৩.০৮ বিশেষণের শ্রেণীবিভাগ

অষ্টম পরিচ্ছেদ – বিশেষণের শ্রেণীবিভাগ

বিশেষণপদ কাহাকে বলে তাহা তোমরা ১৬২ পৃষ্ঠায় প্রদত্ত ৬৯ নং সূত্রে পড়িয়াছ। বিশেষণপদকে প্রধানতঃ তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়—( ১) নাম-বিশেষণ, (২) ক্রিয়ার বিশেষণ ও (৩) বিশেষণের বিশেষণ।

নাম-বিশেষণ

১০১। নাম-বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্যপদের গুণ, ধর্ম, অবস্থা, পরিমাণ, ক্রম, সংখ্যা ইত্যাদি জানাইয়া দেয়, তাহাকে নাম-বিশেষণ বলে। চমৎকার ছেলে। বিদুষী বধূ। ঠাণ্ডা বরফ। কনকনে শীত। পড়তি দশা। দশহাজার টাকা। এতখানি দুধ। তৃতীয়া কন্যা। পয়লা কিস্তি। ডাকাবুকো লোক। “তার মধ্যে ভরন্ত বয়সের চটুল চাপল্য নেই।” নৃশংস সত্য অপেক্ষা ডাহা মিথ্যাও ভালো।

সর্বনামপদ সকল শ্রেণীর নামের পরিবর্তে বসে বলিয়া নাম-বিশেষণ বলিলে সর্বনামেরও বিশেষণ বুঝিতে হইবে। এমন অধম আমি তাঁর করুণা কি পাব? তেমন জাঁদরেল তুমি, তোমাকেও ঘায়েল করেছে!

নাম-বিশেষণকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।—

(ক) গুণবাচক : যে বিশেষণ বিশেষ্যের গুণটি নির্দিষ্ট করিয়া প্রকাশ করে তাহাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে। “হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে।” “তব অনুগামী দাস।” “স্নেহের এক গভীর বিশাল প্রবাহ কোন্ অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় দেশে বহিয়া চলিয়া গেল?” “অনেকে সমালোচনাকে রূঢ় মিথ্যা আর ভজনাকে কমনীয় সত্য বলিয়া মনে করেন।” “যেমন ঠাস দাসত্ব তেমনি নিবিড় ছুটি।” ঐন্দ্রিয়িক শক্তির প্রভাবকে প্রতিহত করা যায় নৈতিক শক্তির দ্বারা। “লণ্ডভণ্ড লুটিল ধুলায় অভ্রভেদী অহংকার।” সেইরূপ টাটকা খবর, হাওয়াই প্রতিশ্রুতি, নির্বোধ অজুহাত, মৌলিক সন্দেহ, পরিশ্রমী ছাত্র, কৃতাৰ্থ প্ৰীতি, পেলব স্পর্শ, প্রসন্ন যৌবন, পরুষ বল্কল, স্নিগ্ধ আলাপ, “হিংস্র প্রলাপ”, তরল দর্শক, “কৃপণ আলো”, “নিবিড় পাহারা”, “অনুকূল প্রাপ্তি”, মানী ট্রেন, রেওয়াজী কণ্ঠ, প্রতিশ্রুত প্রতিমূর্তি, বহ্নিময় সন্ন্যাস, প্রজ্বলন্ত অনাসক্তি।

(খ) অবস্থাবাচক : যে বিশেষণ বিশেষ্যের অবস্থার পরিচয় দেয় তাহাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে। সেদিনের সুজলা সুফলা বঙ্গভূমি আজ প্রেতের লীলাভূমি। “ব্রাহ্মণের তপোবন অদুরে তাহার—নির্বাক গম্ভীর শান্ত সংযত উদার।” ঘুমন্ত ছেলেটাকে জ্বালাতন করছ কেন? সেইরূপ পয়সাওয়ালা লোক, ধনী মহাজন, গরিব কর্মচারী, ফুটন্ত দুধ, চলন্ত ট্রেন, আহত অভিমান, বিরহবিধুর অধর, “উপলব্যথিত গতি”, মিলনমধুর হাসি।

(গ) পরিমাণবাচক বা মাত্রাবাচক : যে বিশেষণ বিশেষ্যের পরিমাণটুকু বুঝাইয়া দেয় তাহাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে। বিশটা লোককে খাওয়াতে পঁচিশ কিলো পান্তুয়া উঠে গেল। “তাও বেশী দিনের জন্য নয়।” পরীক্ষায় সফলকাম হতে গেলে এর দ্বিগুণ পরিশ্রম চাই। ছাত্রের সাফল্যে কোন্ শিক্ষকের বুক না দশ হাত হয়? এমন অল্প আহারে চেহারা থাকে? “শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই।” সেইরূপ ভরিটাক আফিম, হাতদশেক ফিতা, কাঠা-চারেক পুকুর।

(ঘ) সংখ্যাবাচকঃ “বারো মাসে তেরো পার্বণ।” “তিন-তিনটে প্রাণ অকালে ঝরে গেল!” ছয় মাসের পথ এখন একদিনে যাওয়া যায়। “দশ হাজার প্রাণ আমি যদি পেতাম।”—চারণকবি মুকুন্দদাস। “হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে।”—জীবনানন্দ। “লক্ষ্যশূন্য লক্ষ বাসনা ছুটিছে গভীর আঁধারে।”—রজনীকান্ত। সেইরূপ পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে, চারি বেদ, হাজার সৈন্য, লক্ষ যুগ, “সাতশ কামান”, দুটো ফুটো পয়সা।

(ঙ) পূরণবাচক বা ক্রমবাচক : “প্রথম মিলনে প্রলয়, দ্বিতীয় মিলনেই পরিত্রাণ।” মণিকুন্তলা আমার তৃতীয়া কন্যা। সেইরূপ জ্যেষ্ঠ পুত্র, পঁচিশে বৈশাখ, ষোড়শ শতাব্দী, নবমী নিশি, দশমী দশা।

(চ) বর্ণবাচক (যে বিশেষণ বিশেষ্যের বর্ণটি নির্দিষ্ট করে) : “কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।” “নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।” “খোকন নেচে যায় লাল জুতুয়া পায়।” সেইরূপ “সুসিত কমল”, নীল পদ্ম, রঙিন চশমা, রাঙা গোলাপ, সাদা বক, ফেকাসে মুখ, কটাসে চোখ, সবুজ আলো, ধবধবে বিছানা, সোনালী রঙ।

(ছ) সংজ্ঞাবাচক : সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের উত্তর তদ্ধিত-প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ বলে। ঢাকাই মসলিন ছিল ভারতের গৌরব। ভারতীয় সভ্যতাই পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা। সেইরূপ পাটনাই লঙ্কা, বঙ্গীয় বণিকসভা, ইওরোপীয় সমাজনীতি, কালিদাসীয় কাব্যরীতি, মোগলাই খানা, ঢাকাই পরটা, রাবীন্দ্রিক গীতরীতি, তোগলকী কাণ্ড।

(জ) উপাদানবাচক (বিশেষ্যটি কোন্ উপাদানে গঠিত যে বিশেষণ তাহা জানাইয়া দেয়) : বেতের চেআরের চেয়ে কেঠো চেআর ভালো। গ্রামের অধিকাংশ লোক মেটে বাড়িতেই বাস করেন। সেইরূপ কাঁকুরে পথ, বেলে মাটি, কাগুজে নৌকা, কাচের চুড়ি, পাথুরে দেওয়াল, লোহার বাসরঘর

(ঝ) প্রশ্নবাচক : কোন্ বইখানা চাও? “কেমন মা তা কে জানে?” “আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে, হে সুন্দরী।” “কোন্ কূলে আজ ভিড়ল তরী।” “কী হবে জানিয়া ‘বলো কেন জল নয়নে?”

