৪.২ বাংলা শব্দ-সম্ভার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদবাংলা শব্দ-সম্ভার

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দাবলীকে আমরা মোটামুটি পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করিতে পারি। (১) তৎসম, (২) তদ্‌ভব, (৩) অর্ধ-তৎসম, (৪) দেশী ও (৫) বিদেশী।

১৭৪। তৎসম শব্দ : যে-সমস্ত শব্দ সংস্কৃত হইতে সরাসরি বাংলা ভাষায় আসিয়া অবিকৃত রূপে চলিতেছে, তাহাদিগকে তৎসম শব্দ বলে।

তদ্ = সংস্কৃত, সম = সমান; অতএব তৎসম কথাটির অর্থ হইতেছে ‘সংস্কৃতের সমান’ অর্থাৎ সংস্কৃত শব্দই অপরিবর্তিত আকারে বাংলায় চলিতেছে। মূল সংস্কৃত শব্দের প্রথমার একবচনের রূপটিই বাংলায় গৃহীত হইয়াছে—অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে শব্দের শেষস্থ বিসর্গ বা ম্ (ং) বর্জন করা হইয়াছে। বাংলা শব্দভাণ্ডারের প্রায় অর্ধাংশ (৪৪%) এই তৎসম শব্দে পুষ্ট। সংস্কৃত, ভাণ্ডার, শব্দ, অবিকৃত, ব্যবহৃত, তৎসম, তদ্‌ভব, শর, উদাহরণ, পিতা, মাতা, শিক্ষালয়, আচার্য, শিক্ষক, সকল, পদ, গজ (হস্তী), ঘাস, দিক্, প্রাক্, সূপ প্রভৃতি তৎসম শব্দ।

১৭৫। তদ্‌ভব শব্দ : যে-সমস্ত শব্দ সংস্কৃত শব্দভাণ্ডার হইতে যাত্রা করিয়া প্রাকৃতের পথে নির্দিষ্ট নিয়মে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়া আসিয়া নূতনরূপে বাংলা ভাষায় প্রবেশলাভ করিয়াছে, তাহাদিগকে তদ্ভব বা প্ৰাকৃতজ শব্দ বলে।

তদ্ = সংস্কৃত; ভব = উৎপন্ন; অতএব তদ্ভব কথাটির অর্থ হইতেছে ‘সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন’। কয়েকটি উদাহরণ দেখ।

সংস্কৃতপ্রাকৃততদ্‌ভব
কৃষ্ণ >কন্‌হ >কানু, কানাই
কর্ণ>কন্‌ণ>কান
চন্দ্ৰ>চান্দ>চাঁদ
বধূবহু>বউ
অদ্য>অজ্জ>আজ
রাধিকা>রাহিআ>রাই
সন্ধ্যা>সঝা >সাঁঝ
হস্ত>হত্থ>হাত

কয়েকটি সংস্কৃত ক্রিয়াও প্রাকৃতের মধ্য দিয়া তদ্‌ভবরূপে বাংলায় আসিয়াছে।—

সংস্কৃতপ্রাকৃততদ্‌ভব
খাদতিখাঅইখায়
প্রবিশতিকহেইকহে, কয়
কথয়তিপবিসইপৈশে, পশে
শৃণোতিসুণইশুনে, শোনে

আমাদের অতি-পরিচিত কয়েকটি তদ্ভব শব্দ কোন্ সংস্কৃত শব্দ হইতে উদ্ভূত হইয়াছে, জানিয়া রাখ। অধস্তাৎ—হেঁট; অপর—আর; অপস্মরতি—পাসরে; অবিধবা—এয়ো; অলক্ত—আলতা; অশীতি—আশি; অষ্ট—আট; অষ্টপ্রহরীয়—আটপৌরে; অষ্টাদশ—আঠারো; অষ্টাবিংশতি—আটাশ; অর্গলয়তি-আগলায়; অক্ষপাট—আখড়া; আত্মন্—আপন; আকর্ষণী—আঁকষি; আদিত্য—আইচ (পদবী); আবিশতি—আইসে, আসে; আরাত্রিক—আরতি; ইন্দ্রাগার—ইঁদারা; উপাধ্যায়—ওঝা; এতদ্—এই; একাদশ—এগারো; এরণ্ড—ভেরেণ্ডা; কঙ্কণ—কাঁকন; কর্কট—কাঁকড়া; কাঙ্ক্ষা–খাঁই; কীদৃশন—কেন; কুটজ—কুড়চি; কুটির—কুঁড়ে; কুণ্ঠিত—কুঁড়ে (অলস); কেতক—কেয়া; কেতকট—কেওড়া; কর্ণধারী—কাণ্ডারী; খঞ্জ—খোঁড়া; খঙ্গ—খাঁড়া; খণ্ড—খানা; খুল্ল-খুড়া; গঙ্গা—গাঙ; গত + ইল—গেল (উচ্চারণ : গ্যালো); গড্ডিকা—গাড়ি; গর্দভ—গাধা; গৃহিণী—ঘরনী গৈরিক—গেরুয়া; গোধূম—গম; গোমিক—গুঁই; গোরূপ—গোরু; গোস্বামী—গোসাঁই; গাত্র—গতর; গ্রাম—গাঁও, গাঁ; ঘট—ঘড়া; ঘাত—ঘা; চটক—চড়াই; চক্র—চাক; চন্দ্ৰাতপ—চাঁদোয়া; চর্মচটিক।—চামচিকা; চিচিণ্ড—চিচিঙ্গা; জলৌকা-জোঁক; জতু—জউ; জ্যেষ্ঠতাত—জেঠা; তন্ত্র—তাঁত; তাম্র—তাঁবা, তামা; ত্রীণি—তিন; দলপতি—দলুই (পদবী); দীপবর্তিকা—দেউটি; দীপরক্ষ—দেরকো; দীপশলাকা—দিয়াশলাই; দীপাবলী—দেওয়ালি; দেবকুল-দেউল; দেহলি–দেউড়ি; দেবদারু দেওদার; নবনীত—ননী; পতঙ্গ—ফড়িং; পরীক্ষা-পরখ; পর্ব—পাব; পর্যঙ্ক—পালঙ; পাটলি—পারুল; প্রতিবেশী—পড়শী; ফুল্ল–ফুল; বন্যা—বান; বড়–বড়; বহি—বৈঠা; বিহ্বল—বিভোর; ব্রাহ্মণ—বামুন; ব্যামোহ—ব্যামো; ভক্ত—ভাত; ভগিনী—বোন; ভ্রাতা—ভাই; ভ্রাতৃজায়া—ভাজ; ভ্রাতৃশ্বশুর—ভাশুর; ভেলক—ভেলা; ভদ্রক—ভালো; মণ্ডপ—মেরাপ; মন্থর—মাঠো; ময়া—মুই; মাতা—মা; মাতৃকা—মেয়ে; মুণ্ড—মুড়া, মুড়ি; মৃত–মড়া; যাতি—যায়; যুষ্মাভিঃ—তুমি; রক্ততুল্য—রাতুল; লঘুক-হালকা; শুষ্ক—শুখা, শুকো; শোভাঞ্জন—শজিনা; ষষ্টি—ষাট; ষোড়শ―ষোল; সংক্রম—সাঁকো; সংবরণ—সামলানো; সত্য—সাচ্চা; সপত্নী—সতিন; সর্বসব; সাগর—সায়র; সামন্তপাল—সাঁওতাল; সামন্তরাজ—সাঁতরা; সূত্র—ছুতা; সূত্রধর—ছুতার; সৌভাগ্য—সোহাগ, সোহাগা; স্নেহবৃত্ত—নেওটা; হরিদ্রা—হলুদ; হড্ড—হাড়; হস্তী—হাতি।

খাঁটী বাংলা বলিতে এইসব তদ্ভব শব্দকেই বুঝায়। বাংলা ভাষাভাণ্ডারের প্রায় অর্ধাংশ (৫১%) এই শ্রেণীর শব্দে পূর্ণ। তদ্‌ভব শব্দ বাংলা ভাষার প্রাণ, আর তৎসম শব্দ তাহার অলংকার।

১৭৬। অর্ধ-তৎসম শব্দ : যে-সমস্ত সংস্কৃত শব্দ প্রাকৃতের পথ না ধরিয়া 1 সরাসরি বাংলা ভাষায় আসিতে চাহিয়াছে, অথচ তৎসম শব্দের মতো নিজের রূপটি অটুট রাখিতেও পারে নাই, তাহাদের সেই বিকৃত রূপকেই অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে।

কৃষ্ণ—কেষ্ট; তৃষ্ণা-তেষ্টা; বৈষ্ণব—বোষ্টম; উৎসন্ন—উচ্ছন্ন; শ্ৰাদ্ধ—ছেরাদ্দ; নিমন্ত্রণ–নেমন্তন্ন; কীর্তন–কেত্তন; প্রসন্ন—পেসন্ন; প্রদীপ—পিদিম; প্রণাম-পেন্নাম; শ্রী–ছিরি; ভ্রম—ভেরম; বৃহস্পতি—বেস্পতি, বিস্যুত; চন্দ্র–চন্দোর; মহোৎসব—মচ্ছব; গৃহিণী—গিন্নী; ত্র্যহস্পর্শ—তেরস্পর্শ।

তদ্‌ভব ও অর্ধ-তৎসম শব্দের পার্থক্যটি লক্ষ্য কর। উভয় শ্রেণীরই মূল হইল সংস্কৃত, আর উভয়েই সংস্কৃতের মূল রূপটি হারাইয়া ফেলিয়াছে। তবে, তদ্‌ভব শব্দের রূপ-পরিবর্তনের মধ্যে ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের স্বাক্ষরটি স্পষ্ট, কিন্তু অর্ধ-তৎসম শব্দের উদ্ভবের পশ্চাতে উচ্চারণ-বিকৃতিই বড়ো কথা। মূল সংস্কৃত শব্দ কৃষ্ণ ধারাবাহিক রূপান্তরের ফলে কানু (কানাই) এই তদ্ভব-রূপ দুইটি পাইয়াছে, আর উচ্চারণ-বিকৃতির ফলে অর্ধ-তৎসম কেষ্ট রূপটি পাইয়াছে। অবাঙালীর মুখে এই কেষ্ট শব্দটি আবার খুব তাড়াতাড়ি কিষ্ট রূপলাভ করিয়া ফেলিতেছে। সাধু-চলিত-নির্বিশেষে উভয়রীতির ভাষাতেই তদ্‌ভব শব্দাবলীর বিশেষ সমাদর রহিয়াছে; কিন্তু মৌখিক আলাপ-পরিচয় আর চলিত ভাষার রচনা ছাড়া সাধু ভাষায় অর্ধ-তৎসম শব্দের বড়ো-একটা স্থান নাই।

