দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ণত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধান
ট-বর্গের পঞ্চমবর্ণ মূর্ধন্য ণ বাংলা ভাষায় আসিয়া নিজস্ব উচ্চারণটি হারাইয়া ফেলিয়াছে। এই বর্ণটি এখন ত-বর্গের পঞ্চমবর্ণ দন্ত্য ন-এর মতো উচ্চারিত হয়। মূর্ধন্য ণ ও দন্ত্য ন–দুইটির ধ্বনি এক হওয়ার জন্য উচ্চারণে ও শ্রবণে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয় না সত্য, কিন্তু লিখিবার বেলায় কোথায় মূর্ধন্য ণ হইবে আর কোথায় দন্ত্য ন হইবে তাহা লইয়া অনেক সময় বেশ গোলমালে পড়িতে হয়। এইজন্য কোথায় কোন্ অবস্থায় মূর্ধন্য ণ-এর ব্যবহার হয় তাহা জানিয়া রাখিলে এই অসুবিধার হাত হইতে অনায়াসে রক্ষা পাওয়া যায়।
অনুরূপভাবে শ ষ স–উষ্মবর্ণের এই তিনটি বর্ণ বাংলায় ধ্বনিসাম্যলাভ করিয়াছে অর্থাৎ সবকটিরই উচ্চারণ এখন তালব্য শ-এর উচ্চারণে দাঁড়াইয়াছে। বলিবার ও শুনিবার সময় অসুবিধা না হইলেও লিখিবার সময় এই তিনটি বর্ণের মধ্যে বানান-বিভ্রাট স্বাভাবিক কারণেই লাগিয়া থাকে। ইহাদের মধ্যে তালব্য শ প্রায়-নির্বিবাদী। গোলমাল বাধে দন্ত্য স ও মূর্ধন্য ষ-কে লইয়া। সুতরাং কোথায় কোন্ অবস্থায় মূর্ধন্য ষ-এর ব্যবহার হয়, তাহা জানিয়া রাখা অত্যাবশ্যক। প্রথমে ণত্ব-বিধানের আলোচনা।–
ণত্ব-বিধান
৪৮। ণত্ব-বিধান : বাংলা বানানে কোন্ কোন্ স্থানে দন্ত্য ন পরিবর্তিত হইয়া মূর্ধন্য ণ হয়, যে নিয়মে তাহা জানা যায়, তাহাকে ণত্ব-বিধান বলে!
অবশ্য এই নিয়মগুলি সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম বলিয়া কেবল তৎসম শব্দেই প্রযোজ্য। তদ্ভব দেশী বা বিদেশী শব্দে এ নিয়ম প্রয়োগ করা উচিত নয়। নিয়মগুলি মোটামুটি নীচে দেওয়া হইল
(১) ঋ, র্, ষ্–ইহাদের যেকোনো একটির পর দন্ত্য ন থাকিলে মূর্ধন্য ণ হয়। ঋণ, তৃণ, ঘৃণা, কর্ণ (ক্ + অ + র্ + ণ্), বর্ণনা, স্বর্ণ, বিষ্ণু (ব্ + ই + ষ্ + ণু : ন্ প্রত্যয়টি ণ্ হইয়াছে), সহিষ্ণু, মসৃণ, কৃষ্ণ, কৃষ্ণায়ন ইত্যাদি।
(২) ঋ, র্, ফ্-এর ঠিক পরেই যদি দন্ত্য ন না থাকে, যদি ঋ, র্, ষ্ এবং দন্ত্য ন-এর মাঝখানে কোনো স্বরবর্ণ, ক-বর্গ বা প-বর্গের কোনো বর্ণ অথবা খ্, ব্, হ্, ং থাকে, তখনও দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হইয়া যায়। রণ (র্ + অ + ণ্), রুগ্ণ (র্ + উ + গ্ + ণ্) [ গ্ ও ণ্-এর যুক্ত রূপ বাংলায় নাই; সেজন্য বর্ণদ্বয়কে পাশাপাশি বসাইতে হয়। গ্ন হইতেছে গ্ ও ন্-এর যুক্ত রূপ। যেমন–ভগ্ন, মগ্ন, লগ্ন ]; পাষাণী, লক্ষণ, লক্ষ্মণ (ল্ + অ + ক্ + ষ্ + ম্ + অ + ণ্), রামায়ণ (র্ + আ + ম্ + আ + য়্ + ত্ + ণ্), রেণু, রুক্মিণী, ঘ্রাণ, আঘ্রাণ, মুদ্রণ, আরোহণ, প্রবাহিণী (প্ + র্ + অ + ব্ + আ + হ্ + ই + ণী), ব্রাহ্মণ, সর্বাঙ্গীণ (স্ + অ + র্ + ব্ + আ + ঙ্ + গ্ + ঈ + ণ্), নিমন্ত্রণ, ম্রিয়মাণ, বৃংহণ (ব্ + ঋ + ং + হ্ + অ + ণ্), ক্ষিপ্যমাণ (ক্ + ষ্ + ই + প্ + ম্ + অ + ম্ + আ + ণ্), প্রেক্ষণীয়, করেণু, পরিবহণ, প্রণিধান, বিষণ্ণ, বক্ষ্যমাণ, বরণ (অভ্যর্থনা), ক্রিয়মাণ, অপেক্ষমাণ, পরীক্ষণীয়, এষণা, প্রতীক্ষ্যমাণ, বর্হির্ণ, স্পৃহণীয় ইত্যাদি। অৰ্চনা, অর্জুন, নর্তন, প্রার্থনা, রসায়ন, ঋতায়ন, সংস্কৃতায়ন (Sanskritisation), পরিবর্তন প্রভৃতি শব্দ এই সূত্রের মধ্যে পড়ে না বলিয়া দন্ত্য ন-ই রহিয়া গিয়াছে।
(৩) একপদে ঋ, র্, খ্, আর অন্যপদে দন্ত্য ন থাকিলে এবং এই দুইটি পদ সমাসবদ্ধ হইয়া একপদে পরিণত হইলেও দন্ত্য ন আর মূর্ধন্য ণ হয় না।–দুর্নাম (দুর্ নাম), হরিনাম, বীরাঙ্গনা, পুরাঙ্গনা, শ্রীনিবাস, নরনারায়ণ, ত্রিনয়না, ভিক্ষান্ন, পরান্ন, আম্রবন, সর্বনাম, পিতৃনাম, বরানুগমন, নির্নিমেষ ইত্যাদি।
কিন্তু সমাসবদ্ধ পদটিতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর নাম বুঝাইলে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। শূর্পণখা, অগ্রহায়ণ ইত্যাদি।
(৪) প্র, পরা, পূর্ব, অপর–এই চারিটি শব্দের পর অহ্ন শব্দের দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। প্রাহ্ণ, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ। কিন্তু সায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন, আহ্নিক ইত্যাদি শব্দ এই সূত্রের আওতায় নয় বলিয়া দন্ত্য ন-ই রহিয়াছে। [ মনে রাখিও হ্ + ন্ = হ্ন, কিন্তু হ্ + ণ্ = হ্ল ]
(৫) প্র, পরা, পরি, নির্ উপসর্গের পর মূর্ধন্য ণ হয়। প্রণত, প্রণাম, প্রণয়ন, প্রণব, প্রণাশ, প্রণিপাত, প্রণোদিত, পরায়ণ, পরিণাম, পরিমাণ, পরিণীতা, নির্ণয়, নির্ণীত ইত্যাদি। কিন্তু প্রনষ্ট [ নশ্ ধাতুর শ ষ হইলে ন্ আর ণ্ হয় না ] ।
(৬) ট-বর্গের কোনো বর্ণের অব্যবহিত পূর্বে নাসিক্যবর্ণের প্রয়োজন হইলে সর্বদাই মূর্ধন্য ণ হয়। ঘণ্টা, কণ্টক, কুণ্ঠা, অবগুণ্ঠিতা, গণ্ড, দণ্ডায়মান, ক্ষুণ্ণ।
কিন্তু ত-বর্গের কোনো বর্ণের পূর্বে নাসিক্যবর্ণের প্রয়োজন হইলে দন্ত্য ন-ই হয়। সন্তান, বৃন্ত, গ্রন্থ, মন্দ, নন্দিত, গন্ধ, অন্ন।
(৭) পদের শেষ দন্ত্য ন কখনও মূর্ধন্য ণ হয় না। শ্রীমান্, ব্রহ্মন্, শর্মন্, পূষন্, আয়ুম্মান্ ইত্যাদি।
বাংলা ক্রিয়াপদের শেষস্থ দন্ত্য ন (স্বরযুক্ত) অক্ষতই থাকে। করেন, ধরুন, করুন (করুণ = তৎসম বিশেষণ)। অরাতিরে আশীর্বাদ বর্ষিনু সানন্দ।
(৮) তদ্ভব, দেশী ও বিদেশী শব্দের বানানে ঋ, র, য্-এর পরে দন্ত্য ন লেখাই সমীচীন। অগ্রহায়ণ-অঘ্রান; কর্ণ–কান; স্বর্ণ-–সোনা; বর্ণ-বরন; কঙ্কণ–কাকন; চিক্কণ–চিকন; করণিক–কেরানী; লাবণ্য–লাবনি; কোণ–কুনো; গণনা–গনা; বর্ষণ–বরিষন; চূর্ণ–চুন; নারায়ণ–নারান; শ্রবণ–শোনা; মাণিক্য–মানিক; প্রাণ–পুরান; গৃহিণী–ঘরনী; রানী, পূজারিনী, চৌধুরানী, ইরান, তুরান, গুঞ্জরন, ট্রেন, রান, কর্নেল, গভর্নর, জার্মানী, কার্নির্স, কর্নওয়াল, ঈস্টার্ন, ঝরনা, ধরনা, নির্নিমিখ, গরবিনী, কুরঙ্গিনী, ধরন, দরুন (কিন্তু ধারণ ও দারুণ : তৎসম বলিয়া)। [ দন্ত্য ন-যুক্ত ইংরেজী শব্দগুলির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ চতুর্থ অধ্যায়ের অন্তর্গত দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে (৩৮০-৩৮২ পৃষ্ঠায়) দেখিয়া লও।]
কয়েকটি প্রয়োগ লক্ষ্য কর : “কত যে বরন (রঙ) কত যে গন্ধ।”–রবীন্দ্রনাথ। “কে করেছে বরিষন নবপুষ্পদল!”–ঐ। “এ পারেতে মেঘের মাথায় এক-শো মানিক জ্বালা।”–ঐ। “অঘ্রানে মা গো নুতন ধানের সুঘ্রাণে ভর অবনী।”–নজরুল। “পরশে তাহার দুলিয়া উঠিবে পরান-মৃণাল ভগ্ন।”–করুণানিধান। “শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে।”–সুকান্ত।
নিত্য মূর্ধন্য ণ : কয়েকটি তৎসম শব্দে চিরকাল যে মূর্ধন্য ণ হইয়া আসিতেছে, সেই আদি মূর্ধন্য ণ-কে নিত্য মূর্ধন্য ণ (স্বাভাবিক ত্ব) বলা হয়। এই মূর্ধন্য ণ কদাপি দন্ত্য ন-এর পরিবর্তিত রূপ নয়, খাঁটী মূর্ধন্য ণ।
বিপণি পণ্য আপণ গণ্য অণু বীণা বেণু কণিকা
নিক্কণ গণ মাণিক্য পণ পুণ্য ভণিতা মণিকা
লবণ শোণিত কৌণী গণিত স্থাণু লাবণ্য শাণিত
কিঙ্কিণী কণা কঙ্কণ ফণা শাণ বাণ তূণ ক্বণিত
কল্যাণ পাণি চিক্কণ ফণী গৌণ গণনা অণিমা
মণি ভাণ ঘুণ বণিক উকুণ বেণী বাণিজ্য শোণিমা
গুণ শণ কোণ এণ কিণ শোণ নিপুণ কণপ কফোণি
চাণক্য বাণী মকুণ অণি তুণীর কণাদ পাণিনি।
মোট কথা, মূর্ধন্য ণ-এর প্রয়োগ-সম্বন্ধে শিক্ষার্থীকে হুঁশিয়ার থাকিতে হইবে। যত্রতত্র কারণে-অকারণে মূর্ধন্য ণ লিখিলে বর্ণটির কৌলীন্যই যে কেবল ক্ষুণ্ণ হয় তাহা নয়, অর্থবিভ্রাটও ঘটিয়া থাকে।
ষত্ব-বিধান
৪৯। ষত্ব-বিধান : দন্ত্য স কোন্ কোন্ স্থানে মূর্ধন্য ষ হয়, যে নিয়মের দ্বারা তাহা জানা যায়, তাহাকে ষত্ব-বিধান বলে।
এইসমস্ত নিয়ম সংস্কৃত ব্যাকরণের অন্তর্ভূত। এইজন্য যে-সমস্ত সংস্কৃত শব্দ অপরিবর্তিত আকারে বাংলা ভাষায় চলিতেছে, মাত্র সেইসমস্ত তৎসম শব্দেই এই ষত্ব-বিধান প্রযোজ্য, অ-তৎসম শব্দে আদৌ প্রযোজ্য নয়।
(১) অ-কার ও আ-কার ভিন্ন স্বরবর্ণের পরে এবং ক্ ও র্-এর পরে প্রত্যয় ও বিভক্তির দন্ত্য স্ মূর্ধন্য ষ্ হয়। যেমন–ভবিষ্যৎ, পরিষ্কার, পুস্করিণী, আবিষ্কার, বিভীষণ, ঋষি, কৃষ্ণ, বিষম, সুষমা, মাতৃষ্বসা, বক্ষ্যমাণ, মুমূর্ষু, চিকীর্ষা, শ্রীচরণেষু, কল্যাণীয়েষু, দুর্বিষহ ইত্যাদি। কিন্তু পুরস্কার, প্রসুপ্ত, ভস্ম (অ-কারের পরে বলিয়া), পূজনীয়াসু, কল্যাণীয়াসু (আ-কারের পরে বলিয়া), নিরাপৎসু–দন্ত্য স-ই রহিয়াছে। অথচ বিস্ময়, বিস্মৃতি, দুঃস্বপ্ন প্রভৃতি ব্যতিক্রম (ই-কার বা উ-কারের পরে থাকা সত্ত্বেও স অক্ষত)। আবার, অনুসন্ধান, কুরুসেনা, অভিসন্ধি প্রভৃতি পদ একাধিক পদের সমবায়ে গঠিত বলিয়া দন্ত্য স অপরিবর্তিত রহিয়াছে।
লক্ষ্য কর,–কল্যাণীয়েষু, শ্রীচরণেষু, পূজনীয়েষু ইত্যাদি পুংলিঙ্গ বলিয়া ষ, কিন্তু কল্যাণীয়াসু, শ্রীচরণাসু, পূজনীয়াসু ইত্যাদি স্ত্রীলিঙ্গ বলিয়া স হইয়াছে। আবার স্নেহাস্পদ, শ্রদ্ধাস্পদ প্রভৃতি পদের আস্পদ অংশটি ক্লীবলিঙ্গ বলিয়া ইহাদের কেবল স্নৈহাস্পদেষু, শ্রদ্ধাস্পদেষু রূপই হইবে, স্নেহাস্পদাসু, শ্রদ্ধাস্পদাসু ইত্যাদি স্ত্রীবাচক রূপ কদাপি হইবে না।
(২) ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পরস্থিত সদ সিচ্ সন্জ সিৰ্ সে স্থা প্রভৃতি কয়েকটি ধাতুর দন্ত্য স মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন–উপনিষৎ, বিষণ্ণ, নিষণ্ণ, অনুষঙ্গ, আনুষঙ্গিক, অভিষিক্ত, নিষিদ্ধ, প্রতিষেধক, পরিষেবিকা, প্রতিষ্ঠিত, অনুষ্ঠান, অনুষ্ঠেয়, অনুষ্ঠাতব্য (শব্দটিকে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য কর) ইত্যাদি।
(৩) সাৎ প্রত্যয়ের স কখনও ষ হয় না।–অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ (ই-কারের পরে থাকা সত্ত্বেও)।
(৪) শিসধ্বনিযুক্ত ট্ ও ঠ-এর অব্যবহিত পূর্বে ষ্ হয়।–অষ্ট, কষ্ট, কষ্টি, সাষ্টাঙ্গ (আ-কার, অ-কারের পরে থাকা সত্ত্বেও), বেষ্টন, নিষ্ঠুর, দৃষ্টি, যুধিষ্ঠির, প্রতিষ্ঠান, ভূমিষ্ঠ ইত্যাদি। কিন্তু ত্ ও থ-এর পূর্বে স্ হয়।–নিস্তেজ, বায়ুস্থিত, সুস্থ, দুস্তর (অ-কার, আ-কার ভিন্ন স্বরবর্ণের পরে থাকা সত্ত্বেও)।
(৫) স্ফুট্ ও স্ফুর্ ধাতুর স অক্ষত থাকে।–পরিস্ফুট, বিস্ফোটক, বিস্ফোরণ, বিস্ফুরিত।
(৬) ইংরেজী st-এর স্থানে বাংলা স্ট লেখাই সমীচীন।–স্টেশন, মাস্টার, স্টার, স্টোর্স, অগস্ট, স্টাইল, স্টেটব্যাঙ্ক, ইনস্টিটিউশন; অথচ খ্ৰীষ্ট, খ্ৰীষ্টাব্দ।
(৭) কয়েকটি বিদেশী শব্দের বানান বিশেষভাবে লক্ষ্য কর।–শহর, জিনিস, তামাশা, পোশাক, মসলা, বাদশা, ইশারা, শাবাশ, পুলিস, নোটিস, সুপারিশ, তক্তপোষ, খরগোশ, নালিশ, মুনশী, মুশকিল, খোশামোদ, শামিল, শরিক, সানাই, আপসোস, খুশী, শৌখিন ইত্যাদি। [ দ্রষ্টব্য : চতুর্থ অধ্যায়ের অন্তর্গত দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে শ ও স-সম্পর্কিত ইংরেজী, আরবী, ফারসী প্রভৃতি বিদেশী শব্দের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণের তালিকাটি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর। ]
(৮) নিম্নলিখিত শব্দগুলিতে নিত্য মূর্ধন্য ষ (স্বাভাবিক যত্ব) হইয়াছে; এই য্ কদাপি স-এর পরিবর্তিত রূপ নয়।
ভাষা মাষা ষট্ কাষ্ঠ শষ্প কষিত কষায় অথবা ষণ্ড রে,
ষষ্ঠ ষষ্টি কিবা অভিলাষ
আষাঢ় কাষায় অথবা বাষ্প ষোড়শ পাষাণ ভাষ্য আভাষ
চিরকাল য্ মহাপাষণ্ড যে।
মোট কথা শ, ষ, স-এই তিনটি বর্ণের প্রয়োগ-সম্বন্ধে আমাদের সচেতন…. হওয়া আবশ্যক।
অনুশীলনী
১। ণত্ব-বিধান কাহাকে বলে? ণত্ব-বিধানের কয়েকটি প্রধান সূত্রের উল্লেখ কর এবং উপযুক্ত উদাহরণ দিয়া বুঝাইয়া দাও। খাঁটী বাংলা (তদ্ভব), দেশী ও বিদেশী শব্দে ণত্ব-বিধ প্রয়োগ করা উচিত নয়, কয়েকটি উদাহরণ দিয়া বুঝাইয়া দাও।
২। স্বাভাবিক ণ্ত্বের কয়েকটি অতি পরিচিত উদাহরণ দাও, এবং দেখাও যে, ঐ উদাহরণগুলি ণত্ব-বিধানের কোনো নিয়মেই পড়ে না।
৩। ষত্ব-বিধান কাহাকে বলে? ষত্ব-বিধানের কয়েকটি প্রধান সূত্রের উল্লেখ কর এবং উপযুক্ত উদাহরণ দিয়া বুঝাইয়া দাও। খাঁটী বাংলা (তদ্ভব), দেশী ও বিদেশী শব্দে যত্ন-বিধি প্রয়োগ করা উচিত নয়, কয়েকটি উদাহরণ দিয়া বুঝাইয়া দাও।
৪। স্বাভাবিক যত্বের অতি-পরিচিত কয়েকটি উদাহরণ দাও, এবং ঐ উদাহরণগুলি ষত্ব-বিধানের কোনো নিয়মেই যে পড়ে না তাহা বুঝাইয়া দাও।
৫। পার্থক্য দেখাও : ণত্ব-বিধি ও স্বাভাবিক ণত্ব; ষত্ব-বিধি ও স্বাভাবিক ষত্ব।
৬। (ক) শব্দগুলিতে ন্ বা ণ্ প্রয়োগের কারণ দেখাও : কল্যাণ, কণা, কণিকা, কনক, রণ, গুঞ্জরন, রান, রানার, কণ্ঠ, নারায়ণ, নারান, মাণিক্য, মানিক, কণ্টক, গ্রহণ, ম্রিয়মাণ, শিহরন, নব, প্রণব, নাম, প্রণাম, দুর্নাম, পরিণাম, মান, প্রমাণ, পরিমাণ, অর্জুন, কীর্তন, কৃপণ, প্রাণ, পরান, কর্নেল, কর্ণ, কর্নার, বর্ণনা, পরিবর্তন, মধ্যাহ্ন, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ, অয়ন, রামায়ণ, রসায়ন, রূপায়ণ, প্রণয়ন, প্রনষ্ট, লক্ষণ, লক্ষ্মণ, শূর্পণখা, লণ্ঠন, অগ্রহায়ণ, অঘ্রান, বর্ণ, বরন (রঙ অর্থে), বরণ। (অভিনন্দন অর্থে), লুণ্ঠন, প্রসন্ন, বিষণ্ণ, মৃন্ময়, মৃণাল, প্রণালী, পাণি, পান, আপন, আপণ, বিপণি, বিপণন, প্রশমন, রুণ, ঋতায়ন।
(খ) শব্দগুলিতে ষ বা স ব্যবহারের কারণ দেখাও : সিদ্ধ, নিষিদ্ধ, প্রসিদ্ধ, সুসিদ্ধ, সুপ্তি, প্রসুপ্তি, সুষুপ্তি, শস্য, শিষ্য, পোষক, পৃষ্ঠপোষক, ভস্ম, ভীষ্ম, স্নাত, নিষাত, সম, অসম, বিষম, সুষম, অসহ, সুসহ, দুঃসহ, দুর্বিষহ, ভাসা, ভাষা, ভাষণ, ভীষণ, প্রসাদ, বিষা, অবসাদ, পুরস্কার, আবিষ্কার, তিরস্কার, পুষ্করিণী, পরিষ্কার, বহিষ্কার, তেজস্ক্রিয়, সন্তুষ্ট, খ্ৰীষ্ট, অগস্ট, ২, শর্নির্স, নোটিস, ঔষধ, পুলিস, শ্রীচরণেষু, সুচরিতাসু, আষাঢ়, স্বসা, মাতৃম্বসা, পুষ্প, সেন, নিষেবণ, আনুষঙ্গিক, স্টক, স্টোর্স, সালিস, স্টেডিআম, অনুষঙ্গ, নিঃসঙ্গ, নিষঙ্গ, বিলাস, অভিলায, যশস্কাম, নিষ্কাম, অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, শিরস্ত্রাণ, সুস্পষ্ট।
৭। বন্ধনীমধ্য হইতে উপযুক্ত অংশটি চয়ন করিয়া তাহার দ্বারা শূন্য স্থান পূর্ণ কর?
(i) সায়া–; প্রা–; অপরা–; মধ্যা–; পূর্বা–; পরা–[হ্ণ/হ্ন]
(ii) প্ৰ–দ; বি–দ; অন্বে–; অব–দ; আ–ঢ়; আ–র; প্র-–র; মনী– [ সা / ষা ]
(iii) ক–ল; নি–য়; ব-–না; কা-ি–স [ র্ন / র্ণ ]
(iv) পরি–ত; পুর–ত; বহি–ত; আবি–ত; সং–ত; তির–ত [স্কৃ/]
(v) বিষ–; ষ–বতি; আস–; ভিক্ষা–; প্রস;–; ক্ষু–; নিষ্প–; পরা– ( ন্ন / ণ্ণ ]
(vi) বর্ষি–; পুষি–; করে–; বিষাই–; বাহিরি– [ ণু / নু ]
(vii) শূ-–; বরে–; মূর্ধ–; আর–; গ–; বৈশু–; সামা–[ ন্য/ণ্য ]।
(viii) ব্ৰহ্ম–; ব্রাহ্ম–; গরীয়া–; শ্রীমা–; করু—[ ক্রি ও বিণ ]; প্র–শ; আঘ্রা–; অঘ্রা–; অগ্রহায়–; প্রণয়ি–; ধর; ধার–; প্র–ত; বেগু–; বিগু–; ঝর–; প্র–ষ্ট; আয়ুষ্ম–[ ন/ণ/ণ্ ]
৮। একটিমাত্র শব্দে প্রকাশ কর: (i) অধিকার পাইয়াছেন যে নারী; (ii) অপেক্ষা করিতেছেন যিনি; (iii) যাঁহার ভার্যা বিদেশে বাস করিতেছেন; (iv) যে নারী ব্রত ধারণ করিয়াছেন; (v) কেশরীর স্ত্রী; (vi) শুভ করিতে ইচ্ছুক; (vii) যে নারীর মনীষা আছে; (viii) যে নারীর মনস্বিতা আছে।
৯। (ক) শব্দগুলিতে ণত্ব বা ষত্ব-ঘটিত ভুল রহিয়াছে, সংশোধন কর : মধ্যাহ্ণ, নৃসংশ, চিক্কন, আনুসঙ্গিক, রসায়ণ, পূর্বাহ্ন, ফাল্গুণ, আষ্পদ, মাতৃস্বসা, শূর্পনখা, গুনণ, আশীষ, সুসুপ্তি, শিস্য, শষ্য, পরিস্কার, খরগোষ, শ্রদ্ধাস্পদাসু, লক্ষনীয়, মূর্ধণ্য, রুগ্ন, দুর্বিসহ, মাণিক, অগষ্ট, মৃন্ময়, ভষ্ম, বাস্প, পরাণ, অভিলাস, মানবক, নারাণ, ক্ষনিক, জিনিষ, শূণ্য, আপন (দোকান অর্থে), মরুণীর।
(খ) শুদ্ধ কি অশুদ্ধ বিচার করঃ কুরঙ্গিনী, শ্রদ্ধাস্পদ, প্রাঙ্গণ, মৃয়মান, অপরাহ্ন, কল্যাণীয়াসু, মৃন্ময়, চিন্ময়, অর্চণা, বক্ষ্যমান, সোনা, প্রীতিভাজনীয়াসু, আবিস্কার, সর্বাঙ্গীণ, শষ্য, কনক, ভস্ম, রুণ, অগ্নিষাৎ, যোড়শী, বাষ্প, করুণ, মাতৃম্বসা, সর্বণাম, দুর্নীতি, প্রণষ্ট, শিল্পায়ন, হিতাকাঙ্ক্ষিণী, বরন, ক্ষুন্নিবৃত্তি, ঋতায়ণ, স্বপ্নবতি।
১০। আপন, অনু, করুন, কোন, বান, পানি, ভাসা, মাস, বর্শা, কশা–শব্দগুলিতে ন্-স্থলে ণ্ এবং শ বা স-স্থানে য্ লিখিলে অর্থের কী ব্যতিক্রম হয়, দেখাও।