(ঞ) বহুপদময় বিশেষণ : দুই বা দুই-এর বেশী পদ সমাসবদ্ধ হইয়া বিশেষ্যপদের পূর্বে বসিয়া বিশেষণের কাজ করিলে তাহাকে বহুপদময় বিশেষণ বলে। আহা, এমন মা-মরা মেয়েকে একটু দেখো। মাথার উপরে রাত জেগে-থাকা তারার তপস্যা। কোথায় মিলিয়ে গেল বাঙালীর সেই প্রাণ-কেড়ে নেওয়া হাসি! হাসি-উপচিয়ে-পড়া সমুদ্র। এমন মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানো ছেলে কোথাও তো আর দেখিনি বাপু। পিছনে ফেলে-আসা দিনগুলো এখনও মনের কোণে উঁকি দেয়। “দূরের অস্পষ্ট আবছায়া-দেখিতে পাওয়া বেলাভূমি….. কুহকের সৃষ্টি করিত তাহার ভাবময় মনে।” “সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।” সেই দারিদ্র্য-ফুটে-ওঠা মুখে অনেক-কষ্টের-টেনে-আনা হাসি বেশীক্ষণ টিকল না। “মর্তে থাক সুখে-দুঃখে অনন্ত-মিশ্রিত প্রেমধারা।” “বর্তমান বাংলা দেশের অনেক সাহিত্যিকই হইলে—হইতে-পারিত বনস্পতি।” “ওই ড্যাবা-ড্যাবা-চোখ-মেলে-সর্বদা-তাকিয়ে-থাকা ছেলেটা বেশি কথা কইতে পারে না।”

(ট) সর্বনামীয় বিশেষণ : সর্বনামপদকে বিশেষণরূপে প্রয়োগ করিলে তাহাকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে। “এত ঋণ, তবু হবে না সে ঋণী হবে না।” “যত মত তত পথ।” “অন্নচিন্তাই যার চমৎকার, অন্য চিন্তা তার থাকে কি?” কোনো কোনো ছেলে ফাঁকি দেয় বইকি। নিজ সম্পত্তির সামান্যই তিনি বাঁচাতে পেরেছেন। ত্বদীয়, তদীয়, মদীয়, ভবদীয়, অস্মদীয়, স্বীয়, স্বকীয়, মাদৃশ, ত্বাদৃশ, তাদৃশ প্রভৃতি সর্বনামজাত বিশেষণও সর্বনামীয় বিশেষণ। মদীয় ভবন, তাদৃশী সিদ্ধি, স্বকীয় সাধনা।

সর্বনামের বিশেষণ ও সর্বনামীয় বিশেষণপদের পার্থক্যটি মনে রাখিও। সর্বনামের বিশেষণ হইতেছে সর্বনামপদের পূর্বস্থিত বা পরস্থিত কোনো বিশেষণপদ। আর কোনো সর্বনামপদ নিজেই যখন বিশেষণরূপে অন্য পদের গুণ অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে অথবা সর্বনাম হইতে প্রত্যয়যোগে গঠিত কোনো বিশেষণপদ অন্য কোনো পদের পূর্বে বসিয়া তাহাকে বিশেষিত করে, তাহাকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে। (১) “এমন কঠিন পাষাণ আমি, আমাকেও কাঁদিয়ে ছেড়েছে, মামা।” (সর্বনামের বিশেষণ) (২) অপর ছেলের খাতায় নজর দিও না। (সর্বনামীয় বিশেষণ) (৩) স্বীয় সম্পত্তি দেশবন্ধু দেশের কাজে সমৰ্পণ করিলেন। (সর্বনামীয় বিশেষণ)

(ঠ) তদ্ধিতান্ত বিশেষণ : বিশেষ্য শব্দের উত্তর তদ্ধিত-প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণপদকে তদ্ধিতান্ত বিশেষণ বলে। শহুরে জীবনে তহবিল অতি রিক্ত বলেই আর্থনীতিক সমস্যাও অতিরিক্ত। শরৎচন্দ্র, প্রভাতকুমার ও বিভূতিভূষণ প্রায় সামসময়িক শিল্পী। জমিদারী চাল আমাদের কাছে চালিও না। শকুন্তলা ভারতীয় কবির ধ্যানের সৃষ্টি। একলব্যের ঐকান্তিকী ভক্তিতে মৃন্ময় গুরুমূর্তি চিন্ময় হয়ে উঠত। সেইরূপ পঙ্কিল পল্বল, জলীয় বাষ্প, মেঠো সুর, বৈঠকী মেজাজ, বাদশাহী কায়দা, ঐতিহাসিক সত্য, দার্শনিক তত্ত্ব, ভৌগোলিক তথ্য, দৈনন্দিন জীবন, পুষ্পিত বাণী, মুখর হাত, স্নেহময় স্পর্শ, “আঙ্কিক হৃৎকম্প”, “পাটনাই বুট”। এই ধরনের বিশেষণটিকে বিশেষ্যজাত বিশেষণও বলে। সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ তদ্ধিতান্ত বিশেষণেরই একটি অঙ্গ।

(ড) কৃদন্ত বিশেষণ : ধাতুর উত্তর কৃৎ-প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণপদকে কৃদন্ত বিশেষণ বলে। চলন্ত গাড়ি থেকে নামতে নেই। অজানা লোককে বাড়িতে ঠাঁই দিও না। “বৈশাখের প্রশান্ত প্রভাত।” সেইরূপ পতিত জমি, বাড়ন্ত চেহারা, ফুল্ল পল্লব, মুগ্ধ আশা, জীবন্ত স্মৃতি। এই ধরনের বিশেষণকে ক্রিয়াজাত বিশেষণও বলে।

ক্রিয়াপদও নামবিশেষণ-রূপে ব্যবহৃত হয়। গেল (গত অর্থে সাধারণ অতীতকালের প্রথমপুরুষেরা ক্রিয়া) বছরে দিল্লিতে আপনার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। আসছে (আগামী অর্থে ঘটমান বর্তমানকালের প্রথম পুরুষের ক্রিয়া) মঙ্গলবার তাঁর এখানে আসার কথা। এমন খাইয়ে (খাওয়াইয়া অসমাপিকা ক্রিয়ার সকল পুরুষের চলিত রূপ) লোককে খাইয়েও আনন্দ আছে। এইপ্রকার বিশেষণকেও ক্রিয়াজাত বিশেষণ বলে।

(ঢ) বীপ্সামূলক বিশেষণ : ক্রিয়াজাত কোনো বিশেষণ একই সঙ্গে দুই র ব্যবহৃত হইলে তাহাকে বীপ্সামূলক বিশেষণ বলে। কাঁদোকাঁদো মুখে ছেলেটা চলে গেল। “নিবুনিবু প্রদীপ আশার জ্বেলে কেন দিলে আবার।” সেইরূপ উড়ুউড়ু মন, ডুবোডুবো অবস্থা, পালাই পালাই সাধ, পড়োপড়ো বাড়ি।

(ণ) অব্যয়জাত বিশেষণ : কোনো অব্যয় নিজেই যখন বিশেষণের কাজ করে অথবা অব্যয় হইতে জাত বিশেষণ অন্য কোনো পদকে বিশেষিত করে, তখন তাহাকে অব্যয়জাত বিশেষণ বলে। সকল চাকুরেই কি আর উপরি পাওনার প্রত্যাশা করেন? আচ্ছা ঝামেলা বাধালে দেখছি! হঠাৎ-বাবুর দল ভদ্রতার ধার ধারে না। আর (গত অর্থে) বছরে ধানটা ভালোই ফলেছিল। সেইরূপ আকস্মিক আবির্ভাব, তদানীন্তন শাসনকর্তা, তত্রত্য আদব-কায়দা।

(ত) ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ : ধ্বন্যাত্মক অব্যয় যখন বিশেষ্যপদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে, তখন তাহাকে ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ বলে। গনগনে আঁচে মাংস বসাতে নেই। “নড়বড়ে পাতার কুটিরে।” সেইরূপ চনচনে খিদে, কনকনে শীত, ঝরঝরে লেখা, ঝিরঝিরে হাওয়া, ফুরফুরে বাতাস, দগদগে ঘা, ভ্যানভেনে মাছি, প্যানপেনে কান্না, থমথমে ভাব।

বিশেষ্যপদও অনেক সময় বিশেষ্যের বিশেষণ-রূপে ব্যবহৃত হয়। মহাত্মাজী জীবনে মিথ্যা বলেন নাই (বি)। মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ (বিণ)। গঙ্গায় লক্ষ পাপ ক্ষয় করে (বি)। পাপ কার্যে হস্তক্ষেপ করিও না (বিণ)। রবীন্দ্রনাথ সত্য শিব ও সুন্দরের পূজারী (বি)। “সত্য বার্তা শিশুতেই জানে” (বিণ)। তার নেশার ঘোর (বি) এখনো কাটেনি। ঘনঘোর (বিণ) নিশীথিনী। আমার জীবনের সব ভালোমন্দ তোমাকেই সমর্পণ করলাম (বি)। দুর্বৃত্তকে ভালো কথা বললেও মন্দ লাগে (বিণ)। তাজমহল পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি (বি)। এমন আশ্চর্য মানুষ জীবনে দেখিনি (বিণ)। কোনোকিছুরই বেশি ভালো নয় (বি)। সে এখানে বেশী দিনের জন্যে আসেনি (বিণ)। “গুরু-কাছে (বি) লব গুরু (বিণ) দুখ।” সেই সভায় দেশপ্রীতিমূলক গীত (বি) সুগীত (বিণ—অ-কারান্ত উচ্চারণ) হইত। তোমাদের সকলের শুভ হোক (বি)। যাত্রা করবার এই তো শুভ ক্ষণ (বিণ)। আজকের শিশুরাই তো জাতির ভবিষ্যৎ (বি)। ভবিষ্যৎ (বিণ) কাল ক্ষণপরেই তো বর্তমান হয়ে পড়ে। “চন্দনকে ঘসিয়া ঘসিয়া তাহার দারুত্ব লোপ করিবেন, সবটুকু সুরভিসার (বি) হইয়া উঠিবে।”—মোহিতলাল। “সেই রসকেই সুরভি (বিণ) করিয়া তাহাতে একটি দিব্যস্বাদ দান করিয়াছে।”—মোহিতলাল।