একটা ব্যাপার লক্ষ্য কর—একই সংস্কৃত শব্দ হইতে অর্ধ-তৎসম শব্দ এবং তদ্‌ভব শব্দ দুইই পাইয়াছি, এমন উদাহরণও দুর্লভ নয়।—

সংস্কৃততদ্‌ভবঅর্ধ-তৎসম
কৃষ্ণকানু, কানাইকেষ্ট
চক্রচাকচক্কোর
চন্দ্ৰচাঁদচন্দোর
গৃহিণীঘরনীগিন্নী
মিত্রমিতামিত্তির
রাত্রিরাতরাত্তির

ফলে বাংলা ভাষার লাভই হইয়াছে বলা যায়। সংস্কৃত যেখানে কেবল কৃষ্ণ শব্দটি পাইয়াছে, আমরা সেখানে কমপক্ষে চারিটি শব্দ পাইয়াছি—কৃষ্ণ, কানু, কানাই, কেষ্ট; সেই সঙ্গে কেষ্ট-র তুচ্ছার্থক বা আদরার্থক রূপ কেষ্টাও বটে।

বঙ্গদেশে আর্যজাতির প্রভাব পড়িবার বহু পূর্ব হইতে কোল (অস্ট্রিক), দ্রাবিড় প্রভৃতি অনার্যজাতি এখানে বসবাস করিয়া আসিতেছে। তাহাদের ভাষার কিছু কিছু শব্দও বাংলা ভাষায় আসিয়াছে। এইসব শব্দকে দেশী শব্দ বলা হয়।

১৭৭। দেশী শব্দ : বঙ্গদেশের প্রাচীনতম অধিবাসী কোল, ভিল প্রভৃতি অনার্যজাতির ভাষা হইতে জ্ঞাতমূল বা অজ্ঞাতমূল যে-সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় আসিয়াছে, সেগুলিকে দেশী শব্দ বলে। অঢেল, কাঁচুমাচ, কুলো, কুকুর, খোকা, খুকি, খাঁজ, গাড়ি, গোড়া, ঘাড়, ঘোড়া, চাউল, চাগাড়, চাঙ্গা, চিড়, চিংড়ি, চেঁচামেচি, চোঁচ, ছানা, ঝাঁকা, ঝাঁটা, ঝিঙে, ঝুলি, ঝানু, ঝোল, টাল, টের, টোল, ডগমগ, ডবকা, ডাহা, ডাগর, ডাক, ডাব, ডেয়ো, ডোবা, ডাঁটো, ডাঁসা, ডিঙি, ঢেঁকি, ঢেউ, ঢিল, ঢল, ঢাল, ঢোল, তেঁতুল, দরমা, থোড়, ধাঁচা, নাদা, পাঁঠা, পেট, বাদুড়, বাবা, বিটকেল, ভিড়, মুড়ি (খোলায় ভাজা চাউল)। এইসমস্ত দেশী শব্দের প্রচলন বাংলা প্রবচনে ও চলিত ভাষায় নিরঙ্কুশ।

১৭৮। বিদেশী শব্দ : ভারতবর্ষের বাহিরের দেশ হইতে অথবা ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশ হইতে যে-সকল শব্দ স্ব-রূপে বা কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত রূপে বাংলা ভাষায় আসিয়াছে, সেগুলিকে বিদেশী শব্দ বলে।

আগন্তুক শব্দগুলির মধ্যে বহির্ভারতীয় ইংরেজী, আরবী, ফারসী ও পোর্তুগীজ শব্দই সংখ্যায় বেশী; আর, অন্তর্ভারতীয় প্রতিবেশী শব্দাবলীর মধ্যে হিন্দীর আধিক্যই উল্লেখনীয়।

ত্রয়োদশ শতকের প্রথমদিকে বঙ্গদেশ তুর্কী-কবলিত হওয়ার পর হইতেই ফারসী শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশলাভ করিতে থাকে। বঙ্গদেশ আকবরের শাসনে আসিবার পর হইতে বাংলায় ফারসী শব্দের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটিল। মঙ্গলকাব্যগুলিতে, এমন-কি ভারতচন্দ্র ও রামপ্রসাদেও ফারসীর ভূরি ভূরি উদাহরণ রহিয়াছে। ফারসীর দৌলতে অসংখ্য আরবী শব্দও বাংলা ভাষায় আসিয়া পড়িল। ষোড়শ শতাব্দী হইতে এদেশে বাণিজ্যরত পোর্তুগীজ ফিরিঙ্গীদেরও বহু শব্দ বাংলায় আসিয়াছে। আবার, দীর্ঘদিন ইংরেজ-শাসনাধীনে থাকার ফলে বহু ইংরেজী শব্দ স্ব-রূপে বা ঈষৎ বিকৃতরূপে আমাদের মাতৃভাষার ভাণ্ডারে প্রবেশ লাভ করিয়া বাংলাকে পরিপুষ্ট করিয়া তুলিয়াছে এবং এখনও তুলিতেছে বাংলা ভাষা আপন স্বীকরণ-ক্ষমতার বলে এইসমস্ত বিদেশী শব্দকে এমন আশ্চর্যজনকভাবে আপন করিয়া লইয়াছে যে, ইহারা যে আদৌ বিদেশী, বেশ সচেতন না হওয়া পর্যন্ত তাহা বুঝিতেই পারা যায় না। অতি-পরিচিত বিদেশী শব্দগুলির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হইল।—

আরবী অকু (অবাঞ্ছিত ঘটনা), অকুফ, অছি, অছিলা, আকছার, আক্কেল, আখের, আজব, আজান, আতর, আদব, আদাব, আদম, আদায়, আদালত, আফিম, আমলা, আমানত, আমিন, আমির, আয়েশ, আরক, আরজি, আরশ, আলবত, আলাদা, আলেকুম, আলোয়ান, আল্লা, আসবাব, আসর, আসল, আসামী, আস্তাবল, আহম্মক, ইজারা, ইজ্জত, ইনাম, ইমান, ইমাম, ইমারত, ইল্লত, ইশারা, ইসলাম, ইস্তফা, ইস্তাহার, ইহুদী, ঈদ, উকিল, উজির, উসুল, এখতিয়ার, এজমালি, এজলাস, এজাহার, এলাকা, এলেম (বিদ্যা), ওকালতি, ওজন, ওজর, ওমরাহ্, ওয়াকিফ, ওয়ারিস, ওয়াসিল, ওরফে, কড়ার, কতল, কদম, কদর, কবজা, কবর, কবালা, কবুল, কর্জ, কলপ, কলম, কসরত, কসাই, কসুর, কাওয়ালি, কাজিয়া, কাজী, কাতার, কানুন, কাফের, কাবাব, কাবিল, কামিজ, কায়দা, কায়েম, কালিয়া, কাহিল, কিসমত, কিস্তি, কুর্সি, কুলুপ, কুলে, কেচ্ছা, কেতা (কায়দা), কেরামত, কেল্লা, কৈফিয়ত, খত, খতম, খবর, খয়রাত, খসড়া, খাজনা, খাতির, খারাপ, খারিজ, খালসা, খালাস, খালাসী, খালি, খাস, খাসা, খাসি, খুন, খেতাব, খেয়াল, খেলাত, খেলাপ, খেসারত, খোলসা, গজল, গরজ, গরমিল, গরিব, গলদ, গাজী, গাপ, গাফিলতি, গায়েব, গোলাম, গোসল, গোসা, ছবি, জবাই, জবাব, জব্দ, জমা, জমানত, জমায়ত, জরিপ, জরুর, জলদি, জলসা, জলুস, জল্লাদ, জহর, জহরত, জাফরান, জাফরি, জাবদা, জামিন, জারি, জালিয়াতি, জাহাজ, জাহির, জিনিস, জিম্মা, জুম্মা, জুলুম, জেরা, জেলা, তছরুপ, তদারক, তফসিল, তফাত, তবক, তবলা, তবিয়ত, তরজমা, তরফ, তলব, তল্লাশ, তসবির, তাগাদা, তাগিদ, তাজ, তাজিয়া, তাজ্জব, তামাশা, তারিখ, তারিফ, তালাক, তালিকা, তালিম, তালুক, তাস, তুফান, তুলকালাম, তেজারত, তেরিজ, তোফা, তোয়াক্কা, তোয়াজ, দখল, দপ্তর, দফা, দলিল, দাখিল, দাখিলা, দায়রা, দিক (বিরক্ত), দীন (ধর্ম), দুনিয়া, দেমাক, দোয়া, দোয়াত, দৌলত, নকশা, নকিব, নওবত, নগদ, নবাব, নবী, নসিব, নাগাত, নাজিম, নাজির, নাজেহাল, নায়েব, নূর, নেশা, ফকির, ফজর, ফতুয়া, ফতুর, ফতে, ফতোয়া, ফয়সালা, ফরাশ, ফসকা, ফসল, ফাজিল, ফানুস, ফায়দা, ফারাক, ফালাও, ফি, ফিকির, ফিরিস্তি, ফুরসত, ফেরার, ফেসাদ, ফৈজত, ফোয়ারা, ফৌজ, বকেয়া, বদর, বদল, বরকৎ (শ্রীবৃদ্ধি), বহর, বহাল, বাকী, বাজে, বাতিল, বাদ, বাবত, বায়না, বিদায়, বিলকুল, বিলাত < বিলায়ৎ, বিসমিল্লা, বুরুজ, বোরকা, মকদ্দমা, মকুব, মক্কেল, মক্তব, মখমল, মজবুত, মজলিস, মজুত, মঞ্জুর, মনিব, মফস্বল, মবলগ, মলম, মশগুল, মসজিদ, মসনদ, মসলন্দ, মসলা, মহকুমা, মহরম, মহল, মহল্লা, মাতব্বর, মানে, মাফ, মারফত, মালিক, মালুম, মাল্লা, মাসুল, মিছরি, মিছিল, মিয়াদ, মিসর, মুনশী, মুনাফা, মুরব্বী, মুলুক, মুশকিল, মুসলিম, মুসাফির, মুহুরী, মেজাজ, মেরাপ, মেরামত, মোকাবিলা, মোকাম, মোক্তার, মোক্ষম, মোতাবেক, মোতায়েন, মোলাকাত, মোলায়েম, মৌরুসী, মৌসুম, রকম, রদী, রফা, রাজী, রায়, রায়ত, রুজু, রেওয়াজ, রেকাব, রেয়াত, লাখেরাজ, শখ, শরবত, শরাব, শরিফ, শরিয়ত, শর্ত, শহিদ, শামা, শামিল, শুরু, শোহরত (ঢোল-), শৌখিন, সওয়াল, সদর, সন, সনদ, সপ (লম্বা মাদুর), সফর, সরবতী, সলা, সহিস, সাজশ (কুকর্মে সহযোগ), সাফ, সাবুদ, সাবেক, সালিস, সাহেব, সুফী, সুবা, সেরকশ, সেরেফ, সেলাম, সোরাই, হক, হকিম, হজম, হজরত, হদিস, হদ্দ, হদ্দমুদ্দ (বড়ো জোর), হয়রান, হরফ, হলকা, হলফ, হাউই, হাওদা, হাওয়া, হাওলা, হাওলাত, হাকিম, হাজত, হাজির, হাজী, হাবশী, হাবেলী, হামলা, হামাম, হারাম, হাল, হালুইকর, হালুয়া, হাসিল, হিম্মত, হিসাব, হিস্সা, হুজ্জত, হুঁকা, হুকুম, হুজুর, হেপাজত।

