তৃতীয় পরিচ্ছেদ – প্রত্যয়
১৮১। প্রত্যয় : শব্দ-প্রকৃতি ও ধাতু-প্রকৃতির উত্তর যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যোগ করিয়া নূতন শব্দ সৃষ্টি করা হয়, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে প্রত্যয় বলে। প্রত্যয় হইল নূতন নূতন শব্দগঠনের বিজ্ঞানসম্মত কৌশল।
একবর্ণের প্রত্যয় অ, আ, ই, ঈ, উ ইত্যাদি; একাধিক বর্ণের প্রত্যয় ক্তি (ক্ + ত্ + ই), ঘঞ, অন্ত, ষ্ণেয়, ষ্ণায়ন ইত্যাদি।
প্রত্যয় প্রধানতঃ ত্রিবিধ—কৃৎ, তদ্ধিত ও ধাত্ববয়ব প্রত্যয়।
১৮২। কৃৎ-প্রত্যয় : ধাতুর উত্তর যে প্রত্যয়যোগে নূতন শব্দ সৃষ্টি হয়, তাহাকে কৃৎ-প্রত্যয় বলে। √গম্ + ক্তি (প্রত্যয় = গতি; √চল্ + অন্ত (প্রত্যয়) = চলন্ত। এখানে ক্তি ও অন্ত হইতেছে কৃৎ-প্রত্যয়। কৃৎ-প্রত্যয়ান্ত শব্দই কৃদন্ত শব্দ। নবগঠিত গতি ও চলন্ত কৃদন্ত শব্দ। বাক্যে প্রয়োগ করিবার সময় শব্দগুলিতে প্রয়োজনমতো শব্দবিভক্তি যোগ করিতে হইবে।
কৃৎ-প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষণ হইলে তাহাকে কৃদন্ত বিশেষণ বলে। [ 257 পৃষ্ঠায় সূত্র ১০১ (ড) দ্রষ্টব্য। ]
১৮৩। তদ্ধিত-প্রত্যয় : শব্দের উত্তর যে প্রত্যয়যোগে নূতন শব্দ সৃষ্টি হয়, তাহাকে তদ্ধিত-প্রত্যয় বলে। গঙ্গা + ষ্ণেয় = গাঙ্গেয়; দোকান + দার = দোকানদার। এখানে ষ্ণেয় ও দার হইতেছে তদ্ধিত-প্রত্যয়। গাঙ্গেয় ও দোকান—দার তদ্ধিতান্ত শব্দ। শব্দবিভক্তিযুক্ত হইয়া শব্দগুলি বাক্যে প্রযুক্ত হয়।
স্ত্রী-প্রত্যয় মূলতঃ তদ্ধিত-প্রত্যয়েরই অন্তর্ভূত। কারণ পুংলিঙ্গবাচক শব্দের উত্তর স্ত্রী-প্রত্যয়যোগে স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ গঠিত হয়।
ধাত্ববয়ব প্রত্যয় [ সূত্র ১১১, পূঃ ২৭২ ] ও কৃৎ-প্রত্যয়ের পার্থক্যটি দেখ।—কৃৎ-প্রত্যয় ও ধাত্ববয়বের পার্থক্য : (১) কৃৎ-প্রত্যয় ধাতুর উত্তর যুক্ত হয়, ধাত্ববয়ব ধাতু ও নামশব্দের উত্তর যুক্ত হয়। (২) কৃৎ-প্রত্যয়যোগে নূতন শব্দ সৃষ্টি হয়, আর ধাত্ববয়বের যোগে নূতন ধাতু সৃষ্টি হয়।
কোনো কোনো বৈয়াকরণ বিভক্তি ও প্রত্যয়কে অভিন্ন বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। আমরা কিন্তু তাঁহাদের সহিত একমত হইতে পারিলাম না। প্রত্যয় ও বিভক্তির সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যটুকু লক্ষ্য করিলে বিষয়টি সহজে বোধগম্য হইবে।
প্রত্যয় বা বিভক্তি কাহারও স্বতন্ত্র ব্যবহার বাক্যে নাই, উভয়েই শব্দ বা ধাতুর উত্তর যুক্ত হয়। এই পর্যন্ত উভয়ের সাদৃশ্য। কিন্তু বৈসাদৃশ্যটুকু বিশেষ প্রণিধানযোগ্য।—
(১) প্রত্যয়যুক্ত হইলেও ধাতু বা শব্দ ধাতু বা শব্দই থাকে, বাক্যে প্রযুক্ত হইবার উপযুক্ততা লাভ করে না, কিন্তু বিভক্তিযুক্ত ধাতু বা শব্দ পদে পরিণত হইয়া বাক্যে স্থানলাভের যোগ্যতা পায়। (২) ধাতু বা শব্দে প্রথমে প্রত্যয় যোগ হয়, পরে বিভক্তি আসে। শব্দে শব্দবিভক্তি বা ধাতুতে ধাতুবিভক্তি যোগ করার পর আর কোনো প্রত্যয় যোগ করা চলে না।
ধাতু বা শব্দে প্রত্যয় যুক্ত হইলে প্রত্যয়ের কিছু অংশ শব্দ বা ধাতুর সহিত মিশিয়া যায়, বাকী অংশটুকু লোপ পায়। প্রত্যয়ের লোপ পাওয়া অংশকে ইৎ বলে। প্রত্যয় যুক্ত হইলে ধাতু বা শব্দের স্বরধ্বনির কিছু পরিবর্তন ঘটে; কখনও-বা কোনো স্বর বা ব্যঞ্জনের বিলোপ হয়; কখনও-বা নূতন বর্ণের আবির্ভাবও ঘটে। পরিবর্তন বা বর্ণলোপ অথবা বর্ণাগম সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম-অনুযায়ী হয়। এ-বিষয়ে গুণ, বৃদ্ধি, সম্প্রসারণ প্রভৃতি সূত্রগুলি (১১৮ পৃষ্ঠায়) বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
১৮৪। উপধা : ধাতু বা শব্দের অন্ত্যবর্ণের পূর্ববর্ণকে উপধা বলে। লক্ষ্মী শব্দের অন্ত্যবর্ণ ঈ-র পূর্ববর্ণ ম্—ইহাই উপধা। গম্ ধাতুর অন্ত্যবর্ণ ম্-এর পূর্ববর্তী বর্ণ অ হইল উপধা। সুতরাং এখন হইতে প্রতিটি শব্দপ্রকৃতি, ধাতুপ্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অন্তর্গত বর্ণগুলির ক্রমাবস্থান-সম্বন্ধে সচেতন থাকিবে।
কৃৎ-প্রত্যয়
কোনো ধাতুর উত্তর একই সময়ে একটিমাত্র প্রত্যয় যুক্ত হয়। অবশ্য ধাতুর পূর্বে একটি উপপদ কিংবা এক বা একাধিক উপসর্গ থাকিতে পারে। ধাতুর পূর্বে উপসর্গ বা উপপদ থাকিলে সন্ধির দিক্টি লক্ষ্য রাখিবে। যেমন, বি-উদ্—√পদ্ + ক্তি = ব্যুৎপত্তি, সরঃ—√জন্ + ড = সরোজ, অধি—√বস্ + ক্ত = অধ্যুষিত।
॥ বাচ্যসম্পৰ্ক ॥
ধাতুর উত্তর প্রযুক্ত হয় বলিয়া কৃৎ-প্রত্যয়ে বাচ্যসম্পর্ক থাকে অর্থাৎ কৃৎ-প্রত্যয়—নিষ্পন্ন শব্দটি কর্তৃ, কর্ম, করণ, অপাদান, অধিকরণ প্রভৃতি কারকবাচ্যে অথবা কেবল ক্রিয়ার্থে ভাববাচ্যে প্রযুক্ত হয়।
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি যখন কর্তৃপদরূপে বা কর্তৃপদের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়, তখন প্রত্যয়টি কর্তৃবাচ্যে প্রযুক্ত হইয়াছে বলা হয়। দা + ণক = দায়ক (দান করিবার কর্তা); জল-দা + ক জলদ (জল দেয় যে); গা + ইয়ে = গাইয়ে (যে গান গাহিতে পারে); শী + ক্ত = শয়িত (যে শুইয়া আছে)।
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি যখন কর্মপদরূপে বা কর্মপদের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়, তখন প্রত্যয়টি কর্মবাচ্যে প্রযুক্ত হয়। অনু-বদ্ + ক্ত = অনুদিত (যেটিকে অনুবাদ করা হইয়াছে); সেব্ + শানচ্ = সেব্যমান (যে ব্যক্তির সেবা করা হইতেছে); তুল্ + আ তোলা (জল বা ফুল); শী + ণিচ্ + ক্ত = শায়িত (যাহাকে শোয়ানো হইয়াছে)।
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি করণের অর্থে ব্যবহৃত হইলে প্রত্যয়টি করণবাচ্যে প্রযুক্ত হইয়াছে বলা হয়। নী + অন = নয়ন (যাহার দ্বারা নীত হয়); চর্ + অনট্ = চরণ (যাহার দ্বারা বিচরণ করা হয়); চল্ + ণিচ্ + অন + ঈ = চালনী (যাহার দ্বারা চালা হয়); ঝাড়ু + অন = ঝাড়ন (যাহার দ্বারা ঝাড়ামোছা হয়)। প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি অপাদান অর্থে ব্যবহৃত হইলে প্রত্যয়টি অপাদানবাচ্যে প্রযুক্ত হয়। ঝর্ + না = ঝরনা (যাহা হইতে ঝরে)।
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি অধিকরণ অর্থে ব্যবহৃত হইলে প্রত্যয়টি অধিকরণবাচ্যে প্রযুক্ত হইয়াছে বলা হয়। উদ্-স্ + অল্ = উৎসব; শী + অন = শয়ন (শয্যা অর্থে—যেখানে শোয়া হয়); স্থা + অন = স্থান (থাকা কাজটি যেখানে হয়)। “কদম্বরেণু বিছাইয়া দাও শয়নে।”
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি যখন ক্রিয়ার অর্থটিকেই বুঝায়, তখন প্রত্যয়টি ভাববাচ্যে প্রযুক্ত হইয়াছে বলা হয়। গম্ + অন = গমন (যাওয়া কাজটি); গাঁথ্ + অনি = গাঁথনি (গাঁথা-রূপ কাজটি)। “এলাইয়া বেণী ফুলের গাঁথনি দেখয়ে খসায়ে চুলি।”—চণ্ডীদাস।
বাংলা ভাষায় প্রচলিত সংস্কৃত কৃদন্ত শব্দগুলির উৎপত্তি কী করিয়া হইল, তাহা জানিবার সুবিধার জন্য এখন আমরা কয়েকটি প্রধান সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়ের আলোচনা করিব। তাহার পরেই বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়।
সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়
॥ তব্য, অনীয়, ণাৎ, যৎ, ক্যপ্ ॥
করা উচিত বা করার যোগ্য বুঝাইতে কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয়গুলি যুক্ত হয়। এইসমস্ত প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দ সাধারণতঃ বিশেষণ।
(ক) তব্য : দা—দাতব্য, জ্ঞা—জ্ঞাতব্য, স্থা—স্থাতব্য, অনু-স্থা—অনুষ্ঠাতব্য [ সন্ধি লক্ষ্য কর ], গম্—গন্তব্য [ সন্ধিতে ম্ স্থানে ত্-এর পঞ্চমবর্ণ ন্ হইয়াছে], মন্—মন্তব্য, হন্ হন্তব্য, কৃ—কর্তব্য [ ধাতুর অন্ত্যস্বর ঋ-এর গুণ অর্ হইয়াছে ], ধৃ–ধর্তব্য, স্মৃ–স্মর্তব্য, শ্রু–শ্রোতব্য, জি—জেতব্য, বচ্—বক্তব্য [ চ্-স্থানে ক্ হইয়াছে ], দৃশ্—দ্রষ্টব্য [ ঋ-স্থানে র ], পর্― পঠিতব্য [ ধাতুর শেষে ই-ধ্বনি আসিয়াছে ], জীব্—জীবিতব্য, ভূ—ভবিতব্য [ ঊ-র গুণ অব্, পরে ই-র আগম ], ভক্ষ্—ভক্ষিতব্য, গ্রহ্ গ্রহীতব্য, কহ্ [ বাংলা ধাতু ]—কহতব্য।
(খ) অনীয় : পূজ্—পূজনীয়, বন্দ–বন্দনীয়, মান্—মাননীয়, সেব্—সেবনীয়, সহ্—সহনীয়, রক্ষ—রক্ষণীয় (ণত্ব-বিধি লক্ষ্য কর), ভক্ষ্—ভক্ষণীয়, গ্রহ্—গ্রহণীয়, লক্ষ-লক্ষণীয়, শিক্ষ–শিক্ষণীয় (শিখিবার বিষয় এবং শিখাইবারও বিষয়), রম্—রমণীয়, স্পৃহ্—স্পৃহণীয়, পা—পানীয়, দা—দানীয়, কৃ―করণীয় (ধাতুর অন্ত্যস্বরের গুণ), হৃ–হরণীয়, স্মৃ—স্মরণীয়, বৃ—বরণীয়, দৃশ্― দর্শনীয় (উপধা লঘুস্বরের গুণ), কৎ—কীৰ্তনীয়, অচ্—অৰ্চনীয়, অৰ্পি–অর্পণীয়, শুচ্—শোচনীয়, যুজ্—যোজণীয়, শ্রু-শ্রবণীয় (অন্ত্যস্বরের গুণ), স্তু—স্তবনীয়, ঈর্ষ—ঈর্ষণীয়, রোপি (রুহ্ + ণিচ্)–রোপণীয়, পালি (পা + ণিচ্)—পালনীয়। সেইরূপ ত্যজনীয়, আচরণীয়, যাচনীয়, উপেক্ষণীয়, আদরণীয়, প্রচরণীয়, গণনীয়, চিন্তনীয়, কমনীয়।
(গ) ণ্যৎ : (সাধারণতঃ ঋ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত ধাতু এবং উপসর্গযুক্ত চর্, মদ্ প্রভৃতি ধাতুর উত্তর ণ্যৎ হয়; ণ্ ও.ৎ লোপ পায়, য থাকে) : কৃ—কার্য [ধাতুর অন্ত্যস্বরের বৃদ্ধি], ধু—ধার্য, পরি-হৃ—পরিহার্য, ভূ-ভার্যা [ স্ত্রী-প্রত্যয় আ যুক্ত হইয়াছে ], ঋ (গমন করা)–আর্য, শ–শ্রাব্য [ অন্ত্যস্বরের বৃদ্ধি ], ভূ–ভাব্য, ভিদ্—ভেদ্য [ উপধা লঘুস্বরের গুণ ], বিদ্—বেদ্য, বি-বিচ্–বিবেচ্য, ভ—ভক্ষ্য, লক্ষ্—লক্ষ্য, ভুজ্—ভোজ্য, ভোগ্য [ উপভোগ-অর্থে ভুজ ধাতুর জ্-স্থানে গ্ ], প্র-যুজ্—প্রযোজ্য, নি-যুজ্—নিয়োজ্য [ নিয়োজনের যোগ্য (ভৃত্য) অর্থে কর্মবাচ্যে ] এবং নি-যুজ্–নিয়োগ্য [ ‘নিয়োগ করিবার অধিকারী’ (প্রভু) অর্থে কর্তৃবাচ্যে ], হস্–হাস্য [ উপধা স্বরের বৃদ্ধি ], ত্যজ্—ত্যাজ্য, [ তদ্রূপ পরিত্যাজ্য—বানানটি বিশেষভাবে স্মরণীয়। ‘পরিত্যজ্য’ সংস্কৃত অসমাপিকা ক্রিয়া, ইহার অর্থ : পরিত্যাগ করিয়া। সংস্কৃত ক্রিয়াপদ বাংলায় চলে না ], পর্–পাঠ্য, মান্—মান্য, বহ্–বাহ্য, আ-চর্–আচাৰ্য, বি-চর্—বিচার্য, উদ্-চারি (চর্ + ণিচ্)–উচ্চার্য, প্র-মদ্—প্ৰমাদ্য, বচ্—বাচ্য [ বলিবার যোগ্য] এবং বাক্য [ শব্দসমষ্টি অর্থে বচ্ ধাতুর চ্-স্থানে ক্ ], পচ্–পাচ্য; বাংলা কাট্ + ণ্যৎ = কাট্য।
(ঘ) যৎ (স্বরান্ত ধাতুর উপধায় অ-কারযুক্ত প-বর্গান্ত ধাতু, শক্, সহ্ ধাতু ও উপসর্গহীন গদ্, মদ্, চর্ প্রভৃতি কয়েকটি ধাতুর উত্তর যৎ হয়। ৎ ইৎ, য থাকে)ঃ দা—দেয় [ অন্ত্য আ-স্থানে এ ], ধা–ধেয়, জ্ঞা—জ্ঞেয়, পা–পেয়, অনু-মা—অনুমেয়, হা—হেয়, গৈ—গেয়, সহ্—সহ্য, শক্—শক্য, চর্–চর্য, লভ্―লভ্য, রম্―রম্য, গদ্—গদ্য, গম্—গম্য, চর্ব–চর্ব্য, শস্–শস্য, মদ্—মদ্য, নম্ নম্য, হন্–বধ্য [ হন্ স্থানে বধূ—আদেশ ]; জি—জেয় [ অন্ত্যস্বরের গুণ ], চি—চেয়, নী–নেয়, শ্রু–শ্রব্য, ভূ–ভব্য। উপ-আ—√দা + যৎ = উপাদেয়। বি-আ—√খ্যা + য ব্যাখ্যেয়। √ধ্যে + যৎ = ধ্যেয়।
ধাতুতে একই সঙ্গে ণ্যৎ [ বা যৎ ] প্রত্যয় এবং অনীয় প্রত্যয় হয় না। যেমন পূজ্য, কিন্তু পূজনীয়; মান্য, মাননীয়; দুষ্য, দূষণীয়; গণ্য, গণনীয়; বন্দ্য, বন্দনীয়; অচিন্ত্য, অচিন্তনীয়; লক্ষ্য, লক্ষণীয়; গ্রাহ্য, গ্রহণীয়; শ্লাঘ্য, শ্লাঘনীয়; নম্য, নমনীয়; বর্ণ, বর্ণনীয়; চর্ব্য, চর্বণীয়; রম্য, রমণীয়; কাম্য, কামনীয়; অসহ্য, অসহনীয়।
(ঙ) ক্যপ্ (ক্ ও প্ ইৎ, য থাকে। এই প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দগুলি বিশেষ্য) : কৃ—কৃত্য [ হ্রস্বস্বরান্ত ধাতুর উত্তর ৎ-এর আগম হয় ], বৃ–বৃত্য (বরণীয়), ভূ–ভৃত্য; শাস্—শিষ্য [ উপধা আ-কার-স্থানে ই-কার; ষত্ব-বিধিও লক্ষ্য কর ]; দৃশ্—দৃশ্য; √বিদ্ + ক্যপ্ + আ = বিদ্যা। √হন্ + ক্যপ্ + আ = হত্যা। √শী + ক্যপ্ + আ শয্যা।
॥ শত্, শানচ্ ॥
ক্রিয়া-ব্যাপারটি হইতেছে বা চলিতেছে বুঝাইলে পরস্মৈপদী ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে শতৃ ও আত্মনেপদী ধাতুর উত্তর কর্তৃ ও কর্ম উভয়বাচ্যে শানচ্ প্রত্যয় হয়। এই দুই প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দগুলি বিশেষণ।
(ক) শতৃ (শ্ ও ঋ ইৎ, অৎ থাকে) : চল্–চলৎ, পঠ—পঠৎ, জীব্—জীবৎ, ধার্—ধাবৎ, জ্বল্—জ্বল, জাগ্—জাগ্রৎ (পদটি বিশেষণ, কদাপি জাগ্ৰত নয়। জাগ্রত পদটি সংস্কৃত লোট্ মধ্যমপুরুষ বহুবচনের ক্রিয়াপদ; অর্থ জাগিয়া উঠ। সংস্কৃত ক্রিয়াপদ বাংলায় চলে না), গৈ—-গায়ৎ, মহ্ (পূজা করা)—মহৎ, অস্ সৎ, বিদ্—বিদ্বস্ [ “বিদেঃ শতুর্বসুঃ” সূত্রানুসারে বিদ্ ধাতুর শতৃ-স্থানে বস্ হইয়াছে ]। এইসমস্ত শব্দের মধ্যে মহৎ, সৎ ও বিদ্বস্ ব্যতীত অন্যগুলির স্বাধীন প্রয়োগ বাংলায় নাই; সমাসে অবশ্য ইহাদের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়—চলদভুবন, গলদশ্রু, গলদঘর্ম, পঠদ্দশা, জীবদ্দশা, জাগ্রদবস্থা, জীবস্মৃত, চলচ্চিত্র, জ্বলজ্জটা, স্খলদ্বচন, স্থলসন, জ্বলদর্চিরেখা। বাবা যখন দেহ রাখেন, তখনও ছোটো ভায়ের পঠদ্দশা চলছিল।
মহৎ, সৎ ও বিদ্বস্ শব্দের পুংলিঙ্গ-রূপ যথাক্রমে মহান, সৎ ও বিদ্বান্ এবং স্ত্রীলিঙ্গ-রূপ যথাক্রমে মহতী, সতী ও বিদুষী—বাংলায় বেশ চলে। ক্লীবলিঙ্গ হিসাবেও মহৎ ও সৎ শব্দ দুইটির বহুল প্রচলন বাংলায় রহিয়াছে। তবে সৎ শব্দটি সংস্কৃতে বিদ্যমান অর্থে ব্যবহৃত হয়, বাংলায় ভালো অর্থে ব্যবহৃত হয়। [ বিদ্বান্ এবং বিদ্যা শব্দদ্বয়ের ব্যুৎপত্তি ও বানান বিশেষভাবে লক্ষ্য কর। ] বিদ্বস্ শব্দটির কয়েকটি সমাসবদ্ধ রূপ মনে রাখিও : বিদ্বৎসমাজ, বিদ্বদ্বল্লভ বা বিদ্বদ্বল্লভ, বিদ্বন্নগুলী, বিদ্বভূষণ।
(খ) শানচ্ : (শ্ ও চ্ ইৎ, আন থাকে। এই আন কখনও মান হয়, কখনও বা ঈন হয়) : বৃৎ—বর্তমান, বৃধু–বর্ধমান, জন্—জায়মান, শী–শয়ান, বিদ্ বিদ্যমান, উৎ-পদ্—উৎপদ্যমান, দীপ্—দীপ্যমান, মুহ্—মোহ্যমান [ মুহ্যমান ব্যাকরণসিদ্ধ নয়; চলন্তিকা দ্রষ্টব্য ], শুভ্–শোভমান, সম্-চর্—সঞ্চরমাণ (মেঘ), আ-বহ্—আবহমান (কাল), মৃ—ম্রিয়মাণ [ বানানটি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর ], পরা-অর্—পলায়মান [ র্ স্থানে ল্ ], বি-লী—বিলীয়মান, আ-রভ্—আরভমাণ, সেব্—সেবমান (পুত্র বা শিষ্য), অপ-সৃ—অপসৃয়মান (যিনি নিজেই সরিয়া পড়িতেছেন), ধাব্—ধাবমান, প্রতি-ঈক্ষ্—প্রতীক্ষমাণ, আস্স্—আসীন। তদ্রূপ নিরীক্ষমাণ, বীক্ষমাণ। এই উদাহরণগুলি কর্তৃবাচ্যের।
প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি কর্মবাচ্যে প্রযুক্ত হইলে কর্মের বিশেষণ হইবে। সের্ সেব্যমান (পিতা বা গুরু; কর্মবাচ্যে য্-এর আগম হইয়াছে লক্ষ্য কর), অপ-মৃ—অপস্রিয়মাণ (যাহাকে অপসারিত করা হইতেছে), দৃশ্—দৃশ্যমান (জগৎ), দা—দীয়মান (বস্তু), নী—নীয়মান, আ-লোচ্—আলোচ্যমান (বিষয়), প্রতি—ঈ—প্রতীক্ষ্যমাণ, আ-রভ্ + ণিচ্—আরভ্যমাণ, ভ্ৰম্ + ণিচ্—ভ্রাম্যমাণ, নিঃ-মা—নির্মীয়মাণ, প্রতি-ই—প্রতীয়মান। আ প্রত্যয়যোগে শানচ্ প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দগুলির স্ত্রী-রূপ পাওয়া যায়। যেমন, শয়ান—শয়ানা, বিদ্যমান—বিদ্যমানা। সেইরূপ নিরীক্ষ্যমাণা, বীক্ষ্যমাণা।
শতৃ অপেক্ষা শানচ্ প্রত্যয়ের দিকে বাংলা ভাষার আগ্রহ বেশী বলিয়া পরস্মৈপদী ধাতুর উত্তরও শানচ্ প্রত্যয়-যোগে প্র-বহ্—প্রবহমান, চল্—চলমান, ভাস্—ভাসমান প্রভৃতি সংস্কৃত ব্যাকরণবিরুদ্ধ অথচ ব্যবহারসিদ্ধ শব্দের সৃষ্টি হইয়াছে।
পৌনঃপুনিকতা বা আতিশয্য বুঝাইতে যঙন্ত ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে শানচ্ প্রত্যয়যুক্ত কয়েকটি শব্দ বাংলায় বেশ প্রচলিত রহিয়াছে। জ্বল্ + যঙ্—জাজ্বল্যমান (আতিশয্য), রুদ্ + যঙ্—রোরুদ্যমান (পৌনঃপুনিকতা), দুল্ + য—দোদুল্যমান, দীপ্ + য—দেদীপ্যমান।