বিশেষণপদও তেমনি অনেক স্থলে সমগ্রতা বুঝাইতে বিশেষ্যের অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় বিশেষণপদের বিভক্তি সাধারণতঃ শূন্য অবস্থায় থাকে। কিন্তু বিশেষণপদ বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হইলে তাহাতে কখনও বিভক্তির যোগ হয়, কখনও-বা তাহা বিভক্তিশূন্য অবস্থাতেই থাকে। “নীচ যদি উচ্চ ভাষে, সুবুদ্ধি উড়ায় হেসে।” “নরকেও সুন্দর আছে, কিন্তু সুন্দরকে কেউ সেখানে বুঝতেই পারে না।” “প্রাচীন কহিলেন, ‘কেনারায় পড়! “ “আমি রব নিষ্ফলের হতাশের দলে।” “অদ্যাবধি ভূতপূর্ব বিসর্জন দিলাম।” “সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য।” “উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে।” কবিকে হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করতে হয়। লক্ষ লক্ষ দরিদ্রের মুখের গ্রাসে তৈরী হয় মুষ্টিমেয় ধনীর রাজভোগ। পৃথিবী কোনোদিনই নির্বোধদের জন্যে নয়। বারো থেকে দশ বিয়োগ কর। সেইরূপ তৃতীয়ার চাঁদ, ষষ্ঠীর বোধন, একাদশীর উপবাস, “নিরুপায় অনাথের অন্তিমের ডাক” ইত্যাদি।

১০২। বিধেয় বিশেষণ : বাক্যের বিধেয় অংশে বসিয়া যে বিশেষণ বাক্যের উদ্দেশ্য অংশে অবস্থিত কোনো বিশেষ্যকে বিশেষিত করে, সেই বিশেষণকে বিধেয় বিশেষণ বলে। বিধেয় বিশেষণের পরে আর কোনো বিশেষ্যপদ থাকিবে না।

লাবণ্য বেশ লক্ষ্মীবন্ত (‘লাবণ্য’ পদের বিশেষণ)। কলকাতার জলবায়ু স্বাস্থ্যপ্রদ নয় (‘জলবায়ু’র বিশেষণ)। “বসুন্ধরা বীরভোগ্যা, না তদবির-ভোগ্যা?” “আঁধার হল মাদার-গাছের তলা।” (“তলা’র বিশেষণ) “নিখিলের আলো কালো হল আজ ওদের বিষোদ্‌গারে।”—’বিধিচক্র’। শিশুরা নিত্যকালের মশালচী।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বঙ্গভাষার জনক।—এই উদাহরণটি লক্ষ্য কর। জনক পদটি বিশেষ্য, কিন্তু এখানে ‘বিদ্যাসাগর’ পদটির বিধেয় বিশেষণ হইয়াছে। অনুরূপ আরও কয়েকটি উদাহরণ দেখ : “তুমি যেন অমরার দূর্বা আর ধান!” (দুইটি বিশেষ্যই ‘তুমি’’ সর্বনামের বিধেয় বিশেষণ হইয়াছে) “মায়ের কোলটি খোকার রাজ্য।” সমগ্র বেদটি একখানি গ্রন্থ। “গদাধর যেন চিরন্তন সুপ্রভাত।” শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্তের মূর্ত প্রতীক। “জননীই সমস্ত ব্যথাবেদনার বিশল্যকরণী।” “মঙ্গলা আমার বিষ্ণুপদ, প্রসন্ন আমার ভগীরথ।” (প্রথমটি ‘মঙ্গলা’কে এবং দ্বিতীয়টি ‘প্রসন্ন’কে বিশেষিত করিতেছে) “রঞ্জন বিধাতার সেই হাসি।” মানুষ ঈশ্বরের প্রতিভাস।

বিধেয় বিশেষণ এবং তাহার দ্বারা বিশেষিত বিশেষ্য সকর্মিকা ক্রিয়ার কর্ম হইলে সেই বিশেষ্যকে উদ্দেশ্য কর্ম ও বিশেষণটিকে বিধেয় কর্ম বলা হয়। (ক) পিতামাতাকে প্রত্যক্ষ দেবতা জানিবে। (পিতামাতাকে উদ্দেশ্য কর্ম, প্রত্যক্ষ দেবতা~বিধেয় কর্ম)। (খ) আমরা কর্ণকে মহাভারতীয় বীরগণেব মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করি। (কর্ণকে—উদ্দেশ্য কর্ম, শ্রেষ্ঠ—বিধেয় কর্ম)। (গ) জাদুকর দুধকে লাল করিয়া দিলেন। (দুধকে—উদ্দেশ্য কর্ম, লাল—বিধেয় কর্ম)।

ক্রিয়ার বিশেষণ

লেখাটা তাড়াতাড়ি সেরে নাও। মধুছন্দা মধুর গায়। এখন কী করবে, বল। ওখানে যেয়ো না!—

উদ্ধৃত উদাহরণগুলি লক্ষ্য কর। “সেরে নাও” ক্রিয়াটি কীরূপভাবে হইবে?—”তাড়াতাড়ি”। অতএব “তাড়াতাড়ি” পদটি “সেরে নাও” ক্রিয়াটিকে বিশেষিত করিতেছে। সেইরূপ “মধুর” পদটি “গায়” ক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হয়, তাহা জানাইয়া দিতেছে। “এখন” পদটি “করা” ক্রিয়ার সময়নির্দেশ করিতেছে। শেষ বাক্যে “যাওয়া” কাজটি কোথায় নিষিদ্ধ তাহা “ওখানে” পদটির দ্বারা জানা যাইতেছে। অতএব তাড়াতাড়ি, মধুর, এখন, ওখানে পদগুলি ক্রিয়াকে বিশেষিত করিতেছে বলিয়া ক্রিয়ার বিশেষণ।

১০৩। ক্রিয়ার বিশেষণ : কোনো ক্রিয়া কী অবস্থায় কোথায় কখন কীরূপে সম্পন্ন হয়, যে বিশেষণপদ তাহা জানাইয়া দেয় তাহাকে ক্রিয়ার বিশেষণ বলে।

ক্রিয়ার বিশেষণ ক্লীবলিঙ্গ একবচনান্ত হয়। সাধারণতঃ ইহা শূন্যবিভক্তিতে থাকে। তবে বিশেষ্যপদ যখন ক্রিয়ার বিশেষণ-রূপে ব্যবহৃত হয় তখন উহা “এ” বিভক্তিচিহ্ন গ্রহণ করে। “সুখে আছে সর্বচরাচর।” “যতনে হৃদয়ে রেখো আদরিণী শ্যামা মাকে।”

(ক) অবস্থাবাচকঃ “বিষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর।” বিদেশ-বিভুঁই, সাবধানে থাকিস বাবা। “হাসিয়া বসন্তসহ করে চুপে মধুর আলাপ।” “আরম্ভিলা তারস্বরে চতুর্বেদগান।” “ত্বরিতে আসন ছাড়ি সসম্ভ্রমে নোয়াইয়া শির।” “উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে।” “সচকিতে চাহিলা পশ্চাতে।” চমৎকার মানিয়েছে কিন্তু। প্রশ্নটি সহজেই মীমাংসা করা যায় কি ?