ফারসী—অজু, অজুহাত, অন্দর, অস্তর, আইন, আওয়াজ, আঙুল, আজাদ, আতশ, আনার (বেদানা, ডালিম), আন্দাজ, আপস, আপসোস, আবকার, আবরু, আবহাওয়া, আবাদ, আমদানি, আমেজ, আয়না, আরাম, আশকারা, আশরফি, আসমান, আসান, আস্তানা, আস্তিন, আস্তে, ইউনানী, ইয়ার, ইরান, ইসবগুল, উমেদ, ওস্তাগর, ওস্তাদ, কম, কাগজ, কাবাব, কামাই, কামান, কারকুন, কারখানা, কারচুবি, কারদানি, কারবার, কারসাজি, কারিগর, কিংখাব, কিনারা, কিশমিশ, কুর্নিশ, কুস্তি, কোমর, খঞ্জর, খরগোশ, খরচ, খরিদ, খসখস, খাকী, খানদান, খানসামা, খানা (স্থান—খানা-তল্লাশ, তোষাখানা), খাপ্পা, খাম, খামকা, খাস্তা, খুব, খুশি, খোদ, খোদা, খোদাবন্দ, খোরপোশ, খোরাক, খোশামোদ, গজ, গঞ্জ, গরম, গরমি, গর্দান, গস্ত, গালচে, গুজরান, গুম, গুমর, গুমান (গর্ব), গুল (ফুল), গোমস্তা, গোয়েন্দা, গোল (উচ্চরব), গোলন্দাজ, গোলাপ, গোস্তাকি, গ্রেফতার, চরকা, চরকি, চশমখোর, চশমা, চাকর, চাকরি, চাকরান, চাদর, চাঁদা, চাপরাস, চাবুক, চারা (উপায়), চালাক, চিকন (কাপড়ের উপর রেশম, জরি ইত্যাদির নকশা), চেহারা, জখম, জঙ্গ (যুদ্ধ, মরিচা), জবর, জবান, জমি, জরি, জাদু, জান, জানোয়ার, জামা, জিগির, জিঞ্জির, জিন, জিন্দা, জিন্দিগি, জেব (পকেট), জের, জোয়ান, জোর, তক্ত, তছনছ, তরকারি, তরমুজ, তলাও, তাকিয়া, তাজা, তাফতা, তীর (শর), তীরন্দাজ, তৈয়ার, তোতা, তোশক, দম (নিশ্বাসপ্রশ্বাস), দরকার, দরখাস্ত, দরগা, দরজা, দরজী, দরদ, দরদালান, দরবার, দরবেশ, দরাজ, দরিয়া, দরুন, দস্তখত, দস্তানা, দস্তিদার, দস্তুর, দহরম, দাগ, দাদন, দান, দাবি, দামামা, দায়ের, দারোয়ান, দালান, দিল, দিলখোশ, দিলাসা (সান্ত্বনা, ভরসা), দিস্তা, দুরস্ত (নির্ভুল), দুম্বা, দুশমন, দূরবীন, দেওয়াল, দেদার, দেরি, দেহাত, দেহাতী, দোকান, দোজক, দোস্ত, নজর, নমাজ, নমুনা, নরম, নাচার, নাবালক, নামজাদা, নামঞ্জুর, নালিশ, নাশপাতি, নাস্তানাবুদ, নিমক, নিমকি, নিমখুন, নিশাদল, নিশান, পছন্দ, পনির, পয়গম্বর, পয়জার, পরদা, পরকলা, পরগনা, পরী, পরোয়া, পরোয়ানা, পর্দা, পল, পলক, পশম, পাইকার, পাঁজা, পাজী, পাদান, পাপোশ, পায়জামা (পাজামা), পায়া, পালোয়ান, পিরান, পিলখানা, পুল, পেয়াদা, পেয়ালা, পেশকার, পেশা, পেস্তা, পোক্ত, পোলাও, পোশাক, পোস্তা, ফরমান, ফরমাশ, ফরিয়াদী, ফলসা (ফলবিশেষ), ফাঁস (গুপ্ত কথার প্রকাশ), বকশিশ, বখরা, বগল, বজায়, বজ্জাত, বদ, বদখত, বদন (শরীর : গুলবদন = পুষ্পতনু), বদমাস, বনাম, বনিয়াদ, বন্দর, বন্দুক, বন্দেগি, বরখাস্ত, বরদার (বাহক), বরদাস্ত, বরফ, বরবাদ, বরাত (কাজের ভার, ভাগ্য), বরাদ্দ, বরাবর, বস্তা, বাগ, বাগিচা, বাচ্চা, বাজ (পাখি), বাজার, বাজি, বাজিকর, বাজু, বাজেয়াপ্ত, বাদশাহ্, বাদাম, বানু, বান্দা, বাঁদী, বারান্দা, বালাখানা, বালাপোশ, বহাল, বাস্, বেকার, বেগার, বেচারা, বেজার, বেদম, বেদস্তুর, বেদানা, বেনাম, বেপরোয়া, বেবন্দোবস্ত, বেমার, বেরাদার, বেলোয়ারী, বেশ, বেশরম, বেশী, বেশুমার, বেসরকার, বেহুঁশ, বেহেশত, মগজ, মজুমদার, মজুর, ময়দা, ময়দান, মরদ, মরিচা, মলিদা, মালাই, মালিশ, মাহিনা, মিনা, মিনার, মিসি, মিহি, মেথর, মোজা, মোম, মোরগ, মোহর, রওয়ানা (রওনা), রগ, রঙ্গিন, রপ্তানি, রবার, রসদ, রসিদ, রাস্তা, রাহা, রাহাজানি, রাহী, রিফু, রুমাল, রেজগি, রেশম, রেহাই, রোজ, রোজগার, রোজা, রোশনাই, লশকর, লাগাম, লাশ, লেফাফা, শনাক্ত, সমশের (তরবারি), শরম, শরিক, শহর, শাগরেদ, শামিয়ানা, শায়েস্তা, শাল, শালগম, শাহ্, শিকার, শিরনামা, শিরনি, শিশা, শিশি, শুমার, শের (বাঘ, সিংহ), শোরগোল, শোরা, সওদা, সওদাগর, সওয়ার, সফেদ, সফেদা, সবজি, সবুজ, সবুর, সরকার, সরখেল, সরগরম, সরজমিন, সরঞ্জাম, সরবরাহ, সরাই, সরাসরি, সরোদ, সর্দার, সর্দি, সাজা, সাদা, সানাই, সারেং, সাল, সিপাহী, সিয়া (কালি), সুদ, সুপারিশ, সুর্মা, সে (তিন), সেতার, সেরা, সেরেস্তা, সোপরদ্দ (সোপর্দ), হপ্তা, হরকরা, হরদম, হাঙ্গামা, হাজার, হামেশা, হিন্দ্‌, হিন্দী, হিন্দু, হুঁশ, হুঁশিয়ার, হেস্তনেস্ত।

আরবী-ফারসীর মিশ্রণ—আদমশুমার, ওকালতনামা, কুচকাওয়াজ, কেতাদুরস্ত, কোহিনূর, খবরদার, খয়েরখাঁ, খামখেয়াল, জমাদার, জরিমানা, ত-খরচ, তাঁবেদার, না-মঞ্জুর, না-রাজ, না-হক, নেক-নজর, পিলসুজ, পোদ্দার, বকলম, বরকন্দাজ, বাহাল, বেআইন, বেআক্কেল, বেআদব, বেইজ্জত, বেইমান, বে-এক্তিয়ার, বে-ওজর, বে-ওয়ারিশ, বেকবুল, বেকসুর, বেকায়দা, বেকুফ, বেজায়, বেদখল, বেবাক (সমস্ত), বেমক্কা, বেমালুম, বেমেরামত, বেহদ্দ, বেহায়া, বেহিসাবী, শামাদান, সেরেফ, সেলাখানা (অস্ত্রাগার), হকদার, হুঁকাবরদার। [ আরবী-ফারসী শব্দে প্রায় সর্বত্রই ত, ক্বচিৎ ৎ—লক্ষ্য কর। ]

তুর্কী—কলকা, কাঁচি, কানাত, কাবু, কুলি, কোর্মা, ক্রোক, খাঁ, চকমকি, চিক, তকমা, তোপ, দারোগা, বকশী, বাবুর্চী, বারুদ, কুঁচকি, বেগম, বোঁচকা, মুচলেকা