ক্যঙ্ প্রত্যয়যুক্ত কয়েকটি তৎসম নামধাতুর উত্তর শানচ্ প্রত্যয়ের যোগে লব্ধ কয়েকটি শব্দ বাংলায় বেশ সমাদর পাইতেছে। শব্দ + ক্য—শব্দায়মান, ঘন + ক্যঙ্—ঘনায়মান, দুর্মনস্ + ক্যঙ্—দুর্মনায়মান, শ্যাম + ক্যঙ্—শ্যামায়মান। অনুরূপভাবে অমৃতায়মান, ধূমায়মান, অনুভূয়মান। বাংলাতেও নূতন শব্দ তৈয়ারী হইতেছে—-সবুজায়মান, অস্তায়মান। ঊর্ধ্বে অমৃতায়মান আকাশ, নিম্নে সবুজায়মানা বসুন্ধরা।
॥ ক্ত (ত) ॥
“হইয়াছে” অর্থে বর্তমান কালে কর্তৃবাচ্যে অকর্মক ধাতুর উত্তর এবং অতীতকালের সকর্মক ধাতুর উত্তর এই প্রত্যয় হয়। ক্ ইৎ, ত থাকে। ক্ত প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষণ। জ্ঞা—জ্ঞাত, স্না—স্নাত, যা–যাত, ভী—ভীত, ক্রী—ক্রীত, প্রী—প্রীত, আ-নী—আনীত, প্র-নী—প্রণীত, চ্যু—চ্যুত, অনু-ই—-অন্বিত [ সন্ধি লক্ষ্য কর ], অনু-উদ্-ই—অনূদিত [ কর্তৃবাচ্যে : পরে উদিত অর্থে ], অধি-ই—অধীত, বি-পরি-ই—বিপরীত, সম্-অব-ই—সমবেত, অভি-প্র-ই—অভিপ্রেত, শ্রু–শ্রুত, দু—দূত, অন্তঃ-ভূ—অন্তর্ভূত, খ্যা–খ্যাত, আ-হু—আহুত, আ-ত্বে—আহূত [ ত্বে স্থানে হূ ], কৃ—কৃত, ঋঋত (বিণ) ও ঋণ (বি), আ-ঋ—আর্ত, সম্-কৃ—সংস্কৃত [ সন্ধি দেখ ], অপ-স্—-অপসৃত, স্মৃ—স্মৃত, ধৃ—ধৃত, পর-ভূ– পরভৃত (কোকিল), মৃ—মৃত, আ-হৃ– আহৃত, নিঃ-বা—নির্বাণ [ ত-স্থানে ন হইয়াছে, ণত্ব-বিধিমতে সেই ন ণ হইয়াছে ], ক্ষি—ক্ষীণ (অন্ত্য ই দীর্ঘ হইয়াছে), দী—দীন, লী—লীন, শ,—শীর্ণ (ৠ-স্থানে ঈর্, ত-স্থানে ন এবং ণত্ব-বিধি), দ্,—দীর্ণ, জ্, –জীর্ণ, বি-হ্–বিতীর্ণ [ “বিতরিত” ব্যাকরণসংগত নয় ], আ-কু–আকীর্ণ, উদ্-তু–উত্তীর্ণ, বি-স্তু—বিস্তীর্ণ, পা—পীত [ আ-স্থানে ঈ ], হা—হীন [ শেষস্বর অনুচ্চারিত ], স্থা–স্থিত [ আ-স্থানে ই ], পরি-মা—পরিমিত, প্রতি-স্থা—প্রতিষ্ঠিত [ সন্ধি লক্ষ্য কর ], উপ-স্থা—উপস্থিত [ উচ্চারণটি হলন্ত, লক্ষ্য কর ]; শাস্—শিষ্ট, ধা—হিত [ ধা-স্থানে হি ], অভি-ধা—অভিহিত, অন্তঃ-ধা—অন্তর্হিত; দা—দত্ত [ দা-স্থানে দৎ ]; গৈ—গীত [ ঐ স্থানে ঈ ]; শী—শয়িত [ ঈ-স্থানে অয়ি ], শী + ণিচ্—শায়িত; বি-জ্ঞাপি (জ্ঞা + ণিচ্)—বিজ্ঞাপিত; জাগ্—জাগরিত; গম্—গত [ ধাতুর অন্ত্যবর্ণের লোপ ], নম্–নত, প্ৰ-নম্—প্ৰণত [ ণত্ব-বিধি লক্ষ্য কর ], বি-রম্― বিরত, নি-রম্—নিরত (নিযুক্ত), নিঃ-রম্—নীরত (বিরত), আ-যম্—আয়ত, সম্-যম্—সংযত, উদ্-যম্-–উদ্যত, ক্ষণ–ক্ষত (বিশেষ্য-বিশেষণ দুইই), সম্-মন্—সম্মত, অভি-মন্—অভিমত (উচ্চারণ হলন্ত, বি-তন্—বিতত (ব্যাপ্ত), নি-হন্–নিহত, জন্—জাত [ ধাতুর অন্ত্যবর্ণের লোপের সঙ্গে আ-এর আগম হইয়াছে ], স্ব-খন্—স্বখাত; শক্ শক্ত, ক্ষিপ্—ক্ষিপ্ত, তৃপ্—তৃপ্ত, লিপ্—লিপ্ত, লুপ্–লুপ্ত, গুপ্–গুপ্ত, বৃধ—বৃদ্ধ, বৃধ + ণিচ্—বর্ধিত, দৃপ্—দৃপ্ত, গ্রস্—গ্রস্ত, এস্–এস্ত, দিশ্—দিষ্ট, আ-বিশ্—আবিষ্ট, দৃশ্―দৃষ্ট, অস্—অস্ত, অভি-অস্—অভ্যস্ত, নি-অস্—ন্যস্ত, বি-অস্—ব্যস্ত, ক্লিশ্―ক্লিষ্ট, আ-কৃষ্—আকৃষ্ট, তুম্—তুষ্ট, ইষ্ইষ্ট (অভিলষিত অর্থে বিণ, বাঞ্ছিত বস্তু অর্থে বি), পিষ্—পিষ্ট, পুষ্—পুষ্ট, হৃষ্—হৃষ্ট, রুষ্—রুষ্ট, বিশ্বস্-বিশ্বস্ত, মদ্—মত্ত, আ-যৎ—আয়ত্ত, ক্রুর্—ক্রুদ্ধ, যু—যুদ্ধ, রুধ—রুদ্ধ, শুধু—শুদ্ধ, সি—সিদ্ধ, লভ্—লব্ধ, লুভ্—লুব্ধ, আ-রভ্—আরব্ধ, দুহ্ দুগ্ধ (বি), দ—দগ্ধ, স্নিহ্—স্নিগ্ধ, দিহ্—দিগ্ধ (লিপ্ত), মুহ্—মুগ্ধ, মূঢ়; রুহ্—রূঢ়, সম্-আ-রুহ্—সমারূঢ়, গুহ্—গূঢ়, দৃহ্—দৃঢ়, বি-বহ্–ব্যূঢ় (ধাতুর ব উ হইয়াছে), ক্ষুদ্—ক্ষুণ্ণ, খিদ্—খিন্ন, ক্লিদ্–ক্লিন্ন, স্বিদ্–স্বিন্ন, অদ্—অন্ন (বি), ছিদ্―ছিন্ন, ভিদ্—ভিন্ন, আ-পদ্–আপন্ন, বি-উদ্-পদ্–ব্যুৎপন্ন, আ-সদ্–আসন্ন, অব-সদ্—অবসন্ন, বি-সদ্—বিষণ্ণ [ ষত্ব-বিধি ], নি-সদ—নিষণ্ণ [ অবস্থিত, উপবিষ্ট, শয়িত তিনটি অর্থেই ], পৃ.–পূর্ত, পূর্—পূর্ণ (নিপাতন), ত্বর্—তূর্ণ (ব্-স্থানে ঊ), স্লৈ–ম্লান, ভজ্—ভক্ত [ জ্-স্থানে ক্ ], যুজ—যুক্ত, ত্যজ্—ত্যক্ত, উদ্-ত্যজ্—উত্ত্যক্ত, মুচ্—মুক্ত, উদ্-মুচ্—উন্মুক্ত, উদ্-মোচি (মুচ্ + ণিচ্)—উন্মোচিত, আ-ছাদি (ছদ্ + ণিচ্)—আচ্ছাদিত, অভি-সিচ্—অভিষিক্ত [ ষত্ব-বিধি লক্ষ্য কর ], পচ্–পক্ব [ চ্-স্থানে ক্, ত-স্থানে ব ]; শুষ্—শুষ্ক [ ত-স্থানে ক ]; বচ্–উক্ত [ ব-স্থানে উ, চ্-স্থানে ক্ ]; বপ্—উপ্ত, বদ্—উদিত, অনু-বদ্—অনূদিত [ কর্মবাচ্যে : ভাষান্তরিত অর্থে। বানানটি লক্ষ্য কর ]; স্বপ্–সুপ্ত [ ব-স্থানে উ ]; যজ্—ইষ্ট [ য স্থানে ই, শব্দটিতে যজ্ঞাদি ক্রিয়া বুঝায়; ইয্ ধাতুনিষ্পন্ন ইষ্ট’ শব্দটির সহিত এই ইষ্ট শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত ও অর্থগত পার্থক্যটি লক্ষ্য কর ]; ব্যধ—বিদ্ধ [ য-স্থানে ই ], প্রচ্ছ—পৃষ্ট [ র-স্থানে ঋ ], গ্রহ্—গৃহীত [ ঈ-র আগম, স্ত্রীলিঙ্গে গৃহীতা ]; ক্লম্—ক্লান্ত [ উপধার অ-স্থানে আ ], শম্—শান্ত, প্র-শম্ + ণিচ্― প্রশমিত, শ্রম্—শ্রান্ত, কম্—কান্ত, ক্ষম্—ক্ষান্ত, রজ্—রক্ত [ ধাতুর উপধা ন্ লোপ্, জ্-স্থানে ক্; শব্দটি বিশেষ্য ], বন্ধু—বদ্ধ [ ধাতুর উপধা ন্ লুপ্ত, ধূ হইয়াছে দ্, ত হইয়াছে ধ ], অনু-রজ্—অনুরক্ত, অচ্–অঞ্চিত (পূজিত বা উত্থিত), অজ্—অক্ত, বি-অন্জ—ব্যক্ত, আ-সজ্—আসক্ত, দশ্—দষ্ট, ভ্ৰশ্—ভ্ৰষ্ট, মন্থ—মথিত [ ই আসিয়াছে; মস্থিত শব্দটি ব্যাকরণসিদ্ধ নয় ], গ্রন্থ—গ্রথিত, মজ্—মগ্ন [ স্ লোপ, জ্-স্থানে গ্, ত-স্থানে ন ], সম্-লজ্–সংলগ্ন, ভজ্—ভগ্ন, উদ্-বিজ্—উদ্বিগ্ন [ জ্-স্থানে গ্, ত স্থানে ন ], রুজ্—রু [ জ্-স্থানে গ্, ত-স্থানে ন, পরে ণত্ব-বিধি। রুগ্ণ বানানটি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর; কদাপি রুগ্ন নয় ], নি-স্তভ্—নিস্তব্ধ, অস্–অস্ত (স্খলিত), প্র-শস্–প্রশস্ত, প্রশংসিত; শ্ৰু + ণিচ্—শ্রাবিত (শুনানো হইয়াছে এমন), ভী + ণিচ্—ভীষিত (ভয় দেখানো হইয়াছে এমন), স্তভ্ + ণিচ্—স্তম্ভিত, সৃজ্—সৃষ্ট, কৃপ্ + ণিচ্—কল্পিত। “নৌকা ভেসে চলে যায় পূর্ণ বায়ুভরে তূর্ণ স্রোতোবেগে।”
লিখ্—লিখিত [ ধাতুর উত্তর ই-কারের আগম ], লঙ্ঘ—লঙ্ঘিত, অচ্–অর্চিত, বঞ্চ—বঞ্চিত, বাঞ্ছ –বাঞ্ছিত, রাজ–রাজিত, পুরা-ঘট্—পুরাঘটিত, পর্—পঠিত, প্রথ–প্রথিত, প—পতিত, নিন্দ–নিন্দিত, নন্দ নন্দিত (আনন্দিত), কিন্তু নন্দ + ণিচ্—নন্দিত (তোষিত অর্থে), বিদ্—বিদিত, বাধ—বাধিত, স্পর্ধ—স্পর্ধিত, ক্ষুভ্—ক্ষুভিত (কিন্তু ক্ষুব্ধ রূপটি প্রচলিত), ক্ষুধ—ক্ষুধিত, শিক্ষ—শিক্ষিত, শ্বস্—শ্বসিত, কৃৎ—কর্তিত, কুৎ– কীর্তিত, গর্হ—গর্হিত, রহ্—রহিত, পরি-ঈক্ষ্—পরীক্ষিত [ সন্ধি লক্ষ্য কর ], আ-কাঙ্ক্ষ—আকাঙ্ক্ষিত, পরা-অর্—পলায়িত [ র্-স্থানে ল্ ]। অনুরূপভাবে কম্পিত, চুম্বিত, মিলিত, শীলিত, সেবিত, রক্ষিত, তৃষিত, চটিত, গর্জিত, চেষ্টিত, বেষ্টিত, কথিত, লুণ্ঠিত, ঘৃণিত, মুদিত, চুষিত, কুপিত, বিলম্বিত, আচরিত, স্ফুরিত, ধাবিত, ভর্ৎসিত ইত্যাদি। রজ্ + ণিচ্ (= রঞ্জি : রঙ করা অর্থে)–রঞ্জিত, [ কিন্তু রণ-জি + ক্বিপ্ = রণজিৎ; শব্দদ্বয়ের ব্যুৎপত্তি, অর্থ ও বানান ভালোভাবে দেখ ]; বস্–উষিত [ ব-স্থানে উ, পরে ষত্ব-বিধি ], অধি-বস্–অধ্যুষিত, প্র-বস্—প্রোষিত; দিব্–দ্যূত (বি)। [ সংস্কৃতে ক্ত ও ক্তবতু প্রত্যয়কে নিষ্ঠা প্রত্যয় বলে। ]
॥ ক্তি ॥
ক্রিয়ার ভাব বুঝাইতে ক্তি প্রত্যয় হয়। ক্তি প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষ্য ও স্ত্রীলিঙ্গ। ক্ ইৎ, তি থাকে। (ক্ত প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে অধিকাংশ স্থলে ই-যোগে ক্তি প্রত্যয়ান্ত শব্দ পাওয়া যায়) : খ্যা খ্যাতি, স্থা–স্থিতি, সম্-স্থা—সংস্থিতি, প্রতি-ই (গমন করা)—প্রতীতি, ক্ষি—ক্ষিতি, নী—নীতি, প্রী—প্রীতি, ভী—ভীতি, শ্রু—শ্রুতি (বেদ), সু—সুতি (ক্ষরণ), স্ত—স্তুতি, ঋ–ঋতি (গমন), কৃ—কৃতি, কু—কীর্তি, অনু-ভূ–অনুভূতি, বি-স্মৃ– বিস্মৃতি, প্র-কৃ—প্রকৃতি, গৈ—গীতি, গ্লা—গ্লানি [ তি-স্থানে নি ], হা–হানি, মন্–মতি [ ন্ লুপ্ত ], গম্—গতি [ ম্ লুপ্ত ], প্র-নম্—প্ৰণতি [ ণত্ব-বিধি ], উদ্-যম্—উদ্যতি [ ধাতুর ম্ লুপ্ত, য J হইয়াছে ], আ-বৃৎ—আবৃত্তি, আ-যম্—আয়তি [ য য় হইয়াছে ], আ-রম্ –আরতি, জন্—জাতি, সম্-হন্–সংহতি, ক্ষণ– ক্ষতি, দীপ—দীপ্তি, পরি—তৃপ্—পরিতৃপ্তি, বি-আপ্–ব্যাপ্তি, স্বপ্—সুপ্তি, কম্–কান্তি, সম্-ক্রম্ সংক্রান্তি, ক্ষম্—ক্ষান্তি, ভ্রম্—ভ্রান্তি, ক্লম্—ক্লান্তি, শম্—শান্তি, শ্রম্—-শান্তি, শক্–শক্তি, মুচ্-মুক্তি, বচ্–উক্তি, যুজ্—যুক্তি, ভজ্—ভক্তি, যজ্—ইষ্টি [ য-স্থানে ই, শব্দটির অর্থ যজ্ঞ ], আ-ঋ—আর্তি, সম্-কৃ—সংস্কৃতি (সন্ধি লক্ষ্য কর), সৃজ্—সৃষ্টি, বৃৎ–বৃত্তি, আ-যৎ—আয়ত্তি (অধীনতা), ভিদ্—ভিত্তি, আ-পদ্—আপত্তি, বি-পদ্—বিপত্তি, সম্-পদ্–সম্পত্তি, বি-উদ্-পদ্–ব্যুৎপত্তি [ সন্ধি দেখ ], আ-সদ্—আসত্তি (নৈকট্য), বৃধু–বৃদ্ধি, উপ-লভ্—উপলব্ধি [ ভ্-স্থানে ব্, তি-স্থানে ধি ], সম্-ঋধু—সমৃদ্ধি, বুধ-বুদ্ধি, শুধু—শুদ্ধি, ইষ্–ইষ্টি (ইচ্ছা), দৃশ—দৃষ্টি, কৃষ্—কৃষ্টি, তুষ্–তুষ্টি, পুষ্–পুষ্টি, বৃ—বৃষ্টি, পূর্—পূর্তি, বি—অজ্—ব্যক্তি, আ-সজ্—আসক্তি, প্র-শস্–প্রশস্তি, বি-রজ্—বিরক্তি, অনু-রজ্—অনুরক্তি।
প্রয়োগ : “অনিমিত্তা ভক্তি মুক্তির থেকেও গরীয়সী।” “তুষ্টি রুষ্টি দুই-ই তোমার মঙ্গলস্পর্শ।” প্রাণবান্ বস্তুমাত্রেরই মধ্যে একই সঙ্গে বিকৃতি ও সংস্কৃতি চলতেই থাকে।
॥ ণক, যক, তৃচ্, তৃন্ ॥
“যে করে” এই অর্থে কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয়গুলি হয়। এইসকল প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য।
(ক) ণক (ণ্ ইৎ, অক থাকে) : নী—নায়ক [ ধাতুর অন্ত্যস্বরের বৃদ্ধি ], পরি—চি—পরিচায়ক, শ্রু—শ্রাবক, পূ–পাবক, গৈ—গায়ক, দা–দায়ক [ আ-কারান্ত ধাতুর উত্তর য হয় ], কৃ—কারক, ধৃ + ণিচ্—ধারক, স্মৃ + ণিচ্—স্মারক; জ্ব,+ ণিচ্—জারক, দৃ. –দারক (পুত্র); পচ্–পাচক [ উপধা স্বরের বৃদ্ধি ], বচ্–বাচক, যজ্—যাজক, পঠ–পাঠক, হন্—ঘাতক [ হ্-স্থানে ঘূ ], নশ্ + ণিচ্—নাশক; সিচ্—সেচক [ উপধা স্বরের গুণ ], ছিদ্–ছেদক, ক্ষিপ্–ক্ষেপক, শু—শোষক, শিক্ষ্ + ণিচ্—শিক্ষক, সূচ্ + ণিচ্—সূচক, পরি + ঈক্ষ—পরীক্ষক, অধি-আপি (ই + ণিচ্)—অধ্যাপক, দ্যুত্—দ্যোতক, পূজ্—পূজক, নিন্দ্ নিন্দক; জনি (জন্ + ণিচ্)—জনক [ ধাতুর শেষবর্ণের লোপ ], পালি (পো + ণিচ্)—পালক, রজ্ + ণিচ্—রঞ্জক। ণক প্রত্যয়ান্ত শব্দের অক স্থানে ইকা যোগে স্ত্রী-রূপ পাওয়া যায়। বি-ভীষি (ভী + ণিচ্) + ণক + স্ত্রীলিঙ্গে অক স্থানে ইকা = বিভীষিকা।
(খ) যক (শিল্পী বুঝাইলে নৃৎ, খন্ ও রজ্ ধাতুর উত্তর যক প্রত্যয় হয়। য ইৎ, অক থাকে।) : নৃৎ—নর্তক (উপধা স্বরের গুণ), খন্—খনক, রন্জ—রজক [ উপধা ন্ লুপ্ত। রজক ও রঞ্জক শব্দদ্বয়ের ব্যুৎপত্তি, বানান ও অর্থগত পার্থক্য লক্ষ্য কর ]। যক প্রত্যয়ান্ত শব্দে ঈ-যোগে স্ত্রীরূপ পাওয়া যায়।
(গ) তৃচ্ (চ্ ইৎ, তৃ থাকে) : পা (পালন করা)—পিতৃ (কর্তৃকারকের একবচনে পিতা), মা–মাতৃ (মাতা), ভ্রাজ্—ভ্রাতৃ (ভাতা)।
(ঘ) তৃন্ (ন্ ইৎ) : দা—দাতৃ (কর্তৃকারকে ১বচনে দাতা), বিশ্ব-পা—বিশ্বপাতৃ (বিশ্বপাতা), বি-ধা—বিধাতু (বিধাতা), প্র-মা–প্রমাতৃ (প্রমাতা : পরিমাণ-কর্তা, পুংলিঙ্গ; স্ত্রী-রূপ—প্রমাত্রী), বি-জি—বিজেতৃ (বিজেতা), নী–নেতৃ (নেতা), আ-নী—আনেতৃ, প্র-নী—প্রণেতৃ (প্রণেতা), শ্রু–শ্রোতৃ (শ্রোতা), কৃ কর্তৃ (কর্তা), ভূ–ভর্তু (ভর্তা), অপ-হৃ—অপহর্তৃ (অপহর্তা), বিদ্–বেত্ত্ব (বেত্তা), বুধ—বোদ্ধৃ (বোদ্ধা), যুধ—যোদ্ধৃ (যোদ্ধা), হন্―হত্ত্ব (হন্তা), যম্—যত্ত্ব (যন্তা), নি-যম্—নিয়ন্ত্ (নিয়ন্তা), বপ্–বপ্ত (বপ্তা), অনু-স্থা—অনুষ্ঠাতৃ (অনুষ্ঠাতা), শিক্ষি (শিক্ষ্ + ণিচ্)—শিক্ষয়িত্ব (শিক্ষয়িতা), স্থাপি (স্থা + ণিচ্)—স্থাপয়িত্ব (স্থাপয়িতা), রচি (রচ্ + ণিচ্)—রচয়িত্ব (রচয়িতা), জনি (জন্ + ণিচ্)—জনয়িত্ব (জনয়িতা), সু—সবিতৃ [ অন্ত্যস্বরের গুণ, ই-র আগম; কর্তৃকারক ১বচন সবিতা—পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ—সবিত্রী ], স্ত—স্তোতৃ (স্তোতা), গ্রহ্—গ্রহীতৃ (গ্রহীতা, স্ত্রীলিঙ্গে গ্রহীত্রী; গৃহীতা শব্দটির সহিত ব্যুৎপত্তি, রূপ ও অর্থগত পার্থক্য দেখ)। তৃন্ প্রত্যয়ান্ত শব্দে ঈ-যোগে স্ত্রী-রূপ পাওয়া যায়; তখন ঋ র-ফলা হয় : দাত্রী, কর্ত্রী, অপয়িত্রী, শিক্ষয়িত্রী, নেত্রী ইত্যাদি।
॥ অন ॥
ণিজন্ত ও অণিজন্ত ধাতুর কর্তৃবাচ্যে ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। এই প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলি বিশেষ্য ও পুংলিঙ্গ। আ-প্রত্যয়-যোগে ইহাদের স্ত্রী-রূপ পাওয়া যায়।
(ক) কর্তৃবাচ্যে : নন্দি—নন্দন (যে আনন্দ দেয়), রমি—রমণ, লোভি—লোভন, মধু-সুদি—মধুসূদন, নাশি—নাশন, ভীষি (ভী + ণিচ্)–ভীষণ, জন-অদি (অৰ্দ + ণিচ্)—জনার্দন, ঘ—ঘটন, দহ্—দহন, তপ্–তপন, তাপি (তপ্ + ণিচ্)—তাপন, মন্ত্—মণ্ডন (প্রসাধক), ক্রুব্—ক্রোধন, কুপ্–কোপন, শুভ্ শোভন, যুধ—যোধন, মোহি (মুহ্ + ণিচ্)—মোহন (মুগ্ধকারী)।
(খ) ভাববাচ্যে (এখানে ক্রিয়ার অর্থটিই প্রধান) : অৰ্চ—অৰ্চন, গণ্—গণন, বন্দ–বন্দন, বন্ধ—বন্ধন, বিদ্—বেদন, গ্রন্থ—গ্রন্থন, মন্ত্র—মন্ত্রন, রচ্–রচন, অব-সো-অবসান, কৃপ্–কল্পন, ধারি (ধৃ + ণিচ্)—ধারণ, পাঠি পেট্ + ণিচ্)—পাঠন, সাধি (সাধ + ণিচ্)—সাধন, সম্-আ-লোচ্—সমালোচন, দ্যুৎ—দ্যোতন, শুচ্–শোচন, সূচ্—সূচন, সম্-বর্ধি (বৃধৃ + ণিচ্)—সংবর্ধন, সান্ত্ব—সান্ত্বন, বি-বিচ্–বিবেচন, ইষ্–এষণ, উপ-আস্—উপাসন, অভি-অর্থ—অভ্যর্থন, বস্–বাসন (কামনা), বি-অন্জ্–ব্যঞ্জন, অধি-আপি (ই + ণিচ্—অধ্যাপন, অৰ্পি (ঋ + ণিচ্)—অর্পণ, রন্জ্ + ণিচ্ –রঞ্জন, বি-চক্ষু–বিচক্ষণ, ছলি (ছল্ + ণিচ্)—ছলন। “বাসরশয়ন করেছি রচন কুসুমথরে।” “অয়ি অবন্ধনে।” “দিব্য এ সদন-মাঝে তাহার সূচন।” “ভজন পূজন সাধন আরাধনা সমস্ত থাক্ পড়ে।”
॥ অনট্ ॥
বিবিধ কারবাচ্যে ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয়টির প্রয়োগ হয়। এই প্ৰত্যয়ান্ত শব্দ ক্লীবলিঙ্গ। অন-এর ট্ ইৎ, অন থাকে।
(ক) করণবাচ্যে : নী—নয়ন (যাহার দ্বারা নীত বা চালিত হয়), চর্—চরণ, লোচ্—লোচন, ভূয্—ভূষণ, অব-গুর্—অবগুণ্ঠন, যা-যান (যাহাতে করিয়া যাওয়া যায়), বাহি (বহ্ + ণিচ্)—বাহন, আ-বহ্ + ণিচ্—আবাহন।
(খ) অধিকরণ-বাচ্যে : ই বা অয়্ (গমন করা)—অয়ন, শী–শয়ন (শয্যা অর্থে), ভূ–ভুবন (পৃথিবী) ও ভবন (গৃহ), স্থা—-স্থান, প্রতি-স্থা—প্ৰতিষ্ঠান [ সন্ধি লক্ষ্য কর ]; উদ্-যা—উদ্যান। “কদম্বরেণু বিছাইয়া দাও শয়নে।” “সেই মুকুল-আকুল বকুলকুঞ্জ ভবনে।”
(গ) ভাববাচ্যে :—শ্রবণ, ভু–ভবন (উৎপত্তি), গম্—গমন, মন্ত্—মণ্ডন (আভরণ), মুহ্—মোহন (মুগ্ধ করা), বৃধু–বর্ধন, দৃশ্–দর্শন, গৈ—গান, ভুজ্—ভোজন, মৃদ্—মর্দন, তৃপ্—তর্পণ (সন্তোষ), তৰ্পি (তৃপ্ + ণিচ্)—তৰ্পণ (সন্তোষসাধন), দা—দান, অধি-ই—অধ্যয়ন, শি—শিক্ষণ (অধ্যয়ন অর্থে; অধ্যাপনা অর্থে শিক্ষ্ + ণিচ্ + অনট্ হইবে; শব্দটিতে ণ লক্ষ্য কর), অনু-ইষ্—অন্বেষণ, উদ্-চারি (চর্ + ণিচ্)—উচ্চারণ, পত্–পতন, লিখ্—লিখন, লেখন; ঘ্রা—ঘ্রাণ, জ্ঞা–জ্ঞান, অনু-স্থা—অনুষ্ঠান, রুদ্–রোদন, রক্ষ্—রক্ষণ, কৃ, করণ, মৃ—মরণ, স্মৃ—স্মরণ, বৃ—বরণ, ভূ—ভরণ, শৃ.—শরণ, বি-ত,—বিতরণ, জারি (জ্ব, + ণিচ্)—জারণ, প্র যা—প্রয়াণ, হৃ—হরণ, আ-রুহ্—আরোহণ, সম্-বুধ—সম্বোধন, বি-ঈক্ষ্—বীক্ষণ, লালি (লড্ + ণিচ্)–লালন, প্লাবি (প্লু + ণিচ্)—প্লাবন, নিঃ-বাচি—নির্বাচন, তোষি (তুম্ + ণিচ্)–তোষণ, পালি (পা + ণিচ্)—পালন, হন্–ঘাতন, মন্–মনন, বি-ধা–বিধান, পরি-মা—পরিমাণ, পরা-অর্—পলায়ন, সম্-চি—সঞ্চয়ন, সিচ্—সেচন, ধ্যৈ—ধ্যান, সৃজ্—সর্জন [ সৃজন ব্যাকরণসঙ্গত নয় ], বি-সৃজ্—বিসর্জন, বৃজ্–বর্জন, আ-ত্বে—আহ্বান, আ-লিগ্—আলিঙ্গন। অনুরূপভাবে চলন, ক্ষরণ, স্খলন, গর্জন, লঙ্ঘন, স্তম্ভন, স্পন্দন, নিষ্পেষণ, ম্লান, ক্রন্দন, জ্বলন, বন্ধন, বসন, পঠন, স্পর্শন, সেবন, মন্থন, বিকাশন, অবস্থান। “সেই কুহুকুহরিত বিরহরোদন থেকে থেকে পশে শ্রবণে।” তোমাদের আনন্দে দীপ্তি থাকুক, দহন যেন না থাকে। “তবু আশা জেগে থাকে প্রাণের ক্রন্দনে।” “ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত-অম্বর মাঝে।” “করেছ কি ক্ষমা যতেক আমার স্খলন পতন ত্রুটি?”
॥ ইষ্ণু, ক্কিপ, আলু, ঊক, উক, বর ॥
স্বভাব বা ধর্ম অর্থে কর্তৃবাচ্যে এই প্রত্যয়গুলি হয়। ক্বিপ্ প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষ্য; বাকীগুলি বিশেষণ।
(ক) ইষ্ণু : সহ্ –সহিষ্ণু; বৃধ—বর্ধিষ্ণু, বৃৎ—বর্তিষ্ণু, চল্ –চলিষ্ণু, চর্ চরিষ্ণু, ক্ষি—ক্ষয়িষ্ণু, গ্রহ—গ্রহিষ্ণু।
(খ) ক্বিপ্ (সুবন্ত পদের পরবর্তী ধাতুর উত্তর ক্বিপ্ হয়। ক্বিপ্-এর সমস্তটাই ইৎ; তাই এই প্রত্যয়টিকে শূন্যপ্রত্যয় বলে) : ইন্দ্র-জি—ইন্দ্ৰজিৎ (হ্রস্বস্বরান্ত ধাতুর উত্তর ৎ-এর আগম), পর-ভূ–পরভৃৎ [ কাক : পরভৃত (কোকিল) শব্দটির সহিত এই শব্দটির ব্যুৎপত্তি, বানান ও অর্থগত পার্থক্যটি লক্ষ্য কর ]; সেনা-নী—সেনানী, উদ্-ভিদ্—উদ্ভিদ্, পথি-কৃ—পথিকৃৎ, পরি-ঈক্ষ্—পরীক্ষিৎ, সম্-রাজ—সম্রাজ্ (কর্তৃকারক ১ব সম্রাট্), বি-রাজ্—বিরাজ (বিরাট্), আ-শাস্—-আশিস্ (বানানটি মনে রাখিবে), দি—দিক্, সম্-পদ্-সম্পদ, প্র-আ-বৃষ্—প্রাবৃষ্ (কর্তৃকারক ১ব প্রাবৃট্), সৃজ্—স্ৰক্ (মালা), প্র-সূ—প্রসূ, শাস্ত্র-বিদ্—শাস্ত্রবিৎ, সভা-সদ্—সভাসদ্, পরি-সদ্—পরিষদ্ (যত্ব-বিধি দেখ), উপ-নি-সদ্—উপনিষদ্, সম্-ই—সমিধ (ধাতুর উপধা ন্ লোপ)। তদ্রূপ ধর্মবিৎ, রণজিৎ, লোকজিৎ (বুদ্ধদেব), বিশ্বজিৎ, শত্রুজিৎ, দেবজিৎ, শাপজিৎ, মনোজিৎ, আপদ, বিপদ, যুগপৎ, বিদ্যুৎ, সংবিৎ, ফলপ্রসূ, অগ্রণী প্রভৃতি। গম্ + ক্বিপ্ = জগৎ (নিপাতনে)। তৃষ্ + ক্বিপ্ + আ = তৃষা (কিন্তু √তৃষ্ + ন + আ = তৃষ্ণা)। “সেই মানুষই যথার্থ স্বরাষ্ট্র যে আপনার রাজ্য আপনি সৃষ্টি করে।” মনীষী হরিনাথ দে-র জ্ঞানতৃষ্ণা আমাদের অবাক্ করে।
লক্ষ্য কর—ক্কিপ্ প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দটি যেখানে ব্যঞ্জনান্ত, সেখানে শব্দটির শেষে হস্ চিহ্ন একান্ত আবশ্যক।
(গ) আলু : দয়—দয়ালু, ঈর্ষ—ঈর্ষালু, লুভ্—লোভালু, নি-দ্রা—নিদ্রালু, তম্-দ্রা—তন্দ্ৰালু।
(ঘ) ঊক : জাগ্—জাগরূক, শো–শুক
(ঙ) উক : ভূ (চিন্তা করা)—ভাবুক, কম্—কামুক।
চ) বর : ঈশ্—ঈশ্বর, স্থা–স্থাবর, ভাস্-ভাস্বর, পৈ—পীবর।
॥ ণিন্ ॥
“যে করে” এই অর্থে ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ণিন্ প্রত্যয় হয়। (ণ্ ইৎ, ইন্ থাকে) : বদ্–বাদিন্ (কর্তৃকারক বাদী), বস্–বাসিন্ (বাসী), অপ-রাধ—অপরাধিন্ (অপরাধী), সম্-চর্—সঞ্চারিন্ (সঞ্চারী), পা–পায়িন্ (পায়ী), স্থা–স্থায়িন্ (স্থায়ী), জি—জয়িন্ (জয়ী), ত্যজ্—ত্যাগিন্ (ত্যাগী), ভুজ্—ভোগিন্ (ভোগী), রুজ্—রোগিন্ (রোগী), যুজ্—যোগিন্ (যোগী), অনু-গম্ অনুগামিন্ (অনুগামী), সম্-স্—সংসারিন্ (সংসারী), বি-দ্বি—বিদ্বেষি (বিদ্বেষী), বি-দ্রুহ—বিদ্রোহিন (বিদ্রোহী), অধি-কৃ—অধিকারিন ( অধিকারী), জীব—জীবিন্ (জীবী, বানানটি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর), অভি-লষ্—অভিলাষি (অভিলাষী), রজ্—রাগিন (রাগী—ধাতুর উপধা ন্ লোপ পাইয়াছে); পিতৃ-হন্—পিতৃঘাতিন্ (পিতৃঘাতী –হ্-স্থানে ঘৃ, ন্-স্থানে ত্), প্রতি-রু—প্রতিরোধিন্ (প্রতিরোধী), বি-বিচ্—বিবেকিন্ (বিবেকী—চ্-স্থানে ক্), স্তন্য-পা—স্তন্যপায়িন (স্তন্যপায়ী)। তদ্রূপ প্রতিবাদী, প্রিয়বাদী, মিথ্যাবাদী, সত্যবাদী, মঞ্জুভাষী, প্রবাসী, অধিবাসী, ব্যভিচারী, সহগামী, মসীজীবী, কৃষিজীবী, নভশ্চারী ইত্যাদি। ণিন্ প্রত্যয়জাত শব্দটি পুংলিঙ্গ; মূল শব্দে ঈ-যোগে স্ত্রীলিঙ্গ হয়; তখন রোগিণী, অনুরাগিণী, অভিলাষিণী, বিদ্রোহিণী প্রভৃতি ক্ষেত্রে ণত্ব-বিধি লক্ষ্য রাখ।
॥ সন্ ॥
“ইচ্ছা” অর্থে ধাতুর উত্তর সন্ + অ কৃৎ-প্রত্যয়টি যুক্ত হয়। সন্ + অ প্রত্যয়জাত শব্দের উত্তর ভাববাচ্যে পুনরায় স্ত্রীবাচক আ প্রত্যয়যোগে বিশেষ্যপদ পাওয়া যায়। জ্ঞা + সন্ + অ + আ = জিজ্ঞাসা (জানিবার ইচ্ছা); পা + সন্ + অ + আ = পিপাসা; জি + সন্ + অ + + আ = জিগীষা; তদ্রূপ বিজিগীষা (বানানটি লক্ষ্য কর); বি-ধা + সন্ + অ + আ = বিধিৎসা; হন্ + সন্ + অ = জিঘাংসা (ধাতুর হ-স্থানে ঘ); শ্রু + সন্ + অ + আ = শুশ্রূষা (শুনিবার ইচ্ছা); জীব্ + সন্ + অ + আ = জিজীবিষা (বাঁচিবার ইচ্ছা); তদ্রূপ কৃ–চিকীর্ষা (করিবার ইচ্ছা); অনু-কৃ—অনুচিকীর্ষা; উপ-কৃ—উপচিকীর্ষা; লভ্—লিপ্সা; বি-আপ্—বীপ্সা; ভুজ্—বুভুক্ষা (ভোজনের ইচ্ছা); তিজ্– তিতিক্ষা; বচ্–বিবক্ষা (বলিবার ইচ্ছা); বিশ্—বিবিক্ষা (প্রবেশের ইচ্ছা); বম্—বিবমিষা (বমি করার ইচ্ছা); বস্–বিবৎসা (বাস করার ইচ্ছা); মুচ্—মুমুক্ষা (মুক্তির ইচ্ছা); সেব্—সিষেবিষা (সেবা করিবার ইচ্ছা); গুহ্—জুঘুক্ষা (গোপন করিবার ইচ্ছা); যুধ—যুযুৎসা (যুদ্ধ করিবার ইচ্ছা); মান্—মীমাংসা; কিৎ-চিকিৎসা; গুপ্—জুগুপ্সা (নিন্দা করিবার ইচ্ছা); সৃজ্—সিক্ষা (সৃষ্টি করিবার ইচ্ছা)।
সন্ প্রত্যয়ান্ত ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে উ প্রত্যয় যোগ করিয়া বিশেষণপদ পাওয়া যায়। জ্ঞা + সন্ + উ = জিজ্ঞাসু (জানিতে ইচ্ছুক)। তদ্রূপ পিপাসু, জিগীষু, বিজিগীষু, জিঘাংসু, শুশ্রূষু (শুনিতে ইচ্ছুক), চিকীর্ষু, অপচিকীর্ষু, প্রিয়চিকীর্ষু, লিপ্সু, বিবক্ষু (বলিতে ইচ্ছুক), বিবিষ্ণু (প্রবেশে ইচ্ছুক), মুমুক্ষু, বিধিৎসু (বিধান করিতে ইচ্ছুক), সিষেবিষু, যুযুৎসু, জুঘু, জুগুপ্সু, সিসৃক্ষু।
॥ ঘঞ (অ), অল্ (অ) ॥
ভাববাচ্যে ও কর্তৃ-ভিন্ন কারবাচ্যে এই দুইটি প্রত্যয় যুক্ত হয়। এই প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলি বিশেষ্য ও পুংলিঙ্গ।
(ক) ঘ (ঘ ঞ ইৎ, অ থাকে) : পচ্–পাক (চ্-স্থানে ক্), যজ্—যাগ (জ্—স্থানে গ্), প্র-যজ্—প্রয়াগ (য য় হইয়াছে), প্ৰ-যস্—প্রয়াস, লভ্―লাভ, পঠ― পাঠ, নম্–নাম, প্র-নম্—প্রণাম, তপ্—তাপ, বদ্–বাদ, শপ্—শাপ, শ্বস্—শ্বাস, বস্–বাস, ত্যজ্—ত্যাগ, বি-শ্রম্—বিশ্রাম, দহ্দাহ, প্ৰ-বহ্—প্রবাহ, অব—সদ্—অবসাদ, প্র-সদ্—প্রসাদ, বি-সদ—বিষাদ (যত্ব-বিধি লক্ষ্য কর); নি-হৃ—নীহার (উপসর্গের হ্রস্বস্বর দীর্ঘ হইয়াছে লক্ষ্য কর); বি-রবিরাট (দেশবিশেষ), সম্-ত-সন্তান, ভজ্—-ভাগ, যুজ্—যোগ, ভুজ্—ভোগ, রু–রোগ, শুচ্–শোক; ভূ–ভাব, বি-নশ্—বিনাশ, বি-নশ্—বিনাশ, সম্-অস্—সমাস, বি-নি-অস্—বিন্যাস, অভি-সিচ্—অভিষেক, চি—কায়, প্র-কৃ—প্রকার, বি-অব-হৃ—ব্যবহার, নি-সৃজ্—নিসর্গ, আ-রভ্—আরম্ভ (ম্ আগম), সন্জ্—সঙ্গ, ভজ্—ভঙ্গ (ভঙ্গ ও ভগ্ন শব্দদ্বয়ের ব্যুৎপত্তি অর্থ ও পদগত পার্থক্য লক্ষ্য কর); অনু-রজ্- অনুরাগ (ভাব বা করণবাচ্যে ন্ লুপ্ত; ভাববাচ্যে রজ্ + ঘ = রঙ্গ : ন্ অটুট রহিয়াছে); অদ্—ঘাস (অদ্ স্থানে ঘস্); আ-হন্—আঘাত, অব-তু—অবতার, প্রতি-কৃ—প্রতিকার, প্রতীকার (উপসর্গের অন্ত্যস্বর বিকল্পে দীর্ঘ হয়), মৃজ্—মার্গ, প্র-সৃ—প্রসার (বিশেষ্য; প্রসারতা শব্দটি ব্যাকরণসঙ্গত নয়); প্র-স্তু প্রস্তাব। সেইরূপ প্রভাব, প্রবাস, নির্ঘাত, ব্যাঘাত, উপসর্গ।
(খ) অল্ (ল্ ইৎ, অ থাকে) : জি—জয়, ক্ষি—ক্ষয়, আ-শ্রি—আশ্রয়, ভী―ভয়, প্র-লী—প্রলয়, অভি-নী—অভিনয়, প্র-নী—প্রণয় (ণত্ব-বিধি দেখ); অনু-ভূ—অনুভব, স্তু—স্তব, বৃষ্–বর্ষ, স্পৃশ্—স্পর্শ, হৃষ্—হর্ষ, উদ্-কৃষ্ উৎকর্ষ (শব্দটি বিশেষ্য; ইহাতে কদাপি তা যোগ করিও না); আ-দৃ–আদর, মুহ্—মোহ, ক্রুধ—ক্রোধ, বি-নুদ্–বিনোদ, সম্-আ-রুহ্—সমারোহ, সম্-যম্—সংযম, চি—চয়, সম্-চি—সঞ্চয়, প্র-সৃ (গমন করা)—প্রসর (চলন); উদ্–ই– উদয়, প্রতি-ই—প্রত্যয়, অনু-ই—অন্বয়, ক্ষুভ্–ক্ষোভ, সম্-তু—সন্তোষ, বি-ভিদ্—বিভেদ, শ্লিষ্—শ্লেষ, বুধ—বোধ, প্র-নু—প্রণব, দিশ্—দেশ, আ-দি—আদেশ, খিদ্—খেদ, পরি-শ্রম্—পরিশ্রম, ভ্রশ্—ভ্রংশ, পরা-মৃশ্—পরামর্শ, হন্ (বধূ)—বধ, বন্ধ—বন্ধ, সম্-বন্ধু—সম্বন্ধ (কিন্তু সম্বদ্ধ = সম্-বন্ধু + ক্ত সম্বন্ধ ও সম্বদ্ধ শব্দের ব্যুৎপত্তি, বানান ও অর্থপার্থক্য দেখ)। সেইরূপ প্রভব, প্রবহ, বিচ্ছেদ, বিদেশ, আবেশ, প্রবেশ, সমাবেশ, সমন্বয়, আক্ষেপ, প্ৰক্ষেপ, নিক্ষেপ, উদ্বেগ, বিবেক। প্রয়োগ : “যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে মুক্ত করো হে বন্ধ।” সন্তোষ ভোগ্য বস্তুতে নয়, মানুষের মনেই রয়েছে।
॥ ট ॥
(ক) দিবা প্রভৃতি কর্মবাচক পদের পরবর্তী কৃ ধাতু, পুরঃ অগ্র শব্দের পরবর্তী সৃ ধাতু এবং অধিকরণবাচক পদের পরস্থিত চর্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ট প্রত্যয় হয়। ট্ ইৎ, অ থাকে। দিবা-কৃ—দিবাকর; তদ্রূপ বিভাকর, নিশাকর, ভাস্কর, চিত্রকর, প্রভাকর, শোককর, অর্থকর, শ্রেয়স্কর, যশস্কর, ক্লেশকর, বলকর, হিতকর, প্রীতিকর, ভীতিকর; পুরঃ-সৃ—পুরঃসর; তদ্রূপ অগ্রসর; জল-চর্—জলচর; তদ্রূপ স্থলচর, ভূচর, খেচর (অধিকরণবাচক পদ এখানে বিভক্তিযুক্ত রহিয়াছে, লক্ষ্য কর), বনচর, পার্শ্বচর, নিশাচর, নভশ্চর, রাত্রিচর বা রাত্রিঞ্চর।
(খ) মনুষ্যভিন্ন কর্তা হইলে কর্মবাচক পদের পরবর্তী হন ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ট হয়, এবং হন্ স্থানে ঘ্ন হয়। পাপ-হন্–পাপঘ্ন; তদ্রূপ তমোঘ্ন, হিমঘ্ন, রসঘ্ন, পিত্তঘ্ন। [ কিন্তু মনুষ্য কর্তা হইলে ক প্রত্যয় হয় : শত্রু-হন্ + ক = শত্রুঘ্ন (স্ত্রী—শত্রুঘ্না); তদ্রূপ কৃতঘ্ন।]
॥ ড ॥
(ক) উপসর্গ বা উপপদের পরবর্তী জন্ ত্রৈ প্রভৃতি ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ড প্রত্যয় হয়। ড্ ইৎ, অ থাকে। পঙ্ক-জন্–পঙ্কজ (ধাতুর অ ও ন্ লুপ্ত), পুৎ—ত্রৈ (ত্রাণ করা)—পুত্র, আতপ-ত্রৈ–আতপত্র (ছাতা); গায়ৎ-ত্রৈ—গায়ত্ৰ (স্ত্রী গায়ত্রী)। তদ্রূপ তন্দ্রাজ, পূর্বজ, অণ্ডজ, আত্মজ, অনুজ, দ্বিজ, খনিজ, বনজ, সহজ, উদ্ভিজ্জ।
(খ) সুবন্ত পদের পরবর্তী গম্ ধাতুর উত্তর : দূর-গম্—দূরগ (ধাতুর অ-কার ও ম্ লুপ্ত), বিহায়স্-গম্—বিহগ, ত্বরা-গম্—তুরগ, উরস্-গম্—উরগ (লুপ্ত)। তদ্রূপ পারগ, সর্বত্রগ, খগ, ভুজগ। (কিন্তু ভুজ-গম্ + খচ্ = ভুজঙ্গম ও ভুজঙ্গ; সেইরূপ বিহঙ্গম, বিহঙ্গ; তুরঙ্গম, তুরঙ্গ।)
(গ) ক্লেশ, তমঃ প্রভৃতি শব্দের পরবর্তী অপ-হন্ ধাতুর উত্তর : ক্লেশ-অপ-হন্–ক্লেশাপহ। তদ্রূপ দুঃখাপহ, ভয়াপহ। যিনি ভয়াবহ, তিনিই ভয়াপহ।
॥ ক॥
কর্ম, করণ ও অধিকরণপদের পরস্থিত আ-কারান্ত ধাতু ও উপসর্গের পরবর্তী স্থা ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ক প্রত্যয় হয়। ক্ ইৎ, অ থাকে এবং ধাতুর আ-কার লোপ পায়। বারি-দা–বারিদ, মধু-পা—মধুপ, রস-জ্ঞা—রসজ্ঞ, পাদ-পা—পাদপ, নি-স্থা—নিষ্ঠ, বিশাল-দা-বিশারদ (ল-স্থানে র), গৃহ-স্থা—গৃহস্থ। তদ্রূপ নৃপ, অন্নদ, বরদ, করদ, জলদ, কণ্ঠস্থ, দ্বিপ (হস্তী), মধ্যস্থ, সুস্থ, দুঃস্থ, সর্বজ্ঞ, আত্মজ্ঞ, কৃতজ্ঞ, বিঘ্ন, কৃতঘ্ন, শত্রুঘ্ন। “ভীম রক্তপ রাক্ষস।” (ট, ড ও ক—এই তিনটি প্রত্যয়কে অ প্রত্যয়ও বলা হয়।)
॥ অ (অচ্, অণূ, কঞ, খচ্, খল্, খশ্) ॥
অচ্, অণ্ ইত্যাদি প্রত্যয়গুলির অ ছাড়া বাকী অংশ লোপ পায় বলিয়া বাংলায় ইহাদিগকে শুধু অ প্রত্যয় বলা হয়।
(ক) অচ্ (কর্তৃবাচ্যে) : দিব্–দেব, সৃপ্—সর্প, নৃ—নর, ভূ-ধৃ—ভূধর, চুর্—চূর্ণ (বিশেষ্য, বিশেষণ—দুইটি অর্থেই), দুঃখ-হৃ—দুঃখহর, পূজা-অৰ্থ—পূজার্হ, শয্যা-শী—শয্যাশয়। তদ্রূপ নন্দ, চর, নিন্দার্হ, রোগহর, শিলাশয়।
(খ) অণ্ (কর্মবাচক পদের পরবর্তী ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে) : মালা-কৃ মালাকার, তন্তু-বে (বয়ন করা)–তন্তুবায়, সূত্র-ধৃ—সূত্রধার। তদ্রূপ কুম্ভকার, মণিকার, কর্মকার, চর্মকার, চাটুকার, গ্রন্থকার, শাস্ত্রকার।
(গ) কঞ (সাদৃশ্য বুঝাইতে সর্বনামের পর দৃশ্ ধাতুর উত্তর কর্মবাচ্যে) : ইদম্-দৃশ্—ঈদৃশ (সর্বনামের আদি হ্রস্বস্বর দীর্ঘ হইয়াছে), কিম্-দৃশ্—কীদৃশ, এতদ্-দৃশ্—এতাদৃশ, অস্মদ্-দৃশ্—মাদৃশ, ভবৎ-দৃশ্—ভবাদৃশ। ঈ-যুক্ত করিয়া শব্দগুলির স্ত্রীরূপ পাওয়া যায়।
(ঘ) খচ্ (কর্তৃবাচ্যে) : প্রিয়ম্-বদ্—প্রিয়ংবদ (স্ত্রী—প্রিয়ংবদা), স্বয়ম্—স্বয়ংবর (স্ত্রী—স্বয়ংবরা), পরম্-তাপি—পরন্তপ, বিশ্বম্-ভূ—বিশ্বম্ভর [ বিষ্ণু, স্ত্রী বিশ্বম্ভরা (পৃথিবী) ], ক্ষেমম্ (কল্যাণ)-কৃ—ক্ষেমঙ্কর, ভুজ-গম্—ভুজঙ্গম, মৃত্যুম্-জি—মৃত্যুঞ্জয়, ত্বরা-গম্—তুরঙ্গম। তদ্রূপ ঋতম্ভর, বশংবদ, ধনঞ্জয়, স্বয়ংভর, ভয়ঙ্কর, প্রিয়ঙ্কর, পতঙ্গম, বিহঙ্গম, উরঙ্গম।
(ঙ) খল্ (কর্মবাচ্যে) : সু-কৃ—সুকর, দুঃ-লভ্—দুর্লভ, সু-গম্—সুগম, দুঃ স্পৃশ্—দুস্পর্শ, দুঃ-ত্ব—দুস্তর, দুঃ-প্র-ধৃষ্—দুষ্প্রধর্ষ। তদ্রূপ দুর্গম, দুষ্কর, সুলভ, দুস্ত্যজ, সুস্পর্শ, দুর্বহ, সুবহ, দুষ্প্রাপ্য ইত্যাদি।
(চ) খশ্ (কর্তৃবাচ্যে) : অসূর্য-দৃশ্—অসূর্যম্পশ্যা (দৃশ্-স্থানে পশ্য + স্ত্রী-প্রত্যয় আ), অরুস্ (মর্মস্থল)-তুদ্—অরুন্তুদ (স্-স্থানে ম্ হইয়া সন্ধি হইয়াছে), অভ্রম্-লিহ্—অভ্রংলিহ, পণ্ডিতম্-মন্—পণ্ডিতম্মন্য। সেইরূপ কৃতাৰ্থৰ্ম্মন্য, ধন্যম্মন্য, সুভগম্মন্য।
॥ আ ॥
অ-প্রত্যয়ান্ত বহু শব্দ পুনরায় আ প্রত্যয়যুক্ত হইয়া স্ত্রীলিঙ্গরূপে সর্বদাই প্রযুক্ত হয়। শিক্ষ্ + অ + আ = শিক্ষা, ইষ্ + অ + আ = ইচ্ছা (ইফ্-স্থানে ইচ্ছ), ভাষ্ + অ + আ = ভাষা, প্র-শস্ + অ + আ = প্রশংসা, নি-স্থা + অ + আ = নিষ্ঠা, সম্-জ্ঞা + অ + আ = সংজ্ঞা, পরি-ঈক্ষ্ + অ + আ = পরীক্ষা, কৃপ্ + অ + আ = কৃপা, প্রতি-ভা + অ + আ প্রতিভা, হিস্ + অ + আ = হিংসা, বি-আ-খ্যা + অ + আ ব্যাখ্যা, যদ্-ঋচ্ছ + অ + আ = যদৃচ্ছা, আ-অশ্ + অ + আ = আশা, সম্-ঈহ্ + অ + আ = সমীহা, অব-হেড্ + অ + আ = অবহেলা (ড্ স্থানে ল্); সম্-ধ্যৈ + অ + আ = সন্ধ্যা, সু-ধৈ + অ + আ = সুধা; আ-কাঙ্ক্ষ + অ + আ = আকাঙ্ক্ষা। ওইভাবে পূজা, চিন্তা, নিন্দা, সেবা, চর্চা, দোলা, ভিক্ষা, দীক্ষা, রক্ষা, অনুজ্ঞা, প্রতিজ্ঞা, আভা, সমীক্ষা, প্রভা, বিভা, প্রতিমা, আস্থা, অবস্থা, প্রতিষ্ঠা, আখ্যা, সংস্থা ইত্যাদি।
“অ” প্রত্যয়-সম্বন্ধে একটি বিশেষ কথা : ঘ অল্ ট ড ক অচ্ অণ্ ক ইত্যাদি প্রত্যয়গুলিকে বাংলায় সরাসরি অ প্রত্যয় বলায় একটু বিপদ আছে মনে হয়। প্রত্যয়গুলির সাধারণ লক্ষণটুকুই বড়ো কথা নয়; প্রত্যেক প্রত্যয়ের নিজস্ব একটি প্রভাব ধাতুর উপর থাকিয়া যায়। ইহার ফলে ভূ + অল্ = ভব (স্বরের গুণ), কিন্তু ভূ + ঘ = ভাব (স্বরের বৃদ্ধি); দিবা-কৃ + ট = দিবাকর (স্বরের গুণ), অথচ মালা-কৃ + অ = মালাকার (স্বরের বৃদ্ধি); ক্লেশ-হৃ + অচ্ = ক্লেশহর (স্বরের গুণ), কিন্তু আ-হৃ + ঘ = আহার (স্বরের বৃদ্ধি); ত্বরা-গম্ + ড = তুরগ, অথচ ত্বরা-গম্ + খচ্ = তুরঙ্গ বা তুরঙ্গম। প্রত্যয়গুলির এই প্রকৃতিবৈচিত্র্যের জন্যই ইহাদিগকে একটি সাধারণ নামে চিহ্নিত না করিয়া নিজ নিজ নামেই চিনিয়া রাখা ভালো।
॥ কি ॥
উপসর্গ ও অন্তঃ শব্দের পরবর্তী দা, ধা প্রভৃতি ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে কি প্রত্যয় হয়। ক্ ইৎ, ই থাকে এবং ধাতুর অন্ত্য আ-কারের লোপ হয়। আ-দা—আদি, আ-ধা-আধি, বি-ধা—বিধি, সম্-ধা—সন্ধি, সম্-আ-ধা—-সমাধি, উপ-আ-ধা—উপাধি, বি-আ—ধা–ব্যাধি, অব-ধা—অবধি।
কর্মবাচক পদের পরবর্তী ধা ধাতুর উত্তর অধিকরণবাচ্যে : জল-ধা-জলধি, বারি-ধা—বারিধি। তদ্রূপ উদধি, পয়োধি, পয়োনিধি, বারিনিধি।
॥ ত্র ॥
করণবাচ্যে নী স্তু প্রভৃতি ধাতুর উত্তর ত্র প্রত্যয় হয়। নী–নেত্র, স্তু–স্তোত্র, শাস্—শাস্ত্র, দস্—দংষ্ট্র (স্ত্রীলিঙ্গে দংষ্ট্রা), অগ্নি-হু—অগ্নিহোত্র।
॥ ইত্ৰ ॥
পূ, চর্, বহ্ প্রভৃতি ধাতুর উত্তর করণবাচ্যে এই প্রত্যয় হয়। পূ—পবিত্ৰ, চর্―চরিত্র, বহ্–বহিত্র (নৌকা), খন্ খনিত্র।
বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়
বাংলা ভাষার নিজস্ব ধাতুর উত্তর বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়যোগে অসংখ্য খাঁটী বাংলা শব্দের সৃষ্টি হইয়াছে, এখনও হইতেছে। বাংলা শব্দের ব্যুৎপত্তি জানিতে হইলে বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত-প্রত্যয়ের পরিচয় জানা চাই। এখন অতিপরিচিত কয়েকটি বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়ের আলোচনা করা হইতেছে। বাংলা তদ্ধিতের আলোচনা পরে হইবে।–
(১) অ—এই প্রত্যয়টির যোগে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠিত হয়। আধুনিক বাংলায় কিন্তু এই অ-কারের উচ্চারণ লোপ পাইয়াছে। চল্ + অ = চল, দুল্ + অ = দুল বা দোল, ঝুল্ + অ = ঝুল, ঘির্ + অ ঘের (স্বরের পরিবর্তন লক্ষ্য কর), খুঁজ্ + অ = খোঁজ। প্রয়োগ : শিক্ষিত সমাজে ঘোমটার চল (উচ্চারণ চল্) আর নেই। “দে দোল দোল।” হারছড়াটার খোঁজ কিছু পেলে? কোমরের ঘেরটা বড্ড টাইট হল নাকি?
(২) অ (ও, উ)–আসন্ন বা উদ্যত অর্থে এই প্রত্যয় হয়। অধিকাংশ স্থলে শব্দটির দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। মর্ + অ = মর—মরমর (অবস্থা), উড্ + ও = উড়ো—উড়োউড়ো বা উড়ুউড়ু (মন)। তেমনি ডুবোডুবো (অবস্থা), নিবুনিবু (বাতি)। এ বাড়িতে আগুন লাগায় পাশের বাড়িখানারও ধরধর অবস্থা হয়েছিল। সঙ্গীহারা ময়নাটার মন বেজায় উড়ুউড়ু হয়ে পড়েছে।
(৩) আ—এই প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য-বিশেষণ দুইই হয়। চিন্ + আ = চেনা, চল্ + আ = চলা, তুল্ + আ = চলা, তুল্ + আ = তোলা, বুন্ + আ = বোনা, জান্ + আ = জানা, ছাড় + আ = ছাড়া, চুষ্ + আ চোষা, চষ্ + আ = চষা, মিল্ + আ মেলা (উচ্চারণ—ম্যালা, অধিকরণবাচ্যে), গা + আ = গাওয়া (স্বরান্ত ধাতু এবং প্রত্যয়ের মাঝে ও আসিয়াছে)। তদ্রূপ খা + আ = খাওয়া, পা + আ = পাওয়া, না + আ = নাওয়া। বেশী জানা (বি) আবার ভালো না হতেও পারে। ওদিক্কার পথ আমার জানা (বিণ) নেই। “পথে চলাই (বি) সেই তো তোমায় পাওয়া” (বি)। অনেক কষ্টের তোলা (বিণ) জলটা নষ্ট করলি? ফুলতোলা (বি) থাক্ মা, ঠাকুরঘরটা আগে মুছে দে। “ডাকার মতো ডাক্ দেখি, মন, কেমন শ্যামা মা রইতে পারে।”
এই আ প্রত্যয়ান্ত বিশেষণপদ সংস্কৃত ক্ত প্রত্যয়ান্ত বিশেষণের মতো। বাংলায় এই ধরনের পদের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়। দেখা ইয়ারোর থেকে না-দেখা ইয়ারো অনেক ভালো। সেইরূপ বাঁধা সুর, মাজা বাসন, ধোয়া হাত, পাখিডাকা গ্রাম, পালতোলা নৌকা, গলাকাটা দোকানী ইত্যাদি।
(৪) আই, আও, ই—ক্রিয়ার ভাব বুঝাইতে এইসকল প্রত্যয় হয়। এই প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষ্য। (ক) আই : বাছ্ + আই = বাছাই, বাঁধ + আই বাঁধাই, যাচ্ (সং ধাতু) + আই = যাচাই। তদ্রূপ লড়াই, মাড়াই, চড়াই, উতরাই, ধোলাই। (খ) আও : পিট্ + আও পেটাও, ফল্ + আও = ফলাও, ঘির্ + আও ঘেরাও। তদ্রূপ পাগড়াও, লাগাও, ঢালাও, বাঁচাও (রক্ষা বিশেষ্য)। (গ) ই : হাস্ + ই = হাসি, হাঁচ্ + ই = হাঁচি, ফির্ + ই = ফিরি, ফেরি। তদ্রূপ বেড়ি, ডুবি, বুলি, কাশি, ঝুঁকি, বিকিকিনি। “যত হাসি তত কান্না।” বইখানার বাঁধাই-ছাঁদাহ বেশ ভালো। ঝুঁকি নিয়ে তো বসেছি, কিন্তু বিকিকিনি বড়ো—একটা নেই। এখনো পর্যন্ত বউনি হয়নি। ঢালাও (বিণ) পরিবেশন চলছে। নতুন ধানের ঝাড়াই-মাড়াই শেষ। “যাচাই-বাছাই করে দেখ কোন্ সুখটা টেকসই।” (৫) ইয়ে, এন, আরী (উরী)—দক্ষ অর্থে এই প্রত্যয়গুলি হয়। (ক) ইয়ে : নাচ্ + ইয়ে = নাচিয়ে, বাজা + ইয়ে = বাজিয়ে। তদ্রূপ বলিয়ে, কইয়ে, গাইয়ে, খাইয়ে, লড়িয়ে, লিখিয়ে। (খ) এন : গায়েন, বায়েন। (গ) আরী (উরী) : ডুব্ + আরী = ডুবারী (ডুবুরী)। সেইরূপ ধনারী (ধুনুরী), পূজারী (পুজুরী)। “এ বই একেবারে ওস্তাদ লিখিয়ের লেখা।”—অতুল গুপ্ত। “এরা থাকিয়ে জল, মাটি ফুঁড়ে এদের আবির্ভাব।”
(৬) ইয়া—ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অর্থে প্রত্যয়টির প্রয়োগ হয়। খেল্—খেলিয়া, বল্—বলিয়া, দেখ—দেখিয়া, যা—যাইয়া, খা—খাইয়া। দিনরাত তাস খেলিয়া (খেলায় অর্থে) সংসার চলিবে? অর্থপুস্তকের মতো বিষবটিকা খাইয়া (খাওয়ায়) লাভ কিছুই নাই।
মনে রাখিও, ইয়া-যুক্ত পদটি অসমাপিকা ক্রিয়া হইলে ইয়া তখন ধাতুবিভক্তি, কৃৎ-প্রত্যয় নয়। তাঁহাকে বলিয়া বলিয়া বিরক্ত হইয়া গিয়াছি।
(৭) অন—ভাব ও করণবাচ্যে এই প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাঁচ্ + অন বাঁচন (সংস্কৃতের অন প্রত্যয়েরই মতো—উচ্চারণ বাঁচোন্)। তেমনি মরণ, গড়ন, পড়ন, ঝুলন, দেখন, বাঁধন, ঝাড়ন (করণবাচ্যে), জীয়ন (কাঠি), সৃজন (কিন্তু সংস্কৃত-মতে সর্জন হইবে), শিহরন, মিলন, ধরন, নাচন। “কোন্ বাঁধনে বাঁধবি তারে?” নাচন কোঁদনই সার হল। “তোমার কথার ওপর এর মরণ-বাঁচন নির্ভর করছে।” প্রতিমার গড়নটি বড়োই চমৎকার। “রাঁধনের হাঁড়ি রয়েছে শিকেয় তোলা।”
(৮) অন্ত—সংস্কৃতের শতৃ-শানচের অর্থে বর্তমান কালে অন্ত প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। চল্ + অন্ত চলন্ত (গাড়ি), পড়ু + অন্ত = পড়ন্ত (বেলা), ঘুমা + অন্ত = ঘুমন্ত (শিশু), জীব্ + অন্ত = জীবন্ত। সেইরূপ ফুটন্ত (ফুল বা জল), ফলন্ত (গাছ), জাগন্ত (ঘুম), জীয়ন্ত (মাছ), উড়ন্ত (পাখি), জ্বলন্ত (বাতি), বাড়ন্ত (গড়ন), ভাসন্ত (নৌকা)। ডুবন্ত লোক খড়কুটো ধরেও বাঁচতে চায়। হেমন্তের পড়ন্ত বেলায় আমাদের বসন্ত সেদিন চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যায়নি। ঘরে চাল আজ বাড়ন্ত (নেই অর্থে শ্লেষ প্রয়োগ)। তার বাড় বাড়ন্ত হোক (শ্রীবৃদ্ধি)। ঝুলন্ত নোটিসবোর্ডটা ঘুমন্ত লোকটার ঘাড়ে পড়েছে। বর্ষার নদী এখন যৌবন-পুরন্ত। (লক্ষ্য কর—চল্, জ্বল্, ভাস্ প্রভৃতি সংস্কৃত ধাতু।
(৯) না—ভাব এবং কর্তৃ, কর্ম প্রভৃতি কারকবাচ্যে এই প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। রাঁধ + না = রান্না, বাড় + না = বাড়না > বান্না, কাঁদ্ + না = কাঁদনা > কান্না, বাট্ + না = বাটনা (যাহা বাটা হয়—কর্মবাচ্যে), ফেল্ + না = ফেলনা (যাহাকে ফেলিয়া দেওয়া হয় বা যায়)। তেমনি কুটনা, খেলনা (যাহার দ্বারা খেলা হয়—করণবাচ্যে), ঢাকনা, ঝরনা (জল ঝরে যেখান হইতে—অপাদানবাচ্যে), ধরনা, দোলনা (দোল খায় যেখানে—অধিকরণবাচ্যে)। গুঁড়ো বাটনার ঢাকনাটা কোথা রাখলি মদনা? একহাতে কুটনো-কোটা, রান্না-বান্না পারা যায়? “নীপশাখে বাঁধো ঝুলনা।” দেনা-পাওনা মিটল? “তোমার মা-মন্ত্র তো সংসারীর কান্না দিয়ে লেখা।” “যেমন করে ঝরনা নামে দুর্গম পর্বতে।”
(১০) আনি, আন (আনো)–আ-কারান্ত ধাতু, নামধাতু ও প্রযোজক ধাতুর উত্তর ক্রিয়ার ভাব বুঝাইতে বিভিন্ন বাচ্যে এইসকল প্রত্যয় হয়। (ক) আনি : শুনা + আনি = শুনানি, পারা + আনি = পারানি, হাঁকা + আনি = হাঁকানি, ধমকা + আনি = ধমকানি। সেইরূপ জ্বালানি, শাসানি, চালানি, ঝলমলানি, ভাঙানি। (খ) আন (আনো—বিশেষভাবে কর্মবাচ্যে) : জানা + আন = জানান (জানানো); চালা + আন = চালান (চালানো); শোনা + আন = শোনান (শোনানো); হাতা + আন = হাতান (হাতানো); জুতা + আন জুতান (জুতানো)। এ সবই তার মন-ভুলানো কথা, লোকদেখানো ভালোবাসা! তার খাই না পরি, যে শাসানির ধার ধারব? এ বছর শীতটা বেশী হাড়কাঁপানো মনে হচ্ছে? ঝোলের তলানিটা আর খেয়ো না।
আনি-প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষ্য, কিন্তু আন-প্রত্যয়াস্ত শব্দ বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই-ই হয়। বাক্যের পদবিন্যাসরীতি দেখিয়া পদনির্ণয় করাই বিধেয়। মামলার শুনানি (বি) কবে? কী বললেন? দশটাকার ভাঙানি (বি)? “আমার সাজানো (বিণ—কর্মবাচ্যে) বাগান শুকিয়ে গেল।” জড়ানো (বিণ—কর্তৃবাচ্যে) সুতো ছাড়ানো (বি) খুব সোজা কি? খরচ কমানো (বি) এখন বিশেষ দরকার। শুধু বাড়ানো (বিণ—কর্মবাচ্যে) সলতেয় কাজ হয় কি? তেলও চাই খানিকটা তদ্রূপ লোক-হাসানো বক্তৃতা (বিণ-কর্তৃবাচ্যে), হাড়-কাঁপানো শীত (ঐ), মন-ভুলানো কথা (ঐ), হৃদয়-গলানো কান্না (ঐ), বুক-কাঁপানো হুঙ্কার (ঐ), লোক-দেখানো ভালোবাসা (বিণ–কর্মবাচ্যে), বুক-নিড়ানো রক্ত (ঐ), জমানো দুধ (ঐ), শান-বাঁধানো ঘাট (ঐ), শেখানো বুলি (ঐ)।
(১১) অনি (উনি)—ক্রিয়ার ভাব বুঝাইতে এই প্রত্যয় হয়। চাহ্ + অনি চাহনি (চাউনি); বিনা + উনি = বিনুনি; মাত্ + অনি = মাতনি (মাতুনি); খাট্ + অনি = খাটনি (খাটুনি); পুড়ু + অনি = পুড়নি, পোড়নি, পুড়ুনি। তেমনি নাচনি (নাচুনি); কাঁদনি (কাঁদুনি); গাঁথনি (গাঁথুনি); ছাঁকনি (ছাঁকুনি); কুরনি (কুরুনি); বুননি (বুনুনি); চালনি (চালুনি); দুলনি (দুলুনি)। “হিয়া দগদগি পরাণ পোড়নি।” রাঁধনি (রাঁধুনি—মসলাবিশেষ); কিন্তু রাঁধ + অনী (উনী) রাঁধনী (রাঁধুনী—পাচক বা পাচিকা—কর্তৃবাচ্যে)। “বেণীর দোলনি, বাহুর বলনি, গ্রীবার হেলনি, কথার ছলনি।”
(১২) তা—ভাব, কর্তৃ ও কর্মবাচ্যে তা প্রত্যয় হয়। ফির্ + তা = ফেরতা (গাড়ি); জান্ + তা জান্তা (সবজান্তা লোক); ধর্ + তা = ধরতা; বহ্ (সংস্কৃত ধাতু) + তা = বহতা (নদী); পড় + তা = পড়তা (গড়পড়তা)। গানের ধরতাই ভালো হওয়া চাই। আমার দেখতা তিনি বড়োলোক হলেন (ক্রি-বিণ)। ও তো আমাদের দেখতা (বিণ) ব্যাপার।
(১৩) তি—এই প্রত্যয়ান্ত পদ বিশেষ্য ও বিশেষণ দুই-ই হয়। বাঙ্ + তি = বাড়তি; বস্ (সং ধাতু) + তি = বসতি; কাট্ + তি = কাটতি। তেমনি বনতি, কমতি, চলতি, উঠতি, ভরতি, ঝরতি, গলতি, পড়তি, ঘাটতি। উঠতি (বিণ) বয়স; বাড়তি (বিণ) টাকা; চলতি (বিণ) বছর; মালের কাটতি (বি); হিসাবের ঘাটতি (বি)। তাঁর সঙ্গে ওঁর আদৌ বনতি (বি) নেই। রোজ রোজ দামের চড়তি (বি) সহ্য হয়? এমন ঘাটতি (বিণ) বাজারে বাঁচাই দায়। “কেন? তার ধর্মে কি ঈশ্বর-জ্ঞান ঘাটতি পড়েছে?”
(১৪) উয়া (ও)—অবস্থা বা স্বভাব বুঝাইতে এই প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। এই প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষ্য ও বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। পড় (পাঠ করা)–পড়ুয়া (চলিত ভাষায় পড়ো—পাঠ করা বা পড়িয়া যাওয়া দুইটি অর্থেই), উড়—উড়ুয়া (উড়ো)। পাঠশালার পড়োরা সুর করে ধারাপাত পড়ত। আমাদের বাড়ির পিছনে মুখটিদের খানিকটা পড়ো জমি রয়েছে। উড়ো চিঠিতে এত ভয় কিসের?
(১৫) উক—স্বভাব অর্থে এই প্রত্যয়টির প্রয়োগ হয়। নিন্দ—নিন্দুক; মিশ্—মিশুক। বড়ো লোকের ছেলে এমন মিশুক ক্বচিৎ দেখা যায়। নিন্দুকের মুখ আঁটতে চেয়ো না।
(১৬) ইত—এই প্রত্যয়ান্ত শব্দটি বিশেষণ। এটি সংস্কৃত ক্ত প্রত্যয়ের বাংলা সংস্করণ। উচ্চারণের দিক্ দিয়াও ক্ত প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে যথেষ্ট মিল। জান্ + ইত = জানিত (অন্ত্য অ উচ্চারিত); ভাব্ + ইত = ভাবিত (চিন্তিত অর্থে); সিঞ্চ—সিঞ্চিত, বিতর্—বিতরিত। অন্ত্য অ অনুচ্চারিত : চলিত, করিত (করিতকর্মা)।
তদ্ধিত-প্রত্যয়
সংস্কৃত তদ্ধিত-প্রত্যয়
শব্দের উত্তর এক-একটি বিশেষ অর্থে এক-একটি তদ্ধিত-প্রত্যয় যুক্ত হইয়া নূতন নূতন শব্দ সৃষ্টি করে। সেই নবগঠিত শব্দের উত্তরও আবার এক বা একাধিক তদ্ধিত-প্রত্যয় যুক্ত হইতে পারে। লোক + ষ্ণিক = লৌকিক; আবার লৌকিক + তা = লৌকিকতা। অতিথি + ষ্ণেয় = আতিথেয়; আতিথেয় + তা = আতিথেয়তা। সৎ + ত্ব = সত্ত্ব; সত্ত্ব + ষ্ণিক = সাত্ত্বিক; সাত্ত্বিক + তা = সাত্ত্বিকতা।
তদ্ধিতান্ত পদ বিশেষণরূপে প্রযুক্ত হইলে তাহাকে তদ্ধিতান্ত বিশেষণ বলে। ২৫৬-৫৭ পৃষ্ঠায় সূত্র ১০১ (ঠ) দেখ।
কৃৎ ও তদ্ধিত-প্রত্যয়ের পার্থক্যটি একবার দেখিয়া লও। নূতন নূতন বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দগঠনে কৃৎ ও তদ্ধিত উভয়েরই কৃতিত্ব রহিয়াছে। সাদৃশ্য এই পর্যন্ত। এইবার পার্থক্য—(১) কৃৎ যুক্ত হয় ধাতুতে, তদ্ধিত যুক্ত হয় শব্দে। (২) কৃৎ-প্রত্যয়ে বাচ্য-সম্পর্ক থাকে, কিন্তু ধাতুর উত্তর যুক্ত হয় না বলিয়া তদ্ধিতের সঙ্গে বাচ্যের কোনো সম্পর্কই থাকে না। তদ্ধিত প্রত্যয়ের প্রধান লক্ষ্যের বিষয় হইতেছে অর্থ। (৩) ধাতুর উত্তর এককালে একটিমাত্র কৃৎ-প্রত্যয় যুক্ত হয় (ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বাদে), কিন্তু শব্দের উত্তর তদ্ধিত-প্রত্যয় একের বেশী যুক্ত হইতে পারে। (উদাহরণ যথাযথ সংগ্রহ করিয়া বুঝাইয়া দিবে।)
অপত্যাৰ্থক তদ্ধিত-প্রত্যয়
১৮৫। অপত্যার্থক প্রত্যয় : যে-সমস্ত তদ্ধিত-প্রত্যয় অপত্য (পুত্র বা বংশধর বা শিষ্য বা উপাসক), তৎসম্বন্ধীয় বা তদ্ভাব বুঝাইবার জন্য শব্দে প্ৰযুক্ত হইয়া নূতন শব্দ গঠন করে তাহাদিগকে অপত্যার্থক প্রত্যয় বলে। যথা ষ্ণ (অ), ষ্ণি (ই), ষ্ণ্য (য), ষ্ণেয় (এয়), ষ্ণায়ন (আয়ন)। এই তদ্ধিত-প্রত্যয়গুলির মুখ্য অর্থ অপত্য বলিয়া ইহাদিগকে অপত্যার্থক তদ্ধিত-প্রত্যয় বলা হয়।
(ক) ষ্ণ (ষ্ ণ্ ইৎ, অ থাকে) : যদু—যাদব (প্রাতিপদিকের আদ্যস্বরের বৃদ্ধি ও অন্ত্যস্বরের গুণ), অণু—আণব, মনু—মানব, বিষ্ণু—বৈষ্ণব, পুরু—পৌরব, কুরু-কৌরব, পাণ্ডু—পাণ্ডব, শান্তনু—শান্তনব, মৃদু—মাদব, সিন্ধু—সৈন্ধব, শিশু—শৈশব, কিশোর—কৈশোর, ব্রহ্ম—ব্রাহ্ম, শিব—শৈব, শক্তি—শাক্ত (শব্দের অন্ত্য ই-বর্ণের লোপ), গুরু—গৌরব, ছত্র–ছাত্র, দ্ৰুপদ– দ্রৌপদ, ভরত-ভারত, মধ্যম—মাধ্যম, শ্রবণা—শ্রাবণ, শশ্বৎ–শাশ্বত, বসুদেব—বাসুদেব, মনঃ—মানস (বিসর্গের স্থানে স্ আসিয়াছে), পয়ঃ– পায়স, সরস্বতী—সারস্বত (আদ্যস্বরের বৃদ্ধি, অন্ত্যস্বর লুপ্ত, নবসৃষ্ট শব্দটির উচ্চারণ হলন্ত), পশুপতি—পাশুপত, ভগবৎ—ভাগবত (অন্ত্য অ অনুচ্চারিত), পুত্রপৌত্র, গুণ–গৌণ, পুরুষ—পৌরুষ, ভৃগু—ভার্গব, পৃথা—পার্থ (শব্দের অন্ত্য অ-বর্ণের লোপ), বিশাখা—বৈশাখ, বিদ্যুৎ—বৈদ্যুত, পৃথিবী—পার্থিব, সূর্য—সৌর, শুচি—শৌচ, মুনি—মৌন (বিশেষ্য—মুনির ভাব), বিধি—বৈধ, মৃগ—মাৰ্গ, স্মৃতি—স্মার্ত, ঋষি—আর্য, ঋজু—আর্জব, একতান—ঐকতান, হেম—হৈম, নেত্র—নৈত্র, কুতূহল—কৌতূহল, দিনদিন—দৈনন্দিন (নৃ আগম)। তদ্রূপ পাৰ্বত, সৌভদ্র, বৈয়াকরণ, লাঘব, রাঘব, আরণ্য, আন্তর, কাশ্যপ, ধার্তরাষ্ট্র, বৈদেহ, বৈদর্ভ, বৈবস্বত, দারিদ্র (চলন্তিকা দ্রষ্টব্য)। জহ্নু + ষ্ণ + ঈ = জাহ্নবী; তদ্রূপ জানকী। “সেই সময় শহরে শিক্ষাভিমানীর দল বৈদ্যুত আলোয় সিনেমা দেখতে ভিড় করবে।”—রবীন্দ্রনাথ
(খ) ষ্ণি (ষ্ ণ্ ইৎ, ই থাকে; কেবল অ-কারান্ত প্রাতিপদিকের উত্তর এই প্রত্যয় হয়) : কৃষ্ণকার্ফি (আদি স্বরের বৃদ্ধি), দশরথ—দাশরথি, অর্জুন—আর্জুনি, রাবণ—রাবণি, সূর—সৌরি, শূর—শৌরি, ব্যাস—বৈয়াসকি (প্ৰাতি—পদিকের উত্তর ষ্ণ আগম হইয়াছে), সুমিত্রা—সৌমিত্রি (অ-কারান্ত শব্দের উত্তর ষ্ণি প্রত্যয়—ইহা একটি ব্যতিক্রম)।
(গ) ষ্ণ্য (য্ ণ্ ইৎ, য থাকে) : অদিতি—আদিত্য (আদি স্বরের বৃদ্ধি), যজ্ঞবল্ক—যাজ্ঞবল্ক্য, গর্গ—গার্গ্য (স্ত্রী—গার্গী), জমদগ্নি—জামদগ্ন্য, দিতি—দৈত্য, ত্রিলোকী—ত্রৈলোক্য, ঈশ্বর—ঐশ্বর্য, শুর—শৌর্য, চণক চাণক্য, শীত—শৈত্য, দীন—দৈন্য, একমত—ঐকমত্য, সেনাপতি—-সৈনাপত্য, পঞ্চজন—পাঞ্চজন্য, পুরোহিত—পৌরোহিত্য (বানানটি লক্ষ্য কর), উদ্ধত ঔদ্ধত্য, মধুর—মাধুর্য (স্ত্রী—মাধুরী), উদার—ঔদার্য, সহিত–সাহিত্য, মহাত্মা—মাহাত্ম্য, দুরাত্মা—দৌরাত্ম্য, জড়—জাড্য, অনুকূল—আনুকূল্য, দৃঢ়—দার্ঢ্য, বৃহস্পতি—বার্হস্পত্য, নমঃ—নমস্য, পৃথক্—পার্থক্য, সহায়—সাহায্য, ন্যায়—ন্যায্য, অতিশয়—আতিশয্য, পরবশ—পারবশ্য, যথার্থ—যাথার্থ্য (শেষ য-ফলাটি অত্যাবশ্যক), দীর্ঘ—দৈর্ঘ্য (য-ফলাটি অপরিহার্য), ইতিহ—ঐতিহ্য, বিশিষ্ট—বৈশিষ্ট্য, স্বতন্ত্র—স্বাতন্ত্র্য, কুলীন–কৌলীন্য, যুগপৎ—যৌগপদ্য, বিদগ্ধ—বৈদগ্ধ্য, বিপরীত—বৈপরীত্য, পদ–পদ্য, পাদ–পাদ্য, অর্ঘ—অৰ্ঘ্য, মনু—মনুষ্য, মানুষ (নিপাতনে); এক—ঐক্য, সোম—সৌম্য, গো—গব্য (ও-কারের গুণ অব্)। তদ্রূপ পাণ্ডিত্য, আরোগ্য, ভাস্কর্য, লালিত্য, সাম্য, বৈষম্য, সৌষম্য, পালিত্য (পক্কতা অর্থে), কার্য, কার্কশ্য, দৌজন্য, দারিদ্র্য, বৈচিত্র্য, সৌকুমার্য, পারম্পর্য, পারিপাট্য, ঔজ্জ্বল্য।
বিশেষণের উত্তর ষ্ণ বা ষ্ণ্য প্রত্যয়যোগে বিশেষ্য শব্দ গঠিত হয়; তাহাতে আবার অতিরিক্ত তা বা ত্ব প্রত্যয় যোগ করার প্রয়োজন হয় না। এইজন্য দারিদ্র্যতা, স্বাতন্ত্র্যতা, সৌজন্যতা, পৌরুষত্ব, বৈশিষ্ট্যতা, সারল্যতা, দৌর্বল্যতা, জাড্যতা, নৈপুণ্যতা, ঔদার্যতা, চাঞ্চল্যতা, পারবশ্যতা, স্বাচ্ছন্দ্যতা, ঔজ্জ্বল্যতা প্রভৃতি শব্দ ব্যাকরণসিদ্ধ নয়। শব্দগুলির রূপ যথাক্রমে হওয়া উচিত : দরিদ্রতা বা দারিদ্র্য, স্বতন্ত্রতা বা স্বাতন্ত্র্য, সুজনতা বা সৌজন্য, পৌরুষ বা পুরুষত্ব, বিশিষ্টতা বা বৈশিষ্ট্য, সরলতা বা সারল্য, দুর্বলতা বা দৌর্বল্য, জাড্য বা জড়তা, নিপুণতা বা নৈপুণ্য, উদারতা বা ঔদার্য, চঞ্চলতা বা চাঞ্চল্য, পরবশতা বা পারবশ্য, স্বচ্ছন্দতা বা স্বাচ্ছন্দ্য, উজ্জ্বলতা বা ঔজ্জ্বল্য।
(ঘ) ষ্ণেয় (সাধারণতঃ স্ত্রী প্রাতিপদিকের উত্তর এই প্রত্যয় হয়; ষ্ ণ্ ইৎ, এয় থাকে) : গঙ্গা—গাঙ্গেয়, অতিথি—আতিথেয়, ভগিনী-ভাগিনেয়, কৃত্তিকা কার্তিকেয়, ইতরা—ঐতরেয় (ঋষি মহীদাস), অত্রি—আত্রেয়, বিনতা—বৈনতেয়, কুন্তী—কৌন্তেয়, বিমাতা—বৈমাত্রেয়, রাধা—রাধেয় (কর্ণ), সরমা—সারমেয়, অম্বিকা—আম্বিকেয়। তদ্রূপ দ্রৌপদেয়, গান্ধারেয়, নৈকষেয়, আঞ্জনেয়, শ্রদ্ধেয়। নবসৃষ্ট শব্দগুলির শেষ স্বর (অ) উচ্চারিত হয়।
পুং প্রাতিপদিকের উত্তর : মৃকণ্ডু—মার্কণ্ডেয় (মূল শব্দের অন্ত্যস্বর লুপ্ত) অগ্নি—আগ্নেয়, পাণ্ডু—পাণ্ডবের, পথিন্—পাথেয়।
(ঙ) ষ্ণায়ন (য্ ণ্ ইৎ, আয়ন থাকে) : দক্ষ—দাক্ষায়ণ, নর–নারায়ণ, বস—বাৎসায়ন, দ্বীপ—দ্বৈপায়ন (দ্বীপে জাত অর্থে)।
অপত্যভিন্ন অর্থে তদ্ধিত-প্রত্যয়
॥ ষ্ণিক (ইক) ॥
রচয়িতা, দক্ষতা, পাণ্ডিত্য, জীবিকা, সম্বন্ধ, ব্যাপ্তি, স্বার্থ প্রভৃতি অর্থে এই প্রত্যয় হয়। য্ ণ্ ইৎ, ইক থাকে। ষ্ণিক প্রত্যয়ান্ত শব্দ সাধারণতঃ বিশেষণ। সৃষ্ট শব্দগুলির শেষ স্বর (অ) অনুচ্চারিত। দেহ—দৈহিক, ন্যায়—নৈয়ায়িক, দিন—দৈনিক, বেদ-বৈদিক, রেখা—রৈখিক, শরীর-শারীরিক (বানানটি লক্ষ্য কর), বৎসর—বাৎসরিক, ইহ—ঐহিক, কায়—কায়িক, মায়া—মায়িক (মূল শব্দটির অন্ত্য অ-বর্ণ লুপ্ত), পিত্ত—-পৈত্তিক, শ্লেষ্মা –শ্লৈষ্মিক, নৌ– নাবিক, অলংকার—আলংকারিক, সাহিত্য–সাহিত্যিক, পুরাণ—পৌরাণিক, ভূগোল—ভৌগোলিক (বানানটি লক্ষ্য কর), অর্থ—আর্থিক, গিরি—গৈরিক, সত্ত্ব—সাত্ত্বিক, ব্যাস—বৈয়াসিক (ব্যাস-রচিত অর্থে), অণু—আণবিক, অধ্যাত্ম—-আধ্যাত্মিক, অভ্যন্তর—আভ্যন্তরিক, নীতি—নৈতিক, অর্থনীতি—আর্থনীতিক, অহ্ন—আহ্নিক, অকস্মাৎ—-আকস্মিক, ইন্দ্রিয়—ঐন্দ্রিয়িক, দ্বার—দৌবারিক (প্রাতিপদিকের আদ্য ব-স্থানে উব হয়, আবার উ-র বৃদ্ধি ঔ), সময়—সাময়িক, সমসময়—সামসময়িক (আদি স্বরের বৃদ্ধি), অধুনা—আধুনিক, রজঃ—-রাজসিক, অত্যন্ত (বিশেষণের উত্তরও)—আত্যন্তিক, উপন্যাস—ঔপন্যাসিক, ব্যবহার ব্যবহারিক (ব্যাবহারিক)। তদ্রূপ লৈখিক, মাধ্যমিক, পারমাণবিক, ঐচ্ছিক, মৌখিক, মৌক্তিক, কৌলিক, সামাজিক, বৈদান্তিক, ছান্দসিক, সাংগীতিক, সাংগঠনিক, মানসিক, তামসিক, ঔদরিক, আপরাত্নিক, তাত্ত্বিক, রাবীন্দ্রিক, হৈমালয়িক ইত্যাদি।
ইহলোক, পরলোক, পঞ্চভূত প্রভৃতি প্রাতিপদিকের উভয় স্বরের বৃদ্ধি হয় : ঐহলৌকিক, পারলৌকিক, পাঞ্চভৌতিক, সার্বলৌকিক, আধিদৈবিক, আধিভৌতিক।
আবার দ্বিবর্ষ, ত্রিবর্ষ, চতুর্বর্ষ প্রভৃতি শব্দের কেবল দ্বিতীয় পদের আদ্য স্বরের বৃদ্ধি হয় : দ্বিবার্ষিক, ত্রিবার্ষিক, চতুর্বার্ষিক, পঞ্চবার্ষিক ইত্যাদি।
॥ ষ্ণীয় (ঈয়) ॥
সম্বন্ধ, জাত বা যোগ্য অর্থে ষ্ণীয় প্রত্যয় হয়। ষ্ ণ্ ইৎ, ঈয় থাকে। এই প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলি বিশেষণ। সৃষ্ট শব্দগুলির শেষ স্বর (অ) উচ্চারিত। দেশ—দেশীয়, জাতি—জাতীয়, মানব—মানবীয়, সম্বন্ধসম্বন্ধীয়, বঙ্গ—বঙ্গীয়, ভারত—ভারতীয়, অস্মদ—অস্মদীয়, ভবৎ—ভবদীয়, ত্বদ্–ত্বদীয় (তোমার), জিহ্বামূল—জিহ্বামূলীয়, বায়ু—বায়বীয়, ইংলন্ড –ইংলন্ডীয় (বিদেশী শব্দে সংস্কৃত প্রত্যয়), রাষ্ট্র–রাষ্ট্রীয়, স্ব–স্বীয় (স্বকীয়ও হয়—ক আগম হইয়াছে), রাজা—রাজকীয়, পর—পরকীয়। তদ্রূপ শাস্ত্রীয়, জলীয়, স্থানীয়, মদীয়, আত্মীয়, তদীয় (তাহার; ত্বদীয় শব্দটির সহিত বানান ও অর্থের পার্থক্য লক্ষ্য কর), নাটকীয়, এশীয়, রবিবাসরীয়।
॥ ইয় ॥
এই প্রত্যয়সিদ্ধ শব্দগুলি বিশেষ্য। প্রত্যয়টি সর্বাংশে অটুট থাকে। শেষ স্বর (অ) উচ্চারিত হয়। ইন্দ্র—ইন্দ্রিয়, শ্রোত্র—শ্রোত্রিয়।
॥ ঈন ॥
সম্বন্ধ হিত প্রভৃতি অর্থে এই প্রত্যয় হয়। ঈন প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দ বিশেষণ। এই প্রত্যয়ের কোনো অংশই লোপ পায় না, সবটুকু বর্তমান থাকে। সৃষ্ট শব্দগুলির শেষ স্বর (অ) অনুচ্চারিত থাকে। সর্বাঙ্গ—সর্বাঙ্গীণ (ণত্ব-বিধি বিশেষভাবে লক্ষ্য কর), তৎকাল—তৎকালীন, সর্বজন—সর্বজনীন (হিতার্থে) ও সার্বজনীন (সম্বন্ধ বুঝাইতে), কুল—কুলীন, প্রাচ্—প্রাচীন, সম্মুখ—সম্মুখীন, অর্বাচ্—অর্বাচীন, গ্রাম—গ্রামীণ, শালা (লজ্জা, বিনয় ইত্যাদির আশ্রয়)—শালীন, অভ্যন্তর—অভ্যন্তরীণ। সেইরূপ জন্মান্তরীণ।
॥ ইত ॥
জাত বা যুক্ত অর্থে অ বর্ণান্ত বিশেষ্যের উত্তর এই প্রত্যয়যোগে বিশেষণপদ গঠিত হয়। এই প্রত্যয়টিও সর্বাংশে অটুট থাকে। সৃষ্ট শব্দগুলির শেষ স্বর (অ) উচ্চারিত হয়। পুষ্প–পুষ্পিত (পুষ্প জন্মিয়াছে যাহাতে), পল্লব—পল্লবিত, কল্লোল–কল্লোলিত, মুকুল—মুকুলিত, পুলক—পুলকিত, ত্বরা–ত্বরিত, পণ্ডা (বেদোজ্জ্বলা বুদ্ধি)—পণ্ডিত (অন্ত্য অ অনুচ্চারিত), তরঙ্গ—তরঙ্গিত, ব্যথা—ব্যথিত, কলঙ্ক—কলঙ্কিত, অঙ্কুর—অঙ্কুরিত, গর্ব—গর্বিত। তদ্রূপ বিঘ্নিত, আতঙ্কিত, কলুষিত, বিতর্কিত, চিত্রিত, মর্মরিত, মুকুরিত, কণ্টকিত, কলাপিত, স্তবকিত, কদম্বিত, কবলিত। “শুভ্র-জ্যোৎস্না পুলকিত-যামিনীম্।” “লতাগুলি….শুধাইত পথটি আগুলি পুষ্পিত কুশলবাণী।” “তালগাছের কলাপিত শাখা।” “সুরের আলো ছড়িয়ে দেব মর্মরিত ভবিষ্যতে।” “মূলে জল পাইলেই বৃক্ষ পল্লবিত, কুসুমিত ও ফলান্বিত হয়।”
বিশেষণের উত্তর ইত প্রত্যয় যুক্ত হয় না। সেইজন্য প্রফুল্লিত, উৎফুল্লিত, ব্যাকুলিত, আকুলিত, পরিস্ফুটিত প্রভৃতি শব্দ ব্যাকরণসঙ্গত নয়।
॥ মতুপ্, ইন্, বিন্, শালিন্, ল, ইল, র, শ॥
আছে অর্থে বিশেষ্যপদের উত্তর এইসমস্ত প্রত্যয় হয়। এই প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দগুলি বিশেষণ।
(ক) মতুপ্ (উ প্ ইৎ, মৎ থাকে) : শক্তি—শক্তিমৎ (কর্তৃকারকের একবচনে শক্তিমান্), শ্রী–শ্রীমৎ (শ্ৰীমান্)। তদ্রূপ ভক্তিমৎ (ভক্তিমান্), মতিমৎ (মতিমান), দ্যুতিমান্, বুদ্ধিমান্, কৃষ্টিমান্, সংস্কৃতিমান্, রুচিমান্, গতিমান্, জ্যোতিষ্মান, বহ্নিমান্, প্রতিশ্রুতিমান্, মধুমান, অংশুমান্, ধীমান্, ভানুমান্, আয়ুষ্মান্।
কিন্তু অ-কার, আ-কার, স্পর্শবর্ণ, এবং উপধা অ ও ম্-এর পর মতুপ্ প্রত্যয়ের ‘ম’ ব’ হয়। ভগ + মতুপ্ = ভগবৎ (কর্তৃকারকের একবচনে ভগবান্), শ্রদ্ধা + মতুপ্ = শ্রদ্ধাবান্, লক্ষ্মী + মতুপ্ = লক্ষ্মীবান্ (প্রাতিপদিকের উপধা হইতেছে ম্), আত্মন্ + মতুপ্ = আত্মবান্ (প্রাতিপদিকের অন্তে স্পর্শবর্ণ নৃ-এর লোপ), তেজঃ + মতুপ্ = তেজস্বান্ (প্রাতিপদিকের উপধা অ)। তদ্রূপ জ্ঞানবান্, পুণ্যবান্, বিদ্যাবান্, ক্ষমাবান্, রশ্মিবান্, মরুত্বান্, বিদ্যুত্বান, তড়িত্বান্।
শ্রীমান্, রুচিমান্, ভগবান্, বিদ্যাবান্ প্রভৃতি মতুপ্ (বতুপ্) প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলির হস্ চিহ্ন অত্যাবশ্যক। এই মতুপ্ (বা বতুপ্) প্রত্যয়ের প্রয়োগ ব্যাপারে সামান্যতম শৈথিল্যও ছাত্রগণের পক্ষে মারাত্মক অপরাধ।
মতুপ্ ও শানচ্ প্রত্যয়ান্ত শব্দ দেখিতে প্রায় একই প্রকার—প্রথমটি হলন্ত, কিন্তু দ্বিতীয়টি স্বরান্ত; অথচ উচ্চারণ উভয় ক্ষেত্রেই হলন্ত। শানচ্ প্রত্যয়ান্ত শব্দে আ এবং মতুপ্ প্রত্যয়ান্ত শব্দের মূলরূপে ঈ যোগ করিলে স্ত্রী-বাচক শব্দ পাওয়া যায়। শোভমান–শোভমানা, শয়ান—শয়ানা, আসীন –আসীনা, ম্রিয়মাণ—ম্রিয়মাণা। কিন্তু সংস্কৃতিমান্ –সংস্কৃতিমতী, ভক্তিমান্—ভক্তিমতী, শ্ৰীমান্—শ্রীমতী। (শ্রীমতী ও “মনের গতি” অর্থে মতি শব্দদ্বয়ের ব্যুৎপত্তি, অর্থ ও বানান-পার্থক্য, লক্ষ্য কর।)
(খ) ইন্ (কেবল অ-কারান্ত শব্দের উত্তর) : মান–মানিন্ (কর্তৃকারকের ১বচনে মানী), মৌন—মৌনিন্ (মৌনী—বিণ), শিখা—শিখিন্ (শিখী), অনুরাগ—অনুরাগী, যোগ—যোগী, জ্ঞান—জ্ঞানী, প্রাণ—প্রাণী। সেইরূপ ধনী, গুণী, ফণী, প্রেমী, সঙ্গী, রোগী, সুখী, গাণ্ডীবী, কিরীটী, শরীরী, প্রণয়ী, দুষ্কৃতী (দুষ্কর্মকারী; দুষ্কৃতি শব্দটির সহিত ব্যুৎপত্তি, অর্থ ও বানানপার্থক্য লক্ষ্য কর), আকাঙ্ক্ষী ইত্যাদি।
(গ) বিন্ : মেধা + বিন্ = মেধাবিন্ (কর্তৃকারকের ১বচনে মেধাবী), যশঃ + বিন্ = যশস্বিন্ (যশস্বী)। সেইরূপ তপস্বী, তেজস্বী, পয়স্বিনী (নিত্য স্ত্রী)।
ইন্ ও বিন্ প্রত্যয়ান্ত শব্দ সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদ হইলে মূল শব্দটির অন্ত্য ন্ লোপ পায়। গুণিজন, কর্মিবৃন্দ, প্রতিযোগিগণ, ধনিসমাজ, স্বামিপুত্র ইত্যাদি।
(ঘ) শালিন্ : বল—বলশালিন্ (কর্তৃকারকের একবচনে বলশালী)। সেইরূপ বিত্তশালী, চিত্তশালী, ধনশালী, সমৃদ্ধিশালী, সম্ভ্রমশালী।
শালিন্ প্রত্যয়টির ব্যবহার-সম্বন্ধে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ্য ছাড়া কদাপি বিশেষণের উত্তর প্রত্যয়টি প্রয়োগ করিবে না। এইজন্য সমৃদ্ধশালী, সম্ভ্রান্তশালী প্রভৃতি শব্দ ব্যাকরণদুষ্ট; হওয়া উচিত; সমৃদ্ধিশালী, সম্ভ্রমশালী ইত্যাদি।
ইন্, শালিন্ ও বিন্ প্রত্যয়ান্ত মূল শব্দে ঈ-যোগে স্ত্রী-বাচক শব্দ পাওয়া যায়। যথা—সুখিন্ + ঈ = সুখিনী; অধিকারিন্ + ঈ = অধিকারিণী (ণত্ব-বিধি লক্ষ্য কর)। সেইরূপ সম্পৎশালিনী, তপস্বিনী, আকাঙ্ক্ষিণী, মেধাবিনী ইত্যাদি।
(ঙ) ল : মাংস—মাংসল, শ্যাম—শ্যামল। সেইরূপ শীতল, শ্রীল, বৎসল, কুশল, গীতল (lyrical), চিত্রল, মৃদুল, শ্মশ্রুল, মঞ্জুল, পাংশুল, পেশল (কোমল), দোষল, ধূমল। রামচন্দ্র দূর্বাদলের মতোই শ্যামল। স্নেহল বিদ্যাসাগরের বুদ্ধিদীপ্ত চক্ষুদ্বয় বাষ্পল হইয়া উঠিল।
(চ) ইল : ফেন—ফেনিল, পঙ্ক—পঙ্কিল, সর্প—সর্পিল, জটা—জটিল, শঙ্কা—শঙ্কিল। “চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট।”-গোবিন্দদাস।
(ছ) র : মুখ—মুখর, ঊষ (লোনা মাটি)—ঊষর, পাণ্ডু—পাণ্ডুর, মধু মধুর, নখ—নখর। “এ নহে মুখর বনমর্মরগুঞ্জিত।”—রবীন্দ্রনাথ।
(জ) শ : লোম—লোমশ, কর্ক (কঠোরতা)—কর্কশ।
॥ ময় (ময়ট্) ॥
বিকার, ব্যাপ্তি ও স্বরূপার্থে এই প্রত্যয় হয়। এই প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষণ। (ক) বিকারার্থে : মৃৎ—মৃন্ময় (মৃত্তিকার দ্বারা নির্মিত)। সেইরূপ স্বর্ণময়, হিরণ্ময়, শিলাময়। (খ) ব্যাপ্তি অর্থে : পৃথিবী—পৃথিবীময়, মধু—মধুময়। সেইরূপ ঘৃতময়, জলময়। (গ) স্বরূপার্থে : ব্রহ্ম—ব্রহ্মময়। সেইরূপ চিন্ময়, মনোময়, প্রেমময়, করুণাময়, স্নেহময়, আনন্দময়, মহিমময়, গরিমময়, মধুরিমময়, কৃষ্ণময়, বাঙ্ময়। ময় প্রত্যয়াস্ত শব্দের উত্তর ঈ যোগ করিয়। স্ত্রী-বাচক শব্দ পাওয়া যায়।
॥ ত্ব, তা, ইমন্ ॥
ভাব বুঝাইতে বিশেষণের উত্তর এই প্রত্যয়গুলি প্রযুক্ত হয়। প্রত্যয়গুলির কোনো অংশই লোপ পায় না।
(ক) ত্ব : প্রভু–প্রভুত্ব, দায়ী—দায়িত্ব (দায়িন্ শব্দের ন্ লোপ), মহৎ—মহত্ত্ব (ত্ + ত = ত্ত্ব), রাজন্—রাজত্ব, সৎ—সত্ত্ব, স্ব–স্বত্ব (অধিকার; সত্ত্ব শব্দটির সহিত বানান ও অর্থপার্থক্য লক্ষ্য কর); অর্থৎ (দীক্ষাদানের অধিকারপ্রাপ্তা বৌদ্ধ ভিক্ষুণী) + ত্ব = অহত্ত্ব। সেইরূপ স্থায়িত্ব, দেবত্ব, গুরুত্ব, মিথ্যাত্ব, তত্ত্ব, বৃহত্ত্ব। গদ্য রচনায় ভাষার ভার বাড়ানোর চেয়ে ধার বাড়ানোর কৃতিত্ব বেশী। ছেলেদের প্রথম থেকেই দায়িত্বে দীক্ষা দেওয়া দরকার।
(খ) তা : বন্ধু–বন্ধুতা, সাধু—সাধুতা, উপকারী—উপকারিতা (উপকারি শব্দের ন্ লোপ); সৎ + তা সত্তা। সেইরূপ প্রতিযোগিতা, উপযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, পবিত্রতা, খলতা, মুখরতা, মৃদুতা, চতুরতা, ক্রুরতা, গুণবত্তা, শক্তিমত্তা, ভগবত্তা। বিশেষণপদে এই ত্ব অথবা তা প্রত্যয় যোগ করিয়া বিশেষ্য পাওয়া যায়। সেইজন্য সৎ + ত্ব = সত্ত্ব অথবা সৎ + তা = সত্তা। কিন্তু বিশেষ্যপদে এই প্রত্যয় যুক্ত হয় না বলিয়া উৎকর্ষতা, কলুষতা প্রভৃতি শব্দ ব্যাকরণসিদ্ধ নয়। উৎকৃষ্ট ভাবটি বুঝাইতে উৎকর্ষ (উদ্-কৃষ্ + অল্) নিজেই বিশেষ্য। তদ্রূপ নিশ্চয় (নিঃ-চি + অল্) শব্দটি সংস্কৃতমতে যেখানে শুধু বিশেষ্য, সেখানে অতিরিক্ত তা প্রত্যয় যোগ করার কোনো প্রয়োজন নাই। নিশ্চয় শব্দটি বাংলায় “নিশ্চিত” বা “নিঃসন্দেহ” অর্থে যেখানে বিশেষণ, সেখানে তা প্রত্যয় যোগ করা অবিধেয় নহে। “(নৌকা) এক্ষণে কোন্ দিকে কোথায় যাইতেছে, তাহার কিছু নিশ্চয়তা ছিল না।”—বঙ্কিমচন্দ্র। “যেখানে যত বেশী শক্তি সেখানে তত বেশী ভগবত্তা।”
(গ) ইমন্ (এই প্রত্যয়জাত শব্দ পুংলিঙ্গ) : কাল—কালিমন (কর্তৃকারকের একবচনে কালিমা); লঘু—লঘিমন্ (কর্তৃকারকের একবচনে লঘিমা); নীল—নীলিমা; মলিন—মলিনিমা; গুরু—গরিমা; মহৎ–মহিমা; দীর্ঘ—দ্রাঘিমা; বহু—ভূমন্ (নিপাতনে কর্তৃকারকের একবচনে ভূমা); রক্ত—রক্তিমা; মধুর—মধুরিমা (মাধুরিমা নয়); সিতি–সিতিমা (শুক্লতা, কৃষ্ণতা ও নীলিমা তিনটি অর্থেই)।
ইমন্ প্রত্যয়নিষ্পন্ন শব্দের উত্তর ময় প্রত্যয় যুক্ত হইলে, অথবা শব্দটির সহিত দেবী অন্বিত প্রভৃতি শব্দ সমাসবদ্ধ হইলে ইমন্ প্রত্যয়ের অন্ত্য ন্ লোপ পায়; তখন শব্দটিতে আর কর্তৃকারকের একবচনের রূপ দরকার হয় না। কালিমময়, মহিমময়ী, মহিমরঞ্জন, গরিমমণ্ডিত, নীলিমদেবী ইত্যাদি।
॥ ত্যক্ ॥
দক্ষিণা, পশ্চাৎ ও পুরঃ শব্দের পরে ত্যক্ প্রত্যয় হয়। ক্ ইৎ, ত্য থাকে। দক্ষিণা—দাক্ষিণাত্য, পশ্চাৎ—পাশ্চাত্ত্য (দক্ষিণা-পশ্চাৎ-পুরসস্ত্য সূত্রানুযায়ী)।
॥ তন ॥
উৎপন্ন, জাত বা ভাব বুঝাইতে প্রত্যয়টি যুক্ত হয়। এই প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষণ। প্রাক্—প্রাক্তন, সনা (সদা)—সনাতন, ইদানীং—ইদানীন্তন। সেইরূপ পূর্বতন, অধুনাতন, পুরাতন, অদ্যতন, চিরন্তন, তদানীন্তন, নক্তন্তন, অধস্তন, ঊর্ধ্বতন।
॥ সাৎ ॥
সেই বস্তুতে পরিণত বা কোনোকিছুতে অর্পিত অর্থে এই প্রত্যয় হয়। ধূলি + সাৎ = ধূলিসাৎ (ধূলিতে পরিণত)। সেইরূপ ভস্মসাৎ, ভূমিসাৎ, আত্মসাৎ, অগ্নিসাৎ, উদরসাৎ (উদরে অর্পিত) ইত্যাদি।
॥ চ্বি ॥
কোনো বস্তু যে রূপে ছিল না, তাহাকে সেই রূপে রূপায়িত করা বা বস্তুটির সেই রূপ প্রাপ্ত হওয়ার নাম অভূততদ্ভাব (যাহা ছিল না তাহার অবস্থা প্রাপ্ত হয় বলিয়াই নাম অভূততদ্ভাব)। অভূততদ্ভাবে চি প্রত্যয় হয়। এই প্রত্যয়ের সবটুকুই লোপ পায়। চি প্রত্যয়ের সঙ্গে কৃ বা ভূ ধাতু বসে। চি প্রত্যয়ের পূর্ববর্তী শব্দটি অ-বর্ণান্ত হইলে অ-বর্ণ-স্থানে ঈ হয়, ঋ স্থানে রী হয় এবং অন্য হ্রস্বস্বর থাকিলে দীর্ঘ হয়। ভস্ম ছিল না, ভস্মে পরিণত হইয়াছে—এই অর্থে ভস্ম + চি + ভূ + ক্ত = ভস্মীভূত; তদ্রূপ শিলা + চি + ভূ + ক্ত = শিলীভূত রাশি + চি + কৃ + ক্ত = রাশীকৃত; শ্রোতৃ + চি + ভূ + অন = শ্রোত্রীভবন; বশ + চি + কৃ + অন = বশীকরণ; দ্রব + চি + ভূ + অন = দ্রবীভবন নীরোগ + চি + কৃ + অন = নীরোগীকরণ; লঘু + চি + কৃ + অন = লঘূকরণ। সেইরূপ দূরীকরণ, লঘুভবন, শুক্লীভূত, স্থিরীকরণ, আদ্রীকরণ, তীর্থীকৃত, উর্বরীকৃত, নির্মলীভূত, স্তূপীকৃত, ঘনীভূত, কেন্দ্রীভূত, মন্দীভূত, অশ্মীভূত, প্রস্তরীভূত, জাতীয়ীকরণ, স্তরীভবন, বশীভূত, সমষ্টীভূত, সমীকরণ, বিশেষীকরণ, একত্রীভবন, নিরস্ত্রীকরণ, স্বাভাবিকীকরণ, সক্রিয়ীকরণ, নিষ্ক্রিয়ীকরণ, সাধারণীকৃত, সরলীভবন, স্পষ্টীকৃত, কৃশীকরণ, দ্রবীভূত, নবীকরণ, নবীভবন, নীরোগীভবন (কাজটি, কিন্তু নীরোগ-দের ভবন : অধিকরণবাচ্যে নীরোগভবন)।
॥ কল্প ॥
“কিছু কম” অথবা “প্রায়” অর্থে এই প্রত্যয় যুক্ত হয়। পিতৃ—পিতৃকল্প (প্রায় পিতার মতো); মৃত—মৃতকল্প (প্রায়-মৃত); বিদ্বৎ—বিদ্বৎকল্প।
॥ শঃ ॥
বীপ্সার্থে শঃ প্রত্যয় হয়। ক্রম—ক্রমশঃ, প্রায় প্রায়শঃ।
॥ ধা ॥
ধা হইল প্রকারবাচক প্রত্যয়। বহু—বহুধা; দ্বি—দ্বিধা। সেইরূপ ত্রিধা, নবধা, শতধা, সহস্রধা।
॥ তর, তম, ঈয়স, ইষ্ঠ ॥
দুইটি ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাইলে বিশেষণের উত্তর তর বা ঈয়স্ প্রত্যয় এবং দুই-এর অতিরিক্ত ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাইলে বিশেষণের উত্তর তম বা ইষ্ঠ প্রত্যয় যুক্ত হয়।
সকল শ্রেণীর বিশেষণের উত্তর তর ও তম প্রত্যয় হয়। এই দুইটি প্রত্যয়ের যোগে মূল বিশেষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু কেবল গুণবাচক বিশেষণের উত্তর ঈয়স্ ও ইষ্ঠ প্রত্যয় যোগ হয়। এই দুইটি প্রত্যয়ের যোগে মূল শব্দের অনেক পরিবর্তন হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে একই বিশেষণে তর ও ঈয়স্ এবং তম ও ইষ্ঠ দুইটি করিয়া প্রত্যয়ের যোগে দুইটি পৃথক্ শব্দ পাওয়া যায়। বৃহৎ—বৃহত্তর, বৃহত্তম; শ্লাঘ্য—শ্লাঘ্যতর, শ্লাঘ্যতম; অল্প—কনীয়ান্ (অল্পীয়ান্), কনিষ্ঠ (অল্পিষ্ঠ); উরু (মহৎ)—বলীয়ান্, বরিষ্ঠ; গুরু—গুরুতর বা গরীয়ান্, গুরুতম বা গরিষ্ঠ; পটু—পটীয়ান্, পটিষ্ঠ; প্রশস্য–শ্রেয়ান্, শ্রেষ্ঠ; প্রিয়—প্রিয়তর বা প্রেয়া, প্রিয়তম বা প্রেষ্ঠ; বলবান্-বলবত্তর, বলবত্তম; বহু—ভূয়ান্, ভূয়িষ্ঠ; বৃদ্ধ—বর্ষীয়ান্ (জ্যায়ান্), বর্ষিষ্ঠ (জ্যেষ্ঠ); মহৎ—মহত্তর বা মহীয়ান্, মহত্তম বা মহিষ্ঠ; যুবা—যবীয়ান্ (কনীয়ান্), যবিষ্ঠ (কনিষ্ঠ); লঘু—লঘুতর বা লঘীয়া, লঘুতম বা লঘিষ্ঠ (২৬৫-২৬৮ পৃষ্ঠায় বিশেষণের তারতম্য দ্রষ্টব্য)।
॥ ঈ ॥
পুংলিঙ্গ-বাচক শব্দের উত্তর এই স্ত্রী-প্রত্যয়টি যুক্ত হইয়া স্ত্রীলিঙ্গ-বাচক শব্দের সৃষ্টি করে। মানব—মানবী, ঋষি–ঋষী, সাধু—সাধ্বী, গুরু—গুবী, উরু—উর্বী (পৃথিবী)। (এ বিষয়ে ১৭৫-১৮৭ পৃষ্ঠায় লিঙ্গ শীর্ষক পরিচ্ছেদটি বিশেষ দ্রষ্টব্য)।
॥ ক ॥
সম্বন্ধার্থে এই প্রত্যয়টির প্রয়োগ হয়। পিতৃ—পৈতৃক, গতি—গতিক, পর—পরক, পথিন্—পথিক, ভূমি + ক + আ = ভূমিকা
বাংলা তদ্ধিত-প্রত্যয়
(১) আ—অস্তি স্বার্থ অনাদর সাদৃশ্য উৎপন্ন প্রভৃতি অর্থে : (ক) আছে অর্থে—তেল—তেলা, নুন-নোনা, লোনা; চাল–চালা, রোগ—রোগা, গোদ—গোদা, জল—জলা। গোদা পায়ের ধুলো একটু দিন দা-ঠাউর। “তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ।” এমন জলা-জঙ্গলা জায়গায় বাড়িঘর করে? (খ) স্বার্থে—গোয়াল—গোয়ালা, চাঁদ চাঁদা, চোর—চোরা, জন—জনা, শিরোনাম—শিরোনামা। “হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা।” “চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী।” “পিয়া বিছুরল যদি কি আর জীবনে।” (গ) অনাদরে—কেষ্ট—কেষ্টা। সেইরূপ গোপলা, মাখনা, নেপলা। (ঘ) সাদৃশ্যে-হাত-হাতা (হাতের মতো দেখিতে), বাঘ—বাঘা, কদম—কদমা। (ঙ) উৎপন্ন বা আগত অর্থে—দখিন—দখিনা, পশ্চিম—পশ্চিমা। দখিনা বাতাস। পশ্চিমা গোয়ালা।
(২) আই–ভাব, আদর ও সম্বন্ধ বুঝাইতে : (ক) ভাবার্থে—বড়—বড়াই (বড়োর ভাব), চিকন—চিকনাই, পুষ্টি—পোষ্টাই, সাফ—সাফাই (নির্দোষতা)। (খ) আদরে—কালাই, বলাই, জগাই, মাধাই। “জটিলে কুটিলে না থাকলে ভগবানের লীলা পোষ্টাই হয় না।” ছোটো আমিটাই সবকিছুর বড়াই করে। (গ) সম্বন্ধার্থে—ভোর―ভোরাই (ভোরের স্তব), চোর চোরাই, মোগল—মোগলাই।
(৩) আল, আলো, আলি, আলী—আছে অর্থে বা দেশ, পেশা, ব্যবসায়, ভাব ইত্যাদি বুঝাইতে : (ক) পাঁক–পাঁকাল, মাথা—মাথাল, দাঁত—দাঁতাল, দয়া—দয়াল, লাঠি—লাঠিয়াল > লেঠেল (অভিশ্রুতি), রস—রসাল (আম) [ আল প্রত্যয়ান্ত শব্দের অন্ত্য অ অনুচ্চারিত ], কিন্তু রসাল (রসযুক্ত), ধারাল, আঠাল প্রভৃতি শব্দের অন্ত্য অ উচ্চারিত। শাঁস—শাঁসালো, ‘ঝাঁজ—ঝাঁজালো, দুধ—দুধালো (দুধলো), পেঁচ—পেঁচালো, জমক (আড়ম্বর)—জমকালো, আঠা—আঠালো, তেজ—তেজালো, মাথা—মাথালো (বুদ্ধিমান্)। (খ) ঘটক—ঘটকালি, মাইয়া + আলি = মেয়েলি। সেইরূপ ঠাকুরালি, চতুরালি, মিতালি—শব্দগুলি বিশেষ্য। সোনা—সোনালী; রূপা—রূপালী। সেইরূপ পুরুষালী। আলী প্রত্যয়যুক্ত শব্দ বিশেষণ।
(৪) আরী–বৃত্তি বুঝাইতে : পূজা—পূজারী (পূজাই যাহার বৃত্তি), ভিখ—ভিখারী, শাঁখা—শাঁখারী, কাঁসা—কাঁসারী। সেইরূপ চুনারী।
(৫) ই—বিভিন্ন অর্থে ই প্রত্যয় হয় : (ক) বৃত্তি : মাস্টার—মাস্টারি, ব্যারিস্টার—ব্যারিস্টারি। সেইরূপ ড্রাইভারি, ডাক্তারি, রাখালি, কবিরাজি, লেঠেলি, দালালি ইত্যাদি। এইসমস্ত শব্দ ঈ-কারান্ত হইলে বিশেষণ।—মাস্টারী চাল, জমিদারী কায়দা, পণ্ডিতী বিধান, ডাক্তারী বুদ্ধি, কবিরাজী দাওয়াই ইত্যাদি। (খ) ভাব বা আচরণ বুঝাইতে : চালাক—চালাকি, শয়তান—শয়তানি (শয়তানী—বিণ)। (গ) স্বার্থে : দিব্য–দিবি, আজ—আজি, চার—চারি, নিশা—নিশি, ছাতা—ছাতি, ফাঁস—ফাঁসি। (ঘ) কোনো স্থানে জাত বা সম্বন্ধ বুঝাইতে : গদা—গদাই, সাফা—সাফাই, ফাঁপা—ফাঁপাই, পাটনা—পাটনাই, হাওয়া—হাওয়াই, খাগড়া–খাগড়াই, ঢাকা—ঢাকাই, দালদা—দালদাই। (ঙ) উপাদানে প্রস্তুত বুঝাইতে : বাঁশ—বাঁশি, কাঁসা—কাঁসি। (চ) ক্ষুদ্রার্থে : ছোরা—ছুরি, কোশা—কুলি, ঝোলাঝুলি, কলস–কলসি, দড়াদড়ি, রশারশি (ছ) ধ্বন্যাত্মক শব্দে ই যোগে ভাববাচক বিশেষ্য : কাঁচি, টিকটিকি, চকমকি, ডুগডুগি। (জ) আদরার্থে : বাছুর–বাছুরি। “শ্রীদাম সুদাম সঙ্গে বাছুরি চরাব।”
(৬) ঈ—বিবিধ অর্থে প্রত্যয়টির প্রয়োগ হয়। (ক) অস্ত্যর্থে : ভার—ভারী, দাম—দামী, দাগ (দুর্নাম)—দাগী (চোর)। (খ) পেশা অর্থে : তেল—তেলী, ঢাক—ঢাকী, ঢোল –ঢুলী (স্বর পরিবর্তন লক্ষ্য কর), করাত করাতী। (গ) দক্ষ অর্থে : সেতার—সেতারী, ধ্রুপদ—ধ্রুপদী, হিসাব–হিসাবী, মজলিস—মজলিসী, শিকার—শিকারী। (ঘ) সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ বুঝাইতে : বিলাত—বিলাতী, কাশ্মীর—কাশ্মীরী। সেইরূপ গুজরাটী, বৃন্দাবনী, কটকী, জাপানী, শান্তিপুরী, বাগেরহাটী, মুর্শিদাবাদী, রাজবলহাটী। (ঙ) উপাদানে প্রস্তুত অর্থে রেশম—রেশমী, পশম—পশমী। (চ) বর্ণবাচক বিশেষণ বুঝাইতে : আসমান—আসমান, বাদাম—বাদামী, বসন্ত—বাসন্তী, জাফরান—জাফরানী। (ছ) আশীর্বাদ প্রণাম ইং ‘দি উপলক্ষে দত্ত অর্থ বস্ত্র ইত্যাদি বুঝাইতে : প্রণামী, আশীর্বাদী, দর্শনী, নমস্কারী, সেলামী। (জ) সম্বন্ধ বুঝাইতে : জবাবী।
(৭) ইয়া (চলিতে এ)—বিবিধ অর্থে ইয়া (এ) প্রত্যয় হয়। চলিত রূপটিই বেশী প্রচলিত। (ক) আছে অর্থে : কাঁকর—কাঁকরিয়া > কাঁকুরে, পাথর—পাথরিয়া > পাথুরে, দাপট—দাপটিয়া > দাপুটে, মাটি—মাটিয়া > মেটে, বালি—বালিয়া > বেলে। এমন পাথুরে প্রমাণ উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? (খ) বৃত্তিজীবী অর্থে : কীর্তন—কীর্তনিয়া > কীর্তনে, কম্বল—কম্বলিয়া > কম্বুলে, যোগাড়—যোগাড়িয়া > যোগাড়ে, মোট—মুটিয়া > মুটে, জাল—জালিয়া > জেলে। (গ) তুচ্ছার্থে : মানকে, ফটকে। (ঘ) সম্বন্ধ, জাত, সাদৃশ্য প্রভৃতি অর্থে : পাহাড়—পাহাড়িয়া > পাহাড়ে। সেইরূপ একচেটিয়া > একচেটে, আষাঢ়িয়া > আষাঢ়ে, শহর—শহরিয়া > শহুরে, কাগজ—কাগজিয়া > কাগুজে, বাদল –বাদুলে, উত্তর–উত্তুরে, বেগুন—বেগুনিয়া > বেগুনে। (ঙ) স্বভাব অর্থে : কাঁদন কাঁদনিয়া > কাঁদুনে (ছেলে বা মেয়ে), কাঁদান—কাঁদানিয়া > কাঁদানে (গ্যাস), ফলার—ফলারে, আমোদ—আমোদিয়া > আমুদে, বানর—-বানরিয়া > বানুরে, রগড়—রগড়িয়া > রগুড়ে, আদর–আদরিয়া > আদুরে। (চ) অনুকার শব্দে এ যোগে বিশেষণ : ধবধব—ধবধবে, দগদগ—দগদগে। সেইরূপ ফুটফুটে, কনকনে।
(৮) উয়া (চলিতে ও)—বিবিধ অর্থে উয়া প্রত্যয় হয়। (ক) জীবিকা অর্থে : মাছ—মাছুয়া > মেছো, পান–পানুয়া > পেনো। (খ) অবজ্ঞায় : যদু—যেদো, হারু—হেরো। (গ) আছে অর্থে : টাক—টেকো, কুঁজ—কুঁজো, দুধনাক—দুধনাকুয়া > দুধনেকো, বাত–বাতুয়া > বেতো। (ঘ) উৎপন্ন, সংশ্লিষ্ট, আসক্ত, সম্বন্ধীয় অর্থে : ভাত—ভেতো (বাঙালী), গাছ—গেছো, বন—বুনো, দাঁত—দেঁতো, মাঠ—মেঠো (সুর), ধান–ধেনো, বান—বেনো, মাসী—মেসো, কোণ—কুনো, ঘাস—ঘেসো। এমন ধেনো বুদ্ধি না হলে কি চাষে বছর-বছর মার খাও? বাঁধানো দাঁতে দেঁতো হাসিটাই হাসা যায়, দাঁতের আসল কাজ হয় কি? এই জঙ্গলে প্রচুর গেছো (থাকে অর্থে) বানর ও বুনো শুয়োর আছে।
(৯) আমি, আম (আমো)—ভাব বা অনুকরণ অর্থে (নিন্দায়)। (ক) আমি : দুষ্ট—দুষ্টামি। সেইরূপ ছেলেমি, খোকামি, পাগলামি, বাঁদরামি, গুণ্ডামি, খ্যাপামি। (খ) আম (আমো) : জ্যাঠা-জ্যাঠামো, পাকা—পাকামো, পাগল—পাগলামো।
(১০) ওয়ান, ওয়াল, ওয়ালা—অধিকার, সম্বন্ধ, অস্তি বা বৃত্তি অর্থে : গাড়ি—গাড়োয়ান; সেইরূপ দারোয়ান। বাড়ি—বাড়িওয়ালা, রিক্শা—রিকশাওয়ালা, ছানা—ছানাওয়ালা, কাবুল—কাবুলওয়ালা। সেইরূপ বাসওয়ালা, দুধওয়ালা, পাগড়িওয়ালা, দাড়িওয়ালা। ঘাট—ঘাটোয়াল।
(১১) উ—স্বার্থে ও আদরে : দাদা-দাদু, খুকি—খুকু, কালী কালু, চাঁদ—চাঁদু, নরেন—নরু।
(১২) উক—স্বভাব অর্থে : নিন্দা (তৎসম শব্দ)—নিন্দুক, হিংসা–হিংসুক, লাজ—লাজুক। সেইরূপ মিথ্যুক, পেটুক।
(১৩) লা—সাদৃশ্যে : মেঘ-মেঘলা। সেইরূপ আধলা, একলা, পাতলা। (১৪) আইত—সেবা করে যে এই অর্থে : সেবা—সেবাইত। (১৫) ড়িয়া (ড়ে)–ব্যবসায় বা স্বভাব অর্থে : বাসা—বাসাড়িয়া > বাসাড়ে, দাবা—দাবাড়িয়া > দাবাড়ে।
(১৬) আরুনিপুণ অর্থে : বোমা—বোমারু, দিশ—দিশারু।
(১৭) মন্ত, বন্ত—আছে অর্থে : পয়—পয়মন্ত। সেইরূপ গুণবন্ত, বুদ্ধিমন্ত, ভাগ্যমন্ত বা ভাগ্যবন্ত, প্রাণবন্ত।
(১৮) টিয়া (চলিতে টে)—স্বভাব বা আছে অর্থে বিশেষ্য বা বিশেষণের উত্তর : ঝগড়া–ঝগড়াটিয়া (ঝগড়াটে), পাগলা—পাগলাটিয়া ( পাগলাটে), হিংসা—হিংসুটিয়া (হিংসুটে), তামা—তামাটিয়া (তামাটে), সাদা– সাদাটিয়া (সাদাটে)! ওইভাবে ঘোলাটিয়া (ঘোলাটে), রোগাটিয়া (রোগাটে), লম্বাটিয়া (লম্বাটে), ভাড়াটিয়া (ভাড়াটে), পাংশুটিয়া (পাংশুটে)। টিয়া অপেক্ষা টে প্রত্যয়ান্ত শব্দের ব্যবহারই বেশী।
(১৯) পনা–আচরণ বা ভাব বুঝাইতে : গিন্নীপনা, নেকাপনা, বেহায়াপনা, সতীপনা, ইংরেজীপনা, দুরন্তপনা, বীরপনা (তৎসম শব্দে বাংলা প্রত্যয়)।
(২০) পানা, পারা—সাদৃশ্য বুঝাইলে : চাঁদপানা (চাঁদের মতো দেখিতে), কুলোপানা, রোগাপানা, পাগলপারা, যোগিনীপারা, সূচপারা।
(২১) ট—স্বার্থে বা স্বভাব অর্থে : দাপ (< দর্প)—দাপট, সাপ—সাপট, ঝাপঝাপট, ভরা—ভরাট, জমা–জমাট, গুম—গুমট।
(২২) উড়িয়া (উড়ে)–ব্যবসায়, সম্বন্ধ, স্বভাব অর্থে : ভূত—ভূতুড়িয়া > ভুতুড়ে, ফাঁস—ফাঁসুড়িয়া > ফাঁসুড়ে, সাপ—সাপুড়িয়া > সাপুড়ে, খেলা—খেলুড়িয়া > খেলুড়ে (স্ত্রী খেলুড়ী); ঘাস—ঘাসুড়িয়া > ঘাসুড়ে।
(২৩) উরিয়া (উরে)–বৃত্তি অর্থে : কাঠ—কাঠুরিয়া > কাঠুরে।
(২৪) চী—’ধরে যে’ এই অর্থে : মশাল—মশালচী, তবলা—তবলচী।
বিদেশী তদ্ধিত-প্রত্যয়
(১) আনা, আনি, গিরি, নবিস—আচরণ, বৃত্তি বা ভাব অর্থে : বাবুয়ানা (বাবুয়ানি), মুনশীয়ানা, হিন্দুয়ানা (হিন্দুয়ানি), গরিবানা, সাহেবিয়ানা, ঘরানা, বাবুগিরি, কেরানীগিরি, দারোগাগিরি, গোয়েন্দাগিরি, নকলনবিস, শিক্ষানবিস, হিসাবনবিস। (বাবাগিরি, গুরুগিরি—একটু বিদ্রূপার্থে)।
(২) খানা—স্থান অর্থে : ডাক্তারখানা, ছাপাখানা, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, কারখানা, মুদিখানা, খাজাঞ্চীখানা, কসাইখানা, পিলখানা (হাতিশালা)।
(৩) গর—যে করে এই অর্থে : বাজিগর, সওদাগর, কারিগর।
(৪) খোর—খায় যে বা আসক্ত অর্থে : গাঁজাখোর, আফিমখোর, ঘুষখোর, চশমখোর, নেশাখোর, মুনাফাখোর, ছুটিখোর।
(৫) দান (দানি) –আধার অর্থে : বাতিদান, ধূপদানি, কলমদানি, ফুলদানি, পিকদান, পিকদানি, আতরদানি।
(৬) দার—যুক্ত, পাত্র বা বৃত্তিধারী অর্থে : চড়কদার, কলকাদার, দোকানদার, বাজনদার, ঠিকাদার, অংশীদার, ভাগীদার, জমিদার, জমাদার, হাবিলদার, চৌকিদার, আড়তদার, পত্তনিদার, সমঝদার, বুঝদার, পেশাদার, মজাদার, মজুতদার, ওজনদার, দেনাদার (দেনদার), জোতদার, জোরদার, চটকদার, জোগানদার, জরিদার, উপায়দার।
(৭) ৰাজ—দক্ষ বা আসক্ত অর্থে : মামলাবাজ, ফন্দিবাজ, ফাঁকিবাজ, দাগাবাজ, দাঙ্গাবাজ, গল্পবাজ, মতলববাজ, দাঁওবাজ, যুদ্ধরাজ, এলেমবাজ।
খোর, দার, বাজ প্রত্যয়ান্ত শব্দের উত্তর ভাবার্থে ই প্রত্যয়যোগে জমিদারি, গাঁজাখুরি, চৌকিদারি, ফন্দিবাজি, দোকানদারি, দুনিয়াদারি, ভাঁওতাবাজি, ফাঁকিবাজি, দাগাবাজি, দলবাজি, ধড়িবাজি প্রভৃতি বিশেষ্যপদ পাওয়া যায়।
(৮) সহি (সই)—উপযুক্ত অর্থে : মানানসই, চলনসই, পছন্দসই, খাপসই, জুতসই, দশাসই (চেহারা), টেকসই।
লক্ষ্য কর—একই ধাতুতে সংস্কৃত ও বাংলা কৃৎ-যোগে যেমন একাধিক শব্দ পাওয়া যায়, একই শব্দে তেমনি সংস্কৃত বাংলা বা বিদেশী তদ্ধিত-যোগে একাধিক শব্দ পাওয়া যায়। √ চল্ হইতে চলৎ চলিষ্ণু চালক চালন চল চলন চলন্ত চাল চালনি (চালুনি); তৎসম শব্দ তেজঃ হইতে তেজস্বী তেজস্বান্ তেজীয়ান্; বাংলা তেজ হইতে তেজি (বি), তেজী (বিণ), তেজালো (বিণ)।
স্বার্থিক প্রত্যয়
১৮৬। স্বার্থিক প্রত্যয় : যে প্রত্যয় যোগ করিলে মূল শব্দটির অর্থ এবং প্রত্যয়ান্ত নবগঠিত শব্দটির অর্থ একই থাকে, সেই প্রত্যয়কে স্বাৰ্থিক প্রত্যয় বলে। মূল শব্দটির স্বার্থ অর্থাৎ নিজস্ব অর্থ অটুট রাখার জন্যই এই প্রত্যয়ের প্রয়োগ বলিয়া নামটি স্বার্থিক প্রত্যয়। যেমন (১) সংস্কৃত : ষ্ণ, ষ্ণ্য, ষ্ণিক। (২) বাংলা : আ, ই, ঈ, উ।
ষ্ণ প্রত্যয়ান্ত : চোর—চৌর; বন্ধুবান্ধব; বিভব-বৈভব; মরুৎ মারুত; কুতূহল—কৌতূহল; দেবতা—দৈবত। ষ্ণ্য প্রত্যয়ান্ত : সহায়—সাহায্য; সমীপ—সামীপ্য; চেতনা—চৈতন্য; করুণা—কারুণ্য। ষ্ণিক প্রত্যয়ান্ত : মুক্তা—মৌক্তিক; অত্যন্ত—আত্যন্তিক।
আ প্রত্যয়ান্ত : চোর—চোরা, ঠাস ঠাসা, ডগ—ডগা। ই প্রত্যয়ান্ত : ফাঁস—ফাঁসি, জমাট—জমাটি। ঈ প্রত্যয়ান্ত : মণ্ডল—মণ্ডলী। উ প্রত্যয়ান্ত : দাদা-দাদু, দুষ্ট—দুষ্টু।
কয়েকটি বিশেষ শব্দের ব্যুৎপত্তি লক্ষ্য কর : √ অস্ + শতৃ = সৎ; সৎ-এর ভাব = সৎ + ত্ব = সত্ত্ব। স্ব-র অধিকার বুঝাইতে স্ব + ত্ব = স্বত্ব। বিদ্যমানতা (অবস্থিতি) বুঝাইতে সৎ + তা = সত্তা। মহৎ-এর ভাব বুঝাইতে মহৎ + ত্ব = মহত্ত্ব। মহাত্মার ভাব বুঝাইতে মহাত্মা + ষ্ণ্য = মাহাত্ম্য। যগন্ত √গম্ + অন্ (কর্তৃবা) = জঙ্গম; যঙ্কুগন্ত √লস্ + অ (ভাবে) + আ (স্ত্রীলিঙ্গ) = লালসা; যগন্ত √সৃপ্ (পুনঃপুনঃ গমন করা) + অন্ (কর্তৃবা) = সরীসৃপ; যন্ত √জ্, + ক্ত = জর্জরিত; যগন্ত √লিহ্ + শানচ্ = লেলিহান; যগন্ত √লুভ্ + অচ্ = লোলুপ; √্যা + য + বর = যাযাবর; প্রতি—√অচ্ + ক্বিপ্ + ঈ প্রতীচী; প্র-√অন্চ্ + ক্বিপ্ = প্রাক্; √চিৎ + কণ = চিক্কণ; √দ্যুৎ + ইস্ = জ্যোতিঃ; √মূর্ছ + ক্তি = মূর্তি; গায়ৎ—√ত্রৈ + ড + ঈ = গায়ত্রী; √স্থা + ইচ্ = স্থির; √বচ্ + কিত (কর্মবা) = উচিত; √ প্রচ্ছ + ন = প্রশ্ন; √ঋ + অন্য = অরণ্য; √ঋ + অনি = অরণি; √ঋ + উন = অরুণ; √দৃ, + ণিচ্ + উন = দারুণ; অপি—√ধা + অন = পিধান; অপি—√নহ্ + ক্ত = পিনদ্ধ; সম্—√তন্ + ক্ত = সতত; √পীয় + ঊষ = পীযূষ; √সৃজ্ + উ রজ্জু (নিপাতনে); √ঘস্ + ঈ = ক্ষীর; অৎ—√ভূ + ভুতচ্ = অদ্ভুত; √মূর্ছ + ক্ত মূর্ছিত (কর্তৃবা), মূর্ত (কর্তৃবা), মুহূর্ত (কর্তৃবা—নিপাতনে); উদ্ (উপরি)—√হা (ত্যাগ করা বা গমন করা) + ব = ঊর্ধ্ব (উদ্-স্থানে ঊর্); √স্থা + অবক স্তবক (নিপাতনে); √স্বপ্ + ন স্বপ্ন; √ভূ + স্যতু = ভবিষ্যৎ (বিশেষ্য ও বিশেষণ); কিন্যা + অণ্ (অ) = কানীন; √প্রথ্ + ইব + ঈ = পৃথিবী; √ বৃ + অন্য = বরেণ্য (কর্মবাচ্যে); √বচ্ + স্যমান = বক্ষ্যমাণ (কর্মবাচ্যে); √জন্ + ণিচ্ + অন + ঈ = জননী।
পরীক্ষায় উত্তর লিখিবার রীতি
প্রকৃতি ও প্রত্যয় বিচ্ছিন্ন করিবার প্রশ্নে উত্তর করিবার রীতিটি লক্ষ্য কর :
আগত = আ—√গম্ + ক্ত (ত)—কৃৎ-প্রত্যয়; কহতব্য = √কহ্ + তব্য (বাংলা ধাতুতে সংস্কৃত কৃৎ); বিরতি = বি—√রম্ + ক্তি (তি)—কৃৎ-প্রত্যয়; জ্বলন্ত = √জ্বল্ + অন্ত (সংস্কৃত ধাতুতে বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়); গৌরব = গুরু + ষ্ণ (অ)—তদ্ধিত-প্রত্যয়; দাশরথি = দশরথ + ষ্ণি (ই)—তদ্ধিত-প্রত্যয়; বৈশিষ্ট্য = বিশিষ্ট + ষ্ণ্য (য)—তদ্ধিত-প্রত্যয়; আত্রেয়ী = অত্রি + ষ্ণেয় (এয়)—তদ্ধিত-প্রত্যয় + স্ত্রীলিঙ্গে ঈ; দাক্ষায়ণী = দক্ষ + ষ্ণায়ন (আয়ন)—তদ্ধিত-প্রত্যয় + স্ত্রীলিঙ্গে ঈ (ণত্ব-বিধি লক্ষণীয়); বৈদেশিক = বিদেশ + ষ্ণিক (ইক)—তদ্ধিত-প্রত্যয়; জাতীয় = জাতি + ষ্ণীয় (ঈয়)—তদ্ধিত-প্রত্যয়; রন্ধন = √রর্ + অনট্—সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়, ধাতুর উপধারূপে ন্ আগম; আবদ্ধ = আ—√বন্ধু + ক্ত (ত)—সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়, ধাতুর উপধা ন্ লুপ্ত; অকাট্য : কাট্য = √কাট্ + ণ্যৎ (বাংলা ধাতুতে সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়), কাট্য নয়—অকাট্য (নঞ্-তৎপুরুষ); উপায়দার = উপায় + দার (তৎসম শব্দে বিদেশী তদ্ধিত); প্রণামী = প্রণাম + ঈ (তৎসম শব্দে সম্বন্ধার্থে বাংলা তদ্ধিত); আরম্ভ = আ—√রভ্ + ঘঞ্ (ধাতুর উপধারূপে ম্ আগম); আলিম্পন = আ—√লিপ্ + অন (ধাতুর অন্ত্যবর্ণের পূর্বে ম্ আগম); পাবনী = √পূ + ণিচ্ + অন + স্ত্রীলিঙ্গে ঈ; পলায়ন = পরা—√অয়্ (অথবা √ই) + অন (র্ স্থানে ল্ হইয়াছে); ভগবান্ = ভগ + বতুপ্ (মতুপ্ প্রত্যয়টির ম ব হইয়াছে)—কর্তৃকারকের একবচন।
পদান্তর-সাধন
কৃৎ ও তদ্ধিত উভয় শ্রেণীর প্রত্যয়-দ্বারাই বিশেষ্য ও বিশেষণপদ গঠন করা হয়। কিন্তু বিশেষ্য ও বিশেষণপদের মধ্যে পদাত্তর-সাধন করিবার জন্য তদ্ধিত-প্রত্যয়ের সাহায্য একান্ত প্রয়োজন। পদান্তর-সাধনের কিছু নিদর্শন দিতেছি। কোন্ ধাতু বা শব্দের উত্তর কোন্ প্রত্যয়যোগে প্রত্যেকটি শব্দ সাধিত হইয়াছে, লক্ষ্য কর।
বিশেষ্য হইতে বিশেষণ (সংস্কৃত কৃৎ ও তদ্ধিত-যোগে)
বিশেষ্য – বিশেষণ
অংশ আংশিক
অক্ষর আক্ষরিক
অকস্মাৎ আকস্মিক
অন্তর্গতি অন্তর্গত
অধ্যয়ন অধীত
অনুবাদ অনুদিত
অতিবাহন অতিবাহিত
অপাবরণ অপাবৃত
অনুমান আনুমানিক
অনুষঙ্গ আনুষঙ্গিক
অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
অন্ত অন্ত্য
অন্তর আন্তর
অপসরণ অপসৃত
অপসারণ অপসারিত
অবধান অবহিত
অবসর অবসৃত
অবসাদ অবসন্ন
অবসান অবসিত
অভিপ্রায় অভিপ্রেত
অভিলাষ অভিলষিত
অভিষেক অভিষিক্ত
অভ্যাস অভ্যস্ত
অশন অশিত
আক্রমণ আক্রান্ত
আঘাত আহত
আঘ্রাণ আঘ্রাত
আদেশ আদিষ্ট
আদর আদরণীয়
আরম্ভ আরব্ধ
আরোহণ আরূঢ়
আলোচনা আলোচিত
আশ্রয় আশ্রিত
আসন আসীন
আহরণ আহৃত
আহ্বান আহূত
ইচ্ছা ঐচ্ছিক
ইহ ঐহিক
ইন্দ্ৰিয় ঐন্দ্রিয়ক
ইষ্টি ইষ্ট
ইতিহাস ঐতিহাসিক
ইক্ষু ঐক্ষব
ঈশ ঐশ
ঈক্ষণ ঈক্ষিত
ঈশ্বর ঐশ্বরিক
উদয় উদিত
উদ্ধার উদ্ধৃত
উপকার উপকৃত
উদর ঔদরিক
উপদ্রব উপদ্রুত
উদগিরণ উদগীর্ণ
উদীচী উদীচ্য
উদীরণ উদারিত
উদ্দেশ উদ্দিষ্ট
উত্তরণ উত্তীর্ণ
উচ্চারণ উচ্চার্য
উজ্জীবন উজ্জীবিত
উত্থাপন উত্থাপিত
উৎসর্গ উৎসর্গিত
উৎকিরণ উৎকীর্ণ
উন্নয়ন উন্নীত
উপমা উপমিত
উপার্জন উপার্জিত
উল্লেখ উল্লেখ্য
উদ্ভব উদ্ভূত
উৎক্ষেপণ উৎক্ষিপ্ত
উদ্যম উদ্যমী
উদ্ভাস উদ্ভাসিত
উদ্ভাবন উদ্ভাবিত
উপচার উপচরিত
উৎসাহ উৎসাহী
উপলব্ধি উপলব্ধ
উপহাস উপহাস্য
উপবেশন উপবিষ্ট
উৎসর্জন উৎসৃষ্ট
ঋতু আর্তব
ঋষি আর্ষ
এষণা এষিত
কণ্টক কণ্টকিত
কল্পনা কাল্পনিক
কায় কায়িক
কূজন কূজিত
ক্রোধ ক্রুদ্ধ
ক্ষয় ক্ষীণ
কোণ কৌণিক
গবেষণা গবেষিত
গৌরব গৌরবিত
গ্রহণ গৃহীত
গ্রাস গ্রস্ত
গ্রাম গ্রাম্য, গ্রামীণ
ঘাত ঘাতক
চন্দ্ৰ চান্দ্ৰ
চীন চৈনিক
চিত্ত চৈত্ত
চুম্বন চুম্বিত
চূর্ণ চূর্ণিত
চিত্র চিত্রিত
ছন্দ ছন্দিত
ছলনা ছলনীয়
জন্ম জাত
জাতি জাতীয়
জল জলীয়, জলজ
জরা জীর্ণ
জীবন জীবিত
ঝঙ্কার ঝঙ্কৃত
তাপ তপ্ত
তিরোধান তিরোহিত
তুলনা তুলনীয়, তুল্য
তেজ তেজস্বী
ত্যাগ ত্যক্ত, ত্যাজ্য
ত্বরা ত্বরিত
দান দত্ত
দহন দাহ্য
দিন দৈনিক
দীপ দীপ্ত
দুঃখ দুঃখিত
দেব দৈব
দোষ দূষ্য, দুষ্ট
দেহ দৈহিক, দেহী
দ্যোতনা দ্যোতিত
দৃষ্টি দৃষ্ট
দর্শন দার্শনিক
দংশন দষ্ট
ধর্ম ধার্মিক
ধারণ ধৃত
ধূসর ধূসরিত
নগর নাগরিক
নিশা নৈশ
ন্যায় ন্যায্য
নির্বাচন নির্বাচিত
নীতি নৈতিক
নিমিত্ত নৈমিত্তিক
পরিধান পরিহিত
পরীক্ষা পরীক্ষিত
পল্লব পল্লবিত
পশ্চাৎ পাশ্চাত্ত্য
পাক পক্ক
পান পীত, পানীয়
পাঠ পাঠ্য
পাবন পাবিত
পিতা পৈতৃক
পিতামহ পৈতামহ
পুষ্প পুষ্পিত
পূর্তি পূর্ণ
পৃথিবী পার্থিব
প্ৰকাশ প্রকাশিত
প্রকৃতি প্রাকৃতিক
প্রণয়ন প্রণীত
প্ৰণাম প্ৰণত
প্রতিকার প্রতিকার্য
প্রবাস প্রোষিত
প্রশ্রয় প্রশ্রিত
প্রত্যয় প্রত্যয়িত
প্রত্যুদ্গমন প্রত্যুদ্গত
প্রবসন প্ৰবসিত
প্রবেশ প্রবিষ্ট
প্ৰয়াণ প্রয়াত
প্রশ্ন পৃষ্ট
প্রাদুর্ভাব প্রাদুর্ভূত
প্রীতি প্রীত
প্রেরণ প্রেরিত
প্লাবন প্লাবিত
প্ৰস্থান প্রস্থিত
প্রাচী প্রাচ্য
প্রতিঘাত প্রতিহত
প্রতীক্ষা প্রতীক্ষিত
প্রতীচী প্রতীচ্য
ফেন ফেনিল
পদান্তর-সাধন
বন্দনা বন্দিত
বপন উপ্ত
বধ বধ্য, হত
বহন বাহিত
বহিঃ বাহ্য
বায়ু বায়বীয়
বাহন বাহক
বিদ্যা বিদ্বান
বিড়ম্বনা বিড়ম্বিত
বিধি বৈধ
বিধান বিহিত, বিধেয়
বিদ্যুৎ বৈদ্যুত
বিশেষণ বিশেষিত
বিশ্বজন বিশ্বজনীন
বিশ্বাস বিশ্বস্ত
বিষ্ণু বৈষ্ণব
ব্যথা ব্যথিত, ব্যথী
ব্যবহার ব্যবহার্য
বিকিরণ বিকীর্ণ
ব্যাপৃতি ব্যাপৃত
বিপর্যয় বিপর্যস্ত
বাধা বাধিত
বিদীর্ণতা বিদীর্ণ
বিদারণ বিদারিত
বিঘ্ন বিঘ্নিত
ভঙ্গ ভগ্ন
ভূষণ ভূষিত
ব্যাঘাত ব্যাহত
ভগবৎ ভাগবত
ভ্রম ভ্রান্ত
ভূগোল ভৌগোলিক
ভোজন ভুক্ত
ভোগ ভোজ্য, ভোগ্য
মন মানস
মনীষা মনীষী
মনোনয়ন মনোনীত
মরণ মৃত
মায়া মায়াবী
মার্জন মার্জিত
মিথিলা মৈথিল
মীমাংসা মীমাংসিত
মুখ মৌখিক, মুখর
মুদ্রণ মুদ্রিত
মুমুক্ষা মুমুক্ষু
মুমূর্ষা মুমূর্ষু
মূর্ধা মূর্ধন্য
মূল মৌল
মৌন মৌনী
যুক্তি যৌক্তিক
যোগ যৌগিক, যুক্ত
যোজনা যোজিত
রচনা রচিত
রন্ধন রন্ধিত
রোষ রুষ্ট
লাভ লব্ধ
লালন লালিত
লোভ লুব্ধ
লোক লৌকিক
লোপ লুপ্ত
লেহন লেহ্য, লীঢ়
শঙ্কা শঙ্কিত
শব্দ শাব্দিক
শয়ন শয়ান, শয়িত
শরৎ শারদ
শরীর শারীরিক
শাসন শাসিত
শিক্ষা শিক্ষিত
শিব শৈব
শীলন শীলিত
শ্রুতি শ্রুত
শ্রদ্ধা শ্রদ্ধেয়
শ্রবণ শ্রব্য, শ্ৰুত
শুদ্ধি শুদ্ধ
শুশ্রূষা শুশ্রূষ
শ্লেষ্মা শ্লৈষ্মিক
সংগ্ৰহ সংগৃহীত
সত্ত্ব সাত্ত্বিক
সন্দেহ সন্দিগ্ধ
সন্ধ্যা সান্ধ্য
সমাবর্তন সমাবর্তিত
সমীরণ সমীরিত
সমীহা সমীহিত
সংঘাত সংহত
সমুচ্ছয় সমুচ্ছিত
সমুদ্র সামুদ্রিক
সিঞ্চন সিঞ্চিত
সেচন সিক্ত
সূর্য সৌর
সান্ত্বনা সান্তনিত
স্নাপন স্নাপিত
স্নায়ু স্নায়বিক
স্পন্দন স্পন্দিত
হরণ হৃত
স্ত্রী স্ত্রৈণ
স্বেদ স্বিন
স্পর্শ স্পৃশ্য, স্পষ্ট
হর্ষ হৃষ্ট
হিংসা হিংসিত
হুঙ্কার হুঙ্কৃত
হৃদয় হৃদ্য
হেম হৈম
হেমন্ত হৈমন্তিক
বাংলা তদ্ধিত-যোগে
বিশেষ্য – বিশেষণ
আকাশ আকাশী
আদর আদুরে
আষাঢ় আষাঢ়ে
কোণ কুনো
গাছ গেছো
ঘা ঘেয়ো
চোর চোরাই
জুঁইফুল জুঁইফুলী
তেঁতুল তেঁতুলে
দুধ দুধে, দুধলো
পাটোয়ার পাটোয়ারী
পাহাড় পাহাড়ে
পেট পেটুক
ফলার ফলারে
ফুল ফুলেল
বেনারস বেনারসী
বনিয়াদ বনিয়াদী
মাটি মেটে
মাঠ মেঠো
মাথা মাথালো
মোগল মোগলাই
মেয়াদ মেয়াদী
যশোর যশুরে
রেশম রেশমী
শহর শহুরে
সর্বনাশ সর্বনেশে
হাট হেটো
বিশেষণ হইতে বিশেষ্য (সংস্কৃত কৃৎ ও তদ্ধিত-যোগে)
বিশেষণ – বিশেষ্য
অক্ষম অক্ষমতা
অরুণ অরুণিমা
আসক্ত আসক্তি
আসন্ন আসন্নতা
অপ্রতিভ অপ্রতিভতা
অভিজাত আভিজাত্য
অলস আলস্য
আগ্নেয় আগ্নেয়তা
উৎকৃষ্ট উৎকর্ষ
উচিত ঔচিত্য
উজ্জ্বল ঔজ্জ্বল্য
উদার ঔদার্য
উদাসীন ঔদাসীন্য
উদ্যত উদ্যতি
উদ্ধত ঔদ্ধত্য
ঋজু আর্জব
এক ঐক্য
ঐহিক ঐহিকতা
ওজস্বী ওজস্বিতা
ঔষ্ঠ্য ওষ্ঠ
ঔদরিক ঔদরিকতা
কঠিন কাঠিন্য
কিশোর কৈশোর
কুটিল কৌটিল্য
কুমার কৌমার্য
কুলীন কৌলীন্য
কুশ্ৰী কুশ্রীতা
কৃষ্ণ কৃষ্ণতা
ক্ষীণ ক্ষীণতা
ক্ষুব্ধ ক্ষুব্ধতা
গুরু গুরুত্ব
গম্ভীর গাম্ভীর্য
গভীর গভীরতা
চতুর চাতুর্য
চপল চাপল্য
চ্যুত চ্যুতি
জঙ্গম জঙ্গমতা
জীর্ণ জীর্ণতা
জীবী জীবিকা
তরল তারল্য
তরুণ তারুণ্য
তেজস্বী তেজস্বিতা
দরিদ্র দারিদ্র্য
দীর্ঘ দৈর্ঘ্য
দীন দৈন্য
দৃঢ় দৃঢ়তা
দূর দূরত্ব
দুর্বল দৌর্বল্য
পদান্তর-সাধন
নির্দিষ্ট নির্দিষ্টতা
নির্মল নির্মলতা
নির্দোষ নির্দোষতা
নির্লোভ নির্লোভতা
নিষ্ক্রিয় নিষ্ক্রিয়তা
নিষ্কর্মা নৈষ্কর্ম
নাব্য নাব্যতা
নিশ্চেষ্ট নিশ্চেষ্টতা
ন্যূন ন্যূনতা
পণ্ডিত পাণ্ডিত্য
পরম্পর পারম্পর্য
পরিণত পরিণতি
পৃথক্ পার্থক্য
প্রগল্ভ প্রগল্ভতা
প্ৰণত প্ৰণতি
প্রতিযোগী প্রতিযোগিতা
প্রত্যুপকারী প্রত্যুপকারিতা
প্রবীণ প্রাবীণ্য
প্রশমিত প্রশমন
প্রস্ফুট প্রস্ফুটতা
ফলবান্ ফলবত্তা
বন্ধুর বন্ধুরতা
বিকল বৈকল্য
বলবান্ বলবত্তা
বুদ্ধিমান্ বুদ্ধিমত্তা
বিক্লব বৈক্লব্য
ব্যুৎপন্ন ব্যুৎপত্তি
বিষম বৈষম্য
বিপরীত বৈপরীত্য
বিধৰ্মা বৈধৰ্ম
বিদ্যমান বিদ্যমানতা
ভক্তিমান্ ভক্তিমত্তা
ভ্রান্ত ভ্ৰান্তি
ভ্রাম্যমাণ ভ্রাম্যমাণতা
ভয়াবহ ভয়াবহতা
ভৌতিক ভৌতিকতা
মহান্ মহত্ত্ব
মহাত্মা মাহাত্ম্য
মলিন মালিন্য
মন্দ মান্দ্য
মধুর মাধুৰ্য
মুখর মুখরতা
ম্লান ম্লানিমা
মনস্বী মনস্বিতা
মৃদু মৃদুতা
রম্য রম্যতা
ললিত লালিত্য
লাল লালিমা
শিষ্ট শিষ্টতা
শীত শৈত্য
শুক্ল শুক্লতা
শূর শৌর্য
শুদ্ধ শুদ্ধি
শিথিল শৈথিল্য
শোভন শোভনতা
শোভমান শোভমানতা
শ্বেত শ্বৈত্য
সহজ সহজতা
সৎ সত্তা
সদৃশ সাদৃশ্য
সংস্কৃত সংস্কৃতি
সিক্ত সিক্ততা
সুজন সৌজন্য
সুভগ সৌভাগ্য
সুহৃৎ সৌহার্দ
সুরভি সৌরভ
সুষম সৌষম্য
সুষুপ্ত সুষুপ্তি
সুষ্ঠু সৌষ্ঠব
সাত্ত্বিক সাত্ত্বিকতা
সূক্ষ্ম সূক্ষ্মতা
সাক্ষর সাক্ষরতা
স্তম্ভিত স্তম্ভন
স্যূত সীবন
স্ত্রী স্ত্রীত্ব
হিংস্র হিংস্রতা
হিতৈষী হিতৈষিতা
হ্রস্ব হ্রস্বতা
বাংলা তদ্ধিত-যোগে
আলসে আলসেমি
কুঁড়ে কুঁড়েমি
গরিব গরিবানা
গিন্নী গিন্নীপনা
চালবাজ চালবাজি
চিকন চিকনাই
চতুর চতুরালি
পাগল পাগলামি
বড় বড়াই
বাবু বাবুয়ানা
শয়তান শয়তানী
ভণ্ড ভণ্ডামি
মাতাল মাতলামি
সাহেব সাহেবিয়ানা
হ্যাংলা হ্যাংলাপনা
পদান্তরের প্রশ্নে প্রদত্ত পদটি কোন্ পদ উল্লেখ করিয়া, উত্তরটি কোন্ পদ তাহাও যথাযথ উল্লেখ করিবে।
পদান্তরের প্রশ্নে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি করিয়া উত্তর দিলাম। কিন্তু বেশকিছু শব্দের একাধিক উত্তরও হয়। যেমন, অনুষ্ঠান (বি)– অনুষ্ঠিত, অনুষ্ঠেয়, অনুষ্ঠাতব্য, আনুষ্ঠানিক (বিণ)। মধুর (বিণ)—মধুরতা, মাধুর্য, মধুরিমা, মাধুরী (বি)। এই অতিরিক্ত উত্তরগুলি অভিধান হইতে সংগ্রহ করিয়া লইবে।
অনুশীলনী
১। প্রত্যয় কাহাকে বলে? প্রত্যয় কয় প্রকার? প্রত্যেক প্রকারের দুইটি করিয়া উদাহরণ দিয়া বুঝাইয়া দাও।
২। কৃৎ-প্রত্যয় কাহাকে বলে? তদ্ধিত-প্রত্যয় কাহাকে বলে? প্রত্যেকের একটি করিয়া বাংলা ও একটি করিয়া সংস্কৃত উদাহরণ দিয়া সেই উদাহরণ চারিটি দিয়া চারিটি শব্দ গঠন কর এবং সেই শব্দ চারিটিকে নিজস্ব বাক্যে প্রয়োগ কর।
৩। সংস্কৃত কৃৎ, বাংলা কৃৎ, সংস্কৃত তদ্ধিত, বাংলা তদ্ধিত ও বিদেশী তদ্ধিতের একটি করিয়া উদাহরণ উল্লেখ করিয়া প্রত্যেকটি প্রত্যয়যোগে এক-একটি শব্দগঠন কর এবং প্রতিটি শব্দ নিজস্ব বাক্যে প্রয়োগ কর।
৪। উদাহরণযোগে বুঝাইয়া দাও : কৃৎ-প্রত্যয়, বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়, সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়, সংস্কৃত তদ্ধিত-প্রত্যয়, বাংলা কৃদন্ত শব্দ, সংস্কৃত তদ্ধিতান্ত শব্দ, বিদেশী তদ্ধিতান্ত শব্দ, অপত্যার্থক প্রত্যয়, অস্ত্যর্থক প্রত্যয়, সনন্ত পদ, স্বাৰ্থিক প্রত্যয়, ধাত্ববয়ব প্রত্যয়, সনন্ত ও যঙন্ত ধাতুনিষ্পন্ন শব্দ, ধাতুবিভক্তি, শব্দবিভক্তি, সংস্কৃত ধাতু ও শব্দে বাংলা প্রত্যয়, বাংলা ধাতু ও শব্দে সংস্কৃত প্রত্যয়, কর্মবাচ্যে শানচ্, অপত্যবাচক তদ্ধিতান্ত পদ, একবর্ণের বাংলা কৃৎ ও বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়, উপধা, ক্যঙন্ত পদ।
৫। (ক) বাংলায় শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়ান্ত পদ কীভাবে ব্যবহৃত হয় উদাহরণযোগে বুঝাইয়া দাও। (খ) শানচ্ প্রত্যয়যুক্ত পাঁচটি কৃদন্ত শব্দ রচনা করিয়া সেগুলিকে এক-একটি বাক্যে প্রয়োগ কর।
৬। পার্থক্য দেখাও : কৃৎ-প্রত্যয় ও তদ্ধিত-প্রত্যয়; কৃৎ-প্রত্যয় ও ধাত্ববয়ব প্রত্যয়; প্রত্যয় ও বিভক্তি; শানচ্ প্রত্যয় ও মতুপ্ প্ৰত্যয়।
৭। পাঁচটি বিদেশী প্রত্যয়ের উল্লেখ কর; এই প্রত্যয়গুলি কোন্ অর্থে প্রযুক্ত হয়, উল্লেখ করিয়া প্রত্যেকটি প্রত্যয়যোগে একটি করিয়া মোট পাঁচটি শব্দগঠন কর এবং প্রতিটি শব্দকে এক-একটি বাক্যে প্রয়োগ কর।
৮। ই, আরী, উক, উয়া (ও), আ, উ, তা, ক, আনি-প্রত্যয়গুলি যে কৃৎ ও তদ্ধিত দুইই, তাহা শব্দগঠন করিয়া নবলব্ধ শব্দগুলিকে বাক্যে প্রয়োগ করিয়া দেখাইয়া দাও।
৯। (ক) প্রকৃতি-প্রত্যয় এবং প্রত্যয়জাত শব্দটি পৃথক্ অনুচ্ছেদে ছড়ানো রহিয়াছে; প্রকৃতি-প্রত্যয়টির পাশে সমানচিহ্ন দিয়া প্রত্যয়জাত শব্দটি যথাযথ বসাও :
√শী + ক্ত, √ইম্ + ক্তি, রিন্জ + ক্ত, রিজ্ + ণিচ্ + ক্ত, √বিদ্ + ক্যপ্ + আ, রণ—√জি + ক্বিপ্, √বিদ্ + শত্ + ঈ, √শী + ণিচ্ + ক্ত + আ, আ—√ঋ + ক্তি, √শাস্ + ক্যপ্ + আ, নিঃ—√বা + ক্ত, √ক্ষণ + ক্তি, উদ্—√খা + অনট্, √হা + ক্ত, √ক্ষি + অল্, √যজ্ + ক্ত, √মুহ্ + ক্ত, বি—√বহ্ + ক্ত, বিহ্ + ক্ত + আ, √রধূ + অনট্।
বিদ্যা, শায়িতা, রঞ্জিত, শয়িত, ইষ্ট, হীন, ইষ্টি, রণজিৎ, নির্বাণ, শিষ্যা, ক্ষয়, ঊঢ়া, মূঢ়, রক্ত, রন্ধন, আর্তি, উদ্যান, ক্ষতি, ব্যূঢ়, বিদুষী।
(খ) বন্ধনীমধ্য হইতে উপযুক্ত শব্দটি বাছিয়া শূন্যস্থান পূর্ণ কর : (i) √লক্ষ্ + অনীয় =….. (লক্ষ্যনীয় / লক্ষণীয় / লক্ষ্যণীয় / লক্ষনীয়); (ii) √মৃ + শানচ্ =…. ম্রিয়মান / ম্রিয়মাণ); (iii) আ—√সদ্ + ক্তি + ণিচ্ + ক্ত = (মৃয়মান / মৃয়মাণ / (আসত্তি / আসক্তি / আশক্তি); (iv) √বৃধূ = ….(বৃদ্ধ/বৃদ্ধিত/বর্ধিত); (v) √জাগ্ + শতৃ = (জাগ্রৎ/জাগ্রত/জাগরিত); (vi) পরা—√অয়্ + অনট্ = ….. (পরায়ন /পরায়ণ/ পলায়ন); (vii) √লক্ষ্মী + মতুপ্ = …. (লক্ষ্মীমান / লক্ষ্মীবান্ / লক্ষ্মীমান্); (viii) পরি—√ত্যজ্ + ণ্যৎ = ….. (পরিত্যজ্য / পরিত্যাজ্য); (ix) আ—√যৎ + ক্ত = ….. (আয়ত্ত/ আয়ত); (x) বহু + ঈয়স্ + ঈ =…. (বহুয়সী / ভূয়সী / ভুয়সী)।
১০। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দেখাইয়া ব্যুৎপত্তি নির্ণয় কর : কুম্ভকার, দীপ্যমান, সহিষ্ণু, গাইয়ে, মিশুক, ঐহিক, হস্তী, বাঙ্ময়, বারমেসে, ঘরামি, ঘরোয়া, ঘেরাও, ভুক্ত, সেলামি, নৈয়ায়িক, তন্দ্রালু, বর্ধিষ্ণু, যুধ্যমান, পাঁকাল, ঠাকুরালি, শয়ান, বেতো, শ্রবণ, রাঁধুনি, বাড়ন্ত, শ্রীমতী, শ্রেষ্ঠ, মেধাবী, ধারালো, হুজুগে, সরসিজ, মুক্তি, বিক্রীত, শ্রবণীয়, কম্পমান, জননী, সৌমিত্রি, দাশরথি, গাঙ্গেয়, দস্যিপনা, শ্রোতব্য, শয়ন, বর্তমান, বর্ধমান, দর্শনীয়, ক্ষয়িষ্ণু, সেবাইত, কৌন্তেয়, স্মার্ত, সৌর, নাচন, জ্বালানি, জলদ, দাপট, দয়ালু, পঙ্কিল, ভাসমান, ভবিতব্য, সিদ্ধি, সর্বাঙ্গীণ, বেনারসী, নেকাপনা, বুটিদার, সত্তা, স্বত্ব, সত্ত্ব, জিজ্ঞাসা, অনুক্ত, মেছো, নিরীক্ষণ, ক্ষেপাটে, পরিধেয়, শুষ্ক, হানি, ত্যাগ, পরিত্যাজ্য, ত্যক্ত, খেলনা, পড়ুয়া, জ্যেষ্ঠ, পায়স, ভস্মীভূত, দ্রাঘিমা, হলদে, হ্যাংলাপনা, বক্ষ্যমাণ, রোরুদ্যমান, মায়াবী, শাঁসাল, বলিয়ে, আদুরে, ঢাকনি, উৎকর্ষ, ব্যবহার, খুনে, অভাগী, প্রতীয়মান, মৃন্ময়, কহতব্য, অন্তঃশীলা, রবিবাসরীয়, ছেলেমি, চলন্ত, খেয়ালী, শাঁখারী, নীলিমা, ভ্রাম্যমাণ, পাচক, সন্নিহিত, পরাজয়, আত্মজ, প্রদীপ্ত, অভিষেক, মহিমা, আহূত, বাবুগিরি, ভয়ঙ্কর, বৈবস্বত, দোকানদার, সৃষ্টি, বিধান, রথী, অবনত, স্পর্শ, প্রামাণ্য, শুশ্রূষা, মুমূর্ষু, আন্তর্জাতিক, প্রাগৈতিহাসিক, কৈকেয়ী, লেঠেল, মন্তর-তন্তর, মাসতুত, বুড়ো, বুদ্ধিমান্, শারীরিক, লোভনীয়, শোভমান, নন্দিনী, ধনী, শারদীয়া, শতবার্ষিকী, অন্তর্দেশীয়, ব্যাপ্ত, যশস্বী, গৌরব, উপহার, জ্ঞান, বিদীর্ণ, কেশরী, বিজয়, পৈতৃক, প্রভাব, ফণী, অভ্যস্ত, অজ্ঞেয়, প্রকাশিত, নিস্তব্ধ, পরিত্যাগ, বিবক্ষা, ছাত্র, সন্তান, ভাগবত, আণবিক, প্রবাস, অগ্রসর, ছিন্ন, আরোহণ, বিস্মৃত, স্রোতস্বতী, দুর্গম, সংগ্রহ, আবিষ্কার, চঞ্চল, পুত্র, ভৃত্য, সাহিত্য, সার্বভৌম, বন্দী, সৌগত, আর্জব, ভার্যা, কৃত, মাতৃকা, কাটারি, বড়াই, লোনা, মেটে, দাঁতাল, শব্দায়মান, দিশারু, পড়ন্ত, লাজুক, বরণীয়, কার্য, নম্র, ভস্মসাৎ, মিথ্যুক, নিন্দুক, পূজারী, ডাক্তারখানা, আয়ত্ত, বিরক্ত, রণজিৎ, রঞ্জিত, হিংসুটে, সংগত, উদয়, পঙ্কজ, হাতুড়ে, ভিখারী, বৈষ্ণব, ঢাকাই, বুনো, জটিল, অজ, লভ্য, ভোগ, আরোগ্য, কানাই, আগামী, মহীয়ান্, দৈত্য, স্মরণীয়, ধূপদানি, মাজন, ঘামাচি, বিদ্যা, ফেরিওয়ালা, আসীন, অন্ন, পাঠক, শোক, কান্না, দ্রষ্টব্য, মথিত, গোলাপী, নেতা, শৌর্য, শৌরি, সৌরি, ক্রেতা, দীপ্ত, আর্য, আর্য, ভারত, সৎ, সত্যবাদী, ধূলিসাৎ, নবীভবন, বনীকরণ, মিতালী, জৈন, মূর্ধন্য, আতিথ্য, মেঠো, ন্যায়, অনাবৃত, মনসিজ, ভবন, ঘাস, আহুত, আহৃত, উদাহরণ, বিড়ম্বিত, গরীয়সী, প্রার্থনা, উত্থাপন, নিবারণ, বীপ্সা, সমভিব্যাহার, মাহাত্ম্য, ইন্দ্রিয়, অতীত, অনূদিত, অনুদিত, শীতালু, ভক্ত, অপস্রিয়মাণ, চঞ্চল, উচিত, পারিষদ, পূর্ণ, পূরণ, সালোক্য, নির্বাণ, অরণ্য, ব্যক্তিত্ব, বদ্ধ, ভুবন, মার্গ, দ্বৈপ্য, রসঘ্ন, দ্যুতিমান্, স্তিমিত, প্রকৃতি, প্রত্যয়, অপসৃয়মান, দোলনা, ভবিষ্যৎ, জয়ন্তী।
১১। কোন্ অর্থে প্রযুক্ত হয় নির্দেশ করিয়া প্রত্যেকটি প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখাও : তব্য, আ, আনো, ইয়া, মতুপ্, তম, অনট্, পনা, আলি, দার, অন্ত, আরি (উরি), আলো, উক, উয়া, তা, বস্তু, ক্ত, ইমন্, আলু, ইষ্ঠ, আনি, ইল, ঈয়স্, তন, গিরি, খোর, বাজ, খানা, বিন্, ক্তি, তৃচ্, ইত, ইন্, ত্ব, মৎ, ওয়ালা, আমি, ইয়ে।
১২। চূড়ান্ত রূপ দেখাও : এক + ষ্ণ্য; √চর্ + অনট্; √পচ্ + ক্ত; প্ৰ—√নম্ + ঘঞ; একমত + ষ্ণ্য; গঙ্গা + এয়; √ক্ষি + ক্ত; √বৃৎ + শানচ্; √গ্রহ্ + তৃচ্; √বৃধূ + শানচ্; √শাস্ + ক্যপ্; লাঠি + আল; পাড়াগাঁ + ইয়া; √অদ্ + ক্ত; সম্—√পূর্ + ক্ত; অভি-বি—√অন্জ্ + ক্তি; প্ৰ—√যা + অন; বিশদ + ষ্ণ্য।
১৩। প্রতিটি শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় বিচ্ছিন্ন কর এবং সেই প্রত্যয়টির স্থানে বন্ধনী-মধ্যস্থ প্রত্যয়টি বসাইয়া নূতন শব্দরচনা কর : গ্রহীতব্য (ক্ত), দর্শনীয় (তব্য), গৃহীতা (অনীয়), যোজনীয় (ঘঞ), বধ্য (ণক), কীৰ্তনীয় (ক্ত), কার্য (অনীয়), ত্যক্ত (ণ্যৎ), ভার্যা (ক্যপ্), বন্দনীয় (ণ্যৎ), শ্রাব্য (যৎ), বিদ্যমান (শতৃ), মৌনী (ষ্ণ), অনূদিত (ঘ), পাঠক (তব্য), পরভৃত (ক্বিপ্), বান্ধব (তা), অন্তর্ধান (ক্ত), পীত (অনট্), শয্যা (ক্ত), ত্যাগী (ণাৎ), ভঙ্গ (ক্ত), শারীরিক (ইন্), হীন (ক্তি), বদ্ধ (অল্), অন্ন (ঘঞ), সম্পত্তি (ক্ত), গান (যৎ), ভুজগ (খচ্), অনুভব (ঘঞ), প্ৰণত (ঘঞ), মন্থন (ক্ত), রঞ্জিত (ণক), পঠন (ণ্যৎ), পালিত (অনীয়), রক্ত (ঘঞ), ব্যঞ্জন (ক্তি), ধ্যেয় (অনট্), রোগী (ক্ত), পাক (ক্ত), ভূয়ান্ (ত্ব), কনীয়ান্ (ইষ্ঠ), কৃত্তি (ক্ত)।
১৪। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ হইতে উত্তরটি নির্বাচন করিয়া প্রতিটি বাক্যাংশের ডান দিকে সমানচিহ্ন দিয়া যথাযথ বসাও : সখার ভাব, সখীর ভাব, মুনির ভাব, মুনির ভাবে স্থিত, ব্যাসের রচিত, ব্যাসের পুত্র, জয়ের অভিলাষ, ভোজনে ইচ্ছুক, মাটিতে তৈয়ারী, মৃত্তিকাদ্বারা নির্মিত, যে নারী গান গাহিতে পারেন, সংগীতের বিশিষ্ট রীতি, নেতার দায়িত্ব, নেত্রীর কাজ, যিনি প্রতীক্ষা করিতেছেন (নারী), কুমারী কন্যার পুত্র, যে নারীর জন্য প্রতীক্ষা করা হইতেছে, মৃগ সম্পর্কীয়, নির্দোষের ভাব, বিবস্বানের পুত্র, দ্বীপের সহিত সম্পর্কিত, বৃহস্পতির সম্পর্কীয়, যাহা অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, বিশ্বকে যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, সেবা করিতে ইচ্ছুক, শুনিতে ইচ্ছুক।
মেটে, বৈয়াসকি, দ্বৈপ, প্রতীক্ষ্যমাণা, মৌন, বুভুক্ষু, নির্দোষতা, বার্হস্পত্য, মার্গ, বিশ্বনিয়ন্তা, জিগীষা, সখ্য, নেত্রীত্ব, প্রতীক্ষমাণা, বৈয়াসিক, সখীত্ব, শুশ্রূষু, গায়িকা, মৃন্ময়, নেতৃত্ব, গায়কী, অনুষ্ঠাতব্য, বৈবস্বত, সিষেবিষু, কানীন, মৌনী।
১৫। শুদ্ধ কর : চর্বচোষ্য, অচিন্ত্যনীয়, নীরোগী, প্রফুল্লিত, সাম্যতা, সম্ভ্রান্তশালী, আকাঙ্খা, শ্রদ্ধাভাজনীয়, দারিদ্র্যতা, ত্যজ্য, সখ্যতা, আয়ত্ত্ব, সত্ত্বা, রুচিবান্, লক্ষ্যণীয়, পৌরহিত্য, সংস্কৃতিবান্, অন্তর্ভুক্ত, মুখস্ত, প্রজ্জ্বলিত, ভাসমান, জাতীয়করণ, লক্ষ্মীমান, শুশ্রূষা, প্রতিদ্বন্দ্বীতা, মহত্ব, মাহাত্ম, মাধুরিমা, জাগ্রত, উৎকর্ষতা, সৃজন, স্তুপিকৃত, দৌরাত্মপনা, সমৃদ্ধশীল, লঘুকরণ, মহিমামণ্ডিত, নীলিমাদেবী, দৈন্যতা, ভগমান, বাহুল্যতা, মুহানীয়, ভাগবৎ, ঐক্যতান, মন্থিত, নির্দোষী, গৃহীতব্য, রোগগ্রস্থ, পরিশোধ্যনিয়, স্বাতন্ত্রতা, উত্যক্ত, পাশ্চাত্য, রাশিকৃত, গ্রাহ্যনীয়, পুঞ্জভূত, অনুষ্ঠিতব্য।
১৬। ব্যুৎপত্তিগত টীকা লিখ : যাচাই, পণ্ডিত, দীপালী, বীরপনা, সৃজন, সর্জন, চলতি, বসতি, কহতব্য, ভাবুক, ইংলন্ডীয়, স্বকীয়, বেরসিক, বদগন্ধ, গরমিল, সবুজায়মান, ভূমা, জগৎ, নীরোগীকরণ, নীরোগীভবন।
১৭। (ক) বিশেষ্যকে বিশেষণে ও বিশেষণকে বিশেষ্যে পরিণত করিয়া প্রত্যেকটি নবলব্ধ শব্দদ্বারা বাক্যরচনা কর : ভেদ, অতিশয়, দক্ষিণ, বাবু, দীন, সাম্য, সুষ্ঠু, মন্দ, পরিমেয়, ভীত, বড়, জাড্য, কুলীন, ঋষি, গুণ, মানসিক, জাতি, দ্রষ্টব্য, বিষাদ, আসীন, অরণ্য, আর্য, গ্রাম, ঘরোয়া, মোহ, জোর, নিষিদ্ধ, বন, পরস্পর, পরিধান, ভগবৎ, আরম্ভ, সন্দিগ্ধ, ভগ্ন, মাংস, অপহরণ, নম্র, স্পর্শ, উদার, আরোহণ, প্রবসন, স্থির, অভ্যাস, অধ্যয়ন, ইতিহাস, ক্ষয়, লাজুক, বীর, নিরাপদ্, প্রশ্রয়, সংসৃষ্ট, বিস্তর, প্রকর্ষ, উৎকৃষ্ট, বর্ষ, পশু, কাঠ, নিপুণ, বিশ্বস্ত, আহত, গোঁয়ার, সম্পন্ন, বিশ্রাম, বসন্ত, আসন, গেঁয়ো, বুড়ো, প্রীতি, প্রশ্ন, বাদাম, সান্ত্বনিত, গাছ, সৌষম্য, অবসান, পরিত্যাগ, প্রত্যর্পিত, বিবেচনা, মোচন, বিশাল, সম্মত, স্মরণ, মত্ত, উল্লাস, সৃষ্ট, মহৎ, মাঠ, পাগল, ভ্রম, মুখ্য, চক্ষু, জীব, বৈক্লব্য, আশঙ্কা, উন্মোচন, পৃথিবী, জগৎ, সুস্থ, বিশুদ্ধ, বিশেষ, ব্যাপক, শরৎ, দত্ত, স্নেহ, আরোহী, সংক্ষুব্ধ, মাটি, কল্পনা, বায়ু, মাধুর্য, মন, বস্তু, দেহ, মূল, অভ্যস্ত, তালু, হেমন্ত, ত্বরা, ফেনা, শ্রদ্ধা, সিন্ধু, রস, অন্ত্য, সমাজ, বিধি, নিরস্ত, ক্ষীণ, উদ্বেগ, ভাত, স্তব্ধ, বিচিত্র, আদেশ, কায়িক, উপন্যাস, তরঙ্গিত, ধ্যেয়, চিহ্ন, জয়ী, মাস, বঞ্চিত, হৃষ্ট, খ্যাত, শয়তানি, সারল্য, পরীক্ষিত, মার্জিত, দরিদ্র, শূর, গৌরব, অনুকূল, বেনারসী, মোগল, ভুক্ত, পাক, আগ্নেয়, আশ্বাস, প্রসিদ্ধি, দুধ, সৌরভ, অনুষ্ঠানিক, জড়তা, অধিক, প্রত্যয়িত, সূর্য, বিবৃত, লেখ্য, আচরিত, লিকলিক, হানি, আর্তি, বিদ্বিষ্ট, বীক্ষণ, আঘ্রাণ, প্রশান্ত, দ্রুত, প্রশমিত, সর্প, প্রলুব্ধ, কলুষ, গুণবান্, সমুত্তীর্ণ, বণিক্, লাজ, লজ্জা, প্রত্যহ, ঘাস, বচন, রন্ধিত, প্রত্যাশা, আহুত, আহ্বান, বীর্যবান্, দক্ষতা, ঈশ্বর।
(খ) পরস্পর-সম্পর্কিত বিক্ষিপ্ত বিশেষ্য-বিশেষণগুলি যথাযথ চিহ্নিত করিয়া পাশাপাশি বসাও : অবসান, মৌন, অবসন্ন, অপসৃত, বিক্ষিপ্ত, উচ্ছ্বয়, রক্তিমা, প্রলপিত, মানস, পূর্ণ, উৎকৃষ্ট, রপ্তানি, রক্তিম, মৌনী, সৌর, শৌর্য, পরিহিত, অপসারণ, মন, উৎকর্ষ, সূর্য, প্রলপন, ‘অবসিত, বৈশদ্য, অপসারিত, অবসাদ, বিক্ষেপণ, রপ্তানী, শূর, উচ্ছ্রিত, অবসর, অপসরণ, বিশদ, পরিধান, প্রয়াত, অবসৃত, প্রয়াণ, পূর্তি।
১৮। অর্থপার্থক্য দেখাও : শ্রব্য শ্রাব্য, বৈয়াসকি বৈয়াসিক, প্রাপ্ত প্রাপ্য, রজক রঞ্জক, সখিত্ব সখীত্ব, আসক্তি আসত্তি, নিয়োজ্য নিয়োগ্য, আয়তি আয়ত্তি, বিরাট বিরাট্, স্বত্ব সত্ত্ব।