(খ) কালবাচক : সর্বদা সত্য কথা বলিও। ইস্কুলে আসিবামাত্র ঘণ্টা পড়িল। আজকাল তুমি যে কখন কোথায় থাক, বোঝাই দায়। “একদা যাহার বিজয়সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয়।” “এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।”

(গ) স্থানবাচক : সিংহাসন তোমার যোগ্য স্থান নয়, নীচে নেমে এস শয়তান। “পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” কোথায় এসেছি, যাব যে কোথায়—বুঝিতে পারি না কিছু। “হেথায় হোথায় পাগলের প্রায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায়।” গাভীগুলি ইতস্ততঃ চরিতেছে।

ক্রিয়াবিশেষণের গঠন-বৈচিত্র্য লক্ষ্য কর।—

(১) বিভক্তিশূন্য : পরশু আসছেন নিশ্চয়। আপনি কি আজই যাবেন? “শীঘ্র আসি নায়ে চড়।” রসগোল্লাগুলো টপাটপ গালে ফেল আর গপাগপ গিলে ফেল। একতারাটা গাবগুবাগুব বেজেই চলেছে। এভাবে এগুলে নির্ঘাত মারা পড়বেন।

(২) বিভক্তিচিহ্নযুক্ত : বিনোবাজী পদব্রজেই সাগরদ্বীপ চললেন। “রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে।” “নদীতীরে বৃন্দাবনে সনাতন একমনে জপিছেন নাম।” “পতঙ্গ যে রঙ্গে ধায়।” বড়ো বড়ো পণ্ডিতে যা পারেননি, এতটুকু শিশু অনায়াসে তার সমাধান করল। নলটা আড়ভাবে ধর।

(৩) অসমাপিকা ক্রিয়াযুক্ত : “মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন।” “এমন করে কি মরণের পানে ছুটিয়া চলিতে আছে!” কথাটা শুনিবামাত্র হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলাম। যা বলবে চেঁচিয়ে বল। ভার যখন নিয়েছ, পরের কাজ হলেও ভালো করে করবে। “পাটের ডগা লকলকিয়ে ওঠে।” ছোট্ট তরী টলমলিয়ে চলে। লোকটা হনহনিয়ে রনরনিয়ে চলে গেল।

(৪) বীপ্সায় (একই পদ বা শব্দের পুনরাবৃত্তিতে) : “ধীরে ধীরে মিশে কাল অনন্তের কোলে।” নেচে নেচে চলে নদীয়ার গোরা কেঁদে কেঁদে সবে নাম বিলায়। এখন থেকে ধরে ধরে লেখ, লেখা ফিরে যাবে। “আসে গুটিগুটি বৈয়াকরণ।” “গরবিনী হেসে হেসে আড়ে আড়ে চায়।” মধুপের দল চুপে চুপে আসি নীপে কী যে কথা কয়ে যায়! ললাটের স্বেদ ঝরিছে বিন্দু বিন্দ ছেলেটা ঘুমন্ত অবস্থায় এখনও থেকে থেকে ককিয়ে ওঠে।

(৫) প্রত্যয়যুক্ত : ক্রমশঃ অগ্রসর হও। আমিষ ও নিরামিষ যেন একত্র রাখিও না।

ক্রিয়ার বিশেষণ মাঝে মাঝে নাম-বিশেষণ-রূপেও ব্যবহৃত হয়। একদিন তাঁর এখন-তখন (মুমূর্ষু অর্থে) অবস্থা গেছে।

এমন ভরদুপুরে মাঠে চলেছ? বিকালে হাটে যাচ্ছি না। এখানে ভরদুপুরে ও বিকালে বিশেষ্যপদ—কালবাচক অধিকরণ, ক্রিয়াবিশেষণ নয়। সেইরূপ মাঠে ও হাটে বিশেষ্যপদ—উদ্দেশ বুঝাইতে উপ-কারক পদ, ক্রিয়াবিশেষণ নয়।

বিশেষণের বিশেষণ

কনক বেশ বুদ্ধিমতী মেয়ে। এত জোরে হাঁটতে আর পারছি না, মা। স্লেট—খাক সামান্য একটু কাত করে ধর।

আমাদের দেওয়া উদাহরণগুলি লক্ষ্য কর। কনক কেমন মেয়ে?—বুদ্ধিমতী। সুতরাং “বুদ্ধিমতী” পদটি নাম-বিশেষণ। আবার, কী রকম বুদ্ধিমতী?– বেশ। অতএব, “বেশ” পদটি “বুদ্ধিমতী” নাম-বিশেষণটিকে বিশেষিত করিতেছে। এইজন্য “বেশ” পদটি হইতেছে বিশেষণের বিশেষণ। দ্বিতীয় উদাহরণে “হাঁটতে” ক্রিয়াটিকে বিশেষিত করিতেছে বলিয়া “জোরে” পদটি ক্রিয়ার বিশেষণ। আবার, কী রকম জোরে?—এত। অতএব, “এত” পদটি “জোরে” ক্রিয়াবিশেষণটির প্রকৃতি বুঝাইয়া দিতেছে। সেইজন্য “এত” পদটিও বিশেষণের বিশেষণ। শেষ উদাহরণে “কাত করে” পদটি ক্রিয়ার বিশেষণ। “একটু” পদটি “কাত করে” ক্রিয়াবিশেষণটিকে বিশেষিত করিতেছে বলিয়া ইহা বিশেষণের বিশেষণ। আবার, কী রকম একটু কাত করে?—”সামান্য” একটু কাত করে। অতএব সামান্য পদটি “একটু” বিশেষণের বিশেষণটিকে আরও বিশেষিত করিতেছে। এজন্য “সামান্য” পদটি বিশেষণের বিশেষণ।

১০৪। বিশেষণের বিশেষণ : যে পদ নাম-বিশেষণের বা ক্রিয়াবিশেষণের গুণ, অবস্থা, প্রকার ইত্যাদি প্রকাশ করে তাহাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। বিশেষণের বিশেষণ যে পদটিকে বিশেষিত করে তাহার পূর্বে বসে।

আরও উদাহরণ—তাঁর জন্য ধবধবে সাদা বিছানা, আর তুলতুলে নরম বালিশ ব্যবস্থা করো। একটা কুচকুচে কালো কুকুরছানা আমার চাই-ই। অবিরাম ধড়ফড়িয়েই প্রাণটা গেল। কী প্রচণ্ড গরম পড়েছে (সর্বনামীয় বিশেষণের বিশেষণ)! আমরা দেখিলাম, বিশেষণপদ (নাম-বিশেষণই হউক আর ক্রিয়ার বিশেষণই হউক) বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে। অব্যয়পদকে বিশেষিত করে এমন বিশেষণও দেখা যায়।—তোমার একটু পরেই আমি এসেছি। আমাদের মাথার ঠিক উপরেই উড়ছিল একঝাঁক মশা। এখানে একটু ও ঠিক বিশেষণ দুইটি যথাক্রমে “পরেই” ও “উপরেই” অব্যয় দুইটিকে বিশেষিত করিতেছে। এইজন্য “একটু” ও “ঠিক” অব্যয়ের বিশেষণ।

১০৫। অব্যয়ের বিশেষণ : যে বিশেষণপদ অব্যয়পদকে বিশেষিত করে তাহাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে।

সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক বিশেষণ (Cardinals and Ordinals)

১০৬। সংখ্যাবাচক বিশেষণঃ যে বিশেষণপদ গণনাযোগ্য বিশেষ্যের সংখ্যা নির্দেশ করে, তাহাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে।

এক হইতে আরম্ভ করিয়া কোটি-অর্বুদের মধ্য দিয়া পরার্ধ পর্যন্ত গণনার রীতি সংস্কৃতে পাওয়া যায়। বাংলায় আমরা কোটিকেই বৃহত্তম সংখ্যা হিসাবে ধরি। তাহার বেশী গণনা করিতে দশ কোটি, পাঁচশ কোটি, হাজার কোটি বলিয়া নির্দেশ করি। অবশ্য বাংলায় অযূত ও নিযূতের প্রচলন বড়ো-একটা নাই। অযুতের স্থলে দশ হাজার, আর নিযুতের স্থলে দশ লক্ষ বলা হয়।

সংখ্যাবাচক বিশেষণের এক হইতেছে একবচন, তাহার অধিক যেকোনো সংখ্যা বা যেকোনো ভগ্নাংশ বহুবচন। “এক চন্দ্ৰ আলো করে জগৎ-সংসার।” সপ্তকোটি-কণ্ঠকলকলনিনাদকরালে, দ্বিসপ্তকোটিভুজৈধৃতখর-করবালে।” “ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী।” “আজি হতে শতবর্ষ পরে।” সগর রাজার ষাট হাজার ছেলে। সাড়ে আট ঘণ্টার কাজ। “আদিম মহাভারতে চতুর্বিংশতি সহস্র মাত্র শ্লোক ছিল।”—বঙ্কিমচন্দ্র। “পঞ্চদশ বর্ষ গত।” “ত্রয়োদশ বসন্তের একগাছি মালা।” “দশ হাজার প্রাণ আমি যদি পেতাম।”

অনেক সময় সংখ্যাবাচক বিশেষণের উত্তর টি, টা, খানি, খানা, খান, গাছি, গাছা, গাছ ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক যোগ করা হয়। “একখানি ছোটো ক্ষেত।” “তিনখানা দিলে একখানা রাখে।” দশ-দশটা টাকা হারিয়ে ফেললি!