শিক্ষা-সংস্কৃতি-ধর্ম, সভ্যতা-ব্যবসায়বাণিজ্য-শিল্পকলা, শাসনকার্য-রাজস্ব—আইন-আদালত প্রভৃতি বিবিধ বিষয়-সংক্রান্ত এইসব আরবী-ফারসী-তুর্কী শব্দ আমাদের জীবনের সঙ্গে কেমন ওতপ্রোতভাবে মিশিয়া গিয়াছে, লক্ষ্য কর।

ইংরেজী—অক্সিজেন, আপিস, আপেল, আরদালী (<orderly), এরারুট, আর্ট, আস্তাবল (<stable), এনামেল, এজেন্ট, ঈশা, উল, এঞ্জিন, ওলকপি (<kohlrabi), কংগ্রেস, কনসার্ট, কনস্টেবল, কফ (আস্তিনের অগ্রভাগ), কফি, কমা, করগেট, কর্ক, কাপ্তেন (<captain), কার্নিস, কার্পেট, কুইনিন, কুইন্টাল, কেক, ক্যাঙ্গারু, কেটলি, কেয়ার, কেরোসিন, কেস, কোকেন, কোম্পানি, কৌচ, কৌসিলী (<council), ক্যামবিস (<canvas), ক্যামেরা, ক্রীশ্চান (<Christian), ক্লাব, ক্লাস, খাঁটি (চুয়ানো দেশী মদ <country), গারদ (<guard), গার্জেন (<guardian), গিনি, গেজেট, গেঞ্জি, গেট, গেলাস (<glass), চপ, চাল, চিমনি, চেক, চেন, চেআর, জাঁদরেল (<general), জুবিলি, জিরাফ, জুরি, জেটি, জেল, জেলি, জ্যাকেট, টনিক, টাইপ, টায়রা, টাইম, টিকিট, টিন, টিফিন, টেবিল (<table), টেলিগ্রাফ, টেলিগ্রাম, টেলিফোন, টোন, ট্যাক্সি, ট্রাম, ট্রেন, ডক, ডজন, ডবল, ডাক্তার (<doctor), ডিক্রি, ডিপো (<depot), ডেপুটি, ড্রাম, ড্রেন, তোরঙ্গ (<trunk), থিয়েটার, নম্বর, নিব, নোটিস, পকেট, পাঁইট, পাউডার, পানসি (<pinnace), পার্লামেন্ট, পার্সেল, পালিশ, পাস, পিয়ন, পিল, পিয়ানো, পীচ (ফলবিশেষ), পুলিস, পেট্রল, পেন, পেনশন, পেনসিল, ফিট, ফিটন, ফোটোগ্রাফ, ফ্যাশন, ফ্রক, ফ্রেম, ফ্ল্যাট, বয়কট, বাক্স (<box), বারিক (<barrack), বার্লি, বিসকুট, বুরুশ (<brush), বোনাস, মাইল, মার্কিন, মেহগনি, মেস, মোটর, ম্যানেজার, রাবিশ, রিহার্সেল, রেস, লিলি, লেবেল, লেমোনেড, সনেট, সার্কাস, সার্জ, সার্জন, সার্জেন্ট, সিগন্যাল, সীল, সূপ, সেমিকোলন, স্নো, স্লেট, স্লো, হাইকোর্ট, হুইল, হুক, হোমিওপ্যাথি ইত্যাদি।

পোর্তুগীজ—আচার, আতা, আনারস, নোনা (<এনোনা), আয়া, আলকাতরা, আলপিন, আলমারি, ইস্তিরি, ইস্পাত, এন্তার, ওলন্দাজ, কপি, কাতান, কানেস্তারা, কাফরী (<caffre), কাবার, কামরা, কিরিচ, কেদারা, খানা (ডোবা<cana), গরাদে, গামলা (<gambella), গির্জা, গুদাম, চাবি, জানালা, টোকা (পাতার তৈয়ারী ছাতা <touca), তামাক, তিজেল (পাকপাত্র), তোয়ালে, তোলো (হাঁড়ি), নিলাম, পাঁউরুটি, পাদরী, পিপা, পিস্তল, পেঁপে, পেয়ারা, পেরেক (<prego), ফরাসী, ফর্মা, ফিতা, ফিরিঙ্গী, বয়া, বরগা (<verga), বালতি, বেহালা, বোমা (<bomba), মাইরি (<Maria), মার্কা, মাস্তুল (<mastro), মিস্ত্রী, যীশু, সাগু, সান্তারা (<cintra—কমলালেবু), সাবান, সায়া, সালসা, সেঁকো ইত্যাদি।

অন্যান্য বিদেশী শব্দ—ফরাসী : কার্তুজ, কুপন, রেনেসাঁস, রেস্তরা। জার্মান : নাৎসী (Nazi), কিন্ডারগার্টেন। স্পেনীয় : ডেঙ্গু (dengue)। ওলন্দাজী : ইশকাপন, তুরুপ, রুইতন, হরতন। গ্রীক : কেন্দ্র (<kentron শব্দটি গ্রীক হইতে সংস্কৃতে আসে), দাম (<drakhme), সুরঙ্গ (<syringx)। রাশিয়ান : ভডকা, বলশেভিক, স্পুটনিক। জাপানী : জুজুৎসু, টাইফুন, রিক্শা, হারাকিরি, হাসুনোহানা।

চীনা : চা, লিচু।

মালয়ী : কাকাতুয়া।

সিংহলী : বেরিবেরি।

বৰ্মী : লুঙ্গী।

বিদেশী শব্দাবলীর মধ্যে এ-পর্যন্ত বহির্ভারতীয় শব্দের হিসাব লইলাম। এইবার অন্তর্ভারতীয় প্রতিবেশী শব্দ। হিন্দী : আলাল, ইস্তক, উতরাই, ওয়ালা, কচুরি, কাহিনী, কেয়াবাত, কোরা, খাট্টা, খানা (খাদ্য), চাপকান, চামেলি, চালু, চাহিদা, চিকনাই, চৌকস, জাড়, ঝাড়ু, ঝাণ্ডা, টহল, ডেরা, তাগড়া, তাম্বু (তাঁবু), দাঙ্গা, পানি, পায়দল, ফালতু, বাত (কথা), বানি, বীমা, বেলচা, বেলদার, রঙ্গিলা, লাগাতর, লু, লোটা, সাঁটা, সোলা। গুজরাটী : গরবা, তকলি, হরতাল। মারাঠী : চৌথ, বর্গী। তামিল : চুরুট। তেলুগু : প্যানডেল।

এই যে তৎসম, তদ্ভব, অর্ধ-তৎসম, দেশী বা বিদেশী শব্দরাশি বাংলা ভাষায় চলিতেছে, বাংলার সমন্বয়সাধনী প্রতিভা কয়েকটি স্থলে এই শব্দাবলীর শ্রেণীগত বৈষম্যের বালাই লোপ করিয়া দিয়া সঙ্কর শব্দের সৃষ্টি করিয়াছে।

১৭৯। সঙ্কর শব্দ : এক শ্রেণীর শব্দের সহিত অন্য শ্রেণীর উপসর্গ প্রত্যয় ইত্যাদির যোগে অথবা বিভিন্ন শ্রেণীর শব্দের পারস্পরিক সংযোগে যেসব নূতন শব্দের সৃষ্টি হয়, তাহাদিগকে সঙ্কর শব্দ (Hybrid) বলে।

(ক) তৎসম শব্দ + বাংলা শব্দ : পিতাঠাকুর, মাতাঠাকুরানী, নির্ভুল, নিশ্চুপ, কাজকর্ম, ভুলবশত, ফুলপুঞ্জ, মায়াকান্না, বজ্রআঁটুনি, শ্বেতপাথর।

(খ) তৎসম শব্দ + বিদেশী শব্দ : হেডপণ্ডিত, বসন্তবাহার, লাটভবন, নৌবহর, ভোগদখল, আইনসম্মত, ভোটদাতা, প্রেমদরিয়া, পর্দাপ্রথা, রাজসরকার, আরামপ্রিয়, সুরবাহার, কাগজপত্র, যোগসাজশ, দিনগুজরান, দরাজহস্ত, আদায়ীকৃত, খরচপত্র, সলাপরামর্শ, পুনর্বহাল, পেনশনভোগ।

(গ) বিদেশী শব্দ + বাংলা শব্দ : হাটবাজার, মাস্টারমশায়, দুধ-পাঁউরুটি, সাজসরঞ্জাম, গাড়িবারান্দা, দরাজহাত, মার্কামারা।

(ঘ) বিদেশী শব্দ + বিদেশী শব্দ : উকিল-ব্যারিস্টার, জজসাহেব, তোয়ালে—চাদর, কারিগর-মিস্ত্রী, খোদামালিক, কাগজ-পেনসিল, দরজা-জানালা, টাইমটেবিল, লেডী-ডাক্তার, হেডমাস্টার।

(ঙ) তৎসম শব্দ + বাংলা প্রত্যয় : একলা, দীপালী, ভাবুনে, আকাশ-ভরা, লক্ষ্মীমন্ত, বারমেসে, দেশী, পোষ্টাই, পুরুষালি (বি), পুরুষালী (বিণ), রোগা।

(চ) তৎসম শব্দ + বিদেশী প্রত্যয় : দাতাগিরি, শিক্ষানবিস, উপায়দার, প্রমাণসই, ধূপদানি, আশ্বিনতক, স্ফূর্তিবাজ।

(ছ) বাংলা শব্দ + তৎসম প্রত্যয় : আমিত্ব, কাঁকরময়, রানীত্ব।

(জ) বাংলা শব্দ + বিদেশী প্রত্যয় : ফুলদানি, বুকসই, ঘুষখোর, ঠিকাদার, বামুনগিরি, বাতিদান।

(ঝ) বিদেশী শব্দ + তৎসম প্রত্যয় : নাবালকত্ব, এজেন্টগণ, খ্রীষ্টীয়।

(ঞ) বিদেশী শব্দ + বাংলা প্রত্যয় : শহুরে, শাগরেদি, গোলাপী, খেয়ালী, জরুরী, গোলন্দাজী, মাস্টারি (বি), মাস্টারী (বিণ)।

(ট) বিদেশী শব্দ + বিদেশী প্রত্যয় : ডাক্তারখানা, হররোজ, নকলনবিসি, সরাইখানা, সমঝদার, শামাদান, ডেপুটিগিরি।

কোনো কোনো শব্দ তৎসম-রূপে এক অর্থ এবং বাংলা বিদেশী-রূপে সম্পূৰ্ণ অন্য অর্থ প্রকাশ করে। (ক) বেশ (তৎ)—সজ্জা; বেশ (ফা)—ভালো। (খ) মঞ্জিল (তৎ)—রজকালয়; মঞ্জিল (আ)—প্রাসাদ। (গ) তীর (তৎ) নদীকূল; তীর (ফা)—বাণ। (ঘ) অভ্যর্থনা (তৎ)—প্রার্থনা; অভ্যর্থনা (বাংলা)—সম্বর্ধনা। (ঙ) খসখস (আ)—বেনার মূল; খসখস (বাংলা)—-কাপড় খড় ইত্যাদি ঘর্ষণের আওয়াজ (ধ্বন্যাত্মক শব্দ)। (চ) বাধিত (তৎ)—বাধাপ্রাপ্ত; বাধিত (বাংলা)—কৃতজ্ঞ। (ছ) আচার (তৎ)–আচরণ; আচার (পো)—-তৈল-মসলাদি-সংযোগে প্রস্তুত মুখরোচক অম্লজাতীয় খাদ্য। (জ) দীন (তৎ)–দরিদ্র; দীন (আ)—ধর্ম (ঝ) মর্মর (তৎ)—শুষ্ক পত্রাদির শব্দ; মর্মর (ফা)—মারবেল পাথর। (ঞ) দিক্‌ (তৎ)—সীমা; দিক (আ)—বিরক্ত।

শব্দদ্বৈত

গরম জলে হাত দিও না। তোর গাটা কেন গরম-গরম লাগছে রে? গরম বিশেষণটি একবার বসিয়া গরম-সম্বন্ধে নিশ্চয়তার ভাবটি প্রকাশ করিতেছে। কিন্তু গরম-গরম বলায় গরম-সম্বন্ধে কি সন্দেহ জাগিতেছে না? সকাল অর্থে দিনের প্রথম ভাগ বুঝায়; কিন্তু সকাল-সকাল বলিলে আগেভাগে বা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বুঝায়। একই শব্দের দ্বিত্ব-প্রয়োগের দ্বারা ভাবের বৈচিত্র্য-সম্পাদন বাংলা ভাষার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।

আবার, চনচনে রোদে কাপড়খানা মেলে দাও। বৃষ্টি এল বলে, কাপড়—চোপড় তুলে নাও। লক্ষ্য কর—কাপড় বলিলে শুধু কাপড় বুঝাইতেছে। কিন্তু কাপড়-চোপড় বলিলে কাপড় ছাড়া আরও কিছু বুঝাইতেছে—জামা গেঞ্জি ইত্যাদি। চোপড় কথাটির নিজস্ব অর্থ কিছুই নাই, কিন্তু কাপড় শব্দের সঙ্গে বসিলে কাপড় কথাটির অর্থ-বিস্তৃতি ঘটায়। এই ধরনের শব্দকে শব্দদ্বৈত বলে।

১৮০। শব্দদ্বৈত : ভাবের বৈচিত্র্য-সম্পাদনের জন্য একই শব্দকে বা সমার্থক শব্দকে পরপর দুইবার পূর্ণরূপে বা ঈষৎ পরিবর্তিত আকারে প্রয়োগ করিলে তাহাকে শব্দদ্বৈত বলা হয়।

শব্দদ্বৈত প্রধানতঃ তিন প্রকারের—(১) দ্বিরুক্ত শব্দের শব্দদ্বৈত, (২) যুগ্মশব্দের শব্দদ্বৈত ও (৩) পদবিকারবাচক শব্দদ্বৈত।

দ্বিরুক্ত শব্দের শব্দদ্বৈত

দ্বিরুক্ত শব্দের শব্দদ্বৈত (একই শব্দ অবিকৃত অবস্থায় পরপর দুইবার প্রযুক্ত) নিম্নলিখিত অর্থগুলি প্রকাশ করে।—

(ক) পুনরাবৃত্তি, সমকালীনতা ও দীর্ঘকালীনতা : “জপিতে জপিতে নাম অবশ করিল গো।” ঘণ্টায়-ঘণ্টায় বাইরে যাস কেন রে? ছেলেটা ভুগে ভুগে সারা হল। মেয়েটা কাঁদতে-কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল। এমন করে পড়ে-পড়ে মার খাচ্ছ কেন? সেইরূপ, হেসে হেসে বলা; ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হওয়া

(খ) বহুলতা : “জলে স্থলে আর গগনে গগনে বাঁশি বাজে যেন মধুর লগনে।” “আসে দলে দলে তব দ্বারতলে দিশি দিশি হতে তরণী।” “কুটিরে কুটিরে নবনব আশা।” “দিকে দিকে মাতা, কত আয়োজন।” “ভাণ্ডারে তব সুখ নবনৰ মুঠা-মুঠা লয় কুড়ায়ে।” তেমনি ঘরে ঘরে (চরকা); ধামা ধামা (লুচি); ভূরি ভূরি (প্রমাণ); টুকরা টুকরা (মেঘ); লাখ লাখ (পলাশ); মোটা মোটা (বাঁশ); রকম রকম (লোক); যাকে যাকে (চাও)।

(গ) সংযোগ : ছেলেটাকে একটু চোখে চোখে রাখবেন। ভোরে উঠে সংস্কৃত শ্লোক বাবার কাছে মুখে-মুখে শিখতাম। খাতাগুলো হাতে-হাতে টেবিলে পাঠিয়ে দাও।

(ঘ) নিশ্চয়তা বা গভীরতা : গরম-গরম সিঙাড়া এনেছি। ঠিক-ঠিক উত্তর দিও। তাদের দুজনের গলায়-গলায় ভাব। তিনি তোমার ওপরে হাড়ে হাড়ে চটেছেন। ড্যাসগুলো একেবারে নীচে-নীচে বসান। তেমনি, সকাল-সকাল (ফেরা); পেটে-পেটে (বুদ্ধি); ভিতরে-ভিতরে (শয়তান)।

(ঙ) দুঃখ-ঘৃণা-হর্ষ-বিস্ময় : “আহা মরি মরি! সঙ্কেত করিয়া কত-না যাতনা দিনু!” “শাবাশ! শাবাশ! তোরা বাঙালীর মেয়ে।” “সাধু! সাধু! আচার্য! আপনার শিক্ষাদান সফল!” “ধন্য! ধন্য! অর্জুন!”

(চ) আসন্নতা : প্রদীপটা নিবুনিবু হয়ে এসেছে। আমার পরীক্ষার সময় বাবার যায়-যায় অবস্থা। এমন পড়োপড়ো বাড়িতে ছেলেপিলে নিয়ে রয়েছেন কেন? কয়েকদিন ধরেই মনটা যাই-যাই করছে।

(ছ) ঈষদুনতা, মৃদুতা, অসম্পূর্ণতা, ব্যস্ততা : ঘরটা ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে কেন? গাটা শীত-শীত করছে। রমেশকে যেন রাগ-রাগ ভাবে যেতে দেখলুম? এখন মানে-মানে পালাতে পারলেই হল। ছেলেটির বেশ পাতলা-পাতলা গড়ন। শিশু-মুখের আধো-আধো বুলি, বল্ না তোরা কেমন করে ভুলি?

(জ) সঙ্কোচ বা আশঙ্কা : কথাটা বাবাকে বলি-বলি করেও বলা হয়নি। পরীক্ষা দিয়ে সকলেই তো আশায় আশায় থাকে। শেষে পায়ে-পায়ে চললাম স্যারের কাছে। বাঙালী বাড়ির চাকরি, সর্বদাই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, কখন না খতম হয়।

(ঝ) উৎকণ্ঠা, অসন্তোষ বা আগ্রহ : পেনটাকে ধর ধর, এক্ষনি পড়ে যাবে। চল চল, আর এখানে একতিলও নয়। রোগ রোগ করে আর পারি না, মা। এই ড্রাইভার, বেঁধে বেঁধে, এখানেই নামব।

(ঞ) অনুকরণমূলক ক্রীড়া : “এখন আমি তোমার ঘরে বসে করব শুধু পড়া-পড়া খেলা!” ছেলেরা টিফিনে পুলিস-পুলিস খেলে। তেমনি, লড়াই-লড়াই বা চোর-চোর খেলা, নাবালক-নাবালক ভাব, খোকা-খোকা ভঙ্গী।

কয়েকটি ক্ষেত্রে শব্দদ্বৈতের উত্তরাঙ্গটি কিঞ্চিৎ বিকৃত হয়। ছোটো তরফের দেখাদেখি (অনুকরণে) বড় তরফও তিনতলা বাড়ি ফাঁদলেন। ডায়মন্ডহারবারে রাতারাতিই (রাত থাকিতেই) আমরা পৌঁছে গেলাম। “বড় টানাটানি (অভাব) পড়েছে মা।” কোনো কিছুরই অত বাড়াবাড়ি (মাত্রাধিক্য) ভালো নয়। ঝড়বাদলের দিন, বেলাবেলি (বেলা থাকিতেই) বাড়ি ফেরার চেষ্টা করো। শেষ পর্যন্ত হাঁটাহাঁটিই (অতিরিক্ত হাঁটা) সার হল। যা বলবার খোলাখুলি (স্পষ্টভাবে) বল। “আশ্বিনের মাঝামাঝি (ঠিক মাঝে নয়, দুই-একদিন আগে-পিছে) উঠিল বাজনা বাজি।” তাঁকে এ-মাসের শেষাশেষি আসতে বলব। এ-বিষয়ে এমন কোনো বাঁধাবাঁধি (ধরাবাঁধা) নিয়ম নেই। ছেলেটা কাঁদছে আর সারা উঠোনটায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। ব্যবস্থা পাকাপাকি (চূড়ান্ত) করে এলাম। সামান্য ব্যাপার নিয়ে এমন মাতামাতি (মত্ততা) মোটেই ভালো নয়। লাইনটা কোনাকুনি টান। অবশ্য দেখাদেখি, টানাটানি, বাঁধাবাঁধি, মাতামাতি স্থলবিশেষে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাসজাতও হইতে পারে, এবং দেখাদেখি, হাঁটাহাঁটি প্রভৃতি শব্দ অর্থবিশেষে নিত্য-সমাসজাতও হইতে পারে।

মোটামুটি, আড়াআড়ি, তাড়াতাড়ি প্রভৃতি শব্দকে হঠাৎ দেখিয়া ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস-নিষ্পন্ন শব্দ বলিয়া মনে হওয়াটা এমনকিছু আশ্চর্য নয়। রূপসাদৃশ্যের জন্যই এই ভ্রমের সম্ভাবনা। কিন্তু আমাদের এইটুকু মনে রাখিলেই হইবে যে, ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাসনিষ্পন্ন শব্দে একইপ্রকার পারস্পরিক ক্রিয়া—বিনিময়টাই মুখ্য। এখানে সেই পারস্পরিকতা নাই। সুতরাং শব্দগুলি শুদ্ধ শব্দদ্বৈতের উদাহরণ।

যুগ্মশব্দের শব্দদ্বৈত

সমার্থক, প্রায়-সমার্থক ও বিপরীতার্থক—এই তিন শ্রেণীর যুগ্মশব্দে শব্দদ্বৈত হয়।

সমার্থক—গরিবদুঃখী, রাজাবাদশা, জনমানব, স্তবস্তুতি, ডাক্তার-বৈদ্য, ভাগ-বাঁটোয়ারা, দরদাম, পূজার্চনা, মাঠ-ময়দান, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সুখস্বাচ্ছন্দ্য, অসুখ-বিসুখ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ঠাকুরদেবতা, বাড়িঘর, ভীতত্রস্ত, বনবাদাড়, বাঁকাটেরা, মামলা-মকদ্দমা, ধনদৌলত, ছাইপাঁশ, পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজপোশাক, মাথামুণ্ড, খেত-খামার, মনমেজাজ, সলা-পরামর্শ, শাকসবজি, পাইক-পেয়াদা, তত্ত্বতল্লাশ, লোক-লশকর, কল-কারখানা ইত্যাদি বিশেষ্য বা বিশেষণ ছাড়াও ভেবেচিন্তে, বলেকয়ে, বেঁচেবর্তে, করেকৰ্ম্মে প্রভৃতি ক্রিয়াও এই শ্রেণীর অন্তর্ভূত।

প্রায়-সমার্থক—দোল-দুর্গোৎসব, ভাবগতিক, আদর-আপ্যায়ন, আদব-কায়দা, সভা-সমিতি, সাধ-আহ্লাদ, গল্প-গুজব, সাক্ষীসাবুদ, বন্ধুবান্ধব, বাধাবিঘ্ন, ধারেকাছে, উঁকি-ঝুঁকি, হাসি-ঠাট্টা, ফন্দি-ফিকির, উলটা-পালটা, রয়েবসে, ফেলেছড়িয়ে, কেঁদে-ককিয়ে, নেচে-কুঁদে, ধরেবেঁধে, হেসেখেলে, পড়েশুনে, রেখে-ঢেকে প্রভৃতি এই শ্রেণীর অন্তর্ভূত।

বিপরীতার্থক—হাসি-কান্না, আলো-অন্ধকার, হিতাহিত, মেঘ-রৌদ্র, শত্রুমিত্র, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, সন্ধিবিগ্রহ, ভূত-ভবিষ্যৎ, অল্পবিস্তর, চেনা-অচেনা, যাওয়া-আসা, সোনারূপা, মরেবেঁচে ইত্যাদি এই শ্রেণীর অন্তর্ভূত।

প্রয়োগ : কী সব ছাইপাঁশ (অপ্রয়োজনীয়) লিখেছ, মাথামুণ্ডু বোঝা দায়! যা-ই কর না কেন, ভেবেচিন্তে (পরিণাম দেখিয়া) করবে। তাকে বলেকয়ে (বিশেষভাবে অনুরোধ করিয়া) অনেক কষ্টে রাজী তো করিয়েছি। ভদ্রলোকের অনেক পড়াশোনা (গভীর পাণ্ডিত্য) আছে দেখছি। গল্প-গুজবে আর হাসি-ঠাট্টায় হেসে-খেলে (আমোদ-আহ্লাদের মধ্য দিয়া) জীবনটাকে কোনোরকমে কাটিয়ে দাও। এমন চেয়েচিন্তে (অন্যের অনুগ্রহে) ক’দিন আর চলবে? যেমনই হোক করেকম্মে (কায়ক্লেশে জীবিকানির্বাহ করিয়া) চালাচ্ছে তো? “দিবসে থাকে না কথার অন্ত চেনা-অচেনার ভিড়ে।” “বজ্রশিখা এক পলকে মিলিয়ে দিল সাদা কালো।” “হাসি কান্না হীরা পান্না দোলে ভালে, নাচে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে।” অসুখ-বিসুখ-ব্যাপারে ডাক্তারবাবুকে উলটো-পালটা কোনো কথা বলবে না। গরিবদুঃখী ঘরের মেয়ে তো, দোল-দুর্গোৎসবে রাজাবাদশাদের ধনদৌলত জাঁকজমক লোক-লশকর পাইক-পেয়াদা বিলাস-ব্যসন সাজ-পোশাক আদর—আপ্যায়ন আদব-কায়দা দেখে একেবারে অবাক্ হয়ে গেছে।

বিপরীতার্থক শব্দগুলির প্রয়োগ বড় বিচিত্র। কখনও কখনও দুইটি অংশেরই অর্থ প্রকট।—বয়স হয়েছে, নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শেখ। কিন্তু—”ছুটি আসছে, বাইরে গিয়ে ভালোমন্দ খেয়ে শরীরটা সারিয়ে নাও।”—এখানে ভালোমন্দ পদটির মন্দ অর্থটি অনুপস্থিত। এ-বিষয়ে রুমাদির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।—এখানেও যোগ-এর অর্থই প্রাধান্য পাইতেছে, অযোগ-এর অর্থ অনুপস্থিত।

চেষ্টাচরিত্র কথাটির দুইটি অংশেরই নিজস্ব অর্থ আছে, কিন্তু শব্দদ্বৈতরূপে প্রযুক্ত হইলে দ্বিতীয় অংশটির অর্থ লোপ পাইয়া সামগ্রিকভাবে চেষ্টা তদবির ইত্যাদি প্রথমাংশেরই অর্থব্যাপ্তি বুঝায়।

পত্র শব্দটির যোগেও কয়েকটি যুগ্মশব্দের সৃষ্টি হয়। হিসাবপত্র, দানপত্র, খরচপত্র, জিনিসপত্র, ঔষধপত্র, খাতাপত্র, পুঁথিপত্র ইত্যাদি। এখানে “পত্র” কথাটির নিজস্ব কোনো অর্থ না থাকিলেও সামগ্রিকভাবে যুগ্মশব্দটির অর্থবৈচিত্র্য ঘটাইতেছে।

পদবিকারবাচক শব্দদ্বৈত

পদবিকারমূলক শব্দদ্বৈতের বৈশিষ্ট্য এই যে, এগুলির প্রথমাংশ অর্থপূর্ণ, কিন্তু দ্বিতীয়াংশটি প্রথমাংশেরই বিকৃতি। অর্থহীন বলিয়া ভাষায় দ্বিতীয়াংশটির স্বাধীন প্রয়োগ হয় না। অথচ প্রথমাংশের অর্থটিকে বিস্তৃতি দিয়া ব্যঞ্জনামধুর করিয়া তুলিবার এক বিস্ময়কর ক্ষমতা ইহার রহিয়াছে। দ্বিতীয়াংশটির বিকৃতি গঠনে ট ফ স ম—এই কয়টি ব্যঞ্জনেরই কৃতিত্ব বেশী। বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়, ক্রিয়া—সবরকম পদের শব্দদ্বৈতেরই দ্বিতীয়াংশটির বিকৃতি লক্ষ্য করা যায়।—ভাতটাত, জলটল, মুড়িটুড়ি, বস্তিটস্তি, ডাবটাব, ভাবসাব, আঁটসাঁট, নরমসরম, ডাগরডোগর, গোলগাল, জড়সড়, বুড়োসুড়ো, লুচিটুচি (ক্ষুধার আগ্রহে), লুচিফুচি (বিরক্তিতে), মাংসটাংস, মাংসফাংস (বিরক্তি), রকমসকম, বাসনকোসন, মুড়িসুড়ি, মোটাসোটা, ছেলেপিলে, কাপড়চোপড়, পয়সাটয়সা, বাড়িটাড়ি, নাদুসনুদুস, আলাপসালাপ, বোঁচকাহঁচকি, ঘুষোমুষো, আঁকজোক, মাপজোখ, এলোথেলো, শুয়েটুয়ে, গিয়েটিয়ে, বুঝেসুঝে, রেগেমেগে, খেয়েদেয়ে, লুটেপুটে কিনেটিনে, বকাঝকা, কিন্তুটিন্তু ইত্যাদি।

আঁকাবাঁকা, আশপাশ, অদলবদল, অলিগলি, হিল্লিদিল্লি, হাবুডুবু—প্রথমটি বিকৃত। কিন্তু আঁকুপাঁকু, লণ্ডভণ্ড, হন্তদন্ত, তছনছ, ছিনিমিনি—শব্দগুলির কোন্ অঙ্গ বিকৃত, বুঝা কঠিন।

প্রয়োগ : “হ্যাঁ-রে ইন্দ্র, এদিকে খোট্টামোট্টাদের বস্তিটস্তি নেই? মুড়িটুড়ি পাওয়া যায় না?” “তাহারই আশেপাশে দাঁড়াইয়া সেগুলা (কুকুরগুলা) এখনও চেঁচাইয়া মরিতেছে।” সবাইকে দিয়েটিয়ে যদি কিছু থাকে তবে খাই। মাংসটাংস কী রেঁধেছ, দাও। এরকম বেজায় গরমে কি লুচিফুচি খাওয়া যায়? ছেলেটির বেশ গোলগাল চেহারা। পোঁটলাপুঁটলি বাঁধ, তল্পিতল্পা তোল। ঝড়ো আম যা পার, লুটেপুটে নাও। ছেলেপিলেদের দিনরাত বকাঝকা করতে নেই। বুড়োসুড়ো লোককে বসবার একটু জায়গাটায়গা দেবে, বাবারা? বয়স হয়েছে, এখন কি আর রাগমাগ করে? বুঝেসুঝে চলতে হয়। ঠাণ্ডায় ছেলেটা মুড়িসুড়ি দিয়ে পড়ে আছে। মানুষের প্রাণ নিয়ে মানুষ এমন ছিনিমিনি খেলতে পারে? মেয়েটির বেশ ছিমছাম গড়ন

প্রতিবর্ণীকরণ

প্রতিবর্ণীকরণ কথাটির অর্থ হইল এক ভাষার শব্দকে অন্য ভাষার লিপিমাধ্যমে লেখা। কিন্তু এক ভাষার শব্দাবলীকে অন্য ভাষার অক্ষরে প্রকাশ করা বেশ দুরূহ ব্যাপার, বিশেষতঃ ইংরেজীর ক্ষেত্রে। আমাদের শিক্ষাসংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, ব্যবসায়-বাণিজ্য, খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদ, আইন-আদালত—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসংখ্য ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করিবার প্রয়োজন দেখা দেয়। অথচ ইংরেজী শব্দের বিশুদ্ধ উচ্চারণ আয়ত্ত করাই বিশেষ শিক্ষা ও অনুশীলন-সাপেক্ষ। তদুপরি “cut-এর u, cat-এর a এবং f, v, w, z প্রভৃতির প্রতিবর্ণ” আমাদের বাংলা ভাষায় নাই। তাই ইংরেজী শব্দের বিশুদ্ধ প্রতিবর্ণীকরণ বাংলায় সম্ভব নয়। এত অসুবিধা সত্ত্বেও ইংরেজী শব্দের উচ্চারণশুদ্ধি যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রাখিয়া বাংলা লিপিতে প্রকাশ করিবার কয়েকটি নিয়ম কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিধিবদ্ধ করিয়াছেন। আমরা সেই নিয়মাবলীর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলাম।—

(ক) খুব পরিচিত শব্দে হস্ চিহ্ন দিবার প্রয়োজন নাই : School—স্কুল; College—কলেজ; Pass—পাস; Seat—সীট। অবশ্য, ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকিলে স্থানবিশেষে হস্ চিহ্ন দেওয়া উচিত। Unlawful—আলফুল (নতুবা আনফুল উচ্চারণ করিবার সম্ভাবনা)।

(খ) মূল উচ্চারণ যেখানে s, সেখানে স, আর যেখানে sh, সেখানে শ বসিবে : Dish—ডিশ; Notice—নোটিস; Class—ক্লাস; Chivalry—শিভারি; Sugar—শুগার; Circus—সার্কাস; Shirt—শার্ট; Rush—রাশ; Asia—এশিয়া; Extension—এক্সটেনশন; Tension—টেনশন

(গ) St-স্থানে স্ট লিখিতে হইবে : Master—মাস্টার; Post—পোস্ট Station—স্টেশন; State Bank—স্টেট ব্যাঙ্ক; Magistrate—ম্যাজিস্ট্রেট।

(ঘ) S-এর মূল উচ্চারণ যেখানে z, সেখানে জ দিয়াই চালাইতে হইবে, তবে এই জ-এর উচ্চারণ য-এর মতো বাংলার সাধারণ উচ্চারণ নয়, z-এর মতো : Television—টেলিভিজন; Chemise—শেমিজ; Design—ডিজাইন।

(ঙ) মূল উচ্চারণে যেখানে long sound বুঝাইবে, সেখানে প্রয়োজনমতো ঈ বা ঊ হইবে : East Bengal—ঈস্ট বেঙ্গল; Esopঈশপ; Speed—স্পীড; Spoon—স্পুন; Soup—সৃপ; Lose—জ; Loose—লুস; League—লীগ।

(চ) মূল উচ্চারণ অ্যা হইলে শব্দের আদিতে অ্যা; অন্যত্র ্যা বিধেয় : Act—অ্যাক্ট; Mansion—ম্যানশন; Fashion—ফ্যাশন; Map—ম্যাপ।

(ছ) ঋ না লিখিয়া র-ফলাযুক্ত ই বা ঈ (নি,ত্রী) লেখা উচিত : Britain—ব্রিটেন; Prescription প্রেসক্রিপশন; British—ব্রিটিশ; Bristol—ব্রিস্টল; Prescription—প্রেসক্রিপশন Christ—খ্রীষ্ট বা খ্রীস্ট।

(জ) ণ না লিখিয়া কেবল ন লেখাই উচিত : Run—রান; Corner –কর্নার; Governor—গভর্নর; Furniture—ফার্নিচার; Eastern—ঈস্টার্ন; Cornwallis—কর্নওআলিস।

(ঝ) nd-স্থানে ন্ড এবং nt-স্থানে ন্ট লেখা উচিত : Friend—ফ্রেন্ড; Bond—বন্ড; Fund—ফান্ড; London—লন্ডন; Badminton -ব্যাডমিন্টন; Indian—ইন্ডিয়ান; Joint—জয়েন্ট।

(ঞ) উ-বর্ণ ও ও-কারের পর যদি য়-এর উচ্চারণ না আসে, তবে য়, য়া, য়ো লেখা উচিত নয় : January—-জানুআরি; War—ওঅর; Work-house—ওআর্ক-হাউস; Edward—এডওয়ার্ড; Radio—রেডিও; Waterproof—ওঅটারপ্রুফ; Tube-well—টিউবওএল; Word-Book—ওআর্ড বুক; Chair—চেআর।

তবে, এ-কার, ই-কার ও ও-কারের পর যেখানে য়-এর উচ্চারণ আসিতেছে, সেখানে য় চলিতে পারে। Radium—রেডিয়াম; Sweater—সোয়েটার; Theatre—থিয়েটার; Hardware—হার্ডওয়ার।

এইবার অতি-পরিচিত কয়েকটি ইংরেজী শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ দেওয়া হইল।—

Association—অ্যাসোসিয়েশন; Artist—আর্টিস্ট; August—অগস্ট; Administration—অ্যাডমিনিস্ট্রেশন; Attorney—আটর্নি; Action—অ্যাক্‌শন; Esthetic—ইসথেটিক; Acid—অ্যাসিড; Admission—অ্যাডমিশন; Agri culture—অ্যাগ্রিকাচার; Australian—অস্ট্রেলিআন; Abstract—অ্যাস্ট্র্যাক্ট; Ballet ব্যালেই; Beethoven—বীঠোভেন; Budget—বাজেট; By-law—বাই-ল; Cabin—ক্যাবিন; Christian—খ্রীশ্চান; Christmas—খ্রীষ্টমাস Chief Minister—চীফ মিনিস্টার; Current—কারেন্ট; Colonel –কর্নেল; Cashier—ক্যাশিয়ার; Chest—চেস্ট; Crane—ক্রেন; Darwin—ডারউইন; Dysentery—ডিসেন্ট্রি; Duke—ডিউক; End—এন্ড; East Indies—ঈস্ট ইন্ডিজ; Examination—ইজ্জামিনেশন; Express—এক্সপ্রেস; Expression—এক্সপ্রেসন; Extension—এক্সটেনশন ; Economist—ইকনমিস্ট; European—ইওরোপীআন; French—ফ্রেন্‌চ; France ফ্রান্স; Foreign—ফরেন; February– ফেব্রুআরি; Focus—ফোকাস; First floor—ফার্স্ট ফ্লোর; German—জার্মান; Government—গভর্নমেন্ট; Gnomic—নোমিক; Greece—গ্রীস; Hugo—হুগো; Hospital—পিটাল; Honourable—অনরেবল; Humanism—হিউম্যানিজম; Humanity—হিউম্যানিটি; Humanism—হিউম্যানিজম Humour—হিউমার; Idealist—আইডিআলিস্ট; Institution—ইস্টিটিউশন; Jam—জ্যাম; Justice—জাস্টিস; Judge—জজ; Judas—জুডাস; Journalist—জার্নালিস্ট; Knack—ন্যাক; Keats—কীট্স; Load shedding—লোড শেডিং; Lantern—ল্যান্টার্ন; Library—লাইব্রেরি; Licence—লাইসেন্স; Lieutenant—লেফটনান্ট; Majority—মেজরিটি; Minority মাইনরিটি; Mandatory—ম্যান্ডেটরি; Munshi—মুনশী; Machine—মেশিন; Museum—মিউজিয়ম; Marks sheet—মার্ক্স শীট; Moeterlinck—মেটারলিঙ্ক; Max Muller—ম্যাক্স মুলার; Missionary—মিশনরী; Napoleon—নেপোলিয়ঁ; Oriental—ওরিয়েন্টল; Optional—অপশনাল; Operation—অপারেশন; Opposition—অপজিশন; Opportunist—অপরচুনিস্ট; Panchayat—পঞ্চায়ত; Parliament—পার্লামেন্ট; Pension—পেনশন; Planet—প্ল্যানিট; Planning Commission—প্ল্যানিং কমিশন Plaster-—প্লাস্টার; Plastic—প্ল্যাস্টিক; Pneumonia—নিউমোনিয়া; Police—-পুলিস; Polish—পালিশ; Promotion—প্রমোশন; Protein—প্রোটীন; Psychology—সাইকলজি; Publisher—পাবলিশার; Runner—রানার; Renaissance—রেনেসাঁস; Ration Card—র‍্যাশন কার্ড; Registered—রেজিস্টার্ড; Romantic—রোম্যান্টিক; Realist—রিআলিস্ট; Reality—-রিঅ্যালিটি; Scholarship—স্কলারশিপ; Session—সেশন; Season Ticket—সীজন টিকিট; Shakespearian—শেক্সপিয়ারিয়ান; Shah—শাহ্; Shoot—শূট; Socrates—সক্রেটিস; Standard –স্ট্যান্ডার্ড; Stadium—-স্টেডিয়াম; Steamer—স্টীমার; Street—স্ট্রীট; Suburban—সাবার্বান; Superintendent—সুপারিন্টেন্ডেন্ট; Supervisor—-সুপারভাইজার; Syllabus—সিলেবাস; Sugar—শুগার; Suggestion—সাজেশন; Studio—স্টুডিও; Suit–সূট; Second—সেকেন্ড; Sports—স্পোর্ট্স; Subway—সাবওয়ে; Summons—সমন; Stores—স্টোর্স; Tram—ট্রাম; Table Tennis—টেবল টেনিস; Thames টেমস; Thomas—টমাস; Tourist Lodge—টুরিস্ট লজ; Trustee—ট্রাস্টী; Test Tube—টেস্ট টিউব; Tata—ট্যাটা; Tournament—টুর্নামেন্ট; Tragedy–ট্র্যাজিডি; University—ইউনিভার্সিটি; Von—ফন; Warrant—ওঅরান্ট; War bond—ও অর-বন্ড; X—Mas—খ্রীষ্টমাস; X-ray—এক্স-রে; Zonal—জোনাল।

একটি কথা মনে রাখিবে—প্রতিবর্ণীকরণ অনুবাদ নয়। Wool (উল) কথাটির অনুবাদ—পশম; Possession (পজেশন)—দখল; Condition (কান্ডিশন)–শর্ত; Street (স্ট্রীট)—সরণী; Interpreter (ইন্টারপ্রিটার)—দোভাষী; Nephew (নেভিউ)—ভ্রাতুষ্পুত্র, ভাগিনেয়; Fancy (ফ্যান্সি)—খেয়ালী কল্পনা,; Imagination (ইম্যাজিনেশন)—সৃজনী কল্পনা; Hospital (হসপিটাল)—হাসপাতাল; Leap-year (লীপ-ইআর)—অধিবর্ষ; Report (রিপর্ট)—প্রতিবেদন।

অনুশীলনী

১। সংজ্ঞার্থ লিখ ও উদাহরণদ্বারা বুঝাইয়া দাও : তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দ, অর্ধ-তৎসম শব্দ, বিদেশী শব্দ, দেশী শব্দ, শব্দদ্বৈত, প্রাকৃতজ শব্দ, সংকর শব্দ।

২। উদাহরণ দাও : বিদেশী শব্দে সংস্কৃত ও বাংলা প্রত্যয়; বাংলা শব্দে সংস্কৃত ও বিদেশী প্রত্যয়; সংস্কৃত শব্দে বাংলা ও বিদেশী প্রত্যয়; বিদেশী শব্দে বিদেশী প্রত্যয়; ভিন্নার্থক যুগ্মশব্দ।

৩। (ক) পার্থক্য দেখাও : তৎসম ও তদ্‌ভব শব্দ; তৎসম ও অর্ধ-তৎসম শব্দ; তদ্ভব ও অর্ধ-তৎসম শব্দ।

(খ) শব্দদ্বৈত বা একই শব্দের দুইবার উচ্চারণ কীরূপে উহার অর্থের পরিবর্তন ঘটায়, উদাহরণযোগে দেখাইয়া দাও।

৪। বাংলায় ব্যবহৃত পাঁচটি বিদেশী শব্দের উল্লেখ করিয়া সেগুলির আকরের নাম কর।

৫। কোটি কোন্ শ্রেণীর শব্দ বল : (ক) স্যাকরা, সোনা, চা, খাঁচা, আশ্চর্য, হদ্দমুদ্দ, দেশবিদেশ, হাত, লোক, ডাগর, শিক্ষা, লাঠি, পরমেশ্বর, বুড়ো, আত্মরক্ষা, ভাত, খুব, নায়েব, চেষ্টা, লেঠেল, হুকুম, হাকিম, রাগ, কাবু, বাবু, খবর, সন্ধ্যা, হাতি, চাঁদ, সিনেমা, শনাক্ত, মজলিস, অন্তর, রেস্তরাঁ, হরতাল, দুর্বল, খাজনা, বিদ্রোহী, কেন্দ্র, বকশিস, নির্বিকার, চিত্ত, হেডমিস্ত্রী, বাদল, বাগড়া, ম্যাগাজিন, বগল, প্যান্ডাল, বিড়াল, তিনডবল, গুড়, বাঁদরামি, পটল, নখ, ঘাস, বাদামী, ঘুণ, নল, স্টোর্স, রুমাল, হিন্দু, মুসলিম, রেয়াত, শ্বেতপাথর, উজবুক, মুড়ি, চন্দ্রিমা।

(খ) হেডপণ্ডিতমশায়ের বাড়িতে থাকতে থাকতে কেষ্টর শরীরটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। পেট খারাপ হলে ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত আর ঝিঙের ঝোল খুব উপকারী।

(গ) “জানালা থেকে গামছাখানা আর তোয়ালেটা নিয়ে গামলায় নয় বালতির সাবানলে ডুবিয়ে দাও। শুকিয়ে গেলে ইস্তিরি করে আলমারিতে তুলে দিও।” উকিল তাঁর মক্কেলকে এজাহার দেবার জন্য আদালতে হাজির হতে বললেন।

৬। লোক, ভয়, সামন্ত, লজ্জা, জঙ্গল, দয়া—শব্দগুলিকে সমার্থক শব্দযোগে শব্দদ্বৈতে পরিণত করিয়া প্রত্যেকটি শব্দদ্বৈতদ্বারা বাক্যরচনা কর।

৭। আয়তাক্ষর অংশগুলির প্রয়োগবৈশিষ্ট্য দেখাও : “দিনে দিনে বাড়ে কালকেতু।” ভগবান্ না করুন, তার ভালোমন্দ যদি কিছু ঘটে যায়। কোলের ভাইটা দিদি দিদি করেই সারা হল। সব বিষয়েই এমন মাথায় মাথায় পাসনম্বর পেলে অ্যাগ্রিগেটে আটকে যাবে যে। কথাটা অনেকদিন থেকেই বলি বলি করছি, কিন্তু বলতে গিয়ে কেমন বাধো বাধো ঠেকেছে। “গৌর আধো-আধো চাঁদবদনে রাধা রাধা বলিছে।” এমন বাড়ি-বাড়ি মন নিয়ে বিদেশে চাকরি করা চলে? কথাটা এরই মধ্যে কানে-কানে অনেকদূর গড়িয়েছে। “শিলা রাশি-রাশি পড়িছে খসে।” যাচ্ছ তো হাসিমুখে, কাঁদো-কাঁদো চোখে না ফিরতে হয়। এমন ভাসা-ভাসা উত্তরে ভালো নম্বর মেলে কি? বেশ কাঠে-কাঠে পড়েছে। বিদ্যুৎবার বারবেলায় বেরিয়েছি, ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরলে বাঁচি। “দেখিতে দেখিতে গুরুর মন্ত্রে জাগিয়া উঠেছে শিখ।” ধুতিখানা নতুন-নতুন লাগছে। “বেঁচে-বর্তে রও সুখে।” ঢের ঢের লোক দেখেছি, এমনটি আর দেখলাম না। এমন গলায়-গলায় ভাব টিকলে হয়। লোকটি যে কী তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। “বাকী তিনটির যায় যায় অবস্থা।”

৮। তৎসম রূপ লিখ : পরান, ভাত, সাঁঝ, পরশ, চামড়া, আইচ, গাঙ, বাছা, নেমন্তন্ন, ঘর, দেরকো, পুরুষ্টু, মাচা, পুকুর, দেউল, বোষ্টম, নেওটা, দেউটি।

৯। বাক্যরচনা কর : হাড়ে হাড়ে, মাথায় মাথায়, হাতে-হাতে, পায়ে-পায়ে, চোখে-চোখে, মুখে-মুখে, লম্ফঝম্ফ, শুনতে-শুনতে, আসতে-আসতে, কাচ্চাবাচ্চা, মুঠা-মুঠা, মাস-মাস, আদায়পত্তর, কায়দাকানুন, গোলগাল, মতন-মতন।

১০। একই শব্দ তৎসম হিসাবে এক অর্থ, আবার বাংলা বা বিদেশী হিসাবে আরেক অর্থ প্রকাশ করে এমন পাঁচটি উদাহরণ উল্লেখ কর।

১১। নিম্নলিখিত শব্দগুলি হইতে (১) সমার্থক বা প্রায় সমার্থক শব্দ, এবং (২) বিপরীতার্থক শব্দ বাহির কর : জয়, দাক্ষিণ্য, বিগ্রহ, হ্রস্ব, দয়া, কার্পণ্য, স্বাচ্ছন্দ্য, যুদ্ধ, পরাজয়, দৈন্য, সুখ, বাধা, দান, তাঁবা, গ্রহীতা, নিত্য, দাতা, বালাখানা, দুঃখ, দোল, কোঠা, দীর্ঘ, নৈমিত্তিক, প্রতিদান, দুর্গোৎসব, বদান্যতা, সমষ্টি, হ্রাস, বিঘ্ন, ব্যষ্টি, জমা, বৃদ্ধি, জমি, তুলসী।

১২। বাংলা হরফে লিখ : Art Gallery, Easy chair, Industrial Exhibition, Politics, Injection, Shylock, Rail station, Shakespeare, Poetics, Park Street, Metric System, Hostel, State bus, School—master, Doctor, West Indies, Physiology, Planet, Steam-roller, Post Office, Oxygen, Shelley, Dante, Goethe, Folk Tales, Column, Esplanade, November, Chest Clinic, Cement, Photograph, Subway, Communication, Investment, Canteen, Carbon, Power House, Modern civilisation, Dynamic, Recitation, Spectacles, Burdwan, Knight, Chivalry, Flute, Inspiration, First floor, Second Division, Leisure hour, Compound interest, Ratio, Cheque, League, Tournament, Bicycle, Sponge, Sir, Phosphorous, Cash, Mayor, By-pass, Wilson, Pencil, Lotion, Romance, Sentiment, Research, Scholar, Agency, Style, Compulsory, Optional, Police case, Tourism, Insurance, Provi—dent Fund, Koran, Stockist, Chorus, Platform, Taxi, Spirit, Third power, George, Fine, Common Wealth, Subscription, Salutation, Hockey stick, Constantinople, Boycott, Asian, Thermometer, Water-Polo, Passenger, Napthalene, Prize, Aeroplane, Placard, Pill, Will, France, Greece, Indian Team, Century, Statio—nery, Foreman, Commission, Television, Frankenstein, Reuter, Pattern, Rousseau, Mission, Schopenhauer, Sulphuric Acid, Peaceful, Louis Pasteur, Machiaveli, Aristotle, Cleopatra, Stegomyia, Archimedes, Aryabhat, Michelangelo, Bismarck, Maupassant, Nazi, Bureau.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *