা হয় শব্দটির অর্থবিচার করিয়া, কিন্তু সংস্কৃতে অর্থবিচার না করিয়া শব্দের গঠন-প্রকৃতির উপরই বিশেষ নির্ভর করা হয়। কোন্ কৃৎ-প্রত্যয় বা তদ্ধিত-প্রত্যয়ের যোগে শব্দটি গঠিত, কিংবা কোন্ সমাসের আওতায় শব্দটির সৃষ্টি—এইসমস্ত প্রশ্নই সেখানে মুখ্য হইয়া উঠে। ফলে, পুরুষ বুঝাইলেই কোনো শব্দ যে পুংলিঙ্গ হইবে, কিংবা স্ত্রী বুঝাইলেই শব্দটি যে স্ত্রীলিঙ্গ হইবে, অথবা স্ত্রীপুরুষ কোনোকিছু না বুঝাইলেই শব্দটি যে ক্লীবলিঙ্গ হইবে, এরূপ কোনো সহজ নিয়ম আমরা সেখানে পাই না। ভোগ ত্যাগ যোগ স্তব প্রভৃতি অপ্রাণিবাচক শব্দও সংস্কৃতে পুংলিঙ্গ। স্ত্রীবাচক দার, স্ত্রীলোক শব্দগুলিও পুংলিঙ্গ। আবার স্ত্রীবাচক কলত্র শব্দটি ক্লীবলিঙ্গ। অথচ নদী, লতা, গতি প্রভৃতি শব্দ সত্যকার স্ত্রীকে না বুঝাইলেও স্ত্রীলিঙ্গ। তাই সংস্কৃতে লিঙ্গবিচার নিঃসন্দেহে জটিল ব্যাপার।
॥ সর্বনামের লিঙ্গ ॥
সর্বনামপদ বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং বিশেষ্যের যে লিঙ্গ, সর্বনামপদটিরও সেই লিঙ্গ হয়। আমি, তুমি, তুই, আপনি, সে, তিনি, ইনি, উনি প্রভৃতি সর্বনাম স্ত্রীপুরুষ-নির্বিশেষে ব্যবহৃত হয়; সুতরাং এগুলি স্থান-হিসাবে কখনও পুংলিঙ্গ, কখনও-বা স্ত্রীলিঙ্গ হয়। তবে, লিঙ্গভেদে সর্বনামের রূপভেদ হয় না। এটা, ওটা, এগুলো, সেগুলো, ইহা, উহা, যাহা, তাহা, যা, তা, কী, কোন্টা প্রভৃতি সর্বনাম অপ্রাণিবাচক বস্তুর পরিবর্তে বসে বলিয়া ক্লীবলিঙ্গ। অবশ্য এ, এটা, এটি, ও, ওটা, ওটি মাঝে মাঝে পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গও হয়। (ক) এটি আমাদের রঞ্জিতের বড়ো মেয়ে রমা [ স্ত্রীলিঙ্গ ] (খ) ওকে আপনি-আপনি বলছেন কেন, বাবা? ও তো আপনারই ছাত্র অভিজিৎ। [ পুংলিঙ্গ ]
॥ বিশেষণের লিঙ্গ ॥
সংস্কৃতে বিশেষ্যের যে লিঙ্গ তাহার বিশেষণটিরও সেই লিঙ্গ হয়। সেই হিসাবে তৎসম বিশেষণপদের লিঙ্গ বিশেষ্যের অনুগামী হওয়াই সাধারণ রীতি। ইহাতে ভাষার গুরুত্ব ও লালিত্য বৃদ্ধিই পায়। “অয়ি সুখময়ী ঊষে! কে তোমারে নিরমিল?”—কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। “আজি উতরোল উত্তর বায়ে উতলা হয়েছে তটিনী।”—রবীন্দ্রনাথ। “নগরী নটী চলে অভিসারে যৌবনমদে মত্তা।”—ঐ। “বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি!”—ঐ। “চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী কুড়াইয়া আনি।”—ঐ। “হে বরষা, হে সুধাপরশা।”—দেবেন্দ্রনাথ সেন। “বাণী শুভ্র-কমলাসীনা!”—রজনীকান্ত সেন। “আজ অবধি আমি দূরবর্তিনী হইলাম।”—বিদ্যাসাগর। “তিনি (কৈকেয়ী) পতিঘাতিনী….বৃথাপ্রজ্ঞামানিনী ও রাজ্যকামুকা।”—দীনেশচন্দ্র সেন। “বঙ্কিমের চিত্রাঙ্কনী শক্তির মুলে ছিল প্রকৃতিপ্রেম।” সেইরূপ “কুহকিনী আশা”, “তিমিরা রজনী”, “ধূলিলুণ্ঠিতা শৈব্যা “, “বেগবতী ইচ্ছা”, “ঈদৃশী কিংবদন্তী”, “রঙ্গময়ী কল্পনা”, “গরীয়সী রমণী”, “মাতৃরূপিণী ধরিত্রী”, সমর্থা নায়িকা, বিদ্যোৎসাহিনী সভা ইত্যাদি।
কিন্তু এই রীতির ব্যতিক্রমও যথেষ্ট দৃষ্ট হয়। কবি-সাহিত্যিকগণ স্ত্রীলিঙ্গ শব্দের তৎসম বিশেষণটিকে পুংলিঙ্গ রাখিয়াও ভাষার লাবণ্য অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছেন। “কলঙ্কী বলিয়া ডাকে সব লোকে।”—চণ্ডীদাস (রাধার বিশেষণ, তবুও কলঙ্কিনী হয় নাই)। “সাতকোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী!”—রবীন্দ্রনাথ। “দয়াহীন সভ্যতা-নাগিনী তুলেছে কুটিল ফণা।”—ঐ। “দুঃসহ ব্যথা হয়ে অবসান।“—ঐ। “সমুদ্রস্তনিত পৃথ্বী, হে বিরাট, তোমারে ভরিতে নাহি পারে।”—ঐ। “নিশীথনীরব ঘনঘোর ছায়॥” মোহিতলাল। “যুগযুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।”—কাজী নজরুল ইসলাম। “সুন্দরী নবমল্লিকা সন্ধ্যাশিশিরে সিক্ত হইয়া…..।”—বঙ্কিমচন্দ্র। “রাত্রিশেষে ঘোরতর কুজ্ঝটিকা দিগন্ত ব্যাপ্ত করিয়াছিল।”—ঐ। “স্পর্শে যার সঞ্জীবিত অভিশপ্ত অহল্যার প্রাণ।”—যতীন্দ্রমোহন বাগচী। “গাঢ় প্রীতি, গূঢ় অনুভূতি….. ক্ষিপ্র গতি, গভীর আকৃতি।”—কবিশেখর কালিদাস রায়। সেইরূপ অকথিত বাণী, অতৃপ্ত কামনা, “উদাসীন পৃথিবী”, চিরস্থায়ী কীর্তি ইত্যাদি।
তৎসম বিশেষণ-সম্বন্ধেই বাংলা ভাষা যখন এতখানি শিখিল, তখন অতৎসম বিশেষণের তো কথাই নাই। বড়ো ভাই, বড়ো দিদি, বড়ো কাজ—স্ত্রীপুরুষ-নির্বিশেষে সবই সেই এক বড়ো। স্ত্রীবাচক অতৎসম শব্দের পূর্বে কোনো তৎসম বিশেষণ বসিলেও তাহাকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তরিত করিবার প্রয়োজন বড়ো-একটা হয় না। শিক্ষিত মেয়ে, চমৎকার বউ। আবার, অনেক সময় অতৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের পূর্বে তৎসম বিশেষণকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তরিত করিয়াও প্রয়োগ করা হয়।—স্নেহময়ী মা, বিদুষী বউ, বুদ্ধিমতী মেয়ে। লক্ষ্মী এই স্ত্রীবাচক তৎসম বিশেষ্যটির চমৎকার প্রয়োগ পাওয়া যায় আমাদের আটপৌরে জীবনে। লক্ষ্মী ভাই, লক্ষ্মী দিদি, লক্ষ্মী বাবা—বিভিন্ন লিঙ্গে অপরিবর্তিতই রহিয়াছে। সর্বেসর্বা, দয়ালু শব্দ দুইটিও উভয়লিঙ্গ।
রাজ্যপাল, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, শিল্পী, বিচারক, সুরকার—শব্দগুলি স্ত্রীপুরুষ—নির্বিশেষে বাংলায় বেশ চলিতেছে। রাষ্ট্রপতি শব্দটি এই শ্রেণীতে পড়িতে পারে। সভাপতি শব্দটি স্ত্রীপুরুষ-নির্বিশেষে প্রযুক্ত হয়; “সভানেত্রী”-ও বাংলায় চলে।
ভাই কথাটি পুংলিঙ্গবাচক হওয়া সত্ত্বেও অন্তরঙ্গ মেয়েদের পারস্পরিক সম্বোধনে বেশ সহায়ক হইয়া উঠিয়াছে।—ভাই অজিতা, ভাই ছোটো বউদি। এরূপ স্থলে কেহ কেহ ইংরেজী ‘dear’ কথাটির প্রতিশব্দ হিসাবে ‘প্রিয়’ ব্যবহার করিবার পক্ষপাতী। কিন্তু ভাই-এর অন্তরঙ্গতা ‘প্রিয়’-তে পরিস্ফুট হয় না। মোট কথা, বিশেষণের লিঙ্গব্যাপারে বাংলা ভাষার স্বাধীনতা সঙ্গতভাবেই নিরঙ্কুশ।
লিঙ্গ পরিবর্তন
সংস্কৃতে লিঙ্গভেদে একই শব্দের রূপভেদ হয়। কিন্তু বাংলায় পুংলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গের রূপে আদৌ পার্থক্য নাই। পুংলিঙ্গ-স্ত্রীলিঙ্গভেদে অবশ্য রূণগত পার্থক্য দৃষ্ট হয়। পুংলিঙ্গ শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গে পরিণত করার প্রধান উপায় হইতেছে পুংলিঙ্গ শব্দটির উত্তর স্ত্রী-প্রত্যয় যোগ করা। কোকিল শব্দে আ-প্রত্যয় যোগ করিয়া কোকিলা, নদ শব্দে ঈ যোগ করিয়া নদী এবং রুদ্র শব্দে আনী যোগ করিয়া রুদ্রাণী হয়। এই আ, ঈ, আনী প্রভৃতি স্ত্রী-প্রত্যয় যুক্ত হইলে পুংলিঙ্গ শব্দটির শেষস্থ অ লোপ পায়।
৭৯। স্ত্রী-প্রত্যয় : যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিযোগে পুংলিঙ্গ শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গে পরিণত করা যায়, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে স্ত্রী-প্রত্যয় বলে।
যে-সমস্ত সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় চলিতেছে, তাদের মধ্যে আভা, বিভা, লতা, নিশা, বিদ্যা, প্রজ্ঞা, ক্ষমা, দয়া, মেধা, ঊষা, উল্কা, পিপাসা, জিজ্ঞাসা, চিকীর্ষা, ভিক্ষা, তারা, তারকা (নক্ষত্র), জ্যোৎস্না, বনিতা, ক্ষণপ্রভা, প্রভা, ললনা, মহিলা, অঙ্গনা, মতি, গতি, রাত্রি, বিংশতি হইতে নবনবতি পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দ, মুক্তি, ভক্তি, শক্তি, বুদ্ধি, ঋদ্ধি, লক্ষ্মী, শ্রী, কাশী, কাঞ্চী, তরী, তরণী, বেণী, ধী, রজনী, যামিনী, দামিনী, ভূ, মেদিনী, অবনী, পৃথ্বী, পৃথিবী, ভ্রূ, বধূ, দুহিতৃ, মাতৃ, স্বস্, ধাত্রী (পৃথিবী ও ধাই অর্থে), দেবতা, প্রতিমা, ভার্যা, অসূর্যম্পশ্যা, অবীরা, পুরন্ধ্রী, সপত্নী, অরক্ষণীয়া, উপত্যকা, অধিত্যকা, করকা, মনোলোভা, অবলা, দুগ্ধবতী, গর্ভবতী, অন্তর্বত্নী, সধবা, বিধবা, তড়িৎ, শম্পা, বিদ্যুৎ, অন্তঃসত্ত্বা, কন্যকা প্রভৃতি শব্দ নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ। ইহাদের পুংলিঙ্গ হয় না।
কৃতদার, মৃতদার, বিপত্নীক, স্ত্রৈণ, কবিরাজ, কাপুরুষ—নিত্য পুংলিঙ্গ। ইহাদের স্ত্রী-লিঙ্গ হয় না।
তৎসম শব্দের লিঙ্গ-পরিবর্তন
তৎসম পুংলিঙ্গ শব্দের উত্তর আ, ঈ ও আনী—এই তিনটি স্ত্রী-প্রত্যয়ের যেকোনো একটি যোগ করিয়া শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গে পরিবর্তিত করা হয়।
(ক) আ-প্রত্যয়যোগে : আর্য—আর্যা, আদ্য—আদ্যা, শিষ্য—শিষ্যা, ভৃত্য—ভৃত্যা, কোকিল-কোকিলা, বৎস–বৎসা, প্রবীণ-প্রবীণা, কুটিল—কুটিলা, সরল—সরলা, নিপুণ—নিপুণা, নন্দন—নন্দনা, অশ্ব—অশ্বা, নবীন– নবীনা, শ্রেষ্ঠ—শ্রেষ্ঠা, জ্যেষ্ঠ—জ্যেষ্ঠা, সভ্য—সভ্যা, বৃদ্ধ—বৃদ্ধা, পূজনীয়—পূজনীয়া, ম্রিয়মাণ—ম্রিয়মাণা, প্রিয়তম—প্রিয়তমা, তনয়—তনয়া, ক্ষত্রিয়—ক্ষত্রিয়া, বিম্বাধর—বিম্বাধরা, আদর্শ—আদর্শা, প্রথম—প্রথমা, তৃতীয়—তৃতীয়া [ প্ৰথমা, দ্বিতীয়া ও তৃতীয়া—ক্রম ও তিথি বুঝাইতে প্রযুক্ত হয় ], মক্ষিক—মক্ষিকা, মুগ্ধ—মুগ্ধা, ঊর্মিল—ঊর্মিলা, ফেনিল—ফেনিলা, শোভন—শোভনা, আনন্দিত—আনন্দিতা, পণ্ডিত—পণ্ডিতা, উদার—উদারা, নীরোগ—নীরোগা, পলাতক—পলাতকা, অধীন—অধীনা (অধীনী অশুদ্ধ প্রয়োগ), পারঙ্গম পারঙ্গমা, সেবক—সেবকা [ কিন্তু সেবিকা বহুল প্রচলিত ]। সেইরূপ হীনপ্রাণা, ক্ষুদ্রতরা, শারদীয়া, একনিষ্ঠা, কৃতবিদ্যা, গৌরবান্বিতা, মনোহরা, ত্রিনয়না, দিগম্বরা, নীলাম্বরা [দিগম্বরী, নীলাম্বরী অধিক প্রচলিত ], অন্যমনস্কা, শয়ানা, প্রতিপালিতা, অনুগৃহীতা, মর্মপীড়িতা, প্রতীক্ষ্যমাণা, নির্ধনা, নিরহংকারা, নির্মলা, শারিতা, শয়িতা, শোভমানা, দুর্ভগা, নির্দোষা, নিরভিমানা, সাপরাধা, নিরপরাধা, দশভুজা, মহোদয়া, শ্রোত্রিয়া, লুব্ধা, খগা, নির্ভীক, সূর্যা (ছায়া অর্থে), শুচিস্মিতা, প্রেমিকা, স্বাধীনা, গরিষ্ঠা, দয়িতা। “চলেছে ছুটিয়া পলাতকা হিয়া বেগে বহে শিরাধমনী।”
(খ) অক-ভাগান্ত পুংলিঙ্গ শব্দের ‘অক’ স্থানে ‘ইক’ করিয়া শেষে আ—প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ পাওয়া যায় (জাতি বা সমপর্যায়ের স্ত্রী বুঝাইতে) : জনক—জনিকা, অধ্যাপক—অধ্যাপিকা, সম্পাদক—সম্পাদিকা, অভিভাবক—অভিভাবিকা, অপুত্রক–অপুত্রিকা, নায়ক—নায়িকা, গায়ক—গায়িকা, প্রতিপালক—প্রতিপালিকা, শিক্ষক–শিক্ষিকা, লেখক-লেখিকা, পাঠক– পাঠিকা, বাহক –বাহিকা, পাচক—পাচিকা, বালক-বালিকা, সকর্মক—সকর্মিকা, কারক-কারিকা, গ্রাহক—গ্রাহিকা, সহায়ক–সহায়িকা, প্রচারক—প্রচারিকা, নিন্দক—নিন্দিকা, রঞ্জক—রঞ্জিকা, শ্যালক-শ্যালিকা, প্রাপক—প্রাপিকা। সেইরূপ যাচিকা, যাজিকা, গবেষিকা, পরিব্রাজিকা, সমাজসংস্কারিকা, প্রকাশিকা। গায়িকাকে গানের গায়কী (গীতিরীতি) বিশেষজ্ঞের কাছেই শিখতে হয়েছে।
কিন্তু চটক—চটকা, তারক (উদ্ধারকারী অর্থে)—তারকা [ উদ্ধারকারিণী অর্থে, অথচ চিত্রতারকা অর্থে ‘তারকা’ শব্দটি উভয়লিঙ্গ ], আবার নর্তক—নর্তকী, গণক—গণকী, খনক—খনকী, রজক—রজকী প্রভৃতি শব্দে শিল্পী অর্থে ঈ-প্রত্যয় হইয়াছে।
ক্লীবলিঙ্গ শব্দের অক স্থানে ইকা হইলে স্ত্রীলিঙ্গ হয়। নাটক-নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক), পুস্তক-পুস্তিকা (ক্ষুদ্র পুস্তক), চয়ন—চয়নিকা, শকট—শকটিকা।
(গ) জাতিবাচক অ-কারান্ত শব্দের শেষে ঈ-প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ পাওয়া যায় (জাতি বা সমপর্যায়ের স্ত্রী অর্থে) : পরমেশ্বর-পরমেশ্বরী, ঈদৃশ—ঈদৃশী, যাদৃশ—যাদৃশী, এণাক্ষ—এণাক্ষী, কিশোর-–কিশোরী, গৌর—গৌরী, ছাত্র-ছাত্রী [ সংস্কৃতে ছাত্রের পত্নী অর্থে ছাত্রী, আর শিক্ষার্থিনীকে ছাত্ৰা বলা হয়; কিন্তু বাংলায় শিক্ষার্থিনী বলিতে ছাত্রী শব্দই প্রচলিত হইয়া আসিতেছে ], নিশাচর—নিশাচরী, তাপস—তাপসী, মহিমময়—মহিমময়ী, তরুণ–তরুণী, কাক—কাকী, বাসন্ত—বাসন্তী, দ্রৌপদ—দ্রৌপদী, আত্রেয়—আত্রেয়ী, দাক্ষায়ণ—পক্ষায়ণী, প্রাক্—প্রাচী, ভাগবত-ভাগবতী, অষ্টাদশ-অষ্টাদশী [ চতুর্থী হইতে তুর্দশী পর্যন্ত পূরণবাচক শব্দে ক্রম ও তিথি দুইই বুঝায়; আবার চতুর্দশী হইতে মষ্টাদশী পর্যন্ত শব্দে ক্রম ও সেই-সেই বয়সের বালিকা বুঝায় ], সুখকর—সুখকরী, কামুক—কামুকী, সাপ্তাহিক—সাপ্তাহিকী, চিরন্তন—চিয়ন্তনী, মৃন্ময়—মৃন্ময়ী, পিতামহ—পিতামহী, শার্দূল—শার্দূলী, ব্রাহ্মণ—ব্রাহ্মণী, ত্রিলোক—ত্রিলোকী, পঞ্চবট—পঞ্চবটী, যবন—যবনী, শাশ্বত—শাশ্বতী, বিহঙ্গ-বিহঙ্গী, কপোত—কপোতী, পুত্র—পুত্রী, দৌহিত্র—দৌহিত্রী [ পুত্রী ও দৌহিত্রী পত্নী অর্থে নহে ], কল্যাণ—কল্যাণী, গ্রন্থকার—গ্রন্থকারী, আধুনিক—আধুনিকী, সুর—সূরী, রৌদ্র—রৌদ্রী, তুরঙ্গ—তুরঙ্গী, ভুজঙ্গম—ভুজঙ্গমী, উরগ—উরগী সেইরূপ মানবী, প্রীতিময়ী, সিংহী, মণ্ডূকী, ভুজঙ্গী, মাতামহী, নিষাদী, বিড়ালী, মার্জারী, কুরঙ্গী, চণ্ডালী, হংসী, পিকী, চকোরী, অন্ধকী, ব্যাঘ্রী, উষ্ট্রী, মাতঙ্গী, শ্বেতাঙ্গী, হরিণী, সুন্দরী, সদৃশী, দার্শনিকী, সাহসিকী, কাল্পনিকী, পৌরাণিকী, নারায়ণী, বৈষ্ণবী, পথিকী। “আমাদের দেশে প্রবাসিনী আধুনিকী বিদ্যা তেমন নয়।”—রবীন্দ্রনাথ।
ঈ-প্রত্যয়যোগে কতকগুলি পুংলিঙ্গ শব্দের শেষের য লোপ পায় : সূর্য—সূরী (মানবী-পত্নী কুন্তী), গার্গ্য—গার্গী, মৎস্য—মসী, মনুষ্য—মনুষী, মাধুৰ্য—মাধুরী। কিন্তু শেষে য় থাকিলে তাহা লোপ পায় না : ত্রয়—ত্রয়ী, চতুষ্টয় চতুষ্টয়ী, করুণাময়—করুণাময়ী।
(ঘ) ঋ-কারান্ত, অৎ, বৎ, মৎ, ঈয়স্, ইন্, বিন্, শালিন্, অন্, বস্ ভাগান্ত শব্দে ঈ-প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গ হয় : কর্তা (কর্তৃ)–কর্ত্রী, নেতা (নেতৃ)—নেত্ৰী, শিক্ষয়িতা (শিক্ষয়িত্ব)—শিক্ষয়িত্রী, ধাতা (ধাতু)—ধাত্রী, দাতা (দাতৃ)—দাত্রী, ভর্তা—ভর্ত্রী, রচয়িতা (রচয়িত্ব)—রচয়িত্রী, প্রণেতা (প্রণেতৃ)—প্রণেত্রী, গ্রহীতা (গ্রহীতৃ)—গ্রহীত্রী, উদ্গাতা (উদ্গাতৃ)—উদ্গাত্রী, বিঘ্নহন্তা (বিঘ্নহত্ত্ব)—বিঘ্নহন্ত্রী, শাস্তা—-শাস্ত্রী (শাস্তিদাত্রী), পালয়িতা (পালয়িত্)—পালয়িত্রী, শাসয়িতা (শাসয়িত্ব)—শাসয়িত্রী, সবিতা (সবিতৃ)—সবিত্রী, প্রসবিতা (প্রসবিতৃ)—প্রসবিত্রী, স্রষ্টা (স্রষ্ট্)—স্রষ্ট্রী, জনয়িতা (জনয়িত্ব)—জনয়িত্রী, পাতা (পাতৃ)—পাত্রী (পালনকারিণী অর্থে), শ্রোতা—শ্রোত্রী; সেইরূপ বরয়িত্রী, সংগ্রহীত্রী, ক্রেত্রী, বিক্রেত্রী; সৎ-সতী, জাগ্রৎ—জাগ্রতী, বৃহৎ—বৃহতী, মহান্ (মহৎ)—মহতী, ভবিষ্যৎ-ভবিষ্যতী, গুণবান্ (গুণবৎ)—গুণবতী, বিদ্যাবান্ (বিদ্যাবৎ)—বিদ্যা—বতী, ধনবান্ (ধনবৎ)—ধনবতী, রূপবান্ (রূপবৎ)—রূপবতী, ভগবান্ (ভগবৎ)–ভগবতী, ভাগ্যবান্ (ভাগ্যবৎ)—ভাগ্যবতী, লক্ষ্মীবান্ (লক্ষ্মীবৎ)-লক্ষ্মীবতী, সরস্বান্ (সরস্বৎ)—সরস্বতী, তেজস্বান্—তেজস্বতী, কলাবান্ (কলাবৎ)—কলাবতী (নৃত্যগীতাদিনিপুণা); শ্রীমান্ (শ্রীম)—শ্ৰীমতী, বুদ্ধিমান্ (বুদ্ধিমৎ)—বুদ্ধিমতী, শক্তিমান্ (শক্তিমত্)—শক্তিমতী, ধীমান্ (ধীমৎ)—ধীমতী, আয়ুষ্মান্ (আয়ুষ্মৎ)—আয়ুষ্মতী; তদ্রূপ কীর্তিমতী, খ্যাতিমতী, ভানুমতী, সংস্কৃতিমতী, রুচিমতী, ভক্তিমতী; ভূয়ান্ (ভূয়স্)—ভূয়সী, শ্রেয়ান্ (শ্রেয়স্)—শ্রেয়সী, প্রেয়ান্ (প্ৰেয়স্)—প্রেয়সী, গরীয়ান্ (গরীয়স্)—গরীয়সী, বলীয়ান্ (বলীয়স্)—বলীয়সী; সেইরূপ মহীয়সী, বর্ষীয়সী, পাপীয়সী, লঘীয়সী ইত্যাদি; গুণী (গুণিন্)—গুণিনী, সৌধ-কিরীটী (সৌধ-কিরীটিন)—সৌধ-কিরীটিনী, স্বামী (স্বামিন্)—স্বামিনী, রোগী (রোগিন)—রোগিণী, অভিমানী (অভিমানিন্)—অভিমানিনী [ কিন্তু নিরভিমান—নিরভিমানা ], অপরাধী (অপরাধিন্)—অপরাধিনী [ কিন্তু নিরপরাধ—নিরপরাধা ], গৃহী (গৃহিন্)—গৃহিণী, ভোগী—ভোগিনী, পক্ষী (পক্ষিন্)—পক্ষিণী, হস্তী (হস্তিন্)—হস্তিনী, বিদেশী (বিদেশিন্)—বিদেশিনী, বিলাসী (বিলাসিন)—বিলাসিনী, সন্ন্যাসী (সন্ন্যাসিন)—সন্ন্যাসিনী, তুরঙ্গী (তুরঙ্গিন্—অশ্বারোহী অর্থে)—তুরঙ্গিণী, উৎসাহী—-উৎসাহিনী, বিনোদী (বিনোদিন্)—বিনোদিনী, শরীরী (শরীরিন্)—শরীরিণী, মালী (মালিন্ মাল্যধারী)—মালিনী (মাল্যধারিণী), ধনী—ধনিনী, মনীষী—মনীষিণী, অভিলাষী—অভিলাষিণী; তপস্বী—তপস্বিনী, মায়াবী—মায়াবিনী, স্রোতস্বী (স্রোতস্বিন্)—স্রোতস্বিনী, ওজস্বী (ওজস্বিন্)—ওজস্বিনী, যশস্বী (যশস্বিন্)—যশস্বিনী; সেইরূপ তেজস্বিনী, মনস্বিনী, মেধাবিনী; পরাক্রমশালী (পরাক্রমশালিন্) পরাক্রমশালিনী; সেইরূপ ধনশালিনী, জ্ঞানশালিনী, শক্তিশালিনী, চরিত্রশালিনী, সমৃদ্ধিশালিনী, বিত্তশালিনী; রাজা (রাজন)—রাজ্ঞী, খ্যাতনামা (খ্যাতনামন্)—খ্যাতনাম্নী; বিদ্বান্ (বিদ্বস্)—বিদুষী [ বস্ স্থানে উষী ]।
পিতৃ, ভ্রাতৃ ও জামাতৃ শব্দের উত্তর স্ত্রী-প্রত্যয় যুক্ত হয় না; অন্য শব্দ-প্রয়োগে ইহাদের স্ত্রীলিঙ্গ পাওয়া যায়। পিতা (পিতৃ)—মাতা; ভ্রাতা (ভ্রাতৃ)—ভগিনী, ভ্রাতৃজায়া, ভ্রাতৃবধূ; জামাতা (জামাতৃ)–কন্যা।
গুণবাচক উ-কারান্ত শব্দের রূপ স্ত্রীলিঙ্গে একই থাকে, তবে ঈ-প্রত্যয়যোগে একটি অতিরিক্ত রূপও পাওয়া যায়। গুরুগুরু, গুর্বী; সাধু—সাধু, সাধ্বী,; তনু—তনু, তন্বী; মৃদু—মৃদু, মৃদ্বী; লঘু—লঘু, লম্বী; বহু—বহু, বহুী।
সম্রাট্ (সম্রাজ্) শব্দটি দুইটি লিঙ্গে একই রূপে থাকে। তবে সম্রাটের পত্নী অর্থে সম্রাজী শব্দটিও চলে; আবার “সাম্রাজ্যের অধিকারিণী” বা “সম্রাট্—পত্নী”—এই দুই অর্থেই “সম্রাজ্ঞী” বহু-প্রচলিত। অবশ্য সম্রাজন্ (বিরাজমান অর্থে) শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গে সম্রাজ্ঞীও হয়।
(ঙ) বহুব্রীহি সমাস নিষ্পন্ন অ-কারান্ত পদের শেষাংশ অঙ্গবাচক হইলে আ, ঈ—দুইটি প্রত্যয়ই হয় (অর্থ একই) : কৃশাঙ্গ—কৃশাঙ্গা, কৃশাঙ্গী; কোকিলকণ্ঠ—কোকিলকণ্ঠা, কোকিলকণ্ঠী; চন্দ্রমুখ—চন্দ্রমুখা, চন্দ্রমুখী মৃগনয়ন—মৃগনয়না, মৃগনয়নী; সুকেশ—সুকেশা, সুকেশী; কৃশোদর—কৃশোদরা, কৃশোদরী; কুন্দদন্ত—কুন্দদত্তা, কুন্দদন্তী; চারুকর্ণ—চারুকর্ণা, চারুকর্ণী; বিম্বোষ্ঠ—বিম্বোষ্ঠা, বিম্বোষ্ঠী; সুনয়ন—সুনয়না, সুনয়নী। [ নাম বুঝাইলে শুধু আ : শূর্পণখ—শূর্পণখা। ]
(চ) পত্নী অর্থে আনী-প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গ : ইন্দ্র—ইন্দ্রাণী (ণত্ববিধি লক্ষ্য কর), বরুণ—বরুণানী, ভব—ভবানী, রুদ্র—রুদ্রাণী, শিব—শিবানী (শিবাও হয়), শর্ব—শবাণী, ব্রহ্মা—ব্রহ্মাণী, মহেন্দ্র—মহেন্দ্ৰাণী, আচার্য—আচাৰ্যানী, মাতুল—মাতুলানী (মাতুলা, মাতুলী—দুইটিও হয়), শূদ্র—শূদ্রাণী (শূদ্রীও হয়), উপাধ্যায়—উপাধ্যায়ানী (উপাধ্যায়ীও হয়)।
পত্নী অর্থ ছাড়াও আনী প্রত্যয় : অরণ্য—অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), যবন—যবনানী (যবনের লিপি), হিম—হিমানী (তুষারসমূহ), যব—যবানী (দুষ্ট যব)।
(ছ) একাধিক অর্থে একাধিক স্ত্রী-প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দগুলি লক্ষ্য কর : আচার্য—-আচার্যানী (আচার্যের পত্নী), আচার্যা (অধ্যাপিকা); উপাধ্যায়—উপাধ্যায়ানী বা উপাধ্যায়ী (উপাধ্যায়ের পত্নী), উপাধ্যায়া বা উপাধ্যায়ী (স্ত্রী উপাধ্যায়); ক্ষত্রিয়—ক্ষত্রিয়ী (ক্ষত্রিয়ের পত্নী), ক্ষত্রিয়া বা ক্ষত্রিয়াণী (ক্ষত্রিয়জাতীয়া নারী); শূদ্র—শূদ্রী বা শূদ্রাণী (পত্নী), শূদ্রা (শূদ্ৰজাতীয়া নারী); বৈশ্য—বৈশ্যানী (পত্নী), বৈশ্যা (বৈশ্যজাতীয়া নারী); চণ্ড—চণ্ডী (দুর্গা), চণ্ডা (কোপনস্বভাবা নারী); যবন–যবনী (যবনপত্নী), যবনানী (যবনের লিপি); সূর্য—সূরী (মানবী স্ত্রী কুন্তী), সূর্যা: (দেবী স্ত্রী ছায়া); প্রাজ্ঞ—প্রাজ্ঞী (প্রজ্ঞবানের স্ত্রী), প্রাজ্ঞা (প্রজ্ঞাবতী নারী)।
(জ) স্ত্রীবাচক অন্য শব্দ-প্রয়োগে স্ত্রীলিঙ্গ : জনক—জননী, পিতা–মাতা, স্বামী–স্ত্রী, পতি—পত্নী (পতি + ঈ : ন আগম), বর—বধূ, পুরুষ—স্ত্রী, প্রকৃতি, মহিলা; পুত্র—পুত্রবধূ (পত্নী-অর্থে), কন্যা (পত্নী অর্থে নহে); শুক—শারী; বৃষ, ষণ্ড—গবী।।
নিপাতন-সিদ্ধ স্ত্রীলিঙ্গ : শ্বশুর–শ্বশ্রূ, নর–নারী, সখা—সখী, যুবা বা যুবক—যূনী, যুবতী, যুবতি।
॥ সমাসবদ্ধ পদের লিঙ্গসম্বন্ধে একটি বিশেষ কথা ॥
সংস্কৃত স্ত্রীবাচক শব্দের সঙ্গে লোক বৃন্দ গণ-প্রভৃতি পুংলিঙ্গবাচক শব্দের সমাস হইলে সমস্ত-পদটি পুংলিঙ্গ হইয়া যায়। সমস্ত-পদটির কোনো বিশেষণ থাকিলে সেটিকেও পুংলিঙ্গ হইতে হইবে। ইহাই সংস্কৃত ব্যাকরণসম্মত রীতি। কল্যাণময়ী মাতা, কিন্তু কল্যাণময় মাতৃগণ; কীর্তিমতী স্ত্রী, কিন্তু কীর্তিমান্ স্ত্রীলোক; রমণীয়া রমণী, কিন্তু রমণীয় রমণীবৃন্দ; সম্পৎশালিনী মহিলা, কিন্তু সম্পৎশালী মহিলাগণ।
আস্পদ শব্দটির সম্বন্ধে শিক্ষার্থীদের বিশেষ সাবধান থাকা দরকার। শব্দটি ক্লীবলিঙ্গ বলিয়া স্নেহাস্পদেষু, শ্রদ্ধাস্পদেষু, পূজাস্পদেষু প্রভৃতি রূপই শুদ্ধ। স্ত্রীলিঙ্গের বিশেষণ হইলেও কদাপি স্নেহাস্পদাসু, শ্রদ্ধাস্পদাসু ইত্যাদি হইবে না।
বাংলা শব্দের লিঙ্গ-পরিবর্তন
খাঁটী বাংলা শব্দের লিঙ্গ-পরিবর্তনের পূর্বে আমরা একটু ভূমিকা সারিয়া রাখিতে চাই। লিঙ্গ-বিচারে বাংলা ভাষা সংস্কৃতের মতো পুরাপুরি অভিধানঘেঁষা না হইলেও বিশেষ ক্ষেত্রে সে সঙ্গতভাবেই সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুশাসন মানিয়া আসিতেছে। সুর্য, হিমালয়, সমুদ্র প্রভৃতি শব্দ অপ্রাণিবাচক ক্লীব হইলেও গুরুত্ব গাম্ভীর্য আর মহত্ত্বের দিক্ দিয়া এগুলি পৌরুষের প্রকৃষ্ট প্রকাশ। সেইজন্য সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুসরণে বাংলাও ইহাদের পুংলিঙ্গ বলিয়া মানিয়া লইয়াছে। অন্যদিকে ভাষা, সভা, বুদ্ধি, ক্ষমা প্রভৃতি শব্দ অপ্রাণিবাচক হওয়া সত্ত্বেও নারীসুলভ একটি কমনীয় ভাবের আধার বলিয়া সংস্কৃতে স্ত্রীলিঙ্গের মর্যাদা পাইয়া আসিতেছে; ওজস্বিনী ভাষা, মহতী সভা, প্রলয়ঙ্করী বুদ্ধি, নিরুপমা ক্ষমা প্রভৃতি স্ত্রীবাচক বিশেষণ-দ্বারা বাংলা ভাষাও শব্দগুলির কমনীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখিবার পক্ষপাতী।
আবার, দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করিলে একদিকে যেমন একটি কোমল ভাবের প্রকাশ হয়, অন্যদিকে তেমনি মনের মধ্যে গৌরববোধও জাগ্রৎ হয়। কবি-সাহিত্যিকগণ সেইজন্যই জন্মভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করিয়া আসিয়াছেন।—
(ক) “অয়ি নির্মলসূর্যকরোজ্জ্বল ধরণী জনকজননী-জননী।”
(খ) “দুখিনী জনমভূমি—মা আমার, মা আমার!“
(গ) “বঙ্গ আমার! জননি আমার! ধাত্রি আমার! আমার দেশ!”
(ঘ) “ভারত আমার! ভারত আমার! যেখানে মানব মেলিল নেত্ৰ!
মহিমার তুমি জন্মভূমি মা! এশিয়ার তুমি তীর্থক্ষেত্র।”
সুতরাং জড় পদার্থে ব্যক্তিত্ব আরোপ করিলে প্রয়োগ অনুসারে উহা পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ বলিয়া বিবেচিত হয়।
এইবার খাঁটী বাংলা শব্দের লিঙ্গান্তরসাধন-সম্বন্ধে আলোচনা করিব।
বাংলা পুংলিঙ্গকে স্ত্রীলিঙ্গে রূপান্তরিত করিবার চারিটি পথ আছে।–-(১) প্রত্যয়যোগে, (২) ভিন্ন শব্দদ্বারা, (৩) উভয়লিঙ্গ শব্দের পূর্বে বা পরে স্ত্রীবাচক শব্দ বসাইয়া, (৪) যৌগিক শব্দের পুরুষবাচক অংশটিকে স্ত্রীবাচক শব্দে পরিবর্তিত করিয়া।—
(১) প্রত্যয়যোগে : বাংলায় খাঁটী স্ত্রী-প্রত্যয় মাত্র দুইটি—ঈ ও আনী [ নী, ইনী, উনী, উন, ন প্রভৃতি পৃথক্ প্রত্যয় নয়, আনী প্রত্যয় যুক্ত হওয়ায় কোথাও বর্ণ লোপ পায়, কোথাও-বা স্বরসঙ্গতির ফলে রূপান্তর সাধিত হয় ]।
(ক) পুংলিঙ্গ শব্দের শেষস্বরের স্থানে ঈ-প্রত্যয়যোগে [ পত্নী অর্থে ] : কাকা—কাকী, চাচা—চাচী, খুড়া—খুড়ী, জেঠা—জেঠী, মামা—মামী, পিসা (পিসে)—পিসী, মেসো—মাসী, দাদু–দাদী (পিতামহী বা মাতামহী অর্থে)। সাধারণতঃ কাকী খুড়ী ইত্যাদি না বলিয়া ‘মা’-যোগে শব্দগুলিকে সম্ভ্রমপূর্ণ করিয়া কাকীমা মাসীমা জেঠীমা (জেঠাইমা) ইত্যাদি বলাই শিষ্টরীতি।
[ অপত্নী অর্থে ] : দাদা–দিদি, ভাগিনা বা ভাগনে—ভাগিনী বা ভাগনী, বুড়ো—বুড়ী, খোঁড়া–খুঁড়ী, খোকা–খুকী (আদরে খুকু), বোষ্টম—বোষ্টমী, খ্রীষ্টান—খ্রীষ্টানী, মুসলমান—মুসলমানী, বাড়িওয়ালা—বাড়িওয়ালী, বামুন—বামুনী (তুচ্ছার্থে), শাহজাদা—শাহ্জাদী, বাঁদর—বাঁদরী, অভাগা—অভাগী, ধেড়ে—ধাড়ী, আদুরে—আদুরী, ছিঁচকাঁদুনে—ছিঁচকাঁদুনী, হাড়জ্বালানে হাড়জ্বালানী, মনমাতানে—মনমাতানী, ঘরভাঙানে—ঘরভাঙানী, খাঁদানেকো—খাঁদানাকী; পাগল, পাগলা—পাগলী, নিন্দুক—নিন্দুকী, হিংসুটে—হিংসুটী, ভেড়া—ভেড়ী, চকা—চকী ইত্যাদি। [ খুকী, খুঁড়ী প্রভৃতি শব্দে স্বরসঙ্গতিটি লক্ষ্য কর। ]
ক্ষুদ্র সূক্ষ্ম অর্থেও ই-প্রত্যয় হয় : কোষাকুষি, রশারশি, পোঁটলা—পুঁটলি, ছোরা—ছুরি ইত্যাদি। [ এখানেও স্বরসঙ্গতিটি লক্ষণীয়। ]
(খ) পত্নী ও অপত্নী দুই অর্থেই পুংলিঙ্গ শব্দের উত্তর আনী-প্রত্যয়যোগে (বৃত্তিবাচক জাতিবাচক শব্দে স্থলবিশেষে প্রত্যয়টি রূপান্তরিত হইয়া নী ইনী উনী উন ন ইত্যাদি হয়) : নাপিত—নাপিতানী, নাপিতনী; গয়লা—গয়লানী, গোয়ালা—গোয়ালিনী, কামার—কামারনী, চামার—চামারনী, তেলী–তেলিনী, কলু—কলুনী, ভিখারী—ভিখারিনী, পূজারী—পূজারিনী, চৌধুরী—চৌধুরানী, জেলে—জেলেনী, ঠাকুর—ঠাকুরানী বা ঠাকরুন, মোগল—মোগলানী, পুরুত—পুরুতনী, ঘাসুড়িয়া—ঘাসুড়িয়ানী, জমাদার—জমাদারনী, চাকর-চাকরানী, ডাক (জ্ঞানী অর্থে—তিব্বতী শব্দ)—ডাকিনী, মজুর—মজুরনী, বাঘ—বাঘিনী, দুলে—দুলেনী, ডোম—ডোমনী, চাঁড়াল—চাঁড়ালনী, খোট্টা—খোট্টানী, রাজপুত—রাজপুতানী, সাঁওতাল—সাঁওতালনী, দুর্ভাগা—দুর্ভাগিনী, কাঙাল—কাঙালিনী, চোর—চোরনী, বেহাই—বেহান, বেয়াই—বেয়ান, মালী—মালিনী।
(২) সম্পূর্ণ অন্য শব্দদ্বারা : বাবা, বাপ-মা; ঠাকুরদা-ঠানদি; দাদামশায়—দিদিমা; কর্তা—গিন্নী; পো—বউ (পত্নী অর্থে), মেয়ে; ভাই—ভাজ (পত্নী অর্থে—বোনের সম্পর্কে), ভাদ্রবউ বা বউ-মা (পত্নী অর্থে—দাদার সম্পর্কে), বোন; রাজা—রানী; বর–কনে, বউ; চাকর–ঝি; ভূত—পেতনী; তালুই, তাউই—মাউই-মা; মর্দা, মদ্দা—মাদী; হুলো–মেনী; ষাঁড় বা বলদ—গাভী, গাই; এঁড়ে—বকনা; খানসামা–আয়া; সাহেব—মেম, মেমসাহেবা, বিধি; বাদশাহ, নবাব—বেগম, বেগমসাহেবা; বান্দা, গোলাম, নফর-বান্দী, বাঁদী।
(৩) উভয়লিঙ্গ শব্দের পূর্বে বা পরে স্ত্রীবাচক শব্দ বসাইয়া : কবি-কবিপত্নী বা কবিজায়া (পত্নী অর্থে), মহিলাকবি বা স্ত্রীকবি (অপত্নী অর্থে); কেরানী—মেয়েকেরানী; শিল্পী–নারীশিল্পী; সভ্য–মহিলাসভ্য; গোয়েন্দা—মেয়েগোয়েন্দা; পুলিস–-নারী পুলিস; সৈন্য—নারীসৈন্য; প্রতিনিধি—মহিলাপ্রতিনিধি; মুচি—মুচিবউ; বেনে—বেনেবউ; তদ্রূপ গয়লাবউ, জেলেবউ, ময়রাবউ; বামুন—বামুন—মা, বামুনবউ; গোসাঁই—মা-গোসাঁই চিকিৎসক—মহিলা-চিকিৎসক (অপত্নী অর্থে), চিকিৎসক-পত্নী; ডাক্তার—ডাক্তার-গিন্নী; মুনসেফ—মুনসেফ-গিন্নী; বসু—বসুজায়া (পত্নী অর্থে), বসুজা (সন্তান অর্থে); গোরু—গাই-গোরু; সেইরূপ মাদী-হাতী, গাই-মোষ, মেয়ে-কন্ডাকটার, মেয়ে-পকেটমার, মেয়ে-খেলোয়াড়, মেয়ে-দোকানী।
(৪) যৌগিক শব্দের পুরুষবাচক অংশটির পরিবর্তে স্ত্রীবাচক শব্দ বসাইয়া : বেটা-ছেলে-মেয়ে-ছেলে; পুরুষ-মানুষ—মেয়ে-মানুষ; পুরুষ-যাত্রী—মহিলা—যাত্রী; মদ্দা-ঘোড়া—মাদী-ঘোড়া; গোসাঁই-ঠাকুর—মা-গোসাঁই; ঠাকুরপো—ঠাকুরঝি; ভদ্রলোক—ভদ্রমহিলা; হুলো বিড়াল—মেনী বিড়াল; এঁড়ে গোরু-গাই-গোরু; এঁড়ে বাছুর—নই (বকনা বা কমলা) বাছুর।
কয়েকটি তৎসম শব্দের সংস্কৃত স্ত্রীলিঙ্গ ও বাংলা স্ত্রীলিঙ্গ সম্পূর্ণ পৃথক্ :
সং পুং | সং স্ত্রী | বাংলা স্ত্রী |
ধবল | ধবলা | ধবলী |
নট | নটী | নটিনী |
শ্যামল | শ্যামলা | শ্যামলী |
জনক | জনিকা | জননী |
রাজা | রাজ্ঞী | রানী |
পুত্ৰ | পুত্রী | পুত্রবধূ |
কর্তা | কর্ত্রী | গিন্নী |
শ্বশুর | শ্বশ্রূ | শাশুড়ী |
স্বামী | স্বামিনী | স্ত্রী |
সিংহ | সিংহী | সিংহিনী |
কুরঙ্গ | কুরঙ্গী | কুরঙ্গিনী |
নন্দন | নন্দনা | নন্দিনী |
রজক | রজকী | রজকিনী |
অনাথ | অনাথা | অনাথিনী |
॥ স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ হইতে পুংলিঙ্গ ॥
কতকগুলি শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ আগে, বিবাহের পরে আসে পুংলিঙ্গ। যেমন—মেয়ে, ঝি—জামাই; বোন—বোনাই; ভগ্নী—ভগ্নীপতি; ঠাকুরঝি—ঠাকুরজামাই; ননদ–নন্দাই; দিদিমণি—দাদাবাবু; নাতনী—নাতজামাই ভাগনী—ভাগিনজামাই; মাসীমা—মেসোমশায়; পিসিনা—পিসেমশায়; শ্যালী—শ্যালীপতিভাই; সই—সয়া।
নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ—বাঁজা, ধনি (সুন্দরী), সতিন, রূপসী, সজনী, ধাই, এয়ো, শাঁখচুন্নী—পুংলিঙ্গ না থাকায় শব্দগুলি নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ।
নিত্য পুংলিঙ্গ—-কবিরাজ, কুস্তিগির, বাজনদার, বাজিয়ে, ঢাকী, ঢুলী—স্ত্রীলিঙ্গ না থাকায় শব্দগুলি নিত্য পুংলিঙ্গ।
উভয়লিঙ্গ—উতলা, সাকী, সোমত্ত, মাতোয়ারা। “বাতাস হয়েছে উতলা আকুল।” “আজি উতরোল উত্তর বায়ে উতলা হয়েছে তটিনী।”
লিঙ্গ-সম্বন্ধে কয়েকটি বিশেষ কথা
বাংলা ভাষার প্রবণতা মাধুর্যবৃদ্ধির দিকে বলিয়া একই পুংলিঙ্গ শব্দের একাধিক স্ত্রীলিঙ্গ রূপ যেমন এই ভাষায় পাওয়া যায়, তেমনি একই স্ত্রীলিঙ্গ শব্দের একাধিক পুংলিঙ্গ রূপও আমরা দেখিতে পাই। আবার, কয়েকটি তৎসম পুংলিঙ্গ শব্দের লিঙ্গ-পরিবর্তনে কেবল আ বা ঈ-প্রত্যয় যোগ করিয়া আমরা তৃপ্তি পাই না, তাই মাঝে মাঝে ইনী প্রত্যয়ও যোগ করি। চাতকিনী, গোপিনী, সিংহিনী, কুরঙ্গিনী, রজকিনী, অনাথিনী, নটিনী, চণ্ডালিনী, শ্যামাঙ্গিনী প্রভৃতি শব্দ, সংস্কৃত ব্যাকরণমতে না হউক, বাংলা ব্যাকরণমতে শিষ্টপ্রয়োগ। একই কারণে বাংলা অভাগী, সোহাগী, আদুরী, আহ্লাদী, পাগলী, কাঙালী, ননদী (ননদ স্বয়ং স্ত্রীলিঙ্গ, তবুও আমরা তাহার সঙ্গে আর একটি স্ত্রী-প্রত্যয় যোগ করিয়া ননদী করিয়াছি) প্রভৃতি স্ত্রীলিঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও যথাক্রমে অভাগিনী, সোহাগিনী, আদরিণী, আহ্লাদিনী, পাগলিনী, কাঙালিনী, ননদিনী হইয়াছে। কয়েকটি প্রয়োগ লক্ষ্য কর : “শুন রজকিনী রামী।”—চণ্ডীদাস। “কোন্ অন্ধকারামাঝে অনাথিনী মাগিছে সহায়।”—রবীন্দ্রনাথ। “কুরঙ্গিনী সঙ্গে রঙ্গে নাচিতাম বনে।”—মধুকবি। “অয়ি শ্যামাঙ্গিনী ধনি! হউক বসন্তরানী গৌরাঙ্গিনী।” “হেরো ওই ধনীর দুয়ারে দাঁড়াইয়া কাঙালিনী মেয়ে।”—রবীন্দ্রনাথ। “সুপ্ত নটিনীর মতো নিস্তব্ধ তটিনী।”—ঐ। পাঠকের চোখের জলে প্রভাতবাবুর “আদরিণী” চিরসঞ্জীবিত। মাতঙ্গিনী হাজরা বাংলার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় নাম। “পাগলিনী নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া”—কাজী নজরুল।
অথচ সংস্কৃত ব্যাকরণসিদ্ধ রূপগুলিও বাংলা সাহিত্যে পাশাপাশি চলিতেছে। “নগরীর নটী চলে অভিসারে যৌবনমদে মত্তা।”—রবীন্দ্রনাথ। “নূপুর হার হারানো ছলে গোপীরা সাঁঝে যমুনাজলে করে না দেরি।”—কবিশেখর কালিদাস রায়। “নিজগুণে দয়া কর হে মাতঙ্গী!”—আন্টনী ফিরিঙ্গী। “অভাগী বিহুগী আজিকে আহত মরণশ্যেনের পক্ষে।” “এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা।” “মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।”
বাংলায় লিঙ্গনির্ণয় করিতে হইলে রূপ অপেক্ষা শব্দটির অর্থের উপর নির্ভর করাই অধিকতর নিরাপদ। কারণ (ক) অনেক সময় পুংলিঙ্গের প্রয়োগে উভয়লিঙ্গের প্রকাশ হয়। (১) মানুষের মাঝেই দেব আছে, দানবও আছে। (২) শিক্ষকদের নির্দেশ ছাত্রদের দ্বিধাহীনভাবে মানা উচিত। এখানে আয়তাক্ষর পদগুলিতে স্ত্রীপুরুষ-নির্বিশেষে যথাক্রমে মানুষ-মানুষী, দেব—দেবী, দানব-দানবী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী বুঝাইতেছে। (খ) কখনও বা উভয়লিঙ্গের প্রয়োগে পুংলিঙ্গের প্রকাশ হয়। (১) আমাদের দেশে গোরুতে লাঙ্গল টানে, মোষে টানে গাড়ি। আয়তাক্ষর পদ দুইটিতে নিঃসন্দেহে যথাক্রমে ষাঁড় বা বলদ এবং মর্দামোষ বুঝাইতেছে, অথচ (২) কালো গোরুর দুধ বেশ মিষ্টি। এখানে (গ) উভয়লিঙ্গের প্রয়োগে স্ত্রীলিঙ্গের প্রকাশ হইতেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে (ঘ) পুংলিঙ্গের প্রয়োগে স্ত্রীলিঙ্গের প্রকাশ হয়। (১) টাকা দিলে টুকুরাম আপনাকে বাঘের দুধও এনে দিতে পারে। (২) গাধার দুধ বসন্তরোগে পরম উপকারী। (৩) হাঁসের ডিম খুব পুষ্টিকর খাদ্য। এখানে আয়তাক্ষর পদগুলির লিঙ্গনির্ণয়ে পরবর্তী পদ দুধ ও ডিম-এর সাহায্য প্রয়োজন। আবার (ঙ) স্ত্রীলিঙ্গের দ্বারা উভয়লিঙ্গের প্রকাশও হয়।—অখিলবাবু মাতৃশ্রাদ্ধে দশহাজার কাঙালী বিদায় করিয়াছেন।—এখানে স্ত্রীলিঙ্গ ‘কাঙালী’র দ্বারা স্ত্রী-পুরুষ-নির্বিশেষে উভয়লিঙ্গকেই বুঝাইতেছে। (চ) নিত্য স্ত্রীলিঙ্গের দ্বারা উভয়লিঙ্গের প্রকাশ : দেবতার আশীর্বাদ কে না চায়?
ননদ যেমন ননদী ও ননদিনী হয়, নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ ‘সতিন’শব্দটিও তেমনি সতা, সতিনী প্রভৃতি রূপেও প্রযুক্ত হয়। (১) “শাশুড়ী ননদী নাহি নাহি তোর সতা। “ (২) ঘরে ননদিনী কালভুজঙ্গিনী। (৩) “একে সতিনের জ্বালা, না সহে অবলা। “ (৪) “সতিনী সরলা নহে, স্বামী সে শ্মশানে রহে।”
নিভাননী শব্দটির প্রয়োগ বাংলায় বেশ দেখা যায়। কিন্তু শব্দটি ব্যাকরণ-সঙ্গত নয়। ইন্দুনিভাননা—ইন্দুনিভ (চন্দ্রের মতো) আনন যে নারীর এই অর্থে ব্যবহার্য শব্দটির প্রথমাংশ বর্জিত হইয়া নিভাননা অবশেষে নিভাননী হইয়া গিয়াছে।
মোট কথা, লিঙ্গ-ব্যাপারে বাংলা ভাষার দৃষ্টিভঙ্গি বেশ উদার বলা চলে।
অনুশীলনী
১। (ক) লিঙ্গ কথাটির অর্থ কী? বাংলা ভাষায় কয়টি লিঙ্গ আছে? তাহাদের নাম বল এবং প্রত্যেকটির দুইটি করিয়া উদাহরণ দাও।
(খ) উভয়লিঙ্গ শব্দ কাহাকে বলে? দুইটি উদাহরণ দাও।
(গ) লিঙ্গনির্ণয়-বিষয়ে সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার পার্থক্যটুকু বুঝাইয়া দাও।
২। বাংলায় সর্বনাম ও বিশেষণের লিঙ্গ-সম্বন্ধে তোমার মস্ত প্রকাশ কর।
৩। স্ত্রী-প্রত্যয় কাহাকে বলে? তিনটি সংস্কৃত স্ত্রী-প্রত্যয় ও দুইটি বাংলা স্ত্রী-প্রত্যয়ের উল্লেখ করিয়া প্রতিটি প্রত্যয়যোগে দুইটি করিয়া স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ গঠন কর।
৪। প্রত্যয় ছাড়া বাংলা শব্দের লিঙ্গান্তর করিবার আর কী কী উপায় আছে? প্রত্যেকটি উপায়ের তিনটি করিয়া উদাহরণ দাও।
৫। উদাহরণ দাও : ‘আনী’ প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ; নিত্য পুংলিঙ্গ; স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ হইতে পুংলিঙ্গের উৎপত্তি হইয়াছে এমন পাঁচটি শব্দ; সংস্কৃত নিত্য স্ত্রীলিঙ্গ দশটি; এমন ছয়টি উদাহরণ যাহাদের সংস্কৃত ও বাংলা স্ত্রীলিঙ্গ সম্পূর্ণ পৃথক্; পুংলিঙ্গের প্রয়োগে স্ত্রীলিঙ্গের প্রকাশ; স্ত্রীলিঙ্গের প্রয়োগে উভয়লিঙ্গের প্রকাশ; পুংলিঙ্গের প্রয়োগে উভয়লিঙ্গের প্রকাশ; উভয়লিঙ্গের প্রয়োগে পুংলিঙ্গের প্রকাশ; নিত্য স্ত্রীলিঙ্গের প্রয়োগে উভয়লিঙ্গের প্রকাশ।
৬। উপযুক্ত স্ত্রীবাচক শব্দের দ্বারা শূন্যস্থান পূর্ণ কর : সূর্যের দেবী স্ত্রী = …..। ক্ষত্রিয়ের পত্নী = …..। বৈশ্যজাতীয়া নারী = …..। কোপনস্বভাবা নারী = …..। যবনের লিপি আচার্যের বৃত্তি-গ্রহণকারিণী = …..। হিমসংহতি = …..। সংগ্রহ করেন এমন নারী = ….। রাজন্ + ঈ = …….। উপাধ্যায়ের পত্নী = ……। মাধুৰ্য + ঈ = …..। যে নারীর রোগ নাই = …..। প্রজ্ঞাবতী নারী = …..। মনীষা আছে এমন নারী = …..। রুদ্রের পত্নী। মনীষীর পত্নী = ……। রোগিন্ = …..। মনীষীর ভাব = …..। গান করিবার রীতি = …..। যে মেয়ে গান গায় = …..।
৭। (ক) শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য দেখাও : আচার্যা আচার্যানী; উপাধ্যায়া উপাধ্যায়ানী; বৈশ্যা বৈশ্যানী; যবনী যবনানী; চণ্ডা চণ্ডী; ছাত্রা ছাত্রী; শূদ্রা শূদ্রী; সূর্যা সূরী; গায়িকা গায়কী; প্রাজ্ঞা প্রাজ্ঞী।
(খ) মনুষী, মাধুরী, গার্গী, মৎসী—কোন্ লিঙ্গ? বিপরীত লিঙ্গের রূপ লিখ।
৮। শব্দগুলির উপর ব্যাকরণগত টীকা লিখ : ননদিনী, ভুজঙ্গিনী, কাঙালিনী, নটিনী, সম্রাজ্ঞী, গৌরাঙ্গিনী, সজনী, সুকেশী, গোপিনী, যুবতী, বিদুষী, পাত্রী, ছাত্রী, মাধুরী, নাটিকা, কমলিনী, রজকিনী, সেবিকা, পুঁটলি, মালিনী, তারকা, পুস্তিকা, অরণ্যানী, নিভাননী, সভাপতি, মাতৃহারা।
৯। নিম্নোক্ত স্ত্রীলিঙ্গ শব্দগুলির উপর তোমার মন্তব্য লিপিবদ্ধ কর :
(ক) “সেদিন সজনি এমনি রজনী আঁধিয়ার।” (খ) “ধূলিরাঙা পথের বাঁকে বৈরাগিণী বীন বাজায়।” (গ) “মুরলীগান পঞ্চম তান কুলবতী-চিত-চোরণী।” (ঘ) “দুতর পন্থ-গমন ধনি সাধয়ে মন্দিরে যামিনী জাগি।” (ঙ) তোর মতো লক্ষ্মী ছেলে এ তল্লাটে মিলবে না। (চ) “ক্রোধ নিজ কান্তা হিংসাকে সঙ্গে লইয়া ধাবমান হইতেছে।” (ছ) “স্ত্রীর নাম শ্রদ্ধা আর পুরুষের নাম যত্ন।” (জ) “চরে তব শ্যাম গোঠে বেণুরবে ধবলী শ্যামলী।” (ঝ) “অভাগী বিহগী আজিকে আহত মরণশ্যেনের পক্ষে।”
১০। প্রদত্ত শব্দগুলির বিপরীত লিঙ্গে একাধিক রূপ হইলে প্রত্যেকটি রূপের উল্লেখ করিয়া তাহাদের প্রয়োগ-তাৎপর্য দেখাও : ভাই, ছাত্র, নন্দাই, ঘোষ, কাকী, কাঙাল, তুরঙ্গী, শ্যামল, মহিষী, ভাশুর-পো, শাস্ত্রী, পাত্রী, সূরী।
১১। বিপরীত লিঙ্গ উল্লেখ কর : ধনবান, তাউই, বাঁদী, রাজন, বরুণ, ধাত্রী, আয়ুষ্মতী, মহৎ, অনাথ, দীপ্যমান, নাপিত, সহচর, নাগ, বর্ষীয়ান্, নেতা, চাতক, সেবক, শোভমানা, গায়ক, নর্তক, শিক্ষক, ছাত্র, বিদ্বান্, বিদ্যমান, বুদ্ধিমান্, অভিনেতা, বাঁদর, শুক, বেহাই, জেঠা, অধীন, মাস্টার, সভাপতি, হতভাগ্য, মুচি, গাই, ধোপা, মহীয়সী, বেয়াই, বন্ধু, মা-গোসাঁই, শিষ্য, নিরপরাধ, প্রেয়সী, মেথর, প্রাচী, বিদ্যাবান্, ভাগ্যবান, সেব্যমান, চতুর্থ, অশ্ব, কর্তা, সম্রাট, বাদশাহ্, গোয়ালা, ছোটো, যুবা, গুরু, সখী, শ্বশ্রু, কামিনী, রাজ্ঞী, অভাগা, সোহাগে, জ্যেষ্ঠ, বাঘ, মহারাজ, অনুগামিনী, নিরহংকার, চাকর, ঘোড়া, সাধু, প্রণেতা, মহীয়ান্, পণ্ডিত, গোসাঁই, আচার্য, বিদুষী, নন্দন, অন্তরব্যাপিনী, রোরুদ্যমান, কর্ত্রী, ষোড়শী, ত্রয়, প্রসবিতা, পাতা, গরীয়সী, নিরভিমান, মায়াবী, অরণ্য, সরস্বতী, তন্বী, দাক্ষায়ণ, অনিন্দিতা, ভুবনমোহিনী, কুঁদুলী, বধির, গৌরবময়, দেওর-পো, চতুর্দশ, গোপ, ভাগনেবউ, ঘাতক, যশস্বী, গণক, কুমার, দত্ত, পঞ্চবট, সেকরা, বেদে, ধবল, স্বামিনী, টিপসী, নিন্দুক, মহিষী, ফণিনী, বলাকা, জনয়িতা, কীর্তনিয়া, মাতা, অধরা, নির্দোষ, অভিমানী, নীরোগ, শিক্ষয়িতা, ভানুমতী, খ্যাতিমান, বর্ধমান, সরোজ, অবন্ধনা, সাপরাধ, গার্গী, তেজস্বিনী, তেজস্বান্, দুঃখহত্তা, জনিকা, বিনোদিনী, পুষ্করী, সাহসিকী, মালাকার, গৃহীতা, গ্রহীতা, কলাপী, অণীয়সী, স্বয়ংভার্য, মাতঙ্গ, লঘীয়ান্, রুচিমান্, শুভৈষিণী, সেবমানা, মধুমতী, দুর্ভাগিনী, নিয়ন্তা।
১২। (ক) মালিনী, পাত্রী, উপাধ্যায়ী, মাতা, তুরঙ্গী, মহিষী, নিষাদী, কাকী, ছাত্রী—প্রতিটি শব্দের লিঙ্গগত দুইটি করিয়া অর্থ প্রকাশ কর।
(খ) সবিতা, নীলিমা, পূর্ণশশী, পুষ্প, দীপ্তি, স্নেহাস্পদ, শিক্ষয়িতা, বেদবিদ্, দয়িতা, মহৎ—শব্দগুলির লিঙ্গ উল্লেখ কর।
১৩। (ক) তৎসম শব্দের লিঙ্গান্তর করিবার নিয়মগুলি উদাহরণসহ বুঝাইয়া দাও।
(খ) বাংলা শব্দের লিঙ্গ-পরিবর্তনের নিয়মগুলি উদাহরণসহ উল্লেখ কর।
১৪। পার্শ্বস্থ বন্ধনীমধ্য হইতে উপযুক্ত স্ত্রীবাচক শব্দটি নির্বাচন করিয়া প্রদত্ত পুংলিঙ্গবাচক শব্দটির ডানদিকে রেখাচিহ্ন দিয়া বসাও :
(i) শ্ৰীমান্ ….. [ শ্রীমানী / শ্রীমতি / শ্ৰীমতী ]
(ii) বিদ্যাবান্ ….. [ বিদ্যাবতী / বিদ্যাবানী / বিদুষী ]
(iii) বিদ্বান্ ….. [ বিদ্বানী / বিদুষী / বিদূষী ]
(iv) গায়ক ….. [ গায়কী / গায়িকা / গায়কা ]
(v) গরীয়ান্ ….. [ গরীয়সী / গরীয়ানা / গরীয়ানী ]
(vi) শিক্ষয়িতা ….. [ শিক্ষয়িত্ব / শিক্ষয়িত্ৰী / শিক্ষিকা ]
(vii) কিরীটী ….. [ কিরিটীনি / কিরিটীনী / কিরীটিনী ]
(viii) শিক্ষক ….. [ শিক্ষকনী / শিক্ষিকা / শিক্ষকী ]
(ix) ম্রিয়মাণ ….. [ ম্রিয়মতী / ম্রিয়মাণা / ম্রিয়মাণী ]
(x) মাধুর্য …. [ মাধুর্যী / মাধুর্যা / মাধুরী ]
১৫। ভাশুর, শ্যালক, ছেলে, বসু, ভাই, দাদা, ভাগনে, মামা, ঠাকুর-পো—পুংলিঙ্গবাচক এই শব্দগুলির দুইটি করিয়া স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ নীচে বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে; ওই শব্দগুলিকে পুংলিঙ্গবাচক শব্দটির ডানদিকে পত্নী-অর্থে ও অপত্নী-অর্থে যথাযথ বসাও : ভাগনী, বড়ো জা, বউ, ঠাকুর-ঝি, মাসী, মেয়ে, ভাজ, ননদ, জা, ভাগনেবউ, বউদি, বোন, বসুজা, শ্যালিকা, মামী, দিদি, বসুজায়া, শালাজ।
১৬। নী বা ণী বসাইয়া নিম্নলিখিত স্ত্রীবাচক শব্দগুলি পূর্ণ কর : রুদ্রা; কুরঙ্গি—; শিবা—; মনীষি—; ভিখারি—; শর্বা—ভবা―; ইন্দ্ৰা—; বৈরাগি—; অধিকারি—; আচার্যা—; মাতুলা—; চাকরা—; মাস্টার—; শুভাকাঙ্ক্ষি—।
১৭। সংশোধন কর : নীরোগী, মৎস্যা, স্বরস্বতী, বিদূষী, সুন্দরী রমণীবৃন্দ, শ্রদ্ধাস্পদাসু, সুকৃতিশালিনী মাতৃবৃন্দ, মুখরা স্ত্রীলোক, গায়কা, সেবিকা, ননদিনী, রাজ্যকামুকা, নিরভিমানী, নির্দোষী, নিৰ্ধনী, অধিনী, পঞ্চমা কন্যা।
১৮। তরুণ রাজকুমার শাস্ত্রপাঠে অনুরাগী, শস্ত্রচালনায় পারঙ্গম, কাব্যালোচনায় ওজস্বী, গুরুজনে শ্রদ্ধাবান্, কনিষ্ঠদের প্রতি আচরণে স্নেহশীল, অপরিচিতদের প্রতিও সর্বাংশে শোভমান—বাক্যটির ‘রাজকুমার’ পদটিকে ‘রাজকুমারী’ করিলে বাক্যটির অন্যান্য অংশের কীরূপ পরিবর্তন হইবে, দেখা।