সংখ্যাবাচক বিশেষণপদ বিশেষ্যরূপেও ব্যবহৃত হয়। “দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।” “হাজারে বেজার নেই, শ’য়ে নেই ভয়।”

১০৭। পূরণবাচক বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্যের কোনো নির্দিষ্ট স্থান প্রকাশ করে তাহাকে পূরণবাচক বা ক্রমবাচক বিশেষণ বলে। পূরণবাচক বিশেষণ বিশেষ্যের ক্রমিক সংখ্যা বুঝায় বলিয়া সর্বত্রই একবচন। ছন্দা আমার দ্বিতীয়া কন্যা। অলোক এবার পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে কিছু কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক।

সংখ্যাবাচক শব্দ ও পূরণবাচক শব্দের পার্থক্যটি মনে রাখিও। সংখ্যাবাচক শব্দে সমষ্টি বুঝায়, কিন্তু পূরণবাচক শব্দে নির্দিষ্ট একটি স্থানই বুঝায়। (ক) দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র অশ্বত্থামার হস্তে নিহত হয়। (পাঁচজনের সকলেই) (খ) অনশনের আজ পঞ্চম দিবস। (চার দিনের পরের দিন—একটি নির্দিষ্ট দিন)

“বাংলা ভাষায় নিজস্ব সংখ্যাবাচক শব্দ আছে, কিন্তু পূরণবাচক শব্দ সংস্কৃত হইতে লইতে হয়।” ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য সংস্কৃত সংখ্যাবাচক শব্দ ও বন্ধনীমধ্যে সংস্কৃত পূরণবাচক শব্দের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হইল।

এক হইতে দশ পর্যন্ত : এক (প্রথম), দ্বি (দ্বিতীয়), ত্রি (তৃতীয়), চতুঃ (চতুর্থ), পঞ্চ (পঞ্চম), ষট্ (ষষ্ঠ), সপ্ত (সপ্তম), অষ্ট (অষ্টম), নব (নবম), দশ (দশম)।

এগারো হইতে আঠারো পর্যন্ত : একাদশ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ, পঞ্চদশ, ষোড়শ (ষষ্ঠদশ ব্যাকরণসিদ্ধ নয়) সপ্তদশ, অষ্টাদশ—সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক শব্দ একই আকারের।

উনিশ হইতে আটাশ পর্যন্ত (সংখ্যাবাচক শব্দের শেষস্থ ‘তি’ লোপ করিতে হয় অথবা শব্দটির সঙ্গে ‘তম’ যোগ করিতে হয়); ঊনবিংশতি (ঊনবিংশ, ঊনবিংশতিতম), বিংশতি (বিংশ, বিংশতিতম), একবিংশতি (একবিংশ, একবিংশতিতম), দ্বাবিংশতি (দ্বাবিংশ, দ্বাবিংশতিতম), ত্রয়োবিংশতি (ত্রয়োবিংশ, ত্রয়োবিংশতিতম), চতুর্বিংশতি (চতুর্বিংশ,—তিতম), পঞ্চবিংশতি (পঞ্চবিংশ,—তিতম), ষড়বিংশতি (ষড়বিংশ,—তিতম), সপ্তবিংশতি (সপ্তবিংশ,—তিতম), অষ্টাবিংশতি (অষ্টাবিংশ,—তিতম)।

ঊনত্রিশ হইতে আটচল্লিশ পর্যন্ত (সংখ্যাবাচক শব্দের শেষস্থ ‘ৎ’ লোপ পায় অথবা শব্দটির সঙ্গে ‘তম’ যোগ হয়) : ঊনত্রিংশৎ (ঊনত্রিংশ,—শত্তম), ত্রিংশৎ (ত্রিংশ,—শত্তম), ত্রয়স্ত্রিংশৎ (ত্রয়স্ত্রিংশ,—শত্তম), চতুস্ত্রিংশৎ (চতুস্ত্রিংশ,—শত্তম), অষ্টাত্রিংশৎ (অষ্টাত্রিংশ,—শত্তম), ঊনচত্বারিংশৎ (ঊনচত্বারিংশ,—শত্তম), চত্বারিংশৎ (চত্বারিংশ,—শত্তম), দ্বিচত্বারিংশৎ বা দ্বাচত্বারিংশৎ (দ্বি-, দ্বাচত্বারিংশ,—শত্তম), অষ্টা-, অষ্টচত্বারিংশৎ (অষ্টা-, অষ্টচত্বারিংশ,—শত্তম)।

ঊনপঞ্চাশ হইতে শত পর্যন্ত (সংখ্যাবাচক শব্দে ‘তম’ যোগ হয়) : ঊনপঞ্চাশৎ (ঊনপঞ্চাশত্তম), পঞ্চাশৎ (পঞ্চাশত্তম), অষ্টা-, অষ্টপঞ্চাশৎ‍ (অষ্টা-, অষ্টপঞ্চাশত্তম), ঊনষষ্টি (ঊনষষ্টিতম), ষষ্টি (ষষ্টিতম), ত্রি-, ত্রয়ঃষষ্টি (ত্রি-, ত্রয়ঃষষ্টিতম), সপ্ততি (সপ্ততিতম), অষ্টা-, অষ্টসপ্ততি (অষ্টা-, অষ্টসপ্ততিতম), ঊনাশীতি (ঊনাশীতিতম), দ্ব্যশীতি (দ্ব্যশীতিতম), ত্র্যশীতি (শীতিতম), চতুরশীতি (চতুরশীতিতম), অষ্টাশীতি (অষ্টাশীতিতম), ঊননবতি (ঊননবতিতম), দ্বিনবতি বা দ্বানবতি (দ্বি-, দ্বানবতিতম), যগ্নবতি (ষগ্নবতিতম), অষ্টানবতি (অষ্টানবতিতম), নবনবতি বা ঊনশত (নবনবতিতম বা ঊনশততম), শত (শততম)।

সংস্কৃত পূরণবাচক শব্দগুলির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়—এই তিনটির উত্তর ‘আ’ প্রত্যয়যোগে এবং অষ্টাদশ পর্যন্ত অবশিষ্টগুলির উত্তর ‘ঈ’ প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গ করা হয়।—প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, অষ্টমী, একাদশী, পঞ্চদশী, ষোড়শী ইত্যাদি।

দ্বিতীয়া হইতে চতুর্দশী পর্যন্ত শব্দে তিথিও বুঝায় : “সপ্তমী অষ্টমী গেল, নিষ্ঠুর নবমী এল।” “কহিলা কাতরে নবমীর নিশাশেষে গিরীশের রানী।” মধুকবি। “চতুর্দশী তিথি।….. আজ রাত্রে পথে লোক বাহির হওয়া নিষেধ।” চতুর্দশী হইতে অষ্টাদশী পর্যন্ত শব্দে ক্রমও বুঝায় এবং সেই সেই বয়সের কিশোরী বা তরুণীও বুঝায়। সপ্তদশী তন্বী, ষোড়শী তরুণী।

সংস্কৃত সংখ্যাবাচক এবং পূরণবাচক শব্দগুলির উচ্চারণ ও বানান বেশ কষ্টসাপেক্ষ বলিয়া বাংলা ভাষার প্রকৃতি সংখ্যাবাচক শব্দগুলিকে যেমন দুই, পাঁচ, এগারো, পনরো, আঠারো, পঁচিশ, ঊনষাট প্রভৃতি সহজ রূপ দিয়াছে, তেমনি খাঁটী বাংলা সংখ্যাবাচক এইসব শব্দেরই উত্তর সম্বন্ধপদের বিভক্তি “র” যোগ করিয়া বাংলা পূরণবাচক শব্দেরও সহজ রূপ সৃষ্টি করিয়াছে। পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ, দ্বাত্রিংশ অধ্যায়, অষ্টাবিংশ অনুচ্ছেদ ইত্যাদি যেমন বলি, পনরোর পরিচ্ছেদ, বত্রিশের অধ্যায়, আটাশের অনুচ্ছেদও তেমনি বুঝি। অনেক সময় বিভক্তিচিহ্নটির লোপও করিয়া দিই—অমুক বইয়ের বিয়াল্লিশ পৃষ্ঠায় দেখুন। বিশেষণ-সম্বন্ধে প্রাথমিক আলোচনা বইখানির পঁচাশি পাতায় আছে। তিনি আগে ছিলেন তিন তলার (তৃতীয় অর্থে) একুশ নম্বর (একবিংশ অর্থে) ঘরে, এখন আছেন পাঁচ তলার (পঞ্চম) ঊনপঞ্চাশ নম্বর (ঊনপঞ্চাশত্তম অর্থে) ঘরে।

মাসের তারিখ বুঝাইতে আমরা খাঁটী বাংলা পূরণবাচক শব্দ ব্যবহার করি—পহেলা (পয়লা), দোসরা, চৌঠা (চৌঠো), পাঁচই, বারোই, চোদ্দই, উনিশে, তিরিশে, বত্তিরিশে ইত্যাদি। আবার ‘তারিখ’ শব্দটি যুক্ত থাকিলে সাধারণ সংখ্যাবাচক শব্দই যথেষ্ট। আপনার ওখানে ষোল তারিখে যাচ্ছি।

পয়লা দোসরা প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ তারিখ ছাড়া অন্য অর্থেও প্রয়োগ করি।—লোকটা পয়লা নম্বরের বদমাস। শুধু পয়লা ফর্মাটাই ভালো করে ছাপবেন, তা নয়। এখানে সুবিধা হবে না, দোসরা জায়গায় দেখুন।

বিশেষণের তারতম্য

(ক) প্রশ্নটি কঠিন বইকি। (খ) পঞ্চম অপেক্ষা সপ্তম প্রশ্নটি কঠিনতর। (গ) নবম প্রশ্নটি কঠিনতম।

উপরে প্রদত্ত (ক)-চিহ্নিত বাক্যে একটিমাত্র প্রশ্ন-সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ করা হইতেছে। সেজন্য ‘কঠিন’ বিশেষণপদটি নিজরূপেই ব্যবহৃত হইয়াছে। কিন্তু (খ)-চিহ্নিত বাক্যে পঞ্চম ও সপ্তম দুইটি প্রশ্নের মধ্যে তুলনা করা হইয়াছে বলিয়া ‘কঠিন’ বিশেষণটির উত্তর ‘তর’ প্রত্যয় যোগ করিয়া ‘কঠিনতর’ করিতে হইয়াছে। আবার (গ)-চিহ্নিত বাক্যে দুইয়ের বেশী প্রশ্নের মধ্যে তুলনা করা হইয়াছে বলিয়া ‘কঠিন’ বিশেষণটির উত্তর ‘তম’ প্রত্যয় যোগ করিয়া ‘কঠিনতম’ করিতে হইয়াছে। এখানে দেখিলে যে (খ)-চিহ্নিত বাক্যে কঠিনতর এবং (গ)-চিহ্নিত বাক্যে কঠিনতম বিশেষণ দুইটির মধ্য দিয়াই প্রশ্নগুলির মধ্যে তুলনা করা হইয়াছে। বিশেষণের সাহায্যে এইরূপ তুলনাকে বিশেষণের তারতম্য বলে।

১০৮। বিশেষণের তারতম্য : বিশেষণের সাহায্যে দুই বা দুইয়ের বেশী ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে গুণ অবস্থা বা পরিমাণগত তুলনা করাকে বিশেষণের তারতম্য বলে।

তারতম্য প্রকাশ করিতে হইলে বিশেষণপদটির কিছু পরিবর্তন হয়। দুইয়ের মধ্যে তুলনায় তৎসম শব্দে সাধারণতঃ তর এবং দুইটির বেশী ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে তুলনায় তম যুক্ত হয়। বিশেষণের মধ্য দিয়া তর-তম ভাবটি প্রকাশ পায় বলিয়া এইরূপ তুলনাকে বিশেষণের তারতম্য বলে। তারতম্য-দ্বারা দুই বা বহুর মধ্যে একটির উৎকর্ষ বা অপকর্ষ দেখানো হয়।

বিশেষণের তারতম্যের কয়েকটি উদাহরণ দেখ : “সকল গুণে গরীয়সী তুলনা যার নাই, সে আমাদের জন্মভূমি বঙ্গভূমি ভাই।” পাঁচ অঙ্কের ক্ষুদ্রতম সংখ্যা দশ হাজার, আর চার অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যা ন হাজার ন শত নিরানব্বই। সমকোণী ত্রিভুজে সমকোণের বিপরীত বাহুটি দীর্ঘতম। শিক্ষকদের মধ্যে অক্ষয়বাবুই প্রবীণতম। এভারেস্ট হিমালয়ের উচ্চতম শৃঙ্গ। “নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে।” (এখানে সাধারণ বিশেষণটিই তারতম্য প্রকাশ করিতেছে) “জননী ও জন্মভূমি স্বর্গাপেক্ষা গরীয়সী”। “অনিমিত্তা ভক্তি সিদ্ধির থেকে মুক্তির থেকে গরীয়সী।”

তর, তম ও ইষ্ঠ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে আ এবং ঈয়স্-যুক্ত শব্দে ঈ যোগ করিয়া স্ত্রীবাচক শব্দ পাওয়া যায়।

তারতম্য প্রকাশ করিতে তৎসম বিশেষণের কী রূপান্তর ঘটে তাহা জানা দরকার। নীচে তর-তম-যুক্ত কয়েকটি পদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হইল।—

মূল শব্দতর-যুক্ততম-যুক্ত
ক্ষুদ্রক্ষুদ্রতরক্ষুদ্রতম
প্রিয়প্রিয়তরপ্রিয়তম
বৃহৎবৃহত্তরবৃহত্তম
মিষ্টমিষ্টতরমিষ্টতম
গভীরগভীরতরগভীরতম
তিক্ততিক্ততরতিক্ততম
উজ্জ্বলউজ্জ্বলতরউজ্জ্বলতম
স্বাদুস্বাদুতরস্বাদুতম
উচ্চউচ্চতরউচ্চতম
হীনহীনতরহীনতম
দরিদ্রদরিদ্রতরদরিদ্রতম
সুন্দরসুন্দরতরসুন্দরতম

নিম্ন, তীক্ষ্ণ, ম্লান, দীর্ঘ, সহজ প্রভৃতি বিশেষণপদের তারতম্য এইভাবে দেখানো হয়।

যে-সমস্ত তৎসম বিশেষণে দুইয়ের মধ্যে তুলনায় ঈয়স্ প্রত্যয় এবং বহুর মধ্যে তুলনায় ইষ্ঠ প্রত্যয় যোগ হয়, তাহাদের কয়েকটির দৃষ্টান্ত দেওয়া হইল।—

মূল শব্দঈয়স্-যুক্তইষ্ঠ-যুক্ত
বহুভূয়ান্ভূয়িষ্ঠ
প্ৰশস্যশ্রেয়ান্শ্রেষ্ঠ
উরুবরীয়ানবরিষ্ঠ
বলীবলীয়ান্বলিষ্ঠ
পাপীপাপীয়ান্‌পাপিষ্ঠ
বৃদ্ধজ্যায়ান্
বর্ষীয়ান
জ্যেষ্ঠ
বর্ষিষ্ঠ
যুবা
অল্প
যবীয়ান
কনীয়ান্‌
যবিষ্ঠ
কনিষ্ঠ
দীর্ঘদ্ৰাঘীয়ান্দ্রাঘিষ্ঠ

কয়েকটি বিশেষণে তর ও ঈয়স্ এবং তম ও ইষ্ঠ দুইপ্রকার প্রত্যয়ই যুক্ত হয়।—

মূল শব্দতর ও ঈয়স্-যুক্ততম ও ইষ্ঠ-যুক্ত
গুরুগুরুতর, গরীয়ান্গুরুতম, গরিষ্ঠ
লঘুলঘুতর, লঘীয়ানলঘুতম, লঘিষ্ঠ
পটুপটুতর, পটীয়ান্পটুতম, পটিষ্ঠ
প্রিয়প্রিয়তর, প্রেয়ান্প্রিয়তম, প্রেষ্ঠ
মহৎমহত্তর, মহীয়ান্মহত্তম, মহিষ্ঠ

[ ৪০২-৪০৩ পৃষ্ঠায় তর, তম, ঈয়স্, ইষ্ঠ প্রভৃতি প্রত্যয়ের ব্যবহারবিধি দেখ। ]

তর, তম বা ঈয়স্, ইষ্ঠ প্রত্যয়যুক্ত কয়েকটি বিশেষণ অনেক সময় সাধারণ বিশেষণের মতো ব্যবহৃত হয়; তুলনার কোনো ভাব তাহাতে থাকে না—মাত্ৰ গুণের আধিক্যই প্রকাশ পায়। সমস্যাটি এত গুরুতর যে সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছি না। “নন্দাদেবীকে গরীয়সী রমণীর ন্যায় মনে হইল।” অধমের এই বলিষ্ঠ বাহু দুইটি মাতৃভূমির সম্মানরক্ষায় নিযুক্ত রহিল।

জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বিশেষণদ্বয় বহুর মধ্যে তুলনাতেও যেমন, দুইয়ের মধ্যে তুলনাতেও তেমনি ব্যবহৃত হয়। অমলা আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা, রমলা কনিষ্ঠা। আমরা দুটি ভাই, আমি জ্যেষ্ঠ, রমেশ কনিষ্ঠ।

এইজন্য শ্যামাপদ চক্রবর্তীমহাশয় খুব সঙ্গতভাবেই বলিয়াছেন, “পিতার দুই পুত্র থাকিলেও বড়টিকে জ্যেষ্ঠপুত্র বলাই আমাদের ধারা, কনিষ্ঠকে কনীয়ান্ কস্মিনকালেও বলি না। আমাদের মতে অগ্রজই জ্যেষ্ঠ, অনুজই কনিষ্ঠ—সংখ্যা যাহাই হউক না কেন।”

শ্রেষ্ঠ বিশেষণটি বাংলায় তারতম্যের ভাবটি হারাইয়া ফেলিয়াছে। তাই পদটিকে আমরা সাধারণ বিশেষণ-রূপেই প্রয়োগ করি। তুলনা করিতে হইলে ইহার উত্তর তর ও তম যুক্ত হয়। দরিদ্রের সেবায় অর্থদান নিঃসন্দেহে শ্ৰেষ্ঠ দান। কিন্তু জ্ঞানদান তদপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। আবার আধ্যাত্মিক জ্ঞানদান শ্রেষ্ঠতম দান। (প্রকৃষ্টের অধিকতর প্রকর্ষ বুঝাইলে সংস্কৃতেও double superlative হয়—“যুধিষ্ঠিরঃ শ্রেষ্ঠতমঃ কুরুণাম্”।)

খাঁটী বাংলা রীতির তারতম্য ॥

খাঁটী বাংলায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে উৎকর্ষ-অপকর্ষের মাত্রা বুঝাইতে বিশেষণের উত্তর তুলনামূলক কোনো প্রত্যয় যুক্ত হয় না। কালো, কালোতর, কালোতম, বা ছোটো, ছোটীয়ান্, ছোটিষ্ঠ—এইপ্রকার প্রয়োগ বাংলায় চলে না। বাংলায় তারতম্য-প্রকাশের নিয়মগুলি দেওয়া হইল।—

(১) দুইয়ের মধ্যে তুলনা করিতে হইলে প্রথম ব্যক্তি বা বস্তুর পর অপেক্ষা, চেয়ে, থেকে, হইতে প্রভৃতি অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়। আমার চেয়ে তুমি পরিশ্রমী বইকি। কলিকাতা হইতে দিল্লিতে শীতও বেশী, গ্রীষ্মও বেশী।

(২) দুইটি ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষের মাত্রা বেশী হইলে প্রথম ব্যক্তি বা বস্তুর পর অপেক্ষা, চেয়ে, হইতে, থেকে প্রভৃতি অনুসর্গ বসানো ছাড়াও বিশেষণটির পূর্বে অধিক, অনেক, বেশী, অত্যন্ত, অল্প, কম, একটু, খুব, অনেকটা প্রভৃতি বিশেষণপদ ব্যবহার করিতে হয়। প্রেমাস্পদের চেয়ে প্রেম অনেক বড়ো। লতিকা মনীষা অপেক্ষা কম বুদ্ধিমতী নয়। অমলার চাইতে কমলার গলা অনেক বেশী মিষ্টি। সৌজন্য, না, সৌহার্দ্য—কোনটি বেশী কাম্য? মূর্খ মিত্রের চেয়ে পণ্ডিত শত্রু অনেক ভালো। পরের দুঃখে দুঃখী হওয়া অপেক্ষা পরের সুখে সুখী হওয়া অনেক বেশী শক্ত। “শিল্পীর জগৎ সাধারণ লোকের জগতের চেয়ে অনেক বড়ো, অনেক রহস্যময়, অনেক ঐশ্বর্যবত্তর।” প্রমথনাথ বিশী।

(৩) বহুর মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাইতে হইলে বিশেষণের পূর্বে সব চেয়ে, সব থেকে, সকলের চাইতে, সর্বাপেক্ষা প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। পশুদের মধ্যে হাতিই সব চাইতে বড়ো। মেয়েদের মধ্যে মাধবীই সবার চেয়ে ভালো গায়। জলচর প্রাণীর মধ্যে তিমিই সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। (বিশেষণটি তৎসম হওয়া সত্ত্বেও তম যুক্ত হয় নাই। খাঁটী বাংলা রীতির নিকট তৎসম বিশেষণ আত্মসমর্পণ করিয়াছে।) ভারতীদি সহকারিণীদের মধ্যে সবথেকে প্রবীণা। গেরুয়ার অহংকার সবচেয়ে সর্বনাশা।

লক্ষ্য কর—‘হইতে’ অব্যয়টি কেবল সাধু ভাষায়, চাইতে’ ‘থেকে’ ‘হতে চলিত ভাষায়, এবং ‘অপেক্ষা’ ‘চেয়ে’ ‘সর্বাপেক্ষা’ সাধু ও চলিত উভয় রীতির ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়। নীচের তালিকাটি লক্ষ্য কর।—

মূল শব্দদুইয়ের মধ্যে তুলনায়বহুর মধ্যে তুলনায়
ভালোএকটু ভালোসবচেয়ে ভালো
মন্দআরও মন্দসব চাইতে মন্দ
মোটাঅনেক মোটাসবচেয়ে মোটা
পাতলাকম বা বেশী পাতলাসবচেয়ে (কম/বেশী) পাতলা
বেশীঢের বেশীসব চাইতে বেশী
হালকাকম বা বেশী হালকাসবচেয়ে (কম/বেশী) হালকা

অনুশীলনী

১। সংজ্ঞার্থ বল ও উদাহরণদ্বারা বুঝাইয়া দাও : বিধেয় বিশেষণ, সর্বনামীয় বিশেষণ, পূরণবাচক বিশেষণ, ভাববাচক বিশেষণ, গুণবাচক বিশেষণ, সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ, বহুপদময় বিশেষণ, তদ্ধিতান্ত বিশেষণ, কৃদন্ত বিশেষণ, অব্যয়জাত বিশেষণ, অব্যয়ের বিশেষণ, বিশেষণের বিশেষণ, সংখ্যাবাচক বিশেষণ, বিশেষণের তারতম্য, ক্রিয়াজাত বিশেষণ।

২। উদাহরণদ্বারা বুঝাইয়া দাও : বিধেয় বিশেষণরূপে বিশেষ্যের প্রয়োগ, নাম-বিশেষণরূপে বিশেষ্যের প্রয়োগ, কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণরূপে অসমাপিকা ক্রিয়ার প্রয়োগ, প্রত্যয়যোগে গঠিত ক্রিয়াবিশেষণ, বিভক্তিচিহ্নযুক্ত স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ, বিভক্তিচিহ্নযুক্ত কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ, নাম-বিশেষণরূপে ক্রিয়াপদের প্রয়োগ।

৩। বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া—পাঁচপ্রকার পদেরই বিশেষণ থাকিতে পারে, উদাহরণযোগে বুঝাইয়া দাও।

৪। বিশেষ্য, সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয়পদকে বিশেষণরূপে প্রয়োগ কর।

৫। পার্থক্য দেখাও : সর্বনামীয় বিশেষণ ও সর্বনামের বিশেষণ, অব্যয়ের বিশেষণ ও অব্যয়জাত বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ ও ক্রিয়াজাত বিশেষণ, বিধেয় বিশেষণ ও বিধেয় কর্ম, সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক বিশেষণ।

৬। (ক) বিশেষণের তারতম্য কাহাকে বলে? এই তারতম্য বুঝাইবার বিবিধ উপায় উদাহরণদ্বারা বুঝাইয়া দাও।

(খ) ‘তর’ বা ‘ঈয়স্’ এবং ‘তম’ বা ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয়যুক্ত বিশেষণ তুলনা না বুঝাইয়া সাধারণ বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে এমন চারিটি দৃষ্টান্ত দাও।

(গ) খাঁটী বাংলা বিশেষণপদের তারতম্য বুঝাইবার নিয়মগুলি উদাহরণযোগে বুঝাইয়া দাও।

৭। (ক) পূরণবাচক বিশেষণ কাহাকে বলে? বাংলায় পূরণবাচক বিশেষণ গঠনের উপায়গুলি উদাহরণযোগে বুঝাইয়া দাও। ঊনবিংশতি, ত্রিংশৎ, পঞ্চ, ষট্, দুই, পঞ্চশত—শব্দগুলির পূরণবাচক রূপ নিরূপণ কর।

(খ) চার, চব্বিশ, বত্রিশ, আটাশ, ছাপ্পান্ন—শব্দগুলিকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ ও পূরণবাচক বিশেষণরূপে বাক্যে প্রয়োগ কর। ১২, ১৬, ২০, ২১, ২৮, ৩৬, ৫৯, ৭৮, ৮৫–সংখ্যাগুলির সংস্কৃত সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক রূপ দাও।

(গ) বন্ধনীমধ্যস্থ উপযুক্ত কথাটি নির্বাচন করিয়া তদ্দ্বারা শূন্যস্থানটি পূর্ণ কর :

(i) তাহার বয়স প্রায় ….. বৎসর হইবে। [ পঞ্চবিংশ / পঞ্চবিংশতি ]

(ii) “নদীর এক কূল হস্তের মধ্যগত।” [ পঞ্চাশত্তম / পঞ্চাশৎ

(iii) আমরা শতাব্দীতে পৌঁছে গেছি। [ একবিংশ / একবিংশতি ]

(iv) শতাব্দীটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগের স্বর্ণযুগ। [ ষষ্ঠদশ / ষোড়শ]

৮। পার্থক্য দেখাও : সপ্তম অধ্যায়, সপ্ত অধ্যায়; পঞ্চ কন্যা, পঞ্চমী কন্যা; একাদশ তনয়া, একাদশী তনয়া; পঞ্চ পাণ্ডব, পঞ্চম পাণ্ডব।

৯। বিভিন্ন শ্রেণীর বিশেষণের উল্লেখ করিয়া প্রত্যেকটির উদাহরণ দাও।

১০। গীত, গুরু, ভালো, ঘন, অজ্ঞান, দরিদ্র, শুভ, পুণ্য, মন্দ, পাপ, অথর্ব, অদৃষ্ট, সভ্য, উত্তর, সত্য, মিথ্যা, জোর, অসম্ভব, ভবিষ্যৎ, সুরভি, বন্ধুর, মন্দা, রক্ত, চরম, হলুদ, গরম, কালো—প্রত্যেকটিকে বিশেষ্য ও বিশেষণরূপে ব্যবহার করিয়া পৃথক্ পৃথক্ বাক্যরচনা কর (মোট চুয়ান্নটি বাক্য)।

১১। বিশেষণপদগুলি নির্বাচিত করিয়া কোন্ শ্রেণীর বিশেষণ বল : “মায়ের কোলটি আমার শেষ পৈঠা।” আর্টে রিআলিজম অপেক্ষা আইডিআলিজমের আদর বেশী। “লোকটা হচ্ছে লম্বমান শ্মশ্রুল গোসাঁইটির ব্যক্তিগত ভৃত্য।” “উদয়ন-কথা ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম রোম্যান্স।” “মহেঞ্জোদড়ো একটি নগরমাত্র নয়, একটি সভ্যতা।” “উত্তম প্রতিভা চিরকালই মহত্তম অধমর্ণ।” কী আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্ব! রাজধানী এক্সপ্রেস কী দারুণ বেগেই না চলে! “শকুন্তলার অধ্যাত্ম-সত্তাটি ভারতীয় জীবনচর্যারই শিল্পসুন্দর ফলশ্রুতি।” ডায়মন্ডহারবারের নিকট দেউলপোতা গ্রামে প্রাপ্ত তামার অলংকার থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌গণ সহজেই অনুমান করছেন, চার হাজার বছর আগেকার ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে মিসরীয় সভ্যতার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। অমন ফাঁপাই টাকার ফড়ফড়ানি অনেক শুনেছি। আকাশটা তেমনই টলটলে নীল। পড়ার চেয়ে শোনা ভালো, শোনার চেয়ে দেখা। “ধনের ধার বড়ো ধার।” আমরা রাজনীতিক আজাদি পেয়েছি, এবার চাই সামাজিক আর আর্থনীতিক আজাদি। পরমহংসদেব বিশ্বের অবতারবরিষ্ঠ। অরুণের চেয়ে বরুণ ঢের বেশী বুদ্ধিমান্। অতীতের সব অলৌকিক ঘটনাকে অলীক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? “দোতলার সিঁড়িটা কলকাতার মধ্যবিত্ত জীবনের চেয়েও অন্ধকার।” “মধুর হল বিধুর হল মাধবী নিশীথিনী।” “ক্ষুণ্ন হলেন নাকি?” “না, শূন্য হয়ে গেলাম।” “ছুটছে চিঠিপত্র নিয়ে রনরনিয়ে হনহনিয়ে।” আজকাল অনেকেই রাতারাতি বড়োলোক হতে চায়। “বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ আজ আর রক্তমাংসের মানুষ নন, শুধু নমস্য, বরণীয়, স্মরণীয়, তর্পণীয় নন, তাঁরা আইডিয়া, আদর্শ, ইতিহাস, কাহিনী, প্রতীক।” “মহাপুরুষের চরিত্রের স্পর্শে লোহাও সোনা হয়।” আচ্ছা কাণ্ড ঘটালি বাবা। “বিবেকানন্দ ছিলেন সহস্রশীর্ষ পুরুষ। তাঁর সবচেয়ে বড়ো পরিচয় তিনি ছিলেন আত্মাজাগানিয়া—The awakener of souls.” মূর্খ আমি নাহি জানি মন্ত্রতন্ত্র সাধনভজন। “স্বামী বিবেকানন্দের ন্যায় শ্রীকৃষ্ণভক্ত দুর্লভ। তিনি নিজে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কাছে কতদিন রাধাকৃষ্ণের বিরহসংগীত অন্তরের গভীর ব্যাকুলতা নিয়ে গাইতেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণদেব শুনে সমাধিমগ্ন হয়ে যেতেন। ওই সংগীতের আসরে কী আশ্চর্য আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি হত তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।” স্বামী শ্রদ্ধানন্দ। “পাথর ডাগল, আতুর বারি, কাহে অভিসারিবি তুঁহুঁ সুকুমারী।” “ঐ ড্যাবা-ড্যাবা-চোখ-মেলে-সর্বদা-তাকিয়ে থাকা ছেলেটা বেশী কথা বলতে পারে না।” “কবে তৃষিত এ মরু ছাড়িয়া যাইব তোমার রসাল নন্দনে।” গেরুয়ার অহংকার সবচেয়ে সর্বনাশা। আর্টের আবেদন বুদ্ধির দ্বারে যতটা, তার অনেক বেশী বোধের দ্বারে। সহজ হওয়াই শক্তিমানের তপস্যা। বৈধী ভক্তি অপেক্ষা রাগানুগা ভক্তি গভীরতরা। “যৌবনের পুষ্পিত জোয়ার অঙ্গে অঙ্গে জাগেনি এখনও।”—“বিধিচক্র’। সর্বপ্রকার গানেই গায়কের ধ্রুপদী ভিত থাকা একান্ত আবশ্যক। যৎসামান্য উপাদানেই অসামান্য উপভোগ। “ঈশ্বর আমাদের বাঁধা বরাদ্দের উপর উপরি পাওনা।” “মহৈশ্বর্যে আছে নম্র, মহাদৈন্যে কে হয় নি নত।” মেনকা বাৎসল্যের সুরধুনী। “মহাকাশ বিশ্বস্রষ্টার মহাকাব্য।” “অলকগন্ধ উড়িছে মন্দ বাতাসে।” “তোমার ওই শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা। “

১২। কয়েকটি বিশেষ্যপদ ও তাহাদের বিশেষণগুলি বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে; বিশেষণ-শব্দটি বসাইয়া উপযুক্ত বিশেষ্যটিকে খুঁজিয়া আনিয়া তাহার ডানদিকে বসাও (যেমন—হাওয়াই প্রতিশ্রুতি, ফাঁপাই টাকা ইত্যাদি) : অস্তিত্ব, থসথসে, ভক্তি, স্পর্ধা, গণতন্ত্র, উত্তাপ, পল্লবিত, ছবি, পরিবেশন, মরমিয়া, মানুষ, প্রমাণ, পুষ্পিত, বিশ্বাস, অবিনাশী, আস্তানা, আনন্দসান্দ্রা, করুণা, প্রত্যক্ষ, গগনচুম্বী, প্রীতিময়, পাথুরে, পিচ্ছিল, বসুধা, নড়বড়ে, বিগলিত, যৌবন, কাননকুন্তলা, টগবগে, বোবা, আবির্ভাব, ফাপাই, আয়ুষ্মান, আর্তিহরণ, শৌখিন, লাবণ্যময়, জঙ্গল, উদ্দীপ্ত, টাকা, নৃশংস, বুকজুড়ানো, সুখতন্দ্রাতুর, উলঙ্গ, অগ্নিশিখা, বক্তৃতা, উদ্দীপনাময়, হাসি, ডাহা, উন্মাদনা, সর্বহারা, লেলিহান, প্রাসাদ, মিথ্যা, সত্য, ভালোবাসা, নিরামিষ, অজুহাত, নৃত্য, কালাপাহাড়ী, বন্ধু, ভ্রমণ, নির্বোধ, বায়ু, হাওয়াই, জীবাণু, প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস, জাতি, দরদী, আলাপী। (মোট ৩৫ জোড়া)

১৩। মধুর, বিষণ্ণ, ঠাণ্ডা, স্নেহময়, বিধুর, ভারী, তপ্ত, হাবা, বলবান্, মুখর, বড়ো—বিশেষণগুলির তারতম্য দেখাও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *